মুক্তির পথে

মুক্তির পথে30%

মুক্তির পথে লেখক:
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বিভাগ: আল্লাহর একত্ববাদ

মুক্তির পথে
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 34 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 17333 / ডাউনলোড: 3761
সাইজ সাইজ সাইজ
মুক্তির পথে

মুক্তির পথে

লেখক:
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বাংলা

এ বইটিতে অত্যন্ত শক্তিশালী তাত্ত্বিক আলোচনা উপস্থাপন করেছেন। কোন অন্ধ অনুকরণ এবং বিশ্বাস সম্পর্কিত উদ্দীপনাময়ী ও চলমান গতানুগতিক আলোচনা এতে স্থান পায়নি বরং গ্রন্থটির সকল আলোচনাই হয়েছে সম্পূর্ণ সত্য এবং সুপ্রমানিত তথ্যসমূহের উপর ভিত্তি করে। আমরা সুস্থ বুদ্ধি ও বিবেককে কখনো বিতাড়িত করি না বরং একই সঙ্গে রাসূল (সঃ) কর্তৃক বর্ণিত দলীলের উপর স্থবির বুদ্ধিবৃত্তি এবং মানব বুদ্ধিবৃত্তির সমান ব্যবহারের পক্ষপাতি। কেননা তালাবদ্ধ চিন্তা-ভাবনা থেকে মুক্তির চাবি কাঠি হচ্ছে এ বুদ্ধিবৃত্তি। ফলে এরই মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে পারি। সাথে সাথে এ বুদ্ধিবৃত্তি আমাদেরকে এও বলে দেয় যে কোন্ বিষয়টি বিবেক প্রসূত আর কোনটি বিবেক-বহির্ভূত। এ গ্রন্থে বিভিন্ন সহজ বোধগম্য উদাহরণের মাধ্যমে চিন্তার বিকাশ সাধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে যথার্থভাবে ,যেন পরবর্তীতে অন্যান্য চিন্তাবিদ ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিবর্গ এ পথে নিজেদের পরিশ্রম ব্যয় করতে এগিয়ে আসেন।

বিজ্ঞান ঈমানের অগ্রদূত

বিশ্ব -শ্রেষ্ট পদার্থবিদদের মধ্যে লর্ড কেলওয়াই অন্যতম। তিনি বলেন : যদি আপনি উত্তম রূপে চিন্তা -ভাবনা করেন তাহলে দেখতে পাবেন ,বিজ্ঞান আপনাকে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নে বাধ্য করছে

পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অনেকেই তাদের গবেষণার এক পর্যায়ে মহান আল্লাহর অস্তিত্বের সামনে আত্মসর্মপণ করতে বাধ্য হয়েছেন। এমনি একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী হলেন আমেরিকান ম্যাক্স প্লাংক -যিনি এটোমের আভ্যন্তরীন গুপ্ত রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেছেন : ধর্ম ও প্রকৃতি বিজ্ঞান সম্মিলিতভাবে নাস্তিকতা ,কুসংস্কার ও সন্দেহ প্রবণতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এগুলোর (ধর্ম ও প্রকৃতি বিজ্ঞান) উত্থানের পেছনে সর্বদা আল্লাহর শক্তিমত্তা ক্রিয়াশীল ছিল।

Albert Me combs Winchester নামক একজন জীব বিজ্ঞানী বলেনঃ বিজ্ঞান মানুষের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে দেয় ,যার ফলে মানুষ ভালভাবে তার প্রভুকে চিনতে সক্ষম হয়। সাথে সাথে তার শক্তিমত্তা ,মহত্ত্ব ও সৃষ্টিক্ষমতা সম্পর্কেও অধিক ওয়াকিবহাল হতে পারে। বিশ্বের প্রতিটি নব্য আবিস্কার মানুষের ঈমানের দৃঢ়তা শতগুণ বৃদ্ধি করে দেয়। আর সেই সাথে তা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা-চেতনাতে বদ্ধমূল সকল প্রকার কুমন্ত্রণা ও শেব্কের মূলৎপাটনে যথেষ্ট সাহায্য করে থাকে। অতঃপর তদস্থলে তাওহীদ ও আল্লাহর পরিচয়ের উন্নত চিন্তা ও আকিদা স্থাপন করে দেয়।

Edwad Luter Kessel নামক এক প্রাণী বিশেষজ্ঞ বলেন : প্রাকৃতিক বিজ্ঞানীগণ তাদের জ্ঞানগর্ভ প্রমাণাদি কে যেমনিভাবে বৈজ্ঞানিক ফলাফল অর্জনের জন্যে অধ্যয়ন করে থাকেন তেমনি যদি আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ কল্পে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করতেন তা হলে অবশ্যই তারা একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের স্বীকার বাধ্য হতেন।

এ কাজে স্বভাবতঃই সকল ধরনের গোড়ামী পরিহার করে চলতে হবে। সকল প্রকার জ্ঞান-গর্ভ আলোচনা ও অধ্যয়ন একজন সুস্থ বিবেকবান ব্যক্তিকে সৃষ্টির একক ও প্রথম কারণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে বাধ্য করবে ,যাকে আমরা আল্লাহ্ বলে সম্মোধন করে থাকি।

অতঃপর তিনি বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞানের আবিস্কার সমুহকে মানব-জাতির জন্যে আল্লাহ্ তায়ালার বিশেষ রহমত ও দান বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরো বলেন : আল্লাহর এ অসংখ্য নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা তখনি সার্থকতার রূপ ধারণ করবে যখন মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমানের দৃঢ়তাকে আরো অধিক বাড়িয়ে দিবে’’

মানুষের জ্ঞান স্বল্প ও সীমিত

সাধারণতঃ মানব সমজে প্রচারিত অধিকাংশ ধারণাই ভুল ও গোমরাহীতে ভরপুর থাকে। দৃষ্টান্তস্বরূপ অধিকাংশ মানুষ মনে করে থাকে ,বিজ্ঞান একজন অভিজ্ঞ জ্ঞানী ও বাগ্মীর ন্যায় সকল প্রকার সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। অথচ প্রকৃত ব্যাপারটি কিন্তু এর সম্পূর্ন বিপরীত। মুলতঃ বিজ্ঞান ঠিক একজন যুবকের ন্যায় বিভিন্ন ধরনের সমসায়িক প্রশ্ন ও সমস্যার উত্তর ও সামাধান দেয়ার চেষ্টা করে থাকে। এমন কোন বিজ্ঞানী খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি তার অর্জিত জ্ঞানের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পেরেছেন। কেননা ,তারা জানেন ,তাদের অর্জিত জ্ঞানের চেয়ে অজানা বিষয়ের সংখ্যা অনেক বেশী । -উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন পদার্থ ও গণিত বিজ্ঞানী জনাবEarl Chester Rex । প্রকৃতপক্ষে পদার্থ বিদ্যায় ঐ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব যেগুলোর প্রথমে কিভাবে (How ) শব্দটি অবস্থিত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেন (Why ) শব্দের ভিত্তিতে প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর দিতে পারে না পদার্থবিদ্যা।

উদাহরণস্বরূপ : কিভাবে দু টি বস্তু পরস্পর আকর্ষিত হয়ে ?-এ প্রশ্নে উত্তর নিউটনের মধ্যাকর্ষণ সুত্র অত্যন্ত সুন্দরভাবে দিয়েছ। কিন্তু কোন দুটি বস্তু পরস্পর আকর্ষিত হয় ? -এর জবাব এখনও কোন বিজ্ঞানী দিতে সক্ষম হয়নি। এমনও বহু প্রশ্ন আছে যা কিভাবে শব্দ দিয়ে শুরু করলেও সেগুলোর উত্তরে মধ্যে হয়তো , সম ্ভবতঃ শব্দদ্বয় যুক্ত করা হয়। আমরা জানি ,মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে আমরা ভূ-পৃষ্ঠে বায়ুমন্ডলের চাপের মঝেও নিজেদের ভারসাম্য বজায় রেখে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারি। আমরা আরো জানি ,পৃথিবী তার নিজকক্ষে সূর্যের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করছে ,কিন্তু কেন এমন সব ক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে ? এসবের উত্তর বিজ্ঞানীরা অনুমানের উপর ভিত্তি করে দিয়ে থাকেন।

এ বিশ্ব-প্রকৃতির একটি সুত্র হলো : যদি দু টি বস্তুর মাঝে অত্যাধিক দুরত্ব বিদ্যমান থাকে তাহলে তারা পরস্পর বিকর্ষিত হবে। কিন্তু কেন ? এর কোন উত্তর অদ্যবধি কোন বিজ্ঞানী দিতে পারেন নি।

প্রকৃত সত্য এই যে ,মানবজাতি তার উজ্জল বৃদ্ধিমত্তা ও বিশাল পান্ডিত্য দ্বারা এখনও সে নিজেকেই পরিপূর্ণভাবে চিনতে পারেনি। ধর্ম-বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষ ,চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে ,তাদের জ্ঞান ও উপলদ্ধি ক্ষমতা অত্যন্ত স্বল্প ও সীমিত। সাধারণ মানুষের মত চিন্তাবিদগনও বিশ্বাস করেন যে ,বিশ্ব জগতে এমন অনেক জিনিষ আছে যা এখনও মানুষ উপলদ্ধি করতে সক্ষম হয়নি। যেমন ধরুন ,রুহের ব্যাপারে কোন বিজ্ঞানী ,কি ব্যাখ্যা দিতে পারেন ? রুহ্ হচ্ছে মানব জীবনের একমাত্র চালিকা শক্তি। আর রুহ্-ই ঐ সব অজানা বস্তুর অন্যতম। বিজ্ঞান সফলতার সাথে পরমাণুর সুক্ষ্মতিসূক্ষ্ম ব্যাপারে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং সৃষ্ট বস্তুসমুহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা প্রদান করতে পারলেও মানুষের রুহ্ ও বিবেক বুদ্ধির সংজ্ঞা দিতে একেবারেই অপারগ। বিজ্ঞানীরা ভাল করেই জানেন যে ,তারা বস্তুর বৈশিষ্ট্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে পর্যালোচনা ও গবেষাণা করতে পারেন ,কিন্তু বস্তুনিচয়ের অস্তিত্বও তাদের বিভিন্ন প্রকার বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন ও বর্ণনা করতে পারবেন না। বিজ্ঞান অনেক কিছুরই সংজ্ঞা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে যেমন : বিশ্বাস , সৌন্দর্য , আনন্দ ইত্যাদি।

অস্বীকার করার জো নেই যে ,বস্তু সম্পর্কে সব ধরনের জ্ঞান আমাদের নেই। এ ব্যাপারে আমাদের জ্ঞান ভাসমান তৃনের মত। পরমাণুর জগতে যা কিছু অত্যন্ত জটিল ও বিশৃঙ্খল বলে মনে করে থাকি বস্তুতঃ তার কোন অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে। আর সম্ভবতঃ এ ধরনের ভুল নির্দেশনা আমাদের ত্রুটিময় জ্ঞান ও পর্যাপ্ত পর্যালোচনা-গবেষণার অভাব থেকেই নিঃসৃত হয়ে থাকে।

আল্লাহর অস্তিত্ব বিজ্ঞানের পথ ধারার ঊর্দ্ধে

প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্যে বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ-গবেষণার দ্বার উম্মুক্ত করা হয়নি। বরং বিজ্ঞানের কাজই হলো এ বিশ্ব-প্রকৃতি সম্বন্ধে গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো। বিজ্ঞানের আবিস্কার ও নতুন কোন সুত্রের সাথে সর্বপ্রথম বা আদি সত্তার অস্তিত্বের পর্যালোচনার কোন সম্পর্ক নেই। অন্য কথায় বিজ্ঞান মেশিন তুল্য একটি যন্ত্রের ন্যায় প্রকৃতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে থাকে মাত্র ,প্রকৃত ও আদি প্রস্তুত কারকের ব্যাপারে কোন আলোচনাই উপস্থাপন করে না। আল্লাহ্ এমন কোন বস্তুগত সত্তা নন যে তাকে কোন বিজ্ঞানাগারে রেখে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো যেতে পারে। বরং তিনি হলেন পার্থিব জগতের ঊর্দ্ধে অবস্তুগত একটি সত্তা। বিজ্ঞানের সাহায্যে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের বিষয়টি প্রেম ও সৌন্দর্যের ন্যায় অপার্থিব ও অবস্তুগত বিষয়গুলোর উপর ব্যর্থ গবেষণারই নামান্তর।

মানবতার প্রীতিপূর্ণ মনোভাবের অন্যতম বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে প্রেম। বিজ্ঞান এর কোন সংজ্ঞা দিতে পারেনি। কিন্তু কেউ কি প্রেম ও তদ্রূপ অন্যান্য অপার্থিব বস্তুর অস্তিত্বকে অস্বীকার করার দুঃসাহস রাখে ? আর আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণও অভৌতিক বিষয়াবলীর অন্তর্ভূক্ত অর্থাৎ প্রাকৃতিক ঘটনাবলী আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণে ইতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় মাত্র ,কিন্তু বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা আল্লাহর অস্তিত্বের ব্যাপারে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক কোন বক্তব্যই পেশ করে না। -বলেছেল মারলিন বুক্স ক্রেইডার (Marlin Books Kreider ) নামক ফিজিওলজির একজন বিজ্ঞানী।

আল্লাহ্ অস্তিত্বমান কি অনস্তিত্বমান -এ বিষয়টি কোন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও বৈষয়ীক অভিজ্ঞতার আলোকে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে ,আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ কল্পে এ বিষয়টির উপর উপর্যপরি গবেষণা চলছে ,তবুও এতসব প্রগাঢ় গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোন বিজ্ঞানী কোন বস্তুগত প্রমাণ উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়নি। বস্তুতঃ প্রকৃতি কখনো তার ঊদ্ধ জগতের কোন সংবাদ প্রদান করতে পারেনা ,যেমনিভাবে একটি অবরুদ্ধ দ্বার ও জানালা দিয়ে বর্হিঃজগত সম্পর্কে কোন খবরাখবর রাখা সম্ভব নয়। যেহেতু আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের জন্যে কোন পার্থিব ও বস্তুগত উপায় উপকরণের মাধ্যমে অপারগতায় পর্যবসিত হয়েছে তাই সর্বদা এ ব্যাপারে আমাদের বিবেক প্রসূত জ্ঞান বিদ্যাকেই ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়ে আসছে।

এ সম্পর্কে (George Earl Davis ) নামক একজন পদার্থবিদ বলেন , আল্লাহর অস্তিত্বকে সরাসরি বিজ্ঞানের বিভিন্ন সুত্রে ফেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব নয়। কেননা ,আমরা জানি আল্লাহ্ কোন বস্তুগতসত্তা নন। তিনি সকল পার্থিব ও বস্তুগত সীমানার ঊর্দ্ধে। তাই মানুষের সীমিত জ্ঞান-বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা এ বিষয়ে কোন সংজ্ঞা দিতে পারে না

উপরোল্লেখিত বিজ্ঞানীদের অভিমত থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে ,বিজ্ঞানের গবেষণার মূল বিষয় বস্তু হলো বস্তুর বৈশিষ্ট্য। এর কর্ম-ধারা হলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অভিজ্ঞতার আলোকে বস্তুসত্তাকে বিশ্লেষণ করা। আর এ কারণেই কোন অবস্তুগত সত্তা বিজ্ঞানের গবেষণার আলোচ্য বিষয় হতে পারে না। যেহেতু মহান সৃষ্টিকর্তা ব্যতিক্রম ও প্রকৃতি বহির্ভূত একটি সত্তা ,তাই কখনো এ ধরনের জ্ঞানবিজ্ঞানের পরিমন্ডলের আওতাভুক্ত হতে পারেনা।

অতএব ,যে বিদ্যা এ ব্যাপারে মতামত ব্যক্ত করতে পারে তাহলো দর্শন (Philosophy ) । কেননা দর্শন শাস্ত্রের আঙ্গিনা বিভিন্ন অকাট্য দলীল ও বিশুদ্ধ চিন্তা বুদ্ধি দ্বারা সুসজ্জিত। এ বিদ্যার আলোচনার বিষয় বস্তু হলো পার্থিব শৃঙ্খলমুক্ত স্বাধীন সত্তা। সুতরাং যখন বলা হয় আল্লাহর অস্তিত্ব সন্বন্ধীয় আলোচনা বিজ্ঞানের বহিভর্তূ বিষয় তখন তার উদ্দেশ্য হলো :

এক : আল্লাহ্ একটি অবস্তুগত সত্তা। তার সত্তাকে কোন ইন্দ্রিয়গত মাধ্যমে বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা অভিজ্ঞতার আলোকে নির্ণয় করা যায় না।

দুই : আল্লাহর অস্তিত্ব সম্বন্ধে সরাসরী পর্যালোচনা ও গবেষণা বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পন্থায় সম্ভব নয়। বলাবাহুল্য ,আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণে বিজ্ঞান যে এক প্রকার অবদান রাখতে পারে তার বিবরণ আমাদের পরবর্তী আলোচনায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

এখন ,আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণে বিজ্ঞানের প্রভাবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজন অনুভব করছি। এ বিষয়ে বিজ্ঞানের অবদানকে আমরা দু টি দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতে পারি।

এক : বিশ্ব-প্রকৃতির সূচনা কাল।

দুই : বস্তু জগতে বিরাজমান নিয়ম-শৃঙ্খলা।

যখন বিজ্ঞানের অনুসন্ধানমুখী কর্ম-ক্রিয়া উপরোক্ত দু টি বিষয় প্রমাণ করতে সক্ষম হবে তখন প্রকৃত পক্ষে অকাট্য প্রমাণসূত্র কিয়াস * -এর গৌণ বাক্যটি প্রমাণিত হবে মাত্র। আর নির্ভুল ও সর্বজন স্বীকৃত মুখ্য বাক্যটির (উদাহরণ স্বরূপ ,প্রতিটি শৃঙ্খলা ব্যবস্থার জন্যে একজন শৃঙ্খলা বিধানকারী প্রয়োজন ,অথবা যে বস্তুর সূচনাকাল আছে তার সূচনাকারী নিশ্চয়ই বর্তমান) সমন্বয়ে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ সুদৃঢ় হবে। এ ক্ষেত্রে উপরোক্ত দুটি বিষয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদের দৃষ্টিভঙ্গির সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছি।

বিশ্ব-প্রকৃতির সূচনাকাল বিদ্যমান

‘‘ বিশ্ব প্রকৃতির সূচনাকাল বিদ্যমান’’ বাক্যটি থেকে আমাদের উদ্দেশ্য বিভিন্ন প্রকার প্রাণী ও জড়বস্তুর সৃষ্টি বোঝানো। কেননা,এ বিশ্বের সৃষ্টি ও তার নশ্বরতার ব্যাপারে শুধু আস্তিকবাদীরাই নন ,জড় ও বস্তুবাদীরাও কোন প্রকার সন্দেহ ও দ্বিমত পোষণ করেন না। উক্ত বাক্যটি থেকে সেই মৌলিক ও আদিম সত্তাকে বোঝানো আমাদের উদ্দেশ্য ,যা এ বিশ্ব প্রকৃতির প্রধান ও প্রথম উপাদান হিসেবে পরিগণিত। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানীগণ প্রকৃতিকেই সবকিছুর স্রষ্টা ও সূচনাকারী বলে বিশ্বাস করেন। তারা এ প্রকৃতির আদিম উপাদানকে সনাতন বলে দাবী করেন।

Oli Carroll Karkalits নামক রসায়ন শাস্ত্রের একজন বিজ্ঞানী বাস্তবাদীদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন এভাবে , তারা বলেন ,যদিও পৃথিবী ও সূর্য গ্রহের বয়স সীমিত এবং সুনির্দিষ্ট ,তদুপরি সৃষ্টিজগতে বস্তু সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী উপাদানগুলো চীরবর্তমান। প্রাণী জগত জড় উপাদান থেকে পূর্ণাঙ্গতার সিঁড়ি বেয়ে পর্যায়ক্রমে সক্রিয় হয়েছে। আর তারই এক পর্যায়ে মানবজাতির সৃষ্টি । অতঃপর ,তাদের উপরোক্ত বক্তব্য ও ব্যাখ্যা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেছেন ,এ বিশ্ব প্রকৃতির উৎপত্তি ও সূচনাকাল সম্পর্কে তাদের বক্তব্য সন্তোষজনক নয়। আমাদের নিকট এমন প্রচুর অকাট্য ও পরীক্ষিত দলীল প্রমাণাদি সংরক্ষিত আছে। যা থেকে অতি সহজেই প্রমাণ হয় যে ,এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আদিকাল আছে ,এ পৃথিবীর কার্যক্রম ও যাত্রা কোন একটি স্থান থেকে আরম্ভ হয়েছে। ট্যারমোডিনামিক (তাপ ও শক্তি) সূত্রও বিশ্ব জগতের আদিকাল নির্ণয় করে দেখিয়েছে। আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সত্তাটিও উক্ত সূত্রের সমর্থন করে। সূত্রটি আরো বলে বিশ্বের এনট্রাপি শক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে । আর এ কথার অর্থ এই দাড়ায় যে ,কোন কালে বিশ্বের প্রতিটি বস্তুর তাপমাত্রা সমপর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। এ বক্তব্যটি তখনি সঠিক বলে প্রমাণিত হবে যখন অতীত ও সমসাময়িক সকল বস্তুর সদৃশ আকার ধারণ করবে। আর নিঃসন্দেহে সত্য যে ,বস্তুর তাপমাত্রাও সমকক্ষ নয়। হয়তোবা পৃথিবীর সকল বস্তুর তাপমাত্রা কখনো সদৃশতায় পৌঁছাবে না। কেননা ,বস্তুসমূহের তাপমাত্রা যতই পরস্পরের সন্নিকটে অবস্থান গ্রহণ করতে থাকবে ততই তাদের চালিকাশক্তি ক্ষয়লাভ হতে থাকবে। তথাপি এ ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিক ফলাফলকে কোন অংশে হেয় প্রতিপন্ন করে না। কেননা ,যদি বস্তু ও শক্তি অনন্ত ও শ্বাশত অস্তিত্ব নিয়ে বিরাজ করতো ,আর বিশ্ব প্রকৃতির কোন আদি উদ্ভব-ই না থাকতো তা হলে সময়গণক (এ্যানট্রোপি) সত্য ও সঠিক বলে প্রমাণিত হতো না কখনো ।

Frank Allen হলেন একই সাথে পদার্থ ও জীব বিজ্ঞানী। তিনিও বিশ্ব প্রকৃতির আদি অন্ত প্রমাণ এবং এর শ্বাশত ও চিরন্তন অস্তিত্বের মতামতকে খণ্ডন করে বলেছেন :

বিশ্ব সম্পর্কে চিরন্তন অথবা সৃষ্টি বস্তু হওয়ার ধারণা উভয়েই একটি ব্যাপারে সমঝোতায় উপনীত হতে বাধ্য। আর তা হলো কোন একটি শক্তি অথবা বিশ্ব সৃষ্টিকর্তা সর্বদা অস্তিত্বমান। তবে দ্বিতীয় টারমোডিনামিক সূত্র প্রমাণ করে দিয়েছে যে ,পৃথিবী সর্বদা গতিশীল ,সেখানে সমস্ত বস্তু কোন এক সময়ে সমান সর্বনিন্ম তাপমাত্রায় পৌঁছে যাবে। তখন সকল শক্তি অকেজো হয়ে পড়বে এবং জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে উঠবে। যদি বিশ্ব সূচনাহীন অস্তিত্ব হতো তা হলে বহু পূর্বেই এর মৃত্যু ও স্থবিরতা আগমন করতো। উত্তপ্ত গোলাকার সূর্য ,উজ্জ্বল নক্ষত্রসমূহ এবং প্রাণময় ভূপৃষ্ঠ এ সকল কিছুই একটি একক সত্যের সাক্ষ্য দিচ্ছে যে ,এ বিশ্ব সৃষ্টির সূচনাকাল বিদ্যমান এবং কোন এক নির্দিষ্ট সময়ে তা সৃষ্টি ও যাত্রা শুরু করেছে। অতএব ,এ বিশ্ব জগত সৃষ্ট বস্তু ব্যতীত অন্য কিছু হতে পারে না১০

এতক্ষনে যেহেতু বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটা সুপ্রমাণিত হয়ে গিয়েছে যে ,বিশ্ব প্রকৃতির আদি উৎপত্তি ও সূচনাকাল বিদ্যমান ,তাই নিশ্চিত করে বলা যায় যে ,স্বাভাবিকভাবে এর সৃষ্টির পিছনে একজন সৃষ্টিকারক কার্যকর রয়েছেন। আর জনাব ফ্রাঙ্ক এ্যালেনের স্বগোক্তি হচ্ছে নিম্নরূপঃ

সর্ব প্রথম ও সর্ববৃহৎ একটি কার্যকারণ অথবা একজন চিরঞ্জীব সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিরূপায় হয়েই আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে,য িনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং সর্ববিষয়ে সংবিদিত। কেননা ,তা না হলে বলতে হবে যে ,এ বস্তুগত সত্তা (বিশ্ব) ও তার শক্তিমত্তাসহ সকল কিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বের রূপ ধারণ করেছে। এ ধরণের ধারণা এতই অর্থহীন ও অমূলক যে এব্যাপারে কোন প্রকার আলোচনা ও পর্যালোচনা সময় ও শ্রমের অপব্যয় বৈ কিছু নয়

পদার্থবিদEdwin Fast : বলেন : পারমানবিক দেহের সাথে সংশ্লিষ্ট তথ্যাদির সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান বিশ্বের সূচনা লগ্নের অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে ,প্রকৃতির সমস্ত উপাদান এবং তাদের মধ্যকার সম্পৃক্ততা ,মূল ও কেন্দ্রীয় অণূসমূহের প্রতিক্রিয়ার ফলে অস্তিত্ব লাভ করেছে। অবশেষে বিভিন্ন অবস্থা ও পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রোটন ও তার বিশেষ বৈশিষ্ট্যসমূহের সম্মিলনের কারণে পৃথিবীর সকল বস্তু উপাদান সৃষ্টি হয়েছে

তবে প্রশ্ন হলো , এ প্রোটন কোথা থেকে এসেছে ? আর তার এ সকল বৈশিষ্ট্যেরই বা কারণ কি ? এ সকল প্রশ্নের উত্তর আজ অবধি কোন পদার্থবিদ দিতে পারেন নি। এ বিশ্ব প্রকৃতিতে সামান্য একটু দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হবো যে ,এ বিশ্বজগতের জন্যে নিশ্চয়ই একজন অত্যন্ত উচ্চপর্যায়ের আইন প্রণেতা বিদ্যমান ,যিনি প্রকৃতির জন্যে কতক সুনির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনশীল বিধি-বিধান ও আইন-শৃঙ্খলা নির্ধারণ করেছেন এবং সৃষ্টির শুরুতে ইলেকট্রন ,নিউটন ও প্রোটনগুলোকে এক বিশেষ গুণাবলী দ্বারা সজ্জিত করেছেন ,যা থেকে প্রকৃতির সকল নিয়ম-নীতি উৎসারিত হয়েছে। যদি আমাদের সীমিত চিন্তা-ধারাকে শূন্য পয়েন্ট থেকে আরো একটু পিছনে নিয়ে যাই ,তাহলে খুব সহজেই অনুধাবন করতে পারবো যে ,এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্যে নিশ্চয়ই এমন একটি আদি পয়েন্ট (Start Point ) থাকা দরকার যার মাধ্যমে মূল অণু অথবা প্রকৃতির প্রাথমিক উপাদানগুলো অস্তিত্বমান হয়েছে। এটাই যুক্তিযুক্ত ধারণা যে ,যে শক্তি এ সকল অণু-পরমাণু সৃষ্টি এবং সেগুলোকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে রূপায়িত করেছে ,তাকে অবশ্যই এগুলোরও পূর্বে অস্তিত্বমান থাকতে হবে। আর বস্তুনিষ্ঠ সত্য কথা হচ্ছে ,বিজ্ঞানীরা বহু শতাব্দী ধরে এ সকল অণু-পরমাণুর আবিষ্কার ও উদঘাটনে অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আসছেন আর আজ তাদেরই অনেকে সেই প্রথম পরমাণুর একক স্রষ্টাকে জানার জন্যে সর্বাত্তক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।১১

রসায়ন ও গণিতবিদJohn Cleveland Cithara বলেন , রসায়ন শাস্ত্রে এটা সুপ্রমাণিত যে বস্তু কোন এক সময় ধ্বংস হবেই। তবে বস্তুর কিছু উপাদান অত্যন্ত ধীর গতীতে আর অবশিষ্ট বস্তু তড়িৎ গতীতে ধ্বংসের দিকে ধাবমান। অতএব বস্তুর অস্তিত্ব শ্বাশত নয় ,সৃষ্টি বস্তুর জন্যে অবশ্যই সূচনাকাল বিদ্যমান১২

কারবালায় ইমাম হোসেইন (আ.)-এর প্রবেশ

হুর বিন ইয়াযীদ ইমাম হোসেইন (আ.)-কে কুফায় যাওয়ার পথে বাধা দিলে তিনি থেমে যান। এরপর তার সন্তানদের , ভাইদের ও আত্মীয়দেরকে নিজের চারদিকে জড়ো করলেন এবং কিছু সময়ের জন্য কাঁদলেন ও বললেন , হে আল্লাহ , আমরা আপনার রাসূলের বংশধর। লোকজন আমাদেরকে আমাদের বাড়িঘর থেকে টেনে বের করেছে এবং আমাদেরকে তাড়া করেছে এবং আমাদেরকে আমাদের নানার জায়গা [মদীনা] থেকে চাপ প্রয়োগ করে বের করে দিয়েছে। বনি উমাইয়া আমাদের উপর অত্যাচার করেছে। হে আল্লাহ , আমাদের অধিকারকে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিন এবং এ অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন।

এরপর তিনি সেখান থেকে অগ্রসর হলেন এবং 61 হিজরির 2রা মহররমের দিন বুধবার অথবা মঙ্গলবার কারবালায় প্রবেশ করলেন। এরপর তিনি তার সাথীদের দিকে ফিরে বললেন ,

লোকজন পৃথিবীর দাস এবং ধর্ম শুধু তাদের মুখের কথা এবং তারা এর যত্ন নিবে যতক্ষণ পর্যন্ততা তাদের জন্য আনন্দদায়ক এবং যখন পরীক্ষার উত্তপ্ত পাত্র এসে যায় তখন থাকে শুধু গুটি-কয়েক ধার্মিক ব্যক্তি।

এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন , এটি কি কারবালা ?

লোকজন উত্তর দিলো , হ্যাঁ। তিনি বললেন , এ জায়গা হলো দুঃখ ও মুসিবতের জায়গা এবং এ জায়গা আমাদের উটগুলোর বিশ্রামের স্থান , আমাদের থামার জায়গা , আমাদের শাহাদাতের জায়গা যেখানে আমাদের রক্ত ঝরানো হবে।

ইমাম হোসেইন (আ.)-এর কাছে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের চিঠি

ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়া কর্তৃক নিয়োজিত কুফার গভর্নর ইমাম হোসেইন (আ.)-কে একটি চিঠি প্রদান করে যা নিম্নরূপ: আম্মা বা আদ , হে হোসেইন , আমাকে জানানো হয়েছে যে , তুমি কারবালায় থেমেছো। ইয়াযীদ আমাকে লিখেছে , আমি যেন বিছানায় মাথা না রাখি এবং সন্তুষ্ট না হই যতক্ষণ পর্যন্তনা আমি তোমাকে আল্লাহর কাছে পাঠাচ্ছি , অথবা তুমি আমার কাছে এবং ইয়াযীদ বিন মুয়াবিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ কর। সালাম।

যখন এ চিঠি ইমাম হোসেইন (আ.)-এর কাছে পৌঁছলো , তিনি তা পড়লেন এবং তা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন , যে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে মানুষের সন্তুষ্টি খোঁজে সে কখনোই সফলতা লাভ করে না। দূত তাকে চিঠির উত্তর দিতে বললে ইমাম বললেন , তার জন্য কোন উত্তর নেই , আছে গযব [আল্লাহর]।

আশুরার (দশ মহররম) রাতের ঘটনাবলী

[ ইরশাদ গ্রন্থে আছে ] ইমাম হোসেইন ( আ .) তার সাথীদের রাতের বেলা জড়ো করলেন , ইমাম আলী যায়নুল আবেদীন ( আ .) বলেন যে , আমি তাদের কছে গেলাম শোনার জন্য তারা কী বলেন এবং সে সময় আমি অসুস্থ ছিলাম। আমি শুনলাম ইমাম তার সাথীদের বলছেন ,

আমি আল্লাহর প্রশংসা করি সর্বোত্তম প্রশংসার মাধ্যমে এবং তাঁর প্রশংসা করি সমৃদ্ধির সময়ে এবং দুঃখ দুর্দশার মাঝেও। হে আল্লাহ , আমি আপনার প্রশংসা করি এ জন্য যে , আপনি আমাদের পরিবারে নবুয়াত দান করতে পছন্দ করেছেন। আপনি আমাদের কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং ধর্মে আমাদেরকে বিজ্ঞজন করেছেন এবং আমাদেরকে দান করেছেন শ্রবণ শক্তি ও দূরদৃষ্টি এবং আলোকিত অন্তর। তাই আমাদেরকে আপনার কৃতজ্ঞ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।

আম্মা বা আদ , আমি তোমাদের চেয়ে বিশস্ত এবং ধার্মিক কোন সাথীকে পাই নি , না আমি আমার পরিবারের চাইতে বেশী বিবেচক , স্নেহশীল , সহযোগিতাকারী ও সদয় কোন পরিবারকে দেখেছি। তাই আল্লাহ আমার পক্ষ থেকে তোমাদেরকে উত্তমভাবে পুরস্কৃত করুন এবং আমি মনে করি শত্রুরা একদিনও অপেক্ষা করবে না এবং আমি তোমাদের সবাইকে অনুমতি দিচ্ছি স্বাধীনভাবে চলে যাওয়ার জন্য এবং আমি তা তোমাদের জন্য বৈধ করছি। আমি তোমাদের উপর থেকে আনুগত্য ও শপথের দায়ভার তুলে নিচ্ছি ( যা তোমরা আমার হাতে হাত দিয়ে শপথ করেছিলে ) । রাতের অন্ধকার তোমাদের ঢেকে দিয়েছে , তাই নিজেদের মুক্ত করো ঘূর্ণিপাক থেকে অন্ধকারের ঢেউয়ের ভেতরে। আর তোমাদের প্রত্যেকে আমার পরিবারের একজনের হাত ধরে ছড়িয়ে পড়ো গ্রাম ও শহরগুলোতে , যতক্ষণ না আল্লাহ তোমাদের মুক্তি দান করেন। কারণ এ লোকগুলো শুধু আমাকে চায় এবং আমার গায়ে হাত দেয়ার পরে তারা আর কারো পেছনে ধাওয়া করবে না।

এ কথা শুনে তার ভাইয়েরা , সন্তানরা , ও ভাতিজারা এবং আব্দুল্লাহ বিন জাফরের সন্তানরা বললেন , আামরা তা কখনোই করবো না আপনার পরে বেঁচে থাকার জন্য। আল্লাহ যেন কখনো তা না করেন। হযরত আব্বাস বিন আলী ( আ .) সর্বপ্রথম এ ঘোষণা দিলেন এবং অন্যরা তাকে অনুসর ণ করলেন।

ইমাম তখন আক্বীল বিন আবি তালিবের সন্তানদের দিকে ফিরলেন এবং বললেন , মুসলিমের আত্মত্যাগ তোমাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছে , তাই আমি তোমাদের অনমতি দিচ্ছি চলে যাওয়ার জন্য। তারা বললেন , সুবহানাল্লাহ , লোকেরা কী বলবে ? তারা বলবে আমরা আমাদের প্রধানকে , অভিভাবককে এবং চাচাতো ভাইকে , যে শ্রেষ্ঠ চাচাতো ভাই , পরিত্যাগ করেছি এবং আমরা তার সাথে থেকে তীর ছুড়িনি , বর্শা দিয়ে আঘাত করি নি এবং তার সাথে থেকে তরবারি চালাই নি এবং তখন আমরা ( এ অভিযোগের মুখে ) বুঝতে পারবো না কী করবো ; আল্লাহর শপথ , আমরা তা কখনোই করবো না। প্রকৃতপক্ষে আমরা আমাদের জীবন , সম্পদ ও পরিবার আপনার জন্য কোরবানী করবো। আমরা আপনার পাশে থেকে যুদ্ধ করবো এবং আপনার পাশে থেকে পরিণতিতে পৌঁছে যাবো। আপনার পরে জীবন কুৎসিত হয়ে যাক ( যদি বেঁচে থাকি ) ।

হোসেইন বিন হামদান হাযীনি তার বর্ণনা ধারা বজায় রেখে আবু হামযা সূমালি থেকে বর্ণনা করেন এবং সাইয়েদ বাহরানি বর্ণনার ক্রমধারা উল্লেখ না করেই তার কাছ থেকে নবণার্ করেছেন যে , তিনি বলেছেন: আমি ইমাম আলী আল-যায়নুল আবেদীনকে বলতে শুনেছি , শাহাদাতের আগের রাতে আমার বাবা তার পরিবার এবং সাথীদের জড়ো করলেন এবং বললেন , হে আমার পরিবারের সদস্যরা এবং আমার শিয়ারা [অনুসারীরা] , এ রাতকে ভেবে দেখো যা তোমাদের কাছে বহনকারী উট হয়ে এসেছে এবং নিজেদেরকে রক্ষা করো , কারণ লোকেরা আমাকে ছাড়া কাউকে চায় না। আমাকে হত্যা করার পর তারা তোমাদেরকে তাড়া করবে না। আল্লাহ তোমাদের উপর রহমত করুন। নিজেদেরকে রক্ষা করো। নিশ্চয়ই আমি আনুগত্য ও শপথের দায়ভার তুলে নিলাম যা তোমরা আমার হাতে করেছো। এ কথা শুনে তার ভাইয়েরা , আত্মীয়-স্বজন ও সাথীরা একত্রে বলে উঠলো , আল্লাহর শপথ হে আমাদের অভিভাবক , হে আবা আবদিল্লাহ , আমরা আপনার সাথে কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করবো না , তাতে লোকেরা বলতে পারে যে আমরা আমাদের ইমামকে , প্রধানকে এবং অভিভাবককে পরিত্যাগ করেছি এবং তাকে শহীদ করা হয়েছে। তখন আমরা আমাদের ও আল্লাহর মাঝে ওজর খুঁজবো। আমরা আপনাকে কখনোই পরিত্যাগ করবো না যতক্ষণ পর্যন্তনা আমরা আপনার জন্য কোরবান হই। ইমাম বললেন , নিশ্চয়ই আগামীকাল আমাকে হত্যা করা হবে এবং তোমাদের সবাইকে আমার সাথে হত্যা করা হবে এবং তোমাদের কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। তারা বললেন , সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যে তিনি আমাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন আপনাকে সাহায্য করার জন্য এবং আমাদেরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন আপনার সাথে শহীদ হওয়ার জন্য। তাহলে কি আমরা পছন্দ করবো না যে আমরা আপনার সাথে উচ্চ মাক্বামে [বেহেশতে] থাকবো , হে রাসূলুল্লাহর সন্তান ? ইমাম বললেন , আল্লাহ তোমাদের উদারভাবে পুরস্কৃত করুন। এরপর তিনি তাদের জন্য দোআ করলেন।

তখন ক্বাসিম বিন হাসান (আ.) জিজ্ঞেস করলেন , আমি কি শহীদদের তালিকায় আছি ? তা শুনে ইমাম আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন এবং বললেন , হে আমার প্রিয় সন্তান , তুমি মৃত্যুকে কিভাবে দেখো ?

ক্বাসিম বললেন , মধুর চেয়ে মিষ্টি।

ইমাম বললেন , নিশ্চয়ই , আল্লাহর শপথ , তোমার চাচা তোমার জন্য কোরবান হোক , তুমি তাদের একজন যাদেরকে শহীদ করা হবে আমার সাথে কঠিন অবস্থার শিকার হওয়ার পর এবং আমার [শিশু] সন্তান আব্দুল্লাহকেও [আলী আসগার] শহীদ করা হবে।

আশুরার দিনে ইমাম হোসেইন ( আ .)- এর খোতবা

আশুরার দিনে ইমাম হোসেইন (আ.) একটি খোতবায় বলেন: আম্মা বা আদ , বিবেচনা করো আমার পরিবার সম্পর্কে এবং গভীরভাবে ভাবো আমি কে , এরপর নিজেরদের তিরস্কার করো। তোমরা কি মনে করো যে আমাকে হত্যা করা এবং আমার পবিত্রতা ও সম্মান লুট করা তোমাদের জন্য বৈধ ? আমি কি তোমাদের নবীর নাতি , তার ওয়াসী ও তার চাচাতো ভাইয়ের সন্তান নই , যিনি ছিলেন বিশ্বাস গ্রহণে সবার আগে এবং সাক্ষী ছিলেন সে সবকিছুর ওপরে যা মহানবী আল্লাহর কাছ থেকে এনেছেন ? শহীদদের সর্দার হামযা কি আমার পিতার চাচা ছিলেন না ? জাফর , যিনি বেহেশতে দুপাখা নিয়ে উড়েন , তিনি কি আমার চাচা নন ? নবীর হাদীস কি তোমাদের কাছে পৌঁছে নি যেখানে তিনি আমার সম্পর্কে ও আমার ভাই সম্পর্কে বলেছেন : আমরা দুজন জান্নাতের যুবকদের সর্দার ? তাই যদি আমি যা বলছি তার সাথে একমত হও , এবং নিশ্চয়ই আমি যা বলেছি তা সত্য ছাড়া কিছু নয় , তাহলে তা উত্তম , কারণ আল্লাহর শপথ , যে সময় থেকে আমি বুঝেছি আল্লাহ মিথ্যাবাদীদের অপছন্দ করেন তখন থেকে আমি কখনোই কোন মিথ্যা বলি নি। আর যদি তোমরা আমি যা বলছি তা বিশ্বাস না কর , তাহলে তোমাদের মাঝে নবীর জীবিত সাহাবীগণ আছে , তাদের কাছে যাও এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস কর এবং তারা আমার বক্তব্যের সত্যতার সাক্ষ্য দিবে। জাবির বিন আব্দুল্লাহ আনসারি , আবু সাঈদ খুদরি , সাহল বিন সাদ সা য়েদি , যায়েদ বিন আরক্বাম এবং আনাস বিন মালিককে জিজ্ঞেস কর , তারা তোমাদের বলবে যে তারা আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে আমার ও আমার ভাই সম্পর্কে এ হাদীসটি শুনেছে। এটি কি তোমাদের জন্য আমার রক্ত ঝরানোর চাইতে যথেষ্ট নয় ?

তখন অভিশপ্ত শিমর বিন যিলজাওশান বললো , আমি আল্লাহর ইবাদত করি ঠোঁট দিয়ে এবং তুমি যা বলছো তা আমি বুঝি না। এ কথা শুনে হাবীব বিন মুযাহির [ইমামের সাথী] বললেন , আমি দেখছি তুমি আল্লাহর ইবাদত করো সত্তুর ধরনের সন্দেহ নিয়ে এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমি সত্য কথা বলেছো এবং তুমি বুঝতে পারো না ইমাম যা বলেন , কারণ আল্লাহ তোমার হৃদয়ের ওপরে একটি [মূর্খতার] মোহর মেরে দিয়েছেন।

ইমাম বললেন , যদি তোমরা এতে সন্দেহ পোষণ কর , তোমরা কি এতেও সন্দেহ কর যে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নাতি ? আল্লাহর শপথ , পূর্বে ও পশ্চিমে , আমি ছাড়া নবীর কোন নাতি নেই তোমাদের মধ্যে অথবা অন্যদের মধ্যে। দুর্ভোগ তোমাদের জন্য , আমি কি তোমাদের মধ্য থেকে কাউকে হত্যা করেছি যে তোমরা তার প্রতিশোধ নিতে চাও ? অথবা আমি কি কারো সম্পদ বেদখল করেছি , অথবা কাউকে আহত করেছি যার প্রতিশোধ তোমরা আমার ওপর নিতে চাও ?

যখন কেউ তাকে উত্তর দিলো না , তিনি উচ্চ কণ্ঠে বললেন , হে শাবাস বিন রাব ঈ , হে হাজ্জার বিন আবজার , হে ক্বায়েস বিন আল-আশআস , হে ইয়াযীদ বিন হুরেইস , তোমরা কি আমার কাছে চিঠি লিখোনি যে , ফল পেকেছে এবং আশপাশের ভূমিতে ফুল ফুটেছে এবং একটি বিশাল সেনাবাহিনীর কাছে আসুন , যা আপনার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ?

তারা উত্তর দিলো যে তারা এ ধরনের কোন চিঠি লিখেনি। ইমাম বললেন , সুবহানাল্লাহ , আল্লাহর শপথ অবশ্যই তোমরা তা লিখেছিলে।

এরপর তিনি বললেন , হে জনতা , এখন যদি তোমরা আমার আগমনকে পছন্দ না কর , তাহলে আমাকে ছেড়ে দাও যেন আমি কোন আশ্রয়ের জায়গায় চলে যেতে পারি।

ক্বায়েস বিন আল-আশআস বললো , তুমি যা বলছো তা আমরা জানি না , আমার চাচাতো ভাইদের [বনি উমাইয়ার] কাছে আত্মসমর্পণ কর , তারা তোমার সাথে সেভাবে আচরণ করবে যেভাবে তুমি চাও। ইমাম বললেন , আল্লাহর শপথ , নিকৃষ্ট মানুষের মতো আমি তোমাদের হাতে হাত দিবোনা , না আমি পালিয়ে যাবো কোন দাসের মতো।

এরপর তিনি উচ্চকণ্ঠে বললেন , হে আল্লাহর দাসেরা ,

) و َإِنِّي عُذْتُ بِرَبِّي وَرَبِّكُمْ أَن تَرْجُمُونِ(

নিশ্চয়ই আমি আমার ও তোমাদের রবের কাছে আশ্রয় নিচ্ছি ,পাছে তোমরা আমাকে পাথর মারো [হত্যা করো]। [সূরা দুখান: 20]

) إ ِنِّي عُذْتُ بِرَبِّي وَرَبِّكُم مِّن كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لَّا يُؤْمِنُ بِيَوْمِ الْحِسَابِ(

আমি আশ্রয় নিই আমার ও তোমাদের রবের কাছে , প্রত্যেক দাম্ভিক থেকে , যে হিসাব দিনে বিশ্বাস করে না। [সূরা মু মিন: 27]

ইমাম আরো অগ্রসর হলেন এবং তাদের সামনে দাঁড়ালেন এবং তাদের সারিগুলোর দিকে তাকালেন শান্তবৃষ্টির মতো। তিনি উমর বিন সা আদকে কুফার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন এবং বললেন , ধন্যবাদ আল্লাহর প্রাপ্য , যিনি এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং একে মৃত্যু ও ক্ষয়ের বাড়ি বানিয়েছেন এবং যিনি এর মানুষদেরকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তন করেন। সে ব্যক্তি ধোঁকা খেয়েছে যে এ পৃথিবীর প্রতারণার শিকার হয়েছে , কারণ যে এর ওপর নির্ভর করে সে তাকে হতাশ করে। যে এখানে আকাঙ্ক্ষা করে সে তাকে রিক্তহস্ত করে। আমি দেখতে পাচ্ছি তোমরা জড়ো হয়েছো এমন একটি কাজের জন্য যা তোমাদের ওপর আল্লাহর ক্রোধ আনবে। তিনি তোমাদের দিক থেকে তার চেহারা ঘুরিয়ে নিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তার ক্রোধে ঢেকে দিয়েছেন এবং তোমাদের কাছ থেকে তার রহমত সরিয়ে নিয়েছেন। তাই আমাদের রব হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ , আর তোমরা হচ্ছো নিকৃষ্টতম দাস। তোমরা আল্লাহকে মেনে চলার অঙ্গীকার করেছো এবং তার রাসূল মুহাম্মাদ (সা.)-কে বিশ্বাস করেছো। এরপরও তোমরা তার পরিবারকে এবং বংশধরকে আক্রমণ করেছো এবং তাদেরকে হত্যা করতে চাও। [ইরশাদ] শয়তান তোমাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং তোমাদেরকে সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ভুলিয়ে দিয়েছে। দুর্ভোগ তোমাদের জন্য তোমাদের পথ ও লক্ষ্যের ওপর। নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয়ই আমরা তার কাছে ফেরত যাবো। এ এক জাতি যারা বিশ্বাস গ্রহণের পর কুফুরী গ্রহণ করেছে , তাই বিদায় হে অত্যাচারী জাতি।

তখন উমর বিন সা আদ বললো , তোমাদের জন্য আক্ষেপ , তাকে উত্তর দাও , কারণ সে আলীর সন্তান। সে যদি সারা দিন তোমাদের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে থাকে তার বক্তব্য শেষ হবে না , না সে ক্লান্তহবে। তখন শিমর এগিয়ে এলো এবং বললো , হে হোসেইন , তুমি কী বলছো ব্যাখ্যা কর যেন আমরা বুঝতে পারি। ইমাম বললেন , আমার বক্তব্যের মূল কথা হলো যে আমি তোমাদের বলছি আল্লাহকে ভয় করার জন্য এবং আমাকে হত্যা করো না। কারণ আমাকে হত্যা ও আমার পবিত্রতা ধ্বংস করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। কারণ আমি তোমাদের নবী (সা.)-এর কন্যার সন্তান এবং আমার নানী খাদিজা ( আ .) তোমাদের নবীর স্ত্রী। তোমরা হয়তো আমার নানাকে বলতে শুনে থাকবে যে , হাসান এবং হোসেইন বেহেশতের যুবকদের সর্দার।

এরপর তারা ইমাম হোসেইন (আ.)-কে সবদিক থেকে ঘেরাও করে ফেললো। তিনি তাদের কাছে এগিয়ে গেলেন এবং তাদেরকে চুপ থাকার ইঙ্গিত করলেন , কিন্তু তারা তা শুনতে অস্বীকার করলো। তখন ইমাম বললেন , তোমাদের জন্য দুর্ভোগ , তোমাদের কী হয়েছে যে তোমরা চুপ করছো না এবং আমি যা বলছি তা শুনছো না ? আমি তোমাদেরকে ধার্মিকতার পথে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। যে আমাকে মান্য করবে সে প্রজ্ঞাবান হবে। আর যে আমাকে মান্য করবে না সে ধ্বংস হবে। তোমরা সবাই আমার অবাধ্য হচ্ছো এবং আমার কথায় কান দিচ্ছো না। এর কারণ হলো তোমরা তোমাদের পেট হারামে পূর্ণ করেছো এবং তোমাদের হৃদয়গুলোতে মোহর মারা হয়েছে। আক্ষেপ তোমাদের জন্য। তোমরা কি ন্যায়পরায়ণ নও এবং শুনতে অক্ষম ?

কুফাবাসীদের লক্ষ্য করে ইমাম হোসেইন (আ.)-এর বক্তব্য

সাইয়্যেদ ইবনে তাউস বর্ণনা করেছেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) তার উটে চড়লেন [অন্যরা বলেন তার ঘোড়ায়] এবং তাদের ইশারা করলেন চুপ করার জন্য। এরপর তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ ও মর্যাদা বর্ণনা করলেন যা তার প্রাপ্য। তিনি অত্যন্ত সুন্দর ভাষায় সালাম পাঠালেন ফেরেশতা , নবী ও রাসূলদের ওপর। তারপর বললেন , হে জনতা , তোমরা যেন ধ্বংস হও , দুর্দশাগ্রস্ত হও। তোমরা উৎসাহের সাথে আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলে তোমাদের সাহায্য করার জন্য এবং আমরা তা করার জন্য দ্রুত অগ্রসর হয়েছি। কিন্তু তোমরা এখন সে তরবারিগুলো কোষমুক্ত করেছো যা আমরা তোমাদের দিয়েছি এবং তোমরা আমাদের জন্য আগুন জ্বালিয়েছো যা আমরা তোমাদের ও আমাদের শত্রুদের জন্য জ্বালিয়েছিলাম। তোমরা তোমাদের শত্রুদের পক্ষ নিয়েছো এবং তাদের সাথে থেকে তোমাদের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অগ্রসর হয়েছো , যদিও তারা তোমাদের সাথে ন্যায়পরায়ণ আচরণ করে নি , না তোমরা তাদের কাছ থেকে কোন দয়া ও সদয় আচরণ আশা কর। তোমাদের ওপর শত দুর্ভোগ আসুক। তোমরা আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছো যখন তরবারিগুলো এখনও তাদের খাপে রয়েছে , হৃদয়গুলো শান্তিতে আছে , মতামতগুলো যথাযথভাবে স্পষ্ট এবং ভুল থেকে মুক্ত। কিন্তু তোমরা পঙ্গপালের মতো , যারা যুদ্ধের দিকে দ্রুত অগ্রসর হয়েছে এবং মথের [প্রজাপতি] মতো , একজনের ওপর আরেকজন যেমন পড়ে। তোমরা ধ্বংস হও , হে যারা দাসীদের প্রেমিক , যারা দলত্যাগ করেছো , যারা কোরআন পরিত্যাগ করেছো , যারা সঠিক বক্তব্যকে বদলে নিয়েছো , যারা খারাপের স্তম্ভ , হে যারা শয়তানদের দ্বারা উস্কানি পাচ্ছো এবং যারা আসমানী আদেশ ছিন্নকারী , তোমরা তাদের পক্ষ নিচ্ছো এবং আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছো ? হ্যাঁ , নিশ্চয়ই প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গ করা তোমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য , যা তোমাদের পিতৃপুরুষেরা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তা থেকে শাখা বেরিয়েছে। তোমরা নোংরা এবং এর বিস্বাদ ফল যা এর বপনকারীর গলায় আটকে যায় এবং তা অত্যাচারীদের কাছে আনন্দের। সাবধান , এখন অবৈধ পিতার অবৈধ সন্তান [উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ] আমাকে তরবারি কোষমুক্ত করা ও অপমান সহ্য করার মাঝে স্থাপন করেছে এবং আমরা অপমান গ্রহণ করবো তা কখনোই হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার রাসূল এবং পবিত্র কোলগুলো যা আমাদের দুধ খাইয়েছে , যারা ভদ্র ও যারা অপমান ঘৃণা করে তারা এর সাথে দ্বিমত পোষণ করে যে , আমরা ঘৃণ্য মানুষদের কাছে মাথা নোয়াবো এবং তারা আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন এ বিষয়ে যুদ্ধের ময়দানে পৌরুষের সাথে নিহত হতে। জেনে রাখো , আমি তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো যদিও আমার সাথে রয়েছে অল্প কয়েকজন মানুষ এবং যদিও কিছু ব্যক্তি আমাকে পরিত্যাগ করে চলে গেছে।

নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর ওপর নির্ভর করি , আমার রব এবং তোমাদের রব , কোন জীবিত প্রাণী নেই , যার কপালের চুল তার হাতে নেই। নিশ্চয়ই আমার রব সঠিক পথের ওপরে আছেন। [সূরা হুদ: 56]

হে আল্লাহ , তাদের কাছ থেকে আকাশের বৃষ্টি তুলে নিন এবং তাদেরকে অনাবৃষ্টিতে জড়িয়ে যেতে দিন ইউসুফ (আ.)-এর সময়ের মতো এবং বনি সাকীহর এক ব্যক্তিকে [মুখতার বিন আবু উবায়দা সাক্বাফীকে] তাদের ওপর নিয়োগ দিন , যে তাদের গলায় তিক্ত পেয়ালা ঢেলে দিবে। কারণ তারা মিথ্যা বলেছে এবং আমাদের পরিত্যাগ করেছে। আপনি আমাদের রব , আপনার ওপরে আমরা নির্ভর করি এবং আপনার দিকেই আমরা ফিরি এবং আপনার সামনেই (সবকিছুর) শেষ।

এরপর তিনি তার উট থেকে নামলেন এবং রাসূল (সা.)-এর ঘোড়ায় চড়লেন , যার নাম ছিলো মুরতাজায এবং তার সাথীদেরকে সাজাতে শুরু করলেন।

[ মালহুফ গ্রন্থে আছে] উমর বিন সা আদ সামনে এগিয়ে এলো এবং ইমামের সেনাদলের দিকে একটি তীর ছুঁড়লো এবং বললো , সেনাপতির সামনে সাক্ষী থেকো যে আমিই ছিলাম যে প্রথম তীর ছুঁড়েছিল।’’ তখন তার অধীনে যারা ছিলো তারা বিরাট সংখ্যায় তীর ছুঁড়তে লাগলো যা পাখির মত দেখাতে লাগলো। ইমাম তার সাথীদের দিকে ফিরলেন এবং বললেন ,

আল্লাহ তাঁর রহমত তোমাদের ওপর বর্ষণ করুন , জাগো অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর মুখোমুখি হতে এবং এ তীরগুলো সেনাবাহিনীর দূত যা আমাদের দিকে আসছে।’’

এরপর তারা আক্রমণ করে এবং ইমামের একদল বিশ্বস্তও পরহেজগার সাথী নিহত হন।

বর্ণনাকারী বলেন যে ইমাম হোসেইন (আ.) নিজের দাড়ি ধরে বললেন ,

আল্লাহর ক্রোধ চরম হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইহুদীদের ওপর যখন তারা বলেছিল তাঁর একটি ছেলে আছে এবং তাঁর রাগ খ্রিষ্টানদের ওপর পড়ে যখন তারা তাঁকে তিন জনের একজন বানিয়েছিল এবং তাঁর ক্রোধ গিয়ে অগ্নি উপাসকদের [মাজুসদের] ওপর পড়েছিল যখন তারা তাঁর পরিবর্তে সূর্য ও চাঁদের ইবাদত করতে শুরু করেছিল এবং এখন আল্লাহর ক্রোধ পড়বে এ সম্প্রদায়ের ওপর যারা একত্রিত হয়েছে নবীর নাতিকে হত্যার জন্য। সাবধান , আল্লাহর শপথ , আমি তাদের আশার সাথে একমত হবো না , যতক্ষণ পর্যন্তনা আমি আমার রবের সাথে মিলিত হই আমার রক্তে ভিজে।’’

বর্ণিত আছে আমর বিন হাজ্জাজ ইমাম হোসেইন (আ.)-এর সাথীদের দিকে অগ্রসর হলো এবং বললো ,‘‘ হে কুফাবাসী , তাদেরকে দৃঢ়ভাবে ধরে থাকো যারা তোমাদের এবং তোমাদের সম্প্রদায়ের কথা শোনে এবং তাকে হত্যা করতে দ্বিধা করো না যে ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে এবং ইমামকে অমান্য করেছে।’’ ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন ,‘‘ হে আমর বিন হাজ্জাজ , তুমি কি লোকজনকে আমার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করছো ? আমরা কি ধর্ম থেকে বেরিয়ে গেছি , আর তোমরা তার ওপর দৃঢ় আছো ? আল্লাহর শপথ , যখন তুমি তোমার এ খারাপ কাজগুলো নিয়ে মরবে তখন তুমি জানতে পারবে যে , কে ধর্ম থেকে বেরিয়ে গেছে এবং কে জাহান্নামের [আগুনের] জন্য যোগ্য।’’

কারবালায় ইমাম হোসেইন (আ.)-এর প্রবেশ

হুর বিন ইয়াযীদ ইমাম হোসেইন (আ.)-কে কুফায় যাওয়ার পথে বাধা দিলে তিনি থেমে যান। এরপর তার সন্তানদের , ভাইদের ও আত্মীয়দেরকে নিজের চারদিকে জড়ো করলেন এবং কিছু সময়ের জন্য কাঁদলেন ও বললেন , হে আল্লাহ , আমরা আপনার রাসূলের বংশধর। লোকজন আমাদেরকে আমাদের বাড়িঘর থেকে টেনে বের করেছে এবং আমাদেরকে তাড়া করেছে এবং আমাদেরকে আমাদের নানার জায়গা [মদীনা] থেকে চাপ প্রয়োগ করে বের করে দিয়েছে। বনি উমাইয়া আমাদের উপর অত্যাচার করেছে। হে আল্লাহ , আমাদের অধিকারকে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিন এবং এ অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন।

এরপর তিনি সেখান থেকে অগ্রসর হলেন এবং 61 হিজরির 2রা মহররমের দিন বুধবার অথবা মঙ্গলবার কারবালায় প্রবেশ করলেন। এরপর তিনি তার সাথীদের দিকে ফিরে বললেন ,

লোকজন পৃথিবীর দাস এবং ধর্ম শুধু তাদের মুখের কথা এবং তারা এর যত্ন নিবে যতক্ষণ পর্যন্ততা তাদের জন্য আনন্দদায়ক এবং যখন পরীক্ষার উত্তপ্ত পাত্র এসে যায় তখন থাকে শুধু গুটি-কয়েক ধার্মিক ব্যক্তি।

এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন , এটি কি কারবালা ?

লোকজন উত্তর দিলো , হ্যাঁ। তিনি বললেন , এ জায়গা হলো দুঃখ ও মুসিবতের জায়গা এবং এ জায়গা আমাদের উটগুলোর বিশ্রামের স্থান , আমাদের থামার জায়গা , আমাদের শাহাদাতের জায়গা যেখানে আমাদের রক্ত ঝরানো হবে।

ইমাম হোসেইন (আ.)-এর কাছে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের চিঠি

ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়া কর্তৃক নিয়োজিত কুফার গভর্নর ইমাম হোসেইন (আ.)-কে একটি চিঠি প্রদান করে যা নিম্নরূপ: আম্মা বা আদ , হে হোসেইন , আমাকে জানানো হয়েছে যে , তুমি কারবালায় থেমেছো। ইয়াযীদ আমাকে লিখেছে , আমি যেন বিছানায় মাথা না রাখি এবং সন্তুষ্ট না হই যতক্ষণ পর্যন্তনা আমি তোমাকে আল্লাহর কাছে পাঠাচ্ছি , অথবা তুমি আমার কাছে এবং ইয়াযীদ বিন মুয়াবিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ কর। সালাম।

যখন এ চিঠি ইমাম হোসেইন (আ.)-এর কাছে পৌঁছলো , তিনি তা পড়লেন এবং তা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন , যে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে মানুষের সন্তুষ্টি খোঁজে সে কখনোই সফলতা লাভ করে না। দূত তাকে চিঠির উত্তর দিতে বললে ইমাম বললেন , তার জন্য কোন উত্তর নেই , আছে গযব [আল্লাহর]।

আশুরার (দশ মহররম) রাতের ঘটনাবলী

[ ইরশাদ গ্রন্থে আছে ] ইমাম হোসেইন ( আ .) তার সাথীদের রাতের বেলা জড়ো করলেন , ইমাম আলী যায়নুল আবেদীন ( আ .) বলেন যে , আমি তাদের কছে গেলাম শোনার জন্য তারা কী বলেন এবং সে সময় আমি অসুস্থ ছিলাম। আমি শুনলাম ইমাম তার সাথীদের বলছেন ,

আমি আল্লাহর প্রশংসা করি সর্বোত্তম প্রশংসার মাধ্যমে এবং তাঁর প্রশংসা করি সমৃদ্ধির সময়ে এবং দুঃখ দুর্দশার মাঝেও। হে আল্লাহ , আমি আপনার প্রশংসা করি এ জন্য যে , আপনি আমাদের পরিবারে নবুয়াত দান করতে পছন্দ করেছেন। আপনি আমাদের কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং ধর্মে আমাদেরকে বিজ্ঞজন করেছেন এবং আমাদেরকে দান করেছেন শ্রবণ শক্তি ও দূরদৃষ্টি এবং আলোকিত অন্তর। তাই আমাদেরকে আপনার কৃতজ্ঞ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।

আম্মা বা আদ , আমি তোমাদের চেয়ে বিশস্ত এবং ধার্মিক কোন সাথীকে পাই নি , না আমি আমার পরিবারের চাইতে বেশী বিবেচক , স্নেহশীল , সহযোগিতাকারী ও সদয় কোন পরিবারকে দেখেছি। তাই আল্লাহ আমার পক্ষ থেকে তোমাদেরকে উত্তমভাবে পুরস্কৃত করুন এবং আমি মনে করি শত্রুরা একদিনও অপেক্ষা করবে না এবং আমি তোমাদের সবাইকে অনুমতি দিচ্ছি স্বাধীনভাবে চলে যাওয়ার জন্য এবং আমি তা তোমাদের জন্য বৈধ করছি। আমি তোমাদের উপর থেকে আনুগত্য ও শপথের দায়ভার তুলে নিচ্ছি ( যা তোমরা আমার হাতে হাত দিয়ে শপথ করেছিলে ) । রাতের অন্ধকার তোমাদের ঢেকে দিয়েছে , তাই নিজেদের মুক্ত করো ঘূর্ণিপাক থেকে অন্ধকারের ঢেউয়ের ভেতরে। আর তোমাদের প্রত্যেকে আমার পরিবারের একজনের হাত ধরে ছড়িয়ে পড়ো গ্রাম ও শহরগুলোতে , যতক্ষণ না আল্লাহ তোমাদের মুক্তি দান করেন। কারণ এ লোকগুলো শুধু আমাকে চায় এবং আমার গায়ে হাত দেয়ার পরে তারা আর কারো পেছনে ধাওয়া করবে না।

এ কথা শুনে তার ভাইয়েরা , সন্তানরা , ও ভাতিজারা এবং আব্দুল্লাহ বিন জাফরের সন্তানরা বললেন , আামরা তা কখনোই করবো না আপনার পরে বেঁচে থাকার জন্য। আল্লাহ যেন কখনো তা না করেন। হযরত আব্বাস বিন আলী ( আ .) সর্বপ্রথম এ ঘোষণা দিলেন এবং অন্যরা তাকে অনুসর ণ করলেন।

ইমাম তখন আক্বীল বিন আবি তালিবের সন্তানদের দিকে ফিরলেন এবং বললেন , মুসলিমের আত্মত্যাগ তোমাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছে , তাই আমি তোমাদের অনমতি দিচ্ছি চলে যাওয়ার জন্য। তারা বললেন , সুবহানাল্লাহ , লোকেরা কী বলবে ? তারা বলবে আমরা আমাদের প্রধানকে , অভিভাবককে এবং চাচাতো ভাইকে , যে শ্রেষ্ঠ চাচাতো ভাই , পরিত্যাগ করেছি এবং আমরা তার সাথে থেকে তীর ছুড়িনি , বর্শা দিয়ে আঘাত করি নি এবং তার সাথে থেকে তরবারি চালাই নি এবং তখন আমরা ( এ অভিযোগের মুখে ) বুঝতে পারবো না কী করবো ; আল্লাহর শপথ , আমরা তা কখনোই করবো না। প্রকৃতপক্ষে আমরা আমাদের জীবন , সম্পদ ও পরিবার আপনার জন্য কোরবানী করবো। আমরা আপনার পাশে থেকে যুদ্ধ করবো এবং আপনার পাশে থেকে পরিণতিতে পৌঁছে যাবো। আপনার পরে জীবন কুৎসিত হয়ে যাক ( যদি বেঁচে থাকি ) ।

হোসেইন বিন হামদান হাযীনি তার বর্ণনা ধারা বজায় রেখে আবু হামযা সূমালি থেকে বর্ণনা করেন এবং সাইয়েদ বাহরানি বর্ণনার ক্রমধারা উল্লেখ না করেই তার কাছ থেকে নবণার্ করেছেন যে , তিনি বলেছেন: আমি ইমাম আলী আল-যায়নুল আবেদীনকে বলতে শুনেছি , শাহাদাতের আগের রাতে আমার বাবা তার পরিবার এবং সাথীদের জড়ো করলেন এবং বললেন , হে আমার পরিবারের সদস্যরা এবং আমার শিয়ারা [অনুসারীরা] , এ রাতকে ভেবে দেখো যা তোমাদের কাছে বহনকারী উট হয়ে এসেছে এবং নিজেদেরকে রক্ষা করো , কারণ লোকেরা আমাকে ছাড়া কাউকে চায় না। আমাকে হত্যা করার পর তারা তোমাদেরকে তাড়া করবে না। আল্লাহ তোমাদের উপর রহমত করুন। নিজেদেরকে রক্ষা করো। নিশ্চয়ই আমি আনুগত্য ও শপথের দায়ভার তুলে নিলাম যা তোমরা আমার হাতে করেছো। এ কথা শুনে তার ভাইয়েরা , আত্মীয়-স্বজন ও সাথীরা একত্রে বলে উঠলো , আল্লাহর শপথ হে আমাদের অভিভাবক , হে আবা আবদিল্লাহ , আমরা আপনার সাথে কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করবো না , তাতে লোকেরা বলতে পারে যে আমরা আমাদের ইমামকে , প্রধানকে এবং অভিভাবককে পরিত্যাগ করেছি এবং তাকে শহীদ করা হয়েছে। তখন আমরা আমাদের ও আল্লাহর মাঝে ওজর খুঁজবো। আমরা আপনাকে কখনোই পরিত্যাগ করবো না যতক্ষণ পর্যন্তনা আমরা আপনার জন্য কোরবান হই। ইমাম বললেন , নিশ্চয়ই আগামীকাল আমাকে হত্যা করা হবে এবং তোমাদের সবাইকে আমার সাথে হত্যা করা হবে এবং তোমাদের কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। তারা বললেন , সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যে তিনি আমাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন আপনাকে সাহায্য করার জন্য এবং আমাদেরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন আপনার সাথে শহীদ হওয়ার জন্য। তাহলে কি আমরা পছন্দ করবো না যে আমরা আপনার সাথে উচ্চ মাক্বামে [বেহেশতে] থাকবো , হে রাসূলুল্লাহর সন্তান ? ইমাম বললেন , আল্লাহ তোমাদের উদারভাবে পুরস্কৃত করুন। এরপর তিনি তাদের জন্য দোআ করলেন।

তখন ক্বাসিম বিন হাসান (আ.) জিজ্ঞেস করলেন , আমি কি শহীদদের তালিকায় আছি ? তা শুনে ইমাম আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন এবং বললেন , হে আমার প্রিয় সন্তান , তুমি মৃত্যুকে কিভাবে দেখো ?

ক্বাসিম বললেন , মধুর চেয়ে মিষ্টি।

ইমাম বললেন , নিশ্চয়ই , আল্লাহর শপথ , তোমার চাচা তোমার জন্য কোরবান হোক , তুমি তাদের একজন যাদেরকে শহীদ করা হবে আমার সাথে কঠিন অবস্থার শিকার হওয়ার পর এবং আমার [শিশু] সন্তান আব্দুল্লাহকেও [আলী আসগার] শহীদ করা হবে।

আশুরার দিনে ইমাম হোসেইন ( আ .)- এর খোতবা

আশুরার দিনে ইমাম হোসেইন (আ.) একটি খোতবায় বলেন: আম্মা বা আদ , বিবেচনা করো আমার পরিবার সম্পর্কে এবং গভীরভাবে ভাবো আমি কে , এরপর নিজেরদের তিরস্কার করো। তোমরা কি মনে করো যে আমাকে হত্যা করা এবং আমার পবিত্রতা ও সম্মান লুট করা তোমাদের জন্য বৈধ ? আমি কি তোমাদের নবীর নাতি , তার ওয়াসী ও তার চাচাতো ভাইয়ের সন্তান নই , যিনি ছিলেন বিশ্বাস গ্রহণে সবার আগে এবং সাক্ষী ছিলেন সে সবকিছুর ওপরে যা মহানবী আল্লাহর কাছ থেকে এনেছেন ? শহীদদের সর্দার হামযা কি আমার পিতার চাচা ছিলেন না ? জাফর , যিনি বেহেশতে দুপাখা নিয়ে উড়েন , তিনি কি আমার চাচা নন ? নবীর হাদীস কি তোমাদের কাছে পৌঁছে নি যেখানে তিনি আমার সম্পর্কে ও আমার ভাই সম্পর্কে বলেছেন : আমরা দুজন জান্নাতের যুবকদের সর্দার ? তাই যদি আমি যা বলছি তার সাথে একমত হও , এবং নিশ্চয়ই আমি যা বলেছি তা সত্য ছাড়া কিছু নয় , তাহলে তা উত্তম , কারণ আল্লাহর শপথ , যে সময় থেকে আমি বুঝেছি আল্লাহ মিথ্যাবাদীদের অপছন্দ করেন তখন থেকে আমি কখনোই কোন মিথ্যা বলি নি। আর যদি তোমরা আমি যা বলছি তা বিশ্বাস না কর , তাহলে তোমাদের মাঝে নবীর জীবিত সাহাবীগণ আছে , তাদের কাছে যাও এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস কর এবং তারা আমার বক্তব্যের সত্যতার সাক্ষ্য দিবে। জাবির বিন আব্দুল্লাহ আনসারি , আবু সাঈদ খুদরি , সাহল বিন সাদ সা য়েদি , যায়েদ বিন আরক্বাম এবং আনাস বিন মালিককে জিজ্ঞেস কর , তারা তোমাদের বলবে যে তারা আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে আমার ও আমার ভাই সম্পর্কে এ হাদীসটি শুনেছে। এটি কি তোমাদের জন্য আমার রক্ত ঝরানোর চাইতে যথেষ্ট নয় ?

তখন অভিশপ্ত শিমর বিন যিলজাওশান বললো , আমি আল্লাহর ইবাদত করি ঠোঁট দিয়ে এবং তুমি যা বলছো তা আমি বুঝি না। এ কথা শুনে হাবীব বিন মুযাহির [ইমামের সাথী] বললেন , আমি দেখছি তুমি আল্লাহর ইবাদত করো সত্তুর ধরনের সন্দেহ নিয়ে এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমি সত্য কথা বলেছো এবং তুমি বুঝতে পারো না ইমাম যা বলেন , কারণ আল্লাহ তোমার হৃদয়ের ওপরে একটি [মূর্খতার] মোহর মেরে দিয়েছেন।

ইমাম বললেন , যদি তোমরা এতে সন্দেহ পোষণ কর , তোমরা কি এতেও সন্দেহ কর যে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নাতি ? আল্লাহর শপথ , পূর্বে ও পশ্চিমে , আমি ছাড়া নবীর কোন নাতি নেই তোমাদের মধ্যে অথবা অন্যদের মধ্যে। দুর্ভোগ তোমাদের জন্য , আমি কি তোমাদের মধ্য থেকে কাউকে হত্যা করেছি যে তোমরা তার প্রতিশোধ নিতে চাও ? অথবা আমি কি কারো সম্পদ বেদখল করেছি , অথবা কাউকে আহত করেছি যার প্রতিশোধ তোমরা আমার ওপর নিতে চাও ?

যখন কেউ তাকে উত্তর দিলো না , তিনি উচ্চ কণ্ঠে বললেন , হে শাবাস বিন রাব ঈ , হে হাজ্জার বিন আবজার , হে ক্বায়েস বিন আল-আশআস , হে ইয়াযীদ বিন হুরেইস , তোমরা কি আমার কাছে চিঠি লিখোনি যে , ফল পেকেছে এবং আশপাশের ভূমিতে ফুল ফুটেছে এবং একটি বিশাল সেনাবাহিনীর কাছে আসুন , যা আপনার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ?

তারা উত্তর দিলো যে তারা এ ধরনের কোন চিঠি লিখেনি। ইমাম বললেন , সুবহানাল্লাহ , আল্লাহর শপথ অবশ্যই তোমরা তা লিখেছিলে।

এরপর তিনি বললেন , হে জনতা , এখন যদি তোমরা আমার আগমনকে পছন্দ না কর , তাহলে আমাকে ছেড়ে দাও যেন আমি কোন আশ্রয়ের জায়গায় চলে যেতে পারি।

ক্বায়েস বিন আল-আশআস বললো , তুমি যা বলছো তা আমরা জানি না , আমার চাচাতো ভাইদের [বনি উমাইয়ার] কাছে আত্মসমর্পণ কর , তারা তোমার সাথে সেভাবে আচরণ করবে যেভাবে তুমি চাও। ইমাম বললেন , আল্লাহর শপথ , নিকৃষ্ট মানুষের মতো আমি তোমাদের হাতে হাত দিবোনা , না আমি পালিয়ে যাবো কোন দাসের মতো।

এরপর তিনি উচ্চকণ্ঠে বললেন , হে আল্লাহর দাসেরা ,

) و َإِنِّي عُذْتُ بِرَبِّي وَرَبِّكُمْ أَن تَرْجُمُونِ(

নিশ্চয়ই আমি আমার ও তোমাদের রবের কাছে আশ্রয় নিচ্ছি ,পাছে তোমরা আমাকে পাথর মারো [হত্যা করো]। [সূরা দুখান: 20]

) إ ِنِّي عُذْتُ بِرَبِّي وَرَبِّكُم مِّن كُلِّ مُتَكَبِّرٍ لَّا يُؤْمِنُ بِيَوْمِ الْحِسَابِ(

আমি আশ্রয় নিই আমার ও তোমাদের রবের কাছে , প্রত্যেক দাম্ভিক থেকে , যে হিসাব দিনে বিশ্বাস করে না। [সূরা মু মিন: 27]

ইমাম আরো অগ্রসর হলেন এবং তাদের সামনে দাঁড়ালেন এবং তাদের সারিগুলোর দিকে তাকালেন শান্তবৃষ্টির মতো। তিনি উমর বিন সা আদকে কুফার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন এবং বললেন , ধন্যবাদ আল্লাহর প্রাপ্য , যিনি এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং একে মৃত্যু ও ক্ষয়ের বাড়ি বানিয়েছেন এবং যিনি এর মানুষদেরকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তন করেন। সে ব্যক্তি ধোঁকা খেয়েছে যে এ পৃথিবীর প্রতারণার শিকার হয়েছে , কারণ যে এর ওপর নির্ভর করে সে তাকে হতাশ করে। যে এখানে আকাঙ্ক্ষা করে সে তাকে রিক্তহস্ত করে। আমি দেখতে পাচ্ছি তোমরা জড়ো হয়েছো এমন একটি কাজের জন্য যা তোমাদের ওপর আল্লাহর ক্রোধ আনবে। তিনি তোমাদের দিক থেকে তার চেহারা ঘুরিয়ে নিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তার ক্রোধে ঢেকে দিয়েছেন এবং তোমাদের কাছ থেকে তার রহমত সরিয়ে নিয়েছেন। তাই আমাদের রব হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ , আর তোমরা হচ্ছো নিকৃষ্টতম দাস। তোমরা আল্লাহকে মেনে চলার অঙ্গীকার করেছো এবং তার রাসূল মুহাম্মাদ (সা.)-কে বিশ্বাস করেছো। এরপরও তোমরা তার পরিবারকে এবং বংশধরকে আক্রমণ করেছো এবং তাদেরকে হত্যা করতে চাও। [ইরশাদ] শয়তান তোমাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং তোমাদেরকে সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ভুলিয়ে দিয়েছে। দুর্ভোগ তোমাদের জন্য তোমাদের পথ ও লক্ষ্যের ওপর। নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয়ই আমরা তার কাছে ফেরত যাবো। এ এক জাতি যারা বিশ্বাস গ্রহণের পর কুফুরী গ্রহণ করেছে , তাই বিদায় হে অত্যাচারী জাতি।

তখন উমর বিন সা আদ বললো , তোমাদের জন্য আক্ষেপ , তাকে উত্তর দাও , কারণ সে আলীর সন্তান। সে যদি সারা দিন তোমাদের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে থাকে তার বক্তব্য শেষ হবে না , না সে ক্লান্তহবে। তখন শিমর এগিয়ে এলো এবং বললো , হে হোসেইন , তুমি কী বলছো ব্যাখ্যা কর যেন আমরা বুঝতে পারি। ইমাম বললেন , আমার বক্তব্যের মূল কথা হলো যে আমি তোমাদের বলছি আল্লাহকে ভয় করার জন্য এবং আমাকে হত্যা করো না। কারণ আমাকে হত্যা ও আমার পবিত্রতা ধ্বংস করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। কারণ আমি তোমাদের নবী (সা.)-এর কন্যার সন্তান এবং আমার নানী খাদিজা ( আ .) তোমাদের নবীর স্ত্রী। তোমরা হয়তো আমার নানাকে বলতে শুনে থাকবে যে , হাসান এবং হোসেইন বেহেশতের যুবকদের সর্দার।

এরপর তারা ইমাম হোসেইন (আ.)-কে সবদিক থেকে ঘেরাও করে ফেললো। তিনি তাদের কাছে এগিয়ে গেলেন এবং তাদেরকে চুপ থাকার ইঙ্গিত করলেন , কিন্তু তারা তা শুনতে অস্বীকার করলো। তখন ইমাম বললেন , তোমাদের জন্য দুর্ভোগ , তোমাদের কী হয়েছে যে তোমরা চুপ করছো না এবং আমি যা বলছি তা শুনছো না ? আমি তোমাদেরকে ধার্মিকতার পথে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। যে আমাকে মান্য করবে সে প্রজ্ঞাবান হবে। আর যে আমাকে মান্য করবে না সে ধ্বংস হবে। তোমরা সবাই আমার অবাধ্য হচ্ছো এবং আমার কথায় কান দিচ্ছো না। এর কারণ হলো তোমরা তোমাদের পেট হারামে পূর্ণ করেছো এবং তোমাদের হৃদয়গুলোতে মোহর মারা হয়েছে। আক্ষেপ তোমাদের জন্য। তোমরা কি ন্যায়পরায়ণ নও এবং শুনতে অক্ষম ?

কুফাবাসীদের লক্ষ্য করে ইমাম হোসেইন (আ.)-এর বক্তব্য

সাইয়্যেদ ইবনে তাউস বর্ণনা করেছেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) তার উটে চড়লেন [অন্যরা বলেন তার ঘোড়ায়] এবং তাদের ইশারা করলেন চুপ করার জন্য। এরপর তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ ও মর্যাদা বর্ণনা করলেন যা তার প্রাপ্য। তিনি অত্যন্ত সুন্দর ভাষায় সালাম পাঠালেন ফেরেশতা , নবী ও রাসূলদের ওপর। তারপর বললেন , হে জনতা , তোমরা যেন ধ্বংস হও , দুর্দশাগ্রস্ত হও। তোমরা উৎসাহের সাথে আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলে তোমাদের সাহায্য করার জন্য এবং আমরা তা করার জন্য দ্রুত অগ্রসর হয়েছি। কিন্তু তোমরা এখন সে তরবারিগুলো কোষমুক্ত করেছো যা আমরা তোমাদের দিয়েছি এবং তোমরা আমাদের জন্য আগুন জ্বালিয়েছো যা আমরা তোমাদের ও আমাদের শত্রুদের জন্য জ্বালিয়েছিলাম। তোমরা তোমাদের শত্রুদের পক্ষ নিয়েছো এবং তাদের সাথে থেকে তোমাদের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অগ্রসর হয়েছো , যদিও তারা তোমাদের সাথে ন্যায়পরায়ণ আচরণ করে নি , না তোমরা তাদের কাছ থেকে কোন দয়া ও সদয় আচরণ আশা কর। তোমাদের ওপর শত দুর্ভোগ আসুক। তোমরা আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছো যখন তরবারিগুলো এখনও তাদের খাপে রয়েছে , হৃদয়গুলো শান্তিতে আছে , মতামতগুলো যথাযথভাবে স্পষ্ট এবং ভুল থেকে মুক্ত। কিন্তু তোমরা পঙ্গপালের মতো , যারা যুদ্ধের দিকে দ্রুত অগ্রসর হয়েছে এবং মথের [প্রজাপতি] মতো , একজনের ওপর আরেকজন যেমন পড়ে। তোমরা ধ্বংস হও , হে যারা দাসীদের প্রেমিক , যারা দলত্যাগ করেছো , যারা কোরআন পরিত্যাগ করেছো , যারা সঠিক বক্তব্যকে বদলে নিয়েছো , যারা খারাপের স্তম্ভ , হে যারা শয়তানদের দ্বারা উস্কানি পাচ্ছো এবং যারা আসমানী আদেশ ছিন্নকারী , তোমরা তাদের পক্ষ নিচ্ছো এবং আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছো ? হ্যাঁ , নিশ্চয়ই প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গ করা তোমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য , যা তোমাদের পিতৃপুরুষেরা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তা থেকে শাখা বেরিয়েছে। তোমরা নোংরা এবং এর বিস্বাদ ফল যা এর বপনকারীর গলায় আটকে যায় এবং তা অত্যাচারীদের কাছে আনন্দের। সাবধান , এখন অবৈধ পিতার অবৈধ সন্তান [উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ] আমাকে তরবারি কোষমুক্ত করা ও অপমান সহ্য করার মাঝে স্থাপন করেছে এবং আমরা অপমান গ্রহণ করবো তা কখনোই হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার রাসূল এবং পবিত্র কোলগুলো যা আমাদের দুধ খাইয়েছে , যারা ভদ্র ও যারা অপমান ঘৃণা করে তারা এর সাথে দ্বিমত পোষণ করে যে , আমরা ঘৃণ্য মানুষদের কাছে মাথা নোয়াবো এবং তারা আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন এ বিষয়ে যুদ্ধের ময়দানে পৌরুষের সাথে নিহত হতে। জেনে রাখো , আমি তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো যদিও আমার সাথে রয়েছে অল্প কয়েকজন মানুষ এবং যদিও কিছু ব্যক্তি আমাকে পরিত্যাগ করে চলে গেছে।

নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর ওপর নির্ভর করি , আমার রব এবং তোমাদের রব , কোন জীবিত প্রাণী নেই , যার কপালের চুল তার হাতে নেই। নিশ্চয়ই আমার রব সঠিক পথের ওপরে আছেন। [সূরা হুদ: 56]

হে আল্লাহ , তাদের কাছ থেকে আকাশের বৃষ্টি তুলে নিন এবং তাদেরকে অনাবৃষ্টিতে জড়িয়ে যেতে দিন ইউসুফ (আ.)-এর সময়ের মতো এবং বনি সাকীহর এক ব্যক্তিকে [মুখতার বিন আবু উবায়দা সাক্বাফীকে] তাদের ওপর নিয়োগ দিন , যে তাদের গলায় তিক্ত পেয়ালা ঢেলে দিবে। কারণ তারা মিথ্যা বলেছে এবং আমাদের পরিত্যাগ করেছে। আপনি আমাদের রব , আপনার ওপরে আমরা নির্ভর করি এবং আপনার দিকেই আমরা ফিরি এবং আপনার সামনেই (সবকিছুর) শেষ।

এরপর তিনি তার উট থেকে নামলেন এবং রাসূল (সা.)-এর ঘোড়ায় চড়লেন , যার নাম ছিলো মুরতাজায এবং তার সাথীদেরকে সাজাতে শুরু করলেন।

[ মালহুফ গ্রন্থে আছে] উমর বিন সা আদ সামনে এগিয়ে এলো এবং ইমামের সেনাদলের দিকে একটি তীর ছুঁড়লো এবং বললো , সেনাপতির সামনে সাক্ষী থেকো যে আমিই ছিলাম যে প্রথম তীর ছুঁড়েছিল।’’ তখন তার অধীনে যারা ছিলো তারা বিরাট সংখ্যায় তীর ছুঁড়তে লাগলো যা পাখির মত দেখাতে লাগলো। ইমাম তার সাথীদের দিকে ফিরলেন এবং বললেন ,

আল্লাহ তাঁর রহমত তোমাদের ওপর বর্ষণ করুন , জাগো অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর মুখোমুখি হতে এবং এ তীরগুলো সেনাবাহিনীর দূত যা আমাদের দিকে আসছে।’’

এরপর তারা আক্রমণ করে এবং ইমামের একদল বিশ্বস্তও পরহেজগার সাথী নিহত হন।

বর্ণনাকারী বলেন যে ইমাম হোসেইন (আ.) নিজের দাড়ি ধরে বললেন ,

আল্লাহর ক্রোধ চরম হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইহুদীদের ওপর যখন তারা বলেছিল তাঁর একটি ছেলে আছে এবং তাঁর রাগ খ্রিষ্টানদের ওপর পড়ে যখন তারা তাঁকে তিন জনের একজন বানিয়েছিল এবং তাঁর ক্রোধ গিয়ে অগ্নি উপাসকদের [মাজুসদের] ওপর পড়েছিল যখন তারা তাঁর পরিবর্তে সূর্য ও চাঁদের ইবাদত করতে শুরু করেছিল এবং এখন আল্লাহর ক্রোধ পড়বে এ সম্প্রদায়ের ওপর যারা একত্রিত হয়েছে নবীর নাতিকে হত্যার জন্য। সাবধান , আল্লাহর শপথ , আমি তাদের আশার সাথে একমত হবো না , যতক্ষণ পর্যন্তনা আমি আমার রবের সাথে মিলিত হই আমার রক্তে ভিজে।’’

বর্ণিত আছে আমর বিন হাজ্জাজ ইমাম হোসেইন (আ.)-এর সাথীদের দিকে অগ্রসর হলো এবং বললো ,‘‘ হে কুফাবাসী , তাদেরকে দৃঢ়ভাবে ধরে থাকো যারা তোমাদের এবং তোমাদের সম্প্রদায়ের কথা শোনে এবং তাকে হত্যা করতে দ্বিধা করো না যে ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে এবং ইমামকে অমান্য করেছে।’’ ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন ,‘‘ হে আমর বিন হাজ্জাজ , তুমি কি লোকজনকে আমার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করছো ? আমরা কি ধর্ম থেকে বেরিয়ে গেছি , আর তোমরা তার ওপর দৃঢ় আছো ? আল্লাহর শপথ , যখন তুমি তোমার এ খারাপ কাজগুলো নিয়ে মরবে তখন তুমি জানতে পারবে যে , কে ধর্ম থেকে বেরিয়ে গেছে এবং কে জাহান্নামের [আগুনের] জন্য যোগ্য।’’


4

5

6

7

8

9

10