ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মাথার সমাধিস্থল
১০ নং প্রশ্ন : ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পবিত্র মাথা কোথায় দাফন করা হয় ?
উত্তর : ইমাম হোসাইন (আ.) এবং অন্যান্য শহীদের মাথা কোথায় দাফন করা হয় তা নিয়ে শিয়া ও সুন্নিদের ইতিহাস গ্রন্থে এবং শিয়াদের হাদীস গ্রন্থে প্রচুর মতানৈক্য পরিলক্ষিত হয় । তবে এ ব্যাপারে যেসব মতামত উল্লেখ করা হয়েছে তা যথেষ্ট বিশ্লেষণের দাবি রাখে । বর্তমানে শিয়াদের কাছে গ্রহণযোগ্য মত হলো ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের কয়েকদিন পরে তাঁর পবিত্র মাথা দেহের সাথে সংযুক্ত করে কারবালার মাটিতে দাফন করা হয় । বিস্তারিত জানার জন্য বিভিন্ন মত নিচে উল্লেখ করা হলো :
এক. কারবালা
শিয়া আলেমদের মধ্যে এ মতটি হলো সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ । আল্লামা মাজলিসি (র.) এ মতের প্রসিদ্ধির কথা ব্যক্ত করেছেন ।
সাদুক (র.) হযরত আলী (আ.)-এর মেয়ে এবং ইমাম হোসাইন (আ.)-এর বোন ফাতেমা থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে উল্লেখ করেন ,কারবালায় দেহ মোবারকের সাথে মাথা সংযুক্ত করা হয়েছিল ।
তবে মাথা সংযুক্ত করার পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন রকম দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করা হয়েছে ।
সাইয়্যেদ বিন তাউসসহ কেউ কেউ এটিকে একটি অলৌকিক বিষয় হিসেবে মনে করেন এবং বলেন ,আল্লাহ তা‘
আলা স্বীয় ক্ষমতাবলে অলৌকিকভাবে এ কাজটি করেন । আর এ ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে ।
আবার কেউ কেউ বলেন ,ইমাম সাজ্জাদ (আ.) সিরিয়া থেকে ফেরার সময় চল্লিশতম দিনে
অথবা অন্য কোন এক দিনে ইমামের পবিত্র মাথা কারবালায় তাঁর দেহের পাশে দাফন করেন ।
কিন্তু ইমামের মাথা একেবারে তাঁর দেহ মোবারকের সাথে সংযুক্ত করে নাকি তাঁর দেহের পাশে দাফন করা হয়েছে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন বর্ণনা নেই । এছাড়া সাইয়্যেদ ইবনে তাউসও এ ব্যাপারে বেশি প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন ।
একদল বলেন ,ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পবিত্র মাথা ইয়াযীদের আমলে তিন দিন দামেশকের প্রধান দরজায় ঝুলিয়ে রাখা হয় । অতঃপর সেখান থেকে নামিয়ে সরকারি মূল্যবান বস্তুর সংরক্ষণাগারে রাখা হয় । উমাইয়া শাসক সুলায়মান বিন আবদুল মালেকের শাসনকাল পর্যন্ত ইমামের পবিত্র মাথা সেখানেই থাকে । এরপর সুলায়মান ঐ মাথাকে কাফন পরিয়ে দামেশকে মুসলমানদের গোরস্তানে দাফন করে । অতঃপর সুলায়মানের উত্তরাধিকারী উমর বিন আবদুল আজীজ (খেলাফত : ৯৯-১০১ হি.) গোরস্তান থেকে ঐ পবিত্র মাথাকে বের করে নিয়ে আসেন এবং সেটাকে কী করেন তা কারো জানা নেই! কিন্তু তিনি যেহেতু শরীয়তের বাহ্যিক আমলের প্রতি অনুগত ছিলেন সেহেতু যথাসম্ভব ঐ পবিত্র মাথাকে কারবালা পাঠিয়েছিলেন ।
পরিশেষে বলতে চাই ,কোন কোন সুন্নি মনীষী ,যেমন ,শাব্লানজী এবং সিব্ত ইবনে জাওজীও এক রকম স্বীকার করেছেন যে ,পবিত্র মাথা কারবালায় দাফন করা হয়েছে ।
দুই. নাজাফে হযরত আলী (আ.)-এর মাযারের পাশে
আল্লামা মাজলিসি (র.)-এর বক্তব্য থেকে এবং কতগুলো হাদীস বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায় যে ,ইমামের মাথা নাজাফে হযরত আলী (আ.)-এর মাযারের পাশে দাফন করা হয়েছে ।
কিছু কিছু হাদীসে এসেছে ,ইমাম জাফর সাদিক (আ.) স্বীয় সন্তান ইসমাইলকে সাথে নিয়ে নাজাফে ইমাম আলী (আ.)-এর যিয়ারত করে নামায পড়ার পর ইমাম হোসাইন (আ.)-কে উদ্দেশ্য করে সালাম দিতেন । অতএব ,এসব হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে ,ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর সময়কাল পর্যন্ত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পবিত্র মাথা নাজাফেই ছিল ।
অন্যান্য হাদীসও এ মতটিকে সমর্থন করে । এমনকি শিয়াদের গ্রন্থসমূহে ইমাম আলী (আ.)-এর মাযারের পাশে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পবিত্র মাথা যিয়ারত করার জন্য দুআ’
ও উল্লেখ করা হয়েছে ।
ইমামের পবিত্র মাথা নাজাফে স্থানান্তরিত করার ব্যাপারে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন :‘
আহলে বাইত (আ.)-এর একজন ভক্ত সিরিয়ায় ইমামের পবিত্র মাথা চুরি করে ইমাম আলী (আ.)-এর মাযারের পাশে নিয়ে আসে ।’
অবশ্য এ মতের ব্যাপারে একটি ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় । আর তা হলো ,ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর সময়কাল পর্যন্ত ইমাম আলী (আ.)-এর মাযার সবার কাছে পরিচিত ছিল না ।
অন্য এক হাদীসে এসেছে ,ইমামের পবিত্র মাথা দামেশ্কে কিছু দিন রাখার পর কুফায় ইবনে যিয়াদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয় । সে জনগণের বিদ্রোহের ভয়ে এ নির্দেশ দেয় যে ,ইমামের পবিত্র মাথা যেন কুফা থেকে বের করে নাজাফে হযরত আলী (আ.)-এর মাযারের পাশে দাফন করা হয় ।
পূর্ববর্তী মতের ব্যাপারে যে ত্রুটি উল্লেখ করা হয়েছে এখানেও সে ত্রুটি প্রযোজ্য ।
তিন. কুফা
সাব্ত ইবনে জাওজী এ মতের প্রবক্তা । তিনি বলেন :‘
আমর বিন হারিস মাখজুমী ,ইবনে যিয়াদের কাছ থেকে ইমামের পবিত্র মাথা নেয় এবং গোসল দেয়ার পর কাফন পরিয়ে ও সুগন্ধি মাখিয়ে স্বীয় বাড়িতে দাফন করে ।’
চার. মদীনা
‘
তাবাকাতে কুবরা’
র লেখক ইবনে সা’
দ এ মতটি গ্রহণ করেছেন । তিনি বলেন :‘
ইয়াযীদ ইমামের মাথাকে মদীনার শাসক আমর বিন সাঈদের জন্য পাঠায় । আমর ঐ পবিত্র মাথাটিকে কাফন দেওয়ার পর বাকী গোরস্তানে হযরত ফাতেমা (সা.)-এর মাযারের পাশে দাফন করে ।
এ মতটিকে আহলে সুন্নতের কতিপয় পণ্ডিত ব্যক্তি (যেমন খাওয়ারেজমী‘
মাকতালুল হোসাইন (আ.)’
গ্রন্থে এবং ইবনে এমাদ হাম্বালী‘
শুজুরাতুত যাহাব’
গ্রন্থে) গ্রহণ করেছেন ।
এ মতের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো ,হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর কবর ছিল অজ্ঞাত । অতএব ,কিভাবে সম্ভব যে ,তাঁর কবরের পাশে দাফন করা হতে পারে ।
পাঁচ. সিরিয়া
সম্ভবত বলা যেতে পারে ,অধিকাংশ সুন্নি আলেমের মতে ,ইমামের পবিত্র মাথা সিরিয়ায় দাফন করা হয়েছে । এ মতে বিশ্বাসীদের মধ্যেও মতানৈক্য পরিলক্ষিত হয় । সেসব মতামত নিচে উল্লেখ করা হলো :
ক. ফারাদীস শহরের প্রধান গেটের পাশে দাফন করা হয় । পরবর্তীকালে সেখানে‘
মাসজিদুর রাস’
তৈরি করা হয় ।
খ. উমাইয়া জামে মসজিদের পাশে একটি বাগানে দাফন করা হয় ।
গ. দারুল ইমারায় দাফন করা হয় ।
ঘ. দামেশ্কের একটি গোরস্তানে দাফন করা হয় ।
ঙ. তুমা শহরের দরজার পাশে দাফন করা হয় ।
ছয়. রিক্কা
ফোরাত নদীর তীরে একটি শহরের নাম হলো রিক্কা । কথিত আছে ,ইয়াযীদ ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মাথা আবু মুহিতের বংশধরের কাছে পাঠায় । (আবু মুহিতের বংশধর উসমানের আত্মীয় ছিল এবং ঐ সময় রিক্কা শহরে বাস করত) । তারা ইমামের পবিত্র মাথা একটি বাড়িতে দাফন করে যা পরবর্তীকালে মসজিদে রূপান্তরিত হয় ।
সাত. মিশর (কায়রো)
বর্ণিত হয়েছে ,ফাতেমী খলীফাগণ যারা চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে শুরু করে সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত মিশরে রাজত্ব করেন এবং শিয়া ইসমাঈলী মাযহাবের অনুসারী ছিল তারা ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পবিত্র মাথা সিরিয়ার ফারাদীস শহর থেকে আসকালান ,অতঃপর কায়রোতে নিয়ে যায় । এরপর সেখানে ৫০০ বছর পর ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মুকুট নামে একটি মাযার তৈরি করে ।
মাকরীযী মনে করেন ,৫৪৮ সালে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মাথা আসকালান থেকে কায়রোতে স্থানান্তরিত হয় । তিনি বলেন :‘
আসকালান থেকে পবিত্র মাথা বের করার সময় দেখা যাচ্ছিল যে ,তার রক্ত টাটকা এবং এখনো শুকায়নি । আর মেশকের মতো একটি সুগন্ধি ইমামের পবিত্র মাথা থেকে বের হচ্ছিল ।’
আল্লামা সাইয়্যেদ মুহসিন আমিন আমেলী (গত শতাব্দীর প্রসিদ্ধ শিয়া আলেম) আসকালান থেকে মিশরে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মাথা স্থানান্তরিত হওয়ার ব্যাপারে বলেন :‘
মাথার সমাধিস্থলে একটি বড় মাযার তৈরি করা হয়েছে । আর তার পাশে একটি বড় মসজিদও তৈরি করা হয়েছে । ১৩২১ হিজরিতে ঐ জায়গা আমি যিয়ারত করি । আর বহু নারী-পুরুষকে সেখানে যিয়ারত করতে ও কান্নাকাটি করতে দেখতে পাই ।’
তিনি আরো বলেন :‘
একটি মাথা আসকালান থেকে মিশরে স্থানান্তরিত হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই । তবে ঐ মাথাটি ইমাম হোসাইন (আ.)-এর নাকি অন্য কোন ব্যক্তির এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে ।’
আল্লামা মাজলিসী (র.) মিশরের একটি দলের বরাত দিয়ে সেখানে‘
মাশহাদুল কারীম’
নামে একটি বড় মাযার থাকার প্রতি ইঙ্গিত করেন ।
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর সঙ্গী-সাথি
১১ নং প্রশ্ন : আশুরার রাতে ইমামের কোনো সাথি কি তাঁকে ছেড়ে চলে যান ? আসলে কারবালার ময়দানে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর সাথিদের সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর : এ প্রশ্নের দু’
টি অংশ রয়েছে ,এজন্য এর উত্তরও আলাদাভাবে দিতে হবে ।
প্রথম অংশ : সাথিদের বিশ্বস্ততা
ঐতিহাসিক গ্রন্থাবলি আশুরার রাতের ঘটনাগুলো বর্ণনা করার সময় এ বিষয়টি উল্লেখ করেছে যে ,যখন ইমাম হোসাইন (আ.) স্বীয় সঙ্গী-সাথিদেরকে তাঁকে শত্রুদের সামনে ফেলে রেখে চলে যাওয়ার কথা বললেন তখন তাঁরা সবাই মিলে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কথা বলে ইমামের সাথে থেকে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার কথা বললেন ,আর তাঁদের কেউই তাঁকে ছেড়ে যেতে প্রস্তুত হলেন না । এ সময় ইমাম হোসাইন (আ.) তাঁদের সম্পর্কে তাঁর প্রসিদ্ধ উক্তিটি করেছিলেন-
فانی اعلم اصحابا اولی و لا خیرا من اصحابی ولا اهل بیت ابر ولا اولاصل من اهل بیتی
‘
আমি আমার সাথিদের থেকে উত্তম কোন সাথি দেখতে পাইনি । আর আমার বংশধর থেকে অন্য কোন বংশধরকে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বেশি কল্যাণকামী ও উপকারী দেখতে পাইনি ।’
অপরদিকে এ গ্রন্থগুলোতেই পাওয়া যায় যে ,ইমাম হোসাইন (আ.)-এর অনেক সাথি জাবালা’
র মন্জিলে তাঁর দুধভাই আবদুল্লাহ বিন ইয়াক্তের শাহাদাতের খবর শুনে বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যায় । হতাশাব্যঞ্জক খবরসমূহ শোনার পর ইমাম হোসাইন (আ.) মুসলিম ,হানী ও আবদুল্লাহর শাহাদাতের খবর ঘোষণা করে বলেন ,
وقد خذلتنا شیعتنا فمن احب منکم الانصراف فلینصرف لیس علیه منا ذمام
‘
আমাদের অনুসারীরা আমাদেরকে অপমানিত করলো ,অতএব ,যার ইচ্ছা সে যেন আমাদেরকে ছেড়ে চলে যায় । আমি তোমাদের ওপর থেকে আমার বাইআত উঠিয়ে নিলাম ।’
এ সময় ইমাম হোসাইন (আ.)-এর সেনাবাহিনী থেকে কয়েকটি দল আলাদা হয়ে গেল । পরিশেষে ,অল্প কিছুসংখ্যক ব্যক্তি ইমামের সাথে থাকলেন । এরা ছিলেন ঐসব ব্যক্তি যাঁরা মদীনা থেকে ইমামের সাথে রওয়ানা হয়েছিলেন!
যারা ইমাম হোসাইন (আ.)-কে পরিত্যাগ করেছিল তারা ছিল বেদুঈন । তারা মনে করেছিল ,ইমাম একটি শান্ত ও অনুগত শহরে যাচ্ছেন এবং সেখানে গিয়ে শাসনক্ষমতা গ্রহণ করবেন ,তাই তারা ইমামের সাথে রওয়ানা হয়েছিল ।
অতএব ,তাদের আলাদা হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল ।
নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহে এ মনজিলের পর থেকে সাথিদের চলে যাওয়ার কথাটি আর উল্লিখিত হয়নি । কিন্তু পরবর্তীকালে রচিত কিছু বইয়ে‘
নুরুল উয়ুন’
নামে একটি অখ্যাত ও অনির্ভরযোগ্য গ্রন্থ সূত্রে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মেয়ে সাকীনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে ,১০ সদস্যবিশিষ্ট ও ২০ সদস্যবিশিষ্ট কয়েকটি দল ইমামকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল এবং ইমাম এ কারণে তাদের জন্য বদদোয়াও করেছিলেন ।
এ দুর্বল হাদীসটি ঐ সকল সনদসহ বর্ণিত নির্ভরযোগ্য বর্ণনাসমূহের সামনে কোন ক্রমেই টিকতে পারবে না । বিশেষ করে এ মনগড়া হাদীসটি আশুরার রাতে ইমাম হোসইন (আ.)-এর পরিবার ও সঙ্গী-সাথিদের বক্তব্য এবং তাঁদের প্রশংসায় ইমামের মন্তব্যের সাথে বৈপরীত্য রয়েছে ।
দ্বিতীয় অংশ : সঙ্গি-সাথির সংখ্যা
বিভিন্ন গ্রন্থে আশুরার দিনে উপস্থিত ইমামের সাথিদের সংখ্যার ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য পেশ করা হয়েছে ।
যেমন : তাবারীসহ কেউ কেউ ১০০ জনের কথা উল্লেখ করেছেন । আর তাঁদের মধ্যে ইমাম আলী (আ.)-এর পাঁচ জন সন্তান ,বনি হাশেমের ১৬ জন ব্যক্তি ও অন্যান্য গোত্র থেকে একদল লোক ছিলেন ।
ইবনে শাহর আশুব ৮২ জনের কথা উল্লেখ করেছেন ।
ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীতে‘
ইবনে নামা’
নামক শিয়াদের এক পণ্ডিত ব্যক্তি বলেছেন ,ইমামের বাহিনীতে ১০০ পদাতিক ও ৪৫ অশ্বারোহী ছিলেন ।
সিব্ত ইবনে জাওযীও এ মতকে সমর্থন করেন ।
শিয়াদের হাদীস গ্রন্থাবলিতে ইমাম বাকের (আ.) থেকে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতও এ মতকে সমর্থন করে ।
ঐতিহাসিক মাসউদীর কথা বড়ই আশ্চর্যজনক । কারণ ,তিনি বলেন ,কারবালার ময়দানে উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর সাথে ছিল ৫০০ অশ্বারোহী এবং ১০০ পদাতিক ।
কিন্তু প্রসিদ্ধ মতে ,যা এখনও প্রচলিত আছে তা হলো ,কারবালার ময়দানে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর ৭২ জন সঙ্গী ছিলেন ,যাঁদের মধ্যে ৩২ জন ছিলেন অশ্বারোহী এবং ৪০ জন ছিলেন পদাতিক ।
১২ নং প্রশ্ন : কারবালায় পুরুষদের মধ্যে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) ছাড়া অন্য কেউ কি জীবিত ছিল ?
উত্তর : ঐতিহাসিক গ্রন্থাবলির বিবরণ অনুযায়ী কারবালায় একদল পুরুষ জীবিত ছিলেন ,যাঁদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন বনি হাশেমের আর বাকিরা ইমাম হোসাইন (আ.)-এর সঙ্গী ।
এক. বনি হাশেম
১. ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)
২. হাসান বিন হাসান (দ্বিতীয় হাসান নামে প্রসিদ্ধ) : হাসান আশুরার দিন আহত অবস্থায় বন্দি হন । অতঃপর আসমা বিন খারেজা তাঁকে হত্যা করতে চাইলে উমর বিন সা’
দ বাধা দেয় । ফলে তিনি বেঁচে যান । তিনি পরবর্তীকালে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মেয়ে ফাতেমাকে বিয়ে করেন এবং ৩৫ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন । তিনি কিছুদিন হযরত আলী (আ.)-এর ওয়াক্ফ ও সাদকা বিভাগের মোতাওয়াল্লী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।
হাসান বিন হাসান আবদুল্লাহ বিন হাসানের (যিনি আবদুল্লাহ মাহাজ নামে পরিচিত) পিতা ছিলেন ,আর আবদুল্লাহ ,মুহাম্মাদ (নাফসে যাকিয়া)-এর পিতা ছিলেন । আবদুল্লাহ ছিলেন সর্ব প্রথম ব্যক্তি যিনি পিতা-মাতা উভয় দিক থেকে হযরত আলী (আ.)-এর বংশধর ছিলেন । এজন্য তাঁকে আবদুল্লাহ মাহাজ বা আল্লাহর খালেস বান্দা বলা হতো ।
৩. যায়েদ বিন হাসান (আ.) : তিনিও ইমাম হাসান (আ.)-এর সন্তান ছিলেন । কতিপয় গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে যে ,তিনি কারবালায় উপস্থিত ছিলেন ।
তিনি ৯০ বছর জীবিত ছিলেন এবং বনি হাশেমের একজন প্রবীণ ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতেন । তিনি দীর্ঘদিন মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সাদ্কা বিভাগের মোতাওয়াল্লি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।
৪. আমর (উমর) বিন হাসান (আ.) :কতিপয় গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে যে ,তিনি কারবালায় উপস্থিত ছিলেন এবং কারবালার ঘটনার পরও জীবিত ছিলেন ।
৫. মুহাম্মাদ বিন আকীল ।
৬. কাসেম বিন আবদুল্লাহ্ বিন জাফার ।
দুই. অন্য সাথিরা
১. উকবা বিন সামআন : তিনি ইমাম হোসাইন (আ.)-এর স্ত্রী রোবাবের দাস ছিলেন । তাঁকে আশুরার দিন বন্দি করা হয় এবং উমর বিন সাদের নিকট নিয়ে যাওয়া হয় । উমর বিন সাদ যখন শোনে যে ,তিনি একজন দাস ,তখন তাঁকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয় ।
২. জাহ্হাক বিন আবদুল্লাহ মাশরেকী : সে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর সাথে চুক্তি করেছিল যে ,যতক্ষণ পর্যন্ত ইমামের সঙ্গী-সাথিরা থাকবেন ততক্ষণ পর্যন্ত সে তাঁর সাথে থাকবে । আর ইমাম যখন একাকী হয়ে পড়বে তখন সে ইমামকে ছেড়ে চলে যেতে পারবে । এ কারণে সে আশুরার দিন শেষ মুহূর্তে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কাছে আসে এবং চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় । ইমাম হোসাইন (আ.) তাকে সত্যায়ন করে জিজ্ঞাসা করেন যে ,এ মুহূর্তে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবে ? অতঃপর বলেন :‘
যদি পার ,নিজেকে রক্ষা করো । আর আমার পক্ষ থেকে কোন বাধা নেই ।’
সে একথা শোনার পর স্বীয় ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে যুদ্ধ করতে করতে শত্রুবাহিনীর দুই ব্যক্তিকে হত্যা করে এবং তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে অলৌকিকভাবে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয় ।
ঐতিহাসিকগণ পরবর্তীকালে আশুরার ঘটনাবলি বর্ণনা করার ক্ষেত্রে তাকে একজন রাবী বা বর্ণনাকারী হিসেবে ব্যবহার করেন ।
৩. গোলাম আবদুর রহমান বিন আবদুল্লাহ আনসারী : সে কারবালার ময়দানে উপস্থিত ছিল এবং কতিপয় হাদীস বর্ণনা করেছিল । সে বলে :‘
যখন দেখলাম ,সাথিরা সবাই শহীদ হয়ে গেল তখন যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে গিয়ে নিজেকে রক্ষা করি ।’
৪. মুরাক্কাআ বিন সুমামা আসাদী ।
৫. মুসলিম বিন রেবাহ্ মাওলা আলী ।
ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে লিখিত কারবালার ঘটনার অধিকাংশই উপরোল্লিখিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে বর্ণিত হয়েছে ।
শাহরবানুর পরিণতি
১৩ নং প্রশ্ন : তৃতীয় ইয়াজদ্ গের্দের কন্যা শাহরবানু কি ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মাতা ছিলেন ? তিনি কি কারবালার ময়দানে উপস্থিত ছিলেন ? ইমাম হোসাইন (আ.)-এর নির্দেশে তাঁর ইরানে পালিয়ে যাওয়া এবং তেহরানে দাফন হওয়ার ঘটনা-যে স্থান‘
বিবি শাহরবানুর মাযার’
নামে পরিচিত ,এর সত্যতা কতটুকু ?
উত্তর : পরবর্তী যুগে লিখিত গ্রন্থাবলিতে-যেগুলোতে নির্ভরযোগ্য ইতিহাস গ্রন্থ থেকে খেয়াল-খুশিমত উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে-এরকম এসেছে :
কতিপয় নির্ভরযোগ্য ইতিহাস গ্রন্থে এসেছে যে ,শাহরবানু (যিনি কাসেমের স্ত্রী ফাতেমার মাতা ছিলেন এবং কারবালার ময়দানে উপস্থিত ছিলেন) ইমাম হোসাইন (আ.)-এর নির্দেশে তাঁর ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করেন যাতে নিয়তি-নির্ধারিত ভূখণ্ডে পৌঁছতে পারেন । তিনি আল্লাহর হুকুমে এক ঘণ্টায় রেই শহরে পৌঁছে যান । আর ঐ এলাকায় আবদুল আযীম হাসানীর মাযারের পাশে অবস্থিত একটি পাহাড়ে তাঁকে দাফন করা হয় ।
ঐ কিতাবে এটাও বলা হয়েছে যে ,মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি আছে যে ,পাহাড়ের চূড়ায় মহিলাদের স্কার্ফের টুকরার মতো একটি জিনিস দেখতে পাওয়া যায় ,যেখানে কোন পুরুষ লোক ,এমনকি যে মহিলার পেটে ছেলেসন্তান আছে সেও সেখানে যেতে পারে না ।
এটা প্রচলিত আছে যে ,তিনি যখন রেই শহরে পৌঁছান ,তখন হুয়া (هو
) বা আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন ,কিন্তু ভুলক্রমে হুয়া (هو
)-এর জায়গায় পাহাড় (کوه
) বলে ফেলেছিলেন । এজন্য সেখানেই পাহাড় তাঁকে নিজের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয় এবং নিজের মধ্যে গোপন করে ফেলে ।
হয়তো কারো কারো কাছে কারবালায় ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মাতার উপস্থিত না থাকা এবং উপরিউক্ত ঘটনাগুলো কাল্পনিক হওয়ার ব্যাপারটি সুস্পষ্ট ;তাই তাদের জন্য এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের কোন প্রয়োজন নেই । কিন্তু তাঁর সম্পর্কে যেহেতু সাধারণ মানুষের মাঝে ,এমনকি গবেষকদের মাঝেও অনেক কথা প্রচলিত আছে সেহেতু তাঁর সম্পর্কে আলোচনা করাটা প্রয়োজন বলে মনে করছি ।
বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়ার জন্য নিম্নবর্ণিত আলোচনার প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ।
ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মাতা
শিয়া-সুন্নি নির্বিশেষে উভয় মাযহাবের গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করে বুঝতে পারি যে ,শিয়া মাযহাবের ইমামদের মধ্যে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মায়ের নামের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি মতানৈক্য রয়েছে । কোন কোন বিশ্লেষক বিভিন্ন গ্রন্থ বিশ্লেষণ করে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মায়ের ১৪ টি নাম
,আবার কোন কোন বিশ্লেষক ১৬ টি নাম
উল্লেখ করেছেন ।
এ নামগুলো হলো যথাক্রমে :
১. শাহরবানু ,২. শাহরবানুয়ে ,৩. শাহজানান ,৪. জাহান শাহ ,৫. শাহ্জানান ,৬. শাহরনাজ ,৭. জাহানবানুয়ে ,৮. খাওলা ,৯. বাররা ,১০. সালাফা ,১১. গাজালা ,১২. সালামা ,১৩. হারার ,১৪. মারইয়াম ,১৫. ফাতেমা ,১৬. শহরবান ।
যদিও আহলে সুন্নাতের ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে সালাফা ,সালামা ও গাজালা নামসমূহের ওপর বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে ,
কিন্তু শিয়াদের গ্রন্থগুলোতে বিশেষ করে তাদের হাদীস গ্রন্থগুলোতে শাহরবানু নামটি বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করেছে । কতিপয় গবেষকের মতে ,
সর্বপ্রথম মুহাম্মাদ বিন হাসান সাফ্ফার কুম্মী (মৃত্যু ২৯০ হিজরি) লিখিত‘
বাসায়েরুদ দারাজাত’
গ্রন্থে এ নামটি দেখা যায় ।
পরবর্তীকালে শিয়াদের বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা কুলাইনী (র.) (মৃত্যু ৩২৯ হিজরি) এ নাম সংক্রান্ত হাদীসটি এ কিতাব থেকে তাঁর‘
কাফী’
কিতাবে উল্লেখ করেন ।
অন্যান্য গ্রন্থসমূহ হয় এ দুই কিতাব থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছে নতুবা দুর্বল ও নির্ভরযোগ্য কোন সনদ ছাড়াই বর্ণিত হাদীস থেকে নিজেদের কিতাবে উল্লেখ করেছে ।
এ হাদীসে এরকম এসেছে :
যখন ইয়াজদ্ গের্দের কন্যাকে হযরত উমরের নিকট নিয়ে আসা হলো ,মদীনার মেয়েরা তাকে দেখার জন্য খুব উৎসুক হয়ে পড়লো ,অতঃপর যখন সে মসজিদে প্রবেশ করলো ,মসজিদ লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল । হযরত উমর তার দিকে তাকালেন । সে তখন নিজের মুখ ঢেকে ফেললো আর বললো :‘
হায় আফসোস! আমার কপাল পুড়ে গেল ।’
হযরত উমর বললেন :‘
এই মেয়ে আমাকে গালি দিচ্ছে ।’
এ বলে তিনি তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন । হযরত আলী (আ.) হযরত উমরকে বললেন : তাঁর ব্যাপারে তোমার কোন অধিকার নেই । তাকে ছেড়ে দাও ,সে যেন নিজেই কোন মুসলমান ব্যক্তিকে বাছাই করে । আর যাকে বাছাই করবে তার গনীমতের মাল হিসেবে এ মেয়েকে হিসাব করবে ।’
হযরত উমর তাকে ছেড়ে দিলেন । মেয়েটি এসে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মাথার ওপর হাত রাখল । আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) তাকে বললেন :‘
তোমার নাম কী ?’
সে বলল :‘
জাহান শাহ্ ।’
হযরত আলী (আ.) বললেন :‘
না ,তোমার নাম শাহরবানু রাখা হলো ।’
অতঃপর ইমাম হোসাইন (আ.)-কে বললেন :‘
হে আবা আবদিল্লাহ্! এ মেয়ে থেকে তোমার জন্য জমীনের ওপর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ভূমিষ্ঠ হবে ।’
আর ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) তাঁর থেকে ভূমিষ্ঠ হয় । এ ইমামকে দুই বাছাইকৃত ব্যক্তির সন্তান বলা হতো । কারণ একজন হাশেমী বংশের মধ্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে বাছাইকৃত ব্যক্তি ছিল ,আর অন্যজন ছিল পারাস্যবাসীদের মধ্যে বাছাইকৃত ব্যক্তি ।
উপরিউক্ত হাদীসটি সনদ ও মাত্ন উভয় দিক থেকে বিশ্লেষণের দাবি রাখে । সনদের দিক থেকে এ হাদীসের রাবীদের মধ্যে ইবরাহীম বিন ইসহাক আহমার
ও আমর বিন সীমারে’
র মতো কতিপয় ব্যক্তি আছে যারা অতিরঞ্জনকারী হিসেবে খ্যাত এবং শিয়া রেজাল শাস্ত্রবিদদের পক্ষ থেকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে গৃহীত হয়নি ।
অপরদিকে মাত্নের দিক থেকে নিম্নবর্ণিত সমস্যাগুলো আছে :
১. ইয়াজদ গের্দের কোন মেয়ের বন্দি হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে ।
২. উমরের শাসনামলে এ মেয়ের বন্দি হওয়া এবং ঐ সময়েই ইমাম হোসাইন (আ.)-এর সাথে তার বিয়ে হওয়ার ঘটনা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয় ।
৩. এ হাদীস ছাড়া শিয়াদের কোন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর উপাধি হিসেবে‘
দুই বাছাইকৃত ব্যক্তির সন্তান’
(الخیرتین
ابن
)-এর উল্লেখ নেই ।
এখানে কি একরকম বাড়াবাড়ি ইরানী জাতীয়তাবাদী মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে না ? যারা তাদের ধারণায় ভেবেছিল নবী-বংশের সাথে সাসানী বংশের সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার মাধ্যমেই কেবল ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-কে‘
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি’
হিসেবে প্রমাণ করা যাবে ।
শাহরবানুর নাম সম্বলিত বর্ণনার ওপর এ ধরনের ত্রুটি থাকায় এ বর্ণনাগুলোকে ইমামদের পবিত্র সত্তা থেকে দূরে এবং জাল হাদীস রচনাকারীদের অপকর্ম বলে মনে করাই বাঞ্ছনীয় । আর তাই শাহরবানু নামটি ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মায়ের জন্য গ্রহণযোগ্য নয় ।
ইমাম যায়নুল (আ.)-এর মায়ের বংশ পরিচয় নিয়েও হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থগুলোর মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ পরিলক্ষিত হয় । কতিপয় মনীষী ,যেমন ইয়াকুবী (মৃত্যু ২৮১ হিজরি)
,মুহাম্মাদ বিন হাসান কুম্মী
,কুলায়নী (মৃত্যু ৩২৯ হিজরি)
,মুহাম্মাদ বিন হাসান সাফফা কুম্মী (মৃত্যু ২৯০ হিজরি)
,শেখ সাদুক (মৃত্যু ৩৮১ হিজরি)
এবং শেখ মুফীদ (মৃত্যু ৪১৩ হিজরি)
তাকে ইয়াজদ গের্দের কন্যা বলে মনে করেন ,যদিও তাঁর নামের ব্যাপারে কোন ঐকমত্য নেই ।
পরবর্তী যুগের গ্রন্থগুলোতে এ বংশ পরিচয় প্রসিদ্ধি লাভ করেছে । আর এ গ্রন্থগুলোতে অন্য মতামতগুলো মোটেই স্থান পায়নি ।
উপরিউক্ত মতের বিপরীতে ,পূর্ববতী ও পরবর্তী যুগের কিছু কিছু গ্রন্থে অন্যান্য মতামত ,যেমন সিস্তানী বংশোদ্ভুত অথবা সিন্ধি বংশোদ্ভুত অথবা কাবুলী বংশোদ্ভুত বলে উল্লেখ করা হয়েছে । আবার কোন কোন গ্রন্থে তাঁর বন্দি হওয়ার জায়গা উল্লেখ না করে শুধু উম্মে ওয়ালাদ (যে দাসী মনিবের থেকে সন্তান প্রসব করেছে) হিসেবে তাঁকে স্মরণ করা হয়েছে ।
কোন কোন লেখক ইরানের কতিপয় বুজুর্গ ব্যক্তি ,যেমন সুবহান ,মেনজান ,নুশজান এবং শিরাভাইকে তাঁর পিতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ।
এ বংশ পরিচয় সম্পর্কে বিশ্লেষণ করার জন্য এ মতামতগুলোর সনদ সম্পর্কিত আলোচনার ওপর ভরসা করা যাবে না । তার কারণ হলো ,কোন মতামতেরই সূদৃঢ় সনদ নেই । এটা ছাড়াও অধিকাংশ ইতিহাস গ্রন্থ ,যেমন‘
তারীখে ইয়াকুবী’
কোন সনদ ছাড়াই স্বীয় বক্তব্য পেশ করে থাকে ।
অতএব ,মূল বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই এগুলোর বিশ্লেষণ করতে হবে । আর এ ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত ত্রুটিগুলো পরিলক্ষিত হয়:
১. সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো ,তাঁর নামের ব্যাপারে এ বর্ণনাগুলোর মধ্যে মতানৈক্য বিরাজমান । যেমন পূর্বে উল্লিখিত ইতিহাস গ্রন্থগুলো তাঁর বিভিন্ন নাম ,যেমন হারার ,শাহরবানু ,সালাখে ,গাজালা ইত্যাদি উল্লেখ করেছে । এতে প্রমাণিত হয় যে ,এ বর্ণনাগুলো বিভিন্ন জালকারী একই উদ্দেশ্য নিয়ে জাল করেছে । আর তা হলো ইরানী গোঁড়া জাতীয়তাবাদী চিন্তা । এভাবে তারা বংশগতভাবে ইমামদের সাথে ইরানীদের সম্পর্ক স্থাপন করানোর চেষ্টা করেছে যাতে নিজেদের ধারণানুযায়ী ইজাদী (ইরানী রাজবংশ) ও শাহী রক্তকে সাসানীদের থেকে ইমামদের কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে বলতে পারে ।
২. আরেকটি ত্রুটি হলো ,তাঁর বন্দি হওয়ার সময়কাল নিয়ে এ বর্ণনাগুলোর মতানৈক্য । কোন কোন লেখক হযরত উমরের শাসনামলে ,কেউ কেউ হযরত উসমানের শাসনামলে ,আবার শেখ মুফীদ সহ কতিপয় লেখক হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফতকালে বন্দি হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন ।
৩. তারীখে তাবারী ও তারীখে ইবনে আসীরের মতো বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ যেখানে সাল অনুযায়ী ইরানীদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধের ঘটনাগুলো এবং ইরানের বিভিন্ন শহরে ইয়াজ্দগের্দের পলায়নের ঘটনা তুলে ধরেছে ,সেখানে তাঁর সন্তানদের বন্দি হওয়ার কোন কথাই তুলে ধরেনি ;যদিও এ গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত অনেক তুচ্ছ ঘটনার চেয়ে এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল । এ থেকে প্রমাণিত হয় যে ,ইয়াজ্দগের্দের কন্যাদের বন্দি হওয়ার ঘটনাগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট ।
৪. প্রথম যুগের কতিপয় লেখক ,যেমন মাসউদী তৃতীয় ইয়াজ্দগের্দের সন্তানদের নাম বর্ণনা করার সময় আদরাক ,শাহীন ও র্মাদ আভান্দ নামে তাঁর তিনটি মেয়ের কথা তুলে ধরেন যেগুলো প্রথমত ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মায়ের জন্য যেসব নাম উল্লেখ করা হয়েছে তার কোনটির সাথে মিল রাখে না ,দ্বিতীয়ত ,তিনি তাঁর গ্রন্থে তাদের বন্দি হওয়ার কোন কথাই উল্লেখ করেননি ।
৫. ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মায়ের সম্পর্কে ঐতিহাসিক সনদগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো নাফ্সে যাকিয়া নামে প্রসিদ্ধ মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহর কাছে প্রেরিত মনসুরের চিঠিগুলো । নাফ্সে যাকিয়া মদীনায় আলাভী ও তালেবীদের (আবু তালেবের বংশধর) আব্বাসীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতেন । এজন্য সবসময় মুহাম্মাদ ও মনসুরের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকত ।
এ চিঠিগুলোর একটিতে মুহাম্মাদের বংশ-গৌরবের বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করার উদ্দেশ্যে মনসুর লিখে যে ,‘
মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর তোমাদের মাঝে আলী বিন হোসাইন (যয়নুল আবেদীন আ.)-এর চেয়ে উত্তম কেউ জন্মগ্রহণ করেনি ,আর সে ছিল একজন দাসীর সন্তান ।’
অর্থাৎ মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর তোমাদের মাঝে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী কারো আবির্ভাব ঘটেনি ,আর তিনি ছিলেন উম্মে ওয়ালাদের (যে দাসী সন্তান প্রসব করেছে) সন্তান ।
আশ্চর্যের বিষয় হলো ,মুহাম্মাদ কিংবা অন্য কারো পক্ষ থেকে এ চিঠির কোন প্রতিবাদ শোনা যায় না যে ,ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) দাসীর সন্তান ছিলেন না ;বরং ইরানী শাহজাদীর সন্তান ছিলেন! অতএব ,এ ঘটনা যদি সত্য হতো অবশ্যই মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ্ জবাব দেওয়ার জন্য এ ঘটনার প্রতি ইশারা করতেন ।
পরিশেষে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে ,ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর জন্য এ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একজন ইরানী মা তৈরি করার ক্ষেত্রে হাদীস জালকারীদের হাত ছিল । আর তাঁরা ইচ্ছা করেই তাঁর মায়ের সম্পর্কে অন্য মতামতগুলো বিশেষ করে সিন্ধি কিংবা অন্য শহরের অধিবাসী হওয়ার মতকে না দেখার ভান করেছে ,অথচ তৃতীয় শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত অধিকাংশ ঐতিহাসিক তাঁকে সিন্ধু কিংবা কাবুলের দাসী বলে মনে করতেন ।
কারবালায় ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মায়ের অনুপস্থিতি
এ সম্পর্কে অবশ্যই বলতে হবে যে ,শিয়াদের প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থগুলোর প্রায় সবকটিই যেগুলোতে বন্দি হওয়ার পর ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মায়ের জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তাতে এরকম লেখা হয়েছে যে ,তিনি ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর জন্মের সময়ই মারা যান ।
এ রকমও বলা হয়েছে যে ,হযরত আলী (আ.)-এর এক দাসী ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর দুধমাতা হিসেবে তাঁকে বড় করার দায়িত্ব পালন করেন ,এজন্য মানুষ মনে করত ,তিনি ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মাতা । পরবর্তীকালে ইমাম আলী (আ.) যখন ঐ দাসীকে বিয়ে দেন তখন মানুষ বুঝতে পারে যে ,তিনি ছিলেন ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর দুধমাতা ,তাঁর আসল মাতা নয় ।
অতএব ,নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে ,ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মায়ের নাম ও বংশ পরিচয় যা-ই হোক না কেন তিনি কারবালায় উপস্থিত ছিলেন না ।
বিবি শাহরবানুর মাযার
পূর্ববর্তী আলোচনা থেকে বিশেষত ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর জন্মের পর তাঁর মায়ের জীবিত না থাকাটা প্রমাণিত হওয়া থেকে এ শিরোনাম নিয়ে আলোচনার অনাবশ্যকতা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে । একই রকমভাবে বর্তমান যুগের গবেষকদের কাছে অকাট্য দলিলের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়েছে যে ,রেই শহরের পূর্বের পাহাড়ি অঞ্চলে বিবি শাহরবানুর পাহাড় নামে প্রসিদ্ধ পাহাড়ের চূড়ায় শাহরবানুর যে মাযার রয়েছে তাঁর সাথে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মায়ের কোন সম্পর্ক নেই । বরং এটি একটি স্থাপত্য যা পরবর্তী যুগে তৈরি করা হয়েছে । যেমন:
সেখানে যে সিন্দুক রাখা আছে তাতে সেটার প্রস্তুতকাল লেখা আছে ৮৮৮ হিজরি এবং সাফাভীদের আমলে (৪৫০ বছর পূর্বে) একটি কারুকার্যখচিত দরজাও তৈরি করা হয়েছে । এ দরজায় কাজারী আমলের (২০০ বছর পূর্বের) শিল্পের নমুনাও চোখে পড়ে ।
যদিও শেখ সাদুক (র.) দীর্ঘদিন রেই শহরে বসবাস করেছেন এবং এ শহরের সাথে ভালোভাবে পরিচিত ছিলেন তবুও তিনি স্বীয় গ্রন্থে এ মাযারের কোন কথাই উল্লেখ করেননি । এতে প্রমাণিত হয় যে ,চতুর্থ শতাব্দীতে এবং শেইখ সাদুকের (ওফাত ৩৮১ হিজরি) আমলে এ মাযারের কোন অস্তিত্ব ছিল না ।
অন্যান্য লেখকও যাঁরা আবদুল আজীম হাসানীসহ রেই শহরে শায়িত বড় বড় ব্যক্তিত্বের জীবনী নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরাও এ মাযারের কোন কথাই আলোচনা করেন নি ।
সম্ভবত পরবর্তী যুগে শাহরবানু নামে কোন পরহেজগার মহিলাকে এ জায়গায় দাফন করা হয়েছে আর এর ফলে দীর্ঘদিন পর ঐ এলাকার জনগণ তাঁকে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মা মনে করে ভুলের মধ্যে নিপতিত হয়েছে । কারণ ,ঐ সময় যিনি শাহরবানু নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন তিনি হলেন ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মাতা । অথবা কতিপয় ব্যক্তি মানুষকে এ ভুলের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এ ভুলকে চালু করার জন্য চেষ্টা করেছে ।
ইয়াযীদের তওবা
১৪ নং প্রশ্ন : ইয়াযীদ কি তওবা করেছে ? আর মূলত এ রকম ব্যক্তির তওবা কি গ্রহণযোগ্য হবে ?
উত্তর : এ প্রশ্নের দু’
টি দিক রয়েছে: ইতিহাস ও কালামশাস্ত্র । দ্বিতীয় অংশটি বিশ্লেষণ করতে গেলে আমাদেরকে প্রথমত অন্য কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে । যেমন এ ধরনের ব্যক্তির এত বড় অপরাধের পর তওবার তওফিক লাভ করা সম্ভব কিনা ,তাঁর তওবা খাঁটি ছিল নাকি লোকদেখানো ,যেসব আয়াত ও হাদীস তওবার দরজা সবার জন্য খোলা বলে উল্লেখ করেছে সেগুলোতে ব্যতিক্রম কিছু আছে কিনা ইত্যাদি । তবে এ প্রশ্নগুলো তখনই উত্থাপিত হবে যখন ইতিহাসের বর্ণনা থেকে সাব্যস্ত হবে যে ,ইয়াযীদ অপরাধ করার পর অনুতপ্ত হয়েছে এবং মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে । কিন্তু ইতিহাসের বর্ণনায় এর বিপরীতটা সাব্যস্ত হলে মূল প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশের কোন আলোচনাই করা হবে না ।
ইসলামী ইতিহাসের কাল পরিক্রমায় যদিও অধিকাংশ ইতিহাসবিদ ,মুহাদ্দিস ও অন্যান্য ইসলাম বিশেষজ্ঞ ইয়াযীদকে একজন অপরাধী হিসেবে সনাক্ত করেছেন এবং তার অপরাধমূলক কার্যকলাপে বিশেষ করে আশুরার বিয়োগান্ত ঘটনা সৃষ্টিতে তাকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ,কিন্তু এর মাঝে কতিপয় ব্যক্তি ,যেমন গাজ্জালী তাঁর‘
ইহইয়াউল উলুম’
গ্রন্থে ইয়াযীদকে অভিসম্পাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন । আর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে ,ইয়াযীদের তওবা করার সম্ভাবনা আছে ।
ইসলামী বিশ্বে গাজ্জালীর চিন্তার প্রভাব থাকা সত্ত্বেও তাঁর বক্তব্য গ্রহণযোগ্যতা পায়নি । আর ঐ সময়েই তাঁর সমসাময়িক কালের পণ্ডিত ব্যক্তিগণ ,যেমন ইবনে জাওযী (মৃত্যু ৫৯৭ হিজরি) তাঁর এ মতের প্রচণ্ড বিরোধিতা করেন এবং এ বিষয়ের ওপর‘
আর-রাদ্দু আলাল মুতাআস্সিবিল আনীদ’
নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন ।
কিন্তু যুগে যুগে কতিপয় মধ্যপ্রাচ্যবিদ ,যেমন ল’
ম্যানস (ইহুদি লেখক)‘
দায়েরাতুল মাআরেফে ইসলাম’
(প্রথম মূদ্রণ) নামক গ্রন্থে এ ধরনের কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন । বর্তমান যুগেও কোন কোন ইসলামী মাহফিলে এ ধরনের বক্তব্য অন্য রকমভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে । ফলে ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার গুরুত্ব ফুটে উঠেছে । ইয়াযীদের তওবা সম্পর্কে ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে যা এসেছে তা নিম্নরূপ :
১. ইবনে কুতায়বা‘
আল-ইমামাহ্ ওয়াস সিয়াসাহ’
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন ,কারবালার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর ইয়াযীদের দরবারের অবস্থা এরকম হয়েছিল-
فبکی یزید حتی کادت نفسه تفیض
আর্থাৎ ইয়াযীদ এত ক্রন্দন করেছিল যে ,তার প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম হয়েছিল ।
২. ইয়াযীদ তার রাজপ্রাসাদে শহীদদের মাথা ও কারবালার বন্দিদের প্রবেশের পর তাদের দেখে প্রভাবিত হয়ে পড়ে এবং এ লোমহর্ষক ঘটনাটি ইবনে যিয়াদের কীর্তি বলে অভিহিত করে । আর সে বলে-
لعن الله ابن مرجانة لقد بغضنی الی المسلمین و زرع لی فی قلوبهم البغضاء
‘
উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হোক । কারণ ,সে মুসলমানদের কাছে আমাকে ঘৃণিত করে তলেছে এবং তাদের অন্তরে আমার সাথে শত্রুতার বীজ বপন করেছে ।
অন্য একটি বক্তব্যে এসেছে : ইয়াযীদ নিজেকে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর বিরোধিতার মোকাবিলায় ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়েছে এবং মহানবী (সা.)-এর সাথে ইমাম হোসাইনের রক্তের সম্পর্ক থাকার কারণে সে ইমামের নিহত হওয়ার ব্যাপারে মোটেই সন্তুষ্ট ছিল না । এজন্য সে এ কাজটির দায়-দায়িত্ব সরাসরি ইবনে যিয়াদের ওপর আরোপ করে ।
৩. কারবালার কাফেলাকে মদীনার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করার সময় ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-কে সম্বোধন করে ইয়াযীদ বলে :‘
উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক! আল্লাহর শপথ ,আমি যদি হোসাইনের মুখোমুখি হতাম তাহলে তাঁর সকল মনোবাসনা পূর্ণ করতাম এবং যেভাবেই সম্ভব হতো তাঁকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতাম ,এমনকি একাজ করতে গিয়ে আমার ছেলেরা মারা গেলেও তা করতাম!’
ওপরের বর্ণনাগুলো যদি আমরা মেনে নিই এবং সেগুলোর সনদের ব্যাপারে কোন আপত্তি উত্থাপন না করি তাহলে এ বর্ণনাগুলো থেকে কয়েকটি বিষয় আমরা বুঝতে পারি :
ক. কারবালার ঘটনার প্রধান অপরাধী ছিল ইবনে যিয়াদ । ইয়াযীদ ইমাম হোসাইন (আ.)-কে হত্যা করার জন্য কিংবা তাঁর ওপর কোন চাপ সৃষ্টির জন্য কোন নির্দেশই দেয়নি!
খ. ইবনে যিয়াদের একাজে ইয়াযীদ খুব রাগান্বিত হয় এবং তার ওপর অভিশাপ বর্ষণ করে!
গ. ইমাম হোসাইনকে হত্যা করার জন্য ইয়াযীদ খুব আফসোস করে ।
প্রথম বিষয়ের ব্যাপারে বলা যায় যে ,ইতিহাস গ্রন্থগুলো ইয়াযীদের এসব দাবি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা ছিল বলেই সাক্ষ্য দেয় । কেননা ,ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে এসেছে যে ,ইয়াযীদ হুকুমাত লাভ করার সাথে সাথে স্বীয় পিতার অসিয়ত মোতাবেক মদীনার গভর্নর ওয়ালীদ বিন উতবার কাছে লিখিত প্রথম চিঠিতে বলে :‘
আমার চিঠি যখন তোমার হাতে পৌঁছবে তাখন হোসাইন ও ইবনে জোবায়েরকে হাজির করে তাদের কাছ থেকে আমার জন্য বাইআত গ্রহণ কর । আর যদি বাইআত করতে রাজি না হয় তাহলে তাদেরকে হত্যা করে তাদের মাথাগুলো আমার কাছে পাঠিয়ে দাও ।’
একই রকম ভাবে কোন কোন গ্রন্থে এসেছে যে ,ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মক্কায় অবস্থানকালে ইয়াযীদ একদল গুপ্তচরকে গোপনে হজ করার উদ্দেশ্যে পাঠায় ,যাতে তারা হজের আচার-অনুষ্ঠান পালন করার সময় কাবা শরীফের পাশে ইমাম হোসাইনকে হত্যা করতে পারে ।
উল্লেখ্য ,আবদুল্লাহ বিন আব্বাস ইয়াযীদের কাছে লিখিত স্বীয় চিঠিতে এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেন ।
আবার কোন কোন গ্রন্থে এসেছে ,ইরাকের উদ্দেশে ইমাম হোসইন (আ.)-এর রওয়ানা হওয়ার সময় ইয়াযীদ ,ইবনে যিয়াদের কাছে চিঠি লিখে বলে যে ,সে যেন কঠোরভাবে ইমাম হোসাইনের অগ্রযাত্রাকে রোধ করে ।
পরবর্তীকালে ইবনে যিয়াদ স্বীকার করে যে ,সে ইয়াযীদের পক্ষ থেকে ইমাম হোসাইনকে হত্যা করার নির্দেশ পেয়েছিল ।
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস ইয়াযীদের কাছে লিখিত চিঠিতে সুস্পষ্টভাবে তাকেই ইমাম হোসাইন (আ.) এবং বনি আবদুল মুত্তালিবের যুবকদের হত্যাকারী হিসেবে উল্লেখ করে এভাবে তাকে তিরস্কার করেছেন :
قتلت الحسین لا حتَسبنّ لا ابا لك نسیت قتلك حسینا و فتیان بنی عبد المطلب
অর্থাৎ তুমিই ইমাম হোসাইনকে হত্যা করেছ ,আর এটা মনে করো না যে ,ইমাম হোসাইন এবং বনি আবদুল মুত্তালিবের যুবকদেরকে তোমার নির্দেশে হত্যা করার বিষয়টি আমি ভুলে গেছি ।
ঐ সময় এ বিষয়টি এতই সুস্পষ্ট ছিল যে ,পরবর্তীকালে তার ছেলে মুয়াবিয়া বিন ইয়াযীদ দামেশক জামে মসজিদের মিম্বারে স্বীয় পিতাকে এ ব্যাপারে ভর্ৎসনা করে বলে-
و قد قتل ع ترة الرسول
-সে নবী-বংশকে হত্যা করেছে ।
পরিশেষে বলা যায় যে ,ইয়াযীদের নির্দেশে ইমাম হোসাইন (আ.)-কে হত্যা করার ব্যাপারে ঐতিহাসিক সাক্ষ্যগুলো এতই সুস্পষ্ট যে ,কোন নিরপেক্ষ বিশ্লেষকের পক্ষে তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই ।
দ্বিতীয় বিষয়ের ব্যাপারে অর্থাৎ ইবনে যিয়াদের অপরাধের কারণে ইয়াযীদের রাগান্বিত হওয়ার ব্যাপারে বলা যায় যে ,ঐতিহাসিক সাক্ষ্যগুলো প্রমাণ করে যে ,ইয়াযীদ প্রথমে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের খবর শুনে খুব খুশি হয় এবং ইবনে যিয়াদের প্রশংসা করে । সিব্ত ইবনে জাওযী ,ইবনে যিয়াদের ব্যাপারে ইয়াযীদের অনেক প্রশংসার কথা ,তার জন্য বহু মূল্যবান উপহার পাঠানো ,রাত্রিবেলায় তাকে নিয়ে মদপানের মজলিসের আয়োজন এবং তাকে স্বীয় পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে তুলে ধরার বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন । তিনি ইয়াযীদের কতগুলো কবিতা তুলে ধরেছেন যেগুলোতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইয়াযীদ ইমাম হোসাইনকে হত্যা করার জন্য ইবনে যিয়াদের খুব প্রশংসা করেছে এবং তার ওপর খুশি হয়েছে ।
একই রকমভাবে ,ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে ,ইরাক থেকে ইবনে যিয়াদকে অপসারণ করার জন্য ইয়াযীদ কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি ;বরং ৬৩ হিজরিতে আবদুল্লাহ বিন জোবায়ের বিদ্রোহ করার সময় ইয়াযীদ তাকে বিদ্রোহের মোকাবিলা করতে বলে ।
অতএব ,ইবনে যিয়াদের ওপর ইয়াযীদের রাগান্বিত হওয়াটাকে লোকদেখানো মনে করতে হবে যা সে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) ও হযরত যায়নাব (সা.আ.)-এর বক্তব্যের পর অবস্থা পরিবর্তন এবং প্রতিবাদমুখর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণে করেছিল ,যাতে এ অপরাধের কারণে তার ওপর সৃষ্ট মানুষের ঘৃণা ও বিদ্বেষ দূর করতে পারে ।
তৃতীয় পয়েন্টটি অর্থাৎ ইমাম হোসাইন (আ.) নিহত হওয়ার কারণে ইয়াযীদের আফসোস করার ব্যাপারেও ইতিহাস এর বিপরীত সাক্ষ্য দেয় । কারণ ,ইতিহাস বলে যে ,শহীদদের মাথা এবং বন্দিদের দামেশকে ও ইয়াযীদের মজলিসে প্রবেশ করার পরপরই ইয়াযীদ আনন্দ প্রকাশ করে এবং লাঠি দিয়ে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর দন্ত মোবারকে আঘাত করে ।
একই রকমভাবে কতগুলো কবিতা আবৃত্তি করে যেগুলোতে সে বনি উমাইয়ার পক্ষ থেকে বনি হাশেমের ওপর বদর যুদ্ধের প্রতিশোধ নেয়ার কথা তুলে ধরে ।
কেননা ,বদর যুদ্ধে তার নানা উতবা ,মামা ওয়ালিদ এবং কোরাইশ গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ভ্রাতা হযরত আলী ও চাচা হযরত হামযার হাতে নিহত হয়েছিল ।
এ কবিতাগুলোতে সে মূলত মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং সেটাকে ক্ষমতা লাভের মাধ্যম হিসেবে মনে করেছে :
لعبت هاشم بالملك فلا خبر جاء ولا وحی نزل
‘
বনি হাশেম ক্ষমতা নিয়ে খেলা করেছে ;না আসমান থেকে কোন খবর এসেছে ,আর না ওহী নাযিল হয়েছে ।’
অতএব ,বলা যায় যে ,বাহ্যিকভাবে ইয়াযীদের শোক প্রকাশের ঘটনাটা অবস্থা পরিবর্তিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটেছিল । কেননা ,আনন্দ প্রকাশ অব্যাহত রাখলে তা জনগণের পক্ষ থেকে চরম বিরোধিতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল ।
উপরিউক্ত আলোচনার শেষে দু’
টি বিষয় উল্লেখ করা জরুরি মনে করছি:
১. ইয়াযীদের কথা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে ,তার শোক প্রকাশ করাটা একান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছিল । আর তার কথার মধ্যে তওবা ,অনুশোচনা এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসার কোন চিহ্নই দেখা যায় না ।
অতএব ,তার শোক প্রকাশ করাটাকে রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্যেই ছিল বলে ধরতে হবে এবং তওবার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই । তাই তওবা করা সত্ত্বেও তার প্রতি লানত প্রেরণ করা জায়েয কিনা সে ব্যাপারে আলোচনা করার প্রয়োজনই নেই ।
২. যদি মেনে নিই যে ,ইয়াযীদ আসলে তওবা করেছে ,তাহলে অবশ্যই তার পরবর্তী কার্যকলাপে এর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাবে । অথচ আমরা দেখতে পাই যে ,ইতিহাস তার বিপরীত সাক্ষ্য দেয় । কারণ ,ইয়াযীদ আশুরার ঘটনার পর তার হুকুমতের বাকি ২ বছরেও দু’
টি বড় ধরনের অপরাধ সংঘটিত করেছিল:
ক. মদীনার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা ,তিন দিনের জন্য ঐ পবিত্র ভূমিতে নিজ সেনাবাহিনীর জন্য সবধরনের অপকর্ম (হত্যা ,লুটতরাজ ও ধর্ষণ) বৈধ করে দেয়া এবং সেখানে বসবাসকারী মহানবী (সা.)-এর অসংখ্য সাহাবী ও তাঁদের সন্তানদেরকে হত্যা করা-যা ইসলামের ইতিহসে‘
হাররার ঘটনা’
নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে ।
খ. মক্কায় হামলা করার নির্দেশে দেয়া ,যার ফলে তার সেনাবাহিনী মিনজানিক (পাথর নিক্ষেপক) দিয়ে এ শহরে হামলা করে এবং কাবা শরীফের অবমাননা করে । এছাড়া মিনজানিক দিয়ে আগুন ছুঁড়ে কাবা শরীফকে জ্বালিয়ে দেয় ।
অতএব ,ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে ,ইয়াযীদের তওবা করার কোনই প্রমাণ নেই ;বরং তার সকল কার্যকলাপ প্রমাণ করে যে ,সে তওবাই করেনি । অতএব ,ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করা যে জায়েয ,এ ব্যাপারে মুসলমানদের কোন সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই ।
আহলে সুন্নাতের প্রসিদ্ধ কতিপয় আলেম ইয়াযীদের কাফির হওয়াকে নিশ্চিত বলেছেন ও তাকে লানত করা জায়েয বলেছেন এবং তাঁরা নিজেরাও তাকে লানত করেছেন । তন্মধ্যে আহমাদ ইবনে হাম্বাল ,ইবনে জাওযী ,কাযী আবু ইয়ালী ,জাহিয ,আল্লামা তাফতাযানী ও আল্লামা সুয়ূতীর নাম উল্লেখযোগ্য । সুয়ুতী তাঁর‘
তারীখুল খোলাফা’
গ্রন্থে (পৃ. ২০৭) ইয়াযীদ ও ইবনে যিয়াদকে সরাসরি লানত করেছেন । আল্লামা তাফতাযানী বলেন :‘
ইমাম হোসাইনকে হত্যার পর ইয়াযীদের সন্তুষ্টি ও আনন্দ প্রকাশ এবং মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের প্রতি তার নিকৃষ্ট আচরণ তার অসংখ্য মন্দ কর্মের কিছু নমুনা মাত্র যা বিভিন্ন গ্রন্থে ও সূত্রে বর্ণিত হয়েছে । আমরা তার বংশের পরিচয় দেখব না ;বরং তার ঈমানের প্রকৃত অবস্থা দেখব । মহান আল্লাহ তাকে ও তার পক্ষাবলম্বীদের লানত করুন । জাহিয ইয়াযীদের সকল গুরুতর অপরাধকে তুলে ধরে বলেছেন :‘
এ বিষয়গুলো তার নিষ্ঠুরতা ,কপটতা ও অধার্মিকতার প্রমাণ । নিঃসন্দেহে সে দুবৃত্ত ও অভিশপ্ত । যে কেউ তাকে সমর্থন করবে সে নিজেকেই অসম্মানিত করবে ।’
বারযানজী তাঁর‘
ইশাআ’
গ্রন্থে এবং হাইসামী তাঁর‘
সাওয়ায়েকুল মুহরিকা’
গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন : আহমাদ ইবনে হাম্বলকে তাঁর পুত্র যখন বলেন যে ,আল্লাহর কিতাবে আমি ইয়াযীদকে লানত করার সপক্ষে কোন দলিল পাই না । তখন তিনি পবিত্র কোরআনের সূরা মুহাম্মাদের ২২ ও ২৩ নং আয়াত দু’
টি তেলাওয়াত করেন:
)
فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ
(
‘
তোমরা কি আশা কর যে ,তোমরা কর্তৃত্বের অধিকারী হলে ভূপৃষ্ঠে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে থাকবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে ? (যারা এরূপ করবে) তারাই হলো সে সকল লোক যাদের আল্লাহ্ অভিসম্পাত (স্বীয় রহমত হতে দূর) করেন এবং তাদের কর্ণে বধিরতা ও তাদের চক্ষুতে অন্ধত্ব সৃষ্টি করেছেন ।’
অতঃপর তিনি বলেন :‘
ইয়াযীদ যা করেছে তার থেকে বড় কোন বিপর্যয় ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার নমুনা আছে কি ?’
আল্লামা আলুসী বলেন :‘
যদি কেউ বলে ইয়াযীদের কোন দোষ ছিল না এবং সে কোন অপরাধ করে নি ,তাই তাকে লানত করা যাবে না ;নিঃসন্দেহে সে ইয়াযীদের অন্যতম সহযোগী ও তার দলের অন্তর্ভুক্ত ।’
দ্রষ্টব্য : আল্লামা আলুসী বাগদাদী ,রুহুল মায়ানী ,১৩তম খণ্ড ,পৃ. ২২৭ ;শারহে আকায়েদে নাফাসিয়া ,পৃ. ১৮১ ;জাহিয ,রাসায়েল ,পৃ. ২৯৮ । -সম্পাদক