মুক্তির পথে

মুক্তির পথে0%

মুক্তির পথে লেখক:
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বিভাগ: আল্লাহর একত্ববাদ

মুক্তির পথে

লেখক: মোহাম্মদ নূরে আলম
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 15104
ডাউনলোড: 2816

মুক্তির পথে
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 34 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 15104 / ডাউনলোড: 2816
সাইজ সাইজ সাইজ
মুক্তির পথে

মুক্তির পথে

লেখক:
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বাংলা

এ বইটিতে অত্যন্ত শক্তিশালী তাত্ত্বিক আলোচনা উপস্থাপন করেছেন। কোন অন্ধ অনুকরণ এবং বিশ্বাস সম্পর্কিত উদ্দীপনাময়ী ও চলমান গতানুগতিক আলোচনা এতে স্থান পায়নি বরং গ্রন্থটির সকল আলোচনাই হয়েছে সম্পূর্ণ সত্য এবং সুপ্রমানিত তথ্যসমূহের উপর ভিত্তি করে। আমরা সুস্থ বুদ্ধি ও বিবেককে কখনো বিতাড়িত করি না বরং একই সঙ্গে রাসূল (সঃ) কর্তৃক বর্ণিত দলীলের উপর স্থবির বুদ্ধিবৃত্তি এবং মানব বুদ্ধিবৃত্তির সমান ব্যবহারের পক্ষপাতি। কেননা তালাবদ্ধ চিন্তা-ভাবনা থেকে মুক্তির চাবি কাঠি হচ্ছে এ বুদ্ধিবৃত্তি। ফলে এরই মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে পারি। সাথে সাথে এ বুদ্ধিবৃত্তি আমাদেরকে এও বলে দেয় যে কোন্ বিষয়টি বিবেক প্রসূত আর কোনটি বিবেক-বহির্ভূত। এ গ্রন্থে বিভিন্ন সহজ বোধগম্য উদাহরণের মাধ্যমে চিন্তার বিকাশ সাধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে যথার্থভাবে ,যেন পরবর্তীতে অন্যান্য চিন্তাবিদ ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিবর্গ এ পথে নিজেদের পরিশ্রম ব্যয় করতে এগিয়ে আসেন।

14

সৃষ্টিকর্তার গুণাবলী

বিশ্ব বিধাতা পরিপূর্ণ ও পরম সত্তা। তাঁর জাত বা সারসত্তা সকল প্রকার গুণাবলীতে ভরপূর। কেননা ,যা কিছু আমরা পরিপূর্ণতা বলে আখ্যায়িত করে থাকি তার সবকিছুই তাঁর সারসত্তায় বিরাজমান। আর যা কিছু আমাদের ধারণারও অতীত তাও তাঁর জন্যে ধারণা করা যায়। তিনি পরম পরিপূর্ণ।

তিনি সাবর্জনীন প্রভু ,তাঁর প্রভূত্বের সীমারেখা টানা যায় না। তিনি চিরন্তন ,চিরঞ্জীব ,শাশ্বত ও অমর। আল্লাহ্ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তিনিই চূড়ান্ত সার্বভৌম ও সর্বশক্তিমান। তিনি সর্বজ্ঞ ,সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কোন স্থান ,কাল বা পাত্রে সীমাবদ্ধ নন। স্থান ,কাল ,পাত্র তাঁর জন্যে কল্পনা করারও অশোভনীয়। আমাদের চর্ম চক্ষুর মাধ্যমে তাঁকে দেখা অসম্ভব। কেননা ,তিনি তো কোন বস্তুগত সত্তা নন। তিনি কোন মিশ্র বা যৌগিক সত্তা নন। যে সমস্ত ত্রুটি ও অপূর্ণাঙ্গতা একজন পরম পরিপূর্ণ সত্তার জন্যে অশোভনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় তার সকল কিছু থেকে তিনি মুক্ত।

অধিকন্তু পূর্ণতা ,পরিপূর্ণতা ,সব ধরনের কল্যাণ ও মঙ্গল বিষয়ক বস্তু ,তাঁর-ই সৃষ্টি। তিনি সকল পরিপূর্ণতার পরিপূর্ণতাদানকারী। কেননা ,পূর্বোল্লেখিত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে ,তিনি একজন অপরিহার্য সত্তা। কোন অপরিহার্য সত্তার জন্যে নির্ভরশীলতা ও মুখাপেক্ষিতার প্রশ্নই উত্থাপন হতে পারে না।

আল্লাহ্ ন্যায় বিচারক ,সুবিচারক ও সুবিচক্ষণ। তিনি হাকিম ,সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও প্রজ্ঞাবান। তাঁর প্রতিটি কার্যে সুনির্দিষ্ট কারণ নিহিত থাকে। তিনি অযথা কোন কাজ সম্পাদন করেন না।

তিনি সকল সৃষ্টির নিয়ন্তা ও রিজিক্দাতা। সকল সৃষ্টির রিজিক তিনিই প্রদান করে থাকেন। তিনি সর্বজ্ঞানী। অসম্ভব বস্তুজগত সম্পর্কেও তিনি জ্ঞাত।

তাঁর সকল গুণাবলী তাঁর জাত সত্তারই অন্তর্গত। আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলী তাঁর জাতের উপর আরোপিত নাকি তাঁর জাতের সাথে একাকার ? এ নিয়ে যুগ যুগ ধরে আশআরী ও মু তাযিলিদের মধ্যে বিতর্ক হয়ে আসছে। মু তাযিলিরা আল্লাহর একত্বের রক্ষা এবং চিরবিদ্যমান সত্তার একাধিকত্ব ও তাঁকে বস্তুগত গুণাবলীর সাথে তুলনার বিষয়টি গুড়িয়ে দেয়ার নিমিত্তে আল্লাহর গুণাবলীকে তাঁর জাত সত্তার সাথে মিশিয়ে একক সত্তার ধ্বনি দিয়ে আল্লাহর সিফাতকে অস্বীকার করেছেন। তারা আল্লাহর জাত ছাড়া অন্য কিছুকে স্বীকার করতে একেবারে নারাজ। এ প্রসঙ্গে ক্বাজী আব্দুল জাব্বার আল মু তাযিলি বলেন :

আমাদের শেখ,আব ু আলী বিশ্বাস করেন যে আল্লাহর জাতের মধ্যে চাঁরটি গুণ (ক্ষমতা ,জ্ঞান ,হায়াত বা জীবন ও অস্তিত্ব) যথোযোগ্য বিদ্যমান।

তিনি আরো বলেন ,আমাদের শেখ ,আবু হাশিম বলেন ,এই (চার প্রকার) গুণাবলী আল্লাহর জাত সত্তার অন্তর্গত।

অতএব ,উপরোক্ত দুই শেখের বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে :

আল্লাহ্ সুবহানাহু নিজ সত্তাতেই জ্ঞানী,শক ্তিশালী ও জীবিত ,জ্ঞান ,ক্ষমতা ও হায়াতের মাধ্যমে নয়। 20

আর আশআরীরা মু তাযিলিদের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আল্লাহর সিফাতকে তাঁর জাত থেকে আলাদা করে উল্লেখ করেছেন এবং অন্যান্য ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য গুণাবলীর সাথে আল্লাহর গুণাবলীর তুলনা দিয়েছেন।21

বস্তুতঃ আল্লাহর জাত সত্তার সাথে সাথে তাঁর গুণাবলীর অবস্থানও অনস্বীকার্য। তবে তাই বলে তাঁর গুণাবলী তাঁর জাতসত্তা থেকে পৃথক কিছু নয়।

আল্লাহর গুণাবলীকে আমরা দু ভাগে বিভক্ত করতে পারি।

এক : ইতিবাচক (ثبوتیة )

দুই : নেতিবাচক( سلبیة )

অথবা

এক : সৌন্দর্যমন্ডিত (( جمالیة

দুই : মহিমামন্ডিত (جلالیة )

অতএব যদি কোন সিফাত বা গুণ ইতিবাচক হয় আর তা আল্লাহর সারসত্তার জন্যে শোভনীয় ও সৌন্দর্যময় বলে পরিগণিত হয় তা হলে আমরা তাকে জাতগত ইতিবাচক বা সৌন্দর্যমন্ডিত গুণ বলে আখ্যায়িত করে থাকি। তাই জ্ঞান ,শক্তি ও হায়াত বা জীবন ইতিবাচক গুণের অন্তর্ভুক্ত যা তাঁর পবিত্র সারসত্তার পরিপূর্ণ অস্তিত্বের প্রতিই ইঙ্গিত বহন করে।

আর যখন কোন গুণ দ্বারা আল্লাহ্ থেকে ত্রুটি ও অপূর্ণাঙ্গতা এবং অন্য কিছুর প্রতি মুখোপেক্ষিতা দূরীকরণ বুঝানো হয় তখন সেই গুণকে নেতিবাচক( سلبیة ) বা মহিমামন্ডিত (جلالیة ) গুণ বলা হয়ে থাকে। দৃষ্টান্তস্বরূপ দৈহিকসত্তা , স্থান দখল , স্থান পরিবর্তন গতিশীলতা -র অস্বীকার তাঁর নেতিবাচক গুণাবলীর মধ্যে পরিগণিত ।

হিজরী একাদশ শতকের প্রাজ্ঞ দার্শনিক এবং আক্বায়েদ শাস্ত্রের সুবিখ্যাত পন্ডিত সাদরুল আফাযিল মোল্লা সাদরা (রহঃ) উপরোক্ত দু টি গুণ তথা সৌন্দর্যমন্ডিত গুণ ও মহিমামন্ডিত গুণের বিশ্লেষণ প্রদান করতে গিয়ে নিম্নের আয়াতটি উল্লেখ করেছেন।22

আল্লাহ্ কুরআনুল কারিমে এরশাদ করেছেন :

( تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِي الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ)

অর্থাৎ : তোমার প্রতিপালকের নাম মহান ও বরকতময় ,যিনি মহিমান্বিত (ذِي الْجَلَالِ ) এবং সম্মানিত (وَالْإِكْرَامِ ) । (আর-রাহমান ,আঃ নং-78 )

15

কোরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহর গুণাবলী

আল্লাহ্ ক্ষমতাবান

আল্লাহ্ জ্ঞানী

আল্লাহ্ চিরঞ্জীব

আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা

আল্লাহ্ প্রজ্ঞাবান

আল্লাহ্ ন্যায়বিচারক

আল্লাহ্ জ্ঞানী

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ বলেন :

( وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ ۚ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۚ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ)

অর্থাৎ : তাঁর (আল্লাহর) নিকট সমস্ত অদৃশ্য বস্তুর জ্ঞানভান্ডার সংরক্ষিত ,তিনি ব্যতীত ঐ সব বস্তু সম্পর্কে অন্য কেউ অবহিত নন। ভূ-তলে ও সাগরে যা কিছু আছে সে সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণ অবগত এবং (বৃক্ষ থেকে) এমন কোন পত্র পতিত হয় না যা আল্লাহর অজানা এবং পৃথিবীর অন্ধকার গর্ভে এমন কোন শষ্য কণা এবং শুষ্ক ও তরল পদার্থ নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে (তাঁর অনন্ত জ্ঞান ভান্ডারে) উল্লেখ করা হয়নি। (আল্ আন্আম ,আঃ নং-59 )

আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে অনত্র ,আরো বলেন :

( عَالِمِ الْغَيْبِ ۖ لَا يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَلَا أَصْغَرُ مِن ذَٰلِكَ وَلَا أَكْبَرُ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ)

অর্থাৎ : সকল অদৃশ্য সম্পর্কে তিনি (আল্লাহ্) পরিজ্ঞাত ,যমীন ও আসমান সমুহে এমন কোন বিন্দু কণা নেই ,এমন কোন ক্ষুদ্র ও বৃহৎ বস্তু নেই যে তাঁর অসীম ও অনন্ত জ্ঞানে সংরক্ষিত হয়নি। (সাবা ,আঃ নং-3 )

আল্লাহ্ ক্ষমতাবান :

পবিত্র আল্ কোরআনে উল্লেখ আছে :

( اللَّـهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللَّـهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ)

অর্থাৎ : আল্লাহ্ এমন এক সত্তা যিনি সাতটি আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং সেগুলোর ন্যায় আরো আসমান ,যমীন থেকে তৈরী করেছেন। তিনি সাত আসমান ও যমীনের মধ্যে তাঁর বিধি-বিধান অবতীর্ণ করেন যেন সকলেই জানতে পারে যে ,অবশ্যই আল্লাহ্ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। (আত্ তালাক ,আঃ নং-12 )

আল্লাহ্ চিরঞ্জীব

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ ঘোষণা করেন :

( وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ وَسَبِّحْ بِحَمْدِهِ ۚ وَكَفَىٰ بِهِ بِذُنُوبِ عِبَادِهِ خَبِيرًا)

অর্থাৎ : (হে রাসুল) তুমি চিরঞ্জীব খোদার উপর ভরসা কর এবং তাঁর প্রশংসাসহ গুণকীর্তন কর। (আল্ ফুরক্বান ,আঃ নং-58 )

তিনি অনত্র আরো বলেন :

( اللَّـهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ)

অর্থাৎ : আল্লাহ্ এমন এক সত্তা-যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই ,তিনি চিরঞ্জীব ,চিরস্থায়ী। তাঁকে কখনো অলসতা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। (আল্ বাক্বারা ,আঃ নং-255 )

আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা

এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন উল্লেখ করছে :

( وَاللَّـهُ يَسْمَعُ تَحَاوُرَكُمَا ۚ إِنَّ اللَّـهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ)

অর্থাৎ : আল্লাহ্ তোমাদের সকল কথা-বার্তা শ্রবন করে থাকেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। (আল্ মুজাদিলাহ্ ,আঃ নং-1 )

আল্লাহ্ প্রজ্ঞাবান

মহাগ্রন্থ আল্ কোরআনে আল্লাহ্ বলেন :

( وَاللَّـهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ)

অর্থাৎ : আল্লাহ্ জ্ঞানী এবং প্রজ্ঞাবান। (আন্ নিসা ,আঃ নং-26 )

আল্লাহ্ ন্যায়বিচারক :

পবিত্র আল্ কোরআনে আল্লাহ্ বলেন ,

( شَهِدَ اللَّـهُ أَنَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ)

অর্থাৎ : আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে ,তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং ফেরেস্তা ,জ্ঞানী ও বিদ্ব্যান ব্যক্তিগণও সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে ,আল্লাহ্ ছাড়া এমন কোন ইলাহ্ নেই যিনি ন্যায়বিচার করে থাকেন। (আল্ ইমরান ,আঃ নং-18 )

16

নাহ্জুল বালাগ্বা থেকে আল্লাহর পরিচয়

আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়ে হযরত আলী বিন আবি তালিবের একটি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। বিষয়ের গুরুত্বের কারণে নাহ্জুল বালাগ্বা গ্রন্থে সংকলিত উক্ত বক্তব্যের প্রয়োজনীয় অংশটুকু হুবহু পাঠক সমাজের সামনে তুলে ধরা হলো :

সমস্ত প্রশংসা আর গৌরব আল্লাহর-যাঁর গুণ ও গুরুত্ব কোন যুগের কোন বাগ্মীই বর্ণনা করে শেষ করতে পারবে না। যাঁর করুণা আর বদান্যতার হিসাব করতে সর্বযুগের হিসেবী আর গণিতজ্ঞরাও হবে ব্যর্থ ,শত চেষ্টা করেও তাঁর প্রতি যথাযোগ্য কৃতজ্ঞতা জানানো সম্ভব নয় কারো পক্ষে। যত কঠোর শ্রমই করা হোক না কেন ,কেউ-ই বুঝতে বা ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হবে না তাঁর অস্তিত্ব ও সত্তা। যুক্তি-বিবেচনা দিয়ে তাঁর নাগাল মিলে না। বুদ্ধি ,বোধশক্তি ও বিদ্যার গভীরতা দিয়ও উপলব্ধি করা যায় না আল্লাহর জাতের। মানব মনীষার বোধ ,বোধি ,উপলব্ধি আর পান্ডিত্য তাঁকে দেখতে অক্ষম। তাঁর সিফাতকে (গুণাবলীকে) করা যায় না নির্দিষ্ট ,সীমিত-আর কোন রকম সংজ্ঞায় বাঁধা। পৃথিবীর কোন ভাষায় এমন শব্দ নেই ,যা দিয়ে তাঁর সিফাত (গুণাবলী) আর জাত (সারসত্তা) বর্ণনা করা যায়। তিনি চিরন্তন ও চির বিদ্যমান---তাই করা যায় না তাঁর সূচনার সময় নির্দেশ বা তাঁর বিদ্যমানতার সময়-সীমা নিরূপণ। বিশ্ব সৃষ্টি ,বায়ু মণ্ডলের বিশ্বব্যাপী বিস্তার ,তরল মাটি ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে পাহাড় পর্বতে পরিণতি ,যা বিশ্ব-দেহে খুটির কাজ করছে ---এ সবই আল্লাহর অসীম ক্ষমতার নিদর্শন। ধর্মের পথে প্রথম পদক্ষেপ হলো আল্লাহকে স্বীকার করে ,বুঝে নিজের প্রভু হিসেবে মেনে নেয়া। বিশ্বাস আর দৃঢ়-স্বীকৃতিতেই নিহিত ঈমানের পূর্ণাঙ্গতা। সত্যকার বিশ্বাস হচ্ছে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই ,তা আন্তরিকতার সাথে মেনে নেয়া। তৌহিদে বিশ্বাসের সত্যকার রূপ হচ্ছে-আল্লাহ্ সম্পূর্ণ পাক আর স্বভাব বা প্রকৃতির ঊর্দ্ধে ,তাঁর সাথে যেমন কিছুই যোগ করা যায় না ,তেমনি যায় না কিছু বিয়োগ করাও ,এমনকি তাঁকে উপলব্ধি করাও।

উপলব্ধি করা চাই যে ,আল্লাহর জাত আর তাঁর সিফাত বা গুণাবলীতে কোন পার্থক্য নেই ,আর এ দু য়ের মধ্যে পার্থক্য করা অন্যায় ও অনুচিত। তাঁর জাত থেকে তাঁর সিফাতকে ( গুণাবলীকে ) যে পৃথক মনে করে ,বুঝতে হবে সে আল্লাহর একত্ব বিসর্জন দিয়ে দ্বিত্বে বিশ্বাসী হয়ে পড়েছে।

এরকম মানুষই আল্লাহর খণ্ড অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। এ রকম বিশ্বাস যে পোষণ করে ,তার পক্ষে আল্লাহর সত্যকার উপলব্ধি সম্ভব নয়---সে অজ্ঞ ,সে সব সময় নিজের কোন কাল্পনিক বস্তুকেই দেবতা ভাবতে চেষ্টা করে। যে কেউ এমন বিশ্বাস পোষণ করে ,সে আল্লাহর অস্তিত্ব সীমাবদ্ধতা আরোপ করবে---সে চাইবে তাঁকে স্থানে বা বিশেষ বিশেষ ক্ষমতায় বা সিফাতে (গুণাবলীতে) আবদ্ধ করে রাখতে। এভাবে সে নিজেই আল্লাহকে নিজের সৃষ্ট বস্তুর সমস্তরে নামিয়ে আনে।

তিনি কোন স্থান বিশেষের গুণে গুণান্বিত এ ধারণা করে সেভাবে তাঁকে নির্দেশ করা অথবা তিনি কোন বিশেষ অবস্থা বা ঘটনায় আবদ্ধ বিশ্বাস করা বা তাঁকে ছাড়াই কোন বিশেষ কাল বা স্থান থাকতে পারে মনে করার অর্থ তাঁর সর্বজ্ঞতা ,আর সর্ব উপস্থিতিকেই অস্বীকার করা এবং সে ধারণাকেই রদ্ (বাতিল) করে দেওয়া। এরকম সব ধারণার ফলে আল্লাহর অস্তিত্ব সংখ্যাভিত্তিক ঐক্যে পরিণত হবে (অর্থাৎ সংখ্যার মতো যার যোগ-বিয়োগ ও গুণ-ভাগ চলে)।

আল্লাহর জন্যে স্থান নির্দেশ করা-কোন স্থান বিশেষে বা তার উপরে তিনি আছেন মনে করা ,মানে তাঁকে স্থানে সীমিত করা আর স্থান থেকে তাঁকে খাটো করা। আর এতে এও বুঝা যায় যে তাঁকে ছাড়া অর্থাৎ তাঁর চির উপস্থিতি বা অবস্থানের বাইরেও স্থান থাকা সম্ভব।

তাঁর অস্তিত্ব চিরন্তন-কোন নির্দিষ্ট সময়ে তাঁর আবির্ভাব ঘটেনি আর তিনি নন কারো দ্বারা সৃষ্ট। তাঁর অস্তিত্বও আসেনি অনস্তিত্ব থেকে। প্রত্যেক বস্তুর সঙ্গেই তিনি আছেন--তবে শারীরিক বা দৈহিকভাবে নয় ,তিনি সব কিছু থেকে দূরে--তার মানে দৈহিক দূরত্বে নয় বা তিনি নন্ নির্লিপ্ত কি উদাসীন সব কিছু সম্বন্ধে। তিনি সক্রিয় ও কর্মরত ,তবে তার কর্মে কি ক্রিয়ায় দৈহিক কোন অঙ্গ-প্রতঙ্গ সঞ্চালনের প্রয়োজন হয় না--প্রয়োজন হয় না কোন যন্ত্রপাতি বা হাতিয়ারের। দেখার মত সৃষ্ট বস্তু যখন ছিলো না তখনো তিনি দেখতেন। তিনি এক ও নিঃসঙ্গ -কারণ ,তাঁর কোন সঙ্গী নেই ,যিনি তাঁকে সঙ্গ দেবেন বা যার সঙ্গের অভাব তিনি বোধ করবেন।

তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড একই সময় আর একই সঙ্গে সৃষ্টি করেছেন। সে সবকে আর তাতে যা কিছু আছে সবই অতি নিখুত আর চমৎকারভাবে তিনি সৃষ্টি করেছেন । কোন রকম দুর্ভাবনা ছাড়াই তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন। পরীক্ষা -নিরীক্ষা করে তার ফলাফল দেখে ,নিজের পরিকল্পনাকে শোধরিয়ে তিনি কিছু করেন নি-প্রয়োজন হয়নি তাঁর তেমন কোন প্রক্রিয়ার। এ জন্যে তাঁর অস্তিত্বকেও করতে হয়নি ক্রিয়াশীল। আগাম কোন পরিকল্পনা করে ,সযত্নে তার কার্যকারিতা দেখে নিয়ে তবে বিশেষ কোন কর্মসূচী বাস্তবায়নে হাত দিতে তিনি বাধ্য হননি। অর্থাৎ সে সব মানবীয় প্রক্রিয়া তাঁর হয়নি কোন দরকার .............। 23

17

তক্বদীরে বিশ্বাস

তক্বদীরে বিশ্বাস স্থাপন করা আমাদের সকলের জন্যে অবশ্য কর্তব্য। বিবেক প্রসূত বিষয়াদির অন্যতম এটি। কিন্তু তক্বদীরের ব্যাপারে বিভ্রান্তমূলক ব্যাখ্যা আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত। তন্মধ্যে একটি হলো , আমাদের কপালে যা লিখা আছে তাই হবে। আবার অনেকে বলেন , গরীব-ধনী ,সৎ-অসৎ হওয়া ইত্যাদি সব কিছু প্রথম থেকেই তক্বদীরে লিপিবদ্ধ আছে ,তাই আমাদের করার কিছু নেই।

উপরোক্ত ভ্রান্ত ধারণা-বিশ্বাস একজন মানুষকে সকল প্রকার কর্ম-চাঞ্চল্যতা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করে। ফলে মানুষ যে কোন প্রচেষ্টা চালানোর পূর্বেই ফলাফল নির্ধারণ করে বসে। এসব কিছুই হচ্ছে তক্বদীর সম্পর্কে ভ্রান্ত ব্যাখ্যা।

কুরআনুল কারিমের সুস্পষ্ট বক্তব্যানুযায়ী তক্বদীরের উপর মুশরিকরাও বিশ্বাস করতো । তবে তারা এও বিশ্বাস করতো যে ,তক্বদীরের ফলেই মানুষ তাদের কাজ-কর্মে পরাধীন এবং পূর্ব নির্ধারিত ফলাফলই ভোগ করে থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন :

( سَيَقُولُ الَّذِينَ أَشْرَكُوا لَوْ شَاءَ اللَّـهُ مَا أَشْرَكْنَا وَلَا آبَاؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِن شَيْءٍ)

অর্থাৎ : মুশরিকরা বলে যদি আল্লাহ্ ইচ্ছে করতেন তা হলে আমরা এবং আমাদের বাপ-দাদারা শিরক করতাম না আর কোন কিছুকে হারাম করতাম না। (আল্ আনআম ,আঃ নং-148 )

আর মহান রাব্বুল আ লামিন মুশরিকদের আক্বিদার উত্তর দিচ্ছেন এভাবে :

( وَإِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً قَالُوا وَجَدْنَا عَلَيْهَا آبَاءَنَا وَاللَّـهُ أَمَرَنَا بِهَا قُلْ إِنَّ اللَّـهَ لَا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ ۖ أَتَقُولُونَ عَلَى اللَّـهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ )

অর্থাৎ : যখন তারা কোন মন্দ কাজ করে তখন বলে আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের এই কাজে পেয়েছি এবং আল্লাহ আমাদের এই কাজে নির্দেশ দিয়েছেন। বল (হে রাসূল) নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন মন্দ কাজের নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহ সম্পর্কে এমন কিছু বল যা তোমরা জান না। ( আল আরাফ ,আঃ 28 )

এপ্রসঙ্গে মহানবী (সাঃ) বলেছেন :

আমার উম্মতের উপর এমন এক সময় আসবে যখন তারা নিজেদের পাপ কর্মগুলোকে আল্লাহর হুকুম বলে চালিয়ে দেবে। তারা আমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন আর আমিও তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট । 24

মুসলমানদের ভিতর যারা তক্বদীর ও পূর্ব নির্ধারিত ফয়সালর দোহাই দিয়ে মানুষের স্বাধীনতা হরণ করে তাদেরকে পরাধীনতার শিকলে আটকে রাখতে চায় তাদের মধ্যে আমীর মুয়াবিয়া সর্বপ্রথম । এ প্রসঙ্গে ইবনে কুতাইবা বলেন :

মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করার পর যখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বীয় পুত্র ইয়াযিদকে পরবর্তী খলীফা হিসেবে মনোনয়ন দানের উপযোগী মনে করলো তখন আবদুল্লাহ বিন ওমর প্রতিবাদ করলে তিনি বলেছিলেন ,মুসলিম উম্মতকে দ্বি ধাবিভক্ত করা ও তাদের রক্ত ঝরানোর ব্যাপারে তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি ইয়াযিদের খেলাফতের বিষয়টা ভাগ্যের লিখন ও ফয়সালা। বৈ কিছু নয় ,এতে জনগণের করার কিছু নেই ।25

এর বিপরীতে অনেক কালাম শাস্ত্রবিদ বলেন , ত ক্বদীরের উপর বিশ্বাসের অর্থ এই নয় যে ,মানুষ তার কাজ-কর্মে কোন স্বাধীনতা রাখে না। ক্বাদা ও ক্বাদার তো মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করে না বরং মানবজাতীর স্বাধীনতার র ক্ষা কবচ এই ক্বা দা ও ক্বাদার।

তক্বদীর ও ফয়সালার অর্থ

তক্বদীর ও ফয়সালা শব্দদ্বয় আরবী ভাষায় একসঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে থাকে যা আল্ ক্বাদা ওয়াল ক্বাদার নামে পরিচিত। যদিও বাংলা ভাষায় এ দু টো শব্দ তক্বদীর বা ভাগ্য অর্থে বহুল প্রচলিত। তথাপি আরবী পরিভাষায় উক্ত শব্দদ্বয়ের মধ্যে পর্যাপ্ত ব্যবধান ও পার্থক্য বিদ্যমান।

তক্বদীরের অর্থ হচ্ছে তাহ্দীদ বা পরিমাপ ও সীমা নির্ধারণ আর ক্বাদা হচ্ছে হুকুম বা ফয়সালা। এ দু টোই আবার ...ইলমি বা জ্ঞা নগত এবং আইনি বা বাস্তবময় দু ভাগে বিভক্ত। অতএব ,ক্বাদা ও ক্বাদার সর্বমোট চারভাগে বিভক্ত।

( 1) জ্ঞানগত ফয়সালা : যদি কোন বস্তু তার অস্তিত্ব লাভের শর্তসমূহ পূরণ করে তাহলে তা অবশ্যই অস্তিত্বমান হবে ...এ সম্পর্কে আল্লাহর জ্ঞানকে জ্ঞানগত ফয়সালা বলা হয়ে থাকে।

(2) জ্ঞানগত তক্বদীর : বিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে অথবা বস্তুগত সত্তাসমূহের সৃষ্টির পূর্বে প্রতিটি বস্তুর সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসমূহের ব্যাপারে আল্লাহর চিরন্তন জ্ঞান ভান্ডারে যে পরিমাপ ও সীমানা নির্ধারিত তাকে জ্ঞানগত তক্বদীর বলা হয়। সুতরাং আল্লাহর রাব্বুল আ লামীন প্রতিটি বস্তুর সীমারেখা ও পরিমাপ এবং এর আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সর্বপ্রকার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সম্যক অবহিত।

(3) বাস্তবময় ফয়সালা : কোন বস্তুর সকল কার্যকারণ সম্পন্ন হয়ে গেলেই তা সত্তাশীল হওয়ার জন্যে অবশ্যম্ভাবী রূপ ধারণ করবে। আর এটাই হল বাস্তবময় ফয়সালা।

(4) বাস্তবময় তক্বদীর : যখন কোন বস্তু অস্তিত্বশীল হয় তখন সে তার সকল বৈশিষ্ট্য নিয়েই অস্তিত্বে বহিঃপ্রকাশিত হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তবময় তক্বদীর।

মূলত : তক্বদীরের অর্থ কখনো এটা হতে পারে না যে , দৃষ্টান্ত স্বরূপ প্রথম থেকেই আমার কপালে লিখা আছে আমি কি গরীব হবো না ,ধনী ,জ্ঞানী হবো না কি নির্বোধ ইত্যাদি । তক্বদীরের আভিধানিক অর্থ হলো , পরিমাপ । অর্থাৎ ,বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল কিছুর ব্যাপারে আল্লাহ্ প্রদত্ত একটা পরিমাপ বিরাজমান। ভূ-মন্ডল কিভাবে ,কার চতুর্দিকে ,বৎসরে কতবার প্রদক্ষিণ করবে এ সকল কিছুর জন্যে একটা নির্দিষ্ট পরিমাপ বা নিয়ম-নীতি বিদ্যমান। তদ্রূপ মানবজাতির জন্যেও এক সুনির্দিষ্ট আইন ও পরিমাপ নির্ধারিত আছে। মানুষের কপালে গরীব বা ধনী বলে কোন কিছু লিখা নাই। বরং সৃষ্টি জগতের জন্যে আল্লাহ রাব্বুল আ লামীনের পক্ষ থেকে যে নির্ধারিত পরিমাপ বিরাজমান তারই নাম তক্বদীর । দৃষ্টান্ত স্বরূপ এ ধরনের পরিমাপ নির্ধারিত যে , মানুষ পরিশ্রম অনুযায়ী ফলাফল ভোগ করবে । অলসতা করে কাজে অবহেলা করলে পরিণতি কি হবে তার পরিমাপ নিশ্চয়ই আছে ।

তক্বদীর বা ভাগ্য পরিমাপের অর্থে প্রতিটি প্রাণীর কর্মের দক্ষতা ও একাগ্রতা এবং সময়ের মূল্য ও কর্মের বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। সার্বিকতার আলোকে কতকগুলো নিয়ম-নীতির সমষ্টি-ই হচ্ছে তক্বদীর বা ভাগ্য ,যদিও আল্লাহর জ্ঞান প্রতিটি প্রাণীর অতীত ,বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কার্যের ব্যপারেও সুপ্রসারিত। মানুষ তার স্বীয় কর্ম ক্ষমতা বলে নিজের ভাগ্য নিজেই নির্ণয় করতে সক্ষম। মানুষ ইচ্ছে করলে পৃথিবীতে সুখের নীড় গড়তে পারে আবার আখেরাতের জন্যে শান্তির নিবাসও তৈরী করতে পারে। আবার সে নেতিবাচক কাজ আঞ্জাম দিতে তার স্বাধীনতা ও ইচ্ছা ক্ষমতারও অপব্যবহার করতে পারে। মানুষের ভাগ্য তার নিজের হাতেই।

এ প্রসঙ্গে আল্ কোরআনে আল্লাহ্ বলেনঃ

( إِنَّ اللَّـهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ)

নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না যতক্ষন পর্যন্ত না তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সচেষ্ট হয়। (সূরা আর রায়াদ ,আয়াত নং 11 ) ।