প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ফকীহ্
1. আবু হানিফা নোমান ইবনে সাবিত ইবনে যোতী অথবা নোমান ইবনে সাবিত ইবনে নোমান ইবনে মারযবান (মৃত্যু 150 হিজরী)। আবু হানিফা একজন ইরানী বংশোদ্ভূত ফকীহ্। তাঁকে আহলে সুন্নাতের ফকীহ্দের প্রধান (ইমামে আযম) বলা হয়। অধিকাংশ সুন্নী সমাজে তাঁকে নবী (সা.) ,খোলাফায়ে রাশেদীন ,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মনে করা হয়। ইরানে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা স্বল্প হলেও ইরানের বাইরে তাদের সংখ্যা অনেক।
2. মুহাম্মদ ইবনে ইদরিস শাফেয়ী: শাফেয়ী কোরেশী আরব। অনুসারীদের সংখ্যার ভিত্তিতে তিনি আবু হানিফার সমকক্ষ বা তাঁর অনুসারীর সংখ্যা কিছুটা বেশি হতে পারে। শাফেয়ী 204 হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
3. মালেক ইবনে আনাস (মৃত্যু 179 হিজরী): মালেক কাহতান বংশীয় আরব। উত্তর আফ্রিকার অধিকাংশ মুসলমান তাঁর অনুসারী।
4. আহমদ ইবনে হাম্বল (মৃত্যু 241 হিজরী): আহমদ আরব বংশোদ্ভূত ,তবে সম্ভবত তাঁর পরিবার ইরানের খোরাসানের মারভে বাস করত। ইবনে খাল্লেকান বলেছেন ,তাঁর মাতা তাঁকে গর্ভধারণকালে মারভ হতে বাগদাদ রওয়ানা হন এবং বাগদাদে তাঁর জন্ম হয়।
আহমদ ইবনে হাম্বলকে আরব বংশোদ্ভূত ইরানী বলা যেতে পারে। তাই আহলে সুন্নাতের চার ইমামের একজন ইরানী ,একজন আদনানী আরব ,একজন কাহতানী আরব এবং একজন আরব বংশোদ্ভূত ইরানী।
আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি ,এ স্তরের (সময়কালে) আরো কিছু ফকীহ্ ছিলেন যাঁদের মাযহাব বর্তমানে বিলুপ্ত হয়েছে ,যেমন মুহাম্মদ ইবনে জারীর তাবারী (মৃত্যু 310 হিজরী) এবং দাউদ ইবনে আলী জাহিরী ইসফাহানী (মৃত্যু 270 হিজরী)। দাউদ ইবনে আলী জাহিরী ফিকাহ্শাস্ত্রে জাহিরী মতবাদের উদ্গাতা। তাঁর ফিকাহর মত হলো হাদীসের বাহ্যিক অর্থের বাইরে কোন অর্থই নেই। এ কারণে তাঁর মতবাদ এক প্রকার স্থবিরতা ছাড়া কিছু নয়। ইরানী বংশোদ্ভূত ফকীহ্ ইবনে হাযম আন্দালুসী উমাইয়্যাদের চরম ভক্ত ব্যক্তি। তাঁর নবী পরিবারের প্রতি এক রকম বিদ্বেষ ছিল। ফিকাহ্্র বিষয়ে তিনি দাউদ ইবনে আলী জাহিরীর অনুসারী ছিলেন।
এ সময়কালের আরো কিছু প্রসিদ্ধ ফকীহ্ যাঁদের কেউ স্বতন্ত্র মাযহাবের প্রবক্তা ,আবার কেউ শুধুই ফকীহ্ ছিলেন। আমরা এখানে তাঁদের অনেকের পরিচয় তুলে ধরছি যাতে আহলে সুন্নাতের ফিকাহ্য় ইরানীদের অবদানের বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
1. মুহাম্মদ ইবনে হাসান শাইবানী (মৃত্যু 189 হিজরী): তিনি আবু হানিফার ছাত্র ও হারুনুর রশীদের সহযোগী ছিলেন। তিনি সিরীয় হলেও ইরাকের ওয়াসেতে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তিনি মৃত্যুবরণ করেন ইরানের রেই শহরে । একবার হারুনুর রশীদের সঙ্গে ইরানে আগমন করলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয় ও তাঁকে সেখানে সমাহিত করা হয়।
2. আবু ইউসুফ (মৃত্যু 192 হিজরী): তিনিও আবু হানিফার ছাত্র এবং আব্বাসীয় খলীফা মাহ্দী ,হাদী ও হারুনের সময় বিচার বিভাগের প্রধান কাযী ছিলেন। তাঁকে আনসার বংশীয় বলা হয়ে থাকে।
3. যাফর ইবনিল হাযিল (মৃত্যু 158 হিজরী): তিনি আদনানী আরব এবং আবু হানিফার অনুসারী।
4. লাইস ইবনে সা’
দ ইসফাহানী (মৃত্যু 157 হিজরী): তিনি মিশরের ফকীহ্ ও স্বতন্ত্র মাযহাবের প্রবক্তা ছিলেন ,যদিও অনেকে তাঁকে আবু হানিফার অনুসারী বলেছেন।
5. আবদুল্লাহ্ ইবনে মুবারাক মুরুজী (মৃত্যু 181 হিজরী): তিনি আবু হানিফা ,মালেক ও সুফিয়ান সাউরীর ছাত্র। তিনি ইরানের মারভের অধিবাসী।
6. আউযায়ী ,আবু আমর আবদুর বহমান ইবনে আমর (মৃত্যু 157 হিজরী): তিনি জুহরী ও আতা ইবনে আবি রিবাহর ছাত্র। তিনি সিরিয়ার অধিবাসী। তাঁকে সিরীয় একক ফিকাহর ইমাম বলা হয়। তিনি ফিকাহর স্বতন্ত্র মাযহাবের প্রবক্তা। তাঁর পূর্বপুরুষ ইয়েমেনের মুক্ত আরব ছিলেন নাকি বন্দী তা সঠিকভাবে জানা যায়নি।
উপরিউক্তগণ আহলে সুন্নাতের প্রসিদ্ধ ফকীহ্দের অন্তর্ভুক্ত। এ পর্যায়ের ফকীহ্দের মধ্যে কেউ ইরানী আবার কেউ অ-ইরানী।
তৃতীয় পর্যায়ের বিশিষ্ট ফকীহ্দের মধ্যে ইবনে সিরিজ শাফেয়ী ,আবু সাঈদ ইসতাখরী ও আবু ইসহাক মুরুজী চতুর্থ হিজরী শতাব্দীতে ,আবু হামিদ ইসফারাইনী ,আবু ইসহাক ইসফারাইনী ,আবু ইসহাক সিরাজী ,ইমামুল হারামাইন জুয়াইনী ,ইমাম মুহাম্মদ গাজ্জালী ,আবুল মুজাফ্ফার খাওয়াফী ও কিয়াল হারাসী পঞ্চম হিজরীতে ,আবু ইসহাক আরাকী মৌসেলী ষষ্ঠ হিজরীতে ,আবু ইসহাক মৌসেলী সপ্তম হিজরীতে ,ইমাম শাতেবী আন্দালুসী অষ্টম হিজরীতে প্রসিদ্ধ ইরানী ফকীহ্দের অন্তর্ভুক্ত।
নবম হিজরী শতাব্দীর পরবর্তী সময়ে ইরানের মানুষ শিয়া মাযহাব গ্রহণ করলে তার প্রভাবে বিগত চারশ’
বছরের ইরানী ফকীহ্গণের সকলেই শিয়া মাযহাবভুক্ত।