নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা0%

নাহজ আল-বালাঘা লেখক:
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ: হযরত আলী (আ.)

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক: আশ-শরীফ আর-রাজী
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ:

ভিজিট: 119890
ডাউনলোড: 7295

নাহজ আল-বালাঘা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 48 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 119890 / ডাউনলোড: 7295
সাইজ সাইজ সাইজ
নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বাংলা

রাসূলের (সা.) ‘জ্ঞান নগরীর দ্বার’ আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব ছিলেন তত্ত্বজ্ঞানী, দার্শনিক, সুলেখক ও বাগ্মী। আলঙ্কারিক শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ও নৈপুন্য অসাধারণ। তিনি নবুওয়াতী জ্ঞান ভান্ডার হতে সরাসরি জ্ঞান আহরণ করেন এবং সাহাবাদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী পন্ডিত ছিলেন। এতে কারো দ্বিমত নেই। আরবী কাব্যে ও সাহিত্যে তার অনন্যসাধারণ অবদান ছিল। খেলাফত পরিচালনা কালে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ (খোৎবা) দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকগণকে প্রশাসনিক বিষয়ে উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে পত্র লিখেছিলেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মানুষের অনেক প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছিলেন। তার এসব বাণী কেউকেউ লিখে রেখেছিল, কেউ কেউ মনে রেখেছিল, আবার কেউ কেউ তাদের লিখিত পুস্তকে উদ্ধৃত করেছিল। মোটকথা তার অমূল্য বাণীসমূহ মানুষের কাছে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ছিল।

আশ-শরীফ আর-রাজী আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিবের ভাষণসমূহ (খোৎবা), পত্রাবলী, নির্দেশাবলী ও উক্তিসমূহ সংগ্রহ করে “নাহজ আল-বালঘা” নামক গ্রন্থটি সঙ্কলন করেন।

খোৎবা - ১৭৬

نقد خیانة الحکمین

فَأَجْمَعَ رَأْيُ مَلَئِكُمْ عَلَى أَنِ اخْتارُوا رَجُلَيْنِ. فَأَخَذْنا عَلَيْهِما أَنْ يُجَعْجِعا عِنْدَ الْقُرْآنِ وَ لاَ يُجَاوِزَاهُ وَ تَكُونُ أَلْسِنَتُهُمَا مَعَهُ وَ قُلُوبُهُمَا تَبَعَهُ فَتَاهَا عَنْهُ وَ تَرَكَا الْحَقَّ وَ هُمَا يُبْصِرَانِهِ، وَ كَانَ الْجَوْرُ هَوَاهُمَا، وَ الاِعْوِجَاجُ رَأْيَهُمَا(دأبهما) . وَ قَدْ سَبَقَ اسْتِثْنَاؤُنَا عَلَيْهِمَا فِي الْحُكْمِ بِالْعَدْلِ وَ الْعَمَلِ بِالْحَقِّ سُوءَ رَأْيِهِمَا وَ جَوْرَ حُكْمِهِمَا(رأیهما) . وَ الثِّقَةُ فِي أَيْدِينَا لِأَنْفُسِنَا حِينَ خَالَفَا سَبِيلَ الْحَقِّ وَ أَتَيَا بِمَا لاَ يُعْرَفُ مِنْ مَعْكُوسِ الْحُكْمِ(الحقّ) .

সিফফিনের সালিশদ্বয় সম্পর্কে

তোমাদের দল দু ’ ব্যক্তিকে সালিশ মনোনয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলো। ফলে আমরা তাদের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছিলাম যে ,তারা কুরআন অনুযায়ী কাজ করবে এবং কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করবে: না। তারা মুখে ও অন্তরে প্রতিশ্রুতি পালনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবে। কিন্তু তারা তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গিয়ে তাদের চোখের সামনে যা সত্য ও ন্যায় ছিল তা পরিত্যাগ করলো। এরকম অন্যায় করাই তাদের ইচ্ছা ছিল এবং বিপথে চলে যাওয়াই তাদের অভ্যাস। তাদের সাথে আমাদের কথা ছিল যে ,তারা ন্যায় - নীতি অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে ;কুরআনের আলোকে কাজ করবে এবং তাদের ভুল বিচার ও মন্দ অভিমত পরিহার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এখন তারা ন্যায়ের পথ পরিহার করেছে এবং যা কথা ছিল তার বিপরীত কাজ করে বেরিয়ে এসেছে। সুতরাং তাদের এহেন রোয়েদাদ অস্বীকার করার জন্য আমাদের জোরালো যুক্তি ও ক্ষেত্র রয়েছে।

খোৎবা - ১৭৭

معرفة الله

لاَ يَشْغَلُهُ شَأْنٌ عَنْ شَأْنٍ، وَ لاَ يُغَيِّرُهُ زَمَانٌ، وَ لاَ يَحْوِيهِ مَكَانٌ وَ لاَ يَصِفُهُ لِسَانٌ، لاَ يَعْزُبُ عَنْهُ عَدَدُ قَطْرِ الْمَأِ، وَ لاَ نُجُومِ السَّمَأِ، وَ لاَ سَوَافِي الرِّيحِ فِي الْهَوَأِ وَ لاَ دَبِيبُ النَّمْلِ عَلَى الصَّفَا وَ لاَ مَقِيلُ الذَّرِّ فِي اللَّيْلَةِ الظَّلْمَأِ، يَعْلَمُ مَسَاقِطَ الْأَوْرَاقِ وَ خَفِيِّ طَرْفِ الْأَحْدَاقِ. وَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلا اللَّهُ غَيْرَ مَعْدُول بِهِ وَ لاَ مَشْكُوكٍ فِيهِ، وَ لاَ مَكْفُورٍ دِينُهُ، وَ لاَ مَجْحُودٍ تَكْوِينُهُ، شَهَادَةَ مَنْ صَدَقَتْ نِيَّتُهُ وَ صَفَتْ دِخْلَتُهُ وَ خَلَصَ يَقِينُهُ، وَ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ. وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدا عَبْدُهُ وَ رَسُولُهُ الَمْجُتْبَىَ مِنْ خَلاَئِقِهِ وَ الْمُعْتَامُ لِشَرْحِ حَقَائِقِهِ، وَ الْمُخْتَصُّ بِعَقَائِلِ كَرَامَاتِهِ، وَ الْمُصْطَفَى لِكَرَائِمِ رِسَالاَتِهِ، وَ الْمُوَضَّحَةُ بِهِ أَشْرَاطُ الْهُدَى، وَ الْمَجْلُوُّ بِهِ غِرْبِيبُ الْعَمَى.

الحذر من الدنیا

أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ الدُّنْيَا تَغُرُّ الْمُؤَمِّلَ لَهَا وَ الْمُخْلِدَ إِلَيْهَا، وَ لاَ تَنْفَسُ بِمَنْ نَافَسَ فِيهَا، وَ تَغْلِبُ مَنْ غَلَبَ عَلَيْهَا. وَ ايْمُ اللَّهِ، مَا كَانَ قَوْمٌ قَطُّ فِي غَضِّ نِعْمَةٍ مِنْ عَيْشٍ فَزَالَ عَنْهُمْ إِلا بِذُنُوبٍ اجْتَرَحُوهَا، لِ«أَنَّ اللّهَ لَيْسَ بِظَلاّمٍ لِلْعَبِيدِ» وَ لَوْ أَنَّ النَّاسَ حِينَ تَنْزِلُ بِهِمُ النِّقَمُ، وَ تَزُولَ عَنْهُمُ النِّعَمُ، فَزِعُوا إِلَى رَبِّهِمْ بِصِدْقٍ مِنْ نِيَّاتِهِمْ، وَ وَلَهٍ مِنْ قُلُوبِهِمْ، لَرَدَّ عَلَيْهِمْ كُلَّ شَارِدٍ، وَ أَصْلَحَ لَهُمْ كُلَّ فَاسِدٍ. وَ إِنِّي لَأَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تَكُونُوا فِي فَتْرَةٍ، وَ قَدْ كَانَتْ أُمُورٌ مَضَتْ مِلْتُمْ فِيهَا مَيْلَةً ،كُنْتُمْ فِيهَا عِنْدِي غَيْرَ مَحْمُودِينَ. وَ لَئِنْ رُدَّ عَلَيْكُمْ أَمْرُكُمْ إِنَّكُمْ لَسُعَدَأُ. وَ مَا عَلَيَّ إِلا الْجُهْدُ، وَ لَوْ أَشَأُ أَنْ أَقُولَ لَقُلْتُ: عَفَا اللّهُ عَمّا سَلَفَ!.

আল্লাহর প্রশংসা এবং দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ীত্ব সম্পর্কে

(উসমান নিহত হবার পর আমিরুল মোমেনিনের খেলাফতের প্রারম্ভে প্রদত্ত ভাষণ)

আল্লাহর প্রশংসা

এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় প্রবেশ করতে আল্লাহকে কোন কিছুই প্রতিহত করতে পারে না। সময় তার কোন পরিবর্তন আনতে পারে না। স্থান তাকে চিহ্নিত করতে পারে না এবং ভাষা দ্বারা তার বর্ণনা করা যায় না। পানির বিন্দুর সংখ্যা ,আকাশে তারকার সংখ্যা বা শূন্যে বায়ু - স্রোতের সংখ্যা - কোন কিছুই তাঁর অজানা নয়। পাথরের ওপর দিয়ে পিপীলিকার চলাচল অথবা অন্ধকার রাতে কীট - পতঙ্গের আশ্রয়স্থল - এসবও তাঁর অজানা নয়। তিনি জানেন কোথায় গাছের পাতা ঝরে পড়ে এবং চোখের মণির গোপন নড়াচড়াও তার অজানা নয়। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি ,আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই ,তার সমকক্ষ কোন কিছু নেই ,তার অস্তিত্বে কোন সংশয় নেই ,তাঁর দ্বীনে অস্বীকার করার কিছু নেই এবং তাঁর সৃষ্টি - ক্ষমতায় প্রশ্ন তোলার কোন কিছু নেই। আমার সাক্ষ্য সেব্যক্তির সাক্ষ্য যার নিয়্যত অবাধ ও মুক্ত ,যার বিবেক স্বচ্ছ ,যার ইমান পুত - পবিত্র এবং যার (আমলে সালেহার) পাল্লা ভারী। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি ,মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ,যাকে তিনি সৃষ্টির মধ্যে পছন্দ করে তাঁর বাস্তবতাকে নিয়ে কর্মসাধনের জন্য নির্বাচিত করেছেন এবং সম্মানিত ও মহান বাণীবাহক হিসাবে মনোনীত করেছেন। তার মাধ্যমে হেদায়েতের নিদর্শনাবলী ঘোষিত হয়েছে এবং গোমরাহি বিদূরিত হয়েছে।

দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ীত্ব

হে জনমণ্ডলী ,যে ব্যক্তি দুনিয়ার লালসা করে এর প্রতি আকৃষ্ট হয় দুনিয়া তাকে প্রবঞ্চনা করে। যে দুনিয়ার প্রত্যাশা করে দুনিয়া তার সাথে অকৃপণ আচরণ করে এবং যে দুনিয়াতে অভিভূত হয় দুনিয়া তাকে পরাভূত করে। আল্লাহর কসম ,কোন লোক জীবনের আস্বাদন গ্রহণের পর তা থেকে বঞ্চিত হয় না যে পর্যন্ত সে তা দ্বারা পাপে লিপ্ত না হয়। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি কখনো অবিচার করেন না। তাসত্ত্বেও মানুষের ওপর যখন বিপদাপদ নেমে আসে এবং তাদের আনন্দ - আয়েশ চলে যায়। তখন তারা খালেস নিয়্যত ও হৃদয়ের অনুভূতি দিয়ে আল্লাহর দিকে মুখ ফেরায় এই উদ্দেশ্যে যে ,তিনি যেন তাদেরকে সব কিছু ফিরিয়ে দেন যা তাদের কাছ থেকে চলে গেছে এবং যেন তাদের সকল অসুস্থতা নিরাময় করেন। আমার ভয় হয় পাছে তোমরা (রাসূলের আগমনের পূর্বেকার) জাহিলিয়াতে নিপতিত হও। অতীতে কিছু বিষয় ছিল যাতে তোমরা বিভ্রষ্ট ছিলে এবং আমার মতে তোমরা প্রশংসার যোগ্য নও। যদি তোমাদেরকে পূর্বেকার অবস্থা হতে ফিরিয়ে আনা যেত তবেই তোমরা ধার্মিক হতে। আমি শুধুমাত্র সংগ্রাম করে যেতে পারি ;আমাকে কথা বলতে হলে আমি শুধু বলবো আল্লাহ তোমাদের অতীত আমলসমূহ ক্ষমা করুন।

খোৎবা - ১৭৮

معرفة الله

وَ قَدْ سَأَلَهُ ذِعْلِبُ الْيَمَانِيُّ فَقَالَ: هَلْ رَأَيْتَرَبَّكَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ؟ فَقَالَع: أَفَأَعْبُدُ مَا لاَ أَرَى؟ فَقَالَ: وَ كَيْفَ تَرَاهُ؟ قَالَ:

لاَ تُدْرِكُهُ الْعُيُونُ بِمُشَاهَدَةِ الْعِيَانِ، وَ لَكِنْ تُدْرِكُهُ الْقُلُوبُ بِحَقَائِقِ الْإِيمَانِ. قَرِيبٌ مِنَ الْأَشْيَأِ غَيْرَ مُلاَبِسٍ، بَعِيدٌ مِنْهَا غَيْرَ مُبَايِنٍ، مُتَكَلِّمٌ لاَ بِرَوِيَّةٍ، مَرِيدٌ لاَ بِهِمَّةٍ، صَانِعٌ لاَ بِجَارِحَةٍ. لَطِيفٌ لاَ يُوصَفُ بِالْخَفَأِ، كَبِيرٌ لاَ يُوصَفُ بِالْجَفَأِ، بَصِيرٌ لاَ يُوصَفُ بِالْحَاسَّةِ، رَحِيمٌ لاَ يُوصَفُ بِالرِّقَّةِ، تَعْنُو الْوُجُوهُ لِعَظَمَتِهِ وَ تَجِبُ الْقُلُوبُ مِنْ مَخَافَتِهِ.

আল্লাহকে দেখা সম্পর্কে

যিলিব আল - ইয়েমেনী আমিরুল মোমেনিনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে ,তিনি আল্লাহকে দেখেছিলেন কিনা। উত্তরে তিনি বললেন , আমি কি এমন একজনের ইবাদত করি যাকে আমি দেখিনি ? যিলিব জানতে চাইলো ,আপনি তাঁকে কিরূপে দেখেছেন। তিনি প্রত্যুত্তরে বললেনঃ

চোখ দ্বারা তাকে মুখোমুখি দেখা যায় না ;কিন্তু ইমানের বাস্তবতার মাধ্যমে হৃদয় দিয়ে তাকে উপলব্ধি করা যায়। তিনি বস্তুর অতি সন্নিকটবর্তী কিন্তু ভৌত নৈকট্য দ্বারা নয়। তিনি সকল কিছু হতে দূরবর্তী কিন্তু ভৌতভাবে আলাদা হয়ে নয়। তিনি বক্তা কিন্তু অভিব্যক্তি দ্বারা নয়। তিনি ইচ্ছা করেন কিন্তু প্রস্তুতি দ্বারা নয়। তিনি নির্মাণ করেন কিন্তু অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ দ্বারা নয়। তিনি ইন্দ্রিয়ের অগোচর কিন্তু তাকে গুপ্ত বলা যায় না। তিনি মহান কিন্তু তাকে উদ্ধত বলা যায় না। তিনি দেখেন। কিন্তু দৃষ্টি ইন্দ্রিয় দ্বারা নয়। তিনি করুণাপ্রবণ কিন্তু একে হৃদয়ের দুর্বলতা বলা যায় না। তাঁর মহত্ত্বের কাছে সকল মস্তক অবনত হয় এবং তার ভয়ে সকল হৃদয় কম্পিত হয়।

খোৎবা - ১৭৯

فِي ذَمَّ أَصْحابِهِ

أَحْمَدُ اللَّهَ عَلَى مَا قَضَى مِنْ أَمْرٍ، وَ قَدَّرَ مِنْ فِعْلٍ، وَ عَلَى ابْتِلاَئِي بِكُمْ أَيَّتُهَا الْفِرْقَةُ الَّتِي إِذَا أَمَرْتُ لَمْ تُطِعْ وَ إِذَا دَعَوْتُ لَمْ تُجِبْ، إِنْ أُمْهِلْتُمْ خُضْتُمْ وَ إِنْ حُورِبْتُمْ خُرْتُمْ وَ إِنِ اجْتَمَعَ النَّاسُ عَلَى إِمَامٍ طَعَنْتُمْ وَ إِنْ أُجِئْتُمْ إِلَى مُشَاقَّةٍ نَكَصْتُمْ، لاَ أَبَا لِغَيْرِكُمْ، مَا تَنْتَظِرُونَ بِنَصْرِكُمْ وَ الْجِهَادِ عَلَى حَقِّكُمْ؟ الْمَوْتَ أَوِ الذُّلَّ لَكُمْ. فَوَ اللَّهِ لَئِنْ جَأَ يَومِي - وَ لَيَأْتِيَنِّي - لَيُفَرِّقَنَّ بَيْنِي وَ بَيْنِكُمْ وَ أَنَا لِصُحْبَتِكُمْ قَالٍ، وَ بِكُمْ غَيْرُ كَثِيرٍ.

لِلَّهِ أَنْتُمْ! أَما دِينٌ يَجْمَعُكُمْ وَ لاَ حَمِيَّةٌ تَشْحَذُكُمْ! أَوَ لَيْسَ عَجَباً أَنَّ مُعَاوِيَةَ يَدْعُو الْجُفَاةَ الطَّغَامَ فَيَتَّبِعُونَهُ عَلَى غَيْرِ مَعُونَةٍ وَ لاَ عَطَاءٍ وَ أَنَا أَدْعُوكُمْ - وَ أَنْتُمْ تَرِيكَةُ الْإِسْلاَمِ، وَ بَقِيَّةُ النَّاسِ - إِلَى الْمَعُونَةِ أَوْ طَائِفَةٍ مِنَ الْعَطَأِ، فَتَتَفَرَّقُونَ عَنِّي وَ تَخْتَلِفُونَ عَلَيَّ؟ إِنَّهُ لاَ يَخْرُجُ إِلَيْكُمْ مِنْ أَمْرِي رِضىً فَتَرْضَوْنَهُ، وَ لاَ سُخْطٌ فَتَجْتَمِعُونَ عَلَيْهِ؛ وَ إِنَّ أَحَبَّ مَا أَنَا لاَقٍ إِلَيَّ الْمَوْتُ! قَدْ دَارَسْتُكُمُ الْكِتَابَ، وَ فَاتَحْتُكُمُ الْحِجَاجَ وَ عَرَّفْتُكُمْ مَا أَنْكَرْتُمْ، وَ سَوَّغْتُكُمْ مَا مَجَجْتُمْ، لَوْ كَانَ الْأَعْمَى يَلْحَظُ أَوِ النَّائِمُ يَسْتَيْقِظُ! وَ أَقْرِبْ بِقَوْمٍ مِنَ الْجَهْلِ بِاللَّهِ قَائِدُهُمْ مُعَاوِيَةُ! وَ مُؤَدِّبُهُمُ ابْنُ النَّابِغَةِ!.

আমিরুল মোমেনিনের অবাধ্য লোকদের নিন্দা সম্পর্কে

আমি আল্লাহর প্রশংসা করি ,সেসব ব্যাপারে যা তিনি নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং যা তিনি অদৃষ্টে লিপিবদ্ধ করেছেন। হে জনতার দল ,তোমরা যারা আমার আদেশ পালন কর না এবং আমার আহবানে সাড়া দাও না তোমাদের সাথে আমার বিচারের জন্য আমি আল্লাহর প্রশংসা করি। যখন তোমরা একটু সুখে থাক তখন তোমরা আত্মগর্বে বাগাড়ম্বর কর ,কিন্তু যুদ্ধের কথা শুনলেই দুর্বল হয়ে পড়। যখন মানুষ ইমামের সাথে ঐকমত্য পোষণ করে তখন তোমরা একে অপরকে উপহাস কর । যদি তোমরা কষ্টসাধ্য কোন বিষয়ের সম্মুখীন হও তবে তোমরা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। তোমরা পিতৃহীন হও (তোমাদের ওপর লানত) ,তোমাদের অধিকার আদায়ের জন্য যুদ্ধ করতে তোমরা কার সাহায্যের আশায় অপেক্ষা করে আছো ? তোমাদের জন্য রয়েছে হয় মৃত্যু না হয় অসম্মানজনক জীবন। আল্লাহর কসম ,তোমাদের সাথী হয়ে আমি পীড়িত এবং তোমাদের সঙ্গে থেকেও আমি নিজকে একাকী মনে করি। আমার দিন ঘনিয়ে এসে তোমাদের সাথে বিচ্ছেদ ঘটলে উত্তম হতো।

আল্লাহ তোমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তোমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে এমন কোন দ্বীনি বা তোমাদেরকে তেজস্বী করতে পারে এমন কোন লজ্জাবোধ কি নেই ? এটা কি আশ্চর্যের বিষয় নয় যে ,মুয়াবিয়া কতিপয় রূঢ় নিচ লোককে ডাক দিয়েছে ,তারা তাকে কোন প্রকার দ্বিধা ব্যতিরেকে অনুসরণ করছে ;আর আমি যখন তোমাদেরকে আহবান করছি ,তোমরা ইসলামের উত্তরাধিকারী ও যোগ্য লোক হওয়া সত্ত্বেও আমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড় এবং আমার বিরোধিতা করো ? সত্য কথা হলো - আমার ও তোমাদের মধ্যে এমন কিছু নেই যা আমি পছন্দ করি এবং তোমরাও পছন্দ কর ;অথবা যে বিষয়ে আমি রাগান্বিত হই তার বিরুদ্ধে তোমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পার। আমি এখন যেটা সবচাইতে বেশি ভালোবাসি তা হলো মৃত্যু। আমি তোমাদেরকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছি ,যুক্তিসমূহ তোমাদের কাছে ব্যাখ্যা করে বলেছি ,যে বিষয়ে তোমরা অজ্ঞ ছিলে তা তোমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছি এবং যা তোমরা থুথুর মতো ফেলে দিচ্ছিলে তা তোমাদেরকে গিলিয়ে দিয়েছি। সব কিছু এমনভাবে বলে দিয়েছি যাতে একজন অন্ধলোকও দেখতে পায় এবং একজন ঘুমন্ত লোকও জেগে ওঠে। অপরপক্ষে ,তাদের নেতা মুয়াবিয়া ও তাদের প্রশিক্ষক ইবনে আন - নাবিগাহ আল্লাহ সম্পর্কে কতই না অজ্ঞ।

____________________

১ । লায়লা বিনতে হারমালাহ আল - আনাজিয়াহ - এর ডাক নাম হলো আন - নাবিগাহ। সে আমর ইবনে আ ’ স এর মাতা। আমরকে তার মায়ের নামানুসারে ইবনে নাবিগাহ ' বলে উল্লেখ করার কারণ হলো একটা বিশেষ চরিত্রের জন্য তাকে (আমরের মাকে) সবাই চিনতো। একদিন আরওয়া বিনতে আল - হারিছ ইবনে আবদুল মুত্তালিব মুয়াবিয়ার কাছে গিয়ে কথা বলতেছিলেন। তাদের কথোপকথনের মধ্যে আমর ইবনে আ ’ স হস্তক্ষেপ করলে আরওয়া বললেন , ওহে নাবিগার পুত্র ,তুই কোন সাহসে আমার কথার মধ্যে হস্তক্ষেপ করিস। তোর মা ছিল জনগণের জন্য খোলা ও মক্কার গায়িকা। সেজন্য পাঁচজন লোকে তোকে পুত্র বলে দাবি করেছিল। তোর মাকে জিজ্ঞেস করা হলে সেও স্বীকার করেছিল যে ,পাঁচজন লোক তার কাছে গিয়েছিলো। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো যার সাথে তোর চেহারার বেশি মিল হবে তার পুত্র বলেই তুই পরিচিত হবি। তোর চেহারা আ ’ স ইবনে ওয়াইলের সাথে বেশি মিল আছে বলেই তুই তার পুত্র বলে পরিচিত। ”

উক্ত পাঁচজন লোকের নাম হলো - (১) আস ইবনে ওয়াইল ,(২) আবু লাহাব ,(৩) উমাইয়া ইবনে খালাফ ,(৪) হিশাম ইবনে মুগিরাহ ও (৫) আবু সুফিয়ান ইবনে হারবা (রাব্বিহ ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১২০ ;বাগদাদী ,পৃঃ ২৭ ;হামাবি ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৩২ ;সাফওয়াত ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৬৩ ;হাদীদ ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ২৮৩ - ২৮৫ ,২৯১ ;শাফেয়ী ’ ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৪৬) ।

খোৎবা - ১৮০

وَ قَدْ أَرْسَلَ رَجُلاً مِنْ أَصْحَابِهِ يَعْلَمُ لَهُ عِلْمَ أَحْوَالِ قَوْمٍ مِنْ جُنْدِ الْكُوفَةِ قَدْ هَمُّوا بِاللِّحَاقِ بِالْخَوَارِجِ، وَ كَانُوا عَلَى خَوْفٍ مِنْهُ ع، فَلَمَّا عَادَ إِلَيْهِ الرَّجُلُ قَالَ لَهُ: «أَ أَمِنُوا فَقَطَنُوا أَمْ جَبَنُوا فَظَعَنُوا؟» فَقَالَ الرَّجُلُ: بَلْ ظَعَنُوا يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ. فَقَالَعليه‌السلام :

«بُعْدا لَهُمْ كَمَا بَعِدَتْ ثَمُودُ!» أَمَا لَوْ أُشْرِعَتِ الْأَسِنَّةُ إِلَيْهِمْ وَ صُبَّتِ السُّيُوفُ عَلَى هَامَاتِهِمْ لَقَدْ نَدِمُوا عَلَى مَا كَانَ مِنْهُمْ، إِنَّ الشَّيْطَانَ الْيَوْمَ قَدِ اسْتَفَلَّهُمْ وَ هُوَ غَدا مُتَبَرِّئٌ مِنْهُمْ وَ مُتَخَلِّ عَنْهُمْ، فَحَسْبُهُمْ بِخُرُوجِهِمْ مِنَ الْهُدَى، وَ ارْتِكَاسِهِمْ فِي الضَّلاَلِ وَ الْعَمَى وَ صَدِّهِمْ عَنِ الْحَقِّ وَ جِمَاحِهِمْ فِي التِّيهِ.

কুফার একটা সৈন্যদল খারিজিদের সাথে যোগ দেয়ার প্রেক্ষিতে প্রদত্ত খোৎবা

কুফার একটি সৈন্যদল খারিজিদের সঙ্গে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে আমিরুল মোমেনিন তাদের সংবাদ আনার জন্য তার একজন লোককে পাঠিয়েছিলেন। সে ফিরে এলে আমিরুল মোমেনিন জিজ্ঞেস করলেন , তারা কি সন্তুষ্ট , পথে ফিরে আসবে , নাকি দুর্বলতা অনুভব করছে ও বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে ? লোকটি প্রত্যুত্তরে বললো , তারা চলে গেছে , হে আমিরুল মোমেনিন । তখন তিনি বললেনঃ

তাদের কাছ থেকে আল্লাহর রহমত দূরে সরে থাকুক। যেমনটি হয়েছিল ছামুদ জাতির বেলায়। জেনে রাখো , যখন তাদের প্রতি সজোরে বর্শা নিক্ষিপ্ত হবে এবং তাদের মাথায় তরবারির আঘাত পড়বে তখন সে তাদের সাথে সকল সম্পর্ক অস্বীকার করবে এবং তাদেরকে পরিত্যাগ করবে। হেদায়েত থেকে সরে পড়া , গোমরাহি ও অন্ধত্বের দিকে ফিরে যাওয়া , সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া এবং বিভ্রান্তিতে নিপতিত হওয়াই তাদের শাস্তির জন্য যথেষ্ট ।

____________________

১। সিফফিনের যুদ্ধে বনি নাযিয়াহ গোত্রের খিররিট ইবনে রশিদ আন - নাযি নামক একজন লোক আমিরুল মোমেনিনের পক্ষে ছিল। কিন্তু সালিশীর পর সে বিদ্রোহী হয়ে ত্রিশজন লোকসহ আমিরুল মোমিনের নিকট এসে বললো , আল্লাহর কসম ,আমি আর আপনার আদেশ মান্য করবো না ;আপনার পিছনে সালাত আদায় করবো না এবং আগামীকাল আপনাকে পরিত্যাগ করে চলে যাবো। ” তার কথা শুনে আমিরুল মোমেনিন বললেন , প্রথমে তুমি সালিশীর প্রকৃত কারণ ও এর ক্ষেত্র বিবেচনা করে দেখ এবং তারপর এ বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা কর। যদি তাতে তুমি সন্তুষ্ট না হও তবে তোমার যা ইচ্ছা করো। ” সে বললো যে ,সে পরদিন আলোচনা করতে আসবে। আমিরুল মোমেনিন তাকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন , দেখ ,এখান থেকে যাবার পর তুমি যেন অন্যদের দ্বারা বিপথগামী হয়ে না যাও। তুমি অন্য কোন পথ গ্রহণ করো না। যদি তোমার বুঝবার ইচ্ছা থাকে। তবে আমি তোমাকে এই বিভ্রান্তির পথ থেকে বের করে আনবো এবং হেদায়েতের পথ তোমাকে দেখিয়ে দেব। ” একথা বলার পর সে চলে গেল। যাবার কালে তার মুখের ভাব থেকে বুঝা গিয়েছিল যে ,বিদ্রোহের দিকেই তার ঝোক বেশি এবং সে কোন যুক্তি গ্রহণ করতে নারাজ। প্রকৃতপক্ষে হয়েছিলও তা - ই। সে তার গোত্রের লোকদের কাছে ফিরে গিয়ে বললো , আমরা যখন আলীকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি তখন আর তার কাছে ফিরে যাবার কোন দরকার নেই। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তানুযায়ী কাজ করবো। ” এরপর আবদুল্লাহ ইবনে কুয়ান আল - আজদি বিষয়টি জানার জন্য তাদের কাছে গেল। অবস্থা জানতে পেরে তিনি মাদ্রিক ইবনে রায়ান আন - নাযিকে অনুরোধ করেছিলেন যেন তার সাথে কথা বলে এবং বিদ্রোহের ধ্বংসাত্মক পরিণতি সম্বন্ধে তাকে বুঝিয়ে বলেছিলেন। এতে মাদ্রিক তাকে নিশ্চয়তা প্রদান করেছিল যে ,এরূপ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে খিররিটিকে অনুমতি দেয়া হবে না। তারপর আবদুল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে এসে আমিরুল মোমেনিনকে ঘটনা সবিস্তারে জানালেন। আমিরুল মোমেনিন বললেন , দেখা যাক ,সে এলে অবস্থা কি দাড়ায়। ” কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হবার পরও সে না আসায় আমিরুল মোমেনিন আবদুল্লাহকে আবার পাঠালেন। আবদুল্লাহ গিয়ে দেখলেন যে তারা সেই স্থান ত্যাগ করে চলে গেছে। তিনি ফিরে এসে আমিরুল মোমেনিনকে বিষয়টি জানালে তিনি এ খোৎবা প্রদান করেন। খিররিটের দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা। ৪৪ নং খোৎবায় বর্ণিত হয়েছে।

খোৎবা - ১৮১

رُوِيَ عَنْ نَوْفٍ الْبَكالِيِّ قَالَ: خَطَبَنا بِهَذِهِ الْخُطْبَةِ أَمِيرُ الْمُؤْمِنِينَ عَلِيُّعليه‌السلام بِالْكُوفَةِ، وَ هُوَ قائِمٌ عَلَى حِجارَةٍ نَصَبَها لَهُ جَعْدَةُ بْنُ هُبَيْرَةَ الْمَخْزُومِيُّ، وَ عَلَيْهِ مِدْرَعَةٌ مِنْ صُوفٍ، وَ حَمائِلُ سَيْفِهِ لِيفٌ، وَ فِي رِجْلَيْهِ نَعْلانِ مِنْ لِيفٍ، وَ كَأنَّ جَبِينَهُ ثَفِنَةُ بَعِيرٍ. فَقَالَعليه‌السلام :

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي إِلَيْهِ مَصائِرُ الْخَلْقِ وَ عَواقِبُ الْأَمْرِ. نَحْمَدُهُ عَلَى عَظِيمِ إِحْسانِهِ، وَ نَيِّرِ بُرْهانِهِ، وَ نَوامِي فَضْلِهِ وَ امْتِنانِهِ، حَمْدا يَكُونُ لِحَقِّهِ قَضَأً، وَ لِشُكْرِهِ أَدَأً، وَ إِلى ثَوابِهِ مُقَرِّبا وَ لِحُسْنِ مَزِيدِهِ مُوجِبا، وَ نَسْتَعِينُ بِهِ اسْتِعانَةَ راجٍ لِفَضْلِهِ، مُؤَمِّلٍ لِنَفْعِهِ، واثِقٍ بِدَفْعِهِ، مُعْتَرِفٍ لَهُ بِالطَّوْلِ، مُذْعِنٍ لَهُ بِالْعَمَلِ وَ الْقَوْلِ. وَ نُؤْمِنُ بِهِ إِيمَانَ مَنْ رَجاهُ مُوقِناً، وَ أَنابَ إِلَيْهِ مُؤْمِناً، وَ خَنَعَ لَهُ مُذْعِناً، وَ أَخْلَصَ لَهُ مُوَحِّداً، وَ عَظَّمَهُ مُمَجِّداً، وَ لاذَ بِهِ راغِباً مُجْتَهِداً.

لَمْ يُولَدْسُبْحانَهُ فَيَكُونَ فِي الْعِزِّ مُشارَكاً، وَ لَمْ يَلِدْ فَيَكُونَ مَوْرُوثاً هالِكاً. وَ لَمْ يَتَقَدَّمْهُ وَقْتٌ وَ لا زَمانٌ، وَ لَمْ يَتَعاوَرْهُ زِيادَةٌ وَ لا نُقْصانٌ، بَلْ ظَهَرَ لِلْعُقُولِ بِما أَرانا مِنْ عَلاماتِ التَّدْبِيرِ الْمُتْقَنِ، وَ الْقَضأِ الْمُبْرَمِ.فَمِنْ شَواهِدِ خَلْقِهِ خَلْقُ السَّماواتِ مُوَطَّداتٍ بِلا عَمَدٍ، قَائِماتٍ بِلا سَنَدٍ. دَعاهُنَّ فَأَجَبْنَ طائِعاتٍ مُذْعِناتٍ، غَيْرَ مُتَلَكِّئاتٍ وَ لا مُبْطِئاتٍ؛ وَ لَوْ لا إِقْرارُهُنَّ لَهُ بِالرُّبُوبِيَّةِ وَ إِذْعانُهُنَّ لَهُ بِالطَّواعِيَةِ لَما جَعَلَهُنَّ مَوْضِعا لِعَرْشِهِ، وَ لا مَسْكَنا لِمَلائِكَتِهِ، وَ لا مَصْعَدا لِلْكَلِمِ الطَّيِّبِ وَ الْعَمَلِ الصَّالِحِ مِنْ خَلْقِهِ.

جَعَلَ نُجُومَها أَعْلاما يَسْتَدِلُّ بِها الْحَيْرانُ فِي مُخْتَلِفِ فِجاجِ الْأَقْطارِ. لَمْ يَمْنَعْ ضَوْءَ نُورِها ادْلِهْمامُ سُجُفِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ، وَ لا اسْتَطاعَتْ جَلابِيبُ سَوادِ الْحَنادِسِ أَنْ تَرُدَّ ما شاعَ فِي السَّماواتِ مِنْ تَلألُؤِ نُورِ الْقَمَرِ. فَسُبْحانَ مَنْ لا يَخْفَى عَلَيْهِ سَوادُ غَسَقٍ داجٍ، وَ لا لَيْلٍ ساجٍ فِي بِقاعِ الْأَرَضِينَ الْمُتَطَأْطِئاتِ، وَ لا فِي يَفاعِ السُّفْعِ الْمُتَجاوِراتِ؛ وَ ما يَتَجَلْجَلُ بِهِ الرَّعْدُ فِي أُفُقِ السَّمأِ، وَ ما تَلاشَتْ عَنْهُ بُرُوقُ الْغَمامِ، وَ ما تَسْقُطُ مِنْ وَرَقَةٍ تُزِيلُها عَنْ مَسْقَطِها عَواصِفُ الْأَنْوأِ وَ انْهِطالُ السَّمأِ، وَ يَعْلَمُ مَسْقَطَ الْقَطْرَةِ وَ مَقَرَّها، وَ مَسْحَبَ الذَّرَّةِ وَ مَجَرَّها، وَ ما يَكْفِي الْبَعُوضَةَ مِنْ قُوتِها، وَ ما تَحْمِلُ مِنْ الْأُنْثَى فِي بَطْنِها.

وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الْكائِنِ قَبْلَ أَنْ يَكُونَ كُرْسِيُّ أَوْ عَرْشٌ، أَوْ سَمأٌ أَوْ أَرْضٌ، أَوْ جانُّ أَوْ إِنْسٌ، لا يُدْرَكُ بِوَهْمٍ، وَ لا يُقَدَّرُ بِفَهْمٍ، وَ لا يَشْغَلُهُ سائِلٌ، وَ لا يَنْقُصُهُ نَائِلٌ، وَ لا يَنْظُرُ بِعَيْنٍ، وَ لا يُحَدُّ بِأَيْنٍ، وَ لا يُوصَفُ بِالْأَزْواجِ، وَ لا يُخْلَقُ بِعِلاجٍ، وَ لا يُدْرَكُ بِالْحَواسِّ، وَ لا يُقاسُ بِالنَّاسِ، الَّذِي كَلَّمَ مُوسَى تَكْلِيما، وَ أَراهُ مِنْ آياتِهِ عَظِيما؛ بِلا جَوارِحَ وَ لا أَدَواتٍ، وَ لا نُطْقٍ وَ لا لَهَواتٍ. بَلْ إنْ كُنْتَ صادِقا أَيُّهَا الْمُتَكَلِّفُ لِوَصْفِ رَبِّكَ، فَصِفْ جِبْريلَ وَ مِيكائِيلَ وَ جُنُودَ الْمَلائِكَةِ الْمُقَرَّبِينَ فِي حُجُراتِ الْقُدُسِ مُرْجَحِنِّينَ، مُتَوَلِّهَةً عُقُولُهُمْ أَنْ يَحُدُّوا أَحْسَنَ الْخالِقِينَ.فَإِنَّما يُدْرَكُ بِالصِّفاتِ ذَوُو الْهَيْئاتِ وَ الْأَدَواتِ، وَ مَنْ يَنْقَضِي إِذا بَلَغَ أَمَدَ حَدِّهِ بِالْفَنأِ. فَلا إِلَهَ إِلا هُوَ، أَضأَ بِنُورِهِ كُلَّ ظَلامٍ، وَ أَظْلَمَ بِظُلْمَتِهِ كُلَّ نُورٍ.

أُوصِيكُمْ عِبادَ اللَّهِ بِتَقْوَى اللَّهِ الَّذِي أَلْبَسَكُمُ الرِّيَاشَ، وَ أَسْبَغَ عَلَيْكُمُ الْمَعاشَ؛ فَلَوْ أَنَّ أَحَدا يَجِدُ إِلَى الْبَقأِ سُلَّماً، أَوْ لِدَفْعِ الْمَوْتِ سَبِيلاً، لَكانَ ذَلكَ سُلَيْمانَ بْنَ داوُدَعليه‌السلام الَّذِي سُخِّرَ لَهُ مُلْكُ الْجِنِّ وَ الْإِنْسِ، مَعَ النُّبُوَّةِ وَ عَظِيمِ الزُّلْفَةِ. فَلَمَّا اسْتَوْفَى طُعْمَتَهُ، وَ اسْتَكْمَلَ مُدَّتَهُ، رَمَتْهُ قِسِيُّ الْفَنأِ بِنِبالِ الْمَوْتِ وَ أَصْبَحَتِ الدِّيارُ مِنْهُ خالِيَةً، وَ الْمَساكِنُ مُعَطَّلَةً، وَ وَرِثَها قَوْمٌ آخَرُونَ، وَ إِنَّ لَكُمْ فِي الْقُرُونِ السَّالِفَةِ لَعِبْرَةً. أَيْنَ الْعَمالِقَةُ وَ أَبْنَأُ الْعَمالِقَةِ! أَيْنَ الْفَراعِنَةُ وَ أَبْنأُ الْفَراعِنَةِ! أَيْنَ أَصْحابُ مَدائِنِ الرَّسِّ الَّذِينَ قَتَلُوا النَّبِيِّينَ، وَ أَطْفَؤُوا سُنَنَ الْمُرْسَلِينَ، وَ أَحْيَوْا سُنَنَ الْجَبَّارِينَ، أَيْنَ الَّذِينَ سارُوا بِالْجُيُوشِ، وَ هَزَمُوا الْأُلُوفِ، وَ عَسْكَرُوا الْعَساكِرَ، وَ مَدَّنُوا الْمَدائِنَ!

صفات الامام المهدیعليه‌السلام

مِنْهَا: قَدْ لَبِسَ لِلْحِكْمَةِ جُنَّتَها، وَ أَخَذَها بِجَمِيعِ أَدَبِها، مِنَ الْإِقْبالِ عَلَيْها، وَ الْمَعْرِفَةِ بِهَا، وَ التَّفَرُّغِ لَها، فَهِيَ عِنْدَ نَفْسِهِ ضالَّتُهُ الَّتِي يَطْلُبُها، وَ حاجَتُهُ الَّتِي يَسْأَلُ عَنْها. فَهُوَ مُغْتَرِبٌ إِذَا اغْتَرَبَ الْإِسْلامُ، وَ ضَرَبَ بِعَسِيبِ ذَنَبِهِ، وَ أَلْصَقَ الْأَرْضَ بِجِرانِهِ، بَقِيَّةٌ مِنْ بَقايا حُجَّتِهِ، خَلِيفَةٌ مِنْ خَلائِفِ أَنْبِيائِهِ.

توبیخ الاصحاب

أَيُّهَا النَّاسُ، إِنِّي قَدْ بَثَثْتُ لَكُمُ الْمَواعِظَ الَّتِي وَعَظَ بِهَا الْأَنْبِيأُ أُمَمَهُمْ، وَ أَدَّيْتُ إِلَيْكُمْ ما أَدَّتِ الْأَوْصِيأُ إِلَى مَنْ بَعْدَهُمْ، وَ أَدَّبْتُكُمْ بِسَوْطِي فَلَمْ تَسْتَقِيمُوا، وَ حَدَوْتُكُمْ بِالزَّواجِرِ فَلَمْ تَسْتَوْسِقُوا. لِلَّهِ أَنْتُمْ! أَتَتَوَقَّعُونَ إِماماً غَيْرِي يَطَأُ بِكُمُ الطَّرِيقَ، وَ يُرْشِدُكُمُ السَّبِيلَ؟ أَلا إِنَّهُ قَدْ أَدْبَرَ مِنَ الدُّنْيا ما كانَ مُقْبِلاً، وَ أَقْبَلَ مِنْها ما كانَ مُدْبِراً، وَ أَزْمَعَ التَّرْحالَ عِبادُ اللَّهِ الْأَخْيارُ، وَ باعُوا قَلِيلاً مِنَ الدُّنْيَا لا يَبْقَى بِكَثِيرٍ مِنَ الْآخِرَةِ لا يَفْنَى.

تذکر الشهداء من الاصحاب

ما ضَرَّ إِخْوَانَنا الَّذِينَ سُفِكَتْ دِماؤُهُمْ وَ -هُمْ بِصِفِّينَ - أَنْ لا يَكُونُوا الْيَوْمَ أَحْيَاءً؟ يُسِيغُونَ الْغُصَصَ، وَ يَشْرَبُونَ الرَّنْقَ! قَدْ وَ اللَّهِ لَقُوا اللَّهَ فَوَفَّاهُمْ أُجُورَهُمْ، وَ أَحَلَّهُمْ دارَ الْأَمْنِ بَعْدَ خَوْفِهِمْ. أَيْنَ إِخْوانِيَ الَّذِينَ رَكِبُوا الطَّرِيقَ، وَ مَضَوْا عَلَى الْحَقِّ؟ أَيْنَ عَمَّارٌ؟ وَ أَيْنَ ابْنُ التَّيِّهانِ؟ وَ أَيْنَ ذُو الشَّهادَتَيْنِ؟ وَ أَيْنَ نُظَراؤُهُمْ مِنْ إِخْوانِهِمُ الَّذِينَ تَعاقَدُوا عَلَى الْمَنِيَّةِ، وَ أُبْرِدَ بِرُءُوسِهِمْ إِلَى الْفَجَرَةِ!

ثُمَّ ضَرَبَ بِيَدِهِ عَلَى لِحْيَتِهِ الشَّرِيفَةِالْكَرِيمَةِ فَأَطالَ الْبُكأَ،ثُمَّ قالَعليه‌السلام :

أَوِّهِ عَلَى إِخْوانِيَ الَّذِينَ تَلَوُا الْقُرْآنَ فَأَحْكَمُوهُ، وَ تَدَبَّرُوا الْفَرْضَ فَأَقامُوهُ، أَحْيَوُا السُّنَّةَ، وَ أَماتُوا الْبِدْعَةَ. دُعُوا لِلْجِهادِ فَأَجابُوا، وَ وَثِقُوا بِالْقائِدِ فَاتَّبَعُوهُ. ُمَّ نادَى بِأَعْلَى صَوْتِهِ:

الْجِهادَ الْجِهادَ عِبادَ اللَّهِ، أَلا وَ إِنِّي مُعَسْكِرٌ فِي يَومِي هذا، فَمَنْ أَرادَ الرَّواحَ إِلَى اللَّهِ فَلْيَخْرُجْ!

قالَ نَوْفٌ: وَ عَقَدَ لِلْحُسَيْنِعليه‌السلام فِي عَشَرَةِ آلافٍ، وَ لِقَيْسِ بْنِ سَعْدٍ رَحِمَهُ اللَّهُ فِي عَشَرَةِ آلافٍ، وَ لِأَبِي أَيُّوبَ الْأَنْصارِيِّ فِي عَشَرَةِ آلافٍ، وَ لِغَيْرِهِمْ عَلَى أَعْدادٍ أُخْرَ، وَ هُوَ يُرِيدُ الرَّجْعَةَ إِلَى صِفِّينَ، فَما دارَتِ الْجُمُعَةُ حَتَّى ضَرَبَهُ الْمَلْعُونُ ابْنُ مُلْجَمٍ لَعَنَهُ اللَّهُ، فَتَراجَعَتِ الْعَساكِرُ، فَكُنَّا كَأَغْنامٍ فَقَدَتْ راعِيها تَخْتَطِفُها الذِّئابُ مِنْ كُلِّ مَكانٍ!

আল্লাহর গুণরাজী , তার সত্তা ও তাঁর বান্দা সম্পর্কে

(নাওয়াফ আল বিকালী বর্ণনা করেছেন যে ,আমিরুল মোমেনিন আলী কুফায় এ খোৎবা প্রদান করেছিলেন। জাদাহ ইবনে হুবায়রাহ আল - মাখদুমী একটা পাথর এগিয়ে দিলে তার ওপর দাঁড়িয়ে এ খোৎবা দেয়া হয়েছিল। এ সময় আমিরুল মোমেনিনের গায়ে পশমি পোষাক ছিল। তার তরবারির বেল্ট পাতার তৈরি এবং তার পায়ের সেন্ডেল তাল পাতার তৈরি ছিল। তাঁর কপালে দীর্ঘ সেজদার কারণে একটা শক্ত কাল দাগ ছিল)

প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা আল্লাহর যার কাছে সকল সৃষ্টির প্রত্যাবর্তন এবং সকল বিষয়ের পরিসমাপ্তি। আমরা তার মহান ঔদার্যের জন্য প্রশংসা করি ,তার প্রমাণের দয়ার জন্য প্রশংসা করি এবং তার নেয়ামত ও অনুকম্পার জন্য প্রশংসা করি। এমন প্রশংসা করি যা তাঁর অধিকার পূর্ণ করতে পারে (অর্থাৎ যা তাঁর প্রাপ্য) ,যা তাঁর আশীর্বাদের প্রতিদান হতে পারে ,যা তাঁর পুরস্কারের কাছে আমাদেরকে নিয়ে যেতে পারে এবং যাতে আমাদের প্রতি তাঁর দয়া বৃদ্ধি পেতে পারে। আমরা সেসব লোকের মতো তার সাহায্য প্রার্থনা করি যারা তার নেয়ামতের জন্য আশান্বিত ,তার উপকারের জন্য আকাঙ্খিত ,তার দুর্যোগ প্রতিরোধের জন্য দৃঢ়ভাবে আশ্বস্ত ;যারা তাঁর দানের স্বীকৃতি দেয় এবং কথায় ও কাজে তাঁর প্রতি অনুগত। আমরা সেব্যক্তির মতো তাঁকে বিশ্বাস করি যে সুদৃঢ় আস্থা সহকারে তাঁর আশা করে ,মোমেনের মত তার প্রতি ঝুকে থাকে ,নিতান্ত দীনতার সাথে তাঁর আনুগত্য করে ,তার একত্বকে নির্ভেজালভাবে বিশ্বাস করে ,তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে ,তার মহিমা স্বীকার করে এবং সর্বান্তঃকরণে তার আশ্রয় প্রার্থনা করে।

মহিমান্বিত আল্লাহ জন্ম গ্রহণ করেননি যাতে কেউ মর্যাদায় তার অংশীদার হতে পারে। তিনি কাউকে জন্ম দেননি। যাতে তার কোন উত্তরাধিকারী থাকতে পারে। সময় ও কাল তাকে অতিক্রম করতে পারে না (অর্থাৎ তাঁর কাছে সময় ও কাল বলতে কিছু নেই) । তাঁর কোন হ্রাস - বৃদ্ধি নেই। কিন্তু তিনি তার কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও সুদৃঢ় রায় প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে আমাদের অনুভূতিতে নিজকে প্রকাশ করেছেন। তাঁর সৃষ্টির বিস্ময়কর প্রমাণ হলো আকাশসমূহ যা তিনি কোন স্তম্ভ ছাড়াই বুলিয়ে রেখেছেন। তিনি তাদের আহবান করেছিলেন এবং তারা কোন প্রকার অলসতা বা বিরক্তি ছাড়াই বিনীত ও অনুগত হয়ে তাঁর আহবানে সাড়া দিয়েছিল। যদি তারা তার প্রভুত্ব স্বীকার না করতো এবং তাকে মান্য না করতো। তবে তিনি তাতে তার আরশ স্থাপন করতেন না ,তার ফেরেশতাদের বসতি স্থাপন করতেন না এবং তার বান্দাদের সকল পবিত্র কথা ও ন্যায় কাজেরও গন্তব্যস্থল হিসাবে তাদের নির্দিষ্ট করতেন না।

তিনি আকাশের নক্ষত্ররাজীকে নিদর্শন করেছেন যাতে পৃথিবীর বিভিন্ন পথে ভ্রমণকারীগণ পথের দিশা পায়। রাতের নিকশ কালো অন্ধকারের পর্দা তাদের আলোক শিখা প্রতিহত করতে পারেনা। আকাশে ছড়িয়ে পড়া চাঁদের কিরণকেও রাতের কালো - ঘোমটা ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা। সকল মহিমা আল্লাহর যার কাছে অন্ধকারের কৃষ্ণতা ,পৃথিবীর নিচু অংশে ও পর্বতের চূড়ায় পতিত নিকশ বর্ষণ - কোন কিছুই গোপন নয়। তিনি জানেন কোথায় ফোঁটা পড়ে ,কোথায় তা অবস্থান করে ,কোথায় শুককীট তাদের পথ পরিত্যাগ করে বা কোথায় নিজকে টেনে নিয়ে যায় ,কী জীবিকা মশার জন্য যথেষ্ট এবং নারী তার গর্ভাশয়ে কী বহন করে।

প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা আল্লাহর যিনি কুরসি ,আরাশ ,আকাশ ,পৃথিবী ,জিন ও ইনসান অস্তিত্বমান হওয়ার পূর্বেই বিদ্যমান ছিলেন। কল্পনা দ্বারা তাকে অনুভব করা যায় না এবং বোধগম্যতা দ্বারা তাকে পরিমাপ করা যায় না। কেউ তাঁর কাছে যাচনা করলে অন্যদের দিক থেকে তাঁর দৃষ্টি সরে যায় না এবং দান করলে তাঁর ভাণ্ডারে কখনো ঘাটতি দেখা দেয় না। চোখের দৃষ্টি দ্বারা তিনি দেখেন না এবং তিনি কোন নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ নন। তাঁর কোন সাথী - সঙ্গী নেই। অঙ্গ - প্রতঙ্গের সাহায্যে তিনি সৃষ্টি করেন না। ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে তাকে উপলব্ধি করা যায় না। কোন মানুষ বা কোন কিছুর মতো তাঁকে চিন্তা করা যায় না। তিনি আলজিহ্বা বা অন্য কোন শব্দ - ইন্দ্রিয় ছাড়াই মুসার সাথে সুস্পষ্টভাবে কথা বলেছিলেন এবং কোন প্রকার শারীরিক প্রকাশ ছাড়াই মুসাকে তাঁর মহান নিদর্শন দেখিয়েছিলেন। ওহে ,তোমরা যারা আল্লাহর বর্ণনা করতে নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে চাও এবং যদি তোমরা এ বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হও তবে প্রথমে জিব্রাইল ,মিকাইল বা অন্য ফেরেশতাদের বর্ণনা করতে চেষ্টা করো। এসব ফেরেশতাগণ আল্লাহর মহিমার আধারের নিকটবর্তী ;কিন্তু তাদের মস্তক সর্বদা অবনত এবং মহান স্রষ্টার পরিসীমা নির্ণয় করতে তাদের বুদ্ধিমত্তা স্থবির হয়ে পড়ে। এর কারণ হলো ,সেসব বস্তু গুণের মাধ্যমে অনুভব করা যায় যার আকৃতি আছে ,অংশ আছে এবং যা সময় অতিক্রান্ত হলে মৃত্যুর অধীন। তিনি ব্যতীত আর কোন মান্বুদ নেই। তিনি তাঁর দ্যুতি দ্বারা সকল অন্ধকারকে আলোকিত করেছেন এবং মৃত্যু দ্বারা সকল আলোকে অন্ধকার করেছেন।

হে আল্লাহর বান্দাগণ ,আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি যে ,আল্লাহকে ভয় করা তোমাদের অভ্যাসে পরিণত কর। তিনি তোমাদেরকে জীবনধারণের প্রচুর উপকরণ দান করেছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম পরিধেয় দিয়েছেন। যদি কারো পক্ষে অনন্ত জীবন লাভ করা সম্ভব হতো এবং মৃত্যুকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হতো। তবে তিনি ছিলেন সুলায়মান ইবনে দাউদ । আল্লাহ তাকে নবুওয়াত দান করেছিলেন এবং তার সাথে জিন ও ইনসানের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও বাদশাহি দান করেছিলেন। কিন্তু যখন তার জন্য নির্ধারিত জীবনোপকরণ নিঃশেষ হয়ে গেল এবং তাঁর সময় ফুরিয়ে গেল তখন ধ্বংসের ধনুক তার প্রতি মৃত্যু - তীর নিক্ষেপ করলো। তাঁর ঘর শূন্য হয়ে গেল এবং তাঁর বসতি খালি হয়ে গেল। অন্য একদল লোক তার উত্তরাধিকারী হয়ে গেল। নিশ্চয়ই ,অতীত হয়ে যাওয়া শতাব্দীগুলোতে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।

কোথায় আজ আমালে কিটগণ ও তাদের পুত্রগণ ? কোথায় আজ ফেরাউনগণ ? কোথায় আজ আর - রাশ নগরীর জনগণ ? যারা তাদের নবীকে হত্যা করেছিল এবং নবীর সুন্নাত ধ্বংস করে স্বৈরশাসকের বিধান পুনরুজ্জীবিত করেছিল ? কোথায় আজ সেইসব লোক যারা সসৈন্যে অগ্রসর হয়ে হাজার হাজার লোককে পরাজিত করে দেশ জয় করে নিয়েছিল এবং নগরীর পর নগরী জয় করে বসতি স্থাপন করেছিল ?

ইমাম মাহদী সম্পর্কে

তিনি জ্ঞানের বর্ম পরিধান করবেন যা তাকে সকল অবস্থায় নিরাপদ রাখবে। তার জ্ঞানবর্মের প্রতি সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে এবং সকলেই তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে। তাঁর জন্য এটা এমন জিনিসের মতো হবে যা হারিয়ে গিয়েছিল এবং খোজা - খুজি করা হচ্ছিলো। অথবা এটা এমন প্রয়োজনের মতো হবে যা মিটানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছিলো। যদি ইসলাম কোন বিপদের সম্মুখীন হয় তবে তিনি ভ্রমণকারী পথিকের মতো বিচলিত হয়ে পড়বেন এবং মাটিতে শুয়ে থাকা পরিশ্রান্ত উটের লেজের অগ্রভাগে আঘাত করলে যেভাবে লাফিয়ে ওঠে সে ভাবে লাফিয়ে ওঠবেন। তিনি আল্লাহর সর্বশেষ প্রমাণ এবং রাসূলের (সা.) মনোনীত প্রতিনিধিদের অন্যতম।

নিজের অনুচরদের সম্পর্কে

হে জনমণ্ডলী ,পয়গম্বরগণ যেভাবে তাদের লোকদের উপদেশ দিতেন আমিও সেভাবেই তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছি এবং পয়গম্বরগণের তিরোধানের পর তাদের মনোনীত প্রতিনিধিগণ মানুষকে যা বলতেন আমিও তাই বলেছি। আমি তোমাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি ,কিন্তু তোমরা সোজা হলে না। আমি তোমাদেরকে সতর্কাদেশসহ পরিচালিত করেছিলাম ,কিন্তু তোমরা যথাযথ আচরণ অর্জন করতে পারনি। আল্লাহ তোমাদের বিচার করুন!! তোমাদেরকে সত্যপথে নেয়ার জন্য সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য তোমরা কি আমি ছাড়া অন্য কোন ইমাম চাও ? সাবধান ,এ পৃথিবীতে যা অগ্রণী ছিল তা আজ অতীত হয়ে গেছে এবং যা পিছনে পড়েছিলো তা আজ অগ্রণী হয়ে পড়েছে। আল্লাহর দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত লোকগণ এ পৃথিবী ত্যাগ করে চলে যাবার জন্য মনস্থির করে ফেলেছে এবং তারা নশ্বর দুনিয়ার ভোগ - বিলাসের বিনিময়ে আখেরাতের প্রচুর পুরস্কার ক্রয় করে নিয়েছে যা চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। আমাদের যেসব ভাই সিফফিনে তাদের রক্ত দিয়ে শহীদ হয়েছে ,আজ বেঁচে নেই বলে তাদের কী ক্ষতি হয়েছে ? শুধু এটুকু হয়েছে যে ,তারা আজ শ্বাসরুদ্ধকর খাদ্য ও ঘোলাটে পানির কষ্ট পোহাচ্ছে না। আল্লাহর কসম ,তারা আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেছে এবং তিনি তাদেরকে তাদের পুরস্কার প্রদান করেছেন। নিশ্চয়ই ,তিনি তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখেছেন।

কোথায় আমার সেসব ভ্রাতৃবৃন্দ যারা সত্যপথ অবলম্বন করেছিল এবং ন্যায়ের পথে পদচারণা করেছিল ? কোথায় আম্মার ? কোথায় ইবনে তাইহান ? কোথায় যুশ শাহাদাতাইন ? কোথায় তাদের মতো অন্যান্য ভ্রাতৃবৃন্দ যারা শাহাদতকে আলিঙ্গন করেছিল এবং যাদের দ্বীখণ্ডিত মস্তক দুরাচার শত্রুগণ নিয়ে গিয়েছিল।

এরপর আমিরুল মোমেনিন তার পবিত্র দাড়িতে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে অনেকক্ষণ কাদলেন এবং তারপর বলতে লাগলেনঃ

হে আমার ভ্রাতৃবৃন্দ ,তোমরা আজ কোথায় যারা কুরআন তেলওয়াত করেছিলে ও কুরআনকে শক্তিশালী করেছিলে ,নিজেদের দায়িত্ব সম্বন্ধে চিন্তা করেছিলে এবং তা পরিপূর্ণ করেছিলে। সুন্নাহ পুনরুজ্জীবিত করেছিলে এবং বিদআত ধ্বংস করেছিলে। যখন তাদেরকে জিহাদে আহবান করা হয়েছিল তখন তারা সাড়া দিয়েছিল এবং তাদের নেতার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তাকে অনুসরণ করেছিল। এরপর আমিরুল মোমেনিন তার স্বরে চিৎকার করে বললেনঃ

জিহাদ ,জিহাদ ,হে আল্লাহর বান্দাগণ ,আল্লাহর কসম ,আমি আজই সৈন্যবাহিনী সমবেত করে প্রস্তুত করবো। যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে অগ্রসর হতে চায় সে এগিয়ে আসতে পারে।

(বর্ণনাকারী নাওয়াফ আল - বিকালী বলেনঃ এরপর আমিরুল মোমেনিন। তাঁর পুত্র হুসাইনকে দশ হাজার ,কায়েস ইবনে সা ’ দকে দশ হাজার এবং আবু আইউব আলআনসারীকে দশ হাজার সৈন্যের অধিনায়ক নিয়োগ করেছিলেন এবং অন্য কয়েকজনকেও বিভিন্ন সংখ্যক সৈন্যবাহিনীর অধিনায়ক নিয়োগ করেছিলেন । পরবর্তী শুক্রবার সিফাফিন অভিমুখে যাত্রা করার জন্য অধিনায়কদের নির্দেশ দিলেন । কিন্তু সেই শুক্রবার আর ফিরে এলো না । অভিশপ্ত ইবনে মুলজান (তার ওপর আল্লাহর এবং রাখাল বিহীন ভেড়ার পালের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিলো এবং তাদেরকে নেকড়ের দল ধরে নিয়ে যেতে লাগলো) ।

____________________

১। আমালে কিটসঃ এরা হলো প্রাচীন যাযাবর গোত্রসমষ্টি যাদের কথা তৌরাতে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এরা ছিল ইসরাইলদের ঘোরতর শত্রু। কিন্তু এরা ছিল বারটি ইসরাইল গোত্রের অন্তর্ভুক্ত এফ্রাইম গোত্রের নিকট আত্মীয়। আমালেক নামক আরবিয় সংস্কৃতির একজন লোকের নামানুসারে এদের নামকরণ করা হয় ,কিন্তু এখন আর সুনির্দিষ্টভাবে তার পরিচয় পাওয়া যায় না। যে এলাকায় এদের বসবাস ছিল বলে ধরা হয় তা হলো যুদাহ পর্বতের দক্ষিণ থেকে উত্তর - আরব পর্যন্ত। হিব্রূগণ যখন সদলে মিশর পরিত্যাগ করে যাচ্ছিলো তখন এরা সিনাই পর্বতের নিকটবর্তী রেফিডিম নামক স্থানে তাদেরকে আক্রমণ করেছিল। সেখানে এরা যোসুয়ার নিকট পরাজয় বরণ করে। এরা যাযাবর লুটেরা দলে পরিণত হলে গিভিয়ন কর্তৃক পরাজিত হয় এবং স্যামুয়েল এদেরকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। হেজেকিয়ার সময়ে একটা অনন্ত অভিশাপের কারণে এরা বিলুপ্ত হয়ে যায় (এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা ,১ম খণ্ড ;১৯৭৩ - ৭৪ ,পৃঃ ২৮৮ এবং এনসাইক্লেপেডিয়া আমেরিকানা ,১ম খণ্ড ,১৯৭৫ ,পৃঃ ৬৫১)

২। ফেরাউনঃ মিশরিয়া হিব্রু ভাষায় পারিও ’ (মহৎ ঘর বা রাজপ্রাসাদ) হতে ফেরাউন শব্দটি আসে। মিশরের রাজকীয় উপাধি হিসাবে পরবর্তীতে তা গৃহীত হয়। বাইশতম বংশ থেকে রাজার ব্যক্তিগত উপাধি হিসাবে শব্দটি গৃহীত হয়। সরকারি দলিল - পত্রে মিশরের রাজার পাঁচটি উপাধি দেখা যায়। প্রথম , হোরাস ’ যা বাজপাখীর প্রতিমূর্তি এবং প্রাসাদে অঙ্কিত থাকতো। দ্বিতীয় ,'দুই নারী ’ যা নেকবেত ও বুটু দেবীর আশ্রয়ে রাজাকে রাখা হয় বলে মনে করা হতো। তৃতীয় ,গোল্ডেন হোরাস ’ যা সম্ভবত শত্রুর ওপর জয়ী বোঝাতো। চতুর্থ প্রেয়েনওমেন ' যা সূর্য দেব 'রি ' এর সাথে সম্পর্কযুক্ত মনে করা হতো। পঞ্চম ,নোমেন ' যা রি - এর পুত্র ’ বা দু ’ দেশের রাজা বুঝাতো। দু ’ দেশ বলতে মিশরের উচ্চভূমি ও নিম্নভূমি বুঝানো হয়েছে (এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা ,৭ম খণ্ড ,১৯৭৩ - ৭৪ ,পৃঃ ৯২৭ ;এনসাইক্লোপেডিয়া আমেরিকানা ,২১তম খণ্ড ,১৯৭৫ ,পৃঃ ৭০৭) ।

ফেরাউনদের মধ্যে মুসার (আ.) সময়কার ফেরাউনের অহংকার ,গর্ব ও ঔদ্ধত্য এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে ,সে নিজেকে খোদা বলে দাবি করেছিল। সে মনে করতো পৃথিবীর অন্য সকল শক্তি তার নিয়ন্ত্রণে এবং তার হাত থেকে কোন শক্তিই তার রাজত্ব কেড়ে নিতে পারবে না। ক্ষমতায় মদমত্ত হয়ে সে আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল। তার দাবি সম্বন্ধে আল্লাহ বলেনঃ

ফেরাউন তার সম্প্রদায়ের কাছে ঘোষণা করেছিলো ,হে আমার সম্প্রদায় মিশর রাজ্য কি আমার নয় ? এ নদীগুলো আমার পায়ের নিচ দিয়ে প্রবাহিত ;তোমরা কি তা দেখ না ? (কুরআন - ৪৩:৫১)

কিন্তু তার রাজ্য কয়েক মুহুর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেল। তার কোন মর্যাদা বা রাজ্যের বিশালত্ব এ ধ্বংস ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। বরং যে নদীকে সে পদতলগত বলে দাবি করেছিল সে নদীর ঢেউ তাকে ডুবিয়ে তার রূহকে জাহান্নামে প্রেরণ করে দেহকে কূলে নিক্ষেপ করেছিল যাতে সমগ্র সৃষ্টি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

৩। আর - রাশ নগরীঃ একইভাবে রাশ নগরীর জনগণ তাদের নবীর উপদেশ অমান্য করে আল্লাহর অবাধ্য হওয়ায় তাদেরকে হত্যা করে ধ্বংস করা হয়েছিল। আল্লাহ বলেনঃ

আমি ধ্বংস করেছিলাম আদ ,ছামুদ ও রাশবাসীগণকে এবং তাদের অন্তর্বর্তীকালে বহু সম্প্রদায়কেও । আমি তাদের প্রত্যেকের জন্য দৃষ্টান্ত হিসাবে বর্ণনা করেছিলাম এবং তাদের সকলকেই আমি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছিলাম (কুরআন - ২৫:৩৮ - ৩৯) । তাদের পূর্বেও সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল নূহের সম্প্রদায় ,রাশ ও ছামুদ সম্প্রদায় ;আদ ,ফেরাউন ও লুত সম্প্রদায় এবং আইকার অধিবাসী ও তুব্বা সম্প্রদায় ;ওরা সকলেই রাসূলগণকে মিথ্যাবাদী বলেছিল । ফলে তাদের ওপর আমার শাস্তি আপতিত হয়েছে (কুরআন - ৫০:১২ - ১৪) ।

৪ । আম্মার ইবনে ইয়াসির ইবনে আমির আল - মাখিযুমি ছিলেন বনি মাখযুমের মুখপাত্র। ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় যে কজন ইসলাম গ্রহণ করেছিল তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তিনিই প্রথম মুসলিম যিনি নিজের ঘরে মসজিদ নির্মাণ করে আল্লাহর ইবাদত করতেন (সা ’ দ ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৭৮ ;আছীর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪৬: কাছীর ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৩১১)

আম্মার তাঁর পিতা ইয়াসির ও মাতা সুমাইয়ার সাথে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ইসলাম গ্রহণের কারণে তারা কুরাইশদের হাতে অনেক নির্যাতন ভোগ করেছিলেন। এমনকি নির্যাতনের চোটে আম্মার তার বাবা ও মাকে হারিয়েছিলেন এবং তারা উভয়ে ইসলামের প্রথম শহীদ।

যারা আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিল তাদের মধ্যে আম্মারও ছিলেন এবং তিনি আবিসিনিয়া থেকে প্রথম দিকেই মদিনায় হিজরত করেছিলেন। তিনি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং রাসূলের (সা.) সময়ের সকল যুদ্ধ ও মুসলিম সমাবেশে ,অংশগ্রহণ করেছিলেন। ইসলামের জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। তার ধার্মিকতা ,বিশিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও সৎকর্মের জন্য রাসূলের (সা.) অনেক হাদিস রয়েছে। আয়শা ও অন্যান্য বেশ কয়েকজনের বর্ননায় আছে যে ,রাসূল (সা.) বলেছেন , আম্মারের আপাদমস্তক ইমানে ভরপুর ” (মাজাহ ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৬৫ ;ইসফাহানী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৩৯ ;শ্যাফেয়ী ,৯ম খণ্ড ,পৃঃ ২৯৫ ;বার ,৩ খণ্ড ,পৃঃ ১১৩৭ ;হাজর ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৫১২) ।

আম্মার সম্পর্কে অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে ,রাসূল (সা.) বলেছেনঃ

আম্মার সত্যের সাথে এবং সত্য আম্মারের সাথে । সত্য যেদিকে আম্মার সেদিকে । চক্ষু নাকের যেরূপ নিকটবর্তী আম্মার আমার ততটা নিকটবর্তী । হায় ,হায়! একটা বিদ্রোহী দল তাকে হত্যা করবে (সা ’ দ ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৮৭ ;নিশাবুরী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৯২: হিশাম ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৪৩ ,কাছীর ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ১৬৮ - ১৭০) ।

পঁচিশজন সাহাবার সূত্রে প্রায় সকল হাদিস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে ,রাসূল (সা.) বলেছেনঃ হয় ,হায়! সত্যত্যাগী একদল বিদ্রোহী আম্মারকে হত্যা করবে। আম্মার তাদেরকে জান্নাতের দিকে আহ্বান করবে এবং ওরা আম্মারকে জাহান্নামের দিকে ডাকবে । তার হত্যকারী এবং যারা তার অস্ত্র ও পরিচ্ছদ খুলে ফেলবে তারা জাহান্নামের অধিবাসী। (বুখারী ,৮ম খণ্ড ,পৃঃ ১৮৫ - ১৮৬ ;তিরমিয়ী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৬৬৯ ,হাম্বল ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৬১ ,১৬:৪ ,২০৬: ৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৫ ,২২ ,২৮ ,৯১ ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৯৭ ,১৯৯ ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ২১৫ ,৩০৬ ,৩০৭: ।

এই হাদিসটির সত্যতা ও সঠিকতা সম্পর্কে প্রায় সকল হাদিসবেত্তা ও ঐতিহাসিক একমত পোষণ করেন। আসকালানী (৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৪০৯) ,হাজর (২য় খণ্ড ,পৃঃ ৫১২) ও সুয়ুতি (২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৪০) লিখেছেন যে ,এই হাদিসটির বর্ণনা অত্যন্ত মুতাওয়াতির (অর্থাৎ এত বেশি লোক দ্বারা বর্ণিত যে ,এতে কোন প্রকার সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই) । বার (৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১১৪০) লিখেছেন যে ,রাসূলের (সা.) সময় থেকে এ হাদিসটির একটা বিদ্রোহী দল আম্মারকে হত্যা করবে ” অংশ অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে এবং এটা রাসূলের (সা.) গুপ্ত জ্ঞান দ্বারা একটা ভবিষ্যদ্বাণী ।

রাসূলের (সা.) তিরোধানের পর প্রথম খলিফার রাজত্বকালে আম্মার আমিরুল মোমেনিনের বিশেষ সমর্থক ও অনুচর ছিলেন। উসমানের খেলাফতকালে বায়তুল মাল বণ্টনে দুর্নীতিমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যখন জনগণ সোচ্চার হয়ে উঠলো তখন এক জনসমাবেশে উসমান বলেছিলেন , বায়তুল মাল পবিত্র এবং তা আল্লাহর সম্পদ। রাসূলের উত্তরসূরী হিসাবে আমার ইচ্ছামতো তা বন্টন করার অধিকার আমার আছে। যারা আমার কথা ও কাজের সমালোচনা করে তারা অভিশপ্ত এবং তাদেরকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। ” তখন আম্মার জোর গলায় বলেছিলেন যে ,উসমান জনসাধারণের স্বার্থ উপেক্ষা করে রাসূল (সা.) কর্তৃক নিষিদ্ধ গোত্র - স্বর্থ ও স্বজনপ্ৰীতির প্রবর্তন করেছে। এতে উসমান রাগান্বিত হয়ে আম্মারকে পিটিয়ে চেপ্টা করে দেয়ার জন্য তার লোকজনকে আদেশ দিলেন। ফলে কয়েকজন উমাইয়া আম্মারের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে তাকে বেদম প্রহার করেছিল। এমনকি খলিফা নিজেই জুতা পরিহিত পায়ে তার মুখে পদাঘাত করেছিলেন। এতে আম্মার অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং উন্মুল মোমেনিন উন্মে সালমার পরিচর্যায় তিন দিন পর জ্ঞান ফিরে পান (বালাজুরী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৪৮ ,৫৪ ,৮৮ ;হাদীদ ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৪৭ - ৫২ ;কুতায়বাহ ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৫ - ৩৬ ;রাব্বিহ্ ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৩০৭ ;সা ’ দ ’ ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৮৫ ;বাকরী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২৭১) ।

আমিরুল মোমেনিন খলিফা হবার পর আম্মার তার একজন একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। এসময় তিনি সকল প্রকার সামাজিক ,রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষামূলক কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিশেষ করে জামালের যুদ্ধে ও সিফফিনের যুদ্ধে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। যা হোক ,৩৭ হিজরি সনের ৯ সফর সিফফিনের যুদ্ধে তিনি নব্বই বছরের কিছু অধিক বয়সে শহীদ হয়েছিলেন। শহীদ হবার দিন আম্মার আকাশের দিকে মুখ তুলে বললেনঃ

হে আমার আল্লাহ ,নিশ্চয়ই তুমি অবগত আছে যে ,যদি আমি জানতে পারি ফোরাত নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আমার ডুবে যাওয়াই তোমার ইচ্ছ। তবে আমি তাই করবো | হে আমার আল্লাহ ,নিশ্চয়ই তুমি অবগত আছে যে ,যদি আমি জানতে পারি। আমার এই শমশের বুকের গভীরে চুকিয়ে পিঠ দিয়ে বের করে নিলে তুমি খুশি হবে। তবে আমি তাই করবো ! হে আমার আল্লাহ ,আমি মনে করি এই পাপাচারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চেয়ে সন্তোষজনক তোমার কাছে আর কিছু নেই এবং যদি আমি জানতে পারি তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ তোমার কাছে অধিক প্রিয় তবে আমি তাই করবো ।

আবু আবদুর রহমান আস - সুলামী বর্ণনা করেছেনঃ

আমিরুল মোমেনিনের সাথে আমরাও সিফফিনে উপস্থিত ছিলাম । আমি দেখেছি আম্মার ইবনে ইয়াসির কোনদিকে দ্রুক্ষেপ না করে শত্রুর ব্যুহ ভেদ করে চলেছে এবং রাসূলের সাহাবাগণ এমনভাবে তাকে অনুসরণ করে চলেছিল যেন সে তাদের জন্য একটা নিদর্শন । তারপর আমি শুনলাম আম্মার হাশিম ইবনে উতবাকে ডেকে বললেনঃ হে হাশিম বুহ্যের মধ্যে দ্রুত ঢুকে পড়ো । মনে রেখো ,জান্নাত তরবারির নিচে । আজ আমি আমার সবচাইতে প্রিয় ব্যক্তি মুহাম্মদ ও তাঁর দলের সাক্ষাত পেয়েছি । আল্লাহর কসম ,তারা যদি হাজরের (বাহরাইনের একটা শহর) ,খেজুর বিখী অঞ্চল পর্যন্তও আমাদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় তবুও আমি বলবো নিশ্চয়ই আমরা ন্যায় ও সত্যের পথে রয়েছি এবং তারা বিপথগামী ও বিভ্রান্ত ৷ অতঃপর শত্রুকে সম্বোধন করে আন্মারকে বলতে শুনলাম , পবিত্র কুরআনের প্রত্যাদেশ বিশ্বাস করার জন্য আমরা তোমাদেরকে আঘাত করেছিলাম ;এবং আজ তার ব্যাখ্যা বিশ্বাস করার জন্য আঘাত করছি ;এমন আঘাত হানবো যাতে মস্তক দ্বীখণ্ডিত হয়ে তোমরা চির বিশ্রাম স্থলে চলে যাও ,এবং যাতে তোমরা এক বন্ধু অপর বন্ধুর নাম ভুলে যাও ,এ আঘাত ততক্ষণ পর্যন্ত চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা সত্যের দিকে ফিরে না আস আমি অন্য কোন যুদ্ধে রাসূলের (সাঃ) এত বেশি সংখ্যক সাহাবাকে শহীদ হতে দেখিনি যত হয়েছিল আন্মারের নেতৃত্বে সে দিন ।

আম্মার শত্রু সৈন্যব্যুহের মধ্যে প্রবেশ করে একের পর এক আক্রমণ রচনা করে তাদের নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছিলো। এ সময় একদল নিচ প্রকৃতির সিরিয়ান তাঁকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলেছিল এবং আবু ঘাদিয়া আল - যুহরী নামক এক পিশাচ তাকে এমন আঘাত করেছিল যা সহ্য করতে না পেরে তিনি ক্যাম্পে ফিরে গেলেন। ক্যাম্পে ফিরেই তিনি পানি চাইলেন। লোকেরা তার জন্য এক বাটি দুধ নিয়ে এলো। দুধ দেখেই আম্মার বললেন , আল্লাহর রাসূল ঠিক কথাই বলেছেন। ” লোকেরা এক কথার অর্থ জানতে চাইলে তিনি বললেন , আল্লাহর রাসূল আমাকে একদিন বলেছিলেন এ পৃথিবীতে আমার শেষ খাদ্য হবে দুধ। ” এরপর তিনি দুধ পান করলেন এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে তাঁর প্রাণ সমর্পণ করলেন। তাঁর মৃত্যু সংবাদ শুনে আমিরুল মোমেনিন তাঁর ক্যাম্পে এলেন এবং তাঁর মাথা নিজের কোলে তুলে নিয়ে বললেন , নিশ্চয়ই ,যদি কোন মুসলিম আম্মারের মৃত্যুতে মানসিকভাবে আহত না হয়ে থাকে এবং শোকাহত না হয়ে থাকে। তবে তার ইমান যথার্থ নয়। ” তারপর আমিরুল মোমেনিন ছন্দাকারে বললেনঃ

আম্মারের ইসলাম গ্রহণের দিন আল্লাহ তাকে রহমত বর্ষণ করুন ,আম্মারের শাহাদতের দিন আল্লাহ তাকে রহমত বর্ষণ করুন ,আন্মারের পুনরুত্থানের দিন আল্লাহ তাকে রহমত বর্ষণ করুন।

আমিরুল মোমেনিন অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন , নিশ্চয়ই ,আমার কাছে আম্মারের মর্যাদা এত উচু মাপের যে ,রাসূলের তিনজন সাহাবার নাম করা যাবে না। যদি তাকে চতুর্থজন ধরা না হয় ;চারজনের নাম করা যাবে না। যদি তাকে পঞ্চম ধরা না হয়। নিশ্চয়ই ,রাসূল (সা.) বলেছিলেন , আম্মার সত্যের সাথে এবং সত্য আম্মারের সাথে। সত্য যেদিকে আম্মার সেদিকে। তার হত্যাকারী জাহান্নামবাসী হবে। ” তারপর আমিরুল মোমেনিন নিজেই তার জানাজা পড়লেন এবং তার রক্তাক্ত পোশাকসহ তাকে নিজ হাতে কবরে শুইয়ে দিলেন।

এদিকে আম্মারের মৃত্যু মুয়াবিয়ার সৈন্যদের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তাদের মনে একটা ধারণা দেয়া হয়েছিল যে ,তারা ন্যায়ের জন্যই আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেছিলো। কিন্তু তাদের অনেকই আম্মার সম্পর্কে রাসূলের (সা.) উক্ত বাণীর বিষয় অবগত ছিল। আম্মারের মৃত্যুতে তাদের ভুল ভেঙ্গে গেল। তারা বুঝতে পারলো যে ,তারা অন্যায় যুদ্ধে লিপ্ত এবং আমিরুল মোমেনিন ন্যায় পথে রয়েছেন। এ চিন্তা অফিসার হতে সাধারণ সৈনিক পর্যন্ত সকলের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। অবস্থা বেগতিক দেখে মুয়াবিয়া তার চিরাচরিত মিথ্যা ,ছলনা ও কুট চালের আশ্রয় গ্রহণ করে বললো , আম্মারের মৃত্যুর জন্য আমরা দায়ী নই। আলীই তো তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে এসেছে। কাজেই তার মৃত্যুর জন্য আলী দায়ী। ” মুয়াবিয়ার এহেন ছলনাপূর্ণ উক্তি যখন আমিরুল মোমেনিকে অবহিত করা হলো তখন তিনি মুয়াবিয়ার মূর্খতা ও মিথ্যা উক্তির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বললেন , মুয়াবিয়া বুঝাতে চায় হামজার মৃত্যুর জন্য রাসূল দায়ী ,কারণ তিনিই তাকে ওহুদের যুদ্ধে এনেছিলেন। (তাবারী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৩১৬ - ৩৩২২ ;৩য় খণ্ড ,পৃঃ ২৩১৪ - ২৩১৯ ;সা 'দ ’ ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৭৬ - ১৮৯ ;আছীর ,৩য় খণ্ড ,পৃ. ৩০৮ - ৩১২ কাছীর ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ২৬৭ - ২৭২ ;মিনকারী ,পৃঃ ৩২০ - ৩৪৫ ;বার ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১১৩৫ - ১১৪০ ;৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৭২৫ ;আছীর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ৪৩ - ৪৭ ;৫ম খণ্ড ,পৃঃ ২৬৭ ;হাদীদ ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ২৫২ - ২৫৮ ,৮ম খণ্ড ,পৃঃ ১০ - ২৮ ,১০ম খণ্ড ,পৃঃ ১০২ - ১০৭ ;নিশাবুরী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৮৪ - ৩৯৪ ;রাব্বিহ ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ৩৪০ - ৩৪৩ ;মাসুদী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৮১ - ৩৮২ ;শাফেয়ী ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ২৩৮২৪৪ ;৯ম খণ্ড ,পৃঃ ২৯১ - ২৯৮ ;বালাজুরী ,পৃঃ ৩০১ - ৩১৯)

৫। ইবনে তাইহানের পূর্ণ নাম হলো আবুল হায়ছাম (মালিক) ইবনে তাইহান আল - আনসারী। তিনি ছিলেন আনসারদের বারজন নাকিবের (প্রধান) অন্যতম যারা প্রথমে আকাবোহর মেলায় রাসূলের সাথে আলোচনা করেছিলেন এবং দ্বিতীয় আকাবায় যারা রাসূলকে ইসলাম গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তিনি তাদেরও অন্যতম ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বদরি (অর্থাৎ বদর যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী) এবং রাসূলের সময়কার সকল যুদ্ধ ও মুসলিম সমাবেশে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আমিরুল মোমেনিনের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। তিনি জামালের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং সিফফিনের যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন। (বার ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৭৭৩ ;মিনকারী ,পৃঃ ৩৬৫ ;আছীর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৭৪ ;৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৩১৮ ;হাজর ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৪১ ;৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৩১২ - ৩১৩ ;হাদীদ ,১০ম খণ্ড ,পৃঃ ১০৭ - ১০৮ ;বালাজুরী ,পৃঃ ৩১৯) ।

৬। যুশ - শাহাদাতাইনের আসল নাম হলো খুজায়মাহ ইবনে ছাবিত আল - আনসারী। রাসূল (সা.) তার সাক্ষ্যকে দুজন লোকের সাক্ষ্যের সমতুল্য সত্য বলে মনে করতেন। সেই কারণে তিনি যুশ - শাহাদাতাইন বলে পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন বদরি এবং রাসূলের জীবৎকালে তিনি সকল যুদ্ধে ও মুসলিম সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যারা প্রথমেই আমিরুল মোমেনিনের বায়াত গ্রহণ করেছিল তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। আবদুর রহমান ইবনে আবি লায়লা বর্ণনা করেছেন যে ,সিফফিনের যুদ্ধে একজন লোককে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করতে তিনি দেখছেন এবং তিনি তার কাছাকাছি হলে সে চিৎকার করে বলেছিলো , আমি খুজায়মাহ ইবনে ছাবিত আল আনসারী। আমি রাসূলকে (সা.) বলতে শুনেছি ,যুদ্ধ কর ,যুদ্ধ কর ,আলীর পক্ষে যুদ্ধ কর। ” আম্মার ইবনে ইয়াসিরের অল্প কিছুক্ষণ পরেই খুজায়মাহ শাহাদত বরণ করেন। (বাগদাদী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২৭৭ ;আসকারী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ১৭৫ - ১৮৯ ;হাদীদ ,১০ম খণ্ড ,পৃঃ ১০৯ - ১১০ ;সাদ ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৮৫ - ১৮৮ ;নিশাবুরী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৮৫ - ৩৯৭ ;আছীর ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১১৪ ;৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪৭ ;বার ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৪৪৮ ;তাবারী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ২৩১৬ - ২৩১৯ ,২৪০১ ;আছীর ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ২৩৫ ;মিনকারী ,পৃঃ ৩৬৩ ,৩৯৮ ;বালাজুরী ,পৃঃ ৩১৩ - ৩১৪) ।

৭। জামালের যুদ্ধে যারা আমিরুল মোমেনিনের পক্ষে অংশগ্রহণ করেছিল তাদের মধ্যে একশত ত্রিশ জন ছিলেন বদরি (বন্দরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী) এবং সাতশত জন ছিলেন বায়াতুর রিদওয়ানি (গাছের নিচে রাসূলের হাত ধরে যারা বায়াত গ্রহণ করেছিল) । জামালের যুদ্ধে আমিরুল মোমেনিনের পক্ষের পাঁচশত জন শহীদ হয়েছিল (মতান্তরে সাতশত জন শহীদ হয়েছিল) । আমিরুল মোমেনিনের বিপক্ষ দলের বিশ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছিল (জাহাবি ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৭১ ;খায়াত ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৬৪ ;রাব্বিহ ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৩২৬) ।

সিফফিনের যুদ্ধে আমিরুল মোমেনিনের পক্ষে আশিজন বদরি ও আটশতজন বায়াতুর রিদওয়ানি অংশগ্রহণ করেছিলেন। এ যুদ্ধে আমিরুল মোমেনিনের পক্ষের পচিশ হাজার জন শহীদ হয়েছিলেন। তন্মধ্যে ছাব্বিশ জন বদরি ও তিনশত তিনজন বায়াতুর রিদওয়ানি ছিলেন। আম্মার ,যুশ - শাহাজা।তাইন ও ইবনে তাইহান ছাড়াও দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি শহীদ হয়েছিলেন। তারা হলেন হাশিম ইবনে উতবাহ ইবনে আবি ওয়াক্কাস আল - মিরাকল ও আবদুল্লাহ ইবনে বুদায়েল ইবনে ওয়ারুকা আল - খুজাই।

আম্মার শহীদ হবার কিছুক্ষণ পরেই হাশিম শাহাদত বরণ করেন। সেইদিন আমিরুল মোমেনিনের ঝাণ্ডা বাহক ছিলেন হাশিম এবং পদাতিক বাহিনীর কমাণ্ডার ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে বুদায়েল। সিফফিনের যুদ্ধে মুয়াবিয়ার পক্ষে নিহত হয়েছিল পায়তাল্লিশ হাজার জন (নিশাবুরী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১০৪ ;বার ,৩য় খণ্ড ,১০৪ ;হাজর ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৮৯ ;ইয়াকুবী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৮৮৫ মিনকারী ,পৃঃ ৫৫৮ ;বার ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৮৯ ;বালাজুরী ,পৃঃ ৩২২ ;হাদীদ ,১০ম খণ্ড ,পৃঃ ১০৪ ;ফিদা ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৭৫ ;ওয়ারদী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২৪০ ;কাছীর ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ২৭৫ ;বাকরী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২৭৭) ।

খোৎবা - ১৮২

معرفة الله

الْحَمْدُ لِلَّهِ الْمَعْرُوفِ مِنْ غَيْرِ رُؤْيَةٍ، وَ الْخالِقِ مِنْ غَيْرِ مَنْصَبَةٍ، خَلَقَ الْخَلائِقَ بِقُدْرَتِهِ، وَ اسْتَعْبَدَ الْأَرْبابَ بِعِزَّتِهِ، وَ سادَ الْعُظَمأَ بِجُودِهِ؛ وَ هُوَ الَّذِي أَسْكَنَ الدُّنْيا خَلْقَهُ، وَ بَعَثَ إِلَى الْجِنِّ وَ الْإِنْسِ رُسُلَهُ، لِيَكْشِفُوا لَهُمْ عَنْ غِطائِها، وَ لِيُحَذِّرُوهُمْ مِنْ ضَرَّائِها، وَ لْيَضْرِبُوا لَهُمْ أَمْثالَها، وَ لِيُبَصِّرُوهُمْ عُيُوبَها، وَ لِيَهْجُمُوا عَلَيْهِمْ بِمُعْتَبَرٍ مِنْ تَصَرُّفِ مَصاحِّها وَ أَسْقامِها، وَ حَلالِها وَ حَرامِها، وَ ما أَعَدَّ اللَّهُ لِلْمُطِيعِينَ مِنْهُمْ وَ الْعُصاةِ مِنْ جَنَّةٍ وَ نارٍ، وَ كَرامَةٍ وَ هَوانٍ. أَحْمَدُهُ إِلَى نَفْسِهِ كَما اسْتَحْمَدَ إِلَى خَلْقِهِ، وَ جَعَلَ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْراً، وَ لِكُلِّ قَدْرٍ أَجَلاً، وَ لِكُلِّ أَجَلٍ كِتَاباً.

خصائص القرآن

فَالْقُرْآنُ آمِرٌ زاجِرٌ، وَ صامِتٌ ناطِقٌ. حُجَّةُ اللَّهِ عَلَى خَلْقِهِ. أَخَذَ عَلَيْهِمْ مِيثاقَهُمْ، وَ ارْتَهَنَ عَلَيْهِمْ أَنْفُسَهُمْ. أَتَمَّ نُورَهُ، وَ أَكْمَلَ بِهِ دِينَهُ، وَ قَبَضَ نَبِيَّهُصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ، وَ قَدْ فَرَغَ إِلَى الْخَلْقِ مِنْ أَحْكامِ الْهُدى بِهِ، فَعَظِّمُوا مِنْهُسُبْحانَهُ ما عَظَّمَ مِنْ نَفْسِهِ، فَإِنَّهُ لَمْ يُخْفِ عَنْكُمْ شَيْئا مِنْ دِينِهِ، وَ لَمْ يَتْرُكْ شَيْئا رَضِيَهُ أَوْ كَرِهَهُ إِلا وَ جَعَلَ لَهُ عَلَماً بادِياً، وَ آيَةً مُحْكَمَةً تَزْجُرُ عَنْهُ، أَوْ تَدْعُو إِلَيْهِ. فَرِضاهُ فِيما بَقِيَ واحِدٌ، وَ سَخَطُهُ فِيما بَقِيَ واحِدٌ. وَ اعْلَمُوا أَنَّهُ لَنْ يَرْضَى عَنْكُمْ بِشَيْءٍ سَخِطَهُ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، وَ لَنْ يَسْخَطَ عَلَيْكُمْ بِشَيْءٍ رَضِيَهُ مِمَّنْ كانَ قَبْلَكُمْ، وَ إِنَّمَا تَسِيرُونَ فِي أَثَرٍ بَيِّنٍ، وَ تَتَكَلَّمُونَ بِرَجْعِ قَوْلٍ قَدْ قالَهُ الرِّجالُ مِنْ قَبْلِكُمْ، قَدْ كَفاكُمْ مَؤُونَةَ دُنْياكُمْ، وَ حَثَّكُمْ عَلَى الشُّكْرِ، وَ افْتَرَضَ مِنْ أَلْسِنَتِكُمُ الذِّكْرَ.

وَ أَوْصاكُمْ بِالتَّقْوَى، وَ جَعَلَها مُنْتَهَى رِضاهُ وَ حاجَتَهُ مِنْ خَلْقِهِ. فَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي أَنْتُمْ بِعَيْنِهِ، وَ نَواصِيكُمْ بِيَدِهِ، وَ تَقَلُّبُكُمْ فِي قَبْضَتِهِ. إِنْ أَسْرَرْتُمْ عَلِمَهُ، وَ إِنْ أَعْلَنْتُمْ كَتَبَهُ؛ قَدْ وَكَّلَ بِذلِكَ حَفَظَةً كِرَاماً، لا يُسْقِطُونَ حَقَّاً، وَ لا يُثْبِتُونَ بَاطِلاً. وَ اعْلَمُوا أَنَّهُ( مَنْ يَتَّقِ اللّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجاً ) مِنَ الْفِتَنِ، وَ نُورا مِنَ الظُّلَمِ وَ يُخَلِّدْهُ فِيمَا اشْتَهَتْ نَفْسُهُ، وَ يُنْزِلْهُ مَنْزِلَ الْكَرامَةِ عِنْدَهُ فِي دارٍ اصْطَنَعَها لِنَفْسِهِ، ظِلُّها عَرْشُهُ، وَ نُورُها بَهْجَتُهُ، وَ زُوَّارُها مَلائِكَتُهُ، وَ رُفَقاؤُها رُسُلُهُ؛ فَبادِرُوا الْمَعادَ، وَ سابِقُوا الْآجالَ، فَإِنَّ النَّاسَ يُوشِكُ أَنْ يَنْقَطِعَ بِهِمُ الْأَمَلُ، وَ يَرْهَقُهُمُ الْأَجَلُ، وَ يُسَدُّ عَنْهُمْ بابُ التَّوْبَةِ. فَقَدْ أَصْبَحْتُمْ فِي مِثْلِ ما سَأَلَ إِلَيْهِ الرَّجْعَةَ مَنْ كانَ قَبْلَكُمْ.

ضرورة تذکر القیامة و العذاب

وَ أَنْتُمْ بَنُو سَبِيلٍ، عَلَى سَفَرٍ مِنْ دارٍ لَيْسَتْ بِدارِكُمْ، وَ قَدْ أُوذِنْتُمْ مِنْها بِالارْتِحالِ وَ أُمِرْتُمْ فِيها بِالزَّادِ. وَ اعْلَمُوا أَنَّهُ لَيْسَ لِهَذَا الْجِلْدِ الرَّقِيقِ صَبْرٌ عَلَى النَّارِ، فَارْحَمُوا نُفُوسَكُمْ، فَإِنَّكُمْ قَدْ جَرَّبْتُمُوها فِي مَصائِبِ الدُّنْيَا. أَفَرَأَيْتُمْ جَزَعَ أَحَدِكُمْ مِنَ الشَّوْكَةِ تُصِيبُهُ، وَ الْعَثْرَةِ تُدْمِيهِ، وَ الرَّمْضأِ تُحْرِقُهُ؟ فَكَيْفَ إِذا كانَ بَيْنَ طابَقَيْنِ مِنْ نارٍ، ضَجِيعَ حَجَرٍ وَ قَرِينَ شَيْطانٍ! أَعَلِمْتُمْ أَنَّ مالِكا إِذا غَضِبَ عَلَى النَّارِ حَطَمَ بَعْضُها بَعْضاً لِغَضَبِهِ، وَ إِذا زَجَرَها تَوَثَّبَتْ بَيْنَ أَبْوابِها جَزَعاً مِنْ زَجْرَتِهِ! أَيُّهَا الْيَفَنُ الْكَبِيرُ، الَّذِي قَدْ لَهَزَهُ الْقَتِيرُ، كَيْفَ أَنْتَ إِذا الْتَحَمَتْ أَطْواقُ النَّارِ بِعِظامِ الْأَعْناقِ، وَ نَشِبَتِ الْجَوامِعُ حَتَّى أَكَلَتْ لُحُومَ السَّواعِدِ.

فَاللَّهَ اللَّهَ، مَعْشَرَ الْعِبادِ! وَ أَنْتُمْ سالِمُونَ فِي الصِّحَّةِ قَبْلَ السُّقْمِ، وَ فِي الْفُسْحَةِ قَبْلَ الضِّيقِ، فَاسْعَوْا فِي فَكاكِ رِقابِكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ تُغْلَقَ رَهائِنُها. أَسْهِرُوا عُيُونَكُمْ، وَ أَضْمِرُوا بُطُونَكُمْ، وَ اسْتَعْمِلُوا أَقْدَامَكُمْ، وَ أَنْفِقُوا أَمْوالَكُمْ، وَ خُذُوا مِنْ أَجْسادِكُمْ تَجُودُوا بِها عَلَى أَنْفُسِكُمْ وَ لا تَبْخَلُوا بِهَا عَنْهَا، فَقَدْ قالَ اللَّهُسُبْحانَهُ :( إِنْ تَنْصُرُوا اللّهَ يَنْصُرْكُمْ وَ يُثَبِّتْ أَقْدامَكُمْ ) وَ قالَ تَعالَى:( مَنْ ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللّهَ قَرْضا حَسَنا فَيُضاعِفَهُ لَهُ وَ لَهُ أَجْرٌ كَرِيمٌ ) . فَلَمْ يَسْتَنْصِرْكُمْ مِنْ ذُلِّ، وَ لَمْ يَسْتَقْرِضْكُمْ مِنْ قُلِّ. اسْتَنْصَرَكُمْ( وَ لَهُ جُنُودُ السَّماواتِ وَ الْأَرْضِ وَ هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ) . وَ اسْتَقْرَضَكُمْ وَ لَهُ خَزائِنُ السَّماواتِ وَ الْأَرْضِ وَ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ، وَ إِنَّمَا أَرادَ«أَنْ يَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلاً» . فَبادِرُوا بِأَعْمالِكُمْ تَكُونُوا مَعَ جِيرانِ اللَّهِ فِي دارِهِ. رافَقَ بِهِمْ رُسُلَهُ، وَ أَزارَهُمْ مَلائِكَتَهُ، وَ أَكْرَمَ أَسْماعَهُمْ أَنْ تَسْمَعَ حَسِيسَ نارٍ أَبَداً، وَ صانَ أَجْسادَهُمْ أَنْ تَلْقَى لُغُوبا وَ نَصَباً:( ذلِكَ فَضْلُ اللّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشأُ وَ اللّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ ) . أَقُولُ ما تَسْمَعُونَ، وَ اللّهُ الْمُسْتَعانُ عَلَى نَفْسِي وَ أَنْفُسِكُمْ، وَ هُوَ حَسْبُنا وَ نِعْمَ الْوَكِيلُ!.

আল্লাহর প্রশংসা , পবিত্র কুরআনের গুরুত্ব ও বিচার দিনের শাস্তির সতর্কতা সম্পর্কে

আল্লাহর নেয়ামতের জন্য প্রশংসা

প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা আল্লাহর যিনি দৃশ্যমান না হয়েও স্বীকৃত এবং যিনি কোন প্রকার পরিশ্রম ছাড়াই সৃষ্টি করেন। তিনি তাঁর কুদরতের সাহায্যে সৃষ্টিকে সৃষ্টিতে এনেছেন এবং তাঁর মর্যাদা ও মহত্ত্বের কারণে সকল শাসনকর্তার আনুগত্য লাভ করেন। তিনি তাঁর মহত্ত্বের মাধ্যমে সকল মহৎ মানুষের ওপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখেন। তিনি পৃথিবীকে তাঁর সৃষ্টি দ্বারা পরিপূর্ণ করেছেন এবং জিন ও ইনসানের প্রতি তাঁর পয়গম্বর প্রেরণ করেছেন যেন তাদের কাছে দুনিয়া উন্মোচন করা হয় ,যেন দুনিয়ার ক্ষতি সম্বন্ধে বিচূতি তাদেরকে দেখিয়ে দেয়া হয় এবং সামগ্রীক বিষয়াবলী যেন তাদের শিক্ষার জন্য তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয় ,যেমন - স্বাস্থ্যের পরিবর্তন ও রোগ - ব্যাধি ,হালাল ও হারাম বিষয়াদি এবং অনুগত ও অবাধ্যের জন্য আল্লাহ যা নির্ধারিত করে রেখেছেন (বেহেশত ও দোযখ) । আমি তাঁর সত্তার সেরূপ প্রশংসা করি যেরূপ তিনি তাঁর বান্দার কাছে প্রত্যাশা করেন। তিনি সকল কিছুর জন্য একটা পরিমাপ নির্ধারিত করেছেন ,প্রতিটি পরিমাপের জন্য একটা সময়সীমা এবং প্রতিটি সময়সীমার জন্য একটি দলিল নির্ধারণ করেছেন ।

পবিত্র কুরআনের মহত্ত্ব ও গুরুত্ব সম্পর্কে

পবিত্র কুরআন আদেশ দেয়। আবার বিরতও থাকে ;নীরব থাকে আবার কথাও বলে। বান্দার সম্মুখে তা আল্লাহর প্রমাণ। কুরআনের বিধান অনুযায়ী কাজ করার জন্য তিনি বান্দার অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন। তিনি কুরআনের দীপ্তিকে নিখুঁত করেছেন এবং তার মাধ্যমে তাঁর দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছেন। কুরআনের মাধ্যমে তাঁর হেদায়েতের আদেশাবলী মানুষের কাছে পৌছানোর পর তিনি রাসূলকে (সা.) পৃথিবী ত্যাগ করতে দিয়েছেন। যেভাবে আল্লাহ নিজকে মহান হিসাবে অধিষ্ঠিত করেছেন সেভাবে তাকে মহান মনে করা তোমাদের উচিত। কারণ তিনি তার দ্বীনের কোন কিছুই তোমাদের কাছে গোপন করেননি এবং তাঁর পছন্দ অপছন্দ সম্বন্ধে কোন কিছুই বাদ দেননি। এগুলোকে হেদায়েতের সুস্পষ্ট প্রতীক ও নিদর্শন করে দিয়েছেন যাতে মানুষ তার দিকে এগিয়ে যেতে পারে অথবা বিরত থাকতে পারে। অনন্তকালের জন্য তার সন্তোষ একই রকম ।

মনে রেখো ,তিনি যে সব বিষয়ে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন সেসব বিষয়ে তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট হবেন না এবং তোমাদের পূর্ববর্তীগণের ওপর যেসব বিষয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন তোমাদের ওপর সে সব বিষয়ে অসন্তুষ্ট হবেন না। তোমরা সুস্পষ্ট পথের ওপর পদচারণা করছো এবং তোমাদের পূর্ববর্তীগণ যা বলতো তাই বলছো। এ পৃথিবীতে তোমাদের প্রয়োজন মিটানোর জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার জন্য তিনি তোমাদেরকে আদেশ করেছেন এবং মুখে তাঁর নামোল্লেখ করা তোমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন।

তাকে ভয় করা অভ্যাসে পরিণত করার জন্য তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছেন। এ ভয়কে তিনি তাঁর সন্তোষের সর্বোচ্চ বিন্দু করে দিয়েছেন এবং বান্দার কাছে এটাই তিনি চান। সুতরাং তোমরা এমনভাবে আল্লাহকে ভয় করবে যেন তোমরা তার সম্মুখে রয়েছো এবং তোমাদের সম্মুখভাগের কেশগুচ্ছ তাঁর মুষ্টির মধ্যে ও তোমাদের অবস্থার পরিবর্তন তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন। যদি তোমরা কোন বিষয় গোপন কর ,তিনি তা জ্ঞাত থাকবেন। যদি তোমরা কোন বিষয় প্রকাশ কর ,তিনি তা রেকর্ড করবেন। এ কাজে তিনি সম্মানিত প্রহরী নিয়োগ করেছেন যারা কোন সঠিক বিষয় বাদ দেয় না এবং বেঠিক কিছু সংযোজ করে না। জেনে রাখো ,যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তাকে বিপদ থেকে বেরিয়ে আসার পথ তিনি করে দেন এবং অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আলো মঞ্জুর করেন। যে অবস্থায় থাকতে সে ইচ্ছা পোষণ করে তিনি তাকে সে অবস্থায় রাখবেন এবং তাঁর নৈকট্যে সম্মানিত অবস্থানে তাকে রাখবেন। এ অবস্থান হলো তার আরশের ছায়া এবং তাঁর নূরের দ্যুতির আলো। এ অবস্থানের দর্শনাথী হলো তার ফেরেশতাগণ এবং সাথী হলো পয়গম্বরগণ ।

সুতরাং প্রত্যাবর্তন স্থলের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাও এবং পরকালের রসদ সংগ্রহ করে মৃত্যুর দিকে অগ্রবর্তী হও । অকস্মাৎ মানুষের আশা - আকাঙ্ক্ষা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে এবং মৃত্যু তাদেরকে পরাভূত করবে ,তখন তাদের তওবা করার দরজাও বন্ধ হয়ে যাবে। তোমরা এখনো এমন এক স্থানে আছো যেখানে তোমাদের পূর্ববর্তীগণ ছিল এবং তারা ফিরে আশার জন্য উদগ্র বাসনা পোষণ করছে।

বিচার দিনের শাস্তির সতর্কতা

এ পৃথিবী তোমাদের আবাসস্থল নয় - এখানে তোমরা ভ্রাম্যমান পর্যটকের মতো। এস্থান ত্যাগ করার জন্য তোমাদেরকে ডাক দেয়া হয়েছে এবং এস্থানে থাকাকালে রসদ সংগ্রহ করার জন্য তোমাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে। জেনে রাখো ,তোমাদের এই পাতলা চামড়া আগুনের জ্বালা (জাহান্নামের) সহ্য করতে পারবে না। সুতরাং তোমরা নিজেদের প্রতি অনুকম্প কর ,কারণ দুনিয়ার দুঃখ - দুর্দশায় তোমরা এর আভাস পেয়েছো ।

কোন লোকের পায়ে কাটা বিধলে কিভাবে কাদে তা কি তোমরা দেখেছে ? অথবা কেউ হোচট খেয়ে কেটে গিয়ে রক্ত বের হলে বা উত্তপ্ত বালিতে পুড়ে গেলে কী করে তা কি দেখেছে ? তাহলে একবার ভেবে দেখ ,জ্বলন্ত আগুনে উত্তপ্ত প্রস্তরের মাঝে শয়তানের সঙ্গী হিসাবে অবস্থাটা কেমন হবে ? তোমরা কি জানো দোযখের প্রধান প্রহরী মালিক যখন আগুনের প্রতি রাগান্বিত হয়ে তাকে গালাগালি করতে থাকবে এবং তাতে আগুনের লেলিহান শিখা চারিদিকে পরিব্যাপ্ত হয়ে পড়বে তখন অবস্থাটা কী হবে ? ওহে ,তোমরা যারা বয়োঃ বৃদ্ধ এবং বার্দ্ধক্য যাদেরকে শুভ্রকেশী করেছে ,তোমরা একবার ভেবে দেখ ,আগুনের বৃত্ত যখন তোমাদের ঘাড় ঘিরে ধরবে এবং তোমাদেরকে এমন শক্ত হাতকড়া লাগানো হবে যা তোমাদের বাহুর মাংশ খসিয়ে দেবে তখন তোমরা কী করবে ?

আল্লাহকে ভয় করা!! আল্লাহকে ভয় কর! হে জনমণ্ডলী ,রোগাক্রান্ত হবার আগেই সুস্থ থাকাকালে আল্লাহকে ভয় কর । বার্দ্ধক্যের জরা দ্বারা পরাভূত হবার আগেই আল্লাহকে ভয় করা। তোমাদের ঘাড়ের রেহান তামাদি হয়ে দখল করে নেয়ার আগেই তা অবমুক্ত করার চেষ্টা করা। তোমাদের চোখ খোলা রাখো ,তোমাদের পেটকে কৃশ করো (অর্থাৎ লোভ - লালসা কমাও) ,তোমাদের পা কাজে লাগাও ,তোমাদের অর্থ ব্যয় করো (আল্লাহর পথে) ,তোমাদের দেহকে নিজের উপকারার্থে খরচ কর (অর্থাৎ ইবাদতে মশগুল হও এবং জিহাদে মনোনিবেশ কর) এবং এসব বিষয়ে কৃপণতা পরিহার করো। কারণ মহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেছেনঃ

যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর ,আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদসমূহ (অবস্থান) । সুদৃঢ় করবেন (কুরআন - ৪৭ : ৭)

কে আছে আল্লাহকে দেবে উত্তম ঋণ ? যা তার জন্য তিনি বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার (কুরআন - ৫৭:১১) ।

কোন দুর্বলতার কারণে তিনি তোমাদের কাছে সাহায্য চান নি এবং কোন অভাবের কারণে তিনি ঋণ চান নি। আকাশ ও পৃথিবীর সকল সৈনিক যার করতলগত এবং যিনি নিজেই সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞানী। তিনি তোমাদেব সাহায্য চান। সমগ্র বিশ্ব - ব্রহ্মান্ডের অধিকারী হয়েও তিনি তোমাদের কাছে ঋণ চান। তিনি হলেন গণি ও প্রতিষ্ঠিত প্রশংসার অধিকারী। তার এসব বাণীর অভিপ্রায় হলো তোমরা যেন আমলে সালেহায় প্রবৃত্ত হও । সুতরাং আমলে সালেহায় প্রবৃত্ত হতে তোমরা বিলম্ব করো না যাতে তাঁর বাসস্থানে তাঁর প্রতিবেশীদের সাথে তোমরা বাস করতে পার। এসব প্রতিবেশীকে তিনি তাঁর পয়গম্বরগণের সাথী করেছেন এবং ফেরেশতাগণ সেখানে তাদের দর্শনার্থী। তিনি তাদের কানকে সম্মানিত করেছেন যাতে দোযখের আগুনের শব্দ তাদের কাছে না পৌছায় এবং তাদের দেহকে তিনি ক্লান্তি ও অবসাদ হতে সুরক্ষিত করেছেন। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ

তোমরা অগ্রণী হও তোমাদের রবের ক্ষমার প্রতি এবং সেই জান্নাত লাভের আশায় যা আকাশ ও পৃথিবীর মতো প্রশস্ত ;এবং যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ ও রাসূলগণে বিশ্বাসীদের জন্য । এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ,যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন: আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল (কুরআন ',.৫৭:২১) ।

তোমরা যা শুনছ আমি তাই বলি। আমার ও তোমাদের জন্য আমি আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি। তিনিই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই সর্বোত্তম কর্মবিধায়ক ।

খোৎবা - ১৮৩

قالَهُ لِلْبُرْجِ بْنِ مُسْهِرٍ الطَائِىِّ وَ قَدْ قالَ لَهُ بِحَيْثُ يَسْمَعُهُ: «لا حُكْمُ إِلالِلّهِ»، وَ كانَ مِنَ الْخَوارِج:

اسْكُتْ قَبَحَكَ اللَّهُ يَا أَثْرَمُ فَوَاللَّهِ لَقَدْ ظَهَرَ الْحَقُّ فَكُنْتَ فِيهِ ضَئِيلاً شَخْصُكَ، خَفِيّا صَوْتُكَ، حَتَّى إِذَا نَعَرَ الْبَاطِلُ نَجَمْتَ نُجُومَ قَرْنِ الْمَاعِزِ.

খারিজিদের মধ্য থেকে বুরজ ইবনে মুশির তাঈ আমিরুল মোমেনিনকে শুনিয়ে শুনিয়ে শ্লোগান দিয়েছিল , আদেশ শুধু আল্লাহর। ” তা শুনে তিনি বললেনঃ

চুপ কর ,হে ভাঙ্গা দাঁতওয়ালা ,আল্লাহ তোমাকে কুৎসিত করুন! আল্লাহর কসম ,সত্য যখন সুস্পষ্ট হয়ে প্রতিভাত হয়েছিল তখনও তোমার ব্যক্তিত্ব ছিল অতি দুর্বল এবং তোমার স্বর ছিল ক্ষীণ । অন্যায় যখন সজোরে চিৎকার আরম্ভ করলো তখন তুমি বাছুরের শিং - এর মতো আবার গজিয়ে উঠেছো।

খোৎবা - ১৮৪

ألْحَمْدُ لِلَّهِ اَلَّذِي لاَ تُدْرِكُهُ اَلشَّوَاهِدُ، وَ لاَ تَحْوِيهِ اَلْمَشَاهِدُ، وَ لاَ تَرَاهُ اَلنَّوَاظِرُ، وَ لاَ تَحْجُبُهُ اَلسَّوَاتِرُ، اَلدَّالِّ عَلَى قِدَمِهِ بِحُدُوثِ خَلْقِهِ، وَ بِحُدُوثِ خَلْقِهِ عَلَى وُجُودِهِ، وَ بِاشْتِبَاهِهِمْ(إشباههم) عَلَى أَنْ لاَ شَبَهَ لَهُ. اَلَّذِي صَدَقَ فِي مِيعَادِهِ، وَ اِرْتَفَعَ عَنْ ظُلْمِ عِبَادِهِ، وَ قَامَ بِالْقِسْطِ فِي خَلْقِهِ، وَ عَدَلَ عَلَيْهِمْ فِي حُكْمِهِ، مُسْتَشْهِدٌ بِحُدُوثِ اَلْأَشْيَاءِ عَلَى أَزَلِيَّتِهِ، وَ بِمَا وَسَمَهَا بِهِ مِنَ اَلْعَجْزِ عَلَى قُدْرَتِهِ، وَ بِمَا اِضْطَرَّهَا إِلَيْهِ مِنَ اَلْفَنَاءِ عَلَى دَوَامِهِ. وَاحِدٌ لاَ بِعَدَدٍ وَ دَائِمٌ لاَ بِأَمَدٍ، وَ قَائِمٌ لاَ بِعَمَدٍ. تَتَلَقَّاهُ اَلْأَذْهَانُ لاَ بِمُشَاعَرَةٍ، وَ تَشْهَدُ لَهُ اَلْمَرَائِي لاَ بِمُحَاضَرَةٍ. لَمْ تُحِطْ بِهِ اَلْأَوْهَامُ، بَلْ تَجَلَّى لَهَا بِهَا، وَ بِهَا اِمْتَنَعَ مِنْهَا وَ إِلَيْهَا حَاكَمَهَا. لَيْسَ بِذِي كِبَرٍ اِمْتَدَّتْ بِهِ اَلنِّهَايَاتُ فَكَبَّرَتْهُ تَجْسِيماً، وَ لاَ بِذِي عِظَمٍ تَنَاهَتْ بِهِ اَلْغَايَاتُ فَعَظَّمَتْهُ تَجْسِيداً؛ بَلْ كَبُرَ شَأْناً، وَ عَظُمَ سُلْطَاناً.

خصاصئ النبیصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَ رَسُولُهُ اَلصَّفِيُّ(المصطفی) ، وَ أَمِينُهُ اَلرَّضِيُّصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم أَرْسَلَهُ بِوُجُوبِ اَلْحُجَجِ، وَ ظُهُورِ اَلْفَلَجِ، وَ إِيضَاحِ اَلْمَنْهَجِ؛ فَبَلَّغَ اَلرِّسَالَةَ صَادِعاً بِهَا، وَ حَمَلَ عَلَى اَلْمَحَجَّةِ دَالاًّ عَلَيْهَا، وَ أَقَامَ أَعْلاَمَ اَلاِهْتِدَاءِ وَ مَنَارَ اَلضِّيَاءِ، وَ جَعَلَ أَمْرَاسَ اَلْإِسْلاَمِ مَتِينَةً، وَ عُرَى اَلْإِيمَانِ وَثِيقَةً.

طرق معرفة الله

لَوْ فَكَّرُوا فِي عَظِيمِ اَلْقُدْرَةِ وَ جَسِيمِ اَلنِّعْمَةِ، لَرَجَعُوا إِلَى اَلطَّرِيقِ، وَ خَافُوا عَذَابَ اَلْحَرِيقِ، وَ لَكِنِ اَلْقُلُوبُ عَلِيلَةٌ، وَ اَلْبَصَائِرُ مَدْخُولَةٌ! أَلاَ يَنْظُرُونَ إِلَى صَغِيرِ مَا خَلَقَ، كَيْفَ أَحْكَمَ خَلْقَهُ، وَ أَتْقَنَ تَرْكِيبَهُ، وَ فَلَقَ لَهُ اَلسَّمْعَ وَ اَلْبَصَرَ، وَ سَوَّى لَهُ اَلْعَظْمَ وَ اَلْبَشَرَ! اُنْظُرُوا إِلَى اَلنَّمْلَةِ فِي صِغَرِ جُثَّتِهَا وَ لَطَافَةِ هَيْئَتِهَا، لاَ تَكَادُ تُنَالُ بِلَحْظِ اَلْبَصَرِ(النظر) ، وَ لاَ بِمُسْتَدْرَكِ اَلْفِكَرِ، كَيْفَ دَبَّتْ عَلَى أَرْضِهَا، وَ صُبَّتْ عَلَى رِزْقِهَا، تَنْقُلُ اَلْحَبَّةَ إِلَى جُحْرِهَا، وَ تُعِدُّهَا فِي مُسْتَقَرِّهَا. تَجْمَعُ فِي حَرِّهَا لِبَرْدِهَا، وَ فِي وِرْدِهَا لِصَدَرِهَا. مَكْفُولٌ بِرِزْقِهَا، مَرْزُوقَةٌ بِوِفْقِهَا؛ لاَ يُغْفِلُهَا اَلْمَنَّانُ، وَ لاَ يَحْرِمُهَا اَلدَّيَّانُ، وَ لَوْ فِي اَلصَّفَا اَلْيَابِسِ، وَ اَلْحَجَرِ اَلْجَامِسِ! وَ لَوْ فَكَّرْتَ فِي مَجَارِي أَكْلِهَا، فِي عُلْوِهَا وَ سُفْلِهَا، وَ مَا فِي اَلْجَوْفِ مِنْ شَرَاسِيفِ بَطْنِهَا، وَ مَا فِي اَلرَّأْسِ مِنْ عَيْنِهَا وَ أُذُنِهَا، لَقَضَيْتَ مِنْ خَلْقِهَا عَجَباً، وَ لَقِيتَ مِنْ وَصْفِهَا تَعَباً! فَتَعَالَى اَلَّذِي أَقَامَهَا عَلَى قَوَائِمِهَا، وَ بَنَاهَا عَلَى دَعَائِمِهَا! لَمْ يَشْرَكْهُ فِي فِطْرَتِهَا فَاطِرٌ، وَ لَمْ يُعِنْهُ عَلَى خَلْقِهَا قَادِرٌ. وَ لَوْ ضَرَبْتَ فِي مَذَاهِبِ فِكْرِكَ لِتَبْلُغَ غَايَاتِهِ، مَا دَلَّتْكَ اَلدَّلاَلَةُ إِلاَّ عَلَى أَنَّ فَاطِرَ اَلنَّمْلَةِ هُوَ فَاطِرُ اَلنَّخْلَةِ، لِدَقِيقِ تَفْصِيلِ كُلِّ شَيْ‏ءٍ، وَ غَامِضِ اِخْتِلاَفِ كُلِّ حَيٍّ(شیءٍ) . وَ مَا اَلْجَلِيلُ وَ اَللَّطِيفُ، وَ اَلثَّقِيلُ وَ اَلْخَفِيفُ، وَ اَلْقَوِيُّ وَ اَلضَّعِيفُ، فِي خَلْقِهِ إِلاَّ سَوَاءٌ، خلقة السماء و الكون وَ كَذَلِكَ اَلسَّمَاءُ وَ اَلْهَوَاءُ وَ اَلرِّيَاحُ وَ اَلْمَاءُ. فَانْظُرْ إِلَى اَلشَّمْسِ وَ اَلْقَمَرِ وَ اَلنَّبَاتِ وَ اَلشَّجَرِ، وَ اَلْمَاءِ وَ اَلْحَجَرِ، وَ اِخْتِلاَفِ هَذَا اَللَّيْلِ وَ اَلنَّهَارِ، وَ تَفَجُّرِ هَذِهِ اَلْبِحَارِ وَ كَثْرَةِ هَذِهِ اَلْجِبَالِ، وَ طُولِ هَذِهِ اَلْقِلاَلِ. وَ تَفَرُّقِ هَذِهِ اَللُّغَاتِ، وَ اَلْأَلْسُنِ اَلْمُخْتَلِفَاتِ. فَالْوَيْلُ لِمَنْ أَنْكَرَ اَلْمُقَدِّرَ، وَ جَحَدَ اَلْمُدَبِّرَ زَعَمُوا أَنَّهُمْ كَالنَّبَاتِ مَا لَهُمْ زَارِعٌ، وَ لاَ لاِخْتِلاَفِ صُوَرِهِمْ صَانِعٌ؛ وَ لَمْ يَلْجَئُوا إِلَى حُجَّةٍ فِيمَا اِدَّعَوْا، وَ لاَ تَحْقِيقٍ لِمَا أَوْعَوْا. وَ هَلْ يَكُونُ بِنَاءٌ مِنْ غَيْرِ بَانٍ، أَوْ جِنَايَةٌ مِنْ غَيْرِ جَانٍ؟!

عجائب فی خلقة الجرادة

وَ إِنْ شِئْتَ قُلْتَ فِي اَلْجَرَادَةِ، إِذْ خَلَقَ لَهَا عَيْنَيْنِ حَمْرَاوَيْنِ، وَ أَسْرَجَ لَهَا حَدَقَتَيْنِ قَمْرَاوَيْنِ، وَ جَعَلَ لَهَا اَلسَّمْعَ اَلْخَفِيَّ، وَ فَتَحَ لَهَا اَلْفَمَ اَلسَّوِيَّ، وَ جَعَلَ لَهَا اَلْحِسَّ اَلْقَوِيَّ، وَ نَابَيْنِ بِهِمَا تَقْرِضُ وَ مِنْجَلَيْنِ بِهِمَا تَقْبِضُ. يَرْهَبُهَا اَلزُّرَّاعُ فِي زَرْعِهِمْ، وَ لاَ يَسْتَطِيعُونَ ذَبَّهَا، وَ لَوْ أَجْلَبُوا بِجَمْعِهِمْ حَتَّى تَرِدَ اَلْحَرْثَ فِي نَزَوَاتِهَا، وَ تَقْضِيَ مِنْهُ شَهَوَاتِهَا. وَ خَلْقُهَا كُلُّهُ لاَ يُكَوِّنُ إِصْبَعاً مُسْتَدِقَّةً.

دلائل وجود الله فی العالم

فَتَبَارَكَ اَللَّهُ اَلَّذِي«يَسْجُدُ لَهُ مَنْ فِي اَلسَّماواتِ وَ اَلْأَرْضِ طَوْعاً وَ كَرْهاً» ، وَ يُعَفِّرُ لَهُ خَدّاً وَ وَجْهاً، وَ يُلْقِي إِلَيْهِ بِالطَّاعَةِ سِلْماً وَ ضَعْفاً وَ يُعْطِي لَهُ اَلْقِيَادَ رَهْبَةً وَ خَوْفاً! فَالطَّيْرُ مُسَخَّرَةٌ لِأَمْرِهِ؛ أَحْصَى عَدَدَ اَلرِّيشِ مِنْهَا وَ اَلنَّفَسِ، وَ أَرْسَى قَوَائِمَهَا عَلَى اَلنَّدَى وَ اَلْيَبَسِ؛ وَ قَدَّرَ أَقْوَاتَهَا، وَ أَحْصَى أَجْنَاسَهَا. فَهَذَا غُرَابٌ وَ هَذَا عُقَابٌ، وَ هَذَا حَمَامٌ وَ هَذَا نَعَامٌ. دَعَا كُلَّ طَائِرٍ بِاسْمِهِ، وَ كَفَلَ لَهُ بِرِزْقِهِ. وَ أَنْشَأَ اَلسَّحَابَ اَلثِّقَالَ فَأَهْطَلَ دِيَمَهَا، وَ عَدَّدَ قِسَمَهَا. فَبَلَّ اَلْأَرْضَ بَعْدَ جُفُوفِهَا، وَ أَخْرَجَ نَبْتَهَا بَعْدَ جُدُوبِهَا.

আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর বিস্ময়কর সৃষ্টি সম্পর্কে

সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর যাকে ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না ,স্থান ও কালে আবদ্ধ করা যায় না ,চক্ষু দ্বারা দেখা যায় না এবং আবরণ দ্বারা আবৃত করা যায় না। সৃষ্টির অস্তিত্ব দ্বারাই তিনি তাঁর অনন্ত - অসীমতা প্রমাণ করেছেন এবং কোন প্রকার নমুনা ছাড়া সৃষ্টির সূচনা করেই তিনি তাঁর অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন। সৃষ্টির পারস্পরিক সাদৃশ্য দ্বারা তিনি প্রমাণ করেছেন যে ,তার সদৃশ কোন কিছুই নেই। তিনি তার প্রতিশ্রুতিতে সদা - সত্য। তিনি এত সমুচ্চ যে তাঁর বান্দাদের প্রতি অবিচার করেন না। তিনি তাঁর ন্যায়পরায়ণতা দ্বারা সৃষ্টির মধ্যে বিরাজমান এবং তাঁর আদেশের মাধ্যমে তাদের মধ্যে ন্যায় বিধান করেন। বস্তুনিচয়ের সৃষ্টির মধ্যে তিনি তার চির সত্তার সাক্ষ্য প্রদান করেন ,সৃষ্টির অক্ষমতার মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতা প্রকাশ করেন এবং মৃত্যুর বিরুদ্ধে অসহায়ত্বের মাধ্যমে তিনি তাঁর চিরন্তনতার সাক্ষ্য প্রদান করেন।

তিনি এক কিন্তু গণনার দ্বারা নয়। কোন প্রকার সীমা ছাড়াই তিনি চিরস্থায়ী। কোন প্রকার সমর্থন ছাড়াই তিনি বিদ্যমান। কোন প্রকার ইন্দ্রিয়ানুভূতি ছাড়াই মন তাঁর স্বীকৃতি দেয়। দৃশ্যমান সকল বস্তুই কোন প্রকার বিরোধ ছাড়া তার সাক্ষ্য বহন করে। কল্পনাশক্তি তাকে ধারণ করতে পারে না। তিনি দয়া করে কাউকে যখন চিন্তাশক্তি দ্বারা সাহায্য করেন তখনই তার চিন্তা - চেতনায় তিনি নিজকে প্রকাশ করেন। কিন্তু কেউ যদি কল্পনা দ্বারা তাকে অনুভব করতে চায়। তবে তিনি তার কল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেন। এ বিষয়ে তিনি কল্পনাকে মধ্যস্থতাকারী করেছেন। তিনি এ অর্থে বিশাল নন যে ,তার আকার বা দেহ বিশাল। তিনি এ অর্থে মহান নন যে ,তার সীমা সর্বশেষ পর্যন্ত প্রসারিত এবং তার কাঠামো ব্যাপক। তিনি মর্যাদায় বড় এবং কর্তৃত্বে মহান।

রাসূল (সা.) সম্পর্কে

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা এবং তার মনোনীত রাসূল ও তার দায়িত্বশীল আমানত। আল্লাহ তাকে অকাট্য প্রমাণ ,সুস্পষ্ট বিজয় ও খোলা পথসহ প্রেরণ করেছেন। সুতরাং তিনি সত্য ঘোষণা দ্বারা মানুষের কাছে তাঁর বাণী পৌছে দিয়েছেন। তিনি মানুষকে সত্য - সঠিক প্রশস্ত পথে পরিচালিত করেছেন ,মানুষের জন্য হেদায়েতের নিদর্শন ও আলোর মিনার প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং ইসলামের রজ্জুকে শক্তিশালী ও গ্রন্থিকে সুদৃঢ় করেছেন।

আল্লাহকে চেনার উপায়

যদি মানুষ আল্লাহর ক্ষমতার বিশালত্ব নিয়ে চিন্তা করতো এবং তাঁর নেয়ামতের প্রাচুর্য সম্পর্কে ভেবে দেখতো। তবে তারা অবশ্যই সঠিক পথে ফিরে আসতো ও দোযখের শাস্তির ভয়ে আতঙ্কিত হতো। কিন্তু তাদের হৃদয় পীড়িত এবং চোখ অপবিত্র। তারা কি ক্ষুদ্র প্রাণীদের দেখে না কিভাবে তিনি তাদের জীবন পদ্ধতিতে শক্তি সঞ্চার করেছেন ,কিভাবে তাদের শ্রবণশক্তি খুলে দিয়েছেন ,কিভাবে তাদের দৃষ্টিশক্তি খুলে দিয়েছেন এবং কিভাবে তাদের হাড় ও চামড়া দিয়েছেন ? পিপীলিকার দিকে লক্ষ্য কর - কত ক্ষুদ্র এদের দেহ। অথচ এদের দেহের গঠন কত সূক্ষ্ম। অনেক সময় এরা চোখেও ধরা পড়ে না। একবার কি চিন্তা করে দেখেছো কী করে এরা পৃথিবীতে চলাফেরা করে এবং খাদ্য সংগ্রহ করে ? এরা শস্যদানা বহন করে এদের গর্তে নিয়ে যায় এবং সেখানে তা জমিয়ে রাখে। এরা গ্রীষ্মকালে শীতকালের জন্য সঞ্চয় করে এবং শক্তি থাকাকালে দুর্বলতর সময়ের জন্য সঞ্চয় করে। আল্লাহ তাদের জীবিকা নিশ্চিত করে দিয়েছেন এবং তাদের উপযোগী খাদ্য প্রদান করেছেন। দয়াময় আল্লাহ তাদেরকে ভুলে যান না এবং পরমদাতা আল্লাহ তাদেরকে বঞ্চিত করেন না ,হোক না কেন তা কঠিন পাথরে বা পাহাড়ের চূড়ায়।

যদি তোমরা পিপীলিকার পরিপাকনালী ,পেটের খোলস এবং এর মাথায় চোখ ও কানের দিকে লক্ষ্য কর। তবে তোমরা এর গঠন দেখে বিস্মিত হয়ে যাবে এবং এর বর্ণনা দেওয়া তোমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তিনি মহিমান্বিত যিনি এদেরকে পায়ের ওপর দাঁড়াতে এবং (অঙ্গ - প্রত্যঙ্গের) স্তম্ভের ওপর সোজা হতে দিয়েছেন। এদের সৃষ্টিকর্মে অন্য কোন উদ্ভাবক তাঁর সাথে অংশগ্রহণ করেনি বা অন্য কোন শক্তি তাকে সাহায্য করেনি। তোমরা যদি তোমাদের কল্পনা শক্তিকে ধাবিত করে একেবারে শেষ সীমা পর্যন্ত নিয়ে যাও তবুও দেখতে পাবে ক্ষুদ্র পিপীলিকা আর বৃহৎ খেজুর গাছের স্রষ্টা একজন। কারণ সকল সৃষ্টির মধ্যে একই নৈপুণ্য ও পূর্ণতা রয়েছে এবং জীবকুলের মধ্যে অতি সামান্য ব্যবধান রয়েছে।

মহান আল্লাহর সৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ,বৃহৎ ,হালকা ,ভারী ,কোমল ,শক্ত ,দুর্বল - সকল কিছুই সমান। আকাশ ,বাতাস ,পানি সব কিছুই একই রকম। সুতরাং সূর্য ,চন্দ্র ,বৃক্ষ - লতা - গুল্ম ,পানি ,পাথর ,দিবারাত্রির ব্যবধান ,ঝরনাধারা ,পর্বতমালা ,উচু শৃঙ্গ ও ভাষার বিভিন্নতার দিকে লক্ষ্য কর। তারপরও যে ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তকে বিশ্বাস না করে এবং তাঁর শাসন অমান্য করে তার ওপর লানত। তারা মনে করে তারা ঘাসের মত ,যা গজাতে কৃষকের প্রয়োজন হয় না এবং তাদের আকার - আকৃতির বিভিন্নতার জন্য কোন নির্মাতা নেই। তারা যা ধারণা করে তার বাইরে কোন যুক্তিই মানতে চায় না অথবা তারা যা শুনেছে তার ওপর কোন গবেষণা কার্যও করে না। নির্মাতা ছাড়া কি কোন নির্মাণ হতে পারে ? অথবা অপরাধী ছাড়া কি কোন অপরাধ হতে পারে ?

পঙ্গপালের বিস্ময়কর সৃষ্টি প্রসঙ্গে

তোমরা পঙ্গপালের প্রতিও দৃষ্টিপাত করে দেখ। আল্লাহ্ তাদেরকে দুটি লাল চোখ দিয়েছেন ,ক্ষুদ্র কান দিয়েছেন ,একটা যথোপযোগী মুখ দিয়েছেন ,তীক্ষ্ম ইন্দ্রিয় দিয়েছেন ,দুটি দাঁত দিয়েছেন যা দিয়ে কাটতে পারে এবং কাস্তের মতো দুটি পা দিয়েছেন যা দিয়ে জড়িয়ে ধরতে পারে। শস্যের জন্য কৃষকগণ এই ক্ষুদ্র পতঙ্গের ভয়ে আতঙ্কিত। কারণ তারা শতচেষ্টা করেও এদের তাড়িয়ে দিতে পারে না। পঙ্গপাল শস্যক্ষেত্র আক্রমণ করে তাদের ক্ষুধা মেটায় অথচ এদের দেহ কৃষকের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের সমানও নয়।

আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ

আল্লাহ মহিমাময় যাকে আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছু ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সেজদা করে। কপাল ও মুখ ধুলায় লুষ্ঠিত করে বিনীতভাবে ও নির্দ্বিধায় আনুগত্য স্বীকার করে এবং ভয়ে ও আশঙ্কায় সকল ক্ষমতা তার বলে মেনে নেয়। পক্ষীকুল তার আজ্ঞাবহ। তাদের পলক ও শ্বাস - প্রশ্বাসের সংখ্যা সম্বন্ধে তিনি অবগত আছেন। তিনি তাদের পা এমনভাবে তৈরি করেছেন যাতে তারা জলে ও স্থলে দাড়াতে পারে। তিনি তাদের জীবিকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি তাদের প্রজাতি সম্বন্ধে জ্ঞাত আছেন - এটা কাক ,এটা ঈগল ,এটা কবুতর এবং এটা উটপাখী। সৃষ্টিকালেই তিনি প্রতিটি প্রজাতির নাম দিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের প্রত্যেকের জন্য জীবিকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি ঘন মেঘ সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে বৃষ্টিপাত সৃষ্টি করে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। পৃথিবী শুকিয়ে গেলে তিনি বৃষ্টি দ্বারা ভিজিয়ে দেন এবং তৃণহীন হয়ে গেলে তাতে শ্যামল লতা - গুল জন্মান ।

খোৎবা - ১৮৫

مَا وَحَّدَهُ مَنْ كَيَّفَهُ، وَ لاَ حَقِيقَتَهُ أَصَابَ مَنْ مَثَّلَهُ، وَ لاَ إِيَّاهُ عَنَى مَنْ شَبَّهَهُ، وَ لاَ صَمَدَهُ مَنْ أَشَارَ إِلَيْهِ وَ تَوَهَّمَهُ. كُلُّ مَعْرُوفٍ بِنَفْسِهِ مَصْنُوعٌ، وَ كُلُّ قَائِمٍ فِي سِوَاهُ مَعْلُولٌ. فَاعِلٌ لاَ بِاضْطِرَابِ آلَةٍ، مُقَدِّرٌ لاَ بِجَوْلِ فِكْرَةٍ، غَنِيٌّ لاَ بِاسْتِفَادَةٍ. لاَ تَصْحَبُهُ اَلْأَوْقَاتُ، وَ لاَ تَرْفِدُهُ اَلْأَدَوَاتُ؛ سَبَقَ اَلْأَوْقَاتَ كَوْنُهُ، وَ اَلْعَدَمَ وُجُودُهُ وَ اَلاِبْتِدَاءَ أَزَلُهُ. بِتَشْعِيرِهِ اَلْمَشَاعِرَ عُرِفَ أَنْ لاَ مَشْعَرَ لَهُ، وَ بِمُضَادَّتِهِ بَيْنَ اَلْأُمُورِ عُرِفَ أَنْ لاَ ضِدَّ لَهُ، وَ بِمُقَارَنَتِهِ بَيْنَ اَلْأَشْيَاءِ عُرِفَ أَنْ لاَ قَرِينَ لَهُ. ضَادَّ اَلنُّورَ بِالظُّلْمَةِ، وَ اَلْوُضُوحَ بِالْبُهْمَةِ، وَ اَلْجُمُودَ بِالْبَلَلِ، وَ اَلْحَرُورَ(الجرور) بِالصَّرَدِ. مُؤَلِّفٌ بَيْنَ مُتَعَادِيَاتِهَا، مُقَارِنٌ بَيْنَ مُتَبَايِنَاتِهَا، مُقَرِّبٌ بَيْنَ مُتَبَاعِدَاتِهَا، مُفَرِّقٌ بَيْنَ مُتَدَانِيَاتِهَا. لاَ يُشْمَلُ بِحَدٍّ، وَ لاَ يُحْسَبُ بِعَدٍّ، وَ إِنَّمَا تَحُدُّ اَلْأَدَوَاتُ أَنْفُسَهَا، وَ تُشِيرُ اَلْآلاَتُ إِلَى نَظَائِرِهَا. مَنَعَتْهَا مُنْذُ اَلْقِدْمَةَ، وَ حَمَتْهَا قَدُ اَلْأَزَلِيَّةَ، وَ جَنَّبَتْهَا لَوْلاَ اَلتَّكْمِلَةَ! بِهَا تَجَلَّى صَانِعُهَا لِلْعُقُولِ؛ وَ بِهَا اِمْتَنَعَ عَنْ نَظَرِ اَلْعُيُونِ، وَ لاَ يَجْرِي عَلَيْهِ اَلسُّكُونُ وَ اَلْحَرَكَةُ، وَ كَيْفَ يَجْرِي عَلَيْهِ مَا هُوَ أَجْرَاهُ، وَ يَعُودُ فِيهِ مَا هُوَ أَبْدَاهُ، وَ يَحْدُثُ فِيهِ مَا هُوَ أَحْدَثَهُ! إِذاً لَتَفَاوَتَتْ ذَاتُهُ وَ لَتَجَزَّأَ كُنْهُهُ، وَ لاَمْتَنَعَ مِنَ اَلْأَزَلِ مَعْنَاهُ، وَ لَكَانَ لَهُ وَرَاءٌ إِذْ وُجِدَ لَهُ أَمَامٌ وَ لاَلْتَمَسَ اَلتَّمَامَ إِذْ لَزِمَهُ اَلنُّقْصَانُ. وَ إِذاً لَقَامَتْ آيَةُ اَلْمَصْنُوعِ فِيهِ وَ لَتَحَوَّلَ دَلِيلاً بَعْدَ أَنْ كَانَ مَدْلُولاً عَلَيْهِ، وَ خَرَجَ بِسُلْطَانِ اَلاِمْتِنَاعِ مِنْ أَنْ يُؤَثِّرَ فِيهِ مَا يُؤَثِّرُ فِي غَيْرِهِ. اَلَّذِي لاَ يَحُولُ وَ لاَ يَزُولُ، وَ لاَ يَجُوزُ عَلَيْهِ اَلْأُفُولُ.

صفات الله تعالی

لَمْ يَلِدْ فَيَكُونَ مَوْلُوداً، وَ لَمْ يُولَدْ فَيَصِيرَ مَحْدُوداً. جَلَّ عَنِ اِتِّخَاذِ اَلْأَبْنَاءِ، وَ طَهُرَ عَنْ مُلاَمَسَةِ اَلنِّسَاءِ. لاَ تَنَالُهُ اَلْأَوْهَامُ فَتُقَدِّرَهُ، وَ لاَ تَتَوَهَّمُهُ اَلْفِطَنُ فَتُصَوِّرَهُ، وَ لاَ تُدْرِكُهُ اَلْحَوَاسُّ فَتُحِسَّهُ، وَ لاَ تَلْمِسُهُ اَلْأَيْدِي فَتَمَسَّهُ. وَ لاَ يَتَغَيَّرُ بِحَالٍ، وَ لاَ يَتَبَدَّلُ فِي اَلْأَحْوَالِ. وَ لاَ تُبْلِيهِ اَللَّيَالِي وَ اَلْأَيَّامُ، وَ لاَ يُغَيِّرُهُ اَلضِّيَاءُ وَ اَلضَّلاَمُ. وَ لاَ يُوصَفُ بِشَيْ‏ءٍ مِنَ اَلْأَجْزَاءِ وَ لاَ بِالْجَوَارِحِ وَ اَلْأَعْضَاءِ وَ لاَ بِعَرَضٍ مِنَ اَلْأَعْرَاضِ، وَ لاَ بِالْغَيْرِيَّةِ وَ اَلْأَبْعَاضِ. وَ لاَ يُقَالُ: لَهُ حَدٌّ وَ لاَ نِهَايَةٌ وَ لاَ اِنْقِطَاعٌ وَ لاَ غَايَةٌ؛ وَ لاَ أَنَّ اَلْأَشْيَاءَ تَحْوِيهِ فَتُقِلَّهُ أَوْ تُهْوِيَهُ، أَوْ أَنَّ شَيْئاً يَحْمِلُهُ فَيُمِيلَهُ أَوْ يُعَدِّلَهُ. لَيْسَ فِي اَلْأَشْيَاءِ بِوَالِجٍ وَ لاَ عَنْهَا بِخَارِجٍ. يُخْبِرُ لاَ بِلِسَانٍ وَ لَهَوَاتٍ، وَ يَسْمَعُ لاَ بِخُرُوقٍ وَ أَدَوَاتٍ. يَقُولُ وَ لاَ يَلْفِظُ، وَ يَحْفَظُ وَ لاَ يَتَحَفَّظُ، وَ يُرِيدُ وَ لاَ يُضْمِرُ. يُحِبُّ وَ يَرْضَى مِنْ غَيْرِ رِقَّةٍ، وَ يُبْغِضُ وَ يَغْضَبُ مِنْ غَيْرِ مَشَقَّةٍ. يَقُولُ لِمَنْ أَرَادَ كَوْنَهُ:«كُنْ فَيَكُونُ » لاَ بِصَوْتٍ يَقْرَعُ، وَ لاَ بِنِدَاءٍ يُسْمَعُ؛ وَ إِنَّمَا كَلاَمُهُسُبْحَانَهُ فِعْلٌ مِنْهُ أَنْشَأَهُ وَ مَثَّلَهُ.

لَمْ يَكُنْ مِنْ قَبْلِ ذَلِكَ كَائِناً وَ لَوْ كَانَ قَدِيماً لَكَانَ إِلَهاً ثَانِياً لاَ يُقَالُ: كَانَ بَعْدَ أَنْ لَمْ يَكُنْ، فَتَجْرِيَ عَلَيْهِ اَلصِّفَاتُ اَلْمُحْدَثَاتُ وَ لاَ يَكُونُ بَيْنَهَا وَ بَيْنَهُ فَصْلٌ، وَ لاَ لَهُ عَلَيْهَا فَضْلٌ، فَيَسْتَوِيَ اَلصَّانِعُ وَ اَلْمَصْنُوعُ، وَ يَتَكَافَأَ اَلْمُبْتَدَعُ وَ اَلْبَدِيعُ. خَلَقَ اَلْخَلاَئِقَ عَلَى غَيْرِ مِثَالٍ خَلاَ مِنْ غَيْرِهِ، وَ لَمْ يَسْتَعِنْ عَلَى خَلْقِهَا بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِهِ. وَ أَنْشَأَ اَلْأَرْضَ فَأَمْسَكَهَا مِنْ غَيْرِ اِشْتِغَالٍ، وَ أَرْسَاهَا عَلَى غَيْرِ قَرَارٍ، وَ أَقَامَهَا بِغَيْرِ قَوَائِمَ، وَ رَفَعَهَا بِغَيْرِ دَعَائِمَ، وَ حَصَّنَهَا مِنَ اَلْأَوَدِ وَ اَلاِعْوِجَاجِ، وَ مَنَعَهَا مِنَ اَلتَّهَافُتِ وَ اَلاِنْفِرَاجِ. أَرْسَى أَوْتَادَهَا، وَ ضَرَبَ أَسْدَادَهَا، وَ اِسْتَفَاضَ عُيُونَهَا، وَ خَدَّ أَوْدِيَتَهَا؛ فَلَمْ يَهِنْ مَا بَنَاهُ وَ لاَ ضَعُفَ مَا قَوَّاهُ. هُوَ اَلظَّاهِرُ عَلَيْهَا بِسُلْطَانِهِ وَ عَظَمَتِهِ، وَ هُوَ اَلْبَاطِنُ لَهَا بِعِلْمِهِ وَ مَعْرِفَتِهِ، وَ اَلْعَالِي عَلَى كُلِّ شَيْ‏ءٍ مِنْهَا بِجَلاَلِهِ وَ عِزَّتِهِ. لاَ يُعْجِزُهُ شَيْ‏ءٌ مِنْهَا طَلَبَهُ، وَ لاَ يَمْتَنِعُ عَلَيْهِ فَيَغْلِبَهُ، وَ لاَ يَفُوتُهُ اَلسَّرِيعُ مِنْهَا فَيَسْبِقَهُ، وَ لاَ يَحْتَاجُ إِلَى ذِي مَالٍ فَيَرْزُقَهُ. خَضَعَتِ اَلْأَشْيَاءُ لَهُ، وَ ذَلَّتْ مُسْتَكِينَةً لِعَظَمَتِهِ، لاَ تَسْتَطِيعُ اَلْهَرَبَ مِنْ سُلْطَانِهِ إِلَى غَيْرِهِ فَتَمْتَنِعَ مِنْ نَفْعِهِ وَ ضَرِّهِ، وَ لاَ كُفْ‏ءَ لَهُ فَيُكَافِئَهُ، وَ لاَ نَظِيرَ لَهُ فَيُسَاوِيَهُ. هُوَ اَلْمُفْنِي لَهَا بَعْدَ وُجُودِهَا، حَتَّى يَصِيرَ مَوْجُودُهَا كَمَفْقُودِهَا.

وَ لَيْسَ فَنَاءُ اَلدُّنْيَا بَعْدَ اِبْتِدَاعِهَا بِأَعْجَبَ مِنْ إِنْشَائِهَا وَ اِخْتِرَاعِهَا. وَ كَيْفَ وَ لَوِ اِجْتَمَعَ جَمِيعُ حَيَوَانِهَا مِنْ طَيْرِهَا وَ بَهَائِمِهَا، وَ مَا كَانَ مِنْ مُرَاحِهَا وَ سَائِمِهَا، وَ أَصْنَافِ أَسْنَاخِهَا وَ أَجْنَاسِهَا وَ مُتَبَلِّدَةِ أُمَمِهَا وَ أَكْيَاسِهَا، عَلَى إِحْدَاثِ بَعُوضَةٍ، مَا قَدَرَتْ عَلَى إِحْدَاثِهَا، وَ لاَ عَرَفَتْ كَيْفَ اَلسَّبِيلُ إِلَى إِيجَادِهَا، وَ لَتَحَيَّرَتْ عُقُولُهَا فِي عِلْمِ ذَلِكَ وَ تَاهَتْ، وَ عَجَزَتْ قُوَاهَا وَ تَنَاهَتْ، وَ رَجَعَتْ خَاسِئَةً حَسِيرَةً عَارِفَةً بِأَنَّهَا مَقْهُورَةٌ مُقِرَّةً بِالْعَجْزِ عَنْ إِنْشَائِهَا، مُذْعِنَةً بِالضَّعْفِ عَنْ إِفْنَائِهَا وَ إِنَّ اَللَّهَ سُبْحَانَهُ يَعُودُ بَعْدَ فَنَاءِ اَلدُّنْيَا وَحْدَهُ لاَ شَيْ‏ءَ مَعَهُ كَمَا كَانَ قَبْلَ اِبْتِدَائِهَا، كَذَلِكَ يَكُونُ بَعْدَ فَنَائِهَا بِلاَ وَقْتٍ وَ لاَ مَكَانٍ وَ لاَ حِينٍ وَ لاَ زَمَانٍ. عُدِمَتْ عِنْدَ ذَلِكَ اَلْآجَالُ وَ اَلْأَوْقَاتُ وَ زَالَتِ اَلسِّنُونَ وَ اَلسَّاعَاتُ. فَلاَ شَيْ‏ءَ إِلاَّ اَللَّهُ اَلْواحِدُ اَلْقَهَّارُ اَلَّذِي إِلَيْهِ مَصِيرُ جَمِيعِ اَلْأُمُورِ. بِلاَ قُدْرَةٍ مِنْهَا كَانَ اِبْتِدَاءُ خَلْقِهَا، وَ بِغَيْرِ اِمْتِنَاعٍ مِنْهَا كَانَ فَنَاؤُهَا، وَ لَوْ قَدَرَتْ عَلَى اَلاِمْتِنَاعِ لَدَامَ بَقَاؤُهَا لَمْ يَتَكَاءَدْهُ صُنْعُ شَيْ‏ءٍ مِنْهَا إِذْ صَنَعَهُ، وَ لَمْ يَؤُدْهُ مِنْهَا خَلْقُ مَا خَلَقَهُ وَ بَرَأَهُ وَ لَمْ يُكَوِّنْهَا لِتَشْدِيدِ سُلْطَانٍ، وَ لاَ لِخَوْفٍ مِنْ زَوَالٍ وَ نُقْصَانٍ وَ لاَ لِلاِسْتِعَانَةِ بِهَا عَلَى نِدٍّ مُكَاثِرٍ، وَ لاَ لِلاِحْتِرَازِ بِهَا مِنْ ضِدٍّ مُثَاوِرٍ، وَ لاَ لِلاِزْدِيَادِ بِهَا فِي مُلْكِهِ، وَ لاَ لِمُكَاثَرَةِ شَرِيكٍ فِي شِرْكِهِ وَ لاَ لِوَحْشَةٍ كَانَتْ مِنْهُ فَأَرَادَ أَنْ يَسْتَأْنِسَ إِلَيْهَا. ثُمَّ هُوَ يُفْنِيهَا بَعْدَ تَكْوِينِهَا، لاَ لِسَأَمٍ دَخَلَ عَلَيْهِ فِي تَصْرِيفِهَا وَ تَدْبِيرِهَا، وَ لاَ لِرَاحَةٍ وَاصِلَةٍ إِلَيْهِ، وَ لاَ لِثِقَلِ شَيْ‏ءٍ مِنْهَا عَلَيْهِ. لاَ يُمِلُّهُ طُولُ بَقَائِهَا فَيَدْعُوَهُ إِلَى سُرْعَةِ إِفْنَائِهَا، وَ لَكِنَّهُسُبْحَانَهُ دَبَّرَهَا بِلُطْفِهِ، وَ أَمْسَكَهَا بِأَمْرِهِ، وَ أَتْقَنَهَا بِقُدْرَتِهِ. ثُمَّ يُعِيدُهَا بَعْدَ اَلْفَنَاءِ مِنْ غَيْرِ حَاجَةٍ مِنْهُ إِلَيْهَا، وَ لاَ اِسْتِعَانَةٍ بِشَيْ‏ءٍ مِنْهَا عَلَيْهَا، وَ لاَ لاِنْصِرَافٍ مِنْ حَالِ وَحْشَةٍ إِلَى حَالِ اِسْتِئْنَاسٍ، وَ لاَ مِنْ حَالِ جَهْلٍ وَ عَمًى إِلَى حَالِ عِلْمٍ وَ اِلْتِمَاسٍ، وَ لاَ مِنْ فَقْرٍ وَ حَاجَةٍ إِلَى غِنًى وَ كَثْرَةٍ، وَ لاَ مِنْ ذُلٍّ وَ ضَعَةٍ إِلَى عِزٍّ وَ قُدْرَةٍ.

আল্লাহর একত্ব সম্পর্কে

যে ব্যক্তি আল্লাহতে বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে সে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস করে না। যে ব্যক্তি তাঁর সাদৃশ্য দাঁড় করায় সে তাঁর বাস্তবতা উপলব্ধি করে না। যে ব্যক্তি উপমা দেয় সে তাঁকে বুঝে না। যে ব্যক্তি তাঁর অবস্থান নির্দেশ করে এবং তাকে কল্পনা করে ,সে তাকে বুঝায় না। যত কিছু আকার আকৃতিতে জানা যায় তার সবই সৃষ্ট এবং যা কিছু অন্য কিছু দ্বারা অস্তিত্ববান তা হলো ওটার কারণ এবং আল্লাহ হলেন সকল কারণের কারণ। তিনি কাজ করেন। কিন্তু কোন হাতিয়ারের সাহায্যে নয়। তিনি সকল কিছুর সীমা নির্ধারণ করেন। কিন্তু চিন্তার সাহায্যে নয়। তিনি ধনবান কিন্তু সম্পদ সংগ্রহ করার মাধ্যমে নয় । তিনি সময়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ নন এবং পরিকল্পনার কোন প্রয়োজন তার হয় না। তার সত্তা কালের অতীত। তাঁর অস্তিত্ব সকল অনস্তিত্বের অতীত এবং তাঁর চিরন্তনতা প্রারম্ভের অতীত। ইন্দ্রিয়সমূহ সৃষ্টির মাধ্যমে জানা যায় যে ,তাঁর কোন ইন্দ্রিয় নেই। বিভিন্ন বিষয়ের বিপরীতধর্ম বিষয় সৃষ্টির মাধ্যমে জানা যায় যে ,তার বিপরীত কোন কিছু নেই এবং বস্তুর সামঞ্জস্য দ্বারা বুঝা যায় যে ,তার কোন সামঞ্জস্য নেই। তিনি আলোর বিপরীতে অন্ধকার ,ঔজ্জ্বল্যের বিপরীতে আচ্ছন্নতা ,শুষ্কতার বিপরীতে আদ্রতা ,উষ্ণতার বিপরীতে শীতলতা সৃষ্টি করেছেন। পরস্পর বিপরীতধর্ম বস্তুর মাঝে তিনি অনুরাগ সৃষ্টি করেছেন।

তিনি বিভিন্ন বস্তুকে একীভূত করেন ,একীভূত বস্তুকে আলাদা করেন এবং দূরবর্তীকে নিকটবর্তী ও নিকটবর্তীকে দূরবর্তী করেন। তিনি কোন প্রকার সীমার মধ্যে আবদ্ধ নন এবং সংখ্যা দ্বারা গণনীয় নন। তিনি বস্তু নিরপেক্ষ। বস্তু শুধুমাত্র স্বগোত্রীয় জিনিসকে ঘিরে থাকতে পারে এবং দেহযন্ত্র শুধুমাত্র নিজের সদৃশ বস্তুকে নির্দেশ করতে পারে। মুনযু ' (অর্থাৎ থেকে বা হতে - ইংরেজী সিনস) শব্দ বস্তুর চিরন্তনতা মিথ্যা প্রমাণ করে , কাদ ’ (অর্থাৎ সংঘটিত হওয়ার কাল) শব্দ বস্তুর অনাদিত্বকে মিথ্যা প্রমাণ করে এবং লাওয়ালা ’ (অর্থাৎ যদি এমন হতো) শব্দ বস্তুর পূর্ণতা বা উৎকর্ষ অস্বীকার করে।

বস্তুর মাধ্যমেই স্রষ্টা নিজেকে প্রকাশ করেন এবং বস্তুর মাধ্যমেই তিনি দৃষ্টির অন্তরালে সুরক্ষিত। স্থবিরতা ও গতি তাঁর মধ্যে সংঘটিত হয় না। তিনি যা প্রথমে সৃষ্টি করেছেন তা কী করে তাঁর মধ্যে সংঘটিত হতে পারে ? তিনি প্রথমে যা সৃষ্টি করেছেন তা কী করে তাঁর দিকে ফিরে যেতে পারে (অর্থাৎ তাঁর সাদৃশ্য হতে পারে) ? তিনি প্রথমে যা আকৃতি দান করেছেন কী করে তা তাঁর মাঝে উপস্থিত থাকতে পারে ? যদি এমন হতো। তবে তাঁর সত্তা বিভিন্নতার অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়তো। তাঁর সত্তা বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়ে পড়তো এবং তিনি তাঁর চিরন্তনতা হারিয়ে ফেলতেন। যদি তাঁর সম্মুখভাগ থাকতো তাহলে অবশ্যই তাঁর পশ্চাদ্ভাগও থাকতো। যদি কোন কিছুতে তার কমতি থাকতো তবে পূর্ণতারও প্রশ্ন উঠতো। সেক্ষেত্রে সৃষ্টির আয়াত (নিদর্শন) তাঁর মাঝে ফুটে উঠতো এবং সৃষ্টি তাঁর আয়াত না হয়ে তিনি নিজেই একটা আয়াত হয়ে যেতেন। তাঁর নিরপেক্ষতার কুদরত দ্বারা তিনি বস্তুমোহের অতীত। কিন্তু বস্তু একে অপরের মুখাপেক্ষী । তিনি এমন যার কোন পরিবর্তন বা ধ্বংস নেই। অধিষ্ঠান প্রক্রিয়া তার বেলায় প্রযোজ্য নয়।

আল্লাহর গুণাবলী

তিনি কাউকে জন্ম দেননি পাছে মনে করা হয় যে ,তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি অন্য কোনভাবে আবির্ভূত হননি যাতে তাকে সীমার অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তিনি সন্তান উৎপাদন ও নারীর সংস্পর্শ থেকে অনেক অনেক পবিত্র । কল্পনাশক্তি তার কাছে পৌছায় না যাতে তার কোন পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়। কোন বোধগম্যতা দ্বারা তাঁকে চিন্তা করা যায় না যাতে তাঁর কোন আকৃতি দেয়া যায়। ইন্দ্রিয়াশক্তি তাকে উপলব্ধি করতে পারে না যাতে তাকে অনুভব করা যায়। হাতে তাকে স্পর্শ করা যায় না যাতে তাকে মালিশ করা যায়। তিনি কোন অবস্থায় পরিবর্তিত হন না। তিনি কখনো এক অবস্থা অতিক্রম করে অন্য অবস্থায় যান না। দিবা - রাত্রির অতিক্রমণে তিনি বার্ধক্য প্রাপ্ত হন না। আলো ও অন্ধকার তার কোন পরিবর্তন আনতে পারে না। একথা বলা যাবে না যে ,তার সীমা আছে ,শেষ আছে ,আদি আছে বা অন্ত আছে। তিনি কোন কিছুর নিয়ন্ত্রণাধীন নন। যাতে তাঁর উত্থান - পতন থাকতে পারে। কোন কিছুই তার ধারক ও বাহক নয় যা তাকে বক্র করতে বা সোজা রাখতে পারে। তিনি বস্তুর ভেতরেও নন বাইরেও নন। তিনি সংবাদ প্রেরণ করেন ;কিন্তু জিহ্বা বা স্বরের সাহায্যে নয়। তিনি শোনেন কিন্তু কানের ছিদ্র বা শ্রবণেন্দ্রিয়ের সাহায্যে নয়। তিনি কথা বলেন। কিন্তু শব্দ উচ্চারণ করে নয়। তিনি স্মরণ করেন। কিন্তু মুখস্থ করে নয়। তিনি মনস্থ করেন। কিন্তু মনের সাহায্যে নয়। তিনি ভালোবাসেন ও অনুমোদন দান করেন। কিন্তু হৃদয়ের আবেগপ্রবণতা দ্বারা নয়। তিনি ঘৃণা করেন এবং রাগান্বিত হন। কিন্তু কোন কষ্ট সহীষ্ণুতা দ্বারা নয়। যখন তিনি কোন কিছু সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন তখন তিনি বলেন হও ';আর অমনি তা হয়ে যায়। কিন্তু তাঁর এই হও" বলাও স্বরের সাহায্যে নয় যা কান শুনতে পাবে। তাঁর কথা বলাও একটা সৃষ্টিকর্ম। তাঁর মতো কোন কিছুর অস্তিত্ব কস্মিনকালেও ছিল না। যদি এমন কিছু থাকতো তাহলে অবশ্যই দ্বিতীয় খোদা থাকতো।

একথা বলা যাবে না যে ,অনস্তিত্ব থেকে তাঁর সত্তা অস্তিত্বে এসেছে। কারণ সেক্ষেত্রে সৃষ্ট বস্তুর গুণাবলী তাঁর ওপর আরোপ করা হবে এবং সৃষ্টি ও তার মধ্যে কোন ব্যবধান থাকে না এবং সৃষ্টির ওপর তাঁর কোন বিশিষ্টতা থাকে না। এতে স্রষ্টা ও সৃষ্টি সমপর্যায়ের হয়ে যায় এবং উদ্ভাবক ও উদ্ভাবিত একই স্তরের হয়ে পড়ে। অন্য কারো উপমা বা নমুনা অনুসরণ না করেই তিনি সমগ্র সৃষ্টিকে সৃষ্টিতে এনেছেন এবং এ সৃষ্টিকর্মে তিনি কারো সাহায্য গ্রহণ করেননি। এ পৃথিবী ও নভোমণ্ডল সৃষ্টি করতে এবং তাকে বিস্তৃত করতে তাঁর কোন ব্যস্ততার প্রয়োজন হয়নি। তিনি এটাকে কোন স্তম্ভের সাহায্যে দাড় করিয়ে রাখেননি এবং এটাকে বেঁকে যাওয়া ও খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যাওয়া থেকে সুরক্ষিত করেছেন। কর্তিত গাছের গোড়ার মতো তিনি পর্বতকে স্থাপন করেছেন ,তার পাথরকে কঠিন করেছেন ,স্রোতধারাকে প্রবাহিত করেছেন এবং উপত্যককে বিস্তৃত করেছেন। যা কিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন তাতে কোন খুঁত নেই এবং যা কিছু তিনি শক্তিশালী করেছেন তাতে কোন দুর্বলতা নেই।

তাঁর কর্তৃত্ব ও মহত্ত্ব দিয়ে পৃথিবীতে তিনি নিজকে প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁর জ্ঞান ও বোধির মাধ্যমে এর অভ্যন্তরভাগ সম্পর্কে অবহিত আছেন। তাঁর মহিমা ও মর্যাদা বলে তিনি বিশ্বের সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। বিশ্বের কোন কিছুই তাঁকে অমান্য করতে পারে না এবং তাঁকে পরাভূত করার জন্য বিরোধিতা করতে পারে না। কোন দ্রুতপদ সম্পন্ন বান্দা তার কাছ থেকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারে না। যাতে তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়া যায়। পৃথিবীর কোন ধনবান ব্যক্তির তিনি মুখাপেক্ষী নন। তিনি পৃথিবীর কোন কিছুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। সব কিছুই তার কাছে মাথা নত করে এবং তাঁর মহত্ত্বের কাছে নগণ্য। কোন কিছুই তাঁর কর্তৃত্ব থেকে পালিয়ে যেতে পারে না যাতে তাঁর ক্ষতি বা উপকার এড়িয়ে যেতে পারে। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই ,তাঁর সদৃশ কেউ নেই এবং তাঁর সমান কেউ নেই।

তিনি পৃথিবীকে এমনভাবে ধ্বংস করবেন যাতে এর সব কিছুর বিলয় ঘটে। কিন্তু বিশ্বের এ ধ্বংস এর প্রথম সৃষ্টি ও আবিস্কার থেকে আশ্চর্যজনক নয়। আল্লাহর বান্দাদের সকল বুদ্ধিমত্তা খাটিয়েও একটা মশাকে অস্তিত্বে আনতে পারবে না। কী করে এটা সম্ভব হবে ? সকল জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা একত্রিত করলেও একটা মশা সৃষ্টির উপায় বুঝতে পারবে না। একটা মশা সৃষ্টি করতে গেলে তাদের জ্ঞান - বুদ্ধি স্থবির হয়ে পড়বে ,সকল ক্ষমতা অসাড় হয়ে পড়বে এবং তারা ক্লান্ত ও হতাশ হয়ে অপারগতা স্বীকার করবে।

নিশ্চয়ই ,পৃথিবী বিলয় হওয়ার পরও মহিমান্বিত আল্লাহ্ বিরাজ করবেন এবং তাঁর পাশে কিছুই থাকবে না। পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে তিনি যেরূপ ছিলেন ,পৃথিবীর বিলয়ের পরও তিনি তদ্রুপ থাকবেন। তাঁর বিরাজমানতায় কোন সময় ,কাল ,স্থান বা গতি নেই। সর্বশক্তিমান এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন কিছুই থাকবে না। সকল কিছুরই প্রত্যাবর্তন তাঁর দিকে। সৃষ্টি করা যেমন কারো ক্ষমতাভুক্ত নয় ,বিলয় ঠেকানোও তেমন কারো ক্ষমতাভুক্ত নয়। বিলয় ঠেকাতে পারলে পৃথিবী চিরস্থায়ী হতো। কিন্তু বাস্তবে ,আল্লাহ ব্যতীত কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। এ বিশ্বজগতের কোন কিছুই তৈরি করতে তিনি কোন প্রকার অসুবিধার সন্মুখীন হননি এবং এতকিছু সৃষ্টি করতে তিনি কোনরূপ শ্রান্তিবোধ করেননি। এ বিশ্বচরাচর তিনি তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য সৃষ্টি করেননি ,বা কোন ক্ষতি ও লোকসানের ভয়ে সৃষ্টি করেননি ,বা কোন প্রতাপশালী শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য পাওয়ার আশায় সৃষ্টি করেননি ,বা প্রতিশোধের নেশায় মত্ত কোন বিরুদ্ধবাদীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সৃষ্টি করেননি ,বা কোন দাম্ভিক অংশীদারের বিরুদ্ধে সৃষ্টি করেননি ,বা তিনি একাকীত্ব অনুভব করে সঙ্গ পাওয়ার জন্য সৃষ্টি করেননি।

সৃষ্টির পর তিনি একে ধ্বংস করবেন ,কিন্তু এর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় উদ্বীগ্নতার কারণে নয় ,বা কোন প্রকার আনন্দ উপভোগ করার কারণে নয় ,বা তার ওপর কোন ঝামেলা - ঝঞ্জাটের কারণে নয়। এর জীবনের দৈর্ঘ্য তাকে উদ্বীগ্ন করে না যে তিনি তাড়াতাড়ি তা ধ্বংস করতে চান। মহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর দয়ায় একে রক্ষণাবেক্ষণ করছেন ,তার আদেশ দ্বারা একে সঠিক রেখেছেন এবং তার কুদরাত দ্বারা একে পরিপূর্ণতা দান করেছেন। ধ্বংসের পর তিনি একে পুনরুজ্জীবিত করবেন ;কিন্তু তাঁর নিজের কোন প্রয়োজনে নয় ,বা কোন কিছুর সহায়তা পাওয়ার জন্য নয় ,বা একাকীত্ব দূরীভূত করার জন্য নয় ,বা কোন কিছুর সঙ্গ পাওয়ার জন্য নয় ,বা অজ্ঞতা ও অন্ধকার থেকে বের হয়ে জ্ঞান ও গবেষণার পথ পাওয়ার জন্য নয় ,বা স্বল্পতা ও অভাবের কারণে প্রচুর ও পর্যাপ্তের জন্য নয় ,বা অমর্যাদা ও হীন অবস্থার কারণে সম্মান ও ইজতের জন্য নয় ।

খোৎবা - ১৮৬

أَلاَ بِأَبِي وَ أُمِّي، هُمْ مِنْ عِدَّةٍ أَسْمَاؤُهُمْ فِي اَلسَّمَاءِ مَعْرُوفَةٌ وَ فِي اَلْأَرْضِ مَجْهُولَةٌ. أَلاَ فَتَوَقَّعُوا مَا يَكُونُ مِنْ إِدْبَارِ أُمُورِكُمْ، وَ اِنْقِطَاعِ وُصَلِكُمْ، وَ اِسْتِعْمَالِ صِغَارِكُمْ. ذَاكَ حَيْثُ تَكُونُ ضَرْبَةُ اَلسَّيْفِ عَلَى اَلْمُؤْمِنِ أَهْوَنَ مِنَ اَلدِّرْهَمِ مِنْ حِلِّهِ. ذَاكَ حَيْثُ يَكُونُ اَلْمُعْطَى أَعْظَمَ أَجْراً مِنَ اَلْمُعْطِي ذَاكَ حَيْثُ تَسْكَرُونَ مِنْ غَيْرِ شَرَابٍ، بَلْ مِنَ اَلنِّعْمَةِ وَ اَلنَّعِيمِ، وَ تَحْلِفُونَ مِنْ غَيْرِ اِضْطِرَارٍ، وَ تَكْذِبُونَ مِنْ غَيْرِ إِحْرَاجٍ. ذَاكَ إِذَا عَضَّكُمُ اَلْبَلاَءُ كَمَا يَعَضُّ اَلْقَتَبُ، غَارِبَ اَلْبَعِيرِ. مَا أَطْوَلَ هَذَا اَلْعَنَاءَ، وَ أَبْعَدَ هَذَا اَلرَّجَاءَ!

أَيُّهَا اَلنَّاسُ، أَلْقُوا هَذِهِ اَلْأَزِمَّةَ اَلَّتِي تَحْمِلُ ظُهُورُهَا اَلْأَثْقَالَ مِنْ أَيْدِيكُمْ، وَ لاَ تَصَدَّعُوا عَلَى سُلْطَانِكُمْ فَتَذُمُّوا غِبَّ فِعَالِكُمْ. وَ لاَ تَقْتَحِمُوا مَا اِسْتَقْبَلْتُمْ مِنْ فَوْرِ نَارِ اَلْفِتْنَةِ، وَ أَمِيطُوا عَنْ سَنَنِهَا وَ خَلُّوا قَصْدَ اَلسَّبِيلِ لَهَا: فَقَدْ لَعَمْرِي يَهْلِكُ فِي لَهَبِهَا اَلْمُؤْمِنُ، وَ يَسْلَمُ فِيهَا غَيْرُ اَلْمُسْلِمِ إِنَّمَا مَثَلِي بَيْنَكُمْ كَمَثَلِ اَلسِّرَاجِ فِي اَلظُّلْمَةِ يَسْتَضِي‏ءُ بِهِ مَنْ وَلَجَهَا. فَاسْمَعُوا أَيُّهَا اَلنَّاسُ وَ عُوا وَ أَحْضِرُوا آذَانَ قُلُوبِكُمْ تَفْهَمُوا(تفقهوا) .

সময়ের উথান - পতন সম্পর্কে

যে ক 'জনের নাম আকাশে সুপরিচিত অথচ জমিনে অজানা তাদের নামে আমার পিতা - মাতা কুরবান হোক। সাবধান ,তোমাদের ওপর যা আপতিত হতে যাচ্ছে তা হলো তোমাদের কাজে - কর্মে প্রতিকূল অবস্থা ,আত্মীয়ের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ও নিকৃষ্টতর লোকের উত্থান। এ অবস্থা তখন ঘটবে যখন একজন মোমিনের হালাল উপায়ে একটা দিরহাম সংগ্রহ করা অপেক্ষা তরবারির আঘাত সহজতর হবে ;এ অবস্থা তখন ঘটবে ? যখন দানকারী অপেক্ষা ভিক্ষুকের পুরস্কার বেশি হবে ;এ অবস্থা তখন ঘটবে যখন তোমরা নেশাগ্রস্থ হবে - পানীয় দ্বারা নয় - সম্পদ ও প্রাচুর্য দ্বারা ,মানুষ প্রতিশ্রুতি দেবে কিন্তু তার কোন বাধ্যবাধকতা থাকবে না এবং বাধ্য না করা হলেও মানুষ মিথ্যা কথা বলবে ;এ অবস্থা তখন ঘটবে যখন বিপদাপদ তোমাদেরকে চেপে ধরবে যেভাবে জিন উটের কুজকে চেপে ধরে। কতকাল এ দুর্দশা চলতে থাকবে এবং তা সংঘটিত হতে আর কত দিন বাকী ?

হে জনমণ্ডলী ,যে ঘোড়া তার পিঠে তোমাদের হাতের ওজন (অর্থাৎ পাপ) বহন করে তার লাগাম ছুড়ে ফেলে দাও। তোমাদের ইমামের কাছ থেকে কেটে পড়ো না ;তাহলে তোমাদের কর্মকান্ডের জন্য তোমরা নিজেদেরকে দোষী করবে। তোমাদের সম্মুখস্থ জলন্ত আগুনে ঝাঁপ দিয়ো না ;এ পথ থেকে দূরে সরে থাক এবং মধ্যপথ অবলম্বন কর। কারণ আমার জীবনের শপথ ,এ আগুনের শিখায় মোমিনগণ মৃত্যুবরণ করবে এবং অন্যরা নিরাপদ থাকবে। অন্ধকারে প্রদীপের মতো আমি তোমাদের মাঝে আছি। যে কেউ এর নিকটবর্তী হবে সে - ই আলোক প্রাপ্ত হবে। সুতরাং শোন হে মানুষ ,এ প্রদীপ সংরক্ষণ কর এবং হৃদয়ের কান দিয়ে এর প্রতি মনোযোগী থাক যাতে তোমরা বুঝতে পার।

__________________

১। ভিক্ষুকের পুরস্কার দানকারী অপেক্ষা বেশি হবে ” - একথা দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে ,ধনীগণ হারাম উপায়ে সম্পদ আহরণ করবে এবং তাদের দান হবে মোনাফেকিপূর্ণ ,লোক দেখানো ও সুনাম অর্জনের উদ্দেশ্যে। ফলে এহেন দানের জন্য তারা কোন পুরস্কার পাবে না। অপরপক্ষে ,দরিদ্রগণ অভাবের তাড়নায় দান গ্রহণ করে সঠিক পথে ব্যয় করবে এবং তাতে তারা অধিক পুরস্কার ও বিনিময় আশা করতে পারে ।

ইবনে আবিল হাদীদ (খণ্ড ১৩ ,পৃঃ ৯৭) অন্যভাবেও এর ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন যে ,দরিদ্রগণ ধনবানদের নিকট থেকে দান গ্রহণ না করলে ধনীগণ আমোদ - প্রমোদ ,ভোগ - বিলাস ও অবৈধ পথে তা ব্যয় করবে। কাজেই দান গ্রহণ করে দরিদ্রগণ ধনবানগণকে অবৈধ ও অসৎপথে ব্যয় করা থেকে রক্ষা করে বলে অধিক পুরস্কার ও বিনিময় পাওয়ার যোগ্য ।