নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা0%

নাহজ আল-বালাঘা লেখক:
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ: হযরত আলী (আ.)

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক: আশ-শরীফ আর-রাজী
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ:

ভিজিট: 126204
ডাউনলোড: 8027

নাহজ আল-বালাঘা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 48 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 126204 / ডাউনলোড: 8027
সাইজ সাইজ সাইজ
নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বাংলা

রাসূলের (সা.) ‘জ্ঞান নগরীর দ্বার’ আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব ছিলেন তত্ত্বজ্ঞানী, দার্শনিক, সুলেখক ও বাগ্মী। আলঙ্কারিক শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ও নৈপুন্য অসাধারণ। তিনি নবুওয়াতী জ্ঞান ভান্ডার হতে সরাসরি জ্ঞান আহরণ করেন এবং সাহাবাদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী পন্ডিত ছিলেন। এতে কারো দ্বিমত নেই। আরবী কাব্যে ও সাহিত্যে তার অনন্যসাধারণ অবদান ছিল। খেলাফত পরিচালনা কালে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ (খোৎবা) দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকগণকে প্রশাসনিক বিষয়ে উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে পত্র লিখেছিলেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মানুষের অনেক প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছিলেন। তার এসব বাণী কেউকেউ লিখে রেখেছিল, কেউ কেউ মনে রেখেছিল, আবার কেউ কেউ তাদের লিখিত পুস্তকে উদ্ধৃত করেছিল। মোটকথা তার অমূল্য বাণীসমূহ মানুষের কাছে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ছিল।

আশ-শরীফ আর-রাজী আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিবের ভাষণসমূহ (খোৎবা), পত্রাবলী, নির্দেশাবলী ও উক্তিসমূহ সংগ্রহ করে “নাহজ আল-বালঘা” নামক গ্রন্থটি সঙ্কলন করেন।

খোৎবা - ২১১

اَللَّهُمَّ أَيُّمَا عَبْدٍ مِنْ عِبَادِكَ سَمِعَ مَقَالَتَنَا اَلْعَادِلَةَ غَيْرَ اَلْجَائِرَةِ، وَ اَلْمُصْلِحَةَ غَيْرَ اَلْمُفْسِدَةِ، فِي اَلدِّينِ وَ اَلدُّنْيَا، فَأَبَى بَعْدَ سَمْعِهِ لَهَا إِلاَّ اَلنُّكُوصَ عَنْ نُصْرَتِكَ، وَ اَلْإِبْطَاءَ عَنْ إِعْزَازِ دِينِكَ. فَإِنَّا نَسْتَشْهِدُكَ عَلَيْهِ يَا أَكْبَرَ اَلشَّاهِدِينَ شَهَادَةً، وَ نَسْتَشْهِدُ عَلَيْهِ جَمِيعَ مَا أَسْكَنْتَهُ أَرْضَكَ وَ سمَاوَاتِكَ، ثُمَّ أَنْتَ بَعْدُ اَلْمُغْنِي عَنْ نَصْرِهِ، وَ اَلْآخِذُ لَهُ بِذَنْبِهِ.

যারা ন্যায়ের সমর্থন পরিত্যাগ করে তাদের সম্পর্কে

হে আমার আল্লাহ ,আমরা সর্বদা তোমার দ্বীনের স্বার্থে ,ন্যায়ের স্বার্থে এবং মানুষের জাগতিক জীবনের উন্নতির উদ্দেশ্যে কথা বলি। আমরা কখনো ফেতনা সৃষ্টির জন্য কথা বলি না। যারা আমাদের কথা শোনে এবং সেভাবে আমল করে ,নিশ্চয়ই তারা তোমার অনুগ্রহ প্রাপ্ত। আর যারা আমাদের কথা শোনার পর তা প্রত্যাখ্যান করে ,নিশ্চয়ই তারা তোমার অনুগ্রহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তোমার দ্বীনকে শক্তিশালী করার পথে বাধা সৃষ্টি করে। এসব লোকের জন্য আমরা তোমাকে সাক্ষী করি এবং তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ সাক্ষী। আমরা তোমার পৃথিবীর সকল বাসিন্দাকে ও তোমার আকাশের সকল বাসিন্দাকে তাদের বিষয়ে সাক্ষী করি। কেবলমাত্র তুমিই তাদের সমর্থনকে আমাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় করে দিতে পার এবং তাদের পাপের জন্য তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পার ।

খোৎবা - ২১২

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ اَلْعَلِيِّ عَنْ شَبَهِ اَلْمَخْلُوقِينَ، اَلْغَالِبِ لِمَقَالِ اَلْوَاصِفِينَ، اَلظَّاهِرِ بِعَجَائِبِ تَدْبِيرِهِ لِلنَّاظِرِينَ، وَ اَلْبَاطِنِ بِجَلاَلِ عِزَّتِهِ عَنْ فِكْرِ اَلْمُتَوَهِّمِينَ. اَلْعَالِمِ بِلاَ اِكْتِسَابٍ وَ لاَ اِزْدِيَادٍ، وَ لاَ عِلْمٍ مُسْتَفَادٍ، اَلْمُقَدِّرِ لِجَمِيعِ اَلْأُمُورِ بِلاَ رَوِيَّةٍ وَ لاَ ضَمِيرٍ، اَلَّذِي لاَ تَغْشَاهُ اَلظُّلَمُ، وَ لاَ يَسْتَضِي‏ءُ بِالْأَنْوَارِ، وَ لاَ يَرْهَقُهُ لَيْلٌ، وَ لاَ يَجْرِي عَلَيْهِ نَهَارٌ، لَيْسَ إِدْرَاكُهُ بِالْإِبْصَارِ، وَ لاَ عِلْمُهُ بِالْإِخْبَارِ.

أَرْسَلَهُ بِالضِّيَاءِ، وَ قَدَّمَهُ فِي الاِصْطِفَاءِ، فَرَتَقَ بِهِ اَلْمَفَاتِقَ، وَ سَاوَرَ بِهِ اَلْمُغَالِبَ، وَ ذَلَّلَ بِهِ اَلصُّعُوبَةَ، وَ سَهَّلَ بِهِ اَلْحُزُونَةَ، حَتَّى سَرَّحَ اَلضَّلاَلَ، عَنْ يَمِينٍ وَ شِمَالٍ.

আল্লাহর মহিমা ও রাসূলের (সা.) প্রশংসা

প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সকল বান্দার সাদৃশ্যের উর্দ্ধে ,বর্ণনাকারীদের বর্ণনার উর্দ্ধে ;যিনি দৃষ্টিবানকে তাঁর ব্যবস্থাপনা দেখিয়ে দিয়ে হতবাক করেছেন ;যিনি স্বীয় মহিমায় চিন্তাবিদগণের কল্পনা থেকে গুপ্ত ;যিনি জ্ঞানার্জন ছাড়াই জ্ঞানী যাতে কোন বাড়তিও নেই ,কমতিও নেই ;এবং যিনি কোন প্রকার চিন্তা ও প্রতিফলন ছাড়াই সকল বিষয়ের নিয়ামক। তিনি এমন যে ,গাঢ় অন্ধকারে তাঁর কিছু আসে যায় না ,অথবা উজ্জ্বলতার কাছ থেকেও তার কোন আলোর প্রয়োজন হয়না। রাত তাকে অতিক্রম করে না ,দিবাভাগও তার জন্য পার হয়ে যায় না (অর্থাৎ দিবারাত্রির পরিবর্তন তাঁকে প্রভাবিত করে না) । কোন জিনিস সম্পর্কে তার উপলব্ধি চক্ষু দ্বারা নয় এবং তাঁর জ্ঞান অবহিতির ওপর নির্ভরশীল নয় ।

আল্লাহ রাসূলকে (সা.) আলোর দিশারী হিসাবে প্রেরণ করেছেন এবং তার মনোনীতগণের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেছেন। তার মাধ্যমে আল্লাহ বিচ্ছিন্নগণকে ঐক্যবদ্ধ করলেন ,শক্তিশালীগণকে পরাভূত করলেন ,সকল বিপদগ্রস্থতা দূরীভূত করলেন ,অসমতল ভূমিকে সমতল করলেন এবং এভাবে চতুর্দিকের গোমরাহি দূরীভূত করলেন।

খোৎবা - ২১৩

معرفة الرسول الاعظمصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم

وَ أَشْهَدُ أَنَّهُ عَدْلٌ عَدَلَ، وَ حَكَمٌ فَصَلَ، وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَ رَسُولُهُ، وَ سَيِّدُ عِبَادِهِ، كُلَّمَا نَسَخَ اَللَّهُ اَلْخَلْقَ فِرْقَتَيْنِ جَعَلَهُ فِي خَيْرِهِمَا، لَمْ يُسْهِمْ فِيهِ عَاهِرٌ، وَ لاَ ضَرَبَ فِيهِ فَاجِرٌ. أَلاَ وَ إِنَّ اَللَّهَسُبْحَانَهُ قَدْ جَعَلَ لِلْخَيْرِ أَهْلاً، وَ لِلْحَقِّ دَعَائِمَ، وَ لِلطَّاعَةِ عِصَماً. وَ إِنَّ لَكُمْ عِنْدَ كُلِّ طَاعَةٍ عَوْناً مِنَ اَللَّهِسُبْحَانَهُ يَقُولُ عَلَى اَلْأَلْسِنَةِ وَ يُثَبِّتُ اَلْأَفْئِدَةَ. فِيهِ كِفَاءٌ لِمُكْتَفٍ، وَ شِفَاءٌ لِمُشْتَفٍ.

منزلة العلماء

وَ اِعْلَمُوا أَنَّ عِبَادَ اَللَّهِ اَلْمُسْتَحْفَظِينَ عِلْمَهُ، يَصُونُونَ مَصُونَهُ، وَ يُفَجِّرُونَ عُيُونَهُ. يَتَوَاصَلُونَ بِالْوِلاَيَةِ، وَ يَتَلاَقَوْنَ بِالْمَحَبَّةِ، وَ يَتَسَاقَوْنَ بِكَأْسٍ رَوِيَّةٍ، وَ يَصْدُرُونَ بِرِيَّةٍ، لاَ تَشُوبُهُمُ اَلرِّيبَةُ، وَ لاَ تُسْرِعُ فِيهِمُ اَلْغِيبَةُ. عَلَى ذَلِكَ عَقَدَ خَلْقَهُمْ وَ أَخْلاَقَهُمْ، فَعَلَيْهِ يَتَحَابُّونَ، وَ بِهِ يَتَوَاصَلُونَ، فَكَانُوا كَتَفَاضُلِ اَلْبَذْرِ يُنْتَقَى، فَيُؤْخَذُ مِنْهُ وَ يُلْقَى، قَدْ مَيَّزَهُ اَلتَّخْلِيصُ، وَ هَذَّبَهُ اَلتَّمْحِيصُ.

فَلْيَقْبَلِ اِمْرُؤٌ كَرَامَةً بِقَبُولِهَا، وَ لْيَحْذَرْ قَارِعَةً قَبْلَ حُلُولِهَا، وَ لْيَنْظُرِ اِمْرُؤٌ فِي قَصِيرِ أَيَّامِهِ، وَ قَلِيلِ مُقَامِهِ، فِي مَنْزِلٍ حَتَّى يَسْتَبْدِلَ بِهِ مَنْزِلاً، فَلْيَصْنَعْ لِمُتَحَوَّلِهِ، وَ مَعَارِفِ مُنْتَقَلِهِ. فَطُوبَى لِذِي قَلْبٍ سَلِيمٍ، أَطَاعَ مَنْ يَهْدِيهِ، وَ تَجَنَّبَ مَنْ يُرْدِيهِ، وَ أَصَابَ سَبِيلَ اَلسَّلاَمَةِ بِبَصَرِ مَنْ بَصَّرَهُ، وَ طَاعَةِ هَادٍ أَمَرَهُ، وَ بَادَرَ اَلْهُدَى قَبْلَ أَنْ تُغْلَقَ أَبْوَابُهُ، وَ تُقْطَعَ أَسْبَابُهُ، وَ اِسْتَفْتَحَ اَلتَّوْبَةَ، وَ أَمَاطَ اَلْحَوْبَةَ، فَقَدْ أُقِيمَ عَلَى اَلطَّرِيقِ، وَ هُدِيَ نَهْجَ اَلسَّبِيلِ.

আল্লাহর রাসূলের (সা.) প্রশংসা এবং আলেম ওলামাদের মর্যাদা সম্পর্কে

আল্লাহর রাসূলের (সা.) প্রশংসা

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে ,আল্লাহ ন্যায়পরায়ণ এবং ন্যায় বিচার করেন। তিনি সর্বনিয়ন্তা যিনি ন্যায় ও অন্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে ,মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ,তার নবী ও তার সৃষ্টির সেরা। যখন আল্লাহ বংশধারাকে বিভক্ত করলেন তখন তিনি তাকে সর্বোত্তম বংশে প্রেরণ করলেন। সেহেতু কোন মন্দ লোক তাঁর বংশে ছিল না বা কোন পাপাচারী তাঁর অংশীদার ছিল না। সাবধান! মহিমান্বিত আল্লাহ নিশ্চয়ই ,তাদেরকে দ্বীনের পথে রেখেছেন যারা এর উপযুক্ত এবং তিনি সত্যকে তাদের স্তম্ভ করে দিয়েছেন (যাতে তারা ভয় করতে পারে) ও আনুগত্যকে তাদের প্রতিরক্ষা করে দিয়েছেন (যাতে তারা বিপথগামী না হয়) । আনুগত্যের প্রতিটি বিষয়ে ,কথার মাধ্যমে ও অন্তরের দৃঢ়তার মাধ্যমে মহিমান্বিত আল্লাহর সাহায্য তোমরা দেখতে পাবে। এতে তাদের জন্য যথেষ্ট কিছু রয়েছে যারা প্রচুর চায় এবং রোগের চিকিৎসা রয়েছে যারা চিকিৎসা চায়।

আলেম ওলামাদের মর্যাদা

জেনে রাখো ,আল্লাহর যেসব বান্দা তার জ্ঞান সংরক্ষণ করে ,সেসব বিষয়ের প্রতিরক্ষা বিধান করে যা তিনি রক্ষা করতে ইচ্ছা করেন এবং (অন্যদের উপকারার্থে) তার ঝরনা প্রবাহিত করেন ;তারা বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে এবং স্নেহ পরবশ হয়ে একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করে। তারা পেয়ালা থেকে পান করে যা তৃষ্ণা নিবারণ করে এবং জলাধারের কাছ থেকে পরিপূর্ণ সন্তোষ নিয়ে ফিরে আসে। সন্দেহ তাদেরকে প্রভাবিত করে না এবং গিবত তাদের ক্ষেত্রে সুবিধা করতে পারে না। এভাবে আল্লাহ তাদের স্বভাবে সদাচরণ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ কারণে তারা একে অপরকে ভালোবাসে এবং একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করে। তারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে বীজের মতো যা বাছাই করে মাত্র কয়েকটি রাখা হয় এবং বাকিগুলো ফেলে দেয়া হয়। এ বাছাই তাদেরকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে এবং মনোনয়নের প্রক্রিয়া তাদেরকে পবিত্র করেছে।

সুতরাং এসব গুণাবলী অর্জন করে মানুষ সম্মানিত হতে পারে। কেয়ামত উপস্থিত হবার আগেই তার ভয়ে ভীত হওয়া উচিত। জীবনের ক্ষণস্থায়ীত্বের কথা স্মরণ রাখা দরকার। আরো মনে রাখা দরকার যে ,পরকালে পাড়ি জমাবার জন্য মানুষ এখানে কিছুকাল অবস্থান করছে। এ পট পরিবর্তন ও অবধারিত প্রস্থানের জন্য প্রত্যেকেরই কিছু করা দরকার। সে ব্যক্তি আশীর্বাদপুষ্ট ,যার হৃদয়ে ধার্মিকতা রয়েছে ,যে তার পথ প্রদর্শককে মান্য করে এবং সেসব লোককে প্রতিহত করে যারা তাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। সে ব্যক্তি আশীর্বাদপুষ্ট ,যে সেসব লোকের সাহায্যে নিরাপত্তার পথ ধরে চলে যারা তাকে হেদায়েতের আলোর সন্ধান দেয়। সে ব্যক্তি আশীর্বাদপুষ্ট ,যে নেতার আদেশ মান্য করে নিরাপত্তার পথে চলে ,হেদায়েতের দরজা বন্ধ হবার আগেই সেদিকে দ্রুত অগ্রসর হয় এবং তওবার দরজা খোলা থাকতেই পাপ বিদূরিত করে। নিশ্চয়ই ,তাকে সত্য পথে ও সিরাতুল মোস্তাকিমে পরিচালিত করা হয়েছে।

খোৎবা - ২১৪

کان یدعوا به کثیراً

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ اَلَّذِي لَمْ يُصْبِحْ بِي مَيِّتاً وَ لاَ سَقِيماً، وَ لاَ مَضْرُوباً عَلَى عُرُوقِي بِسُوءٍ، وَ لاَ مَأْخُوذاً بِأَسْوَإِ عَمَلِي، وَ لاَ مَقْطُوعاً دَابِرِي، وَ لاَ مُرْتَدّاً عَنْ دِينِي، وَ لاَ مُنْكِراً لِرَبِّي، وَ لاَ مُسْتَوْحِشاً مِنْ إِيمَانِي، وَ لاَ مُلْتَبِساً عَقْلِي، وَ لاَ مُعَذَّباً بِعَذَابِ اَلْأُمَمِ مِنْ قَبْلِي. أَصْبَحْتُ عَبْداً مَمْلُوكاً ظَالِماً لِنَفْسِي. لَكَ اَلْحُجَّةُ عَلَيَّ وَ لاَ حُجَّةَ لِي، وَ لاَ أَسْتَطِيعُ أَنْ آخُذَ إِلاَّ مَا أَعْطَيْتَنِي، وَ لاَ أَتَّقِيَ إِلاَّ مَا وَقَيْتَنِي. اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَفْتَقِرَ فِي غِنَاكَ، أَوْ أَضِلَّ فِي هُدَاكَ، أَوْ أُضَامَ فِي سُلْطَانِكَ، أَوْ أُضْطَهَدَ وَ اَلْأَمْرُ لَكَ! اَللَّهُمَّ اِجْعَلْ نَفْسِي أَوَّلَ كَرِيمَةٍ تَنْتَزِعُهَا مِنْ كَرَائِمِي، وَ أَوَّلَ وَدِيعَةٍ تَرْتَجِعُهَا مِنْ وَدَائِعِ نِعَمِكَ عِنْدِي! اَللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوذُ بِكَ أَنْ نَذْهَبَ عَنْ قَوْلِكَ، أَوْ أَنْ نُفْتَتَنَ عَنْ دِينِكَ، أَوْ تَتَابَعَ بِنَا أَهْوَاؤُنَا دُونَ اَلْهُدَى اَلَّذِي جَاءَ مِنْ عِنْدِكَ!.

আমিরুল মোমেনিনের প্রার্থনা

একটি প্রার্থনা যা আমিরুল মোমেনিন প্রায়শই করতেন

প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে এরূপ তৈরি করেছেন যে ,আমি এখনো মৃত্যুবরণ করিনি ,আমি রুগ্ন নই ,আমার শিরাসমূহ রোগে সংক্রমিত নয় ,কোন খারাপ কাজের জন্য আমি তিরস্কৃত নই ,আমি আটকুড়ে নই ,আমি আমার দ্বীন পরিত্যাগ করিনি ,আমার প্রভুর প্রতি আমার কোন অবিশ্বাস নেই ,আমার ইমানে অজানিতপূর্ব বিস্ময় নেই ,আমার বুদ্ধিমত্তা ক্ষতিগ্রস্থ নয় এবং আমার পূর্বে মানুষকে যেরূপ শাস্তি দেয়া হয়েছে সেরূপ শাস্তি আমাকে দেয়া হয়নি। হে আল্লাহ ,আমি তোমার করতলগত দাস ;আমি নিজের প্রতি বাড়াবাড়ির দোষে দোষী। আমার ওপর তোমার ওজর তুমি শেষ করেছো এবং তোমার সম্মুখে আমার কোন ওজর নেই। যা তুমি দান কর। তাছাড়া আর কিছু গ্রহণের ক্ষমতা আমার নেই এবং তুমি রক্ষা না করলে কোন কিছু এড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

হে আমার আল্লাহ! তোমার ধনৈশ্বর্য থাকা সত্ত্বেও দুর্দশাগ্রস্থ হওয়া থেকে আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি । তোমার হেদায়েত থাকা সত্ত্বেও আমি গোমরাহি থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি। তোমার রাজ্যে নিগৃহীত হওয়া থেকে এবং যেহেতু সকল কর্তৃত্ব তোমার সেহেতু অপমানিত হওয়া থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি ।

হে আমার আল্লাহ ,আমার কাছ থেকে যেসব কল্যাণকর বস্তু তুমি গ্রহণ কর তাতে যেন আমার আত্মা প্রথম হয় এবং তোমার নেয়ামতসমূহের মধ্যে যে বিশ্বাস তুমি আমাকে দিয়েছো সে বিশ্বাস যেন প্রথম হয় ।

হে আমার আল্লাহ ,তোমার আদেশ হতে মুখ না ফেরানোর জন্য বা তোমার দ্বীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করার জন্য বা তোমার কাছ থেকে আগত হেদায়েতের পরিবর্তে কামনা - বাসনা দ্বারা তাড়িত না হওয়ার জন্য তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি।

খোৎবা - ২১৫

خطبها بصفین

أَمَّا بَعْدُ، فَقَدْ جَعَلَ اَللَّهُسُبْحَانَهُ لِي عَلَيْكُمْ حَقّاً بِوِلاَيَةِ أَمْرِكُمْ، وَ لَكُمْ عَلَيَّ مِنَ اَلْحَقِّ مِثْلُ اَلَّذِي لِي عَلَيْكُمْ، فَالْحَقُّ أَوْسَعُ اَلْأَشْيَاءِ فِي اَلتَّوَاصُفِ، وَ أَضْيَقُهَا فِي اَلتَّنَاصُفِ، لاَ يَجْرِي لِأَحَدٍ إِلاَّ جَرَى عَلَيْهِ وَ لاَ يَجْرِي عَلَيْهِ إِلاَّ جَرَى لَهُ. وَ لَوْ كَانَ لِأَحَدٍ أَنْ يَجْرِيَ لَهُ وَ لاَ يَجْرِيَ عَلَيْهِ، لَكَانَ ذَلِكَ خَالِصاً لِلَّهِسُبْحَانَهُ دُونَ خَلْقِهِ لِقُدْرَتِهِ عَلَى عِبَادِهِ، وَ لِعَدْلِهِ فِي كُلِّ مَا جَرَتْ عَلَيْهِ صُرُوفُ قَضَائِهِ، وَ لَكِنَّهُسُبْحَانَهُ جَعَلَ حَقَّهُ عَلَى اَلْعِبَادِ أَنْ يُطِيعُوهُ، وَ جَعَلَ جَزَاءَهُمْ عَلَيْهِ مُضَاعَفَةَ اَلثَّوَابِ تَفَضُّلاً مِنْهُ وَ تَوَسُّعاً بِمَا هُوَ مِنَ اَلْمَزِيدِ أَهْلُهُ.

ثُمَّ جَعَلَسُبْحَانَهُ مِنْ حُقُوقِهِ حُقُوقاً اِفْتَرَضَهَا لِبَعْضِ اَلنَّاسِ عَلَى بَعْضٍ، فَجَعَلَهَا تَتَكَافَأُ فِي وُجُوهِهَا، وَ يُوجِبُ بَعْضُهَا بَعْضاً، وَ لاَ يُسْتَوْجَبُ بَعْضُهَا إِلاَّ بِبَعْضٍ. وَ أَعْظَمُ مَا اِفْتَرَضَسُبْحَانَهُ مِنْ تِلْكَ اَلْحُقُوقِ حَقُّ اَلْوَالِي عَلَى اَلرَّعِيَّةِ، وَ حَقُّ اَلرَّعِيَّةِ عَلَى اَلْوَالِي، فَرِيضَةٌ فَرَضَهَا اَللَّهُسُبْحَانَهُ لِكُلٍّ عَلَى كُلٍّ فَجَعَلَهَا نِظَاماً لِأُلْفَتِهِمْ، وَ عِزّاً لِدِينِهِمْ .فَلَيْسَتْ تَصْلُحُ اَلرَّعِيَّةُ إِلاَّ بِصَلاَحِ اَلْوُلاَةِ، وَ لاَ تَصْلُحُ اَلْوُلاَةُ إِلاَّ بِاسْتِقَامَةِ اَلرَّعِيَّةِ، فَإِذَا أَدَّتْ اَلرَّعِيَّةُ إِلَى اَلْوَالِي حَقَّهُ، وَ أَدَّى اَلْوَالِي إِلَيْهَا حَقَّهَا عَزَّ اَلْحَقُّ بَيْنَهُمْ، وَ قَامَتْ مَنَاهِجُ اَلدِّينِ، وَ اِعْتَدَلَتْ مَعَالِمُ اَلْعَدْلِ، وَ جَرَتْ عَلَى أَذْلاَلِهَا اَلسُّنَنُ، فَصَلَحَ بِذَلِكَ اَلزَّمَانُ، وَ طُمِعَ فِي بَقَاءِ اَلدَّوْلَةِ، وَ يَئِسَتْ مَطَامِعُ اَلْأَعْدَاءِ. وَ إِذَا غَلَبَتِ اَلرَّعِيَّةُ وَالِيَهَا، أَوْ أَجْحَفَ اَلْوَالِي بِرَعِيَّتِهِ، اِخْتَلَفَتْ هُنَالِكَ اَلْكَلِمَةُ، وَ ظَهَرَتْ مَعَالِمُ اَلْجَوْرِ، وَ كَثُرَ اَلْإِدْغَالُ فِي اَلدِّينِ، وَ تُرِكَتْ مَحَاجُّ اَلسُّنَنِ، فَعُمِلَ بِالْهَوَى، وَ عُطِّلَتِ اَلْأَحْكَامُ، وَ كَثُرَتْ عِلَلُ اَلنُّفُوسِ، فَلاَ يُسْتَوْحَشُ لِعَظِيمِ حَقٍّ عُطِّلَ، وَ لاَ لِعَظِيمِ بَاطِلٍ فُعِلَ! فَهُنَالِكَ تَذِلُّ اَلْأَبْرَارُ، وَ تَعِزُّ اَلْأَشْرَارُ، وَ تَعْظُمُ تَبِعَاتُ اَللَّهِسُبْحَانَهُ عِنْدَ اَلْعِبَادِ. فَعَلَيْكُمْ بِالتَّنَاصُحِ فِي ذَلِكَ، وَ حُسْنِ اَلتَّعَاوُنِ عَلَيْهِ. فَلَيْسَ أَحَدٌ -وَ إِنِ اِشْتَدَّ عَلَى رِضَا اَللَّهِ حِرْصُهُ وَ طَالَ فِي اَلْعَمَلِ اِجْتِهَادُهُ- بِبَالِغٍ حَقِيقَةَ مَا اَللَّهُسُبْحَانَهُ أَهْلُهُ مِنَ اَلطَّاعَةِ لَهُ. وَ لَكِنْ مِنْ وَاجِبِ حُقُوقِ اَللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ اَلنَّصِيحَةُ بِمَبْلَغِ جُهْدِهِمْ، وَ اَلتَّعَاوُنُ عَلَى إِقَامَةِ اَلْحَقِّ بَيْنَهُمْ. وَ لَيْسَ اِمْرُؤٌوَ إِنْ عَظُمَتْ فِي اَلْحَقِّ مَنْزِلَتُهُ وَ تَقَدَّمَتْ فِي اَلدِّينِ فَضِيلَتُهُ بِفَوْقِ أَنْ يُعَانَ عَلَى مَا حَمَّلَهُ اَللَّهُ مِنْ حَقِّهِ. وَ لاَ اِمْرُؤٌوَ إِنْ صَغَّرَتْهُ اَلنُّفُوسُ وَ اِقْتَحَمَتْهُ اَلْعُيُونُ بِدُونِ أَنْ يُعِينَ عَلَى ذَلِكَ أَوْ يُعَانَ عَلَيْهِ. فَأَجَابَهُ عليه‌السلام رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِهِ بِكَلاَمٍ طَوِيلٍ يُكْثِرُ فِيهِ اَلثَّنَاءَ عَلَيْهِ وَ يَذْكُرُ سَمْعَهُ وَ طَاعَتَهُ لَهُ فَقَالَ عليه‌السلام :إِنَّ مِنْ حَقِّ مَنْ عَظُمَ جَلاَلُ اَللَّهِسُبْحَانَهُ فِي نَفْسِهِ وَ جَلَّ مَوْضِعُهُ مِنْ قَلْبِهِ، أَنْ يَصْغُرَ عِنْدَهُ -لِعِظَمِ ذَلِكَ - كُلُّ مَا سِوَاهُ وَ إِنَّ أَحَقَّ مَنْ كَانَ كَذَلِكَ لَمَنْ عَظُمَتْ نِعْمَةُ اَللَّهِ عَلَيْهِ، وَ لَطُفَ إِحْسَانُهُ إِلَيْهِ، فَإِنَّهُ َمْ تَعْظُمْ نِعْمَةُ اَللَّهِ عَلَى أَحَدٍ إِلاَّ اِزْدَادَ حَقُّ اَللَّهِ عَلَيْهِ عِظَماً.

وَ إِنَّ مِنْ أَسْخَفِ حَالاَتِ اَلْوُلاَةِ عِنْدَ صَالِحِ اَلنَّاسِ، أَنْ يُظَنَّ بِهِمْ حُبُّ اَلْفَخْرِ، وَ يُوضَعَ أَمْرُهُمْ عَلَى اَلْكِبْرِ، وَ قَدْ كَرِهْتُ أَنْ يَكُونَ جَالَ فِي ظَنِّكُمْ أَنِّي أُحِبُّ اَلْإِطْرَاءَ، وَ اِسْتِمَاعَ اَلثَّنَاءِ؛ وَ لَسْتُ بِحَمْدِ اَللَّهِ كَذَلِكَ، وَ لَوْ كُنْتُ أُحِبُّ أَنْ يُقَالَ ذَلِكَ لَتَرَكْتُهُ اِنْحِطَاطاً لِلَّهِسُبْحَانَهُ عَنْ تَنَاوُلِ مَا هُوَ أَحَقُّ بِهِ مِنَ اَلْعَظَمَةِ وَ اَلْكِبْرِيَاءِ. وَ رُبَّمَا اِسْتَحْلَى اَلنَّاسُ اَلثَّنَاءَ بَعْدَ اَلْبَلاَءِ، فَلاَ تُثْنُوا عَلَيَّ بِجَمِيلِ ثَنَاءٍ، لِإِخْرَاجِي نَفْسِي إِلَى اَللَّهِسُبْحَانَهُ وَ إِلَيْكُمْ مِنَ اَلتَّقِيَّةِ(البقیّة) فِي حُقُوقٍ لَمْ أَفْرُغْ مِنْ أَدَائِهَا، وَ فَرَائِضَ لاَ بُدَّ مِنْ إِمْضَائِهَا. فَلاَ تُكَلِّمُونِي بِمَا تُكَلَّمُ بِهِ اَلْجَبَابِرَةُ، وَ لاَ تَتَحَفَّظُوا مِنِّي بِمَا يُتَحَفَّظُ بِهِ عِنْدَ أَهْلِ اَلْبَادِرَةِ، وَ لاَ تُخَالِطُونِي بِالْمُصَانَعَةِ، وَ لاَ تَظُنُّوا بِي اِسْتِثْقَالاً فِي حَقٍّ قِيلَ لِي، وَ لاَ اِلْتِمَاسَ إِعْظَامٍ لِنَفْسِي، فَإِنَّهُ مَنِ اِسْتَثْقَلَ اَلْحَقَّ أَنْ يُقَالَ لَهُ أَوِ اَلْعَدْلَ أَنْ يُعْرَضَ عَلَيْهِ، كَانَ اَلْعَمَلُ بِهِمَا أَثْقَلَ عَلَيْهِ. فَلاَ تَكُفُّوا عَنْ مَقَالَةٍ بِحَقٍّ، أَوْ مَشُورَةٍ بِعَدْلٍ، فَإِنِّي لَسْتُ فِي نَفْسِي بِفَوْقِ أَنْ أُخْطِئَ، وَ لاَ آمَنُ ذَلِكَ مِنْ فِعْلِي، إِلاَّ أَنْ يَكْفِيَ اَللَّهُ مِنْ نَفْسِي مَا هُوَ أَمْلَكُ بِهِ مِنِّي، فَإِنَّمَا أَنَا وَ أَنْتُمْ عَبِيدٌ مَمْلُوكُونَ لِرَبٍّ لاَ رَبَّ غَيْرُهُ؛ يَمْلِكُ مِنَّا مَا لاَ نَمْلِكُ مِنْ أَنْفُسِنَا، وَ أَخْرَجَنَا مِمَّا كُنَّا فِيهِ إِلَى مَا صَلَحْنَا عَلَيْهِ فَأَبْدَلَنَا بَعْدَ اَلضَّلاَلَةِ بِالْهُدَى، وَ أَعْطَانَا اَلْبَصِيرَةَ بَعْدَ اَلْعَمَى.

শাসক ও শাসিতের পারস্পরিক অধিকার সম্বন্ধে সিফফিনের যুদ্ধের সময় এ খোৎবা দিয়েছিলেন।

মহিমান্বিত আল্লাহ তোমাদের বিষয়াদি দেখার দায়িত্ব আমার ওপর ন্যস্ত করে তোমাদের ওপর আমার অধিকার এবং আমার ওপর তোমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অধিকার কথাটি বর্ণনা করতে গেলে বিশাল ,কিন্তু কর্মের ন্যায়পরায়ণতা ও নিরপেক্ষতা থাকলে এটা খুবই সংকীর্ণ। কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত অধিকার প্রাপ্য হয় না ,যে পর্যন্ত এটা তার জন্য প্রদেয় না হয় ;আবার ততক্ষণ পর্যন্ত অধিকার প্রদেয় হয় না ,যতক্ষণ পর্যন্ত এটা প্রাপ্য না হয়। যদি এমন কোন অধিকার থেকে থাকে যা শুধুমাত্র প্রাপ্য (যাতে প্রদেয় নেই) তা কেবল মহিমান্বিত আল্লাহর (আল্লাহ ব্যাতীত আর কারো একক অধিকার হয় না) । সৃষ্টির ওপর তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্য ও তাঁর সকল রায় ন্যায় - পরিব্যাপ্ত বিধায় তাঁর অধিকার একক। সৃষ্টির একক অধিকার হয় না। অবশ্য সৃষ্টির ওপর মহিমান্বিত আল্লাহ্ তাঁর এ অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে ,বান্দা তার ইবাদত করবে এবং তিনি নিজের জন্য এটা নির্ধারণ করেছেন যে ,তাঁর নেয়ামত ও দয়ার চিহ্ন হিসেবে বান্দাকে বিনিময়ে কয়েকগুণ বেশি পুরস্কার প্রদান করবেন।

তারপর মহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর অধিকার থেকে কোন কোন লোকের জন্য অন্যদের ওপর কতিপয় অধিকার প্রতিষ্ঠিত করলেন। তিনি একের সাথে অপরের সমতা বিধান করার জন্য এসব অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন । এসব অধিকারের কতেকগুলো অন্য অধিকারের উৎপত্তি ঘটায়। আবার কতেকগুলো এমন যে ,অন্য অধিকার ছাড়া এগুলো প্রাপ্য হয় না। এসব অধিকারের সেরা (যা মহিমান্বিত আল্লাহ বাধ্যতামূলক করেছেন) হলো ,শাসিতের ওপর শাসকের অধিকার এবং শাসকের ওপর শাসিতের অধিকার। এটা একটা বাধ্যতামূলক দায়িত্ব যা মহিমান্বিত আল্লাহ একের ওপর অন্যের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এটাকে তিনি তাদের পারস্পরিক স্নেহ - মমতার ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং তাদের দ্বীনের জন্য এটা একটা সম্মান। ফলে সুপ্রতিষ্ঠিত শাসক না হলে শাসিত উন্নতি লাভ করতে পারে না এবং অবিচলিত শাসিত না হলে শাসক সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।

যদি শাসক ও শাসিতগণ উভয়ে একের প্রতি অপরের অধিকার পরিপূরণ করে তখন অধিকার তাদের মধ্যে সম্মানের স্থান লাভ করে ,দ্বীনের পথ প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়ে ,ন্যায় বিচারের নিদর্শন নির্ধারিত হয়ে পড়ে এবং সুন্নাহ প্রসার লাভ করে।

এভাবে সময়ের উন্নতি সাধিত হবে ,সরকারের স্থায়ীত্ব আশা করা যাবে এবং শত্রুর লক্ষ্য নৈরাশ্যে পরিণত হবে। কিন্তু যদি শাসিতগণ শাসককে নিয়ন্ত্রিত করে অথবা শাসকগণ শাসিতের ওপর জুলুম অত্যাচার চালায়। তবে প্রতিটি কথায় বিভেদ - বিরোধ দানা বেঁধে ওঠে ,অত্যাচারের নিদর্শন দেখা দেয় ,দ্বীনে ফেতনা প্রবেশ করে এবং সুন্নাহর পথ পরিত্যক্ত হয়। তখন কামনা - বাসনা কার্যকর হয় ,দ্বীনের আদেশ - নিষেধ অগ্রাহ্য করা হয় ,আত্মা ব্যধিগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং বৃহৎ অধিকার অগ্রাহ্য করে বা কবিরা গুনাহ করতে দ্বিধাবোধ করে না। এ অবস্থায় ধার্মিকগণ অপমানিত হয় এবং পাপাচারীগণ সম্মানিত হয়। এ অবস্থায় মহিমান্বিত আল্লাহ জনগণের ওপর মারাত্মক শাস্তি আপতন করেন।

কাজেই তোমরা তোমাদের দায়িত্ব পরিপূরণের জন্য একে অপরের সাথে পরামর্শ করো এবং একে অপরকে সহযোগিতা করো। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একজন লোক যতই আগ্রাহান্বিত ও উদগ্রীব হোক না কেন এবং সেজন্য যতই সাগ্রহ চেষ্টা করুক না কেন ,মহিমান্বিত আল্লাহর যতটুকু আনুগত্য প্রাপ্য ততটুকু সে পালন করতে পারে না। মানুষের ওপর এটা আল্লাহর একটা বাধ্যতামূলক অধিকার যে ,তারা নিজেদের সাধ্যমত একে অপরকে উপদেশ দেবে এবং তাদের মধ্যে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য একে অপরকে সহায়তা করবে। সত্যের ব্যাপারে কোন লোকের অবস্থান যত বড়ই হোক না কেন ,দ্বীনের ব্যাপারে সে যত অগ্রণীই হোক না কেন ,আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব পালন সম্পর্কে সে পারষ্পরিক সহযোগিতার উর্দ্ধে নয়। আবার ,কোন লোককে অন্যরা যতই ক্ষুদ্র মনে করুক না কেন ও দৃষ্টিতে তাকে যতই দীনহীন মনে হোক না কেন ,সহযোগিতার ব্যাপারে সে ক্ষুদ্র বা হীন নয়।

আমিরুল মোমেনিনের অনুচরদের মধ্য থেকে একজন তার কথার উত্তরে একটা দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে তাঁর প্রশংসা করলেন এবং আমিরুল মোমেনিনের নির্দেশ পালনে নিজের দৃঢ়তা ও তাঁর প্রতি নিজের আনুগত্য ও মান্যতার বিষয় বর্ণনা করলেন । এতে আমিরুল মোমেনিন বললেনঃ

যদি কোন লোক তার মনে আল্লাহর মহিমাকে সমুচ্চ রাখে এবং তার হৃদয়ে এ বিশ্বাস রাখে যে ,আল্লাহ মহামহিমান্বিত তখন অন্য সবকিছুকে ক্ষুদ্র জ্ঞান করা তার অধিকার হয়ে পড়ে (আল্লাহর মহত্ত্ব হৃদয়ে থাকার কারণে) । এরকম লোকের মধ্যে সে ব্যক্তির দায়িত্ব বেশি যার ওপর আল্লাহর নেয়ামত ও রহমত বেশি। কারণ কারো ওপর আল্লাহর নেয়ামত বৃদ্ধি পায় না যে পর্যন্ত তার ওপর আল্লাহর অধিকার বৃদ্ধি না পায়।

দ্বীনদার লোকদের মতে শাসকগণের নিকৃষ্টতম অবস্থা হলো তখন যখন তারা যশকে ভালোবাসে এবং তাদের কাজকে তারা গর্বের মনে করে। প্রকৃতপক্ষেই আমি এটাকে ঘৃণা করি যে ,তোমরা আমাকে প্রশংসা কর বা আমার সম্বন্ধে প্রশংসাত্মক উক্তি কর। মহান আল্লাহর দয়ায় আমি আমার প্রশংসাসূচক উক্তিতে দুঃখ বোধ করি। এমন কি মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বিষয়ক প্রশংসাসূচক উক্তি ভালোবাসা তো দূরের কথা আমি এসব শুনতেও বিরক্তি বোধ করি। কারণ মহিমান্বিত আল্লাহই এ সবের একমাত্র প্রাপক। সাধারণত ভালো কাজের জন্য প্রশংসায় মানুষ আনন্দ লাভ করে। কিন্তু আমি আল্লাহ ও তোমাদের প্রতি যে দায়িত্ব পালন করেছি। তার জন্য আমার প্রশংসা করো না। কারণ যেসব দায়িত্ব আমি এখনো পালন করতে পারিনি। সেগুলোর জন্য আমি ভীত - সন্ত্রস্ত । স্বৈরশাসককে যেভাবে সম্বোধন করা হয় আমাকে সেভাবে সম্বোধন করো না ।

কামনা - বাসনার অনুগত লোকদের যেভাবে এড়িয়ে চলতে হয় আমাকে সেভাবে এড়িয়ে চলো না। তোষামোদ করার জন্য আমার সাথে সাক্ষাৎ করো না। কখনো এরূপ মনে করো না যে ,আমার কাছে কোন বিষয়ে সত্য কথা বললে আমি খারাপ মনে করবো । কারণ সত্য কথা বললে বা ন্যায়সঙ্গত বিষয় নিয়ে হাজির হলে যদি কেউ বিরক্ত হয় তবে সে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে কাজ করতে পারে না। সুতরাং কখনো সত্য কথা বলা থেকে বিরত থেকো না অথবা কোন একটা ন্যায় বিষয় আমার সামনে উল্লেখ করতে দ্বিধা করোনা। কারণ আমি নিজেকে ভুলের উর্দ্ধে মনে করি না। আমার কর্মকান্ডে ভুল হতেও পারে ,কিন্তু ভুল এড়িয়ে যাবার জন্য আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেন এবং এ বিষয়ে তিনি আমার চেয়ে অধিক ক্ষমতাবান। নিশ্চয়ই ,আমি ও তোমরা সকলেই আল্লাহর অধিকারভুক্ত দাস এবং তিনি ব্যতীত আর কোন প্রভু নেই। তিনিই আমাদের মালিক। আমরা যেখানে ছিলাম তিনি আমাদেরকে সেখানে উন্নতির দিকে নিয়ে যান। তিনি আমাদের পথভ্রষ্টতাকে হেদায়েতে পরিণত করেছেন এবং অন্ধত্বের পর জ্ঞান - বুদ্ধি প্রদান করেছেন।

__________________

১। মানুষের নিষ্পাপ হওয়া আর ফেরেশতাদের নিষ্পাপ হওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের - একথা আলোচনার অপেক্ষা রাখে না। ফেরেশতাগণ পাপের কোন প্রণোদনার আওতাভুক্ত নয়। অপরপক্ষে মানুষ মানবীক দুর্বলতা ও কামনা - বাসনার আওতাভুক্ত। তবুও মানুষের মধ্যে এমন ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যাতে সে এসব দুর্বলতা ও কামনাকে প্রতিহত করতে পারে এবং যাতে সে এসবের কাছে পরাভূত না হয়ে পাপ থেকে নিজকে রক্ষা করতে পারে। মানুষের এ ক্ষমতাকেই নিষ্পাপতা বলা হয়। এ ক্ষমতাই রিপুকে প্রদমিত করে। আমি নিজেকে ভুলের উর্দ্ধে মনে করি না ” - আমিরুল মোমেনিন এ কথা দ্বারা মানবীক তাড়না ও কামনার বিষয় বুঝিয়েছেন এবং ভুল এড়িয়ে চলার জন্য আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেন ” - একথা দ্বারা মা ’ সুমতত্ত্ব বুঝিয়েছেন। একই সুর কুরআনেও পরিলক্ষিত হয় যখন ইউসুফ (আ.) বলেছিলেনঃ

আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না ,মানুষের মন অবশ্যই মন্দকর্ম প্রবণ ,কিন্তু সে নয় ,যার প্রতি আমার রব দয়া করেন । আমার প্রতিপারক অতি ক্ষমাশীল ,পরম দয়ালু (কুরআন - ১২:৫৩)

উক্ত আয়াতের যার প্রতি আমার রব দয়া করেন" - এ ব্যতিক্রমের কারণে ইউসুফের (আ.) মাসুমত্বের বিরুদ্ধে আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না ” - উক্তি যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো যায় না। তেমনি ভুল এড়িয়ে যেতে আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেন" - এ ব্যতিক্রমের ফলে আমিরুল মোমেনিনের বক্তব্যের প্রথম অংশ তার মা ’ সুমত্বের বিরুদ্ধে যুক্তি হিসেবে দাড় করানো যায় না। এর অন্যথা হলে নবীর মা ’ সুম হওয়া পরিত্যাজ্য হয়ে যাবে। একইভাবে এ খোৎবার শেষ বাক্য কোনক্রমেই এ অর্থে গ্রহণ করা যাবে না যে ,রেসালত প্রকাশের আগে তিনি প্রাক - ইসলামী বিশ্বাসে প্রভাবিত ছিলেন এবং অন্যান্য অবিশ্বাসীদের মতো তিনিও পথভ্রষ্ট ও অন্ধকারে ছিলেন। কারণ জন্মলগ্ন হতেই আমিরুল মোমেনিন রাসূল (সা.) কর্তৃক লালিত - পালিত হয়েছিলেন এবং রাসূলের প্রশিক্ষণ ও আখলাক তার হৃদয়ে প্রবিষ্ট হয়েছিল। কাজেই একথা কল্পনাও করা যায় না যে ,যিনি শিশুকাল থেকেই রাসূলের (সা.) পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন তিনি এক মুহুর্তের জন্য হেদায়েতের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন।

মাসুদী লিখেছেনঃ

আমিরুল মোমেনিন কখনো আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্যে বিশ্বাস করেননি । এতে তাঁর বেলায় ইসলাম গ্রহণের প্রশ্নই উঠতে পারে না । যারা অন্য বিশ্বাস ত্যাগ করে ইসলামে প্রবেশ করেছে তাদের ক্ষেত্রে ইসলাম গ্রহণ ” বিষয়টি প্রযোজ্য । জীবনের প্রারম্ভ থেকেই তিনি রাসূলের (সা.) সকল কর্মকাণ্ড অনুসরণ করেছিলেন ,তাঁর পাশে থেকে তাঁকে উৎসাহ দিয়েছিলেন এবং রাসূলের (সা.) জীবৎকালে তাঁর সহায়তায় সদা প্রস্তৃত ছিলেন। (২য় খণ্ড ,পৃঃ ৩)

ইবনে আবিল হাদীদ লিখেছেনঃ

এখানে আমিরুল মোমেনিন। তাঁর নিজের প্রতি ইঙ্গিত করেননি । কারণ তিনি কখনো অবিশ্বাসী ছিলেন না যাতে তাঁর ইসলাম গ্রহণের প্রশ্ন উঠতে পারে । যাদের তিনি সম্বোধন করেছিলেন এসব কথায় তিনি তাদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। (১১শ খণ্ড ,পৃঃ ১০৮) ।