আশুরা ও কারবালা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর

আশুরা ও কারবালা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর0%

আশুরা ও কারবালা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর লেখক:
প্রকাশক: বাংলাদেশ ইসলামী সাংস্কৃতিক পরিষদ,ইরান।
বিভাগ: ইমাম হোসাইন (আ.)

আশুরা ও কারবালা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর

লেখক: লেখকবৃন্দ
প্রকাশক: বাংলাদেশ ইসলামী সাংস্কৃতিক পরিষদ,ইরান।
বিভাগ:

ভিজিট: 43870
ডাউনলোড: 3949

আশুরা ও কারবালা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 30 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 43870 / ডাউনলোড: 3949
সাইজ সাইজ সাইজ
আশুরা ও কারবালা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর

আশুরা ও কারবালা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর

লেখক:
প্রকাশক: বাংলাদেশ ইসলামী সাংস্কৃতিক পরিষদ,ইরান।
বাংলা

আশুরা ও কারবালা বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর সম্বলিত এ গ্রন্থটিতে হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর আশুরা বিপ্লব সম্পর্কিত বিভিন্ন  প্রশ্নের উত্তর দেয়া হযেছে

ইয়াযীদী শাসনব্যবস্থার বিপজ্জনক রূপ

প্রশ্ন 20 : ইমাম হোসাইন (আ.)-এর ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহী রাজিউন বলার উদ্দেশ্য কী ছিল ? ইমাম হোসাইন (আ.) কেন বলেছিলেন যে ,ইয়াযীদের শাসন মেনে নেয়ার অর্থ হলো অবশ্যই ইসলামকে চির বিদায় জানাতে হবে ?

উত্তর : যে বিপদের বিষয়টি ইমাম হোসাইন (আ.) উল্লেখ করেছেন সেটা জাহেলিয়াতে প্রত্যাবর্তনের বিপদ । যেসব বিপদ সেসময় মুসলিম সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছিল তার মধ্যে এই বিপদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ইসলামকে ধ্বংস করার মতো বড় বিপদ । মন্দের প্রত্যাবর্তন ,র্শিক (আল্লাহর হালাল-হারামের বিধানের স্থানে উমাইয়া শাসকগোষ্ঠীর আনুগত্য) ও মূর্তিপূজা (বস্তুবাদিতা ও দুনিয়াপূজা) ,অন্ধকার যুগে প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি ধীরে ধীরে অশুভ ও ভয়ঙ্কর রূপে প্রকাশ পাচ্ছিল ।

উমাইয়া বংশ অস্ত্র ও বর্শার মাধ্যমে তাদের বিস্তৃত পরিকল্পনাকে-ইসলামী রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তিগুলোকে দুর্বল ও ইসলামী শাসনব্যবস্থাকে বাতিল ঘোষণা এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি (যেগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো ইসলামে অপরিহার্য) অবজ্ঞা করা-বাস্তবায়ন করত ।

মুসলিম বিশ্ব ,বিশেষ করে স্পর্শকাতর কেন্দ্রসমূহ ও যেসব শহরে বিশিষ্ট লোকজন ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা বাস করতেন ,যেমন মক্কা ,মদীনা ,কুফা এবং বসরা মারাত্মক নীরবতা ও প্রচণ্ড শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে ডুবে গিয়েছিল । যিয়াদ ইবনে আবি ,সামারাহ ইবনে জুনদুব ও মুগীরা ইবনে শোবাহ র ন্যায় অত্যাচারী গভর্নররা নিরপরাধ জনগণকে হত্যা ,নির্যাতন-নিপীড়ন ,শাস্তি প্রদান ,ষড়যন্ত্র এবং মুসলমানদেরকে অপমান ও অপদস্থ করার মাধ্যমে সমাজকে ভীত-সন্ত্রস্ত ও নিরাশ করে দিয়েছিল । উমাইয়ারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে ,ইসলামী নীতি-নৈতিকতা ,ধার্মিকদের স্তর এবং ধর্মীয় রীতি নীতি ও নিদর্শনসমূহকে-যেগুলোকে জনগণ সম্মান করত-ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করে দেবে ।

আলায়েলী বলেছেন : ইসলামী চিন্তাবিদদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে যে ,উমাইয়া বংশ সকল মন্দ ও দুর্নীতির উৎস ও গোড়াপত্তনকারী ছিল । জাহেলী যুগের সকল প্রকার আচার ও নিয়ম-নীতি (বিশেষ ব্যক্তিদের ইসলামী আইন ও নীতির ঊর্ধ্বে জ্ঞান করা ,ধর্মীয় বিধিবিধানে পরিবর্তন সাধন করে তাকে খেল-তামাশায় পরিণত করা) এবং সব ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের (যেমন মদপান ,গান-বাজনা ,ব্যভিচার শাসকদের জন্য অনুমোদিত ,আরব-অনারব বৈষম্য ,গোত্রবাদ ,জ্ঞান ও তাকওয়ার স্থানে অর্থ-সম্পদ ও বংশকে প্রাধান্য দান) পুনরাবির্ভাব ঘটেছিল । কেননা ,এগুলো তাদের প্রকৃতির অংশ ছিল । 241

সিব্তে ইবনে জাওজী বলেছেন : আমার পিতামহ আত তাবসেরাহ নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন : বস্তুত হোসাইন ঐ গোত্রের (বনি উমাইয়া) বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন এই জন্য যে ,তিনি দেখলেন শরীয়ত বা ঐশী আইন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে । অতঃপর তার ভিত্তি মজবুত করার চেষ্টা চালালেন । 242

যদি ইয়াযীদের হাত উমাইয়া বংশের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উন্মুক্ত রাখা হতো-যেমনভাবে মুয়াবিয়া চাচ্ছিল-তাহলে আযান এবং তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য প্রদানও বন্ধ হয়ে যেত ও ইসলামের কোন নাম-নিশানা থাকত না আর যদি ইসলামের নামটি অবশিষ্টও থাকত ,তবে তা উমাইয়া বংশের প্রবর্তিত ইসলাম হতো এবং তাদের স্বেচ্ছাচারী নীতি ,প্রবৃত্তি ও আচার অনুযায়ী পরিচালিত হতো ।

যদি ইয়াযীদের খেলাফত ইসলামী সমাজের ঘোর বিরোধিতার সম্মুখীন না হতো তাহলে সে রাসূলের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে পদমর্যাদা লাভ করত ও ইসলামী রাষ্ট্র পাপাচার ,ব্যভিচার ,জুয়া ,মদ ,নাচ ,গান ,কুকুর নিয়ে খেলা করা ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ হতো । কেননা ,প্রতিটি সমাজই তাদের আমীর ও নেতাদের অনুসরণ করে থাকে ও তাদের কাজ-কর্মগুলোকে আদর্শ বা মডেল হিসেবে গণ্য করে থাকে ।

এসব কারণেই ইসলামকে রক্ষা করতে ও ইয়াযীদের নিয়ম-নীতি যে জাহেলিয়াতে প্রত্যাবর্তনের দিকে যাওয়ার বিপদ সংকেত দিচ্ছিল সে সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য একটি সংগ্রাম শুরু হওয়ার প্রয়োজন ছিল । ইমাম হোসাইন উত্থান করার কারণেই সাধারণ জনগণ অবগত হয় যে ,বনি উমাইয়ার রাজনীতিবিদরা ইসলামী নিয়ম-নীতির অনুসরণ করে না ।

এ ছাড়াও জনগণের মধ্যে দ্বীনি চেতনাকে জাগিয়ে তোলা দরকার ছিল যাতে তারা বনি উমাইয়ার বিরুদ্ধে বিরোধিতার ক্ষেত্রে কঠোর হয় এবং তারা যে সকল কাজ করে ও নীতি গ্রহণ করে সেগুলোর প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করে এবং তাদেরকে যেন ইসলামের খিয়ানতকারী ও শত্রু হিসেবে চেনে ।

সাইয়্যেদুশ শুহাদা ইমাম হোসাইনের উত্থান এই দু টি দৃষ্টিকোণ থেকে জরুরি ও অপরিহার্য ছিল । অর্থাৎ জরুরি ছিল বনি উমাইয়ার মুখোশ উন্মোচন করা ও তাদেরকে ইসলামী সমাজে পরিচয় করানো এবং এটাও জরুরি ছিল যে ,জনগণের দ্বীনি চেতনাকে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ করা ও সমাজের আবেগ-অনুভূতিকে নবীর বংশধর ও তাঁর পরিবারের (আহলে বাইতের) প্রতি আকৃষ্ট করা ও ইসলামী নিদর্শনগুলোকে রক্ষা করা ।

শত্রুর কঠোর শত্রুতাও তাঁকে আল্লাহর পথে জিহাদ করা থেকে বিরত রাখেনি ;কারণ ,তিনি এমন এক মুজাহিদ (জিহাদকারী) ছিলেন যিনি আল্লাহর নির্দেশে উত্থান করেছেন ও তাঁর নিকট কোন পার্থক্য ছিল না যে ,বাহ্যিকভাবে বিজয়ী হোন বা পরাজিত । কেননা ,দুই অবস্থার মধ্যে যে কোন অবস্থাই তাঁর জন্য সম্মানজনক ছিল : বল ,আমাদের নিকট এটা ব্যতীত কি আশা কর যে ,দু টি উত্তম বস্তুর মধ্যে যে কোন একটি (শাহাদাত অথবা বিজয়) আমাদের ভাগ্যে জুটুক ? 243

অতএব ,তিনি আল্লাহর পথে ও সত্যের পথে শহীদ হয়েছেন আর তাঁর হত্যাকারীরা আল্লাহ ও সকল ফেরেশতা এবং সকল মানুষের অভিশাপের শিকার হয়েছে এবং তিনি আল্লাহর নিকট সর্বোচ্চ মর্যাদায় উন্নীত হয়েছেন ।244