নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা0%

নাহজ আল-বালাঘা লেখক:
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ: হযরত আলী (আ.)

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক: আশ-শরীফ আর-রাজী
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ:

ভিজিট: 126238
ডাউনলোড: 8027

নাহজ আল-বালাঘা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 48 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 126238 / ডাউনলোড: 8027
সাইজ সাইজ সাইজ
নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বাংলা

রাসূলের (সা.) ‘জ্ঞান নগরীর দ্বার’ আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব ছিলেন তত্ত্বজ্ঞানী, দার্শনিক, সুলেখক ও বাগ্মী। আলঙ্কারিক শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ও নৈপুন্য অসাধারণ। তিনি নবুওয়াতী জ্ঞান ভান্ডার হতে সরাসরি জ্ঞান আহরণ করেন এবং সাহাবাদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী পন্ডিত ছিলেন। এতে কারো দ্বিমত নেই। আরবী কাব্যে ও সাহিত্যে তার অনন্যসাধারণ অবদান ছিল। খেলাফত পরিচালনা কালে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ (খোৎবা) দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকগণকে প্রশাসনিক বিষয়ে উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে পত্র লিখেছিলেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মানুষের অনেক প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছিলেন। তার এসব বাণী কেউকেউ লিখে রেখেছিল, কেউ কেউ মনে রেখেছিল, আবার কেউ কেউ তাদের লিখিত পুস্তকে উদ্ধৃত করেছিল। মোটকথা তার অমূল্য বাণীসমূহ মানুষের কাছে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ছিল।

আশ-শরীফ আর-রাজী আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিবের ভাষণসমূহ (খোৎবা), পত্রাবলী, নির্দেশাবলী ও উক্তিসমূহ সংগ্রহ করে “নাহজ আল-বালঘা” নামক গ্রন্থটি সঙ্কলন করেন।

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ২৪১ - ২৬০

উক্তি নং - ২৪১

وَ قَالَعليه‌السلام : الْحَجَرُ الْغَصْبُ فِي الدَّارِ رَهْنٌ عَلَى خَرَابِها.

অসৎ উপায়ে প্রাপ্ত একটি পাথরও যদি কোন ঘরে থাকে। তবে তা সে ঘরের ধ্বংস নিশ্চিতভাবে ডেকে আনবে।

উক্তি নং - ২৪২

وَ قَالَعليه‌السلام : يَوْمُ الْمَظْلُومِ عَلَى الظَّالِمِ أَشَدُّ مِنْ يَوْمِ الظَّالِمِ عَلَى الْمَظْلُومِ.

জালেমের ওপর মজলুমের দিন মজলুমের ওপর জালেমের দিন অপেক্ষা অধিক কঠোর হবে।

উক্তি নং - ২৪৩

وَ قَالَعليه‌السلام : اتَّقِ اللَّهَ بَعْضَ التُّقَى وَ إِنْ قَلَّ، وَ اجْعَلْ بَيْنَكَ وَ بَيْنَ اللَّهِ سِتْرا وَ إِنْ رَقَّ.

আল্লাহকে কিছু না কিছু ভয় করো। যদিও তা ক্ষুদ্র হয় এবং আল্লাহ ও তোমার মাঝে কিছুটা পর্দা রেখো। যদিও তা পাতলা হয় ।

উক্তি নং - ২৪৪

وَ قَالَعليه‌السلام : إِذَا ازْدَحَمَ الْجَوَابُ خَفِيَ الصَّوَابُ.

এক প্রশ্নের বিভিন্নমুখী জবাব দিতে গেলে আসল পয়েন্ট থেকে যায়।

উক্তি নং - ২৪৫

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ لِلَّهِ تَعالى فِي كُلِّ نِعْمَةٍ حَقّاً، فَمَنْ أَدَّاهُ زَادَهُ مِنْهَا، وَ مَنْ قَصَّرَ فِيهِ خَاطَرَ بِزَوَالِ نِعْمَتِهِ.

নিশ্চয়ই প্রত্যেক আশীর্বাদে আল্লাহর অধিকার রয়েছে। যদি কেউ সে অধিকার পূরণ করে তবে আল্লাহ তাঁর নেয়ামত বাড়িয়ে দেন। কেউ যদি আল্লাহর অধিকার পালন না করে তবে সে নেয়ামত হারাবার বিপজ্জনক অবস্থায় পরতে পারে।

উক্তি নং - ২৪৬

وَ قَالَعليه‌السلام : إِذَا كَثُرَتِ الْمَقْدِرَةُ قَلَّتْ الشَّهْوَةُ.

যখন সামর্থ্য বেড়ে যায়। তখন আকাঙ্খা কমে যায়।

উক্তি নং - ২৪৭

وَ قَالَعليه‌السلام : احْذَرُوا نِفَارَ النِّعَمِ فَمَا كُلُّ شَارِدٍ بِمَرْدُودٍ.

আল্লাহর নেয়ামত যাতে ফসকে না যায় সে দিকে সতর্ক প্রহরা থাকা উচিত কারণ এমন অনেক জিনিস আছে যা হারালে আর ফিরে পাওয়া যায় না।

উক্তি নং - ২৪৮

وَ قَالَعليه‌السلام : الْكَرَمُ أَعْطَفُ مِنَ الرَّحِمِ.

ঔদার্য মানুষকে এমনভাবে কল্যাণের দিকে নিয়ে যায় যা জ্ঞাতিত্বের প্রতি সম্মানবোধও দিতে পারে না ।

উক্তি নং - ২৪৯

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ ظَنَّ بِكَ خَيْرا فَصَدِّقْ ظَنَّهُ.

তোমার সম্পর্কে যদি কারো সুধারণা থাকে। তবে তা সত্যে পরিণত করার চেষ্টা করো।

উক্তি নং - ২৫০

وَ قَالَعليه‌السلام : أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ مَا أَكْرَهْتَ نَفْسَكَ عَلَيْهِ.

সবচেয়ে উত্তম আমল তা যা করার জন্য তোমার নিজকে বল প্রয়োগে বাধ্য করতে হয়।

উক্তি নং - ২৫১

وَ قَالَعليه‌السلام : عَرَفْتُ اللَّهَ سبحانه بِفَسْخِ الْعَزَائِمِ، وَ حَلِّ الْعُقُودِ، وَ نَقْضِ الْهِمَمِ.

সংকল্প ভঙ্গ করে , নিয়্যত পরিবর্তন করে এবং সাহস হারিয়ে আমি মহিমান্বিত আল্লাহকে জানতে পেরেছিলাম।

উক্তি নং - ২৫২

وَ قَالَعليه‌السلام : مَرَارَةُ الدُّنْيَا حَلاَوَةُ الْآخِرَةِ، وَ حَلاَوَةُ الدُّنْيَا مَرَارَةُ الْآخِرَةِ.

এ দুনিয়ার তিক্ততাই পরকালের মিষ্টতা এবং দুনিয়ার মিষ্টতা পরকালের তিক্ততা।

উক্তি নং - ২৫৩

وَ قَالَعليه‌السلام : فَرَضَ اللَّهُ الْإِيمَانَ تَطْهِيرا مِنَ الشِّرْكِ، وَ الصَّلاَةَ تَنْزِيها عَنِ الْكِبْرِ، وَ الزَّكَاةَ تَسْبِيبا لِلرِّزْقِ، وَ الصِّيَامَ ابْتِلاَءً لِإِخْلاَصِ الْخَلْقِ، وَ الْحَجَّ تَقْوِيَةً لِلدِّينِ، وَ الْجِهَادَ عِزّا لِلْإِسْلاَمِ، وَ الْأَمْرَ بِالْمَعْرُوفِ مَصْلَحَةً لِلْعَوَامِّ، وَ النَّهْيَ عَنِ الْمُنْكَرِ رَدْعا لِلسُّفَهَأِ، وَ صِلَةَ الرَّحِمِ مَنْمَاةً لِلْعَدَدِ، وَ الْقِصَاصَ حَقْنا لِلدِّمَأِ، وَ إِقَامَةَ الْحُدُودِ إِعْظَاما لِلْمَحَارِمِ، وَ تَرْكَ شُرْبِ الْخَمْرِ تَحْصِينا لِلْعَقْلِ، وَ مُجَانَبَةَ السَّرِقَةِ إِيجَابا لِلْعِفَّةِ، وَ تَرْكَ الزِّنَا تَحْصِينا لِلنَّسَبِ، وَ تَرْكَ اللِّوَاطِ تَكْثِيرا لِلنَّسْلِ، وَ الشَّهَادَاتِ اسْتِظْهَارا عَلَى الْمُجَاحَدَاتِ، وَ تَرْكَ الْكَذِبِ تَشْرِيفا لِلصِّدْق، وَ السَّلاَمَ أَمَانا مِنَ الْمَخَاوِفِ، وَ الْأَمَانَةَ نِظَاما لِلْأُمَّةِ، وَ الطَّاعَةَ تَعْظِيما لِلْإِمَامَةِ.

আল্লাহ বহু - ঈশ্বরবাদ থেকে পবিত্র করার জন্য ইমান প্রতিষ্ঠিত করেছেন , আত্মাশ্লাঘা থেকে পবিত্র থাকার জন্য সালাত ; জীবিকার উপায় হিসাবে যাকাত ; মানুষের পরীক্ষা হিসাবে সিয়াম ; দ্বীনের খুঁটি হিসাবে হজ্ব ; ইসলামের সম্মান হিসাবে জিহাদ , সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য আমরা বিল মা রুফ ; ফেতনা - ফ্যাসাদ নিয়ন্ত্রণের জন্য নাহি আনিল মুনকার ; সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য জ্ঞাতিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ; রক্তপাত বন্ধ করার জন্য কিসাস ; হারামের গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা ; বুদ্ধিমত্তা রক্ষা করার জন্য মদ্যপান নিষিদ্ধ ; সততা জাগিয়ে দেয়ার জন্য চৌর্য বৃত্তি বাতিল ; মনোরম অবস্থা বজায় রাখার জন্য ব্যভিচার নিষিদ্ধ ; বংশবৃদ্ধির জন্য সমকামিতা নিষিদ্ধ ; কোন বিষয় প্রমাণ করার জন্য সাক্ষী ; সত্যের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মিথ্যা প্রতিহত ; বিপজ্জনক অবস্থা থেকে রক্ষা করার জন্য শান্তি রক্ষা ; উম্মাহর শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ইমামত এবং ইমামতের প্রতি সম্মান হিসাবে ইমামদের মান্য করা নির্ধারণ করেছেন।

___________________

১ । শরিয়তের আদেশের কতিপয় উদ্দেশ্য ও কল্যাণকর বিষয়ে বর্ণনা করার আগে আমিরুল মোমেনিন ইমানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন। কারণ ইমান হলো দ্বীনের ভিত্তি এবং ইমান ব্যতীত দ্বীনের বিধান ও জুরিসপ্রুডেন্স এর কোন প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে না। ইমান হলো সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব এবং তাঁর ঐকল্যের স্বীকৃতি । যখন মানুষের মনে ইমান বদ্ধমুল হয় তখন সে অন্যকোন সত্তাব কাছে মাথা নোয়াবে না এবং তখন কোন শক্তি বা কর্তৃত্ব তাকে আর ভয় দেখিয়ে বাগে আনতে পারে না। বরং সকল বন্ধন থেকে মানসিকভাবে মুক্ত হয়ে সে আল্লাহর প্রতি অনুরক্ত হতে পারে এবং ঐকল্যের প্রতি এহেন আনুগত্য তাকে বহু - ঈশ্বরবাদের অপবিত্রতা থেকে রক্ষা করে ।

সকল ইবাদতের মধ্যে সালাত হলো সর্বোত্তম। দাঁড়ানো , বসা , বক্র হওয়া ও সেজদার সমন্বয়ে হলো সালাত। এটা অঙ্গগুলোর আত্মগর্ব , আত্মশ্লাঘা ও অহমবোধ বিনষ্ট করে নম্রতা ও বিনয়বনতা সৃষ্টি করে। কারণ উদ্ধত কর্মকান্ড গর্ব ও ঔদ্ধত্য সৃষ্টি করে এবং বিনয় মিশ্রিত কর্মকান্ড মনে নম্রতা ও বিনয়াবনতা সৃষ্টি করে। এসব অভ্যাস করে একজন লোক স্বাভাবিকভাবেই বিনম্র স্বভাবের হয়ে উঠে। এভাবে ঔদ্ধত আরব জাতি — যারা উটে চড়ার সময় ছড়ি পড়ে গেলে বক্র হয়ে তা তুলতো না — তারা তাদের মুখ ও কপাল মাটিতে ঠেকাতে বাধ্য হলো।

জাকাত হলো — কোন সমর্থ লোক তার অর্থ - সম্পদ থেকে বার্ষিক একটা নির্ধারিত অংশ দুস্থ ও দরিদ্রদের দেয়া যা ইসলাম বাধ্যতামূলক করেছে। এর উদ্দেশ্য হলো সমাজে যেন কোন লোক দারিদ্রের প্রভাবে নিরাপত্তাহীন না থাকে। এর আরো একটি উদ্দেশ্য হলো সম্পদ যেন ব্যক্তি বিশেষের হাতে কুক্ষিগত না থাকে।

সিয়াম হলো এমন ইবাদত যাতে রিয়ার বিন্দু বিসর্গও নেই। পবিত্র নিয়্যত ছাড়া এতে অন্য কোন উদ্দেশ্যও নেই। ফলত , একাকী অবস্থায় কেউ দেখার না থাকলেও ক্ষুধা এবং তৃষ্ণায় কাতর হয়েও খাবার বা পান করার চেষ্টা কেউ করে না। শুধুমাত্র বিবেকের পবিত্রতা তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটাই সিয়ামের মহান আদর্শ যে , এটা ইচ্ছার পবিত্রতা কার্যে পরিণত করে।

হজের উদ্দেশ্য হলো — পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে মুসলিমগণ একত্রিত হয়ে ইসলামের মহত্ত্ব প্রকাশ করা , ইবাদতের আগ্রহ আবেগ নবায়ন করা এবং উম্মাহর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বৃদ্ধি করা।

জিহাদের উদ্দেশ্য হলো — সর্বশক্তি দিয়ে ইসলাম বিরোধী শক্তির মোকাবেলা করা যাতে ইসলাম প্রগতি ও স্থিতিশীল অবস্থা লাভ করতে পারে। যদিও এ পথে জীবনের ঝুকি ও পদে পদে বিপদের সম্ভাবনা। তবুও অবিনশ্বর জীবন ও নৈসর্গিক শান্তির আশা এ বিপদকে বুক পেতে নেয়ার সাহস যোগায়।

ভাল কাজে প্রলুব্ধ করা আর মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দান করা হলো অন্যকে সঠিক পথ দেখানো ও ভ্রমাত্মক কাজ থেকে বিরত রাখার প্রকৃষ্ট উপায়। যদি কোন সমাজে এহেন লোকের অভাব দেখা দেয় তা হলে সে সমাজকে ধ্বংস থেকে কোন কিছুই রক্ষা করতে পারে না। সে সমাজ নৈতিক ও সামাজিকভাবে অন্ধকারে তলিয়ে যায়। সে জন্যই ইসলাম দেশনা দানের ওপর সব চাইতে বেশি জোর দিয়েছে এবং সমাজকে দেশনা দান না করলে তা আমার্জনীয় পাপ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

জ্ঞাতি - গোষ্ঠীর কল্যাণ করা মানে তাদের প্রতি বৈধ আনুকূল্য প্রদর্শন করা। অন্ততপক্ষে তাদের সম্বোধন করা এবং তাদের সঙ্গে আলাপচারিতা করা যাতে হৃদয় পরিস্কার হয় ও পারিবারিক বন্ধন বৃদ্ধি পায়। এতে বিচ্ছিন্ন লোক একে অপরের শক্তিতে পরিণত হতে পারে।

নিহত লোকের আত্মীয় - স্বজন হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার আছে। তারা জীবনের পরিবর্তে জীবন দাবি করতে পারে। এর উদ্দেশ্য হলো মানুষ যেন শাস্তির ভয়ে কাউকে হত্যা না করে এবং জীবিতগণ যেন এক জনের পরিবর্তে বহুলোক হত্যার জেদ না করে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে , ক্ষমা ক্ষমার স্থলে সর্বোত্তম। তার মানে এ নয় যে , ক্ষমার নামে মানুষের অধিকার ক্ষুন্ন হবে — বিশ্ব শান্তি বিঘ্নিত হবে। বরং এ ক্ষেত্রে কিসাস - ই রক্তপাত বন্ধ করে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করতে পারে। আল্লাহ বলেনঃ হে মানুষ যদি তোমরা বুঝ , তোমাদের জন্য রয়েছে কিসাস যাতে তোমরা নিজেদের রক্ষা করতে পার ” (কুরআন - ২ : ১৭৯) । এসব শাস্তির উদ্দেশ্য হলো অপরাধী যেন বুঝতে পারে আল্লাহর নিষেধ অমান্য করার পরিণতি কি এবং শাস্তির ভয়ে অপরাধ হতে বিরত থাকে।

মদ চিন্তার তালগোল পাকায় , বোধগম্যতা দুর্বল করে ফেলে এবং জ্ঞানের বিচ্ছিন্নতা ঘটায়। ফলে একজন লোকের কাছ থেকে যা আশা করা যায় না মদকাসক্ত অবস্থায় সে তা করে ফেলে। তাছাড়া এটা রোগাক্রান্ত করে ফেলে এবং স্বাস্থের অবনতি ঘটায়। সে কারণে শরিয়াত মদকে হারাম ঘোষণা করেছে।

উক্তি নং - ২৫৪

و کانعليه‌السلام یقول: أَحْلِفُوا الظَّالِمَ إِذَا أَرَدْتُمْ يَمِينَهُ بِأَنَّهُ بَرِي ءٌ مِنْ حَوْلِ اللَّهِ وَ قُوَّتِهِ؛ فَإِنَّهُ إِذَا حَلَفَ بِهَا كَاذِبا عُوجِلَ وَ إِذَا حَلَفَ بِاللَّهِ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلا هُوَ لَمْ يُعَاجَلْ، لِأَنَّهُ قَدْ وَحَّدَ اللَّهَ تعالی.

যদি তুমি কোন অত্যাচারীকে শপথ গ্রহণ করাতে চাও তবে তাকে এভাবে শপথ করতে বলো , আমি আল্লাহর শক্তি ও কুদরতের বহির্ভুত। ” এরূপ মিথ্যা শপথের জন্য তাঁর শাস্তি দ্রুত নেমে আসবে। আর যদি সে আল্লাহর নামে শপথ করে যিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। তাহলে তার শাস্তি দ্রুত হবে না। কারণ সে মহিমন্বিত আল্লাহর একত্ব প্রকাশ করেছে।

___________________

১। বর্ণিত আছে যে , আব্বাসিয় খলিফা আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আল - মনসুরের কাছে ইমাম জাফর আস - সাদিকের বিরুদ্ধে কতিপয় অভিযোগ করেছিল। মনসুর ইমামকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন অমুক ব্যক্তি আপনার বিরুদ্ধে অমুক অমুক কথা বলেছে। ইমাম বললেন যে , এতে বিন্দু মাত্রও সত্যের লেশ নেই এবং লোকটিকে ডেকে আনার জন্য অনুরোধ করলেন। লোকটিকে সামনে আনলে সে বললো যে , সে যা বলেছে তার সবই সত্য। ইমাম তাকে বললেন , যদি তুমি সত্য কথা বল তাহলে আমি যে শপথ করতে বলি সে শপথ কর। ” তারপর ইমাম তাকে বলতে বললেন , আমি আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতা বহির্ভূত ; আমি নিজের শক্তি ও ক্ষমতায় নির্ভর করি। ” যেইমাত্র এ শপথ করলো অমনি লোকটি পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে চলতশক্তিহীন হয়ে গেল। ইমাম সসম্মানে সেখান থেকে চলে গেলেন (কুলায়নী , ৬ষ্ঠ খণ্ড , পৃঃ৪৪৫ - ৪৪৬ ; মজলিসী , ৪৭ তম খণ্ড , পৃ.১৬৪ - ১৬৫ , ১৭২ - ১৭৫ ও ২০৩ - ২০৪ ; আশরাফ ১৩ , পৃঃ ২২৫ - ২২৬ ; হায়তামী , ২য় খণ্ড , পৃঃ ৪) ।

আল - মনসুরের দৌহিত্র হারুন অর - রশিদের রাজত্বকালে (১৪৯/৭৬৬ — ১৯৩/৮০৯) অনুরূপ একটা ঘটনা ঘটেছিল। আহলুল বাইতের সুচিহ্নিত শত্রু আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়রের দৌহিত্র আবদুল্লাহ ইবনে মুসাব হারুন - অর - রশিদের কাছে বললো যে , ইয়াহিয়া ইবনে আবদিল্লাহ ইবনে হাসন ইবনে (ইমাম) হাসান ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব তার (হারুন) বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। হারুন ইয়াহিয়াকে ডেকে পাঠালেন। ইয়াহিয়া আবদুল্লাহকে ওপরে বর্ণিতভাবে শপথ করে তার কথার সত্যতা প্রমাণের জন্য বললেন। আবদুল্লাহ এই শপথ করার সঙ্গে সঙ্গে তার গায়ে কুষ্ঠরোগ ফুটে উঠলো এবং তার সারা শরীর ফেটে গেল। তিন দিন পর সে মারা গেল। এ অবস্থা দেখে হারুন বললো , আশ্চর্য , আল্লাহ কত দ্রুত ইয়াহিয়ার জন্য আবদুল্লাহর ওপর প্রতিশোধ নিলেন ” (ইসফাহানী , পৃঃ ৪৭২ - ৪৭৮ ; মাসুদী , ৩য় খণ্ড , পৃঃ ৩৪০ - ৩৪২ ; বাগদাদী , ১৪শ খণ্ড , পৃঃ ১১০ - ১১২ ; হাদীদ , ১৯তম খণ্ড , পৃঃ ৯১ - ৯৪ ; কাছীর , ১০ম খণ্ড , পৃঃ ১৬৭ - ১৬৮ ; সুয়ুতী , পৃঃ ২৮৭)

উক্তি নং - ২৫৫

وَ قَالَعليه‌السلام : يَا ابْنَ آدَمَ، كُنْ وَصِيَّ نَفْسِكَ، وَ اعْمَلْ فِي مَالِكَ مَا تُؤْثِرُ أَنْ يُعْمَلَ فِيهِ مِنْ بَعْدِكَ.

হে আদম সন্তানগণ , তোমাদের সম্পদ বিষয়ে তোমরা নিজেরাই প্রতিনিধি হও এবং মৃত্যুর পর তোমার সম্পত্তি কী করবে তা জীবিত থাকতেই করে যেয়ো ।

উক্তি নং - ২৫৬

وَ قَالَعليه‌السلام : الْحِدَّةُ ضَرْبٌ مِنَ الْجُنُونِ، لِأَنَّ صَاحِبَهَا يَنْدَمُ، فَإِنْ لَمْ يَنْدَمْ فَجُنُونُهُ مُسْتَحْكِمٌ.

ক্রোধ এক প্রকারের উন্মত্ততা কারণ ক্রোধান্বিত ব্যক্তি পরবর্তীতে অনুশোচনা করে। যদি সে অনুশোচনা না করে তবে তার উন্মত্ততা সুনিশ্চিত হয়ে দাঁড়ায়।

উক্তি নং - ২৫৭

وَ قَالَعليه‌السلام : صِحَّةُ الْجَسَدِ، مِنْ قِلَّةِ الْحَسَدِ.

ঈর্ষা না থাকলে শারীরিক সুস্থতা অর্জিত হয়।

উক্তি নং - ২৫৮

وَ قَالَعليه‌السلام: لِكُمَيْلِ بْنِ زِيَادٍ النَّخَعِيِّ: يَا كُمَيْلُ، مُرْ أَهْلَكَ أَنْ يَرُوحُوا فِي كَسْبِ الْمَكَارِمِ، وَ يُدْلِجُوا فِي حَاجَةِ مَنْ هُوَ نَائِمٌ. فَوَ الَّذِي وَسِعَ سَمْعُهُ الْأَصْوَاتَ، مَا مِنْ أَحَدٍ أَوْدَعَ قَلْبا سُرُوراً إِلا وَ خَلَقَ اللَّهُ لَهُ مِنْ ذَلِكَ السُّرُورِ لُطْفاً. فَإِذَا نَزَلَتْ بِهِ نَائِبَةٌ (نازلة) جَرَى إِلَيْهَا كَالْمَأِ فِي انْحِدَارِهِ حَتَّى يَطْرُدَهَا عَنْهُ كَمَا تُطْرَدُ غَرِيبَةُ الْإِبِلِ.

আমিরুল মোমেনিন কুমায়েল ইবনে জায়েদ আন - নাখাইকে বলেছিলেন , হে কুমায়েল , তোমার লোকজনকে আদেশ কর যেন তারা মহৎ বৈশিষ্ট্য অর্জনের জন্য দিনে বের হয়ে যায় এবং অভাবের তাড়নায় যারা রাতে ঘুমাতে পারে না তাদের দেখার জন্য রাতে বের হয়। কারণ সর্বশ্রোতা আল্লাহর নামে আমি শপথ করে বলছি , যদি কখনো কেউ অন্যের হৃদয়কে খুশি করতে পারে তবে আল্লাহ তার জন্য এমন বিশেষ নেয়ামত নির্ধারণ করে রেখেছেন যা দুঃখের দিনে প্রবাহিত পানির মতো এসে বিতাড়িত বন্য উটের মতো দুঃখকে তাড়িয়ে দেবে।

উক্তি নং - ২৫৯

وَ قَالَعليه‌السلام : إِذَا أَمْلَقْتُمْ فَتَاجِرُوا اللَّهَ بِالصَّدَقَةِ.

যখন তুমি বিপদ বা দুরবস্থায় পড়বে তখন দান - সদকার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে ব্যবসা করো।

উক্তি নং - ২৬০

وَ قَالَعليه‌السلام : الْوَفَأُ لِأَهْلِ الْغَدْرِ غَدْرٌ عِنْدَ اللَّهِ، وَ الْغَدْرُ بِأَهْلِ الْغَدْرِ وَفَأٌ عِنْدَ اللَّهِ.

বেইমান লোকের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা মানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস হারানো আর বেইমানকে অবিশ্বাস করা মানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ২৬১ - ২৮০

উক্তি নং - ২৬১

وَ قَالَعليه‌السلام : كَمْ مِنْ مُسْتَدْرَجٍ بِالْإِحْسَانِ إِلَيْهِ، وَ مَغْرُورٍ بِالسَّتْرِ عَلَيْهِ، وَ مَفْتُونٍ بِحُسْنِ الْقَوْلِ فِيهِ، وَ مَا ابْتَلَى اللَّهُ سُبْحَانَهُ أَحَدا بِمِثْلِ الْإِمْلاَءِ لَهُ.

অনেক লোক আছে যাদেরকে ভালো ব্যবহার দ্বারা ক্রমান্বয়ে শাস্তির দিক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ;এবং অনেকে মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছে। কারণ তাদের সম্পর্কে ভালো কথা বলা হচ্ছে। অথচ সময় দেয়ার চেয়ে কঠোর পরীক্ষা মহিমান্বিত আল্লাহ্‌ আর কিছুই করেননি।

উক্তি নং - ২৬২

و فی حدیثعليه‌السلام فَإِذَا كَانَ ذَلِكَ ضَرَبَ يَعْسُوبُ اَلدِّينِ بِذَنَبِهِ، فَيَجْتَمِعُونَ إِلَيْهِ كَمَا يَجْتَمِعُ قَزَعُ اَلْخَرِيفِ.

আমিরুল মোমেনিনের বর্ণিত একটি হাদিস হলো - অবস্থা যখন এমন হয় তখন ধর্মীয় নেতা রুখে দাঁড়াবে এবং জনগণ শরৎকালের বৃষ্টিবিহীন মেঘের মতো তার চারপাশে ভিড় জমাবে।

____________________

১ এ হাদিসে ইয়াসুব ’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যার আভিধানিক অর্থ রাণী মৌমাছি এবং কুযা ’ শব্দের অর্থ হলো বৃষ্টিবিহীন মেঘ। আমিরুল মোমেনিনের বাণী হলো ফাইজা কানা যালিকা দারাবা ইয়াসুবুদ্দীন বি যানাবিহি। ” দারাবা অর্থ হলো আঘাত করা ,মারা ,ব্যথা দেওয়া ;ইয়াসুবুদ্দীন অর্থ হলো দ্বীনি ও শরিয়তের প্রধান ,যানাব অর্থ হলো লেজ ,শেষ ,যে মান্য করে ,ফুল। এবাক্যে ইয়াসুবুদ্দিন হলো যুগের ইমাম। এ উপাধি রাসূল (সা.) আমিরুল মোমেনিনকে দিয়েছিলেন যেমন -

(ক) হে আলী ,তুমি মোমিনগণের ইয়াসুব আর সম্পদ মোনাফেকদের ইয়াসুব (বার ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৭৪৪ ;আছীর ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ২৮৭ ;হাজর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৭১ ;শাফী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৫৫ ;হাদীদ ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১২ ;১৯ তম খণ্ড ,পৃঃ ২২৪ ;শাফী ,৯ম খণ্ড ,পৃঃ ১০২) ।

(খ) তুমি দ্বীনের ইয়াসুব (শাফী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৭৭ ;জাবিদী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৮১ ;হাদীদ ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১২ ;১৯তম খণ্ড ,পৃঃ ২২৪) ।

(গ) তুমি মুসলিমগণের ইয়াসুব (কুন্দুজী ,পৃঃ ৬২) ।

(ঘ) তুমি কুরাইশদের ইয়াসুব (সাখাবী ,পৃঃ ৯৪) ।

সুতরাং রাণী মক্ষিকা যেমন মক্ষিকাকুলে পবিত্রতম এবং সে সকল দোষত্রুটি মুক্ত অবস্থায় ফুলের বক্ষ থেকে সুধা আহরণ করে তেমনি যুগের ইমামও মানবকুলে সত্য সঠিক পথের দিশারী ও পবিত্রতম।

উক্তি নং - ২৬৩

هذا الخَطِیبُ الشَّحشَحُ

সে হলো বহুমুখী প্রতিভাধারী বক্তা।

____________________

১। আমিরুল মোমেনিন তার অন্যতম প্রধান সহচর ছা - ছা আহ ইবনে সুহান আল আবদী সম্পর্কে এ উক্তি করেছিলেন। হাদীদ লিখেছেন , আলীর মতো ব্যক্তির প্রশংসাই ছা - ছা আহর মহত্ত্ব ও ব্যক্তিত্ব এবং তার জ্ঞানের বহুমুখীতা সম্পর্কে যথেষ্ট ” (হাদীদ ,১৯তম খণ্ড ,পৃঃ ১০৬) ।

উক্তি নং - ২৬৪

و فی حدیثعليه‌السلام اجتناب العداوة: إنَّ لِلخُصُومَة قُحَماً.

আমিরুল মোমেনিন থেকে একটি হাদিস বর্ণিত আছে যে ,ঝগড়া - ফ্যাসাদ থেকে দুরে থাক কেননা ঝগড়া - ফ্যাসাদ ধ্বংস বয়ে আনে।

উক্তি নং - ২৬৫

إِذا بَلَغَ النِّساءُ نَصَّ ‏الْحَقائِقِ‏ فَالْعَصَبَةُ أَوْلى.

মেয়েরা যখন বাস্তবতাকে বুঝার বয়সে উপনীত হয় তখন পিতৃপক্ষীয় আত্মীয়গণই তুলনামূলকভাবে মনোনয়নের যোগ্য।

উক্তি নং - ২৬৬

إِنَّ الْإِیمانَ یَبْدُو لُمْظَةً (الّلمظةُ) فِى الْقَلْبِ، کُلَّمَا ازْدادَ الْایمانُ ازْدادَتِ اللُّمْظَةُ.

ইমান হৃদয়ে লুমাজাহ সৃষ্টি করে। ইমান যত উন্নতি লাভ করে "লুমাজাহ" তত বৃদ্ধি পায় (লুমাজাহ অর্থ হলো এক প্রকার উজ্জ্বল সাদা দাগ)

উক্তি নং - ২৬৭

إِنَّ الرَّجُلَ إِذا کانَ لَهُ الدَّیْنُ الظَّنُونُ، یَجِبُ عَلَیْهِ أَنْ یُزَکِّیَهُ، لِما مَضى إِذا قَبَضَهُ.

যদি কোন লোকের কুঋণ (অদ দায়ানুজ জানুন অর্থাৎ যে ঋণ ফেরত পাওয়ার বিষয়ে সন্দেহ আছে) থাকে তবে তা আদায়ের পর অতীতের জাকাত প্রদান করা অবশ্যকর্তব্য।

উক্তি নং - ২৬৮

وَ فِى حَدِیثِهِعليه‌السلام أَنَّهُ شَیَّعَ جَیْشاً یُغْزِیهِ فَقالَ: ‏أَعْذِبُواْ عَنِ النِّساءِ مَا اسْتَطَعْتُمْ.

জিহাদে সৈন্য পরিচালনাকালে আমিরুল মোমেনিন বলতেন , যতদূর সম্ভব নারীর চিন্তা - ভাবনা থেকে বিরত থেকে এবং তাদের কথা মনে না করতে চেষ্টা করো। ”

উক্তি নং - ২৬৯

کَالْیاسِرِ الْفالِجِ یَنْتَظِرُ أَوَّلَ فَوْزَةٍ مِنْ قِداحِهِ.

একজন কৃতকার্য তীরন্দাজের মতো হয়ো যে প্রথম নিক্ষেপেই কৃতকার্য হবার জন্য সম্মুখ পানে মনোনিবেশ করে তাকিয়ে থাকে।

উক্তি নং - ২৭০

کُنّا إِذَا احْمَرَّ البَأْسُ اتَّقَیْنا بِرَسُولِ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ، فَلَمْ یَکُنْ أَحَدٌ مِنّا أَقْرَبَ إِلَى الْعَدُوِّ مِنْهُ.

যখন যুদ্ধ চরমে পৌছলো তখন আমরা আল্লাহর রাসূলের মাধ্যমে আশ্রয় চাইলাম এবং আমাদের মধ্যে তিনিই ছিলেন শত্রুর সব চাইতে নিকটবর্তী।

উক্তি নং - ২৭১

وَ قَالَعليه‌السلام : لَمَّا بَلَغَهُ إِغَارَةُ أَصْحَابِ مُعَاوِيَةَ عَلَى الْأَنْبَارِ فَخَرَجَ بِنَفْسِهِ مَاشِيا حَتَّى أَتَیالنُّخَيْلَةَ فَأَدْرَكَهُ النَّاسُ وَ قَالُوا: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ نَحْنُ نَكْفِيكَهُمْ فَقَالَ: وَ مَا تَكْفُونَنِي أَنْفُسَكُمْ فَكَيْفَ تَكْفُونَنِي غَيْرَكُمْ؟

মুয়াবিয়ার সৈন্য আল - আনবার আক্রমণ করেছে শোনামাত্র আমিরুল মোমেনিন উম্মুক্ত তরবারি হাতে বেরিয়ে পড়লেন এবং নুখায়লাহর কাছে লোকেরা তাকে থামিয়ে ফেলে বললেন , হে আমিরুল মোমেনিন ,তাদের শায়েস্তা করতে আমরাই যথেষ্ট। ” আমিরুল মোমেনিন তখন বললেনঃ তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই তোমরা আমার জন্য যথেষ্ট নও কাজেই কী করে অন্যের বিরুদ্ধে তোমরা আমার জন্য যথেষ্ট হবে ?(২৭ নং খোৎবায় এ বাণীটি ভিন্ন প্রেক্ষিতে বর্ণিত)

উক্তি নং - ২৭২

وَ قِيلَ: إِنَّ الْحَارِثَ بْنَ حَوْطٍ أَتَاهُ فَقَالَ: أَ تَرَانِي أَظُنُّ أَصْحَابَ الْجَمَلِ كَانُوا عَلَى ضَلاَلَةٍ؟.

فَقَالَ عليه‌السلام : يَا حَارِثُ، إِنَّكَ نَظَرْتَ تَحْتَكَ وَ لَمْ تَنْظُرْ فَوْقَكَ فَحِرْتَ! إِنَّكَ لَمْ تَعْرِفِ الْحَقَّ فَتَعْرِفَ أتاهُ، وَ لَمْ تَعْرِفِ الْبَاطِلَ فَتَعْرِفَ مَنْ أَتَاهُ. فَقَالَ الْحَارِثُ:فَإِنِّي أَعْتَزِلُ مَعَ سَعِيدِ بْنِ مَالِكٍ وَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ، فَقَالَعليه‌السلام : إِنَّ سَعْدا وَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ لَمْ يَنْصُرَا الْحَقَّ، وَ لَمْ يَخْذُلاَ الْبَاطِلَ

একদিন হারিছ ইবনে হাওত আমিরুল মোমেনিনের কাছে এসে বললো , আপনি কি বিশ্বাস করেন। আমি এ কথা কল্পনা করতে পারিনি যে ,জামালের লোকেরা ভ্রান্ত পথে ছিল। ” আমিরুল মোমেনিন বললেন , হে হারিছ ,তুমি তোমার নিচে দেখেছো । তার উর্দ্ধে কিছু দেখনি কাজেই তুমি সব তালগোল পাকিয়ে ফেলেছো । নিশ্চয়ই ,তুমি ন্যায়কে জানতে না ,সেকারণেই তুমি ন্যায়পরায়ণকে স্বীকৃতি দিতে পারনি। তুমি ভ্রান্ত পথকে চিনতে না ফলে ভ্রান্ত পথের অনুসারীগণকে তুমি চিনতে পারনি। ” হারিছ বললো , তা হলে আমি সাদ ইবনে মালিক ও আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরের পর্যায়ভুক্ত হব । আমিরুল মোমেনিন বললেন ,নিশ্চয় সাদ ও আবদুল্লাহ্ ন্যায়ের পক্ষে আসেনি অন্যায়কেও পরিত্যাগ করেনি ।

____________________

১ । সাদ ইবনে মালিক ছিল সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস অর্থাৎ সেই পাষণ্ড উমর ইবনে সাদের পিতা যে ইমাম হুসাইনকে হত্যা করেছিল। আবদুল্লাহ ইবনে উমর তাদের মধ্যে অন্যতম যারা আমিরুল মোমেনিনকে সাহায্য - সহায়তা ও সমর্থন করা থেকে বিরত ছিল। উসমান নিহত হবার পর সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস বনে - জঙ্গলে ও নির্জনে আত্মগোপন করে জীবন কাটাচ্ছিল। তবুও সে আমিরুল মোমেনিনের বায়াত গ্রহন করেনি। কিন্তু আমিরুল মোমেনিনের মৃত্যুর পর সে প্রায়শই এই বলে অনুতাপ করতো , আমি এমন এক অভিমত পোষণ করতাম যা ছিল সম্পূর্ণ ভ্রান্ত" (নিশাবুরী ,পৃঃ ১১৬) । আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে মুয়াবিয়ার পক্ষাবলম্বন করে যুদ্ধ না করার জন্য যখন মুয়াবিয়া তাকে দোষারোপ করতে লাগলো তখন সাদ বলতো , বিদ্রোহী মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করার জন্য আমি দারুণভাবে অনুতপ্ত" (হানাফী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২২৪ - ২২৫ ;হাম্বলী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৫৪২) ।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করা সত্ত্বেও যুদ্ধে আমিরুল মোমেনিনকে সাহায্য করতে অস্বীকার করেছিলেন। তিনি ওজর দেখিয়েছিলেন যে , আমি নির্জনে ইবাদত বন্দেগি করা স্থির করেছি ;কাজেই আমি যুদ্ধ - বিগ্রহে যেতে চাই না। ” আবদুল্লাহ ইবনে উমর তার জীবনসায়াহ্ন পর্যন্ত এ বলে অনুতাপ করেছেন , আমার জীবনে এ পৃথিবীতে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কোন কিছু নেই যে ,আল্লাহ আমাকে যা আদেশ করেছিলেন তা অমান্য করে আলী ইবনে আবি তালিবের পক্ষাবলম্বন করে বিদ্রোহী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিনি ” (নিশাবুরী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১১৫ - ১১৬ ;শাফী ,৮ম খণ্ড ,পৃঃ ১৭২ ;সাদ ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৩৬ - ১৩৭ ;বার ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৯৫৩ ;আছীর ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ২২৯ ;হাম্বলী ',৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৫৪৩ ;শাফী ,২৬তম খণ্ড ,পৃঃ ১৫১) ।

উক্তি নং - ২৭৩

وَ قَالَعليه‌السلام : صَاحِبُ السُّلْطَانِ كَرَاكِبِ الْأَسَدِ: يُغْبَطُ بِمَوْقِعِهِ، وَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَوْضِعِهِ.

ক্ষমতার অধিকারীগণ যেন সিংহ সওয়ার - পদমর্যাদার জন্য যে ব্যক্তি ঈর্ষাকাতর তার অবস্থা শুধু তিনিই জানেন।

উক্তি নং - ২৭৪

وَ قَالَعليه‌السلام : أَحْسِنُوا فِي عَقِبِ غَيْرِكُمْ تُحْفَظُوا فِي عَقِبِكُمْ.

অন্যদের মধ্যে যারা শোকাহত। তাদের কল্যাণ করো তাহলে তোমরা শোকাহত হলে তারাও কল্যাণকর কাজ করবে।

উক্তি নং - ২৭৫

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ كَلاَمَ الْحُكَمَأِ إِذَا كَانَ صَوَابا كَانَ دَوَأً، وَ إِذَا كَانَ خَطَأً كَانَ دَأً.

জ্ঞানীদের কথা যদি যথার্থ হয় তবে তা সমাজের ব্যাধির ঔষধ স্বরূপ কিন্তু তাতে যদি ভ্রান্তি থাকে। তবে সমাজ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে।

উক্তি নং - ২৭৬

وَ سَأَلَهُ رَجُلٌ أَنْ يُعَرِّفَهُ الْإِيمَانَ فَقَالَعليه‌السلام : إِذَا كَانَ غَدٌ فَأْتِنِي حَتَّى أُخْبِرَكَ عَلَى أَسْمَاعِ النَّاسِ، فَإِنْ نَسِيتَ مَقَالَتِي حَفِظَهَا عَلَيْكَ غَيْرُكَ، فَإِنَّ الْكَلاَمَ كَالشَّارِدَةِ، يَنْقُفُهَا هَذَا وَ يُخْطِئُهَا هَذَا.

কেউ একজন ইমানের সংজ্ঞা বলার জন্য আমিরুল মোমেনিনকে অনুরোধ করলে তিনি বললেনঃ আগামীকাল আমার কাছে এসো যাতে আমি অন্যসকল লোকের উপস্থিতিতে তোমাকে বুঝিয়ে দিতে পারি। এতে আমি যা বলব তা তুমি ভুলে গেলেও অন্যদের মনে থাকতে পারে। কারণ উপদেশ হচ্ছে পলায়নরত শিকারের মতো। একজন তা হারালেও অন্য কেউ তা ধরতে সক্ষম হতে পারে । (উক্ত লোকটিকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তা ৩১ নং বাণীতে উল্লিখিত হয়েছে)

উক্তি নং - ২৭৭

وَ قَالَعليه‌السلام : يَا ابْنَ آدَمَ لاَ تَحْمِلْ هَمَّ يَوْمِكَ الَّذِي لَمْ يَأْتِكَ عَلَى يَوْمِكَ الَّذِي أَتَاكَ، فَإِنَّهُ إِنْ يَكُ مِنْ عُمُرِكَ يَأْتِ اللَّهُ فِيهِ بِرِزْقِكَ.

হে আদম সন্তানগণ ,যেদিন এখনো আসে নি সেদিনের জন্য আজকের দিনে উদ্বীগ্ন হয়ে না। কারণ সে দিনটি যদি তোমার জীবনে আসে। তবে আল্লাহ সেদিনের জীবিকাও তোমার জন্য দান করবেন।

উক্তি নং - ২৭৮

وَ قَالَعليه‌السلام : أَحْبِبْ حَبِيبَكَ هَوْناً مَا، عَسَى أَنْ يَكُونَ بَغِيضَكَ يَوْما مَا وَ أَبْغِضْ بَغِيضَكَ هَوْناً مَا، عَسَى أَنْ يَكُونَ حَبِيبَكَ يَوْماً مَا.

বন্ধুকে একটা সীমা অবধি ভালোবেসো ,কারণ সে যেকোন সময় শত্রু হয়ে যেতে পারে। আবার শত্রুকে একটা সীমা অবধি ঘৃণা করো ,কারণ যে কোন সময় সে তোমার বন্ধু হয়ে যেতে পারে।

উক্তি নং - ২৭৯

وَ قَالَعليه‌السلام : اَلنَّاسُ فِي الدُّنْيَا عَامِلاَنِ؛ عَامِلٌ عَمِلَ فِي الدُّنْيَا لِلدُّنْيَا، قَدْ شَغَلَتْهُ دُنْيَاهُ عَنْ آخِرَتِهِ، يَخْشَى عَلَى مَنْ يَخْلُفُهُ الْفَقْرَ وَ يَأْمَنُهُ عَلَى نَفْسِهِ، فَيُفْنِي عُمُرَهُ فِي مَنْفَعَةِ غَيْرِهِ؛ وَ عَامِلٌ عَمِلَ فِي الدُّنْيَا لِمَا بَعْدَهَا، فَجَأَهُ الَّذِي لَهُ مِنَ الدُّنْيَا بِغَيْرِ عَمَلٍ، فَأَحْرَزَ الْحَظَّيْنِ مَعاً، وَمَلَكَ الدَّارَيْنِ جَمِيعاً، فَأَصْبَحَ وَجِيها عِنْدَ اللَّهِ، لاَ يَسْأَلُ اللَّهَ حَاجَةً فَيَمْنَعُهُ.

এ পৃথিবীতে দুপ্রকারের কর্মী আছে। এক প্রকার হলো তারা যারা শুধু দুনিয়ার জন্য কাজ করে আখেরাতের কথা বেমালুম ভুলে থাকে। সে যাদেরকে ফেলে যাবে তাদের দুঃখ - কষ্টের বিষয়ে সে সর্বদা ভীত থাকে। সুতরাং সে অন্যের সুখ শান্তির কাজে নিজের জীবন কাটায় ;আরেক প্রকার হলো তারা যারা এ পৃথিবীতে পরকালের জন্য কাজ করে যায়। এসব লোক দুনিয়াতে বিনা প্রচেষ্টায় তাদের হিস্যা পেয়ে থাকে। ফলে তারা ইহকাল ও পরকাল উভয়টার সুবিধা ভোগ করতে পারে এবং উভয় ঘরের মালিক হয়ে পড়ে। এসব লোক আল্লাহর দরবারে সম্মানের অধিকারী হয়। যদি সে আল্লাহর কাছে কিছু চায় তবে বিফল মনোরথ হয় না।

উক্তি নং - ২৮০

و روی أنه عند عمر بن الخطاب فی أیامه حلی الْكَعْبَةِ وَ كَثْرَتُهُ فَقَالَ قَوْمٌ: لَوْ أَخَذْتَهُ فَجَهَّزْتَ بِهِ جُيُوشَ الْمُسْلِمِينَ كَانَ أَعْظَمَ لِلْأَجْرِ، وَ مَا تَصْنَعُ الْكَعْبَةُ بِالْحَلْيِ؟ فَهَمَّ عُمَرُ بِذَلِكَ وَ سَأَلَ عَنْهُ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَعليه‌السلام ، فَقَالَعليه‌السلام :

إِنَّ الْقُرْآنَ أُنْزِلَ عَلَى النَّبِيِّصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم وَ الْأَمْوَالُ أَرْبَعَةٌ: أَمْوَالُ الْمُسْلِمِينَ فَقَسَّمَهَا بَيْنَ الْوَرَثَةِ فِي الْفَرَائِضِ؛ وَ الْفَيْءُ فَقَسَّمَهُ عَلَى مُسْتَحِقِّيهِ؛ وَ الْخُمُسُ فَوَضَعَهُ اللَّهُ حَيْثُ وَضَعَهُ؛ وَ الصَّدَقَاتُ فَجَعَلَهَا اللَّهُ حَيْثُ جَعَلَهَا. وَ كَانَ حَلْيُ الْكَعْبَةِ فِيهَا يَوْمَئِذٍ، فَتَرَكَهُ اللَّهُ عَلَى حَالِهِ، وَ لَمْ يَتْرُكْهُ نِسْيَاناً، وَ لَمْ يَخْفَ عَلَيْهِ مَكَاناً، فَأَقِرَّهُ حَيْثُ أَقَرَّهُ اللَّهُ وَ رَسُولُهُ. فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: لَوْلاَكَ لاَفْتَضَحْنَا. وَ تَرَكَ الْحَلْيَ بِحَالِهِ.

বর্ণিত আছে যে ,উমর ইবনে খাত্তাবের খেলাফতকালে কাবার উদৃত্ত অলঙ্কারের বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছিল এবং কেউ কেউ প্রস্তাব করেছিল এসব অলঙ্কার দিয়ে কাবার কী হবে ? তার চাইতে সেগুলো দিয়ে একটা মুসলিম বাহিনী গঠন করলে ভালো হতো। ” এ যুক্তি উমরের পছন্দ হলো । তবুও তিনি বিষয়টি সম্পর্কে আমিরুল মোমেনিনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ

যখন কুরআন নাজেল হয়েছিল তখন চার প্রকারের সম্পদ ছিল। এক ,মুসলিম ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি যা সে নির্দিষ্ট হারে উত্তরাধিকারীদেরকে বন্টন করে দিতো। দুই ,কর (ফায়) যারা প্রাপ্য ছিল তাদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হতো। তিন ,এক - পঞ্চমাংশ (খুমস) খাজনা যা বন্টনের পথ আল্লাহ নিজেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। চার ,দান - খয়রাত (সদকা) যার বন্টন আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ আদেশাবলী নাজেলের সময় কাবার অলঙ্কারগুলো সেখানে ছিল এবং আল্লাহ সেগুলোকে সেভাবেই রেখেছেন। আল্লাহ ভুল বশত বা অজানার কারণে সেগুলোকে সেখানে রাখেন নি। সুতরাং আল্লাহ ও তার রাসূল সেগুলোকে যেখানে রেখেছেন তুমিও তা সেখানে থাকতে দাও। ” আমিরুল মোমেনিনের কথা শুনে উমর বললেন , আপনি না থাকলে নিশ্চয়ই আমরা অপমানিত হতাম। ” তিনি অলঙ্কারগুলো যেভাবে ছিল সেভাবে রেখে দিলেন।

____________________

১ । প্রথম তিন খলিফার মধ্যে উমর ইবনে খাত্তাব কঠিন সমস্যা সমাধান করতে না পারলে আমিরুল মোমেনিনের পরামর্শ চাইতেন এবং তাঁর অগাধ জ্ঞান থেকে উপকৃত হতেন। কিন্তু আবু বকর তার খেলাফতের স্বল্প সময়ের কারণে এবং উসমান তার কৃপ্রবৃত্তিসম্পন্ন চেলা - চামুণ্ডার কারণে আমিরুল মোমেনিনের উপদেশ গ্রহণ করে কদাচিত উপকৃত হয়েছে।

আমিরুল মোমেনিন সম্পর্কে উমর নিজেই বলতেন , আলী হলেন আমদের মধ্যে সব চাইতে জ্ঞানী - বিশেষ করে জুয়িসপ্রুডেন্স ও বিচারকার্যে" (বুখারী ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ২৩ ;হাম্বল ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ১১৩ ;নিশাবুরী ,পৃঃ ৩০৫ ;সাদ ’ ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১০২ ;বার ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১১০২) ।

আমিরুল মোমেনিনের জ্ঞানের উচ্চমার্গ সম্পর্কে উমর বা অন্য কারো সাক্ষ গ্রহণের প্রয়োজন হয় না। কারণ উমর ও অন্যান্য অনেকেই এতদসংক্রান্ত বিষয়ে রাসূলের (সা.) অনেক বাণী বর্ণনা করেছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন , - আমার উন্মাহর মধ্যে আলী জুরিসপ্রুডেন্স ও ন্যায়বিচারে সব চাইতে জ্ঞান সম্পন্ন (ওয়াকী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৭৮ ,শাফী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২০৩: বার ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৬ ১৭. শাফী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১১০২. শাফকী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১০৮ ; মাজাহ , ১ম খণ্ড , পৃঃ৫৫) ।

এ বিষয়ে আহমাদ ইবনে হাম্বল আবু হাজিম থেকে বর্ণনা করেছেন যে ,কোন ব্যক্তি মুয়াবিয়ার কাছে গিয়ে ধর্ম বিষয়ে তাকে ক টি প্রশ্ন করেছিল। উত্তরে মুয়াবিয়া বললো , এসব প্রশ্ন আলীকে জিজ্ঞেস করো। তিনি এসব বিষয়ে অধিক জ্ঞানের অধিকারী। ” লোকটি বললো , আমি আলী অপেক্ষা আপনার কাছ থেকে উত্তর পেতে অধিক আগ্রহী। ” মুয়াবিয়া তাকে ধমক দিয়ে বললো ,তোমার কাছ থেকে যত কথা শোনলাম তার মধ্যে একথাটা নিকৃষ্টতম। তোমার এহেন উক্তিতে এমন এক ব্যক্তির প্রতি তুমি অবজ্ঞার মনোভাব দেখালে যাকে আল্লাহর রাসূল নিজে শিক্ষাদান করেছেন যেমন করে পাখী তার শাবকের মুখে একটার পর একটা খাদ্য দানা পুরে দেয়। আল্লাহর রাসূল বলেছেনঃ

মুসার কাছে হারুণ যেমন ছিল আমার কাছে আলীও তেমন: শুধু ব্যবধান হলো ,এটা সুনিশ্চিত যে ,আমার পরে আর কোন নবী থাকবে না। তারপর মুয়াবিয়া বললেন তুমি কি জানতে না যে ,উমর কঠিন সমস্যার সমাধানের জন্য আলীর কাছে যেতেন। (শাফী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৪৬ ;শাফী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৯৫ ; হায়তামী , পৃঃ১০৭ ; আসকালানী ,১৭তম খণ্ড ,পৃঃ১০৫ )।

উমর অনেক সময় বলতেনঃ

আলী ইবনে আবি তালিবের মতো আরেক জনকে গর্ভে ধারণ ও প্রসব করার ক্ষমতা নারীকুলের কারো নেই । আলী না থাকলে উমর ধ্বংস হয়ে যেতো (কুতায়বা ,১ম খণ্ড ,পৃঃ২০২ ; বার ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১১০৩ ;শাফী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ১৯৪ ; হানাফী ,পৃঃ ৩৯. কুন্দুজী , পৃঃ ৭৫ ,৩৭৩ শাফী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৩৫৬)

অনেক বিশ্বস্ত সূত্র থেকে বর্ণিত আছে যে ,উমর বলতেনঃ

যে সব সমস্যা সমাধানে আবুল হাসান (আলী) উপস্থিত থাকতেন না তার সমাধানে আমি আল্লাহর আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনা করতাম । (বার ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১১০২ ,১১০৩ ;সাদ ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১০২ ;হাম্বলী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১২১: আছীর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২২ - ২৩৫ হাজর ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৫০৯ ;কাছীর ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৬০)

উমর কোন সমস্যা সমাধানে আমিরুর মোমেনিনের পরামর্শ চাইলে তাকে নিম্নরূপভাবে আহবান করতেনঃ

হে আবুল হাসান ,আমি সেই সমাজ ব্যবস্থা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি ,যে সমাজে আপনি নেই (নিশাবুরী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৪৫৭ - ৪৫৮ রাজী ,৩২ তম খণ্ড ,পৃঃ ১৯৭ ;হায়তামী ,পৃঃ ১০৭ ,শাফী ,৩য় খণ্ড পৃঃ ৪৬) ।

এসব উক্তি ছাড়াও উমর ইবনে খাত্তাব ,আবু সায়েদ খুদরী ও মুআজ ইবনে জাবাল থেকে বর্ণিত আছে যে ,রাসূল (সা.) বলেছেনঃ হে আলী আমি সকল গুণে তোমাকে অতিক্রম করেছি ;এবং তুমি মহৎগুণে সকলকে অতিক্রম করেছো । তুমি হলে -

(১) প্রথম ব্যক্তি যে আল্লাহতে ইমান এনেছে ;

(২) আল্লাহর কাছে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির সর্বোত্তম পালনকারী ;

(৩) আল্লাহর আদেশ - নিষেধ সর্বোত্তম পালনকারী ।

(৪) জনগণের মধ্যে সর্বোত্তম সুষম বন্টনকারী ;

(৫) সর্বোত্তম ন্যায়বিচারকারী এবং মুসলিমদের মধ্যে সব চাইতে বিনম্র ও বিনয়ী ;

(৬) মতবিরোধ সম্বলিত বিষয়ে গভীর অন্তদৃষ্টি সম্পন্ন সর্বোত্তম ব্যক্তি ;

(৭) ধর্ম বিষয়ে সর্বোত্তম চিত্তাকর্ষক ব্যক্তি এবং আল্লাহর দরবারে সর্বোত্তম সন্মানিত ব্যক্তি:(ইসফাহানী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৬৫ - ৬৬ ,শাফী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৯৮ ;হানাফী ,পৃঃ ৬১: হিন্দি ,১২শ খণ্ড ,পৃঃ ২১৪: হাদীদ ,১৩শ খণ্ড ,পৃঃ২৩০)

আমিরুল মোমেনিন নিজে , আবু আইউব আনসারী , সাকিল ইবনে ইয়াছির , বুরায়দাহ ইবনে হুসায়েব হতে বর্ণিত আছে যে ,রাসূল (সা.) খাতুনে জান্নাত ফাতিমাকে বলেছেনঃ

তুমি কি সন্তুষ্ট নও ? নিশ্চয়ই ,আমার উন্মাহর মধ্যে যে সব চাইতে অগ্রণী তার সাথে তোমার বিয়ে দিয়েছি। সে ইমানে ,জ্ঞানে আর বিনম্রতায় অগ্রণী ও সর্বোত্তম (হাম্বল ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ২৬ সানানী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৪৯০ ;বার ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১০৯৯ ;আছীর ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৫২০: হিন্দি ,১২শ খণ্ড ,পৃঃ ২০৫ ,১৫শ খণ্ড ,পৃঃ ৯৯ ;শাফী ,৯ম খণ্ড ,পৃঃ ১০১ ,১১৪. শাফী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২৮৫)

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ২৮১ - ৩০০

উক্তি নং - ২৮১

وَرُوِيَ أَنَّهُعليه‌السلام : رُفِعَ إِلَيْهِ رَجُلاَنِ سَرَقَا مِنْ مَالِ اللَّهِ، أَحَدُهُمَا عَبْدٌ مِنْ مَالِ اللَّهِ وَ الْآخَرُ مِنْ عُرْضِالنَّاسِ.

فَقَالَعليه‌السلام : أَمَّا هَذَا فَهُوَ مِنْ مَالِ اللَّهِ وَ لاَ حَدَّ عَلَيْهِ، مَالُ اللَّهِ أَكَلَ بَعْضُهُ بَعْضاً؛ وَ أَمَّا الْآخَرُ فَعَلَيْهِ الْحَدُّ الشَّدِیدُ. فَقَطَعَ يَدَهُ.

বর্ণিত আছে যে ,দুব্যক্তিকে আমিরুল মোমেনিনের কাছে আনা হয়েছিল। তারা উভয়েই সরকারি সম্পদ চুরি করেছিল। তাদের একজন সরকারি অর্থে ক্রীতদাস এবং অপরজন কোন এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত অর্থে ক্রীতদাস। আমিরুল মোমেনিন বললেন , সরকারি অর্থে যে ক্রীতদাস তার জন্য কোন শাস্তি নেই ;কারণ ,আল্লাহর এক সম্পদ আরেক সম্পদ নিয়েছে। কিন্তু অপরজনকে বিধি অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে। ” ফলে ব্যক্তিগত ক্রীতদাসটির হাত কেটে ফেলা হয়েছিল।

উক্তি নং - ২৮২

وَ قَالَعليه‌السلام : لَوْ قَدِ اسْتَوَتْ قَدَمَايَ مِنْ هَذِهِ الْمَدَاحِضِ لَغَيَّرْتُ أَشْيَاءَ.

এ পিচ্ছিল পথে (খেলাফত) যদি আমি দৃঢ় পদে দাঁড়াতে পারি। তবে আমাকে অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হবে।

____________________

১। একথা অস্বীকার করা যাবে না যে ,রাসূলের (সা.) পরে কিছু সংখ্যক লোক নিজেদের অনুমান ও খামখেয়ালিপনার ভিত্তিতে আমল করতে গিয়ে শরিয়তের আদেশ - নিষেধ অমান্য করে দ্বীনে অনেক বিদআত ও বিকৃতির উদ্ভব ঘটায়। অথচ কুরআন ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট আদেশ অমান্য করে নিজের কল্পনা প্রসূত আমল দ্বারা শরিয়তের পরিবর্তন ও বিকৃতি ঘটানোর কোন অধিকার কারো নেই। কুরআনে বিধৃত আছে যে ,দুবার তালাক দেয়ার পরও অন্য কোন লোকের কাছে বিয়ে না দিয়ে স্ত্রীর সাথে পুনরায় দাম্পত্য জীবন যাপন করা যায় (কুরআন - ২: ২২৯) । কিন্তু খলিফা উমর আদেশ করলেন তিনবার তালাক একই সময়ে বলতে হবে। একইভাবে তিনি উত্তরাধিকারে আউল ’ এর সূত্রপাত করেন এবং জানাজায় চার তকবিরের সূচনা করেন। খলিফা উসমান জুমার সালাতে আজান যোগ করলেন ,কসর সালাতের পরিবর্তে পূর্ণ সালাতের আদেশ প্রদান করেন এবং ঈদ সালাতের পূর্বে খুৎবা যোগ করে দেন। বস্তুত এহেন শত শত বিদআত ,পরিবর্তন ও বিকৃতি এমনভাবে প্রকৃত বিধানের সাথে মিশে গেছে যে ,আসল আদেশ - নিষেধ এর মাঝে হারিয়ে গেছে। এ বিষয়ে অধিক জানার জন্য শায়েখ আবুল হুসাইন আমিনি ’ বিরচিত আল গাদির গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ৮৩ - ৩২৫ (উমার কর্তৃক পরিবর্তন) ;৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৭৪ - ২৩৬ (আবু বকর কর্তৃক পরিবর্তন) ,৮ম খণ্ড ,পৃঃ ৯৮ - ২৩৬ (উসমান কর্তৃক পরিবর্তন) এবং সায়েদ আবুল হুসাইন শরাফুদিন বিরচিত আন - নাস ওয়াল ইজতিহাদ গ্রন্থের পৃঃ ৭৬ - ১৫৪ (আবু বকরের পরিবর্তন) ;পূঃ ১৫৫ - ২৭৬ (উমরের পরিবর্তন) ;পৃঃ ২৭৭ - ২৮৯ (উসমানের পরিবর্তন) এবং সৈয়দ মুরতাজা আসকারী বিরচিত মুকাদ্দামা মির আতুল উকুল ১ম ও ২য় খণ্ড দ্রষ্টব্য। "আমিরুল মোমেনিন সঠিক শরিয়তের ধারক ও বাহক হিসাবে সাহাবাদের বিদাতের প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু সরকারি ক্ষমতার ছত্রছায়ায় এসব বিদআত প্রচলিত হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে ইবনে আবিল হাদীদ লিখেছেন ,আমাদের অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে ,আমিরুল মোমেনিন শরিয়াতের ওপর সুদৃঢ় ছিলেন এবং অন্যান্য সাহাবাদের বিকৃতির ওপর অনেক ভিন্ন মত পোষণ করতেন (হাদীদ ,১৯তম খণ্ড ,পৃঃ ১৬১) যখন আমিরুল মোমেনিন খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তখন সবদিক থেকে বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি এসব বিদ্রোহীদের জ্বালাতন থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। ফলে উদ্ভূত বিদাআতগুলোর তিনি মুলোৎপাটন করতে পারেন নি। এতে কেন্দ্র থেকে দূর দূরান্তরের অঞ্চলগুলোতে বিদআত ক্রমেই বেড়ে গেল। বিশেষ করে মুয়াবিয়ার শরিয়তের অজ্ঞতা এবং তার সুবিধার জন্য সে অসংখ্য বিদআতের সূচনা ও প্রচলন করেছিল। তাসত্ত্বেও আমিরুল মোমেনিনের কতিপয় অনুচর শরিয়তের আদেশ - নিষেধ আমিরুল মোমেনিনের কাছ থেকে জেনে নিয়ে লিখে রেখেছিলেন বলে প্রকৃত বিষয়গুলি একেবারে হারিয়ে যায় নি এবং বাতিল বিষয়াবলী সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়নি।

উক্তি নং - ২৮৩

وَ قَالَعليه‌السلام : أعْلَمُوا عِلْما يَقِيناً أَنَّ اللَّهَ لَمْ يَجْعَلْ لِلْعَبْدِ - وَ إِنْ عَظُمَتْ حِيلَتُهُ، و اشْتَدَّتْ طَلِبَتُهُ، وَقَوِيَتْ مَكِيدَتُهُ - أكْثر مِمَّا سُمِّيَ لَهُ فِي الذِّكْرِ الْحَكِيمِ، وَ لَمْ يَحُلْ بَيْنَ الْعَبْدِ فِي ضَعْفِهِ وَ قِلَّةِ حِيلَتِهِ، وَ بَيْنَ أَنْ يَبْلُغَ مَا سُمِّيَ لَهُ فِي الذِّكْرِ الْحَكِيمِ. وَ الْعَارِفُ لِهَذَا الْعَامِلُ بِهِ أَعْظَمُ النَّاسِ رَاحَةً فِي مَنْفَعَةٍ، وَ التَّارِكُ لَهُ الشَّاكُّ فِيهِ أَعْظَمُ النَّاسِ شُغُلاً فِي مَضَرَّةٍ. وَ رُبَّ مُنْعَمٍ عَلَيْهِ مُسْتَدْرَجٌ بِالنُّعْمَى وَ رُبَّ مُبْتَلًى مَصْنُوعٌ لَهُ بِالْبَلْوَى، فَزِدْ أَيُّهَا الْمُسْتَمِعُ فِي شُكْرِكَ، وَ قَصِّرْ مِنْ عَجَلَتِكَ، وَقِفْ عِنْدَ مُنْتَهَى رِزْقِكَ.

দৃঢ় প্রত্যয় সহকারে জেনে রাখো ,অদৃষ্টলিপিতে যা লেখা আছে তার অধিক জীবিকা আল্লাহ নির্ধারণ করেন না। যতই উপায় অবলম্বন করা হোক ,যতই কঠোর প্রচেষ্টা করা হোক। আর যতই কসরত করা হোক না কেন নির্ধারিত জীবিকার বেশি পাবে না। কোন লোকের দুর্বল অবস্থা বা উপায় - উপকরণের অভাব নির্ধারিত জীবিকার পথে অন্তরায় হতে পারে না। যারা এটা অনুধাবন করে এবং সে মতে আমল করে তারাই সব চাইতে আরাম - আয়েশে থাকে ;আর যারা এতে সন্দেহ পোষণ করে এবং এর প্রতি অবহেলা করে তারা সকলের চেয়ে বেশি অসুবিধা ভোগ করে। আনুকূল্য প্রাপ্ত ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে আনুকূল্যের মাধ্যমে শান্তির দিকে তাড়িত করা হচ্ছে এবং শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তিকে শাস্তির মাধ্যমে কল্যাণ করা হচ্ছে। সুতরাং হে শ্রোতামণ্ডলী ,তোমাদের কৃতজ্ঞতা বর্ধিত কর ,লোভ - লালসা কমিয়ে ফেল এবং তোমাদের জীবিকার সীমার মধ্যে তৃপ্ত থাক ।

উক্তি নং - ২৮৪

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ تَجْعَلُوا عِلْمَكُمْ جَهْلاً، وَ يَقِينَكُمْ شَكّاً. إِذَا عَلِمْتُمْ فَاعْمَلُوا، وَ إِذَا تَيَقَّنْتُمْ فَأَقْدِمُوا.

তোমাদের জ্ঞানকে অজ্ঞতায় এবং দৃঢ় প্রত্যয়কে সংশয়ে পরিণত করো না। জ্ঞান ,লাভ করলে তদনুযায়ী আমল কর এবং দৃঢ় প্রত্যয় অর্জিত হলে তার ওপর ভিত্তি করে অগ্রসর হও।

উক্তি নং - ২৮৫

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ الطَّمَعَ مُورِدٌ غَيْرُ مُصْدِرٍ، وَ ضَامِنٌ غَيْرُ وَفِيِّ. وَ رُبَّمَا شَرِقَ شَارِبُ الْمَأِ قَبْلَ رِيِّهِ؛ وَ كُلَّمَا عَظُمَ قَدْرُ الشَّيْءِ الْمُتَنَافَسِ فِيهِ عَظُمَتِ الرَّزِيَّةُ لِفَقْدِهِ. وَ الْأَمَانِيُّ تُعْمِي أَعْيُنَ الْبَصَائِرِ، وَ الْحَظُّ يَأْتِي مَنْ لاَ يَأْتِيهِ.

লোভ মানুষকে জলাশয়ের কাছে টেনে নিয়ে যায়। কিন্তু পানি পান করানো ছাড়াই আবার টেনে ফেরত নিয়ে আসে। লোভ দায়িত্ব গ্রহণ করে কিন্তু তা পরিপূর্ণ করে না। লোভাতুর ব্যক্তি তৃষ্ণা মেটার আগেই অনেক সময় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়ে। কোন কিছু পাবার আকুল আকাঙ্খা যত বেশি হবে তা না পেলে দুঃখও তত বেশি হবে। লোভ - লালসা বোধগম্যতার চক্ষু অন্ধ করে দেয়। যা ভাগ্যে নির্ধারিত আছে তা না চাইলেও পৌছে যাবে।

উক্তি নং - ২৮৬

وَ قَالَعليه‌السلام : اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ تُحَسِّنَ فِي لاَمِعَةِ الْعُيُونِ عَلاَنِيَتِي، وَ تُقَبِّحَ فِيمَا أُبْطِنُ لَكَ سَرِيرَتِي، مُحَافِظا عَلَى رِئَأِ النَّاسِ مِنْ نَفْسِي بِجَمِيعِ مَا أَنْتَ مُطَّلِعٌ عَلَيْهِ مِنِّي، فَأُبْدِيَ لِلنَّاسِ حُسْنَ ظَاهِرِي، وَ أُفْضِيَ إِلَيْكَ بِسُوءِ عَمَلِي، تَقَرُّبا إِلَى عِبَادِكَ، وَ تَبَاعُدا مِنْ مَرْضَاتِكَ.

হে আমার আল্লাহ ,আমি তোমার কাছে সেই অবস্থা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি ,যে অবস্থায় মানুষ বাহ্যিকভাবে আমাকে ভালো বলে দেখবে অথচ আমার বাতেন তোমার দরবারে পাপপূর্ণ থাকবে । আমি সেই অবস্থা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি ,যে অবস্থায় একজন রিয়াকার হিসাবে লোক দেখানোর জন্য পাপ থেকে নিজকে মুক্ত রাখার কাজ করি। অথচ আমার বাতেন সম্পর্কে তুমিই ভালো জান। সেই অবস্থা থেকে আশ্রয় চাই যাতে মানুষের কাছে ভালো সেজে থাকি আর তোমার কাছে সব পাপ প্রকাশ পায় এবং এতে করে তোমার বান্দাদের নৈকট্য লাভ করি। অথচ তোমার সন্তুষ্টি থেকে দূরে সরে থাকি।

উক্তি নং - ২৮৭

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ وَالَّذِي أَمْسَيْنَا مِنْهُ فِي غُبْرِ لَيْلَةٍ دَهْمَاءَ، تَكْشِرُ عَنْ يَوْمٍ أَغَرّ،َ مَا كَانَ كَذَا وَ كَذَا.

আমি তার শপথ করে বলছি ,যিনি আমাদেরকে রাতের অন্ধকারের পর দিনের আলোতে অতিক্রম করতে দেন ,যে অমুক অমুক বিষয় ঘটেনি।

____________________

১। আশ - শরীফ আর - রাজী বিষয়গুলো কী তা উল্লেখ না করে চিরতরে গোপন রেখে গেছেন যা আজ আর জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।

উক্তি নং - ২৮৮

وَ قَالَعليه‌السلام : قَلِيلٌ تَدُومُ عَلَيْهِ أَرْجَى مِنْ كَثِيرٍ مَمْلُولٍ مِنْهُ.

নিয়মিত পালিত ক্ষুদ্র আমল বিরাগপূর্ণ দীর্ঘ আমল থেকে অনেক ভালো ও উপকারী।

উক্তি নং - ২৮৯

وَ قَالَعليه‌السلام : إِذَا أَضَرَّتِ النَّوَافِلُ بِالْفَرَائِضِ فَارْفُضُوهَا.

যখন ঐচ্ছিক বিষয়াদি অবশ্যকরণীয় বিষয়ের বাধা হয়ে দাড়ায় তখন তা পরিত্যাগ করো।

উক্তি নং - ২৯০

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ تَذَكَّرَ بُعْدَ السَّفَرِ اسْتَعَدَّ.

যে কেউ ভ্রমণের দূরত্ব সম্পর্কে সজাগ হয় সে প্রস্তুত থাকে।

উক্তি নং - ২৯১

وَ قَالَعليه‌السلام : لَيْسَتِ الرَّوِيَّةُ مَعَ الْإِبْصَارِ فَقَدْ تَكْذِبُ الْعُيُونُ أَهْلَهَا وَ لاَ يَغُشُّ الْعَقْلُ مَنِ اسْتَنْصَحَهُ.

চোখের প্রত্যক্ষণ প্রকৃত পর্যবেক্ষণ নয় কারণ চোখ অনেক সময় ধোকা দেয় ;কিন্তু জ্ঞান যাকে পরামর্শ দেয় তাকে প্রতারণা করে না।

উক্তি নং - ২৯২

وَ قَالَعليه‌السلام : بَيْنَكُمْ وَ بَيْنَ الْمَوْعِظَةِ حِجَابٌ مِنَ الْغِرَّةِ.

সদোপদেশ আর তোমাদের মাঝখানে একটা প্রবঞ্চনার পর্দা রয়েছে।

উক্তি নং - ২৯৩

وَ قَالَعليه‌السلام : جَاهِلُكُمْ مُزْدَادٌ، وَ عَالِمُكُمْ مُسَوِّفٌ.

তোমাদের মধ্যকার অজ্ঞগণ অনেক বেশি পায় আবার শিক্ষিতগণও বঞ্চিত হয় ।

উক্তি নং - ২৯৪

وَ قَالَعليه‌السلام : قَطَعَ الْعِلْمُ عُذْرَ الْمُتَعَلِّلِينَ.

যারা ওজর দেখায় জ্ঞান তাদের ওজরকে দূরীভূত করে।

উক্তি নং - ২৯৫

وَ قَالَعليه‌السلام : كُلُّ مُعَاجَلٍ يَسْأَلُ الْإِنْظَارَ وَ كُلُّ مُؤَجَّلٍ يَتَعَلَّلُ بِالتَّسْوِيفِ.

কারো মৃত্যুবৎ অবস্থা হলে সে কেবল সময় চায় ,কিন্তু মৃত্যু সরে গেলে ভালো কাজ স্থগিত রাখার নানা ওজর দেখায় ।

উক্তি নং - ২৯৬

مَا قَالَ النَّاسُ لِشَيْءٍ «طُوبَى لَهُ» إِلا وَ قَدْ خَبَأَ لَهُ الدَّهْرُ يَوْمَ سَوْءٍ.

মানুষ যত কিছুতে বলে , কতই না ভালো ’ তার সব কিছুতেই মন্দ নিহিত আছে।

উক্তি নং - ২৯৭

و سئل عن القدر، فقال: طَرِيقٌ مُظْلِمٌ فَلاَ تَسْلُكُوهُ، وَ بَحْرٌ عَمِيقٌ فَلاَ تَلِجُوهُ، وَ سِرُّ اللَّهِ فَلاَ تَتَكَلَّفُوهُ.

কেউ একজন অদৃষ্ট সম্পর্কে আমিরুল মোমেনিনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন , এটা অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ ,এদিকে পা বাড়িয়ো না ;এটা গভীর সমুদ্র - এতে ডুব দিয়ো না ;এটা আল্লাহর বিষয় - এটা জানতে অযথা চেষ্টা করো না। ”

উক্তি নং - ২৯৮

وَ قَالَعليه‌السلام : إِذَا أَرْذَلَ اللَّهُ عَبْدا حَظَرَ عَلَيْهِ الْعِلْمَ.

আল্লাহ যখন কাউকে অপমানিত করতে চান তখন তার কাছ থেকে জ্ঞান তুলে নিয়ে যান।

উক্তি নং - ২৯৯

وَ قَالَعليه‌السلام : كَانَ لِي فِيمَا مَضَى أَخٌ فِي اللَّهِ، وَ كَانَ يُعْظِمُهُ فِي عَيْنِي صِغَرُ الدُّنْيَا فِي عَيْنِهِ. وَ كَانَ خَارِجا مِنْ سُلْطَانِ بَطْنِهِ، فَلاَ يَشْتَهِي مَا لاَ يَجِدُ وَ لاَ يُكْثِرُ إِذَا وَجَدَ. وَ كَانَ أَكْثَرَ دَهْرِهِ صَامِتاً، فَإِنْ قَالَ بَذَّ الْقَائِلِينَ، وَ نَقَعَ غَلِيلَ السَّائِلِينَ. وَ كَانَ ضَعِيفا مُسْتَضْعَفاً! فَإِنْ جَأَ الْجِدُّ فَهُوَ غابٍ، وَصِلُّ وَادٍ، لاَ يُدْلِي بِحُجَّةٍ حَتَّى يَأْتِيَ قَاضِياً. وَ كَانَ لاَ يَلُومُ أَحَداً عَلَى مَا يَجِدُ الْعُذْرَ فِي مِثْلِهِ، حَتَّى يَسْمَعَ اعْتِذَارَهُ؛ وَ كَانَ لاَ يَشْكُو وَجَعا إِلا عِنْدَ بُرْئِهِ؛ وَ كَانَ يَفْعَلُ مَا يَقُولُ وَ لاَ يَقُولُ مَا لاَ يَفْعَلُ؛ وَ كَانَ إِذَا غُلِبَ عَلَى الْكَلاَمِ لَمْ يُغْلَبْ عَلَى السُّكُوتِ، وَ كَانَ عَلَى مَا يَسْمَعُ أَحْرَصَ مِنْهُ عَلَى أَنْ يَتَكَلَّمَ؛ وَ كَانَ إِذَا بَدَهَهُ أَمْرَانِ نَظَرَ أَيُّهُمَا أَقْرَبُ إِلَى الْهَوَى فَخَالِفُهُ، فَعَلَيْكُمْ بِهَذِهِ الْخَلاَئِقِ فَالْزَمُوهَا وَ تَنَافَسُوا فِيهَا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِيعُوهَا فَاعْلَمُوا أَنَّ أَخْذَ الْقَلِيلِ خَيْرٌ مِنْ تَرْكِ الْكَثِيرِ.

আমার একজন ইমানি ভাই ছিলেন। আমার দৃষ্টিতে তিনি সম্মানী ব্যক্তি ছিলেন ,কারণ তার কাছে দুনিয়া ছিল খুব হীন ,তার পেটের তাড়না তাকে নিয়ন্ত্রণ করেনি ,সে যা পায়নি তার জন্য কোন লালসা করেনি ,সে যা পেত তার অধিক যাচনা করেনি ;বেশির ভাগ সময় সে নিশ্চুপ থাকতো ,যদি সে কথা বলতো তবে অন্যদের নিশ্চুপ করে দিত ,সে প্রশ্নকারীদের তৃষ্ণা মিটিয়ে দিত ,সে দুর্বল ও কৃশকায় ছিল। কিন্তু জেহাদে সে সিংহের মত ছিল ,সিদ্ধান্তমূলক ছাড়া সে কোন যুক্তি দেখাতো না।

ক্ষমাযোগ্য কোন বিষয়ে ওজর না শুনে সে কখনো কাউকে গালি দিত না ,বিপদ চলে যাবার পূর্ব পর্যন্ত কাউকে কোন বিপদের কথা বলতো না ,সে যা করতে পারতো তাই বলতো ,যা করতে পারতো না তা বলতো না ,এমনকি কথার চেয়ে বেশি সে নিশ্চুপ থাকতো ,কথার চেয়ে নীরবতা রক্ষা করাতে তার বেশি আগ্রহ ছিল ,দুটি জিনিস তার কাছে এলে সে পরখ করে দেখতো কোনটির প্রতি তার হৃদয়ে লালসা বেশি - তখনই সে তা পরিত্যাগ করতো।

এসব গুণাবলী অর্জন করা তোমাদের দরকার। সুতরাং তোমরা এগুলোতে একে অপরকে অতিক্রম করার চেষ্টা করবে। এমনকি এগুলোর সব ক টি অর্জন করতে না পারলেও আংশিক অর্জন সম্পূর্ণটুকু পরিত্যাগ অপেক্ষা অনেক ভালো।

____________________

১ । এ বাণীতে আমিরুল মোমেনিন যে ব্যক্তির গুণাবলীর কথা উল্লেখ করেছেন তার নাম সম্পর্কে টীকাকার গণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে । কেউ কেউ মনে করেন , তিনি হলেন আবু মিকদাল ইবনে আসওয়াদ আল - কিন্দি । এমনও হতে পারে যে ,আমিরুল মোমেনিন ইমানি ভ্রাতা বলতে কাউকেই বুঝান নি ,কারণ আরবি বাচন ভঙ্গীতে আরবগণ ভাই অথবা সাথী বলে কথা বলতো যদিও তাতে কোন ব্যক্তি বিশেষকে বুঝানো হতো না ।

উক্তি নং - ৩০০

وَ قَالَعليه‌السلام : لَوْ لَمْ يَتَوَعَّدِ اللَّهُ عَلَى مَعْصِيَتِهِ لَكَانَ يَجِبُ أَنْ لا يُعْصَى شُكْرا لِنَعمِهِ.

আল্লাহ যদি শাস্তির জন্য সতর্ক নাও করতেন তবুও তার নেয়ামতের জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তাঁর অনুগত হওয়া অবশ্যকর্তব্য হতো।

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ৩০১ - ৩২০

উক্তি নং - ৩০১

يَا أَشْعَثُ، إِنْ تَحْزَنْ عَلَى ابْنِكَ فَقَدِ اسْتَحَقَّتْ مِنْكَ ذَلِكَ الرَّحِمُ، وَ إِنْ تَصْبِرْ فَفِي اللَّهِ مِنْ كُلِّ مُصِيبَةٍ خَلَفٌ. يَا أَشْعَثُ، إِنْ صَبَرْتَ جَرَى عَلَيْكَ الْقَدَرُ وَ أَنْتَ مَأْجُورٌ، وَ إِنْ جَزِعْتَ جَرَى عَلَيْكَ الْقَدَرُ وَ أَنْتَ مَأْزُورٌ. يَا أَشْعَثُ، ابْنُكَ سَرَّكَ وَ هُوَ بَلاَءٌ وَ فِتْنَةٌ، وَ حَزَنَكَ وَ هُوَ ثَوَابٌ وَ رَحْمَةٌ.

আশআছ ইবনে কায়েসের পুত্রের মৃত্যুতে আমিরুল মোমেনিন তাকে সন্তুনা দিয়ে বলেনঃ হে আশআছ। যদি তুমি তোমার পুত্রের জন্য শোক প্রকাশ কর তবে নিশ্চয়ই তা রক্তের টানে করা হবে ;আর যদি তুমি সবুর কর তবে মনে রেখো ,প্রতিটি দুঃখের জন্য আল্লাহ সমতুল্য বিনিময় দিয়ে থাকেন। হে আশআছ ,তুমি সবুর করলেও সব কিছুই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিতভাবে চলবে ;কিন্তু সবুরের ক্ষেত্রে তুমি পুরস্কার পাবার যোগ্য হবে। আবার তুমি সবুর না করলেও একইভাবে পাপের বোঝা বইতে হবে। হে আশআছ ,তোমার পুত্র জীবিত থাকতে তোমাকে আনন্দ দিয়েছে কিন্তু তখন সে ছিল তোমার জন্য পরীক্ষা ও দুঃখের কারণ। এখন সে মারা গেছে - এটা তোমাকে শোকাহত করেছে কিন্তু তা তোমার জন্য পুরস্কার ও রহমতের উৎস প্রমাণিত হয়েছে।

উক্তি নং - ৩০২

وَ قَالَعليه‌السلام ، عَلَى قَبْرِ رَسُولِ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم سَاعَةَ دَفْنَه: إِنَّ الصَّبْرَ لَجَمِيلٌ إِلا عَنْكَ، وَ إِنَّ الْجَزَعَ لَقَبِيحٌ إِلا عَلَيْكَ، وَ إِنَّ الْمُصَابَ بِكَ لَجَلِيلٌ، وَ إِنَّهُ قَبْلَكَ وَ بَعْدَكَ لَجَلَلٌ.

রাসূলের (সা.) দাফন শেষে রওজা মোবারকের পাশে দাঁড়িয়ে আমিরুল মোমেনিন বলেন নিশ্চয় ,আপনার অভাব ব্যতীত অন্য সব কিছুতে সবুর করা ভালো এবং আপনার অভাব ব্যতীত অন্য সব কিছুতে ব্যাকুল (অস্থির) হওয়া মন্দ এবং আপনাকে হারানোর যন্ত্রণা অতীত ও ভবিষ্যতের সকল যন্ত্রণা অপেক্ষা তীব্র। ”

উক্তি নং - ৩০৩

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ تَصْحَبِ الْمَائِقَ فَإِنَّهُ يُزَيِّنُ لَكَ فِعْلَهُ، وَ يَوَدُّ أَنْ تَكُونَ مِثْلَهُ.

মুখের সঙ্গে মেলামেশা করো না। কারণ সে তার আমলসমূহ তোমার সামনে সুন্দর করে তুলে ধরবে এবং আশা কববে তুমি যেন তার মতো হও।

উক্তি নং - ৩০৪

وَ قَدْ سُئِلَ عَنْ مَسَافَةِ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَ الْمَغْرِبِ، فَقَالَعليه‌السلام: مَسِيرَةُ يَوْمٍ لِلشَّمْسِ.

এক ব্যক্তি পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্ব জানতে চেয়ে আমিরুল মোমেনিনকে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন , সূর্যের অহ্নিকগতির সমান বা সূর্যের এক দিনের ভ্রমণের সমান। ”

উক্তি নং - ৩০৫

وَ قَالَعليه‌السلام : أَصْدِقَاؤُكَ ثَلاَثَةٌ، وَ أَعْدَاؤُكَ ثَلاَثَةٌ؛ فَأَصْدِقَاؤُكَ: صَدِيقُكَ، وَ صَدِيقُ صَدِيقِكَ، وَ عَدُوُّ. عَدُوِّكَ. وَ أَعْدَاؤُكَ: عَدُوُّكَ، وَ عَدُوُّ صَدِيقِكَ وَ صَدِيقُ عَدُوِّكَ.

তোমার বন্ধু হলো ৩ জন। আর শক্র হলো ৩ জন। বন্ধু ৩ জন হলো - তোমার বন্ধু ,বন্ধুর বন্ধু এবং শক্রর শত্রু। আর শত্রু ৩ জন হলো - তোমার শত্রু ,তোমার বন্ধুর শত্রু এবং তোমার শক্রর বন্ধু।

উক্তি নং - ৩০৬

وَ قَالَعليه‌السلام: لِرَجُلٍ رَآهُ يَسْعَى عَلَى عَدُوِّلَهُ، بِمَا فِيهِ إِضْرَارٌ بِنَفْسِهِ: إِنَّمَا أَنْتَ كَالطَّاعِنِ نَفْسَهُ لِيَقْتُلَ رِدْفَهُ.

এক ব্যক্তিকে তার শত্রুর বিরুদ্ধে অত্যন্ত তৎপর (যা তার নিজের জন্যও ক্ষতিকর) দেখে আমিরুল মোমেনিন বললেন , তোমার কর্ম তৎপরতা এমন যে ,নিজের পিছনে উপবিষ্ট শক্রকে হত্যা করার জন্য নিজের বক্ষ বিদীর্ণ করে বর্শাবিদ্ধ করার মতো। ”

উক্তি নং - ৩০৭

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا أَكْثَرَ الْعِبَرَ وَ أَقَلَّ الاِعْتِبَارَ!

শিক্ষা প্রদানের উদ্দিষ্ট ব্যক্তি অনেক কিন্তু শিক্ষা গ্রহণকারীর সংখ্যা অতি অল্প।

উক্তি নং - ৩০৮

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ بَالَغَ فِي الْخُصُومَةِ أَثِمَ، وَ مَنْ قَصَّرَ فِيهَا ظُلِمَ.

যে বেশি ঝগড়া - বিবাদ করে সে পাপী ;যে করে না সে অত্যাচারিত হয়।

উক্তি নং - ৩০৯

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا أَهَمَّنِي ذَنْبٌ أُمْهِلْتُ بَعْدَهُ حَتَّى أُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ وَ أَسْأَلَ اللَّهَ الْعَافِيَةَ.

ঝগড়া - বিবাদকারীর পক্ষে আল্লাহকে ভয় করা কষ্টকর। আমি সে ভুলের জন্য উদ্বীগ্ন নই যে ভুলের পর দুরাকাত সালাত আদায় করে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনার সময় পাই ।

উক্তি নং - ৩১০

وَ سُئِلَعليه‌السلام : كَيْفَ يُحَاسِبُ اللَّهُ الْخَلْقَ عَلَى كَثْرَتِهِمْ؟ فَقَالَعليه‌السلام : كَمَا يَرْزُقُهُمْ عَلَى كَثْرَتِهِمْ. فَقِيلَ: كَيْفَ يُحَاسِبُهُمْ وَ لاَ يَرَوْنَهُ؟ فَقَالَعليه‌السلام : كَمَا يَرْزُقُهُمْ وَ لاَ يَرَوْنَهُ.

কেউ একজন আমিরুল মোমেনিনকে জিজ্ঞেস করলো , এত বিপুল সংখ্যক লোকের হিসাবনিকাশ আল্লাহ কিভাবে নেবেন। ” প্রত্যুত্তরে বললেন , বিপুল সংখ্যক হওয়া সত্ত্বেও যেভাবে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করেছেন। ” আবার জিজ্ঞেস করা হলো , তারা তো আল্লাহকে দেখতে পায় না সেক্ষেত্রে কিভাবে তিনি হিসাব - নিকাশ নেবেন। ” উত্তরে বললেন , তিনি অদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও যেভাবে জীবিকার ব্যবস্থা করেন। ”

উক্তি নং - ৩১১

وَ قَالَعليه‌السلام : رَسُولُكَ تَرْجُمَانُ عَقْلِكَ، وَ كِتَابُكَ أَبْلَغُ مَا يَنْطِقُ عَنْكَ!.

তোমার দূত তোমার বুদ্ধিমত্তার ব্যাখ্যাকারক কিন্তু তোমার পত্রের বাগ্মীতা তোমার প্রকৃত অবস্থা প্রকাশে যথেষ্ট ।

উক্তি নং - ৩১২

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا الْمُبْتَلَى الَّذِي قَدِ اشْتَدَّ بِهِ الْبَلاَءُ، بِأَحْوَجَ إِلَى الدُّعَأِ مِنَ الْمُعافَى الَّذِي لاَ يَأْمَنُ الْبَلاَءَ!

যে ব্যক্তিকে অভাব অনটনে দুর্দশাগ্রস্ত করা হয়েছে ,তার ওই ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক ইবাদত করার প্রয়োজন নেই যে দুর্দশাগ্রস্ত নয় এবং ইবাদত থেকে রেহাই প্রাপ্ত নয়।

উক্তি নং - ৩১৩

وَ قَالَعليه‌السلام : النَّاسُ أَبْنَأُ الدُّنْيَا، وَ لاَ يُلاَمُ الرَّجُلُ عَلَى حُبِّ أُمِّهِ.

মানুষ পৃথিবীর সন্তান এবং মাকে ভালোবাসার জন্য কাউকে দোষারোপ করা যায় না।

উক্তি নং - ৩১৪

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ الْمِسْكِينَ رَسُولُ اللَّهِ فَمَنْ مَنَعَهُ فَقَدْ مَنَعَ اللَّهَ، وَ مَنْ أَعْطَاهُ فَقَدْ أَعْطَى اللَّهَ.

আল্লাহর রাসূল হলেন মিসকিন । যে কেউ তাকে ফিরিয়ে দেবে সে আল্লাহকে ফিরিয়ে দেবে। যে তাকে দান করবে। সে আল্লাহকে দান করবে।

উক্তি নং - ৩১৫

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا زَنَى غَيُورٌ قَطُّ.

আত্ম - সম্মানবোধ সম্পন্ন লোক কখনো ব্যভিচার করতে পারে না।

উক্তি নং - ৩১৬

وَ قَالَعليه‌السلام : كَفَى بِالْأَجَلِ حَارِسا.

জীবনের নির্ধারিত সময়সীমা সতর্ক থাকার জন্য যথেষ্ট ।

উক্তি নং - ৩১৭

وَ قَالَعليه‌السلام: يَنَامُ الرَّجُلُ عَلَى الثُّكْلِ، وَ لاَ يَنَامُ عَلَى الْحَرَبِ!

মানুষ সন্তানের মৃত্যুতেও ঘুমাতে পারে কিন্তু সম্পদ হারালে ঘুমাতে পারে না।

উক্তি নং - ৩১৮

وَ قَالَعليه‌السلام : مَوَدَّةُ الْآبَأِ قَرَابَةٌ بَيْنَ الْأَبْنَأِ، وَ الْقَرَابَةُ أَحْوَجُ إِلَى الْمَوَدَّةِ مِنَ الْمَوَدَّةِ إِلَى الْقَرَابَةِ.

পিতাদের মধ্যে পারস্পরিক মমত্ববোধ সন্তানদের মধ্যে আত্মীয়তার সৃষ্টি করে। মমত্ববোধ থেকে আত্মীয়তা অপেক্ষা আত্মীয়তা থেকে মমতা অধিক প্রয়োজনীয়।

উক্তি নং - ৩১৯

وَ قَالَعليه‌السلام : اتَّقُوا ظُنُونَ الْمُؤْمِنِينَ، فَإِنَّ اللَّهَ تعالی جَعَلَ الْحَقَّ عَلَى أَلْسِنَتِهِمْ.

ইমানদারদের ধ্যান - ধারণাকে ভয় করো কারণ মহিমান্বিত আল্লাহ তাদের কথায় সত্য নিহিত করেছেন।

উক্তি নং - ৩২০

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ يَصْدُقُ إِيمَانُ عَبْدٍ حَتَّى يَكُونَ بِمَا فِي يَدِ اللَّهِ سَبْحانَهُ أَوْثَقَ مِنْهُ بِمَا فِي يَدِهِ.

কোন ব্যক্তির বিশ্বাসকে ততক্ষণ পর্যন্ত সত্য বলে ধরে নেয়া যায় না যতক্ষণ তার নিজের যা আছে তদপেক্ষা আল্লাহতে যা আছে তৎপ্রতি অধিক বিশ্বাস না করে।

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ৩২১ - ৩৪০

উক্তি নং - ৩২১

وَ قَالَعليه‌السلام لأنس بن مالک، وَ قَد كَانَ بَعَثَهُ إِلَى طَلْحَةَ وَالزُّبَيْرِ لَمَّا جَأَ إِلَى الْبَصْرَةِ يُذَكِّرُهُمَا شَيْئا مِمَّا سَمِعَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم فِي مَعْنَاهُمَا، فَلَوى عَنْ ذَلِكَ، فَرَجَعَ إِلَيْهِ، فَقَالَ:

إِنِّي أُنْسِيتُ ذَلِكَ ألْأَمْرَ، فقالعليه‌السلام : إِنْ كُنْتَ كَاذِباً فَضَرَبَكَ اللَّهُ بِهَا بَيْضَأَ لاَمِعَةً لاَ تُوَارِيهَا الْعِمَامَةُ.

আমিরুল মোমেনিন যখন জামালের যুদ্ধের জন্য বসরায় এসেছিলেন তখন তিনি আনাস ইবনে মালিককে তালহা ও জুবায়েরের নিকট প্রেরণ করে বলেছিলেন ,এ দুব্যক্তি সম্পর্কে আনাস রাসূলের (সা.) কাছে যা শুনেছিল তা যেন তাদেরকে মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু আনাস তা করেনি। সে ফিরে এসে আমিরুল মোমেনিনকে বললো ,রাসূল (সা.) যা বলেছিলেন তা বলতে সে ভুলে গেছে। এতে আমিরুল মোমেনিন বললেন যদি তুমি মিথ্যা বলে থাক তবে আল্লাহ তোমাকে শ্বেতীরোগ দিন যা পাগড়ি দ্বারা ঢাকা না যায় ।

___________________

১ । এটা সর্বজন স্বীকৃত যে রাসূল (সা.) একদিন তালহা ও জুবায়েরকে বলেছিলেন , তোমরা দুজন আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং তার সাথে বাড়াবাড়ি করবে । ” রাসূলের (সাঃ) এ বাণী তালাহা ও জুবায়েরকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য আনাসকে প্রেরণ করা হয়েছিল । কারো কারো মতে রাসূলের (সা.) যে বাণী তালহা ও জুবায়েরকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য আনাসকে প্রেরণ করা হয়েছিল তা হলো , আমি যার মাওলা আলী তার মাওলা ! হে আল্লাহ ,আলীকে যে ভালোবাসে তুমি তাকে ভালোবেসো এবং আলীকে যে ঘৃণা করে তুমি তাকে ঘৃণা করো । ” আমিরুল মোমেনিন বললেন , তুমি নিজেই তো গাদিরে খুমে উপস্থিত ছিলে । তবুও কেন এ কথাটি বললে না। ” আনাস উত্তর দিল , আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি তাই স্মৃতিশক্তি তেমন কাজ করে না ” । এতে আমিরুল মোমেনিন তাকে উপরোক্ত অভিশাপ দেন (বালাজুরী ,পৃঃ ১৫৬ - ১৫৭: রুস্তাহ ,পৃঃ ২২১ ;ছাআলিবী ,পৃঃ ১০৫ - ১০৬ ;ইসফাহানী ’ ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ২৯৩ ;হাদীদ , ৪র্থ খণ্ড ,পৃ .৭৪ ;হানাফী , পৃ .৫৭৮ ;কুতায়বা , ৫৮০)

উক্তি নং - ৩২২

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ لِلْقُلُوبِ إِقْبَالاً وَ إِدْبَارا، فَإِذَا أَقْبَلَتْ فَاحْمِلُوهَا عَلَى النَّوَافِلِ، وَ إِذَا أَدْبَرَتْ فَاقْتَصِرُوا بِهَا عَلَى الْفَرَائِضِ.

মানুষের মন (ইবাদতের দিকে) কখনো ঝুকে পড়ে আবার কখনো ইবাদতে অনীহা হয়। যখন মন ঝুকে পড়ে তখন নফল ইবাদতও করা দরকার। আবার যখন অনীহা এসে যায় তখন শুধু আবশ্যিক ইবাদতে সীমাবদ্ধ থাকা ভালো ।

উক্তি নং - ৩২৩

وَ قَالَعليه‌السلام : فِي الْقُرْآنِ نَبَأُ مَا قَبْلَكُمْ، وَ خَبَرُ مَا بَعْدَكُمْ، وَ حُكْمُ مَا بَيْنَكُمْ.

কুরআনে রয়েছে অতীতের খবর ,ভবিষ্যতের পূর্বাভাস এবং বর্তমানের জন্য আদেশ ।

উক্তি নং - ৩২৪

وَ قَالَعليه‌السلام : رُدُّوا الْحَجَرَ مِنْ حَيْثُ جَاءَ، فَإِنَّ الشَّرَّ لاَ يَدْفَعُهُ إِلا الشَّرُّ.

তোমার কাছে কেউ মন্দ পরামর্শ চাইতে এলে পাথর নিক্ষেপ করো (শয়তানকে যে ভাবে নিক্ষেপ করে) কারণ শয়তানই শুধু শয়তানি কর্ম নিয়ে চিন্তা করে।

উক্তি নং - ৩২৫

وَ قَالَعليه‌السلام لِكَاتِبِهِ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ: أَلِقْ دَوَاتَكَ، وَ أَطِلْ جِلْفَةَ قَلَمِكَ، وَ فَرِّجْ بَيْنَ السُّطُورِ، وَ قَرْمِطْ بَيْنَ الْحُرُوفِ، فَإِنَّ ذَلِكَ أَجْدَرُ بِصَبَاحَةِ الْخَطِّ.

আমিরুল মোমেনিন তাঁর সচিব উবায়দুল্লাহ ইবনে রাফিকে বলেন ,তোমার কালির দোয়াতে তুলার টুকরা দিয়ে দিয়ো ,তোমার কলমের নিব লম্বা রেখো ,দুলাইনের মধ্যে ফাঁক রেখো এবং অক্ষরগুলোর একটা অপরটার সঙ্গে লাগিয়ে দিয়ো কারণ এটাই লেখার সৌন্দর্য।

উক্তি নং - ৩২৬

وَ قَالَعليه‌السلام : أَنَا يَعْسُوبُ الْمُؤْمِنِينَ، وَ الْمَالُ يَعْسُوبُ الْفُجَّارِ.

আমি মোমেনের ইয়াসুব আর সম্পদ দুষ্টদের ইয়াসুব

____________________

১। ২৬২ নং বাণীতে ইয়াসুব ’ শব্দের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। তা ছাড়াও আবু লায়লা গিফারী ,আবুজর ,সালমান ,ইবনে আব্বাস ও হুজায়ফা ইবনে ইয়ামান থেকে বর্ণিত আছে যে ,রাসূল (সা.) বলেছেনঃ আমার মৃত্যুর পরপরই বিভিন্ন বিষয়ে মতভেদ দেখা দেবে। এ সময় তোমরা আলী ইবনে আবি তালিবকে অনুসরণ করো । কারণ শেষ বিচারের দিন সে হবে প্রথম ব্যক্তি যে আমাকে দেখবে এবং আমার সাথে করমর্দন করবে। সে হলো সাদিক আল - আকবর (সত্যের মাহপূজারী) ,আমার উম্মতের মধ্যে সে সর্বশ্রেষ্ঠ ফারুক (সত্য - মিথ্যার প্রভেদকারী) এবং সে হলো মোমেনগণের ইয়াসুব ” আর সম্পদ হলো মোনাফেকদের ইয়াসুব । (শাফী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৩৫৮ ;হিন্দি ,১২শ খণ্ড ,পৃঃ ২১৪ ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৩ হাদীদ ,১৩শ খণ্ড ,২২৮ আসাকীর ,৯মখণ্ড , পৃঃ ৭৪ - ৭৮ ; কুন্দুজী , পৃ . ৬২ , ৮২ , ২০১ , ২৫১ )

উক্তি নং - ৩২৭

وَ قَالَ لَهُ بَعْضُ الْيَهُودِ: مَا دَفَنْتُمْ نَبِيَّكُمْ حَتَّى اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ. وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّمَا اخْتَلَفْنَا عَنْهُ لاَ فِيهِ؛ وَ لَكِنَّكُمْ مَا جَفَّتْ أَرْجُلُكُمْ مِنَ الْبَحْرِ حَتَّى قُلْتُمْ لِنَبِيِّكُمْ:( اجْعَل لَّنَا إِلَـٰهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ ) .

কয়েকজন ইহুদি আমিরুল মোমেনিনকে বললো , তোমাদের নবীকে কবরস্থ করতে না করতেই তোমরা তার সম্পর্কে মতভেদ করছো । আমিরুল মোমেনিন প্রত্যুত্তরে বললেন , তার সম্পর্কে আমাদের কোন মতদ্বৈধতা নেই। মতদ্বৈধতা সৃষ্টি হয়েছে তাঁর পরে তাঁর উত্তরাধিকার ও স্থলাভিসিক্তের ব্যাপারে। অপরপক্ষে নীলনদ পার হয়ে পায়ের পানি না শুকাতেই তোমরা তোমাদের নবীকে বলেছো , এদের যেমন ঈশ্বর আছে আমাদের জন্য সেরূপ একটি ঈশ্বর তৈরি কর । তিনি বললেন নিশ্চয়ই তোমরা অজ্ঞ লোকের মতো আচরণ কর ” (কুরআন - ৭ : ১৩৮)

উক্তি নং - ৩২৮

وَ قِيلَ لَهُعليه‌السلام : بِأَيِّ شَيْءٍ غَلَبْتَ الْأَقْرَانَ؟ فَقَالَ: مَا لَقِيتُ أحدا إِلا أَعَانَنِي عَلَى نَفْسِهِ. يُومىٌ بِذَلِكَ إ لَى تَمُكِّنِ هَيْبَتِهِ في الْقُلُوبِ.

এক ব্যক্তি আমিরুল মোমেনিনকে বললো ,কিসের দ্বারা আপনি আপনার প্রতিপক্ষকে পরাভূত করেন। তিনি বললো ,যখনই আমি শক্রর মোকাবেলা করি তখন সে নিজেই তার বিরুদ্ধে আমাকে সহায়তা করে।

____________________

১ । এটা একটা সুন্দর আরবি বাচনভঙ্গী। শক্র নিজের বিরুদ্ধে সহায়তা করে - একথার মানে হচ্ছে। আমিরুল মোমেনিনের মোকাবেলা হলেই শত্রু তার সুনাম ও খ্যাতির কারণে মনোবল ও দৃঢ়তা হারিয়ে ফেলে । ফলে সে সহজে পরাভূত হয়।

উক্তি নং - ৩২৯

وَ قَالَعليه‌السلام : لاِبْنِهِ مُحَمَّدِ بْنِ الْحَنَفِيَّةِ: يَا بُنَيَّ، إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكَ الْفَقْرَ، فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنْهُ، فَإِنَّ الْفَقْرَ مَنْقَصَةٌ لِلدِّينِ، مَدْهَشَةٌ لِلْعَقْلِ، دَاعِيَةٌ لِلْمَقْتِ!.

আমিরুল মোমেনিন তাঁর পুত্র মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়াকে বলেছিলেন , হে আমার পুত্র ,আমার ভয় হয় পাছে দারিদ্র তোমাকে পাকড়াও করে। সুতরাং এ থেকে রক্ষা পাবার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো। কারণ দারিদ্র হলো দ্বীনি ইমানের স্বল্পতা ,বুদ্ধির বিহবলতা এবং তা একগুয়ে লোকের ঘৃণার উদ্রেক করে।

উক্তি নং - ৩৩০

وَ قَالَعليه‌السلام : لِسَائِلٍ سَأَلَهُ عَنْ مُعْضِلَةٍ: سَلْ تَفَقُّها، وَ لاَ تَسْأَلْ تَعَنُّتا، فَإِنَّ الْجَاهِلَ الْمُتَعَلِّمَ شَبِيهٌ بِالْعَالِمِ، وَ إِنَّ الْعَالِمَ الْمُتَعَسِّفَ (المتعنّف) شَبِيهٌ بِالْجَاهِلِ الْمُتَعَنِّتِ.

এক ব্যক্তি আমিরুল মোমেনিনকে নানা ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন ,বুঝার জন্য আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করো - সংশয় সৃষ্টির জন্য নয়। মনে রেখো ,যে অজ্ঞ ব্যক্তি শিখতে চায় সে শিক্ষিত লোকের মতো। অপরপক্ষে যে শিক্ষিত ব্যক্তি সংশয় সৃষ্টি করতে চায় সে অজ্ঞের চেয়েও অধম ।

উক্তি নং - ৩৩১

وَ قَالَعليه‌السلام : لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْعَبَّاسِ، وَ قَدْ أَشَارَ إِلَيْهِ فِي شَيْءٍ لَمْ يُوَافِقْ رَأْيَهُ: لَكَ أَنْ تُشِيرَ عَلَيَّ وَ أَرَى، فَإِنْ عَصَيْتُكَ فَأَطِعْنِي.

একবার আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস আমিরুল মোমেনিনের অভিমতের বিরুদ্ধে তাকে উপদেশ দিলে তিনি বললেন , তুমি শুধু আমাকে উপদেশ দিতে পার আমি ভেবে দেখবো কী করা যায়। যদি আমি তোমার উপদেশ অনুযায়ী কাজ না করি তবে তোমার উচিত হবে আমাকে অনুসরণ করা ” ।

উক্তি নং - ৩৩২

وَ رُوِيَ أَنَّهُعليه‌السلام ، لَمَّا وَرَدَ الْكُوفَةَ قَادِما مِنْ صِفِّينَ مَرَّ بِالشِّبَامِيِّينَ، فَسَمِعَ بُكَاءَ النِّسَأِ عَلَی قَتْلَى صِفِّينَ، وَ خَرَجَ إِلَيْهِ حَرْبُ بْنُ شُرَحْبِيلَ الشِّبَامِيِّ، وَ كَانَ مِنْ وُجُوهِ قَوْمِهِ، فَقَالَعليه‌السلام لَهُ:

أَ تَغْلِبُكُمْ (لا یغیلکم) نِسَاؤُكُمْ عَلَى مَا أَسْمَعُ؟ أَ لاَ تَنْهَوْنَهُنَّ عَنْ هَذَا الرَّنِينِ؟. وَ أَقْبَلَ حَرْبٌ يَمْشِي مَعَهُ، وَ هُوَعليه‌السلام رَاكِبٌ، فَقَالَعليه‌السلام :ارْجِعْ فَإِنَّ مَشْيَ مِثْلِكَ مَعَ مِثْلِي فِتْنَةٌ لِلْوَالِي، وَ مَذَلَّةٌ لِلْمُؤْمِنِ.

সিফফিন থেকে কুফায় ফেরার পথে আমিরুল মোমেনিন যখন শিবাম গোত্রের এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন সিফফিনে নিহতদের জন্য নারীর ক্রন্দন শুনতে পেলেন। এ সময় শিবাম গোত্রের নেতা হারব ইবনে সুরাহবিল আশ - শিবামী আমিরুল মোমেনিনের কাছে এলে তিনি বললেন ,

তোমাদের নারীরা কি তোমাদের নিয়ন্ত্রণ করে ? এভাবে চিৎকার করা থেকে তোমরা কি তাদের নিবৃত্ত কর না ? আমিরুল মোমেনিন ঘোড়ায় সওয়ার ছিলেন। হারব তাঁর সাথে হাটতেছিল। আমিরুল মোমেনিন বললেন , তুমি ফিরে যাও ;কারণ তোমার মতো লোক আমার সঙ্গে হাটলে এটা শাসকের জন্য অমঙ্গল আর ইমানদারের জন্য অমর্যাদাকর ” ।

উক্তি নং - ৩৩৩

وَ قَالَعليه‌السلام ، وَ قَدْ مَرَّ بِقَتْلَى الْخَوَارِجِ يَوْمَ النَّهْرَوَانِ: بُؤْساً لَكُمْ! لَقَدْ ضَرَّكُمْ مَنْ غَرَّكُمْ. فَقِيلَ لَهُ: مَنْ غَرَّهُمْ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ؟ فَقَالَ: الشَّيْطَانُ الْمُضِلُّ، وَ الْأَنْفُسُ الْأَمَّارَةُ بِالسُّوءِ، غَرَّتْهُمْ بِالْأَمَانِيِّ، وَ فَسَحَتْ لَهُمْ بِالْمَعَاصِي، وَ وَعَدَتْهُمُ الْإِظْهَارَ، فَاقْتَحَمَتْ بِهِمُ النَّارَ.

নাহরাওয়ানের যুদ্ধের পর আমিরুল মোমেনিন খারিজিদের মৃতদেহের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি বললেন তোমাদের ওপর আল্লাহর লানত ,তোমরা সে লোক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছো যে তোমাদের প্রতারণা করেছে ” । এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো , হে আমিরুল মোমেনিন ,কে তাদের প্রতারণা করেছে ? তিনি বললেন , শয়তান সেই প্রতারক। তাদের রিপু তাদেরকে কুপথে পরিচালনা করে কামনা - বাসনার মাধ্যমে এবং পাপে নিমজ্জিত হওয়াকে সহজ করে দেয় ;তাদেরকে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু পরিণামে আগুনে নিক্ষেপ করে ” ।

উক্তি নং - ৩৩৪

وَ قَالَعليه‌السلام : اتَّقُوا مَعَاصِيَ اللَّهِ فِي الْخَلَوَاتِ، فَإِنَّ الشَّاهِدَ هُوَ الْحَاكِمُ.

একাকীত্বে আল্লাহর অবাধ্য হওয়া সম্পর্কে সাবধান থেকো ;কারণ যিনি একাকীত্বের সাক্ষী তিনিই বিচারক ।

উক্তি নং - ৩৩৫

وَ قَالَعليه‌السلام ، لَمَّا بَلَغَهُ قَتْلُ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ: إِنَّ حُزْنَنَا عَلَيْهِ عَلَى قَدْرِ سُرُورِهِمْ بِهِ، إِلا أَنَّهُمْ نَقَصُوا بَغِيضاً، وَ نَقَصْنَا حَبِيباً.

যখন মুহাম্মদ ইবনে আবি বকরের নিহত হওয়ার সংবাদ আমিরুল মোমেনিনের কাছে পৌছলো তখন তিনি বললেন , তার মৃত্যুতে শত্রুরা যতটুকু আনন্দিত হয়েছে আমরা তার বহুগুণ বেশি শোকাহত হয়েছি। তাদের একজন শত্রু চলে গেল আর আমরা একজন বিশেষ বন্ধু হারালাম। ”

___________________

১। ৩৮ হিঃ সনে মুয়াবিয়া বিশাল বাহিনীসহ অমর ইবনে আল - আসকে মিশরে প্রেরণ করেছিল। ইবনুল মুহাম্মদ ইবনে আবি বকরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। যুদ্ধে মুহাম্মদ ইবনে আবি বকর নিহত হলেন। মুয়াবিয়া ইবনে হুদায়েজ তাঁর মৃতদেহ একটি মৃত গাধার পেটে ঢুকিয়ে জ্বলিয়ে দিয়েছিল। তখন মুহাম্মদের বয়স ছিল ২৮ বছর। বর্ণিত আছে যে ,মুহাম্মদের নিহত হবার খবর যখন তার মায়ের কাছে পৌছলো তখন তিনি ক্ষোভে - দুঃখে পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলেন। মুহাম্মদের বৈমাত্রেয় বোন আয়শা তার দুঃখে জীবিতকালে আর কখনো মাংশ খান নি। তিনি (আয়শা) মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান ,আমর ইবনুল আস ও মুয়াবিয়া ইবনে হুদায়েজকে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর অভিশাপ দিতেন।

মুহাম্মদের মৃত্যুতে আমিরুল মোমেনিন অত্যন্ত শোকাহত হয়েছিলেন। বসরায় অবস্থানকারী ইবনে আব্বাসকে অত্যন্ত শোকাতুর ভাষায় তিনি পত্র লিখেছিলেন। ইবনে আব্বাস আমিরুল মোমেনিনকে সান্তুনা দেয়ার জন্য কুফায় চলে এসেছিলেন। আমিরুল মোমেনিনের একজন গুপ্তচর সিরিয়া থেকে ফিরে এসে বললো , হে আমিরুল মোমেনিন ,মুয়াবিয়া যখন মুহাম্মদের মৃত্যু সংবাদ শুনতে পেয়েছে তখন সে মিনারে গিয়ে হত্যাকারীদের অনেক প্রশংসা করেছে এবং সিরিয়ার লোকেরা এত বেশি আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েছে যা এর আগে কখনো দেখা যায় নি। একথা শুনে আমিরুল মোমেনিন উপরোক্ত মন্তব্য করেন। মুহাম্মদ ইবনে আবি বকর সম্পর্কে আমিরুল মোমেনিনের বাণী ৬৭ নং খুৎবায় বর্ণনা করা হয়েছে (তাবারী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৪০০ - ৩৪১৪ ;আছীর ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৫২ - ৩৫৯ ;কাছীর ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৩১৩ - ৩১৭ ;ফিদা ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৭৯ ;হাদীদ ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ৮২ - ১০০ ;খালদুন। ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৮১ - ১৮২৭ ;বার ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ১৩৬৬ - ১৩৬৭ ;হাজর ,পৃঃ ৪৭২ - ৪৭৩ ;ছাকাকী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২৭৬ - ৩২২ ;বাকরী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২৩৮ - ২৩৯) ।

উক্তি নং - ৩৩৬

وَ قَالَعليه‌السلام : الْعُمُرُ الَّذِي أَعْذَرَ اللَّهُ فِيهِ إِلَى ابْنِ آدَمَ سِتُّونَ سَنَةً.

ষাট বছর বয়স পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের ওজর গ্রহণ করেন।

উক্তি নং - ৩৩৭

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا ظَفِرَ مَنْ ظَفِرَ الْإِثْمُ بِهِ، وَ الْغَالِبُ بِالشَّرِّ مَغْلُوبٌ.

পাপ যাকে পরাভূত করেছে সে বিজয়ী নয় এবং পাপের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করা প্রকৃতপক্ষে পরাভূত হওয়া।

উক্তি নং - ৩৩৮

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ فَرَضَ فِي أَمْوَالِ الْأَغْنِيَأِ أَقْوَاتَ الْفُقَرَاءِ: فَمَا جَاعَ فَقِيرٌ إِلا بِمَا مَتَعَ بِهِ غَنِيُّ، وَ اللَّهُ تَعَالَى سَائِلُهُمْ عَنْ ذَلِكَ.

আল্লাহ দুঃখীজনের জীবিকা ধনীদের সম্পদের মাঝে রেখেছেন। ফলে ,যখন কোন অভাবগ্রস্তলোক উপোস থাকে তখন বুঝতে হবে কোন ধনী ব্যক্তি তার সম্পদে অভাবগ্রস্ত লোকটির হিস্যা অস্বীকার করেছে। মহিমান্বিত আল্লাহ ধনী লোকদের এজন্য একদিন জিজ্ঞেস করবেন।

উক্তি নং - ৩৩৯

وَ قَالَعليه‌السلام : الاِسْتِغْنَأُ عَنِ الْعُذْرِ أَعَزُّ مِنَ الصِّدْقِ بِهِ.

দায়িত্ব পালনে সত্য - সঠিক ওজর দেখানো অপেক্ষা ওজর না দেখানোর অবস্থা অনেক ভালো।

উক্তি নং - ৩৪০

وَ قَالَعليه‌السلام : أَقَلُّ مَا يَلْزَمُكُمْ لِلَّهِ سُبْحانَهُ أَنْ لا تَسْتَعِينُوا بِنِعَمِهِ عَلَى مَعَاصِيهِ.

তোমাদের প্রতি আল্লাহর ন্যূনতম অধিকার হলো তোমরা তার নেয়ামতকে পাপ কাজে ব্যবহার করবে না ।

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ৩৪১ - ৩৬০

উক্তি নং - ৩৪১

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ جَعَلَ الطَّاعَةَ غَنِيمَةَ الْأَكْيَاسِ عِنْدَ تَفْرِيطِ الْعَجَزَةِ!.

কোন অসমর্থ ব্যক্তি যখন মহিমান্বিত আল্লাহর আনুগত্যের আমলসমূহ করতে না পারে তখন এটা পালন করা বুদ্ধিমানের একটা ভালো সুযোগ।

উক্তি নং - ৩৪২

وَ قَالَعليه‌السلام : السُّلْطَانُ وَزَعَةُ اللَّهِ فِي أَرْضِهِ.

এ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রহরীগণই সার্বভৌম।

উক্তি নং - ৩৪৩

وَ قَالَعليه‌السلام فِي صِفَةِ الْمُؤْمِنِ: الْمُؤْمِنُ بِشْرُهُ فِي وَجْهِهِ، وَ حُزْنُهُ فِي قَلْبِهِ، أَوْسَعُ شَيْءٍ صَدْرا، وَ أَذَلُّ شَيْءٍ نَفْسا، يَكْرَهُ الرِّفْعَةَ، وَ يَشْنَأُ السُّمْعَةَ. طَوِيلٌ غَمُّهُ، بَعِيدٌ هَمُّهُ، كَثِيرٌ صَمْتُهُ، مَشْغُولٌ وَقْتُهُ، شَكُورٌ صَبُورٌ، مَغْمُورٌ بِفِكْرَتِهِ، ضَنِينٌ بِخَلَّتِهِ، سَهْلُ الْخَلِيقَةِ، لَيِّنُ الْعَرِيكَةِ! نَفْسُهُ أَصْلَبُ مِنَ الصَّلْدِ، وَ هُوَ أَذَلُّ مِنَ الْعَبْدِ.

মুমিন ব্যক্তির গুণাবলী সম্পর্কে আমিরুল মোমেনিন আলী (আ.) বললেনঃ সে ব্যক্তি ইমানদার যার মুখমণ্ডল আনন্দোৎফুল্ল ,হৃদয় দুঃখ ভারাক্রান্ত ,প্রশস্ত বক্ষ (উদারতা পূর্ণ) এবং বিনয়াবনত মন। সে উচ্চ মর্যাদাকে ঘৃণা করে এবং সুনাম পছন্দ করে না। তার শোক স্থায়ী ,তার সাহস সুদূর প্রসারী ,তার নীরবতা অধিক ,অধিক সময় সে ব্যস্ত (আল্লাহর কাজে) । সে কৃতজ্ঞ ,সহীষ্ণু ,চিন্তায় মগ্ন ,বন্ধুত্বে সংযমী আচরণে মধুর ও মেজাজে কোমল। সে পাথরের চেয়ে শক্ত কিন্তু ক্রীতদাস অপেক্ষাও বিনয়ী।

উক্তি নং - ৩৪৪

وَ قَالَعليه‌السلام : لَوْ رَأَى الْعَبْدُ الْأَجَلَ وَ مَسِيرَهُ، لَأَبْغَضَ الْأَمَلَ وَ غُرُورَهُ.

যদি কোন ব্যক্তি জীবনের শেষ এবং তার শেষভাগ্য দেখতে পায় তখন সে কামনা - বাসনা ও এর বঞ্চনাকে ঘৃণা করতে শুরু করে।

উক্তি নং - ৩৪৫

وَ قَالَعليه‌السلام : لِكُلِّ امْرِئٍ فِي مَالِهِ شَرِيكَانِ؛ الْوَارِثُ، وَ الْحَوَادِثُ.

প্রত্যেক ব্যক্তির সম্পদে দু ধরনের অংশীদার রয়েছে উত্তরাধিকারী ও আকস্মিক।

উক্তি নং - ৩৪৬

وَ قَالَعليه‌السلام : الْمَسْؤُولُ حُرُّ حَتَّى يَعِدَ.

কোন ব্যক্তিকে কোন বিষয়ে অনুরোধ করা হলে যে পর্যন্ত সে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হয় সে পর্যন্ত ওই বিষয়ে সে মুক্ত।

উক্তি নং - ৩৪৭

وَ قَالَعليه‌السلام : الدَّاعِي بِلاَ عَمَلٍ، كَالرَّامِي بِلاَ وَتَرٍ.

যে ব্যক্তি প্রার্থনা করে। অথচ তাতে গভীর মনোনিবেশ করে না সে ওই ব্যক্তির মতো যে ছিলাবিহীন ধনুকে শার যোজনা করে।

উক্তি নং - ৩৪৮

وَ قَالَعليه‌السلام : الْعِلْمُ عِلْمَانِ: مَطْبُوعٌ وَ مَسْمُوعٌ، وَ لاَ يَنْفَعُ الْمَسْمُوعُ إِذَا لَمْ يَكُنِ الْمَطْبُوعُ.

জ্ঞান দুরকমের - আত্মভূত জ্ঞান ও শ্রুত - জ্ঞান। শ্রুত জ্ঞান আত্মভূত না হলে কোন উপকারে আসে না।

উক্তি নং - ৩৪৯

وَ قَالَعليه‌السلام : صَوَابُ الرَّأْيِ بِالدُّوَلِ يُقْبِلُ بِإِقْبَالِهَا، وَ يَذْهَبُ بِذَهَابِهَا.

সিদ্ধান্তের সঠিকতা কর্তৃত্বের ওপর নির্ভরশীল। কর্তৃত্ব থাকলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকে। কর্তৃত্ব না থাকলে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না।

উক্তি নং - ৩৫০

وَ قَالَعليه‌السلام : الْعَفَافُ زِينَةُ الْفَقْرِ، وَ الشُّكْرُ زِينَةُ الْغِنَى.

দুস্থের শোভা হলো সততা আর ধনীর শোভা হলো কৃতজ্ঞতা।

উক্তি নং - ৩৫১

وَ قَالَعليه‌السلام : يَوْمُ الْعَدْلِ عَلَى الظَّالِمِ، أَشَدُّ مِنْ يَوْمِ الْجَوْرِ عَلَى الْمَظْلُومِ.

অত্যাচারীর জন্য বিচারের দিন এত কঠিন হবে যা তার অত্যাচার অপেক্ষা অনেক অনেক বেশি ।

উক্তি নং - ৩৫২

وَ قَالَعليه‌السلام : الْغِنَى الْأَكْبَرُ الْيَأْسُ عَمَّا فِي أَيْدِي النَّاسِ.

অন্যের কি আছে সে দিকে নজর না দেয়াই বড় সম্পদ।

উক্তি নং - ৩৫৩

وَ قَالَعليه‌السلام : الْأَقَاوِيلُ مَحْفُوظَةٌ، وَ السَّرَائِرُ مَبْلُوَّةٌ «وَ كُلُّ نَفْسٍ بِم اَسَبَتْ رَهِينَةٌ»، وَ النَّاسُ مَنْقُوصُونَ مَدْخُولُونَ إِلا مَنْ عَصَمَ اللَّهُ؛ سَائِلُهُمْ مُتَعَنِّتٌ وَ مُجِيبُهُمْ مُتَكَلِّفٌ، يَكَادُ أَفْضَلُهُمْ رَأْياً يَرُدُّهُ عَنْ فَضْلِ رَأْيِهِ الرِّضَى وَ السُّخْطُ، وَ يَكَادُ أَصْلَبُهُمْ عُوداً تَنْكَؤُهُ اللَّحْظَةُ، وَ تَسْتَحِيلُهُ الْكَلِمَةُ الْوَاحِدَةُ.

কথা হতে হবে সংযত এবং আমল হতে হবে পরীক্ষিত। প্রত্যেক আত্মা যা অর্জন করে সেজন্য দায়বদ্ধ ” (কুরআন - ৭৪: ৩৮) । শারীরিকভাবে মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মানসিকভাবে দান্দিক করা হয়েছে ,তাদের ছাড়া যাদের আল্লাহ রক্ষা করেন। তাদের মধ্যে যারা প্রশ্ন করে তারা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে এবং যারা জবাব দেয় তারা বিপন্ন হয়ে পড়ে। এটা এজন্য সম্ভব হয় যে ,তাদের মধ্যে যে ব্যক্তির অভিমত উৎকৃষ্ট সে তার স্বচ্ছ চিন্তা - চেতনা থেকে আনন্দে হোক আর নিরানন্দে হোক সরে পড়ে। এটা সম্ভব এজন্য যে তাদের মধ্যে সব চাইতে জ্ঞানী ব্যক্তিটি এক নজরেই প্রভাবিত হতে পারে এবং একটা কথাতেই সে ভালো মানুষে রূপান্তরিত হতে পারে।

উক্তি নং - ৩৫৪

وَ قَالَعليه‌السلام : مَعَاشِرَ النَّاسِ، اتَّقُوا اللَّهَ، فَكَمْ مِنْ مُؤَمِّلٍ مَا لاَ يَبْلُغُهُ، وَ بَانٍ مَالاَ يَسْكُنُهُ، وَ جَامِعٍ مَا سَوْفَ يَتْرُكُهُ، وَ لَعَلَّهُ مِنْ بَاطِلٍ جَمَعَهُ، وَ مِنْ حَقِّ مَنَعَهُ، أَصَابَهُ حَرَاماً، وَ احْتَمَلَ بِهِ آثَاماً، فَبَأَ بِوِزْرِهِ، وَ قَدِمَ عَلَى رَبِّهِ آسِفاً لاَهِفاً، قَدْ( خَسِرَ الدُّنْيا وَ الْآخِرَةَ ذ لِكَ هُوَ الْخُسْرانُ الْمُبِينُ ) .

হে জনমণ্ডলী ,আল্লাহকে ভয় কর । কারণ এমন অনেক লোক আছে যাদের অনেক আকাঙ্খা পূর্ণ হয়নি ,অনেকে দালানকোঠা করেছে যাতে তারা বাস করতে পারেনি। অনেকে সম্পদ স্তুপীকৃত করেছে যা তাদের ফেলে যেতে হয়েছে। সম্ভবত সে ন্যায়কে পদাবনত করে অন্যায় পথ অবলম্বনপূর্বক এ সম্পদ সংগ্রহ করেছে। অবৈধভাবে অর্জিত এ সম্পদের পাপের ভার তাকে একই বহন করতে হবে। ফলে এ পাপের ভার নিয়ে তাকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে লজ্জা ও শোক সম্বল করে আল্লাহর সম্মুখে হাজির হতে হবে। সে ইহকাল ও পরকাল উভয়দিকে নষ্ট করেছে - এটা একটা প্রকাশ্য ক্ষতি ” (কুরআন - ২২ : ১১) ।

উক্তি নং - ৩৫৫

وَ قَالَعليه‌السلام : مِنَ الْعِصْمَةِ تَعَذُّرُ الْمَعَاصِي.

পাপে জড়িয়ে পড়ার সুযোগ না থাকা এক প্রকার সততা ।

উক্তি নং - ৩৫৬

وَ قَالَعليه‌السلام : مَاءُ وَجْهِكَ جَامِدٌ يُقْطِرُهُ السُّؤَالُ، فَانْظُرْ عِنْدَ مَنْ تُقْطِرُهُ.

তোমার মুখমণ্ডলে প্রকাশিত মর্যাদা প্রকৃত ,কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তি তা নষ্ট করে দেয়। সুতরাং সাবধানে চিন্তা করে দেখো কার কাছে তুমি সে মর্যাদা নষ্ট করবে।

উক্তি নং - ৩৫৭

وَ قَالَعليه‌السلام : الثَّنَاءُ بِأَكْثَرَ مِنَ الاِسْتِحْقَاقِ مَلَقٌ، وَ التَّقْصِيرُ عَنِ الاِسْتِحْقَاقِ عِيُّ أَوْ حَسَدٌ.

যতটুকু প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য তার অধিক প্রশংসা করাই মোসাহেবি আর যতটুকু প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য তার কম করা হয় প্রকাশ ক্ষমতার অভাব না হয় শত্রুতা বশতঃ ।

উক্তি নং - ৩৫৮

وَ قَالَعليه‌السلام : أَشَدُّ الذُّنُوبِ مَا اسْتَهَانَ بِهِ صَاحِبُهُ.

সব চাইতে বড় পাপ হল সেটি যেটি করে পাপী তা নগণ্য মনে করে।

উক্তি নং - ৩৫৯

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ نَظَرَ فِي عَيْبِ نَفْسِهِ اشْتَغَلَ عَنْ عَيْبِ غَيْرِهِ، وَ مَنْ رَضِيَ بِرِزْقِ اللَّهِ لَمْ يَحْزَنْ عَلَى مَا فَاتَهُ، وَ مَنْ سَلَّ سَيْفَ الْبَغْيِ قُتِلَ بِهِ، وَ مَنْ كَابَدَ الْأُمُورَ عَطِبَ، وَ مَنِ اقْتَحَمَ اللُّجَجَ غَرِقَ، وَ مَنْ دَخَلَ مَدَاخِلَ السُّوءِ اتُّهِمَ وَ مَنْ كَثُرَ كَلاَمُهُ كَثُرَ خَطَؤُهُ وَ مَنْ كَثُرَ خَطَؤُهُ قَلَّ حَيَاؤُهُ، وَ مَنْ قَلَّ حَيَاؤُهُ قَلَّ وَرَعُهُ، وَ مَنْ قَلَّ وَرَعُهُ مَاتَ قَلْبُهُ، وَ مَنْ مَاتَ قَلْبُهُ دَخَلَ النَّارَ. وَ مَنْ نَظَرَ فِي عُيُوبِ النَّاسِ، فَأَنْكَرَهَا، ثُمَّ رَضِيَهَا لِنَفْسِهِ، فَذَلِكَ الْأَحْمَقُ بِعَيْنِهِ. وَالْقَنَاعَةُ مَالٌ لاَ يَنْفَدُ. وَ مَنْ أَكْثَرَ مِنْ ذِكْرِ الْمَوْتِ رَضِيَ مِنَ الدُّنْيَا بِالْيَسِيرِ، وَ مَنْ عَلِمَ أَنَّ كَلاَمَهُ مِنْ عَمَلِهِ قَلَّ كَلاَمُهُ إِلا فِيمَا يَعْنِيهِ.

যে ব্যক্তি নিজের দোষত্রুটির প্রতি লক্ষ্য রাখে সে অন্যের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ায় না। আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকায় যে সন্তুষ্ট থাকে সে যা পায়নি সেজন্য দুঃখ করে না। যে বিদ্রোহের জন্য তরবারি বের করে সে তরবারিতেই মারা যায়। যে সহায় সম্বল ছাড়া সংগ্রাম করে সে ধ্বংস হয়ে যায়। যে গভীরে প্রবেশ করে সে ডুবে থাকে। যে কুখ্যাত স্থানে যায় তার বদনাম হয়।

যে বেশি কথা বলে সে বেশি ভুল করে। যে বেশি ভুল করে সে নির্লজ্জ হয়ে পড়ে। যে নির্লজ্জ হয়। সে আল্লাহকে কম ভয় করে। যে আল্লাহকে কম ভয় করে তার হৃদয় মরে যায়। যার হৃদয় মৃত সে আগুনে প্রবেশ করে। যে অন্যের দোষত্রুটি দেখেও নিজেই তা করে থাকে নিঃসন্দেহে সে মুর্খ । তৃপ্তি একটা পুঁজি যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস (অবচয়) হয় না। যে ব্যক্তি মৃত্যুকে স্মরণ করে সে এ পৃথিবীতে অল্পে তুষ্ট থাকে। যে ব্যক্তি জানে যে ,তার কথা তার আমলের একটা অংশ সে বিশেষ লক্ষ্য ছাড়া কথা বলে না।

উক্তি নং - ৩৬০

وَ قَالَعليه‌السلام : لِلظَّالِمِ مِنَ الرِّجَالِ ثَلاَثُ عَلاَمَاتٍ: يَظْلِمُ مَنْ فَوْقَهُ بِالْمَعْصِيَةِ، وَ مَنْ دُونَهُ بِالْغَلَبَةِ، وَ يُظَاهِرُ الْقَوْمَ الظَّلَمَةَ.

অত্যাচারীর আলামত তিনটি - জ্যেষ্ঠদের অমান্য করে অত্যাচার করে ,কনিষ্ঠদের ওপর কর্তৃত্ব আরোপ করে অত্যাচার করে এবং অন্য অত্যাচারীদের প্রতি সমর্থন দিয়ে অত্যাচার করে ।