শিয়া মাযহাব
প্রথম যখন ইরানীরা ইসলাম গ্রহণ করে তখন হতেই তারা নবী (সা.)-এর পরিবার ও বংশের প্রতি বিশেষ ভালবাসা ও ভক্তি প্রদর্শন করেছে।
কোন কোন প্রাচ্যবিদ তাদের এ ভক্তি-ভালবাসাকে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার কারণে বলে মনে করেন নি ;বরং একে ইসলাম অথবা আরব জাতীয়তার বিরুদ্ধে নিজস্ব প্রাচীন ধর্ম ও রীতিকে টিকিয়ে রাখার প্রয়াস হিসেবে দেখেছেন এবং একে ইরানীদের কৌশল ও প্রতিক্রিয়ার ফল বলে মনে করেছেন।
প্রাচ্যবিদদের এ বক্তব্য দু’
শ্রেণীর মানুষের জন্য বাহানা উপস্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছে :
প্রথম শ্রেণী হলো গোঁড়া সুন্নীরা যারা এর মাধ্যমে শিয়াদেরকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত একদল কৃত্রিম মুসলমান বলে প্রচারের প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং এর ওপর ভিত্তি করে শিয়াদের ওপর হামলা করেছে। যেমন মিশরীয় লেখক আহমাদ আমিন তাঁর‘
ফাজরে ইসলাম’
গ্রন্থে এরূপ করেছেন। বিশিষ্ট শিয়া আলেম মুহাম্মদ হুসাইন কাশেফুল গেতা এ মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে‘
আসলুশ্ শিয়া ওয়া উসূলুহা’
নামক এক যুক্তিনির্ভর ও বলিষ্ঠ গ্রন্থ রচনা করেছেন।
দ্বিতীয় শ্রেণী হলো তথাকথিত ইরানী জাতীয়তাবাদীরা। প্রথম দলের বিপরীতে এরা ইরানীদের এ জন্য প্রশংসা করে থাকে যে ,তারা শিয়া মতাদর্শের আবরণে তাদের প্রাচীন ধর্মকে সংরক্ষণ করতে পেরেছে। যেমন তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা হতে প্রকাশিত ডক্টর পারভেজ সানেয়ী রচিত‘
কানুন ওয়া শাখসিয়াত’
গ্রন্থের 157 পৃষ্ঠায় আমাদের স্কুলগুলোর ইতিহাস গ্রন্থসমূহ অগভীর চিন্তাপ্রসূত ও বেশ শুষ্ক হয়ে পড়ার সমালোচনা করে একে সজীব ও বিশ্লোষণধর্মী গভীরতা দানের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে :
“
যেমন ইসলামে শিয়া ও সুন্নীদের মধ্যে পার্থক্যের বিষয়ে ইতিহাসে আমাদের শিখানো হয়েছে ইরানীরা হযরত আলী (আ.)-এর পন্থাবলম্বন করেছে শিয়া ও সুন্নীদের মধ্যকার বিভেদের সূত্র ধরে। আর তা হলো আমরা হযরত আলীকে প্রথম খলীফা মনে করি। আর সুন্নীরা তাঁকে চতুর্থ খলীফা বলে বিশ্বাস করে। শিয়া-সুন্নী পার্থক্যের বিষয়ের মূলকে বিশ্লেষণ না করে এভাবে উপস্থাপন করে অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রধান্য দান করা হয়েছে ,অথচ পার্থ্যক্যের এ ভিত্তি অযৌক্তিক বলে মনে হয়। স্কুল ত্যাগের অনেক বছর পর আমি নিজে অধ্যয়ন করে বুঝতে পারলাম শিয়া মাযহাব ইরানীদের আবিষ্কার। ইরানীরা তাদের স্বাধীনতা ও প্রাচীন ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে এর জন্ম দেয়। যেহেতু ইমাম হুসাইন (আ.) ইরানের সর্বশেষ বাদশার কন্যাকে বিয়ে করেন সেহেতু তাঁর সন্তানরা বংশ পরম্পরায় শাহজাদা হিসেবে ইরানী শাসনেরই গৌরবময় ধারাবাহিকতা। ইমাম হুসাইনের সন্তানদের যে‘
সাইয়্যেদ’
বলা হয় তা ফার্সী ভাষার‘
শাহজাদা’
শব্দের সমার্থক।
ইরানীদের এ আবিষ্কার তাদের জাতীয়তাকে সংরক্ষণের লক্ষ্যেই ছিল। ইরানের প্রাচীন ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানই শিয়া মাযহাবে অনুপ্রবেশ করেছে। শিয়া মাযহাবের সঙ্গে প্রাচীন ইরানী ধর্মীয় ঐতিহ্যের তুলনার মাধ্যমে আমরা এটি বুঝতে পারব। অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা জানতে পারব প্রাচীন ইরানী ধর্ম (যারথুষ্ট্রবাদ) কিভাবে শিয়া মাযহাবের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে।”
প্রায় একশ’
বছর পূর্বে কান্ট গোবিনু‘
মধ্য এশিয়ার ধর্ম ও দর্শন’
নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি নবী (সা.)-এর আহলে বাইতের পবিত্র ইমামদের নিস্পাপ হওয়ার বিশ্বাসকে সামানী সম্রাটদের ঐশী হওয়ার বিশ্বাস হতে উৎসারিত বলে উল্লেখ করেছেন এবং ইমাম হুসাইনের সঙ্গে ইরানী শাহজাদী শাহের বানুর বিবাহের কারণে তাঁর বংশধারা এ পবিত্রতা লাভ করেছে বলে প্রচার করেছেন।
এডওয়ার্ড ব্রাউনও গোবিনুর এ মতকে সমর্থন করে বলেছেন ,
“
আমি বিশ্বাস করি গোবিনু সঠিক বলেছেন। যেহেতু ইরানীরা রাজকীয় ক্ষমতা স্রষ্টার ঐশী দান ও অধিকার বলে মনে করত যা সাসানীদের হাতে তিনি গচ্ছিত রেখেছিলেন ,এ বিশ্বাস পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে ইরানের ইতিহাসে ব্যাপক প্রভাব রেখেছিল। বিশেষত শিয়া মাযহাবের প্রতি ইরানীদের ঝুঁকে পড়ার পেছনে এ বিশ্বাসের প্রভাব খুবই বেশি ছিল। রাসূলের ঐশী স্থলাভিষিক্ত বা খলীফা নির্বাচিত হওয়াটাই গণতান্ত্রিক আরবদের নিকট স্বাভাবিক ছিল। এর বিপরীতে শিয়াদের নিকট এটি অস্বাভাবিক ও নিদারুণ বিরক্তির কারণ ছিল। দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর কর্তৃক ইরান সাম্রাজ্য ধ্বংসের কারণে শিয়াদের নিকট অপছন্দীয় ছিলেন। তাঁর প্রতি ইরানীদের অসন্তুষ্টিই যে একটি মাযহাবরূপে আবির্ভূত হয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। ইরানীদের বিশ্বাস নবীর কন্যা হযরত ফাতিমার কনিষ্ট সন্তান হুসাইন ইবনে আলী সর্বশেষ সাসানী শাসক ইয়ায্দ গারদের কন্যাকে বিয়ে করেন। তাই শিয়াদের বড় দু’
টি দলই (বার ইমামী ও ইসমাঈলী) শুধু নবুওয়াতের সম্মান ও মর্যাদার অধিকারীই নয় ,সে সাথে রাজকীয় মর্যাদারও প্রতিনিধিত্ব করে। কারণ এতে দু’
বংশধারার সমন্বয় ঘটেছে: নবুওয়াত ও সাসানী অভিজাত।”
কিছু সংখ্যক প্রাচ্যবিদ এবং ইরানীও এ ধরনের বক্তব্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন এবং শিয়া মাযহাবের উৎপত্তির উৎস সম্পর্কে এরূপ মন্তব্য করেছেন। এটা স্পষ্ট যে ,এ বিষয়ে আলোচনার জন্য পৃথক গ্রন্থ রচনার প্রয়োজন। তবে আমরা এখানে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু বিষয় তুলে ধরছি।
ইমাম হুসাইনের সঙ্গে ইয়ায্দ গারদের কন্যার বিবাহের ঘটনা এবং এ দম্পতি হতে ইমাম সাজ্জাদের (জয়নুল আবেদীনের) জন্মের মাধ্যমে আহলে বাইতের ইমামদের ধারার উৎপত্তি তথা নবুওয়াতের পরিবারের সঙ্গে সাসানী রাজবংশের আত্মীয়তার বানোয়াট ঘটনা স্বার্থন্বেষী কিছু ব্যক্তির হাতে এমন এক হাতিয়ার তুলে দিয়েছে যা ইমামদের প্রতি শিয়াদের বিশ্বাসকে সাসানী সম্রাট‘
ফাররাহে ইয়াযাদীর’
প্রতি বিশ্বাসের ফলশ্রুতি বানিয়ে ছেড়েছে। কারণ সাসানী সম্রাটগণ নিজেদেরকে স্বর্গীয় বংশধারার এবং মানুষের ঊর্ধ্বে প্রায় খোদায়ী মর্যাদার সমতুল্য মনে করত। যারথুষ্ট্র ধর্মও তাদের এ চিন্তাকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা করত।
জানা গেছে ,সাসানী শাসক আরদ্শিরের পুত্র শাপুরের আমলের পাহলভী ভাষায় লিখিত একটি পাণ্ডুলিপি হাজীআবাদে পাওয়া গিয়েছে যাতে লেখা রয়েছে :
“‘
ইরান ও অ-ইরানের সম্রাট শাপুর মিনুসেরেশত‘
ইয়ায্দানের’
পক্ষ হতে মনোনীত ,তাঁর স্বর্গীয় পুত্র মাসদার উপাসক আরদ্শির মিনুসেরেশত‘
ইয়ায্দানের’
পক্ষ হতে মনোনীত ,তাঁর স্বর্গীয় প্রপৌত্র ববাকও‘
ইয়ায্দানের’
পক্ষ হতে মনোনীত।”
যেহেতু সাসানী সম্রাটগণ নিজেদের স্বর্গীয় অবস্থান ও মর্যাদায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং পবিত্র ইমামগণের বংশধারাও তাঁদের সঙ্গে মিশে যায় সেহেতু তাঁরা ও তাঁদের অনুসারীরা সকলেই ইরানী বংশোদ্ভূত হিসেবে স্বর্গীয় হতে বাধ্য। এ দু’
প্রতিজ্ঞা পাশাপাশি রাখলে সহজেই বোঝা যায় ,পবিত্র ইমামদের নেতৃত্বের বিষয়ে বিশ্বাস ইরানীদের প্রাচীন বিশ্বাসেরই ধারাবাহিকতা।
আমরা এখানে সংক্ষেপে এ দাবির অসাড়তা ও ভিত্তিহীনতা প্রমাণ করব। প্রথমে বলে রাখি এখানে দু’
টি বিষয় রয়েছে যে দু’
টিকে পার্থক্য করা উচিত। প্রথমত এটি প্রকৃতিগত ও স্বাভাবিক। কোন জাতি যদি পূর্বে বিশেষ কোন চিন্তাধারা ও ধর্মের অনুসরণ করে পরে তা পরিবর্তন করে তবে তাদের অজান্তেই পূর্ববর্তী আকীদা-বিশ্বাসের কিছু বিষয় চলে আসে। হয়তো নতুন গৃহীত ধর্ম ও বিশ্বাসের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ও ভালবাসা রয়েছে এবং আন্তরিকভাবেই তা গ্রহণ করেছে ,পূর্ববর্তী বিশ্বাসের প্রতি তার কোন গোঁড়ামি ও এর ধারবাহিকতার চিন্তাও সে করে না ,কিন্তু তদুপরি তার চিন্তাশক্তি হতে প্রাচীন বিশ্বাসের কিছু বিষয় মুছে যায়নি এবং অসচেতনভাবেই সেগুলোকে সে নতুন ধর্ম ও বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলে।
এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই ,যে সকল জাতি ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের কেউ পূর্বে মূর্তিপূজক ,কেউ দ্বিত্ববাদী ,কেউ খ্রিষ্টান ,ইহুদী বা মাজুসী ছিল। তাই সম্ভাবনা রয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে তদপূর্ববর্তী চিন্তা ও বিশ্বাসসমূহ ইসলাম গ্রহণের পরও তাদের মধ্যে বর্তমান থাকার।
নিশ্চিত বলা যায় ইরানিগণও কোন কোন বিশ্বাসকে ইসলাম গ্রহণের পরও তাদের অজান্তেই সংরক্ষণ করেছে। দুঃখজনকভাবে কিছু সংখ্যক ইরানীর মধ্যে পূর্ববর্তী সময়ের কুসংস্কার এখনও বর্তমান রয়েছে ,যেমন বছরের শেষ বুধবার আগুনের ওপর দিয়ে লাফ দেয়া অথবা আগুনের দিকে তাকিয়ে প্রতিজ্ঞা করা ইত্যাদি। এটি আমাদের দীনী দায়িত্ব ,নিখাঁদ ইসলামের মূল মানদণ্ডের ভিত্তিতে জাহেলী যুগের সকল চিন্তাধারাকে দূর করার।
নবী (সা.)-এর পবিত্র আহলে বাইতের ইমামদের ইমামত (নেতৃত্ব) ও বেলায়েতের (অভিভাবকত্ব) বিষয়টি যদি আমরা অধ্যয়ন করতে চাই তাহলে আমাদের অবশ্যই কোরআন ও রাসূলুল্লাহর অকাট্য সুন্নাতের প্রতি প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তবেই আমাদের নিকট স্পষ্ট হবে অন্যান্য জাতি ও গোষ্ঠীর ইসলাম আনয়নের পূর্বেও ইসলামে এ বিষয়টি ছিল কি না ?
পবিত্র কোরআন ও রাসূলুল্লাহর অকাট্য সুন্নাহ্ হতে হয় স্পষ্ট যে ,প্রথমত কোরআন কোন কোন সত্যপন্থী সৎ কর্মশীল বান্দাকে ঐশীভাবে নেতৃত্বের জন্য মনোনীত করেছেন। দ্বিতীয়ত কোরআন কোথাও কোথাও সুস্পষ্টভাবে আবার কোথাও ইশারা-ইঙ্গিতে ইমামত ও বেলায়েতের বিষয় দু’
টিতে গুরুত্ব আরোপ করেছে। সে সাথে রাসূলও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের এরূপ মর্যাদার ঘোষণা দিয়েছেন।
আরব মুসলমানগণ অন্যান্য জাতির ওপর শাসন কর্তৃত্ব লাভ করার অনেক পূর্বেই ইসলামে এ বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। যেমন কোরআনের সূরা আলে ইমরানের 33-34 নং আয়াতে এসেছে:
)
إنّ الله اصطفى آدم و نوحاً و آل إبراهيم و آل عمران على العالمين ذرّيّة بعضها من بعض و الله سميع العليم(
“
নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ আদম ,নূহ ,ইবরাহীম ও ইমরানের বংশধরকে নির্বাচিত করেছেন। যাঁরা বংশধর ছিলেন পরস্পরের। আল্লাহ্ শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী।”
(তাই তিনি মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশধর হতেও নির্বাচন করবেন। এটিই স্বাভাবিক ,নয় কি ? কারণ তিনি পূর্ববর্তীদের হতে শ্রেষ্ঠ)।
সুতরাং শিয়া মাযহাবের মূল ভিত্তি কোরআন ও নির্ভরযোগ্য হাদীস এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ থাকলেও যেহেতু আমাদের মূল আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় সেহেতু এতে প্রবেশ করতে চাই না। আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় হলো শিয়া মাযহাবের সঙ্গে ইরানীদের সম্পর্ক। কোন কোন প্রাচ্যবিদ ও তাদের এ দেশীয় অনুচররা শিয়া মাযহাব ইরানীরা উদ্ভাবন করেছে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে যাতে করে এ মাযহাবের ছত্রছায়ার তার প্রাচীন আচার ও ধর্মনীতিকে সংরক্ষণ করা যায় বলে যে দাবি করেছেন এখানে আমরা তার জবাব দেব।
আরেক দল প্রাচ্যবিদ যাঁরা বলেন ইরানীরা শিয়া মাযহাব তৈরি করেনি ;বরং সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে পরাস্ত হওয়ার ফলশ্রুতিতে প্রতিরোধ হিসেবে এ মতাদর্শ গ্রহণ করেছে যাতে করে প্রাচীন বিশ্বাসকে এর ছায়ায় টিকিয়ে রাখা যায়-এ দৃষ্টিকোণ হতেও আমরা বিষয়টি আলোচনা করব।
এ বিষয় দু’
টি আমাদের পূর্ববর্তী আলোচনার ওপর নির্ভরশীল যেখানে আমরা ইরানীদের ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি জবরদস্তিমূলক নাকি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত তা বিশ্লেষণ করেছি। যদি এটি সত্য হতো ,ইরানীরা বাধ্য হয়ে পূর্ববর্তী ধর্ম পরিত্যাগ করেছে ও ইসলাম গ্রহণ করেছে তবে এরূপ ধারণা স্বাভাবিক ছিল যে ,তারা পূর্ববর্তী বিশ্বাসকে টিকিয়ে রাখার জন্য এরূপ প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু যখন প্রমাণিত হয়েছে আরব মুসলমানগণ কখনই ইরানীদের পূর্ববর্তী ধর্ম পরিত্যাগে বাধ্য করেনি ;বরং অনুমতি দিয়েছিল তাদের অগ্নিমন্দিরগুলো সংরক্ষণের ;এ জন্য যে ,আহলে কিতাবগণ (ইহুদী ,খ্রিষ্টান ,সাবেয়ী ,মাজুসী) জিম্মি হিসেবে মুসলমানদের অধীনে থাকায় আরবগণ তাদের উপাসনালয়ের সংরক্ষণকে নিজেদের দায়িত্ব মনে করত। তা ছাড়াও ইরানে বসবাসকারী কিছু সংখ্যক আরবের পক্ষে সম্ভব ছিল না কয়েক মিলিয়ন মানুষকে তাদের দীন পরিত্যাগে বাধ্য করা। কারণ সংখ্যায় যেমন তারা স্বল্প ছিল তেমনি যুদ্ধ সরঞ্জাম ও অন্যান্য দিক হতেও তারা ইরানীদের থেকে দুর্বল ছিল (আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি 170 হিজরীতে আব্বাসী খলীফা মামুনের শাসনামলে মুসলিম সেনা বাহিনীর বৃহদাংশ ইরানীদের দ্বারা গঠিত হয়েছিল)। তাই আরবদের পক্ষে সম্ভব ছিল না তাদের পূর্ববর্তী দীন পরিত্যাগে বাধ্য করা। তাহলে ইরানীদের কি প্রয়োজন ছিল পূর্ববর্তী ধর্মকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বাহ্যিকভাবে ইসলাম প্রকাশ করার বা শিয়া মাযহাবের আশ্রয় নেয়ার ?
তদুপরি আমরা পূর্বে প্রমাণ করেছি ইরানীদের ইসলাম গ্রহণ মন্থর প্রক্রিয়ায় হয়েছিল। ইরানীদের অন্তরে পবিত্র ইসলামের গভীর প্রভাব এবং যারথুষ্ট্র ধর্মের ওপর ইসলামের বিজয় ইরানীদের স্বাধীনতা অর্জনের পর ঘটেছিল। তাই এ অনর্থক কথার কোন মূল্য নেই।
স্বয়ং এডয়ার্ড ব্রাউন তাঁর গ্রন্থ