নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা0%

নাহজ আল-বালাঘা লেখক:
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ: হযরত আলী (আ.)

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক: আশ-শরীফ আর-রাজী
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ:

ভিজিট: 126209
ডাউনলোড: 8027

নাহজ আল-বালাঘা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 48 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 126209 / ডাউনলোড: 8027
সাইজ সাইজ সাইজ
নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বাংলা

রাসূলের (সা.) ‘জ্ঞান নগরীর দ্বার’ আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব ছিলেন তত্ত্বজ্ঞানী, দার্শনিক, সুলেখক ও বাগ্মী। আলঙ্কারিক শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ও নৈপুন্য অসাধারণ। তিনি নবুওয়াতী জ্ঞান ভান্ডার হতে সরাসরি জ্ঞান আহরণ করেন এবং সাহাবাদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী পন্ডিত ছিলেন। এতে কারো দ্বিমত নেই। আরবী কাব্যে ও সাহিত্যে তার অনন্যসাধারণ অবদান ছিল। খেলাফত পরিচালনা কালে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ (খোৎবা) দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকগণকে প্রশাসনিক বিষয়ে উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে পত্র লিখেছিলেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মানুষের অনেক প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছিলেন। তার এসব বাণী কেউকেউ লিখে রেখেছিল, কেউ কেউ মনে রেখেছিল, আবার কেউ কেউ তাদের লিখিত পুস্তকে উদ্ধৃত করেছিল। মোটকথা তার অমূল্য বাণীসমূহ মানুষের কাছে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ছিল।

আশ-শরীফ আর-রাজী আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিবের ভাষণসমূহ (খোৎবা), পত্রাবলী, নির্দেশাবলী ও উক্তিসমূহ সংগ্রহ করে “নাহজ আল-বালঘা” নামক গ্রন্থটি সঙ্কলন করেন।

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ১০১ - ১২০

উক্তি নং - ১০১

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ يَسْتَقِيمُ قَضَأُ الْحَوَائِجِ إِلا بِثَلاَثٍ: بِاسْتِصْغَارِهَا لِتَعْظُمَ، وَ بِاسْتِكْتَامِهَا لِتَظْهَرَ، وَ بِتَعْجِيلِهَا لِتَهْنَأَ.

অন্যের প্রয়োজন মিটানো তিনভাবে দীর্ঘস্থায়ী গুণঃ একে ক্ষুদ্র মনে করতে হবে তাতে এটা বড়ত্ব অর্জন করবে ;একে গোপন রাখতে হবে তাতে এটা আত্মপ্রকাশ করবে এবং একে তাড়াতাড়ি সম্পাদন করতে হবে তাতে এটা আনন্দদায়ক হবে।

উক্তি নং - ১০২

وَ قَالَعليه‌السلام : يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لاَ يُقَرَّبُ فِيهِ إِلا الْمَاحِلُ (الاجن) وَ لاَ يُظَرَّفُ فِيهِ إِلا الْفَاجِرُ، وَ لاَ يُضَعَّفُ فِيهِ إِلا الْمُنْصِفُ؛ يَعُدُّونَ الصَّدَقَةَ فِيهِ غُرْماً، وَ صِلَةَ الرَّحِمِ مَنّاً، وَ الْعِبَادَةَ اسْتِطَالَةً عَلَى النَّاسِ! فَعِنْدَ ذَلِكَ يَكُونُ السُّلْطَانُ بِمَشُورَةِ الالنِّساءِ، وَ إِمَارَةِ الصِّبْيَانِ، وَ تَدْبِيرِ الْخِصْيَانِ!.

সহসাই এমন এক সময় আসবে যখন এমন লোককে উচ্চ মর্যাদা দেয়া হবে যারা অন্যের বদনাম করে বেড়ায় ,যখন দুষ্ট প্রকৃতির লোককে বুদ্ধিমান বলা হবে এবং ন্যায়পরায়ণকে দুর্বল মনে করা হবে। মানুষ দানকে ক্ষতি বা লোকসান বলে মনে করবে ,জ্ঞাতিত্বের বিবেচনা দায়িত্ব বলে মনে করবে না এবং ইবাদতের স্থান সমূহ অন্যের ওপর মহত্ত্ব দাবীর স্থান হবে। এ সময় নারীর পরামর্শে কর্তৃত্ব প্রয়োগ করা হবে। অল্প বয়স্ক বালককে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করা হবে এবং নপুংসক লোক দ্বারা প্রশাসন চালানো হবে।

উক্তি নং - ১০৩

ورُئِيَ عَلَيْهِ إِزَارٌ خَلَقٌ مَرْقُوعٌ فَقِيلَ لَهُ فِي ذَلِكَ، فَقَالَ: يَخْشَعُ لَهُ الْقَلْبُ، وَ تَذِلُّ بِهِ النَّفْسُ، وَ يَقْتَدِي بِهِ الْمُؤْمِنُونَ. إِنَّ الدُّنْيَا وَ الْآخِرَةَ عَدُوَّانِ مُتَفَاوِتَانِ، وَ سَبِيلاَنِ مُخْتَلِفَانِ؛ فَمَنْ أَحَبَّ الدُّنْيَا وَ تَوَلا هَا أَبْغَضَ الْآخِرَةَ وَ عَادَاهَا، وَ هُمَا بِمَنْزِلَةِ الْمَشْرِقِ وَ الْمَغْرِبِ، وَ مَاشٍ بَيْنَهُمَا؛ كُلَّمَا قَرُبَ مِنْ وَاحِدٍ بَعُدَ مِنَ الْآخَرِ وَ هُمَا بَعْدُ ضَرَّتَانِ!.

একদিন আমিরুল মোমেনিনকে ছিন্ন ও তালি দেয়া পোষাক পরিহিত অবস্থায় দেখে কেউ একজন এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেনঃ এতে অন্তর ভয়ে থাকে ,মনে অহমবোধ আসে না এবং ইমানদারগণ সমকক্ষ হবার চেষ্টা করবে। নিশ্চয়ই ,ইহকাল ও পরকাল পরস্পর পরস্পরের শত্রু এবং ভিন্নমুখী দুটি পথ যে এ দুনিয়াকে পছন্দ করে ও ভালোবাসে সে পরকালের তোয়াক্কা করে না । এ দুটি হলো পূর্ব পশ্চিমের মতো । এর একটির দিকে এগিয়ে গেলে অন্যটি থেকে দূরে সরে যেতে হয় । মোটের ওপর এ দুটি হলো দুসতীনের মতো ।

উক্তি নং - ১০৪

وَ عَنْ نَوْفٍ الْبَكَالِيِّ، قَال : َ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَعليه‌السلام ذَاتَ لَيْلَةٍ، وَ قَدْ خَرَجَ مِنْ فِرَاشِهِ، فَنَظَرَالَى النُّجُومِ فَقَالَ لی: يَا نَوْفُ، أَرَاقِدٌ أَنْتَ أَمْ رَامِقٌ؟ فَقُلْتُ: بَلْ رَامِقٌ؛ فقَالَ:

يَا نَوْفُ، طُوبَى لِلزَّاهِدِينَ فِي الدُّنْيَا، الرَّاغِبِينَ فِي الْآخِرَةِ، أُولَئِكَ قَوْمٌ اتَّخَذُوا الْأَرْضَ بِسَاطاً، وَ تُرَابَهَا فِرَاشاً، وَ مَأَهَا طِيباً، وَ الْقُرْآنَ شِعَاراً، وَ الدُّعَأَ دِثَاراً، ثُمَّ قَرَضُوا الدُّنْيَا قَرْضاً عَلَى مِنْهَاجِ الْمَسِيحِ.

يَا نَوْفُ، إِنَّ دَاوُدَعليه‌السلام قَامَ فِي مِثْلِ هَذِهِ السَّاعَةِ مِنَ اللَّيْلِ فَقَالَ: إِنَّهَا سَاعَةٌ لاَ يَدْعُو فِيهَا عَبْدٌ إِلا اسْتُجِيبَ لَهُ، إِلا أَنْ يَكُونَ عَشَّاراً أَوْ عَرِيفاً أَوْ شُرْطِيّاً، أَوْ صَاحِبَ عَرْطَبَةٍ(وَ هِيَ الطُّنْبُورُ) أَوْ صَاحِبَ كَوْبَةٍ(وَ هِيَ الطَّبْلُ وَ قَدْ قِيلَ أَيْضاً: إِنَّ الْعَرْطَبَةَ الطَّبْلُ وَ الْكَوْبَةَ الطُّنْبُورُ) .

নাউফ আল - বিকালী থেকে বর্ণিত আছে যে ,একরাতে আমিরুল মোমেনিন তার বিছানা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন এবং তারকাপুঞ্জের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন। তারপর তিনি আমাকে বললেনঃ হে নাউফ ,তুমি কি জেগে আছো না ঘুমিয়ে আছো ? আমি বললাম , হে আমিরুল মোমেনিন ,আমি জেগে আছি । ” তারপর তিনি বললেন :

হে নাউফ ,তাদের ওপর রহমত বর্ষিত হোক যারা এ দুনিয়া থেকে বিরত রয়েছে এবং পরকালের জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে । তারা ওই লোক যারা এ মাটিকে তাদের মেঝে ,এর ধূলিকণাকে তাদের রাত্রিকালীন পোষাক এবং এর পানিকে তাদের সুগন্ধি মনে করে । তারা নিম্ন স্বরে কুরআন তেলাওয়াত করে এবং মিনতি করে উচ্চস্বরে তারপর তারা ঈসার মতো এ পৃথিবী থেকে কেটে পড়ে ।

হে নাউফ ,এ রকম এক রাতে দাউদ (আ.) একই সময়ে জেগেছিলেন এবং বললেন , এ সময়টা এমন যখন যা প্রার্থনা করা হয় তাই কবুল করা হয় যদি না সে কর আদায়কারী ,গোয়েন্দা ব্যক্তি ,পুলিশ অফিসার ,বাদ্যযন্ত্র (বীণা জাতীয় তারের বাদ্য) বাদক ও ঢাক্কাবাদক হয় । ”

উক্তি নং - ১০৫

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْكُمْ فَرَائِضَ، فَلاَ تُضَيِّعُوهَا؛ وَ حَدَّ لَكُمْ حُدُوداً، فَلاَ تَعْتَدُوهَا؛ وَ نَهَاكُمْ عَنْ أَشْيَاء،َ فَلاَ تَنْتَهِكُوهَا؛ وَ سَكَتَ لَكُمْ عَنْ أَشْيَاءَ وَ لَمْ يَدَعْهَا نِسْيَاناً، فَلاَ تَتَكَلَّفُوهَا.

আল্লাহ তোমাদের ওপর কতিপয় দায়িত্ব অর্পণ করেছেন যা অবহেলা করা উচিত নয় ,কতিপয় সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন যা লঙ্ঘন করা উচিত নয় ,কতিপয় জিনিস হারাম করেছেন যা ভঙ্গ করা উচিত নয়। আবার কতিপয় বিষয়ে নীরব রয়েছেন ;তাতে তোমরা মনে করো না যে ,তিনি ভুলে গিয়ে এগুলো সম্বন্ধে কিছু বলেন নি।

উক্তি নং - ১০৬

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ يَتْرُكُ النَّاسُ شَيْئاً مِنْ أَمْرِ دِينِهِمْ لاِسْتِصْلاَحِ دُنْيَاهُمْ إِلا فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مَا هُوَ أَضَرُّ مِنْهُ.

জাগতিক কোন কর্মকাণ্ডকে যথাযথ করার জন্য যদি কেউ দ্বীন সম্পর্কীয় কিছু পরিত্যাগ করে তবে আল্লাহ তার ওপর এমন কিছু আপতিত করবেন যা অধিক ক্ষতিকর হবে।

উক্তি নং - ১০৭

وَ قَالَعليه‌السلام : رُبَّ عَالِمٍ قَدْ قَتَلَهُ جَهْلُهُ وَ عِلْمُهُ مَعَهُ لاَ يَنْفَعُهُ.

কখনো কখনো শিক্ষিত লোকের অজ্ঞতা তাকে ধ্বংস করে দেয় ;তখন তার যে জ্ঞান আছে তা লোপ পায় ।

উক্তি নং - ১০৮

وَ قَالَعليه‌السلام : لَقَدْ عُلِّقَ بِنِيَاطِ هَذَا الْإِنْسَانِ بَضْعَةٌ هِيَ أَعْجَبُ مَا فِيهِ: وَ ذَلِكَ الْقَلْبُ. وَ لَهُ مَوَادَّ مِنَ الْحِكْمَةِ وَ أَضْدَاداً مِنْ خِلاَفِهَا؛ فَإِنْ سَنَحَ لَهُ الرَّجَأُ أَذَلَّهُ الطَّمَعُ، وَ إِنْ هَاجَ بِهِ الطَّمَعُ أَهْلَكَهُ الْحِرْصُ، وَ إِنْ مَلَكَهُ الْيَأْسُ قَتَلَهُ الْأَسَفُ، وَ إِنْ عَرَضَ لَهُ الْغَضَبُ اشْتَدَّ بِهِ الْغَيْظُ، وَ إِنْ أَسْعَدَهُ الرِّض ا نَسِيَ التَّحَفُّظَ وَ إِنْ غَالَهُ الْخَوْفُ شَغَلَهُ الْحَذَرُ وَ إِنِ اتَّسَعَ لَهُ الْأَمْنُ اسْتَلَبَتْهُ الْغِرَّةُ (العزّة)، وَ إِنْ أَفَادَ مَالاً أَطْغَاهُ الْغِنَى، وَ إِنْ أَصَابَتْهُ مُصِيبَةٌ فَضَحَهُ الْجَزَعُ، وَ إِنْ عَضَّتْهُ الْفَاقَةُ شَغَلَهُ الْبَلاَءُ، وَ إِنْ جَهَدَهُ الْجُوعُ قَعَدَتْ بِهِ الضَّعْفُ، وَ إِنْ أَفْرَطَ بِهِ الشِّبَعُ كَظَّتْهُ الْبِطْنَةُ. فَكُلُّ تَقْصِيرٍ بِهِ مُضِرُّ، وَ كُلُّ إِفْرَاطٍ لَهُ مُفْسِدٌ.

মানুষের মধ্যে এক টুকরা মাংস একটি শিরার সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় রয়েছে এবং এটা এক অদ্ভুত জিনিস। এটাকে কালব ’ বলে। তাতে প্রজ্ঞার বিভিন্ন বিষয় রয়েছে এবং আরো রয়েছে জ্ঞান ও জ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়াবলী । যদি এটা কোন আশার রশ্মি দেখে ,উদ্বীগ্নতা এটাকে কলুষিত করে এবং যখন উদ্বীগ্নতা বেড়ে যায় তখন লোভ এটাকে ধ্বংস করে। যদি হতাশা এটাকে ছেয়ে ফেলে তবে শোক এটাকে হত্যা করে। যদি এর ভেতর ক্রোধ জেগে ওঠে তাহলে একটা মারাত্মক ক্ষিপ্ততা জন্ম নেয়। যদি এতে আনন্দ বিরাজ করে তবে এটা সতর্ক হওয়ার বিষয় ভুলে যায়। যদি এটা ভয়ে ভীত হয় তবে অমনোযোগী হয়ে পড়ে। যদি চারদিকে শান্তি বিরাজ করে তবে এটা গাফেল হয়ে পড়ে। যদি কেউ সম্পদ অর্জন করে তবে বেপরোয়া মনোভাব এটাকে ভুল পথে নিয়ে যায়। যদি এতে বিপদ আপতিত হয় তবে অধৈর্য এটাকে হীন করে দেয়। যদি এটা উপোস করে তবে দুঃস্থাবস্থা এটাকে পরাভূত করে। যদি ক্ষুধা এটাকে আক্রমণ করে তবে দুর্বলতা এটাকে স্থবির করে দেয়। যদি এর খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। তবে শরীরের ওজন এটাকে ব্যাথা দেয়। এভাবে প্রতিটি কমতি এবং প্রতিটি বাড়তি এর জন্য ক্ষতিকর।

উক্তি নং - ১০৯

وَ قَالَعليه‌السلام : نَحْنُ النُّمْرُقَةُ الْوُسْطَى، بِهَا يَلْحَقُ التَّالِي، وَ إِلَيْهَا يَرْجِعُ الْغَالِي.

আমরা (আহলুল বাইত) মাঝখানের বালিশের মতো। যে পিছনে পড়ে আছে তাকে এটা পেতে হলে এগিয়ে আসতে হবে এবং যে অতিক্রম করে গেছে তাকে এর কাছে ফিরে আসতে হবে।

উক্তি নং - ১১০

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ يُقِيمُ أَمْرَ اللَّهِ سُبْحَانَهُ إِلا مَنْ لاَ يُصَانِعُ، وَ لاَ يُضَارِعُ، وَ لاَ يَتَّبِعُ الْمَطَامِعَ.

মহিমান্বিত আল্লাহর বিধান সে ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না যে ন্যায়ের ব্যাপারে কোমলতা প্রদর্শন করে ,যে অন্যায়কারীর মতো আচরণ করে না এবং যে লোভের বস্তুর দিকে দৌড়ে যায় না।

উক্তি নং - ১১১

وَ قَالَعليه‌السلام ، وَ قَدْ تُوُفِّيَ سَهْلُ بْنُ حُنَيْفٍ الْأَنْصَارِيُّ بِالْكُوفَةِ بَعْدَ مَرْجِعِهِ مِنْ صِفِّينَ، مَعَهُ وَكَانَ مِنْ أَحَبَّ النَّاسِ إِلَيْهِ:

لَوْ أَحَبَّنِي جَبَلٌ لَتَهَافَتَ.مَعْنى ذلِكَ أَنَّ الْمِحْنَةَ تَغْلُظُ عَلَيْهِ فَتُسْرِعْ الْمَصائِبُ إِلَيْهِ، وَ لا يَفْعَلُ ذلِكَ إ لا بِالا تْقِياء الا بْرارِ وَ الْمُصْطَفَيْنَ ألا خْيارِ وَ هذا مِثْلُ قَوْلِهِعليه‌السلام :

সহল ইবনে হুনায়েফ আল - আনসারী সিফফিনের যুদ্ধ হতে ফিরে এসে কুফায় মৃত্যুবরণ করেন। আমিরুল মোমেনিন তাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাঁর মৃত্যুতে তিনি বললেনঃ

যদি একটা পর্বতও আমাকে ভালোবাসত। তবে তা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ধুলিসাৎ হয়ে যেত (এ কথার অর্থ হলো তাকে ভালোবাসলে অসহ্য দুঃখ - কষ্ট - দুর্দশা - যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়) । কিন্তু তাতেও সহল অটল ছিল। (এর পরবর্তী বাণীটিও অনুরূপ)

উক্তি নং - ১১২

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ أَحَبَّنَا أَهْلَ الْبَيْتِ فَلْيَسْتَعِدَّ لِلْفَقْرِ جِلْبَاباً.

আহলুল বাইতকে যারা ভালোবাসে তাদেরকে অনেক দুঃখ - দুর্দশা - লাঞ্চনা - বঞ্চনা - উৎপীড়ন - যন্ত্রনা পোহাবার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

উক্তি নং - ১১৩

وَ قَالَعليه‌السلام : لا مالَ أَعْوَدُ مِنَ الْعَقْلِ، وَلا وَحْدَةَ أَوْحَشُ مِنَ الْعُجْبِ وَلاَ عَقْلَ كَالتَّدْبِيرِ، وَلاَ كَرَمَ كَالتَّقْوَى، وَلاَ قَرِينَ كَحُسْنِ الْخُلُقِ، وَلاَ مِيرَاثَ كَالْأَدَبِ، وَلاَ قَائِدَ كَالتَّوْفِيقِ، وَلاَ تِجَارَةَ كَالْعَمَلِ الصَّالِحِ، وَلاَ رِبْحَ كَالثَّوَابِ، وَلاَ وَرَعَ كَالْوُقُوفِ عِنْدَ الشُّبْهَةِ، وَلاَ زُهْدَ كَالزُّهْدِ فِي الْحَرَامِ، وَلاَ عِلْمَ كَالتَّفَكُّرِ، وَلاَ عِبَادَةَ كَأَدَأِ الْفَرَائِضِ، وَلاَ إِيمَانَ كَالْحَيَأِ وَ الصَّبْرِ، وَلاَ حَسَبَ كَالتَّوَاضُعِ، وَلاَ شَرَفَ كَالْعِلْمِ وَلاَ عِزَّ كَالْحِلْمِ وَلاَ مُظَاهَرَةَ أَوْثَقُ مِنَ مُشَاوَرَةٍ.

প্রজ্ঞার চেয়ে লাভজনক সম্পদ আর নেই। আত্মশ্লাঘা অপেক্ষা বড় বিচ্ছিন্নকারী ও একাকীত্বে নিক্ষেপকারী আর কিছু নেই। কৌশলের মতো উত্তম প্রজ্ঞা আর নেই। খোদাভীতির মতো সম্মান আর নেই। নৈতিক চরিত্রের মতো উত্তম সাথী আর নেই। ভদ্রতার মতো উত্তরাধিকারিত্ব আর কিছু নেই। তৎপরতার মতো দেশনা আর কিছু নেই। সৎ কর্মের মতো ব্যবসায় আর কিছু নেই। ঐশী পুরস্কারের মতো লাভজনক আর কিছু নেই। সংশয়ে মিথস্ক্রিয়ার মতো আত্মনিয়ন্ত্রণ আর কিছু নেই। নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকার মতো সংযম আর কিছু নেই। চিন্তা বা গবেষণার মতো জ্ঞান আর কিছু নেই। দায়িত্ব পালনের মতো ইবাদত আর কিছু নেই। বিনম্রতা ও ধৈর্যের মতো ইমান আর কিছুই নেই। নিরহংকার হওয়ার মতো সাফল্য আর কিছু নেই। জ্ঞানের মতো সম্মান আর কিছু নেই। ক্ষমার মতো শক্তি আর কিছু নেই। আলাপ - আলোচনার মতো বিশ্বস্ত স্তম্ভ আর কিছু নেই।

উক্তি নং - ১১৪

وَ قَالَعليه‌السلام : إِذَا اسْتَوْلَى الصَّلاَحُ عَلَى الزَّمَانِ وَ أَهْلِهِ، ثُمَّ أَسَأَ رَجُلٌ الظَّنَّ بِرَجُلٍ لَمْ تَظْهَرْ مِنْهُ خِزْيَةٌ فَقَدْ ظَلَمَ! وَ إِذَا اسْتَوْلَى الْفَسَادُ عَلَى الزَّمَانِ وَ أَهْلِهِ، فَأَحْسَنَ رَجُلٌ الظَّنَّ بِرَجُلٍ فَقَدْ غَرَّرَ!.

এমন সময় আসবে যখন নৈতিক উৎকর্ষ পৃথিবীতে ও মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করবে। তখন যদি কেউ অন্য কারো সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করে যাকে মন্দ স্পর্শ করেনি। তবে সে অন্যায়কারী হবে। এমন সময় আসবে যখন পাপ পৃথিবীতে ও মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করবে। তখন যদি কেউ অন্য কারো সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করে তবে সে নিজকে বিপদ সঙ্কুল অবস্থায় নিক্ষেপ করবে।

উক্তি নং - ১১৫

وَ قِيلَ لَهُعليه‌السلام : كَيْفَ تَجِدُكَ يَا أَمِيرَالْمُؤْمِنِينَ: فَقَالَ: كَيْفَ يَكُونُ حَالُ مَنْ يَفْنَى بِبَقَائِهِ، وَ يَسْقَمُ بِصِحَّتِهِ وَ يُؤْتَى مِنْ مَأْمَنِهِ!

এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেছিলো , হে আমিরুল মোমেনিন ,আপনি কেমন আছেন। ” প্রত্যুত্তরে তিনি বললেনঃ যে প্রতিটি নিঃশ্বাসে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ,যার সুস্বাস্থ্য যে কোন মুহুর্তে রোগাক্রাক্ত হয়ে পড়তে পারে এবং যে কোন নিরাপদ স্থানেই থাকুক না কেন মৃত্যু দ্বারা যে আক্রাক্ত হতে পারে সে আর কেমন থাকতে পারে ?

উক্তি নং - ১১৬

وَ قَالَعليه‌السلام : كَمْ مِنْ مُسْتَدْرَجٍ بِالْإِحْسَانِ إِلَيْهِ، وَ مَغْرُورٍ بِالسَّتْرِ عَلَيْهِ، وَ مَفْتُونٍ بِحُسْنِ الْقَوْلِ فِيهِ! وَ مَا ابْتَلَى اللَّهُ أَحَدا بِمِثْلِ الْإِمْلاَءِ لَهُ.

অনেককে আল্লাহ উত্তম ব্যবহার দ্বারা সময় দিয়ে থাকেন এবং অনেককে বঞ্চিত করেন ,কারণ তাদের পাপপূর্ণ কর্মকাণ্ড আল্লাহ ঢেকে রাখেন এবং অনেকে নিজের সম্পর্কে ভালো কথায় মুগ্ধ হয়। আল্লাহ কারো বিচার ওই ব্যক্তির মতো কঠোরভাবে করেন না যাকে তিনি সময় দিয়েছিলেন।

উক্তি নং - ১১৭

وَ قَالَعليه‌السلام : هَلَكَ فِيَّ رَجُلاَنِ: مُحِبُّ غَالٍ، وَ مُبْغِضٌ قَالٍ.

দুশ্রেণির লোক আমাকে নিয়ে ধ্বংসের সম্মুখীন হবে - এক শ্রেণি হলো ,যারা আমাকে অতিরঞ্জনের সাথে ভালোবাসে এবং অপর শ্রেণি হলো ,যারা আমাকে চরমভাবে ঘৃণা করে।

উক্তি নং - ১১৮

وَ قَالَعليه‌السلام : إِضَاعَةُ الْفُرْصَةِ غُصَّةٌ.

সুযোগ হারালে দুঃখ পেতে হয়।

উক্তি নং - ১১৯

وَ قَالَعليه‌السلام : مَثَلُ الدُّنْيَا كَمَثَلِ الْحَيَّةِ لَيِّنٌ مَسُّهَا، وَ السُّمُّ النَّاقِعُ فِي جَوْفِهَا، يَهْوِي إِلَيْهَا الْغِرُّ الْجَاهِلُ، وَ يَحْذَرُهَا ذُو اللُّبِّ الْعَاقِلُ.

দুনিয়ার উদাহরণ হলো সর্প। এটা স্পর্শ করতে কোমল কিন্তু এর ভেতর বিষে ভরপুর। যে অজ্ঞ সে এর প্রতারণায় পড়ে এবং এর প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান লোক এর থেকে নিজের রক্ষা করে ।

উক্তি নং - ১২০

و سئلعليه‌السلام عن قریش فقال: أَمَّا بَنُو مَخْزُومٍ فَرَيْحَانَةُ قُرَيْشٍ، تُحِبُّ حَدِيثَ رِجَالِهِمْ، وَ النِّكَاحَ فِي نِسَائِهِمْ. وَ أَمَّا بَنُو عَبْدِ شَمْسٍ فَأَبْعَدُهَا رَأْياً، وَ أَمْنَعُهَا لِمَا وَرَأَ ظُهُورِهَا. وَ أَمَّا نَحْنُ فَأَبْذَلُ لِمَا فِي أَيْدِينَا، وَ أَسْمَحُ عِنْدَ الْمَوْتِ بِنُفُوسِنَا، وَ هُمْ أَكْثَرُ وَ أَمْكَرُ وَ أَنْكَرُ، وَ نَحْنُ أَفْصَحُ وَ أَنْصَحُ وَ أَصْبَحُ.

কুরাইশদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে আমিরুল মোমেনিন বললেনঃ বনি মাখজুম হলো কুরাইশদের বক্ষ। তাদের পুরুষদের সঙ্গে কথা বলা এবং নারীকে বিয়ে করা আনন্দদায়ক। বনি আবদ শামসের লোকেরা গুপ্ত বিষয়ে দূরদর্শী ও সতর্ক। আমরা বনি হাশিমগণ যা পাই তা ব্যয় করি এবং আমরা আমাদেরকে উদারভাবে মৃত্যুর কোলে সঁপে দেই। ফলে তারা সংখ্যায় অনেক ,তারা ফন্দি - ফিকিরকারী ও কুৎসিত। অপরপক্ষে আমরা অত্যধিক সুভাষী ,শুভাকাঙ্খী ও সুন্দর।

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ১২১ - ১৪০

উক্তি নং - ১২১

وَ قَالَعليه‌السلام : شَتَّانَ بَيْنَ عَمَلَيْنِ: عَمَلٍ تَذْهَبُ لَذَّتُهُ وَ تَبْقَى تَبِعَتُهُ، وَ عَمَلٍ تَذْهَبُ مَؤُونَتُهُ وَ يَبْقَى أَجْرُهُ.

দুটি আমলের মধ্যে কতই না পার্থক্য - একটি আমল হলো ,যার আনন্দ গত হয়ে গেছে কিন্তু কুফল এখনো বিরাজমান ;অপরটি হলো ,যার দুঃখ - দুর্দশা গত হয়ে গেছে কিন্তু পুরস্কার বহমান।

উক্তি নং - ১২২

وَ تَبِعَ جِنَازَةً فَسَمِعَ رَجُلاً يَضْحَكُ، فَقَالَ: كَأَنَّ الْمَوْتَ فِيهَا عَلَى غَيْرِنَا كُتِبَ، وَ كَأَنَّ الْحَقَّ فِيهَا عَلَى غَيْرِنَا وَجَبَ، وَ كَأَنَّ الَّذِي نَرَى مِنَ الْأَمْوَاتِ سَفْرٌ عَمَّا قَلِيلٍ إِلَيْنَا رَاجِعُونَ! نُبَوِّئُوهُمْ أَجْدَاثَهُمْ، وَ نَأْكُلُ تُرَاثَهُمْ، كَأَنَّا مُخَلَّدُونَ بَعْدَهُمْ! نَسِينَا كُلَّ وَاعِظٍ وَ وَاعِظَةٍ، وَ رُمِينَا بِكُلِّ فادِحٍ و جَائِحَةٍ!

একজন মৃত লোকের লাশ দাফন করতে গিয়ে কাউকে হাসতে দেখে আমিরুল মোমেনিন বললেনঃ ব্যাপারটি কি এমন যে ,মৃত্যু শুধুমাত্র অন্যের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে ? বিষয়টি কি এমন যে ,ন্যায় শুধুমাত্র অন্যের জন্য বাধ্যতামূলক ? এটা কি এমন যে ,যাদের আমরা মৃত্যু - ভ্রমণে প্রস্থান করতে দেখি তারা কখনো আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসবে ? আমরা তাদেরকে কবরে শায়িত করে তাদের পরিত্যক্ত সম্পাক্তি উপভোগ করি। আমরা সকল উপদেশদানকারীকে (মৃত ব্যক্তিগণ) অবজ্ঞা করছি এবং নিজেদরকে মারাত্বক ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছি।

উক্তি নং - ১২৩

وَ قَالَعليه‌السلام : طُوبَى لِمَنْ ذَلَّ فِي نَفْسِهِ، وَ طَابَ كَسْبُهُ، وَ صَلَحَتْ سَرِيرَتُهُ (سیرته)، وَ حَسُنَتْ خَلِيقَتُهُ، وَ أَنْفَقَ الْفَضْلَ مِنْ مَالِهِ، وَ أَمْسَكَ الْفَضْلَ مِنْ لِسَانِهِ، وَ عَزَلَ عَنِ النَّاسِ شَرَّهُ، وَ وَسِعَتْهُ السُّنَّةُ، وَ لَمْ يُنْسَبْ إلَى بِدْعَةِ.

যে নিজকে বিনম্র করে সে আশির্বাদ পুষ্ট। তার জীবিকা পবিত্র ,হৃদয় পবিত্র ও আভ্যাসাবলী ধার্মিকতাপূর্ণ। সে তার সঞ্চয়কে আল্লাহর নামে খরচ করে। সে খারাপ কথা বলা থেকে তার জিবহাকে বিরত রাখে। সে মানুষকে পাপ থেকে নিরাপদে রাখে। সে রাসূলের (সা.) সুন্নাহতে সন্তুষ্ট এবং দ্বীনের কোন বেদা 'তের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।

উক্তি নং - ১২৪

وَ قَالَعليه‌السلام : غَيْرَةُ الْمَرْأَةِ كُفْرٌ، وَ غَيْرَةُ الرَّجُلِ إِيمَانٌ.

নারীর মাৎসর্য হলো উৎপথগামিতা আর পুরুষের মাৎসর্য বিশ্বাসের অঙ্গ।

উক্তি নং - ১২৫

وَ قَالَعليه‌السلام : لَأَنْسُبَنَّ الْإِسْلاَمَ نِسْبَةً لَمْ يَنْسُبْهَا أَحَدٌ قَبْلِي. الْإِسْلاَمُ هُوَ التَّسْلِيمُ، وَ التَّسْلِيمُ هُوَ الْيَقِينُ، وَ الْيَقِينُ هُوَ التَّصْدِيقُ، وَ التَّصْدِيقُ هُوَ الْإِقْرَارُ، وَ الْإِقْرَارُ هُوَ الْأَدَأُ وَ الْأَدَأُ، هُوَ الْعَمَلُ.

আমি ইসলামকে এমনভাবে সজ্ঞায়িত করছি যা পূর্বে আর কেউ করেনি ;ইসলাম হলো সমর্পণ ,সমর্পণ হলো প্রত্যয় - উৎপাদন ,প্রত্যয় হলো সত্যতা সমর্থন ,সত্যতা সমর্থন হলো স্বীকৃতি প্রদান ,স্বীকৃতি প্রদান হলে! দায়িত্বপালন এবং দায়িত্বপালন হলো আমল ।

উক্তি নং - ১২৬

وَ قَالَعليه‌السلام : عَجِبْتُ لِلْبَخِيلِ يَسْتَعْجِلُ الْفَقْرَ الَّذِي مِنْهُ هَرَبَ، وَ يَفُوتُهُ الْغِنَى الَّذِي إِيَّاهُ طَلَبَ، فَيَعِيشُ فِي الدُّنْيَا عَيْشَ الْفُقَرَأِ، وَ يُحَاسَبُ فِي الْآخِرَةِ حِسَابَ الْأَغْنِيَأِ. وَ عَجِبْتُ لِلْمُتَكَبِّرِ الَّذِي كَانَ بِالْأَمْسِ نُطْفَةً وَ يَكُونُ غَدا جِيفَةً! وَ عَجِبْتُ لِمَنْ شَكَّ فِي اللَّهِ، وَ هُوَ يَرَى خَلْقَ اللَّهِ؛ وَ عَجِبْتُ لِمَنْ نَسِيَ الْمَوْتَ، وَ هُوَ يَرَى (مِنْ يَمُوتُ) المَوتَی! وَ عَجِبْتُ لِمَنْ أَنْكَرَ النَّشْأَةَ الْأُخْرَى، وَ هُوَ يَرَى النَّشْأَةَ الْأُولَى؛ وَ عَجِبْتُ لِعَامِرٍ دَارَ الْفَنَاءِ وَ تَارِكٍ دَارَ الْبَقَاءِ.

কৃপণদের দেখে আমার আশ্চর্য লাগে যারা দুর্দশার দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে ;অথচ তারা দুর্দশা থেকে দৌড়ে পালাতে চায়। জীবনের আরাম - আয়েশ হারিয়ে ফেলছে ;অথচ তারা ব্যাকুলভাবে তা কামনা করে । অহংকারী লোকদের দেখে আমার আশ্চর্য লাগে ,যে কদিন আগেও বীর্যের ফোটা ছিল এবং আগামীকাল লাশে পরিণত হবে। যে লোক আল্লাহতে সন্দেহ করে তাকে দেখে আমার আশ্চর্য লাগে ,কারণ সে তো আল্লাহর সৃষ্টি দেখছে। মানুষকে মরতে দেখেও যেসব লোক মৃত্যুকে ভুলে থাকে তাদের কথা ভেবে আমার আশ্চর্য লাগে। সেসব লোকের কথা ভেবে আমার আশ্চর্য লাগে যারা দ্বিতীয় জীবনকে অস্বীকার করে ,যদিও তারা প্রথম জীবন দেখছে। তাদের কথা ভেবেও আশ্চর্য লাগে যারা চিরস্থায়ী আবাসকে ভুলে ক্ষণস্থায়ী আবাস নিয়ে ব্যস্ত।

উক্তি নং - ১২৭

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ قَصَّرَ فِي الْعَمَلِ ابْتُلِيَ بِالْهَمِّ، وَ لاَ حَاجَةَ لِلَّهِ فِيمَنْ لَيْسَ لِلَّهِ فِي مَالِهِ وَ نَفْسِهِ نَصِيبٌ.

কর্মবিমুখ লোক দুঃখে নিপতিত হয়। যে আল্লাহর নামে তার সম্পদ থেকে কিছুই ব্যয় করে না। তার বিষয়ে আল্লাহর করণীয় কিছু নেই।

উক্তি নং - ১২৮

وَ قَالَعليه‌السلام : تَوَقَّوُا الْبَرْدَ فِي أَوَّلِهِ، وَ تَلَقَّوْهُ فِي آخِرِهِ، فَإِنَّهُ يَفْعَلُ فِي الْأَبْدَانِ كَفِعْلِهِ فِي الْأَشْجَارِ، أَوَّلُهُ يُحْرِقُ، وَ آخِرُهُ يُورِقُ.

শীতের প্রারম্ভে সাবধান থেকো এবং শীতের শেষ দিককে অভিনন্দন জানিয়ো কারণ এটা বৃক্ষকে যেরূপ প্রভাবিত করে শরীরকে তদ্রুপ প্রভাবিত করে। প্রারম্ভে এটা বৃক্ষকে পত্রবিহীন করে এবং শেষ দিকে নতুন পাতা গজায়।

উক্তি নং - ১২৯

وَ قَالَعليه‌السلام : عِظَمُ الْخَالِقِ عِنْدَكَ يُصَغِّرُ الْمَخْلُوقَ فِي عَيْنِكَ.

স্রষ্টার মহত্ত্বের প্রশংসা সৃষ্টিকে ক্ষুদ্র করে দেয়।

উক্তি নং - ১৩০

وَ قَالَعليه‌السلام : وَ قَدْ رَجَعَ مِنْ صِفِّينَ فَأَشْرَفَ عَلَى الْقُبُورِ بِظَاهِرِ الْكُوفَةِ: يَا أَهْلَ الدِّيَارِ الْمُوحِشَةِ، وَ الْمَحَالِّ الْمُقْفِرَةِ، وَ الْقُبُورِ الْمُظْلِمَةِ؛ يَا أَهْلَ التُّرْبَةِ، يَا أَهْلَ الْغُرْبَةِ، يَا أَهْلَ الْوَحْدَةِ يَا أَهْلَ الْوَحْشَةِ، أَنْتُمْ لَنَا فَرَطٌ سَابِقٌ وَ نَحْنُ لَكُمْ تَبَعٌ لاَحِقٌ، أَمَّا الدُّورُ فَقَدْ سُكِنَتْ، وَ أَمَّا الْأَزْوَاجُ فَقَدْ نُكِحَتْ، وَ أَمَّا الْأَمْوَالُ فَقَدْ قُسِمَتْ. هَذَا خَبَرُ مَا عِنْدَنَا فَمَا خَبَرُ مَا عِنْدَكُمْ؟ ثُمَّ الْتَفَتَ إِلَى أَصْحَابِهِ فَقَالَ: أَمَا لَوْ أُذِنَ لَهُمْ فِي الْكَلاَمِ لَأَخْبَرُوكُمْ أَنَّ( خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى ) . «بقره ১৯৭»

আমিরুল মোমেনিন সিফফিনের যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে কুফার বাইরে কতগুলো কবর দেখতে পেয়ে বললেনঃ হে জনবসতিশূন্য এলাকার একাকীত্বের ঘরের বাসিন্দাগণ ;হে ধুলি কণার মানুষ সকল ,হে অদ্ভূত অবস্থার শিকারগণ ,হে একাকীত্বের মানুষ সকল ,হে নিঃসঙ্গ মানুষ সকল! তোমরা আগে গিয়ে আমাদের অগ্রবর্তী হয়েছো । আমরা তোমাদের অনুসরণ করছি এবং তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ হবে তোমরা যে ঘর ছেড়ে গেছো তাতে অন্যরা বসবাস করছে । তোমরা যেসব স্ত্রী রেখে গেছো তাদেরকে অন্যরা বিয়ে করেছে এবং যে সম্পদ রেখে গেছো তা ওয়ারিশগণ বন্টন করে নিয়েছে । আমাদের চারদিকে যারা আছে তাদের সংবাদ হলো এটাই ।

এখন তোমাদের চারদিকে যারা আছে তাদের সংবাদ কী ? তারপর আমিরুল মোমেনিন সাথীদের দিকে ফিরে বললেনঃ যদি তাদের কথা বলার ক্ষমতা থাকতো তাহলে তারা বলতো , নিশ্চয়ই ,আল্লাহর ভয় উত্তম রসদ । ” (কুরআন - ২ : ১৯৭)

উক্তি নং - ১৩১

وَ قَالَعليه‌السلام : وَ قَدْ سَمِعَ رَجُلاً يَذُمُّ الدُّنْيَا: أَيُّهَا الذَّامُّ لِلدُّنْيَا، الْمُغْتَرُّ بِغُرُورِهَا، الْمُنْخَدِعُ بِأَبَاطِيلِهَا! أَتَغْتَرُّ بِالدُّنْيَا ثُمَّ تَذُمُّهَا؟ أَنْتَ الْمُتَجَرِّمُ عَلَيْهَا، أَمْ هِيَ الْمُتَجَرِّمَةُ عَلَيْكَ؟ مَتَى اسْتَهْوَتْكَ، أَمْ مَتَى غَرَّتْكَ؟ أَبِمَصَارِعِ آبَائِكَ مِنَ الْبِلَى، أَمْ بِمَضَاجِعِ أُمَّهَاتِكَ تَحْتَ الثَّرَى؟ كَمْ عَلَّلْتَ بِكَفَّيْكَ، وَ مَرَّضْتَ بِيَدَيْكَ! تَبْغِي لَهُمُ الشِّفَأَ وَ تَسْتَوْصِفُ لَهُمُ الْأَطِبَّاءَ غَدَاةَ لاَ يُغْنِي عَنْهُمْ دَوَاؤُكَ، وَ لاَ يُجْدِي عَلَيْهِمْ بُكَاؤُكَ. لَمْ يَنْفَعْ أَحَدَهُمْ إِشْفَاقُكَ، وَ لَمْ تُسْعَفْ فِيهِ بِطَلِبَتِكَ، وَ لَمْ تَدْفَعْ عَنْهُ بِقُوَّتِكَ! وَ قَدْ مَثَّلَتْ لَكَ بِهِ الدُّنْيَا نَفْسَكَ وَ بِمَصْرَعِهِ مَصْرَعَكَ.

إِنَّ الدُّنْيَا دَارُ صِدْقٍ لِمَنْ صَدَقَهَا، وَ دَارُ عَافِيَةٍ لِمَنْ فَهِمَ عَنْهَا، وَ دَارُ غِنًى لِمَنْ تَزَوَّدَ مِنْهَا، وَ دَارُ مَوْعِظَةٍ لِمَنِ اتَّعَظَ بِهَا. مَسْجِدُ أَحِبَّأِ اللَّهِ، وَ مُصَلَّى مَلاَئِكَةِ اللَّهِ، وَ مَهْبِطُ وَحْيِ اللَّهِ، وَ مَتْجَرُ أَوْلِيَأِ اللَّهِ، اكْتَسَبُوا فِيهَا الرَّحْمَةَ، وَ رَبِحُوا فِيهَا الْجَنَّةَ. فَمَنْ ذَا يَذُمُّهَا وَ قَدْ آذَنَتْ بِبَيْنِهَا، وَ نَادَتْ بِفِرَاقِهَا، وَ نَعَتْ نَفْسَهَا وَ أَهْلَهَا؛ فَمَثَّلَتْ لَهُمْ بِبَلاَئِهَا الْبَلاَءَ، وَ شَوَّقَتْهُمْ بِسُرُورِهَا إِلَى السُّرُورِ؟! رَاحَتْ بِعَافِيَةٍ، وَ ابْتَكَرَتْ بِفَجِيعَةٍ (نجعة)، تَرْغِيباً وَ تَرْهِيباً، وَ تَخْوِيفاً وَ تَحْذِيراً، فَذَمَّهَا رِجَالٌ غَدَاةَ النَّدَامَةِ، وَ حَمِدَهَا آخَرُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. ذَكَّرَتْهُمُ الدُّنْيَا فَتَذَكَّرُوا، وَحَدَّثَتْهُمْ فَصَدَّقُوا، وَ وَعَظَتْهُمْ فَاتَّعَظُوا.

একজন লোক দুনিয়াকে গালিগালাজ করছিল। আমিরুল মোমেনিন তা শুনে বললেনঃ

হে ব্যক্তি যে দুনিয়াকে গালিগালাজ করছো ,হে ব্যক্তি যে দুনিয়ার ছলনায় পড়ে প্রতারিত হয়েছো ,তুমি কি দুনিয়াকে ব্যগ্রভাবে কামনা করে তারপর গালিগালাজ করছো ? তুমি কি দুনিয়াকে দোষারোপ করছো ,নাকি দুনিয়ার উচিত তোমাকে দোষারোপ করা ? কখন দুনিয়া তোমাকে হতবিহ্বল বা প্রতারণা করেছিল ? তোমার পূর্বপুরুষদের পতন ও ধ্বংসের পর ? নাকি মাটির নিচে তোমাদের মায়েরা ঘুমিয়ে পড়ার পর ? পীড়ার সময় তোমরা তাদেরকে কতই না দেখাশুনা করেছো এবং অসুস্থতার সময় তাদের কতই না সেবা যত্ন করেছো । তোমরা আশা করেছিলে তারা যেন আরোগ্য লাভ করে । তাদের জন্য চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করেছো । তোমাদের ঔষধ তাদের কোন কাজে আসে নি। তোমাদের দুঃখ প্রকাশ তাদের কোন উপকারে আসে নি । তোমাদের শোকের কান্না বৃথা হয়ে গেছে এবং তোমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পার নি । তোমাদের সর্বশক্তি দিয়েও তাদের মৃত্যুকে দাবীয়ে রাখতে পার নি। বস্তুত মৃত ব্যক্তির মাধ্যমে দুনিয়া একটা উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে ,কিভাবে পতন ঘটে এবং একইভাবে তোমাদেরও পতন ঘটবে। নিশ্চয়ই এ পৃথিবী তার জন্য সত্যাগার যে সত্যের পূজারী ,তার জন্য নিরাপদ স্থল যে বুঝতে পারে ,তার জন্য ধনাগার যে (পরকালের জন্য) তা সংগ্রহ করতে পারে ,তার জন্য শিক্ষালয় যে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে । আল্লাহ প্রেমিকদের জন্য এটা ইবাদতের স্থান ,আল্লাহর ফেরেশতাদের জন্য এটা প্রার্থনার স্থান ,এটা আল্লাহর প্রত্যাদেশ নাজেলের স্থান এবং যারা আল্লাহতে আসক্ত তাদের জন্য কেনাকাটার স্থান । এখানে তারা রহমত অর্জন করে এবং লাভ হিসাবে বেহেশত পায়। সুতরাং যেখানে দুনিয়া তার প্রস্থান ঘোষণা করছে এবং স্পষ্টভাবে জানান দিচ্ছে যে ,সে সব কিছু ত্যাগ করবে। সেখানে তাকে গালিগালাজ করা অর্থহীন । দুনিয়া পূর্বাহ্নেই নিজের ধ্বংসের সংবাদ দিয়েছে এবং সকলকে মৃত্যুর সংবাদও দিয়েছে। নিজের দুর্দশা দ্বারা দুনিযা অন্যের দুর্দশার একটা উদাহরণ স্থাপন করেছে । এর আনন্দ দ্বারা আবার প্রাতে প্ররোচনা ও প্রতারণা করে শোকাহত করে। মানুষ তাওবা করে রোদন করার সময় একে গালমন্দ করে ,কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই এতে প্রলুব্ধ হয়ে এর প্রশংসা শুরু করে । দুনিয়া প্রতিনিয়ত যে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে তা স্মরণ রাখা ,স্বীকার করা ও মেনে চলা উচিত ।

উক্তি নং - ১৩২

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ لِلَّهِ مَلَكاً يُنَادِي فِي كُلِّ يَوْمٍ: لِدُوا لِلْمَوْتِ، وَ اجْمَعُوا لِلْفَنَاءِ وَ ابْنُوا لِلْخَرَابِ.

আল্লাহর একজন ফেরেশতা আছে যে প্রতিদিন ডেকে বলছে মৃত্যুর জন্য সন্তান - সন্ততি জন্ম দাও এবং ধন - সম্পদ ও দালান - কোঠা ধ্বংসের জন্য কর। ”

উক্তি নং - ১৩৩

وَ قَالَعليه‌السلام : الدُّنْيَا دَارُ مَمَرِّ لاَ دَارُ مَقَرِّ وَ النَّاسُ فِيهَا رَجُلاَنِ: رَجُلٌ بَاعَ نَفْسَهُ فَأَوْبَقَهَا، وَ رَجُلٌ ابْتَاعَ نَفْسَهُ فَأَعْتَقَهَا.

এ পৃথিবী থাকার জন্য নয় - যাত্রাপথের বিশ্রাম স্থল। এখানে দুধরনের মানুষ আছে এক হলো ,যারা কামনা - বাসনায় দাস হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে ;আর হলো যারা কামান - বাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করে মুক্তিপ্রাপ্ত হয়েছে।

উক্তি নং - ১৩৪

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ يَكُونُ الصَّدِيقُ صَدِيقاً حَتَّى يَحْفَظَ أَخَاهُ فِي ثَلاَثٍ: فِي نَكْبَتِهِ وَ غَيْبَتِهِ وَ وَفَاتِهِ.

যে ব্যক্তি বন্ধুদের তিন সময়ে রক্ষা করার চেষ্টা করে না সে বন্ধু নয়। এ সময়গুলি হলো তার অভাবের সময় ,তার অনুপস্থিতিতে এবং তার মৃত্যুকালে।

উক্তি নং - ১৩৫

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ أُعْطِيَ أَرْبَعاً لَمْ يُحْرَمْ أَرْبَعاً: مَنْ أُعْطِيَ الدُّعَأَ لَمْ يُحْرَمِ الْإِجَابَةَ، وَ مَنْ أُعْطِيَ التَّوْبَةَ لَمْ يُحْرَمِ الْقَبُولَ، وَ مَنْ أُعْطِيَ الاِسْتِغْفَارَ لَمْ يُحْرَمِ الْمَغْفِرَةَ، وَ مَنْ أُعْطِيَ الشُّكْرَ لَمْ يُحْرَمِ الزِّيَادَةَ.

وَ تَصْديقُ ذلِكَ فى كِتابِ اللّهِ تَعالى، قالَ الله فِي الدُّعأ:( ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ) وَ قالَ فِي الاسْتِغْفارِ( وَ مَنْ يَعْمَلْ سُوءا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورا رَحِيما ) وَ قالَ في الشَّكْرِ( لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ) وَ قالَ فِي التَّوْبَةِ:( إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَه الَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولئِكَ يَتُوبُ اللّهُ عَلَيْهِمْ وَ كانَ اللّهُ عَلِيما حَكِيما ) .

যাকে চারটি জিনিস দান করা হয় সে চারটি জিনিস হতে বঞ্চিত হয় না। যাকে প্রার্থনা করতে দেয়া হয় তাকে সাড়া থেকে বঞ্চিত করা হয় না। যাকে তওবা করার সুযোগ দেয়া হয় তাকে কবুল থেকে বঞ্চিত করা হয় না। যাকে ক্ষমা চাইতে দেয়া হয় তাকে ক্ষমা থেকে বঞ্চিত করা হয় না। যাকে শোকরিয়া আদায় করতে দেয়া হয় তাকে অধিক আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত করা হয় না । এ চারটি বিষয় কুরতান সমর্থিত আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে দোয়া সম্পর্কে বলেছেনঃ তোমরা আমাকে ডাক , আমি সাড়া দেব ” (কোরআন - ৪০ : ৬০ ) ইস্তিগফার সম্পর্কে বলেছেনঃ যে গোনাহ , করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে , অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে , সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল , করুণাময় পায়। (কোরআন - ৪ : ১১০ ), কৃতজ্ঞতা সম্পর্কে বলেছেনঃ যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর , তবে তোমাদেরকে আরও দেব। ” (কোরআন - ১৪:৭) আর তওবা সম্পর্কে বলেছেনঃ অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন , যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে , অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে ; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী , রহস্যবিদ। ” (কোরআন - ৪:১৭) ।

উক্তি নং - ১৩৬

وَ قَالَعليه‌السلام : الصَّلاَةُ قُرْبَانُ كُلِّ تَقِيِّ، وَ الْحَجُّ جِهَادُ كُلِّ ضَعِيفٍ. وَ لِكُلِّ شَيْءٍ زَكَاةٌ وَ زَكَاةُ الْبَدَنِ الصِّيَامُ، وَ جِهَادُ الْمَرْأَةِ حُسْنُ التَّبَعُّلِ.

খোদাভীরুদের জন্য সালাত হলো আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার একটা উপায় ,দুর্বলদের জন্য হজ্জ জিহাদ সমতুল্য। সব কিছুরই খাজনা আছে ;দেহের খাজনা হলো সিয়াম। স্বামীকে আনন্দদায়ক সঙ্গ দেয়াই নারীর জিহাদ ।

উক্তি নং - ১৩৭

وَ قَالَعليه‌السلام : اسْتَنْزِلُوا الرِّزْقَ بِالصَّدَقَةِ.

সাদকা (দান খয়রাত ) দিয়ে জীবিকার আন্বেষণ করো।

উক্তি নং - ১৩৮

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ أَيْقَنَ بِالْخَلَفِ جَادَ بِالْعَطِيَّةِ.

যে উত্তম প্রতিদান পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত সে দানে উদার ।

উক্তি নং - ১৩৯

وَ قَالَعليه‌السلام : تَنْزِلُ الْمَعُونَةُ عَلَى قَدْرِ الْمَؤُونَةِ.

প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা দেয়া হয়।

উক্তি নং - ১৪০

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا عَالَ مَنِ اقْتَصَدَ.

যে মধ্যপন্থাবলম্বী সে কখনো দুর্দশাগ্রস্থ হয় না।

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ১৪১ - ১৬০

উক্তি নং - ১৪১

وَ قَالَعليه‌السلام : قِلَّةُ الْعِيَالِ أَحَدُ الْيَسَارَيْنِ.

ছোট পরিবার আরামদায়ক জীবন যাপনের অন্যতম উপায়।

উক্তি নং - ১৪২

وَ قَالَعليه‌السلام : وَ التَّوَدُّدُ نِصْفُ الْعَقْلِ.

একের প্রতি অন্যের ভালোবাসা প্রজ্ঞার অর্ধাংশ।

উক্তি নং - ১৪৩

اَلْهَمُّ نِصْفُ الْهَرَمِ.

শোক বৃদ্ধ বয়সের অর্ধেক।

উক্তি নং - ১৪৪

وَ قَالَعليه‌السلام : يَنْزِلُ الصَّبْرُ عَلَى قَدْرِ الْمُصِيبَةِ، وَ مَنْ ضَرَبَ عَلَى فَخِذِهِ عِنْدَ مُصِيبَتِهِ حَبِطَ (أَجْرُهُ).

যন্ত্রণা - উৎপীড়ন - দুঃখ - দুর্দশা থেকে ধৈর্যের উৎপত্তি। যে ব্যক্তি দুঃখ - দুর্দশায় নিজের উরু ,চাপড়ায় সে আমল নষ্ট করে ফেলে।

উক্তি নং - ১৪৫

وَ قَالَعليه‌السلام : كَمْ مِنْ صَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ صِيَامِهِ إِلا الْجُوعُ وَ الظَّمَأُ، وَ كَمْ مِنْ قَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ قِيَامِهِ إِلا السَّهَرُ وَ الْعَنَاءُ، حَبَّذَا نَوْمُ الْأَكْيَاسِ وَ إِفْطَارُهُمْ!.

এমন অনেক লোক সিয়াম পালন করে যাদের সিয়াম উপোস থাকা ও তৃষ্ণার্ত হওয়া বৈ কিছু নয় এবং এমন অনেক নামাজি আছে যাদের নামাজ জাগরণ ও কষ্ট করা বৈ কিছু নয়। তাদের ইবাদত অপেক্ষা আল্লাহর তত্ত্বজ্ঞানীদের খাওয়া ,পান করা ও ঘুম অনেক বেশি ভালো।

উক্তি নং - ১৪৬

وَ قَالَعليه‌السلام : سُوسُوا (شوبوا) إِيمَانَكُمْ بِالصَّدَقَةِ، وَ حَصِّنُوا أَمْوَالَكُمْ بِالزَّكَاةِ، وَ ادْفَعُوا أَمْوَاجَ الْبَلاَءِ بِالدُّعَأِ.

সাদকা দ্বারা ইমান রক্ষা কর ,আল্লাহর অংশ (জাকাত) দান করে সম্পদ রক্ষা কর এবং সালাত দ্বারা দুর্যোগের ঘনঘটা দূরীভূত কর।

উক্তি নং - ১৪৭

قَالَ كُمَيْلُ بْنُ زِيَادٍ: أَخَذَ بِيَدِي أَمِيرُ الْمُؤْمِنِينَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍعليه‌السلام ، فَأَخْرَجَنِي إِلَى الْجَبَّانِ، فَلَمَّا أَصْحَرَ تَنَفَّسَ الصُّعَدَاءَ، ثُمَّ قَالَ:

يَا كُمَيْلَ بْنَ زِيَادٍ، إِنَّ هَذِهِ الْقُلُوبَ أَوْعِيَةٌ، فَخَيْرُهَا أَوْعَاهَا، فَاحْفَظْ عَنِّي مَا أَقُولُ لَكَ:

النَّاسُ ثَلاَثَةٌ: فَعَالِمٌ رَبَّانِيُّ وَ مُتَعَلِّمٌ عَلَى سَبِيلِ النَّجاةٍ، وَ هَمَجٌ رَعَاعٌ أَتْبَاعُ كُلِّ نَاعِقٍ (صائح)، يَمِيلُونَ مَعَ كُلِّ رِيحٍ، لَمْ يَسْتَضِيئُوا بِنُورِ الْعِلْمِ، وَ لَمْ يَلْجَؤُوا إِلَى رُكْنٍ وَثِيقٍ.

يَا كُمَيْلُ، الْعِلْمُ خَيْرٌ مِنَ الْمَالِ، الْعِلْمُ يَحْرُسُكَ وَ أَنْتَ تَحْرُسُ الْمَالَ. وَ الْمَالُ تَنْقُصُهُ النَّفَقَةُ، وَ الْعِلْمُ يَزْكُوا عَلَى الْإِنْفَاقِ، وَ صَنِيعُ الْمَالِ يَزُولُ بِزَوَالِهِ. يَا كُمَيْلَ بْنَ زِيَادٍ، مَعْرِفَةُ الْعِلْمِ دِينٌ يُدَانُ بِهِ، بِهِ يَكْسِبُ الْإِنْسَانُ الطَّاعَةَ فِي حَيَاتِهِ، وَ جَمِيلَ الْأُحْدُوثَةِ بَعْدَ وَفَاتِهِ. وَ الْعِلْمُ حَاكِمٌ، وَ الْمَالُ مَحْكُومٌ عَلَيْهِ.

يَا كُمَيْلُ، هَلَكَ خُزَّانُ الْأَمْوَالِ وَ هُمْ أَحْيَاءٌ، وَ الْعُلَمَاءُ بَاقُونَ مَا بَقِيَ الدَّهْرُ: أَعْيَانُهُمْ مَفْقُودَةٌ، وَ أَمْثَالُهُمْ فِي الْقُلُوبِ مَوْجُودَةٌ.

هَا إِنَّ هَاهُنَا لَعِلْماً جَمّاً (وَ أَشَارَ بِيَدِهِ إِلَى صَدْرِهِ) لَوْ أَصَبْتُ لَهُ حَمَلَةً! بَلَى اُصِيبُ لَقِنا غَيْرَ مَأْمُونٍ عَلَيْهِ، مُسْتَعْمِلاً آلَةَ الدِّينِ لِلدُّنْيَا، وَ مُسْتَظْهِرا بِنِعَمِ اللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ، وَ بِحُجَجِهِ عَلَى أَوْلِيَائِهِ؛ أَوْ مُنْقَادا لِحَمَلَةِ الْحَقِّ لاَ بَصِيرَةَ لَهُ فِي أَحْنَائِهِ، يَنْقَدِحُ الشَّكُّ فِي قَلْبِهِ لِأَوَّلِ عَارِضٍ مِنْ شُبْهَةٍ، أَلاَ لاَ ذَا وَ لاَ ذَاكَ! أَوْ مَنْهُوما بِاللَّذَّةِ، سَلِسَ الْقِيَادِ لِلشَّهْوَةِ، أَوْ مُغْرَما بِالْجَمْعِ وَ الاِدِّخَارِ، لَيْسَا مِنْ رُعَاةِ الدِّينِ فِي شَيْءٍ، أَقْرَبُ شَيْءٍ شَبَها بِهِمَا الْأَنْعَامُ السَّائِمَةُ! كَذَلِكَ يَمُوتُ الْعِلْمُ بِمَوْتِ حَامِلِيهِ.

اللَّهُمَّ بَلَى! لاَ تَخْلُو الْأَرْضُ مِنْ قَائِمٍ لِلَّهِ بِحُجَّةٍ، إِمَّا ظَاهِراً مَشْهُوراً، وَ إِمَّا خَائِفاً (حافیاً) مَغْمُوراً، لِئَلَّا تَبْطُلَ حُجَجُ اللَّهِ وَ بَيِّنَاتُهُ. وَ كَمْ ذَا وَ أَيْنَ أُولَئِكَ؟ أُولَئِكَ -وَ اللَّهِ- الْأَقَلُّونَ عَدَداً، وَ الْأَعْظَمُونَ عِنْدَ اللَّهِ قَدْراً. يَحْفَظُ اللَّهُ بِهِمْ حُجَجَهُ وَ بَيِّنَاتِهِ، حَتَّى يُودِعُوهَا نُظَرَاءَهُمْ، وَ يَزْرَعُوهَا فِي قُلُوبِ أَشْبَاهِهِمْ. هَجَمَ بِهِمُ الْعِلْمُ عَلَى حَقِيقَةِ الْبَصِيرَةِ، وَ بَاشَرُوا رُوحَ الْيَقِينِ، وَ اسْتَلاَنُوا مَا اسْتَوْعَرَهُ الْمُتْرَفُونَ، وَ أَنِسُوا بِمَا اسْتَوْحَشَ مِنْهُ الْجَاهِلُونَ. وَ صَحِبُوا الدُّنْيَا بِأَبْدَانٍ أَرْوَاحُهَا مُعَلَّقَةٌ بِالْمَحَلِّ الْأَعْلَى، أُولَئِكَ خُلَفَأُ اللَّهِ فِي أَرْضِهِ، وَ الدُّعَاةُ إِلَى دِينِهِ. آهِ آهِ شَوْقا إِلَى رُؤْيَتِهِمْ! انْصَرِفْ يَا كُمَيْلُ إِذَا شِئْتَ.

কুমায়েল ইবেন জিয়াদ আন - নাখাই থেকে বর্ণিত আছে যে ,আমিরুল মোমেনিন তার হাত ধরে তাকে কবরস্থানে নিয়ে গেলেন। যখন তিনি করবস্থানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন ? হে কুমায়েল ,এ হৃদয়গুলো হলো ধারক । এদের মধ্যে সর্বোত্তম হলো যেটা ধারণ করে রাখতে পারে। সুতরাং আমি যা বলি তা হৃদয়ে সংরক্ষণ করে রেখো।

মানুষ তিন প্রকারের - এক প্রকার হলো যারা পণ্ডিত ব্যক্তি ও ঐশী জ্ঞান সম্পন্ন ;দ্বিতীয় প্রকার হলো যারা জ্ঞানের অন্বেষণ করে তারা মুক্তিপথের পথিক ,সর্বশেষ হলো সাধারণ অপদার্থ লোক যারা প্রত্যেক আহবানকারীর পেছনে দৌড়ায় এবং বাতাসের যে কোন দিকে ঝুকে পড়ে । তারা জ্ঞানের ঔজ্জ্বল্য থেকে কোন আলোগ্রহণ করতে পারে না এবং কোন বিশ্বস্ত আশ্রয়ে আত্মরক্ষা করে না ।

হে কুমায়েল ,জ্ঞান পার্থিব সম্পদ থেকে অনেক ভালো জ্ঞান তোমাকে রক্ষা করবে: অথচ সম্পাদকে তোমার রক্ষা করতে হবে ব্যয় করলে সম্পদ কমে যায়। অথচ দান করলে জ্ঞান বহুগুণ বেড়ে যায় এবং সম্পদের পরিণাম মৃত্যু যেহেতু সম্পদ বিনষ্ট হয়। হে কুমায়েল ,জ্ঞান হলো বিশ্বাস যা আমল করা হয় । এর দ্বারা মানুষ জীবদ্দশায় আনুগত্য অর্জন কবে এবং মৃত্যুর পরে সুখ্যাতি থেকে যায়। জ্ঞান হলো শাসক আর সম্পদ হলো শাসিত।

হে কুমায়েল ,যারা সম্পদ স্তুপীকৃত করে তারা মৃত যদিও তারা সর্বসমক্ষে জীবিত আবার যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে। যতদিন পৃথিবী থাকবে। ততদিন তারা থাকবে । তাদের দেহ পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাদের আকৃতি হৃদয়ে স্থাপিত থাকবে । আমার বক্ষের দিকে তাকাও এখানে জ্ঞান স্তুপীকৃত হয়ে আছে ।

আমি আশা করি আমার এ জ্ঞান বনহকারী কাউকে পেয়ে যাবো । হ্যা ,আমি এ রকম একজনকে পেয়েছিলাম। কিন্তু সে এমন ব্যক্তি ছিল যাকে বিশ্বাস করা যায় না । সে দুনিয়ার লোভে দ্বীনকে ব্যবহার করবে এবং তার ওপর আল্লাহর আনুকূল্যের প্রভাবে সে মানুষের ওপর উদ্ধত শাসক হবে এবং আল্লাহর ওজর দেখিয়ে সে ভক্তদের ওপর প্রভু হয়ে বসবে অথবা সে এমন ব্যক্তি হবে যে সত্যের শ্রোতাদের অনুগত হবে কিন্তু তার বক্ষে কোন বুদ্ধিমত্তা নেই। প্রথম সংশয়েই সে তার হৃদয়ে আশঙ্কা স্থান দেবে সুতরাং এটা কী ওটা কোনটাই আশানুরূপ ভালো নয়। হয় মানুষ আনন্দের জন্য ব্যগ্র থাকবে ,সহজেই কামনা - বাসনা দ্বারা পরিচালিত হবে ,না হয় সম্পদ সংগ্রহ ও জমা করতে আকুলভাবে চেষ্টা করবে। তাদের কারো দ্বীনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই। এদের উদাহরণ হলো ছাড়া - পাওয়া গরুর পালের মতো এভাবেই জ্ঞান তার বাহকের সাথে মরে যায় ।

হে আমার আল্লাহ! হ্যা ,পৃথিবী যেন কখনো এমন লোক শূন্য হয়ে না যায় যারা আল্লাহর ওজর প্রকাশ্যে অথবা গোপনে রক্ষণাবেক্ষণ করে অথবা যারা সব সময় শঙ্কিত থাকে। এ জন্য যে ,আল্লাহর গুপ্ত ওজর ও প্রমাণ যেন প্রতিহত না হয়ে পড়ে। এমন লোকের সংখ্যা আতি অল্প কিন্তু আল্লাহর কাছে তারা মহামর্যাদাশালী তাদের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর ওজর ও প্রমাণ রক্ষা করে থাকেন। তারা তাদের মতো কাউকে বিশ্বাস করে এবং তাদের মতো কারো হ্রদয়ে বীজ বপন করে থাকেন । জ্ঞান তাদেরকে প্রকৃত বোধগম্যতা এনে দেয় । সুতরাং তারা দৃঢ় - প্রত্যয় সম্পন্ন আত্মার সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে । অন্যরা যেটাকে কঠিন বলে মনে করে তা তারা সহজ বলে মনে করে । অজ্ঞদের কাছে যা অদ্ভুত মনে হয় তারা তা সোহাগ ভরে গ্রহণ করে । তাদের দেহটা শুধু পৃথিবীতে বিরাজ করে। কিন্তু তাদের আত্মা অনেক উর্দ্ধে থাকে । আল্লাহর জমিনে তারা আল্লাহর প্রতিনিধি এবং তাঁর দ্বীনের প্রতি আহ্বানকারীঃ আহা! তাদের দেখার জন্য আমার কত আকুল আকাঙ্খা। হে কুমায়েল ,এখন তুমি যেখানে ইচ্ছা চলে যেতে পার।

____________________

(১) কুমায়েল ইবনে জিয়াদ আন - নাখাই ইমামতের গুপ্তভেদ সম্পর্কে জানতেন এবং তিনি আমিরুল মোমেনিনের অন্যতম প্রধান অনুচর ছিলেন। জ্ঞানে ও সাফল্যে তার মর্যাদা ছিল সমুন্নত এবং মিতাচারিতা ও খোদাভীরুতায় তার স্থান ছিল প্রধান। তিনি কিছু দিনের জন্য হিতে আমিরুল মোমেনিনের গভর্ণর ছিলেন। হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ আছ - ছাকাকী ৮৩ হিজরিতে ৯০ বৎসর বয়সে তাকে হত্যা করে। কুফার শহরতলীতে তাকে দাফন করা হয়েছিল।

উক্তি নং - ১৪৮

وَ قَالَعليه‌السلام : الْمَرْءُ مَخْبُوءٌ تَحْتَ لِسَانِهِ.

মানুষ তার জিহবার নিচে গুপ্ত থাকে অর্থাৎ কথা দ্বারা মানুষ চেনা যায়।

উক্তি নং - ১৪৯

وَ قَالَعليه‌السلام : هَلَكَ امْرُؤٌ لَمْ يَعْرِفْ قَدْرَهُ.

যে নিজের মূল্য জানে না সে রসাতলে যায়।

উক্তি নং - ১৫০

لاَ تَكُنْ مِمَّنْ يَرْجُو الْآخِرَةَ بِغَيْرِ عَمَلٍ، وَ يُرَجِّي التَّوْبَةَ بِطُولِ الْأَمَلِ، يَقُولُ فِي الدُّنْيَا بِقَوْلِ الزَّاهِدِينَ وَ يَعْمَلُ فِيهَا بِعَمَلِ الرَّاغِبِينَ، إِنْ أُعْطِيَ مِنْهَا لَمْ يَشْبَعْ وَ إِنْ مُنِعَ مِنْهَا لَمْ يَقْنَعْ، يَعْجِزُ عَنْ شُكْرِ مَا أُوتِيَ وَ يَبْتَغِي الزِّيَادَةَ فِيمَا بَقِيَ، يَنْهَى وَ لاَ يَنْتَهِي، وَ يَأْمُرُ بِمَا لاَ يَأْتِي، يُحِبُّ الصَّالِحِينَ وَ لاَ يَعْمَلُ عَمَلَهُمْ، وَ يُبْغِضُ الْمُذْنِبِينَ وَ هُوَ أَحَدُهُمْ؛ يَكْرَهُ الْمَوْتَ لِكَثْرَةِ ذُنُوبِهِ، وَ يُقِيمُ عَلَى مَا يَكْرَهُ الْمَوْتَ لَهُ، إِنْ سَقِمَ ظَلَّ نَادِما وَ إِنْ صَحَّ أَمِنَ لاَهِياً؛ يُعْجِبُ بِنَفْسِهِ إِذَا عُوفِيَ وَ يَقْنَطُ إِذَا ابْتُلِيَ، إِنْ أَصَابَهُ بَلاَءٌ دَعَا مُضْطَرّاً، وَ إِنْ نَالَهُ رَخَأٌ أَعْرَضَ مُغْتَرّا، تَغْلِبُهُ نَفْسُهُ عَلَى مَا يَظُنُّ وَ لاَ يَغْلِبُهَا عَلَى مَا يَسْتَيْقِنُ، يَخَافُ عَلَى غَيْرِهِ بِأَدْنَى مِنْ ذَنْبِهِ، وَ يَرْجُو لِنَفْسِهِ بِأَكْثَرَ مِنْ عَمَلِهِ، إِنِ اسْتَغْنَى بَطِرَ وَ فُتِنَ، وَ إِنِ افْتَقَرَ قَنَطَ وَ وَهَنَ، يُقَصِّرُ إِذَا عَمِلَ، وَ يُبَالِغُ إِذَا سَأَلَ، إِنْ عَرَضَتْ لَهُ شَهْوَةٌ أَسْلَفَ الْمَعْصِيَةَ، وَ سَوَّفَ التَّوْبَةَ، وَ إِنْ عَرَتْهُ مِحْنَةٌ انْفَرَجَ عَنْ شَرَائِطِ الْمِلَّةِ. يَصِفُ الْعِبْرَةَ وَ لاَ يَعْتَبِرُ، وَ يُبَالِغُ فِي الْمَوْعِظَةِ وَ لاَ يَتَّعِظُ، فَهُوَ بِالْقَوْلِ مُدِلُّ، وَ مِنَ الْعَمَلِ مُقِلُّ، يُنَافِسُ فِيمَا يَفْنَى، وَ يُسَامِحُ فِيمَا يَبْقَى. يَرَى الْغُنْمَ مَغْرَماً؛ وَ الْغُرْمَ مَغْنَماً؛ يَخْشَى الْمَوْتَ وَ لاَ يُبَادِرُ الْفَوْتَ؛ يَسْتَعْظِمُ مِنْ مَعْصِيَةِ غَيْرِهِ مَا يَسْتَقِلُّ أَكْثَرَ مِنْهُ مِنْ نَفْسِهِ، وَ يَسْتَكْثِرُ مِنْ طَاعَتِهِ مَا يَحْقِرُهُ مِنْ طَاعَةِ غَيْرِهِ، فَهُوَ عَلَى النَّاسِ طَاعِنٌ، وَ لِنَفْسِهِ مُدَاهِنٌ؛ اللَّغْوُ مَعَ الْأَغْنِيَأِ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنَ الذِّكْرِ مَعَ الْفُقَرَأِ، يَحْكُمُ عَلَى غَيْرِهِ لِنَفْسِهِ، وَ لاَ يَحْكُمُ عَلَيْهَا لِغَيْرِهِ؛ يُرْشِدُ غَيْرَهُ وَ يُغْوِي نَفْسَهُ، فَهُوَ يُطَاعُ وَ يَعْصِي، وَ يَسْتَوْفِي وَ لاَ يُوفِي، وَ يَخْشَى الْخَلْقَ فِي غَيْرِ رَبِّهِ، وَ لاَ يَخْشَى رَبَّهُ فِي خَلْقِهِ.

একজন লোক আমিরুল মোমেনিনকে ধর্মোপদেশ দেয়ার অনুরোধ করলে তিনি বললেনঃ কখনো সে লোকের মতো হয়ো না যে আমল ছাড়া পরকালের পরম সুখের আশা করে ,আশা - আকাঙ্খা দীর্ঘায়িত করে ,তওবা করতে বিলম্ব করে এবং দরবেশের মতো কথা বলে কিন্তু দুনিয়া লোভীর মতো কাজ করে । সে অল্পতে তুষ্ট ও তৃপ্ত হয় না ,তাকে যা দেয়া হয়েছে। সেজন্য শুকারিয়া আদায় করে না । সে অন্যকে বঞ্চিত করে। দুনিয়ার সম্পদ বৃদ্ধি করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে । সে যা করে না অন্যদের তা করার জন্য আদেশ করে । সে ধার্মিকগণকে ভালোবাসে কিন্তু নিজে তাদের মতো হয় না । সে পাপীদেরকে ঘৃণা করে অথচ নিজেই তাদের মধ্যে একজন। পাপাধিক্য হেতু সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে ,কিন্তু যে জন্য সে মৃত্যু ভয়ে ভীত সে বিষয়ে অমনোযোগী । সে পীড়িত হলো লজ্জাবোধ করে ,সুস্থ থাকলে নিরাপদ অনুভব করে এবং আনন্দ - উৎসবে সবকিছু ভুলে থাকে । যখন সে পীড়া থেকে আরোগ্য লাভ করে তখন নিজের সম্পর্কে দাম্ভিক হয়ে পড়ে আবার যখন দুর্দশাগ্রস্থ হয় তখন নিরাশ হয়ে পড়ে। বিপদ আপতিত হলে সে হতভম্ভের মতো প্রার্থনা করে ,আবার বিপদ কেটে গেলে সে মুখ ফিরিয়ে নেয় । তার হৃদয় কাল্পনিক জিনিস দ্বারা পরাভূত হয় । কোন কিছুতেই তার হৃদয়ে দৃঢ় প্রত্যয় থাকে না । অন্যদের ছোটখাট পাপের জন্য সে দুশ্চিন্তা করে। কিন্তু নিজের বেলায় কৃতকর্মের চেয়ে অধিক পুরস্কার আশা করে। যদি সে সম্পদশালী হয়ে পড়ে। তবে সে আত্ম - কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে এবং পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে । যদি সে দরিদ্র হয়ে পড়ে। তবে সে দুর্বল ও হতাশ হয়ে পড়ে। কল্যাণকর কাজে সে স্বল্প সময় ব্যয় করে। অথচ যাচনা করতে সে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে। কামনা - বাসনা যখন তাকে ঘিরে ধরে তখন সে তড়িঘড়ি করে পাপে লিপ্ত হয়। অথচ তওবা করতে বিলম্ব ঘটায় । তার ওপর দুর্দশা নিপতিত হলে সে ইসলামের উন্মার সকল নিয়ম - কানুন অমান্য করে । সে উপদেশ নেয়ার মতো ঘটনাবলী বর্ণনা করে। কিন্তু নিজে উপদেশ গ্রহণ করে না । সে অন্যদের উপদেশ দিয়ে বেড়ায় কিন্তু নিজে তা মান্য করে না । সে বাগাড়ম্বরে পটু কিন্তু আমলে খাট ;যা ধ্বংস হয়ে যাবে এমন জিনিসের জন্য সে আকাঙ্খী কিন্তু যা চিরস্থায়ী তাতে উদাসীন। সে লাভকে লোকসান আর লোকসানকে লাভ মনে করে সে মৃত্যুকে ভয় করে। কিন্তু মৃত্যুর বিরুদ্ধে তার করণীয় কিছু নেই ।

সে অন্যের প্রাপকে অনেক বড় করে দেখে। অথচ নিজের পাপকে অতিক্ষুদ্র করে দেখে । সে একটু খানিক আল্লাহর বাধ্যতা দেখালে মনে করে অনেক করেছে কিন্তু অন্য কেউ অনেক আনুগত্য প্রকাশ করলেও সে তা অতিক্ষুদ্র মনে করে। এভাবে সে অন্যকে ভর্ৎসনা করে নিজের প্রতি তোষামুদে হয় । সে ধনশালীদের সঙ্গ পেতে ভালোবাসে সে দরিদ্রদের সাথে আল্লাহর জেকের করতেও পছন্দ করে না । সে নিজের স্বার্থে অন্যের বিরুদ্ধে রায় দেয়। কিন্তু অন্যের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিজের বিরুদ্ধে রায় দেয় না । সে অন্যকে হেদায়েত করে কিন্তু নিজকে গোমরাহিতে ডুবিয়ে রাখে । অন্যরা তাকে মান্য করে কিন্তু সে আল্লাহকে অমান্য করে । সে ব্যগ্র থাকে যাতে অন্যরা তার প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করে কিন্তু অন্যদের প্রতি তার দায়িত্ব সে পালন করে না । সে লোক ভয়ে আমল করে কিন্তু তার কাজ কর্মে সে প্রভুকে ভয় করে না ।

উক্তি নং - ১৫১

وَ قَالَعليه‌السلام : كُلِّ امْرِئٍ عَاقِبَةٌ حُلْوَةٌ أَوْ مُرَّةٌ.

প্রত্যেক মানুষই জীবনের অবসানের সাক্ষাৎ লাভ করবে তা সুমিষ্টই হোক আর তিক্তই হোক।

উক্তি নং - ১৫২

وَ قَالَعليه‌السلام : لِكُلِّ مُقْبِلٍ إِدْبَارٌ، وَ مَا أَدْبَرَ كَأَنْ لَمْ يَكُنْ.

প্রত্যেক আগন্তুককে ফিরে যেতে হবে এবং ফিরে যাবার পর মনে হবে যেন সে কখনো ছিল না।

উক্তি নং - ১৫৩

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ يَعْدَمُ الصَّبُورُ الظَّفَرَ وَ إِنْ طَالَ بِهِ الزَّمَانُ.

ধৈর্যশীলগণ কখনো অকৃতকার্য হয় না ;হতে পারে তাতে দীর্ঘ সময় লাগবে।

উক্তি নং - ১৫৪

وَ قَالَعليه‌السلام : الرَّاضِي بِفِعْلِ قَوْمٍ كَالدَّاخِلِ فِيهِ مَعَهُمْ. وَ عَلَى كُلِّ دَاخِلٍ فِي بَاطِلٍ إِثْمَانِ: إِثْمُ الْعَمَلِ بِهِ، وَ إِثْمُ الرِّضَا بِهِ.

কেউ যদি কোন দলের কর্মকান্ডে সম্মতি জানায় তবে সে যেন ওই দলের সাথে যোগদান করলো এবং যে কেউ অন্যায়ে যোগদান করে সে দুটি পাপ করে ;একটি হলো নিজের পাপ আর অপরটি হলো অন্যের পাপে সম্মতি জ্ঞাপন।

উক্তি নং - ১৫৫

وَ قَالَعليه‌السلام : اعْتَصِمُوا (استعصموا) بِالذِّمَمِ فِي أَوْتَادِهَا.

চুক্তি মেনে চলো এবং দৃঢ়প্রত্যয় সম্পন্ন লোকের মতো তা পরিপূরণ করতে যত্নবান হয়ো।

উক্তি নং - ১৫৬

وَ قَالَعليه‌السلام : عَلَيْكُمْ بِطَاعَةِ مَنْ لاَ تُعْذَرُونَ بِجَهَالَتِهِ.

যাদের প্রতি তোমরা অজ্ঞতার ওজর দেখাতে পারবে না। তাদের অনুগত থাকার দায় দায়িত্ব তোমাদের ওপর বার্তাবে

____________________

১। আল্লাহ তার ন্যায় বিচার ও দয়ার কারণে মানুষকে দ্বীনের পথে পরিচালনার জন্যই নবীগণকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। একইভাবে তিনি ইমামত প্রতিষ্ঠিত করেছেন যাতে তাঁরা দ্বীনকে পরিবর্তন ও বেদাত থেকে রক্ষা করেন এবং যাতে করে প্রত্যেক ইমাম তাঁর আমলে ঐশী বিধানকে ব্যক্তিগত কামনাবাসনা ও স্বার্থের জন্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারেন এবং ইসলামের সঠিক দিকদর্শন যেন তারা দিতে পারে। তারা যে ভাবে জানা দরকার সেভাবে যেন দ্বীনের মৌলিক উদ্ভাবক রাসূলকে (সা.) জানতে পারে ও ইমামকে জানাতে পারে। যে তার সময়কার ইমাম সম্পর্কে অনবহিত থাকবে তাকে ক্ষমা করা হবে না। ইমামত ইস্যুটা এত অধিক দলিল পত্র দ্বারা প্রমাণিত যে ,কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তিরই ইমামতকে অস্বীকার করার কোন পথ নেই। রাসূল করিম (সা.) বলেছেনঃ

যে ব্যক্তি নিজের সময়কালের ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করে সে প্রাক - ইসলামি জাহিলিয়া যুগের মৃত্যুর মতোই মরলো । (তাফতাজানী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২৭৫ ;হনাফী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৪৫৭ ,৫০৯) ।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর ,মুয়াবিয়া ইবেন আবি সুফিয়ান ও আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে যে ,রাসূল (সা.) বলেছেনঃ

নিজের জমানার ইমামকে না চিনে এবং তার কাছে বায়াত গ্রহণ না করে যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে সে জাহিলিয়া যুগের লোকের মতোই মরলো। আর যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে বায়াত ভঙ্গ করবে। সে শেষ বিচারের দিনে আল্লাহর সম্মুখে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন যুক্তি দাঁড় করাতে পারবে না । (তায়ালিসী ,পৃঃ ২৫৯: নিশাবুরী ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ২২ ,হাম্বল ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৯৬. শাফী ,৮ম খণ্ড ,পৃঃ ১৫৬: কাছীর ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৫১৭ শাফী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ২১৮ ,২২৪ ,২২৫) ।

ইবনে আবিল হাদীদও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন যে ,যার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অনবহিত হবার কারণে কাউকে ক্ষমা করা হবে না। তিনি হলেন আমিরুল মোমেনিন। তিনিও স্বীকার করেছেন যে ,তাকে মান্য করা সকলের জন্য অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব। তিনি আরো বলেন যে ,যে ব্যক্তি ইমামতে বিশ্বাস করবে না। সে কখনো নির্বাণ প্রাপ্ত হবে না। তিনি লিখেছেনঃ

ইমাম হিসাবে আলীর অবস্থান সম্পর্কে যে ব্যক্তি অনবহিত এবং যে ইমামের সত্যতা অস্বীকার করে সে জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে । তার সালাত ও সিয়াম তার কোন উপকারে আসবে না কারণ এ বিষয়ের জ্ঞান হলো মৌলিক বিষয় যার ওপর দ্বীনের ভিত্তি নির্ভর করে । যা হোক ,যারা জামানার ইমামকে অস্বীকার করে তাদেরকে আমরা কাফের বলতে চাই না ,তবে তারা পাপী ,সীমা লঙ্ঘনকারী ও ধর্মত্যাগী (হাদীদ ,১৮ শ খণ্ড , পৃ.৩৭৮)

উক্তি নং - ১৫৭

وَ قَالَعليه‌السلام : قَدْ بُصِّرْتُمْ إِنْ أَبْصَرْتُمْ وَ قَدْ هُدِيتُمْ إِنِ اهْتَدَيْتُمْ، وَ أُسْمِعْتُمْ إِنِ اسْتَمَعْتُمْ.

নিশ্চয়ই ,তোমরা দেখতে পাবে যদি তোমরা দেখার জন্য যত্নবান হও । নিশ্চয়ই ,তোমরা সৎপথের সন্ধান পাবে যদি তোমরা হেদায়েত গ্রহণ কর । নিশ্চয়ই ,তোমরা শুনতে পাবে যদি তোমাদের কানাকে শোনার জন্য আগ্রাহান্বিত কর ।

উক্তি নং - ১৫৮

وَ قَالَعليه‌السلام : عَاتِبْ أَخَاكَ بِالْإِحْسَانِ إِلَيْهِ، وَ ارْدُدْ شَرَّهُ بِالْإِنْعَامِ عَلَيْهِ.

তোমার সদাচরণ দ্বারা তোমার সাথীদের সতর্ক কর এবং তাদের প্রতি আনুকূল্য দেখিয়ে তাদের মন্দ রীভূত কর।

___________________

১। যদি মন্দের পরিবর্তে মন্দ করা হয় ,গালির পরিবর্তে গালি দেয়া হয় তবে শক্রতা ও বিবাদের দরজাই খুলে দেয়া হয়। কিন্তু একজন মন্দ স্বভাবের লোকের প্রতি যদি দয়া দেখানো হয় এবং যদি ভদ্রোচিত ব্যবহার করা হয় তবে সেও তার আচরণ পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে। একদিন ইমাম হাসান মদিনার একটি বাজারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় একজন সিরিয়ান তার মহান ব্যক্তিত্ব দেখে তার পরিচয় জানতে চাইলে লোকেরা বললো , ইনি হাসান ইবনে আলী। ” এতে লোকটি উত্তেজিত হয়ে গেল এবং তার কাছে এসে তাকে গালাগালি করতে লাগলো। ইমাম শান্তভাবে তার গালমন্দ শুনলেন। যখন সে থামলো তখন ইমাম বললেন মনে হয় তুমি এখানে একজন আগন্তুক। সে স্বীকার করলো। তখন ইমাম বললেন তাহলে তুমি আমার সঙ্গে আস এবং আমার সঙ্গেই থাক। তোমার কোন অভাব থাকলে আমি তা পূর্ণ করে দেব। আর যদি তুমি আর্থিক সহায়তা চাও তাও আমি পূরণ করে দেব। লোকটি এ দয়াদ্র কথা ও চমৎকার ব্যবহার দেখে ভীষণ লজ্জিত হয়ে গেল এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলো। এরপর থেকে সে লোকটি জীবনে ইমামের চেয়ে বেশি শ্রদ্ধাবোধ আর কারো জন্য করেনি (মুবাররদ ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২৩৫ ;২য় খণ্ড পৃঃ ৬৩ ;শাফী ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ৫২: আশরাফ ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১১ - ১২ ;শাহরাস শুব ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৯ ;মজলিসী ,৪৩তম খণ্ড ,পৃঃ ৩৪৪) ।

উক্তি নং - ১৫৯

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ وَضَعَ نَفْسَهُ مَوَاضِعَ التُّهَمَةِ فَلاَ يَلُومَنَّ مَنْ أَسَاءَ بِهِ الظَّنَّ.

যে ব্যক্তি নিজকে বদনামপূর্ণ অবস্থায় রাখে তার সম্পর্কে মানুষের মন্দ ধারণা হলে সেজন্য কাউকে দায়ী করা যায় না ।

উক্তি নং - ১৬০

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ مَلَكَ اسْتَأْثَرَ.

যে কর্তৃত্বের অধিকারী হয়। সেই সাধারণত পক্ষপাতিত্ব করে।