নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা0%

নাহজ আল-বালাঘা লেখক:
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ: হযরত আলী (আ.)

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক: আশ-শরীফ আর-রাজী
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ:

ভিজিট: 126229
ডাউনলোড: 8027

নাহজ আল-বালাঘা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 48 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 126229 / ডাউনলোড: 8027
সাইজ সাইজ সাইজ
নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বাংলা

রাসূলের (সা.) ‘জ্ঞান নগরীর দ্বার’ আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব ছিলেন তত্ত্বজ্ঞানী, দার্শনিক, সুলেখক ও বাগ্মী। আলঙ্কারিক শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ও নৈপুন্য অসাধারণ। তিনি নবুওয়াতী জ্ঞান ভান্ডার হতে সরাসরি জ্ঞান আহরণ করেন এবং সাহাবাদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী পন্ডিত ছিলেন। এতে কারো দ্বিমত নেই। আরবী কাব্যে ও সাহিত্যে তার অনন্যসাধারণ অবদান ছিল। খেলাফত পরিচালনা কালে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ (খোৎবা) দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকগণকে প্রশাসনিক বিষয়ে উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে পত্র লিখেছিলেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মানুষের অনেক প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছিলেন। তার এসব বাণী কেউকেউ লিখে রেখেছিল, কেউ কেউ মনে রেখেছিল, আবার কেউ কেউ তাদের লিখিত পুস্তকে উদ্ধৃত করেছিল। মোটকথা তার অমূল্য বাণীসমূহ মানুষের কাছে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ছিল।

আশ-শরীফ আর-রাজী আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিবের ভাষণসমূহ (খোৎবা), পত্রাবলী, নির্দেশাবলী ও উক্তিসমূহ সংগ্রহ করে “নাহজ আল-বালঘা” নামক গ্রন্থটি সঙ্কলন করেন।

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ৩৮১ - ৪০০

উক্তি নং - ৩৮১

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ شَرَفَ أَعْلَى مِنَ الْإِسْلاَمِ، وَ لاَ عِزَّ أَعَزُّ مِنَ التَّقْوَى، وَ لاَ مَعْقِلَ أَحْصَنُ مِنَ الْوَرَعِ، وَ لاَ شَفِيعَ أَنْجَحُ مِنَ التَّوْبَةِ، وَ لاَ كَنْزَ أَغْنَى مِنَ الْقَنَاعَةِ، وَ لاَ مَالَ أَذْهَبُ لِلْفَاقَةِ مِنَ الرِّضَى بِالْقُوتِ. وَ مَنِ اقْتَصَرَ عَلَى بُلْغَةِ الْكَفَافِ فَقَدِ انْتَظَمَ الرَّاحَةَ، وَ تَبَوَّأَ خَفْضَ الدَّعَةِ، وَ الرَّغْبَةُ مِفْتَاحُ النَّصَبِ، وَ مَطِيَّةُ التَّعَبِ، وَ الْحِرْصُ وَ الْكِبْرُ وَ الْحَسَدُ دَوَاعٍ إِلَى التَّقَحُّمِ فِي الذُّنُوبِ، وَ الشَّرُّ جَامِعُ مَسَاوِئِ الْعُيُوبِ.

ইসলামের চেয়ে উচ্চ মর্যাদাশীল আর কিছু নেই ;আল্লাহর ভয়ের চেয়ে সম্মানজনক আর কিছু নেই ;আত্মসংযম অপেক্ষা বড় আশ্রয় আর কিছু নেই ;তওবার চেয়ে বড় উকিল আর কিছু নেই ;তৃপ্তির চেয়ে বড় মূল্যবান সম্পদ আর কিছু নেই ;নুন্যতম জীবনোপকরণে তৃপ্ত হওয়ার চেয়ে বড় দুঃখনাশক আর কিছু নেই। কামনা - বাসনা হলো দুঃখের চাবিকাঠি এবং দুর্দশার বাহন। লোভ ,অহংকার ও ঈর্ষা হলো পাপের পথের আলো এবং ফেতনাবাজি হলো সব চাইতে বড় কুঅভ্যাস।

উক্তি নং - ৩৮২

وَ قَالَعليه‌السلام لِجَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْأَنْصَارِيِّ: يَا جَابِرُ، قِوَامُ الدِّينِ وَ الدُّنْيَا بِأَرْبَعَةٍ: عَالِمٍ مُسْتَعْمِلٍ عِلْمَهُ، وَ جَاهِلٍ لاَ يَسْتَنْكِفُ أَنْ يَتَعَلَّمَ، وَ جَوَادٍ لاَ يَبْخَلُ بِمَعْرُوفِهِ، وَ فَقِيرٍ لاَ يَبِيعُ آخِرَتَهُ بِدُنْيَاهُ؛ فَإِذَا ضَيَّعَ الْعَالِمُ عِلْمَهُ اسْتَنْكَفَ الْجَاهِلُ أَنْ يَتَعَلَّمَ، وَ إِذَا بَخِلَ الْغَنِيُّ بِمَعْرُوفِهِ بَاعَ الْفَقِيرُ آخِرَتَهُ بِدُنْيَاهُ. يَا جَابِرُ، مَنْ كَثُرَتْ نِعَمُ اللَّهِ عَلَيْهِ، كَثُرَتْ حَوَائِجُ النَّاسِ إِلَيْهِ، فَمَنْ قَامَ لِلَّهِ فِيهَا بِمَا يَجِبُ فِيهَا عَرَّضَهَا لِلدَّوَامِ وَ الْبَقَأِ وَ مَنْ لَمْ يَقُمْ لِلّهِ فِيهَا بِمَا يَجِبُ عَرَّضَهَا لِلدَّوامِ وَالْبَقأِ وَ مَنْ لَمْ يَقُمْ لِلّهِ فيها بِما يَجِبُ عَرَّضَها لِلزَّوَالِ وَ الْفَنَاءِ.

জাবির ইবনে আবদিল্লাহ আল - আনসারীকে আমিরুল মোমেনিন বলেছিলেনঃ হে জাবির ,দ্বীনি ও দুনিয়ার রজ্জু হলো চার ব্যক্তিঃ যে পণ্ডিত ব্যক্তি বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে ;যে অজ্ঞ শিক্ষা গ্রহণ করতে লজ্জাবোধ করে না ;যে উদার ব্যক্তি কৃপণতা প্রদর্শন করে না এবং যে দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি জাগতিক সুবিধা অর্জনের জন্য পরকালকে বিক্রি করে দেয় না। একইভাবে ,যখন জ্ঞানী তার বিবেক - বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে না ;অজ্ঞ শিক্ষা গ্রহণ করতে লজ্জাবোধ করে ;উদার ব্যক্তি কৃপণতা প্রদর্শন করে এবং দুর্দশাগ্রস্তগণ ইহকালের জন্য পরকালকে বিক্রি করে ,তখন তারা দুনিয়ার রজ্জু হয়ে পড়ে।

হে জাবির ,যেখানে মানুষের ওপর আল্লাহর নেয়ামত অপরিসীম। সেখানে তার প্রতি মানুষের বাধ্যতা অপরিসীম হওয়া বাঞ্চনীয়। সুতরাং আল্লাহর প্রতি যারা দায়িত্ব পরিপূর্ণ করে তাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত অব্যাহত থাকে এবং তার রহমত স্থায়ীত্ব লাভ করে। আর যারা এ দায়িত্ব পালন করে না তারা ধ্বংস হয়ে যায়।

উক্তি নং - ৩৮৩

وَ رَوَى ابْنُ أَبِي لَيْلَى الْفَقِيهِ يَقُولُ يَوْمَ لَقِينَا أَهْلَ الشَّامِ:

أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ، إِنَّهُ مَنْ رَأَى عُدْوَاناً يُعْمَلُ بِهِ وَ مُنْكَراً يُدْعَى إِلَيْهِ، فَأَنْكَرَهُ بِقَلْبِهِ فَقَدْ سَلِمَ وَ بَرِئَ؛ وَ مَنْ أَنْكَرَهُ بِلِسَانِهِ فَقَدْ أُجِرَ، وَ هُوَ أَفْضَلُ مِنْ صَاحِبِهِ؛ وَ مَنْ أَنْكَرَهُ بِالسَّيْفِ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا وَ كَلِمَةُ الظَّالِمِينَ هِيَ السُّفْلَى، فَذَلِكَ الَّذِي أَصَابَ سَبِيلَ الْهُدَى، وَ قَامَ عَلَى الطَّرِيقِ، وَ نَوَّرَ فِي قَلْبِهِ الْيَقِينُ.

ইবনে আবি লায়লা থেকে বর্ণিত আছে যে ,সিরিয়ানদের সাথে যুদ্ধের সময় আমিরুল মোমেনিন বলেছেনঃ হে ইমানদারগণ ,তোমরা যদি দেখ কেউ অন্য কাউকে পাপের দিকে আহবান করছে বা এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে এবং আন্তরিকভাবে এহেন কাজকে তোমরা বাতিল করে দাও। তবে এ অপরাধের দায় দায়িত্ব থেকে তোমরা মুক্ত। আর যে কথার দ্বারা তা বাতিল করে দেয় সে পুরস্কৃত হবে এবং পূর্ববর্তী ব্যক্তি অপেক্ষা সে অধিক মর্যাদাশীল ;আর যে আল্লাহর বাণীকে উর্ধ্ব তুলে ধরে অত্যাচারীর কথা তরবারির সাহায্যে বাতিল করে দেয় সে হেদায়েতের পথের সন্ধান পায় এবং ন্যায় পথে প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং তার হৃদয় দৃঢ় প্রত্যয়ের নূরে আলোকিত থাকে (তাবারী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১০৮৬ ;আছীর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪৭৮) ।

উক্তি নং - ৩৮৪

فِي كَلاَمٍ آخَرَ لَهُ يَجْرِي هَذَا الْمَجْرَى: فَمِنْهُمُ الْمُنْكِرُ لِلْمُنْكَرِ بِيَدِهِ وَ لِسَانِهِ وَ قَلْبِهِ فَذَلِكَ الْمُسْتَكْمِلُ لِخِصَالِ الْخَيْرِ؛ وَ مِنْهُمُ الْمُنْكِرُ بِلِسَانِهِ وَ قَلْبِهِ وَ التَّارِكُ بِيَدِهِ، فَذَلِكَ مُتَمَسِّكٌ بِخَصْلَتَيْنِ مِنْ خِصَالِ الْخَيْرِ، وَ مُضَيِّعٌ خَصْلَةً؛ وَ مِنْهُمُ الْمُنْكِرُ بِقَلْبِهِ وَ التَّارِكُ بِيَدِهِ وَ لِسَانِهِ فَذَلِكَ الَّذِي ضَيَّعَ أَشْرَفَ الْخَصْلَتَيْنِ مِنَ الثَّلاَثِ، وَ تَمَسَّكَ بِوَاحِدَةٍ، وَ مِنْهُمْ تَارِكٌ لِإِنْكَارِ الْمُنْكَرِ بِلِسَانِهِ وَ قَلْبِهِ وَ يَدِهِ، فَذَلِكَ مَيِّتُ الْأَحْيَاءِ. وَ مَا أَعْمَالُ الْبِرِّ كُلُّهَا وَ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ عِنْدَ الْأَمْرِ بِالْمَعْرُوفِ وَ النَّهْيِ عَنْ الْمُنْكَرِ إِلا كَنَفْثَةٍ فِي بَحْرٍ لُجِّيِّ. وَ إِنَّ الْأَمْرَ بِالْمَعْرُوفِ وَ النَّهْيَ عَنِ الْمُنْكَرِ لاَ يُقَرِّبَانِ مِنْ أَجَلٍ، وَ لاَ يَنْقُصَانِ مِنْ رِزْقٍ، وَ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ كُلِّهِ كَلِمَةُ عَدْلٍ عِنْدَ إِمَامٍ جَائِرٍ.

উপরোক্ত বাণীটি অন্যভাবে বর্ণিত আছে যে ,সুতরাং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যারা পাপাচার আর মিথ্যাকে হাত ,মুখ ও হৃদয় দ্বারা বাতিল করে দেয় তারা যথার্থভাবেই ধার্মিকতায় অভ্যস্ত হয়েছে। যারা শুধু মুখ আর হৃদয় দ্বারা পাপকে বাতিল করে তারা দুটি ধার্মিকতায় অভ্যস্থ হয়েছে , - একটা বাদ পড়েছে। যারা শুধু অন্তর দ্বারা পাপকে বাতিল করেছে তারা একটি সদগুণ অর্জন করেছে অপর দুটি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর যারা পাপকে বাতিল করেনি তারা জীবিতদের মধ্যে মৃতের মতোই।

মোত্তাকিদের সকল কাজ ,এমনকি জিহাদও ন্যায়ের প্রতিপালনের জন্য ,প্রলুব্ধকরণও পাপের প্রতিরোধের তুলনায় সমুদ্রে এক ফোটা থুথু ফেলার মতো। কাউকে পূণ্যের প্রতি প্রলুব্ধ করলে এবং পাপ থেকে বিরত থাকার জন্য বাধা সৃষ্টি করলে মৃত্যু (নির্ধারিত সময় অপেক্ষা) এগিয়ে আসে না অথবা এতে জীবিকাও কমে যায় না। এসব কিছু অপেক্ষা স্বৈরাচারী শাসকের সামনে একটা ন্যায় কথা বলা অনেক ভালো।

উক্তি নং - ৩৮৫

وَ عَنْ أَبِي جُحَيْفَةَ قَالَ: سَمِعْتُ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَعليه‌السلام يقول:

أَوَّلُ مَا تُغْلَبُونَ عَلَيْهِ مِنَ الْجِهَادِ بِأَيْدِيكُمْ، ثُمَّ بِأَلْسِنَتِكُمْ، ثُمَّ بِقُلُوبِكُمْ؛ فَمَنْ لَمْ يَعْرِفْ بِقَلْبِهِ مَعْرُوفاً، وَ لَمْ يُنْكِرْ مُنْكَراً، قُلِبَ فَجُعِلَ أَعْلاَهُ أَسْفَلَهُ، وَ أَسْفَلُهُ أَعْلاَهُ.

আবু জুহায়ফাহ থেকে বর্ণিত আছে যে ,আমিরুল মোমেনিনকে তিনি বলতে শুনেছেনঃ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রথমেই তোমাদেরকে হস্ত দ্বারা জেহাদ করতে হবে ,তাতে পরাভূত হলে কথার দ্বারা জিহাদ করবে ,তাতেও পরাভূত হলে হৃদয় দ্বারা জিহাদ করবে। ফলে যে ব্যক্তি অন্তর দ্বারা ধর্মকে স্বীকার করে না অথবা পাপকে বাতিল করে না তার ওপরের দিক নিচের দিকে এবং নিচের দিক ওপরের দিকে করা হবে।

উক্তি নং - ৩৮৬

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ الْحَقَّ ثَقِيلٌ مَرِئٌ، وَ إِنَّ الْبَاطِلَ خَفِيفٌ وَبِئٌ.

নিশ্চয়ই ,ন্যায় ভারী ও সম্পূর্ণ এবং অন্যায় হালকা ও মহামারী স্বরূপ।

উক্তি নং - ৩৮৭

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ تَأْمَنَنَّ عَلَى خَيْرِ هَذِهِ الْأُمَّةِ عَذَابَ اللَّهِ، لِقَوْلِهِ تعالی:( فَلا يَأْمَنُ مَكْرَ اللّهِ إِلا الْقَوْمُ الْخاسِرُونَ ) وَ لاَ تَيْأَسَنَّ لِشَرِّ هَذِهِ الْأُمَّةِ مِنْ رَوْحِ اللَّهِ لِقَوْلِهِ تعالی:( إِنَّهُ لا يَيْأَسُ مِنْ رَوْحِ اللّهِ إِلا الْقَوْمُ الْكافِرُونَ ) .

সমগ্র জনগোষ্ঠীর সর্বোৎকৃষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কেও আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ মনে করো না ,কারণ মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন , ক্ষতিগ্রস্তগণ ছাড়া আর কেউ আল্লাহর পরিকল্পনা হতে নিজকে নিরাপত্তা প্রাপ্ত মনে করে না ” (কুরআন - ৭ : ৯৯) । আবার ,জনগোষ্ঠীর নিকৃষ্টতম ব্যক্তিও আল্লাহর ক্ষমা সম্পর্কে নিরাশ হয় না ,কারণ মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন , অবিশ্বাসীগণ ছাড়া আর কেউ নিশ্চয়ই ,আল্লাহর রহমত সম্পর্কে নিরাশ হয় না ” (কুরআন - ১২ : ৮৭) ।

উক্তি নং - ৩৮৮

وَ قَالَعليه‌السلام : الْبُخْلُ جَامِعٌ لَمَسَاوِئِ الْعُيُوبِ، وَ هُوَ زِمَامٌ يُقَادُ بِهِ إِلَى كُلِّ سُوءٍ.

কৃপণতার মধ্যে সকল পাপ নিহিত আছে এবং কৃপণতা হলো পাপের পথে পরিচালিত হবার লাগাম ।

উক্তি নং - ৩৮৯

وَ قَالَعليه‌السلام : یابنَ آدَمَ، الرِّزْقُ رِزْقَانِ: رِزْقٌ تَطْلُبُهُ وَ رِزْقٌ يَطْلُبُكَ، فَإِنْ لَمْ تَأْتِهِ أَتَاكَ، فَلاَ تَحْمِلْ هَمَّ سَنَتِكَ عَلَى هَمِّ يَوْمِكَ، كَفَاكَ كُلُّ يَوْمٍ مَا فِيهِ، فَإِنْ تَكُنِ السَّنَةُ مِنْ عُمُرِكَ فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى سَيُؤْتِيكَ فِي كُلِّ غَدٍ جَدِيدٍ مَا قَسَمَ لَكَ وَ إِنْ لَمْ تَكُنِ السَّنَةُ مِنْ عُمُرِكَ فَمَا تَصْنَعُ بِالْهَمِّ فِيمَا لَيْسَ لَكَ؟ وَ لَنْ يَسْبِقَكَ إِلَى رِزْقِكَ طَالِبٌ، وَ لَنْ يَغْلِبَكَ عَلَيْهِ غَالِبٌ، وَ لَنْ يُبْطِئَ عَنْكَ مَا قَدْ قُدِّرَ لَكَ.

হে আদম সন্তানগণ ,জীবিকা দুপ্রকারঃ (১) যে জীবিকা তোমরা অনুসন্ধান কর ;(২) যে জীবিকা তোমাদেরকে অনুসন্ধান করে। দ্বিতীয় প্রকারের জীবিকার কাছে তোমরা পৌছতে না পারলেও উহা তোমাদের কাছে আসবে। সুতরাং তোমাদের একদিনের উদ্বীগ্নতাকে এক বছরের উদ্বীগ্নতায় পরিণত করো না। প্রতিদিন তুমি যা পাও তাই তোমার এক দিনের জন্য যথেষ্ট। যদি তুমি তোমার জীবনে একটা বছরও পাও তবুও মহিমান্বিত আল্লাহ তোমার জন্য যে অংশ নির্ধারণ করে রেখেছেন তা তুমি প্রতিদিন পেয়ে যাবে। যদি তুমি জীবনে একটা বছরও না পাও তবে কেন তুমি তা নিয়ে উদ্বীগ্ন হবে যা তোমার জন্য নয়। কেউ তোমার জীবিকা তোমার সামনে উপস্থিত করতে পারবে না। আবার জীবিকার ব্যাপারে কেউ তোমাকে পরাভূত করতেও পারবে না। একইভাবে ,যেটুকু তোমার অংশ হিসাবে নির্ধারিত করা হয়েছে তা পেতে কখনও বিলম্ব ঘটবে না।

উক্তি নং - ৩৯০

وَ قَالَعليه‌السلام : رُبَّ مُسْتَقْبِلٍ يَوْماً لَيْسَ بِمُسْتَدْبِرِهِ، وَ مَغْبُوطٍ فِي أَوَّلِ لَيْلِهِ، قَامَتْ بَوَاكِيهِ فِي آخِرِهِ.

অনেকে একদিনের সম্মুখীন হয় যারপর আর কোন দিন দেখে না। অনেকে রাতের প্রথমাংশে অতীব বাঞ্চনীয় অবস্থায় থাকে এবং শেষাংশে স্বামীহারা নারীর মতো ক্রন্দনরত থাকে।

উক্তি নং - ৩৯১

وَ قَالَعليه‌السلام : الْكَلاَمُ فِي وَثَاقِكَ مَا لَمْ تَتَكَلَّمْ بِهِ؛ فَإِذَا تَكَلَّمْتَ بِهِ صِرْتَ فِي وَثَاقِهِ، فَاخْزُنْ لِسَانَكَ كَمَا تَخْزُنُ ذَهَبَكَ وَ وَرِقَكَ، فَرُبَّ كَلِمَةٍ سَلَبَتْ نِعْمَةً وَ جَلَبَت نِقمَةً.

যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি কাউকে না বলবে ততক্ষণ পর্যন্ত কথা তোমার নিয়ন্ত্রণে। আর বলে ফেললেই তুমি কথার নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে। সুতরাং স্বর্ণ - রৌপ্যকে যে ভাবে পাহারা দাও সেভাবে তোমার জিহবাকেও পাহারা দিয়ো ,কারণ একটা কথাই তোমার আশীর্বাদ কেড়ে নিয়ে তোমার জন্য শাস্তি আনয়ন করতে পারে।

উক্তি নং - ৩৯২

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ تَقُلْ مَا لاَ تَعْلَمُ، بَلْ لاَ تَقُلْ كُلَّ مَا تَعْلَمُ، فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ فَرَضَ عَلَى جَوَارِحِكَ كُلِّهَا فَرَائِضَ يَحْتَجُّ بِهَا عَلَيْكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

যা জান না তা বলো না এবং যা জান তার সব কিছু বলো না ;কারণ আল্লাহ তোমার সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গের দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং শেষ বিচারের দিন এ সব নিয়েই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

উক্তি নং - ৩৯৩

وَ قَالَعليه‌السلام : احْذَرْ أَنْ يَرَاكَ اللَّهُ عِنْدَ مَعْصِيَتِهِ، وَ يَفْقِدَكَ عِنْدَ طَاعَتِهِ فَتَكُونَ مِنَ الْخَاسِرِينَ؛ وَ إِذَا قَوِيتَ فَاقْوَ عَلَى طَاعَةِ اللَّهِ، وَ إِذَا ضَعُفْتَ فَاضْعُفْ عَنْ مَعْصِيَةِ اللَّهِ.

আল্লাহকে ভয় কর পাছে তিনি তোমাদের পাপাচার দেখে ফেলেন। যদি তোমরা শক্তিশালী হতে চাও তবে আল্লাহর আনুগত্যে শক্তিশালী হয়ো। আর যদি দুর্বল হতে চাও তবে পাপ কাজে দুর্বল হয়ো।

উক্তি নং - ৩৯৪

وَ قَالَعليه‌السلام : الرُّكُونُ إِلَى الدُّنْيَا مَعَ مَا تُعَايِنُ مِنْهَا جَهْلٌ، وَ التَّقْصِيرُ فِي حُسْنِ الْعَمَلِ إِذَا وَثِقْتَ بِالثَّوَابِ عَلَيْهِ غَبْنٌ، وَ الطُّمَأْنِينَةُ إِلَى كُلِّ أَحَدٍ قَبْلَ الاِخْتِبَارِ لَهُ عَجْزٌ.

এ দুনিয়ার যা তুমি দেখতে পাচ্ছো তার প্রতি কুকড়ে পড়া বোকামি ছাড়া আর কিছু নয় এবং ভালো কাজে পুরস্কার থাকা সম্পর্কে অবহিত হওয়া সত্ত্বেও তা না করা ক্ষতি ছাড়া কিছু নয়। পরীক্ষা - নিরীক্ষা ছাড়া সকলকে বিশ্বাস করাই দুর্বলতা।

উক্তি নং - ৩৯৫

وَ قَالَعليه‌السلام : مِنْ هَوَانِ الدُّنْيَا عَلَى اللَّهِ أَنَّهُ لاَ يُعْصَى إِلا فِيهَا، وَ لاَ يُنَالُ مَا عِنْدَهُ إِلا بِتَرْكِهَا.

আল্লাহর কাছে দুনিয়ার দীনতার এটাই প্রমাণ যে ,এখানেই মানুষ তার অবাধ্য হয় এবং দুনিয়াকে পরিত্যাগ না করলে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায় না।

উক্তি নং - ৩৯৬

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ طَلَبَ شَيْئا نَالَهُ أَوْ بَعْضَهُ.

কোন ব্যক্তি যা খোজে তার অংশ হলেও পায়।

উক্তি নং - ৩৯৭

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا خَيْرٌ بِخَيْرٍ بَعْدَهُ النَّارُ، وَ مَا شَرُّ بِشَرِّ بَعْدَهُ الْجَنَّةُ، وَ كُلُّ نَعِيمٍ دُونَ الْجَنَّةِ فَهُوَ مَحْقُورٌ، وَ كُلُّ بَلاَءٍ دُونَ النَّارِ عَافِيَةٌ.

সেই ভালো ভালো নয় ,যার পিছনে রয়েছে আগুন ,সেই দুর্দশা দুর্দশা নয় ,যার পিছনে রয়েছে বেহেশত। বেহেশত ছাড়া সকল আশীবার্দ নিকৃষ্ট এবং দোযখ ছাড়া সকল বিপদাপদ আরামপ্রদ

উক্তি নং - ৩৯৮

وَ قَالَعليه‌السلام : أَلاَ وَ إِنَّ مِنَ الْبَلاَءِ الْفَاقَةَ، وَ أَشَدُّ مِنَ الْفَاقَةِ مَرَضُ الْبَدَنِ، وَ أَشَدُّ مِنْ مَرَضِ الْبَدَنِ مَرَضُ الْقَلْبِ. أَلاَ وَ إِنَّ صِحَّةِ الْبَدَنِ تَقْوَى الْقَلْبِ.

সাবধান ,দুরবস্থা একটা বিপদ কিন্তু শারীরিক পীড়া সব চাইতে বড় দুর্দশা। আবার শারীরিক পীড়া থেকে হৃদয়ের পীড়া আরো খারাপ। সাবধান ,সম্পদের প্রাচুর্য একটা আশীর্বাদ । কিন্তু শারীরিক সুস্থতা সম্পদ থেকেও উত্তম। আবার হৃদয়ের পবিত্রতা শারীরিক সুস্থতা থেকেও উত্তম।

উক্তি নং - ৩৯৯

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ أبطَ بِهِ عَمَلُهُ لَم یُسرِع بِهِ نَسَبُهُ. و فی روایة أُخری: من فاتَهُ حَسَبُ نَفسِهِ لَم یَنفَعهُ حَسَبُ آبائِهِ.

যে ব্যক্তি তার কর্মকাণ্ড পিছনে ফেলে দেয় তার বংশ মর্যাদা তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। অন্য ভাবে বর্ণিত আছে ,যে নিজে কিছু অবদান রাখতে না পারে তার পূর্বপুরুষের অবদান তার কোন উপকারে আসে না ।

উক্তি নং - ৪০০

وَ قَالَعليه‌السلام : لِلْمُؤْمِنِ ثَلاَثُ سَاعَاتٍ: فَسَاعَةٌ يُنَاجِي فِيهَا رَبَّهُ وَ سَاعَةٌ يَرُمُّ مَعَاشَهُ وَ سَاعَةٌ يُخَلِّي بَيْنَ نَفْسِهِ وَ بَيْنَ لَذَّتِهَا فِيمَا يَحِلُّ وَ يَجْمُلُ. وَ لَيْسَ لِلْعَاقِلِ أَنْ يَكُونَ شَاخِصا إِلا فِي ثَلاَثٍ: مَرَمَّةٍ لِمَعَاشٍ، أَوْ خُطْوَةٍ فِي مَعَادٍ، أَوْ لَذَّةٍ فِي غَيْرِ مُحَرَّمٍ.

মোমেনদের সময় তিনটিঃ (১) যে সময় সে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকে ,(২) যে সময় সে জীবিকা অর্জনে ব্যয় করে ,(৩) যে সময় বৈধ ও মনোরম ভাবে উপভোগ করে। তিনটি বিষয় ছাড়া জ্ঞানী লোকের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া শোভনীয় নয় - রুটি - রুজির জন্য ,পরকালের কোন কিছুর জন্য এবং নিষিদ্ধ নয় এমন কিছু উপভোগ করার জন্য।

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ৪০১ - ৪২০

উক্তি নং - ৪০১

وَ قَالَعليه‌السلام : ازْهَدْ فِي الدُّنْيَا يُبَصِّرْكَ اللَّهُ عَوْرَاتِهَا، وَ لاَ تَغْفُلْ فَلَسْتَ بِمَغْفُولٍ عَنْكَ!.

দুনিয়া থেকে বিরত থেকো যাতে আল্লাহ এর প্রকৃত কুফল তোমাকে দেখাতে পারেন। এ বিষয়ে অবহেলা করো না ,কারণ তোমার কোন কর্মকাণ্ড অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা হবে না।

উক্তি নং - ৪০২

وَ قَالَعليه‌السلام : تَكَلَّمُوا تُعْرَفُوا، فَإِنَّ الْمَرْءَ مَخْبُوءٌ تَحْتَ لِسَانِهِ.

এমনভাবে কথা বলো যেন মানুষ তোমাকে জানতে পারে ,কারণ মানুষের স্বরূপ জিহবার নিচে লুক্কায়িত।

উক্তি নং - ৪০৩

وَ قَالَعليه‌السلام : خُذْ مِنَ الدُّنْيَا مَا أَتَاكَ وَ تَوَلَّ عَمَّا تَوَلَّى عَنْكَ، فَإِنْ أَنْتَ لَمْ تَفْعَلْ فَأَجْمِلْ فِي الطَّلَبِ.

এ দুনিয়ার যেটুকু আনুকূল্য তোমার কাছে আসে তা অপসৃত কর এবং তোমার কাছ থেকে যা দূরে থাকে তা থেকে বিরত থাক। যদি তা করতে না পার তবে তোমার চাহিদায় মধ্যপথ অবলম্বন কর।

উক্তি নং - ৪০৪

وَ قَالَعليه‌السلام : رُبَّ قَوْلٍ، أَنْفَذُ مِنْ صَوْلٍ.

এমন অনেক কথা আছে যা আক্রমণ থেকেও বেশি কার্যকর।

উক্তি নং - ৪০৫

وَ قَالَعليه‌السلام : كُلُّ مُقْتَصَرٍ عَلَيْهِ كَافٍ.

যাতে তৃপ্তি পাওয়া যায় তা অল্প হলেও যথেষ্ট।

উক্তি নং - ৪০৬

وَ قَالَعليه‌السلام : الْمَنِيَّةُ وَ لاَ الدَّنِيَّةُ! وَ التَّقَلُّلُ وَ لاَ التَّوَسُّلُ.وَ مَنْ لَمْ يُعْطَ قَاعِداً، لَمْ يُعْطَ قَائِماً، وَ الدَّهْرُ يَوْمَانِ: يَوْمٌ لَكَ، وَ يَوْمٌ عَلَيْكَ؛ فَإِذَا كَانَ لَكَ فَلاَ تَبْطَرْ، وَ إِذَا كَانَ عَلَيْكَ فَاصْبِرْ!.

অপমানিত হবার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। অন্যের মাধ্যম ব্যতীত ক্ষুদ্র জিনিসও উত্তম। যে বসে পায় না সে দাঁড়িয়েও পাবে না। এ পৃথিবীতে তোমাদের দুটি সময় হবে একটি তোমার পক্ষে অপরটি তোমার বিরুদ্ধে। সময় তোমার অনুকূলে থাকলে আত্মম্ভরী হয়ো না ,আবার তোমার প্রতিকূলে গেলে ধৈর্য ধারণ করো।

উক্তি নং - ৪০৭

وَ قَالَعليه‌السلام : نِعْمَ الطِّيبُ الْمِسْكُ، خَفِيفٌ مَحْمِلُهُ، عَطِرٌ رِيحُهُ.

সব চাইতে ভালো সুগন্ধি হলো কস্তুরী ;এটা ওজনে হালকা ও সুগন্ধিতে ভরপুর।

উক্তি নং - ৪০৮

وَ قَالَعليه‌السلام : ضَعْ فَخْرَكَ وَ احْطُطْ كِبْرَكَ وَ اذْكُرْ قَبْرَكَ.

দম্ভোক্তি পরিহার কর ,আত্ম - প্রবঞ্চনা পরিত্যাগ করো এবং কবরকে স্মরণ করা।

উক্তি নং - ৪০৯

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ لِلْوَلَدِ عَلَى الْوَالِدِ حَقّاً، وَ إِنَّ لِلْوَالِدِ عَلَى الْوَلَدِ حَقّاً. فَحَقُّ الْوَالِدِ عَلَى الْوَلَدِ أَنْ يُطِيعَهُ فِي كُلِّ شَيْءٍ، إِلا فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ سُبْحَانَهُ؛ وَ حَقُّ الْوَلَدِ عَلَى الْوَالِدِ أَنْ يُحَسِّنَ اسْمَهُ، وَ يُحَسِّنَأَدَبَهُ، وَ يُعَلِّمَهُ الْقُرْآنَ

পিতার ওপর পুত্রের যেমন অধিকার আছে পুত্রের ওপরও পিতার তেমন অধিকার আছে। পিতার অধিকার হলো পুত্র শুধুমাত্র আল্লাহকে অমান্য করার আদেশ ব্যতীত তাঁর সকল আদেশ মেনে চলবে এবং পুত্রের অধিকার হলো - পিতা তার একটা সুন্দর নাম রাখবে ,তাকে উত্তম প্রশিক্ষণ দেবে এবং কুরআন শিক্ষা দেবে।

উক্তি নং - ৪১০

وَ قَالَعليه‌السلام : الْعَيْنُ حَقُّ، وَ الرُّقَى حَقُّ، وَ السِّحْرُ حَقُّ، وَ الْفَأْلُ حَقُّ، وَ الطِّيَرَةُ لَيْسَتْ بِحَقِّ وَ الْعَدْوَى لَيْسَتْ بِحَقِّ وَ الطِّيبُ نُشْرَةٌ، وَ الْعَسَلُ نُشْرَةٌ، وَ الرُّكُوبُ نُشْرَةٌ، وَ النَّظَرُ إِلَى الْخُضْرَةِ نُشْرَةٌ.

দৃষ্টির কুপ্রভাব সঠিক ;যাদুমন্ত্র সঠিক ;মায়াবিদ্যা সঠিক এবং ফাল (মঙ্গল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী) সঠিক ;কিন্তু তিয়ারাহ ' (মন্দ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী) সঠিক নয় এবং কারো রোগ অন্যের মধ্যে ছড়ানো সঠিক নয়। সুগন্ধি আনন্দ দেয় ,মধু আনন্দ দেয় ;ঘোড়ায় সওয়ারি হওয়া আনন্দ দেয় এবং সবুজ প্রান্তরের দিকে দৃষ্টি আনন্দ দেয়।

উক্তি নং - ৪১১

وَ قَالَعليه‌السلام : مُقَارَبَةُ (مفارقة) النَّاسِ فِي أَخْلاَقِهِمْ أَمْنٌ مِنْ غَوَائِلِهِمْ.

জনগণের রীতি - নীতিতে তাদের নৈকট্য তাদেরকে পাপ থেকে নিরাপত্তা প্রদান করে।

উক্তি নং - ৪১২

وَ قَالَعليه‌السلام : لِبَعْضِ مُخَاطِبِيهِ وَ قَدْ تَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ يُسْتَضْغَرُ مِثْلُهُ عَنْ قَوْلِ مِثْلِهَا: لَقَدْ طِرْتَ شَكِيراً، وَ هَدَرْتَ سَقْباً.

আমিরুল মোমেনিনের মর্যাদা সম্পর্কে কেউ একজন উক্তি করলে তিনি বললেন , পলক গজাবার সাথে সাথে তুমি উড়তে শুরু করেছো এবং বয়ঃপ্রাপ্ত হবার আগেই বিড়বিড় শুরু করেছো। ”

উক্তি নং - ৪১৩

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ أَوْمَأَ إِلَى مُتَفَاوِتٍ خَذَلَتْهُ الْحِيَلُ.

যে কেউ অসঙ্গত কিছুর জন্য লালায়িত হয় সে কৃতকার্য হবার পথ খুজে পায় না।

উক্তি নং - ৪১৪

وَ قَالَعليه‌السلام : وَ قَدْ سُئِلَ عَنْ مَعْنَى قَوْلِهِمْ: «لاَ حَوْلَ وَ لاَ قُوَّةَ إِلا بِاللَّهِ»: إِنَّا لاَ نَمْلِكُ مَعَ اللَّهِ شَيْئاّ، وَ لاَ نَمْلِكُ إِلا مَا مَلَّكَنَا، فَمَتَى مَلَّكَنَا؛ مَا هُوَ أَمْلَكُ بِهِ مِنَّا كَلَّفَنَا، وَ مَتَى أَخَذَهُ مِنَّا وَضَعَ تَكْلِيفَهُ عَنَّا.

কেউ একজন লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ” - এর অর্থ জিজ্ঞেস করলে আমিরুল মোমেনিন বললেন , আমরা কোন কিছুতে আল্লাহর সমকক্ষ কর্তৃত্বশীল নই এবং আল্লাহ্ কর্তৃত্ব না দিলে আমরা কোন কিছুতেই কর্তৃত্বশীল নই। সুতরাং যখন তিনি কোন কিছুতে আমাদেরকে কর্তৃত্ব প্রদান করেন তখন তিনি আমাদের ওপরও উধ্বতন কর্তৃত্বশীল থাকেন ;এ সময় তিনি আমাদেরকে কিছু দায়িত্বও দিয়ে থাকেন। যখন তিনি কর্তৃত্ব প্রত্যহার করেন তখন তিনি দায়িত্বও প্রত্যাহার করেন।

উক্তি নং - ৪১৫

وَ قَالَعليه‌السلام لِعَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ؛ وَ قَدْ سَمِعَهُ يُرَاجِعُ الْمُغِيرَةَ بْنَ شُعْبَةَ كَلاَما: دَعْهُ يَا عَمَّارُ، فَإِنَّهُ لَمْ يَأْخُذْ مِنَ الدِّينِ إِلا مَا قَارَبَتْهُ مِنَ الدُّنْيَا، وَ عَلَى عَمْدٍ لَبَسَ عَلَى نَفْسِهِ لِيَجْعَلَ الشُّبُهَاتِ عَاذِرا لِسَقَطَاتِهِ.

আম্মার ইবনে ইয়াসিরকে মুঘিরা ইবনে শুবাহ - এর সাথে তর্ক - বিতর্ক করতে দেখে আমিরুল মোমেনিন বললেন , হে আম্মার ,ওকে ছেড়ে দাও ;ওর সঙ্গে তর্ক করো না ;কারণ এ দুনিয়ার সুযোগ - সুবিধা লাভের জন্য সে ইসলামে প্রবেশ করেছে এবং সে স্বেচ্ছায় নিজেকে সংশয়ে নিপতিত করেছে যাতে সে নিজের দোষ ঢাকতে পারে। ”

উক্তি নং - ৪১৬

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا أَحْسَنَ تَوَاضُعَ الْأَغْنِيَأِ لِلْفُقَرَأِ طَلَبا لِمَا عِنْدَ اللَّهِ! وَ أَحْسَنُ مِنْهُ تِيهُ الْفُقَرَاءِ عَلَى الْأَغْنِيَاءِ اتِّكَالاً عَلَى اللَّهِ.

আল্লাহ্ কর্তৃক পুরস্কৃত হবার জন্য দরিদ্রের সম্মুখে ধনীদের নম্রতা প্রদর্শন করাই উত্তম ;কিন্তু আল্লাহতে বিশ্বাসের বিষয়ে ধনীদের প্রতি দরিদ্রের প্রগলভতা তদপেক্ষাও ভালো।

উক্তি নং - ৪১৭

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا اسْتَوْدَعَ اللَّهُ امْرَأً عَقْلاً إِلا لِيَسْتَنْقَذَهُ بِهِ يَوْما مَا.

আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে প্রজ্ঞা প্রদান করেন না যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি তাকে প্রজ্ঞা দ্বারা ধ্বংস থেকে রক্ষা না করেন।

উক্তি নং - ৪১৮

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ صَارَعَ الْحَقَّ صَرَعَهُ.

যে কেউ সত্যের সাথে বিরোধ করে সে সত্য দ্বারাই পরাভূত হয়।

উক্তি নং - ৪১৯

وَ قَالَعليه‌السلام : الْقَلْبُ مُصْحَفُ الْبَصَرِ.

হৃদয় হলে চোখের গ্রন্থ।

উক্তি নং - ৪২০

وَ قَالَعليه‌السلام : التُّقَى رَئِيسُ الْأَخْلاَقِ.

আল্লাহর ভয় মানুষের চরিত্রের সব চেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ৪২১ - ৪৪০

উক্তি নং - ৪২১

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ تَجْعَلَنَّ ذَرَبَ لِسَانِكَ عَلَى مَنْ أَنْطَقَكَ، وَ بَلاَغَةَ قَوْلِكَ عَلَى مَنْ سَدَّدَكَ.

যিনি তোমাকে কথা বলার ক্ষমতা প্রদান করেছেন তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলে তোমার বাকপটুতা দেখিয়ো না ,অথবা যিনি তোমাকে সত্য পথে রেখেছেন তার বিরুদ্ধে বাগ্মীতা ঝেড়ো না।

উক্তি নং - ৪২২

وَ قَالَعليه‌السلام : كَفَاكَ أَدَبا لِنَفْسِكَ اجْتِنَابُ مَا تَكْرَهُهُ مِنْ غَيْرِكَ.

নিজের শৃঙ্খলা বিধানের জন্য এটাই যথেষ্ট যে ,তুমি অন্যের যা অপছন্দ কর তা থেকে নিজকে বিরত রাখা ।

উক্তি নং - ৪২৩

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ صَبَرَ صَبْرَ الْأَحْرَارِ، وَ إِلا سَلاَ سُلُوَّ الْأَغْمَارِ.

বিজ্ঞদের মতো ধৈর্য ধারণ করতে হবে ,না হয় অজ্ঞদের মতো চুপ করে থাকতে হবে।

উক্তি নং - ৪২৪

وَ قَالَعليه‌السلام فِي صِفَةِ الدُّنْيَا: الدُّنْيَا تَغُرُّ وَ تَضُرُّ وَ تَمُرُّ، إِنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ لَمْ يَرْضَهَا ثَوَاباً لِأَوْلِيَائِهِ، وَ لاَ عِقَاباً لِأَعْدَائِهِ، وَ إِنَّ أَهْلَ الدُّنْيَا كَرَكْبٍ، بَيْنَا هُمْ حَلُّوا إِذْ صَاحَ بِهِمْ سَائِقُهُمْ فَارْتَحَلُوا.

আমিরুল মোমেনিন দুনিয়া সম্পর্কে বলেন , এটা প্রতারণা করে ,এটা ক্ষতি করে এবং এটার পরিসমাপ্তি ঘটে। মহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর প্রেমিকদের জন্য পুরস্কার হিসাবে এটাকে অনুমোদন করেন না। বস্তুত দুনিয়াবাসীগণ এখানে সওয়ারির মতো ,যত শ্রীঘ্র সম্ভব নামিয়ে দিয়ে বাহন চলে যায় ।

উক্তি নং - ৪২৫

وَ قَالَ لاِبْنِهِ الْحَسَنِعليه‌السلام : لاَ تُخَلِّفَنَّ وَرَأَكَ شَيْئا مِنَ الدُّنْيَا، فَإِنَّكَ تَخَلِّفُهُ لِأَحَدِ رَجُلَيْنِ: إِمَّا رَجُلٌ عَمِلَ فِيهِ بِطَاعَةِ اللَّهِ فَسَعِدَ بِمَا شَقِيتَ بِهِ؛ وَ إِمَّا رَجُلٌ عَمِلَ فِيهِ بِمَعْصِيَةِ، اللَّهِ، فَشَقِيَ بِمَا جَمَعْتَ لَهُ؛ فَكُنْتَ عَوْنا لَهُ عَلَى مَعْصِيَتِهِ وَ لَيْسَ أَحَدُ هَذَيْنِ حَقِيقاً أَنْ تُؤْثِرَهُ عَلَى نَفْسِكَ. وَ يُرْوَى هَذَا الْكَلاَمُ عَلَى وَجْهٍ آخَرَ وَ هُوَ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ الَّذِي فِي يَدِكَ مِنَ الدُّنْيَا قَدْ كَانَ لَهُ أَهْلٌ قَبْلَكَ وَ هُوَ صَائِرٌ إِلَى أَهْلٍ بَعْدَكَ، وَ إِنَّمَا أَنْتَ جَامِعٌ لِأَحَدِ رَجُلَيْنِ؛ رَجُلٍ عَمِلَ فِيمَا جَمَعْتَهُ بِطَاعَةِ اللَّهِ فَسَعِدَ بِمَا شَقِيتَ بِهِ؛ أَوْ رَجُلٍ عَمِلَ فِيهِ بِمَعْصِيَةِ اللَّهِ فَشَقِىَ بِمَا جَمَعْتَ لَهُ وَ لَيْسَ أَحَدُ هَذَيْنِ أَهْلاً أَنْ تُؤْثِرَهُ عَلَى نَفْسِكَ وَ تَحْمِلَ لَهُ عَلَى ظَهْرِكَ، فَارْجُ لِمَنْ مَضَى رَحْمَةَ اللَّهِ وَ لِمَنْ بَقِيَ رِزْقَ اللَّهِ.

আমিরুল মোমেনিন তাঁর পুত্র হাসানকে বলেছিলেন , হে পুত্র ,তোমার পরে এ পৃথিবীতে কোন কিছু জমিয়ে রেখে যেয়ো না। কারণ তোমার জমানো জিনিস দুধরনের লোক ভোগ করতে পারে (১) আল্লাহকে মান্যকারী কেউ তা ভোগ করতে পারে এবং তাতে ধার্মিকতা অজর্ন করতে পারে ,যদিও সম্পদ তোমার জন্য মন্দ ছিল ;অথবা (২) আল্লাহকে অমান্যকারী কেউ তা ভোগ করতে পারে ;সেক্ষেত্রে পাপ অর্জন করবে এবং তুমি তাতে সহায়তা করেছে বলে ধরা হবে। সুতরাং যারা মরে গেছে তাদের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা কর আর যারা বেচে আছে তাদের জন্য আল্লাহর রেজেক কামনা কর। ”

উক্তি নং - ৪২৬

وَ قَالَعليه‌السلام لِقَائِلٍ قَالَ بِحَضْرَتِهِ: «أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ»: ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ، أَتَدْرِي مَا الاِسْتِغْفَارُ؟ اِنَّ الاِسْتِغْفَارُ دَرَجَةُ الْعِلِّيِّينَ، وَ هُوَ اسْمٌ وَاقِعٌ عَلَى سِتَّةِ مَعَانٍ: أَوَّلُهَا النَّدَمُ عَلَى مَا مَضَى، وَ الثَّانِي الْعَزْمُ عَلَى تَرْكِ الْعَوْدِ إِلَيْهِ أَبَداً وَ الثَّالِثُ: أَنْ تُؤَدِّيَ إِلَى الْمَخْلُوقِينَ حُقُوقَهُمْ حَتَّى تَلْقَى اللَّهَ عَزَّ وَ جَلَّ أَمْلَسَ لَيْسَ عَلَيْكَ تَبِعَةٌ، وَ الرَّابِعُ: أَنْ تَعْمِدَ إِلَى كُلِّ فَرِيضَةٍ عَلَيْكَ ضَيَّعْتَهَا فَتُؤَدِّيَ حَقَّهَا، وَالْخَامِسُ: أَنْ تَعْمِدَ إِلَى اللَّحْمِ الَّذِي نَبَتَ عَلَى السُّحْتِ فَتُذِيبَهُ بِالْأَحْزَانِ، حَتَّى تُلْصِقَ الْجِلْدَ بِالْعَظْمِ، وَ يَنْشَأَ بَيْنَهُمَا لَحْمٌ جَدِيدٌ، السَّادِسُ: أَنْ تُذِيقَ الْجِسْمَ أَلَمَ الطَّاعَةِ كَمَا أَذَقْتَهُ حَلاَوَةَ الْمَعْصِيَةِ، فَعِنْدَ ذَلِكَ تَقُولُ: «أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ».

কোন একজন আমিরুল মোমেনিনের সম্মুখে আস্তাগাফিরুল্লাহ ' বলাতে তিনি বললেন , তোমার মাতা পুত্র হারা হোক ;তুমি কি জান ইস্তিগফার কী ? উচ্চ মর্যাদাশীল ব্যক্তিদের জন্যই ইস্তিগফার । এ শব্দটি ৬টি খুঁটির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথম ,অতীত বিষয়ে অনুতাপ ;দ্বিতীয় ,সেদিকে আর প্রত্যাবর্তন না করার বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ;তৃতীয় ,মানুষের সকল অধিকার পূরণ করা যাতে আল্লাহর কাছে পরিস্কার ভাবে যেতে পারে এবং কোন জবাবদিহি করতে না হয় ;চতুর্থ ,সকল দায়িত্ব পালন করা যাতে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয় ;পঞ্চম ,হারাম রোজগার দ্বারা যে মাংস শরীরে হয়েছে অনুতাপে তা গলিয়ে দেয়া যেন চামড়া হাড়ের সঙ্গে লেগে যায় এবং আবার নতুন মাংস গজায় ;ষষ্ঠ ,আল্লাহর আনুগত্যের বেদনা সহ্য করার জন্য দেহকে গড়ে তোলা। এ অবস্থায় তুমি আস্তাগাফিরুল্লাহ্ ” বলতে পার।

উক্তি নং - ৪২৭

وَ قَالَعليه‌السلام : الْحِلْمُ عَشِيرَةٌ.

ক্ষমাশীলতা জ্ঞাতি - গোষ্ঠীর মতো আত্মীয়।

উক্তি নং - ৪২৮

وَ قَالَعليه‌السلام : مِسْكِينٌ ابْنُ آدَمَ: مَكْتُومُ الْأَجَلِ، مَكْنُونُ الْعِلَلِ، مَحْفُوظُ الْعَمَلِ، تُؤْلِمُهُ الْبَقَّةُ وَ تَقْتُلُهُ الشَّرْقَةُ وَ تُنْتِنُهُ الْعَرْقَةُ.

আদম সন্তানগণ কতই না দুর্বল! তার মৃত্যু গুপ্ত ,তার রোগ - ব্যাধি অজানা ,তার আমল সংরক্ষিত ,একটা মশার কামড় তাকে ব্যথা দেয় ,শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয় এবং ঘর্মাক্ত হলে তার শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।

উক্তি নং - ৪২৯

وَ رُوِيَ أَنَّهُعليه‌السلام كَانَ جَالِسا فِي أَصْحَابِهِ فَمَرَّتْ بِهِمُ امْرَأَةٌ جَمِيلَةٌ فَرَمَقَهَا الْقَوْمُ بِأَبْصَارِهِمْ، فَقَالَعليه‌السلام : إِنَّ أَبْصَارَ هَذِهِ الْفُحُولِ طَوَامِحُ؛ وَ إِنَّ ذَلِكَ سَبَبُ هِبَابِهَا، فَإِذَا نَظَرَ أَحَدُكُمْ إِلَى امْرَأَةٍ تُعْجِبُهُ فَلْيُلاَمِسْ أَهْلَهُ، فَإِنَّمَا هِيَ امْرَأَةٌ كَامْرَأَةِ. فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْخَوَارِجِ: قَاتَلَهُ اللَّهُ كَافِرا مَا أفْقَهَهُ؟! فَوَثَبَ الْقَوْمُ لِيَقْتُلُوهُ، فَقَالَعليه‌السلام : رُوَيْدا، إِنَّمَا هُوَ سَبُّ بِسَبِّ، أَوْ عَفْوٌ عَنْ ذَنْبٍ!.

বর্ণিত আছে যে ,একদিন আমিরুল মোমেনিন তার সহচরদের মাঝে বসেছিলেন। এমন সময় তাদের পাশ দিয়ে একজন সুন্দরী মহিলা যাচ্ছিলেন। সহচরীগণ ওই মহিলার দিকে তাকাতে শুরু করলো। আমিরুল মোমেনিন বললেন , এ লোকগুলোর চক্ষু লোলুপ ;তাদের লোলুপ হবার কারণ হলো তাকানো। যদি কোন নারীর সৌন্দর্যে তোমরা আকর্ষিত হও তবে তোমাদের স্ত্রীর কাছে চলে যেয়ো ,কারণ এ মহিলাও তোমাদের স্ত্রীর মতো। ” একজন খারেজি একথা শুনে বললো প্রচলিত মতবিরোধী এ লোকটিকে আল্লাহ নিধণ করুন। সে কতইনা যুক্তিবাদী। ” এ কথা শুনামাত্র আমিরুল মোমেনিনের অনুচরগণ লোকটিকে হত্যা করতে উদ্ধত হলো। কিন্তু আমিরুল মোমেনিন বললেন , তোমরা থামো। গালির বদলে তোমরা গালি দিতে পার। অন্যথায় অপরাধ ক্ষমা করে দেয়াই ভালো। ”

উক্তি নং - ৪৩০

وَ قَالَعليه‌السلام : كَفَاكَ مِنْ عَقْلِكَ، مَا أَوْضَحَ لَكَ سُبُلَ غَيِّكَ مِنْ رُشْدِكَ.

তোমার জ্ঞান দ্বারা যদি ধ্বংসের পথ ও হেদায়েতের পথ পরখ করতে পার তবে তা তোমার জন্য যথেষ্ট ।

উক্তি নং - ৪৩১

وَ قَالَعليه‌السلام : افْعَلُوا الْخَيْرَ وَ لاَ تَحْقِرُوا مِنْهُ شَيْئا، فَإِنَّ صَغِيرَهُ كَبِيرٌ وَ قَلِيلَهُ كَثِيرٌ وَ لاَ يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ: إِنَّ أَحَدا أَوْلَى بِفِعْلِ الْخَيْرِ مِنِّي فَيَكُونَ وَ اللَّهِ كَذَلِكَ، إِنَّ لِلْخَيْرِ وَ الشَّرِّ أَهْلاً، فَمَهْمَا تَرَكْتُمُوهُ مِنْهُمَا كَفَاكُمُوهُ أَهْلُهُ.

মানুষের কল্যাণ করো । কল্যাণকর কাজের কোন অংশকে ক্ষুদ্র মনে করো না কারণ এর ক্ষুদ্রাংশও অনেক বড়। কল্যাণকর কাজের বেলায় কখনো একথা বলো না যে আমার অপেক্ষা অন্য ব্যক্তি এ কাজের জন্য অধিক উপযুক্ত। ” যদি এরকম কথা বলো তবে মনে রেখো ,আল্লাহর কসম ,বাস্তবে তাই ঘটবে। সমাজে ভালো ও মন্দ উভয় ধরণের লোক আছে। তুমি যেটা ফেলে রাখবে অন্যরা সেটা করে ফেলবে ।

উক্তি নং - ৪৩২

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ أَصْلَحَ سَرِيرَتَهُ، أَصْلَحَ اللَّهُ عَلاَنِيَتَهُ، وَ مَنْ عَمِلَ لِدِينِهِ، كَفَاهُ اللَّهُ أَمْرَ دُنْيَاهُ، وَ مَنْ أَحْسَنَ فِيمَا بَيْنَهُ وَ بَيْنَ اللَّهِ، أَحْسَنَ اللَّهُ مَا بَيْنَهُ وَ بَيْنَ النَّاسِ.

যে নিজের বাতেনকে সঠিক পথে রাখে আল্লাহ তার বাহ্যিক দিক সঠিক পথে রাখেন। যে দ্বীনের খেদমত করে আল্লাহ তার দুনিয়ার কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে দেন। যে আল্লাহ ও তার নিজের মধ্যকার কর্মকাণ্ড সৎভাবে করে আল্লাহ ওই ব্যক্তির ও অন্য লোকদের মধ্যকার কর্মকাণ্ড কল্যাণকর করে দেন ।

উক্তি নং - ৪৩৩

وَ قَالَعليه‌السلام : الْحِلْمُ غِطَأٌ سَاتِرٌ، وَ الْعَقْلُ حُسَامٌ قَاطِعٌ، فَاسْتُرْ خَلَلَ خُلُقِكَ بِحِلْمِكَ، وَ قَاتِلْ هَوَاكَ بِعَقْلِكَ.

ধৈর্য দুর্বলতা ঢাকার এক প্রকার পর্দা এবং জ্ঞান তীক্ষ্ম তরবারি। সুতরাং তোমার স্বভাবের দুর্বলতা ধৈর্য দ্বারা ঢেকে রেখো এবং জ্ঞান দ্বারা কামনা - বাসনাকে হত্যা করো।

উক্তি নং - ৪৩৪

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ لِلَّهِ عِبَادا يَخْتَصُّهُمُ بِالنِّعَمِ لِمَنَافِعِ الْعِبَادِ، فَيُقِرُّهَا فِي أَيْدِيهِمْ مَا بَذَلُوهَا، فَإِذَا مَنَعُوهَا نَزَعَهَا مِنْهُمْ، ثُمَّ حَوَّلَهَا إِلَى غَيْرِهِمْ.

আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছেন যাদেরকে আল্লাহ তার নেয়ামত দ্বারা অভিষিক্ত করে রেখেছেন যেন তারা অন্যদের উপকারে আসে। সুতরাং তিনি তাঁর নেয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের হাতে রাখেন যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তা অন্যকে প্রদান করে। যখন তারা নেয়ামত অন্যকে প্রদানে অস্বীকৃতি জানায় তখন আল্লাহ তা তুলে নিয়ে যান এবং অন্যকে প্রদান করেন।

উক্তি নং - ৪৩৫

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ يَنْبَغِي لِلْعَبْدِ أَنْ يَثِقَ بِخَصْلَتَيْنِ: الْعَافِيَةِ، وَالْغِنَى. بَيْنَا تَرَاهُ مُعَافًى إِذْ سَقِمَ؛ وَ بَيْنَا تَرَاهُ غَنِيّا إِذِ افْتَقَرَ.

দুটি জিনিষ নিয়ে মানুষের গর্ব করা উচিৎ নয় , এক. স্বাস্থ্য দুই.সম্পদ । কারণ এখন যাকে স্বাস্থ্যবান দেখছো একটু পরেই সে রুগ্ন হয়ে পড়তে পারে এবং এখন যাকে ধন্যবান দেখছো একটু পরেই সে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে ।

উক্তি নং - ৪৩৬

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ شَكَا الْحَاجَةَ إِلَى مُؤْمِنٍ فَكَأَنَّهُ شَكَاهَا إِلَى اللَّهِ، وَ مَنْ شَكَاهَا إِلَى كَافِرٍ، فَكَأَنَّمَا شَكَا اللَّهَ.

যে ব্যক্তি অভাব - অভিযোগের বিষয় কোন মোমিনের কাছে বলে সে যেন তা আল্লাহর কাছে বললো। আর যদি কোন কাফেরের কাছে বলে তবে সে যেন আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো ।

উক্তি নং - ৪৩৭

وَ قَالَعليه‌السلام فِي بَعْضِ الْأَعْيَادِ: إِنَّمَا هُوَ عِيدٌ لِمَنْ قَبِلَ اللَّهُ صِيَامَهُ، وَ شَكَرَ قِيَامَهُ، وَ كُلُّ يَوْمٍ لاَ يُعْصَى اللَّهُ فِيهِ فَهُوَ يَوْمُ عِيدٌ.

এক ঈদের দিনে আমিরুল মোমেনিন বলেছিলেন ,সে ব্যক্তির জন্য ঈদ যার সিয়াম আল্লাহ গ্রহণ করেন এবং যার সালাতে তিনি সন্তুষ্ট। বস্তুত যেদিন মানুষ কোন পাপ করে না সেদিনই তার জন্য ঈদ।

উক্তি নং - ৪৩৮

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ أَعْظَمَ الْحَسَرَاتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَسْرَةُ رَجُلٍ كَسَبَ مَالاً فِي غَيْرِ طَاعَةِ اللَّهِ، فَوَرِثَهُ رَجُلٌ فَأَنْفَقَهُ فِي طَاعَةِ اللَّهِ سُبْحَانَهُ، فَدَخَلَ بِهِ الْجَنَّةَ، وَ دَخَلَ الْأَوَّلُ بِهِ النَّارَ.

বিচার দিনে সে ব্যক্তিই সর্বাপেক্ষা বেশি অনুতপ্ত হবে যে অন্যায় পথ অবলম্বন করে সম্পদ উপার্জন করেছে। সম্পদের উত্তরাধিকারী যদি মহিমান্বিত আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে তবে সে (উত্তরাধিকারী) বেহেশতবাসী হবে ;কিন্তু প্রথম উপার্জনকারী তার অপরাধের জন্য দোযখবাসী হবে।

উক্তি নং - ৪৩৯

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ أَخْسَرَ النَّاسِ صَفْقَةً، وَ أَخْيَبَهُمْ سَعْياً، رَجُلٌ أَخْلَقَ بَدَنَهُ فِي طَلَبِ آمَالِهِ، وَ لَمْ تُسَاعِدْهُ الْمَقَادِيرُ عَلَى إِرَادَتِهِ، فَخَرَجَ مِنَ الدُّنْيَا بِحَسْرَتِهِ، وَ قَدِمَ عَلَى الْآخِرَةِ بِتَبِعَتِهِ.

যে ব্যক্তির ভাগ্যে ধনসম্পদ না থাকা সত্ত্বেও তার জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালায় সে ব্যক্তি জীবনে অকৃতকার্যতার গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকে। সে ব্যক্তি এ পৃথিবী থেকে দুঃখপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়। আবার পরকালেও ধনী লোলুপতার ফল ভোগ করবে।

উক্তি নং - ৪৪০

وَ قَالَعليه‌السلام : الرِّزْقُ رِزْقَانِ: طَالِبٌ وَ مَطْلُوبٌ، فَمَنْ طَلَبَ الدُّنْيَا طَلَبَهُ الْمَوْتُ حَتَّى يُخْرِجَهُ عَنْهَا؛ وَ مَنْ طَلَبَ الْآخِرَةَ طَلَبَتْهُ الدُّنْيَا حَتَّى يَسْتَوْفِيَ رِزْقَهُ مِنْهَا.

জীবিকা দুপ্রকারেরঃ অনুসন্ধাকারী ও যা অনুসন্ধান করা হয়েছে। সুতরাং যে এ দুনিয়ার প্রতি লালায়িত হয় মৃত্যু তাকে সন্ধান করে নেয় দুনিয়া থেকে মুখ ফেরানোর পূর্বেই। আর যে ব্যক্তি পরকালের প্রতি লালায়িত থাকে জাগতিক আরাম - আয়েশ তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত চায় যতক্ষণ পর্যন্ত সে দুনিয়া থেকে জীবিকা গ্রহণ না করে।

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ৪৪১ - ৪৬০

উক্তি নং - ৪৪১

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ أَوْلِيَأَ اللَّهِ هُمُ الَّذِينَ نَظَرُوا إِلَى بَاطِنِ الدُّنْيَا إِذَا نَظَرَ النَّاسُ إِلَى ظَاهِرِهَا، وَ اشْتَغَلُوا بِآجِلِهَا إِذَا اشْتَغَلَ النَّاسُ بِعَاجِلِهَا، فَأَمَاتُوا مِنْهَا مَا خَشُوا أَنْ يُمِيتَهُمْ وَ تَرَكُوا مِنْهَا مَا عَلِمُوا أَنَّهُ سَيَتْرُكُهُمْ، وَ رَأَوُا اسْتِكْثَارَ غَيْرِهِمْ مِنْهَا اسْتِقْلاَلاً، وَ دَرَكَهُمْ لَهَا فَوْتا، أَعْدَأُ مَا سَالَمَ النَّاسُ وَ سِلْمُ مَا عَادَى النَّاسُ، بِهِمْ عُلِمَ الْكِتَابُ، وَ بِهِ عَلِمُوا وَ بِهِمْ قَامَ الْكِتَابُ وَ بِهِ قَامُوا، لاَ يَرَوْنَ مَرْجُوّا فَوْقَ مَا يَرْجُونَ، وَ لاَ مَخُوفا فَوْقَ مَا يَخَافُونَ.

আল্লাহ্ প্রেমিকগণ এ দুনিয়ার অন্তর্দিকে দৃকপাত করে। আর অন্যরা বর্হিদিকে দৃকপাত করে। আল্লাহ প্রেমিকগণ সুদূর প্রসারী লাভের দিকে ঝুকে পড়ে। আর অন্যরা আপাত লাভের জন্য ব্যস্ত থাকে। আল্লাহ প্রেমিকগণ সেসব জিনিসকে হত্যা করে যা তাদের হত্যা করবে বলে ভয় করে এবং এ পৃথিবীতে সেসব জিনিস ত্যাগ করে যা তাদের ত্যাগ করবে বলে মনে করে। অন্যদের ধন - সম্পদ স্তুপীকরণকে তারা অতি নগণ্য বিষয় বলে মনে করে। অন্যরা যেটা ভালোবাসে আল্লাহ প্রেমিকগণ সেটাকে শত্রু বলে মনে করে। আবার তারা যেটাকে ভালোবাসে অন্যরা তা ঘৃণা করে। আল্লাহ প্রেমিকগণের মাধ্যমে কুরআনের শিক্ষা প্রসারিত হয় এবং কুরআনের মাধ্যমেই তারা জ্ঞান লাভ করে। তাদের সাথেই কুরআন থাকে এবং তারা কুরআনে প্রতিষ্ঠিত। তারা কোন অসম্ভব আশা পোষণ করে না এবং যা ভয়ের কারণ সেটা ছাড়া অন্য কিছুকে ভয় করে না ।

উক্তি নং - ৪৪২

وَ قَالَعليه‌السلام : اذْكُرُوا انْقِطَاعَ اللَّذَّاتِ، وَ بَقَأَ التَّبِعَاتِ.

মনে রেখো ,আনন্দ চলে যাবে কিন্তু তার ফলাফল থেকে যাবে।

উক্তি নং - ৪৪৩

وَ قَالَعليه‌السلام : اخبُر تَقلِهِ.

কোন ব্যক্তিকে পরীক্ষা - নিরীক্ষার পর ঘৃণা করো।

____________________

১। আশ - শরীফ আর - রাজী উল্লেখ করেছেন যে ,কারো কারো মতে এ উক্তি রাসূলের (সা.) । কিন্তু ইবনুল আরাবী লিখেছেন যে ,খলিফা আল - মামুন বলেছেন আলী যদি উকবার তাকলিহি না বলতেন তবে আমি আকলিহি তাকবুর ' বলতাম। ” উকবার তাকলিহি অর্থ কাউকে পরীক্ষা করে ঘৃণা করো আর আকলিহি তাকবুর অর্থ পরীক্ষার জন্য কাউকে ঘৃণা করো।

উক্তি নং - ৪৪৪

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا كَانَ اللَّهُ لِيَفْتَحَ عَلَى عَبْدٍ بَابَ الشُّكْرِ وَ يُغْلِقَ عَنْهُ بَابَ الزِّيَادَةِ وَ لاَ لِيَفْتَحَ عَلَى عَبْدٍ بَابَ الدُّعَأِ وَ يُغْلِقَ عَنْهُ بَابَ الْإِجَابَةِ وَ لاَ لِيَفْتَحَ عَلَى عَبْدٍ بَابَ التَّوْبَةِ وَ يُغْلِقَ عَنْهُ بَابَ الْمَغْفِرَةِ.

মহান রাব্বুল আলামিন এমন নয় যে , কারো জন্য শুকরিয়ার দ্বার খোলা রেখেছেন এবং নেয়ামত ও প্রাচুর্যের দ্বার বন্ধ করে দিয়েছেন ;কারো জন্য সালাতের দ্বার খুলে দিয়েছেন। আর তা কবুলের দ্বার বন্ধ করে দিয়েছেন অথবা কারো জন্য তওবার দ্বার খুলে দিয়েছেন এবং তাকে ক্ষমা করার দ্বার বন্ধ করে দিয়েছেন।

উক্তি নং - ৪৪৫

َالَعليه‌السلام : أَوْلَى النَّاسِ بِالْكَرَمِ مَنْ عُرِقَتْ فِيِهِ الْكِرَامُ.

সম্মানজনক পদমর্যাদার জন্য সেই ব্যক্তি অধিক উপযোগী যে সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত।

উক্তি নং - ৪৪৬

وَ سُئِلَعليه‌السلام : أَيُّمَا أَفْضَلُ: الْعَدْلُ، أَوِ الْجُودُ؟ فَقَالَعليه‌السلام : الْعَدْلُ يَضَعُ الْأُمُورَ مَوَاضِعَهَا، وَ الْجُودُ يُخْرِجُهَا مِنْ جِهَتِهَا، وَالْعَدْلُ سَائِسٌ عَامُّ، وَالْجُودُ عَارِضٌ خَاصُّ، فَالْعَدْلُ أَشْرَفُهُمَا وَ أَفْضَلُهُمَا.

কোন এক ব্যক্তি আমিরুল মোমেনিনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন , ন্যায় বিচার ও উদারতা এ দুটির কোনটি অধিক ভালো। ” উত্তরে তিনি বললেন যে ,ন্যায় বিচার কোন বিষয়কে যথাযোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠিত করে ;আর উদারতা সেসব বিষয়কে যথাযোগ্য দিক থেকে সরিয়ে নিতে পারে। ন্যায় বিচার হলো সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক আর উদারতা হলো নির্দিষ্ট বিশেষ সুবিধা। ফলতঃ ন্যায় বিচার উদারতা অপেক্ষা বড় ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।

উক্তি নং - ৪৪৭

وَ قَالَعليه‌السلام : النَّاسُ أَعْدَأُ مَا جَهِلُوا.

মানুষ যা জানে না সেই বিষয়ের সে শত্রু।

উক্তি নং - ৪৪৮

وَ قَالَعليه‌السلام : الزُّهْدُ كُلُّهُ بَيْنَ كَلِمَتَيْنِ مِنَ الْقُرْآنِ: قَالَ اللَّهُ سُبْحَانَهُ:( لِكَيْلا تَأْسَوْا عَلى ما فاتَكُمْ وَ لا تَفْرَحُوا بِما آتاكُمْ ) . وَ مَنْ لَمْ يَأْسَ عَلَى الْمَاضِي، وَ لَمْ يَفْرَحْ بِالْآتِي، فَقَدْ أَخَذَ الزُّهْدَ بِطَرَفَيْهِ.

দুনিয়া বিমুখতা কুরআনের দুটি বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন , পাছে তোমরা যা পাও নি তার জন্য নিজে নিজে দুঃখ কর এবং তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন সে জন্য অতি উল্লসিত হয়ে পড় ” (কুআন ৫৭ : ৩২) । যে ব্যক্তি হারানো বিষয়ে দুঃখ করে না এবং যা পায় তাতে বিদ্রোহ করে না সেই প্রকৃত দুনিয়া বিমুখতা অর্জন করেছে।

উক্তি নং - ৪৪৯

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا أَنْقَضَ النَّوْمَ لِعَزَائِمِ الْيَوْمِ.

নিদ্রা দিনের সংকল্পের কতই না ভঙ্গকারী।

উক্তি নং - ৪৫০

وَ قَالَعليه‌السلام : الْوِلاَيَاتُ مَضَامِيرُ الرِّجَالِ.

শাসন ক্ষমতা মানুষের প্রমাণ - ক্ষেত্র।

উক্তি নং - ৪৫১

وَ قَالَعليه‌السلام : لَيْسَ بَلَدٌ بِأَحَقَّ بِكَ مِنْ بَلَدٍ، خَيْرُ الْبِلاَدِ مَا حَمَلَكَ.

তোমাদের ওপর তোমাদের নিজেদের শহর অপেক্ষা অন্য কোন শহরের বেশি অধিকার নেই। সে শহর তোমার জন্য সর্বোত্তম যেটিতে তুমি বাস করা।

উক্তি নং - ৪৫২

وَ قَالَعليه‌السلام : وَ قَدْ جَأَهُ نَعْيُ الْأَشْتَرِ: مَالِكٌ وَ مَا مَالِكٌ! وَ اللَّهِ لَوْ كَانَ جَبَلاً لَكَانَ فِنْداً، وَ لَوْ كَانَ حَجَراً لَكَانَ صَلْداً، لاَ يَرْتَقِيهِ الْحَافِرُ، وَ لاَ يُوفِي عَلَيْهِ الطَّائِرُ. و الفند: المنفرد من الجبال.

আমিরুল মোমেনিন মালিক আশতারের শাহাদাতের সংবাদ শুনে বললেন , হায় মালিক! কতো বড়ো মানুষ ছিল মালিকা!! আল্লাহর কসম ,যদি সে পর্বত হতো ,তাহলে হতো এক মহাপর্বতমালা ;সে যদি পাথর হতো তাহলে সে এতোটা কঠিন ও বিশাল হতো যে ,কোন অশ্বারোহী তার ওপর ওঠতে পারতো না ,কোন পাখী পারতো না তার ওপর দিয়ে উড়তে। ”

উক্তি নং - ৪৫৩

وَ قَالَعليه‌السلام : قَلِيلٌ مَدُومٌ عَلَيْهِ، خَيْرٌ مِنْ كَثِيرٍ مَمْلُولٍ مِنْهُ.

যা স্থায়ী হয় তার সামান্যও ওটার অনেকটা থেকে ভালো যা দুঃখ বয়ে আনে।

উক্তি নং - ৪৫৪

وَ قَالَعليه‌السلام : إِذَا كَانَ فِي رَجُلٍ خَلَّةٌ رَائِقَةٌ فَانْتَظِرُوا أَخَوَاتِهَا.

যদি কোন ব্যক্তির অতি প্রাকৃত একটি গুণ প্রকাশ পায় তবে তার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তার অন্যান্য গুণাবলী দেখে নিয়ো ।

উক্তি নং - ৪৫৫

وَ قَالَعليه‌السلام : لِغَالِبِ بْنِ صَعْصَعَةَ أَبِي الْفَرَزْدَقِ فِي كَلاَمٍ دَارَ بَيْنَهُمَا: مَا فَعَلَتْ إِبِلُكَ الْكَثِيرَةُ؟ قَالَ: دَغْدَغَتْهَا الْحُقُوقُ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ. فَقَالَعليه‌السلام : ذَلِكَ أَحْمَدُ سُبُلِهَا.

আমিরুল মোমেনিন গালিব ইবনে সাআ সাহ কবি ফারাজদাকের পিতা এর সাথে কথোপকথন কালে বললেন , আপনার বিপুল সংখ্যক উটের কী অবস্থা ? গালিব উত্তর দিলেন ,হে আমিরুল মোমেনিন ,দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে উট নিঃশেষ হয়ে গেছে। ” আমিরুল মোমেনিন বললেন , উটগুলো হারানোর প্রশংসিত পথ সেটাই। ”

উক্তি নং - ৪৫৬

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنِ اتَّجَرَ بِغَيْرِ فِقْهٍ فَقَدِ ارْتَطَمَ فِي الرِّبَا.

দ্বীনের আইন - কানুন না জেনে যে ব্যবসায় করে সে কুসীদ ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়ে।

উক্তি নং - ৪৫৭

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ عَظَّمَ صِغَارَ الْمَصَائِبِ ابْتَلاَهُ اللَّهُ بِكِبَارِهَا.

ছোট - খাট বিপদাপদকে যে বড় কিছু মনে করে আল্লাহ তাকে বড় দুঃখ - কষ্টে ফেলেন।

উক্তি নং - ৪৫৮

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْ كَرُمَتْ عَلَيْهِ نَفْسُهُ، هَانَتْ عَلَيْهِ شَهَوَاتُهُ.

যে ব্যক্তি আত্মসম্মানের দিকে খেয়াল রাখে। তার কামনা - বাসনা তার কাছে হালকা হয়ে যায় ।

উক্তি নং - ৪৫৯

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا مَزَحَ رَجُلُ مَزْحَةً، إِلا مَجَّ مِنْ عَقْلِهِ مَجَّةً.

যখনই মানুষ হাসি - তামাশায় লিপ্ত হয় তখনই সে তার প্রজ্ঞা থেকে কিছুটা সরে পড়ে।

উক্তি নং - ৪৬০

وَ قَالَعليه‌السلام : زُهْدُكَ فِي رَاغِبٍ فِيكَ نُقْصَانُ حَظِّ، وَ رَغْبَتُكَ فِي زَاهِدٍ فِيكَ ذُلُّ نَفْسٍ.

যে ব্যক্তি তোমার দিকে ঝুকে পড়েছে তার দিক থেকে মুখ ফেরানো তোমারই সুবিধার অংশ হারানো। অপর দিকে তুমি কারো প্রতি ঝুকে পড়লে সে তোমার দিক থেকে মুখ ফেরানো তোমার জন্য অবমাননাকর।

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ৪৬১ - ৪৮০

উক্তি নং - ৪৬১

وَ قَالَعليه‌السلام : الْغِنَى وَ الْفَقْرُ بَعْدَ الْعَرْضِ عَلَى اللَّهِ.

ধনসম্পদ ও দুঃখ - দুর্দশা আল্লাহর সম্মুখে উপস্থাপনার পর প্রকাশিত হয়ে পড়বে ।

উক্তি নং - ৪৬২

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا زَالَ الزُّبَيْرُ رَجُلاً مِنَّا أَهْلَ الْبَيْتِ حَتَّى نَشَأَ ابْنُهُ الْمَشْئُومُ عَبْدُ اللَّهِ.

জুবায়েরের দুরাচার পুত্র আবদুল্লাহ্ জন্মাবার পূর্ব পর্যন্ত জুবায়ের আমাদের একজন ছিল ।

____________________

১। আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের ইবনে আওয়ান (১/৬২২ - ৭৩/৬৯২) এর মাতা ছিল আসমা বিনতে আবু বকর (আয়শার বোন) বয়ঃপ্রাপ্ত হবার পর হতেই আবদুল্লাহ বনি হাশিমের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হয়ে ওঠে ;বিশেষ করে ,আমিরুল মোমেনিনের প্রতি তার চরম বিদ্বেষ ছিল। তার পিতা জুবায়েরের মনোভাব আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে নিতেও সে কুণ্ঠা বোধ করেনি। অথচ আমিরুল মোমেনিন ছিলেন জুবায়েরের পিতার খালার ছেলে। এ জন্যই আমিরুল মোমেনিন বলেছিলেন ,

জুবায়েরের অসৎ ছেলে আবদুল্লাহ বড় হবার পূর্ব পর্যন্ত জুবায়রা আমাদের একজন ছিল। (বার ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৯০৬ আছীর ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৬২ - ১৬৩ ;আসাকীর ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৬৩। হাদীদ ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৬৭ ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৭৯ ,২০তম খণ্ড ,পৃঃ ১০৪)

জামাল যুদ্ধের ইন্ধন যোগানদানকারীদের মধ্যে আবদুল্লাহ ছিল অন্যতম। তার খালা আয়শা ,তার পিতা জুবায়ের ও তার মায়ের চাচাত ভাই তালহা আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। ইবনে আবিল হাদীদ লিখেছেনঃ

আবদুল্লাহ তার পিতা জুবায়েরকে জামাল যুদ্ধে অবতীর্ণ হবার জন্য বাধ্য করেছিল এবং বসরার দিকে সৈন্য পরিচালনা করেছিল । আবদুল্লাহর এ কাজ আয়শার মনঃপুত হয়েছিল। আয়শা তার বোনের ছেলে আবদুল্লাহকে অত্যক্ত ভালোবাসতেন। আবদুল্লাহ ছিল তার কাছে মায়ের একমাত্র পুত্রের মতো আদরের এবং আয়শার কাছে আবদুল্লাহ অপেক্ষা অধিক প্রিয় আর কেউ ছিল না। (ইসফাহানী ,পৃঃ ১৪২. হাদীদ ,২০তম খণ্ড ,পৃঃ ১২০ ;কাছীর ,৮ম খণ্ড ,পৃ:৩৩৬)

হিশাম ইবনে উরওয়া বলেছেনঃ

আবদুল্লাহর জন্য আয়শা যত দোয়া করতো সেরকম দোয়া আর কারো জন্য করতে আমি শুনি নি । জামাল যুদ্ধে আবদুল্লাহ নিহত হয়নি এ খবর যে দিয়েছিল তাকে আয়শা দশ হাজার দিরহাম পুরস্কার দিয়েছিল এবং আল্লাহর শুকারিয়া আদায়ের জন্য সিজদা করেছিল (আসাকীর ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৪০২ ,হাদীদ ,২০ তম কণ্ড ,পৃঃ ১১৯)

আয়শার এ ভালোবাসাই তাঁর ওপর আবদুল্লাহর কর্তৃত্বের মূল কারণ। আবদুল্লাহ তার ইচ্ছমত আয়শাকে পরিচালনা করতো। যাহোক বনি হাশিমের প্রতি আবদুল্লাহর বিদ্বেষ এমন পর্যায়ে পৌছেছিল যা বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিম্নোক্তভাবে বর্ণনা করেছেনঃ

মক্কায় আবদুল্লাহর খেলাফত কালে চল্লিশ জুমাতে সে খোৎবা প্রদানকালে রাসূলের (সা.) ওপর দরুদ পেশ করেনি। সে বলতো , রাসূলের ওপর দরুদ পেশ করতে কোন কিছুই বাধা দেয়নি। শুধু বনি হাশিমের এ কয়টি লোক রাসূলের নাম নিলে গর্বিত হবে এজন্য আমি দরুদ পেশ করি না। ” অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে ,আবদুল্লাহ বলেছে , রাসূলের আহলুল বাইত ছাড়া অন্য কিছু তাঁর প্রতি দরুদ প্রেরণে আমাকে প্রতিহত করেনি। কারণ রাসূলের নাম নিলেই এ লোকগুলি মাথা নাড়বে ” (ইসফাহানী ,পৃঃ ৪৭৪ ;মাসুদী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৪১৩ ,ইয়াকুবী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২৬১ ;রাব্বিহ ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪১৩ ;হাদীদ ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৬২ ;১৯তম খণ্ড ,পৃঃ ৯১ - ৯২ ,২০তম খণ্ড ,পৃঃ ১২৭ - ১২৯) ।

আবদুল্লাহ ইবনে জুবাযের আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে বলেছিল ,

আমি চল্লিশ বছর ধরে আহলুল বাইতের প্রতি আমার পুঞ্জীভূত ঘৃণা গোপন করে রেখেছি (মাসুদী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৮০ ;হাদীদ ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৬২ ,২০ তম খণ্ড ,পৃঃ ১৪৮)

আবুদল্লাহ আমিরুল মোমেনিনের প্রতি ঘোর বিদ্বেষ পোষণ করতো। সে তার প্রতি সম্মানহানীকর ও অবমাননাকর উক্তি করতো ,তাঁকে গালি দিত এবং তাঁর প্রতি অভিশাপ দিত (ইয়াকুবী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২৬১ - ২৬২ ;মাসুদী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৮০ ;হাদীদ ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৬১ - ৬৩ ,৭৯) ।

আবদুল্লাহ আমিরুল মোমেনিনের পুত্র মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া ,আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও হাসান ইবনে হাসান ইবনে আলী ইবনে আবি তালিবসহ হাশিম বংশের সত্তর জনকে বন্দি করে আরিমের শিবে (ছোট একটা পাহাড়ি উপত্যকা) আটক করে রাখে। তাদের সকলকে পুড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে উক্ত উপত্যকার প্রবেশ দ্বারে সে অনেক কাঠ স্তুপীকৃত করেছিল। এ সময় মুখতার ইবনে আবি উবায়েদ আছ - ছাকাকী মক্কায় চার হাজার সৈন্য প্রেরণ করেছিলেন। তারা মক্কায় পৌঁছেই আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরকে আক্রমণ করলো এবং অপ্রত্যাশিতভাবে বনি হাশিমের বন্দিগণকে আরিম - শিব থেকে উদ্ধার করলো । আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের ভ্রাতা উরওয়া আবদুল্লাহর এহেন কাজের জন্য ওজর পেশ করলো যে ,বনি হাশিম আবদুল্লাহর আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেনি বলেই সে এ কাজ করতেছিল। তার কাজটি মূলত উমর ইবনে খাত্তাবের অনুকরণ মাত্র। কারণ বনি হাশিম আবু বকরের বায়াত গ্রহণ করেনি বলে তাদেরকে ফাতিমার ঘরে একত্রিত করে পুড়িয়ে দেয়ার জন্য উমর অনেক কাঠ স্তুপীকৃত করেছিলেন (ইসফাহানী ,পৃঃ ৪৭৪ ;হাদীদ ,১৯তম খণ্ড ,পৃঃ ৯১ ;২০ তম খণ্ড ,পৃঃ ১২৩ - ১২৬ ,১৪৬ - ১৪৮ ;আসাকীরা ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৪০৮ ,রাব্বিহ ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪১৩ ;সাদ ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৭৩ - ৮১ ;তাবারী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৬৯৩ - ৬৯৫ ;আছীর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৪৯ - ২৫৪ ;খালদুন ,৩য় খণ্ড)

এ বিষয়ে আবুল ফারাজ ইসফাহানী লিখেছেনঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের সদা - সর্বদা বনি হাশিমের বিরুদ্ধে অন্যান্য লোকদের উস্কানি দিতো এবং এ কাজে সে যে কোন মন্দ পন্থা অবলম্বনেও কুণ্ঠা বোধ করতো না । সে মিম্বারে বসেও বনি হাশিমের কুৎসা রটনা করতো এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতো এ সময় বনি হাশিমের কোন একজন তার এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করলো ফলে সে তার পথ পরিবর্তন করে ইবনে হানাফিয়াকে আরিমের শিবে বন্দি করলো । তারপর সে মক্কায় বনি হাশিমের যেসব লোককে পেল তাদের বন্দি করে হানাফিয়ার সাথে আরিমের শিবে রাখলো এবং তাদেরকে পুড়িয়ে হত্যা করার জন্য অনেক কাঠ সংগ্রহ করে আরিমের শিবে জমালো । এ খবর পেয়ে হানফিয়ার অনুচরগণ আবু আবদিল্লাহ আল জাদালীর নেতৃত্বে আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের সাথে যুদ্ধ করার জন্য মক্কায় উপস্থিত হয়ে গেল । আল - জাদালীর উপস্থিতি টের পেয়েই আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগুন লাগিয়ে দিল। আল - জাদালী সরাসরি আরিমের শিবে উপস্থিত হয়ে আগুন নিভিয়ে ফেললো এবং বন্দিদেরকে উদ্ধার করলো (ইসফাহানী ,পৃঃ ১৫)

উক্তি নং - ৪৬৩

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا لاِبْنِ آدَمَ وَ الْفَخْرِ: أَوَّلُهُ نُطْفَةٌ، وَ آخِرُهُ جِيفَةٌ، لاَ يَرْزُقُ نَفْسَهُ، وَ لاَ يَدْفَعُ حَتْفَهُ.

মানুষ কিসে দম্ভ করে যেখানে তার উৎপত্তি হলো বীর্য আর পরিণতি হলো লাশ এবং সে নিজেকে খাওয়াতে পারে না বা মৃত্যুকে ঠেকাতে পারে না।

উক্তি নং - ৪৬৪

وَ سُئِلَ مَنْ أَشْعَرُ الشُّعَرَأِ؟ فَقَالَعليه‌السلام : إِنَّ الْقَوْمَ لَمْ يَجْرُوا فِي حَلْبَةٍ تُعْرَفُ الْغَايَةُ عِنْدَ قَصَبَتِهَا، فَإِنْ كَانَ وَ لاَ بُدَّ فَالْمَلِكُ الضِّلِّيلُ. یرید امرأ القیس.

কেউ একজন আমি করুল মোমেনিনকে জিজ্ঞেস করলেন ,সব চাইতে বড় কবি কে ? উত্তরে তিনি বললেন ,কবিরা সকলে একই লাইনে তাদের চিন্তাভাবনা ব্যক্ত করে না। ফলে আমরা তাদের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণয় করতে সক্ষম হই না। তাসত্ত্বেও আল - মালিক আদ - দিল্লিল (পথভ্রষ্ট রাজা) অর্থাৎ ইমরিউল কায়েস শ্রেষ্ঠ ।

উক্তি নং - ৪৬৫

وَ قَالَعليه‌السلام : أَلاَ حُرُّ يَدَعُ هَذِهِ اللُّمَاظَةَ لِأَهْلِهَا؟ إِنَّهُ لَيْسَ لِأَنْفُسِكُمْ ثَمَنٌ إِلا الْجَنَّةَ، فَلاَ تَبِيعُوهَا إِلا بِهَا.

এমন কোন মুক্ত লোক কি নেই ,যে দুনিয়ার উচ্ছিষ্টকে যারা পছন্দ করে তাদের জন্য তা রেখে যায়। নিশ্চয়ই ,তোমার জন্য একমাত্র মূল্য হলো বেহেশত। সুতরাং বেহেশত ছাড়া অন্য কিছুর জন্য নিজকে বিক্রি করো না ।

উক্তি নং - ৪৬৬

وَ قَالَعليه‌السلام : مَنْهُومَانِ لاَ يَشْبَعَانِ؛ طَالِبُ عِلْمٍ وَ طَالِبُ دُنْيَا.

দুধরনের লোভী ব্যক্তি কখনো তৃপ্ত হয় না। এদের একজন হলো জ্ঞান অন্বেষণকারী আর অপরজন হলো দুনিয়া অন্বেষণকারী।

উক্তি নং - ৪৬৭

وَ قَالَعليه‌السلام : علامَةُ الْإِيمَانِ أَنْ تُؤْثِرَ الصِّدْقَ حَيْثُ يَضُرُّكَ، عَلَى الْكَذِبِ حَيْثُ يَنْفَعُكَ، وَ أَلا يَكُونَ فِي حَدِيثِكَ فَضْلٌ عَنْ عَمَلِكَ، وَ أَنْ تَتَّقِيَ اللَّهَ فِي حَدِيثِ غَيْرِكَ.

ইমানে চিহ্ন হলো - তুমি সত্যকে আঁকড়ে ধরবে যদি তাতে তোমার ক্ষতিও হয় এবং মিথ্যাকে বর্জন করবে যদি মিথ্যা দ্বারা তোমার লাভও হয় । তোমার কথা যেন কাজের চেয়ে বেশি না হয় এবং অন্যদের সম্পর্কে কথা বলতে আল্লাহকে ভয় করো।

উক্তি নং - ৪৬৮

وَ قَالَعليه‌السلام : يَغْلِبُ الْمِقْدَارُ عَلَى التَّقْدِيرِ، حَتَّى تَكُونَ الْآفَةُ فِي التَّدْبِيرِ.

ভাগ্য আমাদের পূর্ব - স্থিরীকৃত বিষয়েরও নিয়ন্ত্রণকারী যতক্ষণ পর্যন্ত না চেষ্টা ধ্বংস সংঘটিত করে ।

উক্তি নং - ৪৬৯

وَ قَالَعليه‌السلام : الْحِلْمُ وَ الْأَنَاةُ تَوْأَمَانِ، يُنْتِجُهُمَا عُلُوُّ الْهِمَّةِ.

ক্ষমা আর ধৈর্য জমজ এবং দুটি উচ্চ স্তরের সাহসের ফল।

উক্তি নং - ৪৭০

وَ قَالَعليه‌السلام : الْغِيبَةُ جُهْدُ الْعَاجِزِ.

সহায়হীনের অস্ত্র হলো গিবত করা।

উক্তি নং - ৪৭১

وَ قَالَعليه‌السلام : رُبَّ مَفْتُونٍ بِحُسْنِ الْقَوْلِ فِيهِ.

অনেকেই কুকর্মে জড়িয়ে পড়ে এজন্য যে ,তা সম্পর্কে তাকে ভালো ধারণা দেয়া হয়।

উক্তি নং - ৪৭২

وَ قَالَعليه‌السلام : الدُّنْيَا خُلِقَتْ لِغَيْرِهَا، وَ لَمْ تُخْلَقْ لِنَفْسِهَا.

এ দুনিয়া তার নিজের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি - অন্যের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

উক্তি নং - ৪৭৩

وَ قَالَعليه‌السلام : إِنَّ لِبَنِي أُمَيَّةَ مِرْوَدا يَجْرُونَ فِيهِ وَ لَوْ قَدِ اخْتَلَفُوا فِيمَا بَيْنَهُمْ ثُمَّ كَادَتْهُمُ الضِّبَاعُ لَغَلَبَتْهُمْ.

বনি উমাইয়াদের নির্ধারিত সময় (মিরওয়াদ) আছে যার মধ্যেই তারা শেষ হয়ে যাবে। সময় আসবে যখন তাদের মধ্যে মতদ্বৈধতা দেখা দেবে এবং তখন হায়েনাও তাদেরকে আক্রমণ করে ক্ষমতাচ্যুত করবে।

____________________

১ । উমাইয়াদের পতন সম্পর্কে আমিরুল মোমেনিনের এ ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান উমাইয়া শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং ১৩২ হিজরিতে মারওয়ান ইবনে মুহাম্মদ আল - হিমারের সময় ৯০ বৎসর ১১ মাস ১৩ দিন পর তার পরিসমাপ্তি ঘটে । উমাইয়া রাজত্ব ছিল স্বৈরাচার ,অত্যাচার আর জুলুমের প্রতীক। উমাইয়া শাসকগণ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ইসলামকে কালিমালিপ্ত করেছে। তারা মক্কায় সৈন্য পাঠিয়ে কাবায় আগুন লাগিয়েছে ,মদিনা তাদের পৈশাচিকতার শিকার হয়েছে এবং মুসলিমদের রক্তের স্রোত বয়ে গেছে। এ রক্তপাত অবশেষে ধ্বংসাত্মক বিদ্রোহে রূপ নিয়েছিল। এ সময় বনি আব্বাস আল - খিলাফাহ আল - ইলাহিয়া ” (আল্লাহর খেলাফত) নামক আন্দোলন শুরু করেছিল। তাদের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য তারা আবু মুসলিম আলখোরাসানী নামক একজন তুখোড় বক্তা ও নেতা পেয়েছিল। খোরাসানকে সদরদপ্তর করে আন্দোলন পরিচালিত হয় এবং উমাইয়াদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করে আব্বাসিয়রা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।

উক্তি নং - ৪৭৪

وَ قَالَعليه‌السلام فِي مَدْحِ الْأَنْصَارِ: هُمْ وَ اللَّهِ رَبَّوُا الْإِسْلاَمَ كَمَا يُرَبَّى الْفِلْوُ مَعَ غَنَائِهِمْ بِأَيْدِيهِمُ السِّبَاطِ، وَ أَلْسِنَتِهِمُ السِّلاَطِ.

আনসারদের প্রশংসা করে আমিরুল মোমেনিন বলেছিলেনঃ আল্লাহর কসম ,তারা তাদের উদারতা ও মধুর কথা দ্বারা ইসলামকে এমনভাবে লালন - পালন করেছে। যেমন করে একটা উষ্ট্র শাবককে লালন করা হয় ।

উক্তি নং - ৪৭৫

وَ قَالَعليه‌السلام : الْعَيْنُ وِكَأُ السَّهِ

চক্ষু হলো পিছনের ফিতা।

উক্তি নং - ৪৭৬

وَ وَلِيَهُمْ وَالٍ فَأَقَامَ وَ اسْتَقَامَ، حَتَّى ضَرَبَ الدِّينُ بِجِرَانِهِ.

তাদের একজন শাসক এসেছিল । সে ন্যায়পরায়ণ ছিল এবং তাদেরকে ন্যায়পরায়ণ করেছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না সম্পূর্ণ দ্বীন প্রস্ফুটিত হয়েছিল।

উক্তি নং - ৪৭৭

وَ قَالَعليه‌السلام : يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ عَضُوضٌ، يَعَضُّ الْمُوسِرُ فِيهِ عَلَى مَا فِي يَدَيْهِ، وَ لَمْ يُؤْمَرْ بِذَلِكَ؛ قَالَ اللَّهُ سُبْحَانَهُ:( وَ لا تَنْسَوُا الْفَضْلَ بَيْنَكُمْ ) ؛ يَنْهَدُ فِيهِ الْأَشْرَارُ، وَ يُسْتَذَلُّ الْأَخْيَارُ، وَ يُبَايِعُ الْمُضْطَرُّونَ، وَ قَدْ نَهَى رَسُولُ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم عَنْ بَيْعِ الْمُضْطَرِّينَ.

এমন এক দুঃসময় আসবে যখন ধনবানগণ তাদের ধনসম্পদ দাতে কামড়ে ধরে রাখবে (কৃপনতার রূপক) অথচ এমন স্বভাব তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন , তোমরা নিজেদের মধ্যে উদারতার কথা ভুলে যেয়ো না ” (কুরআনঃ ২ : ২৩৭) । এসময় দুষ্ট লোকেরা ওপরে ওঠে যাবে এবং ধার্মিকদের হীনাবস্থা হবে। এ সময় অসহায়গণের সহায় সম্বল ক্রয় করা হবে অথচ রাসূল (সা.) অসহায়দের সহায় সম্বল ক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।

উক্তি নং - ৪৭৮

وَ قَالَعليه‌السلام : يَهْلِكُ فِيَّ رَجُلاَنِ: مُحِبُّ مُفْرِطٌ، وَ بَاهِتٌ مُفْتَرٍ.

আমাকে নিয়ে দুধরণের লোক ধ্বংসের পথে যাবে। (১) যারা আমাকে ভালোবাসে অথচ অতিরঞ্জিত করে ;(২) যারা আমাকে ঘৃণা করে ও মিথ্যা দোষারোপ করে।

____________________

১। রাসূল (সা.) বারবার তাঁর উম্মতকে আদেশ করেছেন যেন তারা আলীকে ভালোবাসে এবং তিনি আলী সম্পর্কে কোন ঘৃণা বা বিদ্বেষ পোষণ নিষিদ্ধ করেছেন। অধিকন্তু রাসূল (সা.) আলীর প্রতি ভালোবাসাকে ইমান ও তার প্রতি ঘৃণাকে মোনাফেকি (নিফাক) বলে আখ্যায়িত করেছেন। (বাণী নং ৪৫এর টীকা) রাসূলের (সা.) চৌদ্দজন সাহাবি থেকে বর্ণিত আছে যে ,তিনি বলেছেনঃ

যে আলীকে ভালোবাসলো সে আমাকে ভালোবাসলো ,যে আমাকে ভালোবাসলো সে আল্লাহকে ভালোবাসলো ,যে আল্লাহকে ভালোবাসলো তিনি তাকে বেহেশতে স্থান দিবেন ।

যে আলীকে ঘৃণা করলো সে আমাকে ঘৃণা করলো ,যে আমাকে ঘৃণা করলো সে নিশ্চয়ই আল্লাহকে ঘৃণা করলো ,যে আল্লাহকে ঘৃণা করলো সে অবশ্যই দোযখবাসী হলো ।

যে আলীকে আঘাত দিলো সে আমাকেই আঘাত দিলো ,যে আমাকে আঘাত দিলো। নিশ্চয়ই সে আল্লাহকে আঘাত দিল । নিশ্চয়ই ,যে আল্লাহ ও রাসূলকে আঘাত দেয়। আল্লাহ তাকে ইহকাল ও পরকালে অভিসম্পাত দেন এবং তার জন্য কঠোর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন ” (কুরআন - ৩৩৪৫৭) । (নিশাবুরী ,৩য় খণ্ড পৃঃ ১২৭ - ১২৮ ও ১৩০৫ ইসফাহানী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৬৬ - ৬৭ ,বার ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৪৯৬ - ৪৯৭: আছীর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৩৮৩: হাজর ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৪৯৬ - ৪৯৭. শাফকী ,৯ম খণ্ড ,পৃঃ ১০৮ ,১০৯ ,১২৯ ,১৩১ ,১৩২ ,ও ১৩৩ হিন্দি ,১২শ খণ্ড ,পৃঃ ২০২ ,২০৯ ,২১৮ ,২১৯: ১৫ শ খণ্ড ,পৃঃ ৯৫ ,১৭শ খণ্ড ,পৃঃ ৭০ শাফী ,২য় খণ্ড পৃঃ ১৬৬ ,১৬৭ ,২০৯)

রাসূল (সা.) তাঁর উম্মতকে সাবধান করে দিয়েছিলেন যেন তারা আলীর বিষয় অতিরঞ্জিত না করে। এ কারণে অনেক সময় তিনি আলীর অনেক গুণাবলীর প্রশংসা থেকেও বিরত থাকেন। জাবির ইবনে আবদিল্লাহ আল - আনসারী থেকে বর্ণিত আছেঃ

যখন আমিরুল মোমেনিন খায়বার দুর্গ জয় করে রাসূলের সম্মুখে উপস্থিত হলেন তখন রাসূল (সা.) বললেন , হে আলী ,আমার উম্মতের একদল কি এমন হবে না। যারা তোমার সম্পর্কে তেমন কথা বলবে যা নাসারা গণ মরিয়মপুত্র ঈসা সম্পর্কে বলে । আমি যদি তোমার সম্পর্কে একটু কিছু বলি তাহলে তুমি কোন মুসলিমের সম্মুখ দিয়ে যেতে পারবে না । কারণ তারা তোমাকে পাথরোধ করে তোমার পায়ের ধুলা নিতে থাকবে বরকত ও আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য । আমি এটুকু বলা যথেষ্ট মনে করি যে ,মুসার কাছে হারুনের মর্যাদা যেমন ছিল আমার কাছেও তুমি তেমন । শুধু ব্যতিক্রম হলো আমার পরে আর কোন নবী আসবে না (শাফকী ,৯ম খণ্ড ,: হাদীদ ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৪ ,৯ম খণ্ড ,পৃঃ ৬৮ ,১৮ শ খণ্ড ,পৃঃ ২৮২. শাফী ,পৃঃ ২৩৭ - ২৩৯ হানাকী ,পৃঃ ৭৫ ,৭৬ ,৯৬ ,২২০ ,আশরাফ ,পৃঃ ২৬৪ - ২৬৫ হানাফী ,পৃঃ ৪৪৮ - ৪৫৪ ; কন্দজিী ,পৃ .৬৩ - ৬৪ ও ১৩০ - ১৩১ )

আমিরুল মোমেনিন নিজেই বলেছেনঃ

রাসূল (সা.) আমাকে ডেকে বললেন , হে আলী ,তোমার ও মারিয়ম পুত্র ঈসার মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। ঈসাকে ইহুদিগণ ঘৃণা করে এবং তার মায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয় । অপরপক্ষে ,খৃষ্টানগণ তাকে অধিক ভালোবেসে অতিরঞ্জিত করে এমন মর্যাদা তাকে দেয় যা তিনি নন

অতঃপর আমিরুল মোমেনিন বলেন ,সাবধান ,আমাকে নিয়ে দুপ্রকার লোক ধ্বংস প্রাপ্ত হবে এক প্রকার লোক আমাকে ভালোবাসবে এবং এমন উচ্চকিত প্রশংসা করবে যা আমি নই ,অপর প্রকার লোক যারা আমাকে ঘৃণা করবে এবং আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অপবাদ দেবে । সাবধান ,আমি নবী নই এবং আমার কাছে কোন কিছু প্রত্যাদিষ্ট হয়নি ,কিন্তু আমি যতটুকু সম্ভব। আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী আমলা করি (হাম্বল ,১ম খণ্ড ,পৃ .১৬০ ;নিশাবুরী ,৩য় খণ্ড ,পৃ .১২৩ ;তব্রীজী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ২৪৫ - ২৪৬ ,শাফী ,৯ম খণ্ড ,পৃঃ ১৩৩: হিন্দি ,১২শ খণ্ড ,পৃঃ ২১৯ ,১৫শ খণ্ড ,পৃঃ ১১০: কাছীর ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৫৬) ।

বিখ্যাত হাদিসবেত্তা আমির ইবনে শারাহিল আশ - শাবি (১৯/৬৪০ - ১০৩/৭২১) থেকে বর্ণিত আছে যে ,রাসূল (সা.) আলীকে ডেকে বলেছেন , হে আলী ,তোমাকে নিয়ে দুধরনের লোক ধ্বংস প্রাপ্ত হবে (১) যারা তোমাকে ভালোবাসতে গিয়ে অতিরঞ্জিত কথা বলবে ;(২) যারা তোমার সম্পর্কে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অপবাদ দেবে ” (বার ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১১০১ ও ১১৩০ ;হাদীদ ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৬ রাব্বি ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৩১২)

উক্তি নং - ৪৭৯

وَ سُئِلَ عَنِ التَّوْحِيدِ وَ الْعَدْلِ؛ فَقَالَعليه‌السلام : التَّوْحِيدُ أَلا تَتَوَهَّمَهُ، وَ الْعَدْلُ أَنْ لا تَتَّهِمَهُ.

কেউ একজন আমিরুল ,মোমেনিনকে আল্লাহর একত্ব ও ন্যায়বিচার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন ,একত্ব অর্থ হলো তুমি তাকে তোমার কল্পনা দ্বারা সীমাবদ্ধ করতে পারবে না এবং ন্যায়বিচার অর্থ হলো তুমি তাকে কোন প্রকার দোষারোপ করতে পারবে না।

উক্তি নং - ৪৮০

وَ قَالَعليه‌السلام : لاَ خَيْرَ فِي الصَّمْتِ عَنِ الْحُكْمِ، كَمَا أَنَّهُ لاَ خَيْرَ فِي الْقَوْلِ بِالْجَهْلِ.

জ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়ে জ্ঞানীদের নীরবতায় কোন মঙ্গল নেই। যেমন মঙ্গল নেই অজ্ঞদের কথা বলাতে ।

উক্তি , উপদেশ ও প্রবাদ ৪৮১ - ৪৮৯

উক্তি নং - ৪৮১

وَ قَالَعليه‌السلام : فِي دُعَأٍ اسْتَسْقَى بِهِ: اللَّهُمَّ اسْقِنَا ذُلُلَ السَّحَائبِ دُونَ صِعَابِهَا.

বৃষ্টির জন্য প্রার্থনায় আমিরুল মোমেনিন বলেন ,হে আল্লাহ ,আমাদের জন্য বৃষ্টি দিন বাধ্য মেঘ হতে ,অবাধ্য মেঘ হতে নয়।

উক্তি নং - ৪৮২

وَ قِيلَ لَهُعليه‌السلام : لَوْ غَيَّرْتَ شَيْبَكَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ فَقَالَعليه‌السلام : الْخِضَابُ زِينَةٌ وَ نَحْنُ قَوْمٌ فِي مُصِيبَةٍ!

কেউ একজন বলেছিল , হে আমিরুল মোমেনিন ,যদি আপনি আপনার পাকা চুলে কলপ দিতেন। ” তখন তিনি বললেন , চুলে রং করা এক প্রকার সাজসজ্জা। কিন্তু এখন আমরা শোকাহত অবস্থায় আছি। ”

উক্তি নং - ৪৮৩

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا الْمُجَاهِدُ الشَّهِيدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَعْظَمَ أَجْرا مِمَّنْ قَدَرَ فَعَفَّ؛ لَكَادَ الْعَفِيفُ أَنْ يَكُونَ مَلَكا مِنَ الْمَلاَئِكَةِ.

সে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদে শহীদ অপেক্ষাও বেশি পুরস্কৃত হবে যে অসৎ হবার উপায় উপকরণের মাঝে সৎ থাকে। সৎ ব্যক্তির পক্ষে ফেরেশতাদের একজন হওয়াও সম্ভব ।

উক্তি নং - ৪৮৪

وَ قَالَعليه‌السلام :الْقَنَاعَةُ مَالٌ لاَ يَنْفَدُ.

আত্মতুষ্টি এমন এক সম্পদ যা কখনো শেষ হয় না।

উক্তি নং - ৪৮৫

وَ قَالَعليه‌السلام : لِزِيَادِ بْنِ أَبِيهِ وَ قَدِ اسْتَخْلَفَهُ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْعَبَّاسِ عَلَى فَارِسَ وَ أَعْمَالِهَافِي كَلاَمٍ طَوِيلٍ كَانَ بَيْنَهُمَا، نَهَاهُ فِيهِ عَنْ تَقَدُّمِ الْخَرَاجِ: اسْتَعْمِلِ الْعَدْلَ، وَ احْذَرِ الْعَسْفَ وَ الْحَيْفَ؛ فَإِنَّ الْعَسْفَ يَعُودُ بِالْجَلاَءِ وَ الْحَيْفَ يَدْعُو إِلَى السَّيْفِ.

আমিরুল মোমেনিন জিয়াদ ইবনে আবিহকে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের স্থলে পারস্যের ফারস নামক স্থানে প্রেরণকালে আগাম রাজস্ব আদায় নিষিদ্ধ করে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করেন। তখন তিনি বলেনঃ ন্যায়ের সাথে কাজ করো এবং উগ্রতা ,জবরদস্তি ও অবিচার পরিহার করে চলো ,কারণ জবরদস্তি করলে তারা তাদের বাসস্থান ফেলে চলে যাবে এবং অবিচার তাদেরকে অস্ত্রধারণ করতে বাধ্য করবে।

উক্তি নং - ৪৮৬

وَ قَالَعليه‌السلام : أَشَدُّ الذُّنُوبِ مَا اسْتَخَفَّ بِهَا صَاحِبُهُ.

সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাপ সেটি যেটিকে পাপী হালকাভাবে গ্রহণ করে।

উক্তি নং - ৪৮৭

وَ قَالَعليه‌السلام : مَا أَخَذَ اللَّهُ عَلَى أَهْلِ الْجَهْلِ أَنْ يَتَعَلَّمُوا حَتَّى أَخَذَ عَلَى أَهْلِ الْعِلْمِ أَنْ يُعَلِّمُوا.

শিক্ষাগ্রহণ করা অজ্ঞদের জন্য আল্লাহ বাধ্যতামূলক করেননি। কিন্তু শিক্ষা দেয়া জ্ঞানীদের জন্য তিনি বাধ্যতামূলক করেছেন ।

উক্তি নং - ৪৮৮

وَ قَالَعليه‌السلام : شَرُّ الْإِخْوَانِ مَنْ تُكُلِّفَ لَهُ.

সবচেয়ে নিকৃষ্টতম সহচর সে যার জন্য আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়।

উক্তি নং - ৪৮৯

وَ قَالَعليه‌السلام : إِذَا احْتَشَمَ الْمُؤْمِنُ أَخَاهُ فَقَدْ فَارَقَهُ.

যদি কোন ইমানদার তার ভাইকে ক্রুদ্ধ করান ,এতে বুঝা যায় তিনি তাকে পরিত্যাগ করেছেন।