আশুরা সংকলন

আশুরা সংকলন11%

আশুরা সংকলন প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: ইমাম হোসাইন (আ.)

আশুরা সংকলন
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 51 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 78910 / ডাউনলোড: 7835
সাইজ সাইজ সাইজ
আশুরা সংকলন

আশুরা সংকলন

প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

এ বইটি ইমাম হোসাইন (আ.)-এর আন্দোলনের বিশ্লেষণ এবং আশুরার ঘটনাবলী ও শিক্ষা সম্পর্কে একটি সংকলন যা ঢাকাস্থ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলরের দফতরের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সকল আহলে বাইত প্রেমীর উদ্দেশ্যে নিবেদেন করা হলো যাতে তা তাদের মহান আল্লাহ অভিমুখে পূর্ণতার যাত্রা পথে আলোকবর্তিকা হয় ইনশাল্লাহ।

আশুরা সংকলন

ইমাম হোসাইন (আ.) -এর আন্দোলনের দর্শন ও শিক্ষা

এই বইটি আল হাসানাইন (আ.) ওয়েব সাইট কর্তৃক আপলোড করা হয়েছে ।

আশুরা সংকলন

ইমাম হোসাইন (আ.) -এর আন্দোলনের দর্শন ও শিক্ষা

সম্পাদনা পরিষদের সভাপতি

মোহাম্মদ আওরায়ী কারিমী

সম্পাদনা পরিষদের সদস্য

ড.জহির উদ্দিন মাহমুদ

মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস বাদশা

মো.আশিফুর রহমান

প্রকাশনা :

কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাস ,ঢাকা ,বাংলাদেশ

বাড়ি নং-৫৪ ,সড়ক নং-৮/এ ,ধানমন্ডি আ/এ ,ঢাকা-১২০৯।

ফোনঃ ৯১১৪০০০ ,৯১৩৫১৫৫

E-mail : dhaka.icro@gmail.com,website : dhaka.icro.ir

প্রকাশকাল : ২৪ডিসেরে ২০০৯

৬ মুহররম ১৪৩১হি.

১০পৌষ ১৪১৬ বা. :

Ashura Compilation [Philosophy and Lessons of the Movement of Imam Hosain (A.S.)];Chairman of the Editorial Board: Mohammad Oraei Karimi;Members of the Editorial Board: Dr. Zahir Uddin Mahmud,Mohammad Abdul Quddus Badsha,Md. Ashifur Rahman;Publisher: Office of the Cultural Counsellor,Embassy of the I.R. Iran,Dhaka;Publishing Date: Muharram ৬,১৪৩১ H.,২৪ December ২০০৯. Price: Tk. ২২০. ৪

ভূমিকা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

সালাম ও দরুদ বর্ষিত হোক ইসলামের মূর্ত প্রতীক ও একত্ববাদের স্বতঃপ্রকাশিত সারসত্যের ওপর ,যিনি স্রষ্টার সম্মুখে ইবাদাত বন্দেগী করার স্বরূপ ও পদ্ধতিকে স্পষ্ট করে বাৎলে দিয়েছেন। আর ইসলাম ও কুরআনের পতাকাতলেই এই ইসলামকে ধ্বংস করার যে কুফরী ও শিরকী চক্রান্ত তার বিরুদ্ধে যিনি সংগ্রাম করেছেন এবং সত্যিকার একত্ববাদকে তুলে ধরেছেন।

সালাম ও দরুদ বর্ষিত হোক প্রেমবৃত্তির মহান নেতার ওপর যিনি মাশুকের মুহাববাতে কিভাবে ইশকের লালন করতে হয় এবং কিভাবে প্রেমের পথে প্রাণ পণ করতে হয় আর মাশুকের সান্নিধ্য লাভ করতে কিভাবে আত্মত্যাগ করতে হয় ,তা প্রেমভক্তি ও ভালোবাসার গলির সকল বাসিন্দাকে শিখিয়ে দিয়ে গেছেন।

শহীদদের নেতা হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) বলেন : যেদি মুহাম্মাদ (সা.)-এর ধর্ম আমার নিহত হওয়া ছাড়া টিকে না থাকে তাহলে এসো হে তারবারী! নাও আমাকে। নিঃসন্দেহে কারবালার মর্ম বিদারী ঘটনা হলো মানব ইতিহাসের দীর্ঘ পরিক্রমক্কায় ঘটে যাওয়া অজস্র ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয় । এটা এমন এক বিস্ময়কর ঘটনা ,যার সামনে বিশ্বের মহান চিন্তাবিদরা থমকে দাড়াতে বাধ্য হয়েছেন ,পরম বিস্ময়ে আভিভূত হয়ে স্তুতি-বন্দনায় মুখরিত হয়েছেন এ নজিরবিহীন আত্মত্যাগে। কারণ ,কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের মহানায়করা অপমান আমাদের সয়না -এ স্লোগান ধ্বনিত করে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য হাতে গোনা কয়েকজন হওয়া সত্বেও খোদায়ী প্রেম ও শৌর্য়ে পূর্ণ টগবগে অন্তর নিয়ে জিহাদ ও শাহাদাতের ময়দানে আবির্ভূত হন এবং প্রতারণা ও প্রবঞ্চনার অধঃজগতাকে পেছনে ফেলেউর্ধ্ব জগতে মহান আল্লাহর সনে পাড়ি জমান। তার স্বীয় কথা ও কাজের দ্বারা জগতবাসীকে জানিয়ে দিয়ে যান যে ,‘‘ যে মৃত্যু সত্যের পথে হয় ,তা মধুর চয়েও সুধাময়।’’

বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমানের জীবনপটে যেমন ,তেমনি তাদের পবিত্র বিশ্বাসের পাদমূলে আশুরার সঞ্জীবনী ধারা প্রবাহমান। কারবালার আন্দোলন সুদীর্ঘ চৌদ্দশ বছর ধরে স্বচ্ছ-সুগভীর বারিধারা দ্বারা প্রাণসমূহের তৃষ্ণা নিবারণ করে এসেছে । আজ অবধি মূল্যবোধ ,আবেগ ,অনুভূতি ,বিচক্ষপূর্ণতা ও অভিপ্রায়ের অজস্র সূক্ষ্ণ ও স্থুল বলয় বিদ্যমান যা এই আশুরার অক্ষকে ঘিরে আবর্তনশীল । প্রেমের বৃত্ত অঙ্কনের কাটা-কম্পাস হলো এ আশুরা।

নিঃসন্দেহে এ কালজয়ী বিপ্লবের অন্তঃস্থ মর্মকথা এবং এই চেতনা ,লক্ষ ও শিক্ষা একটি সমৃদ্ধশালী ,নিখাদ ও প্রেরণাদায়ক সংস্কৃতি গঠন করে। প্রকৃত ইসলামের সুবিস্তৃত অঙ্গনে এবং আহলে বাইতের সুহৃদ ভক্তকুল ,ছোট-বড় ,জ্ঞানী-মুর্খ নির্বিশেষে সর্বদা এ আশুরা সংস্কৃতির সাথেই জীবনযাপন করেছে ,বিকশিত হয়েছে এবং এ জন্য আত্মাহুতি দিয়েছে। এ সংস্কৃতির চর্চা তাদের জীবনে এতদূর প্রসারিত হয়েছে যে ,জন্মক্ষণে নবজাতককে তারা সাইয়্যেদুশ শুহাদার তুরবাত (কারাবালার মাটি) ও ফোরাতের পানির স্বাদ আস্বাদেন করায় এবং দাফনের সময় কারবালার মাটি মৃতের সঙ্গে রাখে। আর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি হোসাইন ইবনে আলী (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তি পোষণ করে ,ইমাধ্যমের শাহাদাতের জন্য অশ্রুপাত করে । আর এই ভালোবাসা শৈশবে দুধপানের সাথে প্রবেশ করে আর শেষ নিশ্বাস ত্যাগের সাথে নিঃসরিত হয়ে যায়।

কারবালার আন্দোলন সম্পর্কে অদ্যবধি অসংখ্য রচনা ,গবেষণা এবং কাব্য রচিত হয়েছে। সূক্ষ চিন্তা ও ক্ষুরধার কলমের অধিকারী যারা ,তারা বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ও নানান দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এ কালজয়ী বিপ্লবের বিশ্লেষণ করেছেন। এ সকল রচনাকর্ম যদি একত্র করা হয় তাহলে তা পরিণত হবে এক মহাগ্রন্থাগারে। কিন্তু তবুও এ সম্পর্কে নব নব গবেষণা ও ভাবনার । অঙ্গন এখনো রয়ে গেছে।

সুধী পাঠক! এ মুহূর্তে যে বইখানি আপনার হাতে ,এটা ইমাম হোসাইন (আ.)-এর আন্দোলনের বিশ্লেষণ এবং আশুরার ঘটনাবলী ও শিক্ষা সম্পর্কে একটি সংকলন যা ঢাকাস্থ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলরের দফতরের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সকল আহলে বাইত প্রেমীর উদ্দেশ্যে নিবেদেন করা হলো যাতে তা তাদের মহান আল্লাহ অভিমুখে পূর্ণতার যাত্রা পথে আলোকবর্তিকা হয় ইনশাল্লাহ।

এখানে অত্যন্ত জরুরী মনে করছি আমার সহকর্মী ও প্রিয়ভাজন যারা এ সংকলন প্রস্তুত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে এবং সে সাথে তাদের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করছি।

মোহাম্মদ আওরায়ী কারিমী

কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাস ,ঢাকা ,বাংলাদেশ

১ মুহররম ,১৪৩১ হিঃ

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর ব্যক্তিত্ব

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মহিমান্বিত ব্যক্তিত্ব

জাভাদ মুহাদ্দেসী

নাম : হোসাইন (আল্লাহর আদেশক্রমে নির্ধারিত তৃতীয় ইমাম )। ডাকনাম : আবু আবদিল্লাহ। উপাধি : খামেসে আলে আবা , সিবত , শহীদ , ওয়াফী , যাকী। পিতা :হযরত ১ আলী ইবনে আবু তালিব (আ.) , মাতা : হযরত ফাতেমা (আ.)। জন্ম তারিখ : শনিবার , ৩ শাবান ৪র্থ হিজরী। জন্মস্থান : মদীনা। বয়সকাল : ৫৭ বছর। শাহাদাতের কারণ : ইয়াযীদ ক্ষমতাসীন হবার পর ইমাম হোসাইন তাকে অযোগ্য বলে মনে করতেন বিধায় তার হাতে বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। আর ইয়াযীদের স্বরূপ উদঘাটনের জন্য আল্লাহ তা আলার হুকুমে মদীনা থেকে মক্কায় ,এরপর কুফা ও কারবালার দিকে রওয়ানা হন। তিনি তার সহচরবৃন্দসহ তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ইসলামের দুশমনদের হাতে শাহাদাত বরণ করেন। তার হত্যাকাণ্ডরী : সালেহ ইবনে ওয়াহা মুযনী , সিনান ইবনে আনাস ও শিমর ইবনে যিলজওশন (তাদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হোক)। শাহাদাত বরণের দিন : ১০ মুহররম শুক্রবার , ৬১ হিজরী। শাহাদাত ও দাফনের স্থান : কারবালা (বর্তমান ইরাকে অবস্থিত)।

ইমাম হোসাইন নবী করীম (সা.)-এর বরকতপূর্ণ জীবনকালে শৈশবের ৬ বছর অতিবাহিত করেন।

তিনি ছিলেন উম্মতে মুহাম্মাদীর সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তিত্ব । হযরত নবী করীম (সা.) ও আলী (আ.)-এর বীরত্ব তার মধ্যে সমাবিষ্ট ছিল । আল্লাহ তা আলা তার মাযারের মাটিতে রোগমুক্তি এবং মাযারের অভ্যন্তরকে দোয়া কবুলের স্থানে পরিণত করেছেন।

পয়গাম্বর (সা.) তার সম্পর্কে বলেছেন : যে ব্যক্তি হোসাইনকে ভালোবাসে আল্লাহ তা আলা সেই ব্যক্তিকে ভালোবাসেন। পয়গাম্বর (সা.) তার এবং তার বড়ভাই ইমাম হাসন্তান (আ.) সম্পর্কে বলেছেন : আমার দুই সান্তান হাসন্তান ও হোসাইন উম্মতের সর্দার। তারা দায়িত্ব গ্রহণ করুক বা নাকরুক। ৫০ হিজরীতে ইমাম হাসন্তান (আ.)-এর শাহাদাত বরণের পর তিনি উম্মতের পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

আমীর মু আবিয়া ২০ বছর যাবদ জুলুমপূর্ণ শাসন ও হত্যাকাণ্ড বিশেষ করে আহলে বাইতের অনুসারীদের ওপর নির্যাতন পরিচালনার পর ৬০ হিজরীতে মারা যান। তিনি ইমাম হাসানের সঙ্গে কৃত চুক্তির বরখেলাফ করে স্বীয় সন্তান ইয়াযীদকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করেন। ইয়াযীদ ছিল দুশ্চরিত্র , মদ্যপায়ী ও ইসলামবিরোধী । সে প্রকাশ্যে ইসলামের পবিত্র বিধি- বিধানের অবমাননা করতো এবং মদপান করতো।

ইমাম হোসাইন (আ.) প্রথম থেকেই ইয়াযীদের বিরোধিতায় আত্মনিয়োগ করেন। ইয়াযীদ ক্ষমতায় বসেই মদীনার গভর্নরের কাছে লেখা একটি পত্রে আদেশ করে , হোসাইনের কাছ থেকে আনুগত্যের বাইয়াত গ্রহণ কর। যদি সে রাজি না হয় তাহলে হত্যা কর। ইমাম কিছুতেই ইয়াযীদের বাইয়াত করতে রাজি ছিলেননা । তাই তিনি মদীনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। সংবাদ পেয়ে কুফার লোকেরা ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কাছে অসংখ্য পত্র লিখে। পত্রে তাকে কুফা আসার অনুরোধ জানায়। ইমাম হোসাইনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মুসলিম ইবনে আকীলকে কুফায় প্রেরণ করেন। প্রথমে কুফার হাজার হাজার লোক মুসলিম ইবনে আকীলের সঙ্গে যোগ দেয় । কিন্তু ইয়াযীদের পক্ষ হতে কুফার গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ কুফায় প্রবেশ করলে কুফার লোকেরা প্রতারণাপূর্ণ নানা চালে ধোকায় পড়ে যায় এবং শপথ ভঙ্গ করে মুসলিম ইবনে আকীলকে নিঃসঙ্গ করে ফেলে।

ইবনে যিয়াদ ছিল ধোকাবাজ ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক । শেষ পর্যন্ত ইবনে যিয়াদ মুসলিম ইবনে আকীলকে বন্দি করে শহীদ করে। কুফার লোকেরা যে সময় মুসলিম ইবনে আকীলের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিল সে সময় মুসলিম ইমাম হোসাইন (আ.)-এর নিকট একটি পত্র লিখেন এবং তাকে সংবাদ দেন যাতে তিনি কুফায় আগমন করেন। ইমাম হোসাইন ও তার পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। কুফার কাছাকাছি পৌছেই তিনি কুফার জনগণের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ ও মুসলিম ইবনে আকীলের শহীদ হওয়ার সংবাদ পান।

উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ মুসলিমকে শহীদ করার পর কুফার ওপর পূর্ণ কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং হুর ইবনে ইয়াযীদ রিয়াহীকে ইমাম হোসাইন (আ.) ও তার সঙ্গীদের ওপর নজরদারি করার জন্য প্রেরণ করে । এরপর ওমর ইবনে সা দকে ৩০ হাজার সৈন্যসহ কারবালায় প্রেরণ করে । সে ওমর ইবনে সা দকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে , যদি সে ইমাম হোসাইনকে হত্যা করে তাহলে তাকে রেই শহরের গভর্নর করা হবে। রেই শহরের গভর্নরের পদ পাওয়ার লোভে কারবালায় আসার পর ওমর ইবনে সা দ ইমাম হোসাইন ও তার সঙ্গীদের অবরোধ করার জন্য নির্দেশ দেয় এবং তাদের পানি সংগ্রহের পথ করে দেয়া হয়।

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর সঙ্গী-সাথীরা ছিলেন তখনকার দিনের সবচেয়ে সাহসী পুরুষ। তাদের সংখ্যা ছিল অনুর্ধ্ব ৭২ জন । তারা ১০ মুহররম তারিখে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা হোসাইন (আ.)-এর প্রতিরক্ষা করতে গিয়ে মর্যাদার সাথে শাহাদাত বরণ করেন।

কারবালার যুদ্ধ যদিও সময়ের বিচারে খুব সংক্ষিপ্ত ছিল এবং কেবল একদিন অর্থাৎ ১০ মুহররম সকাল থেকে আসরের সময় পর্যন্ত স্থায়ী ছিল , কিন্তু এর প্রতিটি মুহূর্ত ছিল বীরত্ব , আত্মত্যাগ , ঈমান ও ইখলাস (নিষ্ঠা)-এর পরাকাষ্ঠা ।

কারবালার ঘটনা একটি বিশ্ববিদ্যালয় তুল্য । যেখানে দুগ্ধপোষ্য শিশু হতে শ্মশ্রুমণ্ডিত বৃদ্ধ লোকও মানবজাতির সামনে মানব মর্যাদা ও স্বাধীন চেতনার শিক্ষা দেন। যেখানে ইমাম হোসাইন (আ.) ও তার সহচরদের পবিত্র ইসলামকে নতুন জীবন দান করে , আর উমাইয়্যা বংশের নষ্ট চরিত্রের শাসকদের পতনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।

ইমাধ্যমের বিনয় ও নম্রতা

ইমাম হোসাইন (আ.) একবার কিছু সংখ্যক গরীব লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন , যারা একটি কুড়েঘরে বসে কিছু একটা খাচ্ছিলো । তারা ইমাম হোসাইনকে অনুরোধ জানালো তাদের সাথে খাবারে অংশ গ্রহণের জন্য । তিনি তাদের দাওয়াত গ্রহণ করলেন এবং বললেন যে , আল্লাহ তা আলা অহংকারীদের ভালোবাসেন না। খাবার গ্রহণের পর ইমাম তাদের দিকে ফিরে বললেন : আমি আপনাদের দাওয়াত গ্রহণ করেছি , এখন আপনাদের পালা । তারাও ইমাধ্যমের দাওয়াত গ্রহণ করলো এবং ইমাধ্যমের বাড়িতে গেলো । তিনি তার খাদেম রুবাবকে নির্দেশ দিলেন যাতে বাড়িতে যা কিছু সঞ্চিত আছে সব তাদের দিয়ে দেন।

ইমাম হোসাইন ( আ .)- এর আদর্শ জীবন

আল্লাহ তা আলা যখন মানব জাতির জন্য পথপ্রদর্শক প্রেরণ করেন এবং পথ ও পথচলা নির্ণয়ের জন্য তাকে হুজ্জাত হিসাবে নির্ধারণ করেন তখন তিনি তারই আলোকে উম্মতের আত্মগঠন , আল্লাহর বন্দেগী ও জীবনের পূর্ণতা অর্জনের জন্য যে আদশের প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে দেন । হোসাইন ইবনে আলী (আ.) ছিলেন এ ধরনের পূর্ণাঙ্গ আদর্শ । কাজেই তার কাছ থেকে শুধু বীরত্ব , আত্মত্যাগ , জিহাদ ও জুলুম নাশের আদর্শ নয় ; বরং আল্লাহর ইবাদাত , দানশীলতা , পৌরুষ , উদারতা , কুরআনের প্রতি হৃদ্যতা ও মানুষের প্রতি মর্যাদা দানের শিক্ষাও আমাদের নিতে হবে।

নামায বন্দেগীর চুড়ান্ত শিখর

ইমাম হোসাইন (আ.) আশুরার রাতে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ , একাগ্রতায় ইবাদাত , কুরআন তেলাওয়াত ও নামাযের জন্য দুশমনের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছিলেন । আশুরার দিন যখন প্রচণ্ড লড়াই চলছিল , তার মধ্যেও তিনি যোহরের নামাযের জন্য দড়িয়ে যান। এর মাধ্যমে তিনি আমাদের এ শিক্ষা দেন যে , তিনি দীনের জন্য এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রাণ দিয়েছেন ।

আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট

আল্লাহর বন্দেগীর পূর্ণতা হচ্ছে সন্তুষ্টির মধ্যে । ইমাম হোসাইন ইবনে আলী (আ.) কারবালার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবার সময় আশা প্রকাশ করেন যে , আল্লাহ তা আলা তার জন্য যা ইচ্ছা করেছেন তা শুভ ও কল্যাণকর হবে । তা বিজয় লাভ হোক কিংবা শাহাদাত বরণ । যখন তিনি শাহাদাত বরণ করেন তখনও তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়েছিল এবাক্য: তোমার সন্তুষ্টির প্রতি সন্তুষ্ট , আর তোমার আদেশের সামনে সমর্পিত । এটি বন্দেগীতে ইখলাস , আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা এবং তার জিহাদ ও শাহাদাত আল্লাহর রঙে রঙিন হওয়ার প্রমাণ বহন করে । তিনি বহুবার বলেছেন : আমাদের আহলে বাইতের সন্তুষ্টি আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুগত ।

ধৈর্য ও অবিচলতা

সাইয়্যেদুশ শুহাদা ইমাম হোসাইন ছিলেন দুঃখ-মুসিবত , জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত , তারবারির আঘাত , আপনজন হারানোর বেদনা ও সন্তানদের শাহাদাত বরণের মতো কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ও অবিচলতার পরাকাষ্ঠা। তিনি আশুরার দিন সাবরান বানিল কেরাম ( হে সম্মানিত বংশ! ধৈর্যধারণ কর) উক্তির দ্বারা আপন সঙ্গীদেরকে জিহাদের কষ্ট ও তারবারির আঘাতের ওপর অবিচল থাকার আহবান জানান।

আশুরার দিন আপন সন্তান আলী আসগারকেও ইয়া বুনাইয়া ইসবির কালীলান ( হে বৎস ! একটুখানি ধৈর্য ধারণ কর) বলে ধৈর্য ধারণের আহবান জানান । আপন বোনকেও সেই রক্তলাল দিনে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দেন।

মহত্ব

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মহত্ব ও বদান্যতা লোক মুখে প্রসিদ্ধ ছিল। ইমাম সাজ্জাদ (আ.)- এর বর্ণনা মোতাবেক ইমাম হোসাইন (আ.) খাদ্য ও পানীয়ের বোঝা নিজেই বহন করতেন । তিনি অনাথ , গরীব ও বিধবা নারীদের ঘরে নিজেই বোঝা বহন করে নিয়ে যেতেন। এর ফলে তার কাধের ওপর দাগ পড়ে গিয়েছিল।

বস্তুত মানবপ্রেম , দুঃখী মানুষের প্রতি মমতা , বিনয় , নম্রতা ও মানবীয় সংবেদেনশীলতা শিখতে হবে হোসাইন ইবনে আলী (আ.)-এর কাছ থেকে।

আধ্যাত্মিক চেতনা

আল্লাহর ভয় , অশ্রুসজল নয়ন , দোয়া ও প্রার্থনার অবস্থায় থাকা , আল্লাহর প্রশংসায় রত থাকা এবং আল্লাহর অগণিত নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরা জীবন , রাতে ও দিনে একাগ্র চিত্তে বেশি বেশি নফল ইবাদাত , পায়ে হেটে বারে বারে হজ্বে গমন করা , শ্রদ্ধেয়া নানী খাদিজা (আ.)-এর কবর যিয়ারত করা , তার জন্য দোয়া ও কান্নাকাটি করা , জাবালে রহমতের পাদদেশে দড়িয়ে প্রেমাসক্ত হৃদয়ে তন্ময়ভাবে মোনাজাত , আর আরাফাতের ময়দানে তার খাস মোনাজাত যা সবচেয়ে সুন্দর ও সমৃদ্ধ মোনাজাত হিসাবে প্রসিদ্ধ- এসব কিছুই তার অতি উচ্চতর আধ্যাত্মিক চেতনা , ভাবধারা ও বৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক।

আল্লাহ প্রেম

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জীবনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি অন্তরের ভালোবাসা ও আসক্তি ।

বর্ণিত হয়েছে যে , ইমাম হোসাইন (আ.) শাহাদাতের মুহূর্তের দিকে যতই এগিয়ে গেছেন তার চেহারা ততবেশি উজ্জল হয়েছে এবং তা আল্লাহর প্রতি সাইয়্যেদুশ শুহাদার ভালোবাসার আরেকটি প্রমাণ। কেননা , তিনি মিলনের মাধ্যমে বিচ্ছেদের অবসান দখতে পাচ্ছিলেন , তাই ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন।

এ মনোভাব ও প্রেমাসক্তি নিঃসন্দেহে হোসাইন (আ.)-এর বন্ধুদের মাঝেও দৃশ্যমান ছিল।

আল্লাহর যিকির

আল্লাহর স্মরণের যে মনিমুক্তা তা একটি খোদায়ী সাওগাত।

হোসাইন ইবনে আলী (আ.) ছিলেন আল্লাহর যাকের (নিত্য স্মরণকারী) বান্দা । সব সময় আল্লাহর যিকির তার মুখে এবং আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা তার অন্তরে জাগরুক ছিল। শান্তিতে , দুঃখে , সমস্যায় ,আরামে আল্লাহর স্মরণেই তার মনের প্রশান্তি ছিল ।

তিনি কেবল আশুরার দিন সকালেই হে আল্লাহ! সকল কঠিন মুহূর্তে তুমিই আমার একমাত্র নির্ভরতা বলে আর্তি জানাননি ; কেবল আশুরার দিন প্রতিটি আক্রমণ রচনায় লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা বলেই আল্লাহর সাথে তার হৃদয়ের সম্পর্কের পুনরাবৃত্তি করেছেন তা নয় ; বরং সবসময় আল্লাহ আকবার , আল হামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল প্রভৃতি বাক্যদ্বারা আল্লাহর প্রশংসায় রত থাকতেন । দুঃখ-মুসিবতের সময় পাঠ করার যে যিকির ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন তা তিনি বিভিন্ন সময়ে , বিশেষ করে মক্কা থেকে কারবালা পানে যাবার সময় বার বার উচ্চারণ করেছেন। ইমাম হোসাইন (আ.)-এর দৃষ্টিতে কুফা বাহিনী যাদেরকে সেই জঘন্য অপরাধ সংঘটনের জন্য জমায়েত করা হয়েছিল তাদের সবচেয়ে বড় দৃর্ভাগ্য ছিল তারা আল্লাহর স্মরণকে ভুলে গিয়েছিল। তিনি যখন দেখলেন যে , তারা কিছুতেই হিংসা-বিদ্বেষ ত্যাগ করছে না এবং তাকে হত্যা করার জন্য বদ্ধপরিকর , তখন তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বললেন: শয়তান তোমাদের ওপর জেকে বসেছে , মহান আল্লাহর স্মরণকে ভুলিয়ে দিয়েছে।

মোটকথা , ইমাম হোসাইন (আ.)-এর আধ্যাত্মিকতা , আল্লাহর প্রতি নিবিষ্টতা ও রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগী হতে আমাদের আদর্শ গ্রহণ করতে হবে। অনুরূপভাবে শিক্ষা , জ্ঞানচর্চা , ছেলে- মেয়েদের শিক্ষা দান , মানুষের সাথে সুন্দর আচরণ , গরীবের জন্য দরদ , দানশীলতা , ত্যাগ , মানবপ্রেম , দুঃখী মানুষের দুর্দশা লাঘব প্রভৃতি ক্ষেত্রেও তাকে আমাদের অনুসরণ করতে হবে।

হোসাইন ইবনে আলী (আ.) সর্বকালের সব জায়গার সব মানুষের জন্য আদর্শ । যুদ্ধের ময়দানে যেমন , তেমনি শান্তির সময়ও। বিশ্বাস ও আচরণের আঙিনায় যেমন , তেমনি দুশমনের সাথে শত্রুতার বেলায়ও। সততা , পবিত্রতা , বীরত্ব , সাহসিকতা , শাহাদাত পিয়াসা , ইবাদাত- বন্দেগী ও কান্নাকাটি সর্বাবস্থায় তিনি মানুষের জন্য আদর্শ ।

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পথ চলার আদর্শ আমাদের সব সময়ের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে থাকুক ।

অনুবাদ : মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

নিশ্চয়ই হোসাইন হেদায়াতের আলোকবর্তিকা ও নাজাতের তরী।

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)

মদীনা হতে ইমাম হোসাইনের (আ.) হিজরত

ওয়ালিদ ও মারওয়ানের সাথে সাক্ষাতের পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ লিখেছেন- ঐদিন ভোরে অর্থাৎ ৬০ হিজরীর ৩রা শাবান ইমাম হোসাইন (আ.) মক্কার দিকে রওয়ানা হন । আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর তার খেদমতে উপস্থিত হন । তারা বলেন যে , আপনি মক্কাতেই অবস্থান করুন । তিনি বললেন- রাসূলে খোদার (সা.) তরফ থেকে আমার উপর যে নির্দেশ আছে তা আমাকে পালন করতেই হবে । ইবনে আব্বাস ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলেন । পথে তিনি বলছিলেন-واحسینا হায় হোসাইন ! এরপর আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আসেন এবং বললেন- এখানকার পথহারা লোকদের সংশোধন করাই উত্তম হবে । যুদ্ধের পদক্ষেপ নিবেন না । তিনি বললেন-

اما علمت ان من هوان الدنیا علی الله ان راس یحیی بن زکریا اهدی الی بغی من بغایا بنی اسرائیل

“ আপনি কি জানেন না , দুনিয়া এতখানি নিকৃষ্ট যে , ইয়াহিয়া ইবনে যাকারিয়া (আ.) এর মাথা বানি ইসরাইলের এক অবাধ্যের কাছে হাদিয়া হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । আপনার কি জানা নেই যে বনি ইসরাইল সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ৭০ জন নবীকে হত্যা করে । এরপর বাজারে এসে তারা কেনা কাটায় মশগুল হয় । অর্থাৎ যেন কোন ঘটনাই ঘটেনি । তবুও মহান আল্লাহ তাআলা তাদের আযাব ত্বরান্বিত করেননি । তাদেরকে অবকাশ দেন । আর অবকাশ দানের পরই চরম প্রতিশোধ গ্রহণ করেন । হে আব্দুল্লাহ ! মহান আল্লাহর ক্রোধ ও আযাবকে ভয় করুন এবং আমার সাহায্য থেকে পিছপা হবেন না । ”

হোসাইন (আ.) এর প্রতি কুফাবাসীর দাওয়াত

কুফাবাসীরা হযরত হোসাইন (আ.) এর মক্কা আগমন এবং ইয়াজিদের হাতে বাইআত গ্রহণে তার অস্বীকৃতির খবর জানত । এ খবর পেয়েই তারা সুলাইমান ইবনে সা দ খাজায়ীর ঘরে সমবেত হয় । সমাবেশে সুলাইমান ইবনে সা দ দাড়িয়ে সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন । বক্তব্য শেষে তিনি বলেন ওহে আলীর অনুসারীরা! তোমরা সবাই শুনেছ যে , মুআবিয়া মরে গেছে এবং নিজের হিসাব কিতাবের জন্য আল্লাহর দরবারে পৌছে গেছে । তার কৃতকর্মের ফল সে পাবে । তার ছেলে ইয়াজিদ ক্ষমতায় বসেছে । আপনারা আরো জানেন যে , হোসাইন ইবনে আলী (আ.) তার সাথে বিরোধিতা করেছেন এবং তিনি উমাইয়ার জালিম ও খোদাদ্রোহীদের দূরাচার থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন । তোমরা তার পিতার অনুসারী । হোসাইন (আ.) আজ তোমাদের সমর্থন ও সহযোগিতার মুখাপেক্ষী । যদি এ ব্যপারে নিশ্চিত হও যে , তাকে সাহায্য করবে এবং তার দুশমনদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে , তাহলে লিখিত আকারে নিজের প্রস্তুতির কথা তাকে জানিয়ে দাও । যদি ভয় পাও এবং আশংকা কর যে , তোমাদের মধ্যে গাফলতি ও দুর্বলতা প্রকাশ পাবে , তাহলেও তাকে জানিয়ে দাও , তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দাও । তাকে ধোকা দিও না । এরপর তিনি নিম্নোক্ত বিষয়বস্তুর উপর একটি পত্র লেখেন-

بسم الله الرحمن الرحیم

এ পত্র হোসাইন ইবনে আলী (আ.) সমীপে সুলাইমান ইবনে সা দ খাজায়ী , মুসাইয়্যেব ইবনে নাজরা , রেফাআ ইবনে শাদ্দাদ , হাবিব ইবনে মাজাহের আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়ায়েলসহ একদল মুমিন ও অনুসারীর পক্ষ হতে প্রেরিত হল ।

সালামের পর আল্লাহর তা ’ রিফ ও প্রশংসা যে , তিনি আপনার ও আপনার পিতার দুশমনদের ধ্বংস করেছেন । সেই জালিম ও রক্তপিপাসু , যে উম্মতের শাসন ক্ষমতা তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে অন্যায়ভাবে চেপে বসেছে এবং মুসলমানদের বাইতুল মাল আত্মসাৎ করেছে , মন্দ লোকদের বাচিয়ে রেখেছে , আল্লাহর সম্পদকে অবাধ্য দুরাচারীদের হাতে তুলে দিয়েছে , সামুদ সম্প্রদায় যেভাবে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হয়েছে তারাও সেভাবে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হোক । আপনি ছাড়া আমাদের আজ কোন নেতা নেই । কজেই আপনি যদি কষ্ট করে আমাদের শহরে তাশরীফ আনেন তাহলে বড়ই অনুগ্রহ হবে । আশা করি , আপনার মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদেরকে সঠিক পথে হেদায়েত করবেন ।

কুফার গভর্ণর নোমান ইবনে বশির দারুল এমারাত ’ প্রাসাদে রয়েছে । কিন্তু আমরা তার পেছেনে জামাত ও জুমার নামাজে শরীক হইনি । ঈদের দিন তার সাথে ঈদগাহে যাইনি । যদি শুনতে পাই যে , আপনি কুফায় আসছেন তাহলে তাকে কুফা থেকে বিতাড়িত করে সিরিয়া পাঠিয়ে দেব । হে পয়গাম্বরের সন্তান আপনার প্রতি সালাম , আপনার পিতার পবিত্র রুহের প্রতি সালাম ।

و السلام علیک و رحمة الله و برکته

و لا حول ولا قوة الا بالله العلی العظیم

চিঠিখানা লেখার পর পাঠিয়ে দিল । দুইদিন অপেক্ষার পর আর একদল লোককে প্রায় ১৫টি চিঠি নিয়ে হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর কাছে পাঠিয়ে দিল । ঐ সব চিঠির প্রত্যেকটিতে দুই কি তিন বা চার জনের স্বাক্ষর ছিল । কিন্তু হোসাইন (আ.) এত সব চিঠিপত্র পাওয়ার পরও নীরব রইলেন তাদের কোন পত্রের উত্তর দিলেন না । এমন কি মাত্র এক দিনেই ৩০০ টি চিঠি এসে তার হাতে পৌছে । এরপরও পর্যায়ক্রমে একের পর এক চিঠি আসছিল । তার চিঠি ১২হাজার ছাড়িয়ে যায় । সর্বশেষ যে চিঠিখানা তার হাতে এসে পৌছে তা ছিল হানি ইবনে হানি ছবিয়ী এবং সায়ীদ ইবনে আব্দুল্লাহ হানাফীর । তারা উভয়ে ছিল কুফার অধিবাসী । ঐ পত্রে তারা লিখেন-

بسم الله الرحمن الرحسم

ইবনে হোসাইন আলী (আ.) এর খেদমতে তার ও তার পিতার অনুসারীদের পক্ষ হতে প্রেরিত হলো । সালাম বাদ জনগন আপনার আগমনের অপেক্ষায়। আপনি ছাড়া কাউকে তারা চায় না । হে নবীর সন্তান ! অতি শীঘ্র আপনি আমাদের কাছে চলে আসুন । কেননা , বাগ-বাগিচাগুলোতে সবুজের সমারোহ এসেছে , ফলগুলো পেকেছে , লতাগুল্ম জেগে উঠেছে এবং সবুজ পত্রে গাছের সৌন্দর্য শোভায় মাতিয়ে তুলেছে । আসুন আপনি আমাদের মাঝে আসুন । কেননা আপনার সৈন্যদলের মাঝেই তো আপনি আসবেন ।

و السلام علیک و رحمة الله وبرکته و علی ابیک من قبلک

চিঠি পাওয়ার পর পত্র বাহক দু জনের কাছে হোসাইন ইবনে আলী (আ.) জিজ্ঞেস করেন এ চিঠিগুলো কে কে লিখেছে । তারা বলল , হে আল্লাহর রাসুলের সন্তান! পত্রের লেখকরা হলেন-শাব্স ইবনে রাবায়ী , হাজার ইবনে আবজার , ইয়াজিদ ইবনে হারেছ , ইয়াজিদ ইবনে রোয়াম , উরওয়া ইবনে কাইছ , আমর ইবনে হাজ্জাজ এবং মুহাম্মদ ইবনে ওমর ইবনে আতারেদ ।

মুসলিম ইবনে আকিলের কুফা গমন

এরুপ পরিস্থিতিতে হোসাইন ইবনে আলী (আ.)একদিন কাবাঘরের পাশে গিয়ে রুকন ও মাকামে ইব্রাহীমের মাঝখানে দাড়িয়ে দু রাকত নামায আদায় এবং মহান আল্লাহর দরবারে পরিস্থিতির কল্যাণকর পরিণতির জন্য দোয়া করেন । অতঃপর মুসলিম ইবনে আকিলকে ডেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন ।

এরপর ইমাম হোসাইন (আ.) কুফাবাসীর চিঠির জবাব লিখে মুসলিম ইবনে আকিলের মাধ্যমে প্রেরণ করেন। জবাবী পত্রে তাদের আমন্ত্রণ কবুলের ওয়াদা দিয়ে লেখা ছিল- আমি আমার চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে তোমাদের কাছে পাঠালাম যাতে তোমাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ করে সে সম্পর্কে আমাকে অবহিত করে ।

মুসলিম ইমামের পত্র নিয়ে কুফায় আসেন । কুফাবাসী হোসাইন ইবনে আলী (আ.) ও মুসলিম ইবনে আকিলকে পেয়ে আনন্দিত হল । তাকে মুখতার ইবনে আবী ওবায়দা সাকাফীর বাড়িতে থাকতে দিলেন । অনুসারীরা দলে দলে মুসলিম ইবনে আকিলের সাথে সাক্ষাত করতে আসতে লাগল । প্রত্যেক দল আসার সাথে সাথে মুসলিম ইমামের পত্র পড়ে শুনাতে থাকেন । আনন্দে দর্শনার্থীদের অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল এবং তার হাতে বাইআত গ্রহণ করছিল । দেখতে দেখতে আঠারশো লোক তার হাতে বাইআত গ্রহণ করে ।

মদীনা হতে ইমাম হোসাইনের (আ.) হিজরত

ওয়ালিদ ও মারওয়ানের সাথে সাক্ষাতের পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ লিখেছেন- ঐদিন ভোরে অর্থাৎ ৬০ হিজরীর ৩রা শাবান ইমাম হোসাইন (আ.) মক্কার দিকে রওয়ানা হন । আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর তার খেদমতে উপস্থিত হন । তারা বলেন যে , আপনি মক্কাতেই অবস্থান করুন । তিনি বললেন- রাসূলে খোদার (সা.) তরফ থেকে আমার উপর যে নির্দেশ আছে তা আমাকে পালন করতেই হবে । ইবনে আব্বাস ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলেন । পথে তিনি বলছিলেন-واحسینا হায় হোসাইন ! এরপর আব্দুল্লাহ ইবনে উমর আসেন এবং বললেন- এখানকার পথহারা লোকদের সংশোধন করাই উত্তম হবে । যুদ্ধের পদক্ষেপ নিবেন না । তিনি বললেন-

اما علمت ان من هوان الدنیا علی الله ان راس یحیی بن زکریا اهدی الی بغی من بغایا بنی اسرائیل

“ আপনি কি জানেন না , দুনিয়া এতখানি নিকৃষ্ট যে , ইয়াহিয়া ইবনে যাকারিয়া (আ.) এর মাথা বানি ইসরাইলের এক অবাধ্যের কাছে হাদিয়া হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । আপনার কি জানা নেই যে বনি ইসরাইল সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ৭০ জন নবীকে হত্যা করে । এরপর বাজারে এসে তারা কেনা কাটায় মশগুল হয় । অর্থাৎ যেন কোন ঘটনাই ঘটেনি । তবুও মহান আল্লাহ তাআলা তাদের আযাব ত্বরান্বিত করেননি । তাদেরকে অবকাশ দেন । আর অবকাশ দানের পরই চরম প্রতিশোধ গ্রহণ করেন । হে আব্দুল্লাহ ! মহান আল্লাহর ক্রোধ ও আযাবকে ভয় করুন এবং আমার সাহায্য থেকে পিছপা হবেন না । ”

হোসাইন (আ.) এর প্রতি কুফাবাসীর দাওয়াত

কুফাবাসীরা হযরত হোসাইন (আ.) এর মক্কা আগমন এবং ইয়াজিদের হাতে বাইআত গ্রহণে তার অস্বীকৃতির খবর জানত । এ খবর পেয়েই তারা সুলাইমান ইবনে সা দ খাজায়ীর ঘরে সমবেত হয় । সমাবেশে সুলাইমান ইবনে সা দ দাড়িয়ে সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন । বক্তব্য শেষে তিনি বলেন ওহে আলীর অনুসারীরা! তোমরা সবাই শুনেছ যে , মুআবিয়া মরে গেছে এবং নিজের হিসাব কিতাবের জন্য আল্লাহর দরবারে পৌছে গেছে । তার কৃতকর্মের ফল সে পাবে । তার ছেলে ইয়াজিদ ক্ষমতায় বসেছে । আপনারা আরো জানেন যে , হোসাইন ইবনে আলী (আ.) তার সাথে বিরোধিতা করেছেন এবং তিনি উমাইয়ার জালিম ও খোদাদ্রোহীদের দূরাচার থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন । তোমরা তার পিতার অনুসারী । হোসাইন (আ.) আজ তোমাদের সমর্থন ও সহযোগিতার মুখাপেক্ষী । যদি এ ব্যপারে নিশ্চিত হও যে , তাকে সাহায্য করবে এবং তার দুশমনদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে , তাহলে লিখিত আকারে নিজের প্রস্তুতির কথা তাকে জানিয়ে দাও । যদি ভয় পাও এবং আশংকা কর যে , তোমাদের মধ্যে গাফলতি ও দুর্বলতা প্রকাশ পাবে , তাহলেও তাকে জানিয়ে দাও , তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দাও । তাকে ধোকা দিও না । এরপর তিনি নিম্নোক্ত বিষয়বস্তুর উপর একটি পত্র লেখেন-

بسم الله الرحمن الرحیم

এ পত্র হোসাইন ইবনে আলী (আ.) সমীপে সুলাইমান ইবনে সা দ খাজায়ী , মুসাইয়্যেব ইবনে নাজরা , রেফাআ ইবনে শাদ্দাদ , হাবিব ইবনে মাজাহের আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়ায়েলসহ একদল মুমিন ও অনুসারীর পক্ষ হতে প্রেরিত হল ।

সালামের পর আল্লাহর তা ’ রিফ ও প্রশংসা যে , তিনি আপনার ও আপনার পিতার দুশমনদের ধ্বংস করেছেন । সেই জালিম ও রক্তপিপাসু , যে উম্মতের শাসন ক্ষমতা তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে অন্যায়ভাবে চেপে বসেছে এবং মুসলমানদের বাইতুল মাল আত্মসাৎ করেছে , মন্দ লোকদের বাচিয়ে রেখেছে , আল্লাহর সম্পদকে অবাধ্য দুরাচারীদের হাতে তুলে দিয়েছে , সামুদ সম্প্রদায় যেভাবে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হয়েছে তারাও সেভাবে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হোক । আপনি ছাড়া আমাদের আজ কোন নেতা নেই । কজেই আপনি যদি কষ্ট করে আমাদের শহরে তাশরীফ আনেন তাহলে বড়ই অনুগ্রহ হবে । আশা করি , আপনার মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদেরকে সঠিক পথে হেদায়েত করবেন ।

কুফার গভর্ণর নোমান ইবনে বশির দারুল এমারাত ’ প্রাসাদে রয়েছে । কিন্তু আমরা তার পেছেনে জামাত ও জুমার নামাজে শরীক হইনি । ঈদের দিন তার সাথে ঈদগাহে যাইনি । যদি শুনতে পাই যে , আপনি কুফায় আসছেন তাহলে তাকে কুফা থেকে বিতাড়িত করে সিরিয়া পাঠিয়ে দেব । হে পয়গাম্বরের সন্তান আপনার প্রতি সালাম , আপনার পিতার পবিত্র রুহের প্রতি সালাম ।

و السلام علیک و رحمة الله و برکته

و لا حول ولا قوة الا بالله العلی العظیم

চিঠিখানা লেখার পর পাঠিয়ে দিল । দুইদিন অপেক্ষার পর আর একদল লোককে প্রায় ১৫টি চিঠি নিয়ে হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর কাছে পাঠিয়ে দিল । ঐ সব চিঠির প্রত্যেকটিতে দুই কি তিন বা চার জনের স্বাক্ষর ছিল । কিন্তু হোসাইন (আ.) এত সব চিঠিপত্র পাওয়ার পরও নীরব রইলেন তাদের কোন পত্রের উত্তর দিলেন না । এমন কি মাত্র এক দিনেই ৩০০ টি চিঠি এসে তার হাতে পৌছে । এরপরও পর্যায়ক্রমে একের পর এক চিঠি আসছিল । তার চিঠি ১২হাজার ছাড়িয়ে যায় । সর্বশেষ যে চিঠিখানা তার হাতে এসে পৌছে তা ছিল হানি ইবনে হানি ছবিয়ী এবং সায়ীদ ইবনে আব্দুল্লাহ হানাফীর । তারা উভয়ে ছিল কুফার অধিবাসী । ঐ পত্রে তারা লিখেন-

بسم الله الرحمن الرحسم

ইবনে হোসাইন আলী (আ.) এর খেদমতে তার ও তার পিতার অনুসারীদের পক্ষ হতে প্রেরিত হলো । সালাম বাদ জনগন আপনার আগমনের অপেক্ষায়। আপনি ছাড়া কাউকে তারা চায় না । হে নবীর সন্তান ! অতি শীঘ্র আপনি আমাদের কাছে চলে আসুন । কেননা , বাগ-বাগিচাগুলোতে সবুজের সমারোহ এসেছে , ফলগুলো পেকেছে , লতাগুল্ম জেগে উঠেছে এবং সবুজ পত্রে গাছের সৌন্দর্য শোভায় মাতিয়ে তুলেছে । আসুন আপনি আমাদের মাঝে আসুন । কেননা আপনার সৈন্যদলের মাঝেই তো আপনি আসবেন ।

و السلام علیک و رحمة الله وبرکته و علی ابیک من قبلک

চিঠি পাওয়ার পর পত্র বাহক দু জনের কাছে হোসাইন ইবনে আলী (আ.) জিজ্ঞেস করেন এ চিঠিগুলো কে কে লিখেছে । তারা বলল , হে আল্লাহর রাসুলের সন্তান! পত্রের লেখকরা হলেন-শাব্স ইবনে রাবায়ী , হাজার ইবনে আবজার , ইয়াজিদ ইবনে হারেছ , ইয়াজিদ ইবনে রোয়াম , উরওয়া ইবনে কাইছ , আমর ইবনে হাজ্জাজ এবং মুহাম্মদ ইবনে ওমর ইবনে আতারেদ ।

মুসলিম ইবনে আকিলের কুফা গমন

এরুপ পরিস্থিতিতে হোসাইন ইবনে আলী (আ.)একদিন কাবাঘরের পাশে গিয়ে রুকন ও মাকামে ইব্রাহীমের মাঝখানে দাড়িয়ে দু রাকত নামায আদায় এবং মহান আল্লাহর দরবারে পরিস্থিতির কল্যাণকর পরিণতির জন্য দোয়া করেন । অতঃপর মুসলিম ইবনে আকিলকে ডেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন ।

এরপর ইমাম হোসাইন (আ.) কুফাবাসীর চিঠির জবাব লিখে মুসলিম ইবনে আকিলের মাধ্যমে প্রেরণ করেন। জবাবী পত্রে তাদের আমন্ত্রণ কবুলের ওয়াদা দিয়ে লেখা ছিল- আমি আমার চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে তোমাদের কাছে পাঠালাম যাতে তোমাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ করে সে সম্পর্কে আমাকে অবহিত করে ।

মুসলিম ইমামের পত্র নিয়ে কুফায় আসেন । কুফাবাসী হোসাইন ইবনে আলী (আ.) ও মুসলিম ইবনে আকিলকে পেয়ে আনন্দিত হল । তাকে মুখতার ইবনে আবী ওবায়দা সাকাফীর বাড়িতে থাকতে দিলেন । অনুসারীরা দলে দলে মুসলিম ইবনে আকিলের সাথে সাক্ষাত করতে আসতে লাগল । প্রত্যেক দল আসার সাথে সাথে মুসলিম ইমামের পত্র পড়ে শুনাতে থাকেন । আনন্দে দর্শনার্থীদের অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল এবং তার হাতে বাইআত গ্রহণ করছিল । দেখতে দেখতে আঠারশো লোক তার হাতে বাইআত গ্রহণ করে ।


4

5

6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18

19

20

21

22

23

24

25

26