নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা0%

নাহজ আল-বালাঘা লেখক:
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ: হযরত আলী (আ.)

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক: আশ-শরীফ আর-রাজী
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ:

ভিজিট: 119893
ডাউনলোড: 7295

নাহজ আল-বালাঘা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 48 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 119893 / ডাউনলোড: 7295
সাইজ সাইজ সাইজ
নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বাংলা

রাসূলের (সা.) ‘জ্ঞান নগরীর দ্বার’ আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব ছিলেন তত্ত্বজ্ঞানী, দার্শনিক, সুলেখক ও বাগ্মী। আলঙ্কারিক শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ও নৈপুন্য অসাধারণ। তিনি নবুওয়াতী জ্ঞান ভান্ডার হতে সরাসরি জ্ঞান আহরণ করেন এবং সাহাবাদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী পন্ডিত ছিলেন। এতে কারো দ্বিমত নেই। আরবী কাব্যে ও সাহিত্যে তার অনন্যসাধারণ অবদান ছিল। খেলাফত পরিচালনা কালে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ (খোৎবা) দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকগণকে প্রশাসনিক বিষয়ে উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে পত্র লিখেছিলেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মানুষের অনেক প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছিলেন। তার এসব বাণী কেউকেউ লিখে রেখেছিল, কেউ কেউ মনে রেখেছিল, আবার কেউ কেউ তাদের লিখিত পুস্তকে উদ্ধৃত করেছিল। মোটকথা তার অমূল্য বাণীসমূহ মানুষের কাছে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ছিল।

আশ-শরীফ আর-রাজী আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিবের ভাষণসমূহ (খোৎবা), পত্রাবলী, নির্দেশাবলী ও উক্তিসমূহ সংগ্রহ করে “নাহজ আল-বালঘা” নামক গ্রন্থটি সঙ্কলন করেন।

খোৎবা - ২৩২

علل اختلاف بین الناس

روي ذعلب اليمامي عن احمد بن قتيبه، عن عبد الله بن يزيد، عن مالک بن دحيه، قال: کنا عند اميرالمؤمنينعليه‌السلام ، و قد ذکر عنده اختلاف الناس فقال:

إنمَّا فَرَّقَ بَينَهُم مَبادِئُ طِينیهِم، وَ ذلِکَ أنَّهُم کانُوا فِلقَهً مِن سَبَخ أرضٍ و عَذبِها، وَ حَزنی تُربَهٍ وَ سَهلِها، فَهُم عَلَي حَسَبِ قُربِ أرضِهِم يَتَقارَبُونَ، وَ عَلَي قَدرِ اختِلافِها يَتَفاوَتُون. فَتامُّ الرُّواءِ ناقِصُ العَقلِ، وَ مادُّ القامَةِ قَصِيرُ الهِمَّةِ، وَ زاکِي العَمَلِ قَبِيحُ المنَظَرِ، وَ قَرِيبُ القَعرِ بَعِيدُ السَّبرِ، وَ مَعروفُ الضَّرِيبَةِ مُنکَرُ الجَلِيبَةِ، وَ تائِهُ القَلبِ مُتَفَرِّقس اللُّبِّ، وش طَلِيقُ اللِّسانب حَدّيدُ الجَنانِ.

মানুষের বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতিগত পার্থক্যের কারণ

মানুষের বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি বিভিন্ন হবার কারণ সম্পর্কে এ খোৎবাটি আহমদ ইবনে কুতায়বাহ থেকে জিলিব ইয়েমেনী ,তিনি আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াজিদ থেকে এবং তিনি মালিক ইবনে জিহায়াহ থেকে বর্ণনা করেছেন। মালিক বলেন , একদিন আমরা আমিরুল মোমেনিনের সাথে মানুষের বৈশিষ্ট্য ও আচরণের বিভিন্নতা সম্পর্কে আলোচনা উত্থাপন করলাম। তখন তিনি বললেনঃ

মানুষের মধ্যে বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতিগত বিভিন্নতার কারণ হলো তাদের মাটির উৎসের বিভিন্নতা (যে মাটি থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে) । হয় লবণাক্ত মাটি ,না হয় মিষ্ট মাটি ,না হয় শক্ত মাটি ,না হয় কোমল মাটি থেকে সৃষ্টির কারণে তাদের মধ্যে বিভিন্নতা দেখা যায়। মাটির সাদৃশ্যের কারণে মানুষের মধ্যে সাদৃশ্য হয়ে থাকে এবং মাটির বৈসাদৃশ্যের কারণে মানুষের মধ্যে বিভিন্নতা দেখা যায়। সুতরাং কখনো কখনো সুন্দর আকৃতির মানুষও বুদ্ধিমত্তায় দুর্বল হয় ;লম্বা গড়নের মানুষও ভীরু প্রকৃতির হয় ;কুৎসিত চেহারার লোকও ধার্মিক হয় ;খাট গড়নের লোকও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হয় ;সুস্বভাবের লোকও মন্দ বৈশিষ্ট্যের হয় ;জটিল হৃদয়ের লোকও বিভ্রান্ত মনের হয় এবং তীক্ষ্ম কথার লোকও জাগ্রত হৃদয়ের হযে থাকে।

____________________

১। আমিরুল মোমেনিন বর্ণনা করেছেন যে ,মানুষের বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র বিভিন্ন হবার মূল কারণ হলো - যে মাটি থেকে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে সে মাটির উৎসের বিভিন্নতা। মাটির উৎসের বৈশিষ্ট্য অনুসারেই তাদের বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র গঠিত হয়। সুতরাং সমগোত্রীয় মাটির মানুষের মানসিক বিকাশ ও চিন্তা - চেতনার ভাবধারা একই রকম হয়ে থাকে। কোনকিছুর উৎস বলতে ওটাকে বুঝায় যার ওপর তার অস্তিত্বে আসা নির্ভরশীল। কিন্তু এটা অস্তিত্বের কারণ নয়। আরবিতে তিন ' শব্দের বহুবচন তিনাহ ' যা উৎস অথবা ভিত্তি বুঝায়। এখানে তিনাহ ' বলতে বীর্যকে বুঝানো হয়েছে যা বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে মানুষের আকৃতি ধারণ করে। এর মূলোৎস বলতে সেসব উপাদানকে বুঝানো হয়েছে যা বীর্যের উৎপত্তির সহায়ক। তাই লবণাক্ত ,মিষ্ট ,কোমল ও শক্ত শব্দগুলো দ্বারা বীর্যের মৌলিক উপাদানকে বুঝানো হয়েছে। যেহেতু মৌলিক উপাদানগুলোতে বিভিন্ন প্রকার গুণাবলী থাকে সেহেতু তা থেকে উৎপন্ন বীর্যও বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে। ফলে মানুষের বৈশিষ্ট্য ও আচরণ বিভিন্ন রকমের হয়।

হাদীদ (১৩শ খণ্ড ,পৃঃ১৯) লিখেছেন যে ,"তিনাহর মৌল" বলতে সেসব সংরক্ষক উপাদানকে বুঝায় যা ভিন্ন ভিন্ন গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে। প্ল্যাটো এবং অন্যান্য দার্শনিকগণও এ বিষয়ে একই ধারনা পোষণ করে। এগুলোকে তিনাহর মৌল বলার কারণ হলো এরা মানবদেহের জন্য আশ্রয় হিসেবে কাজ করে এবং উপাদানগুলোর বিভাজন প্রতিহত করে। কোন কিছুর অস্তিত্ব যেভাবে তার ভিত্তির ওপর নির্ভর করে ,একইভাবে দেহের অস্তিত্ব সংরক্ষক উপাদানের ( Preservative factors) ওপর নির্ভরশীল। যতক্ষণ সংরক্ষক উপাদান থাকবে ততক্ষণ দেহ ভাঙ্গন ও বিখণ্ডায়ন থেকে নিরাপদ থাকবে এবং উপাদানগুলোও বিভাজন ও বিচ্ছুরণ থেকে রক্ষা পায়। সংরক্ষক উপাদান দেহ ত্যাগ করলে অন্যান্য উপাদানও বিচ্ছুরিত হয়ে পড়ে।

এসব ব্যাখ্যা দ্বারা আমিরুল মোমেনিনের বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে ,আল্লাহ বিবিধ মৌল উপাদান সৃষ্টি করেছেন যার মধ্যে কিছু দূষিত ,কিছু বিশুদ্ধ ,কিছু দুর্বল ও কিছু শক্তিশালী এবং মানুষ তার মৌল উপাদান অনুযায়ী আচরণ ও কার্য করে। যদি কোন দুব্যক্তির মাঝে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। তবে বুঝতে হবে যে ,তাদের মৌল উপাদান অভিন্ন। ফলে দুব্যক্তির মধ্যে বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হলেও বুঝতে হবে এটা মৌল উপাদানের কারণেই ।

যাহোক ,মানুষের বৈশিষ্ট্য ও আচরণে বিভিন্নতার কারণ মৌল উপাদান বা প্রাথমিক গঠন মানতে হলে মানুষের কর্মকান্ডে নির্ধারিত ভাগ্যলিপির কথা স্বীকার করতে হয়। সেক্ষেত্রে "ইচ্ছার স্বাধীনতা ’ স্বীকার করা যায় না। যদি মানুষের চিন্তা - চেতনা ও কর্মকাণ্ড তিনাহর ’ ওপর নির্ভরশীল হয় তবে যা নির্ধারিত আছে তা ঘটবেই এবং সে কারণে কাউকে ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করা অথবা খারাপ কাজের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। কিন্তু এ হাইপোথেসিস" সঠিক নয়। কারণ সৃষ্টি অস্তিত্বে আসার পরে মহিমান্বিত আল্লাহ যেভাবে এর সবকিছু জানেন সেভাবে অস্তিত্বশীল হবার পূর্বেও তিনি তা জানতেন। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে ,মানুষ মুক্ত - ইচ্ছা দ্বারা কী করবে। আর কী করবে না এটা মহিমান্বিত আল্লাহ জানতেন। সুতরাং আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছানুযায়ী কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছেন এবং উপযুক্ত তিনাহ্ ' থেকে তাকে সৃষ্টি করেছেন। এ তিনাহ তার কর্মকান্ডের কারণ নয় এবং তার মুক্ত ইচ্ছার প্রতিফলনে বাধার সৃষ্টি করে না। উপযুক্ত তিনাহ থেকে সৃষ্টি করা দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে ,আল্লাহ্ জোরপূর্বক মানুষের পথে বাধার সৃষ্টি করেন না। কিন্তু মানুষ তার মুক্ত ইচ্ছা দ্বারা যে পথে যেতে চায় আল্লাহ সে পথে যাবার অনুমতি দেন।

(ইচ্ছার স্বাধীনতা বিষয়ে উপরোক্ত অভিমতের সাথে বাংলা অনুবাদক দ্বীমত পোষণ করে । মানুষ সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাধীন একথা স্বীকার করা যায় না। ধরা যাক ,একজন লোক ইচ্ছা করলে এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে অন্য পা শূন্যে তুলে রাখতে পারে । কিন্তু সে ইচ্ছা করলেই দুপা শূন্যে তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না । এতে স্পষ্ট বুঝা যায় মানুষ একই সাথে স্বেচ্ছাধীন ও আল্লাহর ইচ্ছাধীন । মূলত আল্লাহর ইচ্ছাধীন সব কিছুতেই সম্ভাবনাময় শুভ বা মঙ্গল নিহিত । সে কারণেই আল্লাহ মঙ্গলময় । কিন্তু তিনাহর ’ প্রভাব হোক আর ইচ্ছার কারণেই হোক সে শুভ আমল না করলেই অমঙ্গল সংঘটিত হয় । একটা আমের আটি হাতে নিয়ে চিন্তা করলে দেখা যাবে আঁটিটির মধ্যে একটা সম্ভাবনাময় প্রকাণ্ড আম গাছ রয়েছে যাতে অনেক সুমিষ্ট আম ফলতে পারে। এ সম্ভাবনাটির প্রধান শর্ত হলো আঁটিটিকে উপযুক্ত মাটিতে পুতে রাখতে হবে । মাটিতে না পুতে আঁটিটিকে দেয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখলে উক্ত সম্ভাবনা কখনো বাস্তবরূপ পরিগ্রহ করবে না ।

আল্লাহ জোর করে দেয়ালে বুলানো আঁটি থেকে প্রকাণ্ড আমি গাছ বানিয়ে দেবেন না । এ শর্তটি হলো - তিনাহী ’ - বাংলা অনুবাদক)

খোৎবা - ২৩৩

قَالَهُ وَ هُوَ يَلِي غُسْلَ رَسُولِ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم وَ تَجْهِيزَهُ‏:

بِأَبِي أَنْتَ وَ أُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ! لَقَدِ انْقَطَعَ بِمَوْتِكَ مَا لَمْ يَنْقَطِعْ بِمَوْتِ غَيْرِكَ مِنَ النُّبُوَّةِ وَ الْإِنْبَاءِ وَ أَخْبَارِ السَّمَاءِ. خَصَّصْتَ حَتَّى صِرْتَ مُسَلِّياً عَمَّنْ سِوَاكَ، وَ عَمَّمْتَ حَتَّى صَارَ النَّاسُ فِيكَ سَوَاءً. وَ لَوْ لَا أَنَّكَ أَمَرْتَ بِالصَّبْرِ، وَ نَهَيْتَ عَنِ الْجَزَعِ، لَأَنْفَدْنَا عَلَيْكَ مَاءَ الشُّئُونِ، وَ لَكَانَ الدَّاءُ مُمَاطِلًا، وَ الْكَمَدُ مُحَالِفاً، وَ قَلَّالَكَ! وَ لَكِنَّهُ مَا لَا يُمْلَكُ رَدُّهُ، وَ لَا يُسْتَطَاعُ دَفْعُهُ! بِأَبِي أَنْتَ وَ أُمِّي! اذْكُرْنَا عِنْدَ رَبِّكَ، وَ اجْعَلْنَا مِنْ بَالِكَ‏!.

রাসূলকে (সা.) শেষ গোসল দিয়ে কাফন পরানোর সময় প্রদত্ত খোৎবা

আপনার জন্য আমার পিতা - মাতা উৎসর্গ হোক ,হে আল্লাহর রাসূল ,আপনার দেহত্যাগের সাথে সাথে নবুয়তের ধারা ,ঐশী প্রত্যাদেশ নাজেল ও স্বর্গীয় বাণী চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল যা অন্য নবীদের বেলায় হয়নি। আপনার আহলে বাইতের কাছে আপনার মর্যাদা এতই বিশেষ ধরনের যে ,আপনার শোক আমাদের কাছে সান্তুনার উৎস হয়ে গেছে যা অন্যদের হয়নি। আপনার তিরোধানের শোকে সাধারণভাবে সকল মুসলিমই অংশীদার। ধৈর্যধারণ করতে যদি আপনি আদেশ না দিতেন এবং বিলাপ করতে নিষেধ না করতেন তবে আমরা অশ্রুর জলাধার সৃষ্টি করতাম এবং তাতেও আপনাকে হারাবার ব্যথা উপশম হতো না ,আমাদের শোক নিবারণ হতো না। আমাদের যে কোন শোক আপনাকে হারাবার শোকের তুলনায় অতি নগণ্য। কিন্তু মৃত্যু এমন এক ব্যাপার যা পরিবর্তন করা যায় না - ফেরানো যায় না। আমার পিতা - মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক ;আল্লাহর কাছে আমাদেরকে স্মরণ করবেন এবং আমাদের প্রতি খেয়াল রাখবেন ।

খোৎবা - ২৩৪

اقتصّ فيه ذکر ما کان منه بعد هجرة النبيصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ثم لحاقه به:

فَجَعَلْتُ أَتْبَعُ مَأْخَذَ رَسُولِ اللهصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم فَأَطَأُ ذِکْرَهُ، حَتَّي انْتَهَيْتُ إِلَي الْعَرَجِ.

হিজরতের পর রাসূলের সাথে সাক্ষাৎ হবার পূর্ব পর্যন্ত নিজের অবস্থা এ খোৎবায় বর্ণনা করেছেন

রাসূল (সা.) যে পথে গেছেন সে পথ অনুসরণ করে আমি চলতে লাগলাম এবং আল - আরজ পৌছার পূর্ব পর্যন্ত যে পথের কথা তিনি বলে গিয়েছিলেন সে পথ স্মরণ করেই অগ্রসর হয়েছিলাম।

____________________

১। নবুয়ত প্রকাশের পর থেকে ১৩ বছর রাসূল (সা.) মক্কায় ছিলেন। মক্কী জীবনের এ ১৩ টি বছর তিনি নিদারুণ অত্যাচার ও নিপীড়িন ভোগ করেছিলেন। কুরাইশ কাফেরগণ তাঁর জীবিকার সকল দ্বার পর্যন্ত রুদ্ধ করে দিয়েছিল। তাকে দুঃখ - কষ্ট দেয়ার কোন পথ থেকে তারা বিরত থাকেনি। এমন কি তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রেও তারা লিপ্ত হয়েছিল। তাদের নেতৃস্থানীয় ৪০ জন লোক দারুন - নাদওয়াহ ' নামক স্থানে বৈঠক করে তাকে হত্যা করার শলা - পরামর্শ পূর্বক সাব্যস্ত করলো যে ,প্রত্যেক গোত্রের একজন করে একত্রিত হয়ে যৌথভাবে তাকে আক্রমণ করে হত্যা করবে। এতে বনি হাশিম সকল গোত্রের সাথে মোকাবেলা করার সাহস পাবে না এবং তাতে রক্তের মূল্য দিয়ে দিলেই বনি হাশিম শান্ত হয়ে যাবে। তাদের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাঁরা ১লা রবিউল আউয়াল রাতে রাসূলের ঘরের আশে - পাশে ওৎপেতে বসেছিল যাতে রাসূল (সা.) ঘুমিয়ে পড়লে তাকে আক্রমণ করা যায়। এদিকে আল্লাহ তাদের সকল পরিকল্পনা রাসূলকে জানিয়ে দিয়ে আলীকে তার বিছানায় শুইয়ে রেখে মদিনায় হিজরত করার আদেশ দিলেন। রাসূল (সা.) আলীকে ডেকে পাঠালেন এবং তার কাছে সবকিছু ব্যক্ত করে বললেন , আলী ,আমার বিছানায় শুয়ে থাক। ” আলী বললেন , হে আল্লাহর রাসূল ,এতে কি আপনার জীবন রক্ষা পাবে ? রাসূল (সা.) বললেন , হ্যাঁ। ” আলী সেজদায় পড়ে শুকরিয়া আদায় করে রাসূলের বিছানায় শুয়ে পড়লেন। রাসূল (সা.) পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। গভীর রাতে কুরাইশ কাফেরগণ উকি - বুকি দিয়ে আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছিল। এ সময় আবু লাহাব বললো , ঘরের মধ্যে নারী ও শিশু আছে। ফলে এত রাতে আক্রমণ করা ঠিক হবে না। ভোরবেলা আক্রমণ করো। কিন্তু ভোর হবার পূর্ব পর্যন্ত ভালোভাবে পাহারা দাও যাতে অন্যত্র সরে যেতে না পারে। ” ফলে সারারাত তারা পাহারায় ছিল। ভোরের আলো দেখা দিতে না দিতেই তারা ঘরের চারদিকে ঘেরাও করলো। তাদের পায়ের শব্দ শুনে আমিরুল মোমেনিন মুখের কাপড় সরিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। কুরাইশগণ স্তম্ভিত হয়ে ভাবতে লাগলো এটা কী যাদু নাকি বাস্তব ঘটনা। তারা জিজ্ঞেস করলো , মুহাম্মদ কোথায় ? আলী উত্তব দিলেন , তোমরা কি তাকে আমার কাছে রেখে গিয়েছিলে যে এখন আমাকে জিজ্ঞেস করছো। ” এতে তারা নিরুত্তর হয়ে তাঁর পিছু ধাওয়া করতে লাগলো। কিন্তু ছাওয়ার গুহার পরে আর কোন পদচিহ্ন দেখতে না পেয়ে হতবুদ্ধি হয়ে ফিরে এলো। রাসূল (সা.) তিন দিন ঐ গুহায় অবস্থান করে মদিনাভিমুখে যাত্রা করলেন। এ তিন দিন আমিরুল মোমেনিন মক্কায় থেকে রাসূলের কাছে আমানত দেয়া সবকিছু মানুষকে ফেরত দিয়ে মদিনা অভিমুখে যাত্রা করলেন। মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী আল - আরুজ নামক স্থানে পৌছার পূর্ব পর্যন্ত তিনি রাসূলের সংবাদ পেতে থাকলেন এবং ১২ রবিউল আউয়াল তিনি কুবায় রাসূলের সাথে মিলিত হয়ে মদিনায় প্রবেশ করলেন (তাবারী ,৯ম খণ্ড ,পৃঃ ১৪৮ - ১৫১ ;আছীর ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১২৩২ - ১২৩৪ ;সাদ ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৫৩ - ১৫৪ ;হিশাম ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১২৪ - ১২৮ ;আছীর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৫ ;আছীর ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১০১ - ১০৪ ;কাছীর ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৩০২ - ৩০৩ ;তাবারী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৮০ - ১৮১ ;হাদীদ ,১৩শ খণ্ড ,পৃঃ ৩০৩ - ৩০৬ ;শাফী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৭৯ - ১৮০ ;মজলিসী ,১৯শ খণ্ড ,পৃঃ ২৮ - ১০৩) ।

খোৎবা - ২৩৫

فَاعْمَلُوا وَأَنْتُمْ فِي نَفَسِ الْبَقَاءِ، وَالصُّحُفُ مَنْشُورَةٌ، وَالتَّوْبَةُ مَبْسُوطَةٌ، وَالْمُدْبِرُ يُدْعَي، وَالْمُسِيءُ يُرْجَي، قَبْلَ أَنْ يَخْمُدَ العَمَلُ، وَيَنَقَطِعَ الْمَهَلُ، وَيَنْقَضِيَ الْأَجَلُ، وَيُسَدَّ بَابُ التَّوْبَةِ، وَتَصْعَدَ الْمَلاَئِکَةُ. فَأخَذَ امْرُؤٌ مِنْ نَفْسِهِ لِنَفْسِهِ، وَأَخَذَ مِنْ حَيّ لِمَيِّتٍ، وَمِنْ فَانٍ لِبَاقٍ، وَمِنْ ذَاهِبٍ لِدَائِمٍ. امْرُءٌ خَافَ اللهَ وَهُوَ مُعَمَّرٌ إلَي أَجَلِهِ، وَمَنْظُورٌ إلَي عَمَلِهِ. امْرُءٌ أَلْجَمَ نَفْسَهُ بِلِجَامِهَا، وَزَمَّهَا بِزِمَامِهَا، فَأَمْسَکَهَا بِلِجَامِهَا عَنْ مَعَاصِي اللهِ، وَقَادَها بِزِمَامِهَا إِلَي طَاعَةِ اللهِ.

মৃত্যুর পূর্বে আখেরাতের রসদ সংগ্রহ প্রসঙ্গে

আমলে সালেহা কর যদিও তোমরা জীবনের বিশালতার মধ্যে আছো ৷ এখনো তোমাদের আমল রেকর্ড করার জন্য বই খোলা আছে ,এখনো তওবা কবুল হবার সময় আছে। আমলের আলো নিভে যাবার আগে যারা আল্লাহ থেকে দৌড়ে পালাচ্ছে তাদেরকে আহবান করা হচ্ছে এবং যারা পাপী তাদেরকে ক্ষমা করার আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। সুতরাং সময় শেষ হবার আগে ,জীবন প্রদীপ নির্বাপিত হবার আগে ,তওবার দরজা বন্ধ হবার আগে এবং ফেরেশতাগণ আকাশে উঠে যাবার আগে আমলে সালেহায় ব্যাপৃত হও। কাজেই ,নিজের জন্যই নিজের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণ করা মানুষের উচিত। মৃতের জন্য জীবিতের কাছ থেকে ,অবিনশ্বরের জন্য নশ্বরের কাছ থেকে এবং অবস্থানকারীদের জন্য বিদায়ীদের কাছ থেকে উপকার গ্রহণ করা তাদের উচিত। আল্লাহকে ভয় করা মানুষের উচিত ,কারণ তাকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবিত থেকে আমল করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। মানুষের উচিত শক্ত হাতে লাগাম ধরে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং এ লাগাম এমনভাবে ধরতে হবে যেন আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বিরত থেকে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় ।

খোৎবা - ২৩৬

فی شأن الحکمین و ذم أهل الشام

جُفَاةٌ طَغَامٌ، عَبِيدٌ أَقْزَامٌ، جُمِّعُوا مِنْ کُلِّ أَوْبٍ، وَتُلُقِّطُوا مِنْ کُلِّ شَوْبٍ، مِمَّنْ يَنْبَغِي أَنْ يُفَقَّهَ وَيُؤَدَّبَ، وَيُعَلَّمَ وَيُدَرَّبَ، وَيُوَلَّي عَلَيْهِ، وَيُؤْخَذَ عَلَي يَدَيْهِ، لَيْسُوا مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ، وَلاَ مِنَ الَّذِينَ تَبَوَّؤُا الدَّارَ وَ الْإِيمَانَ.

أَلاَ وَإِنَّ الْقَوْمَ اخْتَارُوا لِأَنْفُسِهِمْ أَقْرَبَ الْقَوْمِ مِمَّا تُحِبُّونَ، وَإنَّکُمُ اخْتَرْتُمْ لِأَنْفُسِکُمْ أَقْرَبَ الْقَوْمِ مِمَّا تَکْرَهُونَ. وَإِنَّمَا عَهْدُکُمْ بَعَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسٍ بِالْأَمْسِ يَقُولُ:«إِنَّهَا فِتْنَةٌ فَقَطِّعُوا أَوْتَارَکُمْ وَشِيمُوا سُيُوفَکُمْ» . فَإِنْ کَانَ صَادِقاً فَقَدْ أَخْطَأَ بِمَسِيرِهِ غَيْرَ مُسْتَکْرَهٍ، وَإِنْ کَانَ کَاذِباً فَقَدْ لَزِمَتْهُ التُّهَمَهُ. فَادْفَعُوا فِي صَدْرِ عَمْرِوبْنِ الْعَاصِ بِعَبْدِ اللهِ بْنِ الْعَبَّاسِ، وَخُذُوا مَهَلَ الْأَيَّامِ، وَحُوطُوا قَوَاصِيَ الْإِسْلاَمِ. أَلاَ تَرَوْنَ إِلَي بَلاَدِکُمْ تُغْزَي، وَإِلَي صَفَاتِکُمْ تُرْمَي؟.

সিফফিনের সালিসীদ্বয় ও সিরিয়দের হীনমন্যতা সম্পর্কে

অসভ্য ,রূঢ় ও নিচ দাসদেরকে চারদিক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং নিচ প্রকৃতির বিভিন্ন দল থেকে তাদেরকে তুলে আনা হয়েছে। তাদেরকে ইসলামের বিধান ও শৃঙ্খলা শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এসব বিষয়ে কারো প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তাদেরকে হাতেখড়ি দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রয়োজন। কারণ তারা মুহাজির নয় ,আনসারও নয় এবং তারা মদিনায় বসবাসকারী ইমানদারও নয়।

দেখ! তারা এমন একজনকে সালিশ মনোনীত করেছে যে ব্যক্তি তারা যা চায় তার অতি নিকটবর্তী। আর তোমরা এমন একজনকে মনোনীত করেছে যে ব্যক্তি তোমরা যা অপছন্দ কর তার খুবই নিকটবর্তী। নিশ্চয়ই তোমাদের মনে আছে যে ,সেদিন আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস (আবু মুসা) বলেছিল , এটা (সিফফিনের যুদ্ধ) একটা ফেতনা। কাজেই তোমাদের ধনুকের রশি কেটে দাও এবং তরবারি কোষাবদ্ধ করো। ” যদি তার বক্তব্য ঠিক হয়ে থাকে তাহলে জোর - জবরদস্তি ছাড়াও আমাদের সাথে এগিয়ে আসা তার ভুল হয়েছে। যদি তার বক্তব্য মিথ্যা হয়ে থাকে তবে তাকে সন্দেহ করা উচিত। সুতরাং আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে আমর ইবনে আ 'সের মোকাবেলায় পাঠাও। এ দিনগুলোর সদ্ব্যবহার করো এবং ইসলামের সীমান্ত ঘিরে থাকো। তোমরা কি দেখো না তোমাদের শহরগুলো আক্রান্ত হচ্ছে এবং তোমাদের শৌর্য ও বিক্রম তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে।

খোৎবা - ২৩৭

يذکر فيها آل محمدصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم

هُمْ عَيْشُ الْعِلْمِ، وَمَوْتُ الْجَهْلِ، يُخْبِرُکُمْ حِلْمُهُمْ عَنْ عِلْمِهِمْ، ظَاهِرُهُمْ عَنْ بَاطِنِهِمْ, وَصَمْتُهُمْ عَنْ حِکَمِ مَنْطِقِهِمْ. لاَ يُخَالِفُونَ الْحَقَّ وَلاَ يَخْتَلِفُونَ فِيهِ. هُمْ دَعَائِمُ الْإِسْلاَمِ، وَوَلاَئِجُ الْإِعْتِصَامِ، بِهِمْ عَادَ الْحَقُّ فِي نِصَابِهِ، وَانْزَاحَ الْبَاطِلُ عَنْ مُقَامِهِ، وَانْقَطَعَ لِسَانُهُ عَنْ مَنْبِتِهِ. عَقَلُوا الدِّينَ عَقْلَ وِعَايَةٍ وَرِعَايَةٍ، لاَ عَقْلَ سَمَاعٍ وَرِوَايَةٍ. فَإِنَّ رُوَاةَ الْعِلْمِ کَثِيرٌ، وَرُعَاتَهُ قَلِيلٌ.

আহলে বাইত সম্পর্কে

তাঁরা হলেন জ্ঞানের জীবন ও অজ্ঞতার মৃত্যু। তাঁদের ধৈর্যই তোমাদেরকে তাদের জ্ঞান সম্পর্কে বলে দেবে এবং তাদের প্রজ্ঞার নীরবতাই তাদের মুখের কথা। তারা কখনো ন্যায়ের বিপক্ষে যায় না এবং ন্যায় বিষয়ে কখনো তারা নিজেদের মধ্যে দ্বিমত পোষণ করে না। তারা হলেন ইসলামের স্তম্ভ এবং ইসলামের সংরক্ষণাগার। তাদের দ্বারাই সত্য ও ন্যায় তার অবস্থান ফিরে পেয়েছে এবং অন্যায় দূরীভূত হয়েছে ও অন্যায়ের জিহবা কেটে ফেলা হয়েছে। তারা মনোযোগ ও সতর্কতার সাথে গভীরভাবে দ্বীনকে বুঝেছে। শুধুমাত্র প্রচলিত ধর্মমতের বিরুদ্ধে বিশ্বাস স্থাপন করে বা বর্ণনাকারীদের নিকট শুনে শুনে তাঁরা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করেনি। দ্বীনের বর্ণনাকারী অনেক হলেও দ্বীনকে প্রকৃতভাবে বুঝাবার মতো লোকের সংখ্যা নগণ্য ।

খোৎবা - ২৩৮

قاله لعبد الله بن العباس؛ و قد جاءه برسالة من عثمان و هو محصور يسأله فيها الخروج إلى ماله بينبع ، ليقل هتف الناس باسمه للخلافة، بعد أن كان سأله مثل ذلك من قبل ، فقالعليه‌السلام :

يَا ابْنَ عَبَّاسٍ، مَا يُرِيدُ عُثْمَانُ إِلَّا أَنْ يَجْعَلَنِي جَمَلًا نَاضِحاً بِالْغَرْبِ: أَقْبِلْ وَ أَدْبِرْ! بَعَثَ إِلَيَّ أَنْ أَخْرُجَ، ثُمَّ بَعَثَ إِلَيَّ أَنْ أَقْدُمَ، ثُمَّ هُوَ الْآنَ يَبْعَثُ إِلَيَّ أَنْ أَخْرُجَ! وَ اللَّهِ لَقَدْ دَفَعْتُ عَنْهُ حَتَّى خَشِيتُ أَنْ أَكُونَ آثِماً.

মদিনা ত্যাগ করার জন্য উসমানের অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্রদত্ত খোৎবা

যখন উসমান ইবনে আফফানকে জনগণ ঘেরাও করেছিল তখন আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস উসমানের একখানা পত্র আমিরুল মোমেনিনের কাছে নিয়ে এসেছিল যাতে উসমান ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল যেন আমিরুল মোমেনিন তার ইয়ানবু এষ্টেটে চলে যান এবং তাতে তাঁর খলিফা হওয়া সম্বন্ধে যে দাবি উত্থাপিত হয়েছে তা চাপা পড়ে যাবে। উসমান এর আগেও এরূপ অনুরোধ করেছিল। পত্র পেয়ে আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

হে ইবনে আব্বাস ! উসমান আমার সাথে পানি - টানা উটের মতো ব্যবহার করছে। পানি - টানা উট যেরূপ মশক নিয়ে একবার পিছনে আবার সামনের দিকে যায় ,সে চায় আমিও যেন তদ্রুপ করি। একবার সে আমাকে খবর পাঠালো আমি যেন চলে যাই। আবার সে খবর পাঠালো আমি যেন ফিরে আসি। এখন আবার সে খবর পাঠায় আমি যেন চলে যাই। আল্লাহর কসম ,আমি ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাব যে পর্যন্ত আমি পাপী না হয়ে যাই।

খোৎবা - ২৩৯

یحثّ اصحابه علی الجهاد

وَ اللهُ مُستَأدِيکُم شُکرَهُ وَ مُوَرِّثُکُم أمرَهُ، وَ مُمهِلُکُم في مِضمارٍ مَحدُودٍ، لِتَتَنازَعُوا سَبَقَهُ، فَشُدُّوا عُقَدَ المازِرِ، وَاطووا فُضُول الخَواصِرِ، وَ لا تجَتَمِعُ عَزِيمَةٌ وَ وَليِمَةٌ. ما أنقَض النَّوم لِعَزائِمِ اليَومَ، و أمحي الظُّلَمَ لِتَذاکِيرِ الهِمَم!

নিজের লোকদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরাম আয়েশ পরিহার করার উপদেশ

আল্লাহ চান তোমরা যেন তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকো এবং তিনি তাঁর কাজ তোমাদের নিকট অর্পণ করেছেন। তিনি তোমাদেরকে সীমিত সময় ও সীমিত জীবন - ক্ষেত্র নির্ধারণ করে দিয়েছেন যেন তোমরা তাঁর পুরষ্কার পাবার জন্য একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে। সুতরাং শক্ত করে তোমাদের কটিবন্ধ বেঁধে নাও এবং পরনের কাপড় এটে নাও। সাহসিকতা ও ভোজন বিলাসিতা একসাথে চলতে পারে না। দিনের অনেক বড় বড় কাজেও নিদ্রা দুর্বলতার সৃষ্টি করে এবং নিদ্রার অন্ধকার সাহসের স্মৃতি মুছে ফেলে।

দ্বিতীয় অধ্যায়

আমিরুর মোমেনিনের পত্রাবলী ও নির্দেশাবলী