নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা0%

নাহজ আল-বালাঘা লেখক:
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ: হযরত আলী (আ.)

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক: আশ-শরীফ আর-রাজী
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ:

ভিজিট: 126203
ডাউনলোড: 8027

নাহজ আল-বালাঘা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 48 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 126203 / ডাউনলোড: 8027
সাইজ সাইজ সাইজ
নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বাংলা

রাসূলের (সা.) ‘জ্ঞান নগরীর দ্বার’ আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব ছিলেন তত্ত্বজ্ঞানী, দার্শনিক, সুলেখক ও বাগ্মী। আলঙ্কারিক শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ও নৈপুন্য অসাধারণ। তিনি নবুওয়াতী জ্ঞান ভান্ডার হতে সরাসরি জ্ঞান আহরণ করেন এবং সাহাবাদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী পন্ডিত ছিলেন। এতে কারো দ্বিমত নেই। আরবী কাব্যে ও সাহিত্যে তার অনন্যসাধারণ অবদান ছিল। খেলাফত পরিচালনা কালে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ (খোৎবা) দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকগণকে প্রশাসনিক বিষয়ে উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে পত্র লিখেছিলেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মানুষের অনেক প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছিলেন। তার এসব বাণী কেউকেউ লিখে রেখেছিল, কেউ কেউ মনে রেখেছিল, আবার কেউ কেউ তাদের লিখিত পুস্তকে উদ্ধৃত করেছিল। মোটকথা তার অমূল্য বাণীসমূহ মানুষের কাছে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ছিল।

আশ-শরীফ আর-রাজী আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিবের ভাষণসমূহ (খোৎবা), পত্রাবলী, নির্দেশাবলী ও উক্তিসমূহ সংগ্রহ করে “নাহজ আল-বালঘা” নামক গ্রন্থটি সঙ্কলন করেন।

পত্র - ৫১

و من كتاب لهعليه‌السلام

إلى عُمّالِهِ عَلَى الْخَراجِ

مِنْ عَبْدِ اللَّهِ عَلِيِّ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ إِلَى أَصْحَابِ الْخَرَاجِ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ مَنْ لَمْ يَحْذَرْ مَا هُوَ صَائِرٌ إِلَيْهِ لَمْ يُقَدِّمْ لِنَفْسِهِ مَا يُحْرِزُهَا. وَاعْلَمُوا أَنَّ مَا كُلِّفْتُمْ بِهِ يَسِيرٌ، وَ أَنَّ ثَوَابَهُ كَثِيرٌ، وَ لَوْ لَمْ يَكُنْ فِيمَا نَهَى اللَّهُ عَنْهُ مِنَ الْبَغْيِ وَالْعُدْوَانِ عِقَابٌ يُخَافُ لَكَانَ فِي ثَوَابِ اجْتِنَابِهِ مَا لاَ عُذْرَ فِي تَرْكِ طَلَبِهِ. فَأَنْصِفُوا النَّاسَ مِنْ أَنْفُسِكُمْ، وَاصْبِرُوا لِحَوَائِجِهِمْ. فَإِنَّكُمْ خُزَّانُ الرَّعِيَّةِ، وَ وُكَلاَءُ الْأُمَّةِ، وَ سُفَرَأُ الْأَئِمَّةِ، وَ لاَ تُحْسِمُوا (تحمسوا - تحبسوا) أَحَداً عَنْ حَاجَتِهِ، وَ لاَ تَحْبِسُوهُ عَنْ طَلِبَتِهِ، وَ لاَ تَبِيعُنَّ لِلنَّاسِ فِي الْخَرَاجِ كِسْوَةَ شِتَأٍ وَ لاَ صَيْفٍ، وَ لاَ دَابَّةً يَعْتَمِلُونَ عَلَيْهَا، وَ لاَ عَبْداً، وَ لاَ تَضْرِبُنَّ أَحَداً سَوْطاً لِمَكَانِ دِرْهَمٍ، وَ لاَ تَمَسُّنَّ مَالَ أَحَدٍ مِنَ النَّاسِ، مُصَلِّ وَ لاَ مُعَاهَدٍ، إِلا أَنْ تَجِدُوا فَرَساض أَوْ سِلاَحاً يُعْدَى بِهِ عَلَى أَهْلِ الْإِسْلاَمِ، فَإِنَّهُ لاَ يَنْبَغِي لِلْمُسْلِمِ أَنْ يَدَعَ ذَلِكَ فِي أَيْدِي أَعْدَاءِ الْإِسْلاَمِ

ভূমিকর আদায়কারীদের প্রতি

আল্লাহর বান্দা ও আমিরুল মোমেনিন আলীর কাছ থেকে কর আদায়কারীদের প্রতিঃ

যে লোক কোথায় যাচ্ছে তা মনে করে ভয় পায় না সে নিজের জন্য অগ্রীম কিছু প্রেরণ করতে পারে না ,যা তাকে রক্ষা করবে। জেনে রাখো ,তোমাদের ওপর অতি অল্প দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে কিন্তু এর পুরস্কার অত্যধিক। এতে বিদ্রোহ ও অবাধ্যতার জন্য কোন শাস্তি না থাকলেও আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকার পুরস্কার অপরিসীম। মানুষের সাথে ন্যায় সঙ্গত আচরণ করো এবং ধৈর্য্য সাথে মানুষের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে কাজ করো। কারণ তোমরা হলে জনগণের খাজাঞ্চি ,সমাজের প্রতিনিধি এবং ইমামদের দূত।

কোন মানুষকে তার প্রয়োজন থেকে বঞ্চিত করো না এবং তার চাহিদা পূরণে তাকে বাধাগ্রস্থ করো না। জনগণের কাছ থেকে খারাজ (কর) আদায় করার জন্য তাদের কাপড় চোপড় বিক্রি করতে বাধ্য করো না ,তাদের কাজের উপযোগী পশু ও দাসদাসী বিক্রি করতে বাধ্য করো না। একটি দিরহামের জন্যও কাউকে বেত্রাঘাত করো না। কোন মুসলিম ও নিরাপত্তা প্রদত্ত অমুসলিমের সম্পত্তি স্পর্শ করো না। কিন্তু যদি তোমরা দেখা যে ,তাদের অস্ত্র ও ঘোড়া মুসলিমদেরকে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত করে তবে তা নিয়ে নিয়ো। কারণ ইসলামের শত্রুদের কাছে এসব রাখতে দেয়া মুসলিমদের উচিত হবে না - এতে শত্রু ইসলামের বিরুদ্ধে শক্তি সঞ্চার করতে পারে।

কোন সৎ পরামর্শ প্রদানে ,সৈন্যবাহিনীর প্রতি ভাল ব্যবহার করাতে ,প্রজাদের প্রতি দয়া দেখাতে এবং আল্লাহর দ্বীনে দৃঢ় থাকতে অমনোযোগী হয়ো না। আল্লাহর পথে সংগ্রাম কর ;এটা তোমাদের অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য। মহিমান্বিত আল্লাহ্ চান আমরা এবং তোমরা যেন তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি এবং আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে যেন তাঁর দ্বীনের সহায়তা করি। আল্লাহ সর্বশক্তিমান ,চির সমুন্নত ও চির মহিমান্বিত ।

পত্র - ৫২

و من كتاب لهعليه‌السلام

إلى أُمَرأ البِلادِ فِي مَعْنَى الصَّلاةِ

أَمَّا بَعْدُ، فَصَلُّوا بِالنَّاسِ الظُّهْرَ حَتَّى تَفِي ءَ الشَّمْسُ مِنْ مِثْلَ مَرْبِضِ الْعَنْزِ، وَ صَلُّوا بِهِمُ الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ بَيْضَأُ حَيَّةٌ فِي عُضْوٍ مِنَ النَّهَارِ حِينَ يُسَارُ فِيهَا فَرْسَخَانِ، وَ صَلُّوا بِهِمُ الْمَغْرِبَ حِينَ يُفْطِرُ الصَّائِمُ وَ يَدْفَعُ الْحَاجُّ إِلَى مِنًى وَ صَلُّوا بِهِمُ الْعِشَأَ حِينَ يَتَوَارَى الشَّفَقُ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ، وَ صَلُّوا بِهِمُ الْغَدَاةَ وَالرَّجُلُ يَعْرِفُ وَجْهَ صَاحِبِهِ، وَ صَلُّوا بِهِمْ صَلاَةَ أَضْعَفِهِمْ وَ لاَ تَكُونُوا فَتَّانِينَ.

সালাত সম্পর্কে বিভিন্ন স্থানের গভর্ণরদের প্রতি

দেয়ালের ছায়া যখন দেয়ালের সমান হয়ে যায় তখন জনগণের সাথে জোহর সালাত আদায় করো। সূর্য অস্ত যাবার পূর্বে এতটা সময় হাতে রেখে আছরের সালাত আদায় করো যেন একজন লোক দুই ফরসাখ (প্রায় ছয় মাইল) পথ অতিক্রম করতে পারে। হাজীগণ যখন আরাফাত থেকে মিনার দিকে দৌড়াতে থাকে এবং সিয়ামকারীগণ সিয়াম শেষ করে তখন মাগরিবের সালাত করো। গোধূলী অদৃশ্য হবার পর থেকে রাতের এক - তৃতীয়াংশের মধ্যে এশা আদায় করো। যখন একজন অপরজনকে স্পষ্ট দেখতে পায় তখন ফজর আদায় করে । জনগণের সাথে এভাবে সালাত আদায় করবে যেন তাদের মধ্যকার দুর্বল ব্যক্তিও কষ্ট না পায়।

পত্র - ৫৩

و من کتاب لهعليه‌السلام

كَتَبَهُ لِلا شْتَرِ النَّخِعِّي - رَحِمَهُ اللّهُ - لَمَا وَلاَهُ عَلى مِصْرَ

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

هَذَا مَا أَمَرَ بِهِ عَبْدُاللَّهِ عَلِيُّ أَمِيرُ الْمُؤْمِنِينَ مَالِكَ بْنَ الْحَارِثِ الْأَشْتَرَ فِي عَهْدِهِ إِلَيْهِ، حِينَ وَلا هُ مِصْرَ: جِبَايَةَ خَرَاجِهَا، وَ جِهَادَ عَدُوِّهَا، وَاسْتِصْلاَحَ أَهْلِهَا، وَ عِمَارَةَ بِلاَدِهَا.

ضرورة بناء الذات

أَمَرَهُ بِتَقْوَى اللَّهِ، وَ إِيْثَارِ طَاعَتِهِ، وَاتِّبَاعِ مَا أَمَرَ بِهِ فِي كِتَابِهِ، مِنْ فَرَائِضِهِ وَ سُنَنِهِ، الَّتِي لاَ يَسْعَدُ أَحَدٌ إِلا بِاتِّبَاعِهَا، وَ لاَ يَشْقَى إِلا مَعَ جُحُودِهَا وَ إِضَاعَتِهَا، وَ أَنْ يَنْصُرَ اللَّهَ سُبْحَانَهُ بِقَلْبِهِ وَ يَدِهِ وَ لِسَانِهِ؛ فَإِنَّهُ جَلَّ اسْمُهُ، قَدْ تَكَفَّلَ بِنَصْرِ مَنْ نَصَرَهُ، وَ إِعْزَازِ مَنْ أَعَزَّهُ.

وَ أَمَرَهُ أَنْ يَكْسِرَ نَفْسَهُ مِنَ عِنْدَ الشَّهَوَاتِ، وَ يَزَعَهَا عِنْدَ الْجَمَحَاتِ، فَإِنَّ النَّفْسَ أَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلا مَا رَحِمَ اللَّهُ.

اخلاق القیادة

ثُمَّ اعْلَمْ، يَا مَالِكُ، أَنِّي قَدْ وَجَّهْتُكَ إِلَى بِلاَدٍ قَدْ جَرَتْ عَلَيْهَا دُوَلٌ قَبْلَكَ، مِنْ عَدْلٍ وَ جَوْرٍ، وَ أَنَّ النَّاسَ يَنْظُرُونَ مِنْ أُمُورِكَ فِي مِثْلِ مَا كُنْتَ تَنْظُرُ فِيهِ مِنْ أُمُورِ الْوُلاَةِ قَبْلَكَ، وَ يَقُولُونَ فِيكَ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِيهِمْ، وَ إِنَّمَا يُسْتَدَلُّ عَلَى الصَّالِحِينَ بِمَا يُجْرِي اللَّهُ لَهُمْ عَلَى أَلْسُنِ عِبَادِهِ. فَلْيَكُنْ أَحَبَّ الذَّخَائِرِ إِلَيْكَ ذَخِيرَةُ الْعَمَلِ الصَّالِحِ، فَامْلِكْ هَوَاكَ وَ شُحَّ بِنَفْسِكَ عَمَّا لاَ يَحِلُّ لَكَ، فَإِنَّ الشُّحَّ بِالنَّفْسِ الْإِنْصَافُ مِنْهَا فِيمَا أَحَبَّتْ أَوْ كَرِهَتْ.

وَ أَشْعِرْ قَلْبَكَ الرَّحْمَةَ لِلرَّعِيَّةِ، وَ الْمَحَبَّةَ لَهُمْ، وَ اللُّطْفَ بِهِمْ، وَ لاَ تَكُونَنَّ عَلَيْهِمْ سَبُعاً ضَارِياً تَغْتَنِمُ أَكْلَهُمْ، فَإِنَّهُمْ صِنْفَانِ: إِمَّا أَخٌ لَكَ فِي الدِّينِ، وَ إِمَّا نَظِيرٌ لَكَ فِي الْخَلْقِ، يَفْرُطُ مِنْهُمُ الزَّلَلُ وَ تَعْرِضُ لَهُمُ الْعِلَلُ، وَ یُؤْتَى عَلَى أَيْدِيهِمْ فِي الْعَمْدِ وَ الْخَطَإِ، فَأَعْطِهِمْ مِنْ عَفْوِكَ وَ صَفْحِكَ مِثْلِ الَّذِي تُحِبُّ وَ تَرْضَى أَنْ يُعْطِيَكَ اللَّهُ مِنْ عَفْوِهِ وَ صَفْحِهِ. فَإِنَّكَ فَوْقَهُمْ، وَ وَالِي الْأَمْرِ عَلَيْكَ فَوْقَكَ وَ اللَّهُ فَوْقَ مَنْ وَلاكَ! وَ قَدِ اسْتَكْفَاكَ أَمْرَهُمْ، وَ ابْتَلاَكَ بِهِمْ. وَ لاَ تَنْصِبَنَّ نَفْسَكَ لِحَرْبِ اللَّهِ، فَإِنَّهُ لاَ يَدَ لَكَ بِنِقْمَتِهِ، وَ لاَ غِنَى بِكَ عَنْ عَفْوِهِ وَ رَحْمَتِهِ. وَ لاَ تَنْدَمَنَّ عَلَى عَفْوٍ، وَ لاَ تَبْجَحَنَّ بِعُقُوبَةٍ، وَ لاَ تُسْرِعَنَّ إِلَى بَادِرَةٍ وَجَدْتَ مِنْهَا مَنْدُوحَةً، وَ لاَ تَقُولَنَّ إِنِّي مُؤَمَّرٌ آمُرُ فَأُطَاعُ فَإِنَّ ذَلِكَ إِدْغَالٌ فِي الْقَلْبِ وَ مَنْهَكَةٌ لِلدِّينِ وَ تَقَرُّبٌ مِنَ الْغِيَرِ. وَ إِذَا أَحْدَثَ لَكَ مَا أَنْتَ فِيهِ مِنْ سُلْطَانِكَ أُبَّهَةً أَوْ مَخِيلَةً، فَانْظُرْ إِلَى عِظَمِ مُلْكِ اللَّهِ فَوْقَكَ، وَ قُدْرَتِهِ مِنْكَ عَلَى مَا لاَ تَقْدِرُ عَلَيْهِ مِنْ نَفْسِكَ، فَإِنَّ ذَلِكَ يُطَامِنُ إِلَيْكَ مِنْ طِمَاحِكَ، وَ يَكُفُّ عَنْكَ مِنْ غَرْبِكَ، وَ يَفِي ءُ إِلَيْكَ بِمَا عَزَبَ عَنْكَ مِنْ عَقْلِكَ!. إِيَّاكَ وَ مُسَامَاةَ اللَّهِ فِي عَظَمَتِهِ، وَ التَّشَبُّهَ بِهِ فِي جَبَرُوتِهِ، فَإِنَّ اللَّهَ يُذِلُّ كُلَّ جَبَّارٍ، وَ يُهِينُ كُلَّ مُخْتَالٍ.

أَنْصِفِ اللَّهَ وَ أَنْصِفِ النَّاسَ مِنْ نَفْسِكَ، وَ مِنْ خَاصَّةِ أَهْلِكَ، وَ مَنْ لَكَ فِيهِ هَوًى مِنْ رَعِيَّتِكَ، فَإِنَّكَ إِلا تَفْعَلْ تَظْلِمْ! وَ مَنْ ظَلَمَ عِبَادَ، اللَّهِ كَانَ اللَّهُ خَصْمَهُ دُونَ عِبَادِهِ، وَ مَنْ خَاصَمَهُ اللَّهُ أَدْحَضَ حُجَّتَهُ، وَ كَانَ لِلَّهِ حَرْبا حَتَّى يَنْزِعَ أو يَتُوبَ. وَ لَيْسَ شَيْءٌ أَدْعَى إِلَى تَغْيِيرِ نِعْمَةِ اللَّهِ وَ تَعْجِيلِ نِقْمَتِهِ مِنْ إِقَامَةٍ عَلَى ظُلْمٍ، فَإِنَّ اللَّهَ يَسْمَعْ دَعْوَةَ الْمُضْطَهَدِينَ وَ هُوَ لِلظَّالِمِينَ بِالْمِرْصَادِ.

کیفیّة جلب رضا العامة او رضا الخاصّة

وَ لْيَكُنْ أَحَبَّ الْأُمُورِ إِلَيْكَ أَوْسَطُهَا فِي الْحَقِّ، وَ أَعَمُّهَا فِي الْعَدْلِ، وَ أَجْمَعُهَا لِرِضَى الرَّعِيَّةِ، فَإِنَّ سُخْطَ الْعَامَّةِ يُجْحِفُ بِرِضَى الْخَاصَّةِ، وَ إِنَّ سُخْطَ الْخَاصَّةِ يُغْتَفَرُ مَعَ رِضَى الْعَامَّةِ. وَ لَيْسَ أَحَدٌ مِنَ الرَّعِيَّةِ أَثْقَلَ عَلَى الْوَالِي مَئُونَةً فِي الرَّخَاءِ، وَ أَقَلَّ مَعُونَةً لَهُ فِي الْبَلاَءِ، وَ أَكْرَهَ لِلْإِنْصَافِ، وَ أَسْأَلَ بِالْإِلْحَافِ، وَ أَقَلَّ شُكْرا عِنْدَ الْإِعْطَاءِ، وَ أَبْطَأَ عُذْرا عِنْدَ الْمَنْعِ، وَ أَضْعَفَ صَبْراً عِنْدَ مُلِمَّاتِ الدَّهْرِ مِنْ أَهْلِ الْخَاصَّةِ. وَ إِنَّمَا عَمُودُ الدِّينِ، وَ جِمَاعُ الْمُسْلِمِينَ، وَ الْعُدَّةُ لِلْأَعْدَاءِ، الْعَامَّةُ مِنَ الْأُمَّةِ؛ فَلْيَكُنْ صِغْوُكَ لَهُمْ، وَ مَيْلُكَ مَعَهُمْ.

وَ لْيَكُنْ أَبْعَدَ رَعِيَّتِكَ مِنْكَ، وَ أَشْنَأَهُمْ عِنْدَكَ، أَطْلَبُهُمْ لِمَعَايِبِ النَّاسِ؛ فَإِنَّ فِي النَّاسِ عُيُوباً الْوَالِي أَحَقُّ مَنْ سَتَرَهَا، فَلاَ تَكْشِفَنَّ عَمَّا غَابَ عَنْكَ مِنْهَا، فَإِنَّمَا عَلَيْكَ تَطْهِيرُ مَا ظَهَرَ لَكَ، وَ اللَّهُ يَحْكُمُ عَلَى مَا غَابَ عَنْكَ، فَاسْتُرِ الْعَوْرَةَ مَا اسْتَطَعْتَ، يَسْتُرِ اللَّهُ مِنْكَ مَا تُحِبُّ سَتْرَهُ مِنْ رَعِيَّتِكَ. أَطْلِقْ عَنِ النَّاسِ عُقْدَةَ كُلِّ حِقْدٍ، وَ اقْطَعْ عَنْكَ سَبَبَ كُلِّ وِتْرٍ، وَ تَغَابَ عَنْ كُلِّ مَا لاَ يَصِحُ لَكَ وَ لاَ تَعْجَلَنَّ إِلَى تَصْدِيقِ سَاعٍ، فَإِنَّ السَّاعِيَ غَاشُّ، وَ إِنْ تَشَبَّهَ بِالنَّاصِحِينَ.

المشورة

وَ لاَ تُدْخِلَنَّ فِي مَشُورَتِكَ بَخِيلاً يَعْدِلُ بِكَ عَنِ الْفَضْلِ، وَ يَعِدُكَ الْفَقْرَ، وَ لاَ جَبَاناً يُضْعِفُكَ عَنِ الْأُمُورِ، وَ لاَ حَرِيصاً يُزَيِّنُ لَكَ الشَّرَهَ بِالْجَوْرِ، فَإِنَّ الْبُخْلَ وَ الْجُبْنَ وَ الْحِرْصَ غَرَائِزُ شَتَّى يَجْمَعُهَا سُوءُ الظَّنِّ بِاللَّهِ.

إِنَّ شَرَّ وُزَرَائِكَ مَنْ كَانَ لِلْأَشْرَارِ قَبْلَكَ وَزِيراً، وَ مَنْ شَرِكَهُمْ فِي الْآثَامِ فَلاَ يَكُونَنَّ لَكَ بِطَانَةً، فَإِنَّهُمْ أَعْوَانُ الْأَثَمَةِ (الائمة)، وَ إِخْوَانُ الظَّلَمَةِ، وَ أَنْتَ وَاجِدٌ مِنْهُمْ خَيْرَ الْخَلَفِ مِمَّنْ لَهُ مِثْلُ آرَائِهِمْ وَ نَفَاذِهِمْ وَ لَيْسَ عَلَيْهِ مِثْلُ آصَارِهِمْ وَ أَوْزَارِهِمْ وَ آثَامِهِمْ. مِمَّنْ لَمْ يُعَاوِنْ ظَالِما عَلَى ظُلْمِهِ، وَ لاَ آثِما عَلَى إِثْمِهِ، أُولَئِكَ أَخَفُّ عَلَيْكَ مَؤُونَةً، وَ أَحْسَنُ لَكَ مَعُونَةً، وَ أَحْنَى عَلَيْكَ عَطْفاً، وَ أَقَلُّ لِغَيْرِكَ إِلْفا، فَاتَّخِذْ أُولَئِكَ خَاصَّةً لِخَلَوَاتِكَ وَ حَفَلاَتِكَ، ثُمَّ لْيَكُنْ آثَرُهُمْ عِنْدَكَ أَقْوَلَهُمْ بِمُرِّ الْحَقِّ لَكَ، وَ أَقَلَّهُمْ مُسَاعَدَةً فِيمَا يَكُونُ مِنْكَ مِمَّا كَرِهَ اللَّهُ لِأَوْلِيَائِهِ، وَاقِعاً ذَلِكَ مِنْ هَوَاكَ حَيْثُ وَقَعَ.

وَ الْصَقْ بِأَهْلِ الْوَرَعِ وَ الصِّدْقِ، ثُمَّ رُضْهُمْ عَلَى أَنْ لا يُطْرُوكَ وَ لاَ يَبْجَحُوكَ بِبَاطِلٍ لَمْ تَفْعَلْهُ، فَإِنَّ كَثْرَةَ الْإِطْرَأِ تُحْدِثُ الزَّهْوَ وَ تُدْنِي مِنَ الْعِزَّةِ.

وَ لاَ يَكُونَنَّ الْمُحْسِنُ وَ الْمُسِي ءُ عِنْدَكَ بِمَنْزِلَةٍ سَوَأٍ، فَإِنَّ فِي ذَلِكَ تَزْهِيدا لِأَهْلِ الْإِحْسَانِ فِي الْإِحْسَانِ، وَ تَدْرِيبا لِأَهْلِ الْإِسَأَةِ عَلَى الْإِسَأَةِ! وَ أَلْزِمْ كُلًّا مِنْهُمْ مَا أَلْزَمَ نَفْسَهُ. وَ اعْلَمْ أَنَّهُ لَيْسَ شَيْءٌ بِأَدْعَى إِلَى حُسْنِ ظَنِّ والٍ بِرَعِيَّتِهِ مِنْ إِحْسَانِهِ إِلَيْهِمْ، وَ تَخْفِيفِهِالْمَؤُونَاتِ عَنْهُمْ وَ تَرْكِ اسْتِكْرَاهِهِ إِيَّاهُمْ عَلَى مَا لَيْسَ لَهُ قِبَلَهُمْ. فَلْيَكُنْ مِنْكَ فِي ذَلِكَ أَمْرٌ يَجْتَمِعُ لَكَ بِهِ حُسْنُ الظَّنِّ بِرَعِيَّتِكَ، فَإِنَّ حُسْنَ الظَّنِّ يَقْطَعُ عَنْكَ نَصَبا طَوِيلاً وَ إِنَّ أَحَقَّ مَنْ حَسُنَ ظَنُّكَ بِهِ لَمَنْ حَسُنَ بَلاَؤُكَ عِنْدَهُ وَ إِنَّ أَحَقَّ مَنْ سَأَ ظَنُّكَ بِهِ لَمَنْ سَأَ بَلاَؤُكَ عِنْدَهُ. وَ لاَ تَنْقُضْ سُنَّةً صَالِحَةً عَمِلَ بِهَا صُدُورُ هَذِهِ الْأُمَّةِ، وَ اجْتَمَعَتْ بِهَا الْأُلْفَةُ، وَ صَلَحَتْ عَلَيْهَا الرَّعِيَّةُ. وَ لاَ تُحْدِثَنَّ سُنَّةً تَضُرُّ بِشَيْءٍ مِنْ مَاضِي تِلْكَ السُّنَنِ، فَيَكُونَ الْأَجْرُ لِمَنْ سَنَّهَا، وَ الْوِزْرُ عَلَيْكَ بِمَا نَقَضْتَ مِنْهَا. وَ أَكْثِرْ مُدَارَسَةَ الْعُلَمَاءِ، وَ مُثافَتَةَ الْحُكَمَاءِ، فِي تَثْبِيتِ مَا صَلَحَ عَلَيْهِ أَمْرُ بِلاَدِكَ وَ إِقَامَةِ مَا اسْتَقَامَ بِهِ النَّاسُ قَبْلَكَ.

التعرفة بالطبقات الاجتماعیّة

وَ اعْلَمْ أَنَّ الرَّعِيَّةَ طَبَقَاتٌ لاَ يَصْلُحُ بَعْضُهَا إِلا بِبَعْضٍ، وَ لاَ غِنَى بِبَعْضِهَا عَنْ بَعْضٍ: فَمِنْهَا جُنُودُ اللَّهِ، وَ مِنْهَا كُتَّابُ الْعَامَّةِ وَ الْخَاصَّةِ، وَ مِنْهَا قُضَاةُ الْعَدْلِ، وَ مِنْهَا عُمَّالُ الْإِنْصَافِ وَ الرِّفْقِ، وَ مِنْهَا أَهْلُ الْجِزْيَةِ وَ الْخَرَاجِ مِنْ أَهْلِ الذِّمَّةِ وَ مُسْلِمَةِ النَّاسِ، وَ مِنْهَا التُّجَّارُ وَ أَهْلُ الصِّنَاعَاتِ وَ مِنْهَا الطَّبَقَةُ السُّفْلَى مِنْ ذَوِي الْحَاجَةِ وَ الْمَسْكَنَةِ وَ كُلُّ قَدْ سَمَّى اللَّهُ لَهُ سَهْمَهُ، وَ وَضَعَ عَلَى حَدِّهِ فَرِيضَةً فِي كِتَابِهِ أَوْ سُنَّةِ نَبِيِّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ‍ عَهْداً مِنْهُ عِنْدَنَا مَحْفُوظاً. فَالْجُنُودُ، بِإِذْنِ اللَّهِ، حُصُونُ الرَّعِيَّةِ، وَ زَيْنُ الْوُلاَةِ، وَ عِزُّ الدِّينِ، وَ سُبُلُ الْأَمْنِ، وَ لَيْسَ تَقُومُ الرَّعِيَّةُ إِلا بِهِمْ. ثُمَّ لا قِوامَ لِلْجُنُودِ اِلّا بِما يُخْرِجُ اللّهُ لَهُمْ مِنَ الْخَرَاجِ الَّذِي يَقْوَوْنَ بِهِ عَلَى في جِهَادِ عَدُوِّهِمْ، وَ يَعْتَمِدُونَ عَلَيْهِ فِيمَا يُصْلِحُهُمْ، وَ يَكُونُ مِنْ وَرَأِ حَاجَتِهِمْ. ثُمَّ لاَ قِوَامَ لِهَذَيْنِ الصِّنْفَيْنِ إِلا بِالصِّنْفِ الثَّالِثِ مِنَ الْقُضَاةِ وَ الْعُمَّالِ وَ الْكُتَّابِ، لِمَا يُحْكِمُونَ مِنَ الْمَعَاقِدِ، وَ يَجْمَعُونَ مِنَ الْمَنَافِعِ، وَ يُؤْتَمَنُونَ عَلَيْهِ مِنْ خَوَاصِّ الْأُمُورِ وَ عَوَامِّهَا. وَ لاَ قِوَامَ لَهُمْ جَمِيعا إِلا بِالتُّجَّارِ وَ ذَوِي الصِّنَاعَاتِ فِيمَا يَجْتَمِعُونَ عَلَيْهِ مِنْ مَرَافِقِهِمْ وَ يُقِيمُونَهُ مِنْ أَسْوَاقِهِمْ وَ يَكْفُونَهُمْ مِنَ التَّرَفُّقِ بِأَيْدِيهِمْ مِما لاَ يَبْلُغُهُ رِفْقُ غَيْرِهِمْ. ثُمَّ الطَّبَقَةُ السُّفْلَى مِنْ أَهْلِ الْحَاجَةِ وَ الْمَسْكَنَةِ الَّذِينَ يَحِقُّ رِفْدُهُمْ وَ مَعُونَتُهُمْ. وَ فِي اللَّهِ لِكُلِّ سَعَةٌ، وَ لِكُلِّ عَلَى الْوَالِي حَقُّ بِقَدْرِ مَا يُصْلِحُهُ، وَ لَيْسَ يَخْرُجُ الْوَالِي مِنْ حَقِيقَةِ مَا أَلْزَمَهُ اللَّهُ مِنْ ذَلِكَ إِلا بِالاِهْتِمَامِ وَ الاِسْتِعَانَةِ بِاللَّهِ، وَ تَوْطِينِ نَفْسِهِ عَلَى لُزُومِ الْحَقِّ، وَ الصَّبْرِ عَلَيْهِ فِيمَا خَفَّ عَلَيْهِ أَوْ ثَقُلَ.

الاوّل - أفضل العسکریین

فَوَلِّ مِنْ جُنُودِكَ أَنْصَحَهُمْ فِي نَفْسِكَ لِلَّهِ وَ لِرَسُولِهِ وَ لِإِمَامِكَ، وَ أَنْقَاهُمْ جَيْباً وَ أَفْضَلَهُمْ حِلْماً، مِمَّنْ يُبْطِئُ عَنِ الْغَضَبِ، وَ يَسْتَرِيحُ إِلَى الْعُذْرِ، وَ يَرْأَفُ بِالضُّعَفَاء،ِ وَ يَنْبُو عَلَى الْأَقْوِيَاءِ وَ مِمَّنْ لاَ يُثِيرُهُ الْعُنْفُ، وَ لاَ يَقْعُدُ بِهِ الضَّعْفُ. ثُمَّ الْصَقْ بِذَوِي الْمُرُوءَاتِ وَ الْأَحْسَابِ، وَ أَهْلِ الْبُيُوتَاتِ الصَّالِحَةِ، وَ السَّوَابِقِ الْحَسَنَةِ؛ ثُمَّ أَهْلِ النَّجْدَةِ وَ الشَّجَاعَةِ، وَ السَّخَأِ وَ السَّمَاحَةِ؛ فَإِنَّهُمْ جِمَاعٌ مِنَ الْكَرَمِ وَ شُعَبٌ مِنَ الْعُرْفِ. ثُمَّ تَفَقَّدْ مِنْ أُمُورِهِمْ مَا يَتَفَقَّدُ الْوَ الِدَانِ مِنْ وَلَدِهِمَا، وَ لاَ يَتَفَاقَمَنَّ فِي نَفْسِكَ شَيْءٌ قَوَّيْتَهُمْ بِهِ، وَ لاَ تَحْقِرَنَّ لُطْفا تَعَاهَدْتَهُمْ بِهِ وَ إِنْ قَلَّ؛ فَإِنَّهُ دَاعِيَةٌ لَهُمْ إِلَى بَذْلِ النَّصِيحَةِ لَكَ، وَ حُسْنِ الظَّنِّ بِكَ. وَ لاَ تَدَعْ تَفَقُّدَ لَطِيفِ أُمُورِهِمُ اتِّكَالاً عَلَى جَسِيمِهَا، فَإِنَّ لِلْيَسِيرِ مِنْ لُطْفِكَ مَوْضِعا يَنْتَفِعُونَ بِهِ وَ لِلْجَسِيمِ مَوْقِعا لاَ يَسْتَغْنُونَ عَنْهُ. وَ لْيَكُنْ آثَرُ رُؤُوسِ جُنْدِكَ عِنْدَكَ مَنْ وَاسَاهُمْ فِي مَعُونَتِهِ وَ أَفْضَلَ عَلَيْهِمْ مِنْ جِدَتِهِ، بِمَا يَسَعُهُمْ وَ يَسَعُ مَنْ وَرَأَهُمْ مِنْ خُلُوفِ أَهْلِيهِمْ، حَتَّى يَكُونَ هَمُّهُمْ هَمّا وَاحِدا فِي جِهَادِ الْعَدُوِّ، فَإِنَّ عَطْفَكَ عَلَيْهِمْ يَعْطِفُ قُلُوبَهُمْ عَلَيْكَ وَ إِنَّ أَفْضَلَ قُرَّةِ عَيْنِ الْوُلاَةِ اسْتِقَامَةُ الْعَدْلِ فِي الْبِلاَدِ، وَ ظُهُورِ مَوَدَّةِ الرَّعِيَّةِ و إِنَّهُ لاَ تَظْهَرُ مَوَدَّتُهُمْ إِلا بِسَلاَمَةِ صُدُورِهِمْ، وَ لاَ تَصِحُّ نَصِيحَتُهُمْ إِلا بِحِيطَتِهِمْ عَلَى وُلاَةِ الْأُمُورِهِمْ، وَ قِلَّةِ اسْتَثْقَالِ دُوَلِهِمْ، وَ تَرْكِ اسْتِبْطَأِ انْقِطَاعِ مُدَّتِهِمْ. فَافْسَحْ فِي آمَالِهِمْ، وَ وَاصِلْ فِي حُسْنِ الثَّنَأِ عَلَيْهِمْ، وَ تَعْدِيدِ مَا أَبْلَى ذَوُو الْبَلاَءِ مِنْهُمْ؛ فَإِنَّ كَثْرَةَ الذِّكْرِ لِحُسْنِ أَفْعَالِهِمْ تَهُزُّ الشُّجَاعَ، وَ تُحَرِّضُ النَّاكِلَ، إِنْ شَأَ اللَّهُ تَعالى.

ثُمَّ اعْرِفْ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ مَا أَبْلَى، وَ لاَ تُضِيفَنَّ بَلاَءَ امْرِئٍ إِلَى غَيْرِهِ وَ لاَ تُقَصِّرَنَّ بِهِ دُونَ غَايَةِ بَلاَئِهِ، وَ لاَ يَدْعُوَنَّكَ شَرَفُ امْرِئٍ إِلَى أَنْ تُعْظِمَ مِنْ بَلاَئِهِ مَا كَانَ صَغِيراً، وَ لاَ ضَعَةُ امْرِئٍ إِلَى أَنْ تَسْتَصْغِرَ مِنْ بَلاَئِهِ مَا كَانَ عَظِيماً. وَ ارْدُد إِلَى اللَّهِ وَ رَسُولِهِ مَا يُضْلِعُكَ مِنَ الْخُطُوبِ وَ يَشْتَبِهُ عَلَيْكَ مِنَ الْأُمُورِ؛ فَقَدْ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى سُبْحانَهُ لِقَوْمٍ أَحَبَّ إِرْشَادَهُمْ:( يا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللّهَ وَ أَطِيعُوا الرَّسُولَ وَ أُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ، فَإِنْ تَنازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَ الرَّسُولِ ) فَالرَّدُّ إِلَى اللَّهِ: الْأَخْذُ بِمُحْكَمِ كِتَابِهِ وَ الرَّدُّ إِلَى الرَّسُولِ: الْأَخْذُ بِسُنَّتِهِ الْجَامِعَةِ غَيْرِ الْمُفَرِّقَةِ.

الثانی - افضل القضاة

ثُمَّ اخْتَرْ لِلْحُكْمِ بَيْنَ النَّاسِ أَفْضَلَ رَعِيَّتِكَ فِي نَفْسِكَ، مِمَّنْ لاَ تَضِيقُ بِهِ الْأُمُورُ، وَ لاَ تُمَحِّكُهُ الْخُصُومُ، وَ لاَ يَتَمَادَى فِي الزَّلَّةِ، وَ لاَ يَحْصَرُ مِنَ الْفَيْءِ إِلَى الْحَقِّ إِذَا عَرَفَهُ، وَ لاَ تُشْرِفُ نَفْسُهُ عَلَى طَمَعٍ وَ لاَ يَكْتَفِي بِأَدْنَى فَهْمٍ دُونَ أَقْصَاهُ؛ وَ أَوْقَفَهُمْ فِي الشُّبُهَاتِ، وَ آخَذَهُمْ بِالْحُجَجِ، وَ أَقَلَّهُمْ تَبَرُّما بِمُرَاجَعَةِ الْخَصْمِ، وَ أَصْبَرَهُمْ عَلَى تَكَشُّفِ الْأُمُورِ، وَ أَصْرَمَهُمْ عِنْدَ اِيضاح الْحُكْمِ، مِمَّنْ لاَ يَزْدَهِيهِ إِطْرَاءٌ وَ لاَ يَسْتَمِيلُهُ إِغْرَاءٌ، وَ أُولَئِكَ قَلِيلٌ. ثُمَّ أَكْثِرْ تَعَاهُدَ (تعهّد) قَضَائِهِ وَ افْسَحْ لَهُ فِي الْبَذْلِ مَا يُزِيلُ عِلَّتَهُ وَ تَقِلُّ مَعَهُ حَاجَتُهُ إِلَى النَّاسِ. وَ أَعْطِهِ مِنَ الْمَنْزِلَةِ لَدَيْكَ مَا لاَ يَطْمَعُ فِيهِ غَيْرُهُ مِنْ خَاصَّتِكَ، لِيَأْمَنَ بِذَلِكَ اغْتِيَالَ (اغتیاب) الرِّجَالِ لَهُ عِنْدَكَ. فَانْظُرْ فِي ذَلِكَ نَظَرا بَلِيغا، فَإِنَّ هَذَا الدِّينَ قَدْ كَانَ أَسِيرا فِي أَيْدِي الْأَشْرَارِ، يُعْمَلُ فِيهِ بِالْهَوَى وَ تُطْلَبُ بِهِ الدُّنْيَا.

الثالث - افضل المسؤولین

ثُمَّ انْظُرْ فِي أُمُورِ عُمَّالِكَ فَاسْتَعْمِلْهُمُ اخْتِبَاراً (اختیاراً)، وَ لاَ تُوَلِّهِمْ مُحَابَاةً وَ أَثَرَةً، فَإِنَّهُمَا جِمَاعٌ مِنْ شُعَبِ الْجَوْرِ وَ الْخِيَانَةِ. وَ تَوَخَّ مِنْهُمْ أَهْلَ التَّجْرِبَةِ (النصحیة) وَ الْحَيَاءِ مِنْ أَهْلِ الْبُيُوتَاتِ الصَّالِحَةِ، وَ الْقَدَمِ فِي الْإِسْلاَمِ الْمُتَقَدِّمَةِ، فَإِنَّهُمْ أَكْرَمُ أَخْلاَقاً، وَ أَصَحُّ أَعْرَاضاً (أغراصاً)، وَ أَقَلُّ فِي الْمَطَامِعِ إِشْرَاقاً (اسرافاً)، وَ أَبْلَغُ فِي عَوَاقِبِ الْأُمُورِ نَظَراً. ثُمَّ أَسْبِغْ عَلَيْهِمُ الْأَرْزَاقَ فَإِنَّ ذَلِكَ قُوَّةٌ لَهُمْ عَلَى اسْتِصْلاَحِ أَنْفُسِهِمْ وَ غِنىً لَهُمْ عَنْ تَنَاوُلِ مَا تَحْتَ أَيْدِيهِمْ وَ حُجَّةٌ عَلَيْهِمْ إِنْ خَالَفُوا أَمْرَكَ، أَوْ ثَلَمُوا أَمَانَتَكَ. ثُمَّ تَفَقَّدْ أَعْمَالَهُمْ وَ ابْعَثِ الْعُيُونَ مِنْ أَهْلِ الصِّدْقِ وَ الْوَفَأِ عَلَيْهِمْ، فَإِنَّ تَعَاهُدَكَ فِي السِّرِّ لاِمُورِهِمْ حَدْوَةٌ لَهُمْ عَلَى اسْتِعْمَالِ الْأَمَانَةِ، وَ الرِّفْقِ بِالرَّعِيَّةِ. وَ تَحَفَّظْ مِنَ الْأَعْوَانِ؛ فَإِنْ أَحَدٌ مِنْهُمْ بَسَطَ يَدَهُ إِلَى خِيَانَةٍ اجْتَمَعَتْ بِهَا عَلَيْهِ عِنْدَكَ أَخْبَارُ عُيُونِكَ اكْتَفَيْتَ بِذَلِكَ شَاهِدا، فَبَسَطْتَ عَلَيْهِ الْعُقُوبَةَ فِي بَدَنِهِ، وَ أَخَذْتَهُ بِمَا أَصَابَ مِنْ عَمَلِهِ، ثُمَّ نَصَبْتَهُ بِمَقَامِ الْمَذَلَّةِ، وَ وَسَمْتَهُ بِالْخِيَانَةِ، وَ قَلَّدْتَهُ عَارَ التُّهَمَةِ.

الرابع - صفات الدافعین للزکّاة

وَ تَفَقَّدْ أَمْرَ الْخَرَاجِ بِمَا يُصْلِحُ أَهْلَهُ، فَإِنَّ فِي صَلاَحِهِ وَ صَلاَحِهِمْ صَلاَحا لِمَنْ سِوَاهُمْ، وَ لاَ صَلاَحَ لِمَنْ سِوَاهُمْ إِلا بِهِمْ، لِأَنَّ النَّاسَ كُلَّهُمْ عِيَالٌ عَلَى الْخَرَاجِ وَ أَهْلِهِ وَلْيَكُنْ نَظَرُكَ فِي عِمَارَةِ الْأَرْضِ أَبْلَغَ مِنْ نَظَرِكَ فِي اسْتِجْلاَبِ الْخَرَاجِ، لِأَنَّ ذَلِكَ لاَ يُدْرَكُ إِلا بِالْعِمَارَةِ؛ وَ مَنْ طَلَبَ الْخَرَاجَ بِغَيْرِ عِمَارَةٍ أَخْرَبَ الْبِلاَدَ، وَ أَهْلَكَ الْعِبَادَ، وَ لَمْ يَسْتَقِمْ أَمْرُهُ إِلا قَلِيلاً. فَإِنْ شَكَوْا ثِقَلاً أَوْ عِلَّةً، أَوِ انْقِطَاعَ شِرْبٍ أَوْ بَالَّةٍ، أَوْ إِحَالَةَ أَرْضٍ اغْتَمَرَهَا غَرَقٌ، أَوْ أَجْحَفَ بِهَا عَطَشٌ، خَفَّفْتَ عَنْهُمْ بِمَا تَرْجُو أَنْ يَصْلُحَ بِهِ أَمْرُهُمْ؛ وَ لاَ يَثْقُلَنَّ عَلَيْكَ شَيْءٌ خَفَّفْتَ بِهِ الْمَؤُونَةَ عَنْهُمْ، فَإِنَّهُ ذُخْرٌ يَعُودُونَ بِهِ عَلَيْكَ فِي عِمَارَةِ بِلاَدِكَ وَ تَزْيِينِ وِلاَيَتِكَ، مَعَ اسْتِجْلاَبِكَ حُسْنَ ثَنَائِهِمْ وَ تَبَجُّحِكَ بِاسْتِفَاضَةِ الْعَدْلِ فِيهِمْ، مُعْتَمِدا فَضْلَ قُوَّتِهِمْ بِمَا ذَخَرْتَ عِنْدَهُمْ مِنْ إِجْمَامِكَ لَهُمْ وَ الثِّقَةَ مِنْهُمْ بِمَا عَوَّدْتَهُمْ مِنْ عَدْلِكَ عَلَيْهِمْ وَ رِفْقِكَ بِهِمْ، فَرُبَّمَا حَدَثَ مِنَ الْأُمُورِ مَا إِذَا عَوَّلْتَ فِيهِ عَلَيْهِمْ مِنْ بَعْدُ احْتَمَلُوهُ طَيِّبَةً أَنْفُسُهُمْ بِهِ، فَإِنَّ الْعُمْرَانَ مُحْتَمِلٌ مَا حَمَّلْتَهُ وَ إِنَّمَا يُؤْتَى خَرَابُ الْأَرْضِ مِنْ إِعْوَازِ أَهْلِهَا وَ إِنَّمَا يُعْوِزُ أَهْلُهَا لِإِشْرَافِ أَنْفُسِ الْوُلاَةِ عَلَى الْجَمْعِ وَ سُوءِ ظَنِّهِمْ بِالْبَقَأِ وَ قِلَّةِ انْتِفَاعِهِمْ بِالْعِبَرِ.

الخامس - افضل الکتاب

ثُمَّ انْظُرْ فِي حَالِ كُتَّابِكَ، فَوَلِّ عَلَى أُمُورِكَ خَيْرَهُمْ، وَ اخْصُصْ رَسَائِلَكَ الَّتِي تُدْخِلُ فِيهَا مَكَائِدَكَ وَ أَسْرَارَكَ بِأَجْمَعِهِمْ لِوُجُوهِ صَالِحِ الْأَخْلاَقِ مِمَّنْ لاَ تُبْطِرُهُ الْكَرَامَةُ، فَيَجْتَرِئَ بِهَا عَلَيْكَ فِي خِلاَفٍ لَكَ بِحَضْرَةِ مَلاَ وَ لاَ تَقْصُرُ بِهِ الْغَفْلَةُ عَنْ إِيرَادِ مُكَاتَبَاتِ عُمِّالِكَ عَلَيْكَ، وَ إِصْدَارِ جَوَابَاتِهَا عَلَى الصَّوَابِ عَنْكَ، وَ فِيمَا يَأْخُذُ لَكَ وَ يُعْطِي مِنْكَ، وَ لاَ يُضْعِفُ عَقْدا اعْتَقَدَهُ لَكَ، وَ لاَ يَعْجِزُ عَنْ إِطْلاَقِ مَا عُقِدَ عَلَيْكَ، وَ لاَ يَجْهَلُ مَبْلَغَ قَدْرِ نَفْسِهِ فِي الْأُمُورِ، فَإِنَّ الْجَاهِلَ بِقَدْرِ نَفْسِهِ يَكُونُ بِقَدْرِ غَيْرِهِ أَجْهَلَ. ثُمَّ لاَ يَكُنِ اخْتِيَارُكَ إِيَّاهُمْ عَلَى فِرَاسَتِكَ وَ اسْتِنَامَتِكَ وَ حُسْنِ الظَّنِّ مِنْكَ، فَإِنَّ الرِّجَالَ يَتَعَرَّفُونَ لِفِرَاسَاتِ الْوُلاَةِ بِتَصَنُّعِهِمْ وَ حُسْنِ خِدْمَتِهِمْ وَ لَيْسَ وَرَأَ ذَلِكَ مِنَ النَّصِيحَةِ وَ الْأَمَانَةِ شَيْءٌ وَ لَكِنِ اخْتَبِرْهُمْ بِمَا وُلُّوا لِلصَّالِحِينَ قَبْلَكَ، فَاعْمِدْ لِأَحْسَنِهِمْ كَانَ فِي الْعَامَّةِ أَثَراً، وَ أَعْرَفِهِمْ بِالْأَمَانَةِ وَجْهاً، فَإِنَّ ذَلِكَ دَلِيلٌ عَلَى نَصِيحَتِكَ لِلَّهِ وَ لِمَنْ وُلِّيتَ أَمْرَهُ. وَ اجْعَلْ لِرَأْسِ كُلِّ أَمْرٍ مِنْ أُمُورِكَ رَأْساً مِنْهُمْ، لاَ يَقْهَرُهُ كَبِيرُهَا، وَ لاَ يَتَشَتَّتُ عَلَيْهِ كَثِيرُهَا، وَ مَهْمَا كَانَ فِي كُتَّابِكَ مِنْ عَيْبٍ فَتَغَابَيْتَ عَنْهُ أُلْزِمْتَهُ.

السادّس - التّجار و اصحاب الصّنائع

ثُمَّ اسْتَوْصِ بِالتُّجَّارِ وَ ذَوِي الصِّنَاعَاتِ، وَ أَوْصِ بِهِمْ خَيْراً: الْمُقِيمِ مِنْهُمْ وَ الْمُضْطَرِبِ بِمَالِهِ، وَ الْمُتَرَفِّقِ بِبَدَنِهِ، فَإِنَّهُمْ مَوَادُّ الْمَنَافِعِ وَ أَسْبَابُ الْمَرَافِقِ، وَ جُلَّابُهَا مِنَ الْمَبَاعِدِ وَ الْمَطَارِحِ، فِي بَرِّكَ وَ بَحْرِكَ، وَ سَهْلِكَ وَ جَبَلِكَ، وَ حَيْثُ لاَ يَلْتَئِمُ النَّاسُ لِمَوَاضِعِهَا، وَ لاَ يَجْتَرِئُونَ عَلَيْهَا، فَإِنَّهُمْ سِلْمٌ لاَ تُخَافُ بَائِقَتُهُ، وَ صُلْحٌ لاَ تُخْشَى غَائِلَتُهُ. وَ تَفَقَّدْ أُمُورَهُمْ بِحَضْرَتِكَ وَ فِي حَوَاشِي بِلاَدِكَ. وَ اعْلَمْ - مَعَ ذَلِكَ - أَنَّ فِي كَثِيرٍ مِنْهُمْ ضِيقاً فَاحِشاً، وَ شُحّا قَبِيحاً، وَ احْتِكَاراً لِلْمَنَافِعِ، وَ تَحَكُّماً فِي الْبِيَاعَاتِ، وَ ذَلِكَ بَابُ مَضَرَّةٍ لِلْعَامَّةِ، وَ عَيْبٌ عَلَى الْوُلاَةِ. فَامْنَعْ مِنَ الاِحْتِكَارِ، فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ‍ مَنَعَ مِنْهُ. وَ لْيَكُنِ الْبَيْعُ بَيْعا سَمْحاً: بِمَوَازِينِ عَدْلٍ، وَ أَسْعَارٍ لاَ تُجْحِفُ بِالْفَرِيقَيْنِ مِنَ البائِعِ و المُتباعِ. فَمَنْ قارَفَ حُكْرَةً بَعْدَ نَهْيِكَ اِيّاهُ فَنَكِّلْ بِهِ، وَ عاقِبْهُ فى غَيْرِ اِسْراف.

السّابع - المحرمون

ثُمَّ اللّهَ اللّهَ فِى الطَّبَقَةِ السُّفْلى مِنَ الَّذينَ لا حيلَةَ لَهُمْ، مِنَ الْمَساكينِ وَ الْمُحْتاجينَ وَ اَهْلِ الْبُؤْسى وَ الزَّمْنى، فَاِنَّ فى هذِهِ الطَّبَقَةِ قانِعاً وَ مُعْتَرّاً، وَاحْفَظْ لِلّهِ مَا اسْتَحْفَظَكَ مِنْ حَقِّهِ فيهِمْ، وَ اجْعَلْ لَهُمْ قِسْماً مِنْ بَيْتِ مالِكَ، وَ قِسْماً مِنْ غَلاّتِ صَوافِى الاْسْلامِ فى كُلِّ بَلَد، فَاِنَّ لِلاْقْصى مِنْهُمْ مِثْلَ الَّذى لِلاْدْنى، وَ كُلٌّ قَدِ اسْتُرْعيتَ حَقَّهُ. فَلايَشْغَلَنَّكَ عَنْهُمْ بَطَرٌ، فَاِنَّكَ لاتُعْذَرُ بِتَضْييعِكَ التّافِهَ لاِحْكامِكَ الْكَثيرَ الْمُهِمَّ. فَلاتُشْخِصْ هَمَّكَ عَنْهُمْ، وَ لاتُصَعِّرْ خَدَّكَ لَهُمْ، وَ تَفَقَّدْ اُمُورَ مَنْ لايَصِلُ اِلَيْكَ مِنْهُمْ مِمَّنْ تَقْتَحِمُهُ الْعُيُونُ، وَ تَحْقِرُهُ الرِّجالُ. فَفَرِّغْ لاِولئِكَ ثِقَتَكَ مِنْ اَهْلِ الْخَشْيَةِ وَ التَّواضُعِ، فَلْيَرْفَعْ اِلَيْكَ اُمُورَهُمْ. ثُمَّ اعْمَلْ فيهِمْ بِالاْعْذارِ اِلَى اللّهِ يَوْمَ تَلْقاهُ، فَاِنَّ هؤُلاءِ مِنْ بَيْنِ الرَّعِيَّةِ اَحْوَجُ اِلَى الاْنْصافِ مِنْ غَيْرِهِمْ، وَ كُلٌّ فَاَعْذِرْ اِلَى اللّهِ فى تَأْدِيَةِ حَقِّهِ اِلَيْهِ. وَ تَعَهَّدْ اَهْلَ الْيُتْمِ وَ ذَوِى الرِّقَّةِ فِى السِّنِّ مِمَّنْ لاحيلَةَ لَهُ، وَ لايَنْصِبُ لِلْمَسْاَلَةِ نَفْسَهُ. وَ ذلِكَ عَلَى الْوُلاةِ ثَقيلٌ، وَ الْحَقُّ كُلُّهُ ثَقيلٌ، وَ قَدْ يُخَفِّفُهُ اللّهُ عَلى اَقْوام طَلَبُوا الْعاقِبَةَ، فَصَبَّرُوا اَنْفُسَهُمْ، وَ وَثِقُوا بِصِدْقِ مَوْعُودِ اللّهِ لَهُمْ. وَ اجْعَلْ لِذَوِى الْحاجاتِ مِنْكَ قِسْماً تُفَرِّغُ لَهُمْ فيهِ شَخْصَكَ، وَ تَجْلِسُ لَهُمْ مَجْلِساً عامّاً، فَتَتَواضَعُ فيهِ لِلّهِ الَّذى خَلَقَكَ، وَ تُقْعِدُ عَنْهُمْ جُنْدَكَ وَ أَعْوَانَكَ مِنْ أَحْرَاسِكَ وَ شُرَطِكَ حَتَّى يُكَلِّمَكَ مُتَكَلِّمُهُمْ غَيْرَ مُتَعْتِعٍ، فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ‍ يَقُولُ فِي غَيْرِ مَوْطِنٍ: «لَنْ تُقَدَّسَ أُمَّةٌ لاَ يُؤْخَذُ لِلضَّعِيفِ فِيهَا حَقُّهُ مِنَالْقَوِيِّ غَيْرَ مُتَتَعْتِعٍ». ثُمَّاحْتَمِلِ الْخُرْقَ مِنْهُمْ وَالْعِيَّ، وَ نَحِّ عَنْهُمُ الضِّيقَ وَالْأَنَفَ، يَبْسُطِ اللَّهُ عَلَيْكَ بِذَلِكَ أَكْنَافَ رَحْمَتِهِ، وَ يُوجِبْ لَكَ ثَوَابَ طَاعَتِهِ. وَ أَعْطِ مَا أَعْطَيْتَ هَنِيئا، وَامْنَعْ فِي إِجْمَالٍ وَ إِعْذَارٍ.

ثُمَّ أُمُورٌ مِنْ أُمُورِكَ لاَ بُدَّ لَكَ مِنْ مُبَاشَرَتِهَا: مِنْهَا إِجَابَةُ عُمَّالِكَ بِمَا يَعْيَى عَنْهُ كُتَّابُكَ، وَ مِنْهَا إِصْدَارُ حَاجَاتِ النَّاسِ عِنْدَ وُرُودِهَا عَلَيْكَ بِمَا تَحْرَجُ بِهِ صُدُورُ أَعْوَانِكَ. وَ أَمْضِ لِكُلِّ يَوْمٍ عَمَلَهُ، فَإِنَّ لِكُلِّ يَوْمٍ مَا فِيهِ. وَاجْعَلْ لِنَفْسِكَ فِيمَا بَيْنَكَ وَ بَيْنَ اللَّهِ أَفْضَلَ تِلْكَ الْمَوَاقِيتِ، وَ أَجْزَلَ تِلْكَ الْأَقْسَامِ وَ إِنْ كَانَتْ كُلُّهَا لِلَّهِ إِذَا صَلُحَتْ فِيهَا النِّيَّةُ، وَ سَلِمَتْ مِنْهَا الرَّعِيَّةُ.

عباد الله

وَ لْيَكُنْ فِي خَاصَّةِ مَا تُخْلِصُ لِلّهِ بِهِ دِينَكَ إِقَامَةُ فَرَائِضِهِ الَّتِي هِيَ لَهُ خَاصَّةً، فَأَعْطِ اللَّهَ مِنْ بَدَنِكَ فِي لَيْلِكَ وَ نَهَارِكَ، وَ وَوَفِّ مَا تَقَرَّبْتَ بِهِ إِلَى اللَّهِ مِنْ ذَلِكَ كَامِلاً غَيْرَ مَثْلُومٍ وَ لاَ مَنْقُوصٍ، بَالِغاً مِنْ بَدَنِكَ مَا بَلَغَ. وَ إِذَا قُمْتَ فِي صَلاَتِكَ لِلنَّاسِ، فَلاَ تَكُونَنَّ مُنَفِّراً وَ لاَ مُضَيِّعاً، فَإِنَّ فِي النَّاسِ مَنْ بِهِ الْعِلَّةُ وَ لَهُ الْحَاجَةُ. وَ قَدْ سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ‍ حِينَ وَجَّهَنِي إِلَى الْيَمَنِ كَيْفَ أُصَلِّي بِهِمْ؟ فَقَالَ: «صَلِّ بِهِمْ كَصَلاَةِ أَضْعَفِهِمْ، وَ كُنْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَحِيماً».

وَ أَمَّا بَعْدُ، فَلاَ تُطَوِّلَنَّ احْتِجَابَكَ عَنْ رَعِيَّتِكَ، فَإِنَّ احْتِجَابَ الْوُلاَةِ عَنِ الرَّعِيَّةِ شُعْبَةٌ مِنَ الضِّيقِ، وَ قِلَّةُ عِلْمٍ بِالْأُمُورِ؛ وَالاِحْتِجَابُ مِنْهُمْ يَقْطَعُ عَنْهُمْ عِلْمَ مَااحْتَجَبُوا دُونَهُ فَيَصْغُرُ عِنْدَهُمُ الْكَبِيرُ، وَ يَعْظُمُ الصَّغِيرُ، وَ يَقْبُحُ الْحَسَنُ، وَ يَحْسُنُ الْقَبِيحُ، وَ يُشَابُ الْحَقُّ بِالْبَاطِلِ. وَ إِنَّمَا الْوَالِي بَشَرٌ لاَ يَعْرِفُ مَا تَوَارَى عَنْهُ النَّاسُ بِهِ مِنَ الْأُمُورِ.

وَ لَيْسَتْ عَلَى الْحَقِّ سِمَاتٌ تُعْرَفُ بِهَا ضُرُوبُ الصِّدْقِ مِنَ الْكَذِبِ، وَ إِنَّمَا أَنْتَ أَحَدُ رَجُلَيْنِ: إِمَّا امْرُؤٌ سَخَتْ نَفْسُكَ بِالْبَذْلِ فِي الْحَقِّ، فَفِيمَ احْتِجَابُكَ مِنْ وَاجِبِ حَقِّ تُعْطِيهِ، أَوْ فِعْلٍ كَرِيمٍ تُسْدِيهِ! أَوْ مُبْتَلًى بِالْمَنْعِ، فَمَا أَسْرَعَ كَفَّ النَّاسِ عَنْ مَسْأَلَتِكَ إِذَا أَيِسُوا مِنْ بَذْلِكَ! مَعَ أَنَّ أَكْثَرَ حَاجَاتِ النَّاسِ إِلَيْكَ مِمَّا لاَ مَؤُونَةَ فِيهِ عَلَيْكَ، مِنْ شَكَاةِ مَظْلِمَةٍ، أَوْ طَلَبِ إِنْصَافٍ فِي مُعَامَلَةٍ.

ثُمَّ إِنَّ لِلْوَالِي خَاصَّةً وَ بِطَانَةً، فِيهِمُ اسْتِئْثَارٌ وَ تَطَاوُلٌ، وَ قِلَّةُ إِنْصَافٍ فِي مُعَامَلَةٍ، فَاحْسِمْ مَادَّةَ أُولَئِكَ بِقَطْعِ أَسْبَابِ تِلْكَ الْأَحْوَالِ. وَ لاَ تُقْطِعَنَّ لِأَحَدٍ مِنْ حَاشِيَتِكَ وَ حَامَّتِكَ قَطِيعَةً، وَ لاَ يَطْمَعَنَّ مِنْكَ فِي اعْتِقَادِ عُقْدَةٍ تَضُرُّ بِمَنْ يَلِيهَا مِنَ النَّاسِ، فِي شِرْبٍ أَوْ عَمَلٍ مُشْتَرَكٍ، يَحْمِلُونَ مَؤُونَتَهُ عَلَى غَيْرِهِمْ، فَيَكُونَ مَهْنَأُ ذَلِكَ لَهُمْ دُونَكَ، وَ عَيْبُهُ عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ.

وَ أَلْزِمِ الْحَقَّ مَنْ لَزِمَهُ مِنَ الْقَرِيبِ وَالْبَعِيدِ، وَ كُنْ فِي ذَلِكَ صَابِراً مُحْتَسِباً، وَاقِعاً ذَلِكَ مِنْ قَرَابَتِكَ وَ خَاصَّتِكَ حَيْثُ وَقَعَ، وَابْتَغِ عَاقِبَتَهُ بِمَا يَثْقُلُ عَلَيْكَ مِنْهُ، فَإِنَّ مَغَبَّةَ ذَلِكَ مَحْمُودَةٌ. وَ إِنْ ظَنَّتِ الرَّعِيَّةُ بِكَ حَيْفا فَأَصْحِرْ لَهُمْ بِعُذْرِكَ، وَاعْدِلْ (و اعزل) عَنْكَ ظُنُونَهُمْ بِاِصْحارِكَ، فَاِنَّ فى ذلِكَ رِياضَةً مِنْكَ لِنَفْسِكَ، وَ رِفْقاً بِرَعِيَّتِكَ، وَ اِعْذاراً تَبْلُغُ بِهِ حاجَتَكَ مِنْ تَقْويمِهِمْ عَلَى الْحَقِّ.

اِنَّ فِى الصُّلْحِ دَعَةً لِجُنُودِكَ، وَ راحَةً مِنْ هُمُومِكَ، وَ اَمْناً لِبِلادِكَ، وَلكِنِ الْحَذَرَ كُلَّ الْحَذَرِ مِنْ عَدُوِّكَ بَعْدَ صُلْحِهِ، فَاِنَّ الْعَدُوَّ رُبَّما قارَبَ لِيَتَغَفَّلَ فَخُذْ بِالْحَزْمِ، وَ اتَّهِمْ فى ذلِكَ حُسْنَ الظَّنِّ. وَ اِنْ عَقَدْتَ بَيْنَكَ وَ بَيْنَ عَدُوّ لَكَ عُقْدَةً، اَوْ اَلْبَسْتَهُ مِنْكَ ذِمَّةً، فَحُطْ عَهْدَكَ بِالْوَفاءِ، وَ ارْعَ ذِمَّتَكَ بِالاْمانَةِ، وَ اجْعَلْ نَفْسَكَ جُنَّةً دُونَ ما اَعْطَيْتَ، فَاِنَّهُ لَيْسَ مِنْ فَرائِضِ اللّهِ شَىْءٌ النّاسُ اَشَدُّ عَلَيْهِ اجْتِماعاً، مَعَ تَفَرُّقِ اَهْوائِهِمْ وَ تَشَتُّتِ آرائِهِمْ، مِنْ تَعْظيمِ الْوَفاءِ بِالْعُهُودِ. وَ قَدْ لَزِمَ ذلِكَ الْمُشْرِكُونَ فيما بَيْنَهُمْ دُونَ الْمُسْلمينَ، لِمَا اسْتَوْبَلُوا مِنْ عَواقِبِ الْغَدْرِ؛ فَلاتَغْدِرَنَّ بِذِمَّتِكَ، وَ لاتَخيسَنَّ بِعَهْدِكَ، وَ لاتَخْتِلَنَّ عَدُوَّكَ، فَاِنَّهُ لايَجْتَرِئُ عَلَى اللّهِ اِلاّ جاهِلٌ شَقِىٌّ. وَ قَدْ جَعَلَ اللّهُ عَهْدَهُ وَ ذِمَّتَهُ اَمْناً اَفْضاهُ بَيْنَ الْعِبادِ بِرَحْمَتِهِ، وَ حَريماً يَسْكُنُونَ اِلى مَنَعَتِهِ، وَ يَسْتَفيضُونَ اِلى جِوارِهِ. فَلا اِدْغالَ وَ لا مُدالَسَةَ وَ لا خِداعَ فيهِ. وَ لاتَعْقِدْ عَقْداً تُجَوِّزُ فيهِ الْعِلَلَ، وَ لاتُعَوِّلَنَّ عَلى لَحْنِ قَوْل بَعْدَ التَّأْكيدِ وَ التَّوْثِقَةِ. وَ لايَدْعُوَنَّكَ ضيقُ اَمْرٍ، لَزِمَكَ فيهِ عَهْدُ اللّهِ، اِلى طَلَبِ انْفِساخِهِ بِغَيْرِ الْحَقِّ، فَاِنَّ صَبْرَكَ عَلى ضيقِ اَمْر تَرْجُو انْفِراجَهُ وَ فَضْلَ عاقِبَتِهِ، خَيْرٌ مِنْ غَدْر تَخافُ تَبِعَتَهُ، وَ اَنْ تُحيطُ بِكَ مِنَ اللّهِ فيهِ طِلْبَـةٌ، لاتَسْتَقيـلُ (تسقیل) فيـها دُنْيـاكَ وَ لاآخِـرَتَـكَ.

تحذیرات

إِيَّاكَ وَالدِّمَأَ وَ سَفْكَهَا بِغَيْرِ حِلِّهَا، فَإِنَّهُ لَيْسَ شَيْءٌ أَدْعَى لِنِقْمَةٍ، وَ لاَ أَعْظَمَ لِتَبِعَةٍ، وَ لاَ أَحْرَى بِزَوَالِ نِعْمَةٍ، وَانْقِطَاعِ مُدَّةٍ، مِنْ سَفْكِ الدِّمَأِ بِغَيْرِ حَقِّهَا. وَاللَّهُ سُبْحَانَهُ مُبْتَدِئٌ بِالْحُكْمِ بَيْنَ الْعِبَادِ، فِيمَا تَسَافَكُوا مِنَ الدِّمَأِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؛ فَلاَ تُقَوِّيَنَّ سُلْطَانَكَ بِسَفْكِ دَمٍ حَرَامٍ. فَإِنَّ ذَلِكَ مِمَّا يُضْعِفُهُ، وَ يُوهِنُهُ، بَلْ يُزِيلُهُ وَ يَنْقُلُهُ. وَ لاَ عُذْرَ لَكَ عِنْدَ اللَّهِ وَ لاَ عِنْدِي فِي قَتْلِ الْعَمْدِ، لِأَنَّ فِيهِ قَوَدَ الْبَدَنِ، وَ إِنِ ابْتُلِيتَ بِخَطَإٍ وَ أَفْرَطَ عَلَيْكَ سَوْطُكَ أَوْ سَيْفُكَ أَوْ يَدُكَ بِالْعُقُوبَةِ؛ فَإِنَّ فِي الْوَكْزَةِ فَمَا فَوْقَهَا مَقْتَلَةً، فَلاَ تَطْمَحَنَّ بِكَ نَخْوَةُ سُلْطَانِكَ عَنْ أَنْ تُؤَدِّيَ إِلَى أَوْلِيَأِ الْمَقْتُولِ حَقَّهُمْ.

وَ إِيَّاكَ وَالْإِعْجَابَ بِنَفْسِكَ، وَالثِّقَةَ بِمَا يُعْجِبُكَ مِنْهَا، وَ حُبَّ الْإِطْرَاءِ، فَإِنَّ ذَلِكَ مِنْ أَوْثَقِ فُرَصِ الشَّيْطَانِ فِي نَفْسِهِ لِيَمْحَقَ مَا يَكُونُ مِنْ إِحْسَانِ الْمُحْسِنینْ. وَ إِيَّاكَ وَالْمَنَّ عَلَى رَعِيَّتِكَ بِإِحْسَانِكَ، أَوِ التَّزَيُّدَ فِيمَا كَانَ مِنْ فِعْلِكَ، أَوْ أَنْ تَعِدَهُمْ فَتُتْبِعَ مَوْعِدَكَ بِخُلْفِكَ، فَإِنَّ الْمَنَّ يُبْطِلُ الْإِحْسَانَ، وَالتَّزَيُّدَ يَذْهَبُ بِنُورِ الْحَقِّ، وَالْخُلْفَ يُوجِبُ الْمَقْتَ عِنْدَ اللَّهِ وَالنَّاسِ. قَالَ اللَّهُ تَعَالَى:( كَبُرَ مَقْتا عِنْدَ اللّهِ أَنْ تَقُولُوا ما لا تَفْعَلُونَ ) .

وَ إِيَّاكَ وَالْعَجَلَةَ بِالْأُمُورِ قَبْلَ أَوَانِهَا، أَوِ التَّسَقُّطَ (السناقط - التثبّط) التَّساقُطَ فِيهَا عِنْدَ إِمْكَانِهَا، أَوِ اللَّجَاجَةَ فِيهَا إِذَا تَنَكَّرَتْ، أَوِ الْوَهْنَ عَنْهَا إِذَا اسْتَوْضَحَتْ. فَضَعْ كُلَّ أَمْرٍ مَوْضِعَهُ، وَ أَوْقِعْ كُلَّ عَمَلٍ مَوْقِعَهُ.

وَ إِيَّاكَ وَالاِسْتِئْثَارَ بِمَا النَّاسُ فِيهِ أُسْوَةٌ، وَالتَّغَابِيَ عَمَّا تُعْنَى بِهِ مِمَّا قَدْ وَضَحَ لِلْعُيُونِ، فَإِنَّهُ مَأْخُوذٌ مِنْكَ لِغَيْرِكَ وَ عَمَّا قَلِيلٍ تَنْكَشِفُ عَنْكَ أَغْطِيَةُ الْأُمُورِ وَ يُنْتَصَفُ مِنْكَ لِلْمَظْلُومِ. امْلِكْ حَمِيَّةَ أَنْفِكَ وَ سَوْرَةَ حَدِّكَ وَ سَطْوَةَ يَدِكَ، وَ غَرْبَ لِسَانِكَ، وَ احْتَرِسْ مِنْ كُلِّ ذَلِكَ بِكَفِّ الْبَادِرَةِ، وَ تَأْخِيرِ السَّطْوَةِ حَتَّى يَسْكُنَ غَضَبُكَ فَتَمْلِكَ الاِخْتِيَارَ: وَ لَنْ تَحْكُمَ ذَلِكَ مِنْ نَفْسِكَ حَتَّى تُكْثِرَ هُمُومَكَ بِذِكْرِ الْمَعَادِ إِلَى رَبِّكَ. وَ الْوَاجِبُ عَلَيْكَ، أَنْ تَتَذَكَّرَ مَا مَضَى لِمَنْ تَقَدَّمَكَ مِنْ حُكُومَةٍ عَادِلَةٍ، أَوْ سُنَّةٍ فَاضِلَةٍ، أَوْ أَثَرٍ عَنْ نَبِيِّنَاصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم أَوْ فَرِيضَةٍ فِي كِتَابِ اللَّهِ، فَتَقْتَدِيَ بِمَا شَاهَدْتَ مِمَّا عَمِلْنَا بِهِ فِيهَا، وَ تَجْتَهِدَ لِنَفْسِكَ فِي اتِّبَاعِ مَا عَهِدْتُ إِلَيْكَ فِي عَهْدِي هَذَا، وَ اسْتَوْثَقْتُ بِهِ مِنَ الْحُجَّةِ لِنَفْسِي عَلَيْكَ لِكَيْلاَ تَكُونَ لَكَ عِلَّةٌ عِنْدَ تَسَرُّعِ نَفْسِكَ إِلَى هَوَاهَا. وَ أَنَا أَسْأَلُ اللَّهَ بِسَعَةِ رَحْمَتِهِ، وَ عَظِيمِ قُدْرَتِهِ عَلَى إِعْطَأِ كُلِّ رَغْبَةٍ، أَنْ يُوَفِّقَنِي وَ إِيَّاكَ لِمَا فِيهِ رِضَاهُ مِنَ الْإِقَامَةِ عَلَى الْعُذْرِ الْوَاضِحِ إِلَيْهِ وَ إِلَى خَلْقِهِ، مَعَ حُسْنِ الثَّنَأِ فِي الْعِبَادِ، وَ جَمِيلِ الْأَثَرِ فِي الْبِلاَدِ وَ تَمَامِ النِّعْمَةِ، وَ تَضْعِيفِ الْكَرَامَةِ، وَ أَنْ يَخْتِمَ لِي وَ لَكَ بِالسَّعَادَةِ وَ الشَّهَادَةِ، «إِنّا إِلَيْهِ راجِعُونَ» (راغِبوُنَ). وَ السَّلاَمُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهِ عَلَيْهِ وَ آلِهِ الطَّيِّبِينَ الطَّاهِرِينَ وَ سَلَّمَ تَسْلِيما كَثِيراً، وَ السَّلاَمُ.

মালিক ইবনে হারিছ আশতারকে মিশরের গভর্ণর নিয়োগ করে নিয়োগ পত্রের সাথে এ দলিল দিয়েছিলেন।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

আল্লাহর বান্দা ও আমিরুল মোমেনিন আলী এ আদেশ মালিক ইবনে হারিছ আশতারকে দিচ্ছে যখন তাকে রাজস্ব আদায়ের জন্য ,শত্রুর সাথে যুদ্ধ করার জন্য ,জনগণের মঙ্গল সাধনের জন্য ও নগরসমূহকে সম্পদশালী করার জন্য মিশরের গভর্ণর নিয়োগ করা হলো।

আত্ম গঠনের প্রয়োজনীয়তা

তাকে আদেশ করা হচ্ছে আল্লাহকে ভয় করার জন্য এবং তাঁর অনুগত হবার জন্য। আল্লাহ কুরআনে যা আদেশ করেছেন তা অনুসরণ করার জন্য তাকে আদেশ করা হচ্ছে। আল্লাহর আদেশ অনুসরণ না করে কেউ দ্বীনার্জন করতে পারে না। শয়তান ছাড়া কেউ আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা ও অবহেলা করে না। তাকে আরো আদেশ করা হচ্ছে যেন সে তার হৃদয় - মন ,হাত আর কণ্ঠ দিয়ে আল্লাহকে সাহায্য করে ,কারণ মহিমান্বিত আল্লাহ্ তাকে সাহায্য করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। যে আল্লাহকে সাহায্য করে এবং যে তাকে সমর্থন করে ,তাকেই তিনি রক্ষা করেন।

তাকে আরো আদেশ করা হচ্ছে যেন সে তার হৃদয়কে কামনা - বাসনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং কামনা - বাসনা বৃদ্ধির সাথে সাথে হৃদয়কে নিয়ন্ত্রন করে। কারণ আল্লাহর রহমত না হলে হৃদয় মানুষকে পাপের পথে নিয়ে যায়।

গভর্নরের গুণাবলী ও দায়িত্ব

হে মালিক ,মনে রেখো ,আমি তোমাকে এমন এক এলাকায় পাঠাচ্ছি যেখানে তোমার পূর্বেও সরকার ছিল - তাদের কেউ কেউ ছিল ন্যায়পরায়ণ আবার কেউ কেউ ছিল অত্যাচারী। জনগণ এখন তোমার কর্মকাণ্ড নিরীক্ষণ করবে যেভাবে তুমি তোমার পূর্ববর্তী শাসকগণকে নিরীক্ষণ করতে এবং তারা তোমার সমালোচনা করবে যেভাবে তুমি পূর্ববর্তী শাসকগণের সমালোচনা করেছিলে। নিশ্চয়ই ,দ্বীনদারগণের পরিচয় পাওয়া যায় তাদের খ্যাতির মাধ্যমে যা আল্লাহ তার বান্দাগণের জিহবা দ্বারা ছড়িয়ে দেন। সুতরাং তোমার ভালো কর্মকাণ্ডই তোমার সর্বোত্তম সঞ্চয়। সেহেতু তোমার কামনা - বাসনা ও হৃদয়কে নিয়ন্ত্রণ করে প্রদমিত রেখো যাতে তোমার জন্য যা জায়েজ নয় তা করা থেকে বিরত থাকতে পার। কারণ হৃদয়কে নিয়ন্ত্রণ করাই হলো ইচ্ছা - অনিচ্ছার অর্ধেক প্রদমিত করা।

প্রজাদের প্রতি দয়া ,মমতা ও সহৃদয়তা প্রদর্শন করা অভ্যাস করো। মনে রেখো ,প্রজারা দু প্রকারের - হয় তারা তোমার দ্বীনি ভাই ,না হয় তারা তোমার মতোই সৃষ্ট বান্দা। সুতরাং তাদের মাথার ওপর লোভাতুর পশুর মতো দাঁড়িয়ো না। পশু মনে করে গোগ্রাসে গিলে ফেলাই যথেষ্ট। প্রজাগণের পদস্খলন হতে পারে - তারা ভুল করতে পারে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা অবহেলা বশে ভুল করতে পারে। সুতরাং তাদের প্রতি ক্ষমা ও অনুকম্পা প্রদর্শনে কার্পণ্য করো না। কারণ তুমিও তো চাও আল্লাহ যেন তাঁর সর্বোচ্চ ক্ষমা তোমার প্রতি প্রদর্শন করেন। মনে রেখো ,তুমি তাদের ওপর আর তোমার ওপর হলেন দাযিত্বশীল ইমাম (আলী) এবং আল্লাহ হলেন তার ওপর যিনি তোমাকে নিয়োগদান করেছেন। আল্লাহ চান যে ,তুমি তাদের কর্মকান্ডের ব্যবস্থাপনা কর এবং এ দায়িত্বের মাঝেই তিনি তোমার বিচার করবেন।

কখনো আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করতে চেয়ে না ,কারণ তাঁর ক্ষমতার কাছে তোমার কোন ক্ষমতাই নেই এবং তার ক্ষমা ও রহমত ছাড়া তুমি কিছুই করতে পারবে না। কখনো ক্ষমা করতে অনুতাপ করো না এবং শাস্তি প্রদানে দয়া দেখিয়ো না। ক্রোধের সময় কখনো তাড়াহুড়া করে কিছু করো না - ক্রোধ সম্বরণ করতে চেষ্টা করো। কখনো এ কথা বলো না , আমাকে কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে - আমি যা আদেশ করি তাই মানতে হবে। ” কারণ এটা হৃদয়ে দ্বিধা - দ্বন্দ্বের উদ্রেক করে ,দ্বীনকে দুর্বল করে দেয় এবং ধ্বংস নিকটবর্তী করে দেয়। যে কর্তৃত্ব তোমাকে দেয়া হয়েছে তাতে যদি তোমার মনে কোন প্রগলভ্যতা বা অহমবোধ আসে তবে আল্লাহর বিশাল রাজত্বের প্রতি এবং তাঁর মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে দেখো । তাতে তোমার নিজের ওপরই তোমার কর্তৃত্ব আছে বলে মনে হবে না। এটা তোমার মনের অহমকে কুকড়ে দেবে ,তোমার উগ্র মেজাজের চিকিৎসা করে দেবে এবং যে প্রজ্ঞা তোমা হতে সরে গিয়েছিল তা ফিরিয়ে আনবে। সাবধান ,আল্লাহর মহত্ত্বের সঙ্গে কখনো নিজকে তুলনা করো না অথবা তার শক্তির মতো নিজকে শক্তিধর মনে করো না। কারণ প্রত্যেক ক্ষমতার দাবীদারকে তিনি অবদমিত করেছেন এবং প্রত্যেক অহংকারীকে তিনি অপমানিত করেছেন।

আল্লাহর জন্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করো এবং জনগণের প্রতি ন্যায় বিচার করো। তোমার নিজের প্রতি ,আত্মীয় - স্বজনের প্রতি এবং প্রজাদের মধ্যে যাদেরকে তুমি পছন্দ কর তাদের প্রতি কোন পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করো না। যদি তুমি স্বজন - প্রীতি কর তবে তুমি অত্যাচারীদের মধ্যে পরিগণিত হবে। আর যখন কেউ আল্লাহর বান্দাদের উপর অত্যাচার ও নিপীড়ন করে তখন বান্দার পরিবর্তে আল্লাহ নিজেই জালিমের প্রতিপক্ষ হন। আর যখন আল্লাহ কারো প্রতিপক্ষ হন ,তিনি তাকে অবজ্ঞাভরে পদদলিত করেন এবং যে পর্যন্ত সে অনুতপ্ত হয়ে তওবা না করে সে পর্যন্ত সে আল্লাহর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকে। আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া বা তার মহাশাস্তি অত্যাচার ও নিপীড়ন ছাড়া অন্য কিছুতে এতবেশি ত্বরান্বিত হয় না। কারণ আল্লাহ মজলুমের আর্তনাদ শোনেন এবং জালিমদের প্রতি রোষাবিষ্ট দৃষ্টিতে তাকান।

সর্বসাধারণের সন্তুষ্টি অর্জনের উপায়

তোমার এমন পথ অবলম্বন করা উচিত হবে যা সাম্য ও ন্যায় ভিত্তিক ,যা হবে ন্যায় বিচারের দিক থেকে সার্বজনীন এবং যা তোমার অধীনস্থ সকলেই একবাক্যে গ্রহণ করবে। কারণ জনসাধারণের মধ্যে কোন ব্যবস্থা সম্পর্কে দ্বিধা - দ্বন্দ্ব থাকলে তা নেতার যুক্তি - তর্ককে খর্ব করে দেয়। আবার নেতাদের মধ্যে কোন বিষয়ে অনৈক্য থাকলে তা গুরুত্ব সহকারে না দেখলেও চলে যদি ওই বিষয়ে জনগণের মধ্যে ঐকমত্য থাকে। তোমার অধীনস্থ যত লোক আছে তাদের মধ্যে সমাজপতি কতিপয় ব্যক্তিই একজন শাসকের জীবনের সুখ - শান্তিতে অধিকতর বোঝা । সংকটের সময় এরা কম উপকারী। এরা সাম্য ও ন্যায়ের প্রতি অনীহা প্রদর্শনকারী। সুবিধা আদায়ে এরা সুচতুর। প্রদত্ত অনুগ্রহের জন্য এরা কম কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী। এদের দাবী পূরণে অপারগতার জন্য যুক্তি ও কারণ মেনে নিতে এরা সবচেয়ে নিস্পৃহ ও অনাগ্রহী। কোন প্রকার অসুবিধায় ধৈর্য ধারণে এরা সবচেয়ে দুর্বল। বস্তুতঃ সমাজের সাধারণ মানুষই দ্বীনের স্তম্ভ ,তারা মুসলিম সমাজের আসল শক্তি এবং তারা শত্রুর বিরুদ্ধে প্ররক্ষা। তাদের প্রতি তোমার মনের দুয়ার খুলে দিয়ো এবং তাদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ও সহানুভূতিশীল হয়ো ।

তোমার অধীনস্থ লোকদের মধ্যে তারা নিকৃষ্টতম। যারা অন্যদের দোষত্রুটির বিষয়ে অত্যন্ত অনুসন্ধিৎসু। কারণ মানুষের দোষত্রুটি থাকতে পারে এবং তা ঢেকে রাখার জন্য শাসকই যথোপযুক্ত ব্যক্তি। যে সব দোষত্রুটি তোমার কাছে গোপন রয়েছে তা ফাঁস করে দিয়ো না ,কারণ যা তোমার কাছে প্রকাশ পেয়েছে তা সংশোধন করাই তোমার দায়িত্ব। আর যা তোমার কাছে গোপন রয়েছে তা আল্লাহর ওপর ছেড়ে দাও। সুতরাং যতটুকু পারা যায় মানুষের দোষত্রুটি ঢেকে রেখো। তাহলে তোমার যে সব দোষত্রুটি প্রজাদের কাছে প্রকাশ না হয়ে পড়ার ইচ্ছা তুমি পোষণ কর আল্লাহ তা ঢেকে রাখবেন। মনের সকল বন্ধন মুক্ত করে মানুষের সঙ্গে চলো। এতে শক্রতার কোন কারণ থাকবে না। যা তোমার কাছে স্পষ্ট নয় তাতে জানার ভান করো না। কুৎসা রটনাকারীদের সাথে পাল্লা দিয়ে না ;কারণ কুৎসা রটনাকারী আপাতঃদৃষ্টিতে ভালো মানুষ মনে হলেও মূলত সে প্রতারক।

উপদেষ্টা

কখনো কোন কৃপণ ও কাপুরুষকে উপদেষ্ট হিসাবে গ্রহণ করো না। কারণ কৃপণ তোমাকে ঔদার্যপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখবে এবং আর্থিক অনটনের ভয় দেখাবে। আবার কাপুরুষ তোমার কর্মকান্ডে তোমাকে নিরুৎসাহীত করবে এবং আদেশ - নির্দেশ কার্যকরী করতে দুর্বল করে তুলবে। একইভাবে কোন লোভী ব্যক্তিকেও উপদেষ্ট করো না। তারা অন্যায়ভাবে কর আদায় করে সম্পদের প্রাচুর্য তোমাকে দেখাবে। কৃপণতা ,কাপুরুষতা ও লোভ ভিন্ন ভিন্ন দোষ হলেও এরা কিন্তু আল্লাহর প্রতি ভুল ধারণা সম্পর্কে অভিন্ন।

যেসব লোক তোমার পূর্ববর্তী শোষক ও নিপীড়কদের মন্ত্রনাদাতা ছিল তারাই হবে তোমার নিকৃষ্টতম মন্ত্রী। কারণ তারা নিপীড়কদের পাপের সহযোগী ছিল। কাজেই এসব লোককে তোমার দলের প্রধান করো না। কারণ তারা পাপী ,দুষ্কর্মের সাহায্যকারী এবং অত্যাচারীদের দোসর ছিল। তুমি তাদের পরিবর্তে ভালো মানুষও পাবে - যারা প্রভাবশালী। কিন্তু নিপীড়কদের কর্মকাণ্ড ও পাপের জন্য তাদের ঘৃণা করে। এরা তোমাকে সবচেয়ে কম জ্বালাতন করবে এবং তোমার সবচেয়ে বড় সহযোগী হবে। এরা তোমার প্রতি সবচেয়ে বেশি সহনশীল হবে এবং অন্যদের সাথে কম সম্পর্ক রাখবে। কাজেই এ ধরনের লোককে গোপনীয় ও প্রকাশ্য কাজে তোমার প্রধান সহচর করো। যেসব লোক তোমার সমালোচনায় স্পষ্ট ও সত্য ভাষণ করে এবং যারা তোমার পদমর্যাদা ও ক্ষমতার তোয়াক্কা না করে আল্লাহ্ কর্তৃক অনুমোদিত বিষয়ে অপ্রিয় সত্য কথা বলবে তাদের প্রতি পূর্ণ আস্থা স্থাপন করো।

সর্বদা খোদাভীরু ও সত্যবাদীদের সাথে মেলা মেশা করো। তাদেরকে এমনভাবে শিক্ষা দিয়ো যেন তারা কোন কাজে তোমার কর্তৃত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে তোষামুদে কথা না বলে। কারণ প্রশংসার আধিক্য মানুষের অহমবোধ সৃষ্টি করে তাকে ঔদ্ধত্যের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়।

তোমার কাছে ধার্মিক ও পাপী যেন সমান মর্যাদা না পায়। এতে ধার্মিকগণের সৎকর্মের প্রতি অনীহা জন্মাবে এবং পাপীগণ পাপের প্রতি আগ্রহান্বিত হবে। যে যেমন মর্যাদার অধিকারী সে যেন তোমার কাছে সে রকম মর্যাদা পায়। মনে রেখো ,শাসকের সুনাম অর্জনের সবচেয়ে বড় উপায় হলো তার প্রজাদের প্রতি সদাচরণ করা ,তাদের দুঃখ - দুর্দশা লাঘব করা এবং তাদের ওপর কোন অসহনীয় কর আরোপ না করা। কাজেই এ বিষয়ে তুমি এমন পথ অবলম্বন করবে যাতে করে প্রজাদের মাঝে তোমার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে এবং এতে তারা তোমার অনুগত থাকবে। তাতে তোমার উদ্বেগ ও আশঙ্কা বহুলাংশে কমে যাবে ।

যে সমাজ ব্যবস্থায় তুমি যাচ্ছো তাদের পুরাতন কল্যাণকর প্রথা - যা দ্বারা সাধারণ ঐক্য ও প্রজাদের উন্নতি সাধিত হয় তা বন্ধ করে দিয়ে না। এমন কোন কর্মপদ্ধতি উদ্ভাবন করো না যা জনগণের প্রচলিত কল্যাণকর প্রথাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এমনটি করলে যারা ঐ প্রথাগুলোর প্রবর্তন করেছিল তাদের সুনাম থেকে যাবে আর তা বন্ধ করার দায় - দায়িত্ব তোমার ওপর বর্তাবে। যে এলাকার দায়িত্ব তোমাকে দেয়া হয়েছে সেখানকার পন্ডিত ব্যক্তি ও জ্ঞানী লোকদের সাথে তোমার আলাপ - আলোচনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করো। এতে এলাকার উন্নতি স্থিতিশীল হবে এবং জনগণ দৃঢ়চিত্ত থাকবে।

সামাজিক ভেদাভেদ

জেনে রাখো ,জনগণ বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত হলেও একে অপরের সহায়তা ছাড়া উন্নতি লাভ করতে পারে না এবং তারা কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাদের মধ্যে আল্লাহর পথে নিয়োজিত সৈনিক রয়েছে ,বিভাগীয় প্রধান ও জনগণের সচিবালয়ের কর্মচারী রয়েছে ,ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারক রয়েছে ,আশ্রিত অমুসলিম ও মুসলিমগণের মধ্য থেকে জিজিয়া ও খারাজ প্রদানকারী অনেকেই রয়েছে ,ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি রয়েছে এবং দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্থ রয়েছে। আল্লাহ তাদের প্রত্যেকের হিস্যা ও সীমা তার কুরআনে এবং তার রাসূলের সুন্নায় নির্ধারিত করে দিয়েছেন যা আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

সেনাবাহিনী (ইনশাল্লাহ) জনগণের জন্য দুর্গ স্বরূপ ,শাসকদের অলঙ্কার ,দ্বীনের শক্তি এবং শান্তির উপায়। সেনাবাহিনী ছাড়া জনগণ টিকতে পারবে না। আবার রাজস্বের যে অংশ আল্লাহ তাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন সে অংশ দ্বারা তারা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি পাচ্ছে এবং তাদের প্রয়োজন মেটাচ্ছে। এ দু শ্রেণির লোক তৃতীয় শ্রেণি অর্থাৎ বিচারক ,নির্বাহী ও সচিব ছাড়া চলতে পারে না। যারা চুক্তি সম্পর্কে রায় দেয় ,রাজস্ব সংগ্রহ করে এবং সাধারণ কল্যাণ ও বিশেষ বিষয়াবলী পরিচালনা করে।

এসব শ্রেণিগুলো আবার ব্যবসায়ী ও শিল্প - কারখানা ছাড়া চলতে পারে না। কারণ এরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করে ও বাজার স্থাপন করে। ফলে অন্যদেরকে এগুলো নিজ হাতে করতে হয় না। এরপর থাকে অভাবগ্রস্থ ও দুঃস্থগণ ,যাদেরকে সাহায্য করা আবশ্যক এবং তারা সকলেই আল্লাহর নামে জীবিকা পায়। শাসকের ওপর তাদের প্রত্যেকের অধিকার আছে যাতে তাদের উন্নতি সাধিত হয়। শাসকের ওপর এ বিষয়ে আল্লাহ যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তা কোন ক্রমেই পরিত্যাগ করা যাবে না।

১ । সর্বোত্তম সেনাবাহিনী

এমন লোককে তোমার সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব অর্পণ করো যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল এবং তোমার ইমামের প্রতি সবচেয়ে বেশি আনুগত্য রাখে ও তাদের শুভাকাঙ্খী। সেনাবাহিনীর নেতাদের মধ্যে সেই সবচাইতে সৎ ও ধৈর্যশীল যে ওজর ছাড়া সহজে কাউকে আক্রমণ করে না ,যে দুর্বলের প্রতি সদয় এবং সবলের প্রতি নমনীয় নয়। এরা কখনো অন্যের উচ্ছৃঙ্খলতায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে না এবং দুর্বলতা এদের বসিয়ে রাখতে পারে না ।

উচ্চ বংশমর্যাদা সম্পন্ন ,ধার্মিক ও সুন্দর ঐতিহ্যের অধিকারী ,সাহসী ও বীরত্বপূর্ণ এবং উদার ও দয়াদ্র লোকদের সঙ্গে মেলামেশা করো ,কারণ তারা সম্মানের পাত্র এবং ধার্মিকতার ঝরনাধারা। তাদের বিষয়াদি নিয়ে এমনভাবে সংগ্রাম করবে যেন পিতামাতা সন্তানের জন্য সংগ্রাম করে। তাদের শক্তিশালী করতে তুমি যা কিছু কর তা অনেক বড় কিছু করেছো বলে মনে করো না অথবা তাদের জন্য যা কিছু করতে তুমি সম্মত হয়েছে তা ক্ষুদ্র মনে করে পরিত্যাগ করো না। এতে তারা তোমার শুভানুধ্যায়ী হবে এবং তোমার সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করবে। তাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলীর প্রতি নিজকে অধিক ব্যস্ত রেখে ক্ষুদ্র বিষয়গুলোকে অবহেলা করো না। কারণ তোমার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনুকূল্যগুলোও তাদের অনেক উপকারে আসতে পারে ।

সেনাবাহিনীর কমাণ্ডারগণ তোমার কাছে এমন মর্যাদা সম্পন্ন হবে যেন তারা তাদের অধীনস্থগণকে ন্যায়ানুগ সাহায্য করে এবং তাদের পরিবারের দুঃখ - দুর্দশা মোচন করতে অর্থ ব্যয় করে। এতে সাধারণ সৈন্যদের নানাবিধ উদ্বীগ্নতা থাকবে না এবং তারা শুধু শত্রুর সাথে লড়াই করার জন্য একাগ্র থাকবে। তাদের প্রতি তোমার দয়াদ্রতা তাদের মনে তোমার প্রতি ভালোবাসার উদ্রেক করবে। একজন শাসকের জন্য সব চাইতে আনন্দদায়ক বিষয় হলো ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও প্রজাদের ভালোবাসা অর্জন করা। প্রজাদের মন পরিষ্কার হলেই তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে । তাদের শুভেচ্ছা কেবলমাত্র তখনই সঠিক হবে যখন তারা তাদেরকে রক্ষা করার জন্য কমাণ্ডারের চারপাশে ভিড় করে। তাদের পদমর্যাদাকে কখনো বোঝা মনে করো না এবং তাদের মেয়াদকাল সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে থেকে না। সুতরাং তাদের আশা - আকাঙ্খার প্রতি উদারমনা হয়ো ,তাদের প্রশংসা করো এবং যারা ভালো কাজ করবে তাদের কাজের কথা বারবার বলো ,কারণ ভালো কাজের প্রশংসা করলে বীরগণ আনন্দিত হবে এবং দুর্বলগণ সতেজ হয়ে উঠবে ,ইনশাল্লাহ।

তাদের প্রত্যেকের কৃতিত্বপুর্ণ কাজের জন্য প্রশংসা করো। এক জনের কৃতিত্ব অন্য জনের ওপর দিয়ে না এবং কর্মের তুলনায় কম পুরস্কার প্রদান করো না। উচ্চ পদমর্যাদার জন্য কারো ক্ষুদ্র কাজকে বড় করে প্রকাশ করো না এবং নিম্ন পদমর্যাদার বলে কারো বৃহৎ কাজকে ক্ষুদ্র বিবেচনা করো না।

যে সমস্ত ব্যাপার তোমাকে উদ্বীগ্ন করে এবং তোমার কাছে গোলমেলে মনে হয় সে বিষয়ে আল্লাহ ও তার রাসূলের আশ্রয় গ্রহণ করো। কারণ যাদেরকে মহিমান্বিত আল্লাহ সঠিক পথ দেখাতে চান তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন , ওহে ,তোমরা যারা বিশ্বাস কর! তারা আল্লাহ্ ও রাসূল এবং যাদের কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে তাদের আনুগত্য কর ;আর তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে বিবাদ উপস্থিত হলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হাতে ছেড়ে দাও ,যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ বিচারে বিশ্বাস কর (কুরআন - ৪: ৫৯) ।

আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেয়া মানেই কুরআনের স্পষ্ট বিধান অনুযায়ী কাজ করা এবং রাসূলের হাতে ছেড়ে দেয়া মানেই তার সুন্নাহ অনুসরণ করা যাতে কোন মতদ্বৈধতা নেই।

২। সর্বোত্তম বিচারপতি

জনগণের মধ্যে বিরোধ নিম্পত্তির জন্য তোমার মতে প্রজাগণের মধ্যে যে ব্যক্তি সব চাইতে সম্মানিত তাকে বিচারক মনোনীত করো। তার সামনে যেসব মামলা আসবে তাতে সে যেন ক্ষিপ্ত না হয় এবং বিরোধের বিষয়ে সে যেন উত্তেজিত না হয়। কোন ভুল বিষয়ে সে যেন জেদ না ধরে এবং যখন সে সত্য বিষয় বুঝতে পারে তখন যেন তা গ্রহণ করতে অসম্মত না হয়। সে যেন লোভের বশবর্তী না হয় এবং কোন বিষয়ের গভীরে না গিয়ে ভাসা - ভাসা জ্ঞান নিয়ে বিচার না করে । সন্দেহজ্জনক বিষয়ে থেমে যাওয়া তার চলবে না - যুক্তিতর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং বিরোধকারীদের ঝগড়া - তর্কে তার বিরক্ত হওয়া চলবে না। তাকে ধৈর্যের সাথে বিষয়ের গভীরে অনুপ্রবেশ করতে হবে এবং রায় প্রদান কালে চরম নির্ভিকতা প্রদর্শন করতে হবে। কোন পক্ষের প্রশংসা যেন তাকে উৎফুল্ল না করে তোলে। এ ধরনের লোক খুব কমই পাওয়া যায়।

তারপর মাঝে মধ্যে তার রায় পরীক্ষা করে দেখো এবং তাকে সে পরিমাণ অর্থ পারিশ্রমিক দেবে যাতে সে অসৎ হবার জন্য কোন ওজর দেখাতে না পারে । এতে তার কোন প্রয়োজনে অন্যের কাছে হাত বাড়াবার প্রয়োজন থাকবে না। তাকে এমন পদবীতে ভূষিত করবে যাতে করে তোমার কোন অফিসার তার উপর কর্তৃত্ব করতে না পারে। এ বিষয়ে তীক্ষ দৃষ্টি রেখো ,কারণ এ দ্বীন ইতোপূর্বে দুষ্ট ও দুর্নীতিপরায়ণদের হাতে বন্দি ছিল যখন আবেগের বশবর্তী হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো এবং তাতে জাগতিক সম্পদ চাওয়া হতো ।

৩। সর্বোত্তম নির্বাহী অফিসার

এরপর নির্বাহী অফিসারদের কর্মকাণ্ডের প্রতি নজর দিয়ো। পরীক্ষা - নিরীক্ষা করে তাদেরকে নিয়োগ করো। কখনো স্বজন - প্রীতি ও কাউকে আনুকূল্য প্রদর্শন করে তাদের নিয়োগ করো না ,কারণ এ দুটি জিনিসই অবিচার ও অন্যায়ের উৎস। অভিজ্ঞ এবং বিনয়ী দেখে তাদের নিয়োগ করো। যারা ধার্মিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে এবং পূর্বে ইসলাম ধর্মে ছিল তারা অকলঙ্কিত সম্মানের অধিকারী। তারা লোভের বশবর্তী হয় না এবং কোন বিষয়ের পরিণামের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখে।

তাদের বেতন এমনভাবে দেবে যাতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে পর্যাপ্ত জীবিকা নির্বাহ করতে পারে । এতে তারা নিজেদেরকে সৎপথে রাখতে পারবে এবং তাদের তত্ত্বাবধানে রক্ষিত সম্পদের প্রতি নজর দেবে না। এতে যদি তারা কখনো তোমার আদেশ অমান্য করে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করে তবে তাতে তাদের কোন যুক্তি চলবে না। তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি নজর রেখে তোমাকে রিপোর্ট দেয়ার জন্য কিছু সংখ্যক সত্যবাদী ও বিশ্বাসী লোক রেখো ,কারণ তোমার গোপন সংবাদ রাখার কথা জানতে পারলে তারা সততা রক্ষা করতে ও জনগণের প্রতি সদয় হতে বাধ্য হবে। সহকারীগণ সম্পর্কে সতর্ক থেক । যদি তাদের মধ্যে কেউ সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করতে সাহস করে এবং তোমার গোপন সংবাদদাতার সংবাদে তা সত্য বলে জানা যায়। তবে তাই প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করো। তখন তুমি তাকে শারীরিক শাস্তি প্রদান করো এবং যা সে আত্মসাৎ করেছে তা উদ্ধার করে নিয়ো । এ রকম লোককে আমর্যাদাকর অবস্থানে নামিয়ে দিয়ো এবং আত্মসাতের অপরাধে তাকে ব্ল্যাকলিষ্ট করে দিয়ো এবং তার অপরাধের জন্য অপমানের মালা তাকে পরিয়ে দিয়ো ।

৪ । যাকাত প্রদানকারীদের বৈশিষ্ট্য

রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে ,রাজস্ব। (খারাজ) প্রদানকারীগণ যেন তাদের সম্পদে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। কারণ রাজস্ব দাতাদের উন্নতির ওপরই সমাজের অন্য সকলের উন্নতি নির্ভরশীল। রাজস্ব দাতাগণ ছাড়া অন্যরা উন্নতি লাভ করতে পারে না ,কারণ জনগণ রাজস্ব ও রাজস্ব দাতাদের ওপর নির্ভরশীল। রাজস্ব আদায় অপেক্ষা চাষাবাদের প্রতি তোমাকে বেশি নজর দিতে হবে। কারণ চাষাবাদ ছাড়া রাজস্ব আদায় করা সম্ভব নয় এবং চাষাবাদ ছাড়া রাজস্ব দাবী করা মানেই জনগণকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া । এ রকম শাসন বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না।

যদি প্রজারা আরোপিত করা সহনীয় নয় বলে অভিযোগ করে অথবা রোগব্যাধি অথবা পানির অভাব অথবা পানির আধিক্য অথবা জমির অবস্থা পরিবর্তন অথবা বন্যা অথবা খরার কবলে পড়ে তবে তাদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে কর মওকুফ করো যাতে তাদের কষ্ট লাঘব হয়ে অবস্থার উন্নতি হয়। প্রজাদের দুঃখ - দুর্দশা লাঘব করার জন্য রাজস্ব হার কমিয়ে দেয়াতে কখনো বিচলিত বা অসম্মত হয়ো না ,কারণ এটা শাসকের জন্য এমন বিনিয়োগ যা প্রশংসা ছাড়াও দেশের সুখ - সমৃদ্ধি এবং শাসনকালকে সুখ - সমৃদ্ধি ও শান্তি - শৃংখলার মধ্যে রাখবে। এ বিনিয়োগের কারণে তুমি তাদের শক্তির উপর আস্থা রাখতে পারবে এবং তাদের প্রতি দয়া দেখিয়ে যে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে। সেজন্য তারা তোমার প্রতি আস্থাশীল থাকবে। এরপর অবস্থা এমনও হতে পারে যে তাদের সাহায্য তোমার প্রয়োজন হয়ে পড়বে। তখন তারা সানন্দে তা বহন করবে ,কারণ সমৃদ্ধ হলে তারা যে কোন বোঝা বহন করতে সক্ষম হবে। কৃষকের দারিদ্র যে কোন দেশের ধ্বংস নিয়ে আসে। যখন কৃষকেরা দরিদ্র হয়ে পড়ে আর অফিসারগণ চাকরি বাঁচানোর জন্য কর আদায়ে তৎপর থাকে তখনই দেশে অসন্তোষ ও গোলযোগ দেখা দেয় ।

৫। সর্বোত্তম কর্মচারীদের

তারপর কর্মচারীদের প্রতি যত্নবান হয়ো। তাদের মধ্যে যে সর্বোত্তম তাকে তোমার কাজকর্ম চালাবার ভার দিয়ো । তাদের মধ্যে যে উত্তম চরিত্রের এবং সম্মানের কারণে গর্বিত নয় এমন লোককে তোমার পলিসি ও গোপন বিষয় সংক্রান্ত পত্রের দায়িত্ব অর্পণ করো। তোমার অফিসারদের চিঠি - পত্র তোমার সামনে তুলে ধরতে সে যেন কখনো গাফলতি না করে এবং ওই সব পত্রের সঠিক জবাব যেন তোমার পক্ষ থেকে পাঠায়। সে যেন তোমার পক্ষ থেকে ক্ষতিকারক কোন চুক্তি সম্পাদন না করে এবং তোমার বিরুদ্ধে যায় এমন চুক্তি প্রত্যাখ্যান করতে ব্যর্থ না হয়। কোন বিষয়ে সে যেন তার নিজের মর্যদার বিষয়ে বেমালুম না হয় ,কারণ যে নিজের মর্যাদা বুঝতে পারে না সে অন্যের মর্যাদা মোটেই বুঝতে পারে না।

এসব লোক নিয়োগ করতে শুধুমাত্র তোমার জানাশোনা ,আস্থাবান ও তাদের প্রতি তোমার ভালো ধারণার উপর নির্ভর করো না ,কারণ তুমি মুষ্টিমেয় ক্ষেত্রে তাদের দেখতে পেয়েছ। তাদের অনেকেই কৃত্রিম ভালো আচার - আচরণ দ্বারা তোমার মন জয় করতে পারে। কাজেই তোমার পূর্ববর্তী শাসন আমলে তাদের কর্মকাণ্ডের রেকর্ড দেখে তাদের নিয়োগ করো। জনসাধারণের কাছে যার সুনাম ও বিশ্বাসযোগ্যতার খ্যাতি রয়েছে তার অনুকূলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো। এতে আল্লাহর প্রতি তোমার দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ পাবে এবং তোমার ইমামের প্রতিও শ্রদ্ধা প্রদর্শিত হবে । সরকারি কর্মকাণ্ডকে কয়েকটি ভাগ করে প্রত্যেক বিভাগের জন্য একজন প্রধান নিয়োগ করো। তাকে এমন হতে হবে যেন বড় বড় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সে অযোগ্য না হয় এবং কাজের চাপে যেন সে হতবুদ্ধি হয়ে না পড়ে। সচিবদের ত্রুটি - বিচ্যুতি যদি তুমি এড়িয়ে যাও তবে তোমাকে দায়ী করা হবে।

৬। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিগণ

এখন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিগণ সম্পর্কে কিছু উপদেশ নাও। তারা দোকানদার হোক ,ব্যবসায়ী হোক আর কায়িক শ্রমিক হোক তাদেরকে ভালো উপদেশ দিয়ো ,কারণ তারা লাভের উৎস এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের যোগানদার। সুদূর এলাকা ,পাহাড় - পর্বত - সমুদ্র যেখানে মানুষ যেতে সাহস পায় না। সেখান থেকে এরা দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে আসে। এরা শান্তি প্রিয় এবং এদের কাছ থেকে বিদ্রোহের কোন ভয় নেই। এরা কখনো দেশদ্রোহী হয় না।

তোমার সামনে এদের কোন বিষয় উত্থাপিত হলে তা সমাধান করে দিয়ো এবং তোমার সীমানার যে কোন স্থানে তাদের যেতে দিয়ে। এর সাথে মনে রেখো ,তাদের অধিকাংশই হীনমনা ও ধনলোভী। তারা বেশি মুনাফা অর্জনের লোভে মালপত্র মজুদ করে রাখে এবং অধিক মূল্যে পরে বিক্রি করে। এটা জনগণের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং ভারপ্রাপ্ত অফিসারদের জন্য কলঙ্ক । মালামালের মজুদদারী বন্ধ করে দিয়ো ,কারণ আল্লাহর রাসূল এটা নিষিদ্ধ করেছেন। সঠিক দামে ও ওজনে রীতিমত মালামাল বিক্রি করতে হবে। এতে ক্রেতা ও বিক্রেতা কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। তোমার শাসনকালে যারা মজুদদারী করবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ো ,কিন্তু কঠোর শাস্তি নয়।

৭ । নিম্ন শ্রেণির লোক

নিম্ন শ্রেণির লোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো। এরা হলো সেই শ্রেণি যারা গরীব ,দুঃস্থ ,কপর্দকহীন ও আঁতুর। এশ্রেণি দু ভাগে বিভক্ত একদল অতৃপ্ত - অন্যদল ভিক্ষুক। এদের প্রতি আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করতে যত্নবান হয়ো। তা না করলে আল্লাহর কাছে তুমি দায়ী হবে। তাদের জন্য সরকারি কোষাগার থেকে ভাতা নির্ধারণ করে দিয়ো এবং প্রত্যেক এলাকার শস্য থেকে ভাতা নির্ধারণ করে দিয়ো এবং যা যুদ্ধ লব্ধ হয় তার একটা অংশ নির্ধারণ করো দিয়ে। কারণ এতে নিকটবর্তী ও দূরবর্তীগণ সমান অংশ পাবে। সব লোকের দায়িত্ব তোমার হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। সুতরাং জাকজমকে গা এলিয়ে দিয়ে এদের কথা ভুলে যেয়ো না এবং এদের কাছ থেকে দূরে সরে থেকো না। এটা ক্ষুদ্র বিষয় হলেও এড়িয়ে গিয়ে ক্ষমা পাবে না ,কারণ এর চাইতে অনেক বড় সমস্যার সিদ্ধান্ত তুমি গ্রহণ করবে। ফলে তাদের প্রতি কখনো অমনোযোগী হয়ে না অথবা অহম বশত তাদের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে না।

যারা সহজে তোমার কাছে আসতে পারে না অথবা মানুষ যাদের নিচ বলে মনে করে তাদের ব্যাপারে যত্নবান হয়ো। তাদের অবস্থা দেখা - শুনার জন্য এমন কিছু লোক নিয়োগ করো যারা বিনয়ী ও খোদাভীরু । এ সব লোক তাদের প্রকৃত অবস্থা সঠিকভাবে তোমাকে অবহিত করবে। তাদের বিষয়াবলী নিষ্পত্তি করতে আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্বের কথা মনে রেখো। কারণ এ দায়িত্বের জন্য তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে যখন তুমি তার সাক্ষাতে যাবে। মনে রেখো ,প্রজাদের মধ্যে এরা সব চাইতে বেশি ন্যায়াচরণ পাবার দাবী রাখে। একই সাথে অন্যদের অধিকারও পূর্ণ করে দিয়ো যাতে আল্লাহর কাছে হিসাব দিতে পার।

এতিম ও বৃদ্ধ যাদের জীবিকার্জনের কোন উপায় নেই অথচ তারা ভিক্ষাবৃত্তিও গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। এদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হয়ো। এ দায়িত্ব অফিসারদের ওপর গুরুভার ;বস্তুত প্রত্যেক অধিকার ও দয়িত্ব এক একটা গুরুভার। যারা পরকালের পুরস্কার চায় তাদের জন্য আল্লাহ এ দায়িত্ব হালকা করেছেন এবং তাদের প্রতি আল্লাহ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার সত্যতা সম্বন্ধে আস্থা রেখো। প্রজাদের নালিশ শোনার জন্য একটা সময় নির্ধারণ করে নিয়ো। ওই সময়ে মনোযোগ সহকারে এবং সর্বসাধারণের সামনে প্রকাশ্যে তাদের অভিযোগ শ্রবণ করো। এ সময়ে তোমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কথা স্মরণ করে বিনয়ী অবস্থায় থেকো। যখন তুমি প্রজাদের অভিযোগ শোনবে তখন তোমার কোন সৈন্যবাহিনীর সদস্যকে ধারে কাছে রেখো না। এতে করে মানুষ যা বলতে এসেছে তা নির্দ্বিধায় ও নিঃশঙ্ক চিত্তে বলতে পারবে। আমি একাধিক স্থানে আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছি ,যে জনগোষ্ঠীতে দুর্বলের অধিকারে সবলেরা নিরাপত্তা প্রদান করে না এবং দুর্বলদের শঙ্কাহীন করে না ,সে জনগোষ্ঠী কখনো পবিত্রতা অর্জন করতে পারবে না। কোন কিছু বলতে তাদরে অক্ষমতা ও প্রতিবন্ধকতা সহ্য করে নিয়ো। এজন্য আল্লাহ তার রহমতের ছায়া তোমার ওপর ছড়িয়ে দেবেন এবং তার আনুগত্যের জন্য মহাপুরস্কার তোমার জন্য নির্ধারণ করে দেবেন। যা কিছু তুমি দান কর না কেন ,প্রফুল্ল মনে দান করো। কিন্তু যখন তুমি দান করতে পারবে না এবং যাচনাকারীকে ফিরিয়ে দাও তখন ভালোভাবে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে ফিরিয়ে দিয়ো ।

এরপর আরো কিছু কাজ থেকে যাবে যা তুমি নিজ হাতে সম্পাদন করবে। উদহারণ স্বরূপ ,তোমার অফিসারদের পত্রের জবাব ,যদি তোমার সচিবগণ তা করতে সক্ষম না হয় ,অথবা জনগণের অভিযোগ নিম্পত্তিকরণ যা তোমার সহকারীগণ করতে শঙ্কিত হয় । দিনের কাজ দিনেই শেষ করো কারণ প্রতিদিনই নির্ধারিত কাজ আছে। দিনের উত্তম ও বেশির ভাগ ইবাদতের জন্য নির্ধারিত রেখো ;যদিও প্রতিটি কাজই আল্লাহর কাজ যখন নিয়্যত পবিত্র হয় এবং প্রজাদের মঙ্গলের জন্য হয়।

আল্লাহর ধ্যান

যে সব বিশেষ কাজ দ্বারা তুমি দ্বীনের পবিত্রতা অর্জন করতে পারবে তা হলো আল্লাহর প্রতি তোমার বিশেষ দায়িত্বগুলো পালন ও পূর্ণ করা। সুতরাং দিনে ও রাতে কিছু শারীরিক কসরত দ্বারা আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হয়ো। তুমি আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যা কিছু কর না কেন তা হতে হবে পরিপূর্ণ ,ত্রুটিহীন ও ঘাটতিবিহীন। এটা করতে যতই শারীরিক কষ্ট হোক না কেন তাতে পিছপা হয়ো না। যখন তুমি নামাজে ইমামতি করবে তখন মনে রাখবে ,তা যেন এত লম্বা না হয় যাতে মানুষ অস্বস্তি অনুভব করে। আবার এমন খাটে যেন না হয় যাতে তা পণ্ড হয়ে পড়ে। কারণ তোমার পিছনে এমন লোকও থাকতে পারে যে রুগ্ন অথবা যার নিজের কিছু জরুরী প্রয়োজন রয়েছে। যখন আল্লাহর রাসূল আমাকে ইয়েমেন প্রেরণ করেছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিভাবে তাদের সাথে নামাজ আদায় করবো। তিনি বলেছিলেন , এমনভাবে সালাত কায়েম করো যাতে তাদের মধ্যকার সবচাইতে দুর্বল ব্যক্তিও তা করতে পারে এবং ইমানদারগণের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ো। ”

দীর্ঘ সময় ব্যাপী নিজকে জনগণ থেকে দূরে সরিয়ে রেখো না। কারণ যারা প্রশাসনের কর্তৃত্ব প্রাপ্ত তারা জনগণের কাছ থেকে সরে থাকা অদূরদর্দশীতার পরিচায়ক এবং এতে জনগণ তাদের কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে অনবহিত থেকে যায়। জনগণ থেকে দূরে সরে থাকলে তারা যা জানে না সে বিষয়ে জ্ঞানার্জন করতে পারে না। ফলে তারা ছোট ছোট বিষয়গুলোকে বড় এবং বড় বড় বিষয়গুলোকে ছোট মনে করে ভুল পথে চলতে থাকে। তারা ভালোকে মন্দ এবং মন্দকে ভালো মনে করে ভুল করতে পারে। এ সবের ফলে সত্য বিষয়ে মতদ্বৈধতা দেখা দেয় এবং অসত্য প্রচলিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। মোটের উপর শাসকও একজন মানুষ ;কাজেই জনগণ যা তার কাছে গোপন রাখে তা সে জানতে পারে না ।

সত্যের বিভিন্ন প্রকাশকে মিথ্যা থেকে আলাদা করার জন্য কোন সুস্পষ্ট রং বা আলেখ্য নেই। এতে দু প্রকার মানুষের মধ্যে তুমি এক প্রকার হতে পার। হয় তুমি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদার হতে পার ,সে ক্ষেত্রে তোমার দায়িত্ব ও কর্ম সঠিকভাবে সম্পাদন করে কেন তুমি জনগণের কাছ থেকে আত্মগোপন করে থাকবে ? অথবা তুমি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্পণ্য প্রদর্শন করতে পারে ,সেক্ষেত্রে জনগণ হতাশ হয়ে পড়বে ,যেহেতু তোমার কাছ থেকে উদার ব্যবহার পাওয়ার আর কোন আশা তাদের থাকবে না। তাসত্ত্বেও তোমার কাছে জনগণের এমন সব প্রয়োজন রয়ে গেছে যা তোমাকে কোন প্রকার অভাব - অনটন বা কষ্টে ফেলবে না ;যেমন - অত্যাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা কোন বিষয়ে ন্যায় বিচারের আবেদন ।

একজন শাসকের কিছু প্রিয় লোক থাকে যারা সহজে তার কাছে যেতে পারে। এরাই সচরাচর জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করে। এরা উদ্ধত ও স্বেচ্ছাচারী হয় এবং এরা কোন বিষয়ে ন্যায়ের তোয়াক্কা করে না। এসব পাপাচারের মূলোৎপাটন তোমাকে করতে হবে এবং এ ধরনের লোকদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে। তোমার সমর্থক অথবা যারা তোমার পিছনে পিছনে ঘুরে তাদের কখনো জমি মঞ্জুর করো না। তারা যেন তোমার কাছে থেকে জমির দখল আশা করতে না পারে যা পার্শ্ববর্তী লোকদের চাষাবাদ ,সেচ ও অন্যান্য কাজে ক্ষতি সাধন করতে পারে। এসব লোকদের জমি দিলে তোমার কোন উপকার হবে না এবং যারা অসুবিধায় পড়বে তারা তোমাকে দোষারোপ করবে এবং পরকালেও তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে।

প্রত্যেককে তার প্রাপ্যতা অনুসারে প্রাপ্য পরিশোধ করো ,সে যে কেউ হোক না কেন - হোক সে তোমার নিকট আত্মীয় অথবা দূরবর্তী কোন লোক। এ কাজে তোমাকে সহীষ্ণু ও সর্তক হতে হবে। যদিও এতে তোমার আত্মীয় অথবা কোন প্রিয় ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা তোমার জন্য বেদনাদায়ক হতে পারে। কিন্তু এর ফলে তোমার জন্য যা বিনিময় আসবে তা অতি সুন্দর (সুনাম ও আল্লাহর পুরস্কার ) । যদি প্রজারা তোমাকে উদ্ধত ও স্বেচ্ছাচারী মনে করে তবে খোলাখুলিভাবে তাদের কাছে তোমার অবস্থা বর্ণনা করো এবং তোমার ব্যাখ্যা দ্বারা তাদের সন্দেহ দূর করার চেষ্টা করো। কারণ এ ব্যাখ্যা তোমার আত্মার প্রশান্তি আনবে এবং প্রজাদেরকে সত্য উপলব্ধি করতে সহায়তা করবে।

যদি তোমার শত্রু শান্তি স্থাপনের আহবান জানায় তবে তাতে সাড়া দিয়ো - আহবান বাতিল করে দিয়ে না। শান্তি স্থাপনে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। শান্তি স্থাপিত হলে তোমার সৈন্যবাহিনী বিশ্রাম পাবে ,তুমি উদ্বীগ্নতা থেকে নিস্তার পাবে এবং তোমার দেশ নিরাপদ থাকবে। একটা বিষয় মনে রেখো ,শান্তি স্থাপনের পর শত্রুর আক্রমণের ভয় বেশি। কারণ শত্রু অনেক সময় অবহেলার সুযোগ গ্রহণ করার জন্য শান্তির প্রস্তাব দেয়। কাজেই এদিকে সতর্ক থেক এবং এ ব্যাপারে গা এলিয়ে দিয় না। যদি কখনো শত্রুর সংগে কোন ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হও তবে চুক্তির শর্ত মেনে চলো এবং বিশ্বস্ততার সাথে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করো। তোমার প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য নিজকে বর্ম করে রেখো। কারণ মানুষের মধ্যে ধ্যান - ধারণা ,আদর্শ ও মতের পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পালনকারীর প্রতি সকলেরই সম্মানবোধ থাকে এবং আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ। শুধু মুসলিম নয় ,কাফেরগণ পর্যন্ত চুক্তির শর্ত মেনে চলে ,কারণ চুক্তিভঙ্গের মারাত্মক পরিণতি তারা অনুধাবন করতে পেরেছিল। সুতরাং শক্রকে প্রতারণা করো না ,কারণ অজ্ঞ ও পাপাচারী ছাড়া কেউ আল্লাহকে অসন্তষ্ট করে না। আল্লাহ তার চুক্তি ও প্রতিশ্রুতিকে তার বান্দাদের ওপর দয়া ও ক্ষমার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিরাপত্তা দান করেছেন ,যার মধ্যে তারা নিরাপদে বাস করে এবং তাঁর নৈকট্যের সুফল অনুসন্ধান করে। সুতরাং প্রতিশ্রুতিতে কোন প্রকার প্রবঞ্চনা ,চাতুর্য বা কুটবুদ্ধি থাকতে পারবে না। এমন কোন চুক্তি করো না যার অন্য কোন ব্যাখ্যা হতে পারে অর্থাৎ চুক্তিতে দ্ব্যর্থক কথা ব্যবহার করো না। চুক্তি সম্পাদন সমাপ্ত হবার পর এর অস্পষ্ট শব্দের ব্যাখ্যা পরিবর্তন করো না। যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে করা কোন চুক্তিতে তুমি কোন দুর্দশাগ্রস্থ হও তবুও যথেষ্ট যৌক্তিকতা ব্যতীত তা বাতিল করো না। কারণ গোলযোগ অপেক্ষা কষ্ট সহ্য করা অধিকতর ভালো। গোলযোগের পরিণতি ভয়াবহ এজন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে এবং ইহকাল ও পরকালে এর জন্য ক্ষমা পাবে না।

সতর্কতা অবলম্বন

যথেষ্ট যৌক্তিকতা ছাড়া রক্তপাত এড়িয়ে যেয়ো। কারণ আল্লাহর মহাশাস্তি আমন্ত্রণে ,কুপরিণতি আনয়নে ,সমৃদ্ধির পথে বাধা দিতে ও জীবন - পথকে খাট করে দিতে অহেতুক রক্তপাতের কোন জুড়ি নেই। শেষ বিচারের দিনে মহিমান্বিত আল্লাহ রক্তপাতের ঘটনা দিয়ে তাঁর বিচার কার্য শুরু করবেন। সুতরাং তোমার সরকারকে শক্তিশালী এবং ক্ষমতাকে সুসংহত করার জন্য নিষিদ্ধ রক্তপাত ঘটিয়ে না। কারণ অহেতুক রক্তপাত কর্তৃত্ব দুর্বল ও ক্ষীণ করে ধ্বংসের দিকে নিয়ে ক্ষমতার বদল ঘটায়। ইচ্ছাকৃত হত্যার জন্য তুমি আল্লাহর অথবা আমার সম্মুখে কোন কৈফিয়ত দিতে পারবে না। কারণ এ ধরনের কাজে অবশ্যই প্রশ্ন বা প্রতিশোধ নেয়ার বিষয় থাকে। যদি তুমি ভুল বশত অথবা তোমার তরবারি সম্বরণ করতে না পেরে অথবা শাস্তি প্রদানে কঠোর হয়ে কাউকে হত্যা কর। তবে তোমার ক্ষমতার দম্ভ যেন তার উত্তরাধিকারীদেরকে ক্ষতিপূরণ প্রদান থেকে বিরত না করে।

তোমার মধ্যে যেসব ভালো গুণ আছে তা ভেবে কখনো আত্মগৌরব ও আত্মপ্রশংসা অনুভব করো না এবং মানুষের অতিরঞ্জিত প্রশংসায় আত্মপ্রসাদ লাভ করো না। কারণ ধার্মিকদের ভালো কাজগুলো পণ্ড করে দেয়ার জন্য এটা হচ্ছে শয়তানের একটা মোক্ষম সুযোগ। প্রজাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেসব কল্যাণকর কাজ তুমি করবে তা তাদরেকে দেখিয়ে দেয়া অথবা নিজের কাজের প্রশংসা করা অথবা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভঙ্গ করা এড়িয়ে যেয়ো। কারণ দায়িত্ব পালন করে অন্যকে মনে করিয়ে দেয়া ভালো কাজের সুফল নষ্ট করে দেয় ;আত্মপ্রশংসা সত্যের আলো কেড়ে নিয়ে যায় এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী আল্লাহ ও মানুষের ঘৃণা অর্জন করে। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন , তোমরা যখন যা বল তা না করাটাই আল্লাহর কাছে সব চাইতে অপছন্দনীয়। ”

সময় হবার আগেই কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তড়িঘড়ি করো না। আবার সময় হয়ে গেলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে শৈথিল্য করো না। কোন কাজের পরিণাম অনুধাবন করতে না পারলে তা করতে জেদ ধরো না। আবার পরিণাম অনুধাবন করতে পারলে দুর্বল হয়ে পড়ো না। প্রত্যেক কাজ যথাসময়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ও যথাস্থানে করতে যত্নবান হয়ো ।

যেসব বিষয়ে সবার সমান অংশ রয়েছে তা নিজের জন্য সংরক্ষিত করে রেখো না । অন্যের জন্য তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে ,এ অজুহাতেও সবার প্রকাশ্য বিষয় নিজের জন্য সংরক্ষিত করো না। সহসাই তোমার দৃষ্টি থেকে সকল বিষয়ের পর্দা উন্মোচিত হবে এবং মজলুমের দুঃখ দূর করার জন্য তোমার দরকার হবে। আত্মসম্মান বোধ ,ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ,বাহুবল ও জিহবার তীক্ষ্নতার ওপর নিয়ন্ত্রণ রেখো। কোনো কিছুতে তাড়াহুড়া করো না ,ক্রোধ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব করো এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ শক্তি অর্জন করো। যে পর্যন্ত আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন বিষয়টি সর্বদা তোমার মনে জাগারুক না হবে সে পর্যন্ত তুমি এসব গুণ অর্জন করতে পারবে না।

তোমাকে স্মরণ করতে হবে যে ,তোমার পূর্ববর্তীগণ তাদের কর্মকাণ্ড কিভাবে চালিয়েছে। এটা একটা সরকার হতে পারে ,অথবা একটা মহৎ ঐতিহ্য হতে পারে অথবা আমাদের রাসূলের (সা.) নজির হতে পারে অথবা আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থে বিধৃত কোন অবশ্যপালনীয় আদেশ হতে পারে। তুমি সেগুলোকে এমনভাবে মানবে যেমন করে আমরা সেগুলোকে মেনে চলেছি। একইভাবে এ দলিলে আমি তোমাকে যা আদেশ করেছি তা তুমি পালন করো। যদি তোমার হৃদয় কামনা - বাসনার দিকে ঝুকে পড়ে তবে এ দলিল তোমাকে ফিরিয়ে রাখতে সহায়তা করবে। তুমি যেন সত্যের পথে সুদৃঢ় থাকতে পার সে জন্য আমি তোমার প্রতি আমার কর্তব্য পালন করলাম ।

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি ,তিনি যেন তোমাকে ও আমাকে তার হেদায়েতের পথে সুদৃঢ় থাকার তৌফিক দান করেন। তাঁর সন্তুষ্টি ও তাঁর বান্দাদের কল্যাণ সাধন এবং দেশের সমৃদ্ধি সাধনই যেন আমাদের সকলের কাজের লক্ষ্য হয় । তিনি যেন তোমাকে ও আমাকে শাহাদাত বরণ করার সৌভাগ্য দান করেন। নিশ্চয়ই ,আমরা তার কাছেই প্রত্যাবর্তন করবো। আল্লাহর রাসূল ও তাঁর বংশধরগণের ওপর দরূদ ও সালাম । এখানেই শেষ করলাম ।

____________________

১ । এ দলিলখানাকে ইসলামি সমাজের গঠনতন্ত্র বলা যেতে পারে। এ দলিলখানা এমন এক ব্যক্তি লিখেছিলেন যিনি ঐশী বিধান পালন করতেন। আমিরুল মোমেনিনের এ দলিল থেকে তাঁর দেশ শাসনের প্রকৃতি সহজেই অনুমান করা যায় এবং তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল আল্লাহর দ্বীন কায়েম করা ও সমাজের উন্নতি সাধন করা। তিনি জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা ,লুটপাট করে রাজকোষ ভরে তোলা অথবা ন্যায় - অন্যায় বিবেচনা না করে রাষ্ট্রের সীমানা বর্ধিত করার পক্ষপাতী ছিলেন না। যে সব সরকার জাগতিক বিষয়ে লোলুপ ,তারা তাদের সুবিধা অর্জনের মতো করে গঠনতন্ত্র তৈরী করে এবং তাদের জাগতিক স্বার্থ হাসিলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন সব আইন - কানুন বদল করে ফেলে। কিন্তু আমিরুল মোমেনিনের এ দলিল সর্বসাধারণের স্বার্থ রক্ষার জিম্মাদার এবং সমষ্টিগত সংগঠনের রক্ষক। এটা নির্বাহকরণে স্বার্থপরতার কোন ছোঁয়াও নেই। আল্লাহর প্রতি দায়িত্ব পালনের মৌলনীতি এতে বিধৃত রয়েছে। কোন ধর্ম বা গোত্র আলাদা না করে মানুষের অধিকার সংরক্ষণের নীতি এতে রয়েছে। এতে রয়েছে দরিদ্র ও দুঃস্থের প্রতি যত্ন নেয়ার বিধান ,নিচ ও অবহেলিতদের বাচার উপায় ,শান্তি ,নিরাপত্তা সমৃদ্ধি ও মানুষের কল্যাণ। এক কথায় অধিকার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার পূর্ণ দেশনা এতে রয়েছে।

৩৮ হিজরি সনে যখন মালিক ইবনে হারিছ। আশতারকে মিশরের গভর্ণর নিয়োগ করা হয়েছিল তখন আমিরুল মোমেনিন তাকে এটা লিখেছিলেন। আমিরুল মোমেনিনের প্রধান সহচরদের মধ্যে মালিক আশতার অন্যতম। তিনি আমিরুল মোমেনিনের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস এবং ধৈর্য ও দৃঢ়তা দেখিয়েছিলেন। আমিরুল মোমেনিনের আচরণ ও প্রকৃতি অনুসরণ করে তিনি তাঁর নৈকট্য ও সংশ্রব লাভ করেছিলেন এবং একজন পরিপূর্ণ মানবে পরিণত হয়েছিলেন। আমিরুল মোমেনিনের এ কথা থেকে তার অবস্থান সহজে নির্ণয় করা যায় আমি আল্লাহর রাসূলের কাছে যেরূপ ছিলাম মালিক আমার কাছে তদ্রুপ" (হাদীদ ,১৫শ খণ্ড ,পৃঃ ৯৮ ;খায়াত ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ১৩১) । মালিকও স্বার্থহীনভাবে আমিরুল মোমেনিনের পক্ষে সকল যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে আমিরুল মোমেনিনের বাহু হিসাবে নিজকে প্রমাণ করেছেন। তিনি এরূপ সাহস ও বীরত্ব দেখিয়েছিলেন যে ,সারা আরবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এ বীরত্বের সাথে তিনি ছিলেন অসীম ধৈর্য ও ক্ষমার মূর্তপ্রতীক। ওয়াররাম ইবনে আবি ফিরাছ আন - নাখাই লিখেছেন যে ,একদিন মালিক কুফার বাজার দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার গায়ের কাপড় ও মাথার পাগড়ি ছিল চটের। একজন দোকানদার তাকে দেখে তার গায়ে পচা পাতা নিক্ষেপ করেছিল। এ নোংরা ব্যবহারে তিনি কিছু মনে করেননি। এমনকি লোকটির দিকে ফিরেও না তাকিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। এক ব্যক্তি দোকানদারকে বললো , কাকে তুমি অপমান করলে তা কি জান ? দোকানদার বললো , না ,আমি চিনি না। ” লোকটি বললো , ইনিই আমিরুল মোমেনিনের সহচর - মালিক আশতার। ” এ কথা শোনা মাত্রই লোকটি পিছুপিছু দৌড়াতে লাগলো। ততক্ষণে মালিক মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করতে শুরু করেছেন। সালাত শেষে লোকটি মালিকের পায়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে তার অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইতে লাগলো। মালিক লোকটিকে তুলে ধরে বললেন ,আল্লাহর কসম ,তোমার জন্য ক্ষমা চাইতেই আমি মসজিদে প্রবেশ করেছি। আমি তোমাকে সেই মুহুর্তেই ক্ষমা করে দিয়েছি এবং আশা করি আল্লাহও তোমাকে ক্ষমা করবেন। (ফিরাস ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২৫ মজলিসী ,৪২ তম খণ্ড ,পৃঃ ১৫৭) আরবের বিখ্যাত একজন বীর যার নামে শত্রুর বুক কেঁপে উঠতো তার আচরণ ও ধৈর্য এমন ছিল। এ বিষয়ে আমিরুল মোমেনিন বলেছিলেন ,সে ব্যক্তিই সব চাইতে বীর যে নিজের কামনা - বাসনা ,ক্রোধ ও অহমবোধকে পরাভূত করতে পেরেছে।

এসব চরিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং গুণাবলী ছাড়াও প্রশাসন এবং সংগঠনে তার যথার্থ বুৎপত্তি ছিল। যখন উসমানি পার্টি (উসমানিয়া) মিশরে ফেতনা - ফাসাদ ও বিদ্রোহ করে আইন শৃংখলা বিনষ্ট করে এবং দেশটাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো আমিরুল মোমেনিন তখন মুহাম্মদ ইবনে আবি বকরকে শাসনকর্তার পদ থেকে সরিয়ে মালিক আশতারকে তার স্থলে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। এ সময় মালিক নাসিবিনের গভর্ণর ছিলেন। যাহোক ,আমিরুল মোমেনিন মালিককে নির্দেশ দিলেন তিনি যেন কাউকে তার স্থলে ডেপুটি হিসাবে পছন্দ করে আমিরুল মোমিনের কাছে চলে আসেন। আদেশ পাওয়া মাত্র মালিক শাহবিব ইবনে আমির আজদীকে নাসিবিনের দায়িত্ব দিয়ে আমিরুল মোমেনিনের কাছে চলে এসেছেন। আমিরুল মোমেনিন তাকে নিয়োগ পত্র প্রদান করে মিশরের দিকে যাত্রা করতে আদেশ দিলেন এবং মিশরবাসীদের উদ্দেশ্যেও একটা নির্দেশ লিখে দিলেন যেন তারা মালিককে মান্য করে চলে। এ দিকে মুয়াবিয়া তার গুপ্তচরদের মাধ্যমে এ খবর পেয়ে হতবুদ্ধি হয়ে গেল ,কারণ সে আমর ইবনে আসকে মিশরের গভর্ণর করার আশা দিয়েছিলো এবং সেজন্য ইবনে আস তার সেবাদাসে পরিণত হয়েছিল। মুয়াবিয়া ভেবেছিল মুহাম্মদ ইবনে আবি বাবরকে পরাভূত করে মিশর দখল করা তার জন্য সহজ হবে। কিন্তু মালিকের নিয়োগের কথা শুনে তার অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল। কারণ মালিককে পরাস্থ করা মুয়াবিয়ার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠবে না। ফলে মিশর জয় করা দুরাশায় পর্যবসিত হবে। মুয়াবিয়া তার চিরাচরিত গুপ্ত হত্যার আশ্রয় গ্রহণ করতে মনস্থ করলো এবং মিশরের ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বেই মালিককে হত্যা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরিশ (কুলজুম) শহরের এক জমিদারের দ্বারস্থ হয়ে সমস্ত খাজনা মওকুফ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে বললো মালিক আরিশ দিয়ে যাবার সময় সে যেন মালিককে হত্যা করে। ফলে মালিক যখন সৈন্য - সামন্ত নিয়ে আরিশ পৌছলো তখন আরিশের প্রধান তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে তার মেহমান হবার অনুরোধ করলো। মালিক তার আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন। খাবার পর মেজবান তাকে মধু মিশ্রিত শরবত পান করতে দিল যাতে বিষ মিশ্রিত ছিল। এ শরবত খাবার পরই বিষক্রিয়া দেখা দিল এবং অল্পক্ষণের মধ্যেই এ মহাবীর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।

যখন মুয়াবিয়া জানতে পারলো যে তার চাতুর্যপূর্ণ কৌশল কৃতকার্য হয়েছে তখন সে আনন্দে ফেটে পড়লো এবং উল্লাসে বলতে লাগলো , ওহে ,মধুও আল্লাহর সৈনিক। ” তারপর সে বক্তৃতায় বললো , আলী ইবনে আবি তালিবের দুই দক্ষিণ হস্তস্বরূপ দুটি লোক ছিল। এর একটি হলো আম্মার ইবনে ইয়াসির যাকে সিফফিনে হত্যা করা হয়েছে এবং অপরটি হলো মালিক আশতার যাকে এখন হত্যা করা হলো। ”

কিন্তু মালিক নিহত হবার সংবাদ পেয়ে আমিরুল মোমেনিন দারুণভাবে মর্মাহত হয়েছেন এবং দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি বললেন , মালিক! কে মালিক ? যদি মালিক পাথর হতো তবে সে সুকঠিন ও প্রকৃত পাথর ;যদি সে পাহাড় হতো তবে সে সাদৃশ্যবিহীন মহৎ পাহাড়। মনে হয় তার মৃত্যু আমাকে জীবনহীন করে দিয়েছে। আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি ,তার মৃত্যু সিরিয়ানদের জন্য আনন্দের হলেও ইরাকিদের জন্য অপমানজনক। এ রকম আরেকটা মালিক প্রসব করতে মহিলারা বন্ধ্যা হয়ে গেছে" (তাবারী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৩৯২ - ৯৫ ;আছীর ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৫২ - ৫৩ ;ইয়াকুবী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৯৪ ;বার ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৩৬৬ ;হাদীদ ৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ৭৪ - ৭৭ ;কাছীর ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৩১৩ - ৩১৪ ;ফিদা ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৭৯) ।

পত্র - ৫৪

و من كتاب لهعليه‌السلام

إلى طَلْحَةَ وَ ألزُّبَيرِ، (مَعَ عِمْرانَ بْنِ ألْحُصَيْنِ ألْخُزاعِىَّ) ذَكَرَهُ أَبُو جَعْفَرٍ ألا سْكافِىُّ فِي كِتابِ ألْمَقاماتِ فِي مَناقِبِ أَمِيرِ ألْمُؤ مِنِينَعليه‌السلام .

أَمَّا بَعْدُ، فَقَدْ عَلِمْتُمَا، وَ إِنْ كَتَمْتُمَا، أَنِّي لَمْ أُرِدِ النَّاسَ حَتَّى أَرَادُونِي، وَ لَمْ أُبَايِعْهُمْ حَتَّى بَايَعُونِي. وَ إِنَّكُمَا مِمَّنْ أَرَادَنِي وَ بَايَعَنِي، وَ إِنَّ الْعَامَّةَ لَمْ تُبَايِعْنِي لِسُلْطَانٍ غاصِبٍ (غاصب)، وَ لاَ لِعَرَضٍ حَاضِرٍ، فَإِنْ كُنْتُمَا بَايَعْتُمَانِي طَائِعَيْنِ، فَارْجِعَا وَ تُوبَا إِلَى اللَّهِ مِنْ قَرِيبٍ؛ وَ إِنْ كُنْتُمَا بَايَعْتُمَانِي كَارِهَيْنِ، فَقَدْ جَعَلْتُمَا لِي عَلَيْكُمَا السَّبِيلَ بِإِظْهَارِكُمَا الطَّاعَةَ، وَ إِسْرَارِكُمَا الْمَعْصِيَةَ. وَ لَعَمْرِي مَا كُنْتُمَا بِأَحَقِّ الْمُهَاجِرِينَ بِالتَّقِيَّةِ وَ الْكِتْمَانِ، وَ إِنَّ دَفْعَكُمَا هَذَا الْأَمْرَ مِنْ قَبْلِ أَنْ تَدْخُلاَ فِيهِ كَانَ أَوْسَعَ عَلَيْكُمَا مِنْ خُرُوجِكُمَا مِنْهُ بَعْدَ إِقْرَارِكُمَا بِهِ.

وَ قَدْ زَعَمْتُمَا أَنِّي قَتَلْتُ عُثْمَانَ، فَبَيْنِي وَ بَيْنَكُمَا مَنْ تَخَلَّفَ عَنِّي وَ عَنْكُمَا مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ، ثُمَّ يُلْزَمُ كُلُّ امْرِئٍ بِقَدْرِ مَا احْتَمَلَ. فَارْجِعَا أَيُّهَا الشَّيْخَانِ عَنْ رَأْيِكُمَا، فَإِنَّ الْآنَ أَعْظَمَ أَمْرِكُمَا الْعَارُ، مِنْ قَبْلِ أَنْ يَجْتَمِعَ الْعَارُ وَالنَّارُ، وَالسَّلاَمُ.

তালহা ও জুবায়েরের প্রতি

তালহা ও জুবায়েরের প্রতি (ইমরান ইবনে হুসাইন খুজাই এর মাধ্যমে) আবু জাফর ইসকাফি তার কিতাব আল - মাকামত ”– এ আমিরুল মোমেনিনের উত্তম গুণাবলী লেখতে গিয়ে এ পত্রের কথা উল্লেখ করেছেন

যদিও তোমরা এখন গোপন করে যাচ্ছে ,তোমরা উভয়ে ভালোভাবে জান যে ,আমি মানুষের কাছে অভিগমন (খেলাফতের জন্য) করিনি। বরং মানুষ আমার কাছে এসে চাপ প্রয়োগ করেছে এবং আমার আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করার জন্য আমি কাউকে বলিনি এবং তারা নিজেরাই আমার বায়াত গ্রহণ করেছে। তোমরা উভয়েই তাদের সঙ্গে ছিলে যারা আমাকে অনুরোধ করেছিল এবং বায়াত গ্রহণ করেছিল। নিশ্চয়ই ,সাধারণ মানুষ কোন চাপের মুখে আমার বায়াত গ্রহণ করেনি বা আমার অর্থের লোভেও তা করেনি। যদি তোমরা বিশ্বস্ততার সাথে বায়াত গ্রহণ করে থাক তবে তা রক্ষা করে আল্লাহর কাছে তওবা কর। আর যদি তোমারা দুজন অনিচ্ছাকৃতভাবে বায়াত গ্রহণ করে থাক তবে নিশ্চয়ই ,তোমাদের বায়াত গ্রহণ আমাকে দেখানো ও অবাধ্যতা গোপন রাখার জন্য এবং সেক্ষেত্রে তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। আমার জীবনের শপথ ,কোন বিষয় গোপন করার ব্যাপারে তোমরা অন্য মুহাজিরদের চেয়ে অধিক হকদার ছিলে না । বায়াত গ্রহণ করার আগে তা অস্বীকার করা তোমাদের জন্য অনেকটা সহজতর ছিল।

তোমরা বলছো আমি উসমানকে হত্যা করেছি। এ বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য মদিনার এমন কজন লোককে ঠিক কর যারা তোমাদের সমর্থক নয় আমারও নয়। তারপর আমাদের মাঝে যে যতটুকু দায়ী আইন অনুযায়ী সে ততটুকু শাস্তি ভোগ করবে। তোমরা বর্তমানে যে পথ ধরেছ তা পরিহার কর। মনে রেখো ,আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে ;সে দিন লজ্জাবনত হয়ে পড়বে এবং দোযখের আগুনের জ্বালা পোহাতে হবে। এখানে শেষ করলাম।

___________________

১। ইমরান ইবনে আল - হুসাইন আল - খুজাই সাহাবাদের মধ্যে খুবই মর্যাদাশীল ও শিক্ষিত ছিলেন। তিনি অত্যন্ত সতর্ক হাদিস বিশারদ ছিলেন। খায়বার বিজয়ের বছর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি কুফায় কাজি হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন এবং ৫২ হিজরি সনে বসরায় ইনতিকাল করেন। আমিরুল মোমেনিন সম্পর্কে তার বর্ণনা করা একটা বিখ্যাত হাদিস হচ্ছে -

আল্লাহর রাসূল আলী ইবনে আবি তালিবের নেতৃত্বে একটি সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলেন। আলী তার প্রাপ্য খুমস এর (এক পঞ্চমাংশ) পরিবর্তে একটি ক্রীতদাসী নিলেন। তাঁর লোকদের মধ্যে কেউ কেউ এতে খুশি হলো না। তাদের মধ্যে চারজন রাসূলের (সা.) কাছে নালিশ করবে বলে স্থির করলো। ফিরে আসার পর তারা রাসূলের (সা.) কাছে গেলেন এবং তাদের মধ্যে একজন বললো , হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি দেখেন নি যে ,আলী অমুক অমুক কাজ করেছিল ? রাসূল (সা.) তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তখন অপর একজন দাড়িয়ে একই নালিশ করলো এবং রাসূল (সা.) তার থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এরপর অপর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে একই কথা বললো। রাসূলও একই ভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এভাবে চতুর্থ ব্যক্তির বেলায়ও একই অবস্থা হলো। রাসূল (সা.) তারপর রাগত স্বরে বললেন , তোমরা আলীকে কি করতে বল ? নিশ্চয়ই ,আলী আমা হতে এবং আমি আলী হতে। আমার পরে সে - ই মোমিনগণের মাওলা ” - একথা তিনবার পুনরাবৃত্তি করলেন (তিরমিজী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৬৩২ ;হাম্বল ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪৩৭ - ৪৩৮ ;তায়ালিসী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১১১ ;নিশাবুরী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১১০ - ১১১ ;ইসফাহানী ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ২৯৪ ;জাহাবীত ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৯৬ ;কাছীর ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৪৫ ;আছীর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৭ ;হাজর ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৫০৯) ।

২। এ কথা দ্বারা বুঝাতে চেয়েছেন যে ,তোমরা ধনী লোক এবং সগোত্রীয় - দলের দিক থেকে বড় গোত্র। মনের কথা গোপন রেখে অনিচ্ছাকৃতভাবে আনুগত্যের শপথ করা তোমাদের কোন প্রয়োজন ছিল না। যদি কোন দুর্বল বা সহায় সম্বলহীন লোক এমন কথা বলতো। তবে তা গ্রহণযোগ্য হতো। যেহেতু এমন কথা কেউ বলেনি সেহেতু বাধ্য হয়ে বায়াত গ্রহণ করেছে ,এটা তোমাদের মতো সমাজের ওপরের স্তরের লোকের মুখে শোভা পায় না বা তা কেউ বিশ্বাসও করবে না।

পত্র - ৫৫

و من كتاب لهعليه‌السلام

إلى مُعاوِيَةَ

أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ قَدْ جَعَلَ الدُّنْيَا لِمَا بَعْدَهَا، وَ ابْتَلَى فِيهَا أَهْلَهَا، لِيَعْلَمَ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلاً، وَلَسْنَا لِلدُّنْيَا خُلِقْنَا، وَلاَ بِالسَّعْيِ فِيهَا أُمِرْنَا، وَإِنَّمَا وُضِعْنَا فِيهَا لِنُبْتَلَي بِهَا. وَ قَدِ ابْتَلاَنِي اللَّهُ بِكَ وَابْتَلاَكَ بِي: فَجَعَلَ أَحَدَنَا حُجَّةً عَلَى الْآخَرِ، فَعَدَوْتَ عَلَى طَلَبْ الدُّنْيَا بِتَأْوِيلِ الْقُرْآنِ، وَطَلَبْتَنِي بِمَا لَمْ تَجْنِ يَدِي وَلاَ لِسَانِي، وَعَصَيْتَهُ أَنْتَ وَأَهْلُ الشَّامِ بِي، وَأَلَّبَ عَالِمُكُمْ جَاهِلَكُمْ، وَ قَائِمُكُمْ قَاعِدَكُمْ. فَاتَّقِ اللَّهَ فِي نَفْسِكَ، وَ نَازِعِ الشَّيْطَانَ قِيَادَكَ، وَ اصْرِفْ إِلَى الْآخِرَةِ وَجْهَكَ، فَهِيَ طَرِيقُنَا وَ طَرِيقُكَ، وَ احْذَرْ أَنْ يُصِيبَكَ اللَّهُ مِنْهُ بِعَاجِلِ قَارِعَةٍ تَمَسُّ الْأَصْلَ، وَ تَقْطَعُ الدَّابِرَ، فَإِنِّي أُولِي لَكَ بِاللَّهِ أَلِيَّهً غَيْرَ فَاجِرَةٍ، لَئِنْ جَمَعَتْنِي وَ إِيَّاكَ جَوَامِعُ الْأَقْدَارِ لاَ أَزَالُ بِبَاحَتِكَ( حَتّى يَحْكُمَ اللّهُ بَيْنَنا وَ هُوَ خَيْرُ الْحاكِمِينَ ) .

মুয়াবিয়ার প্রতি

মহিমান্বিত আল্লাহ পরকালের জন্যই এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এর অধিবাসীগণকে এক মহাপরীক্ষায় রেখেছেন যে ,তাদের মধ্যে কে কর্মে ও ইমানে উত্তম। আমাদেরকে এ দুনিয়ার জন্য সৃষ্টি করেননি এবং এর জন্য সংগ্রাম করতেও আদেশ দেননি। কিন্তু পরীক্ষার সম্মুখীন হবার জন্য আমাদেরকে এখানে থাকতে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ আমাকে দিয়ে তোমাকে এবং তোমাকে দিয়ে আমাকে পরীক্ষা করছেন। যেহেতু তিনি আমাদের এজনকে অপরজনের ওজর হিসাবে তৈরি করেছেন।

কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তুমি দুনিয়াতে লম্ফ দিয়ে চলছ এবং যে জন্য আমার হাত বা জিহ্বা আদৌ দায়ী নয়। সে বিষয়ে তুমি আমার হিসাব চেয়েছ। কিন্তু তুমি ও সিরিয়ানগণ আমাকে দোষারোপ করছ এবং অজ্ঞ জনগণকে তোমার ভাড়া করা শিক্ষিত লোক দ্বারা আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলছ । এতে মনে হচ্ছে ,যে বসে আছে তার প্রতি দণ্ডায়মান ব্যক্তি অন্যদের উত্তেজিত করছে। তোমার নিজের জন্য আল্লাহকে ভয় কর এবং শয়তানের বশবর্তী হয়ো না। পরকালের দিকে মুখ ফেরাও কারণ সেটাই তোমার ও আমার সকলের পথ। আল্লাহকে ভয় কর যেন তিনি তোমাকে এমন আকস্মিক শাস্তি প্রদান না করেন যাতে তিনি শাখা ও কাণ্ড ধ্বংস করে দেন। আল্লাহর নামে আমি শপথ করছি ,যদি ভাগ্য তোমাকে ও আমাকে একত্রিত করে তবে আমি দৃঢ় ভাবেই তোমার সামনে দাঁড়াবো যে পর্যন্ত না আল্লাহ আমাদের বিচার না করেন এবং তিনিই সর্বোত্তম বিচারক ” (কুরআন - ৭ : ৮৭) ।

পত্র - ৫৬

و من وصية لهعليه‌السلام

وَصَى بِهِ شُرَيْحَ بْنَ هانِئ، لَمَا جَعَلَهُ عَلى مُقَدَّمتِهِ إلَى الشَامِ

اتَّقِ اللَّهَ فِي كُلِّ صَبَاحٍ وَ مَسَاءٍ، وَ خَفْ عَلَى نَفْسِكَ الدُّنْيَا الْغَرُورَ، وَ لاَ تَأْمَنْهَا عَلَى حَالٍ، وَ اعْلَمْ أَنَّكَ إِنْ لَمْ تَرْدَعْ نَفْسَكَ عَنْ كَثِيرٍ مِمَّا تُحِبُّ، مَخَافَةَ مَكْرُوهٍ؛ سَمَتْ بِكَ الْأَهْوَأُ إِلَى كَثِيرٍ مِنَ الضَّرَرِ. فَكُنْ لِنَفْسِكَ مَانِعاً رَادِعاً، وَلِنَزْوَتِكَ عِنْدَ الْحَفِيظَةِ وَاقِماً قَامِعاً.

শুরাইয়া ইবনে হানীকে একটা বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে যখন আমিরুল মোমেনিন সিরিয়া প্রেরণ করলেন তখন এ নির্দেশনামা দিয়েছিলেন

সকাল ও সন্ধ্যায় আল্লাহকে ভয় করো এবং দুনিয়াকে কখনো নিরাপদ ভেবো না। মনে রেখো ,ক্ষুদ্র একটি পাপের ভয়ে যদি তুমি এমন কিছু থেকে বিরত থাকতে না পার যা তুমি ভালোবাস তাহলে কামনা - বাসনা তোমাকে অনেক ক্ষতিকর অবস্থায় ঠেলে নিয়ে যাবে। সুতরাং নিজেই নিজের বাধাদানকারী ও রক্ষাকারী হয়ো এবং নিজের ক্রোধের প্রদমনকারী ও প্রশমনকারী হয়ো ।

পত্র - ৫৭

و من كتاب لهعليه‌السلام

إلى أَهْلِ الْكُوفَةِ، عِنْدَ مَسيِرِه مِنَ الْمَدِينَةِ إلَى الْبَصْرَةِ

أَمَّا بَعْدُ، فَإِنِّي خَرَجْتُ مِنْ حَيِّي هَذَا: إِمَّا ظَالِماً، وَإِمَّا مَظْلُوماً؛ وَإِمَّا بَاغِياً، وَإِمَّا مَبْغِيّا عَلَيْهِ. وَ أَنَاٍّ أُذَكِّرُ اللَّهَ مَنْ بَلَغَهُ كِتَابِي هَذَا لَمَّا نَفَرَ إِلَيَّ، فَإِنْ كُنْتُ مُحْسِنا أَعَانَنِي، وَ إِنْ كُنْتُ مُسِيئاً اسْتَعْتَبَنِي.

মদিনা ও বসরাভিমুখে যুদ্ধযাত্রাকালে কুফাবাসীদের প্রতি

আমি আমার নগরী ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি। হয় অত্যাচারী না হয় মজলুম ,হয় বিদ্রোহী না হয় এমন ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হয়েছে। যা হোক ,যার কাছেই আমার এ পত্র পৌছবে আমি তাকেই আল্লাহর নামে আহবান করছি সে যেন আমার কাছে এসে আমাকে সাহায্য করে ,যদি আমি সঠিক ও ন্যায় পথে থেকে থাকি এবং যদি আমি ভ্রান্ত পথে থেকে থাকি তবে সে যেন আমাকে সঠিক পথে নিয়ে যায় ।

পত্র - ৫৮

و من كتاب لهعليه‌السلام

إلى أَهْلِ الا مْصارِ يَقْتَصُّ فِيهِ ما جَرى بَيْنَهُ وَ بَيْنَ أَهْلِ صِفَّينَ

وَ كَانَ بَدْءُ أَمْرِنَا أَنَّا الْتَقَيْنَا وَ الْقَوْمُ مِنْ أَهْلِ الشَّامِ، وَ الظَّاهِرُ أَنَّ رَبَّنَا وَاحِدٌ، وَ نَبِيَّنَا وَاحِدٌ وَ دَعْوَتَنَا فِي الْإِسْلاَمِ وَاحِدَةٌ، وَ لاَ نَسْتَزِيدُ هُمْ فِي الْإِيمَانِ بِاللَّهِ وَ التَّصْدِيقِ لِرَسُولِهِ وَ لاَ يَسْتَزِيدُونَنَا: الْأَمْرُ وَاحِدٌ إِلا مَا اخْتَلَفْنَا فِيهِ مِنْ دَمِ عُثْمَانَ، وَ نَحْنُ مِنْهُ بَرَاءٌ! فَقُلْنَا: تَعَالَوْا نُدَاوِى مَا لاَ يُدْرَكُ الْيَوْمَ بِإِطْفَأِ النَّائِرَةِ، وَ تَسْكِينِ الْعَامَّةِ، حَتَّى يَشْتَدَّ الْأَمْرُ وَ يَسْتَجْمِعَ، فَنَقْوَى عَلَى وَضْعِ الْحَقِّ مَوَاضِعَهُ. فَقَالُوا: بَلْ نُدَاوِيهِ بِالْمُكَابَرَةِ! فَأَبَوْا حَتَّى جَنَحَتِ الْحَرْبُ وَ رَكَدَتْ، وَ وَقَدَتْ نِيرَانُهَا وَ حَمِشَتْ. فَلَمَّا ضَرَّسَتْنَا وَ إِيَّاهُمْ، وَ وَضَعَتْ مَخَالِبَهَا فِينَا وَ فِيهِمْ، أَجَابُوا عِنْدَ ذَلِكَ إِلَى الَّذِي دَعَوْنَاهُمْ إِلَيْهِ، فَأَجَبْنَاهُمْ إِلَى مَا دَعَوْا، وَ سَارَعْنَاهُمْ إِلَى مَا طَلَبُوا، حَتَّى اسْتَبَانَتْ عَلَيْهِمُ الْحُجَّةُ، وَ انْقَطَعَتْ مِنْهُمُ الْمَعْذِرَةُ. فَمَنْ تَمَّ عَلَى ذَلِكَ مِنْهُمْ فَهُوَ الَّذِي أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنَ الْهَلَكَةِ، وَ مَنْ لَجَّ وَ تَمَادَى فَهُوَ الرَّاكِسُ الَّذِي رَانَ اللَّهُ عَلَى قَلْبِهِ، وَ صَارَتْ دَائِرَةُ السَّوْءِ عَلَى رَأْسِهِ.

সিফফিনে তার সাথে যা ঘটেছিল তা বর্ণনা করে বিভিন্ন এলাকার লোকদের কাছে লিখেছিলেন

সমগ্র বিষয়টি এই যে ,আমরা সিরিয়ানদের সঙ্গে একটা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলাম। যদিও আমরা উভয় পক্ষ একই আল্লাহ ও রাসূলে বিশ্বাসী এবং ইসলামে আমাদের বাণী একই। আমরা চেয়েছিলাম আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসে এবং রাসূলের প্রতি স্বীকৃতিতে তারা যেন কোন বেদা 'ত না করে এবং তারাও চেয়েছিল আমরা যেন এমনটি না করি। বস্তুত উভয় পক্ষেরই এসব বিষয়ে ঐকমত্য ছিল। কিন্তু উসমানের রক্তপাতের সাথে আমাদের কোন সংশ্রব ছিল না। আমরা তাদের উপদেশ দিয়েছিলাম তারা যেন অস্থায়ী গোলযোগ বন্ধ করে অবস্থা শান্ত রাখে এবং সব কিছু ঠিকঠাক ও স্থিতিস্থাপক হওয়া পর্যন্ত জনগণকে শান্ত রাখে। আমরা যখন শক্তি সঞ্চার করবো। তখন সঠিক ব্যবস্থা নেব।

তারা আমাদের আহবানে সাড়া না দিয়ে যুদ্ধের মাধ্যমে ফয়সালা করার জন্য উঠে পড়ে লেগে গেল। ফলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লো এবং এর শিখা প্রজ্বলিত হলো। যখন যুদ্ধ - নখর তাদের ও আমাদের উভয়কে বিদ্ধ করে পীড়া দিল তখন আমরা পূর্বে তাদের যা বলেছিলাম তা তারা প্রস্তাব করলো। সুতরাং আমরা তাদের প্রস্তাবে রাজি হলাম ;এভাবে তাদের কাছে ওজর সুস্পষ্ট হয়ে গেল। এখন তাদের মধ্যে যে এটা মেনে চলবে আল্লাহ তাকে ধ্বংস হতে রক্ষা করবেন এবং আল্লাহ যার হৃদয়কে কালিমা লিপ্ত করেছেন সে এটা পাল্টে এর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করবে এবং সে মাথা পর্যন্ত পাপে ডুবে যাবে।

পত্র - ৫৯

و من كتاب لهعليه‌السلام

إلَى الاْ سْوَدِ بْنِ قُطْبَةَ صاحِبِ جُندِ حُلْوانَ

أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ الْوَالِيَ إِذَا اخْتَلَفَ هَوَاهُ مَنَعَهُ ذَلِكَ كَثِيرا مِنَ الْعَدْلِ، فَلْيَكُنْ أَمْرُ النَّاسِ عِنْدَكَ فِي الْحَقِّ سَوَاءً؛ فَإِنَّهُ لَيْسَ فِي الْجَوْرِ عِوَضٌ مِنَ الْعَدْلِ، فَاجْتَنِبْ مَا تُنْكِرُ أَمْثَالَهُ، وَ ابْتَذِلْ نَفْسَكَ فِيمَا افْتَرَضَ اللَّهُ عَلَيْكَ، رَاجِياً ثَوَابَهُ، وَ مُتَخَوِّفا عِقَابَهُ. وَ اعْلَمْ أَنَّ الدُّنْيَا دَارُ بَلِيَّةٍ لَمْ يَفْرُغْ صَاحِبُهَا فِيهَا قَطُّ سَاعَةً إِلا كَانَتْ فَرْغَتُهُ عَلَيْهِ حَسْرَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَ أَنَّهُ لَنْ يُغْنِيَكَ عَنِ الْحَقِّ شَيْءٌ أَبَداً. وَ مِنَ الْحَقِّ عَلَيْكَ حِفْظُ نَفْسِكَ، وَ الاِحْتِسَابُ عَلَى الرَّعِيَّةِ بِجُهْدِكَ، فَإِنَّ الَّذِي يَصِلُ إِلَيْكَ مِنْ ذَلِكَ أَفْضَلُ مِنَ الَّذِي يَصِلُ بِكَ، وَالسَّلاَمُ.

হালওয়ানের গভর্ণর আল - আসওয়াদ ইবনে কুতবাহর প্রতি

যদি শাসনকর্তার কর্মকাণ্ড আবেগতাড়িত হয় তাহলে সে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। তোমার চোখে সকল মানুষের অধিকার সমান হতে হবে। নিজের জন্য যা তুমি পছন্দ কর না ,অন্যের জন্যও সেসব জিনিস পরিহার করো। আল্লাহ তোমার ওপর যা অবশ্যকরণীয় করেছেন তা তুমি করতে দ্বিধা করো না। আল্লাহর পুরস্কারের আশা রেখো এবং তার শাস্তিকে ভয় করো।

মনে রেখো ,এ পৃথিবী একটা পরীক্ষাগার। এখানে যে কেউ একটা মুহুর্ত নষ্ট করে তাকে শেষ বিচারে পস্তাতে হবে। নিজেকে পাপ কাজ থেকে রক্ষা করা এবং তোমার সাধ্যমত প্রজাদের দেখা - শুনা করা তোমার দায়িত্ব। এতে তুমি নিজে যতটুকু উপকৃত হবে তা প্রজাদের উপকারের তুলনায় অনেক বেশি। এখানেই শেষ করছি।

প্রত্র - ৬০

و من كتاب لهعليه‌السلام

إلى العُمَالِ الذينَ يَطأُ الجَيْشُ عَمَلَهُم

مِنْ عَبْدِ اللَّهِ عَلِيِّ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ إِلَى مَنْ مَرَّ بِهِ الْجَيْشُ مِنْ جُبَاةِ الْخَرَاجِ وَ عُمَّالِ الْبِلاَدِ. أَمَّا بَعْدُ، فَإِنِّي قَدْ سَيَّرْتُ جُنُودا هِيَ مَارَّةٌ بِكُمْ إِنْ شَأَ اللَّهُ، وَ قَدْ أَوْصَيْتُهُمْ بِمَا يَجِبُ لِلَّهِ عَلَيْهِمْ مِنْ كَفِّ الْأَذَى، وَ صَرْفِ الشَّذى، وَ أَنَا أَبْرَأُ إِلَيْكُمْ وَ إِلَى ذِمَّتِكُمْ مِنْ مَعَرَّةِ الْجَيْشِ، إِلا مِنْ جَوْعَةِ الْمُضْطَرِّ، لاَ يَجِدُ عَنْهَا مَذْهَبا إِلَى شِبَعِهِ. فَنَكِّلُوا مَنْ تَنَاوَلَ مِنْهُمْ ظُلْماً عَنْ ظُلْمِهِمْ، وَ كُفُّوا أَيْدِيَ سُفَهَائِكُمْ عَنْ مُضَارَّتِهِمْ، وَ التَّعَرُّضِ لَهُمْ فِيمَا اسْتَثْنَيْنَاهُ مِنْهُمْ. وَ أَنَا بَيْنَ أَظْهُرِ الْجَيْشِ، فَارْفَعُوا إِلَيَّ مَظَالِمَكُمْ، وَ مَا عَرَاكُمْ مِمَّا يَغْلِبُكُمْ مِنْ أَمْرِهِمْ، وَ مَا لاَ تُطِيقُونَ دَفْعَهُ إِلا بِاللَّهِ وَ بِي، فَأَنَا أُغَيِّرُهُ بِمَعُونَةِ اللَّهِ، إِنْ شَاءَ اللَّهُ.

যেসব অফিসারের এখতিয়ারে সৈন্যবাহিনী দেয়া হয়েছে তাদের প্রতি

আল্লাহর বান্দা আমিরুল মোমেনিন আলীর নিকট হতে রাজস্ব আদায়কারী ও রাজ্যের সকল অফিসারদের প্রতি যাদের এলাকা দিয়ে সৈন্যবাহিনী অতিক্রম করবে।

আমি একটি সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছি যা তোমার এলাকার মধ্য দিয়ে যাবে ,ইনশাল্লাহ। তাদের জন্য আল্লাহ যা অবশ্যকরণীয় করেছেন সে বিষয়ে তাদের আমি যথাযথ নির্দেশ দিয়েছি। তারা যেন অন্যের প্রতি উৎপীড়ন ও ক্ষতি পরিহার করে চলে সে বিষয়ে তাদের যথাযথ নির্দেশ দিয়েছি। আমি তোমাদের কাছে এবং তোমাদের নিরাপত্তাধীন অবিশ্বাসীগণের কাছে পরিস্কারভাবে বলে দিচ্ছি যে ,ক্ষুধায় কাতর হয়ে তা নিবৃত্ত করার অন্য কোন উপায় থাকা পর্যন্ত যেন তারা কাউকে বিরক্ত না করে। যদি সৈন্যদের কেউ জোরপূর্বক কারো কাছ থেকে কিছু নেয়। তবে তোমরা তাকে শাস্তি দিয়ো। ব্যতিক্রম হিসাবে যা তাদের জন্য মঞ্জুর করা হয়েছে তাতে তোমরা কেউ হস্তক্ষেপ করো না। আমি নিজেই সেনাবাহিনীর মধ্যে রয়েছি। সুতরাং তাদের কেউ যদি ঔদ্ধত্য দেখায় অথবা তাদের দ্বারা যদি অন্যের কোন ক্ষতি হয় ,তোমরা যদি মনে কর যে ,আল্লাহ অথবা আমার মাধ্যম ছাড়া তা প্রতিহত করতে পারবে না ,তাহলে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়ো। ইনশাল্লাহ ,আমি তা প্রতিহত করবো।

পত্র - ৬১

و من كتاب لهعليه‌السلام

إلى كُمَيْلِ بْنِ زِيادٍ النَّخَعِىَّ وَ هُوَ عامِلُهُ عَلى هِيتٍ،

أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ تَضْيِيعَ الْمَرْءِ مَا وُلِّيَ، وَ تَكَلُّفَهُ مَا كُفِيَ، لَعَجْزٌ حَاضِرٌ وَ رَأْيٌ مُتَبَّرٌ. وَ إِنَّ تَعَاطِيَكَ الْغَارَةَ عَلَى أَهْلِ قِرْقِيسِيَا، وَ تَعْطِيلَكَ مَسَالِحَكَ الَّتِي وَلَّيْنَاكَ -لَيْسَ لَهَا مَنْ يَمْنَعُهَا وَ لاَ يَرُدُّ الْجَيْشَ عَنْهَا- لَرَأْيٌ شَعَاعٌ. فَقَدْ صِرْتَ جِسْرا لِمَنْ أَرَادَ الْغَارَةَ مِنْ أَعْدَائِكَ عَلَى أَوْلِيَائِكَ، غَيْرَ شَدِيدِ الْمَنْكِبِ، وَ لاَ مَهِيبِ الْجَانِبِ، وَ لاَ سَادِّ ثُغْرَةً، وَ لاَ كَاسِرٍ لِعَدُوِّ شَوْكَةً، وَ لاَ مُغْنٍ عَنْ أَهْلِ مِصْرِهِ، وَ لاَ مُجْزٍ عَنْ أَمِيرِهِ.

হিত - এর গভর্ণর কুমায়েল ইবনে জিয়াদ আন - নাখাই এর প্রতি

কোন ব্যক্তিকে কোন বিষয়ে দায়িত্ব অর্পণ করা হলে সে দায়িত্বের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা প্রকাশ্য দুর্বলতা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং এমন দৃষ্টিভঙ্গি ধ্বংসাত্মক। নিশ্চয়ই ,কার কিসিয়ার জনগণের দিকে তোমার এগিয়ে যাওয়া এবং যেসব অস্ত্রাগার রক্ষার জন্য তোমাকে প্রেরণ করা হয়েছে তা অরক্ষিত রাখা বা শক্রকে বাধা দেয়ার মতো কাউকে সেখানে না রাখাটা একটা বাতুল চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়। এভাবে যে শত্রু তোমার মিত্রদের সম্পদ লুটপাট করতে এসেছিল তুমি তাদরে মধ্যে একটা বীজের মতো কাজ করেছো। তোমার বাহু ছিল দুর্বল এবং চারদিকে তোমার কোন সজাগ দৃষ্টি ছিল না। তুমি শক্রদের অগ্রগতি প্রতিহত করতে পারনি এবং শক্রর শক্তি বিনষ্ট করতে পার নি। তুমি নিজের এলাকার জনগণের প্রতিরক্ষা বিধান করতে পারনি এবং তুমি তোমার ইমামের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পরিপালন করতে পারনি।

পত্র - ৬২

و من كتاب لهعليه‌السلام

إلى أَهْلِ مِصْرَ، مَعَ مالِكِ الا شْتَرِ لَمَا وَلاهُ إمارَتَها

أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ بَعَثَ مُحَمَّداصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم نَذِيرا لِلْعَالَمِينَ، وَ مُهَيْمِنا عَلَى الْمُرْسَلِينَ. فَلَمَّا مَضَىعليه‌السلام تَنَازَعَ الْمُسْلِمُونَ الْأَمْرَ مِنْ بَعْدِهِ. فَوَاللَّهِ مَا كَانَ يُلْقَى فِي رُوعِي، وَ لاَ يَخْطُرُ بِبَالِي، أَنَّ الْعَرَبَ تُزْعِجُ هَذَا الْأَمْرَ مِنْ بَعْدِهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم عَنْ أَهْلِ بَيْتِهِ، وَ لاَ أَنَّهُمْ مُنَحُّوهُ عَنِّي مِنْ بَعْدِهِ! فَمَا رَاعَنِي إِلا انْثِيَالُ النَّاسِ عَلَى فُلاَنٍ يُبَايِعُونَهُ.

فَأَمْسَكْتُ يَدِي حَتَّى رَأَيْتُ رَاجِعَةَ النَّاسِ قَدْ رَجَعَتْ عَنِ الْإِسْلاَمِ، يَدْعُونَ إِلَى مَحْقِ دَيْنِ مُحَمَّدٍصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم . فَخَشِيتُ إِنْ لَمْ أَنْصُرِ الْإِسْلاَمَ وَ أَهْلَهُ أَنْ أَرَى فِيهِ ثَلْما أَوْ هَدْماً، تَكُونُ الْمُصِيبَةُ بِهِ عَلَيَّ أَعْظَمَ مِنْ فَوْتِ وِلاَيَتِكُمُ الَّتِي إِنَّمَا هِيَ مَتَاعُ أَيَّامٍ قَلاَئِلَ، يَزُولُ مِنْهَا مَا كَانَ كَمَا يَزُولُ السَّرَابُ، أَوْ كَمَا يَتَقَشَّعُ السَّحَابُ؛ فَنَهَضْتُ فِي تِلْكَ الْأَحْدَاثِ حَتَّى زَاحَ الْبَاطِلُ وَ زَهَقَ، وَاطْمَأَنَّ الدِّينُ وَ تَنَهْنَهَ.

إِنِّي وَاللَّهِ لَوْ لَقِيتُهُمْ وَاحِدا وَ هُمْ طِلاَعُ الْأَرْضِ كُلِّهَا مَا بَالَيْتُ وَ لاَ اسْتَوْحَشْتُ، وَ إِنِّي مِنْ ضَلاَلِهِمُ الَّذِي هُمْ فِيهِ وَالْهُدَى الَّذِي أَنَا عَلَيْهِ لَعَلَى بَصِيرَةٍ مِنْ نَفْسِي وَ يَقِينٍ مِنْ رَبِّي. وَ إِنِّي إِلَى لِقَأِ اللَّهِ لَمُشْتَاقٌ، وَ لِحُسْنِ ثَوَابِهِ لَمُنْتَظِرٌ رَاجٍ. وَ لَكِنَّنِي آسَى أَنْ يَلِيَ أَمْرَ هَذِهِ الْأُمَّةِ سُفَهَاؤُهَا وَ فُجَّارُهَا، فَيَتَّخِذُوا مَالَ اللَّهِ دُوَلاً، وَ عِبَادَهُ خَوَلاً، وَالصَّالِحِينَ حَرْبا، وَالْفَاسِقِينَ حِزْبا، فَإِنَّ مِنْهُمُ الَّذِي شَرِبَ فِيكُمُ الْحَرَامَ وَ جُلِدَ حَدّا فِي الْإِسْلاَمِ، وَ إِنَّ مِنْهُمْ مَنْ لَمْ يُسْلِمْ حَتَّى رُضِخَتْ لَهُ عَلَى الْإِسْلاَمِ الرَّضَائِخُ. فَلَوْ لاَ ذَلِكَ مَا أَكْثَرْتُ تَأْلِيبَكُمْ وَ تَأْنِيبَكُمْ، وَ جَمْعَكُمْ وَ تَحْرِيضَكُمْ، وَ لَتَرَكْتُكُمْ إِذْ أَبَيْتُمْ وَ وَنَيْتُمْ.

أَ لاَ تَرَوْنَ إِلَى أَطْرَافِكُمْ قَدِ انْتَقَصَتْ، وَ إِلَى أَمْصَارِكُمْ قَدِافْتُتِحَتْ، وَ إِلَى مَمَالِكِكُمْ تُزْوَى، وَ إِلَى بِلاَدِكُمْ تُغْزَى! انْفِرُوا -رَحِمَكُمُ اللَّهُ- إِلَى قِتَالِ عَدُوِّكُمْ، وَ لاَ تَثَّاقَلُوا إِلَى الْأَرْضِ فَتُقِرُّوا بِالْخَسْفِ، وَ تَبُؤُوا بِالذُّلِّ، وَ يَكُونَ نَصِيبُكُمُ الْأَخَسَّ، وَ إِنَّ أَخَا الْحَرْبِ الْأَرِقُ، وَ مَنْ نَامَ لَمْ يُنَمْ عَنْهُ، وَالسَّلاَمُ.

মালিক আশতারকে মিশরের গভর্ণর নিয়োগ করে তার মাধ্যমে মিশরের জনগণকে লিখেছিলেন

মহিমান্বিত আল্লাহ মুহাম্মদকে (সা.) জগতসমূহের জন্য সতর্ককারী এবং সকল নবীর সাক্ষী হিসাবে প্রেরণ করেছিলেন। যখন তিনি মহামিলন প্রাপ্ত হলেন তখন মুসলিমগণ তাঁর পরবর্তী ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হলো। আল্লাহর কসম ,আমি কখনো এ নিয়ে চিন্তা করিনি। আমি কল্পনাও করতে পারিনি যে ,রাসূলের (সা.) পরে আরবগণ তাঁর আহলুল বাইত থেকে খেলাফত কেড়ে নিয়ে যাবে অথবা তাঁর অবর্তমানে তারা আমার কাছ থেকে খেলাফত ছিনিয়ে নেবে। আমি হঠাৎ দেখলাম মানুষ একজন লোকের আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করার জন্য তার চারপাশে ভিড় জমিয়েছে।

আমি সে পর্যন্ত হাত গুটিয়ে রাখলাম যে পর্যন্ত আমি দেখলাম যে ,অনেক মানুষ ইসলাম থেকে সরে পড়ছে এবং মুহাম্মদের (সা.) দ্বীন ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। তখন আমি ভয় পেলাম যে ,যদি আমি ইসলামকে ও এর মানুষকে রক্ষা না করি এবং যদি ইসলামে কোন ব্যত্যয় বা ধ্বংস সংঘটিত হয়। তাহলে এটা আমার জন্য একটা বজ্রাঘাত হবে যা তোমাদের ওপর ক্ষমতা না পাওয়ার চেয়েও হৃদয় বিদারক। ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী - আসবে - যাবে - মেঘের মতো। কিন্তু ইসলামের ব্যত্যয় স্থায়ী হয়ে যাবে। সুতরাং এ অবস্থায় অন্যায় ও ভ্রান্তি ধ্বংস ও অপনোদন হওয়া পর্যন্ত আমি যুদ্ধ করলাম এবং দ্বীন শান্তি ও নিরাপত্তা পেলো ।

আল্লাহর কসম ,যদি আমাকে একা তাদের মোকাবেলা করতে হতো এবং তারা সংখ্যায় অগণন হতো। তবুও আমি পিছপা হতাম না অথবা হতবুদ্ধি হয়ে পড়তাম না। আমি নিজের মধ্যে স্বচ্ছ এবং তাদের বিপদগামীতা সম্পর্কে ও আমার পথ সম্পর্কে আল্লাহর কাছ থেকে দৃঢ় প্রত্যয় পেয়েছি। আমি আশাবাদী যে ,আল্লাহর কাছ থেকে তার উত্তম পুরস্কার পাব। কিন্তু নির্বোধ আর দুষ্ট লোক সমগ্র উম্মার কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে - এটা আমার চিন্তার কারণ। তারা আল্লাহর তহবিলকে নিজের তহবিলের মতো আঁকড়ে ধরে এবং তার মানুষকে ক্রীতদাস বানায়। তারা ধার্মিকদের সাথে যুদ্ধ করে এবং পাপীদের সাথে মিত্রতা করে। বস্তুত তাদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে যে অবৈধ পানীয় পান করে এবং ইসলামের বিধান অনুযায়ী বেত্রাঘাতের শাস্তি পেয়েছিল। তাদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যে ইসলাম দ্বারা আর্থিক লাভবান৪ না হওয়া পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করেনি। যদি অবস্থা এমন না হতো তাহলে আমি তোমাদের একত্রিত করতে চাপ দিতাম না - তোমাদের জন্য কোন আশঙ্কা করতাম না - তোমাদেরকে জিহাদের জন্য আহবান করতাম না। যদি তোমরা অস্বীকার কর এবং দুর্বলতা দেখাও তাহলে আমি তোমাদের পরিত্যাগ করবো ।

তোমরা কি দেখ না যে ,তোমাদের নগরীর সীমানা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে ,তোমাদের জনবসতিপূর্ণ এলাকা জয় করে নিয়ে যাচ্ছে ,তোমাদের দখল কেড়ে নেয়া হচ্ছে এবং তোমাদের নগরী ও দেশ আক্রান্ত হচ্ছে ? আল্লাহ তোমাদের প্রতি সদয় হউন - তোমাদের শত্রুর সঙ্গে লড়বার জন্য উঠে দাড়াও ,নিশ্চুপভাবে মাটিতে বসে থেকে না। তাহলে তোমরা অত্যাচারের শিকার হবে এবং গ্লানিময় অবস্থায় পড়বে - তোমাদের ভাগ্য নিকৃষ্টতম হবে। যোদ্ধাদেরকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়। কারণ সে যখন ঘুমাবে শত্রু তখন নাও ঘুমাতে পারে। এখানেই শেষ করলাম।

_________________

১। আমিরুল মোমেনিন সম্পর্কে রাসূলের (সা.) ঘোষণা , আলী আমার ভাই ,আমার স্থলাভিষিক্ত ও তোমাদের মাঝে আমার খলিফা ” এবং বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পথে গাদিরে খুমের ঘোষণা , আমি যার মাওলা আলী তার মাওলা ” - রাসূলের পরবর্তী উত্তরাধিকার বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য এটাই যথেষ্ট। এরপর আর কোন নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে না অথবা মদিনার জনগণ আর কোন নির্বাচনের কথা অনুভবও করতে পারে না। রাসূলের (সা.) এ সুস্পষ্ট নির্দেশ কিছু সংখ্যক ক্ষমতালোভী লোক এমনভাবে অবেহলা করেছে যেন তারা এসব কথা কোন দিন শোনেও নি। তারা রাসূলের (সা.) দাফন - কাফনের বিষয় ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনকে এতটা অত্যাবশ্যক মনে করলো যে ,তারা বনি সাইদার সকিফায় গিয়ে জড়ো হলো এবং গণতন্ত্রের ভান করে আবু বকরকে খলিফা মনোনীত করলো। এ সময়টা আমিরুল মোমেনিনের খুবই সন্ধিক্ষণ ছিল। এক দিকে কতিপয় স্বার্থন্বেষী বলতে লাগল। তিনি যেন অস্ত্র ধারণ করেন ;অপরদিকে তিনি দেখলেন সামরিক শক্তি প্রয়োগে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তারা ইসলাম ত্যাগ করছে এবং মুসায়লিমাহ ইবনে ছুমাসাহে আল - হানাফী ও তুলায়হা ইবনে খুওয়ালিদ আল - আসাদীর মতো মিথ্যাবাদীগণ গোত্রের পর গোত্রকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় যদি গৃহযুদ্ধ বাধে তবে মুসলিমগণ একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করবে। তখন ধর্মত্যাগী ও মোনেফকগণ একত্রিত হয়ে পৃথিবীর বুক থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে। সুতরাং আমিরুল মোমেনিন যুদ্ধ না করে নিশ্চুপ থাকার পথ বেছে নিলেন এবং ইসলামের স্বার্থে অস্ত্র না ধরে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে তাঁর আপত্তি উত্থাপন করে যাচ্ছিলেন। উম্মাহর কল্যাণ ও সমৃদ্ধি ক্ষমতার চেয়ে তাঁর কাছে অনেক বড় ছিল বলেই তিনি কোন প্রকার উগ্র ও অশান্তির পথ গ্রহণ করেননি। মোনাফেকদের অপকৌশল ঠেকাতে এবং ফেতনাবাজদের পরাজিত করার মতো আর কোন পথ তার খোলা ছিল না ,একমাত্র তাঁর ন্যায়সঙ্গত দাবী পরিত্যাগ করা ছাড়া। তার এ মহৎ অবদান ইসলামে দলমত নির্বিশেষ সকলেই স্বীকার করে।

২। উমাইয়া ও আবি আল - আস ইবনে উমাইয়ার (উসমানের দাদা) সন্তানদের প্রতি রাসূল (সা.) যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এখানে সে বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। আবুজর গিফারী থেকে বর্ণিত আছে যে ,রাসূল (সা.) বলেছেন ,

বনি উমাইয়াগণ যখন সংখ্যায় চল্লিশ জন হবে তখন তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণকে তাদের দাসে পরিণত করবে ,আল্লাহর অর্থ - সম্পদকে নিজের সম্পদের মতো আত্মসাৎ করবে এবং আল্লাহর কুরআনকে দুনীতির হাতিয়ার হিসাবে দাঁড় করাবে (নিশাবুরী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪৭৯ ;হিন্দি ,১১শ খণ্ড , পৃঃ১৪৯) |

আবুজর গিফারী ,আবু সাইদ খুদরী ,ইবনে আব্বাস ,আবু হোরায়রা ও অন্যান্য থেকে বর্ণিত আছে যে ,রাসূল (সা.) বলেছেন ,

বনি আবি আল - আসের গোত্র সংখ্যা যখন ত্রিশ জন হবে তখন তারা নিজের সম্পদের মত আল্লাহর সম্পদ আত্মসাৎ করবে: আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণকে দাসে পরিণত করবে এবং আল্লাহর দ্বীনকে দুর্নীতির হাতিয়ার করবে (হাম্বল ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৮৯: নিশাবুরী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪৮০ ;আসকালানী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৩৩২. শাফী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ২৪১ - ২৪৩ ;হিন্দি ,১১শ খণ্ড ,পৃঃ ১৪৮ ,১৪৯ ,৩৫১ ,৩৫৪) |

রাসূলের (সা.) মহামিলনোত্তরকালীন ইসলামের ইতিহাস হতে যথেষ্টভাবে তাঁর এ ভবিষ্যদ্বাণী প্রমাণিত হয়েছে এবং এ কারণেই আমিরুল মোমেনিন মুসলিম উম্মার জন্য ভীত ছিলেন।

৩। যে লোকটি মন্দ পান করেছিল সে ছিল ওয়ালিদ ইবনে আবি মুয়াত। সে উসমানের মায়ের দিক থেকে ভাই ,এবং কুফার গভর্ণর ছিল। ওয়ালিদ একদিন মন্দাসক্ত হয়ে কুফার কেন্দ্রীয় মসজিদে ফজরের নামাজে ইমামতি করছিলো। সে দু রাকাতের পরিবর্তে চার রাকাত ফরজ নামাজ পড়লো। এতে বিশিষ্ট ধার্মিকগণ স্তম্ভিত হলেন। কারণ ফজরের ফরজ দু রাকাত নামাজ রাসূল (সা.) কর্তৃক নির্ধারিত। ইবনে মাসুদের মতো ধার্মিকগণ আরো বেশি ক্ষেপে গেলেন তখন ওয়ালিদ বললোঃ

আহা! কী সন্দুর সকাল ,যদি তোমরা রাজি হও তবে আমি আরো কয়েক রাকাত নামাজ বাড়িয়ে পড়তে পারি।

ওয়ালিদের নীতিভ্রষ্টতা ও লাম্পট্যের জন্য কয়েকবার খলিফার কাছে নালিশ করা হয়েছিল। কিন্তু খলিফা মানুষের নালিশের প্রতি কর্ণপাত করেননি। এতে কুফাবাসী বলাবলি করতে শুরু করলো যে ,খলিফা তাদের দুঃখ - দুর্দশার প্রতি অমনোযোগী এবং ওয়ালিদের মত দুর্বৃত্তকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন । একদিন ঘটনাক্রমে তার গর্হিত কাজের সময় যখন ওয়ালিদ ,অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল তখন কয়েকজন লোক মোহরাঙ্কিত আংটি তাব হাত থেকে খুলে মদিনায় নিয়ে গেল। কিন্তু তবুও খলিফা তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে ইতস্তত করছিলেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত জনগণের চাপের মুখে তিনি ওয়ালিদকে চল্লিশ বেত্রাঘাত করেছিলেন এবং তাকে গভর্নরের পদ থেকে সরিয়ে তার স্থলে উসমানের চাচাত ভাই সায়েদ ইবনে আল - আসকে গভর্ণর নিয়োগ করেছিলেন। উসমানের বিরুদ্ধে উত্থানের এটাও একটা কারণ ছিল (বালাজুরী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৩ - ৩৫ ;ইসফাহানী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৭৪ - ১৮৭৫ ;বার ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৫৫৪ - ১৫৫৭ ;আছীর ৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৯১ - ৯২ ;তাবারী ,পৃঃ ২৮৪৩ - ২৮৫০ ;আছীর ,৩য় খণ্ড ,১০৫ - ১০৭ ;হাদীদ ,১৭শ খণ্ড ,পৃঃ ২২৭ - ২৫৪) ।

৪ । যে লোকটি আর্থিক সুবিধা অর্জনের জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছিল সে হলো মুয়াবিয়া। এ লোকটি দুনিয়ার স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ইসলামকে ব্যবহার করতো।

পত্র - ৬৩

و من كتاب لهعليه‌السلام

إلى أَبِي مُوسَى الا شْعَرِىِّ، وَ هُوَ عامِلُهُ عَلَى الْكُوفَةِ، وَ قَدْ بَلَغَهُ عَنْهُ تَثْبيطُهُ الناسَ عَنِ الْخُرُوج إلَيهِ لَمَا نَدَبَهُمْ لِحَرْبِ أَصْحابِ الْجَمَلِ.

مِنْ عَبْدِ اللَّهِ عَلِيِّ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ إِلَى عَبْدِاللَّهِ بْنِ قَيْسٍ. أَمَّا بَعْدُ، فَقَدْ بَلَغَنِي عَنْكَ قَوْلٌ هُوَلَكَ وَ عَلَيْكَ، فَإِذَا قَدِمَ عَلَيْكَ رَسُولِي فَارْفَعْ ذَيْلَكَ، وَاشْدُدْ مِئْزَرَكَ، وَاخْرُجْ مِنْ جُحْرِكَ، وَانْدُبْ مَنْ مَعَكَ؛ فَإِنْ حَقَّقْتَ فَانْفُذْ، وَ إِنْ تَفَشَّلْتَ فَابْعُدْ! وَايْمُ اللَّهِ لَتُؤْتَيَنَّ حَيْثُ أَنْتَ، وَ لاَ تُتْرَكُ حَتَّى يُخْلَطَ زُبْدُكَ بِخَاثِرِكَ، وَ ذَائِبُكَ بِجَامِدِكَ، وَ حَتَّى تُعْجَلُ عَنْ قِعْدَتِكَ، وَ تَحْذَرَ مِنْ أَمَامِكَ، كَحَذَرِكَ مِنْ خَلْفِكَ، وَ مَا هِيَ بِالْهُوَيْنَا الَّتِي تَرْجُو، وَلَكِنَّهَا الدَّاهِيَةُ الْكُبْرَى يُرْكَبُ جَمَلُهَا. وَ يُذَلَّلُّ صَعْبُهَا، وَ يُسَهَّلُ جَبَلُهَا. فَاعْقِلْ عَقْلَكَ، وَامْلِكْ أَمْرَكَ، وَ خُذْ نَصِيبَكَ وَ حَظَّكَ. فَإِنْ كَرِهْتَ فَتَنَحَّ إِلَى غَيْرِ رَحْبٍ وَ لاَ فِي نَجَاةٍ، فَبِالْحَرِيِّ لَتُكْفَيَنَّ وَ أَنْتَ نَائِمٌ، حَتَّى لاَ يُقَالَ: أَيْنَ فُلاَنٌ؟ وَاللَّهِ إِنَّهُ لَحَقُّ مَعَ مُحِقِّ، وَ مَا أُبَالِي مَا صَنَعَ الْمُلْحِدُونَ، وَالسَّلاَمُ.

কুফার গভর্ণর আবু মুসা (আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস) আশআরীর কাছে লিখেছিলেন যখন আমিরুল মোমেনিন জানতে পারলেন যে ,তার আহবানে জামাল যুদ্ধে যোগদান না করার জন্য সে জনগণকে প্ররোচিত করছিল।

আল্লাহর বান্দা আমিরুল মোমেনিনের কাছ থেকে আবদুল্লাহ ইবনে কায়েসের প্রতিঃ

তুমি যে সব কথা বলছো আমি তা জানতে পেরেছি। এগুলো তোমার অনুকূলেও যায় আবার তোমার বিরুদ্ধেও যায়। সুতরাং আমার বার্তাবাহক তোমার কাছে পৌছা মাত্রই নিজে প্রস্তুত হয়ে তোমার আডডা থেকে বেরিয়ে এসো এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের আহবান করো। তারপর যদি তুমি সত্য বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ী হও তবে রুখে দাড়াও আর যদি কাপুরুষতায় আচ্ছন্ন হও তবে ফিরে যেয়ো। আল্লাহর কসম ,তুমি যেখানেই থাক না কেন তোমাকে ধরা হবে এবং তোমার গদিসহ তোমাকে সম্পূর্ণরূপে উল্টে না দেয়া পর্যন্ত ছাড়া হবে না। তখন তুমি পিছন থেকে যেরূপ ভয় পাও সম্মুখ থেকেও সেরূপ ভয় পাবে।

যা তুমি আশা করছো তা কিন্তু সহজসাধ্য ব্যাপার নয় ;বরং তা মারাত্মক দুর্যোগ। আমাদেরকে এ দুর্যোগের উটে চড়তে হয়েছে ,দুর্যোগ উৎরিয়ে যেতে হয়েছে এবং এর পাহাড় - পর্বতকে সমতল করতে হয়েছে। তোমার মনকে স্থির কর ,নিজের কর্মকাণ্ডকে সঠিকভাবে আঁকড়ে ধর এবং তোমার ভাগ্যের অংশ অর্জন কর। যদি তুমি এটা পছন্দ না কর। তবে সেখানে চলে যাও যেখানে তোমাকে স্বাগতম জানানো হবে এবং তুমি তোমার কর্মকাণ্ডের ফল থেকে নিস্তার পাবে। একাকী ঘুমিয়ে পড়ে থাকা অনেক ভাল। সে ক্ষেত্রে কেউ জানতে চাইবে না অমুক কোথায়। আল্লাহর কসম ,সঠিক ব্যক্তির কাছে এটাই সঠিক বিষয় এবং ধর্মত্যাগীরা কী করে ,তা আমরা পরোয়া করি না। এখানেই শেষ করলাম।

____________________

১। আবু মুসা আশআরী উসমান কর্তৃক নিয়োগকৃত কুফার গভর্ণর ছিল। বসরার বিদ্রোহ দমনের জন্য আমিরুল মোমেনিন যখন মনস্থ করলেন তখন আশআরী এক দিকে বলতে লাগল যে তিনিই সত্যিকার ইমাম এবং তাঁর বায়াত গ্রহণ করা সঠিক পদক্ষেপ। অপরদিকে সে ছড়াতে লাগল যে ,আমিরুল মোমেনিনের সমর্থনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ন্যায় - সঙ্গত নয়। তার এ দ্বীমুখী আচরণ ও কুটকৌশলের কথা জানতে পেরে আমিরুল মোমেনিন ইমাম হাসানের মাধ্যমে তাকে এ পত্র দিয়েছিলেন। সে ফেতনা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল এবং তা বন্ধ করে দেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। বিষয়টা এমন ছিল যে ,আমিরুল মোমেনিন সঠিক ইমাম হলে তার শত্রুর সাথে লড়াই করা কিভাবে অন্যায় কাজ হবে ? আবার তার পক্ষালম্বন করে যুদ্ধ করলে যদি অন্যায় হয় তবে তিনি কিভাবে সঠিক ইমাম হতে পারেন ?

যাহোক ,তার প্ররোচনা সত্ত্বেও কুফার বিপুল সংখ্যক লোক আমিরুল মোমেনিনের পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করেছিল এবং বসরাবাসীকে চিরতরে শিক্ষা দিয়েছিল।

পত্র - ৬৪

و من كتاب لهعليه‌السلام

إلى مُعاوِيَةَ، جَواباً

أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّا كُنَّا نَحْنُ وَ أَنْتُمْ عَلَى مَا ذَكَرْتَ مِنَ الْأُلْفَةِ وَالْجَمَاعَةِ، فَفَرَّقَ بَيْنَنَا وَ بَيْنَكُمْ أَمْسِ أَنَّا آمَنَّا وَ كَفَرْتُمْ، وَالْيَوْمَ أَنَّا اسْتَقَمْنَا وَ فُتِنْتُمْ، وَ مَا أَسْلَمَ مُسْلِمُكُمْ إِلا كَرْها، وَ بَعْدَ أَنْ كَانَ أَنْفُ الْإِسْلاَمِ كُلُّهُ لِرَسُولِ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم حِزْباً (حرباً).

وَ ذَكَرْتَ أَنِّي قَتَلْتُ طَلْحَةَ وَالزُّبَيْرَ، وَ شَرَّدْتُ بِعَائِشَةَ، وَ نَزَلْتُ بَيْنَ الْمِصْرَيْنِ! وَ ذَلِكَ أَمْرٌ غِبْتَ عَنْهُ فَلاَ عَلَيْكَ، وَ لاَ الْعُذْرُ فِيهِ إِلَيْكَ.

وَ ذَكَرْتَ أَنَّكَ زَائِرِي فِي الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ، وَ قَدِ انْقَطَعَتِ الْهِجْرَةُ يَوْمَ أُسِرَ أَخُوكَ (ابوک)، فَإِنْ كَانَ فِيهِ عَجَلٌ فَاسْتَرْفِهْ، فَإِنِّي إِنْ أَزُرْكَ فَذَلِكَ جَدِيرٌ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ إِنَّمَا بَعَثَنِي إِلَيْكَ لِلنِّقْمَةِ مِنْكَ! وَ إِنْ تَزُرْنِي فَكَمَا قَالَ أَخُو بَنِي أَسَدٍ:

مُسْتَقْبِلِينَ رِيَاحَ الصَّيْفِ تَضْرِبُهُمْ

بِحَاصِبٍ بَيْنَ أَغْوَارٍ وَ جُلْمُودِ

وَ عِنْدِي السَّيْفُ الَّذِي أَعْضَضْتُهُ بِجَدِّكَ وَ خَالِكَ وَ أَخِيكَ فِي مَقَامٍ وَاحِدٍ. وَ إِنَّكَ وَاللَّهِ مَا عَلِمْتُ: الْأَغْلَفُ الْقَلْبِ، الْمُقَارِبُ الْعَقْلِ؛ وَالْأَوْلَى أَنْ يُقَالَ لَكَ: إِنَّكَ رَقِيتَ سُلَّما أَطْلَعَكَ مَطْلَعَ سُوءٍ عَلَيْكَ لاَ لَكَ، لِأَنَّكَ نَشَدْتَ غَيْرَ ضَالَّتِكَ، وَ رَعَيْتَ غَيْرَ سَائِمَتِكَ. وَ طَلَبْتَ أَمْرا لَسْتَ مِنْ أَهْلِهِ وَ لاَ فِي مَعْدِنِهِ، فَمَا أَبْعَدَ قَوْلَكَ مِنْ فِعْلِكَ!! وَ قَرِيبٌ مَا أَشْبَهْتَ مِنْ أَعْمَامٍ وَ أَخْوَالٍ! حَمَلَتْهُمُ الشَّقَاوَةُ، وَ تَمَنِّي الْبَاطِلِ، عَلَى الْجُحُودِ بِمُحَمَّدٍصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم فَصُرِعُوا مَصَارِعَهُمْ حَيْثُ عَلِمْتَ، لَمْ يَدْفَعُوا عَظِيماً، وَ لَمْ يَمْنَعُوا حَرِيماً، بِوَقْعِ سُيُوفٍ مَا خَلاَ مِنْهَا الْوَغَى، وَ لَمْ تُمَاشِهَا الْهُوَيْنَی.

وَ قَدْ أَكْثَرْتَ فِي قَتَلَةِ عُثْمَانَ، فَادْخُلْ فِيمَا دَخَلَ فِيهِ النَّاسُ، ثُمَّ حَاكِمِ الْقَوْمَ إِلَيَّ، أَحْمِلْكَ وَ إِيَّاهُمْ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ تَعَالَى؛ وَ أَمَّا تِلْكَ الَّتِي تُرِيدُ فَإِنَّهَا خُدْعَةُ الصَّبِيِّ عَنِ اللَّبَنِ فِي أَوَّلِ الْفِصَالِ، وَالسَّلاَمُ لِأَهْلِهِ.

মুয়াবিয়ার পত্রের জবাব

নিশ্চয়ই ,আমরা ও তোমরা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে ছিলাম যা তুমি নিজেই বলে থাক। কিন্তু ক দিন থেকেই তোমাদের সাথে আমাদের সে সম্পর্কে চিড় ধরেছে। কারণ আমরা ইমান এনেছি আর তোমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছো। আজ অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে ,আমরা ইমানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আর তোমরা ফেতনা সৃষ্টিকারী। তোমাদের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তারা অনিচ্ছা সত্ত্বেই তা করেছে। তাও আবার যখন সকল গোত্রের নেতাগণ ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর নবীর সঙ্গে যোগদান করেছে তারপর তোমরা ইসলাম গ্রহণ করেছো ।

তোমার পত্রে তুমি উল্লেখ করেছ যে ,আমি তালহা ও জুবায়েরকে হত্যা করেছি এবং আয়শাকে জোরপূর্বক তার ঘর থেকে বের করে দিয়ে কুফা ও বসরার মধ্যবর্তী স্থলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছি । এসব বিষয়ে তোমার মাথা ঘামাবার কিছুই নেই। তারাও তোমার বিরুদ্ধে কোন কিছু বলেনি। সুতরাং তাদের ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যা পাওয়ার অধিকার তোমার নেই।

তুমি আরো লিখেছো যে ,তুমি একদল মুজাহির ও আনসার নিয়ে আমার কাছে আসছো । তোমার মনে রাখা উচিত যে ,যেদিন তোমার ভাই বন্দি হয়েছিল সেদিন থেকেই হিজরত সমাপ্ত হয়ে গেছে। কাজেই মুহাজির ও আনসার আর কেউ নেই। যদি তুমি ব্যতিব্যস্ত হয়ে থাক তবে একটু অপেক্ষা কর যাতে আমি তোমার মোকাবেলা করতে পারি এবং সেটা খুব মানান সই হবে। কারণ তাতে বুঝা যাবে তোমাকে শাস্তি দেয়ার জন্যই আল্লাহ আমাকে মনোনীত করেছেন। কিন্তু তুমি আমার কাছে যদি আস তা হবে আমাদের কবির কবিতার মন্তব্য :

তারা গ্রীষ্ম বাতাসের উল্টো দিকে অগ্রসর হচ্ছে ,যে বাতাস তাদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করছে এবং কী নিচু ভূমি আর উচু ভূমি তারা পাথরের আঘাত পাচ্ছে ।

মনে রেখো ,যে তরবারি দিয়ে আমি তোমার দাদা ,মামা ও ভ্রাতাদেরকে দ্বীখণ্ডিত করেছি তা আজো আমার কাছে আছে। আল্লাহর কসম ,তুমি যে কি প্রকৃতির তা আমি ভালোভাবে জানি। তোমার হৃদয় নিচ এবং সুবুদ্ধিতে তুমি দুর্বল। একথা বলা ভালো যে ,তুমি যে স্থানে আরোহণ করেছ। সেখান থেকে শুধুমাত্র মন্দ দৃশ্য দেখতে পাচ্ছ ,যা তোমার বিরুদ্ধে - পক্ষে নয়। কারণ অন্যের হারানো বস্তু তুমি খুঁজছো। অন্যের পশুর পাল খুঁজতে তুমি ঝুকে পড়েছ। তুমি এমন জিনিসের প্রতি লোভাতুর হয়ে পড়েছ যা তোমার নয় এবং যাতে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তোমার কাজে আর কথায় কতই না ব্যবধান এবং এ বিষয়ে তুমি তোমার বাপ - চাচা ও মামাদের কতই না কাছের যারা অসৎ প্রকৃতি দ্বারা তাড়িত ছিল এবং মুহাম্মদের (সা.) বিরোধিতার পাপের প্রতি কতই আকৃষ্ট ছিল। ফলশ্রুতিতে তাদের হত্যা করা হয়েছিল যা তুমি নিজেই প্রত্যক্ষ করেছ। তাদের ওপর যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম তখন তারা আত্মরক্ষার কোন পথ খুঁজে পায়নি এবং আমার তরবারির আঘাত থেকে নিরাপদ স্থানে পালাতে পারেনি। সে তরবারি আজো দুর্বল হয়ে পড়েনি।

উসমানের হত্যা সম্বন্ধে তুমি অনেক কিছু লিখেছো । তুমি প্রথমে অন্যান্য মানুষের মতো বায়াত গ্রহণ কর। তারপর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আমার কাছে রায় চাও এবং তখন আমি মহামহিম আল্লাহর কুরআন মতে তোমার ও তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেব। কিন্তু যা তুমি লক্ষ্যস্থির করেছ তা এমন যেন মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধের পর শিশুর মুখে প্রথম ক দিন আলগা নিপল ;যারা শান্তি পাওয়ার যোগ্য তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক ।

__________________

১। মুয়াবিয়া আমিরুল মোমেনিনের কাছে একটা পত্র লিখেছিল। তাতে সে পারস্পরিক ঐক্য ও সমঝোতার কথা উল্লেখ করে তালহা ও জুবায়েরের হত্যা ,আয়শাকে ঘর হতে বহিস্কার করা এবং মদিনা থেকে কুফায় রাজধানী স্থানান্তর করার বিষয়ে আমিরুল মোমেনিনকে দোষারোপ করে। সর্বশেষে মুহাজির ও আনসার নিয়ে সে যুদ্ধের হুমকি দেয়। প্রত্যুত্তরে আমিরুল মোমেনিন এ পত্র লিখেন। এতে উভয়ের ঐক্য ও সমঝোতার বিষয়ে তিনি লিখেছেন যে ,ইসলাম প্রচারের সাথে সাথে তারা (উমাইয়াগণ) রাসূলের (সা.) ঘোর বিরোধিতা শুরু করেছিল। অপরপক্ষে হাশেমিগণ ইসলাম গ্রহণ করে রাসূলকে (সা.) তার মিশনে সহায়তা করেছে। আরবের দলপতি যখন তাদের দলবলসহ রাসূলের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল তখনও উমাইয়াগণ তার বিরোধিতায় তৎপর ছিল। মক্কা বিজয়ের পর তারা অনন্যেপায় হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে। মূল ব্যবধানটা এখানেই যে ,হাশেমিগণ স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে আর উমাইয়াগণ প্রাণ বাচানোর জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছে। এ নৈতিক ব্যবধান কখনো দূর হবার নয়। কারণ উমাইয়াগণ কখনো হৃদয় দিয়ে ইসলামকে বা রাসূল (সা.) ও তার আহলুল বাইতকে ভালোবাসেনি।

তালহা ও জুবায়েরের হত্যার জন্য মুয়াবিয়া আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে যা উদ্ভাবন করেছে তা যদি সত্য বলেও ধরা হয় তা হলে কি একথা বাস্তব ভিত্তিক নয় যে ,তারা উভয়ে বায়াত ভঙ্গ করে আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করে যুদ্ধ করেছিল ? সুতরাং বিদ্রোহ দমন করতে তারা নিহত হলেও হত্যকারীদের দোষারোপ করা যায় না। কারণ ন্যায়সঙ্গত ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শাস্তি হলো মৃত্যু। তাসত্ত্বেও আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ বাস্তব ভিত্তিক নয় কারণ তালহা ও জুবায়েরকে তার নিজের লোকেরাই হত্যা করেছে। ঐতিহাসিকগণ লিখেছেনঃ

মারওয়ান ইবনে হাকাম তালহাকে তীর বিদ্ধ করে এবং আবান ইবনে উসমানের দিকে ফিরে বলেছিল , আমরা তোমার পিতার হত্যাকারীকে নিহত করেছি এবং তোমাকে প্রতিশোধ নেয়ার দায় থেকে মুক্ত করেছি ” (সাদ ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ১৫৯ ;আছীর ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৬০ ,৬১ ও ২৪৪ ,বার ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৭৬৬ - ৭৬৯ ;হাজর ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২৩০ ;আসকালানী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ২১)

আমর ইবনে জুরমুজ নামক একজন লোক বসরা থেকে ফিরে যাবার পথে জুবায়েরকে হত্যা করেছিল। এতে আমিরুল মোমেনিনের কোন প্রকার নির্দেশ বা ইঙ্গিত ছিল না। একইভাবে আয়শা নিজেই বিদ্রোহী দলের নেত্রী হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন। আমিরুল মোমেনিন বহুবার তাকে তার মর্যদার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে উপদেশ দিয়েছিলেন যেন তিনি তার সীমানা ছেড়ে না যান। কিন্তু তিনি সে উপদেশে কর্ণপাত করেননি।

মুয়াবিয়া তার পত্রে সমালোচনা করে বলেছিল আমিরুল মোমেনিনের রাজধানী কুফার স্থানান্তরের ফলে মদিনা থেকে মন্দ লোক ও ময়লা আবর্জনা দূরীভূত হয়েছে। এর একমাত্র জবাব হলো মুয়াবিয়া সর্বদা মদিনা থেকে সরে রয়েছে এবং সিরিয়ায় থেকেছে। প্রকৃত অবস্থা হলো জামাল যুদ্ধে বহু সংখ্যক লোক কুফা থেকে আমিরুল মোমেনিনের পক্ষে যোগদান করেছিল। এতে তিনি অনুভব করলেন যে ,চারদিকের বিদ্রোহ দমনের জন্য সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে কুফায় তাঁর অবস্থান অধিকতর ভালো হবে। তাই তিনি মদিনা থেকে কুফায় রাজধানী স্থানান্তর করেছিলেন।

সর্বশেষে ,আনসার ও মুহাজির নিয়ে আক্রমণের হুমকির প্রেক্ষিতে আমিরুল মোমেনিন বললেন যে ,মক্কা বিজয়ের কালে মুয়াবিয়ার ভাই ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ান বন্দী হয়েছিল। কাজেই সে দিন থেকেই হিজরতের ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। রাসূল (সা.) বলেছেন যে , মক্কা বিজয়ের পর আর কোন হিজরত থাকবে না। হিজরত বন্ধ হবার পর মুহাজির আর আনসারের প্রশ্ন উঠে না।