খোৎবা -
১৫৮
وَ لَقَدْ أَحْسَنْتُ جِوَارَكُمْ، وَ أَحَطْتُ بِجُهْدِي مِنْ وَرَائِكُمْ. وَ أَعْتَقْتُكُمْ مِنْ رِبَقِ الذُّلِّ، وَ حَلَقِ الضَّيْمِ، شُكْراً مِنِّي لِلْبِرِّ الْقَلِيلِ وَ إِطْرَاقاً عَمَّا أَدْرَكَهُ الْبَصَرُ، وَ شَهِدَهُ الْبَدَنُ، مِنَ الْمُنْكَرِ الْكَثِيرِ.
মানুষের সাথে সদাচরণ সম্পর্কে
মানুষের সঙ্গে সদাচরণ প্রসংগে আমি তোমাদের উত্তম প্রতিবেশী ছিলাম এবং তোমাদেরকে দেখাশোনা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম। আমি তোমাদেরকে হীনাবস্থার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করেছিলাম। তোমাদের সামান্য ভালো কাজের জন্য আমি আমার কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে জুলুমের বেড়ি থেকে তোমাদেরকে মুক্ত করেছিলাম। তোমাদের অনেক খারাপ কাজ দেখেও আমি আমার চক্ষু বন্ধ করে রেখেছিলাম যার সাক্ষ্য আমার চোখ ও দেহ বহন করে ।
খোৎবা -
১৫৯
معرفة الله
أَمْرُهُ قَضَأٌ وَ حِكْمَةٌ وَ رِضَاهُ أَمَانٌ وَ رَحْمَةُ، يَقْضِي بِعِلْمٍ وَ يَعْفُو بِحِلْمٍ. اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ عَلَى مَا تَأْخُذُ وَ تُعْطِي وَ عَلَى مَا تُعَافِي وَ تَبْتَلِي؛ حَمْداً يَكُونُ أَرْضَى الْحَمْدِ لَكَ، وَ أَحَبَّ الْحَمْدِ إِلَيْكَ، وَ أَفْضَلَ الْحَمْدِ عِنْدَكَ. حَمْداً يَمْلاُ مَا خَلَقْتَ وَ يَبْلُغُ مَا أَرَدْتَ. حَمْداً لاَ يُحْجَبُ عَنْكَ، وَ لاَ يُقْصَرُ دُونَكَ حَمْداً لاَ يَنْقَطِعُ عَدَدُهُ وَ لاَ يَفْنَى مَدَدُهُ.
فَلَسْنَا نَعْلَمُ كُنْهَ عَظَمَتِكَ إِلا أَنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ«حَيُّ قَيُّومُ لاَ تَأْخُذُكَ سِنَةٌ وَ لاَ نَوْمٌ»
لَمْ يَنْتَهِ إِلَيْكَ نَظَرٌ وَ لَمْ يُدْرِكْكَ بَصَرٌ. أَدْرَكْتَ الْأَبْصَارَ وَ أَحْصَيْتَ الْأَعْمَالَ وَ أَخَذْتَ«بِالنَّوَاصِي وَ الْأَقْدَامِ»
. وَ مَا الَّذِي نَرَى مِنْ خَلْقِكَ، وَ نَعْجَبُ لَهُ مِنْ قُدْرَتِكَ، وَ نَصِفُهُ مِنْ عَظِيمِ سُلْطَانِكَ(شأنک)
، وَ مَا تَغَيَّبَ عَنَّا مِنْهُ، وَ قَصُرَتْ أَبْصَارُنَا عَنْهُ، وَ انْتَهَتْ عُقُولُنَا دُونَهُ، وَ حَالَتْ سُتُورُ الْغُيُوبِ بَيْنَنَا وَ بَيْنَهُ أَعْظَمُ.
طرق معرفة الله
فَمَنْ فَرَّغَ قَلْبَهُ وَ أَعْمَلَ فِكْرَهُ لِيَعْلَمَ كَيْفَ أَقَمْتَ عَرْشَكَ وَ كَيْفَ ذَرَأْتَ خَلْقَكَ وَ كَيْفَ عَلَّقْتَ فِي الْهَوَأِ سَمَاوَاتِكَ، وَ كَيْفَ مَدَدْتَ عَلَى مَوْرِ الْمَأِ أَرْضَكَ، رَجَعَ طَرْفُهُ حَسِيراً، وَ عَقْلُهُ مَبْهُوراً، وَ سَمْعُهُ وَ الِهاً، وَ فِكْرُهُ حَائِراً.
الرّجاء و الأمل
مِنْهَا:
يَدَّعِي بِزَعْمِهِ أَنَّهُ يَرْجُو اللَّهَ، كَذَبَ وَ الْعَظِيمِ! مَا بَالُهُ لاَ يَتَبَيَّنُ رَجَاؤُهُ فِي عَمَلِهِ؟ فَكُلُّ مَنْ رَجَا عُرِفَ رَجَاؤُهُ فِي عَمَلِهِ. وَ كُلُّ رَجَأٍ -إِلا رَجَأَ اللَّهِ
تَعَالَى
- فَإِنَّهُ مَدْخُولٌ وَ كُلُّ خَوْفٍ مُحَقَّقٌ، إِلا خَوْفَ اللَّهِ فَإِنَّهُ مَعْلُولٌ. يَرْجُو اللَّهَ فِي الْكَبِيرِ، وَ يَرْجُو الْعِبَادَ فِي الصَّغِيرِ، فَيُعْطِي الْعَبْدَ مَا لاَ يُعْطِي الرَّبَّ! فَمَا بَالُ اللَّهِ جَلَّ ثَنَاؤُهُ يُقَصَّرُ بِهِ عَمَّا يُصْنَعُ بِهِ لِعِبَادِهِ؟ أَتَخَافُ أَنْ تَكُونَ فِي رَجَائِكَ لَهُ كَاذِباً؟ أَوْ تَكُونَ لاَ تَرَاهُ لِلرَّجَأِ مَوْضِعاً؟ وَ كَذَلِكَ إِنْ هُوَ خَافَ عَبْداً مِنْ عَبِيدِهِ، أَعْطَاهُ مِنْ خَوْفِهِ مَا لاَ يُعْطِي رَبَّهُ، فَجَعَلَ خَوْفَهُ مِنَ الْعِبَادِ نَقْداً، وَ خَوْفَهُ مِنْ خَالِقِهِ ضِمَاراً وَ وَعْداً. وَ كَذَلِكَ مَنْ عَظُمَتِ الدُّنْيَا فِي عَيْنِهِ وَ كَبُرَ مَوْقِعُهَا مِنْ قَلْبِهِ، آثَرَهَا عَلَى اللَّهِتَعَالَى
، فَانْقَطَعَ إِلَيْهَا، وَ صَارَ عَبْدا لَهَا.
سیرة النبیصلىاللهعليهوآلهوسلم
و الانبیاء الالهیّین
وَ لَقَدْ كَانَ فِي رَسُولِ اللَّهِصلىاللهعليهوآلهوسلم
كَافٍ لَكَ فِي الْأُسْوَةِ، وَ دَلِيلٌ لَكَ عَلَى ذَمِّ الدُّنْيَا وَ عَيْبِهَا، وَ كَثْرَةِ مَخَازِيهَا وَ مَسَاوِيهَا، إِذْ قُبِضَتْ عَنْهُ أَطْرَافُهَا، وَ وُطِّئَتْ لِغَيْرِهِ أَكْنَافُهَا، وَ فُطِمَ عَنْ رَضَاعِهَا، وَ زُوِيَ عَنْ زَخَارِفِهَا. وَ إِنْ شِئْتَ ثَنَّيْتُ بِمُوسَى كَلِيمِ اللَّهِعليهالسلام
حَيْثُ اِذْ يَقُولُ:(
رَبِّ إِنِّي لِم ا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
)
. وَ اللَّهِ مَا سَأَلَهُ إِلا خُبْزا يَأْكُلُهُ، لِأَنَّهُ كَانَ يَأْكُلُ بَقْلَةَ الْأَرْضِ، وَ لَقَدْ كَانَتْ خُضْرَةُ الْبَقْلِ تُرَى مِنْ شَفِيفِ صِفَاقِ بَطْنِهِ، لِهُزَالِهِ وَ تَشَذُّبِ لَحْمِهِ. وَ إِنْ شِئْتَ ثَلَّثْتُ بِدَاوُدَعليهالسلام
صَاحِبِ الْمَزَامِيرِ وَ قَارِئِ أَهْلِ الْجَنَّةِ، فَلَقَدْ كَانَ يَعْمَلُ سَفَائِفَ الْخُوصِ بِيَدِهِ وَ يَقُولُ لِجُلَسَائِهِ: أَيُّكُمْ يَكْفِينِي بَيْعَهَا! وَ يَأْكُلُ قُرْصَ الشَّعِيرِ مِنْ ثَمَنِهَا. وَ إِنْ شِئْتَ قُلْتُ فِي عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَعليهالسلام
فَلَقَدْ كَانَ يَتَوَسَّدُ الْحَجَرَ، وَ يَلْبَسُ الْخَشِنَ، وَ يَأْكُلُ الْجَشِبَ، وَ كَانَ إِدَامُهُ الْجُوعَ، وَ سِرَاجُهُ بِاللَّيْلِ الْقَمَرَ، وَ ظِلاَلُهُ فِي الشِّتَأِ مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَ مَغَارِبَهَا، وَ فَاكِهَتُهُ وَ رَيْحَانُهُ مَا تُنْبِتُ الْأَرْضُ لِلْبَهَائِمِ؛ وَ لَمْ تَكُنْ لَهُ زَوْجَةٌ تَفْتِنُهُ، وَ لاَ وَلَدٌ يَحْزُنُهُ (یخزنه)، وَ لاَ مَالٌ يَلْفِتُهُ وَ لاَ طَمَعٌ يُذِلُّهُ، دَابَّتُهُ رِجْلاَهُ، وَ خَادِمُهُ يَدَاهُ!
محطات فی حیاة النبیصلىاللهعليهوآلهوسلم
فَتَأَسَّ بِنَبِيِّكَ الْأَطْيَبِ الْأَطْهَرِصلىاللهعليهوآلهوسلم
فَإِنَّ فِيهِ أُسْوَةً لِمَنْ تَأَسَّى، وَ عَزَأً لِمَنْ تَعَزَّى. وَ أَحَبُّ الْعِبَادِ إِلَى اللَّهِ الْمُتَأَسِّي بِنَبِيِّهِ، وَ الْمُقْتَصُّ لِأَثَرِهِ. قَضَمَ الدُّنْيَا قَضْماً، وَ لَمْ يُعِرْهَا طَرْفاً أَهْضَمُ أَهْلِ الدُّنْيَا كَشْحاً، وَ أَخْمَصُهُمْ مِنَ الدُّنْيَا بَطْناً، عُرِضَتْ عَلَيْهِ الدُّنْيَا فَأَبَى أَنْ يَقْبَلَهَا، وَ عَلِمَ أَنَّ اللَّهَسُبْحَانَهُ
أَبْغَضَ شَيْئا فَأَبْغَضَهُ، وَ حَقَّرَ شَيْئا فَحَقَّرَهُ، وَ صَغَّرَ شَيْئا فَصَغَّرَهُ. وَ لَوْ لَمْ يَكُنْ فِينَا إِلا حُبُّنَا مَا أَبْغَضَ اللَّهُ وَ رَسُولُهُ، وَ تَعْظِيمُنَا مَا صَغَّرَ اللَّهُ وَ رَسُولُهُ، لَكَفَى بِهِ شِقَاقاً لِلَّهِ، وَ مُحَادَّةً عَنْ أَمْرِ اللَّهِ. وَ لَقَدْ كَانَصلىاللهعليهوآلهوسلم
يَأْكُلُ عَلَى الْأَرْضِ، وَ يَجْلِسُ جِلْسَةَ الْعَبْدِ، وَ يَخْصِفُ بِيَدِهِ نَعْلَهُ، وَ يَرْقَعُ بِيَدِهِ ثَوْبَهُ، وَ يَرْكَبُ الْحِمَارَ الْعَارِيَ، وَ يُرْدِفُ خَلْفَهُ، وَ يَكُونُ السِّتْرُ عَلَى بَابِ بَيْتِهِ فَتَكُونُ فِيهِ التَّصَاوِيرُ، فَيَقُولُ:«يَا فُلاَنَةُ - لِإِحْدَى أَزْوَاجِهِ - غَيِّبِيهِ عَنِّي، فَإِنِّي إِذَا نَظَرْتُ إِلَيْهِ ذَكَرْتُ الدُّنْيَا وَ زَخَارِفَهَا»
.
فَأَعْرَضَ عَنِ الدُّنْيَا بِقَلْبِهِ، وَ أَمَاتَ ذِكْرَهَا مِنْ نَفْسِهِ، وَ أَحَبَّ أَنْ تَغِيبَ زِينَتُهَا عَنْ عَيْنِهِ، لِكَيْلاَ يَتَّخِذَ مِنْهَا رِيَاشاً وَ لاَ يَعْتَقِدَهَا قَرَاراً، وَ لاَ يَرْجُوَ فِيهَا مُقَاماً، فَأَخْرَجَهَا مِنَ النَّفْسِ، وَ أَشْخَصَهَا عَنِ الْقَلْبِ، وَ غَيَّبَهَا عَنِ الْبَصَرِ. وَ كَذَلِكَ مَنْ أَبْغَضَ شَيْئاً أَبْغَضَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَيْهِ وَ أَنْ يُذْكَرَ عِنْدَهُ. وَ لَقَدْ كَانَ فِي رَسُولِ اللَّهِصلىاللهعليهوآلهوسلم
مَا يَدُلُّكُ عَلَى مَسَاوِئِ الدُّنْيَا وَ عُيُوبِهَا: إِذْ جَاعَ فِيهَا مَعَ خَاصَّتِهِ وَ زُوِيَتْ عَنْهُ زَخَارِفُهَا مَعَ عَظِيمِ زُلْفَتِهِ. فَلْيَنْظُرْ نَاظِرٌ بِعَقْلِهِ: أَكْرَمَ اللَّهُ مُحَمَّدا بِذَلِكَ أَمْ أَهَانَهُ؟ فَإِنْ قَالَ: أَهَانَهُ، فَقَدْ كَذَبَ وَ اللَّهِ الْعَظِيمِ، وَ أَتِى بِالْإِفْكِ الْعَظِيمِ وَ إِنْ قَالَ: أَكْرَمَهُ فَلْيَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ قَدْ أَهَانَ غَيْرَهُ حَيْثُ بَسَطَ الدُّنْيَا لَهُ وَ زَوَاهَا عَنْ أَقْرَبِ النَّاسِ مِنْهُ. فَتَأَسَّى مُتَأَسِّ بِنَبِيِّهِ وَ اقْتَصَّ أَثَرَهُ، وَ وَلَجَ مَوْلِجَهُ، وَ إِلا فَلاَ يَأْمَنِ الْهَلَكَةَ، فَإِنَّ اللَّهَ جَعَلَ مُحَمَّداًصلىاللهعليهوآلهوسلم
عَلَماً لِلسَّاعَةِ، وَ مُبَشِّراً بِالْجَنَّةِ وَ مُنْذِراً بِالْعُقُوبَةِ. خَرَجَ مِنَ الدُّنْيَا خَمِيصاً، وَ وَرَدَ الْآخِرَةَ سَلِيماً. لَمْ يَضَعْ حَجَراً عَلَى حَجَرٍ، حَتَّى مَضَى لِسَبِيلِهِ، وَ أَجَابَ دَاعِيَ رَبِّهِ. فَمَا أَعْظَمَ مِنَّةَ اللَّهِ عِنْدَنَا حِينَ أَنْعَمَ عَلَيْنَا بِهِ سَلَفا نَتَّبِعُهُ وَ قَائِداً نَطَأُ عَقِبَهُ! وَ اللَّهِ لَقَدْ رَقَّعْتُ مِدْرَعَتِي هَذِهِ حَتَّى اسْتَحْيَيْتُ مِنْ رَاقِعِهَا. وَ لَقَدْ قَالَ لِي قَائِلٌ:أَلاَ تَنْبِذُهَا عَنْكَ
؟ فَقُلْتُ: اغْرُبْ عَنِّي، فَعِنْدَ الصَّبَاحِ يَحْمَدُ الْقَوْمُ السُّرَى !.
আল্লাহর প্রশংসা এবং তার নবী রাসূলদের সিরাত চরিত
আল্লাহর প্রশংসা সম্পর্কে
আল্লাহর রায় সুবিবেচনাপূর্ণ এবং প্রজ্ঞাময়। তাঁর সন্তুষ্টি মানেই সুরক্ষা ও করুণা। তিনি অসীম জ্ঞানের সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সহনশীলতার সাথে ক্ষমা করেন।
হে আল্লাহ ,তুমি যা নিয়ে যাও এবং যা দিয়ে দাও তার জন্য আমরা তোমার প্রশংসা করি। যা দিয়ে তুমি রোগমুক্ত কর এবং যা দিয়ে তুমি রোগাক্রান্ত কর তার জন্য আমরা তোমার প্রশংসা করি। যে প্রশংসা তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণীয় ,যে প্রশংসা তুমি সবচাইতে বেশি পছন্দ কর এবং যে প্রশংসা তোমার কাছে সবচাইতে মর্যাদাশীল আমরা তোমার সেই প্রশংসা করি। আমরা তোমার সেই প্রশংসা করি যা তোমার সৃষ্টিকে আপ্লুত করে এবং তুমি যেখানে ইচ্ছা কর সেখানে পৌছে। আমরা তোমার সেই প্রশংসা করি যা তোমার কাছে গুপ্ত নয় ,যার কোন শেষ নেই এবং যার অবিরাম চলমানতা কখনো স্থগিত হবে না।
আমরা তোমার প্রকৃত মহত্ত্ব সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। আমরা শুধু জানি তুমি চিরঞ্জীব ও স্বয়ম্ভর এবং সবকিছু তোমার ওপর নির্ভরশীল। তন্দ্রা বা নিদ্রা তোমাকে স্পর্শ করে না ,দৃষ্টি তোমার কাছে পৌছে না এবং দৃষ্টিশক্তি তোমাকে আঁকড়ে ধরতে পারে না। তুমি মানুষের চক্ষু দেখ এবং কাল গণনা কর। কপাল ও পা দ্বারা তুমি মানুষকে তোমার গোলাম কর। আমরা তোমার সৃষ্টিকে দেখি এবং তাতে তোমার কুদরত দেখে বিস্মিত হই। তোমার কর্তৃত্ব প্রকাশের জন্য আমরা সৃষ্টির বর্ণনা করি। কিন্তু যা আমাদের কাছে গুপ্ত ,যা আমাদের দৃষ্টি দেখতে পায় না ,যা আমাদের বুদ্ধিমত্তা আয়ত্ব করতে পারে না এবং যে সব বিষয় ও আমাদের মধ্যে কুদরতের পদ ফেলে রাখা হয়েছে সে সব বিষয় আরো অনেক মহান ।
আল্লাহকে চেনার উপায়
পৃথিবীর সব কিছু থেকে হৃদয়কে মুক্ত করে যদি কেউ তার সমগ্র চিন্তাশক্তি নিয়োগ করে এসব বিষয় জানতে চায় যে ,কিভাবে তুমি আরাশে অধিষ্ঠিত ,কিভাবে তুমি বস্তুনিচয় সৃষ্টি করেছো ,কিভাবে তুমি আকাশে বাতাস প্রবাহিত করেছো এবং কিভাবে তুমি জল - তরঙ্গের ওপর পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছো ,তবে তার চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়বে ,তার বুদ্ধিবৃত্তি ও জ্ঞান রুদ্ধ হয়ে যাবে ,তার কান বন্ধ হয়ে যাবে এবং তার চিন্তাশক্তি স্থবির হয়ে যাবে।
আল্লাহতে ভয় ও আশা সম্পর্কে
যে তার চিন্তাশক্তি অনুযায়ী দাবি করে যে ,সে আল্লাহর কাছ থেকে অনেক আশা করে ;মহান আল্লাহর কসম ,সে মিথ্যা কথা বলে। অবস্থা এমন যে ,সে আমলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে আশা করে না। অথচ সে জানে যারা আল্লাহর আশা করে তারা শুধু আমলের মাধ্যমেই তা করে থাকে। মহিমান্বিত আল্লাহকে পাবার আশা ছাড়া অন্য সকল আশা অপবিত্র এবং আল্লাহর ভয় ছাড়া অন্য ভয় প্রকৃত ভয় নয়। সে আল্লাহর কাছে বড় জিনিস ও মানুষের কাছে ক্ষুদ্র জিনিস আশা করে। কিন্তু এ ব্যাপারে সে মানুষকে যেভাবে গুরুত্ব দেয়। আল্লাহকে সেভাবে গুরুত্ব দেয় না। মহামহিম আল্লাহর প্রশংসা করতে বাধা কোথায় ? তিনি তাঁর বান্দাকে যা দিয়েছেন সে তুলনায় তাঁকে কমই দেয়া হচ্ছে। তোমাদের কি ভয় হয় না যে ,তোমরা আল্লাহর কাছে ভুয়া আশা কর ? অথবা তোমরা কি তাকে তোমাদের আশার কেন্দ্রবিন্দু মনে কর না ? একইভাবে ,কোন মানুষ যদি অন্য লোককে ভয় করে তবে সেই ভয়ের কারণে সে তাকে যতটুকু গুরুত্ব দেয় আল্লাহর ভয়ের কারণে আল্লাহকে ততটুকু গুরুত্ব দেয় না। এভাবে সে মানুষের প্রতি ভয়কে নগদ এবং স্রষ্টার প্রতি ভয়কে বাকি অথবা প্রতিশ্রুতিতে পরিণত করেছে। যাদের দৃষ্টিতে দুনিয়া বড় ও গুরুত্বপূর্ণ এবং যাদের হৃদয়ে দুনিয়ার মর্যাদা বেশি তাদের প্রত্যেকের বেলায় এ অবস্থা বিদ্যমান। সে আল্লাহ অপেক্ষা দুনিয়াকে অধিক পছন্দ করে ;সুতরাং সে দুনিয়ার দিকে ঝুকে পড়ে এবং দুনিয়ার শিষ্য হয়ে পড়ে।
আল্লাহর নবীদের সিরাত
নিশ্চয়ই ,আল্লাহর রাসূলের (সা.) মাঝে দুনিয়ার কুফল ,দোষত্রুটি ,অগণিত অমর্যাদাকর অবস্থা এবং এর পাপ সম্বন্ধে অনেক উদাহরণ ,উপমা ও প্রমাণ রয়েছে। কারণ ,দুনিয়ার পার্শ্বদেশ তাঁর জন্য সঙ্কুচিত করা হয়েছে। অথচ এর বাহু অন্যদের জন্য বিস্তৃত করা হয়েছে। তিনি দুনিয়ার দুগ্ধ থেকে বঞ্চিত ছিলেন এবং এর সাজ - সজ্জা ও চাকচিক্য থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলেন।
যদি তোমরা চাও তবে আমি দ্বিতীয় উদাহরণ হিসাবে মুসার কথা বলবো। আল্লাহর সাথে কথোপকথনকারী মুসা (আ.) বলেছিলেন ,“
হে আল্লাহ ,যা কিছু মঙ্গল তুমি আমার জন্য মঞ্জুর কর ওটাই আমার প্রয়োজন ” (কুরআন - ২৮ : ২৪) ।
আল্লাহর কসম ,তিনি খাবার জন্য শুধু রুটি চেয়েছিলেন। কারণ ,তিনি লতাপাতা খেয়ে থাকতেন এবং তাঁর পেটের কোমল চামড়ায় সবুজাভ রং দেখা যেত। কারণ তিনি অত্যন্ত কৃশ ছিলেন এবং তাঁর শরীর মাংশল ছিল না ।
যদি তোমরা জানতে চাও তবে আমি দাউদের (আ.) তৃতীয় উপমা উপস্থাপন করতে পারি। তিনি বেহেশতে আল্লাহর গুণকীর্তন আবৃত্তিকারী। তিনি খেজুর গাছের পাতার ঝুড়ি নিজ হাতে তৈরী করতেন এবং তার অনুচরদেরকে বলতেন ,“
তোমাদের মধ্যে কে আছে যে এই ঝুড়ি ক্রয় করে আমাকে সাহায্য করতে পারে ?”
ঝুড়ি বিক্রি লব্ধ অর্থ দিয়ে তিনি বার্লির রুটি ক্রয় করতেন।
যদি তোমরা চাও তবে আমি মরিয়ম তনয় ঈসা (আ.) সম্বন্ধে বলবো। তিনি একখণ্ড পাথরকে বালিশ হিসাবে ব্যবহার করতেন ,মোটা কাপড় পরিধান করতেন এবং অতি সাধারণ খাবার খেতেন। ক্ষুধা ছিল তাঁর নিত্য সাথী। চন্দ্র ছিল তাঁর রাতের বাতি। শীতকালে তাঁর আশ্রয়স্থল ছিল পূর্ব ও পশ্চিম দিকে পৃথিবীর বিস্তৃতি (অর্থাৎ খোলা আকাশ) । তাঁর ফল ও ফুল ছিল তা যা পশুর জন্য মাটিতে জন্মে। তার কোন স্ত্রী ছিল না যে তাকে প্রলুব্ধ করবে ,তার কোন পুত্র ছিল না। যার জন্য তিনি শোকাহত হবেন ,তাঁর কোন সম্পদ ছিল না যা তাঁর দৃষ্টি সরিয়ে নিতে পারে এবং তাঁর কোন লোভ ছিল না যাতে তাঁর অমর্যাদা হবে। তাঁর দুপা ছিল তাঁর বাহন এবং তার দুহাত ছিল চাকর।
রাসূলের (সা.) জীবন পদ্ধতি
তোমাদের রাসূলকে (সা.) অনুসরণ করা তোমাদের উচিত। তিনি ছিলেন পবিত্রতম ও পরিশুদ্ধতম। তাঁর মধ্যে অনুসরণকারীর জন্য রয়েছে উপমা এবং সান্তুনা - সন্ধানীর জন্য রয়েছে সান্তুনা। আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা প্রিয় যে তাঁর রাসূলকে অনুসরণ করে এবং যে রাসূলের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলে। তিনি দুনিয়া থেকে অতি অল্পই গ্রহণ করেছিলেন এবং কখনো দুনিয়ার প্রতি পুরোপুরি দৃষ্টিপাত করেননি। পৃথিবীর মানুষের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বাপেক্ষা পরিতৃপ্ত ও অভুক্ত। তাঁকে দুনিয়া সাধাসাধি করা হয়েছিলো কিন্তু তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছিলেন। যখন তিনি জানলেন যে ,মহিমান্বিত আল্লাহ কোন কিছুকে ঘৃণা করেছেন ,তিনি তখনই তা ঘৃণা করেছেন ;আল্লাহ কোন কিছুকে হীন করলে ,তিনিও তা হীন মনে করতেন ;আল্লাহ কোন কিছুকে ক্ষুদ্র করলে ,তিনিও তা ক্ষুদ্র মনে করতেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা ঘৃণা করেন তা যদি আমরা ভালবাসি এবং তারা যা ক্ষুদ্র করেছেন তা যদি আমরা বড় মনে করি তবে তাই আল্লাহ থেকে দূরে সরে যাওয়া ও তাঁর আদেশের সীমালঙ্ঘনের জন্য যথেষ্ট।
রাসূল (সা.) মাটিতে বসে খেতেন এবং ক্রীতদাসের মতো বসতেন। তিনি নিজ হাতে জুতা মেরামত করতেন এবং নিজ হাতেই নিজের কাপড়ে তালি লাগাতেন। তিনি জিনবীহীন খচ্চরে আরোহণ করতেন এবং তার পিছনে অন্য কাউকে উঠিয়ে নিতেন। যদি তিনি তার দরজায় চিত্রাঙ্কিত কোন পর্দা দেখতেন তবে স্ত্রীদের কাউকে বলতেন ,“
হে অমুক ,এপর্দা আমার দৃষ্টির আড়াল কর ,কারণ এর দিকে দৃষ্টি পড়লে দুনিয়া ও তার সাজ - সজ্জার কথা আমার স্মরণ হয়। ”
তিনি তাঁর হৃদয় থেকে দুনিয়াকে বিতাড়িত করেছিলেন এবং তার মন থেকে দুনিয়ার স্মরণকে বিনষ্ট করেছিলেন। দুনিয়ার চাকচিক্য তাঁর দৃষ্টির আড়াল রাখতে তিনি ভালোবাসতেন। সেজন্য তিনি মূল্যবান পোষাক পরিধান করতেন না। তিনি পৃথিবীকে বাসস্থান হিসাবে গণ্য করতেন না এবং এর মধ্যে বাস করার আশাও করতেন না। ফলে দুনিয়াকে তিনি তাঁর মন থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন ,তার হৃদয় থেকে একে দূর হতে বাধ্য করেছিলেন এবং তাঁর চক্ষু থেকে একে গুপ্ত রেখেছিলেন। একইভাবে যে ব্যক্তি কোন কিছুকে ঘৃণা করে তার উচিত তৎপ্রতি দৃষ্টিপাত করতে বা কানে শুনতে ঘৃণাবোধ করা।
নিশ্চয়ই ,আল্লাহর রাসূলের মধ্যে এমন গুণ ছিল যা তোমাদেরকে দুনিয়ার অমঙ্গল ও দোষত্রুটি দেখিয়ে দেবে। তিনি তাঁর প্রধান সাহাবীগণসহ ক্ষুধার্ত থাকতেন এবং দুনিয়ার ভোগ - বিলাসের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা থেকে দূরে সরে থাকতেন। এখন তোমরা তোমাদের বুদ্ধিমত্তা দ্বারা দেখতে পার ,এর ফলে আল্লাহ মুহাম্মদকে (সা.) সম্মানিত করেছিলেন নাকি অসম্মানিত করেছিলেন ? যদি কেউ বলে আল্লাহ তাকে অপমানিত করেছিলেন। তবে সে নিশ্চয়ই মিথ্যা কথা বলে এবং একটা মহা অসত্যের মাঝে নিজেকে জড়িয়ে নেয়। যদি কেউ বলে আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছিলেন। তবে মনে রাখতে হবে যে ,আল্লাহ তাদেরকে অপমানিত করেন যাদের প্রতি তিনি দুনিয়াকে প্রসারিত করেন এবং যারা তার নিকটতম হয়েছে তাদের কাছ থেকে দুনিয়াকে সরিয়ে রাখেন।
সুতরাং প্রত্যেকের উচিত। আল্লাহর রাসূলকে অনুসরণ করা ,তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলা এবং তার প্রদর্শিত পথে প্রবেশ করা। অন্যথায় সে ধ্বংস থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহাম্মদকে (সা.) বিচার দিনের নির্দশন ,বেহেশতের সুসংবাদদাতা ও মহাশাস্তির সতর্ককারী হিসাবে প্রেরণ করেছেন। তিনি ক্ষুধার্ত অবস্থায় এ পৃথিবী ত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তার সাথে পরকালে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি পৃথিবী ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত ঘর নির্মাণের জন্য একটা পাথরের ওপর আরেকটা পাথর রাখেন নি এবং আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। আল্লাহর রহমত কত মহান যে ,তিনি রহমত স্বরূপ রাসূলকে (সা.) আমাদের মাঝে দিয়েছেন যাকে আমরা অনুসরণ করতে পারি এবং যিনি একজন নেতা যার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা চলতে পারি।
আমিরুল মোমেনিনের নিজের উপমা
আল্লাহর কসম ,আমি আমার পিরাহানে (শার্ট) এত বেশি তালি লাগিয়েছি যে এখন আমি তা পরতে লজ্জা বোধ করি। কেউ একজন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো আমি এই পিরাহান খুলে ফেলবো কিনা। আমি তাকে বলেছিলাম ,“
আমার কাছ থেকে সরে যাও। ” শুধুমাত্র ভোরবেলা মানুষ এর সুবিধা অনুধাবন করতে পারে এবং রাতের পথ চলায় এর প্রশংসা করে ।
খোৎবা -
১৬০
خصائص النّبی و العترة
ابْتَعَثَهُ بِالنُّورِ الْمُضِي ءِ، وَ الْبُرْهَانِ الْجَلِيِّ، وَ الْمِنْهَاجِ الْبَادِي، وَ الْكِتَابِ الْهَادِي. أُسْرَتُهُ خَيْرُ أُسْرَةٍ وَ شَجَرَتُهُ خَيْرُ شَجَرَةٍ؛ أَغْصَانُهَا مُعْتَدِلَةٌ، وَ ثِمَارُهَا مُتَهَدِّلَةٌ. مَوْلِدُهُ بِمَكَّةَ، وَ هِجْرَتُهُ بِطَيْبَةَ. عَلاَ بِهَا ذِكْرُهُ وَ امْتَدَّ مِنْهَا صَوْتُهُ. أَرْسَلَهُ بِحُجَّةٍ كَافِيَةٍ، وَ مَوْعِظَةٍ شَافِيَةٍ، وَ دَعْوَةٍ مُتَلاَفِيَةٍ، أَظْهَرَ بِهِ الشَّرَائِعَ الْمَجْهُولَةَ، وَ قَمَعَ بِهِ الْبِدَعَ الْمَدْخُولَةَ، وَ بَيَّنَ بِهِ الْأَحْكَامَ الْمَفْصُولَةَ. فَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلاَمِ دَيْنا تَتَحَقَّقْ شِقْوَتُهُ، وَ تَنْفَصِمْ عُرْوَتُهُ وَ تَعْظُمْ كَبْوَتُهُ، وَ يَكُنْ مَآبُهُ إِلَى الْحُزْنِ الطَّوِيلِ وَ الْعَذَابِ الْوَبِيلِ. وَ أَتَوَكَّلُ عَلَى اللَّهِ تَوَكُّلَ الْإِنَابَةِ إِلَيْهِ، وَ أَسْتَرْشِدُهُ السَّبِيلَ الْمُؤَدِّيَةَ إِلَى جَنَّتِهِ، الْقَاصِدَةَ إِلَى مَحَلِّ رَغْبَتِهِ.
الوصیة بالتّقوی و الاعتبار بالماضاین
أُوصِيكُمْ، عِبَادَ اللَّهِ، بِتَقْوَى اللَّهِ وَ طَاعَتِهِ، فَإِنَّهَا النَّجَاةُ غَداً، وَ الْمَنْجَاةُ أَبَداً. رَهَّبَ فَأَبْلَغَ، وَ رَغَّبَ فَأَسْبَغَ؛ وَ وَصَفَ لَكُمُ الدُّنْيَا وَ انْقِطَاعَهَا، وَ زَوَالَهَا وَ انْتِقَالَهَا. فَأَعْرِضُوا عَمَّا يُعْجِبُكُمْ فِيهَا لِقِلَّةِ مَا يَصْحَبُكُمْ مِنْهَا. أَقْرَبُ دَارٍ مِنْ سَخَطِ اللَّهِ، وَ أَبْعَدُهَا مِنْ رِضْوَانِ اللَّهِ! فَغُضُّوا عَنْكُمْ - عِبَادَ اللَّهِ - غُمُومَهَا وَ أَشْغَالَهَا، لِمَا قَدْ أَيْقَنْتُمْ بِهِ مِنْ فِرَاقِهَا وَ تَصَرُّفِ حَالاَتِهَا. فَاحْذَرُوهَا حَذَرَ الشَّفِيقِ النَّاصِحِ، وَ الْمُجِدِّ الْكَادِحِ. وَ اعْتَبِرُوا بِمَا قَدْ رَأَيْتُمْ مِنْ مَصَارِعِ الْقُرُونِ قَبْلَكُمْ: قَدْ تَزَايَلَتْ أَوْصَالُهُمْ وَ زَالَتْ أَبْصَارُهُمْ وَ أَسْمَاعُهُمْ وَ ذَهَبَ شَرَفُهُمْ وَ عِزُّهُمْ وَ انْقَطَعَ سُرُورُهُمْ وَ نَعِيمُهُمْ، فَبُدِّلُوا بِقُرْبِ الْأَوْلاَدِ فَقْدَهَا، وَ بِصُحْبَةِ الْأَزْوَاجِ مُفَارَقَتَهَا. لاَ يَتَفَاخَرُونَ، وَ لاَ يَتَنَاسَلُونَ وَ لاَ يَتَزَاوَرُونَ وَ لاَ يَتَجَاوَرُونَ، فَاحْذَرُوا، عِبَادَ اللَّهِ، حَذَرَ الْغَالِبِ لِنَفْسِهِ، الْمَانِعِ لِشَهْوَتِهِ، النَّاظِرِ بِعَقْلِهِ؛ فَإِنَّ الْأَمْرَ وَاضِحٌ وَ الْعَلَمَ قَائِمٌ، وَ الطَّرِيقَ جَدَدٌ وَ السَّبِيلَ قَصْدٌ.
নবী (সা.) ও তার আহলে বাইতের বৈশিষ্ট্য এবং খোদাভীতি সম্পর্কে
নবী (সা.) ও তার আহলে বাইতের বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ রাসূলকে (সা.) সমুজ্জ্বল আলো ,সুস্পষ্ট দলিল ,উন্মুক্ত পথ ও হেদায়েত সম্বলিত কিতাবসহকারে প্রেরণ করেছিলেন। তাঁর গোত্র ছিল সর্বোৎকৃষ্ট এবং তাঁর সাজোরাহ সর্বোত্তম যার শাখাগুলো সুষমতা সম্পন্ন ও যাতে ঝুলন্ত ফল প্রচুর। তার জন্মস্থান মক্কা এবং তার হিজরতের স্থান তায়েবাহ (মদিনা) ,যেখান থেকে তাঁর সুনাম সুউচ্চতা লাভ করে ও তাঁর কণ্ঠস্বর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ্ তাঁকে পর্যাপ্ত ওজর ,দৃঢ় প্রত্যয় উৎপাদক বক্তব্য এবং সংশোধনমূলক ঘোষণা সহকারে প্রেরণ করেছিলেন। মহিমান্বিত আল্লাহ তার মাধ্যমে সেই পথ প্রকাশ করেছিলেন যা মানুষ পরিত্যাগ করেছিল এবং সেই সব বিদআত ধ্বংস করেছিলেন যা মানুষ উদ্ভাবন করেছিল। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর আদেশ নিষেধের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন । এখন যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করে তার কার্পণ্য সুনিশ্চিত ,তার ছড়ি (ভর দেয়ার লাঠি) ভেঙ্গে যাবে ,তার ভাগ্য মারাত্মক হবে ,তার পরিণাম হবে দীর্ঘস্থায়ী শোক ও কঠিন শাস্তি। আমি আল্লাহতে বিশ্বাস করি ,সে বিশ্বাস তার প্রতি সেজদাবনত হওয়ার। আমি তার হেদায়েত প্রার্থনা করি যা তার জান্নাতের দিকে নিয়ে যায় এবং তাঁর সন্তুষ্টির স্থানে নিয়ে যায়।
খোদাভীতি এবং পূর্বসূরীদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ
আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি ,হে আল্লাহর বান্দাগণ ,তোমরা আল্লাহকে ভয় করে কাজ কর এবং তার অনুগত হও। কারণ এটা তোমাদের আগামীকালের মুক্তি ও অনন্ত শান্তির উপায়। তিনি তোমাদের সতর্ক (শাস্তি সম্বন্ধে) করেছিলেন এবং বিশদভাবে তা করেছিলেন। তিনি তোমাদের প্ররোচিত করেছিলেন (সৎকাজের প্রতি) এবং সম্পূর্ণরূপে তা করেছিলেন। তিনি দুনিয়ার বর্ণনা করেছেন ,এটা তোমাদের কাছ থেকে যেভাবে কেটে পড়ে ,এর ধ্বংসাবশেষ ও এর হাত বদল সম্বন্ধে বলেছেন। সুতরাং দুনিয়ার আকর্ষণ থেকে দূরে সরে থাক। কারণ এর কিছুই তোমার সাথী হবে না। এ ঘর (দুনিয়া) আল্লাহর অসন্তুষ্টির অতি নিকটবর্তী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি থেকে অনেক দূরে।
সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ ,তোমাদের চোখ বন্ধ কর এবং দুনিয়ার আকর্ষণ ও ভাবনা থেকে নিজকে মুক্ত রাখ। কারণ এ থেকে তোমাদের আলাদা হয়ে যেতে হবে ,তা তোমরা নিশ্চিতভাবেই জান এবং এর পরিবর্তনশীল অবস্থার কথাও জান। তোমরা আন্তরিকতার সাথে দুনিয়াকে ভয় কর এবং তোমাদের পূর্বে যাদের পতন ঘটেছে তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর। তাদের সকল জোড়া বিনষ্ট হয়ে গেছে ,তাদের চোখ ও কান ধ্বংস হয়ে গেছে ,তাদের সম্মান ও মর্যাদা উঠে গেছে এবং তাদের আরাম আয়েশ ও ঐশ্বর্য নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাদের সন্তান - সন্ততির নৈকট্য এখন দূরবর্তিতায় পরিণত হয়েছে এবং তাদের স্বামী - স্ত্রীর সঙ্গ বিচ্ছেদে পরিণত হয়েছে। এখন আর তারা একে অপরের ওপর দম্ভোক্তি করে না ,সন্তান জন্ম দেয় না ,একে অপরের সাথে সাক্ষাত করে না এবং প্রতিবেশী হিসাবে বসবাসও করে না। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ ,তোমরা সেই ব্যক্তির মতো ভয় কর যে আত্মনিয়ন্ত্রিত ,যে তার কামনাবাসনাকে প্রদমিত করতে পারে এবং যে তার প্রজ্ঞা দ্বারা উপলব্ধি করতে পারে। নিশ্চয়ই ,বিষয়টি তোমরা স্পষ্ট বুঝেছো ;ঝাণ্ডা দণ্ডায়মান ,উপায় সমতল এবং পথ সোজা।
খোৎবা -
১৬১
أسباب غصب الخلاقة
لِبَعْضِ أَصْحابِهِ وَ قَدْ سَأَلَهُ كَيْفَ دَفَعكُمْ قَوْمُكُمْ عَنْ هذَا الْمَقامِ وَ أَنْتُمْ أَحَقُ بِهِ؟ فَقالَ:
يَا أَخَا بَنِي أَسَدٍ، إِنَّكَ لَقَلِقُ الْوَضِينِ، تُرْسِلُ فِي غَيْرِ سَدَدٍ، وَ لَكَ بَعْدُ ذِمَامَةُ الصِّهْرِ وَ حَقُّ الْمَسْأَلَةِ، وَ قَدِ اسْتَعْلَمْتَ فَاعْلَمْ؛ أَمَّا الاِسْتِبْدَادُ عَلَيْنَا بِهَذَا الْمَقَامِ وَ نَحْنُ الْأَعْلَوْنَ نَسَباً، وَ الْأَشَدُّونَ بِالرَّسُولِصلىاللهعليهوآلهوسلم
نَوْطاً، فَإِنَّهَا كَانَتْ أَثَرَةً شَحَّتْ عَلَيْهَا نُفُوسُ قَوْمٍ، وَ سَخَتْ عَنْهَا نُفُوسُ آخَرِينَ وَ الْحَكَمُ اللَّهُ، وَ الْمَعْوَدُ إِلَيْهِ الْقِيَامَةِ.
وَ دَعْ عَنْكَ نَهْبا صِيحَ فِي حَجَرَاتِهِ
|
|
وَ لَكِنْ حَدِيثا مَا حَدِيثُ الرَّوَاحِلَ
|
الشکوی من ظلم معاویة
وَ هَلُمَّ الْخَطْبَ فِي ابْنِ أَبِي سُفْيَانَ، فَلَقَدْ أَضْحَكَنِي الدَّهْرُ بَعْدَ إِبْكَائِهِ؛ وَ لاَ غَرْوَ وَ اللَّهِ، فَيَا لَهُ خَطْبا يَسْتَفْرِغُ الْعَجَبَ، وَ يُكْثِرُ الْأَوَدَ! حَاوَلَ الْقَوْمُ إِطْفَأَ نُورِ اللَّهِ مِنْ مِصْبَاحِهِ، وَ سَدَّ فَوَّارِهِ مِنْ يَنْبُوعِهِ، وَ جَدَحُوا بَيْنِي وَ بَيْنَهُمْ شِرْباً وَ بِيئاً، فَإِنْ تَرْتَفِعْ عَنَّا وَ عَنْهُمْ مِحَنُ الْبَلْوَى، أَحْمِلْهُمْ مِنَ الْحَقِّ عَلَى مَحْضِهِ؛ وَ إِنْ تَكُنِ الْأُخْرَى(
فَلا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَراتٍ، إِنَّ اللّهَ عَلِيمٌ بِما يَصْنَعُونَ
)
.
খেলাফত হতে বঞ্চিত হওয়া সম্পর্কে
বনি আসাদ গোত্রের একজন অনুচর। আমিরুল মোমেনিনকে জিজ্ঞেস করেছিলো ,“
এটা কেমন কথা যে ,আপনার গোত্র (কুরাইশ) আপনাকে পদমর্যাদা (খেলাফত) থেকে বঞ্চিত করেছিল ? অথচ খেলাফতের জন্য আপনি সর্বাপেক্ষা বাঞ্চিত ব্যক্তি।”
প্রত্যুত্তরে আমিরুল মোমেনিন বললেনঃ
হে বনি আসাদের ভ্রাতা ,তোমার জিন আটকানোর বেল্ট ঢিলা এবং তুমি তা উল্টোভাবে লাগিয়েছো। এতদসত্ত্বেও তুমি বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয় এবং তোমার জিজ্ঞেস করার অধিকার আছে। যেহেতু তুমি জিজ্ঞেস করেছো ,তাই শোনাঃ যদিও আমরা আল্লাহর রাসূলের সর্বোচ্চ উত্তরাধিকারী এবং সবচাইতে নিকটতম আত্মীয় তবুও খেলাফত বিষয়ে আমরা বেশি অত্যাচারিত। এটা কতিপয় স্বার্থন্বেষী লোকের কাজ যাতে তাদের হৃদয় লোভাতুর হয়ে পড়েছিল ;যদিও কিছু লোক এর পরোয়া করেনি। আল্লাহ ন্যায় বিচারক এবং বিচার দিনে সকলেই তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে। (তিনি ইমরুল কায়েসের কবিতার একটি শ্লোক আবৃত্তি করে বললেনঃ )
এখন
সেই ধ্বংসযজ্ঞের কেচ্ছা ছাড় যা নিয়ে চতুর্দিকে হৈ চৈ হচ্ছে ।
মুয়াবিয়ার অত্যাচারের ব্যাপারে অভিযোগ
এখন আবু সুফিয়ানের পুত্রের (মুয়াবিয়া) দিকে তাকাও। কান্নার পর সময় এখন আমাকে হাসাচ্ছে। আশ্চর্য হবার কিছু নেই ,আল্লাহর কসম ,তার কর্মকাণ্ড সকল বিস্ময়কে ছাড়িয়ে গেছে এবং সব রকম অবৈধতাকে বৃদ্ধি করেছে। এসব লোক আল্লাহর প্রদীপের আলো - শিখা নিভিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং তার ঝরনাকে তার উৎসস্থলে বন্ধ করে দিতে চেয়েছে। তারা মহামারী উৎপাদক পানি আমার ও তাদের মধ্যে মিশ্রিত করতে চেয়েছিল। যদি পরীক্ষামূলক দুঃখ - দুদর্শ আমাদের কাছ থেকে সরিয়ে নেয়া হতো তাহলে তাদেরকে আমি সত্যবাদিতার পথে নিয়ে যেতে পারতাম। অন্যথায়ঃ
সুতরাং তাদের জন্য আক্ষেপ করে তোমার প্রাণ যেন বিনষ্ট হয়ে না যায় । নিশ্চয় আল্লাহ তা সম্যক জানেন যা ওরা করছে (কুরআন–
৩৫:৮)
____________________
খোৎবা -
১৬২
معرفة اللهتعالی
الْحَمْدُ لِلَّهِ خَالِقِ الْعِبَادِ، وَ سَاطِحِ الْمِهَادِ، وَ مُسِيلِ الْوِهَادِ، وَ مُخْصِبِ النِّجَادِ. لَيْسَ لِأَوَّلِيَّتِهِ ابْتِدَأٌ، وَ لاَ لِأَزَلِيَّتِهِ انْقِضَاءُ هُوَ الْأَوَّلُ لَمْ يَزَلْ، وَالْبَاقِي بِلاَ أَجَلٍ، خَرَّتْ لَهُ الْجِبَاهُ، وَ وَحَّدَتْهُ الشِّفَاهُ، حَدَّ الْأَشْيَأَ عِنْدَ خَلْقِهِ لَهَا إِبَانَةً لَهُ مِنْ شَبَهِهَا، لاَ تُقَدِّرُهُ الْأَوْهَامُ بِالْحُدُودِ وَالْحَرَكَاتِ، وَ لاَ بِالْجَوَارِحِ وَالْأَدَوَاتِ، لاَ يُقَالُ لَهُ: مَتَى؟ وَ لاَ يُضْرَبُ لَهُ أَمَدٌ بِحَتَّى، الظَّاهِرُ لاَ يُقَالُ: مِمَّ؟ وَالْبَاطِنُ لاَ يُقَالُ: فِيمَ ا ؟ لاَ شَبَحٌ فَيُتَقَصَّى وَ لاَ مَحْجُوبٌ فَيُحْوَى. لَمْ يَقْرُبْ مِنَ الْأَشْيَأِ بِالْتِصَاقٍ، وَ لَمْ يَبْعُدْ عَنْهَا بِافْتِرَاقٍ، وَ لاَ يَخْفَى عَلَيْهِ مِنْ عِبَادِهِ شُخُوصُ لَحْظَةٍ، وَ لاَ كُرُورُ لَفْظَةٍ، وَ لاَ ازْدِلاَفُ رَبْوَةٍ، وَ لاَ انْبِسَاطُ خُطْوَةٍ فِي لَيْلٍ دَاجٍ، وَ لاَ غَسَقٍ سَاجٍ، يَتَفَيَّأُ عَلَيْهِ الْقَمَرُ الْمُنِيرُ، وَ تَعْقُبُهُ الشَّمْسُ ذَاتُ النُّورِ فِي الْأُفُولِ وَالْكُرُورِ، وَ تَقَلُّبِ الْأَزْمِنَةِ وَالدُّهُورِ، مِنْ إِقْبَالِ لَيْلٍ مُقْبِلٍ، وَ إِدْبَارِ نَهَارٍ مُدْبِرٍ. قَبْلَ كُلِّ غَايَةٍ وَ مُدَّةِ، وَ كُلِّ إِحْصَأٍ وَعِدَّةٍ، تَعَالَى عَمَّا يَنْحَلُهُ الْمُحَدِّدُونَ مِنْ صِفَاتِ الْأَقْدَارِ، وَ نِهَايَاتِ الْأَقْطَارِ، وَ تَأَثُّلِ الْمَسَاكِنِ، وَ تَمَكُّنِ الْأَمَاكِنِ. فَالْحَدُّ لِخَلْقِهِ مَضْرُوبٌ، وَ إِلَى غَيْرِهِ مَنْسُوبٌ.
وصف الکون
لَمْ يَخْلُقِ الْأَشْيَأَ مِنْ أُصُولٍ أَزَلِيَّةٍ، وَ لاَ مِنْ أَوَائِلَ أَبَدِيَّةٍ، بَلْ خَلَقَ مَا خَلَقَ فَأَقَامَ حَدَّهُ، وَصَوَّرَ فَأَحْسَنَ صُورَتَهُ. لَيْسَ لِشَيْءٍ مِنْهُ امْتِنَاعٌ، وَ لاَ لَهُ بِطَاعَةِ شَيْءٍ انْتِفَاعٌ. عِلْمُهُ بِالْأَمْوَاتِ الْمَاضِينَ كَعِلْمِهِ بِالْأَحْيَأِ الْبَاقِينَ، وَ عِلْمُهُ بِمَا فِي السَّمَاوَاتِ الْعُلَى كَعِلْمِهِ بِمَا فِي الْأَرَضِينَ السُّفْلَى.
عجائب فی الخلق الانسان
أَيُّهَا الْمَخْلُوقُ السَّوِيُّ، وَالْمُنْشَأُ الْمَرْعِيُّ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْحَامِ وَ مُضَاعَفَاتِ الْأَسْتَارِ. بُدِئْتَ(
مِنْ سُلالَةٍ مِنْ طِينٍ
)
، وَ وُضِعْتَ(
فِي قَرارٍ مَكِينٍ
)
، إِلى قَدَرٍ مَعْلُومٍ، وَ أَجَلٍ مَقْسُومٍ. تَمُورُ فِي بَطْنِ أُمِّكَ جَنِينا، لاَ تُحِيرُ دُعَاءً، وَ لاَ تَسْمَعُ نِدَاءً؟! ثُمَّ أُخْرِجْتَ مِنْ مَقَرِّكَ إِلَى دَارٍ لَمْ تَشْهَدْهَا، وَ لَمْ تَعْرِفْ سُبُلَ مَنَافِعِهَا. فَمَنْ هَدَاكَ لاِجْتِرَارِ الْغِذَأِ مِنْ ثَدْيِ أُمِّكَ، وَ عَرَّفَكَ عِنْدَ الْحَاجَةِ مَوَاضِعَ طَلَبِكَ وَ إِرَادَتِكَ؟! هَيْهَاتَ، إِنَّ مَنْ يَعْجِزُ عَنْ صِفَاتِ ذِي الْهَيْئَةِ وَالْأَدَوَاتِ فَهُوَ عَنْ صِفَاتِ خَالِقِهِ أَعْجَزُ، وَ مِنْ تَنَاوُلِهِ بِحُدُودِ الْمَخْلُوقِينَ أَبْعَدُ!.
আল্লাহর গুণাবলী ও মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে
আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে
প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা আল্লাহর যিনি মানুষের স্রষ্টা এবং যিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন। তিনি প্রস্রবণ সৃষ্টি করেছেন প্রবাহিত হওয়ার জন্য এবং লতা - গুল্ম - বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন উচ্চভূমিতে জন্মাবার জন্য। তাঁর আদিত্বের কোন প্রারম্ভ নেই এবং চিরন্তনতার কোন শেষ নেই। তিনিই প্রথম এবং সর্বকালীন । তিনিই চিরস্থায়ী যাতে কোন সীমা নেই। কপাল তার সামনে আনত হয় (সেজদা করে) এবং ঠোঁট তাঁর একত্ব ঘোষণা করে। তিনি বস্তুনিচয় সৃষ্টি করার সময়েই তার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং নিজেকে তাদের সাদৃশ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। গতিবিধি ,অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ ও বোধশক্তির গণ্ডিতে কল্পনাশক্তি তাকে আন্দাজ করতে পারে না। তার সম্বন্ধে“
কখন ?”
বলা যায় না এবং“
পর্যন্ত ” বলে তাকে কোন সময়সীমার গণ্ডিভুক্ত করা যায় না। তাকে স্পষ্টত প্রতীয়মান করা যায় ,কিন্তু“
কোথা হতে ” বলা যায় না। তিনি সংগুপ্ত ,কিন্তু“
কিসের মধ্যে ” বলা যায় না। তিনি শরীরী নন যে ,মরে যাবেন এবং তিনি আবৃত নন যাতে আবদ্ধ করা যায়। তিনি স্পর্শ দ্বারা বস্তুর নিকটবর্তী নন এবং বিচ্ছেদ দ্বারা বস্তু থেকে দূরবর্তী নন। মানুষের চোখের স্থিরদৃষ্টি ,কথার প্রতিধ্বনি ,পাহাড়ের মিটমিটে আলো ,রাতের গভীর অন্ধকারের পদচারণা - কোন কিছুই তার কাছে গোপন নয়। চন্দ্রকিরণ যেখানে পড়ে ,সূর্য রশ্মি যেখান থেকে উদ্ভাসিত হয় ,সূর্য যেখানে অস্তমিত ও আবার উদিত হয় ,দিবা - রাত্রির পরিবর্তন যেভাবে হয় ,সময়ের পরিবর্তন যেভাবে হয় - এসবের কোন কিছুই তার কাছে গুপ্ত নয়। তিনি সকল সীমা ও পরিসীমা এবং সকল গণনা ও সংখ্যার অতীত। যারা তার প্রতি সীমিত গুণারোপ করে ,তাদের ধারণার অনেক অনেক উর্দ্ধে তিনি। পরিমাপের গুণ ,অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ থাকা ,ঘরে বসবাস করা ,কোন স্থানে থাকা - এসব গুণ তাঁর জন্য প্রযোজ্য নয় ;কারণ সীমা - পরিসীমা সৃষ্টির জন্যই নির্ধারিত এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য সব বস্তুতে আরোপ করা যায়।
আল্লাহ নঞ থেকে উদ্ভাবক
তিনি চিরন্তন বস্তু থেকে বা উপস্থিত কোন নমুনা থেকে বস্তুনিচয় সৃষ্টি করেননি। তিনি সৃষ্টি করেছিলেন যা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন এবং এরপর তার সীমা নির্ধারণ করেছেন। তিনি আকৃতি দিয়েছেন যেভাবে আকৃতি দিতে চেয়েছেন এবং তাতে সর্বোৎকৃষ্ট আকৃতি হয়েছে। কোন কিছুই তাঁর অবাধ্য হতে পারে না। কিন্তু কোন কিছু তার বাধ্য হলেও তার কোন উপকার হয় না। অতীতে যারা মরে গেছে তাদের সম্পর্কে তার জ্ঞান যেরূপ বর্তমানে যারা বেঁচে আছে তাদের সম্পর্কেও তার জ্ঞান একইরূপ । উর্দ্ধাকাশে যা কিছু আছে তা সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান যেরূপ মাটির নিম্নদেশে যা কিছু আছে ,তা সম্পর্কেও তার জ্ঞান একইরূপ ।
মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে
হে আল্লাহর বান্দাগণ ,তোমাদেরকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মাতৃগর্ভের অন্ধকারে বহু পর্দার আবরণের মধ্যেও তোমাদেরকে লালন - পালন করা হয়েছে। তোমাদেরকে মৃত্তিকার উপাদান থেকে (কুরআন - ২৩ : ১২) স্থাপন করা হয়েছে সুরক্ষিত আধারে একটা নির্দিষ্টকালের জন্য (কুরআন - ৭৭ : ২১ - ২২) । তোমরা মায়ের গর্ভে নড়াচড়া করতে পারতে ,কিন্তু না পারতে কোন শব্দ শুনতে আর না পারতে কোন ডাকে সাড়া দিতে। তারপর সেই স্থান থেকে তোমাদেরকে বের করে আনা হয়েছিল এবং এমন স্থানে আনা হয়েছিল যে স্থান তোমরা দেখনি ও তোমরা এ স্থানের উপকার লাভের উপায়ের সঙ্গে পরিচিত ছিলে না। তোমরা তার সঙ্গে পরিচিত ছিলে না ,যে মায়ের স্তন থেকে চুষে জীবিকা আহরণের পথ দেখিয়ে দিয়েছিল এবং যখন তোমাদের প্রয়োজন হতো তখন তোমাদের জীবিকার অবস্থান দেখিয়ে দিতো। আহা! যে ব্যক্তি সৃষ্টির এসব গুণাবলী বুঝতে অক্ষম সে স্রষ্টার গুণাবলী বুঝতে আরো অক্ষম। যে ব্যক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে স্রষ্টাকে চিনতে পারে না সে স্রষ্টা থেকে অনেক দূরে।
খোৎবা -
১৬৩
لَمّا اجْتَمَعَ النّاسُ اِلَيْهِ وَ شَكَوْا ما نَقْمُوهُ عَلى عُثْمانَ، وَ سَأَلُوهُ مُخاطَبَهُ عَنْهُمْ وَاسْتَعتابَهُ لَهُمْ، فَدْخَلَ ع عَلى عُثْمانَ فَقالَ:
إِنَّ النَّاسَ وَرَائِي، وَ قَدِ اسْتَسْفَرُونِي بَيْنَكَ وَ بَيْنَهُمْ، وَ وَاللَّهِ مَا أَدْرِي مَا أَقُولُ لَكَ! مَا أَعْرِفُ شَيْئاً تَجْهَلُهُ، وَ لا أَدُلُّكَ عَلى أَمْرٍ لا تَعْرِفُهُ، إِنَّكَ لَتَعْلَمُ ما نَعْلَمُ. ما سَبَقْنَاكَ إِلَى شَيْءٍ فَنُخْبِرَكَ عَنْهُ، وَ لا خَلَوْنَا بِشَيْءٍ فَنُبَلِّغَكَهُ. وَ قَدْ رَأَيْتَ كَما رَأَيْنا، وَ سَمِعْتَ كَما سَمِعْنا، وَ صَحِبْتَ رَسُولَ اللَّهِصلىاللهعليهوآلهوسلم
كَما صَحِبْنَا وَ مَا ابْنُ أَبِي قُحَافَةَ وَ لا ابْنُ الْخَطَّابِ بِأَوْلَى بِعَمَلِ الْحَقِّ مِنْكَ، وَ أَنْتَ أَقْرَبُ إِلَى أَبِي رَسُولِ اللَّهِصلىاللهعليهوآلهوسلم
وَشِيجَةَ رَحِمٍ مِنْهُمَا؛ وَ قَدْ نِلْتَ مِنْ صِهْرِهِ مَا لَمْ يَنَالا. فَاللَّهَ اللَّهَ فِي نَفْسِكَ! فَإِنَّكَ وَاللَّهِ ما تُبَصَّرُ مِنْ عَمًى، وَ لا تُعَلَّمُ مِنْ جَهْلٍ، وَ إِنَّ الطُّرُقَ لَوَاضِحَةٌ، وَ إِنَّ أَعْلاَمَ الدِّينِ لَقَائِمَةٌ. فَاعْلَمْ أَنَّ أَفْضَلَ عِبادِ اللَّهِ عِنْدَ اللَّهِ إِمَامٌ عادِلٌ، هُدِيَ وَ هَدَى، فَأَقامَ سُنَّةً مَعْلُومَةً، وَ أَماتَ بِدْعَةً مَجْهُولَةً (منزوکه). وَ إِنَّ السُّنَنَ لَنَيِّرَةٌ لَها أَعْلاَمٌ، وَ إِنَّ الْبِدَعَ لَظَاهِرَةٌ، لَها أَعْلاَمٌ. وَ إِنَّ شَرَّ النَّاسِ عِنْدَ اللَّهِ إِمَامٌ جائِرٌ ضَلَّ وَ ضُلَّ بِهِ، فَأَمَاتَ سُنَّةً مَأْخُوذَةً، وَ أَحْيا بِدْعَةً مَتْرُوكَةً. وَ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِصلىاللهعليهوآلهوسلم
يَقُولُ:«يُؤْتَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِالْإِمَامِ الْجَائِرِ وَ لَيْسَ مَعَهُ نَصِيرٌ وَ لاَ عَاذِرٌ فَيُلْقَى فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَيَدُورُ فِيهَا كَمَا تَدُورُ الرَّحَى، ثُمَّ يَرْتَبِطُ فِي قَعْرِها»
.
وَ إِنِّي أَنْشُدُكَ اللَّهَ أَلا تَكُونَ إِمَامَ هَذِهِ الْأُمَّةِ الْمَقْتُولَ، فَإِنَّهُ كَانَ يُقَالُ: يُقْتَلُ فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ إِمَامٌ يَفْتَحُ عَلَيْهَا الْقَتْلَ وَالْقِتَالَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَ يَلْبِسُ أُمُورَهَا عَلَيْهَا، وَ يَبُثُّ الْفِتَنَ فِيهَا، فَلا يُبْصِرُونَ الْحَقَّ مِنَ الْبَاطِلِ؛ يَمُوجُونَ فِيهَا مَوْجاً، وَ يَمْرُجُونَ فِيها مَرْجاً. فَلا تَكُونَنَّ لِمَرْوانَ سَيِّقَةً يَسُوقُكَ حَيْثُ شأَ بَعْدَ جَلالِ السِّنِّ، وَ تَقَضِّي الْعُمُرِ.
فَقَالَ لَهُ عُثْمَانُ:«كَلِّمِ النَّاسَ فِي أَنْ يُؤَجِّلُونِي حَتَّى أَخْرُجَ إِلَيْهِمْ مِنْمَظَالِمِهِمْ.»
فَقَالَعليهالسلام
: مَا كَانَبِالْمَدِينَةِ فَلا أَجَلَ فِيهِ، وَ مَا غَابَ فَأَجَلُهُ وُصُولُ أَمْرِكَ إِلَيْهِ.
জনগণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উসমানের সাথে কথোপকথন
যখন জনগণ দলবদ্ধ হয়ে আমিরুল মোমেনিনের কাছে গিয়ে উসমানের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ জানিয়ে তাদের পক্ষ থেকে উসমানের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেছিল তখন তিনি উসমানের কাছে গিয়ে বললেন
:
আমার পেছনে অনেক লোক রয়েছে যারা আপনার ও তাদের মধ্যে দূত হিসাবে আমাকে প্রেরণ করেছে। কিন্তু আল্লাহর কসম ,আপনার কাছে কী বলতে হবে তা আমি জানি না। আপনি হয়ত জানেন না যে ,এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না এবং যে ব্যাপারে আপনি অবহিত নন। সে ব্যাপারে আপনাকে দিক নির্দেশনাও দিতে পারি না। আমরা যা জানি নিশ্চয়ই তা আপনি অবগত আছেন। আমরা আপনার কাছ থেকে এমন কোন কিছু জানতে আসিনি যা আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারি। আমরা গোপনে কিছু জানতেও পারিনি যা আপনাকে জানিয়ে দিতে পারি। আপনি যা দেখেছেন আমরাও তা - ই দেখেছি ;আপনি যা শুনেছেন আমরাও তাই শুনেছি। আল্লাহর রাসূলের সাহাবি হিসাবে আপনি তার কাছে বসেছিলেন যেমনটি আমরাও বসেছিলাম। ইবনে আবি কুহাফাহ (আবু বকর) ও ইবনে আল - খাত্তাব (উমর) ন্যায় - নিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য আপনার চেয়ে বেশি দায়িত্বপূর্ণ ছিল না। কারণ গোত্র বন্ধনে আপনি তাদের চেয়ে আল্লাহর রাসূলের নিকটতর এবং আপনি বৈবাহিক সূত্রেও তাঁর আত্মীয় যা তাদের নেই। কাজেই ,নিজের বাতেনে আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহর কসম ,আপনাকে অন্ধ মনে করে কোন কিছু দেখানো হচ্ছে না এবং অজ্ঞ মনে করে কোন কিছুর প্রশংসা বা মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। ইমানের পথ সুস্পষ্ট এবং এর ঝাণ্ডা সুনির্ধারিত। আপনার জানা দরকার যে ,আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচাইতে বেশিষ্ট্যমণ্ডিত ব্যক্তি হরেন ন্যায়পরায়ণ ইমাম যিনি আল্লাহ কর্তৃক পরিচালিত হয়ে অন্যদেরকে পরিচালনা করেন। সুতরাং তিনি রাসূলের স্বীকৃত সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকেন এবং বিদআত ধ্বংস করেন। (রাসূলের) পথ সুস্পষ্ট এবং তার নিদর্শনাবলী রয়েছে। অপরপক্ষে ,বিদআতও সুস্পষ্ট এবং তারও নিদর্শন আছে। নিশ্চয়ই ,আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম ব্যক্তি হলো জুলুমবাজ ইমাম যে নিজে বিপথগামী হয়েছে এবং অন্যদেরকেও বিপথগামী করেছে। সে সহীহ সুন্নাহ ধ্বংস করে এবং বাতিল বিদআত পুনরুজ্জীবিত করে। আমি আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছিলাম ,“
বিচার দিনে জুলুমবাজ ইমামকে কোন প্রকার সমর্থক ছাড়াই আনা হবে। তার পক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা করারও কেউ থাকবে না। তখন তাকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে এবং সে আটা - চাক্কির মতো ঘুরতে ঘুরতে দোযখে পড়বে। তারপর সে একটা গর্তে আটক থাকবে । ”
আমি আল্লাহর নামে শপথ করে আপনাকে বলছি ,আপনার এমন ইমাম হওয়া উচিত হবে না যাকে জনগণ হত্যা করবে। কারণ এটা বলা হয়েছে যে ,“
এসব লোকের একজন ইমামকে হত্যা করা হবে। এরপর থেকে বিচারদিন পর্যন্ত হত্যা ও যুদ্ধের পথ তাদের জন্য খোলা হয়ে যাবে এবং সে তাদের ব্যাপারে তালগোল পাকিয়ে তাদের ওপর আপদ ছড়িয়ে দেবে। ফলে তারা সত্যকে মিথ্যা থেকে পৃথক করতে পারবে না। তারা তরঙ্গের মতো দুলতে থাকবে এবং চরমভাবে বিপথে পরিচালিত হবে। ” মারওয়ানের বাহন হিসাবে আচরণ করবেন না ,যাতে সে আপনার জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষা করে যে দিকে ইচ্ছা তোমাকে টেনে নিয়ে যেতে পারে ।
এরপর উসমান আমিরুল মোমেনিনকে বললেন ,“
জনগণের দুঃখ - দুর্দশা উপশম করার পূর্ব পর্যন্ত আমাকে সময় দিতে তাদেরকে বল।" আমিরুল মোমেনিন বললেন ,“
মদিনার জনগণের বিষয়ে সময়ের প্রশ্ন ওঠে না। দূরবর্তী এলাকার জনগণের বিষয়ে আপনার আদেশ তথায় পৌছা পর্যন্ত আপনি সময় পেতে পারেন। ”
____________________
খোৎবা -
১৬৪
عجائب فی خلقة الطیور
ابْتَدَعَهُمْ خَلْقاً عَجِيباً مِنْ حَيَوانٍ وَ مَواتٍ، وَساكِنٍ وَذِي حَرَكاتٍ؛ وَ أَقامَ مِنْ شَواهِدِ الْبَيِّناتِ عَلَى لَطِيفِ صَنْعَتِهِ وَ عَظِيمِ قُدْرَتِهِ، مَاانْقادَتْ لَهُ الْعُقُولُ مُعْتَرِفَةً بِهِ، وَ مَسَلِّمَةً لَهُ، وَنَعَقَتْ فِي أَسْماعِنا دَلائِلُهُ عَلَى وَحْدانِيَّتِهِ، وَ ما ذَرَأَ مِنْ مُخْتَلِفِ صُوَرِ الْأَطْيَارِ الَّتِي أَسْكَنَها أَخادِيدَ الْأَرْضِ، وَ خُرُوقَ فِجاجِها وَرَواسِيَ أَعْلامِها، مِنْ ذَواتِ أَجْنِحَةٍ مُخْتَلِفَةٍ، وَ هَيْئاتٍ مُتَبايِنَةٍ، مُصَرَّفَةٍ فِي زِمامِ التَّسْخِيرِ، وَ مُرَفْرِفَةٍ بِأَجْنِحَتِها فِي مَخارِقِ الْجَوِّ الْمُنْفَسِحِ، وَالْفَضأِ الْمُنْفَرِجِ. كَوَّنَها بَعْدَ إِذْ لَمْ تَكُنْ فِي عَجَائِبِ صُوَرٍ ظاهِرَةٍ، وَرَكَّبَها فِي حِقاقِ مَفاصِلَ مُحْتَجِبَةٍ. وَمَنَعَ بَعْضَها بِعَبالَةِ خَلْقِهِ أَنْ يَسْمُوَ فِي الْهَوَأِ خُفُوفاً، وَ جَعَلَهُ يَدِفُّ دَفِيفاً، وَ نَسَقَها عَلَى اخْتِلافِها فِي الْأَصابِيغِ بِلَطِيفِ قُدْرَتِهِ، وَدَقِيقِ صَنْعَتِهِ. فَمِنْهَا مَغْمُوسٌ فِي قالَبِ لَوْنٍ لا يَشُوبُهُ غَيْرُ لَوْنِ ما غُمِسَ فِيهِ؛ وَ مِنْها مَغْمُوسٌ فِي لَوْنِ صِبْغٍ قَدْ طُوِّقَ بِخِلاَفِ مَا صُبِغَ بِهِ.
وَ مِنْ أَعْجَبِها خَلْقا الطَّاوُسُ الَّذِي أَقامَهُ فِي أَحْكَمِ تَعْدِيلٍ، وَ نَضَّدَ أَلْوَانَهُ فِي أَحْسَنِ تَنْضِيدٍ، بِجَنَاحٍ أَشْرَجَ قَصَبَهُ، وَ ذَنَبٍ أَطالَ مَسْحَبَهُ. إِذا دَرَجَ إِلَى الْأُنْثَى نَشَرَهُ مِنْ طَيِّهِ وَسَما بِهِ مُظِلاًّ عَلَى رَأْسِهِ، كَأَنَّهُ قِلْعُ دارِيِّ عَنَجَهُ نُوتِيُّهُ. يَخْتالُ بِأَلْوانِهِ، وَ يَمِيسُ بِزَيَفانِهِ. يُفْضِي كَإِفْضَأِ الدِّيَكَةِ، وَ يَؤُرُّ بِمَلاقِحِهِ أَرَّ الْفُحُولِ الْمُغْتَلِمَةِ لِلضِّرَابِ.
أُحِيلُكَ مِنْ ذَلِكَ عَلَى مُعايَنَةٍ، لا كَمَنْ يُحِيلُ عَلَى ضَعِيفٍ إِسْنَادُهُ، وَ لَوْ كَانَ كَزُعْمِ مَنْ يَزْعُمُ أَنَّهُ يُلْقِحُ بِدَمْعَةٍ تَنْسِجُها مَدَامِعُهُ، فَتَقِفُ فِي ضَفَّتَيْ جُفُونِهِ، وَ أَنَّ أُنْثاهُ تَطْعَمُ ذلِكَ ثُمَّ تَبِيضُ لا مِنْ لِقاحِ فَحْلٍ سِوَى الدَّمْعِ الْمُنْبَجِسِ، لَما كانَ ذلِكَ بِأَعْجَبَ مِنْ مُطاعَمَةِ الْغُرابِ. تَخالُ قَصَبَهُ مَدارِيَ مِنْ فِضَّةٍ، وَ ما أُنْبِتَ عَلَيْها مِنْ عَجِيبِ داراتِهِ وَ شُمُوسِهِ خَالِصَ الْعِقْيَانِ وَ فِلَذَ الزَّبَرْجَدِ. فَإِنْ شَبَّهْتَهُ بِما أَنْبَتَتِ الْأَرْضُ قُلْتَ: جَنِىُّ جُنِيَ مِنْ زَهْرَةِ كُلِّ رَبِيعٍ، وَ إِنْ ضاهَيْتَهُ بِالْمَلابِسِ فَهُوَ كَمَوْشِيِّ الْحُلَلِ، أَوْمُونِقِ عَصْبِ الْيَمَنِ، وَ إِنْ شاكَلْتَهُ بِالْحُلِيِّ فَهُوَ كَفُصُوصٍ ذاتِ أَلْوَانٍ، قَدْ نُطِّقَتْ بِاللُّجَيْنِ الْمُكَلَّلِ.
يَمْشِي مَشْيَ الْمَرِحِ الْمُخْتالِ، وَ يَتَصَفَّحُ ذَنَبَهُ وَ جَناحَيْهِ، فَيُقَهْقِهُ ضاحِكا لِجَمالِ سِرْبالِهِ، وَ أَصابِيغِ وِشاحِهِ؛ فَإِذا رَمى بِبَصَرِهِ إِلَى قَوائِمِهِ زَقا مُعْوِلاً بِصَوْتٍ يَكادُ يُبِينُ عَنِ اسْتِغَاثَتِهِ، وَ يَشْهَدُ بِصادِقِ تَوَجُّعِهِ، لِأَنَّ قَوَائِمَهُ حُمْشٌ كَقَوائِمِ الدِّيَكَةِ الْخِلاسِيَّةِ. وَ قَدْ نَجَمَتْ مِنْ ظُنْبُوبِ ساقِهِ صِيصِيَةٌ خَفِيَّةٌ.
وَلَهُ فِي مَوْضِعِ الْعُرْفِ قُنْزُعَةٌ خَضْرَأُ مُوَشَّاةٌ. وَ مَخْرَجُ عَنُقِهِ كَالْإِبْرِيقِ، وَ مَغْرِزُها إِلى حَيْثُ بَطْنُهُ كَصِبْغِ الْوَسِمَةِ الْيَمانِيَّةِ، أَوْ كَحَرِيرَةٍ مُلْبَسَةٍ مِرْآةً ذاتَ صِقالٍ، وَ كَأَنَّهُ مُتَلَفِّعٌ بِمِعْجَرٍ أَسْحَمَ إِلا أَنَّهُ يُخَيَّلُ لِكَثْرَةِ مَائِهِ وَ شِدَّةِ بَرِيقِهِ أَنَّ الْخُضْرَةَ النَّاضِرَةَ مُمْتَزِجَةٌ بِهِ. وَ مَعَ فَتْقِ سَمْعِهِ خَطُّ كَمُسْتَدَقِّ الْقَلَمِ فِي لَوْنِ الْأُقْحُوَانِ، أَبْيَضُ يَقَقٌ، فَهُوَ بِبَيَاضِهِ فِي سَوادِ ما هُنالِكَ يَأْتَلِقُ. وَ قَلَّ صِبْغٌ إِلا وَ قَدْ أَخَذَ مِنْهُ بِقِسْطٍ، وَ عَلاهُ بِكَثْرَةِ صِقالِهِ وَ بَرِيقِهِ وَ بَصِيصِ دِيباجِهِ وَرَوْنَقِهِ. فَهُوَ كَالْأَزاهِيرِ الْمَبْثُوثَةِ لَمْ تُرَبِّها أَمْطارُ رَبِيعٍ وَ لا شُمُوسُ قَيْظٍ، وَ قَدْ يَنْحَسِرُ مِنْ رِيشِهِ، وَ يَعْرى مِنْ لِباسِهِ، فَيَسْقُطُ تَتْرَى، وَ يَنْبُتُ تِبَاعاً، فَيَنْحَتُّ مِنْ قَصَبِهِ انْحِتَاتَ أَوْراقِ الْأَغْصانِ، ثُمَّ يَتَلاحَقُ نامِياً حَتَّى يَعُودَ كَهَيْئَتِهِ قَبْلَ سُقُوطِهِ، لا يُخالِفُ سالِفَ أَلْوانِهِ، وَ لا يَقَعُ لَوْنٌ فِي غَيْرِ مَكانِهِ! وَ إِذا تَصَفَّحْتَ شَعْرَةً مِنْ شَعَراتِ قَصَبِهِ أَرَتْكَ حُمْرَةً وَرْدِيَّةً، وَ تارَةً خُضْرَةً زَبَرْجَدِيَّةً، وَ أَحْيَانا صُفْرَةً عَسْجَدِيَّةً. فَكَيْفَ تَصِلُ إِلى صِفَةِ هذا عَمائِقُ الْفِطَنِ، أَوْ تَبْلُغُهُ قَرائِحُ الْعُقُولِ، أَوْ تَسْتَنْظِمُ وَصْفَهُ أَقْوَالُ الْواصِفِينَ! وَ أَقَلُّ أَجْزائِهِ قَدْ أَعْجَزَ الْأَوْهامَ أَنْ تُدْرِكَهُ، وَالْأَلْسِنَةَ أَنْ تَصِفَهُ! فَسُبْحانَ الَّذِي بَهَرَ الْعُقُولَ عَنْ وَصْفِ خَلْقٍ جَلَّاهُ لِلْعُيُونِ، فَأَدْرَكَتْهُ مَحْدُوداً مُكَوَّناً وَ مُؤَلَّفاً مُلَوَّناً: وَ أَعْجَزَ الْأَلْسُنَ عَنْ تَلْخِيصِ صِفَتِهِ، وَ قَعَدَ بِها عَنْ تَأْدِيَةِ نَعْتِهِ!
عجائب فی خلقة الحشرات
سُبْحَانَ مَنْ أَدْمَجَ قَوَائِمَ الذَّرَّةِ وَالْهَمَجَةِ إ لى ما فَوْقَهُمَا مِنْ خَلْقِ الْحِيتانِ وَالْفِيَلَةِ! وَ وَأَى عَلَى نَفْسِهِ أَنْ لا يَضْطَرِبَ شَبَحٌ مِمَّا أَوْلَجَ فِيهِ الرُّوحَ، إِلا وَ جَعَلَ الْحِمامَ مَوْعِدَهُ، وَالْفَنَأَ غَايَتَهُ.
خصائص الجنة
فَلَوْ رَمَيْتَ بِبَصَرِ قَلْبِكَ نَحْوَ ما يُوصَفُ لَكَ مِنْهَا لَعَزَفَتْ نَفْسُكَ عَنْ بَدائِعِ ما أُخْرِجَ إِلَى الدُّنْيَا مِنْ شَهَوَاتِها وَ لَذَّاتِها وَ زَخارِفِ مَناظِرِها، وَ لَذَهِلَتْ بِالْفِكْرِ فِي اصْطِفاقِ أَشْجَارٍ غُيِّبَتْ عُرُوقُها فِي كُثْبانِ الْمِسْكِ عَلَى سَواحِلِ أَنْهارِها، وَ فِي تَعْلِيقِ كَبائِسِ اللُّؤْلُؤِ الرَّطْبِ فِي عَسالِيجِها وَ أَفْنانِها، وَ طُلُوعِ تِلْكَ الثِّمارِ مُخْتَلِفَةً فِي غُلُفِ أَكْمامِها، تُجْنَى مِنْ غَيْرِ تَكَلُّفٍ، فَتَأْتِي عَلَى مُنْيَةِ مُجْتَنِيهَا، وَ يُطافُ عَلَى نُزَّالِها فِي أَفْنِيَةِ قُصُورِها بِالْأَعْسالِ الْمُصَفَّقَةِ، وَالْخُمُورِ الْمُرَوَّقَةِ، قَوْمٌ لَمْ تَزَلِ الْكَرَامَةُ تَتَمادى بِهِمْ حَتَّى حَلُّوا دارَ الْقَرارِ، وَ أَمِنُوا نُقْلَةَ الْأَسْفَارِ. فَلَوْ شَغَلْتَ قَلْبَكَ أَيُّهَا الْمُسْتَمِعُ بِالْوُصُولِ إِلَى ما يَهْجُمُ عَلَيْكَ مِنْ تِلْكَ الْمَناظِرِ الْمُونِقَةِ، لَزَهِقَتْ نَفْسُكَ شَوْقا إِلَيْهَا، وَ لَتَحَمَّلْتَ مِنْ مَجْلِسِي هَذا إِلَى مُجاوَرَةِ أَهْلِ الْقُبُورِ اسْتِعْجَالاً بِهَا. جَعَلَنَا اللَّهُ وَ إِيَّاكُمْ مِمَّنْ يَسْعَى بِقَلْبِهِ إِلى مَنازِلِ الْأَبْرارِ بِرَحْمَتِهِ.
ময়ূর পাখীর বিস্ময়কর সৃষ্টি সম্পর্কে
জীবিত ,জীবনবিহীন ,স্থির ও চলমান অনেক বিস্ময়কর প্রাণী ও বস্তু আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাঁর সূক্ষ্ম সৃষ্টি ক্ষমতা ও কুদরতের এমন সুস্পষ্ট প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করেছেন যাতে মানুষের মন তার স্বীকৃতি স্বরূপ আল্লাহর প্রতি ঝুকে পড়ে ও আনুগত্য করে এবং তাঁর একত্বের সুর যেন আমাদের কানে বাজে। তিনি বিভিন্ন আকৃতির পাখী সৃষ্টি করেছেন। এদের কোনটি মাটি খুড়ে গর্ত করে বাস করে ,কোনটি খোলা জায়গায় বাস করে এবং কোনটি পর্বতের চূড়ায় বাস করে। এদের বিভিন্ন প্রকারের পাখা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আল্লাহর কর্তৃত্বের রশি দ্বারা এরা নিয়ন্ত্রিত। এরা পাখা ঝাপটিয়ে খোলা আকাশে দ্রুত উড়ে বেড়ায়। এক অদ্ভুত আকৃতিতে তিনি এদের অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছেন এবং অস্থি ও গ্রন্থি মাংশাবৃত করে তৈরি করেছেন। এদের কতেককে ভারী দেহের কারণে সহজে উড়ে বেড়ানো থেকে বিরত করেছেন এবং পাখা ব্যবহার করে মাটি থেকে অল্প উপরে চলার অনুমতি দিয়েছেন। তিনি তাঁর কুদরত ও সৌন্দর্যপূর্ণ সৃষ্টি ক্ষমতা দ্বারা এদের বিভিন্ন রঙে সৃষ্টি করেছেন । এদের মধ্যে কোন একটির বর্ণের ওপর অন্য বর্ণের আভা থাকলে তা অন্য কোনটির সাথে মিলবে না। কোন কোনটির আবার এক রঙের আভা থাকে এবং তাদের গলায় বিভিন্ন রঙের রিং করা থাকে যা দেহের রঙ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
পাখীর মধ্যে ময়ূর হচ্ছে বিস্ময়কর সৃষ্টি যা আল্লাহ অতি প্রতিসম মাত্রায় সৃষ্টি করেছেন এবং এর রঙ সুন্দরভাবে পাখায় ও লম্বা লেজে সমাবেশিত করেছেন। ময়ূর যখন ময়ুরীর কাছে যায় তখন ময়ূরী লেজ উত্তোলন করে এমনভাবে ছড়িয়ে দেয় মনে হয় যেন সে ময়ুরের মাথায় ছায়া দিচ্ছে। এ সময় লেজ দেখলে মনে হয় নৌকায় তোলা পাল । এরা নিজের রঙের জন্য গর্ববোধ করে এবং সদম্ভে চলাফেরা করে। এরা মোরগের মতো যৌনসঙ্গমে মিলিত হয়। কামুক সুঠামদেহী মানুষের মতো ময়ূর ময়ুরীকে ঝাপটে ধরে ।
আমি যা বলছি তা আমার পর্যবেক্ষণ থেকে বলছি। অন্যের বর্ণনা করা বিষয় বলি না। যেমন অনেকে বলে থাকে ময়ূরের চোখের পানি ময়ূরী খেয়ে ফেলে এবং তাতে ময়ূরী ডিম পাড়ে। প্রকৃতপক্ষে ময়ূর মোরগের মতোই প্রজনন ক্রিয়া করে। এদের পালকগুলো যেন রৌপ্য নির্মিত ছবি এবং তাতে রয়েছে বিস্ময়কর বৃত্ত ও সূর্যকৃতি পালক যা বিশুদ্ধ স্বর্ণ ও সবুজ পান্নার মতো দেখায়। এটাকে যদি মাটিতে জন্মানো কোন কিছুর সাথে তুলনা করতে হয় তবে বলতে হবে বসন্তের একগুচ্ছ ফুল ;যদি কাপড়ের সঙ্গে তুলনা করতে হয় তবে বলতে হবে ইয়েমেনে তৈরি চিত্র বিচিত্র ছাপযুক্ত রেশমি কাপড় এবং যদি অলঙ্কারের সাথে তুলনা করতে হয় তবে বলতে হবে বিভিন্ন রঙের রত্ন খচিত অলঙ্কার যাতে রৌপ্যের বোতাম খচিত ।
ময়ূর সদর্পে চলাফেরা করে ,এর লেজ ও পাখা ছড়িয়ে দেয় এবং এর পোষাকের সৌন্দর্যের প্রশংসায় ও রত্নখচিত গলার হারের রঙে হেসে ওঠে ,নাচতে থাকে। কিন্তু যখন নিজের পায়ের দিকে তাকায় তখন শোক দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশক শব্দে কেঁদে ওঠে। কারণ এদের পাগুলো কুৎসিত ,ইন্দো - পারস্য সংকর জাতের মোরগের মতো।
এদের জঙ্ঘার শেষভাগে একটা সরু কাটা আছে এবং মাথার মুকুটে একগুচ্ছ সবুজ রঙের কির্মীরিত পালক আছে। এদের গলা পান - পাত্রের আকৃতির মতো এবং পেট পর্যন্ত বিস্তৃত ইয়েমেনের চুলের কলাপের মতো রঙের মত। এদের কানের পাশে একটা উজ্জ্বল রেখা আছে যা ডেইজি ফুলের রঙের মতো এবং কলমের অগ্রভাগের মতো সরু। এমন কোন রঙ নেই যার কিছু না কিছু ময়ুরের গায়ে নেই। ময়ূরের এ সুন্দর পালক ঝরে পড়ে যায়। তখন মনে হয় এরা পোষাক খুলে ফেলেছে। পুচ্ছগুলো ঝরে গিয়ে গাছের পাতার মতো পুনরায় গজায়। পালক ঝরে গিয়ে নতুন পালক গজানোর ফলে কোন রঙের পরিবর্তন হয় না বা যে রঙ যেখানে ছিল ঠিক সেখানেই তা থাকে।
বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা বা ভাষায় এহেন একটা সৃষ্টির বর্ণনা করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। চোখের সামনে রাখা সৃষ্টির রূপ বৈচিত্র্য ও গুণাবলী সম্পূর্ণ বর্ণনা করার জন্য মহিমান্বিত আল্লাহ মানুষের ভাষা ও বুদ্ধিমত্তাকে অক্ষম করেছেন।
স্রষ্টার ক্ষুদ্র সৃষ্টিতেও চমৎকারিত্ব
তিনিই মহিমান্বিত আল্লাহ্ যিনি ক্ষুদ্র পিপীলিকা ও ছারপোকাকে পা দিয়েছেন। আবার সরীসৃপ এবং হস্তীকেও পা দিয়েছেন। আবার তিনি এটা বাধ্যতামূলক করেছেন যে ,রূহ সঞ্চার না করলে কোন প্রকার কঙ্কাল নড়াচড়া করতে পারবে না এবং মৃত্যু এর প্রতিশ্রুত স্থান ও ধ্বংস এর চূড়ান্ত পরিণতি।
জান্নাতের বর্ণনা
জান্নাতের যে বর্ণনা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে তার প্রতি যদি তোমরা তোমাদের মনের চোখ দিয়ে একবার দৃষ্টিপাত কর তাহলে তোমরা এ দুনিয়ার যা কিছু সৌন্দর্য দেখছো তাকে ঘৃণা করতে শুরু করবে। দুনিয়ার কামনা - বাসনা ,এর আনন্দ উপভোগ ,এর চাকচিক্য ও সৌন্দর্য - এসব কিছুকে তোমরা ঘৃণা করবে। জান্নাতের স্রোতস্বিনীর পাড়ে গাছের মরমর শব্দে তোমরা নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলবে। গাছের ডালে সুশোভিত ফুল ও ফল দেখে তোমরা মোহিত হয়ে পড়বে। এসব ফল পাড়তে কোন কষ্ট হয় না ;পাওয়ার ইচ্ছা হলেই ফল তোমাদের কাছে চলে আসবে। বিশুদ্ধ মধু ও উত্তেজক মদ তাদের চারপাশে থাকবে যারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে। তারা সেসব লোক সম্মান যাদেরকে চিরস্থায়ী বাসস্থানে যাবার পূর্ব পর্যন্ত অনুসরণ করে এবং ভ্রমণের কষ্টের পর তারা সেখানে বিশ্রাম গ্রহণ করে। হে শ্রোতামণ্ডলী ,এসব বিস্ময়কর দৃশ্য দেখার জন্য যদি তোমরা ব্যস্ত হও তবে নিশ্চয়ই আগ্রহের কারণে তোমাদের হৃদয় মরে যাবে এবং আমার সম্মুখ থেকে উঠে সরাসরি তাদের সঙ্গী হবার প্রস্তুতি নিতে যারা কবরে আছে। আল্লাহ তার অসীম দয়া দ্বারা আমাদের ও তোমাদের হৃদয়ে জান্নাতে বসবাসের লালসা জাগারুক করুন।
খোৎবা -
১৬৫
لِيَتَأَسَّ صَغِيرُكُمْ بِكَبِيرِكُمْ، وَ لْيَرْأَفْ كَبِيرُكُمْ بِصَغِيرِكُمْ؛ وَ لا تَكُونُوا كَجُفَاةِ الْجَاهِلِيَّةِ: لا فِي الدِّينِ يَتَفَقَّهُونَ، وَ لا عَنِ اللَّهِ يَعْقِلُونَ، كَقَيْضِ بَيْضٍ فِي أَدَاحٍ، يَكُونُ كَسْرُها وِزْراً، وَ يُخْرِجُ حِضانُها شَرّاً.
افْتَرَقُوا بَعْدَ أُلْفَتِهِمْ، وَ تَشَتَّتُوا عَنْ أَصْلِهِمْ، فَمِنْهُمْ آخِذٌ بِغُصْنٍ، أَيْنَما مَالَ مَالَ مَعَهُ، عَلَى أَنَّ اللَّهَ تَعالَى سَيَجْمَعُهُمْ لِشَرِّ يَوْمٍ لِبَنِي أُمَيَّةَ كَما يَجْتَمِعُ قَزَعُ الْخَرِيفِ، يُؤَلِّفُ اللَّهُ بَيْنَهُمْ ثُمَّ يَجْمَعُهُمْ رُكَاما كَرُكامِ السَّحَابِ، ثُمَّ يَفْتَحُ لَهُمْ أَبْوابا يَسِيلُونَ مِنْ مُسْتَثارِهِمْ كَسَيْلِ الْجَنَّتَيْنِ، حَيْثُ لَمْ تَسْلَمْ عَلَيْهِ قارَةٌ وَ لَمْ تَثْبُتْ عَلَيْهِ أَكَمَةٌ، وَ لَمْ يَرُدَّ سُنَنَهُ رَصُّ طَوْدٍ وَ لا حِدابُ أَرْضٍ. يُذَعْذِعُهُمُ اللَّهُ فِي بُطُونِ أَوْدِيَتِهِ، ثُمَّ يَسْلُكُهُمْ يَنابِيعَ فِي الْأَرْضِ، يَأْخُذُ بِهِمْ مِنْ قَوْمٍ حُقُوقَ قَوْمٍ، وَ يُمَكِّنُ لِقَوْمٍ فِي دِيارِ قَوْمٍ، وَ ايْمُ اللَّهِ، لَيَذُوبَنَّ مَا فِي أَيْدِيهِمْ بَعْدَ الْعُلُوِّ وَ التَّمْكِينِ، كَما تَذُوبُ الْأَلْيَةُ عَلَى النَّارِ.
أَيُّهَا النَّاسُ، لَوْ لَمْ تَتَخاذَلُوا عَنْ نَصْرِ الْحَقِّ، وَ لَمْ تَهِنُوا عَنْ تَوْهِينِ الْباطِلِ، لَمْ يَطْمَعْ فِيكُمْ مَنْ لَيْسَ مِثْلَكُمْ، وَ لَمْ يَقْوَ مَنْ قَوِيَ عَلَيْكُمْ، لَكِنَّكُمْ تِهْتُمْ مَتاهَ بَنِي إِسْرائِيلَ. وَ لَعَمْرِي، لَيُضَعَّفَنَّ لَكُمُ التِّيهُ مِنْ بَعْدِي أَضْعَافا بِما خَلَّفْتُمُ الْحَقَّ وَرأَ ظُهُورِكُمْ، وَ قَطَعْتُمُ الْأَدْنَى، وَ وَصَلْتُمُ الْأَبْعَدَ، وَ اعْلَمُوا أَنَّكُمْ إِنِ اتَّبَعْتُمُ الدَّاعِيَ لَكُمْ، سَلَكَ بِكُمْ مِنْهاجَ الرَّسُولِ، وَ كُفِيتُمْ مَؤ ونَةَ الاِعْتِسَافِ، وَ نَبَذْتُمُ الثِّقْلَ الْفادِحَ عَنِ الْأَعْناقِ.
উমাইয়াদের স্বৈরশাসন ও অত্যাচার সম্পর্কে
তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃকনিষ্ঠ তারা বয়ঃজ্যেষ্ঠদের অনুসরণ করবে এবং বয়ঃজ্যেষ্ঠগণ কনিষ্ঠগণের প্রতি সদয় আচরণ করবে। জাহেলিয়া যুগের রূঢ় লোকদের মতো হয়ে না যারা দ্বীনের চর্চা করেনি এবং আল্লাহর ব্যাপারে তাদের বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগায়নি। তাদের নিয়ে বিপজ্জাজনক পাখীর বাসায় ডিম ভেঙ্গে দেয়ার অবস্থা দাঁড়িয়েছে। কারণ ডিম ভাঙ্গার কাজ দেখতে খারাপ দেখায়। আবার না ভাঙ্গা মানেই হলো বিপদজনক পাখীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ।
তাদের ঐক্যের পর তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হবে এবং তারা তাদের কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়বে। তাদের কতেক লোক শাখার সঙ্গে লেগে থাকবে এবং শাখা নুয়ে পড়লে তারাও নুয়ে পড়বে। মহিমান্বিত আল্লাহ যেদিন তাদেরকে শরতের ছড়ানো ছিটানো মেঘের মতো একত্রিত করবে: সেদিনটি উমাইয়াদের জন্য বড়ই দুর্ভাগ্যজনক হবে। আল্লাহ তাদের মধ্যে মায়া - মমতার সঞ্চার করবেন। তারপর তিনি তাদেরকে একটা শক্তিশালী জনগোষ্ঠীতে পরিণত করবেন। এরপর তিনি তাদেরকে তাদের যাত্রাস্থল থেকে প্রবাহিত হবার জন্য দরজা খুলে দেবেন যেভাবে বন্যা প্রবাহিত হয়েছিল সাবার দুটি বাগান থেকে ,যে প্রবাহ থেকে উচু পর্বত ও ছোট পাহাড় কিছুই রক্ষা পায়নি এবং পাহাড় ,পর্বত ,উচু ভূমি কোন কিছুই সেই প্রবাহ থামিয়ে দিতে পারেনি। আল্লাহ তাদেরকে উপত্যকার নিচু ভূমিতে ছড়িয়ে দেবেন এবং তিনি তাদেরকে স্রোতের মতো সারা পৃথিবীতে প্রবাহিত করবেন। তিনি তাদের মাধ্যমে একজনের অধিকার অন্যজনকে দিয়ে হরণ করাবেন এবং একজনের ঘরে অন্যজনকে বসবাসের ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহর কসম ,তাদের সকল মর্যাদা ,সুনাম ও প্রতিপত্তি এমনভাবে গলে যাবে যেভাবে আগুনে চর্বি গলে যায় ।
হে জনমণ্ডলী ,যদি তোমরা সত্যকে সমর্থন দেয়া কৌশলে এড়িয়ে না যেতে এবং অন্যায়কে ধ্বংস করতে দুর্বলতা অনুভব না করতে তাহলে যারা তোমাদের সমকক্ষ ছিল না তাদের লক্ষ্যস্থলে তোমরা পরিণত হতে না এবং যারা তোমাদেরকে পরাভূত করেছিল তারা তা করতে পারতো না। কিন্তু বনি ইসরাইলের মতো তোমরা (অবাধ্যতার) মরুভূমিতে ঘুরে বেড়িয়েছিলে। আমার জীবনের শপথ করে বলছি যে ,আমার পরে তোমাদের দুঃখ - দুর্দশা বহুগুণ বেড়ে যাবে। কারণ তোমরা সত্যকে পরিত্যাগ করবে ,আপনজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে এবং দূরবর্তীগণের সাথে আত্মীয়ের সম্পর্ক স্থাপন করবে। জেনে রাখো ,যে ব্যক্তি তোমাদেরকে হেদায়েতের দিকে আহবান করছিলো তোমরা যদি তাকে অনুসরণ করতে তবে তিনি তোমাদেরকে রাসূলের (সা.) পথে নিয়ে যেতেন। তাতে তোমরা গোমরাহির বিপদ থেকে রক্ষা পেতে এবং সেক্ষেত্রে তোমাদের ঘাড় থেকে অন্যায়ের বোঝা নামিয়ে ফেলতে পারতে।
খোৎবা -
১৬৬
إِنَّ اللَّهَسُبْحَانَهُ
أَنْزَلَ كِتَاباً هَادِياً بَيَّنَ فِيهِ الْخَيْرَ وَ الشَّرَّ؛ فَخُذُوا نَهْجَ الْخَيْرِ تَهْتَدُوا، وَ اصْدِفُوا عَنْ سَمْتِ الشَّرِّ تَقْصِدُوا. الْفَرَائِضَ الْفَرَائِضَ! أَدُّوهَا إِلَى اللَّهِ تُؤَدِّكُمْ إِلَى الْجَنَّةِ. إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ حَرَاما غَيْرَ مَجْهُولٍ وَ أَحَلَّ حَلاَلاً غَيْرَ مَدْخُولٍ، وَ فَضَّلَ حُرْمَةَ الْمُسْلِمِ عَلَى الْحُرَمِ كُلِّهَا، وَ شَدَّ بِالْإِخْلاَصِ وَ التَّوْحِيدِ حُقُوقَ الْمُسْلِمِينَ فِي مَعَاقِدِهَا.
«فَالْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَ يَدِهِ»
إِلا بِالْحَقِّ وَ لاَ يَحِلُّ أَذَى الْمُسْلِمِ إِلا بِمَا يَجِبُ.
بَادِرُوا أَمْرَ الْعَامَّةِ وَ خَاصَّةَ أَحَدِكُمْ وَ هُوَ الْمَوْتُ، فَإِنَّ النَّاسَ أَمَامَكُمْ وَ إِنَّ السَّاعَةَ تَحْدُوكُمْ مِنْ خَلْفِكُمْ. تَخَفَّفُوا تَلْحَقُوا، فَإِنَّمَا يُنْتَظَرُ بِأَوَّلِكُمْ آخِرُكُمْ. اتَّقُوا اللَّهَ فِي عِبَادِهِ وَ بِلاَدِهِ فَإِنَّكُمْ مَسْئُولُونَ حَتَّى عَنِ الْبِقَاعِ وَ الْبَهَائِمِ. أَطِيعُوا اللَّهَ وَ لاَ تَعْصُوهُ وَ إِذَا رَأَيْتُمُ الْخَيْرَ فَخُذُوا بِهِ وَ إِذَا رَأَيْتُمُ الشَّرَّ فَأَعْرِضُوا عَنْهُ.
দায়িত্ব ও কর্তব্য পরিপূরণের জন্য খেলাফতের প্রারম্ভে প্রদত্ত ভাষণ
মহিমান্বিত আল্লাহ একটা হেদায়েতপূর্ণ কিতাব প্রেরণ করেছেন যাতে পাপ ও পূণ্য এবং ন্যায় ও অন্যায়ের বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন । তোমরা দ্বীনের পথ অবলম্বন করবে ,তাতে হেদায়েত লাভ করতে পারবে এবং পাপের পথ থেকে দূরে সরে থাকবে যাতে তোমরা ন্যায় পথে থাকতে পার। তোমাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ কর ;আল্লাহর জন্য সেসব দায়িত্ব পরিপূর্ণ কর এবং তাই তোমাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। নিশ্চয়ই ,আল্লাহ সেসব বস্তু হারাম করেছেন যা অজানা নয় এবং সেসব বস্তু হালাল করেছেন যাতে কোন ত্রুটি নেই। তিনি ঘোষণা করেছেন মুসলিমকে সম্মান দেখানোই সেরা সম্মান । মুসলিমদের অধিকারকে তিনি তার নিজের ও তাঁর একত্বের প্রতি অনুরাগের সমতুল্য গুরুত্ব প্রদান করেছেন। সুতরাং সত্যের ব্যাপার ছাড়া অন্য যে কোন বিষয়ে যে ব্যক্তির জিহ্বা ও হাত হতে অন্য মুসলিম নিরাপদ প্রকৃত অর্থে তিনিই মুসলিম। ফলে একান্ত বাধ্যতামূলক না হলে কোন মুসলিমকে উৎপীড়ন করা বৈধ নয়।
প্রত্যেকের জন্য যে ব্যাপারটি সাধারণ তার প্রতি খেয়াল কর এবং এটা হচ্ছে মৃত্যু। নিশ্চয়ই ,যারা তোমাদের পূর্বে চলে গেছে তাদের সে ক্ষণটি তোমাদেরকে পিছন থেকে তাড়া করছে। নিজেকে হালকা রাখ যেন তোমরা তাদের নাগাল ধরতে পার । তোমাদের অতীতকে ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করানো হচ্ছে। আল্লাহকে তাঁর সৃষ্টি ও তাঁর নগরীর জন্য ভয় কর। কারণ ,ভূমি ও পশু সম্বন্ধেও তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে। আল্লাহর অনুগত হও এবং তার অবাধ্য হয়ে না। যখনই ন্যায় দেখ তখনই তা গ্রহণ করো এবং যখনই পাপ দেখ তখনই তা পরিহার করো।
খোৎবা -
১৬৭
بَعْدَ ما بُويِعَ بِالْخِلافَةِ، وَ قَدْ قالَ لَهُ قَومْ مِنَ الصَّحابَةِ لَوْ عاقَبْتَ قَوْمامِمَّن أَجْلَبَ عَلى عُثْمانِ؟ فَقَالِعليهالسلام
:
يَا إِخْوَتَاهُ! إِنِّي لَسْتُ أَجْهَلُ مَا تَعْلَمُونَ، وَ لَكِنْ كَيْفَ لِي بِقُوَّةٍ وَ الْقَوْمُ الْمُجْلِبُونَ عَلَى حَدِّ شَوْكَتِهِمْ يَمْلِكُونَنَا وَ لاَ نَمْلِكُهُمْ! وَ هَا هُمْ هَؤُلاَءِ قَدْ ثَارَتْ مَعَهُمْ عِبْدَانُكُمْ، وَ الْتَفَّتْ إِلَيْهِمْ أَعْرَابُكُمْ وَ هُمْ خِلاَلَكُمْ يَسُومُونَكُمْ مَا شَأؤوا؛ وَ هَلْ تَرَوْنَ مَوْضِعاً لِقُدْرَةٍ عَلَى شَيْءٍ تُرِيدُونَهُ!
إِنَّ هَذَا الْأَمْرَ أَمْرُ جَاهِلِيَّةٍ وَ إِنَّ لِهَؤُلاَءِ الْقَوْمِ مَادَّةً. إِنَّ النَّاسَ مِنْ هَذَا الْأَمْرِ -إِذَا حُرِّكَ
- عَلَى أُمُورٍ: فِرْقَةٌ تَرَى مَا تَرَوْنَ وَ فِرْقَةٌ تَرَى مَا لاَ تَرَوْنَ، وَ فِرْقَةٌ لاَ تَرَى هَذَا وَ لاَ هَذَا، فَاصْبِرُوا حَتَّى يَهْدَأَ النَّاسُ وَ تَقَعَ الْقُلُوبُ مَوَاقِعَهَا وَ تُؤْخَذَ الْحُقُوقُ مُسْمَحَةً. فَاهْدَؤُوا عَنِّي، وَ انْظُرُوا مَاذَا يَأْتِيكُمْ بِهِ أَمْرِي وَ لاَ تَفْعَلُوا فَعْلَةً تُضَعْضِعُ قُوَّةً وَ تُسْقِطُ مُنَّةً وَ تُورِثُ وَهْنا وَ ذِلَّةً. وَ سَأُمْسِكُ الْأَمْرَ مَا اسْتَمْسَكَ. وَ إِذَا لَمْ أَجِدْ بُدّا فَآخِرُ الدَّوَأِ الْكَيُّ.
উসমানের হত্যাকারীদেরকে শাস্তি প্রদানের দাবির প্রেক্ষিতে প্রদত্ত খোৎবা
আমিরুল মোমেনিনের হাতে বায়াত গ্রহণের পর রাসূলের কতিপয় সাহাবি বললেন ,“
যারা উসমানকে হত্যা করেছে তাদেরকে শাস্তি দেয়া উচিৎ। ” এতে আমিরুল মোমেনিন বললেনঃ
হে ভ্রাতৃবৃন্দ ,তোমরা যা জানো সে বিষয়ে আমি অজ্ঞ নই। কিন্তু যারা উসমানকে হত্যা করেছে তারা ক্ষমতার উচ্চ শিখরে বসে আছে ;তাদের শাস্তি দেয়ার শক্তি আমি কোথায় পাব। তাদের সৈন্য - সামন্ত ও সুযোগ - সুবিধা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। তারা এখন এমন অবস্থানে আছে যে ,তোমাদের ক্রীতদাস ও আরব বেদুইনগণ তাদের সাথে যোগ দিয়েছে। তারা এখন তোমাদের মাঝেই রয়েছে এবং যেমন খুশী তোমাদের ক্ষতিসাধন করে চলছে। তোমরা যে লক্ষ্য স্থির করেছো তা অর্জনের উপায় কি তোমরা আমাকে বলে দিতে পার ?
এ দাবি নিশ্চয়ই জাহেলিয়া যুগের এবং এ সমস্ত লোকের পিছনে অনেকের সমর্থন রয়েছে। আমরা এ ব্যাপারটি এখন হাতে নিলে মানুষ এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করবে। তোমরা যা ভাবছো একদল তা - ই ভাববে। কিন্তু অন্যদল তোমাদের সঙ্গে একমত হবে না। আবার অন্য এক দল হবে যারা এদিকও ভাববে না ,ওদিকও ভাববে না। জনগণ শান্ত হওয়া ও তাদের হৃদয়ে স্থিরতা ফিরে আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ কর। তাতে অধিকার আদায় করা মানুষের জন্য সহজ হবে। আমার প্রতি আস্থা রাখা এবং দেখ আমি তোমাদের জন্য কী করতে পারি। এমন কিছু এখন করো না যা তোমাদের ক্ষমতাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে ,তোমাদের শক্তিকে দুর্বল করে দেবে এবং যা তোমাদের মনোবল ও সম্মান ক্ষুন্ন করবে। এ ব্যাপারটা আমি যতটুকু সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করবো এবং প্রয়োজনে শেষ চিকিৎসা হিসাবে উত্তপ্ত লোহার ছেকা দ্বারা (যুদ্ধের মাধ্যমে) । ফয়সালা করবো।
খোৎবা -
১৬৮
عِندَ مَسِيرِ أصْحابِ الْجَمَلِ إ لَى الْبَصْرَةِ:
إِنَّ اللَّهَ بَعَثَ رَسُولاً هَادِياً بِكِتَابٍ نَاطِقٍ وَ أَمْرٍ قَائِمٍ، لاَ يَهْلِكُ عَنْهُ إِلا هَالِكٌ، وَ إِنَّ الْمُبْتَدَعَاتِ الْمُشَبَّهَاتِ هُنَّ الْمُهْلِكَاتُ، إِلا مَا حَفِظَ اللَّهُ مِنْهَا. وَ إِنَّ فِي سُلْطَانِ اللَّهِ عِصْمَةً لِأَمْرِكُمْ، فَأَعْطُوهُ طَاعَتَكُمْ غَيْرَ مُلَوَّمَةٍ وَ لاَ مُسْتَكْرَهٍ بِهَا. وَ اللَّهِ لَتَفْعَلُنَّ أَوْ لَيَنْقُلَنَّ اللَّهُ عَنْكُمْ سُلْطَانَ الْإِسْلاَمِ، ثُمَّ لاَ يَنْقُلُهُ إِلَيْكُمْ أَبَداً حَتَّى يَأْرِزَ الْأَمْرُ إِلَى غَيْرِكُمْ.
إِنَّ هَؤُلاَءِ قَدْ تَمَالَئُوا عَلَى سَخْطَةِ إِمَارَتِي، وَ سَأَصْبِرُ مَا لَمْ أَخَفْ عَلَى جَمَاعَتِكُمْ: فَإِنَّهُمْ إِنْ تَمَّمُوا عَلَى فَيَالَةِ هَذَا الرَّأْيِ انْقَطَعَ نِظَامُ الْمُسْلِمِينَ، وَ إِنَّمَا طَلَبُوا هَذِهِ الدُّنْيَا حَسَداً لِمَنْ أَفَأَهَا اللَّهُ عَلَيْهِ، فَأَرَادُوا رَدَّ الْأُمُورِ عَلَى أَدْبَارِهَا، وَ لَكُمْ عَلَيْنَا الْعَمَلُ بِكِتَابِ اللَّهِ تَعَالَى وَ سِيرَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيهِ وَ آلِه وَ الْقِيَامُ بِحَقِّهِ وَ النَّعْشُ لِسُنَّتِهِ.
জামালের যুদ্ধের জন্য বসরা অভিমুখে যাত্রাকালে প্রদত্ত খোৎবা
জামালের যুদ্ধের জন্য জনগণ যখন বসরা অভিমুখে যাত্রা করেছিলো তখন আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ
এতে কোন সন্দেহ নেই যে ,মহিমান্বিত আল্লাহ একটা বাগ্মী কিতাব ও একটি স্থায়ী আদেশসহ রাসূলকে (সা.) পথ প্রদর্শক হিসাবে প্রেরণ করেছেন। নিজেকে নিজে ধ্বংসকারী ছাড়া এর দ্বারা আর কেউ ধ্বংস হবে না। নিশ্চয়ই বিদআত ধ্বংসের কারণ ,যদি না তা থেকে আল্লাহ কাউকে রক্ষা করেন। তোমাদের কর্মকান্ডের নিরাপত্তা আল্লাহর কর্তৃত্বের মধ্যে নিহিত। সুতরাং তাঁর এমন আনুগত হও যা হবে দোষ - ত্রুটিমুক্ত ও গভীরভাবে আন্তরিক। আল্লাহর কসম ,তোমরা দোষ - ত্রুটি মুক্ত আন্তরিক আনুগত্য স্বীকার না করলে আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে ইসলামের শক্তি কেড়ে নিয়ে যাবেন এবং আর কোন দিন তা ফিরিয়ে না দিয়ে অন্যের ওপর তা অর্পণ করবেন।
নিশ্চয়ই এসব লোক আমার কর্তৃত্ব অস্বীকার করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। আমি তোমাদের মধ্যে অনৈক্য দেখা পর্যন্ত সহ্য করে যাব। কারণ তাদের অসার ও অযৌক্তিক মতের ফলেও যদি তারা কৃতকার্য হয় তবে সমগ্র মুসলিম সংগঠন ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। তারা ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে দুনিয়ার প্রতি লালায়িত হয়ে পড়েছে। তারা এমন একজনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় যাকে আল্লাহ তা দান করেছেন। সুতরাং তারা সকল বিষয়কে তাদের অতীতে (জাহেলি যুগে) ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। অপরপক্ষে ,তোমাদের খাতিরে মহিমান্বিত আল্লাহর কিতাবকে (কুরআন) মেনে চলা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। আল্লাহর রাসূলের (সা.) আচরণ বিধি ,আল্লাহর অধিকার রক্ষা করা ও সুন্নাহ পুনরুজ্জীবিত করে তা কায়েম রাখাও আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক।
খোৎবা -
১৬৯
كَلَّمَ بِهِ بَعْضَ الْعَربِ وَ قَدْ أَرْسَلَهُ قَوْمٌ مِنْ أَهْلِ الْبَصْرَةِ لَمَّا قَرُبَعليهالسلام
، مِنْهَا لِيَعْلَمَ لَهُمْ مِنْهُ حَقِيقَةَ حَالِهِ مَعَ أَصْحَابِ الْجَمَلِ لِتَزُولَ الشُّبْهَةُ مِنْ نُفُوسِهِمْ، فَبَيَّنَ لَهُعليهالسلام
، مِنْ أَمْرِهِ مَعَهُمْ مَا عَلِمَ بِهِ أَنَّهُ عَلَى الْحَقِّ، ثُمَّ قَالَ لَهُ: بَايِعْ، فَقَالَ: إِنِّي رَسُولُ قَوْمٍ وَ لاَ أُحْدِثُ حَدَثا حَتَّى أَرْجِعَ إِلَيْهِمْ، فَقَالَعليهالسلام
:
أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّ الَّذِينَ وَرَأَكَ بَعَثُوكَ رَائِداً تَبْتَغِي لَهُمْ مَسَاقِطَ الْغَيْثِ، فَرَجَعْتَ إِلَيْهِمْ وَ أَخْبَرْتَهُمْ عَنِ الْكَلاَءِ وَ الْمَأِ فَخَالَفُوا إِلَى الْمَعَاطِشِ وَ الْمَجَادِبِ، مَا كُنْتَ صَانِعا؟. قَالَ:كُنْتُ تَارِكَهُمْ وَ مُخَالِفَهُمْ إِلَى الْكَلاَ وَ الْمَأِ.
فَقَالَعليهالسلام
: فَامْدُدْ إِذا يَدَكَ.فَقَالَ الرَّجُلُ: فَوَ اللَّهِ مَا اسْتَطَعْتُ أَنْ أَمْتَنِعَ عِنْدَ قِيَامِ الْحُجَّةِ عَلَيَّ، فَبَايَعْتُهُ ع. (وَ الرَّجُلُ يُعْرَفُ بِكُلَيْبٍ الْجَرْمِيِّ)
.
আমিরুল মোমেনিন যখন বসরায় পৌছলেন তখন একজন আরব তার কাছে এসে বললো ,“
আমি বসরার একটা দলের প্রতিনিধি হিসাবে আপনার ও জামালের লোকদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে এসেছি। ” আমিরুল মোমেনিন তাদের সাথে তার অবস্থানের বিষয় ব্যাখ্যা করে লোকটিকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। এতে লোকটি বললো ,“
আপনি সত্য ও ন্যায় পথে আছেন। ” আমিরুল মোমেনিন তাকে বায়াত গ্রহণ করতে বললেন। প্রত্যুত্তরে লোকটি বললো“
আমি শুধুমাত্র একজন বার্তাবাহক হিসাবে এখানে এসেছি। আমার লোকদের কাছে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। ” তার কথা শুনে আমিরুল মোমেনিন বললেনঃ
তোমার পিছনে যেসব লোক রয়েছে তারা যদি তোমাকে তাদের জন্য একটা বৃষ্টি - বিধৌত এলাকা খুঁজে বের করতে প্রেরণ করে এবং তুমি তাদের কাছে ফিরে গিয়ে সবুজ - শ্যামলীমাপূর্ণ ও জলসমৃদ্ধ কোন জায়গার সংবাদ তাদের কাছে বলো এবং তারা যদি তোমার কথায় কর্ণপাত না করে শুষ্ক ও অনুর্বর ভূমির দিকে চলে যায়। তখন তুমি কী করবে ? সে বললো ,“
আমি তাদেরকে ত্যাগ করে সবুজ - শ্যামল ও জলসমৃদ্ধ এলাকায় যাব। ” আমিরুল মোমেনিন বললেন ,“
তাহলে বায়াতের জন্য তোমার হাত বাড়াও। ” পরবর্তীকালে এ লোকটি বর্ণনা করেছিল ,“
আল্লাহর কসম ,এরূপ সুস্পষ্ট যুক্তিপূর্ণ কথার পর আমি আমিরুল মোমেনিনের হাতে বায়াত গ্রহণ না করে থাকতে পারিনি। ” এ লোকটি হলেন কুলায়েব আল - যারামী ।