নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা0%

নাহজ আল-বালাঘা লেখক:
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ: হযরত আলী (আ.)

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক: আশ-শরীফ আর-রাজী
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ:

ভিজিট: 119888
ডাউনলোড: 7295

নাহজ আল-বালাঘা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 48 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 119888 / ডাউনলোড: 7295
সাইজ সাইজ সাইজ
নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বাংলা

রাসূলের (সা.) ‘জ্ঞান নগরীর দ্বার’ আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব ছিলেন তত্ত্বজ্ঞানী, দার্শনিক, সুলেখক ও বাগ্মী। আলঙ্কারিক শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ও নৈপুন্য অসাধারণ। তিনি নবুওয়াতী জ্ঞান ভান্ডার হতে সরাসরি জ্ঞান আহরণ করেন এবং সাহাবাদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী পন্ডিত ছিলেন। এতে কারো দ্বিমত নেই। আরবী কাব্যে ও সাহিত্যে তার অনন্যসাধারণ অবদান ছিল। খেলাফত পরিচালনা কালে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ (খোৎবা) দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকগণকে প্রশাসনিক বিষয়ে উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে পত্র লিখেছিলেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মানুষের অনেক প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছিলেন। তার এসব বাণী কেউকেউ লিখে রেখেছিল, কেউ কেউ মনে রেখেছিল, আবার কেউ কেউ তাদের লিখিত পুস্তকে উদ্ধৃত করেছিল। মোটকথা তার অমূল্য বাণীসমূহ মানুষের কাছে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ছিল।

আশ-শরীফ আর-রাজী আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিবের ভাষণসমূহ (খোৎবা), পত্রাবলী, নির্দেশাবলী ও উক্তিসমূহ সংগ্রহ করে “নাহজ আল-বালঘা” নামক গ্রন্থটি সঙ্কলন করেন।

খোৎবা - ২২২

اجتناب الظلّم

وَ اَللَّهِ لَأَنْ أَبِيتَ عَلَى حَسَكِ اَلسَّعْدَانِ مُسَهَّداً، أَوْ أُجَرَّ فِي اَلْأَغْلاَلِ مُصَفَّداً، أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَلْقَى اَللَّهَ وَ رَسُولَهُ يَوْمَ اَلْقِيَامَةِ ظَالِماً لِبَعْضِ اَلْعِبَادِ، وَ غَاصِباً لِشَيْ‏ءٍ مِنَ اَلْحُطَامِ، وَ كَيْفَ أَظْلِمُ أَحَداً لِنَفْسٍ يُسْرِعُ إِلَى اَلْبِلَى قُفُولُهَا، وَ يَطُولُ فِي اَلثَّرَى حُلُولُهَا؟!

وَ اَللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُ عَقِيلاً وَ قَدْ أَمْلَقَ حَتَّى اِسْتَمَاحَنِي مِنْ بُرِّكُمْ صَاعاً، وَ رَأَيْتُ صِبْيَانَهُ شُعْثَ اَلشُّعُورِ، غُبْرَ اَلْأَلْوَانِ، مِنْ فَقْرِهِمْ، كَأَنَّمَا سُوِّدَتْ وُجُوهُهُمْ بِالْعِظْلِمِ، وَ عَاوَدَنِي مُؤَكِّداً. وَ كَرَّرَ عَلَيَّ اَلْقَوْلَ مُرَدِّداً، فَأَصْغَيْتُ إِلَيْهِ سَمْعِي، فَظَنَّ أَنِّي أَبِيعُهُ دِينِي، وَ أَتَّبِعُ قِيَادَهُ مُفَارِقاً طَرِيقَتِي، فَأَحْمَيْتُ لَهُ حَدِيدَةً، ثُمَّ أَدْنَيْتُهَا مِنْ جِسْمِهِ لِيَعْتَبِرَ بِهَا، فَضَجَّ ضَجِيجَ ذِي دَنَفٍ مِنْ أَلَمِهَا، وَ كَادَ أَنْ يَحْتَرِقَ(یخرق) مِنْ مِيسَمِهَا، فَقُلْتُ لَهُ: ثَكِلَتْكَ اَلثَّوَاكِلُ، يَا عَقِيلُ! أَ تَئِنُّ مِنْ حَدِيدَةٍ أَحْمَاهَا إِنْسَانُهَا لِلَعِبِهِ، وَ تَجُرُّنِي إِلَى نَارٍ سَجَرَهَا جَبَّارُهَا لِغَضَبِهِ! أَ تَئِنُّ مِنَ اَلْأَذَى وَ لاَ أَئِنُّ مِنْ لَظَى؟!

وَ أَعْجَبُ مِنْ ذَلِكَ طَارِقٌ طَرَقَنَا بِمَلْفُوفَةٍ فِي وِعَائِهَا، وَ مَعْجُونَةٍ شَنِئْتُهَا، كَأَنَّمَا عُجِنَتْ بِرِيقِ حَيَّةٍ أَوْ قَيْئِهَا، فَقُلْتُ: أَصِلَةٌ، أَمْ زَكَاةٌ، أَمْ صَدَقَةٌ؟ فَذَلِكَ مُحَرَّمٌ عَلَيْنَا أَهْلَ اَلْبَيْتِ! فَقَالَ:لاَ ذَا وَ لاَ ذَاكَ وَ لَكِنَّهَا هَدِيَّةٌ . فَقُلْتُ: هَبِلَتْكَ اَلْهَبُولُ! أَ عَنْ دِينِ اَللَّهِ أَتَيْتَنِي لِتَخْدَعَنِي؟ أَ مُخْتَبِطٌ أَنْتَ أَمْ ذُو جِنَّةٍ، أَمْ تَهْجُرُ؟ وَ اَللَّهِ لَوْ أُعْطِيتُ اَلْأَقَالِيمَ اَلسَّبْعَةَ بِمَا تَحْتَ أَفْلاَكِهَا، عَلَى أَنْ أَعْصِيَ اَللَّهَ فِي نَمْلَةٍ أَسْلُبُهَا جُلْبَ شَعِيرَةٍ مَا فَعَلْتُهُ، وَ إِنَّ دُنْيَاكُمْ عِنْدِي لَأَهْوَنُ مِنْ وَرَقَةٍ فِي فَمِ جَرَادَةٍ تَقْضَمُهَا. مَا لِعَلِيٍّ وَ لِنَعِيمٍ يَفْنَى، وَ لَذَّةٍ لاَ تَبْقَى! نَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ سُبَاتِ اَلْعَقْلِ، وَ قُبْحِ اَلزَّلَلِ. وَ بِهِ نَسْتَعِينُ.

জুলুম ও তসরুফ থেকে দূরে থাকা সম্বন্ধে

আল্লাহর কসম ,বিচার দিনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সম্মুখে মানুষের প্রতি অত্যাচারী অথবা দুনিয়ার সম্পদ থেকে কোন কিছু অন্যায়ভাবে পরিগ্রহকারী হিসাবে উপস্থিত হবার ভয়ে আমি সারারাত জাগরিত থেকে মাদান ’ (এক প্রকার লম্বা ধারালো কাঁটা) কাঁটার যন্ত্রণা অথবা শিকলে বাধা বন্দির মতো যন্ত্রণা ভোগ করি। যে জীবন ধ্বংসের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে মাটির নিচে পড়ে থাকবে সে জীবনের জন্য কী করে আমি কাউকে অত্যাচার করতে পারি ?

আল্লাহর কসম ,আমার ভ্রাতা আকীলকে অতি দুঃখ - কষ্টে দিনাতিপাত করতে আমি দেখেছি। সে আমার কাছে এসে তোমাদের অংশ থেকে এক সা ’ (প্রায় তিন কিলোগ্রাম) গম চেয়েছিল। আমি তার সন্তানগণকে ক্ষুধার তাড়নায় আলুথালু চুলে ও ধূলিধূসর চেহারায় দেখেছিলাম যেন তাদের মুখ নীল দ্বারা কালো করা হয়েছিল। সে কয়েকবার আমার কাছে এসে একই অনুরোধ করেছিল। আমি তার দুঃখকষ্টের কথা শুনেছিলাম। সে মনে করেছিলো আমি আমার ইমান তার কাছে বিক্রি করে আমার নিজের পথ পরিত্যাগ করে তার পথ অনুসরণ করবো। আমি এক টুকরো লোহা উত্তপ্ত করলাম এবং সেটা তার শরীরের কাছে রাখলাম যেন সে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তারপর দীর্ঘদিনের রোগাক্রান্ত লোক যেভাবে বেদনায় চিৎকার দেয় সে সেভাবে চিৎকার করে উঠলো। এ সময় লোহার উত্তাপে সে প্রায় পুড়ে যাচ্ছিলো। তখন আমি তাকে বললাম , রোদনকারিনী নারী তোমার জন্য রোদন করুক ,হে আকীল! এক টুকরো উত্তপ্ত লোহার গরমে তুমি চিৎকার করছে যা আমি কৌতুক করার জন্য করেছি ;আর তুমি আমাকে এমন আগুনের দিকে তাড়িত করতে চাও যা সর্বশক্তিমান আল্লাহ তার রোষের কারণে তৈরি করেছেন। ক্ষুধার যন্ত্রণায় তুমি কাঁদতে পারে ,কিন্তু অগ্নিশিখার যন্ত্রণায় আমি কাঁদতে পারবো না। ”

এটা অপেক্ষা আরো আশ্চর্যজনক একটা ঘটনা হলো - এক রাতে একজন লোক (কথিত আছে যে ,এ লোক হলো আশাছ ইবনে কায়েস) এক ফ্লাকস মধুর পেষ্টি নিয়ে আমাদের কাছে এসেছিলো। এসব জিনিস আমি এমনভাবে ঘৃণা করতাম যে ,এগুলো আমার কাছে সরীসৃপের লালা বা বমি মনে হতো। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম এটা কি পুরষ্কার ,নাকি জাকাত ,নাকি দান ;কারণ এগুলো আহলে বাইতের জন্য নিষিদ্ধ। সে বললো এটা ওগুলোর কিছুই নয় - এটা একটা উপঢৌকন। তারপর আমি বললাম , নিঃসন্তান নারী তোমার জন্য রোদন করুক ,তুমি কি আমাকে আল্লাহর দ্বীন হতে সরিয়ে নিতে এসেছো ,,নাকি তুমি একটা পাগল ,নাকি তোমাকে জিনে ধরেছে ,নাকি তুমি জ্ঞানহীন হয়ে কথা বলছো ?

আল্লাহর কসম ,আমাকে সপ্ত আকাশ ও জমিনের রাজত্ব দিলেও আমি পিপীলিকার মুখে বাহিত যবের দানা পরিমাণও আল্লাহর অবাধ্য হতে পারবো না। তোমাদের দুনিয়া আমার কাছে একটা পতঙ্গের মুখে চর্বিত পাতা অপেক্ষাও মূল্যহীন। যে সম্পদের কোন স্থায়ীত্ব নেই এবং যে আনন্দ - উপভোগ সহসাই চলে যাবে তা দিয়ে আলী কী করবে ? প্রজ্ঞা থেকে স্লিপ করা ও ভুলের কুফল বিষয়ে আমরা আল্লাহর নিরাপত্তা প্রার্থনা করি এবং আমরা তার নেয়ামত ও রহমত যাচনা করি।

খোৎবা - ২২৩

الاستعانة بالله

اَللَّهُمَّ صُنْ وَجْهِي بِالْيَسَارِ، وَ لاَ تَبْذُلْ جَاهِيَ بِالْإِقْتَارِ، فَأَسْتَرْزِقَ طَالِبِي رِزْقِكَ، وَ أَسْتَعْطِفَ شِرَارَ خَلْقِكَ، وَ أُبْتَلَى بِحَمْدِ مَنْ أَعْطَانِي، وَ أُفْتَتَنَ بِذَمِّ مَنْ مَنَعَنِي، وَ أَنْتَ مِنْ وَرَاءِ ذَلِكَ كُلِّهِ وَلِيُّ اَلْإِعْطَاءِ وَ اَلْمَنْعِ؛«إِنَّكَ عَلى‏ كُلِّ شَيْ‏ءٍ قَدِيرٌ» .

আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা

হে আমার আল্লাহ ,আমার মুখমণ্ডলে জীবনের সহজ - সরলতা ফুটিয়ে তোল এবং আমার মুখায়বে দুঃখ - কষ্ট ও দুর্দশার অমর্যাদাকর অবস্থার ছায়া ফেলো না পাছে যারা তোমার কাছে জীবিকা যাচনা করে তাদের কাছে আমাকে জীবিকা চাইতে হয়। আমাকে যেন তোমার খারাপ বান্দাদের অনুগ্রহ চাইতে না হয়। আমি নিজে যেন তাদের প্রশংসায় ব্যস্ত না থাকি যারা আমাকে দেয় অথবা তাদেরকে গালি না দেই যারা আমাকে দেয় না। অবশ্য এসব কিছুর পিছনে তুমিই দেয়া বা না - দেয়ার মালিক।

নিশ্চয়ই ,তুমি সকল কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান (কুরআন - ৬৬:৪) ।

খোৎবা - ২২৪

دَارٌ بِالْبَلاَءِ مَحْفُوفَةٌ، وَ بِالْغَدْرِ مَعْرُوفَةٌ، لاَ تَدُومُ أَحْوَالُهَا، وَ لاَ يَسْلَمُ نُزَّالُهَا. أَحْوَالٌ مُخْتَلِفَةٌ، وَ تَارَاتٌ مُتَصَرِّفَةٌ، اَلْعَيْشُ فِيهَا مَذْمُومٌ، وَ اَلْأَمَانُ مِنْهَا مَعْدُومٌ، وَ إِنَّمَا أَهْلُهَا فِيهَا أَغْرَاضٌ مُسْتَهْدَفَةٌ، تَرْمِيهِمْ بِسِهَامِهَا، وَ تُفْنِيهِمْ بِحِمَامِهَا.

وَ اِعْلَمُوا عِبَادَ اَللَّهِ أَنَّكُمْ وَ مَا أَنْتُمْ فِيهِ مِنْ هَذِهِ اَلدُّنْيَا عَلَى سَبِيلِ مَنْ قَدْ مَضَى قَبْلَكُمْ، مِمَّنْ كَانَ أَطْوَلَ مِنْكُمْ أَعْمَاراً، وَ أَعْمَرَ دِيَاراً، وَ أَبْعَدَ آثَاراً؛ أَصْبَحَتْ أَصْوَاتُهُمْ هَامِدَةً، وَ رِيَاحُهُمْ رَاكِدَةً، وَ أَجْسَادُهُمْ بَالِيَةً، وَ دِيَارُهُمْ خَالِيَةً، وَ آثَارُهُمْ عَافِيَةً. فَاسْتَبْدَلُوا بِالْقُصُورِ اَلْمَشَيَّدَةِ، وَ اَلنَّمَارِقِ اَلْمُمَهَّدَةِ، اَلصُّخُورَ وَ اَلْأَحْجَارَ اَلْمُسَنَّدَةَ، وَ اَلْقُبُورَ اَللاَّطِئَةَ اَلْمُلْحَدَةَ، اَلَّتِي قَدْ بُنِيَ عَلَى اَلْخَرَابِ فِنَاؤُهَا، وَ شُيِّدَ بِالتُّرَابِ بِنَاؤُهَا؛ فَمَحَلُّهَا مُقْتَرِبٌ، وَ سَاكِنُهَا مُغْتَرِبٌ، بَيْنَ أَهْلِ مَحَلَّةٍ مُوحِشِينَ، وَ أَهْلِ فَرَاغٍ مُتَشَاغِلِينَ، لاَ يَسْتَأْنِسُونَ بِالْأَوْطَانِ، وَ لاَ يَتَوَاصَلُونَ تَوَاصُلَ اَلْجِيرَانِ، عَلَى مَا بَيْنَهُمْ مِنْ قُرْبِ اَلْجِوَارِ، وَ دُنُوِّ اَلدَّارِ. وَ كَيْفَ يَكُونُ بَيْنَهُمْ تَزَاوُرٌ، وَ قَدْ طَحَنَهُمْ بِكَلْكَلِهِ اَلْبِلَى، وَ أَكَلَتْهُمُ اَلْجَنَادِلُ وَ اَلثَّرَى! وَ كَأَنْ قَدْ صِرْتُمْ إِلَى مَا صَارُوا إِلَيْهِ وَ اِرْتَهَنَكُمْ ذَلِكَ اَلْمَضْجَعُ وَ ضَمَّكُمْ ذَلِكَ اَلْمُسْتَوْدَعُ. فَكَيْفَ بِكُمْ لَوْ تَنَاهَتْ بِكُمُ اَلْأُمُورُ، وَ بُعْثِرَتِ اَلْقُبُورُ:( هُنالِكَ تَبْلُوا كُلُّ نَفْسٍ ما أَسْلَفَتْ وَ رُدُّوا إِلَى اَللَّهِ مَوْلاهُمُ اَلْحَقِّ وَ ضَلَّ عَنْهُمْ ما كانُوا يَفْتَرُونَ ) .

দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ীত্ব ও কবরের অসহায়ত্ব সম্বন্ধে

এ দুনিয়া একটা বিপদ - ঘেরা আবাসস্থল এবং এটা প্রতারণার জন্য সুপরিচিত। দুনিয়ার অবস্থার কোন স্থায়ীত্ব নেই এবং এর অধিবাসীগণ নিরাপদ থাকে না। এর অবস্থা স্থির থাকে না এবং এর পথসমূহ সর্বদা পরিবর্তনশীল। জীবন এতে নিন্দনীয় হয় এবং এতে নিরাপত্তার কোন অস্তিত্ব নেই। তবুও মানুষ দুনিয়ার লক্ষ্যবস্তু। দুনিয়া মানুষকে এর তীর দ্বারা আঘাত করে এবং মৃত্যুর মাধ্যমে তাদেরকে ধ্বংস করে ।

হে আল্লাহর বান্দাগণ ,জেনে রাখো ,তোমরা এবং এ দুনিয়াতে তোমাদের যা কিছু আছে - সব কিছুই সে দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে যে দিকে তোমাদের পূর্ববর্তীগণ চলে গেছে। তারা দীর্ঘায়ু পেয়েছিল ,তাদের ঘর জনাকীর্ণ ছিল এবং তাদের চিহ্ন বেশি স্থায়ী ছিল। তাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয়ে গেছে ,তাদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে ,তাদের দেহ পঁচে গেছে ,তাদের ঘর শূন্য হয়ে গেছে এবং তাদের চিহ্নও মুছে গেছে। তাদের জাকজমকপূর্ণ স্থান ও বিস্তৃত গালিচা পাথরে পরিণত হয়ে গেছে। তারা এখন সংকীর্ণ গর্ত আকারের কবরে শুয়ে আছে যার ভিত্তি ধ্বংসের ওপর এবং নির্মাণ মাটি দ্বারা করা হয়েছে। এ নির্মাণ এত সংকীর্ণ যে এর ছাদ তাদেরকে প্রায় ছুয়ে ফেলে এবং যারা এতে স্থায়ী বাসা বেঁধেছে তারা যেন দূরে সরিয়ে দেয়া অপরিচিত ব্যক্তি। তারা নিজেদের এলাকার জনগণের একজন কিন্তু কবরে নিতান্ত একাকী। তারা সকল কাজ থেকে মুক্ত কিন্তু এখনো কর্মে জড়িত। জন্মভূমির সাথে তাদের কোন সংশ্রব নেই এবং প্রতিবেশীর মতো তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে না। যদিও তারা বসবাসের দিক থেকে একে অপরের খুব নিকটবর্তী। কী করেই বা তারা একে অপরের সাথে সাক্ষাত করবে ,যেখানে ধ্বংস তার বুক দিয়ে চেপে ধরে তাদেরকে ধরাশায়ী করে রেখেছে এবং পাথর ও মাটি তাদেরকে খেয়ে ফেলেছে।

তারা যেখানে গেছে তোমাদেরকেও সেখানে যেতে হবে। যে নিদ্রা তাদেরকে আচ্ছন্ন করেছে সে নিদ্রায় তোমাদেরকেও ধরবে। যতটুকু স্থান তাদের জন্য নির্ধারিত হয়েছে ততটুকু তোমাদের জন্যও নির্ধারিত। তখন তোমাদের অবস্থা কী হবে যখন তোমাদের আমলসমূহ তাদের কাছ পর্যন্ত পৌছবে এবং কবরসমূহ ওলট - পালট হয়ে হবে ?

সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি পূর্ব - কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত হবে এবং তাদেরকে তাদের প্রকৃত প্রভু আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে আনা হবে এবং তাদের উদ্ভাবিত মিথ্যাসমূহ তাদের কাছ থেকে অন্তর্হিত হবে (কুরআন - ১০ :৩০)

খোৎবা - ২২৫

احد أدعیة الامام علیعليه‌السلام

اَللَّهُمَّ إِنَّكَ آنَسُ اَلْآنِسِينَ لِأَوْلِيَائِكَ، وَ أَحْضَرُهُمْ بِالْكِفَايَةِ لِلْمُتَوَكِّلِينَ عَلَيْكَ. تُشَاهِدُهُمْ فِي سَرَائِرِهِمْ، وَ تَطَّلِعُ عَلَيْهِمْ فِي ضَمَائِرِهِمْ، وَ تَعْلَمُ مَبْلَغَ بَصَائِرِهِمْ. فَأَسْرَارُهُمْ لَكَ مَكْشُوفَةٌ، وَ قُلُوبُهُمْ إِلَيْكَ مَلْهُوفَةٌ. إِنْ أَوْحَشَتْهُمُ اَلْغُرْبَةُ آنَسَهُمْ ذِكْرُكَ، وَ إِنْ صُبَّتْ عَلَيْهِمُ اَلْمَصَائِبُ لَجَئُوا إِلَى اَلاِسْتِجَارَةِ(الاستخارة) بِكَ، عِلْماً بِأَنَّ أَزِمَّةَ اَلْأُمُورِ بِيَدِكَ، وَ مَصَادِرَهَا عَنْ قَضَائِكَ.

اَللَّهُمَّ إِنْ فَهِهْتُ عَنْ مَسْأَلَتِي، أَوْ عَمِيتُ(عمهت) عَنْ طِلْبَتِي، فَدُلَّنِي عَلَى مَصَالِحِي، وَ خُذْ بِقَلْبِي إِلَى مَرَاشِدِي، فَلَيْسَ ذَلِكَ بِنُكْرٍ مِنْ هِدَايَاتِكَ، وَ لاَ بِبِدْعٍ مِنْ كِفَايَاتِكَ. اَللَّهُمَّ اِحْمِلْنِي عَلَى عَفْوِكَ، وَ لاَ تَحْمِلْنِي عَلَى عَدْلِكَ.

ইমাম আলীর (আ.) একটি মোনাজাত

হে আমার আল্লাহ ,তুমি তোমার প্রেমিকদের খুবই নিকটবর্তী এবং যারা তোমাকে বিশ্বাস করে তাদেরকে সহায়তা করতে তুমি সদা প্রস্তৃত। মানুষ যা গোপন করে তা তুমি দেখ ,তাদের মনের মধ্যে যা কিছু আছে তা তুমি জান এবং তাদের জ্ঞান - বুদ্ধির বহর সম্পর্কেও তুমি অবহিত। কাজেই তাদের গুপ্ত বিষয় তোমার কাছে প্রকাশ্য এবং তাদের হৃদয় তোমার প্রতি আকুল। যদি একাকীত্বে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়তো তবে তোমার জেকেরে তারা প্রবোধ পেতো। তাদের ওপর দুঃখ - দুর্দশা আপতিত হলে তারা তোমার কাছে নিরাপত্তা যাচনা করে। কারণ তারা জানে সকল কর্মকান্ডের লাগাম তোমার হাতে এবং তাদের নড়াচড়া পর্যন্ত তোমার আদেশের ওপর নির্ভরশীল।

হে আমার আল্লাহ ,যদি আমি আমার মনের আকুতি প্রকাশে অক্ষম হই অথবা আমার অভাবসমূহ তোমাকে দেখাতে না পারি। তবে তুমি আমাকে মঙ্গলের দিকে পরিচালিত করো এবং আমার হৃদয়কে সঠিক লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যেয়ো। এটা তোমার হেদায়েতের পরিপন্থী নয় এবং তোমার সমর্থিত পথের পরিপন্থী নতুন কিছু নয়।

হে আমার আল্লাহ ,আমার প্রতি তোমার দ্বার অবারিত রেখো এবং আমার প্রতি ক্ষমাসুন্দর আচরণ করো। আমার প্রতি তুমি বিচারকসুলভ আচরণ করো না।

খোৎবা - ২২৬

خصائص سلمان الفارسی

لِلَّهِ بَلاَءُ (بلاد) فُلاَنٍ، فَلَقَدْ قَوَّمَ اَلْأَوَدَ، وَ دَاوَى اَلْعَمَدَ، وَ أَقَامَ اَلسُّنَّةَ، وَ خَلَّفَ اَلْفِتْنَةَ! ذَهَبَ نَقِيَّ اَلثَّوْبِ، قَلِيلَ اَلْعَيْبِ، أَصَابَ خَيْرَهَا، وَ سَبَقَ شَرَّهَا. أَدَّى إِلَى اَللَّهِ طَاعَتَهُ، وَ اِتَّقَاهُ بِحَقِّهِ. رَحَلَ وَ تَرَكَهُمْ فِي طُرُقٍ مُتَشَعِّبَةٍ لاَ يَهْتَدِي بِهَا اَلضَّالُّ، وَ لاَ يَسْتَيْقِنُ اَلْمُهْتَدِي.

হযরত সালমান ফারসী সম্পর্কে

আল্লাহ ,অমুক অমুক ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করুন ,যারা বক্রকে সোজা করেছে ,রোগের চিকিৎসা করেছে ,ফেতনা পরিহার করেছে এবং সুন্নাহকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সে এ পৃথিবী থেকে নির্দাগ কাপড় ও অতি সামান্য দোষত্রুটি নিয়ে প্রস্থান করেছিলো। সে এ দুনিয়ার সত্য - সুন্দর - মঙ্গলকে আঁকড়ে ধরেছিলো এবং দুনিয়ার অকল্যাণ ও পাপ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পেরেছিলো। সে আল্লাহর আনুগত্য করেছিল এবং তাকে যতটুকু ভয় করা দরকার ততটুকু ভয় করেছিলো। সে চলে গেল। কিন্তু বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত পথে মানুষকে রেখে গেছে যাতে পথভ্রষ্টগণ হেদায়েতও পাচ্ছে না এবং হেদায়েত প্রাপ্তগণ কোন নিশ্চয়তা পাচ্ছে না ।

___________________

১। ইবনে আবিল হাদীদ (১৪শ খণ্ড ,পৃঃ ৩ - ৪) লিখেছেন যে ,আমিরুল মোমেনিন এ খোৎবায় দ্বিতীয় খলিফা উমরকে ইঙ্গিত করেছেন এবং তার প্রশংসা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে ,শরীফ রাজীর স্বহস্তে লিখিত নাহজ আল - বালাঘার পাণ্ডুলিপিতে অমুক অমুক ' শব্দের নিচে উমর ” শব্দটি লেখা আছে। সবচেয়ে পুরানো পাণ্ডুলিপি এখনো রয়েছে। এ পাণ্ডুলিপিতে অমুক অমুক ' শব্দের নিচে উমর ” শব্দটি লেখা আছে বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শরীফ রাজীর সমসাময়িক অনেকেই নাহজ আল - বালাঘার টীকা লিখেছেন। তাদের কেউ এমন কথা লিখেননি যে , অমুক অমুক ” শব্দের নিচে উমর ” শব্দটি ছিল। হাদীদ ব্যতীত আর কোন লেখক বা ঐতিহাসিক একথা বলেনি। শরীফ রাজীর দুইশত পঞ্চাশ বছর পরে হাদীদ কোথায় কিভাবে রাজীর স্বহস্তে লিখিত পাণ্ডুলিপি দেখতে পেয়েছে তার কোন উল্লেখ তিনি করেননি। হাদীদের কথা মেনে নিয়ে যদি ধরা হয় যে , অমুক অমুক ' শব্দের নিচে রাজীর হাতের লেখায় উমর ” শব্দটি লেখা ছিল তবুও এটা রাজীর একান্ত নিজস্ব টীকা ব্যতীত অন্য কিছু নয়। অনেক খোৎবাতেই রাজী এ রকম টীকা লিখেছেন। এ রকম টীকাকে মূল খোৎবা বলে গ্রহণ করা যায় না।

শরীফ রাজীর সমসাময়িক আল্লামা আলী ইবনে নাসির নাহজ আল - বালাঘার বিস্তারিত টীকা লিখে যে গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন তার নাম আলাম নাহজ আল - বালাঘা। ” এ খোৎবাটি সম্পর্কে উক্ত টীকা গ্রন্থে তিনি লিখেছেনঃ

আমিরুল মোমেনিন তাঁর নিজের একজন অনুচরের সদাচরণে তাঁর প্রশংসা করে এ খোৎবা দিয়েছিলেন । আল্লাহর রাসূলের ইনতিকালের পর যে সব বিপদাপদ ও দুর্যোগে আপতিত হয়েছিল তার পূর্বেই সে মারা গেছে ।

আল্লামা কুতবুদ্দিন আর - রাওয়ান্দি (মৃত্যু ৫৭৩। হিঃ) তার লিখিত নাহজ আল - বালাঘার টীকা গ্রন্থে নাসিরের - উপরোক্ত মতের সমর্থন করেন।

বাহারানী (৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৯৭) শারহে নাহজ আল - বালাঘা গ্রন্থে লিখেছেনঃ

আমিরুল মোমেনিন এ খোৎবায় তাঁর নিজের একজন অনুচরকে উদ্দেশ্য করেছিলেন যিনি আল্লাহর রাসূলের ইনতিকালের সাথে সাথে যে সব ফেতনা ও অনৈক্য দেখা দিয়েছিল তার পূর্বেই মারা গেছেন ।

ইবনে আবিল হাদীদ তার গ্রন্থে বাহারানীর উপরোক্ত মত সমর্থনও করেছেন (১৪শ খণ্ড ,পৃঃ ৪) । আল্লামা আলহাজ্ব মীর্জা হাবিবুল্লাহ আল - খুই (১৪শ খণ্ড ,পৃঃ ৩৭৪ - ৩৭৫) মত প্রকাশ করেন যে ,এ খোৎবায় আমিরুল মোমেনিন যার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলেছিলেন তিনি হলেন মালিক ইবনে হারিছ। আল আশতার। মালিক নিহত হবার পর মুসলিম উম্মাহর যে অবস্থা হয়েছিল এ খোৎবায় তাই বর্ণিত হয়েছে। জনাব খুই আরো উল্লেখ করেনঃ

আমিরুল মোমেনিন বিভিন্ন সময়ে মালিকের প্রশংসা করতেন । মালিককে মিশরের গভর্ণর নিয়োগ করে মিশরের জনগণের কাছে যে পত্র লিখেছিলেন তাতে তিনি বারংবার মালিকের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন । মালিক নিহত হবার সংবাদ যখন আমিরুল মোমেনিন পেয়েছিলেন তখন তিনি বললেন , মালিক! কে এ মালিক ? যদি মালিক পাথর হতো তাহলে সো শক্ত ও কঠিন পাথর । যদি মালিক পাহাড় হতো তবে সে মহান পাহাড় যার কোন তুলনা হয় না । মালিকের মতো আরেক জনকে প্রসব করতে নারীগণ বন্ধ্যা হয়ে গেছে | কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায়। আমিরুল মোমেনিন বলেছিলেন , আমি রাসূলের কাছে যেরূপ ছিলাম মালিক আমার কাছে তদ্রূপ। সুতরাং আমিরুল মোমেনিনের কাছে যার মর্যাদা এত সমুচ্চ তার সম্পর্কেই এ খোৎবার উক্তিগুলো যথার্থ।

যদি খোৎবাটি খলিফা উমর সম্পর্কে বলা হতো। তবে তা ইতিহাসে উল্লেখ থাকতো ,মানুষের তা জানা থাকতো এবং হাদীদও সূত্র উল্লেখ করতে পারতো। কিন্তু একথার সত্যতা সম্পর্কে কোন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। শুধুমাত্র কয়েকটি বানোয়াট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ খোৎবায় দুটো সর্বনাম ব্যবহৃত হয়েছে - খায়রাহা ’ ও শাররাহা ’ । হাদীদ এ দুটো সর্বনামকে খেলাফতের সর্বনাম হিসাবে উল্লেখ করে লিখেছেন যে ,এ শব্দদ্বয় শুধু তার প্রতি প্রযোজ্য যিনি শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকেন। কারণ শাসন ক্ষমতা ছাড়া সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত করা ও বিদআত প্রতিহত করা অসম্ভব। হাদীদের এসব উক্তির সমর্থনে কোন ঐতিহাসিক সত্যতা নেই এবং যুক্তিতর্কেও এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। মানুষের স্বার্থসংরক্ষণ ও সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত করার পূর্বশর্ত হিসাবে তিনি শাসন ক্ষমতার কথা উল্লেখ করেছেন। তার এ কথা দ্বারা বুঝা যায় যে ,কল্যাণের পথে যাওয়া ও পাপ থেকে সরে থাকার আদেশ দানের ক্ষমতা শাসনকর্তা ছাড়া আর কারো নেই। অথচ ,আল্লাহ শাসন ক্ষমতার শর্ত ছাড়াই একদল লোককে এ দায়িত্ব অর্পণ করেছেনঃ

তোমাদের মধ্যে এমন একদল হোক যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎকার্যের আদেশ দেবে ও অসৎকার্যে নিষেধ করবে ;এরাই সফলকাম (কুরআন - ৩:১০৪) ।

একইভাবে রাসূল (সা.) বলেছিলেনঃ

যে পর্যন্ত মানুষ ভালো কাজে আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ করতে থাকবে এবং দ্বীনে ও তাকওয়ায় একে অপরকে সাহায্য করতে থাকবে সে পর্যন্ত তারা ন্যায়ের পথে থাকবে । আমিরুল মোমেনিনও বলেছিলেনঃ

আল্লাহর তৌহিদ ও সুন্নাহয় প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং এ দুটি প্রদীপ সর্বদা প্রজ্বলিত রেখো ।

এসব বাণীতে এমন কোন ইঙ্গিত নেই যে শাসন ক্ষমতা ছাড়া এ দায়িত্ব পালন করা যাবে না। ঘটনা প্রবাহে দেখা গেছে যে ,শাসন ক্ষমতা ,কর্তৃত্ব ও সৈন্যবাহিনী থাকা সত্ত্বেও শাসক ও বাদশাহগণ ততটুকু অকল্যাণ প্রতিহত ও ধর্ম প্রচার করতে পারেনি যতটুকু পেরেছিল পূণ্যাত্মা অজ্ঞাত ব্যক্তিগণ তাদের সদাচরণ ও নৈতিক মূল্যবোধের ছাপ অন্যের হৃদয়ে ফেলে। তারা কখনো সেনাবাহিনীর সহায়তা গ্রহণ করেনি। এমনকি অভাব অনটন ছাড়া তাদের আর কোন অস্ত্রপাতিও ছিল না। একথা ঠিক যে ,শাসন ক্ষমতা মানুষের মাথা নোয়াতে পারে কিন্তু হৃদয় জয় করে ধর্মভাব সৃষ্টি করতে পারে না। ইতিহাসে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে ,অনেক শাসক ইসলামের বৈশিষ্ট্য বিনষ্ট করে দিয়েছিলো। দারিদ্র ও দুঃখ যাদের নিত্য সাথী এমন অসহায় পূণ্যাত্ম্যাগণের প্রচেষ্টায় ইসলামের অগ্রগতি ও অস্তিত্ব টিকে আছে।

যদি আমিরুল মোমেনিনের উক্তি শাসকের উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে। তবে তা সালমান আল - ফারিসীর মতো সাহাবির জন্য হওয়াই যুক্তিযুক্ত যিনি একটা প্রদেশের প্রধান ছিলেন এবং যার দাফনে যোগ দেয়ার জন্য আমিরুল মোমেনিন সুদূর মাদায়েনে গিয়েছিলেন। এটা যুক্তিসংগত যে ,আমিরুল মোমেনিন সালমানের দাফনের পর তার জীবন ও শাসন সম্বন্ধে প্রশংসা করে এ খোৎবা দিয়েছিলেন । আমিরুল মোমেনিন খলিফা উমর সম্পর্কে এ কথাগুলো বলেছিলেন এমন কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। বিশেষ করে উমর সম্পর্কে এমন একটা মোক্ষম উক্তি উমর প্রেমিকগণ ফলাও করে প্রচার না করে ছাড়তো না। যাহোক ইবনে আবিল হাদীদ তার অনুমানের ( Hypothesis) প্রমাণ হিসাবে ঐতিহাসিক আবুল ফিদার নিম্নোক্ত বর্ণনা উল্লেখ করেনঃ

মুঘিরা ইবনে শুবাহ থেকে বর্ণিত আছে যে ,খলিফা উমর মারা যাবার পর ইবনাহি আবি হাছমাহ কেঁদে কেঁদে বলেছিল , হে উমর ,তুমি সে ব্যক্তি যে বাকাকে সোজা করেছিলো ,পীড়া দূরীভূত করেছিলো ,ফেতনা ধ্বংস করেছিলো ,সুন্নাহ পুনুরুজ্জীবিত করেছিলো ,সততা রক্ষা করেছিলো এবং কোন পাপে না জড়িয়ে চলে গেছো । ফিদা আরো উল্লেখ করে যে ,মুঘিরা বলেছিলো , উমরকে দাফন করার পর আমি আলীর নিকট এসেছিলাম এবং উমর সম্পর্কে তার কাছে কিছু কথা শুনতে চেয়েছিলাম । তখন আলী তাঁর গোসল সেরে একখানা চাদরে নিজকে জড়িয়ে চুল ও দাড়ি বাড়ছিলেন । পরবর্তী খলিফা হওয়া সম্বন্ধে তার কোন সন্দেহ ছিল না । তিনি বললেন , আল্লাহর আশীর্বাদ উমরের ওপর বর্ষিত হোক । ইবনাহ আবি হাছমাহ সঠিকভাবেই বলেছে যে ,উমর খিলাফতের কল্যাণ উপভোগ করেছেন এবং এর অমঙ্গল থেকে নিরাপদ ছিলেন। আল্লাহর কসম ,সে (হাছমা) একথা নিজের থেকে বলেনি - এটা তাকে দিয়ে বালানো হয়েছে । (ফিদা ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২৭৬৩ হাদীদ ,১২শ খণ্ড ,পৃঃ ৫ ;কাছীর ,৭ম খণ্ড ,পৃ: ১৪০) ।

এ ঘটনার বর্ণনাকারী হলো মুঘিরা ইবনে শুবাহ যে উন্মে জামিলের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত ছিল। সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও উমর তাকে শাস্তি প্রদান করেনি। এছাড়াও ইতিহাস সাক্ষ্য বহন করে যে ,এ মুঘিরাই মুয়াবিয়ার নির্দেশে কুফায় আমিরুল মোমেনিনকে গালিগালাজ করেছিলো। এ রকম একজন বাজে লোকের কথার কতটুকু মূল্য থাকতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। বাস্তব অবস্থা বিশ্লেষণ করলেও মুঘিরার কথার অসাড়তা প্রমাণিত হয়। মুঘিরা বলেছিলো যে ,পরবর্তী খলিফা হবার বিষয়ে আমিরুল মোমেনিনের কোন সন্দেহ ছিল না। তার একথা বাস্তব অবস্থার বিপরীত। কিসের ভিত্তিতে সে একথা বলেছে তা উল্লেখ করেনি। বাস্তবে খেলাফত শুধু উসমানের জন্যই নিশ্চিত ছিলো। কারণ খলিফা মনোনিয়ের জন্য উমর যে কমিটি গঠন করেছিল তার প্রধান সদস্য আবদুর রহমান ইবনে আউফ আমিরুল মোমেনিনকে বলেছিলো , হে আলী আপনি নিজের বিরুদ্ধে অবস্থার সৃষ্টি করবেন না। আমি মানুষের সাথে আলাপ করে দেখেছি তারা সকলেই উসমানকে চায় ” (ফিদা ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৬৬ ;তাবারী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২৭৮৬ ,আছীর ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৭১) ।

খলিফা মনোনয়নের জন্য উমর কর্তৃক গঠিত কমিটি দেখেই আমিরুল মোমেনিন নিশ্চিতভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে ,তিনি খেলাফত পাবেন না ,যা ৩নং খোৎবার টীকায় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। তাই তিনি তার চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে বলেছিলেন যে ,উসমান ছাড়া আর কাউকেও খেলাফত দেয়া হবে না। কারণ এ বিষয়ে সকল ক্ষমতা আবদুর রহমান ইবনে আউফ ও সাদ ইবনে ওয়াক্কাসকে দেয়া হয়েছে। আবদুর রহমান হলো উসমানের ভগ্নিপতি এবং সাদ তার আত্মীয় ও গোত্রদ্ভূত। এ দুজন যে কোন উপায়ে উসমানকে খেলাফত দেবেই। এখানে একটা প্রশ্ন ওঠে যে ,উমর নিজেই যখন উসমানের খেলাফত পাবার পথ পাকাপোক্ত করে গেছেন সেখানে মুঘিরা কী জন্য উমর সম্পর্কে আমিরুল মোমেনিনের কাছে কিছু জানতে চেয়েছিল। এ অবস্থায় উমরের প্রতি আমিরুল মোমেনিনের মনোভাব নিশ্চয়ই মুঘিরার জানা ছিল। অপরপক্ষে পরামর্শক কমিটি যখন শর্ত আরোপ করেছিল যে ,যিনি খলিফা হবেন তাকে তার পূর্ববর্তী খলিফাদ্বয়ের নীতিপ্রকৃতি মেনে চলতে হবে। আমিরুল মোমেনিন এ শর্ত মেনে নেন নি। বরং তিনি বলেছিলেন যে ,পূর্ববর্তী খলিফাদ্বয়ের নীতি - প্রকৃতি যদি কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী হয় তবে কে তা অমান্য করবে ? আর যদি তা কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী হয়ে থাকে। তবে কে তা পালন করবে ? আমিরুল মোমেনিন বলেছেন উমর সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত করেছে ও বিদআত বিনষ্ট করেছে বলে মুঘিরা যে উক্তি করেছে তা ওপরের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় না। উমর যদি সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত করেই থাকে। তবে তার নীতি না মেনে সুন্নাহ মান্য করার কোন অর্থ হয় না। সুতরাং মুঘিরার বক্তব্য বানোয়াট ছাড়া আর কিছুই নয়।

খোৎবা - ২২৭

خصائص البیعة مع الامامعليه‌السلام

وَ بَسَطْتُمْ يَدِي فَكَفَفْتُهَا، وَ مَدَدْتُمُوهَا فَقَبَضْتُهَا، ثُمَّ تَدَاكَكْتُمْ عَلَيَّ تَدَاكَّ اَلْإِبِلِ اَلْهِيمِ عَلَى حِيَاضِهَا يَوْمَ وِرْدِهَا، حَتَّى اِنْقَطَعَتِ اَلنَّعْلُ، وَ سَقَطَ اَلرِّدَاءُ، وَ وُطِئَ اَلضَّعِيفُ، وَ بَلَغَ مِنْ سُرُورِ اَلنَّاسِ بِبَيْعَتِهِمْ إِيَّايَ أَنِ اِبْتَهَجَ بِهَا اَلصَّغِيرُ، وَ هَدَجَ إِلَيْهَا اَلْكَبِيرُ، وَ تَحَامَلَ نَحْوَهَا اَلْعَلِيلُ، وَ حَسَرَتْ إِلَيْهَا اَلْكِعَابُ.

খালিফা হবার জন্য আমিরুল মোমেনিনের প্রতি বায়াত সম্পর্কে

আমার বায়াত গ্রহণের জন্য তোমরা আমার হাত তোমাদের দিকে টেনে নিয়েছিলে কিন্তু আমি হাত ফিরিয়ে নিয়েছি। আবার তোমরা আমার হাত টেনে ধরে রেখেছিলে কিন্তু আমি জোর করে তা সঙ্কুচিত করেছিলাম। তারপর তৃষ্ণার্তা উট যেভাবে জলাধারে ভিড় করে তোমরাও সেভাবে আমার চারদিকে ভিড় করে এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছিলে যে ,আমার জুতা ছিড়ে গিয়েছিল ,কাঁধের কাপড় পড়ে গিয়েছিল এবং দুর্বলেরা পদদলিত হয়েছিল। আমার বায়াত গ্রহণ করে মানুষ আনন্দে এত বেশি উল্লসিত হয়েছিল যে ,শিশু - কিশোরগণ নাচতে শুরু করেছিল ,বৃদ্ধরা কাঁপতে কাঁপতে (বার্ধক্যের কারণে) আমার কাছে চলে এসেছিল ,রুগ্নগণ এলোপাতাড়িভাবে এবং কিশোরীগণ মাথার ঘোমটা ফেলে আমার দিকে ছুটে এসেছিলো ।

খোৎবা - ২২৮

فَإِنَّ تَقْوَى اَللَّهِ مِفْتَاحُ سَدَادٍ، وَ ذَخِيرَةُ مَعَادٍ، وَ عِتْقٌ مِنْ كُلِّ مَلَكَةٍ، وَ نَجَاةٌ مِنْ كُلِّ هَلَكَةٍ. بِهَا يَنْجَحُ اَلطَّالِبُ، وَ يَنْجُو اَلْهَارِبُ، وَ تُنَالُ اَلرَّغَائِبُ. فضل العمل فَاعْمَلُوا وَ اَلْعَمَلُ يُرْفَعُ، وَ اَلتَّوْبَةُ تَنْفَعُ، وَ اَلدُّعَاءُ يُسْمَعُ، وَ اَلْحَالُ هَادِئَةٌ، وَ اَلْأَقْلاَمُ جَارِيَةٌ. وَ بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ عُمُراً نَاكِساً، أَوْ مَرَضاً حَابِساً، أَوْ مَوْتاً خَالِساً.

ذکر الموت

فَإِنَّ اَلْمَوْتَ هَادِمُ لَذَّاتِكُمْ وَ مُكَدِّرُ شَهَوَاتِكُمْ، وَ مُبَاعِدُ طِيَّاتِكُمْ. زَائِرٌ غَيْرُ مَحْبُوبٍ(محجوب) ، وَ قِرْنٌ غَيْرُ مَغْلُوبٍ، وَ وَاتِرٌ غَيْرُ مَطْلُوبٍ. قَدْ أَعْلَقَتْكُمْ حَبَائِلُهُ، وَ تَكَنَّفَتْكُمْ غَوَائِلُهُ، وَ أَقْصَدَتْكُمْ مَعَابِلُهُ وَ عَظُمَتْ فِيكُمْ سَطْوَتُهُ، وَ تَتَابَعَتْ عَلَيْكُمْ عَدْوَتُهُ، وَ قَلَّتْ عَنْكُمْ نَبْوَتُهُ فَيُوشِكُ أَنْ تَغْشَاكُمْ دَوَاجِي ظُلَلِهِ وَ اِحْتِدَامُ عِلَلِهِ، وَ حَنَادِسُ غَمَرَاتِهِ، وَ غَوَاشِي سَكَرَاتِهِ، وَ أَلِيمُ إِرْهَاقِهِ(ازهاقة) ، وَ دُجُوُّ أَطْبَاقِهِ، وَ جُشُوبَةُ مَذَاقِهِ. فَكَأَنْ قَدْ أَتَاكُمْ بَغْتَةً فَأَسْكَتَ نَجِيَّكُمْ، وَ فَرَّقَ نَدِيَّكُمْ، وَ عَفَّى آثَارَكُمْ، وَ عَطَّلَ دِيَارَكُمْ، وَ بَعَثَ وُرَّاثَكُمْ، يَقْتَسِمُونَ تُرَاثَكُمْ، بَيْنَ حَمِيمٍ خَاصٍّ لَمْ يَنْفَعْ، وَ قَرِيبٍ مَحْزُونٍ لَمْ يَمْنَعْ، وَ آخَرَ شَامِتٍ لَمْ يَجْزَعْ.

الوصیة بالخیر

فَعَلَيْكُمْ بِالْجَدِّ وَ اَلاِجْتِهَادِ، وَ اَلتَّأَهُّبِ وَ اَلاِسْتِعْدَادِ، وَ اَلتَّزَوُّدِ فِي مَنْزِلِ اَلزَّادِ. وَ لاَ تَغُرَّنَّكُمُ اَلْحَيَاةُ اَلدُّنْيَا كَمَا غَرَّتْ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ مِنَ اَلْأُمَمِ اَلْمَاضِيَةِ، وَ اَلْقُرُونِ اَلْخَالِيَةِ، اَلَّذِينَ اِحْتَلَبُوا دِرَّتَهَا، وَ أَصَابُوا غِرَّتَهَا، وَ أَفْنَوْا عِدَّتَهَا، وَ أَخْلَقُوا جِدَّتَهَا، وَ أَصْبَحَتْ مَسَاكِنُهُمْ أَجْدَاثاً، وَ أَمْوَالُهُمْ مِيرَاثاً. لاَ يَعْرِفُونَ مَنْ أَتَاهُمْ، وَ لاَ يَحْفِلُونَ مَنْ بَكَاهُمْ، وَ لاَ يُجِيبُونَ مَنْ دَعَاهُمْ. فَاحْذَرُوا اَلدُّنْيَا فَإِنَّهَا غَدَّارَةٌ غَرَّارَةٌ خَدُوعٌ، مُعْطِيَةٌ مَنُوعٌ، مُلْبِسَةٌ نَزُوعٌ، لاَ يَدُومُ رَخَاؤُهَا، وَ لاَ يَنْقَضِي عَنَاؤُهَا، وَ لاَ يَرْكُدُ بَلاَؤُهَا.

كَانُوا قَوْماً مِنْ أَهْلِ اَلدُّنْيَا وَ لَيْسُوا مِنْ أَهْلِهَا، فَكَانُوا فِيهَا كَمَنْ لَيْسَ مِنْهَا عَمِلُوا فِيهَا بِمَا يُبْصِرُونَ، وَ بَادَرُوا فِيهَا مَا يَحْذَرُونَ، تَقَلَّبُ أَبْدَانِهِمْ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ أَهْلِ اَلْآخِرَةِ، وَ يَرَوْنَ أَهْلَ اَلدُّنْيَا يُعَظِّمُونَ مَوْتَ أَجْسَادِهِمْ وَ هُمْ أَشَدُّ إِعْظَاماً لِمَوْتِ قُلُوبِ أَحْيَائِهِمْ.

আল্লাহকে ভয় করার উপদেশ

নিশ্চয়ই ,আল্লাহর ভয় হেদায়েতের চাবিকাঠি ,পরকালের পাথেয় ,সকল গোলামির মুক্তি এবং যে কোন ধ্বংস থেকে নিস্কৃতি পাবার উপায়। এতে মানুষের কৃতকার্যতা আসে ,নিরাপত্তা লাভ করা যায় এবং জীবনের লক্ষ্য অর্জিত ক্রয় । সৎ আমল কর এতে তোমাদের মূল্যবোধ বেড়ে যাবে ,তওবা উপকারে আসবে ,প্রার্থনা কবুল হবে ,অবস্থা শান্তিপূর্ণ হবে ,কেরামন কাতেবিনের (সম্মানিত লেখকদ্বয়) কলম সর্বদা চলতে থাকবে। বয়স পরিবর্তনের (বৃদ্ধ হবার) আগেই আমলে সালেহার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাও। তা না হলে দীর্ঘ জুরা - ব্যধি ও মৃত্যু তোমাদের সে ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারে।

মৃত্যুকে স্মরণ

নিশ্চয়ই ,মৃত্যু তোমাদের ভোগ - বিলাস নিঃশেষ করে দেবে ,আনন্দ - উল্লাস বিনাশ করে দেবে এবং তোমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত করে দেবে। মৃত্যু হলো অবাঞ্চিত দর্শনাথী ,অপ্রতিরোধ্য শত্রু ও বেহিসাবি হত্যাকারী। মৃত্যুর রশি তোমাদেরকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে ,এর কুফল তোমাদের চারদিকে ঘিরে রেখেছে ,এর শার তোমাদের প্রতি তাক করা আছে এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট হবার কোন সম্ভাবনা নেই। তোমাদের ওপর মৃত্যুর নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ এবং এর অত্যাচার লাগাতার। সহসাই গাঢ় কালোছায়া ,কঠিন পীড়া ,দুঃখের অন্ধকার ,বেদনার কাতরানি ,ধ্বংসের শোক ,অন্ধকারের বেষ্টনী ও মৃত্যুর বিস্বাদ তোমাদেরকে অসহায় করে ফেলবে। মনে হবে এটা আচমকা অতি সন্তর্পণে তোমার কাছে এসেছে এবং তোমাকে দলচ্যুত করে দিয়েছে। তোমার সকল ক্রিয়াকলাপ বিনষ্ট করে দিয়েছে ,তোমার ঘর চুরমার করে দিয়েছে এবং তোমার কষ্টার্জিত সম্পদ ওয়ারিশগণের মধ্যে ভাগ - বাটোয়ারা করে দিয়েছে। অথচ এ ওয়ারিশগণ তোমার কোন উপকার করতে পারেনি এবং সাময়িক শোক প্রকাশ করলেও তোমাকে রক্ষা করতে পারেনি এবং কদিনের মধ্যেই তারা তোমাকে ভুলে আনন্দে মেতে ওঠবে।

ভাল কাজের আদেশ

সুতরাং এ পৃথিবী থেকে রসদ সংগ্রহ করে পরপারের প্রস্তুতি গ্রহণ করা ও পরপারের জন্য নিজেকে তৈরি করা তোমাদের নিজেদের ওপর নির্ভর করে। এ দুনিয়া যেন তোমাদেরকে প্রতারণা করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থেকো। দুনিয়া তোমাদের পূর্ববর্তীগণকেও ধোকা দিয়েছে। তারা দুনিয়া থেকে দুগ্ধ দোহন করেছিল ,গাফলতি দ্বারা দুনিয়া থেকে উপকৃত হয়েছিল এবং দীর্ঘদিন পৃথিবীতে থেকে বার্ধক্যপ্রাপ্ত হয়েছিল। তাদের বাসস্থানও কবরে হয়েছে এবং তাদের সম্পদের মালিকানা অন্যরা পেয়েছে। কে তাদের কবরের কাছে এসেছে তারা তা জানে না ,যারা তাদের জন্য কাদে তাদের কান্না তারা শুনতে পায় না এবং কারো ডাকে তারা সাড়া দেয় না। ফলে এ দুনিয়া সম্বন্ধে সাবধান হও । কারণ দুনিয়া প্রতারক ,প্রবঞ্চক ও ধোকাবাজ । দুনিয়া যা দেয় তা আবার কেড়ে নিয়ে যায়। দুনিয়ার আনন্দ চিরস্থায়ী নয়। এতে দুঃখ কষ্টের শেষ নেই এবং এতে দুর্যোগে কখনো থেমে থাকে না।

আত্মনিরোধীরা দুনিয়াবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা দুনিয়াবাসী নয়। কারণ তারা এমনভাবে থাকে যেন তারা দুনিয়ার মধ্যে নেই। তারা এখানে যা কিছু পর্যবেক্ষণ করে তদনুযায়ী কাজ করে এবং যা তারা ভয় করে তা দ্রুত এড়িয়ে যায়। এ পৃথিবীতে তারা এমনভাবে থাকে যেন তাদের শরীর পরকালবাসীদের মধ্যে চলাফেরা করে। তারা দেখে যে ,দুনিয়াবাসীরা দেহের মৃত্যুকে গুরুত্ব দেয় ,কিন্তু তারা নিজেরা জীবিতদের আত্মার মৃত্যুকে গুরুত্ব দেয়।

খোৎবা - ২২৯

خصائص النبیصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم

خطبها بذي قار، و هو متوجه إلى البصرة، ذكرها الواقدي في كتاب «الجمل»:

فَصَدَعَ بِمَا أُمِرَ بِهِ وَ بَلَّغَ رِسَالاَتِ رَبِّهِ، فَلَمَّ اَللَّهُ بِهِ اَلصَّدْعَ، وَ رَتَقَ بِهِ اَلْفَتْقَ، وَ أَلَّفَ بِهِ اَلشَّمْلَ بَيْنَ ذَوِي اَلْأَرْحَامِ، بَعْدَ اَلْعَدَاوَةِ اَلْوَاغِرَةِ فِي اَلصُّدُورِ، وَ اَلضَّغَائِنِ اَلْقَادِحَةِ فِي اَلْقُلُوبِ.

রাসূল (সা.) সম্বন্ধে

(বসরার পথে জিকর নামক স্থানে আমিরুল মোমেনিন এ খোৎবা দিয়েছিলেন । ঐতিহাসিক ওয়াকিদি তার রচিত কিতাবুল জামাল ” গ্রন্থে এটা উল্লেখ করেছেন। )

রাসূল (সা.) যা কিছু আদিষ্ট হয়েছেন তাই প্রকাশ করে গেছেন এবং তিনি তাঁর প্রভুর বাণী যথাযথভাবে পৌছে দিয়ে গেছেন। ফলে মহিমান্বিত আল্লাহ তার মাধ্যমে ফাটল মেরামত করেছেন ,খণ্ডবিখণ্ডকে জোড়া লাগিয়েছেন এবং জ্ঞাতিদের মধ্যে স্নেহ - মমতা সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তারা তাদের বক্ষে ঘোরতর শক্রতা ও হৃদয়ে গভীর বিদ্বেষ পোষণ করতো।

খোৎবা - ২৩০

الاحتیاط فی بیت المال

كلم به عبد الله بن زمعة، و هو من شيعته، و ذلك أنه قدم عليه في خلافته يطلب منه مالاً، فقالعليه‌السلام :

إِنَّ هَذَا اَلْمَالَ لَيْسَ لِي وَ لاَ لَكَ، وَ إِنَّمَا هُوَ فَيْ‏ءٌ لِلْمُسْلِمِينَ، وَ جَلْبُ أَسْيَافِهِمْ، فَإِنْ شَرِكْتَهُمْ فِي حَرْبِهِمْ، كَانَ لَكَ مِثْلُ حَظِّهِمْ، وَ إِلاَّ فَجَنَاةُ أَيْدِيهِمْ لاَ تَكُونُ لِغَيْرِ أَفْوَاهِهِمْ.

বায়তুলমাল সম্বন্ধে

আবদুল্লাহ ইবনে জামাআহ নামক আমিরুল মোমেনিনের একজন অনুচর বায়তুল মাল থেকে কিছু টাকা চেয়েছিল। তখন আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

এ টাকা তোমারও নয় আমারও নয়। এটা মুসলিম জনসাধারণের সম্পদ এবং এটা তাদের তরবারির অর্জন। যদি তুমি তাদের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে তবে তুমিও তাদের সমান অংশ পেতে। কাজেই তাদের হাতের অর্জিত অর্থ তাদের মুখ ছাড়া অন্য কারো মুখে যেতে পারে না।

খোৎবা - ২৩১

أَلاَ وَ إِنَّ اَللِّسَانَ بَضْعَةٌ مِنَ اَلْإِنْسَانِ، فَلاَ يُسْعِدُهُ اَلْقَوْلُ إِذَا اِمْتَنَعَ، وَ لاَ يُمْهِلُهُ اَلنُّطْقُ إِذَا اِتَّسَعَ. وَ إِنَّا لَأُمَرَاءُ اَلْكَلاَمِ، وَ فِينَا تَنَشَّبَتْ عُرُوقُهُ، وَ عَلَيْنَا تَهَدَّلَتْ غُصُونُهُ.

وَ اِعْلَمُوا رَحِمَكُمُ اَللَّهُ أَنَّكُمْ فِي زَمَانٍ اَلْقَائِلُ فِيهِ بِالْحَقِّ قَلِيلٌ، وَ اَللِّسَانُ عَنِ اَلصِّدْقِ كَلِيلٌ، وَ اَللاَّزِمُ لِلْحَقِّ ذَلِيلٌ. أَهْلُهُ مُعْتَكِفُونَ عَلَى اَلْعِصْيَانِ، مُصْطَلِحُونَ عَلَى اَلْإِدْهَانِ، فَتَاهُمْ عَارِمٌ، وَ شَائِبُهُمْ آثِمٌ، وَ عَالِمُهُمْ مُنَافِقٌ، وَ قَارِنُهُمْ مُمَاذِقٌ. لاَ يُعَظِّمُ صَغِيرُهُمْ كَبِيرَهُمْ، وَ لاَ يَعُولُ غَنِيُّهُمْ فَقِيرَهُمْ.

জা দাহ ইবনে হুবায়রাহ আল - মখযুমির খোৎবা প্রদানের অক্ষমতা প্রসঙ্গে

জেনে রাখো ,জিহ্বা মানুষের শরীরের একটা অংশ। যদি মানুষ এটাকে নিবৃত্ত রাখে তবে বক্তব্য তাকে সহযোগিতা করবে না। আর যদি এটাকে প্রসারিত করা হয় তবে বক্তব্য তাকে থেমে যাবার সুযোগ দেবে না। নিশ্চয়ই ,আমরা বক্তৃতার মাষ্টার। বক্তৃতার শিরা - উপশিরা আমাদের মাঝে নির্ধারিত এবং এর শাখা - প্রশাখা আমাদের ওপর ঝুলে আছে।

জেনে রাখো - তোমাদের ওপর আল্লাহর আশীর্বাদ বর্ষিত হোক ,তোমরা এমন এক সময়ে রয়েছে। যখন ন্যায় কথা বলার লোকের সংখ্যা নগণ্য - যখন সত্য বিষয় বলতে জিহবা আড়ষ্ট হয়ে আসে এবং যারা ন্যায়ের প্রতি অটল থাকে তারা অপমানিত হয়। এখনকার মানুষ অবাধ্যতায় লিপ্ত। এখনকার যুবকেরা দুষ্ট প্রকৃতির ,বৃদ্ধরা পাপী ,শিক্ষিতগণ মোনাফিক এবং বক্তারা তোষামুদে। এদের বয়ঃকনিষ্ঠরা বয়ঃজ্যেষ্ঠকে শ্রদ্ধা করে না এবং এদের ধনীগণ দরিদ্রকে সাহায্য করে না।

___________________

১। একদা আমিরুল মোমেনিন তাঁর ভাগিনেয় জা 'দাহ্ ইবনে হুবায়রাহ আল - মখযুমিকে খোৎবা দেয়ার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু বক্তৃতায় দাঁড়ালে তার জিহ্বা তোতলাতে শুরু করেছিল। এতে সে কোন কিছুই উচ্চারণ করতে পারেনি। এমতাবস্থায় আমিরুল মোমেনিন মিম্বারে আরোহণ করে একটা সুদীর্ঘ খোৎবা প্রদান করেছিলেন। সে খোৎবার কিছু অংশ আল - রাজী এখানে সংকলন করেছেন।