মুক্তির পথে

মুক্তির পথে20%

মুক্তির পথে লেখক:
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বিভাগ: আল্লাহর একত্ববাদ

মুক্তির পথে
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 34 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 17656 / ডাউনলোড: 3875
সাইজ সাইজ সাইজ
মুক্তির পথে

মুক্তির পথে

লেখক:
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বাংলা

এ বইটিতে অত্যন্ত শক্তিশালী তাত্ত্বিক আলোচনা উপস্থাপন করেছেন। কোন অন্ধ অনুকরণ এবং বিশ্বাস সম্পর্কিত উদ্দীপনাময়ী ও চলমান গতানুগতিক আলোচনা এতে স্থান পায়নি বরং গ্রন্থটির সকল আলোচনাই হয়েছে সম্পূর্ণ সত্য এবং সুপ্রমানিত তথ্যসমূহের উপর ভিত্তি করে। আমরা সুস্থ বুদ্ধি ও বিবেককে কখনো বিতাড়িত করি না বরং একই সঙ্গে রাসূল (সঃ) কর্তৃক বর্ণিত দলীলের উপর স্থবির বুদ্ধিবৃত্তি এবং মানব বুদ্ধিবৃত্তির সমান ব্যবহারের পক্ষপাতি। কেননা তালাবদ্ধ চিন্তা-ভাবনা থেকে মুক্তির চাবি কাঠি হচ্ছে এ বুদ্ধিবৃত্তি। ফলে এরই মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে পারি। সাথে সাথে এ বুদ্ধিবৃত্তি আমাদেরকে এও বলে দেয় যে কোন্ বিষয়টি বিবেক প্রসূত আর কোনটি বিবেক-বহির্ভূত। এ গ্রন্থে বিভিন্ন সহজ বোধগম্য উদাহরণের মাধ্যমে চিন্তার বিকাশ সাধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে যথার্থভাবে ,যেন পরবর্তীতে অন্যান্য চিন্তাবিদ ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিবর্গ এ পথে নিজেদের পরিশ্রম ব্যয় করতে এগিয়ে আসেন।

মুক্তির পথে

মো : নূরে আলম

যাহরা একাডেমী ক্বোম-ইরান

মুক্তির পথে

মোঃ নূরে আলম

প্রকাশনায়

যাহরা একাডেমী বাড়ি নং-২০ ,রোড নং-১৩ ,দৌরী শাহর ,কোম ,ইরান।

পরিবেশনায়

মাওলা আলী (কাঃ) একাডেমী

রেলগেট ,আলীগড় ,পোঃ চাঁচড়া ,থানাঃ কোতয়ালী ,জেলাঃ যশোর-৭৪০২।

প্রকাশকাল

১৮ই জিলহজ্ব ১৪২৬ হিজরী

১৯শে জানুয়ারী ২০০৬ ইসায়ী

২২শে ভাদ্র ১৪১২ বাংলা

এই বইটি আল হাসানাইন (আ.) ওয়েব সাইট কর্তৃক আপলোড করা হয়েছে ।

উৎসর্গ

মুক্তিকামী মানুষের পথের দিশা দেখাতে মহাপ্রভু মানব সৃষ্টির প্রারম্ভ হতে অনবরত তাঁর মনোনীত মহাপুরুষদের প্রেরণ করেছেন। তাঁদেরই অনুসৃত পথের কান্ডারী,মুক্তিপ্রার্থী জনতার আশার আলো ,বর্তমান যামানার ইমাম ও নেতা -ইমাম মাহ্দী (আঃ) -এর পবিত্র সত্তার প্রতি।

হযরত আল্লামা ওস্তাদ সাইয়্যেদ হুসাইন মুর্তযা নাকাভীর প্রশংসাবাণী

[হযরত আল্লামা সাইয়্যেদ হুসাইন মুর্তুযা নাকাভী ভারতের লাখনৌ র অধিবাসী এক খ্যাতনামা ধর্মীয় সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতা হযরত আল্লামা আয়াতুল্লাহ আল্ উয্মা সাইয়্যেদ মুর্তুযা হুসাইন সাদর আল্ আফাযিল (১৩৪৬হিঃ -১৪০৭হিঃ) ছিলেন তৎকালীন একজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ। তাঁর বিভিন্ন মূল্যবান গ্রন্থ আরাবী,ফ ারসী ও উর্দু ভাষায় মুদ্রিত হয়েছে।

পাকিস্তান বিভক্তির পর তিনি লাখনৌ থেকে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের ইসলামী সংস্কৃতির লালন ভুমি ও আল্লামা ইকবালের চারণ ভূমি লাহোরে স্বপরিবারে হিজরত করেন এবং মৃত্যু অবধি তিনি এখানেই বসবাস করে গেছেন। তার সমগ্র জীবন অতিবাহিত হয়েছে ইসলামী সংস্কৃতি উন্নয়নের লক্ষ্যে। আল্লাহ্ তার আত্মার প্রশান্তি দান করুন।(লেখক কর্তৃক ইয়ানুশ শিয়া ,খণ্ড ৭ ,পৃঃ ৩২৪ -৩২৫ থেকে সংগৃহীত )

তারই সুযোগ্য সন্তান যাহরা একাডেমী -র প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা সাইয়্যেদ হুসাইন মুর্তুযা নাকাভী (মাদাঃ)। তিনি বর্তমান ধর্মীয় নগরী ক্কোমের একজন উচ্চস্তরের ফক্কিহ ও বিজ্ঞ আলেম হিসেবে সুপরিচিত। তারই অভিভাবকত্বে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী যাহরা একাডেমী -র সাংস্কৃতিক অভিযান।]

মহান আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ তার সকল সৃষ্টির মাঝে অফুরন্ত ও সীমাহীন । মানবজাতির উপর আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের সীমাহীনতা শুধুমাত্র সংখ্যার হিসেবেই নয় বরং এর রকমভেদও প্রচুর।

আল্লাহ পাক মানুষের জন্যে এমন সব অনুগ্রহ দান করেছেন যা অন্য কোন সৃষ্টিতে দান করেননি। এসব অনুগ্রহের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছে আক্কল বা বুদ্ধিবৃত্তি।

বুদ্ধিবৃত্তি এমন এক অনুগ্রহ যার সঙ্গে দ্বীন ও লজ্জা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ সৃষ্টি জগতে আমরা যে ভিন্নতা ও বৈচিত্রতা পরিলক্ষিত করি তা বুদ্ধিবৃত্তিরই এক অলৌকিক প্রভাব।

এখানে উল্লেখ করা হলো দ্বীন ও লজ্জা হচ্ছে আক্কলের জন্যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বন্তু -এর কারণ কি ? উত্তরে বলা যায় ,বুদ্ধিবৃত্তির বাহক এ মানুষকে উক্ত দু টি জিনিসই শ্রেষ্ঠত্ব ও মহানুভবতার সুমহান মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেয়। আর এ মর্যাদা ও মহানুভবতার দাবী হচ্ছে যে ,সে সর্বদা লজ্জাবনত থাকবে শ্রেষ্ঠ মর্যাদাবান সেই মহা অনুগ্রহকারীর সমক্ষে। এ কারণে কৃতজ্ঞতা ও লজ্জাবনতারই অপর নাম হচ্ছে তাক্বওয়া বা খোদাভীতি।

হযরত আলীর মতে দ্বীনি শিক্ষার সূচনা হচ্ছে আল্লাহর উপর ঈমান। আল্লাহর উপর ঈমান বা বিশ্বাসই হচ্ছে সকল উন্নতি ও অগ্রগতির মূল উৎস ও মানবতার মুক্তিদূত। সে-ই ভাগ্যবান ব্যক্তি যিনি অপরাপর লোকজনের মাধ্যমে মানুষকে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন ।

যাহরা একাডেমী এমন এক সংস্থার নাম যেখানে কতক চিন্তাবিদ ও বিদ্বান ব্যক্তি সংঘবদ্ধভাবে জাহেলিয়াতের অন্ধকারের মাঝে নাজাতের পথ প্রদর্শনের লক্ষ্যে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের মশাল হাতে মানবজাতিকে পথ-নির্দেশনার গুরু দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এদেরই অন্যতম আমাদের প্রিয় যুবক ,দ্বীনের আলেম ,হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন মাওলানা মোঃ নূরে আলম (সাল্লামাহুল্লাহু) তিনি জ্ঞানের সুগভীর মহাসাগরে অবগাহন করে জ্ঞান ও বিদ্যা অর্জনে যথেষ্ট পরিশ্রমের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি এ মহা সাগরে ডুব দিয়ে মহামূল্যবান অনেক হীরা-মাণিকও হস্তগত করেছেন । এক্ষনে তিনি সেই মহারত্ম থেকে নির্বাচন করে একটি ক্ষুদ্র ঝাড়বাতি সাজিয়েছেন যার মাধ্যমে তিনি তার স্বদেশী মুসলমানসহ মানবজাতির গবেষকদের জন্যে মুক্তির পথ এমনভাবে সুস্পষ্ট করেছেন যে তা শুধু পথই আলোকিত করবে না বরং সে পথের আকর্ষণও কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দিবে। তিনি তার বইয়ের নামকরণ করেছেন মুক্তির পথে । এই গবেষণার পথে মাওঃ নূরে আলম যথেষ্ট কষ্ট স্বীকার করেছেন। আর এক্ষেত্রে জনাব হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন শেখ আস্-সামী আল্ গুরাইরী (আবু আনফাল) সাহেব তাকে দিক নির্দেশনার ব্যাপারে কোন প্রকার ত্রুটি করেননি বরং তিনি একজন দয়ালু ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং উদ্ধৃতি সমূহের উপর নজর রেখেছেন পরিশ্রমের সাথে। ফলে উক্ত বাতির সৌন্দর্য আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

যাহরা একাডেমী -র সকল সদস্যদের পক্ষ থেকে আমি এবং আমাদের একাডেমীর সম্মানিত প্রধান পরিচালক জনাব হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন আল্লামা আলহাজ্ব শেখ সাব্বির হাসান মেইসামী ,উক্ত গবেষকদ্বয়ের প্রতি জানাই অশেষ ধন্যবাদ। আর আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি তিনি যেন বিশ্ব মুসলিমকে জ্ঞানের আলো বিতরণ করে মানবতার কল্যাণ ও পরিপূর্ণতার সকল সরঞ্জাম সুবন্দোবস্ত করার তৌফিক দান করেন। সাথে সাথে একাডেমীর সকল সদস্য ও গবেষক ,বিশেষতঃ এ গ্রন্থকার ও তার লেখার দিক নির্দেশকের ঐকান্তিকতা ও দ্বীনের খেদমত করার সুযোগ বৃদ্ধির জন্যে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া প্রার্থনা করছি।

সাইয়্যেদ হুসাইন মুর্তুজা নাকাভী

২৭ শে শা বান ১৪২০ হিঃ

হাওযা-ই-ইলমিয়া ,ক্কোম

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান।

অধ্যাপক আসসামী আল্ গুরাইরীর বক্তব্য

উপস্থিত এ গ্রন্থে আলোচিত বিষয়াবলীর প্রধান লক্ষ্য মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির প্রসার ও বিকাশ সাধন। কেননা ইসলাম হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তি সংশ্লিষ্ট জীবন্ত একটি দেহের আবরণের ন্যায়। তাই ন্যায়সংগত কারণেই ইসলামী চিন্তা-বুদ্ধি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত।

ক) ঐশ্বরীক ও বৈষয়িক বুদ্ধিবৃত্তি।

খ) অলৌকিক ও উদ্ভাবনাময়ী বুদ্ধিবৃত্তি।

গ) বিজ্ঞ বুদ্ধিবৃত্তি ও বর্ণনাময়ী বুদ্ধিবৃত্তি।

ঘ) বিশ্বাসগত বুদ্ধিবৃত্তি ও সমালোচক বুদ্ধিবৃত্তি এবং

ঙ) ধারণাগত বুদ্ধিবৃত্তি ও জ্ঞানগত বুদ্ধিবৃত্তি।

আপনাদের সামনে উপস্থিত বর্তমান গ্রন্থটি বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ লাভে পরিমিত সাহায্য করতে সক্ষম। লেখক এ বইটিতে অত্যন্ত শক্তিশালী তাত্ত্বিক আলোচনা উপস্থাপন করেছেন। কোন অন্ধ অনুকরণ এবং বিশ্বাস সম্পর্কিত উদ্দীপনাময়ী ও চলমান গতানুগতিক আলোচনা এতে স্থান পায়নি বরং গ্রন্থটির সকল আলোচনাই হয়েছে সম্পূর্ণ সত্য এবং সুপ্রমানিত তথ্যসমূহের উপর ভিত্তি করে। আমরা সুস্থ বুদ্ধি ও বিবেককে কখনো বিতাড়িত করি না বরং একই সঙ্গে রাসূল (সঃ) কর্তৃক বর্ণিত দলীলের উপর স্থবির বুদ্ধিবৃত্তি এবং মানব বুদ্ধিবৃত্তির সমান ব্যবহারের পক্ষপাতি। কেননা তালাবদ্ধ চিন্তা-ভাবনা থেকে মুক্তির চাবি কাঠি হচ্ছে এ বুদ্ধিবৃত্তি। ফলে এরই মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে পারি। সাথে সাথে এ বুদ্ধিবৃত্তি আমাদেরকে এও বলে দেয় যে কোন্ বিষয়টি বিবেক প্রসূত আর কোনটি বিবেক-বহির্ভূত। এ গ্রন্থে বিভিন্ন সহজ বোধগম্য উদাহরণের মাধ্যমে চিন্তার বিকাশ সাধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে যথার্থভাবে ,যেন পরবর্তীতে অন্যান্য চিন্তাবিদ ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিবর্গ এ পথে নিজেদের পরিশ্রম ব্যয় করতে এগিয়ে আসেন। পরিশেষে আমি লেখকের সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করছি।

-আসসামী আল্ গুরাইরী

প্রাথমিক কথা

হতাশাগ্রস্থ এ পৃথিবী। মুক্তির সন্ধানে দিক-বিদিক ছুটে বেড়াচ্ছে আজকের মানবকুল। ফলে কখনো পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদের মরিচিকায় আট্কে পড়ছে আবার কখনো প্রাচ্যের সাম্রাজ্যবাদের ধুম্রজালে বন্দি হয়ে শ্বাসরুদ্ধকর ও মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছে মানুষ। কিন্তু তারা মুক্তি কি পেয়েছে ? এটা নিঃসন্দেহে সত্য যে ,কোন তন্ত্র বা মতবাদ-ই মানব কল্যাণের সকল দিক বিবেচনা করে রচিত হয়নি। আর তাই এমতাবস্থায় এ সকল মতবাদের নিশ্চিত পরিণাম হিসেবে বর্তমান বিশ্বকে উপহার দিয়েছে নিরাপত্তাহীনতা ,অশান্তি ও অরাজকতা। ফলে পথহারা হয়ে মানুষ ছুটে বেড়াচ্ছে প্রকৃত মুক্তি ও শান্তির সন্ধানে।

একজন আইন প্রণয়নকারীর জন্যে প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো অতীত ,বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে নিখুত ও পরিপূর্ণ জ্ঞান ধারণ করা। আর এ কাজটি একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর-ই জন্যে সম্ভব। সুতরাং তার আইন অনুসরণের মাধ্যমেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

আল্লাহ তাআলা রচিত আল্-কোরআন আমাদের জন্যে ইহকালের কল্যাণ ও পরকালের মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। আল-কোরআন হচ্ছে মানবজাতির মুক্তির সনদ। তাই আজকে সময় এসেছে সেই মহান সৃষ্টিকর্তাকে নূতন করে চেনার। মানব রচিত বিভিন্ন অসাড় তন্ত্র-মন্ত্রের বেড়াজাল ভেঙ্গে প্রকৃত কল্যাণদাতা মুক্তিদাতার সত্যকার পরিচয় জানা আজকের মুক্তিকামী মানুষের একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বর্তমান পুস্তকটি সকল কল্যাণকামী ও শান্তিকামী মানুষের চিন্তার কপাট উম্মুক্ত করে বিশুদ্ধ ও বিকশিত জ্ঞান অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে মহান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রকৃত ও সঠিক পরিচয় এবং তাঁর গুণাবলীর খাঁটি অনুভূতি কোনক্রমে বিভিন্ন পরিভাষায় সীমাবদ্ধতায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের সৃষ্টি এ পরিভাষা আল্লাহ্ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ও সঠিক জ্ঞান-বুদ্ধিতে যতটুকু সম্ভবপর হয়েছে ,তাঁর প্রকৃত পরিচয়ের কিছু ধারণা উপলদ্ধি বোধের কাছাকাছি করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

যারা ধর্মহীন তথা সেকুলার জীবন যাপনে অভ্যস্থ ,যারা বাস্তবাদী চিন্তা চেতনায় নিজেদের মন-মগজকে ভরে দিয়েছে তারা এ পুস্তক পাঠে উপকৃত হয়ে ধর্মীয় জীবনে ফিরে আসতে পারেন। কেননা ধর্মের মূল প্রবর্তক এ বিশ্বের বিধানকর্তা। যেমনি করে বিশ্ব-বিধাতার তাকভীন তথা সৃষ্টিজগতে আপন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁরই প্রবর্তীত বিধান অনুযায়ী বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পরিচালিত হচ্ছে তেমনি করে তাশরীয়ি জগতে তথা তাঁর সৃষ্টির সেরা জীবের জন্যেও নির্দিষ্ট বিধিবিধান অবতীর্ণ করেছেন। আর এ সকল বিধি-বিধানের সমষ্টিই হল ধর্ম। ব্যক্তি জীবন থেকে বৃহত্তর রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে খোদায়ী বিধান মানুষের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের জন্যে প্রবর্তন করেছেন মহান প্রভু। তাই তাঁকে চিনে তাঁর অস্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে একটি মানুষের শুরু হয় ধর্মীয় জীবনের যাত্রা। একজন মানুষ যখন অন্তরাত্মা দিয়ে গভীরভাবে উপলব্ধি করবে যে তার স্রষ্টা ও প্রভু সর্বদা সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান তাকে প্রতিনিয়ত নিয়ন্ত্রন করছে ,তখন সে বেহাল্লাপনা ও লাগামহীন জীবন যাপন ত্যাগ করে বিশ্ব প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পন করে তাঁরই বিধি-বিধান মাথা পেতে নিতে বাধ্য হবে। আর এভাবেই একজন মানুষ তার প্রকৃত আত্ম পরিচয়ের সন্ধান লাভে সমর্থ হবে। অপরদিকে যারা ধর্মীয় জীবন-যাপন তথা ধর্মীয় অনুশাষন মেনে চলেছেন তারাও যদি এ বইটি পাঠ করেন তাহলেও তাদের ধর্মীয় জীবনে একগুয়েমীতা ,অজ্ঞতা ,খামখেয়ালীপানা ও স্রোতের মুখে খড়কুটোর মত ভেসে চলা অনিচ্ছায় এবং অজান্তে ধর্মীয় জীবন পালনের ক্ষেত্রে একাগ্রতা ও ঐকান্তিকতা পুনরায় ফিরে আসতে পারে। এ পুস্তকে আলোচনার বিভিন্ন ধাপে অনেক সময় কিছু তুলনামূলক দার্শনিক ও কঠিন বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে ,যদিও বইটি সকলের সহজ বোধগম্যতার প্রতি দৃষ্টি রেখে লেখার চেষ্টায় কোন প্রকার ত্রুটি করা হয়নি। তারপরও সকল স্তরের বাংলা ভাষাভাষী ভ্রাতা ও ভগ্নিগণ যেন আমার এ গ্রন্থ থেকে উপকৃত হতে পারেন সে জন্যে এ ক্ষেত্রে কঠিন ও সহজ তথা উভয় প্রকার আলোচনার সুত্রপাত করা হয়েছে।

আজকের অশান্ত পৃথিবীতে মানুষ যেন তার প্রকৃত স্রষ্টা ও ত্রাণকর্তাকে চিনে মুক্তির পথকে সুগম করতে পারে সে কারণেই আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। মানবতার কল্যাণে একটি নূতন দিগন্ত উম্মোচন করুন এ পুস্তকে সে কামনাই করছি। অবশেষে সুপ্রিয় পাঠক মহলের সেবায় নিবেদিত আমার এ যৎসামান্য শ্রমটুকু সার্থক হলে নিজেকে ধন্য মনে করবো। -

মোঃ নূরে আলম।

এ বিশ্ব

বিশ্ব-সৃষ্টি কতই না সুন্দর! মনোরম সব কিছু। নিখুঁত ভাবে সাজানো রয়েছে এ জগতের প্রতিটি বস্তু। নভোমন্ডল ,গ্রহসমূহ ,নক্ষত্ররাজি ,বায়ুমন্ডল ,নদ-নদী ,সাগর-মহাসাগর ,বন-জঙ্গল ও পাহাড়-পর্বত সব কিছুই এক নির্দিষ্ট পথে ,নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিভ্রমণ ও পরিচালিত হচ্ছে।

পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর বস্তুনিষ্ঠ সত্তা নিয়ে পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে স্পষ্টত-ই আমাদের কাছে সে বস্তুর অন্তর্নিহিত সব সৃষ্টি নিপূণতা ও রহস্য উদ্ঘাটন হয়ে যায়। তবু এখনো বহু প্রাণী সমুদ্রের তলদেশে অজানা রয়ে গেছে যা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে অক্ষম এখনও অথবা প্রাপ্ত প্রাণীর গুপ্ত নিপূণতা সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে ওয়াকেবহাল হতে আরো প্রচুর সময়ের প্রয়োজন বলে মনে করেন।

এ বস্তজগতের প্রতিটি প্রাণী ও বস্তু রহস্যময়। এর সৃষ্টি ধারা ,আকৃতি ধারণ ,জন্ম লাভ ও বৃদ্ধির সূচারু কার্যপ্রণালী সমস্ত কিছুই আমাদের বুদ্ধির গভীরে বিশদভাবে নাড়া দেয় এবং চিন্তাশীলদের চিন্তায় তাক লাগিয়ে দেয়।

সূর্য একটি গোলাকার অগ্নিকুন্ড যা অনাদিকাল থেকে আলো ও তাপ দিয়ে পৃথিবীর জীব ও জগতকে প্রভাবিত করছে। সমুদ্রের ঢেউ ,নদীর জোয়ার ভাটা ইত্যাদি সকল কিছু এমনকি মানুষের প্রতিটি স্পর্শকাতর অঙ্গ-প্রতঙ্গ পর্যন্ত সূর্য দ্বারা প্রভাবিত। চন্দ্র আলো বিকিরণ করে রাত্রের অন্ধকারে। পাহাড়-পর্বত ভূ-পৃষ্ঠে খুঁটির কাজ করছে। গাছপালা ,তরুলতা ,বন-জঙ্গল ইত্যাদি পৃথিবীতে বায়ূ দূষণ প্রতিরোধ করে চলছে। আবার মানুষ ছাড়াও ভূপৃষ্ঠে ও ভূগর্ভে ,সাগরের তলদেশে ও উপরিভাগে রয়েছে নান প্রকারের আশ্চর্য প্রাণী। ভূ-পৃষ্ঠের মৃত্তিকা এবং এর রংয়ের প্রকারভেদও প্রচুর। নদ-নদীও সাগরেও রয়েছে কত প্রকার স্বাদের জল। আর বিশ্ব প্রকৃতির যা কিছু নিয়ে আমরা আলোচনা করছি তা অন্যান্য গ্রহসমূহের তুলনায় অত্যন্ত ক্ষুদ্র যা পৃথিবী নামে পরিচিত। এরই মধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্য সৃষ্টি হচ্ছে মানুষ। মানব দেহের প্রতিটি অংশই বিষ্ময়কর। আমাদের মস্তিষ্কের ব্রেন সম্বন্ধে সামান্য বিজ্ঞান ভিত্তিক পর্যালোচনা একজন মানুষকে নির্বাক করে দিতে সক্ষম। মানব মস্তিস্কে অবস্থিত স্মৃতিশক্তির বিষয়টা আরো বিষ্ময়কার। মানুষের দেহাভ্যন্তরে হৃৎপিন্ড ,কিডনী ,পাকস্থলী সব কিছুই এক বিশাল জগতের অবতারণা।

এ পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টিতে আমরা যে নিয়ম-শৃঙ্খলা ও সুসংহতি প্রত্যক্ষ করি তা সাধারণ ও বুদ্ধিজীবি তথা এ উভয় স্তরের মানুষের বিবেক-বিচক্ষণতায় কৌতুহলী জিজ্ঞাসার উদ্রেক ঘটাতে পরিপূর্ণ সহায়ক।

পৃথিবী গতিশীল। পরিবর্তনশীল ও ঘূর্ণায়মান। পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে প্রতিনিয়ত আবর্তিত হচ্ছে। আর এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তু ও প্রাণী নির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে গতিশীল অবস্থায় রয়েছে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানীরা তাদের স্ব স্ব গ্রন্থে প্রকৃতির এ সমস্ত দিকগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। এতসব কিছুর মাঝে আমরা যে বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারি তা হল ,বিশ্ব প্রকৃতির সর্বস্তরে এক প্রকার শৃঙ্খলা ,লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও নিয়মনীতি বিরাজমান। এ ব্যাপারে আপনাদের সামনে সৃষ্টিজগতের মাত্র দু টি উপমার সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছি।

সৃষ্টিজগতের বিষ্ময়কর উপমা

বাদুড় পাখি

পুষ্প ও কীট পতঙ্গ

বাঁদুড় পাখি

কখনও কখনও অন্ধকার রাত্রে একটা ব্যতিক্রমধর্মী প্রাণীর আনাগোনা দৃষ্টিগোচর হয়। আমরা দেখতে পাই রাত্রের গভীর অন্ধকারের মধ্যেও এ পাখি সাহসিকতার সাথে খাবারের সন্ধানে এদিক সেদিক ছুটে বেড়ায়। ঘুট ঘুটে অন্ধকার । রাত্রে যখন কোন কিছুই দৃষ্টিগোচন হয় না তখন এরই মাঝে নির্ভয়ে উড়ে বেড়ায় একটি ছোট্ট পাখি। রাতেই তার বিচরণ সময়। খাবার যোগাড় করে সে রাত্রেই। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণীর শিকার এ গভীর ও ঘন অন্ধকারেই করে থাকে সে। এ ছোট্ট পাখিটির নাম বাঁদুড়। প্রকৃতিতে এটি একটি বিষ্ময়ক র প্রাণী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী আশ্চর্য হলো ঘুট ঘুটে অন্ধকার রাত্রিতে এর বিচরণ।

এ দ্রুতগতি সম্পন্ন ক্ষুদ্র পাখি রাতের আঁধারে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় না। এটা কতই না বিষ্ময়কর! এ ব্যাপারে যতই পর্যবেক্ষণ ও অধ্যায়ন করা হয় ততই এর অন্তর্নিহিত ও গুপ্ত রহস্য আমাদের সামনে আরো অধিক পরিমাণে উদ্ঘাটন হয়ে পড়ে। দিবালোকে একটা দ্রুত উড্ডয়নশীল পাখি যে ভাবে নির্ভয়ে আকাশে উড়ে বেড়ায় এ ক্ষুদ্র বাদুড় পাখিটাও সেভাবে অন্ধকার রাতে নির্ভয়ে আকাশে উড়ে বেড়াতে সক্ষম।

আমরা জানি এ পাখির কোন চোখ নেই। তবুও রাতের অন্ধকার তার জন্যে সমস্যাই নয়। যদি তার উড্ডয়নের পথে প্রতিবন্ধকতার ব্যাপারে কোন প্রকার তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম না থাকে তাহলে কিভাবে সে এত অকুতোভয় ? কোথাও তো আঘাত লেগে গতিরোধ হচ্ছে না ?

দেখা গেছে যদি এ পাখিটাকে কোন আঁকাবাঁকা ও অন্ধকার সুড়ঙ্গ পথে ছেড়ে দেয়া হয় আর সুড়ঙ্গ পথের দেয়ালগুলোতে কালি মেখে রাখা হয় তারপরও এ বিষ্ময়কার প্রাণীটি খুব সুন্দরভাবে কোন রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অবস্থায় সুড়ঙ্গের অন্য পথ দিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম। বাদুড় পাখির মধ্যকার এ বিষ্ময়কর অবস্থার সাথে আধুনিক বিশ্বের আবিষ্কার রাডার1 নামক যন্ত্রের তুলনা করা যেতে পারে। বাঁদুড় পাখি সৃষ্টিকর্তার এক আশ্চর্য সৃষ্টি। এর অন্তর্নিহিত ব্যবস্থাপনার গভীরতা উপলব্ধির জন্যে রাডার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা থাকা প্রয়োজন। সাধারণত: পদার্থ বিদ্যায় শব্দের অধ্যায়ে মহাশব্দ বা অতিশব্দ সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়ে থাকে। এ মহাশব্দের তরঙ্গমালা এত দ্রুতগতিসম্পন্ন ও দীর্ঘ যে মানুষের দ্বারা কোন ক্রমে তা কর্ণগোচন সম্ভব নয়। এটা পরীক্ষিত সত্য যে ,যখন কোন দেয়ালে ছুড়ে মারা হয় তখন তা ঠিক নিক্ষেপের গতিতেই পূর্বস্থানে ফিরে আসতে বাধ্য। যখন আমরা কোন পাহাড়ের নিকট গিয়ে চিৎকার করি তখন এর ধ্বনি একট নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পূর্বস্থানের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তদ্রুপ কোন মহাশব্দের তরঙ্গ একটা নির্দিষ্ট স্থান থেকে নিক্ষেপ করা হলে তা নির্দিষ্ট গতিতে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। যখনই কোন কিছুতে বাধাগ্রস্থ হয় তখনই তা পূর্বের অবস্থানের দিকে ফিরে আসে। সচরাচর যুদ্ধের সময় শত্রু বিমানকে চিহ্নিত করার জন্যে এ ধরণের রাডার থেকে একটা বিশেষ শব্দ বিমানের উদ্দেশ্য প্রেরণ করা হয়ে থাকে। আর যখনই তা শত্রু বিমানে আঘাত প্রাপ্ত হয় তখনই একটা নির্দিষ্ট গতিতে প্রত্যাবর্তন করে রাডার যন্ত্রে। এরই মাধ্যমে শত্রু বিমানের গতিবেগ ,দুরত্ব ইত্যাদি নির্ণয় করা হয়ে থাকে।

বিজ্ঞানীরা বলেন ,বাদুড় পাখির দেহে রাডারের ন্যায় একটা যন্ত্র বিদ্যমান। তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন যদি বাদুড় পাখিকে একটা শুন্য কক্ষে ছেড়ে দেয়া হয় আর সেখানে মহাশব্দ ধারণ ও তা সাধারণ শব্দের তরঙ্গে পরিণত করার ক্ষমতাসম্পন্ন কোন মাইক্রোফোন রাখা হয় তাহলে পরিষ্কারভাবে রাডার থেকে নির্গত মহাশব্দ শ্রবণ সম্ভবপর হয়ে উঠবে। প্রতি সেকেন্ডে ত্রিশ থেকে ষাট বার মহাশব্দের তরঙ্গ বাদুড় পাখির নিকট থেকে শোনা যায় বলে তারা ধারনা করে থাকেন।

আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে বাদুড় তার বাকযন্ত্র থেকে শব্দ নির্গত করে তা নাসিকার মাধ্যমে বাইরে ছেড়ে দেয়। আর তা কোন স্থানে বাধাগ্রস্থ হয়ে ফিরে আসে কর্ণে। বাদুড়ের কর্ণ নির্গত তরঙ্গরাজীর ধারক। এ পাখি তার কর্ণের মাধ্যমেই উপলব্ধি করতে পারে কতটুকু দুরত্বে বাধাগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণেই এ ক্ষুদ্র প্রাণী রাতের অন্ধকারে শিকারের খোঁজে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে। কি অবাক সব ক্রিয়া-কান্ড! এতসব জটিল ব্যবস্থাপনা কি কোন একজন বুদ্ধিমান ও সর্বজ্ঞানী ব্যবস্থাপক ব্যতীত অন্য কারো দ্বারা সম্ভব ? আর কোন বুদ্ধিহীন ব্যবস্থাপক তো এ ব্যাপারে কোন ধারণাই রাখতে পারে না। সৃষ্টি জগতের এ বিশাল নৈপূণ্য ক্ষমতা ও জটিলতা দর্শনে এ অবধি অনেক বিজ্ঞানী এমন কোন একক মহাস্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন ,যিনি সকল প্রকৃতির উর্দ্ধে।

পুষ্প ও কীট পতঙ্গ

প্রাকৃতিক জগতে আরেকটি অত্যাশ্চর্য বিষয় হচ্ছে পুষ্প ও কীট পতঙ্গের মাঝে বন্ধুত্ব। বসন্তকালের শেষের দিক যখন ধীরে ধীরে বাতাস গরম হতে শুরু করে তখন ফলের বাগান গুলোতে বিভিন্ন প্রকার কীট পতঙ্গের আনাগোনা দেখা যায়। ছোট-বড় পতঙ্গ ,প্রজাপতি ,মৌমাছি ইত্যাদি কত রকমের প্রাণী। এধরণের প্রাণীর কাজ হলো এরা কোন এক গাছের ফুলের উপর বসে রস আহরণ করে অন্য গাছের পাপড়ির উপর গিয়ে বসে। ওরা পুঃলিঙ্গের গাছের পাপড়ি থেকে পরাগরেণু বহন করে নিয়ে যায় স্ত্রী লিঙ্গের পুষ্পের উপর। এভাবে বৃক্ষরাজীর মাঝে সঙ্গম ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। পরিণতিতে বৃক্ষরাজী ফুলে -ফলে ভরপুর হয়ে উঠে।

এ সময়ে বিভিন্ন প্রকার কীট-পতঙ্গের আনাগোনা ,এক ডাল থেকে অন্য ডালে বিচরণ ,গাছে গাছে উড়ে বেড়ানো ইত্যাদি দেখে মনে হয় কোন এক বিশেষ শক্তি তাদেরকে ঠিক একটি উৎপাদনশীল শিল্প কারখানার শ্রমিকদের ন্যায় পরিচালনা করছে। ফলে সকলে নিজ কর্মে পরিপূর্ণ আত্মনিয়োগ করে আছে। কাজের কোন ফাঁকি নেই। পরিশ্রম করছে সবাই একযোগে। যথাযথভাবে সকলে স্ব -স্ব দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। কতই না বিষ্ময়কর এ বিষয়টি !

কখনো কি ভেবে দেখেছি ,যেখানে বৃক্ষ ,তরুলতার নড়াচড়া ও স্থান পরিবর্তন করার ক্ষমতা নেই সেখানে ওগুলো কি ভাবে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয় আর কি পদ্ধতিতে তাদের সঙ্গমক্রিয়া সম্পন্ন হয় ? কিভাবে বৃক্ষরাজীর মাঝে পুরুষ পরাগরেণু ও স্ত্রী ডিম্বানুর মিলন ঘঠে ? অনেক ক্ষেত্রে এ অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজটির দায়িত্ব কীট পতঙ্গের উপর ন্যস্ত। আবার কখনো বায়ু এ মিলন ক্রিয়াতে সাহায্য করে থাকে। যখন কোন ব্যক্তি কীট-পতঙ্গ ও বৃক্ষরাজীর মধ্যকার এ বিষ্ময়কর ঘটনাবলী অধ্যয়ন করে তখন স্বভাবতঃই তার মনে প্রশ্নের উদেয় হয় ,কে কীটপতঙ্গ ও বৃক্ষদের মাঝে এ অপুরম ও মজবুত বন্ধুত্ব স্থাপন করে দিয়েছে ?

আমাদের চারপার্শ্বে রয়েছে এ ধরণের বহু আশ্চর্য ঘটনা যা বিশ্বকে দান করে এক সাবলীল সৌন্দর্য ও বিশেষ নিয়ম-শৃঙ্খলা। বিশ্বজগত চমৎকার ও বিষ্ময়কর সৃষ্টিতে ভরপুর। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যে কোন সৃষ্টিকে নিয়ে যদি আমরা সামান্য পরিমাণ অধ্যয়ন ,গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাব বহু অত্যাশ্চর্য ক্রিয়া-কান্ড ,সুনিপুণ কলা-কৌশল ও ব্যবস্থাপনা। এ প্রসঙ্গে কোরআন উল্লেখ করছে :

) يُنبِتُ لَكُم بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُونَ وَالنَّخِيلَ وَالْأَعْنَابَ وَمِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ(

অর্থাৎ : (আল্লাহ্) তোমাদের জন্যে ওটার (বৃষ্টির) মাধ্যমে কৃষিকার্য উৎপাদন এবং জলপাই ,খেজুর ও আঙ্গুর ইত্যাদি সব ধরণের ফলাদি বৃক্ষ সমুদগত করেন ,নিশ্চয়ই এগুলোর মধ্যে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (আন্ নাহল ,আঃ নং-11 )

আল্লাহ্ অন্যত্র বলেন-

) إ ِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنزَلَ اللَّـهُ مِنَ السَّمَاءِ مِن مَّاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَابَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ(

অর্থাৎ : নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীন এবং দিবা-রাত্রির পালা বদল এবং মানুষের উপকারার্থে চলন্ত জাহাজসমূহ এবং আল্লাহ্ কর্তৃক আসমান থেকে বারিবর্ষন যার ফলে মৃত যমীন পুনরায় প্রাণ ফিরে পায় এবং যমীনের বুকে চতুষ্পদ জন্তুর উত্থান আর বায়ুরাশির গতি পরিবর্তন এবং আসমান ও যমীনের মাঝখানে সংরক্ষিত ও করতলগত মেঘ খণ্ড চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (আল্ বাক্বারা ,আঃ নং-164। )

6

বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি

শিশু জন্মলগ্ন থেকেই তার চার পাশে অনেককে দেখতে পায়। সর্বপ্রথম যার সাথে সাক্ষাৎ ঘটে তিনি হলেন নবজাত শিশুর মা। ধীরে ধীরে যখন শিশু বড় হতে থাকে তখন সে মা ছাড়াও আরো অনেকের সাখে পরিচয় লাভ করে। আস্তে আস্তে বিভিন্ন ধরনের বস্তুর সাথেও পরিচিত হতে থাকে। এভাবে শুরু হয় একটি শিশুর জীবনযাত্রা।

মানুষ স্বভাবগত ভাবেই কৌতুহলী। তার চারপাশের বিভিন্ন বস্তু ও ব্যক্তি সন্বন্ধে জানার কৌতুহলী মনোভাব শৈশবেই প্রতিটি শিশুর মাঝে পরিলক্ষিত হয়। প্রথমে সে ক্ষুদ্র জিনিষ থেকেই শুরু করে ,পরে বয়স যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে ততই জীজ্ঞাসার মাত্রা ও পরিমাপও বেশী হতে থাকে।

একটি শিশু যখন পাঠশালায় গমন করে তখন সে তার চতুষ্পার্শ্বে অনেক ধরনের সৃষ্টির সাথে পরিচয় লাভ করে। আর প্রথম থেকেই তো এ আকাশ তার মাথার উপর ছেয়ে আছে। অক্সিজেন অনবরত গ্রহণ করছে। পানি পান করছে। এভাবে সে ধীরে ধীরে পাহাড়-পর্বত ও নদ-নদী এবং অনেক ধরনের গৃহপালিত পশু-পাখির সাথে পরিচয় লাভ করতে থাকে। ঐ শিশুর কৌতুহলী মনে একটি মাত্র জিজ্ঞাসা এত সব কিছু ,কে সৃষ্টি করলো ? সৃষ্টির পেছনে কি উদ্দেশ্য নিহিত আছে ? সূর্য প্রভাতে পূর্বাকাশে উদয় হয় আবার সন্ধ্যাবেলা পশ্চিমাকাশে অস্ত যায় প্রতিদিন ,এ নিয়ম-শৃঙ্খলা কে তৈরী করলো ? রাত্রে যখন সে আকাশের তারকারাজীর দিকে তাকায় তখন আবারও তার মনে প্রশ্নের উদেয় ঘটে ,এত সুন্দর মনোরম নক্ষত্রমণ্ডলীকে কনো অভিজ্ঞ চিত্রকর আকাশের বুকে সাজিয়ে রেখেছে ? এসব প্রশ্নের উত্তরই হল বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি। বিশ্ব অস্তিত্ত্ব ও ব্যবস্থাপনা এবং মানুষ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিই হল অন্তরের এতসব প্রশ্নের উত্তর।

অনেকে বিশ্বাস করেন এ বিশ্বের সৃষ্টির পেছনে কোন পরিকল্পনা প্রণেতার প্রয়োজন নেই। এর পেছনে কোন উদ্দেশ্যও নেই। স্বয়ংক্রিয়ভাবে উদ্ভব হয়েছে এ সৃষ্টিজগত। প্রকৃতিই স্বয়ং সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা। আর একেই বলে বস্তুবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি। প্রাক ইসলামী যুগে এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির অনুসারীদের বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হতো। তন্মোধ্যে প্রাকৃতিবাদী ,যিনদিক ,দাহরী ও নাস্তিক অন্যতম। কিন্তু বর্তমান আধুনিক ,শিল্পোন্নত ও ইলেকট্রোনিক্স যুগে তাদের মুখোশ পরিবর্তন হতে দেখা যায়। বর্তমান বিশ্বে বস্তুবাদীদের বিভিন্নমুখী মতাদর্শের মধ্যে অতি পরিচিত নামটি হচ্ছে যুক্তিবাদী বস্তুবাদ বা Dialectic Materialism । আর মার্ক্সবাদী দর্শন এরই উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে।

আবার অনেকে বিশ্বাস করেন এ বিশ্ব জগতের বালু কণা থেকে শুরু করে প্রতিটি সৃষ্টির পেছনে একটি নির্দিষ্ট কার্যকারণ ও উদ্দেশ্য রয়েছে। কোন কিছুই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৃষ্টি হয়নি। বরং প্রতিটি সৃষ্টির পেছনে কোন স্বাধীন সত্তার শক্তিমত্তা কাজ করছে। এ ধরনের চিন্তা ভাবনার নাম বিশ্ব সম্পর্কে আস্তিকবাদী দৃষ্টিভঙ্গি।

আমাদের মনে রাখতে হবে বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি আর বিশ্ব পরিচিতি এক কথা নয়। এরা দুটি পৃথক পরিভাষা। দৃষ্টান্তস্বরূপ ,পৃথিবীতে পানির পরিমান মাটির চেয়ে কতগুণ বেশী ? অথবা সৌর জগতে বিরাজমান গ্রহের সংখ্যা কত ? ইত্যাদি সৃষ্টি জগতের পরিচয় নিয়ে আলোচনা মাত্র। এগুলোতে বিশ্ব সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নয়। আর যখন আমরা সমগ্র বিশ্ব প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করি ,যেমন ধরুন যদি বলি যে ,সমগ্র বস্তুজগত কোন অবস্তুগত সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভরশীল -তাহলে এ বিষয়টি বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির অন্তর্ভুক্ত বলে পরিগণিত হবে।

7

বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির ফলশ্রুতি

বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও বিজ্ঞানের উন্নতি

বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রত্যাশা

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন , আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে ,তা তো আছেই। আমাদের বিভিন্ন প্রকার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এগুলোর তো কোন পরিবর্তন আসবে না। তাহলে এ বিষয়ে এত আলোচনার কি প্রয়োজন ? এর আলোচনা আমাদের জন্যে কি ফলাফল বয়ে আনতে পারে ?

উক্ত প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় ,হ্যাঁ ,আমাদের চারদিকে কোন সৃষ্টির উপর প্রভাব ফেলবে না সত্য ,কিন্তু তাই বলে আমাদের কাজ-কর্ম ,আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রভাবিত হবে না এটা বলা মনে হয় সঠিক হবে না।

অধিকন্তু বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাবিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিষয়টির স্পষ্টতার জন্যে নিন্মে কয়েকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা গেল।

বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও বিজ্ঞানের উন্নতি

চিন্তা করে দেখুন ,আপনার বন্ধু সফর থেকে ফিরে এসেছে। সে আপনাকে একটি বই উপহার দিয়ে বললো এ চমৎকার বইটির লেখক একজন বড় চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ,বুদ্ধিমান ও বিজ্ঞ এবং উচ্চজ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অধিকারী। নিশ্চয়ই আপনি সে বইটা হালকাভাবে রিডিং পড়েই ক্ষান্ত হবেন না। বরং এর প্রতিটি শব্দ ,বাক্য ও তাদের গঠন বর্ণনা ও পরিবর্তন সবকিছুকে খুব সূক্ষ্মভাবে মনযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করবেন। যদি কোথাও না বুঝে থাকেন তা হলে ঘন্টার পর ঘন্টা ,দিনের পরদিন মোট কথা সুযোগ পেলেই এ বিষয় সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করবেন ,বোঝার চেষ্টা করবেন। সাধ্যমত পরিশ্রম করতেও আপনি কুন্ঠাবোধ করবেন না। কেননা ,এ বইয়ের গ্রন্থকার কোন সাধারণ লোক নন। তিনি একজন শীর্ষস্থানীয় গবেষক ,চিন্তাবিদ। তার কোন কথাই অযথা নয়। কোন বাক্যই তার অপরিকল্পিত নয়।

অপরদিকে যদি আপনাকে বলা হয় এ বইটা যদিও বাহ্যিকভাবে চমৎকার বলে মনে হবে কিন্তু এর পুস্তকার একজন অজ্ঞ ,মুর্খ ,নির্বোধ ও বুদ্ধিহীন ব্যক্তি। আপনি নিখুত ভাবে এ বইটার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন নাকি শুধুমাত্র একটু চোখ বুলিয়ে রেখে দিবেন ? কেননা আপনি জানেন এ বইয়ের কোন মূল্য নেই। কোন জ্ঞান-গর্ভ আলোচনা এ বইতে নেই। মোট কথা এ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করা অযথা সময় নষ্ট করারই নামান্তর বলে বিবেচনা করবেন। এ বিশ্বজগতও একটি বৃহৎ গ্রন্থের ন্যায়। এ জগতের প্রতিটি সৃষ্টি এক একটি বাক্য ,যার সমম্বয়ে গঠিত হয়েছে এ বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ।

যদি আমরা আস্তিকবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির অনুগামী হই তাহলে এ বিশ্বের প্রতিটি বস্তু ,প্রতিটি সৃষ্টিকেই আমরা মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করবো আর খুব মনোযোগ সহকারে তাঁর প্রতিটি বিষয়ের অধ্যায়নে গুরুত্বারোপ করবো এবং কৌতুহলী অন্তঃকরণ নিয়ে প্রতিটি সৃষ্টির অন্তর্নিহিত রহস্যাবলী উদ্ঘাটনের জন্যে উদ্গ্রীব হবো। কেননা আমরা বিশ্বাস করি প্রতিটি সৃষ্টি বস্তুর পেছনে নিশ্চয়ই কোন শক্তিশালী ও বিশাল বুদ্ধিমান শক্তিমত্তা বা সৃষ্টিকর্তা ক্রিয়শীল রয়েছেন। তিনি অতিশয় বুদ্ধিমান ,প্রজ্ঞাবান ,শিল্পী ও জ্ঞানী। তিনি মহাবিজ্ঞানী ও দার্শনিক। সুতরাং তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজন রয়েছে। আর এ দৃষ্টিভঙ্গির কারনেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও উন্নতি সম্ভব হয়েছে।

আর যদি আমরা বস্তুবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হই তা হলে এ বিশ্বের রহস্যময় সৃষ্টিকুলের ব্যাপারে সামান্যতম চিন্তা-ভাবণা করারও মনোভাব তৈরী হবে না। কেনান ,বস্তুবাদীরা এ বিশ্বজগতের সৃষ্টিকারক হিসেবে বুদ্ধি ও জ্ঞানহীন প্রকৃতিকেই মনে করেন। আর এতসব কিছুর স্রষ্টা যদি এক নির্বোধ ও জ্ঞানহীন প্রকৃতি হয়ে থাকে তা হলে তার সৃষ্টির-ই বা কি মূল্য হতে পারে ?

বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রত্যাশা

কথায় বলে , নদীর এপাড় ভাঙ্গে ওপাড় গড়ে -এই তো নদীর খেলা। আর এ খেলা মানুষের জীবনেও ঘটে থাকে অহরহ। সাধারণতঃ মানুষের এ ক্ষণকালীন জীবনও বহু চড়াই-উৎরাই এর মধ্য দিয়ে বিকশিত হয় । তাই কখনো একজন মানুষের জীবনের দ্বারে কিছু অনাকঙ্খিত বিপদও কড়া নাড়তে পারে। অনেক সময় এমনও হয় যে এ অপ্রত্যাশিত সমস্যা থেকে তার পালানের কোন পথ থাকে না। তখন চতুর্দিকে পথরুদ্ধ অবস্থায় পড়ে যায় সে। এমতাবস্থায় সে নিজেকে অতিশয় দুর্বল ও অসহায় অবস্থার মুখোমুখি দেখতে পায়। আর এরকম কঠিন বিপদের মুহুর্তে একমাত্র আস্তিকবাদী দৃষ্টি-ভঙ্গিই তাকে মুক্তির সন্ধান দিতে পারে। কেননা ,সে তখন তার চেয়ে বড় ও বিশাল কোন অস্তিত্বের আশ্রয়ের সন্ধান খুঁজে পায়। তিনি জানেন এ বিশ্বের প্রতিটি সৃষ্টিই একজন পরম পরাক্রমশালী ও বুদ্ধিমান সৃষ্টিকর্তার অধীন। আর আমাদের পরিত্রানদাতাও তিনি। ফলে একজন আস্তিক ব্যক্তি এ ধরনের কঠিন ও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মোকাবলা করার জন্যে যথেষ্ট দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে থাকেন।

অপর দিকে একজন বস্তুবাদী ব্যক্তি এ ধরনের পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। হতাশা ও ভয় তাকে অক্টোপাসের মত ঘিরে ফেলে একটি ক্ষুধার্ত ব্যাঘ্রের ন্যায়। এমতাবস্থায় সে নিরাশ্রিত অবস্থার সম্মুখীন হয়ে পড়ে। আর এ কারনেই বস্তুবাদীরা এহেন তহাশাগস্থ অবস্থায় আত্মহত্যার ঘৃন্য পথের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে আস্তিকবাদীরা সর্বাবস্থায় তাদের মহাপরাক্রমশালী পরিত্রানদাতার আশ্রয় কামনা করে থাকেন। আর এ কারনেই তারা কখনো আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন না।

আর এক ন্যায়সংগত কারণে ইসলাম ধর্মে আত্মহত্যা মহাপাপ বলে পরিগণিত। কেননা আত্মহত্যা হতাশা ও পরাজয়ের মনোভাব থেকেই জন্ম লাভ করে থাকে।

8

আস্তিকবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ

কার্যকারণ

শৃঙ্খলীয় প্রমাণ

মানব প্রকৃতি ও সত্যান্বেষী স্বভাব

অস্তিত্ব বিভক্তির প্রমাণ


3

4

5

6

7

8

9

10