নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা0%

নাহজ আল-বালাঘা লেখক:
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ: হযরত আলী (আ.)

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক: আশ-শরীফ আর-রাজী
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ:

ভিজিট: 119921
ডাউনলোড: 7297

নাহজ আল-বালাঘা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 48 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 119921 / ডাউনলোড: 7297
সাইজ সাইজ সাইজ
নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বাংলা

রাসূলের (সা.) ‘জ্ঞান নগরীর দ্বার’ আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব ছিলেন তত্ত্বজ্ঞানী, দার্শনিক, সুলেখক ও বাগ্মী। আলঙ্কারিক শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ও নৈপুন্য অসাধারণ। তিনি নবুওয়াতী জ্ঞান ভান্ডার হতে সরাসরি জ্ঞান আহরণ করেন এবং সাহাবাদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী পন্ডিত ছিলেন। এতে কারো দ্বিমত নেই। আরবী কাব্যে ও সাহিত্যে তার অনন্যসাধারণ অবদান ছিল। খেলাফত পরিচালনা কালে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ (খোৎবা) দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকগণকে প্রশাসনিক বিষয়ে উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে পত্র লিখেছিলেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মানুষের অনেক প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছিলেন। তার এসব বাণী কেউকেউ লিখে রেখেছিল, কেউ কেউ মনে রেখেছিল, আবার কেউ কেউ তাদের লিখিত পুস্তকে উদ্ধৃত করেছিল। মোটকথা তার অমূল্য বাণীসমূহ মানুষের কাছে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ছিল।

আশ-শরীফ আর-রাজী আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিবের ভাষণসমূহ (খোৎবা), পত্রাবলী, নির্দেশাবলী ও উক্তিসমূহ সংগ্রহ করে “নাহজ আল-বালঘা” নামক গ্রন্থটি সঙ্কলন করেন।

খোৎবা- ৪৮

عند المسير إلى الشام

الْحَمْدُ لِلَّه كُلَّمَا وَقَبَ لَيْلٌ وغَسَقَ، والْحَمْدُ لِلَّه كُلَّمَا لَاحَ نَجْمٌ وخَفَقَ والْحَمْدُ لِلَّه غَيْرَ مَفْقُودِ الإِنْعَامِ ولَا مُكَافَإِ الإِفْضَالِ.

أَمَّا بَعْدُ فَقَدْ بَعَثْتُ مُقَدِّمَتِي وأَمَرْتُهُمْ بِلُزُومِ هَذَا الْمِلْطَاطِ حَتَّى يَأْتِيَهُمْ أَمْرِي - وقَدْ رَأَيْتُ أَنْ أَقْطَعَ هَذِه النُّطْفَةَ إِلَى شِرْذِمَةٍ مِنْكُمْ - مُوَطِّنِينَ أَكْنَافَ دِجْلَةَ - فَأُنْهِضَهُمْ مَعَكُمْ إِلَى عَدُوِّكُمْ - وأَجْعَلَهُمْ مِنْ أَمْدَادِ الْقُوَّةِ لَكُمْ.

সিরিয়া অভিমুখে যাত্রার প্রাক্কালে আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা আল্লাহর ,যখন অন্ধকার নেমে আসে ও রাত্রি প্রসারিত হয়। প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা আল্লাহর ,যখন তারকারাজী উদয় ও অস্তমিত হয়। প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা আল্লাহর ,যার রহমত থেকে কেউ বঞ্চিত হয় না এবং যার নেয়ামতের প্রতিদান দেয়া কখনো সম্ভব নয় ।

আমি আমার অগ্রবাহনী পাঠিয়ে দিয়েছি এবং তাদের আদেশ করেছি যেন নদীর এ তীরে ক্যাম্প করে অবস্থান করে যে পর্যন্ত না আমার পুনরাদেশ পায়। আমার অভিপ্রায় হলো - দজলার (টাইগ্রিস) ওপারে যে এলাকায় লোকবসতি কম সে এলাকা দিয়ে অতিক্রম করবো এবং সেসব লোকদের তোমাদের সাথে শত্রুর দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলে তারা তোমাদের সহায়ক বাহিনী হিসাবে কাজে লাগবে ।

____________________

১। সিফফিনে যাত্রার জন্য নুখায়লাহ উপত্যকায় যে ক্যাম্প করা হয়েছিল সে ক্যাম্পে ৩৭ হিজরি সনের ৫ই শাওয়াল বুধবার আমিরুল মোমেনিন এ ভাষণ দেন। অগ্রবাহিনী ছিল বার হাজার সৈন্যের একটা বাহিনী যারা জিয়াদ ইবনে নদীর ও সুরাইয়াহ ইবনে হানির নেতৃত্বে সিফফিনে প্রেরিত হয়েছিল।

খোৎবা- ৪৯

وفيه جملة من صفات الربوبية والعلم الإلهي

الْحَمْدُ لِلَّه الَّذِي بَطَنَ خَفِيَّاتِ الأَمُوُرِ - ودَلَّتْ عَلَيْه أَعْلَامُ الظُّهُورِ - وامْتَنَعَ عَلَى عَيْنِ الْبَصِيرِ - فَلَا عَيْنُ مَنْ لَمْ يَرَه تُنْكِرُه - ولَا قَلْبُ مَنْ أَثْبَتَه يُبْصِرُه - سَبَقَ فِي الْعُلُوِّ فَلَا شَيْءَ أَعْلَى مِنْه - وقَرُبَ فِي

الدُّنُوِّ فَلَا شَيْءَ أَقْرَبُ مِنْه - فَلَا اسْتِعْلَاؤُه بَاعَدَه عَنْ شَيْءٍ مِنْ خَلْقِه - ولَا قُرْبُه سَاوَاهُمْ فِي الْمَكَانِ بِه - لَمْ يُطْلِعِ الْعُقُولَ عَلَى تَحْدِيدِ صِفَتِه - ولَمْ يَحْجُبْهَا عَنْ وَاجِبِ مَعْرِفَتِه - فَهُوَ الَّذِي تَشْهَدُ لَه أَعْلَامُ الْوُجُودِ - عَلَى إِقْرَارِ قَلْبِ ذِي الْجُحُودِ - تَعَالَى اللَّه عَمَّا يَقُولُه الْمُشَبِّهُونَ بِه - والْجَاحِدُونَ لَه عُلُوّاً كَبِيراً!

আল্লাহর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে

প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা আল্লাহর , যিনি সকল গুপ্ত বিষয় অবগত আছেন এবং সকল প্রকাশ্য বস্তু তাঁর অস্তিত্ব প্রমাণ করে। দর্শকের চক্ষু দ্বারা তাঁকে দর্শন করা যায় না , কিন্তু দর্শন করা যায় না বলে তাকে অস্বীকারও করা যায় না । যে হৃদয় তাঁর অস্তিত্ব প্রমাণ করে , সে হৃদয়ও তার সীমারেখা নির্ধারণ করতে পারে না। মহত্ত্বে তিনি এত উচু যে , কোন কিছুই তার চেয়ে মহান হতে পারে না। নৈকট্যে তিনি এত নিকটে যে , কোন কিছুই তাঁর চেয়ে নিকটতম হতে পারে না। কিন্তু তাঁর মহত্ত্ব তাকে সৃষ্টির কোন কিছু থেকে দূরত্বে রাখে না ; আবার তাঁর নৈকট্য সৃষ্টির কোন কিছুকেই তাঁর সমপর্যায়ে আনে না। মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞান তাঁর গুণাবলী প্রকাশে অক্ষম। এতদসত্ত্বেও তাঁর সম্পর্কে অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞানার্জনে তিনি বাধার সৃষ্টি করেন নি। সুতরাং তিনি যে অস্তিত্ববান সকল বস্তু (আয়াত) এ সাক্ষ্য বহন করে। যে মন তাকে স্বীকার করে না , সেও তাঁকে বিশ্বাস করে। যারা তাঁকে বস্তুর সদৃশতায় বর্ণনা করে অথবা তাকে অস্বীকার করে আল্লাহ তাদের বর্ণনার অনেক উর্দ্ধে।

খোৎবা- ৫০

إِنَّمَا بَدْءُ وُقُوعِ الْفِتَنِ أَهْوَاءٌ تُتَّبَعُ وأَحْكَامٌ تُبْتَدَعُ - يُخَالَفُ فِيهَا كِتَابُ اللَّه - ويَتَوَلَّى عَلَيْهَا رِجَالٌ رِجَالًا عَلَى غَيْرِ دِينِ اللَّه - فَلَوْ أَنَّ الْبَاطِلَ خَلَصَ مِنْ مِزَاجِ الْحَقِّ - لَمْ يَخْفَ عَلَى الْمُرْتَادِينَ ولَوْ أَنَّ الْحَقَّ خَلَصَ مِنْ لَبْسِ الْبَاطِلِ - انْقَطَعَتْ عَنْه أَلْسُنُ الْمُعَانِدِينَ - ولَكِنْ يُؤْخَذُ مِنْ هَذَا ضِغْثٌ ومِنْ هَذَا ضِغْثٌ فَيُمْزَجَانِ - فَهُنَالِكَ يَسْتَوْلِي الشَّيْطَانُ عَلَى أَوْلِيَائِه - ويَنْجُو( الَّذِينَ سَبَقَتْ لَهُمْ ) مِنَ اللَّه( الْحُسْنى ) .

ন্যায় ও অন্যায়ের অপমিশ্রণ সম্পর্কে

ফেতনা - ফ্যাসাদ সংঘটিত হবার ভিত্তি হলো সেসব কামনা - বাসনা যা অনুসরণ করা হয় এবং সেসব আদেশ যা নব্য প্রবর্তিত । এ দুটোই আল্লাহর কেতাবের বিপরীত। আল্লাহর দ্বীনের বিপরীত হওয়া সত্ত্বেও মানুষ একে অপরকে এ দু ’ টোতে সহযোগিতা করে। অন্যায় যদি নিরেট অন্যায় এবং অমিশ্রিত থাকে তবুও যারা এর অন্বেষণকারী তাদের কাছে গোপন থাকে না (অর্থাৎ তারা তা আকড়ে ধরে) । আর ন্যায় যদি অন্যায়ের অপমিশ্রণ থেকে খাটিও থাকে তবুও ন্যায়ের প্রতি যাদের অবজ্ঞা রয়েছে তারা নিশ্চুপ হয়ে থাকে (অর্থাৎ ন্যায়কে গ্রহণ করে না) । যা করা হয় তা হলো - এটা থেকে কিছু ওটা থেকে কিছু নিয়ে দুটোর সংমিশ্রণ করা। এ পর্যায়ে শয়তান তার বন্ধুদের শক্তিশালী করে তোলে এবং শুধুমাত্র তারাই রক্ষা পায় যাদের জন্য পূর্ব থেকেই আল্লাহ মঙ্গল নির্ধারণ করে রেখেছেন।

খোৎবা- ৫১

لماغلبأصحابمعاويةأصحابهعليه‌السلام - علىشريعة الفراتبصفينومنعوهمالماء

قَدِ اسْتَطْعَمُوكُمُ الْقِتَالَ فَأَقِرُّوا عَلَى مَذَلَّةٍ وتَأْخِيرِ مَحَلَّةٍ - أَوْ رَوُّوا السُّيُوفَ مِنَ الدِّمَاءِ تَرْوَوْا مِنَ الْمَاءِ - فَالْمَوْتُ فِي حَيَاتِكُمْ مَقْهُورِينَ،- والْحَيَاةُ فِي مَوْتِكُمْ قَاهِرِينَ - أَلَا وإِنَّ مُعَاوِيَةَ قَادَ لُمَةً مِنَ الْغُوَاةِ - وعَمَّسَ عَلَيْهِمُ الْخَبَرَ - حَتَّى جَعَلُوا نُحُورَهُمْ أَغْرَاضَ الْمَنِيَّةِ.

সিফফিনে যখন মুয়াবিয়ার লোকেরা আমিরুল মোমেনিনের লোকদের পরাভূত করে ইউফ্রেটিস নদীর তীর দখল করে নেয় এবং তাদের পানি বন্ধ করে দেয় তখন আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে চায়। সুতরাং হয় তোমরা কলঙ্কমর ও হীন অবস্থায় থাকো ,না হয় তোমাদের তরবারিকে রক্ত পান করাও এবং পানি দ্বারা তোমাদের তৃষ্ণা নিবারণ কর । প্রকৃত মৃত্যু পরাভব জীবনে এবং প্রকৃত জীবন অন্যকে পরাভূত করায় বা বিজয় লাভ করায়। সাবধান ,মুয়াবিয়া বিদ্রোহীদের একটা ছোট দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং সত্য ঘটনা থেকে কৌশলে তাদেরকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। ফলে তারা তাদের বক্ষকে মৃত্যুর লক্ষ্যস্থলে পরিণত করেছে।

____________________

১ । আমিরুল মোমেনিন সিফফিনে পৌছার আগেই মুয়াবিয়া নদীর তীরে চল্লিশ হাজার লোক মোতায়েন করলো যেন সিরিয়গণ ছাড়া আর কেউ পানি নিতে না পারে। আমিরুল মোমেনিনের বাহিনী যখন সেখানে পৌছলো তখন তারা দেখতে পেল অবরুদ্ধ স্থানটি ছাড়া পানি পাওয়ার আর কোন পথ নেই। অন্য একটি স্থান তারা বের করেছিল কিন্তু অনেক উচু টিলা অতিক্রম করে সেখানে যাওয়া বড়ই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আমিরুল মোমেনিন সা সা আহ ,ইবনে সুহান আল - আবদিকে মুয়াবিয়ার কাছে প্রেরণ করে অনুরোধ জানালেন যে ,সে যেন পানির ওপর থেকে এ নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়। কিন্তু মুয়াবিয়া আমিরুল মোমেনিনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলো। এতে আমিরুল মোমেনিনের বাহিনী তৃষ্ণা কাতর হয়ে পড়লো। আমিরুল মোমেনিন এ অবস্থা দেখে বললেন , উঠ এবং তরবারির সাহায্যে পানি সংগ্রহ কর। ফলে এসব তৃষ্ণার্তা লোক অসি কোষমুক্ত করলো।- ধনুকে শর যোজনা করলো এবং মুয়াবিয়ার লোকদেরকে ছত্রভঙ্গ করে সোজা নদীতে চলে গেল এবং শক্রকে বিতাড়িত করে পানি সংগ্রহের স্থান দখল করেনিল ।

খোৎবা- ৫২

وهيفيالتزهيدفيالدنياوثواباللهللزاهدونعماللهعلىالخالق

أَلَا وإِنَّ الدُّنْيَا قَدْ تَصَرَّمَتْ وآذَنَتْ بِانْقِضَاءٍ - وتَنَكَّرَ مَعْرُوفُهَا وأَدْبَرَتْ حَذَّاءَ فَهِيَ تَحْفِزُ بِالْفَنَاءِ سُكَّانَهَا - وتَحْدُو بِالْمَوْتِ جِيرَانَهَا - وقَدْ أَمَرَّ فِيهَا مَا كَانَ حُلْواً وكَدِرَ مِنْهَا مَا كَانَ صَفْواً - فَلَمْ يَبْقَ مِنْهَا إِلَّا سَمَلَةٌ كَسَمَلَةِ الإِدَاوَةِ أَوْ جُرْعَةٌ كَجُرْعَةِ الْمَقْلَةِ لَوْ تَمَزَّزَهَا الصَّدْيَانُ لَمْ يَنْقَعْ فَأَزْمِعُوا عِبَادَ اللَّه - الرَّحِيلَ عَنْ هَذِه الدَّارِ الْمَقْدُورِ عَلَى أَهْلِهَا الزَّوَالُ - ولَا يَغْلِبَنَّكُمْ فِيهَا الأَمَلُ - ولَا يَطُولَنَّ عَلَيْكُمْ فِيهَا الأَمَدُ.

فَوَاللَّه لَوْ حَنَنْتُمْ حَنِينَ الْوُلَّه الْعِجَالِودَعَوْتُمْ بِهَدِيلِ الْحَمَامِ وجَأَرْتُمْ جُؤَارَ مُتَبَتِّلِي الرُّهْبَانِ - وخَرَجْتُمْ إِلَى اللَّه مِنَ الأَمْوَالِ والأَوْلَادِ - الْتِمَاسَ الْقُرْبَةِ إِلَيْه فِي ارْتِفَاعِ دَرَجَةٍ عِنْدَه - أَوْ غُفْرَانِ سَيِّئَةٍ أَحْصَتْهَا كُتُبُه - وحَفِظَتْهَا رُسُلُه لَكَانَ قَلِيلًا فِيمَا أَرْجُو لَكُمْ مِنْ ثَوَابِه - وأَخَافُ عَلَيْكُمْ مِنْ عِقَابِه.

وتَاللَّه لَوِ انْمَاثَتْ قُلُوبُكُمُ انْمِيَاثاً وسَالَتْ عُيُونُكُمْ مِنْ رَغْبَةٍ إِلَيْه أَوْ رَهْبَةٍ مِنْه دَماً - ثُمَّ عُمِّرْتُمْ فِي الدُّنْيَا - مَا الدُّنْيَا بَاقِيَةٌ مَا جَزَتْ أَعْمَالُكُمْ عَنْكُمْ - ولَوْ لَمْ تُبْقُوا شَيْئاً مِنْ جُهْدِكُمْ - أَنْعُمَه عَلَيْكُمُ الْعِظَامَ - وهُدَاه إِيَّاكُمْ لِلإِيمَانِ.

فيذكرىيومالنحروصفةالأضحية

ومِنْ تَمَامِ الأُضْحِيَّةِ اسْتِشْرَافُ أُذُنِهَا وسَلَامَةُ عَيْنِهَا - فَإِذَا سَلِمَتِ الأُذُنُ والْعَيْنُ سَلِمَتِ الأُضْحِيَّةُ وتَمَّتْ - ولَوْ كَانَتْ عَضْبَاءَ الْقَرْنِ تَجُرُّ رِجْلَهَا إِلَى الْمَنْسَكِ

পরকালের পুরস্কার ও শাস্তি সম্পর্কে

সাবধান ,দুনিয়া নিজেকে গুটিয়ে আনছে এবং প্রস্থান ঘোষণা করছে। এর পরিচিত বস্তুনিচয় অপরিচিত হয়ে গেছে এবং এটা দ্রুতবেগে পশ্চাতে সরে যাচ্ছে। দুনিয়া তার অধিবাসীদের ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং এর প্রতিবেশীদের মৃত্যুর দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এর মধুর জিনিসগুলোকে (ভোগ - বিলাস) তিক্ত করে দিয়েছে এবং স্বচ্ছ জিনিসগুলো মলিন হয়ে গেছে। ফলে যা অবশিষ্ট রয়েছে তা পাত্রের গায়ে লেগে থাকা পানির মতো অথবা পরিমাণে এক কুলি পানি। যদি তৃষ্ণার্তা ব্যক্তি এটুকু পান করে তবে তার তৃষ্ণা নিবারণ হয় না। হে আল্লাহর বান্দাগণ ,এ দুনিয়া পরিত্যাগের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও ,কারণ দুনিয়াবাসীদের ধ্বংস অবধারিত। সাবধান ,মনের কামনা - বাসনা ও লালসা যেন তোমাদেরকে বশীভূত না করে এবং তোমরা মনে করো না যে এখানে তোমরা চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।

আল্লাহর কসম ,যদি তোমরা শাবকহারা উস্ট্রির মতো কাদো ,কবুতরের মতো কৃজন করো ,অনুরক্ত নির্জনবাসীর (দরবেশ) মতো আওয়াজ করো এবং আল্লাহর নৈকট্য ও বাকা প্রাপ্তির জন্য তোমাদের সন্তান - সন্ততি ও সম্পদ পরিত্যাগ করে আল্লাহর দিকে মুখ ফেরাও তবুও তাঁর পুরষ্কারের তুলনায় তা কিছুই নয় ,যা আমি তোমাদের জন্য প্রত্যাশা করি অথবা তাঁর শাস্তির তুলনায় কিছুই নয় ,যা আমি তোমাদের জন্য আশঙ্কা করি।

আল্লাহর কসম ,যদি তোমাদের হৃদয় সম্পূর্ণরূপে বিগলিত হতো ,তাঁকে পাবার আশায় অথবা তাঁর ভয়ে তোমাদের চোখ দিয়ে রক্তাশ্রু বের হতো এবং যদি পৃথিবী বিলীন হওয়া পর্যন্ত তোমাদেরকে বেঁচে থাকতে দেয়া হতো। তবুও তোমাদের আমল তার রহমতের এক কণার সমতুল্য হবে না এবং তোমাদেরকে ইমানের পথে পরিচালনার প্রতিদান হবে না।

এ খোৎবায় কুরবানির পশুর গুণাগুণ সম্পর্কে বলেনঃ কুরবানির সম্পূর্ণ উপযোগী পশুর জন্য অত্যাবশ্যক হলো - এর কানগুলো ওপরের দিকে খাড়া হতে হবে এবং চোখগুলো সুস্থ (ভালো) হতে হবে। যদি চোখ আর কান সুস্থ হয় তবেই কুরবানির পশু অটুট ও যথার্থ বলে ধরা যায় ; হোক না। এর শিং ভাঙ্গা অথবা পা হেঁচড়ে হেঁচড়ে (খুঁড়িয়ে) সেটা কুরবানির জায়গায় যায় ।

খোৎবা- ৫৩

و من کلام له علیه السلام فى ذکر البیعة

فَتَدَاکُّوا عَلَیَّ تَدَاکَّ الْإِبِلِ الْهِیمِ یَوْمَ وِرْدِهَا قَدْ أَرْسَلَهَا رَاعِیهَا وَ خُلِعَتْ مَثَانِیهَا حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُمْ قَاتِلِیَّ أَوْ بَعْضَهُمْ قَاتِلُ بَعْضٍ لَدَیَّ وَ قَدْ قَلَّبْتُ هَذَا الْأَمْرَ بَطْنَهُ وَ ظَهْرَهُ (حَتَّى مَنَعَنِی النَّوْمَ) فَمَا وَجَدْتُنِی یَسَعُنِی إِلَّا قِتَالُهُمْ أَوِ الْجُحُودُ بِمَا جَاءَ بِهِ مُحَمَّدٌ- صلى الله علیه واله- فَکَانَتْ مُعَالَجَةُ الْقِتَالِ أَهْوَنَ عَلَیَّ مِنْ مُعَالَجَةِ الْعِقَابِ وَ مَوْتَاتُ الدُّنْیَا أَهْوَنَ عَلَیَّ مِنْ مَوْتَاتِ الْآخِرَةِ.

আমিরুল মোমেনিনের বায়াত গ্রহণ সম্পর্কে

তারা এত প্রচণ্ড বেগে আমার দিকে ধাবিত হয়েছিল যে ,মনে হলো যেন তৃষ্ণার্তা উটের পাল ছাড়া পেয়ে একে অপরের ওপর পড়ে পানীয় পানির দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমার মনে হয়েছিল- হয় ওরা আমাকে হত্যা করবে ,না হয় একে অপরকে আমার সামনে হত্যা করবে। আমি ব্যাপারটি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে এত বেশি চিন্তা করেছিলাম যে ,আমার ঘুমের ব্যাঘাত হয়েছিল। কিন্তু হয় তাদের সাথে যুদ্ধ ,না হয় মুহাম্মদ (সা.) যা এনেছিলেন তা পরিত্যাগ করা ছাড়া আর কোন পথ দেখতে পেলাম না। আমি বিবেচনা করে দেখলাম যে ,আল্লাহর শাস্তি অপেক্ষা যুদ্ধ করা আমার জন্য সহজ এবং ইহকালের দুঃখ - কষ্ট পরকালের দুঃখ - কষ্ট অপেক্ষা সহজ।

খোৎবা - ৫৪

وقداستبطأأصحابهإذنهلهمفيالقتالبصفين

أَمَّا قَوْلُكُمْ أَكُلَّ ذَلِكَ كَرَاهِيَةَ الْمَوْتِ - فَوَاللَّه مَا أُبَالِي - دَخَلْتُ إِلَى الْمَوْتِ أَوْ خَرَجَ الْمَوْتُ إِلَيَّ - وأَمَّا قَوْلُكُمْ شَكَّاً فِي أَهْلِ الشَّامِ - فَوَاللَّه مَا دَفَعْتُ الْحَرْبَ يَوْماً - إِلَّا وأَنَا أَطْمَعُ أَنْ تَلْحَقَ بِي طَائِفَةٌ فَتَهْتَدِيَ بِي - وتَعْشُوَ إِلَى ضَوْئِي - وذَلِكَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَقْتُلَهَا عَلَى ضَلَالِهَا - وإِنْ كَانَتْ تَبُوءُ بِآثَامِهَا.

সিফফিনের যুদ্ধ আরম্ভ করার অনুমতি প্রদানে বিলম্বের কারণে লোকজনের অধৈর্যের প্রেক্ষিতে প্রদত্ত খোৎবা

সিফফিনে যুদ্ধ আরম্ভ করার অনুমতি দিতে আমিরুল মোমেনিন বিলম্ব করায় তার লোকজন অধৈর্য হয়ে পড়লে তিনি বলেনঃ বেশ ,যদি তোমরা মনে কর এ বিলম্ব এজন্য যে ,আমি মৃত্যুবরণ করতে অনিচ্ছুক ,তবে আল্লাহর কসম ,আমি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি নাকি মৃত্যু আমার দিকে তেড়ে আসছে। এ বিষয়টি আমি থোড়াই পরোয়া করি। যদি তোমরা ধারণা কর যে ,এ বিলম্বের কারণ সিরিয়দের সম্পর্কে আমার সংশয় ,তবে আল্লাহর কসম ,জেনে রাখো ,আমি এ কারণে বিলম্ব করেছিলাম ,যদি আরো কোন দল আমার সাথে যোগদান করে ,যদি আমার মাধ্যমে ওরা পথের দিশা পায় এবং যদি তাদের দুর্বল চোখে আমার আলো দেখতে পায়। বিভ্রান্তিতে নিপতিত অবস্থায় হত্যা করা থেকে আলোর পথে আসার সুযোগ দেয়া আমার কাছে অধিক প্রিয় । এরপর ওরা ওদের নিজেদের পাপের ভার বহন করতে থাকবে ।

খোৎবা - ৫৫

الانتصار فی القتال

ولَقَدْ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهصلى‌الله‌عليه‌وآله - نَقْتُلُ آبَاءَنَا وأَبْنَاءَنَا وإِخْوَانَنَا وأَعْمَامَنَا - مَا يَزِيدُنَا ذَلِكَ إِلَّا إِيمَاناً وتَسْلِيماً - ومُضِيّاً عَلَى اللَّقَمِ وصَبْراً عَلَى مَضَضِ الأَلَمِ وجِدّاً فِي جِهَادِ الْعَدُوِّ - ولَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ مِنَّا والآخَرُ مِنْ عَدُوِّنَا - يَتَصَاوَلَانِ تَصَاوُلَ الْفَحْلَيْنِ يَتَخَالَسَانِ أَنْفُسَهُمَا أَيُّهُمَا يَسْقِي صَاحِبَه كَأْسَ الْمَنُونِ - فَمَرَّةً لَنَا مِنْ عَدُوِّنَا ومَرَّةً لِعَدُوِّنَا مِنَّا - فَلَمَّا رَأَى اللَّه صِدْقَنَا أَنْزَلَ بِعَدُوِّنَا الْكَبْتَ وأَنْزَلَ عَلَيْنَا النَّصْرَ - حَتَّى اسْتَقَرَّ الإِسْلَامُ مُلْقِياً جِرَانَه ومُتَبَوِّئاً أَوْطَانَه - ولَعَمْرِي لَوْ كُنَّا نَأْتِي مَا أَتَيْتُمْ - مَا قَامَ لِلدِّينِ عَمُودٌ ولَا اخْضَرَّ لِلإِيمَانِ عُودٌ - وايْمُ اللَّه لَتَحْتَلِبُنَّهَا دَماً ولَتُتْبِعُنَّهَا نَدَماً!

যুদ্ধক্ষেত্রে অটলতা সম্পর্কে

যুদ্ধক্ষেত্রে আটলতা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূলের (সা.) সাথে থাকাকালে আমরা আমাদের পিতা - মাতা ,পুত্র ,ভ্রাতা ও চাচাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতাম এবং এ দৃঢ়তা বহাল ছিল আমাদের ইমানে ,আনুগত্যে ,সত্য পথ অনুসরণে ,দুঃখযন্ত্রণা সহ্য করাতে এবং শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে। আমাদের পক্ষ থেকে একজন এবং শত্রুর পক্ষ থেকে একজন একে অপরের ওপর ষাড়ের মতো ঝাপিয়ে পড়তো - লক্ষ্য শুধু কে কাকে হত্যা করতে পারে। কখনো আমাদের লোক প্রতিপক্ষকে আবার কখনো শক্র আমাদের লোককে অতিক্রম করতো ।

আল্লাহ যখন আমাদের সততা ও সত্যের প্রতি আটলতা দেখলেন তখন তিনি আমাদের প্রতি তার সাহায্য প্রেরণ করে আমাদের শত্রুকে পরাজয়ের কলঙ্কে কলঙ্কিত করেছিলেন ,যতক্ষণ পর্যন্ত না ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল ,যেমন করে উট মাটিতে ঘাড় এলিয়ে দিয়ে বিশ্রাম গ্রহণ করে। আমার জীবনের কসম ,আমরা যদি তোমাদের মতো আচরণ করতাম। তবে দ্বীনের স্তম্ভ দাড় করানো যেত না এবং ইমানের বৃক্ষেও পাতা গজাতো না। আল্লাহর কসম ,তোমরা এখন দুধের পরিবর্তে আমাদের রক্ত দোহন করবে এবং পরিণামে তোমরা লজ্জিত হবে

____________________

১। যখন মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর নিহত হলেন তখন মুয়াবিয়া আবদুল্লাহ ইবনে আমির আল - হাদ্রামিকে বসরায় প্রেরণ করলো। উসমানের রক্তের বদলা নেয়ার জন্য আবদুল্লাহ বসরার লোকজনকে উত্তেজিত করে তুলতে লাগলো। কারণ অধিকাংশ বসরাবাসী বিশেষ করে বনি তামিমের আনুকুল্য ছিল উসমানের প্রতি। এ সময় বসরার গভর্ণর আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস জিয়াদ ইবনে উবায়েন্দকে দায়িত্বভার দিয়ে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের শেষকৃত্যে যোগদানের জন্য কুফায় গিয়েছিলেন। বসরার পরিস্থিতির যখন অবনতি ঘটলো তখন জিয়াদ আমিরুল মোমেনিনকে সকল ঘটনা অবহিত করলেন। আমিরুল মোমেনিন কুফার বনি তামিমকে প্রস্তুত করতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু তারা নিশ্চমূপ হয়ে রইলো - কোন জবাব দিল না। আমিরুল মোমেনিন তাদের এহেন দুর্বলতা ও লজ্জাহীনতা দেখে এ ভাষণ দেন , রাসূলের জমানায় আমরা কখনো দেখতাম না। যারা আমাদের হাতে নিহত হয়েছে তারা আমাদের আত্মীয় স্বজন কিনা - যে কেউ সত্যের সাথে সংঘাত করতো আমরা তার সাথে সংঘাত করতাম। আমরাও যদি তোমাদের মতো অসতর্কভাবে কাজ করতাম বা তোমাদের মতো নিস্ক্রিয় থাকার অপরাধ করতাম তাহলে ঢদ্বন কখনো শিকড় গাড়তে পারতো না এবং ইসলাম কখনো উন্নতি লাভ করতে পারতো না। ” এর ফলে আয়ন ইবনে দাবিয়াহ আল - মুজামি প্রস্তুত হয়ে বসরায় চলে গেল ,কিন্তু সেখানে পৌছা মাত্রই শত্রুর তরবারিতে নিহত হলো। এরপর আমিরুল মোমেনিন জারিয়াহ ইবনে কুদামাহ আস - সা ” দিকে বনি তামিমের পঞ্চাশজন লোকসহ প্রেরণ করলেন। প্রথমতঃ জারিয়াহ নিজ গোত্রকে বোঝাতে সাধ্যমত চেষ্টা করলেন ,কিন্তু তারা সত্যপথ অনুসরণের পরিবর্তে বিশ্বাস ভঙ্গ ও যুদ্ধের দিকে ঝুকে পড়েছিল। তারপর জারিয়াহ জিয়াদ ও অজদ গোত্রকে তার সাহায্যের জন্য ডেকে পাঠালো। অপরদিকে আবদুল্লাহও তার লোকজন নিয়ে বেরিয়ে আসলো। উভয়পক্ষে তরবারি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই আবদুল্লাহ সত্তরজন লোক নিয়ে পালিয়ে গেল এবং সাবিল আস - সাদির ঘরে আশ্রয় গ্রহণ করলো। শত্রুদের বের করার অন্য কোন পথ না পেয়ে জারিয়াহ সে ঘরে আগুন লাগিয়ে দিল। তখন তারা ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল। কিন্তু একজনও পালিয়ে যেতে পারেনি - সকলেই নিহত হলো ।

খোৎবা - ৫৬

أَمَّا إِنَّه سَيَظْهَرُ عَلَيْكُمْ بَعْدِي رَجُلٌ رَحْبُ الْبُلْعُومِ مُنْدَحِقُ الْبَطْنِ يَأْكُلُ مَا يَجِدُ ويَطْلُبُ مَا لَا يَجِدُ - فَاقْتُلُوه ولَنْ تَقْتُلُوه - أَلَا وإِنَّه سَيَأْمُرُكُمْ بِسَبِّي والْبَرَاءَةِ مِنِّي - فَأَمَّا السَّبُّ فَسُبُّونِي فَإِنَّه لِي زَكَاةٌ ولَكُمْ نَجَاةٌ - وأَمَّا الْبَرَاءَةُ فَلَا تَتَبَرَّءُوا مِنِّي - فَإِنِّي وُلِدْتُ عَلَى الْفِطْرَةِ وسَبَقْتُ إِلَى الإِيمَانِ والْهِجْرَةِ.

মুয়াবিয়া সম্পর্কে আমিরুল মোমেনিন তার অনুচরদের বলেছিলেনঃ

আমার অব্যবহিত পরেই এমন এক লোক তোমাদের ওপর আপতিত হবে যার মুখ - গহবর প্রশস্ত এবং পেট বিশালাকার । সে যা পাবে তা - ই গলাধঃকরণ করবে এবং যা পাবে না। তার জন্য উদগ্র বাসনা পোষণ করবে। তাকে হত্যা করা তোমাদের উচিত হবে কিন্তু আমি জানি ,তাকে তোমরা হত্যা করবে না । আমাকে গালিগালাজ করতে এবং আমার আদর্শ পরিত্যাগ করতে সে তোমাদের আদেশ দেবে। গালিগালাজ সম্বন্ধে ,আমি বলবো ,তোমরা আমাকে গালিগালাজ করো ,কারণ তা আমার জন্য হবে মর্যাদাকর আর তোমাদের জন্য হবে তার অত্যাচার থেকে মুক্তির পথ। আমার আদর্শ ত্যাগ বিষয়ে বলবো - আমার আদর্শ ত্যাগ করা তোমাদের উচিত হবে না। কারণ আমি ইসলামের ফিতরাতে জন্ম গ্রহণ করেছি এবং ইসলাম গ্রহণ ও হিজরতে সর্বাগ্রণী ছিলাম ” ।

____________________

১। আমিরুল মোমেনিন এ খোৎবায় যার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তার সম্বন্ধে মতভেদ আছে। কেউ বলে। জিয়াদ ইবনে আবিহ ,কেউ বলে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ আছ - ছাকাকী ,আবার কেউ বলে মুঘিরাহ ইবনে শুবাহ। কিন্তু অধিকাংশ টীকাকার মন্তব্য করেছেন যে ,ইঙ্গিতকৃত ব্যক্তিটি হলো মুয়াবিয়া এবং এটাই সঠিক। কারণ আমিরুল মোমেনিন যা বর্ণনা করেছেন তা মুয়াবিয়াতে প্রমাণিত হয়েছে। মুয়াবিয়ার অতিভোজ সম্পর্কে ইবনে আবিল হাদীদ লিখেছেন যে ,একদিন রাসূল (সা.) তাকে ডেকে পাঠালেন। লোক ফিরে এসে রাসূলকে (সা.) বললো , সে ভোজনে ব্যস্ত। ” দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার লোক পাঠিয়ে একই জবাব পাওয়া গেল। এতে রাসূল (সা.) বললেন , আল্লাহ্ তার পেটকে তৃপ্ত না করুন। ” এ অভিশাপ তার ওপর কার্যকর হয়েছিল। যখন সে খেতে খেতে ক্লান্ত হয়ে পড়তো তখন বলতো , নিয়ে যাও ;আল্লাহর কসম ,আমি ক্লান্ত ও বিরক্ত - তৃপ্ত নই।" সে আমিরুল মোমেনিনকে গালিগালাজ করতো এবং তার অফিসারগণকেও তা করতে আদেশ দিত যা ইতিহাস স্বীকৃত। ইতিহাসে একথাও উল্লেখ আছে যে ,মুয়াবিয়া মিম্বারে বসে আমিরুল মোমেনিনকে গাল - মন্দ করতে গিয়ে এমন সব শব্দ ব্যবহার করতো তাতে আল্লাহ ও রাসূল (সা.) পর্যন্ত কটাক্ষপাতে পতিত হতো। উম্মোল মোমেনিন উন্মে সালমাহ মুয়াবিয়াকে এক পত্রে লিখেছিলেন , তোমাদের কথায় যদিও মনে হয় তোমরা আলী এবং তাকে যারা ভালোবাসে তাদের গালিগালাজ করছে। কিন্তু নিশ্চয়ই তোমরা আল্লাহ ও রাসূলকে গালাগালি কর। আল্লাহ ও রাসূল যে আলীকে ভালোবাসতেন তার জন্য আমি নিজেই সাক্ষী ” (রাব্বিহী ’ ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৩১) ।

উমর ইবনে আবদিল আজিজকে এ জন্য ধন্যবাদ যে ,তিনি মুয়াবিয়া কর্তৃক প্রবর্তিত গালিগালাজ বন্ধ করে তারস্থলে খোৎবায় নিম্নের আয়াত বলার প্রচলন চালু করেছিলেনঃ

আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণতা ,সদাচরণ ও আত্নীয় - স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং নিষেধ করেন। অশ্লীলতা ,অসৎকার্য ও সীমালঙ্ঘন ;তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর (কুরআন - ১৬:৯০) ।

এ খোৎবায় আমিরুল মোমেনিন মুয়াবিয়াকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন। এ আদেশ রাসূলের (সা.) একটি আদেশের ভিত্তিতেই তিনি করেছেন। রাসূল (সা.) বলেছিলেন , হে মুসলিম ,তোমরা যখন মুয়াবিয়াকে আমার মিম্বারে দেখবে তখন তাকে হত্যা করো। ” (মিনকারী ,পৃঃ ২৪৩ - ২৪৮ ;হাদিদ ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৪৮ ;বাগদাদী ,১২ শ খণ্ড ,পৃঃ ১৮১ ;জাহাবী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১২৮ ;আসকালানী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৪২৮ ;৫ম খণ্ড ,পৃঃ ১১০ ;৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৩২৪)

খোৎবা - ৫৭

كلم به الخوارج

أَصَابَكُمْ حَاصِبٌ ولَا بَقِيَ مِنْكُمْ آثِرٌ أَبَعْدَ إِيمَانِي بِاللَّه، وجِهَادِي مَعَ رَسُولِ اللَّهصلى‌الله‌عليه‌وآله - أَشْهَدُ عَلَى نَفْسِي بِالْكُفْرِ - لَالْكُفْرِ) قَدْ ضَلَلْتُ إِذاً وما أَنَا مِنَ الْمُهْتَدِينَ ( - فَأُوبُوا شَرَّ مَآبٍ وارْجِعُوا عَلَى أَثَرِ الأَعْقَابِ أَمَا إِنَّكُمْ سَتَلْقَوْنَ بَعْدِي ذُلاًّ شَامِلًا وسَيْفاً قَاطِعاً - وأَثَرَةً يَتَّخِذُهَا الظَّالِمُونَ فِيكُمْ سُنَّةً.

খারিজিদের উদ্দেশ্যে আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

ঝড় তোমাদের অতর্কিতে অভিভূত করতে পারে যখন তোমাদের খোচা দেয়ার ( সংস্কারের জন্য ) মতো কেউ থাকবে না। ইমানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এবং রাসূলের সাথী হয়ে যুদ্ধ করেও কি আমি আমার ধর্মত্যাগের সাক্ষী হব ? সে ক্ষেত্রে আমি বিপথগামী হব এবং সৎপথ প্রাপ্তদিগের অন্তর্ভুক্ত থাকব না। ( কুরআন , : ৫৬ ) সুতরাং তোমরা তোমাদের পাপের স্থানসমূহে ফিরে যেতে পার এবং তোমাদের পদাঙ্কও তোমরা ফিরে পাবে। সাবধান , নিশ্চয়ই আমার পরে তোমরা নিদারুণ অসম্মান ধারালো তরবারিতে বিপর্যপ্ত হবে এবং অত্যাচারী কর্তৃক গৃহীত হাদিস তোমাদের প্রতি মানদণ্ড হিসাবে ব্যবহৃত হবে

____________________

১। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে ,আমিরুল মোমেনিনের পর খারিজিরা সর্বপ্রকার অমর্যাদা ও অসম্মান ভোগ করেছিল এবং যেখানেই তারা মাথা তুলতে চেষ্টা করেছে সেখানেই তরবারি ও বর্শার মুখোমুখি হয়েছে। জিয়াদ ইবনে আবিহা ,উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ,হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ ,মুসা ’ ব ইবনে জুবায়ের ও মুহাল্লাব ইবনে আবি মুফারাহ খারিজিগণকে ভূ - পৃষ্ঠ থেকে নির্মূল করার জন্য সমস্ত উপায় অবলম্বন করেছিল ;বিশেষ করে মুহাল্লাব উনিশ বছর ধরে তাদের তাড়া করেছে এবং তাদেরকে ধ্বংস করে ক্ষান্ত হয়েছিল।

তাবারী লিখেছেন যে ,দশ হাজার খারিজি সিল্লাওয়া সিল্লিব্রা (আহওয়াজ পার্বত্য এলাকার একটা পর্বত) পর্বতে জড়ো হয়েছিল। তখন মুহাল্লাব তাদেরকে এত তীব্র আক্রমণ করেছিল যে ,সাত হাজার খারিজি নিহত হয়েছিল। অবশিষ্ট তিন হাজার খারিজ জীবন বাচানোর জন্য কিরমান এলাকায় পালিয়ে গেল। কিন্তু পারস্যের গভর্ণর তাদের বিদ্রোহাত্মক কার্যকলাপ লক্ষ্য করে সাবুর এলাকায় তাদের ঘিরে ফেললো এবং অধিকাংশ খারিজিকে হত্যা করলো। যারা রক্ষা পেলো তারা ইসফাহানে ও কিরমানে পালিয়ে গেল। সেখানে তারা একটা বাহিনী গঠন করে বসরা হয়ে কুফা অভিমুখে অগ্রসর হলো। হারিছ ইবনে আবি রাবিয়াহ্ আল - মাখজুমি এবং আবদুর রহমান ইবনে মিখনাফ আল - আজদি ছয় হাজার যোদ্ধা নিয়ে তাদের গতিরোধ করলো এবং তাদেরকে ইরাকের সীমানার বাইরে তাড়িয়ে দিয়েছিল। এভাবে বার বার আক্রমণের ফলে খারিজিরা তাদের সামরিক শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং শহরাঞ্চল থেকে বিতাড়িত হয়ে মরুভূমিতে ঘুরে বেড়াতে থাকে। এরপরও যেখানেই তারা দল বেঁধেছে। সেখানেই তাদের ধ্বংস করা হয়েছে (তাবারী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৫৮০ - ৫৯১:আছীর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃ.১৯৬ - ২০৬)

খোৎবা - ৫৮

لما عزم على حرب الخوارج - وقيل له: إن القوم عبروا جسر النهروان! مَصَارِعُهُمْ دُونَ النُّطْفَةِ - واللَّه لَا يُفْلِتُ مِنْهُمْ عَشَرَةٌ ولَا يَهْلِكُ مِنْكُمْ عَشَرَةٌ.

আমিরুল মোমেনিন যখন খারিজিদের সাথে যুদ্ধ করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন তখন তাকে অবহিত করা হলো যে ,খারিজিরা নাহরাওয়ান সেতু পার হয়ে ওপারে চলে গেছে। তখন তিনি বললেনঃ

নদীর ওপার তাদের পতন স্থল। আল্লাহর কসম ,তাদের দশ জনও বাঁচতে পারবে না ,অপরদিকে তোমাদের দশ জনও শহীদ হবে না

____________________

১ । এ ভবিষ্যদ্বাণী শুধুমাত্র বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতা দ্বারা সম্ভব নয় কারণ দূরদর্শী চোখ শুধু জয় বা পরাজয় পূর্বানুমান করতে পারে ,যুদ্ধের ফলাফল ধারণা করতে পারে ,কিন্তু উভয় পক্ষের নিহতের সংখ্যা পূর্বাহ্নেই বলে দেয়া দূরদর্শীজনের ক্ষমতার বাইরে। এমন ভবিষ্যদ্বাণী তার পক্ষেই সম্ভব যিনি অজানা ভবিষ্যতকে উন্মোচন করতে পারেন এবং জ্ঞানের নূরের সাহায্যে ভবিষ্যতের পর্দায় আসন্ন দৃশ্যাবলী দেখতে পান। তাই রাসূলের জ্ঞানের উত্তরাধিকারী যা বলেছিলেন বাস্তবেও তা - ই হয়েছিল। খারিজগণের পলাতক নয় জন ছাড়া ,বাকি সকলেই এ যুদ্ধে নিহত হয়েছিল এবং আমিরুল মোমেনিনের পক্ষের আট জন শহীদ হয়েছিল।

খোৎবা - ৫৯

لما قتل الخوارج فقيل له يا أمير المؤمنين هلك القوم بأجمعهم كَلَّا واللَّه إِنَّهُمْ نُطَفٌ فِي أَصْلَابِ الرِّجَالِ وقَرَارَاتِ النِّسَاءِ، كُلَّمَا نَجَمَ مِنْهُمْ قَرْنٌ قُطِعَ - حَتَّى يَكُونَ آخِرُهُمْ لُصُوصاً سَلَّابِينَ.

যখন আমিরুল মোমেনিনকে জানানো হলো যে ,খারিজিরা সকলেই নিহত হয়েছে তিনি বললেনঃ

আল্লাহর কসম ,তারা এখনো সম্পূর্ণ শেষ হয়নি । তারা এখনো পুরুষের ঔরসে ও নারীর গর্ভাশয়ে রয়েছে। যখনই তাদের মধ্য থেকে কোন নেতা গজিয়ে উঠবে তখনই তাকে কেটে ফেলা হবে যে পর্যন্ত না তাদের শেষ জন চোর ও ডাকাত হয়ে যায়

____________________

১। আমিরুল মোমেনিনের এ ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। খারিজিদের প্রত্যেক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে - তাদের কয়েক জনের নাম নিম্মে উল্লেখ করা হলোঃ

(১) নাফি ইবনে আজরাক আল - হানাফি - সে আজারিকাহ নামক বিশাল খারিজি বাহিনী গড়ে তুলেছিল। মুসলিম ইবনে উবায়েস - এর সাথে যুদ্ধে সালামাহ আল - বাহিলির হাতে সে নিহত হয়েছিল।

(২) নাজদাহ ইবনে আমির - খারিজিদের নাজাদাত আল আযিরিয়াহ সম্প্রদায় তার নামানুসারেই গঠিত। আবু ফুদায়েক আল - খারিজি তাকে হত্যা করেছিল।

(৩) আবদুল্লাহ ইবনে ইবাদ আত - তামিমী - তাঁর নামানুসারেই খারিজিদের ইবাদিয়াহ সম্প্রদায়ের নামকরণ করা হয়। আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আতিয়ার সাথে যুদ্ধে সে নিহত হয়।

(৪) আবু বায়হাস হায়সাম ইবনে জাবির আদ - দুবাই - তার নামানুসারে বায়হাসিয়াহ সম্প্রদায়ের নামকরণ করা হয়। মদিনার গভর্ণর উসমান ইবনে হায়ান আল - মুররী তার হাত ও পা কেটে ফেলে এবং পরে তাকে হত্যা করে।

(৫) উরওয়াহ ইবনে উদায়হ আত - তামিমী - মুয়াবিয়ার রাজত্বকালে জিয়াদ ইবনে আবিহ তাকে হত্যা করে ।

(৬) কাতারি ইবনে ফুজাহ আল - মাজিনি আত - তামিমী - সুকীয়ান ইবনে আবরাদ আল - কালাবীর সৈন্যদের সাথে তাবারিস্থানের যুদ্ধে সে মাওরাহ ইবনে হুরীর আদ - দারিামীর হাতে নিহত হয়েছে। (৭) আবু বিলাল মিরদাস ইবনে উদায়হ আত - তামিমী - আব্বাস ইবনে আখদার আল - মাজিনির সাথে যুদ্ধে নিহত হয়েছিল।

(৮) শাওয়াব আল - খারিজ আল - ইয়াশকুরী - সাঈদ ইবনে আমার আল - হারাশীর সাথে যুদ্ধে নিহত হয়েছে।

(৯) হাওছারাহ ইবনে ওয়াদা আল - আসাদি - বনি তাঈ - এর একজন লোকের হাতে নিহত হয়েছিল।

(১০) মুস্তাওয়ারিদ ইবনে উল্লাফাহ আত - তায়মী - মুয়াবিয়ার রাজত্বকালে সাকিল ইবনে কায়েস আর রিয়াহির হাতে নিহত হয়েছিল।

(১১) শাবিব ইবনে ইয়াজিদ আশ - শায়বানী - নদাঁতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

(১২) ইমরান ইবনে হারিছ আর - রাসিবী - দুলাবের যুদ্ধে নিহত হয়েছিল।

(১৩ - ১৪) জাহহাব আত - তাঈ এবং কুরায়েব ইবনে মুররাহ আল - অজদী - বনি তাহিয়ার সাথে যুদ্ধে নিহত হয়েছিল।

(১৫) জুবায়ের ইবনে আলী আস - সালিতী আত - তামিমী - আত্তাব ইবনে ওয়ারকা আর - রিয়াহীর সাথে যুদ্ধে নিহত হয়েছিল।

(১৬) আলী ইবনে বশির ইবনে মাহুজ আল - ইয়ারাবুঈ - হাজাজ ইবনে ইউসুফ আছ - ছাকাফীর হাতে নিহত হয়েছিল।

(১৭) উবায়দুল্লাহ ইবনে বশির - দুলাবের যুদ্ধে মুহাল্লাব ইবনে আবি সুফরার হাতে নিহত হয়েছিল।

(১৮) আবুল ওয়াজী আর রাসিবী - বনি ইয়াশাকুরের কবরস্থানে একজন লোক দেয়াল চাপা দিয়ে হত্যা করেছিল।

(১৯) আবদু রাব্বিহ আস সগির - মুহাল্লাবের সাথে যুদ্ধে নিহত হয়েছিল।

২০। ওয়ালিদ ইবনে তারিফ আশ - শায়বানী - ইয়াজিদ ইবনে মাজইয়াদ আশ - শায়বানীর সাথে যুদ্ধে নিহত হয়েছিল।

(২১ - ২৪) আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াহিয়াহ আল - কিনদী ,মুখতার ইবনে আউফ আল - অজদী ,আব্রাহাহ ইবনে সাব্বাহ এবং বালয ইবনে উকবাহ আল - আসাদী - এরা সকলেই মারওয়ান ইবনে মুহাম্মদের (শেষ উমাইয়া খলিফা) রাজত্বকালে আবদুল মালিক ইবনে আতিয়াহ আস - সাদি কর্তৃক নিহত হয়েছিল ।

খোৎবা - ৬০

لَا تُقَاتِلُوا الْخَوَارِجَ بَعْدِي - فَلَيْسَ مَنْ طَلَبَ الْحَقَّ فَأَخْطَأَه - كَمَنْ طَلَبَ الْبَاطِلَ فَأَدْرَكَه. قال الشريف - يعني معاوية وأصحابه.

খারিজিদের সম্পর্কে

আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ আমার পরে খারিজিদের সাথে যুদ্ধ করো না ,কারণ যে ন্যায় অনুসন্ধান করে কিন্তু তা খুঁজে পায় না। সে ওই ব্যক্তির মতো নয় যে অন্যায় অনুসন্ধান করে এবং তা খুঁজে পায়।

____________________

১। খারিজিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করার আদেশ দানের কারণ হলো - তিনি স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে ,তাঁর পরে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা এমন অজ্ঞ লোকদের (মুয়াবিয়া ও তার দল) হাতে চলে যাবে যারা জিহাদের যথার্থতা বুঝতে পারবে না এবং তারা শুধু তাদের প্রভাব টিকিয়ে রাখার জন্য তরবারি ব্যবহার করবে। এমনকি তাদের কেউ আমিরুল মোমেনিনের কুৎসা রটনা করার জন্য খারিজিদেরকে উৎসাহিত করবে। সুতরাং যারা নিজেরাই অন্যায় করে তারা সেসব লোকের সাথে যুদ্ধ করতে পারে যারা ভুলবশত অন্যায় করছে। এভাবে আমিরুল মোমেনিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ,খারিজীদের বিপথগামিতা ইচ্ছাকৃত নয় - শয়তানের প্রভাব। তারা অন্যায়কে ন্যায় বলে গ্রহণ করে তাতেই দৃঢ় রয়েছে। অপরদিকে মুয়াবিয়া ও তার দল বুঝে - শুনেই ন্যায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অন্যায়কে তাদের আচরণ বিধি হিসাবে গ্রহণ করেছে। দ্বীনের ব্যাপারে তাদের ধৃষ্টতা এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌছেছে যে ,এটাকে ভুল বুঝার ফল বলা যায় না ,আবার বিচারের ভ্রমাত্মক লেবাসও বলা যায় না। কারণ তারা প্রকাশ্যে দ্বীনের সীমালঙ্ঘন করেছিল এবং তাদের নিজস্ব ধ্যান - ধারণার বাইরে রাসূলের (সা.) আদেশ নিষেধকে আমল দেয়নি। হাদিদ ” (৫ম খণ্ড ,পৃঃ৯৩০) লিখেছেন যে ,মুয়াবিয়াকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের বাসনকোসন ব্যবহার করতে দেখে সাহাবা আবু দারদা বললেন , রাসূলকে (সা.) বলতে শুনেছি - যে কেউ স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পান করবে। সে উদরে দোযখের আগুনের জ্বালা পোহাবে। ” মুয়াবিয়া বললো , এটা আমার জন্য ক্ষতিকর নয়। ” একইভাবে সে জিয়াদ ইবনে আবিহর (তার পিতার জারজ সন্তান) সাথে তার খুশিমতো রক্তের সম্পর্ক গড়েছিল যা শরিয়াত সিদ্ধ নয়। সে মিম্বারে বসে রাসূলের আহলুল বাইতকে গালিগালাজ করতো এবং শরিয়তের সীমালঙ্ঘন করে চলতো। সে নির্দোষ লোকদের রক্তপাত ঘটিয়েছিল এবং দুশ্চরিত্র ও পাপী লোকদেরকে জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল।

খোৎবা - ৬১

لما خوف من الغيلة

وإِنَّ عَلَيَّ مِنَ اللَّه جُنَّةً حَصِينَةً - فَإِذَا جَاءَ يَوْمِي انْفَرَجَتْ عَنِّي وأَسْلَمَتْنِي - فَحِينَئِذٍ لَا يَطِيشُ السَّهْمُ ولَا يَبْرَأُ الْكَلْمُ

প্রতারক কর্তৃক নিহত হবার বিষয়ে সতর্ক করা হলে আমিরুল মোমেনিনের প্রদত্ত খোৎবা তিনি বলেনঃ

নিশ্চয়ই ,আল্লাহর একটা শক্ত ঢাল আমার ওপর রয়েছে। যখন আমার দিন ঘনিয়ে আসবে তখন সে ঢাল সরিয়ে নেয়া হবে এবং আমাকে মৃত্যুর হাতে সঁপে দেয়া হবে। সে সময় কোন তীরই লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে না এবং কোন আঘাতের ক্ষত নিরাময় হবে না।

খোৎবা - ৬২

يحذر من فتنة الدنيا

أَلَا إِنَّ الدُّنْيَا دَارٌ لَا يُسْلَمُ مِنْهَا إِلَّا فِيهَا - ولَا يُنْجَى بِشَيْءٍ كَانَ لَهَا - ابْتُلِيَ النَّاسُ بِهَا فِتْنَةً - فَمَا أَخَذُوه مِنْهَا لَهَا أُخْرِجُوا مِنْه وحُوسِبُوا عَلَيْه - ومَا أَخَذُوه مِنْهَا لِغَيْرِهَا قَدِمُوا عَلَيْه وأَقَامُوا فِيه - فَإِنَّهَا عِنْدَ ذَوِي الْعُقُولِ كَفَيْءِ الظِّلِّ - بَيْنَا تَرَاه سَابِغاً حَتَّى قَلَصَ وزَائِداً حَتَّى نَقَصَ.

দুনিয়ার ক্ষণস্থায়িত্ব সম্পর্কে

সাবধান ,দুনিয়া এমন এক স্থান যা থেকে শুধু জীবিত থাকাকালীন সময়ে প্রতিরক্ষা আশা করা যায়। শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্য আমল করে মুক্তি লাভ করা যায় না। বিপদাপদের মধ্যে দিয়েই দুনিয়াতে মানুষকে পরীক্ষা করা হয়। এখানে যারা জাগতিক ভোগ - বিলাসে কাটিয়েছে মৃত্যুই তা থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করবে এবং এ সম্পর্কে তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে। উত্তম আমল দ্বারা পরকালের জন্য যা কিছু অর্জন করবে ,সেখানে তারা তা পাবে এবং উপভোগ করবে। বুদ্ধিমানের জন্য এ দুনিয়া ছায়ার মতো - যা এ মুহুর্তে বৃদ্ধি পেয়ে ছড়িয়ে পড়ে আবার পর মুহুর্তেই সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে।

খোৎবা - ৬৩

في المبادرة إلى صالح الأعمال

فَاتَّقُوا اللَّه عِبَادَ اللَّه وبَادِرُوا آجَالَكُمْ بِأَعْمَالِكُمْ وابْتَاعُوا مَا يَبْقَى لَكُمْ بِمَا يَزُولُ عَنْكُمْ وتَرَحَّلُوا فَقَدْ جُدَّ بِكُمْ واسْتَعِدُّوا لِلْمَوْتِ فَقَدْ أَظَلَّكُمْ وكُونُوا قَوْماً صِيحَ بِهِمْ فَانْتَبَهُوا - وعَلِمُوا أَنَّ الدُّنْيَا لَيْسَتْ لَهُمْ بِدَارٍ فَاسْتَبْدَلُوا –

فَإِنَّ اللَّه سُبْحَانَه لَمْ يَخْلُقْكُمْ عَبَثاً ولَمْ يَتْرُكْكُمْ سُدًى ومَا بَيْنَ أَحَدِكُمْ وبَيْنَ الْجَنَّةِ أَوِ النَّارِ - إِلَّا الْمَوْتُ أَنْ يَنْزِلَ بِه - وإِنَّ غَايَةً تَنْقُصُهَا اللَّحْظَةُ وتَهْدِمُهَا السَّاعَةُ - لَجَدِيرَةٌ بِقِصَرِ الْمُدَّةِ - وإِنَّ غَائِباً يَحْدُوه الْجَدِيدَانِ - اللَّيْلُ والنَّهَارُ لَحَرِيٌّ بِسُرْعَةِ الأَوْبَةِ وإِنَّ قَادِماً يَقْدُمُ بِالْفَوْزِ أَوِ الشِّقْوَةِ - لَمُسْتَحِقٌّ لأَفْضَلِ الْعُدَّةِ - فَتَزَوَّدُوا فِي الدُّنْيَا مِنَ الدُّنْيَا - مَا تَحْرُزُونَ بِه أَنْفُسَكُمْ غَداً

فَاتَّقَى عَبْدٌ رَبَّه نَصَحَ نَفْسَه وقَدَّمَ تَوْبَتَه وغَلَبَ شَهْوَتَه - فَإِنَّ أَجَلَه مَسْتُورٌ عَنْه وأَمَلَه خَادِعٌ لَه - والشَّيْطَانُ مُوَكَّلٌ بِه يُزَيِّنُ لَه الْمَعْصِيَةَ لِيَرْكَبَهَا - ويُمَنِّيه التَّوْبَةَ لِيُسَوِّفَهَا إِذَا هَجَمَتْ مَنِيَّتُه عَلَيْه أَغْفَلَ مَا يَكُونُ عَنْهَا - فَيَا لَهَا حَسْرَةً عَلَى كُلِّ ذِي غَفْلَةٍ أَنْ يَكُونَ عُمُرُه عَلَيْه حُجَّةً - وأَنْ تُؤَدِّيَه أَيَّامُه إِلَى الشِّقْوَةِ - نَسْأَلُ اللَّه سُبْحَانَه - أَنْ يَجْعَلَنَا وإِيَّاكُمْ مِمَّنْ لَا تُبْطِرُه نِعْمَةٌ ولَا تُقَصِّرُ بِه عَنْ طَاعَةِ رَبِّه غَايَةٌ - ولَا تَحُلُّ بِه بَعْدَ الْمَوْتِ نَدَامَةٌ ولَا كَآبَةٌ.

দুনিয়ার ক্ষয় ও ধ্বংস সম্পর্কে

হে আল্লাহর বান্দাগণ ,আল্লাহকে ভয় কর এবং মৃত্যুর আগেই সৎ আমলে নিজেকে নিয়োজিত কর। পার্থিব সম্পদ তথা দুনিয়ার ভোগ - বিলাসের বিনিময়ে অনন্তকালীন আনন্দ ক্রয় কর। অনন্ত যাত্রার জন্য প্রস্তুত হও ,কারণ তোমরা সেদিকে তাড়িত হচ্ছো এবং মৃত্যুর জন্য নিজেকে প্রস্তুত কর ,কারণ মৃত্যু তোমাদের মাথার ওপর ঘুরছে। এমন লোক হও যারা আহ্বান মাত্রই জেগে উঠে ,যারা জানে এ দুনিয়া তাদের আবাসস্থল নয় এবং যারা এ দুনিয়াকে পরকালের সঙ্গে বদল করে নিয়েছে।

নিশ্চয়ই ,আল্লাহ্ তোমাদেরকে বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেননি এবং অকেজোভাবে তোমাদেরকে ফেলেও রাখেন নি। তোমাদের এবং বেহেশত অথবা দোযখের মধ্যবর্তী মৃত্যু ব্যতীত আর কিছুই নেই যা তোমাদের ওপর আপতিত হবেই। প্রতিটি মুহুর্ত জীবন থেকে খসে গিয়ে জীবনকে খর্ব করছে এবং প্রতিটি মুহুর্ত এভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে খাট হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করতে হবে। মৃত্যু নামক গুপ্ত ঘটনা দিবারাত্র তোমাদের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসছে। মৃত্যুপথের অভিযাত্রীকে সর্বোত্তম রসদ সংগ্রহ করতে হবে। সুতরাং এ দুনিয়াতে থাকাকালেই এমন রসদ সংগ্রহ কর যা দিয়ে আগামীকাল নিজেকে রক্ষা করতে পারবে ।

সুতরাং প্রত্যেকের উচিত আল্লাহকে ভয় করা ,নিজেকে সতর্ক করা ,তওবা করা ,কামনা - বাসনাকে প্রতিহত করা ;কারণ মৃত্যু তোমাদের কাছে গুপ্ত ,কামনা - বাসনা তোমাদেরকে প্রতারিত করে এবং শয়তান তোমাদের পিছে লেগে আছে। শয়তান পাপকে মনোমুগ্ধকর করে উপস্থাপন করে এবং তওবা করতে বিলম্ব ঘটানোর জন্য এমন বেখবর বানিয়ে দেয় যে ,অসতর্ক অবস্থায় তওবার পূর্বেই মৃত্যু এসে পড়ে। দুঃখ হয় সেসব গাফেলের জন্য যাদের জীবনই তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হয়ে দাঁড়াবে এবং তাদের দিনগুলো (গাফলতিতে অতিবাহিত) তাদেরকে শাস্তির দিকে নিয়ে যাবে।

আমরা মহিমান্বিত আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি ,তিনি যেন আমাদেরকে এবং তোমাদেরকে সেসব লোকের মতো করেন যাদেরকে নিয়ামত বিপথগামী করে না ,যাদেরকে কোন কিছুই আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিরত করতে পারে না এবং যারামৃত্যুর পর লজ্জা ও দুঃখে নিপতিত হয় না।

খোৎবা - ৬৪

وفيها مباحث لطيفة من العلم الإلهي

الْحَمْدُ لِلَّه الَّذِي لَمْ تَسْبِقْ لَه حَالٌ حَالًا - فَيَكُونَ أَوَّلًا قَبْلَ أَنْ يَكُونَ آخِراً - ويَكُونَ ظَاهِراً قَبْلَ أَنْ يَكُونَ بَاطِناً - كُلُّ مُسَمًّى بِالْوَحْدَةِ غَيْرَه قَلِيلٌ - وكُلُّ عَزِيزٍ غَيْرَه ذَلِيلٌ وكُلُّ قَوِيٍّ غَيْرَه ضَعِيفٌ - وكُلُّ مَالِكٍ غَيْرَه مَمْلُوكٌ وكُلُّ عَالِمٍ غَيْرَه مُتَعَلِّمٌ - وكُلُّ قَادِرٍ غَيْرَه يَقْدِرُ ويَعْجَزُ - وكُلُّ سَمِيعٍ غَيْرَه يَصَمُّ عَنْ لَطِيفِ الأَصْوَاتِ - ويُصِمُّه كَبِيرُهَا ويَذْهَبُ عَنْه مَا بَعُدَ مِنْهَا - وكُلُّ بَصِيرٍ غَيْرَه يَعْمَى عَنْ خَفِيِّ الأَلْوَانِ ولَطِيفِ الأَجْسَامِ - وكُلُّ ظَاهِرٍ غَيْرَه بَاطِنٌ وكُلُّ بَاطِنٍ غَيْرَه غَيْرُ ظَاهِرٍ - لَمْ يَخْلُقْ مَا خَلَقَه لِتَشْدِيدِ سُلْطَانٍ - ولَا تَخَوُّفٍ مِنْ عَوَاقِبِ زَمَانٍ - ولَا اسْتِعَانَةٍ عَلَى نِدٍّ مُثَاوِرٍ ولَا شَرِيكٍ مُكَاثِرٍ ولَا ضِدٍّ مُنَافِرٍ ولَكِنْ خَلَائِقُ مَرْبُوبُونَ وعِبَادٌ دَاخِرُونَلَمْ يَحْلُلْ فِي الأَشْيَاءِ فَيُقَالَ هُوَ كَائِنٌ - ولَمْ يَنْأَ عَنْهَا فَيُقَالَ هُوَ مِنْهَا بَائِنٌ لَمْ يَؤُدْه خَلْقُ مَا ابْتَدَأَ - ولَا تَدْبِيرُ مَا ذَرَأَ ولَا وَقَفَ بِه عَجْزٌ عَمَّا خَلَقَ - ولَا وَلَجَتْ عَلَيْه شُبْهَةٌ فِيمَا قَضَى وقَدَّرَ - بَلْ قَضَاءٌ مُتْقَنٌ وعِلْمٌ مُحْكَمٌ - وأَمْرٌ مُبْرَمٌ الْمَأْمُولُ مَعَ النِّقَمِ - الْمَرْهُوبُ مَعَ النِّعَمِ!

আল্লাহর গুণরাজী সম্পর্কে

প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা আল্লাহর ,যার এক অবস্থা অন্যটির শর্ত নয় ,যাতে তিনি শেষ হবার পূর্বেই প্রথম হতে পারেন অথবা গুপ্ত হবার পূর্বেই সপ্রকাশ হতে পারেন। তিনি ব্যতীত যাকেই এক ’ (একাকী) বলা হয় ,তাকেই ক্ষুদ্রতার জন্য তা বলা হয় এবং তিনি ব্যতীত যে কোন সম্মানিত ব্যক্তিই নগণ্য। তিনি ব্যতীত যে কোন ক্ষমতাবান ব্যক্তিই দুর্বল। তিনি ব্যতীত প্রত্যেক মনিবই দাসানুদাস। তিনি ব্যতীত প্রত্যেক জ্ঞানীই জ্ঞানানুসন্ধানী। তিনি ব্যতীত সকল নিয়ন্ত্রকই নিয়ন্ত্রিত। তিনি ব্যতীত সকল শ্রবণকারীই বধির ,কারণ হালকা স্বর সে শুনতে পায় না ,আবার উচ্চৈঃস্বর তাকে বধির করে দেয়। এবং দূরবর্তী স্বরও তার কানে পৌছে না। তিনি ব্যতীত সকল দৃষ্টিমান ব্যক্তিই অন্ধ ,কারণ সে গুপ্ত রং ও সূক্ষ্ম জিনিস দেখতে পায় না। তিনি ব্যতীত প্রতিটি সপ্রকাশ জিনিসই গুপ্ত ,কিন্তু তিনি ব্যতীত কোন গুপ্ত জিনিস প্রকাশ পেতে অসমর্থ। তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা তাঁর কর্তৃত্ব শক্তিশালী করার জন্য বা সময়ের পরিণতির ভয়ে করেননি। কোন শক্তিধর প্রতিদ্বন্দ্বীর আক্রমণে সাহায্য পাবার আশায় অথবা কোন দাম্ভিক অংশীদার বা কোন ঘৃণ্য শত্রুর বিরোধিতা ঠেকানোর জন্যও তিনি কোন কিছু সৃষ্টি করেননি। অপরদিকে সৃষ্টির সব কিছুকেই তিনি প্রতিপালন করেন এবং সকল সৃষ্টিই তাঁর দাসানুদাস। তিনি কোন কিছুর সাথেই যুক্তনন (বস্তুমোহ নিরপেক্ষ) যাতে বলা যেতে পারে তিনি অমুক বস্তুতে রয়েছেন ,আবার কোন কিছু থেকে তিনি বিযুক্ত নন। যাতে বলা যেতে পারে অমুক বস্তু থেকে তিনি আলাদা। তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা নিয়ন্ত্রণে বা পরিচালনা করতে কখনো ক্লান্তি বোধ করেন না। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তাতে কোন অক্ষমতা বা ত্রুটি তাকে স্পর্শ করেনি। তার কোন নির্দেশে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোন প্রকার সংশয় তাকে স্পর্শ করেনি। তাঁর রায় সুনিশ্চিত ,তাঁর জ্ঞান পরিপূর্ণ এবং তাঁর শাসন অদম্য। দুঃখ - দূর্দশা তাঁর সহায়তা যাচনা করা হয় ,আবার ঐশ্বর্য আপ্লুত অবস্থায়ও তাঁকে ভয় করা হয়।

খোৎবা - ৬৫

قاله لِأَصحابه فِى بِعْضِ أَيام صفِّينَ:

مَعَاشِرَ الْمُسْلِمِينَ : اسْتَشْعِرُوا الْخَشْيَةَ، وَ تَجَلْبَبُوا السَّكِينَةَ، وَ عَضُّوا عَلَى النَّوَاجِذِ، فَإِنَّهُ أَنْبَى لِلسُّيُوفِ عَنِ الْهَامِ وَ أَكْمِلُوا اللاَّمَةَ، وَ قَلْقِلُوا السُّيُوفَ فِي أَغْمَادِهَا قَبْلَ سَلِّهَا وَ الْحَظُوا الْخَزْرَ، وَ اطْعُنُوا الشَّزْرَ، وَ نَافِحُوا بِالظُّبَا، وَ صِلُوا السُّيُوفَ بِالْخُطَا، وَ اعْلَمُوا أَنَّكُمْ بِعَيْنِ اللَّهِ، وَ مَعَ ابْنِ عَمِّ رَسُولِ اللَّهِ فَعَاوِدُوا الْكَرَّ، وَ اسْتَحْيُوا مِنَ الْفَرِّ، فَإِنَّهُ عَارٌ فِي الْأَعْقَابِ، وَ نَارٌ يَوْمَ الْحِسَابِ وَ طِيبُوا عَنْ أَنْفُسِكُمْ نَفْسا وَ امْشُوا إِلَى الْمَوْتِ مَشْيا سُجُحاً، وَ عَلَيْكُمْ بِهَذَا السَّوَادِ الْأَعْظَمِ، وَ الرِّوَاقِ الْمُطَنَّبِ، فَاضْرِبُوا ثَبَجَهُ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ كَامِنٌ فِي كِسْرِهِ، وَ قَدْ قَدَّمَ لِلْوَثْبَةِ يَداً، وَ أَخَّرَ لِلنُّكُوصِ رِجْلاً. فَصَمْداً صَمْداً! حَتَّى يَنْجَلِيَ لَكُمْ عَمُودُ الْحَقِّ( وَ أَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ وَ اللّهُ مَعَكُمْ وَ لَنْ يَتِرَكُمْ أَعْمالَكُمْ ) .

সিফফিনের যুদ্ধের সময় আমিরুল মোমেনিন তার সহচরদেরকে বলেনঃ

হে মুসলিম জনতা !! আল্লাহর ভয়কে তোমাদের জীবনের রুটিনে পরিণত কর। নিজেকে মানসিক প্রশান্তিতে রেখো এবং দাঁতে দাঁত চেপে ধর ,কারণ এতে তোমাদের মাথার ওপর থেকে তরবারি দূরে সরে যাবে। তোমাদের বর্ম পরিধান কর এবং তরবারি বের করার আগে খাপের মধ্যে নেড়ে নাও । শত্রুর ওপর চোখ রেখো। তোমাদের বর্শা উভয় দিকে ব্যবহার করো এবং তরবারি দ্বারা শক্রকে আঘাত হানো। মনে রেখো ,তোমরা আল্লাহর সম্মুখে এবং রাসূলের চাচাতো ভাই - এর সাথী হয়ে লড়ছো। বারংবার আক্রমণ কর এবং পিছু হটার লজ্জাকর অবস্থার কথা অনুভব কর ;কারণ এটা পরবর্তী বংশধরদের জন্য লজ্জা ও শেষ বিচারের দিনে শাস্তির কারণ। স্বেচ্ছায় তোমাদের জীবন আল্লাহকে দাও এবং নির্দ্বিধায় মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাও। ওই সুসজ্জিত তাঁবু ও এর চারপাশের জটলার প্রতি সতর্ক হও এবং জটলার মধ্যভাগে যেখানে দামামা বাজছে সেখানে তোমাদের আক্রমণের লক্ষ্যস্থল স্থির কর ,কারণ সেখানে শয়তান বসে আছে। সে তোমাদেরকে আক্রমণ করার জন্য তার হাত প্রসারিত করেছে এবং পালিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে পা পিছনে রেখেছে। তোমরা ধৈর্য ধারণ করা যে পর্যন্ত না সত্যের আলো প্রতিভাত হয় ।

সুতরাং তোমরা মনোবল হারিয়ো না এবং সন্ধির প্রস্তাব করো না । তোমরাই প্রবল ;আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে আছেন ,তিনি তোমাদের কর্মফল কখনো ক্ষুন্ন করবেন না। (কুরআন - ৪৭ :৩৫)

খোৎবা - ৬৬

قَالُوا: لَمَّا انْتَهَتْ إِلَى أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَعليه‌السلام أَنْبَأُ السَّقِيفَةِ بَعْدَ وَفَاةِ رَسُولِ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ، قَالَعليه‌السلام : مَا قَالَتِ الْأَنْصَارُ؟ قَالُوا: قَالَتْ: مِنَّا أَمِيرٌ وَ مِنْكُمْ أَمِيرٌ؛ قَالَعليه‌السلام :

فَهَلَّا احْتَجَجْتُمْ عَلَيْهِمْ بِأَنَّ رَسُولَ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم وَصَّى بِأَنْ يُحْسَنَ إِلَى مُحْسِنِهِمْ، وَ يُتَجَاوَزَ عَنْ مُسِيئِهِمْ؟قَالُوا وَ مَا فِي هَذَا مِنَ الْحُجَّةِ عَلَيْهِمْ؟، فَقَالَ عليه‌السلام : لَوْ كَانَ الْإِمَامَةُ(الامارة) فِيهِمْ لَمْ تَكُنِ الْوَصِيَّةُ بِهِمْثُمَّ قَالَ :عليه‌السلام فَمَا ذَا قَالَتْ قُرَيْشٌ؟قَالُوا احْتَجَّتْ بِأَنَّهَا شَجَرَةُ الرَّسُولِ صلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ، فَقلَاَعليه‌السلام : احْتَجُّوا بِالشَّجَرَةِ، وَ أَضَاعُوا الثَّمَرَةَ.

সকিফা - ই - সাঈদার ঘটনা প্রবাহ শুনে প্রদত্ত খোৎবা

রাসূলের (সা.) ইনতিকালের অব্যবহিত পরে বনি সাঈদাহর সকিফাহ - এ সংঘটিত ঘটনা প্রবাহের সংবাদ আমিরুল মোমেনিনকে অবহিত করা হলে তিনি জানতে চেয়েছিলেন যে ,আনসারগণ কী বলেছিল ? লোকেরা বললো যে ,তারা দাবি করেছিল। একজন প্রধান তাদের মধ্য থেকে এবং আরেকজন প্রধান অন্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ করতে । তখন আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

তোমরা কেন রাসূলের অছিয়ত সম্পর্কে বললে না যে ,আনসারদের মধ্যে যারা ভালো লোক তাদের প্রতি উত্তম ব্যবহার করবে ;আর যারা মন্দলোক তাদেরকে সব সময় ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে।

লোকেরা বললোঃ রাসূলের এ অছিয়তের মধ্যে তাদের দাবির বিরুদ্ধে কী আছে ?

আমিরুল মোমেনিন বললেনঃ যদি নেতৃত্ব তাদের জন্য হতো তবে তাদের অনুকূলে কোন অছিয়ত থাকার প্রয়োজন ছিল না। ” তৎপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন , কুরাইশগণ কী জবাব দিল ?

লোকেরা বললোঃ তারা যুক্তি দেখালো যে ,তারা রাসূলের সাজারার (বংশধর) অন্তর্ভুক্ত। আমিরুল মোমেনিন বললেনঃ তারা সাজোরার যুক্তি দেখিয়েছে অথচ এর ফল বিনষ্ট করে ফেলেছে।

____________________

১। বনি সাইদার সকিফাতে যা ঘটেছিল তাতে মনে হয় আনসারদের বিরুদ্ধে মুহাজিরদের বলিষ্ঠ যুক্তি ছিল যে ,তারা রাসূলের (সা.) আত্মীয়স্বজন। সুতরাং তারা ছাড়া আর কেউ খেলাফত পেতে পারে না। তাদের এ যুক্তিই ছিল তাদের কৃতকার্য হবার মূল ভিত্তি। এ যুক্তির ভিত্তিতে আনসারদের বিরাট জনতা তাদের অস্ত্র তিনজন মুহাজিরের সামনে সমর্পণ করেছিল এবং মুহাজিরগণ রাসূলের বংশধর হবার বৈশিষ্ট্য দেখিয়েই খেলাফত লাভ করেছিল। সকিফার ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে তাবারী লিখেছেন যে ,যখন আনসারগণ সা ’ দ ইবনে উবাদার হাতে বায়াত গ্রহণের জন্য বনি সাঈদীর সকিফায় একত্রিত হলো তখন আবু বকর ,উমর ও আবু উবায়দাহ ইবনে আলজাররাহ যেকোন ভাবে টের পেয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। উমর দাঁড়িয়ে কিছু বলতে গেলে আবু বকর তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজেই বলতে লাগলোঃ

মুহাজিরগণ হলো তারা যারা সর্বাগ্রে। আল্লাহর ইবাদত করেছিল এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ইমান এনেছিল এবং তারাই রাসূলের বন্ধু - বান্ধব ও আত্নীয় - স্বজন । এ কারণে শুধু তারাই খেলাফতেরা যোগ্য । যারা তাদের সাথে দ্বন্দ্ব করবে। তারাই সীমা লঙ্ঘনকারী ।

আবু বকরের বক্তব্য শেষ হলে হুবাব ইবনে মুনযির দাঁড়িয়ে আনসারদের লক্ষ্য করে বললো , হে আনসারগণ! তোমাদের হাতের লাগাম অন্যের হাতে তুলে দিয়ে না। জনসাধারণ তোমাদের তত্ত্বাবধানে। তোমরা সম্মানে ,সম্পদে ,গোত্রে ও সংখ্যায় কম নও। যদি কোন বিষয়ে তোমাদের ওপর মুহাজিরদের প্রাধান্য থেকে থাকে তবে অন্য অনেক বিষয়ে তাদের ওপরও তোমাদের প্রধান্য আছে। তোমরা তাদেরকে নিজের ঘরে আশ্রয় দিয়েছে। যুদ্ধে তোমরাই ইসলামের বাহুবল এবং তোমাদের সহায়তায় ইসলাম নিজ পায়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তভাবে আল্লাহর ইবাদত তোমাদের শহরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নিজেদের মধ্যে বিভেদ করো না এবং নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা করো। যদি মুহাজিরগণ তোমাদের অধিকার স্বীকার না করে তবে তাদের বলে দাও আমাদের মধ্য থেকে একজন ও তাদের মধ্য থেকে একজন প্রধান নিয়োগ করতে হবে ” । হুবাব কথা শেষ করে বসে পড়তেই উমর দাঁড়িয়ে বললোঃ

এটা যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না যে ,একই সময়ে দুজন শাসক থাকবে । আল্লাহর কসম ,তোমাদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপ্রধান মনোনয়ন আরবগণ কখনো মেনে নেবে না ,কারণ রাসূলের আবির্ভাব তোমাদের মধ্য থেকে হয়নি । নিশ্চয়ই ,আরবগণ এ যুক্তির থোড়াই পরোয়া করবে: যে ,খেলাফত সে ঘরেই যাবে যে ঘরে রাসূল চির নিদ্রায় শায়িত । তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ভিন্নমত পোষণ করে তবে সে সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছ যুক্তি উত্থাপন করতে পারে । মুহাম্মদের (সা.) কর্তৃত্ব ও শাসনকার্য সম্পর্কে যে কেউ আমাদের সাথে বিরোধ করবে। সে ভ্রান্তিতে নিপতিত হবে এবং পাপী বলে গণ্য হবে ;ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

উমরের কথা শেষ হতেই হুবাব আবার দাঁড়িয়ে বললোঃ

হে আনসারগণ ,তোমাদের দাবিতে তোমরা স্থির থোক । এ লোকটি এবং তার সমর্থকদের কথায় কর্ণপাত করো না। তারা তোমাদের আধিকারকে পদদলিত করতে চায় । যদি তারা তোমাদের আধিকার মেনে না নেয়। তবে তোমাদের শহর থেকে তাদেরকে বের করে দাও এবং তোমরা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করো। খেলাফতের হকদার তোমাদের চেয়ে আর বেশি কে আছে ?

হুবাবের কথা শেষ হলে উমর তাকে গালাগালি শুরু করে দিল। হুবাবের পক্ষ থেকেও মন্দ শব্দ প্রয়োগ করতে লাগলো। এতে অবস্থার অবনতি লক্ষ্য করে আবু উবায়দাহ ইবনে জাররাহ অবস্থা ঠাণ্ডা করার জন্য বললোঃ

হে আনসার ভ্রাতাগণ ,তোমরাই তো তারা যারা সর্বোপায়ে আমাদের সাহায্য করেছিলে সমর্থন দিয়েছিলো এখন কেন তোমরা তোমাদের সে মনোভাব ও আচরণ পরিবর্তন করছো |

আবু উবায়দার বক্তব্যের পরও আনসারগণ তাদের মত পরিবর্তন করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলো। তারা সা ’ দের হাতে বায়াত গ্রহণ করতে যাচ্ছিলো ,এমন সময় সা ’ দের গোত্রের বশির ইবনে আমার আল - খাযরাজী দাঁড়িয়ে বললোঃ

এতে কোন সন্দেহ নেই যে ,আমরা দ্বীনকে সমর্থনা করেছিলাম এবং জিহাদে এগিয়ে এসেছিলাম ,কিন্তু এতে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা এবং তাঁর রাসূলকে মান্য করা । এতে আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে খেলাফতের ব্যাপারে গোলযোগ সৃষ্টি করা উচিত হবে না । মুহাম্মদ ছিলেন কুরাইশ বংশের সেহেতু খেলাফতে তাদের অধিকার সমধিক এবং খেলাফতের জন্য তারাই অধিক যোগ্য।

বশিরের বক্তব্য শেষ হতে না হতেই আনসারদের মধ্যে বিভেদ দেখা দিল এবং এটাই ছিল বশিরের উদ্দেশ্য ,কারণ সে তার গোত্রের একজনকে এত উচ্চ মর্যাদায় দেখা সহ্য করতে পারেনি। মুহাজেরগণ এ সুযোগে আবু বকরের হাতে বায়াত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথমেই বশির ,তারপর উমর ও তৎপর আবু উবায়দাহ আবু বকরের হাতে হাত রেখে বায়াত গ্রহণ করেছিল। এরপর বশিরের গোত্রের সকলেই বায়াত গ্রহণ করলো ।

এ সময় আমিরুল মোমেনিন রাসূলের (সা.) কাফন ও দাফনে ব্যস্ত ছিলেন। পরে যখন তিনি সকিফার ঘটনা শুনলেন তখন বললেন যে ,তারা রাসূলের বংশধারার (সাজোরা) যুক্তি দেখিয়ে আনসারদের দাবির মুখে জয়লাভ করেছে। অথচ তারা সে গাছের ফল নষ্ট করেছে। অর্থাৎ রাসূলের আহলুল বাইতকে (পরিবারের সদস্য) বঞ্চিত করেছে। মুহাজিরগণ সাজোরার দাবিতে প্রবল ,কিন্তু কী করে তারা সে সাজারার ফলকে উপেক্ষা করলো ? এটা এক অদ্ভুত ব্যাপার যে ,আবু বকর সাত স্তর এবং উমর নয় স্তর উপরে গিয়ে রাসূলের সাজারায় (লিনিয়্যাল ট্রী) যুক্ত হয়ে তাঁর পরিবারভুক্ত হবার কথা ব্যক্ত করেছে অথচ তারা রাসূলের আপনি চাচাতো ভাইকে অস্বীকার করেছে।

খোৎবা - ৬৭

لَما قُلّد مُحَمّد بْنَ أبي بَكْرِ مصر فملكت عَليه وَ قتل

وَ قَدْ أَرَدْتُ تَوْلِيَةَ مِصْرَ هاشِمَ بْنَ عُتْبَةَ؛ وَ لَوْ وَلَّيْتُهُ إِيَّاهَا لَمَّا خَلَّى لَهُمُ الْعَرْصَةَ وَ لاَ أَنْهَزَهُمُ الْفُرْصَةَ بِلاَ ذَمِّ لِمُحَمَّدِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، فَلَقَدْ كَانَ إِلَيَّ حَبِيباً، وَ كَانَ لِي رَبِيباً.

মিশরের গভর্ণর মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর ক্ষমতাচ্যুৎ হয়ে নিহত হবার খবর পেয়ে আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

হাশিম ইবনে উতবাহকে মিশরে প্রেরণ করার জন্য আমি মনস্থ করেছিলাম। যদি আমি তাই করতাম। তবে সে বিরোধীদের জন্য যুদ্ধের ময়দান খালি করে দিত না এবং তাদেরকে কোন সুযোগ দিত না। (তাকে ধরে ফেলার) । এ উক্তি আমি মুহাম্মদের মানহানি করার জন্য করিনি। যেহেতু আমি তাকে ভালোবাসি এবং আমি তাকে লালন - পালন করেছি।

___________________

১ । মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের মাতা ছিলেন আসমা বিনতে উমায়েস। আবু বকরের মৃত্যুর পর আমিরুল মোমেনিন তাকে বিয়ে করেন। ফলে মুহাম্মদ আমিরুল মোমেনিনের সাথে বাস করতো এবং তাকে আমিরুল মোমেনিনই লালন - পালন করেন। সে কারণে মুহাম্মদ তাঁর আচার - আচরণ ,মত ও পথ আত্মস্থ করতে পেরেছিল। আমিরুল মোমেনিন তাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং নিজের পুত্র মনে করতেন। তিনি অনেক সময় বলতেন , মুহাম্মদ আবু বকরের ঔরসজাত কিন্তু আমার পুত্র। বিদায় হজ্জের যাত্রাকালে সে জন্মগ্রহণ করে এবং আটাশ বছর বয়সে ৩৮ হিজরি সনে শহীদ হয় ।

আমিরুল মোমেনিন খেলাফত গ্রহণের পর কায়েস ইবনে সাদ ইবনে উবাদাহকে মিশরের গভর্ণর মনোনীত করেন ,কিন্তু অবস্থা এমন হয়েছিল যে ,শেষ পর্যন্ত মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে গভর্ণর করে প্রেরণ করতে হয়েছিল। কায়েস উসমানি দলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষপাতী ছিল না ,কিন্তু মুহাম্মদের অভিমত ছিল বিপরীত। ক্ষমতা গ্রহণের এক মাসের মধ্যেই মুহাম্মদ তাদের কাছে বার্তা প্রেরণ করলো যে ,যদি তারা তাকে মান্য না করে তবে তাদের অস্তিত্ব মিশরে রাখা হবে না। ফলে এসব লোক তার বিরুদ্ধে একটা দল গঠন করে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় । সিফফিনের সালিশীর পর তারা প্রকাশ্যভাবে প্রতিশোধের স্লোগান দিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে মিশরের পরিবেশ অশান্ত করে তুলেছিল। আমিরুল মোমেনিন এ সংবাদ পেয়ে মালিক ইবনে হারিছ। আল আশতারকে মিশরের গভর্ণর নিয়োগ করে তথায় প্রেরণ করলেন যাতে ষড়যন্ত্র প্রদমিত হয়ে প্রশাসন ভালোভাবে চলে। কিন্তু মালিক উমাইয়াদের নীলনকশা থেকে নিস্কৃতি পায়নি। তারা মালিককে পথিমধ্যেই বিষ প্রয়োগে হত্যা করে। ফলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরই মিশরের শাসনকর্তা রয়ে গেল।

এ দিকে সালিশীতে আমর ইবনে আস এর কার্যক্রমের জন্য মুয়াবিয়া তাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা মুয়াবিয়াকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হলো। ফলে সে আমরের নেতৃত্বে ছয় হাজার সৈন্য ন্যস্ত করে মিশর আক্রমণের জন্য তাকে প্রেরণ করলো। শত্রুর অগ্রযাত্রা সম্পর্কে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর জানতে পেরে সাহায্যের জন্য আমিরুল মোমেনিনকে পত্র লিখালো। প্রত্যুত্তরে তিনি জানালেন যে ,তিনি সহসাই তার সাহায্যের জন্য সৈন্য সংগ্রহ করে প্রেরণ করবেন ;ইতোমধ্যে সে যেন তার নিজের বাহিনীকে সমবেত করে যুদ্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করে। মুহাম্মদ চার হাজার সৈন্যের একটা বাহিনী গঠন করে দুভাগ করলেন। একভাগ নিজের অধীনে রেখে অপরভাগ কিনানাহ ইবনে বশির আত - তুযিবীর নেতৃত্বে ন্যস্ত করে শত্রুর অগ্রযাত্রা প্রতিহত করার জন্য আদেশ দিলেন। কিনানাহ তার বাহিনী নিয়ে এগিয়ে গেল। শত্রুর সম্মুখভাগে ত ারা যখন ক্যাম্প স্থাপন করলো তখন একের পর এক শত্রুদল তাদেরকে আক্রমণ করতে লাগলো। তারা অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের সাথে এসব আক্রমণ মোকাবেলা করেছিলো। অবশেষে মুয়াবিয়াহ ইবনে হুদায়েজ আল - কিন্দি তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে এমনভাবে আক্রমণ করলো যে ,কিনানাহর বাহিনী তা প্রতিহত করতে পারেনি। ফলে তারা যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে পড়লো। কিনানাহর পরিণতির সংবাদ পেয়ে মুহাম্মদের বাহিনী ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তাকে পরিত্যাগ করে পালিয়ে গেল। মুহাম্মদ নিরুপায় হয়ে আত্মগোপন করে একটা নির্জন স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। শত্রুপক্ষ যে কোন লোকের মাধ্যমে খবর পেয়ে তৃষ্ণাকাতর অবস্থায় মুহাম্মদকে ধরে ফেললো এবং তাকে দ্বীখণ্ডিত করে তার লাশ জ্বলিয়ে দিয়েছিল।

এদিকে মালিক ইবনে কা ব আল - আরহাবীর নেতৃত্বে দুহাজার সৈন্যের একটি বাহিনী কুফা থেকে যাত্রা করে গিয়েছিল। কিন্তু তারা মিশরে পৌছার আগেই শত্রুপক্ষ মিশর দ খল করেনিয়েছিলো।

খোৎবা - ৬৮

كَمْ أُدَارِيكُمْ كَمَا تُدَارَى الْبِكَارُ الْعَمِدَةُ، وَ الثِّيَابُ الْمُتَدَاعِيَةُ! كُلَّمَا حِيصَتْ مِنْ جَانِبٍ تَهَتَّكَتْ مِنْ آخَرَ. كُلَّمَا أَطَلَّ عَلَيْكُمْ مَنْسِرٌ مِنْ مَنَاسِرِ أَهْلِ الشَّامِ أَغْلَقَ كُلُّ رَجُلٍ مِنْكُمْ بَابَهُ، وَ انْجَحَرَ انْجِحَارَ الضَّبَّةِ فِي جُحْرِهَا، وَ الضَّبُعِ فِي وِجَارِهَا. الذَّلِيلُ وَ اللَّهِ مَنْ نَصَرْتُمُوهُ! وَ مَنْ رُمِيَ بِكُمْ فَقَدْ رُمِيَ بِأَفْوَقَ نَاصِلٍ. إِنَّكُمْ وَ اللَّهِ لَكَثِيرٌ فِي الْبَاحَاتِ، قَلِيلٌ تَحْتَ الرَّايَاتِ، وَ إِنِّي لَعَالِمٌ بِمَا يُصْلِحُكُمْ، وَ يُقِيمُ أَوَدَكُمْ، وَ لَكِنِّي لاَ أَرَى إِصْلاَحَكُمْ بِإِفْسَادِ(فسادی) نَفْسِي. أَضْرَعَ اللَّهُ خُدُودَكُمْ، وَ أَتْعَسَ جُدُودَكُمْ! لاَ تَعْرِفُونَ الْحَقَّ كَمَعْرِفَتِكُمُ الْبَاطِلَ، وَ لاَ تُبْطِلُونَ الْبَاطِلَ كَإِبْطَالِكُمُ الْحَقَّ!.

অনুচরদের অসতর্ক আচরণ সম্পর্কে উপদেশ দিয়ে আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

আর কতকাল আমি তোমাদের ইচ্ছা ও অনুভূতির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে চলবো। আমি তোমাদের ইচ্ছার সঙ্গে সেভাবেই খাপ খাইয়ে নিয়েছি যেভাবে মানুষ ফাঁপা কুঁজ সম্পন্ন উট অথবা এদিক সেলাই করলে ওদিক বেরিয়ে পড়ে এমন ছেড়া কাপড়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। যখন সিরিয়ার একটা ছোট বাহিনী এমনভাবে লুকিয়ে পড়েছিলে যেন গিরগিটি অথবা ব্যাজার তার গর্তে লুকিয়ে পড়েছে। আল্লাহর কসম ,তোমাদের মতো মানুষকে সমর্থন করলে অপদস্থ হওয়া অনিবার্য এবং তোমাদের সমর্থন নিয়ে তীর ছোড়া মানেই হলো মাথা ও লেজ ভাঙ্গা তীর নিক্ষেপ করা। আল্লাহর কসম ,ঘরের আঙ্গিনায় তোমরা সংখ্যায় অনেক কিন্তু ব্যানারের তলে তোমরা মুষ্টিমেয় কয়েকজন। নিশ্চয়ই ,আমি জানি কিসে তোমাদের আচরণের উন্নতি হবে এবং কী করে তোমাদের বক্রতা সোজা করতে হবে। কিন্তু আমি নিজেকে বরবাদ করে তোমাদের উন্নতি বিধান করবো না। আল্লাহ তোমাদেরকে অসম্মানিত ও ধ্বংস করতে পারেন। তোমরা অন্যায়কে যতটুকু বোঝ ,ন্যায়কে ততটুকু বোঝা না এবং ন্যায়কে ধ্বংস করার জন্য যতটুকু প্রবৃত্ত হও ,অন্যায়কে ধ্বংস করার জন্য ততটুকু হও না।

খোৎবা - ৬৯

مَلَكَتْنِي عَيْنِي وَ أَنَا جَالِسٌ فَسَنَحَ لِي رَسُولُ اللَّهِصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم ،‍ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا ذَا لَقِيتُ مِنْ أُمَّتِكَ مِنَ الْأَوَدِ وَ اللَّدَدِ؟ فَقَالَ:«ادْعُ عَلَيْهِمْ» فَقُلْتُ: أَبْدَلَنِي اللَّهُ بِهِمْ خَيْرا لي مِنْهُمْ، وَ أَبْدَلَهُمْ بِي شَرّا لَهُمْ مِنِّي.وَ يَعْني بالا ود الاعوجاج وَ باللدد الخَصام وَ هَذا مَن أَفْصَح الْكَلامِ .

প্রাণনাশক আঘাতের দিন ভোরে আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

আমি বসেছিলাম। হঠাৎ নিদ্রাচ্ছন্ন হলাম। আমি দেখলাম আল্লাহর রাসূল (সা.) আমার সম্মুখে উপস্থিত । আমি বললাম , হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের বক্রতা ও শত্রুতা আমি আর কত সহ্য করবো ? আল্লাহর রাসূল বললেন , তাদের আশুভের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর। ” আমি বললাম , আমার জন্য তাদের চেয়ে আরো ভালো লোক এবং তাদের জন্য আমার পরিবর্তে অনেক খারাপ লোক আল্লাহ দিতে পারেন। ”

খোৎবা - ৭০

أَمّا بَعْدُ يَا أَهْلَ الْعِرَاقِ، فَإِنَّما أَنْتُمْ كَالْمَرْأَةِ الْحَامِلِ، حَمَلَتْ فَلَمَّا أَتَمَّتْ أَمْلَصَتْ وَ ماتَ قَيِّمُها، وَ طالَ تَأَيُّمُها، وَ وَرِثَها أَبْعَدُها. أَمَا وَ اللَّهِ مَا أَتَيْتُكُمُ اخْتِيَاراً؛ وَ لَكِنْ جِئْتُ إِلَيْكُمْ (أتیکم) سَوْقاً. وَ لَقَدْ بَلَغَنِي أَنَّكُمْ تَقُولُونَ: عَلِيُّ يَكْذِبُ، قَاتَلَكُمُ اللَّهُ تعالی! فَعَلَى مَنْ أَكْذِبُ؟ أَ عَلَى اللَّهِ؟ فَأَنَا أَوَّلُ مَنْ آمَنَ بِهِ! أَمْ عَلَى نَبِيِّهِ؟ فَأَنَا أَوَّلُ مَنْ صَدَّقَهُ! كَلَّا وَ اللَّهِ لَكِنَّهَا لَهْجَةٌ غِبْتُمْ عَنْهَا، وَ لَمْ تَكُونُوا مِنْ أَهْلِها. وَيْلُ أُمِّهِ وَيْلُمَّهِ كَيْلاً بِغَيْرِ ثَمَنٍ! لَوْ كَانَ لَهُ وِعَأٌ( وَ لَتَعْلَمُنَّ نَبَأَهُ بَعْدَ حِينٍ )

ইরাকের জনগণকে ভর্ৎসনা

ওহে ইরাকের জনগণ ! তোমরা হলে সেই গর্ভবতী মহিলার মত যে গর্ভসময় পূর্তির পর একটা মৃত সন্তান প্রসব করে এবং তার স্বামীও মারা যায় এবং তার বৈধব্য দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ে ,ফলে দূরবর্তী আত্মীয় - স্বজন তার উত্তরাধিকারী হয়। আল্লাহর কসম ,আমি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তোমাদের কাছে আসিনি। অবস্থার প্রেক্ষিতে আমি আসতে বাধ্য হয়েছি। আমি জানতে পেরেছি যে ,তোমরা বল আলী মিথ্যা কথা বলে। আল্লাহ্ তোমাদেরকে ধ্বংস করুন। কার বিরুদ্ধে আমি মিথ্যা বলি ? আল্লাহর বিরুদ্ধে ? কিন্তু তাঁর প্রতি ইমান আনাতে আমিই তো প্রথম। তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে ? কিন্তু আমিই তো প্রথম যে তাকে বিশ্বাস করে। কখনো নয় ;আল্লাহর কসম ,আমি যা বলেছি তা সম্পূর্ণ সঠিক। তোমরা সে সময় উপস্থিত ছিলেনা - থাকলেও সে কথা বোঝার যোগ্য লোক তোমরা নও । তোমাদের ওপর অভিশাপ ! আমি বিনামূল্যে আমার সুশোভন বক্তব্য তোমাদের দিয়ে যাচ্ছি। আহা! এটা ধারণ করার মত পাত্র যদি থাকতো ।

“ কিয়াৎকাল পরে তোমরা এটা অবশ্যই বুঝতে পারবে । ” (কুরআন - ৩৮:৮৮)

___________________

১। সালিশীর পর মুয়াবিয়ার আক্রমণ ক্রমাগত বেড়ে যায়। এসব আক্রমণ প্রতিহত করতে ইরাকিদের শৈথিল্য ও হৃয়দহীনতা দেখে আমিরুল মোমেনিন। তাদের ভর্ৎসনা করে এ ভাষণ দেন। এ ভাষণে তারা যে সিফফিনে প্রতারিত হয়েছে তা উল্লেখ করে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মহিলার সাথে তাদের তুলনা করেনঃ

(ক) মহিলাটি গর্ভবতী - এতে বুঝানো হয়েছে। ইরাকিদের যুদ্ধ করার ক্ষমতা ছিল। তারা বন্ধ্যা নারীর মতো নয় যার কাছে কিছু আশা করা যায় না।

(খ) তার গর্ভকাল পূর্তি হয়েছে - অর্থাৎ ইরাকিরা যুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে চূড়ান্ত বিজয়ের মুখে পৌছেছিল।

(গ) সে মৃত সন্তান প্রসব করলো - অর্থাৎ চুড়ান্ত বিজয়ের মুখে তারা সালিশীতে যাবার জন্য জেদ ধরলো এবং বিজয়ের পরিবর্তে নৈরাশ্যের মোকাবেলা করলো ।

(ঘ) তার বৈধব্য দীর্ঘস্থায়ী হলো - অর্থাৎ এমন এক আস্থায় তারা পড়লো যে তাদের কোন রক্ষাকর্তা বা পৃষ্ঠপোষক রইলো না এবং তারা কোন শাসনকর্তা ছাড়া ঘুরে বেড়াতে লাগলো।

(ঙ) দূরবর্তী আত্মীয় তার উত্তরাধীকারী হলো - অর্থাৎ সিরিয়ার জনগণ যাদের সঙ্গে কোন আত্মীয়তা নেই তারাই ইরাকিদের সম্পদ দখল করলো ।

খোৎবা - ৭১

اللَّهُمَّ داحِيَ الْمَدْحُوَّاتِ، وَ داعِمَ الْمَسْمُوكَاتِ، وَ جَابِلَ الْقُلُوبِ عَلَى فِطْرَتِهَا: شَقِيِّها وَ سَعِيدِهَا. اجْعَلْ شَرَائِفَ صَلَوَاتِكَ وَ نَوَامِيَ بَرَكَاتِكَ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَ رَسُولِكَ، الْخَاتِمِ لِمَا سَبَقَ، وَ الْفَاتِحِ لِمَا انْغَلَقَ، وَ الْمُعْلِنِ الْحَقَّ بِالْحَقِّ، وَ الدَّافِعِ جَيْشَاتِ الْأَبَاطِيلِ، وَ الدَّامِغِ صَوْلاتِ الْأَضَالِيلِ، كَمَا حُمِّلَ فَاضْطَلَعَ، قَائِما بِأَمْرِكَ، مُسْتَوْفِزا فِي مَرْضَاتِكَ، غَيْرَ نَاكِلٍ عَنْ قُدُمٍ، وَ لا وَاهٍ فِي عَزْمٍ، وَاعِيا لِوَحْيِكَ، حَافِظا لِعَهْدِكَ، مَاضِيا عَلَى نَفَاذِ أَمْرِكَ، حَتَّى أَوْرَى قَبَسَ الْقَابِسِ، وَ أَضَأَ الطَّرِيقَ لِلْخَابِطِ، وَ هُدِيَتْ بِهِ الْقُلُوبُ بَعْدَ خَوْضَاتِ الْفِتَنِ وَ الْآثَامِ، وَ أَقامَ بِمُوضِحاتِ الْأَعْلاَمِ، وَ نَيِّرَاتِ الْأَحْكَامِ، فَهُوَ أَمِينُكَ الْمَأْمُونُ، وَ خَازِنُ عِلْمِكَ الْمَخْزُونِ، وَ شَهِيدُكَ يَوْمَ الدِّينِ، وَ بَعِيثُكَ بِالْحَقِّ، وَ رَسُولُكَ إلَى الْخَلْقِ.

اللَّهُمَّ افْسَحْ لَهُ مَفْسَحا فِي ظِلِّكَ، وَ اجْزِهِ مُضَاعَفاتِ الْخَيْرِ مِنْ فَضْلِكَ، اللَّهُمَّ أَعْلِ عَلَى بِنأِ الْبانِينَ بِنَأَهُ، وَ أَكْرِمْ لَدَيْكَ مَنْزِلَتَهُ، وَ أَتْمِمْ لَهُ نُورَهُ، وَ اجْزِهِ مِنِ ابْتِعَاثِكَ لَهُ مَقْبُولَ الشَّهَادَةِ، مَرْضِيَّ الْمَقَالَةِ، ذا مَنْطِقٍ عَدْلٍ، وَ خُطْبَةٍ فَصْلٍ، اللَّهُمَّ اجْمَعْ بَيْنَنا وَ بَيْنَهُ فِي بَرْدِ الْعَيْشِ وَ قَرارِ النِّعْمَةِ، وَ مُنَى الشَّهَوَاتِ، وَ أَهْوَأِ اللَّذَّاتِ، وَ رَخَأِ الدَّعَةِ، وَ مُنْتَهَى الطُّمَأْنِينَةِ وَ تُحَفِ الْكَرَامَةِ.

রাসূলের (সা.) ওপর সালাম পেশ করার পদ্ধতি সম্পর্কে

রাসূলের ওপর কিভাবে সালাম পেশ করতে হয় সে সম্পর্কে আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

হে আল্লাহ ,তুমি পৃথিবীর উপরিভাগকে বিস্তৃতকারী এবং আকাশ মণ্ডলের সুনির্দিষ্ট রক্ষক। তুমি ভালো ও মন্দ স্বভাব সম্পন্ন হৃদয় সৃষ্টিকারী। মুহাম্মদের (সা.) প্রতি তোমার পছন্দের সেরা সালাম ও বরকত বর্ষণ করো। তিনি তোমার বান্দা ও রাসূল। তিনি সর্বশেষ নবী । যা নিরুদ্ধ ছিল তিনি তা উন্মুক্ত করেছেন। তিনি সত্যের ঘোষণাকারী। তিনি অন্যায়ের সৈন্যকে পর্যুদস্তকারী এবং বিভ্রান্তির আক্রমণ ধ্বংসকারী। যেহেতু তুমি রেসালতের মহান দায়িত্বের বোঝা তাঁর স্কন্ধে দিয়েছে। সেহেতু তিনি তোমার আদেশের ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থেকে সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। তিনি তোমার ইচ্ছার প্রতি অগ্রসরমান ছিলেন। এতে তাঁর কোন পদক্ষেপে সংকোচন ছিল না এবং তাঁর দৃঢ় সংকল্পে কোন দুর্বলতা ছিল না। তোমার অহি শ্রবণে ও তোমার ওয়াদা সংরক্ষণে তিনি কার্পণ্য করেননি। তোমার আদেশ তিনি ছড়িয়ে দিয়ে অনুসন্ধানকারীদের জন্য আলো জ্বলিয়ে দিয়েছিলেন এবং যারা অন্ধকারে হাতড়ে চলছিলো তাদেরকে আলোর সন্ধান দিয়েছিলেন।

যে হৃদয়সমূহ ফেতনা - ফ্যাসাদে লিপ্ত ছিল তারা তার মাধ্যমে হেদায়েত প্রাপ্ত হয়েছিল। তিনি সুস্পষ্ট পথের নিদর্শন ও সমুজ্জ্বল নির্দেশাবলী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি তোমার বিশ্বস্ত আমানতদার এবং তোমার জ্ঞান ভাণ্ডারের খাজেন (খাজাঞ্চি) । শেষ বিচারের দিনে তিনি তোমার সাক্ষী। তিনি তোমার সত্যের দূত এবং মানুষের নিকট তোমার বার্তাবাহক। হে আল্লাহ ,তোমার ছায়াতলে তার জন্য বিশাল স্থান নির্ধারণ কর এবং তোমার অগণনীয় রহমত তাকে প্রদান কর।

হে আল্লাহ ,তাঁর নির্মাণকে (মিশন বা আদর্শ) সকল নির্মাণের ওপর উচ্চতা প্রদান করো ,তোমার নিকট তাঁর মর্যাদাকে সমুচ্চ করো ,তাঁর নূরকে পরিপূর্ণতা প্রদান করো এবং তাঁর আলোকে তুমি উদ্ভাসিত রাখে। তোমার রেসালতের দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালনের জন্য তাঁর সাক্ষ্যই গ্রহণ করো এবং তাঁর বক্তব্য পছন্দনীয় করো ,কারণ তাঁর বক্তব্য ন্যায়ভিত্তিক ও তাঁর বিচার সুস্পষ্ট। হে আল্লাহ ,আমাদেরকে ও তাঁকে জীবনের আনন্দে ,নেয়ামতের বহাল অবস্থায় ,আকাঙ্খার পরিতৃপ্তিতে ,আনন্দ উপভোগে ,জীবন ধারণের আরামে ,মনের শান্তিতে ও সম্মানের অনুদানে একত্রে রেখো।

খোৎবা - ৭২

أُخِذَ مَرْوَانُ بْنُ الْحَكَمِ أَسِيرا يَوْمَ الْجَمَلِ فَاسْتَشْفَعَ الْحَسَنَ وَ الْحُسَيْنَعليهما‌السلام إلَى أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَعليه‌السلام فَكَلَّمَاهُ فِيهِ، فَخَلَّى سَبِيلَهُ، فَقالا لَهُ: يُبَايِعُكَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ؟ فَقالَعليه‌السلام :

أَوَلَمْ يُبايِعْنِي بَعْدَ قَتْلِ عُثْمَانَ؟ لا حَاجَةَ لِي فِي بَيْعَتِهِ! إِنَّهَا كَفُّ يَهُودِيَّةٌ لَوْ بَايَعَنِي بِيَدِهِ لَغَدَرَ بِسَبَّتِهِ، أَما إ نَّ لَهُ إِمْرَةً كَلَعْقَةِ الْكَلْبِ أَنْفَهُ. وَ هُوَ أَبُو الْأَكْبُشِ الْأَرْبَعَةِ، وَ سَتَلْقَى الْأُمَّةُ مِنْهُ وَ مِنْ وَلَدِهِ يَوْماً أَحْمَرَ!

হাসান ও হোসাইন যুদ্ধ - বন্দী মারওয়ান ইবনে হাকামের জন্য সুপারিশ করায় প্রদত্ত খোৎবা

মারওয়ান ইবনে হাকাম জামালের যুদ্ধে বন্দী হয়ে হাসান ও হোসাইনকে অনুনয় বিনয় করে অনুরোধ করেছিল যেন তারা আমিরুল মোমেনিনের কাছে তার অনুকূলে সুপারিশ করেন। তাদের সুপারিশের কারণেই আমিরুল মোমেনিন মারওয়ানকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। সুপারিশকালে মহান ভ্রাতৃদ্বয় বলেন ,“ হে আমিরুল মোমেনিন ,সে আপনার বায়াত গ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করে । তখন আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

উসমানের হত্যার পর সে কি আমার বায়াত গ্রহণ করেনি ? এখন আর তার বায়াতের কোন প্রয়োজন আমার নেই ,কারণ তার হাত হলো ইহুদির হাত। যদি সে আমার হাত ধরেও বায়াত গ্রহণ করে। তবুও সে কিছুক্ষণ পরে তা ভঙ্গ করবে। সে একদিন ক্ষমতা পাবে তবে ততক্ষণ টিকে থাকবে যতক্ষণ কুকুর নিজের নাক চাটে (স্বল্পক্ষণের জন্য) । সে চারটি ভেড়ার পিতা হবে (তারাও শাসন করবে) । সে এবং তার পুত্রদের দ্বারা জনগণ লাল দিবস (দুঃখ - কষ্ট) পোহাবে ” ।

____________________

১। মারওয়ান ইবনে হাকাম উসমানের ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা। তার শরীরের পাতলা গড়ন ও কর্মকান্ডের জন্য তাকে বলা হতো 'খায়ত বাতিল ’ (অন্যায়ের সূতা) । যখন আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান আমর ইবনে সাঈদকে হত্যা করলো তখন তার ভ্রাতা ইয়াহিয়া বলেছিলঃ

হে খায়ত বাতিলের পুত্র ,তুমি আমরকে প্রতারণা করেছো এবং তোমাদের মতো লোকেরা প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত |

মারওয়ানের পিতা হাকাম যদিও মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তবুও তার আচার - আচরণ ও কর্মকাণ্ড রাসূলকে ব্যথাতুর করতো। রাসূল (সা.) অভিসম্পাত দিয়ে বলেছিলেন , এ লোকটির বংশধরের হাতে আমার লোকদের অনেক দুঃখ - দূর্দশা ঘটবে। ” অবশেষে তার গুপ্ত চক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় রাসূল (সা.) তাকে মদিনা থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছিলেন। সে তার পুত্র মারওয়ানকে নিয়ে তায়েফের ওয়াজ উপত্যকায় চলে গিয়েছিল। রাসূলের (সা.) জীবদ্দশায় তাকে আর মদিনায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আবু বকর ও উমর একইভাবে তাকে মদিনায় আসতে দেয়নি। কিন্তু উসমান খলিফা হয়েই তাদের উভয়কে ডেকে নিয়ে এসেছিল এবং মারওয়ানকে এত উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত করেছিল যে ,খেলাফতের লাগাম মারওয়ানের হাতে চলে গিয়েছিল। এরপর অবস্থা তার অনুকূলে এমনভাবে গিয়েছিল যে ,মুয়াবিয়া ইবনে ইয়াজিদের পর সে মুসলিম জাহানের খলিফা হয়েছিল। কিন্তু চার মাস দশ দিন (মতান্তরে নয় মাস আঠার দিন) সে খলিফা ছিল। তার স্ত্রী তার মুখে বালিশ চেপে ধরে তাকে হত্যা করেছিল।

যে চার পুত্রের কথা আমিরুল মোমেনিন বলেছিলেন ,কারো কারো মতে তারা হলো আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ান - এর চার পুত্র যথা ওয়ালিদ ,সুলায়মান ,ইয়াজিদ ও হিশাম - এরা একের পর এক খলিফা হয়েছিল এবং কলঙ্কিত ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলো। আবার কারো কারো মতে ওই চার ভেড়া হলো মারওয়ানের চার পুত্র যথা খলিফা আবদুল মালিক ,মিশরের গভর্ণর আবদুল আজিজ ,ইরাকের গভর্ণর বিশর ও জাজিরাহর গভর্ণর মুহাম্মদ।