নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা0%

নাহজ আল-বালাঘা লেখক:
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ: হযরত আলী (আ.)

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক: আশ-শরীফ আর-রাজী
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ:

ভিজিট: 119892
ডাউনলোড: 7295

নাহজ আল-বালাঘা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 48 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 119892 / ডাউনলোড: 7295
সাইজ সাইজ সাইজ
নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বাংলা

রাসূলের (সা.) ‘জ্ঞান নগরীর দ্বার’ আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব ছিলেন তত্ত্বজ্ঞানী, দার্শনিক, সুলেখক ও বাগ্মী। আলঙ্কারিক শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ও নৈপুন্য অসাধারণ। তিনি নবুওয়াতী জ্ঞান ভান্ডার হতে সরাসরি জ্ঞান আহরণ করেন এবং সাহাবাদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী পন্ডিত ছিলেন। এতে কারো দ্বিমত নেই। আরবী কাব্যে ও সাহিত্যে তার অনন্যসাধারণ অবদান ছিল। খেলাফত পরিচালনা কালে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ (খোৎবা) দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকগণকে প্রশাসনিক বিষয়ে উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে পত্র লিখেছিলেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মানুষের অনেক প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছিলেন। তার এসব বাণী কেউকেউ লিখে রেখেছিল, কেউ কেউ মনে রেখেছিল, আবার কেউ কেউ তাদের লিখিত পুস্তকে উদ্ধৃত করেছিল। মোটকথা তার অমূল্য বাণীসমূহ মানুষের কাছে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ছিল।

আশ-শরীফ আর-রাজী আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিবের ভাষণসমূহ (খোৎবা), পত্রাবলী, নির্দেশাবলী ও উক্তিসমূহ সংগ্রহ করে “নাহজ আল-বালঘা” নামক গ্রন্থটি সঙ্কলন করেন।

খোৎবা - ১১৭

الثناء علی المحسنین

أَنْتُمُ الْأَنْصَارُ عَلَى الْحَقِّ، وَ الْإِخْوانُ فِي الدِّينِ، وَ الْجُنَنُ يَوْمَ الْبَأْسِ، وَ الْبِطانَةُ دُونَ النَّاسِ، بِكُمْ أَضْرِبُ الْمُدْبِرَ، وَ أَرْجُو طاعَةَ الْمُقْبِلِ، فَأَعِينُونِي بِمُناصَحَةٍ خَلِيَّةٍ مِنَ الْغِشِّ، سَلِيمَةٍ مِنَ الرَّيْبِ، فَوَاللَّهِ إِنِّي لَأوْلَى النَّاسِ بِالنَّاسِ.

বিশ্বস্ত সাথীদের প্রশংসা

তোমরা সত্যের (হক) সমর্থক এবং ইমানি ভাই। তোমরা দুঃখের দিনের ঢাল এবং অন্য লোকদের মধ্যে আমার আমানত। তোমাদের সমর্থনেই আমি (সত্য পথ হতে) পলাতকদের আঘাত করি এবং যারা সামনের দিকে এগিয়ে আসে তাদের আনুগত্য পাওয়ার আশা করি। সুতরাং আমার প্রতি এমন সমর্থন প্রসারিত কর যা হবে প্রবঞ্চনা ও সন্দেহমুক্ত। আল্লাহর কসম ,মানুষের জন্য আমিই অন্য সকলের চেয়ে বেশি বরণীয়।

খোৎবা - ১১৮

وَ قَدْ جَمَعَ النَاسَ وَ حَضَّهُمْ عَلَى الْجِهادِ فَسَكَتُوا مَلِياً فَقَالَعليه‌السلام : ما بالُكُمْ أَمُخْرَسُونَ أَنْتُمْ؟ فَقَالَ قَوْمٌ مِنْهُمْ: يا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، إِنْ سِرْتَ سِرْنا مَعَكَ.

فَقالَ عليه‌السلام : ما بالُكُمْ! لا سُدِّدْتُمْ لِرُشْدٍ، وَ لا هُدِيتُمْ لِقَصْدٍ! أَفِي مِثْلِ هَذَا يَنْبَغِي لِي أَنْ أَخْرُجَ؟ وَ إِنَّما يَخْرُجُ فِي مِثْلِ هذا رَجُلٌ مِمَّنْ أَرْضاهُ مِنْ شُجْعانِكُمْ وَ ذَوِي بَأْسِكُمْ.

وَ لا يَنْبَغِي لِي أَنْ أَدَعَ الْجُنْدَ وَ الْمِصْرَ وَ بَيْتَ الْمَالِ وَ جِبايَةَ الْأَرْضِ وَ الْقَضأَ بَيْنَ الْمُسْلِمِينَ وَ النَّظَرَ فِي حُقُوقِ الْمُطالِبِينَ، ثُمَّ أَخْرُجَ فِي كَتِيبَةٍ أَتْبَعُ أُخْرى، أَتَقَلْقَلُ تَقَلْقُلَ الْقِدْحِ فِي الْجَفِيرِ الْفارِغِ، وَ إِنَّمَا أَنَا قُطْبُ الرَّحى تَدُورُ عَلَيَّ وَ أَنَا بِمَكانِي، فَإِذا فارَقْتُهُ اسْتَحارَ مَدارُها، وَ اضْطَرَبَ ثِفالُها. هذا - لَعَمْرُ اللَّهِ - الرَّأْيُ السُّوءُ، وَ اللَّهِ لَوْ لا رَجَائِي الشَّهادَةَ عِنْدَ لِقائِىَ الْعَدُوَّ - وَ لَوْ قَدْ حُمَّ لِي لِقَاؤُهُ - لَقَرَّبْتُ رِكابِي، ثُمَّ شَخَصْتُ عَنْكُمْ، فَلا أَطْلُبُكُمْ ما اخْتَلَفَ جَنُوبٌ وَ شَمالٌ طَعّانِينَ عَيّابِينَ حَيّادِينَ رَوّاغِينَ. إِنَّهُ لا غَنأَ فِي كَثْرَةِ عَدَدِكُمْ مَعَ قِلَّةِ اجْتِماعِ قُلُوبِكُمْ. لَقَدْ حَمَلْتُكُمْ عَلَى الطَّرِيقِ الْواضِحِ الَّتِي لا يَهْلِكُ عَلَيْها إ لاّ هالِكٌ، مَنِ اسْتَقامَ فَإِلَى الْجَنَّةِ، وَ مَنْ زَلَّ فَإِلَى النّارِ!

জিহাদের আহবানে অনুচরদের নিশ্চুপতার কারণে প্রদত্ত খোৎবা

আমিরুল মোমেনিন লোকবল সংগ্রহ করে তাদেরকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করলেন কিন্তু তারা দীর্ঘদিন নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো। তখন তিনি বললেন , তোমাদের কী হয়েছে ? তোমরা কি বোবা হয়ে গেলে ? একদল প্রত্যুত্তরে বললো , হে আমিরুল মোমেনিন ,যদি আপনি যান তবে আমরাও আপনার সাথে যাবো । ” এতে আমিরুল মোমেনিন বললেনঃ

তোমাদের কী হয়েছে ? তোমরা সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পার না এবং সঠিক পথ দেখতে পাওনা। বিদ্যমান অবস্থায় আমি কি যেতে পারি ? বস্তৃতঃ এ সময় আমি তোমাদের মধ্য থেকে একজন সাহসী ও নির্ভিক ব্যক্তিকে মনোনীত করে তোমাদের সঙ্গে প্রেরণ করবো। সৈন্যবাহিনী ,নগরী ,বায়তুল মাল ,জমির খাজনা - এসব অরক্ষিত অবস্থায় ত্যাগ করে আমার যাওয়া শোভা পায় না। তাছাড়া মুসলিমদের মধ্যে ন্যায়বিচার বিধান করা ,জনগণের দাবি - দাওয়া দেখাশোনা করা ,এদিক সেদিক একের পর এক বাহিনী প্রেরণ করা - এসব ছেড়ে আমার যাওয়া শোভনীয় হয় না।

আমি আটা - কলের মধ্য - শলাকা। আমি নিজের অবস্থানে থাকলে চাক্কি আমাকে কেন্দ্র করে ঘুরবে। যখনই আমি সরে যাব অমনি ঘুর্ণনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে এবং নিচের পাথরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আল্লাহর কসম ,(তোমরা যা বলেছ) এটা একটা মন্দ উপদেশ। আল্লাহর কসম ,শত্রুর মোকাবেলায় যদি আমি শাহাদাতের আশা পোষণ না করতাম এবং তার সাথে আমার মোকাবেলা যদি পূর্বনির্ধারিত না হতো তবে আমি আমার বাহনে চড়ে তোমাদের কাছ থেকে বেরিয়ে পড়তাম এবং উত্তর ও দক্ষিণ আলাদা না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের সাহায্য চাইতাম না।

তোমাদের সংখ্যাধিক্য দ্বারা কোন লাভ নেই ,কারণ তোমাদের হৃদয়ে ঐক্যের অভাব। আমি তোমাদেরকে স্বচ্ছ পথেই রেখেছি যেখানে তোমাদের কেউ ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে না ,কেবলমাত্র যে নিজেকে ধ্বংস করে সে ছাড়া। যে ব্যক্তি এ পথে লেগে থাকবে সে বেহেশত লাভ করবে এবং যে এ পথ থেকে সরে যাবে সে দোযখে যাবে।

খোৎবা - ১১৯

خصائص اهل البیتعليه‌السلام

تَاللَّهِ لَقَدْ عُلِّمْتُ تَبْليغَ الرِّسالاتِ، وَ إِتْمامَ الْعِداتِ، وَ تَمامَ الْكَلِماتِ وَ عِنْدَنا أَهْلَ الْبَيْتِ أَبْوابُ الْحِكَمِ وَ ضِيَأُ الْأَمْرِ. أَلا وَ إِنَّ شَرائِعَ الدِّينِ وَاحِدَةٌ، وَ سُبُلَهُ قاصِدَةٌ، مَنْ أَخَذَ بِها لَحِقَ وَ غَنِمَ، وَ مَنْ وَقَفَ عَنْها ضَلَّ وَ نَدِمَ. اعْمَلُوا لِيَوْمٍ تُذْخَرُ لَهُ الذَّخَائِرُ، وَ تُبْلى فِيهِ السَّرائِرُ، وَ مَنْ لا يَنْفَعُهُ حَاضِرُ لُبِّهِ فَعازِبُهُ عَنْهُ أَعْجَزُ، وَ غائِبُهُ أَعْوَزُ، وَ اتَّقُوا نارا حَرُّها شَدِيدٌ وَ قَعْرُها بَعِيدٌ، وَ حِلْيَتُها حَدِيدٌ، وَ شَرابُها صَدِيدٌ. أَلا وَ إِنَّ اللِّسانَ الصّالِحَ يَجْعَلُهُ اللَّهُ تَعالى لِلْمَرْءِ فِي النَّاسِ خَيْرٌ لَهُ مِنَ الْمالِ يُورِثُهُ مَنْ لا يَحْمَدُهُ.

আহলে বাইতের মহত্ত্ব সম্পর্কে

আল্লাহর কসম ,(আল্লাহর) বাণীবাহন ,প্রতিশ্রুতি পূরণ ও সম্পূর্ণ অভিব্যক্তি সম্বন্ধে আমার জ্ঞান আছে। আমরা আহলে বাইতগণ জ্ঞানের দরজা ও শাসনের আলো। সাবধান ,দ্বীনের পথ একটা এবং এর রাজপথ সোজা। যে তাদেরকে অনুসরণ করে সে লক্ষ্য অর্জন করে ও উদ্দেশ্য হাসিল করে এবং যে তাদের কাছ থেকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকলো সে পথভ্রষ্ট হলো ও অনুশোচনা করলো।

সেই দিনের জন্য আমল কর যেদিনের জন্য রসদ সঞ্চিত করতে হয় এবং যেদিন (প্রত্যেকের) নিয়্যত পরীক্ষিত হবে। যদি কোন লোকের নিজের বুদ্ধিমত্তা তাকে সাহায্য না করে তবে অন্য লোকের বুদ্ধি তার কোন উপকারে আসে না এবং যারা তার কাছ থেকে দূরে তারা অধিকতর অকার্যকর। আগুনকে ভয় কর যার শিখা ভয়ঙ্কর ,যার গর্ত গভীর ,যার পোষাক লোহা এবং যার পানীয় রক্তমাখা পুঁজি। সাবধান ,মহিমান্বিত আল্লাহ কোন লোকের সুনাম মানুষের মাঝে রেখে দেন যা সম্পদ অপেক্ষা অধিকতর ভালো কারণ যারা সম্পদের উত্তরাধিকারী হয় তারা তার প্রশংসা করে না।

খোৎবা - ১২০

وَ قَدْ قامَ رَجُلٌ مِنْ أَصْحابِهِ فَقالَ: نَهَيْتَنا عَنِ الْحُكُومَةِ ثُمَّ أَمَرْتَنا بِها، فَلَمْ نَدْرِ أَيُّ الْأَمْرَيْنِ أَرْشَدُ؟ فَصَفَقَ ع إِحْدَى يَدَيْهِ عَلَى الْأُخْرَى. ثُمَّ قَالَ:

أسباب القبول بالتحکیم

هَذَا جَزأُ مَنْ تَرَكَ الْعُقْدَةَ! أَما وَ اللَّهِ لَوْ أَنّي حِينَ أَمَرْتُكُمْ بِما أَمَرْتُكُمْ بِهِ حَمَلْتُكُمْ عَلَى الْمَكْرُوهِ الَّذِي يَجْعَلُ اللَّهُ فِيهِ خَيْراً. فَإِنِ اسْتَقَمْتُمْ هَدَيْتُكُمْ، وَ إن اعْوَجَجْتُمْ قَوَّمْتُكُمْ، وَ إنْ أَبَيْتُمْ تَدارَكْتُكُمْ لَكانَتِ الْوُثْقَى، وَ لكِنْ بِمَنْ وَ إلى مَنْ أُرِيدُ أَنْ أُداوِي بِكُمْ وَ أَنْتُمْ دائِي؟ كَناقِشِ الشَّوْكَةِ بِالشَّوْكَةِ وَ هُوَ يَعْلَمُ أَنَّ ضَلْعَها مَعَها! اللَّهُمَّ قَدْ مَلَّتْ أَطِبّأُ هَذا الدَّأِ الدَّوِيِّ، وَ كَلَّتِ النَّزْعَةُ بِأَشْطانِ الرَّكِيِّ!

صفات الشهداء من أصحابه

أَيْنَ الْقَوْمُ الَّذِينَ دُعُوا إ لَى الْإِسْلاَمِ فَقَبِلُوهُ، وَ قَرَءُوا الْقُرْآنَ فَأَحْكَمُوهُ، وَ هِيجُوا إ لَى الْجِهَادِ فَوَلِهُوا الِّقَاحِ إ لَى أَوْلادِها، وَ سَلَبُوا السُّيُوفَ أَغْمادَها، وَ أَخَذُوا بِأَطْرافِ الْأَرْضِ زَحْفا زَحْفا وَ صَفّا صَفّا؟ بَعْضٌ هَلَكَ وَ بَعْضٌ نَجا، لا يُبَشَّرُونَ بِالْأَحْيأِ، وَ لا يُعَزَّونَ عَنِ الْمَوْتَى.

مُرْهُ الْعُيُونِ مِنَ الْبُكأِ، خُمْصُ الْبُطُونِ مِنَ الصِّيَامِ، ذُبُلُ الشِّفاهِ مِنَ الدُّعَأِ، صُفْرُ الْأَلْوانِ مِنَ السَّهَرِ، عَلَى وُجُوهِهِمْ غَبَرَةُ الْخاشِعِينَ، أُولئِكَ إِخْوانِىَ الذَّاهِبُونَ، فَحَقَّ لَنا أَنْ نَظْمَأَ إِلَيْهِمْ، وَ نَعَضَّ الْأَيْدِىَ عَلَى فِرَاقِهِمْ.

التحذیر من خدع الشیطان

إِنَّ الشَّيْطانَ يُسَنِّى لَكُمْ طُرُقَهُ، وَ يُرِيدُ أَنْ يَحُلَّ دِينَكُمْ عُقْدَةً عُقْدَةً، وَ يُعْطِيَكُمْ بِالْجَماعَةِ الْفُرْقَةَ، وَ بِالْفُرْقَةِ الْفِتْنَةَ، فَاصْدِفُوا عَنْ نَزَغاتِهِ وَ نَفَثاتِهِ، وَ اقْبَلُوا النَّصِيحَةَ مِمَّنْ أَهْداها إِلَيْكُمْ وَ اعْقِلُوها عَلَى أَنْفُسِكُمْ

আমিরুল মোমেনিনের অনুচরদের মধ্যে একজন দাঁড়িয়ে বললো , হে আমিরুল মোমেনিন ,আপনি প্রথমে সালিশীতে আমাদের বারণ করেছিলেন এবং পরে তার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন। আমরা জানি না এ দুটোর কোনটি বেশি সঠিক। ” এতে আমিরুল মোমেনিন এক হাত দিয়ে অপর হাতের ওপর থাপ্পড় মেরে বললেনঃ

কুফাবাসীদের পরাজয়ের কারণ

যে ব্যক্তি অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এটাই তার পুরস্কার। আল্লাহর কসম ,যখন আমি সালিশী মান্য না করার জন্য তোমাদের আদেশ দিয়েছিলাম তখন আমি তোমাদেরকে একটা অবাঞ্চিত বিষয়ের (যুদ্ধ) দিকে পরিচালিত করছিলাম যাতে আল্লাহ মঙ্গল নিহিত রেখেছিলেন। যদি তোমরা দৃঢ় - সংকল্প চিত্তের হতে আমি তোমাদেরকে পরিচালিত করতে পারতাম ;যদি তোমরা বেঁকে যেতে আমি তোমাদেরকে সোজা করতে পারতাম এবং যদি তোমরা অস্বীকার করতে আমি তোমাদেরকে সংশোধন করতাম। এটাই ছিল সব চাইতে সুনিশ্চিত পথ। কিন্তু কার সাথে ও কাকে সে পথের কথা বলবো। আমি তোমাদের কাছে আমার চিকিৎসা চেয়েছিলাম। কিন্তু তোমরা আমার রোগ হয়ে গিয়েছিলে। (অবস্থা এমন করেছিলে যে) কাঁটা দিয়ে কাটা তুলতে গিয়ে উৎপাটক জানতে পারলো যে ,তার হাতের কাঁটাটি ভেঙ্গে ভেতরে রয়ে গেছে। হায় আল্লাহ! চিকিৎসকরা এ ঘাতক রোগে হতাশ হয়ে গেল এবং পানি উত্তোলনকারীরা এ কুপের দড়িতে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়লো।

শহীদ সঙ্গীদের সম্পর্কে

কোথায় তারা যারা ইসলামের প্রতি আমন্ত্রিত হয়েছিল এবং তা গ্রহণ করেছিল ? তারা কুরআন তেলওয়াত করতো এবং তদানুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতো। তারা যুদ্ধের প্রতি উদ্বুদ্ধ ছিল এবং উষ্ট্রি যেভাবে তার শাবকের দিকে ধাবিত হয় তারাও সেভাবে জিহাদের দিকে ধাবিত হতো। তারা তাদের তরবারি কোষ থেকে বের করে দলে দলে সারিবদ্ধভাবে জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়তো। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করতো ,কেউ কেউ গাজি হয়ে ফিরে আসতো। না তারা গাজি হবার সুখবরে আনন্দিত হতো ,আর না তারা মৃত সম্পর্কে সান্তুনা পেতো। কাঁদতে কাঁদতে তাদের চোখ সাদা হয়ে গিয়েছিল। রোজা রাখতে রাখতে তাদের পেট কৃশ হয়ে গিয়েছিল। অত্যধিক নামাজের কারণে তাদের ঠোঁট শুকিয়ে গিয়েছিল। রাত্রি জাগরণের কারণে তাদের বর্ণ পান্ডুর হয়ে গিয়েছিল। তাদের মুখে খোদা - ভীতির চিহ্ন ছিল। এরাই ছিল আমার সাথী যারা গত হয়ে গেছে।

শয়তানের ধোকা সম্পর্কে সতর্কবাণী

নিশ্চয়ই ,শয়তান তার পথকে তোমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছে এবং দ্বীনের বন্ধন একটার পর একটা খুলে ফেলতে চায় যাতে তোমাদের মধ্যে ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ সৃষ্টি হয়। তার কুমন্ত্রণা ও জাদুমন্ত্র থেকে নিজেদের দূরে রাখ এবং কেউ সদুপদেশ দিলে তা গ্রহণ করে মনে রেখো।

খোৎবা - ১২১

قالَهُ لِلْخَوارِجِ، وَ قَدْ خَرَجَ إِلَى مُعَسْكَرِهِمْ وَ هُمْ مُقِيمُونَ عَلَى إِنْكَارِ الْحُكُومَةِ، فَقَالَعليه‌السلام :

أَكُلُّكُمْ شَهِدَ مَعَنا صِفِّينَ؟فَقَالُوا: مِنَّا مَنْ شَهِدَ وَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَشْهَدْ. قَالَ : فَامْتَازُوا فِرْقَتَيْنِ، فَلْيَكُنْ مَنْ شَهِدَ صِفِّينَ فِرْقَةً، وَ مَنْ لَمْ يَشْهَدْها فِرْقَةً، حَتَّى أُكَلِّمَ كُلًّا مِنْكُمْ بِكَلامِهِ.وَ نادَى النَّاسَ فَقَالَ : أَمْسِكُوا عَنِ الْكَلامِ وَ أَنْصِتُوا لِقَوْلِي، وَ أَقْبِلُوا بِأَفْئِدَتِكُمْ إِلَيَّ، فَمَنْ نَشَدْنَاهُ شَهادَةً فَلْيَقُلْ بِعِلْمِهِ فِيهَا.

سیاسیة رفع المصاحف الماکرة

أَلَمْ تَقُولُوا عِنْدَ رَفْعِهِمُ الْمَصاحِفَ حِيلَةً وَ غِيلَةً وَ مَكْرا وَ خَدِيعَةً: إِخْوانُنا وَ أَهْلُ دَعْوَتِنَا اسْتَقالُونا،وَ اسْتَراحُوا إ لَى كِتَابِ اللَّهِ سُبْحَانَهُ، فَالرَّأْيُ الْقَبُولُ مِنْهُمْ، وَ التَّنْفِيسُ عَنْهُمْ؟ . فَقُلْتُ لَكُمْ: هذا أَمْرٌ ظَاهِرُهُ إِيمانٌ وَ باطِنُهُ عُدْوانٌ، وَ أَوَّلُهُ رَحْمَةٌ، وَ آخِرُهُ نَدَامَةٌ، فَأَقِيمُوا عَلى شَأْنِكُمْ، وَ الْزَمُوا طَرِيقَتَكُمْ، وَ عَضُّوا عَلَى الْجِهادِ بَنَواجِذِكُمْ، وَ لا تَلْتَفِتُوا إلى نَاعِقٍ نَعَقَ: إنْ أُجِيبَ أَضَلَّ وَ، إِنْ تُرِكَ ذَلَّ. وَ قَدْ كَانَتْ هذِهِ الْفَعْلَةُ. وَ قَدْ رَأَيْتُكُمْ أَعْطَيْتُمُوها. وَ اللَّهِ لَئِنْ أَبَيْتُها ما وَجَبَتْ عَلَيَّ فَرِيضَتُها، وَ لا حَمَّلَنِي اللَّهُ ذَنْبَها، وَ وَاللَّهِ إِنْ جِئْتُها إِنِّي لَلْمُحِقُّ الَّذِي يُتَّبَعُ، وَ إِنَّ الْكِتابَ لَمَعِي ما فارَقْتُهُ مُذْ صَحِبْتُهُ.

صفات المجاهدین من اصحاب النبیصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم

فَلَقَدْ كُنّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم وَ إنَّ الْقَتْلَ لَيَدُورُ بَيْنَ الْآبأِ وَ الْأَبْنَأِ وَ الْإِخْوانِ وَ الْقَراباتِ، فَما نَزْدادُ عَلَى كُلِّ مُصِيبَةٍ وَ شِدَّةٍ إلا إِيمانا، وَ مُضِيّا عَلَى الْحَقِّ، وَ تَسْلِيما لِلْأَمْرِ، وَ صَبْرا عَلَى مَضَضِ الْجِرَاحِ.

علل مقاتلة اهل الشام

وَ لَكِنَّا إِنَّما أَصْبَحْنا نُقاتِلُ إِخْوَانَنا فِي الْإِسْلاَمِ عَلَى مَا دَخَلَ فِيهِ مِنَ الزَّيْغِ وَ الاعْوِجَاجِ وَ الشُّبْهَةِ وَ التَّأْوِيلِ، فَإ ذا طَمِعْنا فِي خَصْلَةٍ يَلُمُّ اللَّهُ بِها شَعَثَنا وَ نَتَدانَى بِها إِلَى الْبَقِيَّةِ فِيما بَيْنَنا، رَغِبْنا فِيها، وَ أَمْسَكْنا عَمّا سِواها.

যখন খারিজিরা সালিশী প্রত্যাখ্যানের জন্য অনড় অবস্থান গ্রহণ করলো তখন আমিরুল মোমেনিন তাদের ক্যাম্পের কাছে গিয়ে তাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ

তোমরা সবাই কি সিফফিনে আমাদের সঙ্গে ছিলে ? প্রত্যুত্তরে তারা বললো যে ,কেউ কেউ ছিল ,কেউ কেউ ছিল না। আমিরুল মোমেনিন বললেন ,তাহলে তোমরা দুভাগে বিভক্ত হও । যারা সিফফিনে ছিলে তারা এক দিকে যাও । আর যারা সিফফিনে ছিলে না তারা একদিকে যাও যাতে আমি প্রত্যেক দলকে যথোচিতভাবে সম্বোধন করতে পারি। তারপর তিনি উচ্চৈঃস্বরে বললেন ,কথা বলা বন্ধ করা এবং আমি যা বলি শোন । তোমাদের হৃদয়কে আমার দিকে ফেরাও । যাকে আমি সাক্ষ্য দিতে বলি সে তার জানা মত সাক্ষ্য দেবে ।

কোরআনকে বর্ষার অগ্রভাগে তুলে ধরার রাজনীতি

প্রবঞ্চনা ,কৌশল ,শঠতা ও প্রতারণা হিসাবে যখন তারা কুরআনকে তুলে ধরল তখন কি তোমরা বলনি তারা আমাদের ভাই এবং ইসলাম গ্রহণে আমাদের সাথী । তারা চায় যুদ্ধ বন্ধ করে মহিমান্বিত আল্লাহর কেতাবের আশ্রয় গ্রহণ করতে । আমাদের অভিমত হলো তাদের সাথে একমত হয়ে তাদের অসুবিধা শেষ করে দেয়া। তখন আমি তোমাদেরকে বলেছিলাম , এ কাজের বহির্ভাগ ইমান মনে হলেও এর অভ্যন্তরে শক্রতা রয়েছে। এর শুরু ধার্মিকতা মনে হলেও এর শেষ হবে অনুশোচনা। কাজেই তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে দৃঢ় থাক এবং তোমাদের পথে দৃপ্তপদে দৃঢ় - সংকল্প থাক। তোমরা দাঁতে দাঁত চেপে ধরে জিহাদে প্রবৃত্ত থাক। চিৎকারকারীর ( মুয়াবিয়া ) চিৎকারে কর্ণপাত করো না। যদি তার চিৎকারের জবাব দাও তবে সে তোমাদের বিপথে পরিচালিত করবে আর জবাব না দিলে সে অপমানিত হবে। কিন্তু যখন সালিশী করা হলো ,তখন আমি দেখলাম ,তোমরা তা মেনে নিয়েছো । আল্লাহর কসম ,যদি আমি অস্বীকার করতাম তাহলে তা আমার জন্য বাধ্যতামূলক হতো না এবং আল্লাহ তার পাপ আমার ওপর চাপিয়ে দিতেন না। আল্লাহর কসম ,আমি তা গ্রহণ করেছি ;আমিই ন্যায়সঙ্গত ব্যক্তি যাকে অনুসরণ করা উচিত ,কারণ কুরআন আমার সাথে। কুরআনকে সাথী করে নেয়ার পর থেকে আমি কখনো তা পরিত্যাগ করিনি ।

নবীর (সা.) মুজাহিদ সাহাবীদের সম্পর্কে

আমরা রাসূলের ( সা .) সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলাম ,সেখানে আমাদের হাতে যারা নিহত হয়েছিল তারা ছিল আমাদের পিতা ,ভ্রাতা ,পুত্র ও আত্মীয় - স্বজন। তাসত্ত্বেও সকল দুঃখ - কষ্ট ও অভাব - অনটন আমাদের ইমানকে বৃদ্ধি করেছে ,সত্যপথে আমাদেরকে দৃঢ় করেছে ,আল্লাহর আদেশের প্রতি অনুগত করেছে এবং ক্ষতস্থানের ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।

সিরিয়দের সাথে যুদ্ধের কারণ

আমাদের এখন যুদ্ধ করতে হবে ইসলামি ভাইদের সাথে কারণ ইসলামে গোমরাহি ,বক্রতা ,সংশয় ও অপব্যাখ্যার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। যাহোক ,যদি আমরা কোন পথ দেখি যার সাহায্যে আল্লাহ আমাদেরকে এ বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে একত্রিত করেন এবং যার দ্বারা আমরা একে অপরের কাছে আসতে পারি এবং আমাদের মধ্যে যেসব বিষয়ে উভয়ের মিল আছে তা গ্রহণ করে অন্য সব কিছু পরিত্যাগ করতে পারি।

খোৎবা - ১২২

قالَهُ لا صْحابِهِ فِي ساعَةِ الْحَرْبِ بصفین

وَ أَيُّ امْرِئٍ مِنْكُمْ أَحَسَّ مِنْ نَفْسِهِ رَباطَةَ جَأْشٍ عِنْدَ اللِّقَأِ، وَ رَأَى مِنْ أَحَدٍ مِنْ إِخْوانِهِ فَشَلاً، فَلْيَذُبَّ عَنْ أَخِيهِ بِفَضْلِ نَجْدَتِهِ الَّتِي فُضِّلَ بِها عَلَيْهِ، كَما يَذُبُّ عَنْ نَفْسِهِ، فَلَوْ شَأَ اللَّهُ لَجَعَلَهُ مِثْلَهُ. إنَّ الْمَوْتَ طَالِبٌ حَثِيثٌ، لا يَفُوتُهُ الْمُقِيمُ، وَ لا يُعْجِزُهُ الْهَارِبُ. إنَّ أَكْرَمَ الْمَوْتِ الْقَتْلُ! وَالَّذِي نَفْسُ ابْنِ أَبِي طَالِبٍ بِيَدِهِ لَأَلْفُ ضَرْبَةٍ بِالسَّيْفِ أَهْوَنُ عَلَيَّ مِنْ مِيتَةٍ عَلَى الْفِراشِ فِي غَيْرِ طَاعَةِ اللَّهِ!

وَ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْكُمْ تَكِشُّونَ كَشِيشَ الضِّبَابِ: لا تَأْخُذُونَ حَقّا، وَ لا تَمْنَعُونَ ضَيْما، قَدْ خُلِّيتُمْ وَالطَّرِيقَ، فالنَّجاةُ لِلْمُقْتَحِمِ، وَالْهَلَكَةُ لِلْمُتَلَوِّمِ.

সিফফিনের যুদ্ধে অনুচরদের প্রতি উপদেশ

তোমাদের মধ্যে কেউ যদি সংঘর্ষ চলাকালে হৃদয়ে সাহসিকতা বোধ কর এবং তোমাদের কোন সাথী যদি শত্রু পরিবেষ্টিত হয়ে হতাশ হয়ে পড়ে তাহলে তাকে তৎক্ষণাৎ শত্রুমুক্ত করা উচিত। এক্ষেত্রে সাথীকে রক্ষা করার জন্য এমনভাবে শক্রকে প্রতিহত করতে হবে যেভাবে কেউ নিজের বেলায় করে ,কারণ তোমার সাথীর চেয়ে যে বলিষ্ঠতা তোমাকে দেয়া হয়েছে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমার সাথীকেও তা দিতে পারতেন। নিশ্চয়ই ,মৃত্যু দ্রুত অনুসন্ধানকারী। না কোন দৃপ্ত পদ এটা থেকে রক্ষা পেতে পারে ,আর না কোন দৌড়বিদ এটা থেকে পালিয়ে যেতে পারে। নিহত হওয়া সর্বোত্তম মৃত্যু। যে এক হাজার আঘাত আমার কাছে সহজতর কারণ বিছানায় পড়ে থেকে মৃত্যু আল্লাহর আনুগত্যের (জিহাদ) নয়।

আমি দেখতে পাচ্ছি। তোমরা যেন গিরগিটির মতো টিকটিক স্বরে শব্দ করছো । তোমরা নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে চাওনা এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করনা। তোমাদেরকে মুক্তভাবে পথে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যে যুদ্ধের দিকে দৌড়ে যায় সে মুক্তি পায় ,আর যে ইতস্তত করে পিছনে পড়ে থাকে সে ধ্বংস হয়।

খোৎবা - ১২৩

فِي حَثِّ أَصْحابِهِ عَلَى الْقِتالِ

فَقَدِّمُوا الدَّارِعَ، وَ أَخِّرُوا الْحاسِرَ، وَ عَضُّوا عَلَى الْأَضْراسِ فَإِنَّهُ أَنْبى لِلسُّيُوفِ عَنِ الْهامِ، وَالْتَوُوا فِي أَطْرافِ الرِّماحِ فَإِنَّهُ أَمْوَرُ لِلْأَسِنَّةِ، وَغُضُّوا الْأَبْصارَ فَإِنَّهُ أَرْبَطُ لِلْجَأْشِ، وَ أَسْكَنُ لِلْقُلُوبِ؛ وَ أَمِيتُوا الْأَصْواتَ فَإِنَّهُ أَطْرَدُ لِلْفَشَلِ. وَ رايَتَكُمْ فَلا تُمِيلُوها، وَ لا تُخِلُّوها، وَ لا تَجْعَلُوها إِلا بِأَيْدِي شُجْعانِكُمْ، وَ الْمانِعِينَ الذِّمارَ مِنْكُمْ، فَإِنَّ الصّابِرِينَ عَلَى نُزُولِ الْحَقائِقِ هُمُ الَّذِينَ يَحُفُّونَ بِرَاياتِهِمْ، وَيَكْتَنِفُونَها: حِفَافَيْها وَ وَرَأَها وَ أَمَامَها، لا يَتَأَخَّرُونَ عَنْها فَيُسْلِمُوها، وَ لا يَتَقَدَّمُونَ عَلَيْها فَيُفْرِدُوها. أَجْزَأَ امْرُؤٌ قِرْنَهُ، وَ آسى أَخَاهُ بِنَفْسِهِ، وَ لَمْ يَكِلْ قِرْنَهُ إِلَى أَخِيهِ فَيَجْتَمِعَ عَلَيْهِ قِرْنُهُ وَ قِرْنُ أَخِيهِ.

وَ ايْمُ اللَّهِ لَئِنْ فَرَرْتُمْ مِنْ سَيْفِ الْعاجِلَةِ لا تَسْلَمُوا مِنْ سَيْفِ الْآخِرَةِ، وَ أَنْتُمْ لَهامِيمُ الْعَرَبِ، وَ السَّنامُ الْأَعْظَمُ. إنَّ فِي الْفِرارِ مَوْجِدَةَ اللَّهِ، وَالذُّلَّ اللازِمَ، وَالْعارَ الْباقِيَ، وَ إنَّ الْفارَّ لَغَيْرُ مَزِيدٍ فِي عُمُرِهِ، وَ لا مَحْجُوزٍ بَيْنَهُ وَ بَيْنَ يَوْمِهِ. مَنْ رائِحٌ إلى اللَّهِ كَالظَّمْآنِ يَرِدُ الْمَأَ؟ الجَنَّةُ تَحْتَ أَطْرافِ الْعَوالِى، الْيَوْمَ تُبْلَى الْأَخْبَارُ، وَاللَّهِ لَأَنا أَشْوَقُ إلى لِقائِهِمْ مِنْهُمْ إلى دِيارِهِمْ. اللَّهُمَّ فَإنْ رَدُّوا الْحَقَّ فَافْضُضْ جَماعَتَهُمْ، وَشَتِّتْ كَلِمَتَهُمْ، وَ أَبْسِلْهُمْ بِخَطاياهُمْ.

إِنَّهُمْ لَنْ يَزُولُوا عَنْ مَواقِفِهِمْ دُونَ طَعْنٍ دِراكٍ، يَخْرُجُ مِنْهُ النَّسِيمُ وَ ضَرْبٍ يَفْلِقُ الْهامَ، وَ يُطِيحُ الْعِظامَ، وَ يُنْدِرُ السَّواعِدَ وَالْأَقْدامَ، وَ حَتَّى يُرْمَوا بِالْمَناسِرِ تَتْبَعُهَا الْمَناسِرُ، وَ يُرْجَمُوا بِالْكَتائِبِ تَقْفُوها الْحَلائِبُ، وَ حَتَّى يُجَرَّ بِبِلادِهِمُ الْخَمِيسُ يَتْلُوهُ الْخَمِيسُ وَ حَتَّى تَدْعَقَ الْخُيُولُ فِى نَواحِرِ أَرْضِهِمْ، وَ بِأَعْنانِ مَسارِبِهِمْ وَ مَسارِحِهِمْ.

অনুচরগণকে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধকরণ

বর্মাচ্ছদিত লোকদের সামনে রেখো এবং বর্মবিহীনদেরকে পিছনে রেখো। তোমরা দাতে দাত চেপে ধরো ,কারণ এতে তরবারি মাথার খুলির ওপর পড়বে না। যে দিকে (শত্রুর) বর্শাধারী সেদিকে ডজ ’ (হঠাৎ সরে পড়া) দিয়ো ,কারণ তাতে বর্শার ফলার দিক পরিবর্তিত হয়ে যাবে। চোখ বন্ধ করো কারণ এতে আত্মশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং হৃদয়ে শান্তি আসে। গলার স্বর বন্ধ করো কারণ এতে সাহসহীনতা দূর হয়।

তোমাদের ঝাণ্ডা কখনো বাকা করো না এবং ঝাণ্ডা কখনো ফেলে যেয়ো না। সাহসী ও মর্যাদা রক্ষক ছাড়া অন্য কারো কাছে ঝাণ্ডা দিয়ে না ,কারণ বিপদ ঘটলে তারাই শুধু সহ্য করতে পারে ;তারা ঝাণ্ডাকে চর্তুদিক থেকে ঘিরে রাখে এবং সম্মুখ ও পিছন উভয় দিকে তা চক্রাকার করে রাখে। তারা ঝাণ্ডা থেকে আলাদা হয় না পাছে তা শত্রুর হাতে চলে যায়। তারা ঝাণ্ডা ছেড়ে এগিয়ে যায় না পাছে তা একা পড়ে যায়। প্রত্যেকে তার বিপক্ষের মোকাবেলা করবে এবং নিজের জীবন দিয়ে হলেও সাথীকে সাহায্য করবে। বিপক্ষকে তোমার সাথী মোকাবেলা করবে মনে করে কখনো ছেড়ে দিও না। এতে তোমার বিপক্ষ তোমার সাথীর বিপক্ষের সাথে যোগ দেবে।

আল্লাহর কসম ,তোমরা আজকের তারবারি থেকে পালিয়ে গেলেও পরকালের তরবারি থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে না। তোমরা আরবদের মধ্যে অগ্রণী এবং অঙ্গ - সৌষ্ঠবেও তোমরা উন্নত। নিশ্চয়ই ,জিহাদ থেকে পলায়নে রয়েছে আল্লাহর রোষ ,চিরস্থায়ী অসম্মান ও লজ্জা । নিশ্চয়ই ,একজন পলায়নকারী তার জীবন দীর্ঘায়িত করতে পারে না এবং পলায়নকারী ও তার মৃত্যুর মধ্যে কোন কিছুই হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কে আছে এমন যে আল্লাহর দিকে ছুটে যায়। যেমন করে তৃষ্ণার্ত পানির দিকে যায় ? বর্শার ফলার নিচে বেহেশত রয়েছে। আজ শৌর্যের সুখ্যাতি পরীক্ষিত হবে।

আল্লাহর কসম ,তারা তাদের ঘরে ফেরার জন্য যতটুকু উৎসুক আমি তাদেরকে যুদ্ধে দেখার জন্য ততোধিক উৎসুক। হে আমার আল্লাহ ,যদি তারা সত্য পরিত্যাগ করে তবে তাদের দল ছত্রভঙ্গ করো ,তাদের মধ্যে মতদ্বৈধতা সৃষ্টি করো এবং তাদের পাপের কারণে তাদেরকে ধ্বংস করো।

তারা তাদের মনোভাব পরিবর্তন করবে না যে পর্যন্ত না বর্শার আঘাতে তাদের শরীর এমনভাবে বিদীর্ণ হয় যাতে এদিক থেকে সেদিক বাতাস পার হয়ে যায় ,তরবারির আঘাতে তাদের মাথার খুলি কেটে যায় ,হাড় ভাঙ্গে ও হাত - পা বিছিন্ন হয়। তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে না যে পর্যন্ত না তারা একের পর এক বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয় ,তাদের শহরসমূহ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয় এবং ঘোড়ার পদাঘাতে তাদের চারণভূমি ও ভূমির শেষ সীমা পর্যন্ত দলিত ও বিনষ্ট হয়।

____________________

১। আমিরুল মোমেনিন সিফফিনের যুদ্ধের প্রাক্কালে এ ভাষণ দিয়েছিলেন। ৩৭ হিজরি সনে আমিরুল মোমেনিন ও সিরিয়ার গভর্ণর মুয়াবিয়ার মধ্যে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। খলিফা উসমানের হত্যার তথাকথিত প্রতিশোধের কারণ দেখিয়ে মুয়ারিয়া এ যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। বস্তুত এ যুদ্ধ ছিল মুয়াবিয়ার কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য। মুয়াবিয়া খলিফা উমরের সময় থেকে সিরিয়ার গভর্ণর নিয়োজিত থেকে সেখানে স্বশাসন চালিয়ে আসছিলো। উসমানের সময় তার ক্ষমতা যথেচ্ছ প্রয়োগ করে সিরিয়াকে করতলগত করে নিয়েছিল। আমিরুল মোমেনিন খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর মুয়াবিয়া তার বায়াত গ্রহণ করেনি। কারণ সে মনে করতো। আমিরুল মোমেনিনের বায়াত গ্রহণ করলে তার কর্তৃত্ব থাকবে না। ফলে সে তার সহজাত ধূর্ততা প্রয়োগ করে কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য উসমানের হত্যাকে একটা ইস্যু হিসাবে ব্যবহার করেছিল। তার পরবর্তী কার্যাবলী থেকে এটা সুস্পষ্ট বুঝা যায়। সে ক্ষমতা দখলের পর কোনদিন ভুলেও উসমানের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের বিষয়টি মুখে আনেনি বা হত্যাকারীদের বিষয়ে কোন শব্দ করেনি।

যদিও প্রথম দিন থেকেই আমিরুল মোমেনিন বুঝতে পেরেছিলেন যে ,যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবি তবুও সকল ওজর নিঃশেষ করার প্রয়োজনে জামালের যুদ্ধ শেষে কুফায় ফিরে এসে ৩৬ হিজরি সনের ১২ রজব সোমবার তিনি জারির ইবনে আবদিল্লাহ আল - বাজালীকে একটা পত্রসহ মুয়াবিয়ার কাছে দামস্কে প্রেরণ করেছিলেন। পত্রে তিনি লিখেছিলেন যে ,মুহাজির ও আনসারগণ তাঁর বায়াত গ্রহণ করেছে এবং মুয়াবিয়াও যেন বায়াত গ্রহণ করে উসমানের হত্যা মামলা পেশ করে ,যাতে তিনি কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী রায় প্রদান করতে পারেন। কিন্তু মুয়াবিয়া নানা তালবাহানা করে জারিরকে বিলম্ব করাতে লাগলো। অপরদিকে আমর ইবনে আল - আসের পরামর্শক্রমে উসমান হত্যার কারণ দেখিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণার ব্যবস্থা করলো। সে সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মাধ্যমে অজ্ঞ জনগণকে বুঝিয়েছিল যে ,উসমানের হত্যার জন্য আলী দায়ী - তিনি তাঁর আচরণ দ্বারা অবরোধকারীদের উৎসাহ ও প্রশ্রয় দিয়েছেন। ইতোমধ্যে মুয়াবিয়া উসমানের রক্তমাখা জামা ও তার স্ত্রী নায়লাহ বিনতে ফারাফিসার কর্তিত আঙ্গুল দামস্কের কেন্দ্রীয় মসজিদে ঝুলিয়ে রেখেছিল এবং তার চারদিকে সত্তর হাজার সিরিয়ান কান্নারত ছিল এবং তারা উসমানের রক্তের প্রতিশোধ নেয়ার শপথ গ্রহণ করেছিলো। এভাবে মুয়াবিয়া সিরিয়দের অনুভূতি এমন এক অবস্থায় নিয়ে গেল যে ,তারা উসমানের রক্তের বদলা নেয়ার জন্য নিজেদের জীবন বিসর্জন দিতেও দৃঢ় সংকল্প হলো। তখন মুয়াবিয়া উসমানের হত্যার প্রতিশোধ ” ইস্যুর ওপর তাদের বায়াত গ্রহণ করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলো। মুয়াবিয়া জারিরকে সিরিয়দের অনুভূতি ও মনোভাব দেখিয়ে দিয়ে অপমান করে ফেরত পাঠিয়ে দিল।

জারীরের কাছে বিস্তারিত জানতে পেরে আমিরুল মোমেনিন অত্যন্ত দুঃখ পেয়েছিলেন এবং মালিক ইবনে হাবিব আল - ইয়ারবুইকে নুখায়লাহ উপত্যকায় সৈন্য সমাবেশ করার আদেশ দিলেন। ফলে কুফার উপকণ্ঠে প্রায় আশি হাজার লোক জড়ো হয়েছিল। প্রথমে আমিরুল মোমেনিন জিয়াদ ইবনে নদীর আল - হারিছির নেতৃত্বে আট হাজারের একটা শক্তিশালী বক্ষীবাহিনী এবং সুরায়হ ইবনে হানি আল - হারিছির নেতৃত্বে অন্য একটা চার হাজারের শক্তিশালী বাহিনী সিরিয়া অভিমুখে প্রেরণ করলেন। অবশিষ্ট সৈন্যবাহিনীর নেতৃত্ব নিজে গ্রহণ করে ৫ শাওয়াল বুধবার আমিরুল মোমেনিন সিরিয়া অভিমুখে যাত্রা করলেন। কুফার সীমান্ত অতিক্রম করে তিনি যোহর সালাত আদায় করলেন এবং তারপর দায়র আবু মুসা ,নাহর ,নারস ,কুব্বাত কুব্বিন ,বাবিল ,দায়র কা 'ব ,কারবালা ,সাবাত ,বাহুরা সিনি ,আল - আনবার ও আর জাযিরাহ স্থানসমূহে বিশ্রাম গ্রহণ করে আর - রিক্কায় উপনীত হলেন। এখানকার জনগণ উসমানের পক্ষে ছিল এবং এখানেই সিমাক ইবনে মাখতামাহ আল আসাদী তার আটশত লোকসহ তাঁবু খাটিয়েছিল। এসব লোক আমিরুল মোমেনিনের পক্ষ ত্যাগ করে মুয়াবিয়ার সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য কুফা থেকে বেরিয়ে এসেছিলো। যখন তারা আমিরুল মোমেনিনের বাহিনী দেখতে পেল তখন তারা ফোরাত নদীর ওপরের সেতু খুলে ফেললো যাতে তিনি নদী পার হতে না পারেন। কিন্তু মালিক ইবনে হারিছ। আলআশাঁতারের ধমকে তারা ভীত হয়ে গেল এবং উভয়ের মধ্যে আলাপ - আলোচনার পর তারা সেতু জোড়া লাগিয়ে দিল এবং আমিরুল মোমেনিন তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে নদী পার হয়ে গেলেন। নদীর অপর তীরে অবতরণ করে তিনি দেখতে পেলেন যে ,জিয়াদ ও সুরায়হ সেখানে ছাউনি পেতে অপেক্ষা করছে। তারা আমিরুল মোমেনিনকে বললো যে ,এ স্থানে পৌছার পর তারা খবর পেয়েছিল মুয়াবিয়ার বাহিনী ফোরাত অভিমুখে এগিয়ে আসছে। তার বিশাল বাহিনীর গতিরোধ করা সম্ভব হবে না মনে করে তারা আর না এগিয়ে আমিরুল মোমেনিনের জন্য অপেক্ষা করছিলো। তাদের থেমে থাকার ওজর আমিরুল মোমেনিন গ্রহণ করলেন এবং তাদেরকে অগ্রবর্তী হওয়ার জন্য আদেশ দিলেন। তারা যখন সুর - আর - রুম নামক স্থানে পৌছলো তখন দেখতে পেলো যে ,আবু আল - আওয়ার আস - সুলামী তথায় ক্যাম্প করে সৈন্যসহ অবস্থান করছে। তারা উভয়ে আমিরুল মোমেনিনকে এ সংবাদ দিল। তিনি মালিক ইবনে হারিছ। আল - "আশতারকে সেনাপতি নিয়োগ করে সেখানে প্রেরণ করলেন এবং নির্দেশ দিলেন। যে ,যতদূর সম্ভব যুদ্ধ এড়িয়ে তাদেরকে যেন প্রকৃত অবস্থা বুঝিয়ে বলা হয় এবং উপদেশের মাধ্যমে তাদের মনোভাব পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়। মালিক - আল - আশতার তাদের কাছ থেকে অল্প দূরে ক্যাম্প করলেন। কিন্তু তিনি যুদ্ধের কোন ভাব দেখালেন না। অপর দিকের অবস্থা থমথমে ছিল ,যে কোন সময় যুদ্ধ শুরু করার জন্য তারা উন্মুক্ত আসি হাতে অপেক্ষা করছিলো। আবু আল - আওয়ার হঠাৎ করে রাতের বেলা আক্রমণ করে বসলো এবং সামান্য সময় যুদ্ধের পর সে অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে গেল। পরদিন আমিরুল মোমেনিন সসৈন্যে সেখানে পৌছে সিফফিন অভিমুখে যাত্রা করলেন। মুয়াবিয়া পূর্বেই সিফফিন পৌছে ছাউনি পেতেছিলো এবং ফোরাত কুল অবরোধ করে সৈন্য মোতায়েন করেছিলো । আমিরুল মোমেনিন সেখানে পৌছে মুয়াবিয়াকে অনুরোধ করে পাঠালেন যেন সে ফোরাত কুল থেকে সৈন্য সরিয়ে নিয়ে পানি নেয়ার ব্যবস্থা অবরোধমুক্ত করে। কিন্তু মুয়াবিয়া আমিরুল মোমেনিনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ইরাকি সৈন্যগণ সাহসিকতার সাথে আক্রমণ করে ফোরাতকুল দখল করে। তারপব আমিরুল মোমেনিন মুয়াবিয়ার কাছে বশির ইবনে আমার আল - আনসারি ,সাঈদ ইবনে কায়েস আল - হামদানি ও শাবাছ ইবনে রিবি আত - তামিমীকে প্রেরণ করলেন এ জন্য যে ,তারা যেন যুদ্ধের ভয়াবহতা তাকে বুঝিয়ে বলে এবং সে যেন বায়াত গ্রহণ করে একটা মীমাংসায় আসতে রাজি হয়। এ প্রস্তাবে মুয়াবিয়া সরাসরি বলে দিল যে ,উসমানের রক্তের প্রতি সে উদাসীন থাকতে পারে না ;কাজেই তরবারিই একমাত্র মীমাধ্বংসা - এর কোন বিকল্প নেই। ফলে ৩৬ হিজরি সনের জিলহজ্জ মাসে উভয় পক্ষের যোদ্ধাগণ একে অপরের মোকাবেলা করার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে পড়লো। আমিরুল মোমেনিনের পক্ষে যারা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করেছিল তারা হলঃ হুজর ইবনে আদি আল কিন্দি ,শাবাছ ইবনে রিবি আত - তামিমী ,খালিদ ইবনে মুআম্মার ,জিয়াদ ইবনে খাসাফাহ আত - তায়মী ,সাঈদ ইবনে কায়েস আল - হামাদানী ,কায়েস ইবনে সা ’ দ আল - আনসারী ও মালিক ইবনে হারিছ আল - আশতার। অপরপক্ষে সিরিয়দের মধ্য থেকে যারা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল তারা হলো : আবদুর রহমান ইবনে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ ,আবু আল - আওয়ার আস - সুলামী ,হাবিব ইবনে মাসলামাহ আল - ফিহরি ,আবদুল্লাহ ইবনে জিলকালা ,উবায়দুল্লাহ ইবনে উমর ইবনে আল - খাত্তাব ,শুরাহবিল ইবনে সিমত আল - কিন্দি ,ও হামজাহ ইবনে মালিক আল - হামদানী। জিলহজ্জ মাসের শেষের দিকে মুহরামের জন্য যুদ্ধ বন্ধ রাখতে হলো এবং ১লা সফর পুনরায় যুদ্ধ শুরু হলো। ঢাল ,তলোয়ার ও বর্শা নিয়ে উভয় পক্ষ সারিবদ্ধভাবে একে অপরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। আমিরুল মোমেনিনের পক্ষ থেকে কুফি অশ্বারোহীগণের কমাণ্ডার হলেন মালিক আশতার ও কুফি পদাতিক বাহিনীর কমাণ্ডার হলেন আম্মার ইবনে ইয়াসির এবং বসরি অশ্বারোহীর কমাণ্ডার হলেন সহল ইবনে হুনায়েফ আল - আনসারী ও বসরি পদাতিকের কমাণ্ডার হলেন কায়েস ইবনে সাদ। আমিরুল মোমেনিনের সেনাবাহিনীর ঝাণ্ডা বহনকারী ছিল হাশিম ইবনে উতবাহ। অপরপক্ষে সিরিয়দের দক্ষিণ বাহুর কমাণ্ডার ছিলো ইবনে জিলকালা ও বাম বাহুর কমাণ্ডার ছিলো হাবিব ইবনে মাসলামাহ এবং অশ্বারোহীর কমাণ্ডার ছিলো আমর ইবনে আস ও পদাতিক বাহিনীর কমাণ্ডার হলো দাহহাক ইবনে কায়েস।

প্রথম দিন মালিক ইবনে আশতার যুদ্ধের ময়দানে তার লোকজন নিয়ে নেমেছিল এবং হাবিব ইবনে মাসলামাহ তার লোকজন নিয়ে মালিকের মোকাবেলা করলো। সারাদিন তরবারি ও বর্শার যুদ্ধ চলেছিলো।

পরদিন হাশিম ইবনে উতবাহ আলীর সৈন্য নিয়ে ময়দানে নামলো এবং আবু আল - আওয়ার তার মোকাবেলা করলো। অশ্বারোহী অশ্বারোহীর ওপর ও পদাতিক পদাতিকের ওপর ঝাপিয়ে পড়লো এবং ভয়ানক যুদ্ধে হাশিম দৃপ্তপদে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেছিলো।

তৃতীয় দিন আম্মার ইবনে ইয়াসির অশ্বারোহী ও জিয়াদ ইবনে নদীর পদাতিক বাহিনী নিয়ে ময়দানে নামলো। আমর ইবনে আস বিশাল বাহিনী নিয়ে তাদের মোকাবেলা করলো। মালিক ও জিয়াদের প্রবল আক্রমণে শক্রপক্ষ গ্রাউণ্ড হারিয়ে ফেলে এবং আক্রমণ রোধ করতে ব্যর্থ হয়ে আমার লোকজন নিয়ে ক্যাম্পে ফিরে গিয়েছিলো।

চতুর্থ দিন মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া যুদ্ধ ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছিল। উবায়দুল্লাহ ইবনে উমর তার মোকাবেলায় এসেছিল। মুহাম্মদ বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে শক্রর প্রভূত ক্ষতিসাধন করেছিল।

পঞ্চম দিনে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ময়দানে গেল এবং তার মোকাবেলা করার জন্য ওয়ালিদ ইবনে উকবা এসেছিল। কিন্তু আবদুল্লাহ বীরবিক্রমে এমন প্রচণ্ড আক্রমণ করলো যে ,শক্র ময়দান ত্যাগ করে পিছু হটে গেল।

যষ্ঠ দিনে কায়েস ইবনে সা ’ দ আল - আনসারী ময়দানে নামলো এবং তার মোকাবেলা করার জন্য ইবনে জিলকালা এসেছিল। উভয় পক্ষে এমন প্রচণ্ড লড়াই হয়েছিলো যে ,প্রতি পদক্ষেপে মৃতদেহ দেখা গিয়েছিল এবং রক্তের স্রোতধারা বয়ে গিয়েছিল। অবশেষে রাত্রি নেমে আসায় উভয় বাহিনী আলাদা হয়ে গেল।

সপ্তম দিনে মালিক আশতার ময়দানে নামলে হাবিব ইবনে মাসলামাহ তার মোকাবেলায় এসে যোহরের নামাজের পূর্বেই ময়দান ছেড়ে পিছিয়ে গেল।

অষ্টম দিনে আমিরুল মোমেনিন নিজেই ময়দানে গেলেন এবং এমন প্রচণ্ড বেগে আক্রমণ করলেন যে ,যুদ্ধক্ষেত্র প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল। বর্শা ও তীরবৃষ্টি উপেক্ষা করে বুহ্যের পর বুহ্য ভেদ করে শত্রুর উভয় লাইনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং মুয়াবিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে বললেন , অযথা লোক ক্ষয় করে লাভ কী ? তুমি আমার মোকাবেলা কর। তাতে একজন নিহত হলে অপরজন শাসক হবে। ” এসময় ইবনে আস মুয়াবিয়াকে বললো , আলী ঠিক বলেছে। একটু সাহস সঞ্চার করে তার মোকাবেলা কর। ” মুয়াবিয়া বললো , তোমার প্ররোচনায় আমি আমার প্রাণ হারাতে প্রস্তুত নই। ” এ বলে সে পিছনের দিকে চলে গেল। মুয়াবিয়াকে পিছনে হটতে দেখে আমিরুল মোমেনিন মুচকি হেসে ফিরে এলেন। যে সাহসিকতার সাথে আমিরুল মোমেনিন সিফফিনে আক্রমণ রচনা করেছিলেন তা নিঃসন্দেহে অলৌকিক। যখনই তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হতেন তখন শত্রু বুহ্য ভীত - সন্ত্রস্ত হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যেত এবং দুঃসাহসী যোদ্ধারাও তার মুখোমুখি হতো না। এ কারণেই তিনি কয়েকবার পোশাক বদল করে যুদ্ধক্ষেত্রে এসেছিলেন। একবার আরার ইবনে আদ ’ হামের মোকাবেলায় আব্বাস ইবনে রাবি ইবনে হারিছ। ইবনে আবদুল মুত্তালিব গিয়েছিল। আব্বাস অনেকক্ষণ লড়াই করেও আরারকে পরাজিত করতে পারছিলো না। হঠাৎ সে দেখতে পেল আরারের বর্মের একটা আংটা খুলে আছে। আব্বাস কাল বিলম্ব না করে তরবারি দিয়ে আরো ক ’ টি আংটা কেটে দিয়ে চোখের নিমিষে আরারের বুকে তরবারি ঢুকিয়ে দিল। আরারের পতন দেখে মুয়াবিয়া বিচলিত হয়ে গেল এবং আব্বাসকে হত্যা করতে পারে এমন কেউ আছে কিনা বলে চিৎকার করতে লাগলো। এতে লাখম গোত্রের কয়েকজন এগিয়ে এসে আব্বাসকে চ্যালেঞ্জ করলে সে বললো যে ,সে তার প্রধানের অনুমতি নিয়ে আসবে। আব্বাস আমিরুল মোমেনিনের কাছে গেলে তিনি তাকে সেখানে রেখে তার পোশাক পরে ও তার ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন। আব্বাস মনে করে লাখম গোত্রের লোকেরা বললো , তাহলে তুমি তোমার প্রধানের অনুমতি নিয়েছো। ” প্রত্যুত্তরে আমিরুল মোমেনিন নিম্নের আয়াত আবৃত্তি করলেনঃ

যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলো তাদেরকে যারা আক্রান্ত হয়েছে ; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে । আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম। (কুরআন - ২২:৩৯)

তখন লাখম গোত্রের একজন লোক হাতির মত গর্জন করতে করতে আমিরুল মোমেনিনের ওপর আঘাত হানলো। তিনি সে আঘাত প্রতিহত করে এমন জোরে আঘাত করলেন যে ,লোকটি দ্বীখণ্ডিত হয়ে ঘোড়ার দুদিকে দুখণ্ড পড়ে গেল। তারপর সে গোত্রের অন্য একজন এসেছিল। সেও চোখের নিমিষে শেষ হয়ে গেল। অসি চালনা ও আঘাতের ধরণ দেখে লোকেরা বুঝতে পারলো যে আব্বাসের ছদ্মবেশে আমিরুল মোমেনিন যুদ্ধ করছেন। তখন আর কেউ সাহস করে তার সামনে আসেনি।

নবম দিনে দক্ষিণ বাহুর দায়িত্ব দেয়া হলো আবদুল্লাহ ইবনে বুদায়লকে ও বাম বাহুর দায়িত্বে ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস এবং মধ্যভাগে আমিরুল মোমেনিন নিজে ছিলেন। অপরদিকে সিরিয় সৈন্যদের নেতৃত্বে ছিল হাবিব ইবনে মাসলামাহ। উভয় লাইন মুখোমুখী হলে সিংহের মত একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং চতুর্দিক থেকে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। আমিরুল মোমেনিনের বাহিনীর ঝাণ্ডা বনি হামদানের হাতে ঘুরছিলো। একজন শহীদ হলে আরেকজন তা তুলে ধরে। প্রথমে কুরায়ব ইবনে শুরায়রের হাতে ছিল ,তার পতনে শুরাহবিল ইবনে শুরায়রের হাতে গেল ,এরপর ইয়ারিম ইবনে শুরায়র ,এরপর সুমায়ার ইবনে শুরায়র ,এরপর হুবায়রাহ ইবনে শুরায়র ,এরপর মারসাদ ইবনে শুরায়র - এই ছয় ভ্রাতা শহীদ হবার পর ঝাণ্ডা গ্রহণ করলো সুফিয়ান ,এরপর আবদ ,এরপর কুরায়ব - জায়েদের এ তিন পুত্র। তারা শহীদ হবার পর ঝাণ্ডা ধারণ করলো বশিরের দুপুত্র - উমায়ার ও হারিছ। তারা শহীদ হবার পর ঝাণ্ডা ধারণ করলো। ওহাব ইবনে কুরায়ব। এদিনের যুদ্ধে শক্রর বেশি লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ বাহুর দিকে। সে দিকে এত তীব্র বেগে আক্রমণ করেছিলে যে ,আবদুল্লাহ ইবনে বুদায়লের সাথে মাত্র তিন শত সৈন্য ছাড়া সকলেই যুদ্ধক্ষেত্র পিছিয়ে গিয়েছিল। এ অবস্থা দেখে আমিরুল মোমেনিন মালিক আশতারকে বললেন , ওদের ফিরিয়ে আন। ওদের জীবন যদি ফুরিয়ে এসে থাকে তাহলে পালিয়ে গিয়ে মৃত্যুকে এড়ানো যাবে না। দক্ষিণ বাহুর পরাজয় বাম বাহুকেও প্রভাবিত করবে ভেবে আমিরুল মোমেনিন বাম বাহুর দিকে এগিয়ে গেলেন এবং শক্রর বু্হ্য ভেদ করতে লাগলেন। এসময় উমাইয়াদের একটা ক্রীতদাস (যার নাম আহমার) বললো , তোমাকে কতল করতে না পারলে আল্লাহ আমার মৃত্যু করুন। ” এ কথা শোনামাত্র আমিরুল মোমেনিনের ক্রীতদাস ফায়সান তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। কিন্তু আহমারের হাতে শহীদ হয়ে গেল। তারপর আমিরুল মোমেনিন আহমারকে আকর্ষণ করে শূন্যে তুলে এমন জোরে আছাড় দিলেন যে ,তার শরীরের সব ক 'টি জোড়া খুলে গিয়েছিলো। তখন ইমাম হাসান ও মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া তাকে জাহান্নামে প্রেরণ করলেন। এদিকে মালিক আশাঁতারের আহবানে দক্ষিণ বাহুর পলাতক লোকজন ফিরে এসে তীব্রভাবে আক্রমণ করে শক্রকে পূর্বস্থানে ঠেলে নিয়ে গেল - এখানে আবদুল্লাহ ইবনে বুদায়েল শত্রু কর্তৃক ঘেরাও হয়ে রয়েছিল। নিজের লোকজন দেখে আবদুল্লাহর সাহস ফিরে এলো। সে খোলা তরবারি হাতে নিয়ে মুয়াবিয়ার তাবুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। মালিক আশতার তাকে থামাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। মুয়াবিয়া আবদুল্লাহকে দেখে ভীত - সন্ত্রস্ত হয়ে গেল এবং তার রক্ষীদের বললো আবদুল্লাহকে পাথর মারতে। এতে আবদুল্লাহ শহীদ হলো। মালিক আশতার এটা দেখে বনি হামদান ও বনি মুযহিজ - এর যোদ্ধাগণকে নিয়ে মুয়াবিয়ার ওপর আক্রমণ চালাবার জন্য এগিয়ে গেল এবং মুয়াবিয়ার রক্ষীবাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করতে লাগলো। রক্ষীবাহিনীর পাঁচটি চক্রের মধ্যে মাত্র একটি ছত্রভঙ্গ হওয়ার বাকী থাকাকালে মুয়াবিয়া পালিয়ে যাবার জন্য ঘোড়ার রেকবে পা রেখেছিল ,এমন সময় কে একজন সাহস দেয়ায় সে ফিরে দাঁড়ালো। যুদ্ধ ক্ষেত্রের অপরদিকে আম্মার ইবনে ইয়াসির ও হাশিম ইবনে উতত্বার তরবারি প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। আম্মার যে দিকে যেত রাসূলের (সা.) সাহাবিগণ সে দিকে জড়ো হয়ে তাকে ঘিরে থাকতো এবং তারা এমন প্রবল আক্রমণ রচনা করতো যে ,শত্রু বুহ্যে লাশের পর লাশ পড়ে যেত। মুয়াবিয়া এ অবস্থা দেখে আম্মারের দিকে সংরক্ষিত সৈন্য থেকে বেশ কিছু প্রেরণ করলো। কিন্তু আম্মারের তরবারি ও বর্শা নৈপুণ্যের কাছে তারা টিকতে পারেনি। এক পর্যায়ে আবু আদিয়াহ আল - জুহানির বর্শার আঘাতে তিনি আহত হলেন এবং ইবনে হাওয়াইয়ার (জওন আস - সাকসিকি) তাঁকে কতল করে শহীদ করলো। আম্মারের মৃত্যুর ফলে মুয়াবিয়ার দলের অভ্যন্তরে রাসূলের (সা.) একটা বাণী নিয়ে আলোড়ন শুরু হলো। লোকেরা বলতে লাগলো যে ,তারা শুনেছে রাসূল (সা.) বলেছেন , আম্মার একটা বিদ্রোহী দলের হাতে নিহত হবে। ” জুলকালা আমরকে বললো , আমি দেখতে পাচ্ছি আম্মার আলীর দলে ;তাহলে কি আমরা বিদ্রোহী ? আমর একথার সুস্পষ্ট জবাব দিতে পারেনি। তখন মুয়াবিয়া সিরিয়দেরকে সম্বোধন করে বললো , আমরা আম্মারকে হত্যা করিনি। তাকে হত্যা করেছে আলী ,কারণ আলীই তো তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে এনেছে। ” মুয়াবিয়ার এহেন ধূর্ততাপূর্ণ কথা শুনে আমিরুল মোমেনিন বললেন , তাহলে বলতে হয়। রাসূল (সা.) হামজাকে হত্যা করেছেন ,কারণ তিনিই হামজাকে ওহুদের যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়েছেন। ” আম্মার নিহত হবার পর হাশিম ইবনে উতবাও শাহাদত বরণ করেন। হারিছ ইবনে মুনযির তাকে নিহত করে। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র আবদুল্লাহ্ বাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ করে।

এসব অকুতোভয় যোদ্ধাগণের মৃত্যুতে আমিরুল মোমেনিন দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে হামদান ও রাবিয়াহ গোত্রদ্বয়ের লোকদেরকে বললেন , আমার কাছে তোমরা বর্ম ও বর্শা সমতুল্য। উঠে দাড়াও - এসব বিদ্রোহীকে উচিত শিক্ষা দাও। ” ফলে রাবিয়াহ ও হামদান গোত্রদ্বয়ের বার হাজার সৈন্য তরবারি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে গেল । তাদের ঝাণ্ডা ছিলো হুদায়ন ইবনে মুনযিরের হাতে। তারা বিপুল বিক্রমে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলো এবং শত্রুর বুহ্য একের পর এক ভেদ করে রক্তের স্রোত বইয়ে দিল এবং লাশ স্তুপীকৃত হয়ে রইল। রাতের গাঢ় অন্ধকার না নামা পর্যন্ত তাদের তরবারি থামলো না। এটাই সেই ভয়ঙ্কর রাত্রি যা ইতিহাসে আল - হারিরের রাত্রি ” বলে খ্যাত। এ রাতে অস্ত্রের ঝনঝনানি ,ঘোড়ার খুরের শব্দ ও সিরিয়দের আর্তনাদে আকাশ প্রকম্পিত হয়েছিলো এবং তাদের আর্ত - চিৎকার ছাড়া অন্য কিছু কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি। মাঝে মাঝে আমিরুল মোমেনিনের দিক থেকে অন্যায় ও বিভ্রান্তি নিপাত যাক" - শ্লোগানে তাঁর সৈন্যগণের সাহস ও শৌর্য বৃদ্ধি করছিলো এবং শত্রুর হৃদয় শুকিয়ে দিয়েছিলো। যুদ্ধ যখন চরমে পৌছালো তখন তীরন্দাজের তীর নিঃশেষ হয়ে গেল - বর্শার বাট ভেঙ্গে গেল - হাতে হাতে তরবারি যুদ্ধ চলছিলো। সকাল বেলায় দেখা গেল ত্রিশ হাজারের উর্দ্ধে লোক নিহত হয়েছে।

দশম দিনে আমিরুল মোমেনিনের লোকেরা একই মনোবল নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে গেল। দক্ষিণ বাহুর কমাণ্ডার ছিলেন মালিক আল - আশতার এবং বাম বাহুর কমাণ্ডার ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস। তারা এমন তীব্র আক্রমণ রচনা করেছিলেন যে ,সিরিয়দের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠলো এবং তারা যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পলায়ন করতে শুরু করেছিলো। এমন সময় শত্রুপক্ষ পাঁচশত কুরআন বর্শার আগায় বেঁধে তুলে ধরলো যাতে যুদ্ধের অবস্থা বদলে গেল - তরবারি চালনা থেমে গোল - ছলনা কৃতকার্য হলো - অন্যায়ের পথ পরিষ্কার হয়ে গেল। এ যুদ্ধে সিরিয়দের পক্ষে পয়তাল্লিশ হাজার লোক নিহত হয়েছিল এবং পচিশ হাজার ইরাকি শহীদ হয়েছিলো। (মিনকারী ,তাবারী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৩২৫৬ - ৩৩৪৯) ।

খোৎবা - ১২৪

إنّا لَمْ نُحَكِّمِ الرِّجالَ، وَ إِنَّما حَكَّمْنا الْقُرْآنَ، هذَا الْقُرْآنُ إِنَّما هُوَ خَطُّ مَسْطُورٌبَيْنَ الدَّفَّتَيْنِ، لا يَنْطِقُ بِلِسانٍ، وَ لا بُدَّ لَهُ مِنْ تَرْجُمانٍ، وَ إِنَّما يَنْطِقُ عَنْهُ الرِّجَالُ، وَ لَمّا دَعانَا الْقَوْمُ إلَى أَنْ نُحَكِّمَ بَيْنَنَا الْقُرْآنَ لَمْ نَكُنِ الْفَرِيقَ الْمُتَوَلِّيَ عَنْ كِتابِ اللَّهِ سُبْحَانَهُ وَ تَعَالَى، وَ قَدْ قالَ اللَّهُسُبْحَانَهُ :( فَإنْ تَنازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ ) فَرَدُّهُ إلَى اللَّهِ أَنْ نَحْكُمَ بِكِتابِهِ، وَرَدُّهُ إلَى الرَّسُولِ أَنْ نَأْخُذَ بِسُنَّتِهِ؛ فَإذا حُكِمَ بِالصِّدْقِ فِي كِتابِ اللَّهِ فَنَحْنُ أَحَقُّ النّاسِ بِهِ، وَ إنْ حُكِمَ بِسُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم فَنَحْنُ أَحَقُّ النَّاسِ وَ أَوْلاهُمْ بِهِ. وَ أَمّا قَوْلُكُمْ: لِمَ جَعَلْتَ بَيْنَكَ وَ بَيْنَهُمْ أَجَلاً فِي التَّحْكِيمِ؟ فَإِنَّما فَعَلْتُ ذلِكَ لِيَتَبَيَّنَ الْجاهِلُ، وَ يَتَثَبَّتَ الْعالِمُ، وَ لَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ فِي هَذِهِ الْهُدْنَةِ أَمْرَ هَذِهِ الْأُمَّةِ، وَ لا تُؤْخَذَ بِأَكْظامِها، فَتَعْجَلَ عَنْ تَبَيُّنِ الْحَقِّ، وَ تَنْقادَ لِأَوَّلِ الْغَيِّ.

إنَّ أَفْضَلَ النَّاسِ عِنْدَ اللَّهِ مَنْ كانَ الْعَمَلُ بِالْحَقِّ أَحَبَّ إلَيْهِ وَ إنْ نَقَصَهُ وَ كَرَثَهُ مِنَ الْبَاطِلِ وَ إنْ جَرَّ إِلَيْهِ فَائِدَةً وَزَادَهُ، فَأَيْنَ يُتاهُ بِكُمْ، وَ مِنْ أَيْنَ أُتِيتُمْ؟ اسْتَعِدُّوا لِلْمَسِيرِ إلى قَوْمٍ حَيارى عَنِ الْحَقِّ لا يُبْصِرُونَهُ، وَ مُوزَعِينَ بِالْجَوْرِ لا يَعْدِلُونَ بِهِ، جُفاةٍ عَنِ الْكِتابِ، نُكُبٍ عَنِ الطَّرِيقِ.

ما أَنْتُمْ بِوَثِيقَةٍ يُعْلَقُ بِها، وَ لا زَوافِرِ عِزِّ يُعْتَصَمُ إِلَيْها. لَبِئْسَ حُشّاشُ نارِ الْحَرْبِ أَنْتُمْ! أُفِّ لَكُمْ! لَقَدْ لَقِيتُ مِنْكُمْ بَرْحاً، وَ يَوْماً أُنادِيكُمْ، وَ يَوْماً أُناجِيكُمْ، فَلا أَحْرارُ صِدْقٍ عِنْدَ النِّدأِ وَ لا إِخْوَانُ ثِقَةٍ عِنْدَ النَّجأِ!.

খারিজিগণ এবং সালিশী সম্পর্কে তাদের অভিমত

সালিশ হিসাবে আমরা কোন মানুষের নাম বলিনি - আমরা কুরআনের নাম বলেছিলাম। কুরআন একটি গ্রন্থ যা দুটি মলাটে ঢাকা এবং এটা কথা বলতে পারে না। সুতরাং এর একজন ব্যাখ্যাকারী অত্যাবশ্যক। মানুষই শুধু কুরআনের ব্যাখ্যাকারী হতে পারে। যখন সেসব লোক কুরআনকে সালিশ মান্য করার জন্য আমাদেরকে আহবান করেছে তখন আমরা আল্লাহর কিতাব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারিনা। কারণ আল্লাহ বলেনঃ

কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা আল্লাহ ও রাসূলের কাছে উপস্থাপন কর (কুরআন - ৪:৫৯) ।

আল্লাহর কাছে উপস্থাপনের অর্থ হলো কুরআন অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং রাসূলের কাছে উপস্থাপনের অর্থ হলো তার সুন্নাহ অনুসরণ করা। সুতরাং সালিশী যদি সত্যিকার অর্থে আল্লাহর কিতাব (কুরআন) অনুযায়ী করা হতো তাহলে খেলাফতের জন্য আমরাই সব চাইতে ন্যায়সঙ্গত হতাম ;আর যদি রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী করা হতো তাহলে সকলের চেয়ে আমরাই অধিকার প্রাপ্ত হতাম।

আমি কেন আমার ও তাদের মধ্যে সালিশ সাব্যস্ত করতে কিছু সময় অতিক্রম করেছিলাম তা তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করেছো। আমি এটা করেছিলাম এ জন্য যে ,অজ্ঞ ব্যক্তি যেন সত্য সন্ধান করতে পারে এবং যে ব্যাক্তি জানে সে যেন আরো দৃঢ়ভাবে সত্য আঁকড়ে ধরতে পারে। সম্ভবতঃ এ শান্তির ফলে আল্লাহ এসব লোকের অবস্থা উন্নত করতে পারেন এবং তারা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় ধৃত হবে না এবং পূর্বের মতো সত্যের নিদর্শনের সম্মুখে বিদ্রোহী হবে না। নিশ্চয়ই ,আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তি সব চাইতে উত্তম যে ন্যায় অনুসারে আমল করতে বেশি ভালোবাসে যদিও এটা তার দুঃখ - দুর্দশা ও শোকের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং অন্যায় তার সুযোগ - সুবিধা ও উন্নতি সাধন করলেও সে তা পরিহার করে।

সুতরাং কোথায় তোমরা বিভ্রান্ত হচ্ছো এবং কোথা থেকে তোমাদের এ অবস্থায় টেনে আনা হয়েছে ? যারা সত্য ও ন্যায় পথ থেকে সরে গেছে তাদের দিকে কুচকাওয়াজ করে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত হও এবং এটা ভেবো না যে ,যারা অন্যায় কর্মে জড়িয়ে গেছে তাদেরকে পরিশুদ্ধ করা যায় না। তারা আল্লাহর কিতাব থেকে অনেক দূরে সরে গেছে এবং সত্য পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তোমরা এমন বিশ্বাসযোগ্য নও যে ,তোমাদের ওপর নির্ভর করা যায় এবং এমন সম্মানীয় নও যে ,তোমাদেরকে মান্য করা যায়। তোমরা যুদ্ধের ইন্ধন যোগাতে ওস্তাদ। তোমাদের ওপর লানত! তোমাদের নিয়ে আমার উদ্বীগ্নতার শেষ নেই। কখনো আমি তোমাদেরকে জিহাদে আহবান করি এবং কখনো আমি তোমাদেরকে বিশ্বাস করে কথা বলি। আহ্বানের সময় তোমরা সত্যিকার অর্থে মুক্ত মানুষ নও এবং বিশ্বাস করে কথা বলার জন্য তোমরা বিশ্বস্ত ভ্রাতাও নও।

খোৎবা - ১২৫

لَمَّا عُوتِبَ عَلى التَّسوِيَةَ في الْعَطأِ

أَتَأْمُرُونِّي أَنْ أَطْلُبَ النَّصْرَ بِالْجَوْرِ فِيمَنْ وُلِّيتُ عَلَيْهِ! وَ اللَّهِ لاَ أَطُورُ بِهِ مَا سَمَرَ سَمِيرٌ، وَ أَمَّ نَجْمٌ فِي السَّمَأِ نَجْما، وَ لَوْ كَانَ الْمالُ لِي لَسَوَّيْتُ بَيْنَهُمْ، فَكَيْفَ وَ إِنَّمَا الْمَالُ مَالُ اللَّهِ! أَلا وَ إِنَّ إِعْطأَ الْمالِ فِي غَيْرِ حَقِّهِ تَبْذِيرٌ وَ إِسْرافٌ، وَ هُوَ يَرْفَعُ صاحِبَهُ فِي الدُّنْيا، وَ يَضَعُهُ فِي الْآخِرَةِ، وَ يُكْرِمُهُ فِي النّاسِ، وَ يُهِينُهُ عِنْد اللَّهِ، وَ لَمْ يَضَع امْرُؤٌ مالَهُ فِي غَيْرِ حَقِّهِ وَ لا عِنْدَ غَيْرِ أَهْلِهِ إِلا حَرَمَهُ اللَّهُ شُكْرَهُمْ، وَ كانَ لِغَيْرِهِ وُدُّهُمْ، فَإ نْ زَلَّتْ بِهِ النَّعْلُ يَوْما فَاحْتاجَ إلى مَعُونَتِهِمْ، فَشَرُّ خلیل(خَدِينٍ) وَ أَلْأَمُ خَدِینٍ

বায়তুল মালের সুষম বন্টনের জন্য যখন আমিরুল মোমেনিনের কুৎসা রটানো হলো তখন তিনি বললেনঃ

তোমরা কি মনে কর যে ,যাদের কর্তৃত্ব আমার ওপর অর্পিত হয়েছে তাদেরকে অত্যাচার করে আমি সমর্থন আদায় করবো ? আল্লাহর কসম ,যতদিন পৃথিবী টিকে থাকবে এবং আকাশের নক্ষত্র একটা অপরটাকে অনুসরণ করবে ততদিন আমি এমন কাজ করবো না। এমন কি এটা যদি আমার নিজের সম্পদও হতো। তবুও আমি তা তাদের মধ্যে সমভাবে বণ্টন করে দিতাম ! সেক্ষেত্রে আল্লাহর সম্পদ কেন সমভাবে বণ্টন করবো না ? সাবধান ,যার সম্পদ পাবার অধিকার নেই তাকে তা দেয়া অপচয়ের সামিল। এহেন কাজ করে ইহকালে বাহবা পাওয়া গেলেও পরকালে অপদস্থ ও হীন হতে হয়। এহেন কাজ মানুষের কাছে সম্মানের কারণ হলেও আল্লাহর কাছে অমর্যাদাপূর্ণ । কোন ব্যক্তি যদি তার সম্পদ এমন লোকদের দেয় যারা তা পাবার উপযুক্ত নয় বা তা পেতে যাদের কোন অধিকার নেই ,আল্লাহ তাকে তাদের কৃতজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত করেন এবং তাদের ভালোবাসাও অন্য লোকের জন্য হয়ে থাকে। তারপর যদি সে কখনো বিপদে পড়ে এবং তার সাহায্যের প্রয়োজন হয় তখন তারা মন্দতর সাথী ও জঘন্য বন্ধু হিসাবে প্রমাণিত হবে।

খোৎবা - ১২৬

قال لِلْخَوارِجِ أَيْضا

فَإنْ أَبَيْتُمْ إلا أَنْ تَزْعُمُوا أَنِّي أَخْطَأْتُ وَضَلَلْتُ فَلِمَ تُضَلِّلُونَ عَامَّةَ أُمَّةِ مُحَمَّدٍصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ، بِضَلالِي، وَ تَأْخُذُونَهُمْ بِخَطائِي، وَ تُكَفِّرُونَهُمْ بِذُنُوبِي! سُيُوفُكُمْ عَلى عَواتِقِكُمْ تَضَعُونَها مَواضِعَ الْبُرْءِ وَالسُّقْمِ، وَ تَخْلِطُونَ مَنْ أَذْنَبَ بِمَنْ لَمْ يُذْنِبْ وَ قَدْ عَلِمْتُمْ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم رَجَمَ الزّانِيَ الْمُحْصَنَ، ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهِ، ثُمَّ وَرَّثَهُ أَهْلَهُ؛ وَ قَتَلَ الْقاتِلَ وَ وَرَّثَ مِيراثَهُ أَهْلَهُ. وَ قَطَعَ السّارِقَ وَ جَلَدَ الزّانِيَ غَيْرَ الْمُحْصَنِ، ثُمَّ قَسَمَ عَلَيْهِما مِنَ الْفَيْءِ، وَ نَكَحَا الْمُسْلِماتِ. فَأَخَذَهُمْ رَسُولُ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم بِذُنُوبِهِمْ، وَ أَقامَ حَقَّ اللَّهِ فِيهِمْ، وَ لَمْ يَمْنَعْهُمْ سَهْمَهُمْ مِنَ الْإِسْلامِ، وَ لَمْ يُخْرِجْ أَسْمأَهُمْ مِنْ بَيْنِ أَهْلِهِ.ثُمَّ أَنْتُمْ شِرَارُ النَّاسِ وَ مَنْ رَمى بِهِ الشَّيْطَانُ مَرامِيَهُ، وَ ضَرَبَ بِهِ تِيهَهُ!

وَ سَيَهْلِكُ فِيَّ صِنْفَانِ: مُحِبُّ مُفْرِطٌ يَذْهَبُ بِهِ الْحُبُّ إِلى غَيْرِ الْحَقِّ، وَ مُبْغِضٌ مُفْرِطٌ يَذْهَبُ بِهِ الْبُغْضُ إِلى غَيْرِ الْحَقِّ، وَ خَيْرُ النَّاسِ فِيَّ حَالاً النَّمَطُ الْأَوْسَطُ، فَالْزَمُوهُ، وَالْزَمُوا السَّوادَ الْأَعْظَمَ، فَإِنَّ يَدَ اللَّهِ مَعَ الْجَماعَةِ، وَ إِيَّاكُمْ وَالْفُرْقَةَ، فَإِنَّ الشَّاذَّ مِنَ النَّاسِ لِلشَّيْطَانِ، كَما أَنَّ الشَّاذَّ مِنَ الْغَنَمِ لِلذِّئْبِ. أَلا مَنْ دَعا إِلى هذَا الشِّعارِ فَاقْتُلُوهُ وَ لَوْ كانَ تَحْتَ عِمامَتِي هَذِهِ.

وَ إِنَّما حُكِّمَ الْحَكَمانِ لِيُحْيِيا ما أَحْيَا الْقُرْآنُ، وَ يُمِيتا ما أَماتَ الْقُرْآنُ، وَ إِحْياؤُهُ الاجْتِماعُ عَلَيْهِ، وَ إِماتَتُهُ الافْتِرَاقُ عَنْهُ. فإِن جَرَّنَا الْقُرْآنُ إِلَيْهِمُ اتَّبَعْنَاهُمْ، وَ إِنْ جَرَّهُمْ إِلَيْنَا اتَّبَعُونا، فَلَمْ آتِ. لا أَبا لَكُمْ بُجْراً، وَ لا خَتَلْتُكُمْ عَنْ أَمْرِكُمْ، وَ لا لَبَّسْتُهُ عَلَيْكُمْ، إِنَّمَا اجْتَمَعَ رَأْيُ مَلَئِكُمْ عَلَى اخْتِيارِ رَجُلَيْنِ، أَخَذْنا عَلَيْهِما أَنْ لا يَتَعَدَّيَا الْقُرْآنَ فَتاها عَنْهُ، وَ تَرَكَا الْحَقَّ وَ هُما يُبْصِرانِهِ، وَ كانَ الْجَوْرُ هَوَاهُما فَمَضَيا عَلَيْهِ وَ قَدْ سَبَقَ اسْتِثْناؤُنا عَلَيْهِما فِي الْحُكُومَةِ بِالْعَدْلِ وَ الصَّمْدِ لِلْحَقِّ سُوءَ رَأْيِهِما، وَ جَوْرَ حُكْمِهِما.

খরিজিদের সম্পর্কে

আমি বিপথগামী হয়ে গেছি বা বিভ্রান্ত হয়ে গেছি - এসব কথা বলা যদি তোমরা বন্ধ না কর তবে কেন তোমরা মনে কর না যে ,নবী মুহাম্মদের (সা.) অনুসারীদের মধ্যে সাধারণ লোকেরা আমার মতো পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে ? আমার যেসব কাজকে তোমরা বিভ্রান্তি বল কেন তাদের সেসব কাজকে বিভ্রান্তি বল না ? আমার যেসব কাজকে পাপ বল কেন সেসব কাজের জন্য তাদেরকে অবিশ্বাসী বল না ? তোমরা তোমাদের তরবারি কাধের ওপর রেখেছে এবং ন্যায় - অন্যায় বিচার বিবেচনা ছাড়াই যথেচ্ছ তা ব্যবহার করছ। পাপী ও নিম্পাপের মধ্যে তোমরা তালগোল পাকিয়ে ফেলেছ। দেখ ,রাসূল (সা.) বিবাহিত ব্যভিচারীকে পাথর মেরে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন ,তারপর তিনি তার জানাজায় হাজির হয়েছিলেন এবং তার পরবর্তীগণকে তার উত্তরাধিকারের অনুমতি দিয়েছিলেন। তিনি খুনিকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরবর্তীগণকে তার উত্তরাধিকারের অনুমতি দিয়েছিলেন। তিনি চোরের হাত ব্যবচ্ছেদ করে দিয়েছিলেন এবং অবিবাহিত ব্যভিচারীকে বেত্রাঘাত করেছিলেন ,কিন্তু বায়তুল মাল থেকে তাদের হিস্যা প্রদান করেছিলেন ও তারা মুসলিম রমণী বিয়ে করেছিল। এভাবে রাসূল (সা.) তাদের পাপের জন্য তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিলেন ,আবার তাদের বিষয়ে আল্লাহর আদেশও মান্য করেছিলেন। না তিনি ইসলাম কর্তৃক প্রদত্ত অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করেছেন না তিনি ইসলামের অনুসারীদের তালিকা থেকে তাদের নাম কেটে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই ,তোমরা সর্বাপেক্ষা খারাপ লোক এবং তোমরা হলে সেসব লোক যাদেরকে শয়তান তার পথে রেখেছে এবং তার বেরিয়ে আসার পথবিহীন রাজ্যে নিক্ষেপ করেছে।

আমার বিষয়ে দুপ্রকার লোক ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। প্রথমতঃ যে আমাকে অত্যধিক ভালোবাসে এবং এ ভালোবাসা তাকে ন্যায়পরায়ণতা থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। দ্বিতীয়তঃ যে আমাকে অত্যধিক ঘৃণা করে এবং সে ঘৃণা তাকে ন্যায়পরায়ণতা থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। আমার বিষয়ে সে ব্যক্তি সর্বোত্তম যে মধ্যপন্থাবলম্বী। সুতরাং তার সাথে থেকো এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের সাথে থেকো কারণ আল্লাহর হাত (প্রতিরক্ষার) ঐক্য রক্ষার ওপর। বিভেদ সম্পর্কে তোমরা সাবধান থেকো কারণ দল থেকে বিচ্ছিন্ন একজন লোক সহজেই শয়তানের শিকারে পরিণত হয়। যেমন করে পাল থেকে বিচ্ছিন্ন ভেড়া নেকড়ের শিকার হয়। সাবধান ,এ পথের দিকে যে আহবান করে তাকে হত্যা কর ;যদি সে আমার পাগড়ীর নিচেও থেকে থাকে।

নিশ্চয়ই সালিসীদ্বয় নিয়োগ করা হয়েছিলো এ জন্য যে ,কুরআন যা বঁচিয়ে রাখতে বলে তা বঁচিয়ে রাখার জন্য এবং কুরআন যা ধ্বংস করতে বলে তা ধ্বংস করার জন্য। বঁচিয়ে রাখা অর্থ হলো কুরআন - সমর্থিত বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ,আর ধ্বংস মানে হলো কুরআন - অসমর্থিত বিষয়ে বিভেদ হওয়া। কুরআন যদি আমাদেরকে তাদের দিকে পরিচালিত করে তাহলে আমরা তাদেরকে অনুসরণ করবো এবং কুরআন যদি তাদেরকে আমাদের দিকে পরিচালিত করে তাহলে তারা আমাদেরকে অনুসরণ করবে। তোমাদের পিতা না থাকুক (তোমাদের ওপর লানত) ,আমি তোমাদের কোন দুর্ভাগ্য ঘটাইনি ;আমি তোমাদেরকে কোন বিষয়ে প্রতারণা করিনি ;আমি কোন বিষয়ে দ্বিধা - দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করিনি। তোমাদের নিজেদের দল সর্বসম্মতিক্রমে এ দুজন লোকের বিষয়ে সুপারিশ করেছিলো। আমরা তাদেরকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছিলাম যেন তারা কুরআনের ব্যতিক্রম না করে। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছিলো এবং ন্যায় পরিত্যাগ করেছিলো। অথচ তারা উভয়েই কুরআন সম্পর্কে অবগত। তারা তাদের প্রবৃত্তির তাড়নায় এহেন অন্যায় কাজ করেছিলো এবং তারা কুরআনের বিধান পদদলিত করেছিলো। সালিশের পূর্বে আমরা তাদেরকে শর্ত দিয়েছিলাম যে তারা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে ন্যায়বিচার করবে কিন্তু তার তা করেনি।

খোৎবা - ১২৭

الإخبار عن حوادث المستقبلیة بالبصرة

يا أَحْنَفُ، كَأَنِّي بِهِ وَ قَدْ سارَ بِالْجَيْشِ الَّذِي لا يَكُونُ لَهُ غُبارٌ وَ لا لَجَبٌ، وَ لا قَعْقَعَةُ لُجُمٍ، وَ لا حَمْحَمَةُ خَيْلٍ، يُثِيرُونَ الْأَرْضَ بِأَقْدَامِهِمْ كَأَنَّها أَقْدامُ النَّعَامِ.

قال الشريف: يُومِىُ بِذلِكَ إ لى صاحِبِ الزَّنْجِ،

ثُمَّ قَالَ عليه‌السلام : وَيْلٌ لِسِكَكِكُمُ الْعامِرَةِ، وَ الدُّورِ الْمُزَخْرَفَةِ الَّتِي لَها أَجْنِحَةٌ كَأَجْنِحَةِ النُّسُورِ، وَ خَراطِيمُ كَخَراطِيمِ الْفِيَلَةِ مِنْ أُولَئِكَ الَّذِينَ لا يُنْدَبُ قَتِيلُهُمْ، وَ لا يُفْقَدُ غَائِبُهُمْ، أَنَا كابُّ الدُّنْيا لِوَجْهِها، وَ قادِرُها بِقَدْرِها، وَ نَاظِرُها بِعَيْنِها.

كَأَنِّي أَراهُمْ قَوْماً«كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ الْمَجانُّ الْمُطَرَّقَةُ» ، يَلْبَسُونَ السَّرَقَ وَ الدِّيباجَ، وَ يَعْتَقِبُونَ الْخَيْلَ الْعِتاقَ، وَ يَكُونُ هُناكَ اسْتِحْرارُ قَتْلٍ حَتَّى يَمْشِيَ الْمَجْرُوحُ عَلَى الْمَقْتُولِ، وَ يَكُونَ الْمُفْلِتُ أَقَلَّ مِنَ الْمَأْسُورِ!

فَقالَ لَهُ بَعْضُ أَصْحَابِهِ: لَقَدْ أُعْطِيتَ يا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ عِلْمَ الْغَيْبِ! فَضَحِكَ ع، وَ قالَ لِلرَّجُلِ وَ كانَ كَلْبِيّا:

يا أَخا كَلْبٍ، لَيْسَ هُوَ بِعِلْمِ غَيْبٍ وَ إِنَّما هُوَ تَعَلُّمٌ مِنْ ذِي عِلْمٍ. وَ إِنَّما عِلْمُ الْغَيْبِ عِلْمُ السّاعَةِ، وَ ما عَدَّدَهُ اللَّهُ سُبْحانَهُ بِقَوْلِهِ: «إِنَّ اللّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السّاعَةِ، وَ يُنَزِّلُ الْغَيْثُ، وَ يَعْلَمُ ما فِى الاْرْحامِ، وَ لاتَدْرى نَفْسٌ ماذا تَكْسِبُ غَداً، وَ ما تَدْرى نَفْسٌ بِاَىِّ اَرْض تَموتُ... ». فَيَعْلَمُ الله سُبْحَانَهُ مَا فِي الْأَرْحَامِ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثى، وَ قَبِيحٍ أَوْ جَمِيلٍ، وَ سَخِيِّ أَوْ بَخِيلٍ، وَ شَقِيِّ أَوْ سَعِيدٍ، وَ مَنْ يَكُونُ فِي النّارِ حَطَبا، أَوْ فِي الْجِنانِ لِلنَّبِيِّينَ مُرافِقاً. فَهذا عِلْمُ الْغَيْبِ الَّذِي لاَ يَعْلَمُهُ أَحَدٌ إِلا اللَّهُ. وَ ما سِوى ذلِكَ فَعِلْمٌ عَلَّمَهُ اللَّهُ نَبِيَّهُ فَعَلَّمَنِيهِ، وَ دَعا لِي بِأَنْ يَعِيَهُ صَدْرِي، وَ تَضْطَمَّ عَلَيْهِ جَوانِحِي.

বসরায় সংঘটিত গুরত্বপূর্ণ ঘটনাবলী সম্পর্কে

হে আহনাফ ,আমি যেন দেখতে পাচ্ছি ,সে একদল সৈন্যসহ এগিয়ে আসছে এবং তাতে কোন ধুলি উড়ছে না ,কোন শব্দ হচ্ছে না ,লাগামের মর্মর ধ্বনি হচ্ছে না বা ঘোড়ার হ্রেষারব হচ্ছে না। তারা মাটিকে পদদলিত করছে ,পাগুলো যেন উট পাখীর পা।

শরীফ রাজী বলেনঃ আমিরুল মোমেনিন সাহিবুজ জানাজ অর্থাৎ নিগ্রো নেতার প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বললেনঃ

বসরার বসতিপূর্ণ রাস্তার লোকসকল এবং শকুনের পাখার মতো পক্ষযুক্ত ও হাতির শুড়যুক্ত সুসজ্জিত বাড়ীর লোক সকল ,তোমাদের ওপর লানত। তারা এমন লোক যাদের মধ্য থেকে কেউ নিহত হলে তার জন্য শোক করার কেউ নেই অথবা কেউ হারিয়ে গেলে তাকে খোজার কেউ নেই। আমি দুনিয়াকে তার মুখের ওপর উল্টিয়ে দিয়েছি (উপুড় করে ফেলা) ,সর্বনিম্ন মূল্যে তাকে মূল্যায়ন করি এবং এমন চোখে তার দিকে তাকাই যা তার উপযুক্ত।

আমি এমন লোককে দেখি যাদের মুখমণ্ডল বর্মের অমসৃণ চামড়ার মত । তারা সিল্ক ও পশমি পোষাক পরিধান করে এবং সুন্দর সুন্দর ঘোড়ায় চড়ে। তারা এমন হত্যাযজ্ঞ ও রক্তপাত ঘটাবে যে ,আহতরা লাশের ওপর দিয়ে হেঁটে যাবে এবং বন্দী অপেক্ষা পলাতকের সংখ্যা কম হবে।

আমিরুল মোমেনিনের একজন সাথী (বনি কালবের একজন লোক) বললো , হে আমিরুল মোমেনিন ,আপনি আমাদেরকে গুপ্ত বিষয়ের জ্ঞান দান করেছেন। ” এ কথা শুনে আমিরুল মোমেনিন হেসে উঠে বললেনঃ

হে কালবের ভ্রাতা ,এটা ইলমুল গায়েব (গুপ্ত জ্ঞান) নয় ;এসব বিষয় তার কাছ থেকে অর্জন করেছি যিনি (রাসূল) এ বিষয় জানতেন। ইলমুল গায়েব অর্থ হলো বিচার দিনের জ্ঞান এবং নিম্নের আয়াতের আওতায় যেসব বিষয় আল্লাহ গুপ্ত রেখেছেনঃ

কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছে রয়েছে ,তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা জরায়ুতে আছে । কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে । (কুরআন - ৩১:৩৪) |

সুতরাং গর্ভাশয়ে যা আছে - পুরুষ কী নারী ,সুন্দর কী কুৎসিত ,দয়ালু কী কৃপণ ,দুর্বৃত্ত কী ধার্মিক ,দোযখের জ্বালানি কী বেহেশতে রাসূলের অনুচর। এসব কিছু শুধু আল্লাহই জ্ঞাত আছেন। এটাই ইলমুল গায়েব যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। এসব ছাড়া যে জ্ঞান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে দান করেছিলেন তা তিনি আমাকে দান করেছেন এবং আমার জন্য দোয়া করে বলেছেন যে ,আমার বক্ষে যেন তা থাকে ও আমার পাজরা যেন তা ধারণ করতে পারে।

____________________

১। সাহিবুজ জানজ (নিগ্রো নেতা) বলতে যে লোকটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে সে হলো আলী ইবনে মুহাম্মদ। সে রায়ের উপকণ্ঠে ওয়ারজানিন নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলো এবং সে খারিজিদের আজারিকাহ সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল। সে নিজেকে রাসূলের বংশধর বলে দাবি করেছিলো এবং তার বংশ পরিচয় এভাবে প্রকাশ করেছিলো যে ,আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আহমদ মুখতাফি ইবনে ইসা ইবনে জায়েদ ইবনে আলী ইবনে হুসায়েন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব। কিন্তু সাজারাহ বিশেষজ্ঞগণ ও জীবনীলেখকগণ তার এ দাবি নাকচ করে দিয়েছে। তারা তার পিতার নাম মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান বলে উল্লেখ করেছে। তার পিতা ছিল আবদুল কায়েস গোত্রের এবং সে (আলী ইবনে মুহাম্মদ) একজন সিন্ধী ক্রীতদাসীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিল।

আলী ইবনে মুহাম্মদ ২৫৫ হিজরি সনে মুহতাদি বিল্লাহর রাজত্বকালে বসরা আক্রমণ করেছিলো। সে বসরার উপকণ্ঠের জনগণকে অর্থ ,সম্পদ ও মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজের দলে ভিড়িয়ে বসরা আক্রমণ করেছিলো। ২৫৫ হিজরি সনের ১৭ শাওয়াল সে বসরায় প্রবেশ করেছিলো। বসরায় যে হত্যাযজ্ঞ সে ঘটিয়েছিলো তাতে দুদিনে ত্রিশ হাজার নারী ,পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছিল। সে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছিলো ,মসজিদ জ্বলিয়ে দিয়েছিলো এবং চৌদ্দ বছর হত্যা ,লুণ্ঠন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ২৭০ হিজরি সনের সফর মাসে নিহত হলে জনগণ ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মুক্তি পায়েছিলো। সে সময় মুয়াফফাক বিল্লাহর রাজত্বকাল ছিল।

আমিরুল মোমেনিনের এ ভবিষ্যদ্বাণী অন্যান্য ভবিষ্যদ্বাণীর ন্যায় অজানা বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করেছিল। আলী ইবনে মুহাম্মদের সৈন্য বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণী একটা ঐতিহাসিক সত্য। ইতিহাসবেত্তা তাবারী লিখেছেন যে ,এ লোকটি যখন বিদ্রোহ করার উদ্দেশ্যে কারখ নামক স্থানে পৌছে তখন এ স্থানের লোকেরা তাকে অভ্যর্থনা জানায়। এক লোক তাকে একটা ঘোড়া উপহার দেয়। ঘোড়াটির লাগাম পর্যন্ত ছিল না। সেই ঘোড়ায় চড়ার জন্য সে দড়ি ব্যবহার করেছিল। একইভাবে তার দলে মাত্র তিনখানা তরবারি ছিল। একখানা আলী ইবনে আবান আল - মুহাল্লাবির ,একখানা মুহাম্মদ ইবনে সালমের এবং একখানা তার নিজের। পরবর্তীতে সে লুণ্ঠন করে অনেক অস্ত্র সংগ্রহ করে ।

২। আমিরুল মোমেনিনের এ ভবিষ্যদ্বাণী ছিল তারতারদের (মঙ্গোল) আক্রমণ সংক্রান্ত বিষয়ে। এরা তুর্কীস্থানের উত্তর - পশ্চিমে মঙ্গোলিয়ান মরুভূমির অধিবাসী। এই বর্বর জাতি লুণ্ঠন ,হত্যা ইত্যাদি দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতো। এরা নিজেদের মধ্যেও যুদ্ধ - বিগ্রহ করতো এবং প্রতিবেশী এলাকাসমূহ আক্রমণ করতো। প্রত্যেক গোত্রের আলাদা আলাদা গোত্রপতি ছিল ,যে নিজের গোত্রের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব বহন করতো। এরকম একটা গোত্রের গোত্রপতি ছিল চেঙ্গিস খান (টেমুজিন) । সে অত্যন্ত দুঃসাহসী ও দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লোক ছিল। সে তাদের বিভক্ত গোত্রসমূহকে একত্রিত করার চেষ্টা চালাতে লাগলো। বিভিন্ন গোত্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও সে তার বুদ্ধিমত্তা ও শক্তি সামর্থ্যের ফলে কৃতকার্য হয়। তার ঝাণ্ডা তুলে এক বিশাল বাহিনী জড়ো করে সে ৬০৬ হিজরি সনে ঝড়ের বেগে নগরীর পর নগরী দখল করে নিয়েছিল এবং জনগণকে ধ্বংস করে ছাড়লো। এভাবে সে উত্তর চীন পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ড জয় করে নিল।

এসব ভূখণ্ডে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবার পর সে প্রতিবেশী দেশ তুর্কীস্থানের শাসক আলাউদ্দিন খাওয়ারাজম শাহ - এর সাথে এক চুক্তি করলো যাতে উল্লেখ ছিল যে ,তারতার ব্যবসায়ীগণকে তুকীস্থানে ব্যবসায়ের অনুমতি দিতে হবে এবং তাদের জান - মালের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। কিছুদিন তারা মুক্তভাবে ব্যবসা করার পর আলাউদ্দিন তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগ এনে তাদের মালামাল বাজেয়াপ্ত করলো এবং আত্রার এলাকার প্রধান দ্বারা তাদেরকে হত্যা করায়েছিল। এতে চেঙ্গিস খান ক্রোধান্ধ হয়ে আলাউদ্দিনের কাছে বার্তা প্রেরণ করলো যেন সে তারতারদের মালামাল ফেরত পাঠিয়ে দেয় এবং আতরারের শাসককে যেন তার হাতে তুলে দেয়। আলাউদ্দিন নিজের শক্তি ও ক্ষমতার দম্ভে চেঙ্গিস খানের কথায় কর্ণপাত করেনি ,বরং অদূরদর্শীর মত কাজ করে চেঙ্গিসের দূতকে হত্যা করেছিলো। এতে চেঙ্গিস খানের চোখে রক্ত উঠে গেল। তার নেতৃত্বে তারতার বাহিনী তাদের দ্রুতগামী ও খোজা না করা ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে বুখারার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। আলাউদ্দিন চার লক্ষ সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মোকাবেলা করেও তারতারদের প্রতিহত করতে ব্যর্থ হলো। মাত্র কয়েকটি আক্রমণের পরই সে পরাজিত হয়ে সিহুন নদীর ধারে নিশাবুর এলাকায় পালিয়ে গেল। তারতারগণ বুখারাকে ধুলিসাৎ করে দিল। তারা মানুষের ঘর - বাড়ি ,স্কুল ও মসজিদ জ্বলিয়ে ভষ্ম করে ফেললো এবং নারী - পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে হত্যা করলো। পরবর্তী বছর তারা সমরকন্দ আক্রমণ করে তা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিলো। আলাউদ্দিন পালিয়ে যাবার পর তার পুত্র জালালুদ্দিন খাওয়ারাজম সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলো। তারতারগণ তাকেও তাড়না করেছিলো এবং সে দশ বছর এখানে সেখানে পালিয়ে বেড়িয়েছিলো। এ সময় তারতারগণ জনবসতিপূর্ণ স্থানসমূহ ধ্বংস করে মানবতাকে চরমভাবে লাঞ্ছিত করেছিলো। তাদের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে কোন নগরী নিস্কৃতি পায়নি এবং কোন জনপদ তাদের পদদলিন থেকে রেহাই পায়নি। এভাবে সমগ্র উত্তর এশিয়ায় তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

৬২২ হিজরি সনে চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর তার পুত্র ওগেদি খান ক্ষমতা দখল করেছিলো। সে ৬২৮ হিজরি সনে জালালুদ্দিনকে খুঁজে বের করে হত্যা করেছিলো। ওগেদি খানের পর তার ভ্রাতুষ্পপুত্র মাংকা খান সিংহাসনে বসে। মাংকা খানের পর কুবলাই খান দেশের একটা অংশের কর্তৃত্ব পায় এবং এশিয়া অংশ তার ভ্রাতা হালাকু খানের কর্তৃত্বে চলে যায়। সমগ্র রাজ্য চেঙ্গিস খানের পৌত্রদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় হালাকু খান মুসলিম অধুষিত অঞ্চল জয় করার চিন্তা করতেছিলো। এ সময় খুরাশানের হানাফি মুসলিমগণ শাফেয়ি মুসলিমদের সাথে শক্রতাবশত খুরাশান আক্রমণের জন্য হালাকু খানকে আমন্ত্রণ জানায়। এতে হালাকু খান খুরাশান আক্রমণ করে। হানফিগণ নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করে নগরীর তোরণ খুলে দিয়েছিলো। কিন্তু তারতার বাহিনী হানাফি ও শাফেয়ি নির্বিচারে হাতের কাছে যাকে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে। এভাবে নগরী বিরান করে তারা তা দখল করে নিয়েছে। হানাফি ও শাফেয়িদের এই বিভেদ তার ইরাক জয়ের পথ খুলে দিল। ফলে খুরাশান জয় করার পর তার সাহস বৃদ্ধি পেল এবং ৬৫৬ হিজরি সনে সে দুলক্ষ তারতার বাহিনী নিয়ে বাগদাদ আক্রমণ করলো। তখন খলিফা ছিল মুসতাসিম বিল্লাহ। খলিফার বাহিনী ও বাগদাদের জনগণ সম্মিলিতভাবে হালাকুর আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেনি। আশুরার দিন তারতার বাহিনী বাগদাদে প্রবেশ করেছিলো এবং চল্লিশ দিন ধরে হত্যাযজ্ঞ ও রক্তপাত চালিয়েছিলো। রাস্তায় রাস্তায় রক্তের স্রোত বয়ে গিয়েছিল এবং অলি - গলি মৃতলাশে পরিপূর্ণ ছিল। মুসতাসিম বিল্লাহকে পদদলিত করে হত্যা করা হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ লোক তাদের তরবারিতে প্রাণ হারিয়েছিল। শুধুমাত্র যারা আত্মগোপন করে তাদের দৃষ্টি এড়াতে পেরেছিল তারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। এতেই আব্বাসিয় রাজত্বের পরিসমাপ্তি ঘটলো এবং তাদের পতাকা আর কোনদিন উড়ে নাই।

খোৎবা - ১২৮

عِبادَ اللَّهِ، إِنَّكُمْ -وَ ما تَأْمُلُونَ مِنْ هَذِهِ الدُّنْيا - أَثْوِيأُ مُؤَجَّلُونَ، وَ مَدِينُونَ مُقْتَضَوْنَ، أَجَلٌ مَنْقُوصٌ: وَ عَمَلٌ مَحْفُوظٌ، فَرُبَّ دَائِبٍ مُضَيَّعٌ، وَرُبَّ كادِحٍ خَاسِرٌ. وَ قَدْ أَصْبَحْتُمْ فِي زَمَنٍ لا يَزْدادُ الْخَيْرُ فِيهِ إِلا إِدْباراً، وَلاالشَّرُّ فِيهِ إِلا إِقْبالاً، وَلاالشَّيْطَانُ فِي هَلاكِ النَّاسِ إلا طَمَعا؛ فَهذا أَوانٌ قَوِيَتْ عُدَّتُهُ، وَ عَمَّتْ مَكِيدَتُهُ، وَ أَمْكَنَتْ فَرِيسَتُهُ. اضْرِبْ بِطَرْفِكَ حَيْثُ شِئْتَ مِنَ النَّاسِ، فَهَلْ تُبْصِرُ إِلاّ فَقِيراً يُكابِدُ فَقْراً، أَوْ غَنِيّا بَدَّلَ نِعْمَةَ اللَّهِ كُفْراً، أَوْ بَخِيلاً اتَّخَذَ الْبُخْلَ بِحَقِّ اللَّهِ وَفْرا، أَوْ مُتَمَرِّداً كَأَنَّ بِأُذُنِهِ عَنْ سَمْعِ الْمَواعِظِ وَقْرا!

أَيْنَ خِيارُكُمْ وَ صُلَحاؤُكُمْ! وَ أَيْنَ أَحْرارُكُمْ وَ سُمَحاؤُكُمْ! وَ أَيْنَ الْمُتَوَرِّعُونَ في مَكاسِبِهِمْ، وَالْمُتَنَزِّهُونَ فِي مَذاهِبِهِمْ! أَلَيْسَ قَدْ ظَعَنُوا جَمِيعا عَنْ هَذِهِ الدُّنْيَا الدَّنِيَّةِ، وَالْعاجِلَةِ الْمُنَغِّصَةِ! وَ هَلْ خُلِقْتُمْ إِلاّ فِي حُثالَةٍ لا تَلْتَقِي إلا بِذَمِّهِمُ الشَّفَتانِ اسْتِصْغارا لِقَدْرِهِمْ، وَ ذَهابا عَنْ ذِكْرِهِمْ!

فَإِنّا لِلّهِ وَ إِنّا إِلَيْهِ راجِعُونَ

ظَهَرَ الْفَسادُ، فَلا مُنْكِرٌ مُغَيِّرٌ، وَ لا زاجِرٌ مُزْدَجِرٌ. أَفَبِهذا تُرِيدُونَ أَنْ تُجاوِرُوا اللَّهَ فِي دارِ قُدْسِهِ، وَ تَكُونُوا أَعَزَّ أَوْلِيائِهِ عِنْدَهُ؟ هَيْهاتَ! لا يُخْدَعُ اللَّهُ عَنْ جَنَّتِهِ، وَ لا تُنالُ مَرْضاتُهُ إِلا بِطاعَتِهِ. لَعَنَ اللَّهُ الْآمِرِينَ بِالْمَعْرُوفِ التّارِكِينَ لَهُ، وَالنّاهِينَ عَنِ الْمُنْكَرِ الْعامِلِينَ بِهِ.

দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ীত্ব ও এর মানুষের অবস্থা সম্পর্কে

হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা এবং এ দুনিয়া থেকে তোমরা যা কিছু কামনা কর তা সবই নির্ধারিত সময়ের অতিথি মাত্র এবং ঋণদাতার মতো যে শুধু ঋণ পরিশোধের জন্য আহবান করে। তোমাদের জীবনকাল ক্রমশ কমে আসছে আর তোমাদের আমলের রেকর্ড যথাযথভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে। অনেক উদ্যমী লোক সময়ের অপচয় করছে এবং যারা সচেষ্ট তাদের অনেকেই ক্ষতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। তোমরা এমন এক সময় আছো যখন সৎগুণাবলী ও ধার্মিকতার অবক্ষয় হচ্ছে ,পাপ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং মানুষের ধ্বংসের জন্য শয়তান অত্যাগ্রহী হয়ে পড়ছে। বর্তমান সময়ে শয়তানের সরঞ্জাম শক্তিশালী ,তার ফাঁদ সুবিস্তৃত এবং তার শিকার ধরা সহজসাধ্য হয়ে পড়েছে। যেদিকে ইচ্ছা মানুষের দিকে তাকাও ,দেখতে পাবে হয় দারিদ্র - নিষ্পেষিত দরিদ্র লোক ,না হয় ধনীলোক যারা আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করা সত্ত্বেও তাকে উপেক্ষা করছে ,না হয় কৃপণ লোক ,যে আল্লাহর প্রতি দায়িত্ব পদদলিত করে সম্পদ বৃদ্ধি করছে ,না হয় অবাধ্য লোক ,যে সকল প্রকার উপদেশ থেকে কানকে রুদ্ধ রাখছে।

কোথায় তোমাদের কল্যাণকামী লোকসকল ;কোথায় তোমাদের ন্যায়বানগণ ? কোথায় তোমাদের আদর্শবাদী ও দয়াদ্রাচিত্ত লোকসকল ? কোথায় তোমাদের সেসব লোক যারা ব্যবসায়ে প্রতারণা করে না এবং তাদের আচরণে তারা পরিশুদ্ধ। তারা সবাই কি এ অমর্যাদাকর ,ক্ষণস্থায়ী ও বিপদজনক দুনিয়া থেকে প্রস্থান করেনি ? তোমাদেরকে কি সেসব লোকের মধ্যে রেখে যায়নি যারা নিচ - নোংরা - যারা এত নিচ যে ,তাদের কথা মুখে আনা যায় না - যাদের নিচতার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে ঠোঁট নড়ে না। আমরাতো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবেই তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী (কুরআন - ২:১৫৬)

ফেতনা ছড়িয়ে পড়েছে এর বিরোধিতা বা গতিরোধ করার মত কাউকে দেখছিনা এর প্রতি বিরাগ সৃষ্টিকারী বা বিরতকারী কাউকে তো দেখছিনা । এসব গুণাবলী নিয়েই কি তোমরা আল্লাহর পবিত্র সান্নিধ্য কামনা কর ও তার একনিষ্ঠ প্রেমিক হতে চাও ? আফসোস! আল্লাহকে তার বেহেশতে সম্পর্কে ছলান করা যায়না এবং তার আনুগত্য ব্যতিরেকে তার রহমত লাভ করা যায় না। তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ যারা অন্যকে ভাল উপদেশ দেয় কিন্তু নিজে তা করে না এবং যারা অন্যকে বাধা দেয় কিন্তু নিজে পাপে লিপ্ত।