নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা4%

নাহজ আল-বালাঘা লেখক:
: জেহাদুল ইসলাম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ: হযরত আলী (আ.)

নাহজ আল-বালাঘা
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 48 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 128645 / ডাউনলোড: 8471
সাইজ সাইজ সাইজ
নাহজ আল-বালাঘা

নাহজ আল-বালাঘা

লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বাংলা

রাসূলের (সা.) ‘জ্ঞান নগরীর দ্বার’ আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব ছিলেন তত্ত্বজ্ঞানী, দার্শনিক, সুলেখক ও বাগ্মী। আলঙ্কারিক শাস্ত্রে তার পান্ডিত্য ও নৈপুন্য অসাধারণ। তিনি নবুওয়াতী জ্ঞান ভান্ডার হতে সরাসরি জ্ঞান আহরণ করেন এবং সাহাবাদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী পন্ডিত ছিলেন। এতে কারো দ্বিমত নেই। আরবী কাব্যে ও সাহিত্যে তার অনন্যসাধারণ অবদান ছিল। খেলাফত পরিচালনা কালে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ভাষণ (খোৎবা) দিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন এলাকার প্রশাসকগণকে প্রশাসনিক বিষয়ে উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে পত্র লিখেছিলেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে মানুষের অনেক প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়েছিলেন। তার এসব বাণী কেউকেউ লিখে রেখেছিল, কেউ কেউ মনে রেখেছিল, আবার কেউ কেউ তাদের লিখিত পুস্তকে উদ্ধৃত করেছিল। মোটকথা তার অমূল্য বাণীসমূহ মানুষের কাছে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ছিল।

আশ-শরীফ আর-রাজী আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিবের ভাষণসমূহ (খোৎবা), পত্রাবলী, নির্দেশাবলী ও উক্তিসমূহ সংগ্রহ করে “নাহজ আল-বালঘা” নামক গ্রন্থটি সঙ্কলন করেন।


1

2

খোৎবা - ৭৩

لَقَدْ عَلِمْتُمْ أَنِّي أَحَقُّ النَّاسِ بِها مِنْ غَيْرِي؛ وَ وَ اللَّهِ لَأُسْلِمَنَّ مَا سَلِمَتْ أُمُورُ الْمُسْلِمِينَ؛ وَ لَمْ يَكُنْ فِيها جَوْرٌ إ لا عَلَيَّ خَاصَّةً، الْتِمَاسا لِأَجْرِ ذَلِكَ وَ فَضْلِهِ، وَ زُهْدا فِيما تَنافَسْتُمُوهُ مِنْ زُخْرُفِهِ وَ زِبْرِجِهِ.

যখন পরামর্শক কমিটি (শূরা) উসমানের হাতে বায়াত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

নিশ্চয়ই তোমরা জেনেছো যে ,খেলাফতের জন্য অন্য সকলের চেয়ে আমার অধিকার বেশি। আল্লাহর কসম ,যতদিন পর্যন্ত মুসলিমদের বিষয়াষয় সঠিকভাবে চলবে এবং আমি ব্যতীত অন্যদের ওপর কোন অত্যাচার - নিপীড়ন থাকবে না ততদিন আমি আল্লাহর কাছে পুরস্কার প্রার্থী হয়ে নিশ্চুপ থাকবো এবং খেলাফতের সকল আকর্ষণ ও প্রলোভন থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখবো যা তোমরা আকুলভাবে বাসনা কর ।

খোৎবা - ৭৪

لَما بَلَغَه اتهام بَني أميّة له بِالْمُشاركة فِي دَمِّ عُثْمان:

أَوَلَمْ يَنْهَ بَنِي أُمَيَّةَ عِلْمُها بِي عَنْ قَرْفِي أَوَما وَزَعَ الْجُهَّالَ سَابِقَتِي عَنْ تُهَمَتِي وَ لَما وَ عَظَهُمُ اللَّهُ بِهِ أَبْلَغُ مِنْ لِسَانِي! أَنَا حَجِيجُ الْمَارِقِينَ، وَ خَصِيمُ الْمُرْتَابِينَ، وَ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ تُعْرَضُ الْأَمْثَالُ، وَ بِما فِي الصُّدُورِ تُجَازَى الْعِبَادُ.

আমিরুল মোমেনিন যখন জানতে পারলেন যে ,উসমানের হত্যার জন্য উমাইয়াগণ তাকে দায়ী করছে তখন তিনি বলেনঃ

উমাইয়ারা আমাকে ভালোভাবেই জানে। তবুও তারা আমাকে দোষারোপ করা থেকে নিবৃত্ত থাকেনি । সকলের আগে ইসলামে প্রবেশ করা সত্ত্বেও এসব অজ্ঞ লোক আমাকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকতে পারেনি । আল্লাহর সতর্কবাণী আমার কথার চেয়ে অনেক সুন্দরভাবে বর্ণিত আছে। আমি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী যারা ইমান পরিত্যাগ করে এবং তাদের বিরোধী যারা সংশয়কে সাদরে গ্রহণ করে। অনিশ্চিত বিষয়সমূহ সুস্পষ্ট ব্যাখ্যার জন্য আল্লাহর কুরআনের সামনে উপস্থাপন করার দরকার। নিশ্চয়ই ,মানুষ সে অনুযায়ী বিনিময় পাবে যা তার হৃদয়ে আছে।

খোৎবা - ৭৫

رَحِمَ اللّهُ امرَاً (عَبْدا) سَمِعَ حُكْماً فَوَعى، وَ دُعِيَ إلى رَشادٍ فَدَنا، وَ أَخَذَ بِحُجْزَةِ هادٍفَنَجا. رَاقَبَ رَبَّهُ، وَ خَافَ ذَنْبَهُ، قَدَّمَ خَالِصاً، وَ عَمِلَ صَالِحاً (ناصحاً). اكْتَسَبَ مَذْخُوراً، وَ اجْتَنَبَ مَحْذُوراً، وَ رَمى غَرَضاً، وَ أَحْرَزَ عِوَضاً. كابَرَ هَوَاهُ، وَ كَذَّبَ مُنَاهُ. جَعَلَ الصَّبْرَ مَطِيَّةَ نَجَاتِهِ، وَ التَّقْوَى عُدَّةَ وَفاتِهِ، رَكِبَ الطَّرِيقَةَ الْغَرَّأَ، وَ لَزِمَ الْمَحَجَّةَ الْبَيْضَأَ. اغْتَنَمَ الْمَهَلَ، وَ بادَرَ الْأَجَلَ، وَ تَزَوَّدَ مِنَ الْعَمَلِ.

তার ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক ,যে জ্ঞানের বিষয় শ্রবণ করে এবং তা মান্য করে। যখন তাকে ন্যায় পথের দিকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তখন সেদিকে সে অগ্রসর হয় । সে একজন হাদির কটিবন্ধ ধরে তাকে অনুসরণ করে এবং মুক্তির পথ খুঁজে পায়। সে সর্বদা আল্লাহকে তার চোখের সামনে রাখে এবং পাপকে ভয় করে। সে আন্তরিকতা ও পরহেজগারির সাথে আমল করে এবং স্বর্গীয় ঐশ্বর্যের পুরস্কার অর্জন করে। পাপকে সে এড়িয়ে চলে ,কল্যাণকর বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য স্থির করে এবং তদানুযায়ী বিনিময় পায়। সে তার আকাঙ্খার মোকাবেলা করে ,কামনা প্রদমিত করে। ছবরকে মুক্তির উপায় মনে করে এবং তাকওয়াকে মৃত্যুর জন্য রসদ মনে করে। সে সম্মানের পথে এগিয়ে চলে এবং সত্যের সড়কে চলাফেরা করে। সে সময়ের সদ্ব্যবহার করে ,পথ অতিক্রম করার জন্য তাড়াহুড়া করে এবং আমলে সালেহারূপ রসদ সঙ্গে নিয়ে যায়।

খোৎবা - ৭৬

إنَّ بَنِي أُمَيَّةَ لَيُفَوِّقُونَنِي تُراثَ مُحَمَّدٍصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم تَفْوِيقاً، وَ اللَّهِ لَئِنْ بَقِيتُ لَهُمْ لَأَنْفُضَنَّهُمْ نَفْضَ اللَّحّامِ الْوِذامَ التَّرِبَةَ!.

উমাইয়াদের সম্পর্কে

বনি উমাইয়া আমাকে একটু একটু করে মুহাম্মদের উত্তরাধিকার দিচ্ছে যেমন করে একটা উষ্ট্রীকে একটু দোহন করে তার শাবককে দুধ পান করতে দেয়া হয় যেন দোহনের জন্য সে প্রস্তুত হয়। আল্লাহর কসম ,যদি আমি বেঁচে থাকি তবে তাদেরকে এমনভাবে প্রত্যাখ্যান করবো । যেমন করে কসাই বালি লাগা মাংশের টুকরা থেকে বালি ঝেড়ে ফেলে।

খোৎবা - ৭৭

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ما أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي، فَإ نْ عُدْتُ فَعُدْ عَلَيَّ بِالْمَغْفِرَةِ. اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ما وَأَيْتُ مِنْ نَفْسِي، وَ لَمْ تَجِدْ لَهُ وَفَأً عِنْدِي. اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ما تَقَرَّبْتُ بِهِ إلَيْكَ بِلِسانِي ثُمَّ خَالَفَهُ قَلْبِي، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي رَمَزَاتِ الْأَلْحَاظِ، وَ سَقَطاتِ الْأَلْفَاظِ، وَ شَهَوَاتِ الْجَنَانِ، وَ هَفَواتِ اللِّسَانِ.

আমিরুল মোমেনিনের সানুনয় প্রার্থনা

হে আমার আল্লাহ! আমি আমাকে যতটা জানি তুমি তার চেয়ে বেশি জানো। যদি আমি নিজের অজ্ঞাতে কোন অপরাধ করে থাকি তবে আমায় ক্ষমা করো। যদি আমি পাপের দিকে যাই তাহলে তুমি ক্ষমার দিকে যেয়ো। হে আমার আল্লাহ আমি নিজের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা যদি তুমি অপরিপূর্ণ দেখ সেজন্য আমাকে ক্ষমা করো। আমার আল্লাহ ,আমি আমার জিহ্বা দিয়ে তোমার নৈকট্য যাচনা করেছি ,কিন্তু আমার হৃদয় তাতে বাধা দিয়েছে এবং সেভাবে কাজ করেনি ;সেজন্য আমাকে ক্ষমা করো। আমার আল্লাহ চোখের খেয়ানত ,কথার অসৌজন্যতা ,হৃদয়ের আকাঙ্খা ও বক্তব্যের ভুলের জন্য আমাকে ক্ষমা করে ।

খোৎবা - ৭৮

قالَهُ لِبَعْضِ أَصْحابه لِما عِزْمِ عَلَى الْمَسير إلى الخَوارج، وَ قَدْ قالَ له: يا أميرالمؤ منين إن سَرت فِي هَذا الْوَقت، خَشيت أَن لا تَظْفر بِمُرادك، مِنْ طريق عِلم النُجوم. فَقَالَعليه‌السلام :

أَتَزْعُمُ أَنَّكَ تَهْدِي إلَى السَّاعَةِ الَّتِي مَنْ سَارَ فِيها صُرِفَ عَنْهُ السُّوءُ؟ وَ تُخَوِّفُ السَّاعَةِ الَّتِي مَنْ سَارَ فِيهَا حَاقَ بِهِ الضُّرُّ؟ فَمَنْ صَدَّقَكَ بِهَذَا فَقَدْ كَذَّبَ الْقُرْآنَ، وَ اسْتَغْنَى عَنِ الاِسْتِعَانَةِ بِاللَّهِ فِي نَيْلِ الْمَحْبُوبِ وَ دَفْعِ الْمَكْرُوهِ. وَ تَبْتَغِي فِي قَوْلِكَ لِلْعَامِلِ بِأَمْرِكَ أَنْ يُولِيَكَ الْحَمْدَ دُونَ رَبِّهِ، لِأَنَّكَ بِزَعْمِكَ أَنْتَ هَدَيْتَهُ إلَى السَّاعَةِ الَّتِي نالَ فِيهَا النَّفْعَ، وَ أَمِنَ الضُّرَّ!!.

أَيُّهَا النَّاسُ، إيَّاكُمْ وَ تَعَلُّمَ النُّجُومِ إلّا ما يُهْتَدَى بِهِ فِي بَرِّ أَوْ بَحْرٍ، فَإِنَّهَا تَدْعُو إ لَى الْكَهَانَةِ، وَ الْمُنَجِّمُ كَالْكَاهِنِ، وَ الْكَاهِنُ كَالسَّاحِرِ، وَ السَّاحِرُ كَالْكَافِرِ، وَ الْكَافِرُ فِي النَّارِ، سِيرُوا عَلَى اسْمِ اللَّهِ.

খারিজিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য যাত্রাকালে কেউ একজন আমিরুল মোমেনিনকে বলল , এ মূহুর্তে যাত্রা করলে ,জ্যোতিষশাস্ত্র মতে ,আমার ভয় হয় ,আপনি লক্ষ্য অর্জনে কৃতকার্য হতে পারবেন না। তখন আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

তুমি কি মনে কর ,তুমি বলে দিতে পার মানুষ কোন সময় বের হলে অশুভ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না অথবা কোন সময় বের হলে সে ক্ষতিগ্রস্থ হবে ,সে বিষয়ে তুমি সতর্ক করে দিতে পার ? যে কেউ জ্যোতিষশাস্ত্র বিশ্বাস করে সে কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং নিজের অভিষ্ট অর্জনেও অবাঞ্চিত বিষয় প্রতিহতকরণে আল্লাহর প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়ে। তোমার এসব কথার মাধ্যমে তুমি আশা পোষণ করা যে ,যারা তোমার কথামতো কাজ করে তারা যেন আল্লাহর পরিবর্তে তোমার প্রশংসা করে ,কারণ তোমার ভুল ধারণা অনুযায়ী তুমি তাদেরকে লাভবান হওয়া অথবা ক্ষতি এড়ানোর মুহুর্ত বলে দিয়ে পরিচালিত করেছো ।

তৎপর আমিরুল মোমেনিন জনগণের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলেনঃ

হে জনমণ্ডলী ! শুধু স্থলভাগে ও সমুদ্রে দিক নির্ণয় ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে তারকাবিদ্যা শিক্ষা করা সম্পর্কে তোমরা হুশিয়ার থেকো। কারণ এটা মানুষকে অনুমানের দিকে ঠেলে দেয় এবং জ্যোতিষী একজন অনুমানকারী ছাড়া কিছুই নয়। এহেন অনুমানকারী যাদুকরের মতো ,যাদুকর কাফেরের মতো এবং কাফের দোযখবাসী। কাজেই আল্লাহর নামে এগিয়ে যাও।

___________________

১। খারিজিদের উত্থান দমনের জন্য নাহরাওয়ান যাত্রাকালে আফিফ ইবনে কায়েস আল - কিন্দি আমিরুল মোমেনিনকে বললো , এ ক্ষণটা ভালো নয়। এ সময়ে আপনি যাত্রা করলে পরাজিত হবেন। ” কিন্তু আমিরুল মোমেনিন তার কথায় কর্ণপাত না করে তখনই বেরিয়ে পড়লেন। সে যুদ্ধে খারিজিদের শোচনীয় পরাজয় হয়েছিল। তাদের নয় হাজার সৈন্যের মধ্যে নয় জন পলাতক ব্যতীত সকলেই নিহত হয়েছিল।

এ খোৎবায় আমিরুল মোমেনিন জ্যোতিষশাস্ত্র মিথ্যা প্রমাণ করে তিনটি যুক্তি দেখিয়েছেনঃ প্রথমতঃ জ্যোতিষীদের অভিমত সঠিক বলে গ্রহণ করলে কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়। কারণ কুরআন বলে - বল ,আল্লাহ ব্যতীত আকাশ ও পৃথিবীতে অদৃশ্য বিষয়ে কেউ কিছু জ্ঞাত নহে। (২৭:৬৫) ।

দ্বিতীয়তঃ জ্যোতিষী তার ভুল ধারণার প্রভাবে বিশ্বাস করে যে ,ভবিষ্যৎ জানার মাধ্যমে সে তার লাভ বা ক্ষতির বিষয় জানতে পারে। সে ক্ষেত্রে সে আল্লাহ ও তার সাহায্য প্রার্থনার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে। এরূপ ঔদাসীন্যতা ইমানের পথ পরিত্যাগ করা ও নাস্তিকতার সামিল যা আল্লাহর প্রতি আশা পোষণের মানসিকতা বিনষ্ট করে দেয়। তৃতীয়তঃ কোনক্রমে যদি তার কথা সঠিক হয়ে যায়। তবে সে মনে করে এটা জ্যোতিষশাস্ত্র জানার ফলে হয়েছে। ফলত সে আল্লাহর প্রশংসা করার পরিবর্তে আত্মপ্রসাদ লাভ করে এবং এহেন অনুমান ভিত্তিক কাজে দৈবক্রমে কেউ লাভবান হলে সে আল্লাহর পরিবর্তে জ্যোতিষীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

খোৎবা - ৭৯

بَعْدَ فَراغَه مِن حَرْب الجَمل

بیان الفرق بین الرجل و المرئة

مَعاشِرَ النَّاسِ، إنَّ النِّسَأَ نَواقِصُ الْإِيمَانِ، نَوَاقِصُ الْحُظُوظِ، نَوَاقِصُ الْعُقُولِ، فَأَمّا نُقْصانُ إِيمانِهِنَّ فَقُعُودُهُنَّ عَنِ الصَّلاَةِ وَ الصِّيَامِ فِي أَيَّامِ حَيْضِهِنَّ، وَ أَمَّا نُقْصانُ عُقُولِهِنَّ فَشَهَادَةُ امْرَأَتَيْنِ كَشَهَادَةِ الرَّجُلِ الْوَاحِدِ، وَ أَمّا نُقْصانُ حُظُوظِهِنَّ فَمَوَارِيثُهُنَّ عَلَى الْأَنْصَافِ مِنْ مَوَارِيثِ الرِّجالِ.

أسلوب مدیریة البیت

فَاتَّقُوا شِرارَ النِّسَأِ، وَ كُونُوا مِنْ خِيارِهِنَّ عَلَى حَذَرٍ، وَ لا تُطِيعُوهُنَّ فِي الْمَعْرُوفِ حَتّى لا يَطْمَعْنَ فِي الْمُنْكَرِ.

জামালের যুদ্ধের পর নারীর দৈহিক ক্রুটি সম্পর্কে আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

হে জনমণ্ডলী! ইমানে ,উত্তরাধিকারে ও আকলে (বুদ্ধিমত্তায়) নারীর কমতি রয়েছে। ইমানে কমতি এ জন্য যে ,ঋতুস্রাবে তারা সালাত ও সিয়াম থেকে বিরত থাকে। আকলে কমতি এ জন্য যে ,দুজন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমতুল্য। উত্তরাধিকারে কমতি হলো নারী পুরুষের অর্ধেক অংশ পায়।

সুতরাং তাদের অশুভ হাতছানি থেকে সতর্ক থেকে ;এমন কি তাদের মধ্যে যারা ভালো ,তাদের থেকেও নিজেকে রক্ষা করে চলো। কোন ভালো কাজেও তাদের মেনে চলো না ,তাহলেই তারা তোমাকে অশুভের দিকে আকর্ষণ করতে পারবে না ।

____________________

১। জামালের যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের পর আমিরুল মোমেনিন এ খোৎবা প্রদান করেন। একজন নারীর (আয়শা) আদেশ অন্ধভাবে অনুসরণ করার ফলে জামালের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সেজন্য এ খোৎবায় নারীর দৈহিক ত্রুটি ও এর ফলাফল বর্ণিত হয়েছে। নারীকে প্রতিমাসেই ক 'দিন সালাত ও সিয়াম থেকে বিরত থাকতে হয় যা ইমানের কমতি প্রমাণ করে। যদিও ইমানের প্রকৃত অর্থ হলো হৃদয় নিংড়ানো সাক্ষ্য ও দৃঢ় - প্রত্যয় তবুও রূপকভাবে ইমান আমল ও আখলাককে বুঝায়। কারণ আমল ইমানের বহিঃপ্রকাশ। ইমাম আলী ইবনে মুসা আর - রেজা বলেছেনঃ

ইমান হচ্ছে হৃদয়ের দৃঢ় প্রত্যয় ও সাক্ষ্য ,মৌখিক স্বীকৃতি ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কর্ম।

দ্বিতীয় ত্রুটি হচ্ছে - প্রকৃতিকভাবেই নারী আকলের পরিপূর্ণ প্রয়োগ করতে পারে না। সেজন্য প্রকৃতি তাদের কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই আকল প্রদান করেছেন যা তাদেরকে গর্ভধারণ ,সন্তান প্রসব ,সন্তান লালনপালন ও গৃহস্থালী কাজের পথে পরিচালিত করেছে। আকলের কমতি থাকার ফলেই কুরআন বলেঃ

অতঃপর তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে দুজন সাক্ষী ডাক এবং যদি দুজন পুরুষ সাক্ষী না পাও তবে একজন পুরুষ ও দুজন নারীর সাক্ষ্য গ্রহণ কর ,যাতে একজন নারী কিছু ভুলে গেলে অন্যজন তাকে মনে করিয়ে দিতে পারে (কুরআন ,২ : ২৮২) ।

তৃতীয় দুর্বলতা হলো - উত্তরাধিকারে নারী পুরুষের অর্ধেক। কুরআন বলেঃ

আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন তোমাদের সন্তান - সন্ততি সম্পর্কে । পুরুষ সন্তান দুজন নারী সন্তানের সমান অংশ পাবে (কুরআন ৪ :১১) ।

নারীর প্রাকৃতিক দুর্বলতা বর্ণনার পর আমিরুল মোমেনিন তাদেরকে অন্ধভাবে অনুসরণ ও ভ্রান্তভাবে মান্য করার অকল্যাণ বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন যে ,শুধু অশুভ বিষয় নয় ,কোন ভালো বিষয়ও এমনভাবে করা উচিত যেন তারা বুঝতে না পারে যে ,এটা তাদের ইচ্ছানুযায়ী করা হয়েছে ;তারা যেন অনুধাবন করে যে ,কাজটি ভালো বলেই করা হয়েছে ,এতে তাদের সন্তোষ বা ইচ্ছার করণীয় কিছু নেই। যদি তারা বুঝতে পারে যে ,তাদের সন্তুষ্টির কারণে কাজটা করা হয়েছে তাহলে ধীরে ধীরে তাদের দাবি বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং সকল বিষয় তাদের ইচ্ছানুযায়ী সম্পাদনের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকবে যার অবধারিত ফল হবে ধ্বংস। এ বিষয়ে শায়খ মুহাম্মদ আবদুহ ” লিখেছেনঃ আমিরুল মোমেনিনের এ অভিমত শতাব্দীর অভিজ্ঞতা দ্বারা স্বীকৃত।

খোৎবা - ৮০

حقیقیة الزهد

أَيُّهَا النَّاسُ، الزَّهادَةُ قِصَرُ الْأَمَلِ، وَ الشُّكْرُ عِنْدَ (عن) النِّعَمِ، وَ الْوَرَعُ عِنْدَ الْمَحَارِمِ، فَإنْ عَزَبَ ذلِكَ عَنْكُمْ فَلا يَغْلِبِ الْحَرَامُ صَبْرَكُمْ، وَ لا تَنْسَوْا عِنْدَ النِّعَمِ شُكْرَكُمْ، فَقَدْ أَعْذَرَ اللَّهُ إلَيْكُمْ بِحُجَجٍ مُسْفِرَةٍ ظَاهِرَةٍ، وَ كُتُبٍ بَارِزَةِ الْعُذْرِ وَاضِحَةٍ.

সংযম সম্পর্কে

হে লোকসকল! সংযম হলো কামনা - বাসনাকে কমিয়ে ফেলা ,আল্লাহর নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা থেকে দূরে থাকা। আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্তিতে শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে তোমরা ভুলে যেয়োনা। যদি শুকরিয়া জ্ঞাপনে ভুল না হয় তবে নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ তোমাদের ধৈর্যকে পরাভূত করতে পারবে না। আল্লাহ্ তোমাদের জন্য স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল প্রমাণাদি দিয়ে এবং সমুজ্জ্বল কিতাব খোলা রেখে তোমাদের ওজরখাহি করার কোন সুযোগ রাখেন নি।

খোৎবা - ৮১

فِي صِفة الدُنيا

مَا أَصِفُ مِنْ دَارٍ أَوَّلُهَا عَناءٌ، وَ آخِرُها فَناءٌ! فِي حَلاَلِها حِسابٌ، وَ فِي حَرَامِها عِقابٌ مَنِ اسْتَغْنَى فِيهَا فُتِنَ، وَ مَنِ افْتَقَرَ فِيهَا حَزِنَ، وَ مَنْ سَاعَاهَا فَاتَتْهُ، وَ مَنْ قَعَدَ عَنْهَا وَ اتَتْهُ، وَ مَنْ أَبْصَرَ بِهَا بَصَّرَتْهُ، وَ مَنْ أَبْصَرَ إِلَيْهَا أَعْمَتْهُ.

أَقُوُل: وَ إذا تأمّل المتأمل قَولهعليه‌السلام : «وَ مَنْ أَبْصر بِها بَصْرَته» وجد تَحْتُه مِنْ المَعْنى العَجيبُ وَالْغَرَضَ البَعيدُ ما لا تَبْلُغْ غايَتَه وَ لا يُدْرِكْ غَوْرِه لا سيّما إذا قرن إليه قِوْلِه: وَ مَنْ أَبْصر إليها أَعْمِتِه فَإنَّه يَجِدُ الفِرَقْ بَيْنَ «أبصر بِها» وَ «أبصر إليْها» واضحا نيّرا وَ عجيبا باهرا.

দুনিয়া ও এর মানুষ সম্পর্কে

কিভাবে আমি এ দুনিয়ার বর্ণনা দেব যার প্রারম্ভ দুঃখ - দূর্দশা এবং পরিসমাপ্তি ধ্বংসে ? এখানে সম্পাদিত হালাল কাজের জন্য জবাবদিহিতা রয়েছে এবং নিষিদ্ধ কাজের জন্য শাস্তি রয়েছে। এখানে যে ধনবান তাকে ফেতনা - ফ্যাসাদ মোকাবেলা করতে হয় ,আর যে দরিদ্র সে দুঃখ - দুর্দশায় নিপতিত। যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রতি লালায়িত হয় সে তা পায় না। আবার যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে দূরে সরে থাকে তার দিকে দুনিয়া এগিয়ে যায়। যদি কেউ দুনিয়ার মধ্য দিয়ে দেখতে চায়। তবে দুনিয়া তাকে দৃষ্টিদান করে। কিন্তু কারো চোখ যদি স্থিরভাবে দুনিয়ার ওপর থাকে। তবে দুনিয়া তাকে অন্ধ করে দেয় (অর্থাৎ গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট করে দেয়) ।

___________________

১। “ এ দুনিয়ার প্রারম্ভ দুঃখ - দূর্দশা আর সমাপ্তি ধ্বংসে ” - আমিরুল মোমেনিনের এ কথাটি কুরআন সমর্থিত : প্রকৃত পক্ষে আমরা দুঃখ - দূর্দশার মধ্যেই মানুষকে সৃষ্টি করেছি (৯০:৪) ।

এ কথা সত্য যে ,মায়ের সংকীর্ণ জরায়ু থেকে বিশাল মহাশূন্য পর্যন্ত মানব জীবনের পরিবর্তনের পরিসমাপ্তি ঘটে না। জীবনের প্রথম স্পন্দনে মানুষ নিজকে এমন একটা সংকীর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন বন্দিখানায় দেখতে পায় যেখানে সে না পারে অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ নাড়াতে ,না পারে পাশ পরিবর্তন করতে। এ বন্দিখানা থেকে মুক্তি লাভ করে পৃথিবীতে পদার্পণ করেই সে অগণিত দুঃখ - কষ্টে নিপতিত হয়। শুরুতেই সে কথা বলতে পারে না ,ফলে নিজের দুঃখ - বেদনা - ব্যথা কিছুই প্রকাশ করতে পারে না এবং অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করে নিজের প্রয়োজন মিটাতে পারে না। শুধু তার ফোফানো কান্না আর গড়িয়ে পড়া অশ্রুজল তার প্রয়োজন ও দুঃখ - বেদনা প্রকাশ করে। এ অবস্থা অতিক্রম করে শেখার স্তরে পদার্পণ করলেই শাসন আর নির্দেশ তাকে ভীত সন্ত্রস্ত রাখে। এ অবস্থা থেকে অব্যাহতি পেতে না পেতেই পারিবারিক ও জীবিকার দুশ্চিন্তা তাকে ঘিরে ধরে। তখন কখনো পেশার সহচরদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ,কখনো শত্রুর সাথে সংঘর্ষ ,কখনো ভাগ্যের উত্থান - পতন ,কখনো রোগের আক্রমণ ,কখনো সন্তানের শোক ,কখনো বার্ধক্যের জরা - এভাবে পৃথিবীকে বিদায় জানানো পর্যন্ত দুঃখ - দুর্দশায় থাকতে হয়।

এরপর আমিরুল মোমেনিন বলেন যে ,এ পৃথিবীতে হালাল কাজের জবাবদিহিতা ও হারাম কাজের জন্য শাস্তি রয়েছে। ফলে আনন্দ - উপভোগও তার কাছে তিক্ত হয়ে পড়ে। অর্থ - সম্পদের প্রাচুর্য মানুষকে এমনভাবে উদ্বীগ্ন করে তোলে যে তার মানসিক শান্তি বিনষ্ট হয়ে পড়ে ;আবার দারিদ্র - পীড়িত হলে সে সম্পদের জন্য হাহুতাশ করে। দুনিয়ার প্রতি লালায়িত ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষার কোন শেষ নেই ;একটা পূরণ হতে না হতেই অন্যটি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এ দুনিয়া প্রতিবিম্বের মতো - এর পেছনে যতই দৌড়াবে তা ততই এগিয়ে যাবে ;আবার তাকে ত্যাগ করে যতই পিছু হটবে ,তা তোমাকে অনুসরণ করে তোমার পিছু নেবে। অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি লোভ - লালসার দৃঢ়মুষ্টি থেকে নিজকে মুক্ত করে দুনিয়ার পিছু নেয়া থেকে নিজকে বিরত রাখে তবুও সে দুনিয়া থেকে বঞ্চিত হয় না। সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভাসাভাসাভাবে দেখে ,এর ঘটনা প্রবাহ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং এর বহুরূপী পরিবর্তন থেকে আল্লাহর শক্তি ,জ্ঞান ,বিচার শক্তি ,করুণা ,ক্ষমা এবং সংরক্ষণ ক্ষমতা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারে সে ব্যক্তি প্রকৃত চক্ষুষ্মান হয়। অপরপক্ষে যে ব্যক্তি দুনিয়ার চাকচিক্যে ও রংঢং - এ নিজকে হারিয়ে ফেলে সে দুনিয়ার অন্ধকারে নিপতিত হয়। আল্লাহ বলেনঃ

তোমার চোখ কখনো প্রসারিত করো না তার প্রতি ,যা আমরা তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য স্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসাবে দিয়েছি ,তা দিয়ে তাদের পরীক্ষা করার জন্য । তোমার প্রতিপালকের জীবিকা উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী (কুরআন ২০:১৩১)

খোৎবা - ৮২

وَ هِي الخُطْبَة العَجيبَة و تَسْمى«الغرأ»

حقیقة صفات الله

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي عَلاَ بِحَوْلِهِ، وَ دَنَا بِطَوْلِهِ، مَانِحِ كُلِّ غَنِيمَةٍ وَ فَضْلٍ، وَ كَاشِفِ كُلِّ عَظِيمَةٍ وَ أَزْلٍ. أَحْمَدُهُ عَلَى عَوَاطِفِ كَرَمِهِ، وَ سَوَابِغِ نِعَمِهِ، وَ أُومِنُ بِهِ أَوَّلاً بَادِياً، وَ أَسْتَهْدِيهِ قَرِيباً هَادِياً، وَ أَسْتَعِينُهُ قَاهِراً قَادِراً، وَ أَتَوَكَّلُ عَلَيْهِ كَافِياً نَاصِراً، وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداًصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم عَبْدُهُ وَ رَسُولُهُ، أَرْسَلَهُ لِإِنْفَاذِ أَمْرِهِ، وَ إِنْهَأِ عُذْرِهِ وَ تَقْدِيمِ نُذُرِهِ.

الوصیة بالتقوی

أُوصِيكُمْ عِبَادَ اللَّهِ بِتَقْوَى اللَّهِ الَّذِي ضَرَبَ لَكُمُ الْأَمْثَالَ، وَوَقَّتَ لَكُمُ الْآجَالَ، وَ أَلْبَسَكُمُ الرِّيَاشَ، وَ أَرْفَغَ لَكُمُ الْمَعَاشَ، وَ أَحَاطَ (أحاطکم) بِكُمُ الْإِحْصَأَ، وَ أَرْصَدَ لَكُمُ الْجَزَأَ، وَ آثَرَكُمْ بِالنِّعَمِ السَّوَابِغِ، وَ الرِّفَدِ الرَّوَافِغِ، وَ أَنْذَرَكُمْ بِالْحُجَجِ الْبَوَالِغِ، فَأَحْصَاكُمْ عَدَداً، وَ وَظَّفَ لَكُمْ مُدَداً، فِي قَرَارِ خِبْرَةٍ، وَ دَارِ عِبْرَةٍ، أَنْتُمْ مُخْتَبَرُونَ فِيهَا، وَ مُحَاسَبُونَ عَلَيْهَا.

وصف الدنیا

فَإِنَّ الدُّنْيَا رَنِقٌ مَشْرَبُهَا، رَدِغٌ مَشْرَعُهَا، يُونِقُ مَنْظَرُهَا، وَ يُوبِقُ مَخْبَرُهَا. غُرُورٌ حَائِلٌ، وَ ضَوْءٌ آفِلٌ، وَ ظِلُّ زَائِلٌ، وَ سِنَادٌ، مَائِلٌ حَتَّى إِذَا أَنِسَ نَافِرُهَا، وَ اطْمَأَنَّ نَاكِرُهَا، قَمَصَتْ بِأَرْجُلِهَا، وَ قَنَصَتْ بِأَحْبُلِهَا (أجبلها) وَ أَقْصَدَتْ بِأَسْهُمِهَا، وَ أَعْلَقَتِ الْمَرْءَ أَوْهَاقَ الْمَنِيَّةِ قَائِدَةً لَهُ إِلَى ضَنْكِ الْمَضْجَعِ، وَ وَحْشَةِ الْمَرْجِعِ وَ مُعَايَنَةِ الْمَحَلِّ وَ ثَوَابِ الْعَمَلِ. وَ كَذَلِكَ الْخَلَفُ يِعَقْبِ السَّلَفِ، لاَ تُقْلِعُ الْمَنِيَّةُ اخْتِرَاماً وَ لاَ يَرْعَوِي الْبَاقُونَ اجْتِرَاماً، يَحْتَذُونَ مِثَالاً، وَ يَمْضُونَ أَرْسَالاً، إِلَى غَايَةِ الاِنْتِهَأِ وَ صَيُّورِ الْفَنَاءِ.

وصف القیامة

حَتَّى إِذَا تَصَرَّمَتِ الْأُمُورُ وَ تَقَضَّتِ الدُّهُورُ وَ أَزِفَ النُّشُورُ أَخْرَجَهُمْ مِنْ ضَرَائِحِ الْقُبُورِ وَ أَوْكَارِ الطُّيُورِ وَ أَوْجِرَةِ السِّبَاعِ وَ مَطَارِحِ الْمَهَالِكِ سِرَاعا إِلَى أَمْرِهِ مُهْطِعِينَ إِلَى مَعَادِهِ رَعِيلاً صُمُوتا قِيَاما صُفُوفا يَنْفُذُهُمُ الْبَصَرُ وَ يُسْمِعُهُمُ الدَّاعِي عَلَيْهِمْ لَبُوسُ الاِسْتِكَانَةِ وَ ضَرَعُ الاِسْتِسْلاَمِ وَ الذِّلَّةِ قَدْ ضَلَّتِ الْحِيَلُ وَ انْقَطَعَ الْأَمَلُ وَ هَوَتِ الْأَفْئِدَةُ كَاظِمَةً وَ خَشَعَتِ الْأَصْوَاتُ مُهَيْنِمَةً وَ أَلْجَمَ الْعَرَقُ وَ عَظُمَ الشَّفَقُ وَ أُرْعِدَتِ الْأَسْمَاعُ لِزَبْرَةِ الدَّاعِي إِلَى فَصْلِ الْخِطَابِ وَ مُقَايَضَةِ الْجَزَأِ وَ نَكَالِ الْعِقَابِ وَ نَوَالِ الثَّوَابِ.

صفات عبادالله و حالاتهم

عِبَادٌ مَخْلُوقُونَ اقْتِدَاراً، وَ مَرْبُوبُونَ اقْتِسَاراً، وَ مَقْبُوضُونَ احْتِضَاراً، وَ مُضَمَّنُونَ أَجْدَاثاً، وَ كَائِنُونَ رُفَاتاً، وَ مَبْعُوثُونَ أَفْرَاداً، وَ مَدِينُونَ جَزَأً، وَ مُمَيَّزُونَ حِسَاباً. قَدْ أُمْهِلُوا فِي طَلَبِ الْمَخْرَجِ وَ هُدُوا سَبِيلَ الْمَنْهَجِ؛ وَ عُمِّرُوا مَهَلَ الْمُسْتَعْتِبِ وَ كُشِفَتْ عَنْهُمْ سُدَفُ الرِّيَبِ، وَ خُلُّوا لِمِضْمَارِ الْجِيَادِ وَ رَوِيَّةِ الاِرْتِيَادِ وَ أَنَاةِ الْمُقْتَبِسِ (المقتبین) الْمُرْتَادِ (المقتبین)، فِي مُدَّةِ الْأَجَلِ وَ مُضْطَرَبِ الْمَهَلِ.

أمثال حکمیّة

فَيَالَهَا أَمْثَالاً صَائِبَةً وَ مَوَاعِظَ شَافِيَةً لَوْ صَادَفَتْ قُلُوبا زَاكِيَةً وَ أَسْمَاعا وَاعِيَةً وَ آرَأً عَازِمَةً وَ أَلْبَابا حَازِمَةً فَاتَّقُوا اللَّهَ تَقِيَّةَ مَنْ سَمِعَ فَخَشَعَ وَ اقْتَرَفَ فَاعْتَرَفَ وَ وَجِلَ فَعَمِلَ وَ حَاذَرَ فَبَادَرَ وَ أَيْقَنَ فَأَحْسَنَ وَ عُبِّرَ فَاعْتَبَرَ وَ حُذِّرَ فَحَذِرَ وَ زُجِرَ فَازْدَجَرَ وَ أَجَابَ فَأَنَابَ وَ رَاجَعَ فَتَابَ، وَ اقْتَدَى فَاحْتَذَى وَ أُرِيَ فَرَأَى فَأَسْرَعَ طَالِبا وَ نَجَا هَارِبا فَأَفَادَ ذَخِيرَةً وَ أَطَابَ سَرِيرَةً وَ عَمَرَ مَعَادا وَ اسْتَظْهَرَ زَادا لِيَوْمِ رَحِيلِهِ وَ وَجْهِ سَبِيلِهِ وَ حَالِ حَاجَتِهِ وَ مَوْطِنِ فَاقَتِهِ وَ قَدَّمَ أَمَامَهُ لِدَارِ مُقَامِهِ، فَاتَّقُوا اللَّهَ عِبَادَ اللَّهِ جِهَةَ مَا خَلَقَكُمْ لَهُ وَ احْذَرُوا مِنْهُ كُنْهَ مَا حَذَّرَكُمْ مِنْ نَفْسِهِ وَ اسْتَحِقُّوا مِنْهُ مَا أَعَدَّ لَكُمْ بِالتَّنَجُّزِ لِصِدْقِ مِيعَادِهِ وَ الْحَذَرِ مِنْ هَوْلِ مَعَادِهِ.

طرق الإتعاظ

مِنْهَا: جَعَلَ لَكُمْ أَسْمَاعاً لِتَعِيَ مَا عَنَاهَا، وَ أَبْصَاراً لِتَجْلُوَ عَنْ عَشَاهَا، وَ أَشْلاَءً جَامِعَةً لِأَعْضَائِهَا، مُلاَئِمَةً لِأَحْنَائِهَا فِي تَرْكِيبِ صُوَرِهَا، وَ مُدَدِ عُمُرِهَا، بِأَبْدَانٍ قَائِمَةٍ بِأَرْفَاقِهَا، وَ قُلُوبٍ رَائِدَةٍ لِأَرْزَاقِهَا فِي مُجَلِّلاَتِ نِعَمِهِ وَ مُوجِبَاتِ مِنَنِهِ وَ حَوَاجِزِ عَافِيَتِهِ وَ قَدَّرَ لَكُمْ أَعْمَارا سَتَرَهَا عَنْكُمْ، وَ خَلَّفَ لَكُمْ عِبَراً مِنْ آثَارِ الْمَاضِينَ قَبْلَكُمْ، مِنْ مُسْتَمْتَعِ خَلاَقِهِمْ وَ مُسْتَفْسَحِ خَنَاقِهِمْ. أَرْهَقَتْهُمُ الْمَنَايَا دُونَ الْآمَالِ، وَ شَذَّبَهُمْ عَنْهَا تَخَرُّمُ الْآجَالِ لَمْ يَمْهَدُوا فِي سَلاَمَةِ الْأَبْدَانِ

وَ لَمْ يَعْتَبِرُوا فِي أُنُفِ الْأَوَانِ فَهَلْ يَنْتَظِرُ أَهْلُ بَضَاضَةِ الشَّبَابِ إِلا حَوَانِيَ الْهَرَمِ؟ وَ أَهْلُ غَضَارَةِ الصِّحَّةِ إِلا نَوَازِلَ السَّقَمِ؟ وَ أَهْلُ مُدَّةِ الْبَقَأِ إِلا آوِنَةَ (اوبة) الْفَنَأِ؟ مَعَ قُرْبِ الزِّيَالِ (الزّوال)، وَ أُزُوفِ الاِنْتِقَالِ، وَ عَلَزِ الْقَلَقِ وَ أَلَمِ الْمَضَضِ، وَ غُصَصِ الْجَرَضِ وَ تَلَفُّتِ الاِسْتِغَاثَةِ بِنُصْرَةِ الْحَفَدَةِ وَ الْأَقْرِبَأِ. وَ الْأَعِزَّةِ وَ الْقُرَنَأِ! فَهَلْ دَفَعَتِ الْأَقَارِبُ؟! أَوْ نَفَعَتِ النَّوَاحِبُ؟!

الاعتبار بالموت

وَ قَدْ غُودِرَ فِي مَحَلَّةِ الْأَمْوَاتِ رَهِيناً، وَ فِي ضِيقِ الْمَضْجَعِ وَحِيداً، قَدْ هَتَكَتِ الْهَوَامُّ جِلْدَتَهُ، وَ أَبْلَتِ النَّوَاهِكُ جِدَّتَهُ، وَ عَفَتِ الْعَوَاصِفُ آثَارَهُ، وَ مَحَا الْحَدَثَانُ مَعَالِمَهُ، وَ صَارَتِ الْأَجْسَادُ شَحِبَةً بَعْدَ بَضَّتِهَا، وَ الْعِظَامُ نَخِرَةً بَعْدَ قُوَّتِهَا، وَ الْأَرْوَاحُ مُرْتَهَنَةً بِثِقَلِ أَعْبَائِهَا، مُوقِنَةً بِغَيْبِ أَنْبَائِهَا، لاَ تُسْتَزَادُ مِنْ صَالِحِ عَمَلِهَا وَ لاَ تُسْتَعْتَبُ مِنْ سَيِّئِ زَلَلِهَا! أَوَلَسْتُمْ أَبْنَأَ الْقَوْمِ وَ الْآبَأَ وَ إِخْوَانَهُمْ وَ الْأَقْرِبَأَ تَحْتَذُونَ أَمْثِلَتَهُمْ، وَ تَرْكَبُونَ قِدَّتَهُمْ، وَ تَطَئُونَ جَادَّتَهُمْ فَالْقُلُوبُ قَاسِيَةٌ عَنْ حَظِّهَا، لاَهِيَةٌ عَنْ رُشْدِهَا، سَالِكَةٌ فِي غَيْرِ مِضْمَارِهَا! كَأَنَّ الْمَعْنِيَّ سِوَاهَا، وَ كَأَنَّ الرُّشْدَ فِي إِحْرَازِ دُنْيَاهَا. وَ اعْلَمُوا أَنَّ مَجَازَكُمْ عَلَى الصِّرَاطِ (السّراط) وَ مَزَالِقِ دَحْضِهِ وَ أَهَاوِيلِ زَلَلِهِ، وَ تَارَاتِ أَهْوَالِهِ.

نموذج من التقوی

فَاتَّقُوا اللَّهَ عِبَادَ اللَّهِ تَقِيَّةَ ذِي لُبِّ شَغَلَ التَّفَكُّرُ قَلْبَهُ، وَ أَنْصَبَ الْخَوْفُ بَدَنَهُ، وَ أَسْهَرَ التَّهَجُّدُ غِرَارَ نَوْمِهِ، وَ أَظْمَأَ الرَّجَأُ هَوَاجِرَ يَوْمِهِ وَ ظَلَفَ الزُّهْدُ شَهَوَاتِهِ وَ أَوْجَفَ الذِّكْرُ بِلِسَانِهِ وَ قَدَّمَ الْخَوْفَ لِأَمَانِهِ وَ تَنَكَّبَ الْمَخَالِجَ عَنْ وَضَحِ السَّبِيلِ وَ سَلَكَ أَقْصَدَ الْمَسَالِكِ إِلَى النَّهْجِ الْمَطْلُوبِ وَ لَمْ تَفْتِلْهُ فَاتِلاَتُ الْغُرُورِ، وَ لَمْ تَعْمَ عَلَيْهِ مُشْتَبِهَاتُ الْأُمُورِ. ظَافِرا بِفَرْحَةِ الْبُشْرَى وَ رَاحَةِ النُّعْمَى فِي أَنْعَمِ نَوْمِهِ وَ آمَنِ يَوْمِهِ وَ قَدْ عَبَرَ مَعْبَرَ الْعَاجِلَةِ حَمِيدا وَ قَدَّمَ زَادَ الْآجِلَةِ سَعِيداً وَ بَادَرَ مِنْ وَجَلٍ وَ أَكْمَشَ فِي مَهَلٍ وَ رَغِبَ فِي طَلَبٍ وَ ذَهَبَ عَنْ هَرَبٍ وَ رَاقَبَ فِي يَوْمِهِ غَدَهُ، وَ نَظَرَ قُدُماً أَمَامَهُ. فَكَفَى بِالْجَنَّةِ ثَوَاباً وَ نَوَالاً، وَ كَفَى بِالنَّارِ عِقَاباً وَ وَبَالاً! وَ كَفَى بِاللَّهِ مُنْتَقِماً وَ نَصِيراً! وَ كَفَى بِالْكِتَابِ حَجِيجاً وَ خَصِيماً!

التحذیر من وساوس الشیطان

أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ الَّذِي أَعْذَرَ بِمَا أَنْذَرَ، وَ احْتَجَّ بِمَا نَهَجَ، وَ حَذَّرَكُمْ عَدُوّا نَفَذَ فِي الصُّدُورِ خَفِيّاً، وَ نَفَثَ فِي الْآذَانِ نَجِيّاً، فَأَضَلَّ وَ أَرْدَى، وَ وَعَدَ فَمَنَّى وَ زَيَّنَ سَيِّئَاتِ (النیّات) الْجَرَائِمِ، وَ هَوَّنَ مُوبِقَاتِ الْعَظَائِمِ، حَتَّى إِذَا اسْتَدْرَجَ قَرِينَتَهُ، وَ اسْتَغْلَقَ رَهِينَتَهُ، أَنْكَرَ مَا زَيَّنَ، وَ اسْتَعْظَمَ مَا هَوَّنَ، وَ حَذَّرَ مَا أَمَّنَ.

عجائب خَلْقة الْإنْسَانِ

أَمْ هَذَا الَّذِي أَنْشَأَهُ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْحَامِ، وَ شُغُفِ الْأَسْتَارِ، نُطْفَةً دِهَاقاً (دفاقاً - ذهاقاً)، وَ عَلَقَةً مِحَاقاً وَ جَنِيناً وَ رَاضِعاً، وَ وَلِيداً وَ يَافِعاً، ثُمَّ مَنَحَهُ قَلْباً حَافِظاً، وَ لِسَاناً لاَفِظاً، وَ بَصَراً لاَحِظاً، لِيَفْهَمَ مُعْتَبِراً، وَ يُقَصِّرَ مُزْدَجِراً. حَتَّى إِذَا قَامَ اعْتِدَالُهُ، وَ اسْتَوَى مِثَالُهُ، نَفَرَ مُسْتَكْبِراً، وَ خَبَطَ سَادِراً، مَاتِحاً فِي غَرْبِ هَوَاهُ،كَادِحاً سَعْياً لِدُنْيَاهُ، فِي لَذَّاتِ طَرَبِهِ وَ بَدَوَاتِ أَرَبِهِ؛ ثُمَّ لاَ يَحْتَسِبُ رَزِيَّةً، وَ لاَ يَخْشَعُ تَقِيَّةً، فَمَاتَ فِي فِتْنَتِهِ غَرِيراً، وَ عَاشَ فِي هَفْوَتِهِ يَسِيراً (اسیراً) لَمْ يُفِدْ عِوَضاً (غرضاً) وَ لَمْ يَقْضِ مُفْتَرَضاً. دَهِمَتْهُ فَجَعَاتُ الْمَنِيَّةِ فِي غُبَّرِ (غبرة) جِمَاحِهِ وَ سَنَنِ مِرَاحِهِ.

الإعتبار بالموت

فَظَلَّ سَادِراً، وَ بَاتَ سَاهِراً، فِي غَمَرَاتِ الْآلاَمِ، وَ طَوَارِقِ الْأَوْجَاعِ وَ الْأَسْقَامِ، بَيْنَ أَخٍ شَقِيقٍ، وَ وَالِدٍ شَفِيقٍ، وَ دَاعِيَةٍ بِالْوَيْلِ جَزَعاً، وَ لاَدِمَةٍ لِلصَّدْرِ قَلَقاً؛ وَ الْمَرْءُ فِي سَكْرَةٍ مُلْهِثَةٍ، وَ غَمْرَةٍ كَارِثَةٍ، وَ أَنَّةٍ مُوجِعَةٍ، وَ جَذْبَةٍ مُكْرِبَةٍ، وَ سَوْقَةٍ مُتْعِبَةٍ. ثُمَّ أُدْرِجَ فِي أَكْفَانِهِ مُبْلِساً (مُبْلِساً)، وَ جُذِبَ مُنْقَاداً سَلِساً، ثُمَّ أُلْقِيَ عَلَى الْأَعْوَادِ رَجِيعَ وَصَبٍ، وَ نِضْوَ سَقَمٍ، تَحْمِلُهُ حَفَدَةُ الْوِلْدَانِ، وَ حَشَدَةُ الْإِخْوَانِ، إِلَى دَارِ غُرْبَتِهِ، وَ مُنْقَطَعِ زَوْرَتِهِ، وَ مُفْرَدِ وَحْشَتِهِ. حَتَّى إِذَا انْصَرَفَ الْمُشَيِّعُ، وَ رَجَعَ الْمُتَفَجِّعُ (مفجّ)، أُقْعِدَ فِي حُفْرَتِهِ نَجِيّا لِبَهْتَةِ السُّؤَالِ، وَ عَثْرَةِ الاِمْتِحَانِ. وَ أَعْظَمُ مَا هُنَالِكَ بَلِيَّةً نُزُولُ الْحَمِيمِ، وَ تَصْلِيَةُ الْجَحِيمِ، وَ فَوْرَاتُ السَّعِيرِ، وَ سَوْرَاتُ الزَّفِيرِ، لاَ فَتْرَةٌ مُرِيحَةٌ، وَ لاَ دَعَةٌ مُزِيحَةٌ، وَ لاَ قُوَّةٌ حَاجِزَةٌ، وَ لاَ مَوْتَةٌ نَاجِزَةٌ وَ لاَ سِنَةٌ مُسَلِّيَةٌ، بَيْنَ أَطْوَارِ الْمَوْتَاتِ، وَ عَذَابِ السَّاعَاتِ! إِنَّا بِاللَّهِ عَائِذُونَ!.

العبرة بصیر المضین

عِبَادَ اللَّهِ أَيْنَ الَّذِينَ عُمِّرُوا فَنَعِمُوا، وَ عُلِّمُوا فَفَهِمُوا، وَ أُنْظِرُوا فَلَهَوْا، وَ سُلِّمُوا فَنَسُوا! أُمْهِلُوا طَوِيلاً، وَ مُنِحُوا جَمِيلاً، وَ حُذِّرُوا أَلِيماً، وَ وُعِدُوا جَسِيماً (جمیلاً)! احْذَرُوا الذُّنُوبَ الْمُوَرِّطَةَ، وَ الْعُيُوبَ الْمُسْخِطَةَ. أُولِي الْأَبْصَارِ وَ الْأَسْمَاعِ، وَ الْعَافِيَةِ وَ الْمَتَاعِ، هَلْ مِنْ مَنَاصٍ أَوْ خَلاَصٍ؟ أَوْ مَعَاذٍ أَوْ مَلاَذٍ أَوْ فِرَارٍ أَوْ مَحَارٍ؟ أَمْ لاَ؟ «فَأَنّى تُؤْفَكُونَ» أَمْ أَيْنَ تُصْرَفُونَ! أَمْ بِمَا ذَا تَغْتَرُّونَ! وَ إِنَّمَا حَظُّ أَحَدِكُمْ مِنَ الْأَرْضِ، ذَاتِ الطُّوْلِ وَ الْعَرْضِ، قِيدُ قَدِّهِ، مُتَعَفِّراً عَلَى خَدِّهِ! الْآنَ عِبَادَ اللَّهِ وَ الْخِنَاقُ مُهْمَلٌ، وَ الرُّوحُ مُرْسَلٌ فِي فَيْنَةِ الْإِرْشَادِ، وَ رَاحَةِ الْأَجْسَادِ، وَ بَاحَةِ الاِحْتِشَادِ، وَ مَهَلِ الْبَقِيَّةِ، وَ أُنُفِ الْمَشِيَّةِ، وَ إِنْظَارِ التَّوْبَةِ، وَ انْفِسَاحِ الْحَوْبَةِ، قَبْلَ الضَّنْكِ وَ الْمَضِيقِ، وَ الرَّوْعِ وَ الزُّهُوقِ، وَ قَبْلَ قُدُومِ الْغَائِبِ الْمُنْتَظَرِ وَ إِخْذَةِ الْعَزِيزِ الْمُقْتَدِرِ.

وَ فِي الخُبر: أِنَّهُ ع لَما خُطِبَ بِهذِه الخُطْبَة اقشعْرت لَها الجُلُود، وَ بِكت العُيون وِ رَجِفْتُ الْقُلوب، و من الناس من یسمی هذه الخطبة : «الغراء»

খোৎবাতুল ঘাররা (ব্রিলিয়্যান্ট ভাষণ)

প্রতিষ্ঠিত প্রশংসা আল্লাহর ,যিনি সবকিছু থেকে সুউচ্চ - মহান এবং তাঁর নেয়ামতের মাধ্যমে সৃষ্টির অতি নিকটবর্তী । তিনিই সকল পুরস্কার ও সম্মান দাতা এবং সকল দুর্যোগ ও দুঃখ - কষ্ট মোচনকারী। তাঁর লাগাতার রহমত ও প্রাচুর্যপূর্ণ নেয়ামতের জন্য আমি তাঁর প্রশংসা করি।

আমি তাঁর প্রতি ইমান আনি যেহেতু তিনিই আদি এবং তিনিই একমাত্র সত্য। আমি তার কাছে হেদায়েত যাচনা করি ,যেহেতু তিনিই নিকটতম এবং তিনিই সৎপথ প্রদর্শক। আমি তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি ,যেহেতু তিনিই সর্বশক্তিমান এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ পরাভূতকারী। আমি তাঁর ওপর নির্ভর করি ,যেহেতু তিনিই অভাব মোচনকারী এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ পরিপোষক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল। তিনি তাঁকে পাঠিয়েছিলেন তাঁর আদেশ পৃথিবীতে জারি করার জন্য ও ওজর খতম করার জন্য এবং অনন্ত শাস্তি সম্পর্কে সতর্কাদেশ প্রদান করার জন্য।

তাকওয়ার আদেশ

হে আল্লাহর বান্দাগণ ,আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি। আল্লাহকে ভয় করার জন্য ,যিনি উপমা উপস্থাপন করেছেন এবং তোমাদের জীবনকে যিনি নির্ধারিত সময়ের গণ্ডিতে বেঁধে দিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে পোষাকের আবরণ দিয়েছেন এবং তিনি তোমাদের জন্য জীবিকা ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে তাঁর জ্ঞান দ্বারা ঘিরে রেখেছেন। তাঁর কাছে নির্ধারিত পুরস্কার রয়েছে। তিনি তোমাদেরকে বিস্তৃত রহমত ও অগণিত নেয়ামত দান করেছেন ,সুদূর প্রসারি প্রমাণাদি দ্বারা তিনি তোমাদেরকে সতর্ক করেছেন এবং তিনি সংখ্যা দ্বারা তোমাদেরকে গণনা করেছেন। এ পরীক্ষাস্থলে ও শিক্ষণ ঘরে তিনি তোমাদের বয়স নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

দুনিয়া সম্পর্কে সতর্কাদেশ

তোমরা এ দুনিয়াতে পরীক্ষার সম্মুখীন এবং দুনিয়া সম্বন্ধে তোমাদেরকে হিসাব - নিকাশ দিতে হবে। নিশ্চয়ই ,এ দুনিয়া দূষিত ও ময়লাযুক্ত পানির স্থল এবং কর্দমযুক্ত পানীয়র উৎস। এর বহির্ভাগ হৃদয়কাড়া আকর্ষণীয় এবং অভ্যন্তরভাগ ধ্বংসাত্মক। এটা ছলনাময়ী প্রবঞ্চনা ,ক্ষণস্থায়ী প্রতিবিম্ব এবং বাঁকা স্তম্ভ। দুনিয়ার অবজ্ঞাকারী যখন একে পছন্দ করতে শুরু করে এবং যে এর সাথে পরিচিত নয় সে যখন এতে সন্তোষ অনুভব করে তখন দুনিয়া তাকে ফাঁদে আবদ্ধ করে ,তাকে এর তীরের লক্ষ্যস্থল করে নেয় এবং তার ঘাড়ে মৃত্যু - দড়ি বেঁধে তাকে সংকীর্ণ কবর ও ভীতিকর বাসস্থানে নিয়ে যায় এবং এভাবে তার কাজের বিনিময় প্রদান করে। এ অবস্থা বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে। না মৃত্যু থেমে থাকে তাদের বিচ্ছিন্ন করা থেকে ,না জীবিতরা বিরত থাকে পাপে লিপ্ত হওয়া থেকে।

মৃত্যু ও কেয়ামত

তারা একে অপরের সমকক্ষ হতে চেষ্টা করছে এবং দল বেঁধে চূড়ান্ত লক্ষ্য ও মৃত্যুর মিলনস্থলের দিকে এগিয়ে চলছে যে পর্যন্ত না সকল বিষয়ের পরিসমাপ্তি ঘটে ,দুনিয়া মরে যায় এবং কেয়ামত নিকটবর্তী হয়। আল্লাহ তাদেরকে কবরের কোণ থেকে ,পাখীর বাসা থেকে ,পশুর গর্ত থেকে এবং মৃত্যুর স্থল থেকে বের করে আনবেন। তারা তাঁর আদেশের দিকে দ্রুত এগিয়ে যায় এবং দলের পর দল নিশ্চুপ হয়ে সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় তাদের জন্য নির্ধারিত চূড়ান্ত গন্তব্য স্থানের দিকে দৌড়ে যায়। তারা আল্লাহর দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকবে এবং যারা তাদেরকে ডাকবে তাদের সকলের ডাক শুনবে। তারা অসহায়ত্বের পোশাক পরবে এবং অমর্যাদা ও হীনাবস্থা তাদের ঢেকে রাখবে। এ সময় সকল তদবির শেষ হয়ে যাবে ,সকল আকাঙ্খা তিরোহিত হয়ে যাবে ,সকল চিত্ত শান্তভাবে ডুবে থাকবে ,গলার স্বর নুয়ে পড়বে ,ঘামে মুখমণ্ডল ভিজে যাবে ,ভীতি বৃদ্ধি পাবে এবং শেষ বিচারের জন্য ও কর্মের বিনিময়ে পুরস্কার অথবা শাস্তির জন্য ঘোষকের বীজসম স্বরে কানে তালা লেগে যাবে।

জীবনের সীমাবদ্ধতা

আল্লাহ তার ক্ষমতার প্রমাণ হিসাবে মানুষ সৃষ্টি করেছেন ,তীব্র অনুশোচনায় তাদের মৃত্যুর ব্যবস্থা করেছেন এবং তাদেরকে কবরে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। যেখানে তারা শুকনো খাবারের ছোট্ট টুকরার মতো হয়ে যায়। এরপর তাদের একজন একজন করে জীবন ফিরিয়ে দেয়া হবে ,তাদের (কর্মের) বিনিময় দেয়া হবে এবং প্রত্যেকের আমলের হিসাব নিয়ে পৃথক পৃথক করে দেয়া হবে। তাদেরকে মুক্তিপথ অনুসন্ধানের সময় দেয়া হয়েছিল ,সত্য পথ দেখানো হয়েছিল এবং বেঁচে থাকার ও নেয়ামত অনুসন্ধান করার হায়াত (সময়) দেয়া হয়েছিল। তাদের জন্য সংশয়ের অন্ধকার দূরীভূত করা হয়েছিল এবং জীবৎকালে প্রশিক্ষণের জন্য মুক্তভাবে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল যাতে তারা বিচারের দিনের দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে ,যাতে সুচিন্তিতভাবে উদ্দেশ্য স্থির করে অনুসন্ধান করতে পারে ,যাতে সুফল সংগ্রহের প্রয়োজনীয় সময় পায় ও পরবর্তী বাসস্থানের জন্য রসদ সংগ্রহ করতে পারে।

তাকওয়া ব্যতীত সুখ নেই

এসব উপমা ও কার্যকর মৃদু ভর্ৎসনা কতই না উপযোগী হতো যদি তা পবিত্র হৃদয় ,খোলা কান ,দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গী ও তীক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা গৃহীত হতো। সেই ব্যক্তির মতো আল্লাহকে ভয় কর ,যে সদোপদেশ শুনলে মাথা নত করে ,পাপ করলে স্বীকার করে ,ভয় অনুভব কিরলে পরহেজগারি করে ,বুঝতে পারলে সৎ আমলের দিকে দ্রুত এগিয়ে যায় ,বিশ্বাস করলে মুত্তাকি হয় ,শিক্ষা গ্রহণ (দুনিয়া থেকে) করতে বললে শিক্ষা গ্রহণ করে ,মন্দ কাজ না করতে বললে তা থেকে দূরে সরে থাকে ,(কোন বিষয়ে) ধমক দিলে (তা থেকে) বিরত থাকে ,(আল্লাহর) ডাকে সাড়া দিয়ে (তাঁর প্রতি) বুকে পড়ে ,পুনরায় মন্দ কাজ করলে তওবা করে ,অনুসরণ করলে পুরোপুরিভাবে অনুকরণ করে এবং (ন্যায় ও সত্য পথ) দেখানো হলে তা দেখে।

এ ধরনের লোক সত্যের সন্ধানে ব্যস্ত থাকে এবং (জাগতিক মন্দ থেকে) দৌড়ে পালিয়ে রক্ষা পায়। এরা নিজের জন্য রসদ (সৎ আমল) সংগ্রহ করে ,নিজেদের বাতেনকে পবিত্র করে ,পরকালের জন্য নির্মাণ করে এবং তাদের ভ্রমণ ,অবস্থান ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে যাত্রা পথের রসদ সংগ্রহ করে। এরা (পরকালের) আবাস স্থলের জন্য পূর্বেই প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রেরণ করে। হে আল্লাহর বান্দাগণ ,তিনি কেন তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তার কারণ চিন্তা করে আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁকে ততটুকু ভয় কর যতটুক (ভয় করতে) তিনি তোমাদের বলেছেন। তাঁর প্রতিশ্রুতির সত্যতার প্রতি আস্থা রেখে ও বিচার দিবসের ভয় পোষণ করে নিজেদেরকে তার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার যোগ্য করে গড়ে তোল ।

আল্লাহর নেয়ামত সম্পর্কে

তিনি তোমাদের জন্য কান তৈরি করে দিয়েছেন যাতে তোমরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ধারণ করে রাখতে পার এবং অন্ধত্বের স্থলে দৃষ্টি দানের জন্য চক্ষু তৈরি করেছেন। তিনি ছোট ছোট অংশের সমাহার করে তোমাদের অঙ্গ - প্রত্যঙ্গসমূহ তৈরি করেছেন। এসব অঙ্গ - প্রত্যঙ্গের বক্রতা ও নির্মাণশৈলীর আকর বয়সের সাথে সুসমন্বিত। দেহ এদেরকে ধারণ করে রেখেছে ও হৃদপিণ্ড এদের খাদ্য যোগান দিতে সর্বদা ব্যস্ত থাকে। অন্যান্য বড় বড় নেয়ামত ছাড়াও তিনি তোমাদের দেহে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা তৈরি করেছেন। তিনি তোমাদের বয়স নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি তোমাদের শিক্ষার জন্য অতীত জনগণের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ করেছেন। সেসব লোক তাদের হিস্যা পূর্ণ উপভোগ করেছিল এবং তারা সম্পূর্ণ বাধা - বিঘ্নহীন ছিল। মৃত্যু তাদেরকে পরাভূত করেছিল এবং তাদের কামনা - বাসনা পূর্ণ হওয়ার আগেই মৃত্যুর হস্ত তাদেরকে আলাদা করে দিয়েছিল। শরীর সুস্থ থাকা কালে তারা নিজেদের রসদ সংগ্রহ করেনি এবং যৌবনে দ্বিধাগ্রস্থ অবস্থায় তারা শিক্ষা গ্রহণ করেনি।

এসব লোক কি তাদের যৌবনে পিঠ - নুজ্ব বৃদ্ধ বয়সের জন্য অপেক্ষা করেছে ? তারা কি সুস্বাস্থ্যের সময় রোগ - ক্লিষ্ট অবস্থার জন্য অপেক্ষা করেছে ? তারা কি জীবৎকালে মৃত্যু - মুহুর্তের দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখেছে ? যখন প্রস্থানের সময় নিকটবর্তী হয়ে গেল ,তীব্র শোক - দুঃখ - বেদনা - ভোগান্তি ও মুখের লালা শুকানো শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় যাত্রাকাল হাতের কাছে এলো ,বন্ধু - বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের সাহায্য চাওয়ার সময় হলো এবং (যন্ত্রণায়) বিছানায় এপোশ ওপাশ করতে লাগলো ,তখন কি নিকটজন মৃত্যুকে প্রতিহত করতে পেরেছিল ? তখন কি শোক প্রকাশকারিনী মহিলারা তাদের কোন কল্যাণ করতে পেরেছিল ? বরং তারা তাদেরকে সংকীর্ণ কবরে আটকে রেখে কবরস্থানের একাকীত্বে পরিত্যাগ করেছে।

সেখানে বিষাক্ত প্রাণী তাদের চামড়া ছিন্ন - ভিন্ন করে ফেলেছে এবং দুঃখ - দুর্দশায় তাদের সজীবতা বিনষ্ট হয়ে গেছে। ঝড় তাদের আলামত (হদিস) বিলুপ্ত করে দিয়েছে এবং দুর্যোগ তাদের চিহ্ন মুছে ফেলেছে। তাদের সতেজ শরীর ও হাড় পচে গলে গেছে। রূহ (আত্মা) সমূহ পাপের বোঝা বয়ে চলেছে এবং গায়েব সম্পর্কে তাদের একীণ হয়েছে। কিন্তু এখন আর কোন নেক আমল যোগ করা অথবা তওবা দ্বারা কোন বাদ আমল ক্ষালন করার সুযোগ নেই। তোমরা কি এসব মৃত লোকদের পিতা ,পুত্র ,ভ্রাতা ও আত্মীয় - স্বজন নও ? তোমরা কি তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে না ? তোমরা কি তাদের পথে যাবে না ? কিন্তু তোমাদের হৃদয়ে এখনো সাড়া জাগে নি। এখনো তোমরা হেদায়েত থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। এবং ভুল পথে চলছো। তোমরা এমনভাবে চলছো মনে হয় যেন এসব কথা তোমাদের বলা হচ্ছে না - অন্য কাউকে বলা হচ্ছে এবং তোমরা যেন মনে কর সঠিক পথ হচ্ছে দুনিয়ার সম্পদ স্তুপীকৃত করা।

বিচার দিনের প্রস্তুতি সম্পর্কে

এবং জেনে রাখো ,তোমাদেরকে সিরাতের পথ অতিক্রম করতে হবে যেখানে পদক্ষেপ হবে কম্পমান ,পা ফসকে পড়বে এবং প্রত্যেক পদক্ষেপে বিপদের আশঙ্কা থাকবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ ,সেসব জ্ঞানী লোকের মত আল্লাহকে ভয় কর যারা পরকালের চিন্তায় অন্য সব বিষয় পরিত্যাগ করেছে ,আশা যাদেরকে দিবাভাগে পিপাসু রাখে ,বর্জন যাদের আকাঙ্খাকে কুঁকড়ে দিয়েছে এবং আল্লাহর জেকের যাদের জিহবাকে সদা সঞ্চরমান করেছে। বিপদের আভাস দেখা দেয়ার আগেই তারা ভয়ে ভীত থাকে। তারা বন্ধুর পথ এড়িয়ে সুস্পষ্ট পথে চলে। উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তারা সংক্ষিপ্ত পথ অনুসরণ করে ,ধোকা তাদের চিন্তাকে বিকৃত করে না এবং (কোন বিষয়ের) অস্পষ্টতা তাদের চোখকে অন্ধ করে না।

তারা প্রশংসনীয়ভাবে এ পৃথিবীর পথ অতিক্রম করে যায়। তারা নেক আমল নিয়ে পরকালে পৌছায়। তারা (পাপের) ভয়ে (পূণ্যের দিকে) দ্রুত চলে। (জীবনের) স্বল্প সময়ে তারা দ্রুত অগ্রসর হয়। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মনিয়োগ করে এবং পাপ থেকে দৌড়ে পালায়। আজই তারা আগামীকালের জন্য মনোযোগী হয় এবং তাদের চিন্তা - চেতনায় ভবিষ্যৎ প্রতিভাত হয়। নিশ্চয়ই ,বেহেশত প্রকৃষ্ট পুরস্কার এবং দোযখ শাস্তি ও ভোগান্তির স্থল। আল্লাহ্ প্রকৃষ্ট প্রতিশোধ গ্রহণকারী ও সাহায্যকারী এবং কুরআন প্রকৃষ্ট যুক্তি ও (বাতিলের সাথে) সংঘর্ষকারী।

শয়তান সম্পর্কে সতর্কোপদেশ

আমি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি। আল্লাহকে ভয় করতে যিনি তাঁর সতর্কবাণী দ্বারা সকল ওজর দূরীভূত করেছেন এবং তাঁর প্রদর্শিত (সত্য) পথের সকল প্রমাণাদি (হেদায়েতের) পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে সেই শক্র সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন ,যে গোপনভাবে হৃদয়ে প্রবেশ করে গোপনে কানের ভেতর কথা বলে এবং বিভ্রান্ত করে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। এ শক্র তোমাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয় ,ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী করে রাখে ,খারাপ ও অন্যায় কাজকে আকর্ষণীয় করে দেখায় এবং জঘন্য পাপকেও সহজ করে দেখায়। যখন তার প্রতারণা ও অঙ্গীকার শেষ হয় তখন সে তার অনুচরদের যা ভাল বলেছিল ,যা সহজ বলেছিল ও যা নিরাপদ বলেছিল তাতে দোষ খুঁজে বের করে ভয় দেখাতে শুরু করে ।

মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে

চিন্তা করো মানুষের কথা ,যাদের আল্লাহ বেগে স্খলিত বীর্য থেকে অন্ধকার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন। এরপর আকার বিহীন জমাট বাধা রক্ত ,এরপর ভ্রণ ,এরপর দুগ্ধপোষ্য শিশু ,এরপর কিশোর এবং এরপর পূর্ণবয়স্ক যুবকে পরিণত করেছেন। তিনি তাকে স্মৃতিশক্তিসহ হৃদয় ,কথা বলার জন্য জিহ্বা এবং দেখার জন্য চোখ দান করেছেন যাতে সে (চার পাশের যা কিছু আছে তা থেকে) শিক্ষা গ্রহণ করে ও বুঝতে পারে এবং (আল্লাহর) আদেশ পালন করে ও পাপ থেকে বিরত থাকে।

যখন সে স্বাভাবিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং তার গঠন উন্নতি লাভ করে তখন সে আত্ম - গর্বে পতিত হয় ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে। সে অসংখ্য আকাঙ্খায় জড়িয়ে পড়ে ,দুনিয়ার আনন্দের জন্য তার কামনা - বাসনা পূরণে ডুবে যায় এবং তার (হীন প্রবৃত্তিসম্পন্ন) লক্ষ্য অর্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন সে কোন পাপকে ভয় করে না এবং কোন আশঙ্কাতেই ভীত হয় না। সে পাপে আচ্ছন্ন হয়ে মৃত্যুবরণ করে। তার ক্ষণকালীন জীবন সে গোমরাহিতে অতিবাহিত করে। সে কোন পুরস্কার অর্জন করে না এবং কোন দায়িত্বও পরিপূর্ণ করে না। ভোগ - বিলাসের মধ্যেই জীবনঘাতী পীড়া তাকে হতবুদ্ধি ও পরাভূত করে। সে শোকে ,দুঃখে ,ব্যথা ও বেদনায় বিনিদ্র রজনী যাপন করে। সহোদর ভাই ,স্নেহশীল পিতা ,বিলাপরত মায়ের এবং ক্রন্দনরত বোনের উপস্থিতিতে সে পাগল - করা অস্বস্তি ,সংজ্ঞাহীনতা ,চিৎকার ,শ্বাসরুদ্ধকর ব্যথা ও মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরায় ।

তারপর তাকে কাফন পরিয়ে দেয়া হয় এবং সে সম্পূর্ণ শান্ত ও অন্যের অনুগত হয়ে যায়। তারপর তাকে কাঠের তক্তায় করে এমন অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় যেন সে দারুণভাবে দুর্দশাগ্রস্থ ও পীড়া কবলিত। যুবকেরা ও সাহায্যকারী ভ্রাতাগণ তাকে তার একাকীত্বের ঘরে নিয়ে যায় যেখানে সকল দর্শনার্থীর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর যারা সঙ্গে গিয়েছিলো ও যারা বিলাপ করেছিলো তারা চলে এলে ভয়ঙ্কর প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও বিপজ্জনক পরীক্ষার জন্য তাকে কবরে বসানো হয়। সে স্থানের বড় দুর্যোগ হচ্ছে গরম পানি ও দোযখে প্রবেশ – অনন্ত আগুনের শিখা ও অগ্নিচ্ছটার প্রচণ্ডতা। এ অবস্থার কোন বিরাম নেই ,আরামের জন্য কোন বিরতি নেই ,হস্তক্ষেপ করার কোন ক্ষমতা নেই ,প্রবোধ দেয়ার জন্য মৃত্যু নেই এবং ব্যথা ভুলিয়ে দেয়ার জন্য নিদ্রা নেই। সে বরং প্রতি পলে অনুপলে মৃত্যুর মুহুর্ত কাটায়। আমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি।

মৃতদের কাছ থেকে গ্রহণীয় শিক্ষা

হে আল্লাহর বান্দাগণ! তারা আজ কোথায় যারা দীর্ঘ বয়স পর্যন্ত বেঁচে থেকে আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করেছিলো। তাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছিলো এবং তারা শিখেছিলো ,তাদের সময় দেয়া হয়েছিলো এবং তারা বৃথা সময় নষ্ট করেছিলো ,তাদেরকে সুস্থ রাখা হয়েছিলো এবং তারা কর্তব্য ভুলে গিয়েছিলো ;তারা দীর্ঘ জীবন পেয়েছিলো ,জীবনযাপনের সুব্যবস্থা পেয়েছিলো ,দুঃখময় শাস্তির বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিলো এবং বিপুল পুরস্কারের ওয়াদা করা হয়েছিলো। সুতরাং পাপ পরিত্যাগ কর ,যা তোমাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় এবং অসৎ আমল পরিত্যাগ কর ,যা আল্লাহর রোষে তোমাদের নিপতিত করে ।

হে লোকসকল ,তোমাদের যাদের চোখ আছে ,কান আছে ,স্বাস্থ্য আছে ও সম্পদ আছে - তারা বলতো কোথাও কি কোন আত্মরক্ষার স্থল ,কোন নিরাপদ আশ্রয় ,আত্মগোপন করার স্থান বা পালিয়ে যাবার স্থান আছে ? না ,নাই। যদি না থাকে তবে কিরূপে তোমরা মুখ ফেরাও ” (কুরআন - ৬ : ৯৫ ,১০ : ৩৪ ,৩৫ : ৩ ,৪০ : ৬২) এবং কোথায় তোমরা সরে যাচ্ছে ? কী জিনিসের দ্বারা তোমরা প্রতারিত হয়েছো ? নিশ্চয়ই ,এ বিশাল পৃথিবীতে তোমাদের অংশ হলো শরীরের মাপে এক টুকরা জমি যেখানে তোমরা চির শায়িত থাকবে। কাজেই বর্তমানটা তোমাদের আমলের এক সুবর্ণ সুযোগ ।

হে আল্লাহর বান্দাগণ ,যেহেতু তোমাদের ঘাড় ফাঁস মুক্ত ,রূহ প্রতিবন্ধকহীন এবং যেহেতু এখনো হেদায়েতের পথ অন্বেষণ করার সময় আছে ,তোমাদের শরীর সুস্থ আছে ,তোমরা দলবদ্ধভাবে জড়ো হতে পার ,তোমাদের সম্মুখে বাকি জীবন পড়ে আছে ,তোমরা ইচ্ছা করলেই সৎ আমলের সুযোগ আছে ,তওবা করার সুযোগ আছে এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থা আছে ;সেহেতু তোমরা আল্লাহর রজ্জু ধরো। সংকীর্ণ অবস্থায় পতিত হবার আগে ,দুঃখ - দূর্দশা অথবা ভয় ও দুর্বলতায় স্পর্শ করার আগে ,অপেক্ষমান মৃত্যু হাজির হবার আগে এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ কর্তৃক অবরুদ্ধ হবার আগে তোমরা সৎ আমল করো ।

খোৎবা - ৮৩

فِي ذِكر عمرو بْن العاص

عَجَبا لاِبْنِ النَّابِغَةِ ! يَزْعُمُ لِأَهْلِ الشَّامِ أَنَّ فِيَّ دُعَابَةً، وَ أَنِّي امْرُوٌ تِلْعَابَةٌ أُعَافِسُ وَ أُمَارِسُ ! لَقَدْ قَالَ بَاطِلاً وَ نَطَقَ آثِماً أَمَا - وَ شَرُّ الْقَوْلِ الْكَذِبُ - إِنَّهُ لَيَقُولُ فَيَكْذِبُ، وَ يَعِدُ فَيُخْلِفُ، وَ يُسْأَلُ فَيَبْخَلُ، وَ يَسْأَلُ فَيُلْحِفُ، وَ يَخُونُ الْعَهْدَ، وَ يَقْطَعُ الْإِلَّ؛ فَإِذَا كَانَ عِنْدَ الْحَرْبِ فَأَيُّ زَاجِرٍ وَ آمِرٍ هُوَ ! مَا لَمْ تَأْخُذِ السُّيُوفُ مَآخِذَهَا، فَإِذَا كَانَ ذَلِكَ كَانَ أَكْبَرُ مَكِيدَتِهِ أَنْ يَمْنَحَ الْقَوْمَ ( القوم ) سَبَّتَهُ أَمَا وَ اللَّهِ إِنِّي لَيَمْنَعُنِي مِنَ اللَّعِبِ ذِكْرُ الْمَوْتِ، وَ إِنَّهُ لَيَمْنَعُهُ مِنْ قَوْلِ الْحَقِّ نِسْيَانُ الْآخِرَةِ، إِنَّهُ لَمْ يُبَايِعْ مُعَاوِيَةَ حَتَّى شَرَطَ أَنْ يُؤْتِيَهُ أَتِيَّةً، وَ يَرْضَخَ لَهُ عَلَى تَرْكِ الدِّينِ رَضِيخَةً

আমর ইবনে আ স সম্পর্কে

নাবিঘার পুত্রের কথা শুনে আমার বিস্ময় লাগলো। সে শ্যামবাসীদের কাছে আমার সম্পর্কে বলে বেড়াচ্ছে যে ,আমি একজন ভাড় এবং আমি কৌতুক আর ঠাট্টা বিদ্রুপে নিয়োজিত। সে ভুল বলছে এবং পাপ - কথা বলছে। সাবধান ,সেটাই নিকৃষ্টতম কথা যা অসত্য । সে কথা বললে মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। সে যখন যাচনা করে তখন তাতে লেগেই থাকে ,কিন্তু তার কাছে কেউ কিছু চাইলে সে কৃপণের মত হাত গুটায়। সে বিশ্বাসঘাতকতা করে ওয়াদা ভঙ্গ করে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে। যুদ্ধে সে হ্যাঁক - ডাক দিয়ে আদেশ - নির্দেশ দেয়। কিন্তু তার এ হ্যাঁক - ডাক তরবারি কার্যকর হবার পূর্ব পর্যন্তই চলে। যুদ্ধ শুরু হলে সে যখন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয় তখন তার বড় চাতুরী হলো উলঙ্গ হয়ে যাওয়া। আল্লাহর কসম ,মৃত্যুর স্মরণ আমাকে ক্রীড়া - কৌতুক থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। অপরপক্ষে পরকালের বিস্মৃতি তাকে সত্য কথা বলা থেকে বিরত রেখেছে। সে বিনা স্বার্থে মুয়াবিয়ার আনুগত্য স্বীকার করেনি ,পূর্বেই মুয়াবিয়াকে রাজি করিয়েছিলো যে ,তাকে উপযুক্ত মূল্য দিতে হবে এবং ধর্ম ত্যাগের জন্য মুয়াবিয়াও তাকে পুরস্কৃত করেছিলো।

____________________

১ । আমিরুল মোমেনিন। এখানে মিশর বিজয়ী আমর ইবনে আসের সাহসের বহরের প্রতি ইঙ্গিত করে একথা বলেছেন। ঘটনাটি হলো ,সিফফিনের যুদ্ধের এক পর্যায়ে সে আমিরুল মোমেনিনের মুখোমুখি হয়েছিল। আমিরুল মোমেনিন তাকে লক্ষ্য করে তরবারি তুলতেই সে উলঙ্গ হয়ে গেল। এতে আমিরুল মোমেনিন মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং সে রক্ষা পেয়ে গেল। আরবের বিখ্যাত কবি আল - ফারাজদাক এ সম্পর্কে বলেছেনঃ

অমর্যাদাকর চালাকি দ্বারা জীবন রক্ষায়

নেই কোন সুনাম ,

যা করেছে আমর ইবনে আ স একদিন

করে তার গুপ্তাঙ্গ প্রদর্শন।

জীবন রক্ষার এহেন চাতুরী সর্বপ্রথম ওহুদের যুদ্ধে সংঘটিত হয়েছিল। ওহুদের যুদ্ধে তালহা ইবনে আবি তালহা আমিরুল মোমেনিনের মুখোমুখি হলে তিনি আঘাত হানতে যাবেন । এসময়ে সে ভয়ে উলঙ্গ হয়ে গিয়েছিল এবং আমিরুল মোমেনিন তাকে আঘাত না করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। আমারের পর বুশর ইবনে আবি আরতাত আমিরুল মোমেনিনের মুখোমুখি হলে একই উপায়ে জীবন রক্ষা করেছিল।

খোৎবা - ৮৪

و فیها صفات ثمانٍ من صفات الجلال

وَ أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ: الْأَوَّلُ لاَ شَيْءَ قَبْلَهُ، وَ الْآخِرُ لاَ غَايَةَ لَهُ لاَ تَقَعُ الْأَوْهَامُ لَهُ، عَلَى صِفَةٍ، وَ لاَ تُعْقَدُ الْقُلُوبُ مِنْهُ عَلَى كَيْفِيَّةٍ، وَ لاَ تَنَالُهُ التَّجْزِئَةُ وَ التَّبْعِيضُ، وَ لاَ تُحِيطُ بِهِ الْأَبْصَارُ وَ الْقُلُوبُ.

الدعوة إلی قبول الموعظة

منها: فَاتَّعِظُوا عِبَادَ اللَّهِ بِالْعِبَرِ النَّوَافِعِ وَ اعْتَبِرُوا بِالْآيِ السَّوَاطِعِ، وَ ازْدَجِرُوا بِالنُّذُرِ الْبَوَالِغِ وَ انْتَفِعُوا بِالذِّكْرِ وَ الْمَوَاعِظِ، فَكَأَنْ قَدْ عَلِقَتْكُمْ مَخَالِبُ الْمَنِيَّةِ وَ انْقَطَعَتْ مِنْكُمْ عَلاَئِقُ الْأُمْنِيَّةِ وَ دَهِمَتْكُمْ مُفْظِعَاتُ الْأُمُورِ، وَ السِّيَاقَةُ إِلَى الْوِرْدُ الْمَوْرُودُ، فَ( كُلُّ نَفْسٍ مَعَها سائِقٌ وَ شَهِيدٌ ) : سَائِقٌ يَسُوقُهَا إِلَى مَحْشَرِهَا؛ وَ شَاهِدٌ يَشْهَدُ عَلَيْهَا بِعَمَلِهَا.

صِفَةِ الْجَنَّةِ

دَرَجَاتٌ مُتَفَاضِلاَتٌ، وَ مَنَازِلُ مُتَفَاوِتَاتٌ، لاَ يَنْقَطِعُ نَعِيمُهَا، وَ لاَ يَظْعَنُ مُقِيمُهَا، وَ لاَ يَهْرَمُ خَالِدُهَا، وَ لاَ يَبْأَسُ (بیأس) سَاكِنُهَا.

আল্লাহর উৎকর্ষ সম্পর্কে

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে ,আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। তিনি এক এবং তার কোন অংশীদার নেই। তিনিই আদি - তাঁর পূর্বে কোন কিছু নেই। তিনিই অন্ত - তাঁর কোন পরিসীমা নেই। কল্পনা তার কোন গুণাবলীকে ধারণ করতে পারে না। তার স্বরূপ সম্বন্ধে হৃদয়ের কোন বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। কোন বিশ্লেষণ ও বিভাজন তার প্রতি প্রযোজ্য হতে পারে না। চোখ ও হৃদয় তাকে উপলব্ধি করতে পারে না।

হে আল্লাহর বান্দাগণ ,আল্লাহর নির্দেশ ও আয়াতসমূহ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। সতর্কবাণী সম্পর্কে সাবধান হও । আদেশ ও উপদেশাবলী থেকে লাভবান হও । মনে রেখো ,মৃত্যুর থাবা সতত তোমাকে চাপ দিচ্ছে এবং তোমার আশা - আকাঙ্খা থেকে তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেল বে । কী কঠিন অবস্থাই না তোমার উপর আপতিত হবে এবং তুমি সে দিকেই এগিয়ে চলেছো যেখানে প্রত্যেককে যেতে হয় - তার নাম মৃত্যু। প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে থাকবে একজন চালক ও একজন সাক্ষী (কুরআন - ৫০ : ২১ ) । চালক তাকে পুনরুজীবনের দিকে ধাবিত করবে এবং সাক্ষী তার কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে।

বেহেশতে অনেক উচ্চ শ্রেণি এবং থাকার বিবিধ স্থান আছে। এর নেয়ামত কখনো শেষ হবে না। এর সীমানা ভ্রমণ করে শেষ করা যাবে না এবং এ থেকে কেউ নিস্ক্রান্ত হবে না। যে কেউ এখানে প্রবেশ করবে। সে কখনো বৃদ্ধ হবে না এবং এখানে কেউ কোন অভাব অনুভব করবে না।

খোৎবা - ৮৫

قَدْ عَلِمَ السَّرَائِرَ وَ خَبَرَ الضَّمَائِرَ لَهُ الْإِحَاطَةُ بِكُلِّ شَيْءٍ وَ الْغَلَبَةُ لِكُلِّ شَيْءٍ وَ الْقُوَّةُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ

فَلْيَعْمَلِ الْعَامِلُ مِنْكُمْ فِي أَيَّامِ مَهَلِهِ قَبْلَ إِرْهَاقِ أَجَلِهِ، وَ فِي فَرَاغِهِ قَبْلَ أَوَانِ شُغُلِهِ، وَ فِي مُتَنَفَّسِهِ قَبْلَ أَنْ يُؤْخَذَ بِكَظَمِهِ، وَ لْيُمَهِّدْ لِنَفْسِهِ وَ قَدَمِهِ، وَ لْيَتَزَوَّدْ مِنْ دَارِ ظَعْنِهِ لِدَارِ إِقَامَتِهِ. فَاللَّهَ اللَّهَ أَيُّهَا النَّاسُ،، فِيمَا اسْتَحْفَظَكُمْ (أحفظکم) مِنْ كِتَابِهِ، وَ اسْتَوْدَعَكُمْ مِنْ حُقُوقِهِ، فَإِنَّ اللَّهَ سُبْحَانَهُ لَمْ يَخْلُقْكُمْ عَبَثاً، وَ لَمْ يَتْرُكْكُمْ سُدًى وَ لَمْ يَدَعْكُمْ فِي جَهَالَةٍ وَ لاَ عَمىً قَدْ سَمَّى آثَارَكُمْ، وَ عَلِمَ أَعْمَالَكُمْ، وَ كَتَبَ آجَالَكُمْ. وَ أَنْزَلَ عَلَيْكُمُ «الْكِتَابَ تِبْيانا لِكُلِّ شَيْءٍ». وَ عَمَّرَ فِيكُمْ نَبِيَّهُ أَزْمَاناً، حَتَّى أَكْمَلَ لَهُ وَ لَكُمْ فِيمَا أَنْزَلَ مِنْ كِتَابِهِ -دِينَهُ الَّذِي رَضِيَ لِنَفْسِهِ وَ أَنْهَى إِلَيْكُمْ عَلَى لِسَانِهِ- مَحَابَّهُ مِنَ الْأَعْمَالِ وَ مَكَارِهَهُ، وَ نَوَاهِيَهُ وَ أَوَامِرَهُ، وَ أَلْقَى إِلَيْكُمُ الْمَعْذِرَةَ، وَ اتَّخَذَ عَلَيْكُمُ الْحُجَّةَ، وَ قَدَّمَ إِلَيْكُمْ بِالْوَعِيدِ، وَ أَنْذَرَكُمْ بَيْنَ يَدَيْ عَذابٍ شَدِيدٍ. فَاسْتَدْرِكُوا بَقِيَّةَ أَيَّامِكُمْ، وَ اصْبِرُوا لَهَا أَنْفُسَكُمْ فَإِنَّهَا قَلِيلٌ فِي كَثِيرِ الْأَيَّامِ الَّتِي تَكُونُ مِنْكُمْ فِيهَا الْغَفْلَةُ، وَ التَّشَاغُلُ عَنِ الْمَوْعِظَةِ؛ وَ لاَ تُرَخِّصُوا لِأَنْفُسِكُمْ، فَتَذْهَبَ بِكُمُ الرُّخَصُ مَذَاهِبَ الظَّلَمَةِ، وَ لاَ تُدَاهِنُوا فَيَهْجُمَ بِكُمُ الْإِدْهَانُ عَلَى الْمَعْصِيَةِ

عِبَادَ اللَّهِ إِنَّ أَنْصَحَ النَّاسِ لِنَفْسِهِ أَطْوَعُهُمْ لِرَبِّهِ؛ وَ إِنَّ أَغَشَّهُمْ لِنَفْسِهِ أَعْصَاهُمْ لِرَبِّهِ؛ وَ الْمَغْبُونُ مَنْ غَبَنَ نَفْسَهُ، وَ الْمَغْبُوطُ مَنْ سَلِمَ لَهُ دِينُهُ، «وَ السَّعِيدُ مَنْ وُعِظَ بِغَيْرِهِ»، وَ الشَّقِيُّ مَنِ انْخَدَعَ لِهَوَاهُ وَ غُرُورِهِ وَ اعْلَمُوا أَنَّ «يَسِيرَ الرِّيَأِ شِرْكٌ» وَ مُجَالَسَةَ أَهْلِ الْهَوَى مَنْسَاةٌ لِلْإِيمَانِ وَ مَحْضَرَةٌ لِلشَّيْطَانِ جَانِبُوا الْكَذِبَ فَإِنَّهُ مُجَانِبٌ لِلْإِيمَانِ. الصَّادِقُ عَلَى شَفَا مَنْجَاةٍ وَ كَرَامَةٍ وَ الْكَاذِبُ عَلَى شَرَفِ مَهْوَاةٍ وَ مَهَانَةٍ وَ لاَ تَحَاسَدُوا فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْإِيمَانَ «كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ»، «وَ لاَ تَبَاغَضُوا فَإِنَّهَا الْحَالِقَةُ»؛ وَ اعْلَمُوا أَنَّ الْأَمَلَ يُسْهِي الْعَقْلَ، وَ يُنْسِي الذِّكْرَ. فَأَكْذِبُوا الْأَمَلَ فَإِنَّهُ غَرُورٌ، وَ صَاحِبُهُ مَغْرُورٌ

পরকালের জন্য প্রস্তুতি ও আল্লাহর আদেশ পালন সম্পর্কে

আল্লাহ সকল গুপ্ত বিষয় সম্বন্ধে অবহিত এবং অন্তরের অনুভূতি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল আছেন। তিনি সবকিছুকে পরিবৃত করে আছেন। সবকিছুর ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা রয়েছে।

তোমাদের প্রত্যেকের উচিত মৃত্যুর আগমনের পূর্বেই যা কিছু করণীয় তা করা ,অবসর সময় অবহেলায় নষ্ট না করা এবং শ্বাসরুদ্ধ হবার আগেই এ যাত্রা বিরতির স্থল থেকে স্থায়ী আব্বাসের জন্য রসদ সংগ্রহ করা।

আল্লাহকে স্মরণ কর ,হে জনমণ্ডলী ,তিনি তার কিতাবে যা বলেছেন তৎপ্রতি যত্নবান হও এবং তোমাদের প্রতি তাঁর যে হক রয়েছে তা সম্পন্ন কর। নিশ্চয়ই ,আল্লাহ তোমাদের অহেতুক সৃষ্টি করেননি এবং লাগামহীনভাবে ছেড়েও দেননি ;আবার অজ্ঞতা ও অন্ধকারে রেখেও দেননি। কী তোমাদের রেখে যাওয়া উচিত। তিনি তা সংজ্ঞায়িত করেছেন ,তোমাদেরকে তোমাদের আমল শিক্ষা দিয়েছেন ,তোমাদের মৃত্যুকে নির্ধারিত করেছেন এবং সবকিছুর ব্যাখ্যাসহ কিতাব" (কুরআন - ১৬ : ৮৯) নাজেল করেছেন। তিনি তাঁর রাসূলকে দীর্ঘ সময় তোমাদের মাঝে রেখেছিলেন যে পর্যন্ত না কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের জন্য তাঁর বাণী তথা তাঁর মনোনীত দ্বীন পরিপূর্ণ করেছিলেন। তিনি তাঁর রাসূলের মাধ্যমে সৎ আমল ও বদ আমল এবং তার আদেশ ও নিষেধের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি তোমাদের সম্মুখে তার প্রমাণাদি রেখেছেন এবং তোমাদের ওপর তাঁর ওজর নিঃশেষ করেছেন।

তিনি তোমাদের সম্মুখে তার সতর্কবাণী রেখেছেন এবং কঠোর শাস্তির বিষয়েও তোমাদেরকে সতর্ক করেছেন। সুতরাং তোমাদের বাকি দিনগুলোতে পূর্ণভাবে প্রয়াশ্চিত্ত কর এবং সবুর অভ্যাস কর । যতটুকু সময় তুমি আল্লাহর আদেশ - নিষেধের প্রতি অমনোযোগিতা ও বিস্মৃতির মধ্যে কাটিয়েছো ,সে তুলনায় অবশিষ্ট সময় খুবই অল্প। তোমার নিজের জন্য সময় রেখো না - রাখলে তা তোমাকে অন্যায়কারীদের পথে ঠেলে নিয়ে যাবে। কখনো অলস হয়ে না। কারণ অলসতা তোমাকে পাপাচারিতার দিকে ঠেলে নিয়ে যাবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ ,সে ব্যক্তি সর্বোত্তম আত্ম - উপদেষ্টা যে আল্লাহর অতি অনুগত এবং সে ব্যক্তি সব চাইতে বড় আত্ম - প্রবঞ্চক যে আল্লাহর অনুগত নয়। সে ব্যক্তিই সব চাইতে বেশি প্রবঞ্চিত যে নিজেকে প্রবঞ্চনা করে। সে ব্যক্তি অতীব ঈর্ষণীয় যার ইমান নিরাপদ। ভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যে অন্যদের কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করে এবং ভাগ্যাহত সে যে কামনা - বাসনার শিকার হয়। মনে রেখো ,ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মোনাফেকিও শিরকের সামিল এবং আকাঙ্খা - পূজারীর সঙ্গ ইমানের বিস্মৃতির চাবিকাঠি ও শয়তানের আসন ।

মিথ্যার বিরুদ্ধে নিজেকে সতর্ক রেখো ,কারণ মিথ্যা ইমানের বিপরীত। একজন সত্যবাদী মুক্তি ও মর্যাদার শিখরে। অপরপক্ষে একজন মিথ্যাবাদী অমর্যাদা ও হীনতার শেষ সীমায়। কখনো ঈর্ষাপরায়ণ হয়ো না। কারণ হিংসা ইমানকে খেয়ে ফেলে ;যেভাবে আগুন শুকনো কাঠকে খেয়ে ফেলে। বিদ্বেষপরায়ণ হয়ো না। কারণ বিদ্বেষ সদগুণ মোছক। জেনে রাখো ,কামনা বুদ্ধিমত্তাকে লোপ করে এবং স্মৃতিতে বিস্মরণ ঘটায়। কামনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা তোমাদের উচিত ,কারণ এটা এক প্রকার ছলনা এবং যার কামনা আছে সে ধোকায় লিপ্ত ।

খোৎবা - ৮৬

أحب عباد الله إلیه

عِبَادَ اللَّهِ، إِنَّ مِنْ أَحَبِّ عِبَادِ اللَّهِ إِلَيْهِ عَبْداً أَعَانَهُ اللَّهُ عَلَى نَفْسِهِ فَاسْتَشْعَرَ الْحُزْنَ، وَ تَجَلْبَبَ الْخَوْفَ فَزَهَر مِصْبَاحُ الْهُدَى فِي قَلْبِهِ، وَ أَعَدَّ الْقِرَى لِيَوْمِهِ النَّازِلِ بِهِ، فَقَرَّبَ عَلَى نَفْسِهِ الْبَعِيدَ، وَ هَوَّنَ الشَّدِيدَ. نَظَرَ فَأَبْصَرَ (فأقصر)، وَ ذَكَرَ فَاسْتَكْثَرَ، وَ ارْتَوَى مِنْ عَذْبٍ فُرَاتٍ سُهِّلَتْ لَهُ مَوَارِدُهُ، فَشَرِبَ نَهَلاً، وَ سَلَكَ سَبِيلاً جَدَداً. قَدْ خَلَعَ سَرَابِيلَ الشَّهَوَاتِ، وَ تَخَلَّى مِنَ الْهُمُومِ، إِلا هَمّا وَاحِدا انْفَرَدَ بِهِ، فَخَرَجَ مِنْ صِفَةِ الْعَمَى وَ مُشَارَكَةِ أَهْلِ الْهَوَى، وَ صَارَ مِنْ مَفَاتِيحِ أَبْوَابِ الْهُدَى وَ مَغَالِيقِ أَبْوَابِ الرَّدَى. قَدْ أَبْصَرَ طَرِيقَهُ وَ سَلَكَ سَبِيلَهُ، وَ عَرَفَ مَنَارَهُ، وَ قَطَعَ غِمَارَهُ.

وَ اسْتَمْسَكَ مِنَ الْعُرَى بِأَوْثَقِهَا وَ مِنَ الْحِبَالِ بِأَمْتَنِهَا، فَهُوَ مِنَ الْيَقِينِ عَلَى مِثْلِ ضَوْءِ الشَّمْسِ قَدْ نَصَبَ نَفْسَهُ لِلَّهِ سُبْحَانَهُ فِي أَرْفَعِ الْأُمُورِ، مِنْ إِصْدَارِ كُلِّ وَارِدٍ عَلَيْهِ، وَ تَصْيِيرِ كُلِّ فَرْعٍ إِلَى أَصْلِهِ. مِصْبَاحُ ظُلُمَاتٍ كَشَّافُ عَشَوَاتٍ (غشوات) مِفْتَاحُ مُبْهَمَاتٍ، دَفَّاعُ مُعْضِلاَتٍ، دَلِيلُ فَلَوَاتٍ يَقُولُ فَيُفْهِمُ، وَ يَسْكُتُ فَيَسْلَمُ. قَدْ أَخْلَصَ لِلَّهِ فَاسْتَخْلَصَهُ. فَهُوَ مِنْ مَعَادِنِ دِينِهِ وَ أَوْتَادِ أَرْضِهِ قَدْ أَلْزَمَ نَفْسَهُ الْعَدْلَ فَكَانَ أَوَّلَ عَدْلِهِ نَفْيُ الْهَوَى عَنْ نَفْسِهِ يَصِفُ الْحَقَّ وَ يَعْمَلُ بِهِ لاَ يَدَعُ لِلْخَيْرِ غَايَةً إِلا أَمَّهَا وَ لاَ مَظِنَّةً إِلا قَصَدَهَا، قَدْ أَمْكَنَ الْكِتَابَ مِنْ زِمَامِهِ فَهُوَ قَائِدُهُ وَ إِمَامُهُ، يَحُلُّ حَيْثُ حَلَّ ثَقَلُهُ، وَ يَنْزِلُ حَيْثُ كَانَ مَنْزِلُهُ.

أدعیاء إلعلم

وَ آخَرُ قَدْ تَسَمَّى عَالِماً وَ لَيْسَ بِهِ، فَاقْتَبَسَ جَهَائِلَ مِنْ جُهَّالٍ، وَ أَضَالِيلَ مِنْ ضُلَّالٍ، وَ نَصَبَ لِلنَّاسِ أَشْرَاكاً مِنْ حَبَائِلِ (حبال) غُرُورٍ، وَ قَوْلِ زُورٍ، قَدْ حَمَلَ الْكِتَابَ عَلَى آرَائِهِ (رأیة)؛ وَ عَطَفَ الْحَقَّ عَلَى أَهْوَائِهِ، يُؤْمِنُ النَّاسَ مِنَ الْعَظَائِمِ، وَ يُهَوِّنُ كَبِيرَ الْجَرَائِمِ. يَقُولُ أَقِفُ عِنْدَ الشُّبُهَاتِ، وَ فِيهَا وَقَعَ؛ وَ يَقُولُ: أَعْتَزِلُ الْبِدَعَ، وَ بَيْنَهَا اضْطَجَعَ؛ فَالصُّورَةُ صُورَةُ إِنْسَانٍ، وَ الْقَلْبُ قَلْبُ حَيَوَانٍ، لاَ يَعْرِفُ بَابَ الْهُدَى فَيَتَّبِعَهُ، وَ لاَ بَابَ الْعَمَى فَيَصُدَّ عَنْهُ. وَ ذَلِكَ مَيِّتُ الْأَحْيَأِ!

خصائص اهل البیتعليهم‌السلام

«فَأَيْنَ تَذْهَبُونَ»؟ وَ «أَنَّى تُؤْفَكُونَ»؟ وَ الْأَعْلاَمُ قَائِمَةٌ، وَ الْآيَاتُ وَاضِحَةٌ، وَ الْمَنَارُ مَنْصُوبَةٌ، فَأَيْنَ يُتَاهُ بِكُمْ وَ كَيْفَ تَعْمَهُونَ وَ بَيْنَكُمْ عِتْرَةُ نَبِيِّكُمْ! وَ هُمْ أَزِمَّةُ الْحَقِّ، وَ أَعْلاَمُ الدِّينِ، وَ أَلْسِنَةُ الصِّدْقِ! فَأَنْزِلُوهُمْ بِأَحْسَنِ مَنَازِلِ الْقُرْآنِ، وَ رِدُوهُمْ وُرُودَ الْهِيمِ الْعِطَاشِ. أَيُّهَا النَّاسُ، خُذُوها عَنْ خَاتَمِ النَّبِيِّينَصلى‌الله‌عليه‌وآله‌وسلم «إنَّهُ يَمُوتُ مَنْ مَاتَ مِنَّا وَ لَيْسَ بِمَيِّتٍ وَ يَبْلَى مَنْ بَلِىَ مِنَّا وَ لَيْسَ بِبَالٍ» فَلا تَقُولُوا بِما لا تَعْرِفُونَ فَإ نَّ أَكْثَرَ الْحَقِّ فِيمَا تُنْكِرُونَ.

وَ اعْذِرُوا مَنْ لاَ حُجَّةَ لَكُمْ عَلَيْهِ وَ أَنَا هُوَ. أَلَمْ أَعْمَلْ فِيكُمْ بِالثَّقَلِ الْأَكْبَرِ! وَ أَتْرُكْ فِيكُمُ الثَّقَلَ الْأَصْغَرَ قَدْ رَكَزْتُ فِيكُمْ رَايَةَ الْإِيمَانِ وَ وَقَفْتُكُمْ عَلَى حُدُودِ الْحَلاَلِ وَ الْحَرَامِ، وَ أَلْبَسْتُكُمُ الْعَافِيَةَ مِنْ عَدْلِى وَ فَرَشْتُكُمُ الْمَعْرُوفَ مِنْ قَوْلِى وَ فِعْلِى، وَ أَرَيْتُكُمْ كَرائِمَ الْأَخْلاَقِ مِنْ نَفْسِى فَلاَ تَسْتَعْمِلُوا الرَّأْىَ فِيما لا يُدْرِكُ قَعْرَهُ الْبَصَرُ، وَ لا يَتَغَلْغَلُ إِلَيْهِ الْفِكَرُ.

الاخبر الغیبی عن عاقبة بنی امیة

وَ مِنْها:حَتَّى يَظُنَّ الظَّانُّ أَنَّ الدُّنْيَا مَعْقُولَةٌ عَلَى بَنِى أُمَيَّةَ؛ تَمْنَحُهُمْ دَرَّها، وَ تُورِدُهُمْ صَفْوَها، وَ لا يُرْفَعُ عَنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ سَوْطُها وَ لا سَيْفُها، وَ كَذَبَ الظَّانُّ لِذَلِكَ. بَلْ هِىَ مَجَّةٌ مِنْ لَذِيذِ الْعَيْشِ يَتَطَعَّمُونَها بُرْهَةً، ثُمَّ يَلْفِظُونَها جُمْلَةً!.

মোমিনের গুণাবলী , বেইমানের বৈশিষ্ট্য , রাসূলের ইতরাহ ও বনি উমাইয়া সম্পর্কে

মোমিনের গুণাবলী

হে আল্লাহর বান্দাগণ ,সে ব্যক্তি আল্লাহর সব চাইতে প্রিয় যাকে তিনি কামনা - বাসনা প্রদমিত করার ক্ষমতা অর্পণ করেছেন যাতে তার বাতেন শোক - বিহবল ও জাহের ভীত - সন্ত্রস্ত থাকে। তার হৃদয়ে হেদায়েতের প্রদীপ সমুজ্জ্বল। সে সেদিনের আপ্যায়নোপকরণ সংগ্রহ করেছে যে দিনটি অবশ্যম্ভাবী (মৃত্যু) । যা দূরে তা সে নিকটে মনে করে এবং যা কঠিন তা সে সহজ মনে করে। সে দৃষ্টিপাত করে ও উপলব্ধি করে ;সে আল্লাহর জেকের করে ও আমলকে প্রসারিত করে। সে মিঠা পানি পান করে যার উৎসের দিকে তার পথ সহজ করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং সে পরিতৃপ্ত হওয়া পর্যন্ত পান করে এবং সমতল পথ অবলম্বন করে। সে একটা (আল্লাহর সন্তোষ) ছাড়া অন্য সকল আকাঙ্খার আচ্ছাদন খুলে ফেলে দিয়েছে এবং সকল উদ্বেগ থেকে মুক্ত হয়েছে। সে কুপথে পরিচালিত হওয়া থেকে নিরাপদ এবং যারা কামনা - বাসনার অনুসারী সে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করেছে। সে হেদায়েতের দুয়ারের চাবিতে পরিণত হয়েছে এবং ধ্বংসের দুয়ারের তলায় পরিণত হয়েছে। সে তার পথ দেখেছে এবং সেপথেই হেঁটে যাচ্ছে। সে তার হেদায়েতের আলামত ও চিহ্নকে চিনেছে এবং গভীর জলাশয় অতিক্রম করেছে। সে বিশ্বস্ততম অবলম্বন ও শক্ততম রজ্জু ধরেছে। সে দৃঢ় প্রত্যয়ের এমন স্তরে যা সূর্যের দীপ্তির মত। সে নিজেকে মহিমান্বিত আল্লাহর জন্য নিয়োজিত করেছে এবং মহত্তম কর্মের জন্য সে যে কোন পরিস্থিতির মোকাবেলা ও যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সদা প্রস্তৃত। সে অন্ধকারের প্রদীপ । সে সকল প্রকার অন্ধত্ব অপনোদনকারী ,গুপ্ত বিষয়ের চাবি ,জটিলতা অপসারণকারী এবং বিশাল মরুভূমিতে পথ প্রদর্শক। যখন সে কথা বলে তখন তা বুঝিয়ে বলে। আবার যখন সে চুপ থাকে তখন তা নিরাপদ বলেই করে। সে সবকিছু শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই করে। ফলে আল্লাহও তাকে নিজের করে নেয়। সে আল্লাহর দ্বীনের খনি ও তার জমিনের পেরেক স্বরূপ। সে ন্যায়কে নিজের জন্য ফরজ করে নিয়েছে।

তার ন্যায়ের প্রথম পদক্ষেপ হলো সে হৃদয় থেকে সকল কামনা বিদূৱীত করেছে। সে ন্যায়ের বর্ণনা যেভাবে করে ঠিক সেভাবে আমল করে। যা কিছু কল্যাণকর তা তার লক্ষ্য এড়ায় না এবং কুরআনের কোন স্থান তার দৃষ্টির আড়াল হয় না। সুতরাং কুরআন তার পরিচালক ও ইমাম। অর্থাৎ সে সর্বদা কুরআনের সাথে থাকে ,কখনো পৃথক হয় না। তার দৈনন্দিন কাজ কর্মেও সে কুরআনকে অনুসরণ করে।

বেইমানের বৈশিষ্ট্য

অপরপক্ষে ,অন্য প্রকৃতিরও মানুষ আছে যে নিজেকে জ্ঞানী মনে করে ,আসলে সে তা নয়। সে অজ্ঞদের কাছ থেকে অজ্ঞতা এবং পথভ্রষ্টদের কাছ থেকে ভ্রষ্টতা কুড়িয়ে নেয়। সে মানুষের জন্য মিথ্যা বক্তৃতা ও প্রতারণার দড়ি দিয়ে ফাঁদ পাতে। সে নিজের অভিমত অনুযায়ী কুরআনকে এবং কামনাবাসনার বশবর্তী হয়ে ন্যায়কে গ্রহণ করে। সে মহাপাপকে নিরাপদ এবং লঘু পাপকে গুরুতর অপরাধ বলে মানুষকে বুঝায়। সংশয়ে ডুবে থেকে সে বলে যে ,সে সংশয়ের ব্যাখ্যার জন্য অপেক্ষা করছে । সে বলে যে ,সে বিদআত থেকে দূরে থাকে অথচ সে বিদআতে নিমগ্ন রয়েছে। তার আকৃতি মানুষের মতো কিন্তু তার চিত্তবৃত্তি পশুর মতো। হেদায়েতের দরজা তার অচেনা। কাজেই সে সৎপথ অনুসরণ করতে পারে না। এসব লোক জীবস্মৃত।

রাসূলের (সা.) ইতরাহ সম্পর্কে

“ সুতরাং কোথায় তোমরা চলছো। ” (কুরআন - ৮১ : ২৬) এবং তোমরা কিভাবে বিপথগামী হচ্ছে। ” (কুরআন - ৬ : ৯৫ ,১০ : ৩৪ ,৩৫ : ৩ ,৪০ : ৬২) । হেদায়েতের প্রতীক - চিহ্নসমূহ দণ্ডায়মান ,সদগুণাবলীর লক্ষণসমূহ সুস্পষ্ট এবং আলোর পথের মিনার নির্ধারিত। তোমাদেরকে কোন বিপথে নেয়া হচ্ছে এবং কিভাবে তোমরা অন্ধত্বের দিকে যাচ্ছে ,যেখানে তোমাদের মাঝে রাসূলের আহলুল বাইত রয়েছে ? তারা হলেন ন্যায়ের লাগাম ,দ্বীনের প্রতীক ও সত্যের জিহবা । তোমরা কুরআনকে যতটুকু মর্যাদা দাও তাদেরকেও ততটুকু মর্যাদা দিও এবং তৃষ্ণার্তা উট যেভাবে পানির ঝরনার দিকে ছুটে যায় ,হেদায়েতের তৃষ্ণা মিটানোর জন্য তোমরাও সেভাবে তাদের দিকে যেয়ো।

হে জনমণ্ডলী ,খাতেমুন নবীর বাণী তোমরা স্মরণ করা। তিনি বলেছেন , আমাদের মধ্যে থেকে যে কেউ মৃত্যুবরণ করে সে মৃত নয় এবং আমাদের মধ্য থেকে যে কেউ ক্ষয়প্রাপ্ত (মৃত্যুর পর) হয় সে প্রকৃতপক্ষে ক্ষয়প্রাপ্ত নয়। যে বিষয় তোমরা বুঝ না সে বিষয়ে কথা বলো না ,কারণ তোমরা যা অস্বীকার কর তাতে অধিকাংশ সত্য ও ন্যায় আছে। যার বিরুদ্ধে তোমাদের কোন যুক্তি নেই ,তার যুক্তি গ্রহণ করা। ” রাসূল (সা.) এখানে যার কথা বলেছেন আমিই তো সে ব্যক্তি। আমি কি তোমাদের সম্মুখে ছাকালুল - আকবরের (কুবআনের) আমল করিনি ? আমি কি তোমাদের ছাকালুল - আছগরের (আহলুল বাইতের) অন্তর্ভুক্ত নই ? আমি তোমাদের ইমানের মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছি। এবং তোমাদের হালাল ও হারামের সীমারেখা শিখিয়ে দিয়েছি। আমি আমার ন্যায় বিচার দ্বারা তোমাদেরকে নিরাপত্তার পোষাক পরিয়ে দিয়েছি। এবং আমার কথা ও কর্ম দ্বারা তোমাদের জন্য সৎকাজের কার্পেট ছড়িয়ে দিয়েছি। আমি নিজের মাধ্যমে তোমাদেরকে উন্নত আচরণ দেখিয়েছি। যা চোখে দেখা যায় না অথবা মনে ধারণ করা যায় না ,সে বিষয়ে কল্পনার আশ্রয় গ্রহণ করো না।

বনি উমাইয়া সম্পর্কে

যতদিন পর্যন্ত মানুষ মনে করবে যে ,পৃথিবী উমাইয়াদের করতলে ,সকল নেয়ামত তাদের ওপর বর্ষিত ,স্বচ্ছ সরবরের পানি ব্যবহারের অধিকার শুধু তাদের ,ততদিন পর্যন্ত উমাইয়াদের চাবুক ও তরবারি মানুষের মাথার ওপর থেকে সরবে না। উমাইয়ারা যদি মনে করে থাকে যে ,তারা চিরস্থায়ীভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার - উৎপীড়ন চালিয়ে যেতে পারবে ,তাহলে তাদের সে চিন্তা ভুল। জীবনের আনন্দের কয়েক ফোটা মাত্র তারা অল্প সময়ের জন্য পান করতে পারবে এবং পরীক্ষণেই তারা সবকিছু বমি করে ফেলবে।

____________________

১। রাসূলের (সা.) এ বাণী থেকে নিশ্চিত প্রমাণিত হয় যে ,আহলুল বাইতের সদস্যদের জীবনে কখনো পরিসমাপ্তি আসে না এবং দৃশ্যত মৃত্যু তাদের বেঁচে থাকার মধ্যে কোন ব্যবধান সৃষ্টি করে না। কিন্তু মানুষের বুদ্ধিমত্তা সে জীবনের অবস্থা ও ঘটনাবলী অনুধাবন করতে সক্ষম হয় না। আমাদের জ্ঞান - জগতের বাইরে অনেক সত্য রয়েছে যা মানুষের মন এখনো বুঝতে পারে না। কবরের সংকীর্ণ স্থানে যেখানে একটু নিশ্বাস ফেলা সম্ভব নয় ;কে বলতে পারে সেখানে কী করে মুনকার নকিরের প্রশ্নের জবাব দেয়া হয় ? একইভাবে ,আল্লাহর রাস্তায় যারা শহীদ হয়েছে তাদের জীবনের অর্থ কী ? যদিও আমাদের দৃষ্টিতে তারা মৃত তবুও কুরআন বলেঃ

যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের মৃত বলো না ,তারা জীবিত ,কিন্তু তোমরা তা অনুধাবন করতে পার না (২ :১৫৪) । যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে করো না । বরং তারা জীবিত এবং তাদের রবের কাছ থেকে জীবিকাপ্রাপ্ত (৩ :১৬৯) ।

যেখানে সাধারণ শহীদদের মৃত বলতে ও মনে করতে কুরআনে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে সেসব মহান ব্যক্তিত্ব যারা আল্লাহর দ্বীনের জন্য তরবারির নিচে মাথা ও বিষের পেয়ালা হাতে রেখেছেন ,তারা অনাদি জীবনের অধিকারী হবেন। এতে দ্বীমত করার কিছু নেই। তাদের দেহ সম্বন্ধে আমিরুল মোমেনিন বলেছেন যে ,কালের অতিক্রমণে তা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না ;তারা যে অবস্থায় শহীদ হয়েছেন সে অবস্থায় থাকেন। এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই ,কারণ রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন পূর্বে সংরক্ষিত মৃতদেহ এখনো রয়েছে। এটা যখন মানুষের পক্ষে সম্ভব সেক্ষেত্রে সর্বশক্তিমান আল্লাহ যাদের চিরস্থায়ী জীবন দান করেছেন তাদের বেলায় লয় রোধ করা কি তার ক্ষমতা বহিঃর্ভূত ? বদরের যুদ্ধের শহীদদের সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেনঃ

তাদেরকে তাদের ক্ষতস্থান থেকে নির্গত রক্তসহ দাফন করো ,কারণ বিচার - দিনে যখন তারা উত্থিত হবে তখন তাদের গলা দিয়ে রক্ত বের হবে।

২। ছাকালুল আকবর বলতে কুরআন এবং ছাকালুল আছগর বলতে আহলুল বাইতকে বুঝানো হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেনঃ

নিশ্চয়ই ,আমি তোমাদের মাঝে ছাকালায়েন (দুটো মহামূল্যবান জিনিস) রেখে যাচ্ছি।

ছাকালায়েন বলতে রাসূল (সা.) কুরআন ও আহলুল বাইতকে বুঝিয়েছেন। ছাকাল শব্দের অর্থ হলো ভ্রমণকারীর অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র ;মূল্যবান বস্তু। এ পৃথিবী মানুষের জন্য ভ্রমণ স্থান ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ভ্রমণে ছাকালায়েন এত অত্যাবশ্যকীয় যে ,এ দুটো মূল্যবান বস্তু ছাড়া ভ্রমণ পথে দুঃখ - কষ্ট ভোগ করতে হবে এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্যও ব্যাহত হয়ে যাবে।

ইবনে হাজার আল - হায়তামী ,(পৃঃ ৯০) লিখেছেন ,

রাসূল (সা.) কুরআন ও তাঁর আহলুল বাইতকে ছোকালায়েন বলেছেন কারণ ছাকাল অর্থ হলো পবিত্র ,সৎ ও সংরক্ষিত বস্তু এবং এ দুটো প্রকৃতপক্ষে তা - ই। এদের প্রতিটি ঐশী জ্ঞানের ভাণ্ডার ,গুপ্ত বিষয়সমূহের উৎস এবং দ্বীনের নির্দেশিত বিধান । সে জন্য রাসূল (সা.) তাদেরকে অনুসরণ করতে ,তাদের আচল (দামান) ধরে রাখতে এবং তাদের কাছ থেকে জ্ঞান আহরণ করতে মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন । আহলুল বাইতের প্রধান সদস্য হলেন ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব । তিনি রাসূলের (সা.) কাছ থেকে সরাসরি জ্ঞান লাভ করায় অতি উচুস্তরের অন্তদৃষ্টি ও গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন । তাঁর জ্ঞানের সনদ রাসূল (সা.) নিজেই দিয়ে বলেছেন , আমি জ্ঞানের মহানগরী এবং আলী তার দরজা ।

খোৎবা - ৮৭

أَمَّا بَعْدُ، فَإنَّ اللَّهَ لَمْ يَقْصِمْ (یفصم) جَبَّارِى دَهْرٍ قَطُّ إلّا بَعْدَ تَمْهِيلٍ وَ رَخَأٍ؛ وَ لَمْ يَجْبُرْ عَظْمَ أَحَدٍ مِنَ الْأُمَمِ إلا بَعْدَ أَزْلٍ وَ بَلأٍ؛ وَ فِى دُونِ مَا اسْتَقْبَلْتُمْ مِنْ عَتْبٍ وَ مَا اسْتَدْبَرْتُمْ مِنْ خَطْبٍ مُعْتَبَرٌ وَ ما كُلُّ ذِى قَلْبٍ بِلَبِيبٍ، وَ لا كُلُّ ذِى سَمْعٍ بِسَمِيعٍ، وَ لا كُلُّ ذِى نَاظِرٍ بِبَصِيرٍ. فَيَا عَجَبا! وَ ما لِىَ لا أَعْجَبُ مِنْ خَطَإِ هَذِهِ الْفِرَقِ عَلَى اخْتِلاَفِ حُجَجِهَا فِى دِينِها؟! لا يَقْتَصُّونَ أَثَرَ نَبِىِّ، وَ لا يَقْتَدُونَ بِعَمَلِ وَصِىِّ، وَ لا يُؤْمِنُونَ بِغَيْبٍ، وَ لا يَعِفُّونَ عَنْ عَيْبٍ، يَعْمَلُونَ فِى الشُّبُهَاتِ، وَ يَسِيرُونَ فِى الشَّهَوَاتِ. الْمَعْرُوفُ فِيهِمْ ما عَرَفُوا، وَ الْمُنْكَرُ عِنْدَهُمْ مَا أَنْكَرُوا، مَفْزَعُهُمْ فِى الْمُعْضِلاَتِ إلَى أَنْفُسِهِمْ، وَ تَعْوِيلُهُمْ فِى الْمُبَهَّماتِ (المبهمات) عَلَى آرَائِهِمْ، كَأَنَّ كُلَّ امْرِئٍ مِنْهُمْ إمامُ نَفْسِهِ، قَدْ أَخَذَ مِنْها فِيما يَرَى بِعُرًى ثِقاتٍ (وثیقات - موثقات)، وَ أَسْبابٍ مُحْكَمَاتٍ.

উম্মাহর বিভেদ ও দলাদলি সম্পর্কে

নিশ্চয়ই ,আল্লাহ এ পৃথিবীতে কোন স্বেচ্ছাচারীর ঘাড় মটকাননি যে পর্যন্ত না তাকে শোধরানোর সময় ও সুযোগ দিয়েছেন এবং কোন উন্মাহর ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগাননি যে পর্যন্ত না তিনি তাদের ওপর দুর্যোগ ও দুঃখ - দূর্দশা আরোপ করেছেন। যে ভোগান্তি ও দুর্ভাগ্য তোমাদের জীবনে ঘটেছে তা তোমাদের শিক্ষার জন্য যথেষ্ট । কিন্তু প্রত্যেক মানুষ হৃদয় থাকা সত্ত্বেও বুদ্ধিমান নয় ,প্রত্যেক কানের শ্রুতিশক্তি নেই এবং প্রত্যেক চোখ দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন নয়।

হায়! আফসোস ,এসব দলের ভুল ভ্রান্তি দেখে আমার আশ্চর্য না হবার কোন কারণ নেই ,কারণ তারা তাদের দ্বীনে পরিবর্তন এনেছে ,তারা তাদের নবীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে না এবং নবীর প্রতিনিধির আমল অনুসরণ করে না। তারা গায়েবের প্রতি ইমান আনে না এবং আয়েব (দোষ - ত্রুটি) থেকে নিজেদেরকে সারিয়ে রাখে না। তারা সংশয়ের মধ্যে কাজ করে এবং কামনা - বাসনার পথে পরিচালিত হয়। শুভ হলো সেটা যেটাকে তারা ভাল মনে করে এবং মন্দ হলো সেটা যেটাকে তারা মন্দ মনে করে । তারা মনে করে দুর্দশার সমাধান তাদের নিজেদের হাতে। তারা বিশ্বাস করে যে ,সন্দেহজ্জনক বিষয়সমূহ তাদের মতানুযায়ী নিষ্পত্তি হবে। মনে হয় তাদের প্রত্যেকেই যেন ইমাম। যে কোন বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয় তারা মনে করে বিশ্বস্ত বরাত - সূত্র ও মজবুত উৎস থেকে তারা তা পেয়েছে।

খোৎবা - ৮৮

أَرْسَلَهُ عَلَى حِينِ فَتْرَةٍ مِنَ الرُّسُلِ، وَ طُولِ هَجْعَةٍ مِنَ الْأُمَمِ وَ اعْتِزَامٍ مِنَ الْفِتَنِ، وَ انْتِشَارٍ مِنَ الْأُمُورِ، وَ تَلَظِّ مِنَ الْحُرُوبِ، وَ الدُّنْيَا كَاسِفَةُ النُّورِ، ظَاهِرَةُ الْغُرُورِ؛ عَلَى حِينِ اصْفِرَارٍ مِنْ وَرَقِهَا، وَ إيَاسٍ مِنْ ثَمَرِهَا، وَ اغْوِرَارٍ مِنْ مَائِها، قَدْ دَرَسَتْ مَنَارُ الْهُدَى، وَ ظَهَرَتْ أَعْلاَمُ الرَّدَى، فَهِىَ مُتَجَهِّمَةٌ لِأَهْلِها، عَابِسَةٌ فِى وَجْهِ طَالِبِها. ثَمَرُها الْفِتْنَةُ، وَ طَعَامُها الْجِيفَةُ وَ شِعَارُها الْخَوْفُ وَ دِثَارُهَا السَّيْفُ.

فَاعْتَبِرُوا عِبَادَ اللَّهِ، وَ اذْكُرُوا تِيكَ الَّتِي آبَاؤُكُمْ وَ إِخْوَانُكُمْ بِهَا مُرْتَهَنُونَ، وَ عَلَيْها مُحَاسَبُونَ وَ لَعَمْرِى مَا تَقَادَمَتْ بِكُمْ وَ لاَ بِهِمُ الْعُهُودُ، وَ لاَ خَلَتْ فِيمَا بَيْنَكُمْ وَ بَيْنَهُمُ الْأَحْقَابُ وَ الْقُرُونُ (الدّهور)، وَ ما أَنْتُمُ الْيَوْمَ مِنْ يَوْمَ كُنْتُمْ فِي أَصْلاَبِهِمْ بِبَعِيدٍ. وَ اللَّهِ مَا أَسْمَعَكُمُ (أسماعکم) الرَّسُولُ شَيْئاً إلا وَ ها أَنَا ذَا مُسْمِعُكُمُوهُ، وَ مَا أَسْمَاعُكُمُ الْيَوْمَ بِدُونِ أَسْمَاعِكُمْ بِالْأَمْسِ، وَ لاَ شُقَّتْ لَهُمُ الْأَبْصَارُ، وَ لاَ جُعِلَتْ لَهُمُ الْأَفْئِدَةُ فِي ذَلِكَ الزَّمَانِ، إِلا وَ قَدْ أُعْطِيتُمْ مِثْلَهَا فِي هَذَا الزَّمَانِ (الأوان).

وَ وَ اللَّهِ مَا بُصِّرْتُمْ بَعْدَهُمْ شَيْئا جَهِلُوهُ، وَ لاَ أُصْفِيْتُمْ بِهِ وَ حُرِمُوهُ، وَ لَقَدْ نَزَلَتْ بِكُمُ الْبَلِيَّةُ جَائِلاً خِطَامُهَا، رِخْوا بِطَانُهَا، فَلاَ يَغُرَّنَّكُمْ مَا أَصْبَحَ فِيهِ أَهْلُ الْغُرُورِ، فَإِنَّمَا هُوَ ظِلُّ مَمْدُودٌ، إِلَى أَجَلٍ مَعْدُودٍ.

রাসূল (সা.) সম্পর্কে

অন্যান্য নবীদের মিশন শেষ হবার পর আল্লাহ রাসূলকে (সা.) প্রেরণ করেছেন যখন মানুষ দীর্ঘদিন যাবত তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিল ;পাপাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল ;সকল বিষয় সংহতিহীন ও যুদ্ধোনলের শিখাধীন ছিল ;পৃথিবী তার ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলেছিল ;চতুর্দিকে খোলাখুলি প্রতারণা ও প্রবঞ্চনা বিরাজ করছিলো ;গাছের পাতা হলুদ হয়ে গিয়েছিল ;ফল পাবার কোন আশা ছিল না ;পানি মাটির নিচে চলে গিয়েছিল ;হেদায়েতের মিনার অদৃশ্য হয়ে পড়েছিল এবং ধ্বংসের চিহ্নসমূহ দৃষ্টিগোচর হচ্ছিলো। সে সময় পৃথিবী তার অধিবাসীর জন্য কঠোর হয়ে পড়েছিল এবং অনুসন্ধানকারীর প্রতি ভ্রকুটি করতো। এর ফল ছিল পাপ ও খাদ্য ছিল মৃতদেহ। এর অন্তর্বাস ছিল ভয় এবং বহিরাভরণ ছিল তরবারি।

সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ ,তোমাদের পিতা ও ভ্রাতা যে সকল পাপ কাজে জড়িয়ে পড়েছিল এবং যে জন্য তাদেরকে জবাবদিহিতায় পড়তে হয়েছে তা স্মরণ কর এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর। আমার জীবনের কসম ,তোমাদের বর্তমান সময় থেকে তাদের সময় খুব বেশি দিন আগের নয় - এখনো শতাব্দী পার হয়ে যায়নি - এটাও বেশি দিন আগের কথা নয় যে ,তোমরা তাদের ঔরসে ছিলে।

আল্লাহর কসম ,রাসূল (সা.) তাদেরকে যা বলেছিলেন ,আমিও আজ তোমাদেরকে তা - ই বলছি ;তোমরা আজ যা কিছু শুনছো ,তারা গতকাল তাই শুনেছিল। তাদের জন্য যে চোখ খোলা হয়েছিল ,যে হৃদয় তাদের জন্য সেদিন তৈরি করা হয়েছিল ,ঠিক তাই আজ তোমাদের জন্য দেয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম ,এমন কিছু আজ তোমাদেরকে বলা হচ্ছে না ,যা তারা জানত না এবং এমন কিছু তোমাদের দেয়া হচ্ছে না ,যা থেকে তারা বঞ্চিত ছিল। নিশ্চয়ই ,তোমরা এমন একটা চরম বিপর্যয়ে কষ্ট পাবে (যা উল্লীর মতো) যার নাকের দড়ি নড়বড়ে ও গলার দড়ি ছিড়ে গেছে। সুতরাং এ প্রতারকরা যেন কোন অবস্থাতেই তোমাদের ধোকায় ফেলতে না পারে ,কারণ এটা একটা ক্ষণস্থায়ী দীর্ঘছায়া।

খোৎবা-১৭

في صفة من يتصدى للحكم بين الأمة وليس لذلك بأهل

إنَّ أَبْغَضَ الْخَلَائِقِ إِلَى اللَّه رَجُلَانِ - رَجُلٌ وَكَلَه اللَّه إِلَى نَفْسِه فَهُوَ جَائِرٌ عَنْ قَصْدِ السَّبِيلِ مَشْغُوفٌ بِكَلَامِ بِدْعَةٍ ودُعَاءِ ضَلَالَةٍ - فَهُوَ فِتْنَةٌ لِمَنِ افْتَتَنَ بِه ضَالٌّ عَنْ هَدْيِ مَنْ كَانَ قَبْلَه - مُضِلٌّ لِمَنِ اقْتَدَى بِه فِي حَيَاتِه وبَعْدَ وَفَاتِه - حَمَّالٌ خَطَايَا غَيْرِه رَهْنٌ بِخَطِيئَتِه.

ورَجُلٌ قَمَشَ جَهْلًا مُوضِعٌ فِي جُهَّالِ الأُمَّةِ عَادٍ فِي أَغْبَاشِ الْفِتْنَةِ عَمٍ بِمَا فِي عَقْدِ الْهُدْنَةِ قَدْ سَمَّاه أَشْبَاه النَّاسِ عَالِماً ولَيْسَ بِه - بَكَّرَ فَاسْتَكْثَرَ مِنْ جَمْعٍ مَا قَلَّ مِنْه خَيْرٌ مِمَّا كَثُرَ - حَتَّى إِذَا ارْتَوَى مِنْ مَاءٍ آجِنٍ واكْتَثَرَ مِنْ غَيْرِ طَائِلٍ.

جَلَسَ بَيْنَ النَّاسِ قَاضِياً ضَامِناً لِتَخْلِيصِ مَا الْتَبَسَ عَلَى غَيْرِه فَإِنْ نَزَلَتْ بِه إِحْدَى الْمُبْهَمَاتِ - هَيَّأَ لَهَا حَشْواً رَثًّا مِنْ رَأْيِه ثُمَّ قَطَعَ بِه - فَهُوَ مِنْ لَبْسِ الشُّبُهَاتِ فِي مِثْلِ نَسْجِ الْعَنْكَبُوتِ - لَا يَدْرِي أَصَابَ أَمْ أَخْطَأَ - فَإِنْ أَصَابَ خَافَ أَنْ يَكُونَ قَدْ أَخْطَأَ - وإِنْ أَخْطَأَ رَجَا أَنْ يَكُونَ قَدْ أَصَابَ - جَاهِلٌ خَبَّاطُ جَهَالَاتٍ عَاشٍ رَكَّابُ عَشَوَاتٍ لَمْ يَعَضَّ عَلَى الْعِلْمِ بِضِرْسٍ قَاطِعٍ - يَذْرُو الرِّوَايَاتِ ذَرْوَ الرِّيحِ الْهَشِيمَ لَا مَلِيٌّ.

واللَّه بِإِصْدَارِ مَا وَرَدَ عَلَيْه - ولَا أَهْلٌ لِمَا قُرِّظَ بِه لَا يَحْسَبُ الْعِلْمَ فِي شَيْءٍ مِمَّا أَنْكَرَه - ولَا يَرَى أَنَّ مِنْ وَرَاءِ مَا بَلَغَ مَذْهَباً لِغَيْرِه - وإِنْ أَظْلَمَ عَلَيْه أَمْرٌ اكْتَتَمَ بِه لِمَا يَعْلَمُ مِنْ جَهْلِ نَفْسِه - تَصْرُخُ مِنْ جَوْرِ قَضَائِه الدِّمَاءُ - وتَعَجُّ مِنْه الْمَوَارِيثُ إِلَى اللَّه أَشْكُو - مِنْ مَعْشَرٍ يَعِيشُونَ جُهَّالًا ويَمُوتُونَ ضُلَّالًا - لَيْسَ فِيهِمْ سِلْعَةٌ أَبْوَرُ مِنَ الْكِتَابِ إِذَا تُلِيَ حَقَّ تِلَاوَتِه - ولَا سِلْعَةٌ أَنْفَقُ بَيْعاً - ولَا أَغْلَى ثَمَناً مِنَ الْكِتَابِ إِذَا حُرِّفَ عَنْ مَوَاضِعِه - ولَا عِنْدَهُمْ أَنْكَرُ مِنَ الْمَعْرُوفِ ولَا أَعْرَفُ مِنَ الْمُنْكَرِ!

অযোগ্য ব্যক্তি কর্তৃক মানুষের মধ্যে ন্যায়ের বিধান প্রয়োগ সম্পর্কে

মানুষের মধ্যে দুব্যক্তিকে আল্লাহ অতিশয় ঘৃণা করেন। এদের একজন হলো সে যে আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যস্ত থাকে। সে ব্যক্তি সত্যপথ থেকে সরে চলে এবং মিথ্যা কোন কিছু উদ্ভাবন করে তা বলে বেড়াতে আনন্দ পায়। সে ব্যক্তি মানুষকে ভুল পথের দিকে আমন্ত্রণ জানায়। যারা তার প্রতি অনুরক্ত হয় তাদের জন্য সে অত্যন্ত ক্ষতিকর। সে নিজেই তার পূর্ববর্তীগণের নির্দেশিত পথ থেকে সরে গিয়ে বিপথে পরিচালিত। কাজেই সে জীবদ্দশায় তার অনুসারীদের গোমরাহির দিকে পরিচালিত করে এবং মৃত্যুর পর নিজের ও অনুসারীদের পাপের বোঝা বহন করে।

অপর ব্যক্তি সে যাকে মূর্খতা ও অজ্ঞতা ঘিরে আছে। সে অজ্ঞদের মাঝেই চলাফেরা করে এবং সে অমঙ্গল বিষয়ে জ্ঞানহীন ও শান্তিপূর্ণ অবস্থার সুবিধা সম্পর্কে অন্ধ। সাধারণ মানুষ তাকে পণ্ডিত মনে করে কিন্তু আসলে সে তা নয়। সে অতি প্রত্যুষে এমন কিছু সংগ্রহে করতে বেরিয়ে পড়ে যার প্রাচুর্য থেকে স্বল্পতা অনেক ভাল। সে দূষিত পানি দ্বারা তৃষ্ণা নিবারণ করে এবং যা অর্জন করে তা অর্থহীন।

জনগণের কাছে যা বিভ্রান্তিকর বলে মনে হয় তার সমাধান দেয়ার দায়িত্ব নিয়ে সে বিচারকের আসনে বসে। যদি কোন দ্ব্যর্থক সমস্যা তার সামনে তুলে ধরা হয় তবে সে তার মনগড়া খোড়া যুক্তি দাঁড় করিয়ে তার ভিত্তিতে রায় প্রদান করে। এভাবে সে ন্যায় - অন্যায় ও সত্য - মিথ্যা না বুঝে মাকড়সার জালের মতো সন্দেহ ও ভ্রান্তির জালে জড়িয়ে পড়ে। যখন সে সঠিক কাজ করে তখন সে ভয় করে পাছে ভুল হয়ে গেল কিনা। আবার যখন সে ভুল করে তখন মনে করে সে ঠিকই করেছে। সে জাহেল ,অজ্ঞতার মাঝেই ধ্বংস খুঁজে বেড়াচ্ছে এবং সে এমন বাহনের সওয়ার যা লক্ষ্যহীনভাবে অন্ধকারে চলছে। মজবুত দাঁত দ্বারা সে কখনো জ্ঞানকে আঁকড়ে ধরে নি। সে হাদিসকে এমন বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে দেয় যেন বাতাস শুকনো পাতাকে ছড়িয়ে ফেলে।

আল্লাহর কসম ,যেসব সমস্যা তার কাছে আসে সেগুলোর সমাধান দেয়ার মতো যোগ্যতা তার নেই এবং যে মর্যাদাকর অবস্থানে তাকে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে তার উপযুক্ত সে নয়। যা সে জানে না তা জানা দরকার বলেও সে মনে করে না। এ কথা সে অনুভব করতে পারে না যে ,যা তার নাগালের বাইরে তা অন্যের নাগালের মধ্যে থাকতে পারে। যে বিষয় তার কাছে অস্পষ্ট মনে হয় সে বিষয়ে সে নিশ্চুপ থাকে কারণ সে নিজের অজ্ঞতা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল । হারানো জীবনগুলো তার অন্যায় রায়ের বিরুদ্ধে চিৎকার দিচ্ছে এবং সম্পদরাজী (যা অন্যায়ভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে) তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ ভরে বিড়বিড় করছে।

যে সব লোক জীবনে অজ্ঞ ও মৃত্যুতে বিপথগামী তাদের বিরুদ্ধে আমি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি। তাদের কাছে কুরআন অপেক্ষা মূল্যহীন আর কিছু নেই - কুরআনের আয়াত যথাস্থান থেকে সরিয়ে ফেলা অপেক্ষা মূল্যবান কিছু নেই - ধার্মিকতা অপেক্ষা খারাপ কিছু নেই - পাপ অপেক্ষা সুনীতিসম্পন্ন কিছু নেই।

___________________

১। আমিরুল মোমেনিন দু ’ শ্রেণির লোককে আল্লাহর অপছন্দনীয় ও জনগণের মধ্যে নিকৃষ্ট মনে করেছেন। প্রথমতঃ যারা মৌলিক বিষয়ে বিপথগামী এবং মন্দ বা পাপ ছড়াবার কাজে ব্যস্ত। দ্বিতীয়তঃ যারা কুরআন ও সুন্নাহকে পরিত্যাগ পূর্বক নিজের ইচ্ছামতো বিধি - নিষেধ জারি করে। তারা তাদের অনুরাগীর একটা পরিমণ্ডল তৈরি করে নেয় এবং তাদের নিজেদের বানানো ধমীয় বিধান জনপ্রিয় করে তোলে। এসব লোকের বিপথগামিতা ও ভ্রান্তি তাদের নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বিপথগামিতার যে বীজ তারা বপন করে তা প্রকাণ্ড গাছে পরিণত হয়ে ফল দেয় এবং বিপথগামীদের আশ্রয় প্রদান করে। এভাবে বিপথগামীর সংখ্যা বেড়েই চলে। যেহেতু এসব লোক ভ্রান্তি ও বিপথ সৃষ্টির হতো সেহেতু অন্যদের পাপের বোঝা এরাই বহন করবে। কুরআন বলেঃ

এবং নিশ্চয়ই তারা তাদের পাপের বোঝা বহন করবে এবং নিজেদের বোঝার সাথে অন্যের বোঝাও। (২৯:১৩)

খোৎবা- ১৮

في ذم اختلاف العلماء في الفتيا

تَرِدُ عَلَى أَحَدِهِمُ الْقَضِيَّةُ فِي حُكْمٍ مِنَ الأَحْكَامِ - فَيَحْكُمُ فِيهَا بِرَأْيِه - ثُمَّ تَرِدُ تِلْكَ الْقَضِيَّةُ بِعَيْنِهَا عَلَى غَيْرِه - فَيَحْكُمُ فِيهَا بِخِلَافِ قَوْلِه - ثُمَّ يَجْتَمِعُ الْقُضَاةُ بِذَلِكَ عِنْدَ الإِمَامِ الَّذِي اسْتَقْضَاهُمْ فَيُصَوِّبُ آرَاءَهُمْ جَمِيعاً وإِلَهُهُمْ وَاحِدٌ - ونَبِيُّهُمْ وَاحِدٌ وكِتَابُهُمْ وَاحِدٌ! أَفَأَمَرَهُمُ اللَّه سُبْحَانَه بِالِاخْتِلَافِ فَأَطَاعُوه - أَمْ نَهَاهُمْ عَنْه فَعَصَوْه!

الحكم للقرآن أَمْ أَنْزَلَ اللَّه سُبْحَانَه دِيناً نَاقِصاً - فَاسْتَعَانَ بِهِمْ عَلَى إِتْمَامِه - أَمْ كَانُوا شُرَكَاءَ لَه فَلَهُمْ أَنْ يَقُولُوا وعَلَيْه أَنْ يَرْضَى - أَمْ أَنْزَلَ اللَّه سُبْحَانَه دِيناً تَامّاً - فَقَصَّرَ الرَّسُولُصلى‌الله‌عليه‌وآله عَنْ تَبْلِيغِه وأَدَائِه - واللَّه سُبْحَانَه يَقُولُ:( ما فَرَّطْنا فِي الْكِتابِ مِنْ شَيْءٍ ) - وفِيه تِبْيَانٌ لِكُلِّ شَيْءٍ - وذَكَرَ أَنَّ الْكِتَابَ يُصَدِّقُ بَعْضُه بَعْضاً - وأَنَّه لَا اخْتِلَافَ فِيه - فَقَالَ سُبْحَانَه:( ولَوْ كانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ الله - لَوَجَدُوا فِيه اخْتِلافاً كَثِيراً ) - وإِنَّ الْقُرْآنَ ظَاهِرُه أَنِيقٌ وبَاطِنُه عَمِيقٌ - لَا تَفْنَى عَجَائِبُه ولَا تَنْقَضِي غَرَائِبُه - ولَا تُكْشَفُ الظُّلُمَاتُ إِلَّا بِه.

ফেকাহবিদগণের মধ্যে আমর্যাদাকর মতদ্বৈধতা সম্পর্কে

তাদের কোন একজনের কাছে যখন একটা সমস্যা উপস্থাপন করা হয় তখন সে অনুমান ভিত্তিক রায় প্রদান করে। একই সমস্যা যখন তাদের অন্য একজনের কাছে উপস্থাপন করা হয় তখন সে আগের জনের রায়ের বিপরীত সিদ্ধান্ত প্রদান করে। এ বিচারকদ্বয় যখন তাদের পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধান বিচারকের কাছে যায় (যিনি প্রথমোক্তগণকে নিয়োগ করেছিলেন) তখন তিনি উভয়ের সিদ্ধান্তকেই সমর্থন ও অনুমোদন করেন। অথচ তাদের সকলের আল্লাহ এক ,রাসূল এক ও পবিত্র গ্রন্থ এক ।

তাদের এহেন মতো পার্থক্যের কারণ কী ? এটা কী এ জন্য যে ,আল্লাহ তাদেরকে মতদ্বৈধতা করতে নির্দেশ দিয়েছেন আর তারা তা পালন করছে ? অথবা তিনি মতদ্বৈধতা করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু তারা তাঁর অবাধ্যতা করছে ? অথবা আল্লাহ একটা অসম্পূর্ণ দ্বীন পাঠিয়েছেন এবং এখন তা সম্পূর্ণ করতে তাদের সহায়তা চান ? অথবা এসব বিষয়ে তারা কি আল্লাহর অংশীদার যে ,ভিন্ন ভিন্ন মত তুলে ধরা তাদের কর্তব্য আর তা সমর্থন করা আল্লাহর কর্তব্য ? অথবা এটা কি এমন যে ,মহিমান্বিত আল্লাহ পরিপূর্ণ দ্বীন প্রেরণ করেছেন। কিন্তু রাসূল (সা.) তা পরিপূর্ণভাবে মানুষের নিকট পৌছে দিতে পারেননি ? বস্তুত মহামহিম আল্লাহ বলেনঃ

আমরা এ কিতাবে কোন কিছুই বাদ দেই নি (কুরআন - ৬:৩৮) । আল্লাহ আরো বলেন যে ,কুরআনে প্রত্যেক বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে এবং কুরআনের এক অংশ অন্য অংশকে সত্যায়ন করে এবং কুরআনে কোন এখতেলাপ (অপসারণ) নেই। আল্লাহ্ বলেনঃ

এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে এ কিতাব এলে তারা নিশ্চয়ই এতে অনেক গরমিল দেখতে পেতো (কুরআন - ৪ :৮২) ।

নিশ্চয়ই কুরআনের বাহ্যিক দিক বিস্ময়কর এবং এর অভ্যন্তর দিক গভীর অর্থবোধক। কুরআনের বিস্ময় কখনো হারিয়ে যাবে না এবং এর রহস্য কখনো বিলুপ্ত হবে না। কুরআনের জটিল বিষয়গুলো কুরআন (কুরআনিক জ্ঞান) ব্যতীত কেউ সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে না।

____________________

১। এটা একটা বিতর্কিত বিষয় যে , কোন বিষয়ে ধর্মীয় বিধানে স্পষ্ট কিছু বলা না থাকলে বাস্তব ক্ষেত্রে তা নিস্পত্তির উপায় সম্পর্কে কোন আদেশ নির্দেশ আছে কিনা। আবুল হাসান আশারী ও তার শিক্ষক আবু আলী যুব্বাই যে মত পোষণ করেন তা হলো , এরূপ বিষয়ে আল্লাহ্ কোন নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতির আদেশ দান করেন নি , তবে গবেষণা করে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে সে বিষয়ে রায় প্রদানের ক্ষমতা শাস্ত্রজ্ঞদের ওপর অর্পণ করা হয়েছে , যাতে করে যা তারা নিষিদ্ধ বলবেন তা নিষিদ্ধই মনে করতে হবে এবং যা তারা অনুমোদন করবেন তা জায়েজ মনে করতে হবে। এসব শাস্ত্রজ্ঞদের একজনের অভিমত যদি অন্যজনের বিপরীত হয় তবে একই বিষয়ে যতগুলো রায় পাওয়া যাবে তার প্রত্যেকটি চূড়ান্ত ও সঠিক বলে মেনে নিতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ , যদি একজন শাস্ত্রজ্ঞ রায় দেন যে , যবের সিরা হারাম এবং অন্যজন বলেন এটা হালাল তবে এটাকে হারাম ও হালাল উভয়ই মেনে নিতে হবে। অর্থাৎ যে এটাকে হারাম মনে করবে তার জন্য হারাম আর যে হালাল মনে করবে তার জন্য হালাল। শাহরাস্তানী লিখেছেনঃ

একদল চিন্তাবিদ মনে করেন যে , কোন বিষয়ে ইজতিহাদ (গবেষণা) করার অনুকূলে কোন স্বতঃসিদ্ধ মতবাদ নেই । কিন্তু মুজতাহিদ (গবেষক) কোন বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাই আল্লাহর আদেশ , কারণ মুজতাহিদের রায়ের ওপর আল্লাহর অভিপ্রায়ের অবধারণ নির্ভর করে। যদি এমনটি না হতো। তবে রায়ের মোটেই কোন প্রয়োজন থাকতো না । এ মতানুযায়ী প্রত্যেক মুজতাহিদ তার মতামতে সঠিক ও শুদ্ধ (পৃঃ ৯৮) ।

এক্ষেত্রে মুজতাহিদগণকে সকল ভুলের উর্দ্ধে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ তখনই ভুল সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করা যায় যখন বাস্তবতার বিপরীতে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। যেখানে রায়ের বাস্তব অস্তিত্ব নেই সেখানে ভুল হয়েছে মনে করা অর্থহীন। তাছাড়া মুজতাহিদকে তখনই ভুল - ভ্রান্তির উর্দ্ধে মনে করা যাবে যখন ধরে নেয়া হবে যে , আল্লাহ্ তাদের সকল মতামত জ্ঞাত হয়ে অনেকগুলো চূড়ান্ত আদেশ দান করেছেন যার ফলে তাদের প্রত্যেকের অভিমত কোন না কোন আদেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। অথবা আল্লাহ এ মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন যে , মুজতাহিদদের কোন সিদ্ধান্ত আল্লাহর নির্দেশ বহির্ভূত হয় না। অথবা দৈবক্রমে তাদের প্রত্যেকের অভিমত কোন না কোন ঐশী নির্দেশের সাথে মিলে যায়।

ইমামিয়া দলের অবশ্য ভিন্ন মতবাদ আছে। তারা মনে করে ধমীয় বিধি - বিধান প্রণয়নের অধিকার আল্লাহ কাউকে অর্পণ করেন নি বা কোন বিষয়কে মুজতাহিদদের অভিমতের অধীন করে দেননি বা তাদের মতদ্বৈধতা সমন্বয় করার জন্য বিভিন্ন বাস্তব আদেশ দান করেননি। অবশ্য , যদি মুজতাহিদ একটা বাস্তব আদেশে উপনীত হতে না পারে তখন সে গবেষণা ও অনুসন্ধান করে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা মেনে আমল করা তার নিজের ও তার অনুসারীদের জন্য যথেষ্ট। মুজতাহিদের এমন সিদ্ধান্ত প্রকৃত আদেশের বিকল্প হিসেবে ধরে নেয়া যায়। এক্ষেত্রে প্রকৃত আদেশ হতে সরে যাবার জন্য সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে , কারণ সে মুক্তা আহরণের জন্য তার সাধ্যমতো গভীর সমুদ্রে ডুব দিয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় সে মুক্তার বদলে ঝিনুক পেয়েছে। সে মানুষকে একথা বলে না। যে , সে যা পেয়েছে তাই মুক্তা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে বা সে ঝিনুককে মুক্তা বলে বিক্রি করে না। এটা ভিন্ন কথা যে , আল্লাহ তার প্রচেষ্টার প্রতিদান প্রদান করতে পারেন , কারণ কোন প্রচেষ্টাই বৃথা যায় না।

বিশুদ্ধতা মতবাদ যদি মেনে নেয়া হয় তাহলে প্রত্যেক রায় ও অভিমত শুদ্ধ বলে গ্রহণ করতে হবে। হুসায়েন মাবুদী তার ফাওয়াতিহ গ্রন্থে লিখেছেনঃ এ বিষয়ে আশারীর অভিমত সঠিক । তার অভিমত অনুযায়ী পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্তের সব ক ’ টিই সঠিক। সাবধান , শাস্ত্রজ্ঞদের সম্পর্কে কোন খারাপ ধারণা পোষণ করো না এবং তাদের প্রতি কখনো কুবাক্য প্রয়োগ করো না ।

যখন পরস্পরবিরোধী মতবাদ ও বিপথগামী অভিমতকে শুদ্ধ বলে গ্রহণ করা হয় তখন কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির কর্মকাণ্ডকে সিদ্ধান্তের ভুল বলে ব্যাখ্যা দেয়া অদ্ভুত ব্যাপার। কারণ মুজতাহিদের সিদ্ধান্তের ভুল কল্পনাই করা যায় না। যদি বিশুদ্ধতা মতবাদ মেনে নেয়া হয় তাহলে মুয়াবিয়া ও আয়শার কর্মকাণ্ডগুলো সঠিক বলে ধরে নিতে হয়। যদি তাদের কর্মকাণ্ড ভুল বলে মনে করা হয় তাহলে মেনে নিতে হবে যে , ইজতিহাদও ভুল হতে পারে। কাজেই বিশুদ্ধতা মতবাদও ভুল। যা হোক , বিশুদ্ধতা মতবাদ প্রচারিত হয়েছিল ভুলকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য এবং এ মতবাদকে আল্লাহর আদেশের সাথে জড়িয়ে দেয়া হয়েছে যেন উদ্দেশ্য হাসিলে কোন বাধা না আসে বা কোন কুকর্মের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা না বলতে পারে।

এ খোৎবায় আমিরুল মোমেনিন সে সব লোকের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন যারা আল্লাহর পথ থেকে সরে পড়ে , আলোতে চোখ বুজে কল্পনার অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ায় , ইমানকে অভিমত ও সিদ্ধান্তের শিকারে পরিণত করে , নতুন রায় ঘোষণা করে , নিজেদের কল্পনার ওপর ভিত্তি করে আদেশ জারি করে এবং বিপথগামী ফলাফল সৃষ্টি করে। তারপর তারা বিশুদ্ধতা মতবাদের ভিত্তিতে সকল বিপরীত ও বিপথগামী আদেশকে আল্লাহ থেকে প্রাপ্ত বলে চালিয়ে দেয়। এ মতবাদকে মিথ্যা প্রমাণ করে আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

( ১) যেখানে আল্লাহ এক , রাসূল এক ও কুরআন এক সেখানে অনুসরণীয় ধর্মও এক হতে হবে। যখন ধর্ম এক তখন তাতে একটা বিষয়ে বিভিন্ন আদেশ থাকবে কেমন করে ? একটা আদেশে বিভিন্নতা থাকতে পারে শুধুমাত্র তখন , যখন আদেশদাতা তার আদেশ ভুলে যায় অথবা বিস্মরণশীল হয় অথবা জ্ঞানহীনতা তাকে আঁকড়ে ধরে অথবা তিনি ইচ্ছা করে গোলক ধাধায় জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু আল্লাহ ও রাসূল এসব কিছুর উর্দ্ধে। সুতরাং বিভিন্নতা ও বিপথগামিতা তাদের প্রতি আরোপ করা যায় না। এসব বিভিন্নতা বরং তাদের চিন্তা ও অভিমতের ফল যারা নিজেদের কল্পনাপ্রসূত কর্মপদ্ধতি দ্বারা দ্বীনের সহজ পথে জটিলতার সৃষ্টি করে।

( ২) এসব বিপথ হয় আল্লাহ্ নিষিদ্ধ করেছেন , না হয় এগুলো সৃষ্টির জন্য তিনি আদেশ দিয়েছেন। যদি তিনি এগুলোর অনুকূলে কোন আদেশ দিয়ে থাকেন তবে তা কোথায় , কোনখানে আছে ? এগুলো নিষিদ্ধকরণ সম্পর্কে কুরআন বলেঃ

বল , আল্লাহ কি তাঁর সম্বন্ধে মিথ্যারোপ করতে তোমাদের অনুমতি দিয়েছেন ? ( ১০ :৫৯) আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী না হলে সবকিছুই বানোয়াট উদ্ভাবন বই কিছু নয় এবং এহেন বানোয়াট উদ্ভাবন নিষিদ্ধ। যারা বানোয়াটিকারী পরকালে তাদের কোন কৃতকার্যতা ও কল্যাণ নেই। আল্লাহ বলেনঃ তোমাদের জিহ্বা মিথ্যারোপ করে বলে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করার জন্য এটা হালাল এবং ওটা হারাম ” - বলো না। আল্লাহ সম্বন্ধে যারা মিথ্যা উদ্ভাবন করে তারা সফলকাম হয় না। ” ( কুরআন - ১৬:১১৬)

( ৩) আল্লাহ্ যদি দ্বীনকে অসম্পূর্ণ রাখতেন এবং সে অসম্পূর্ণতার কারণ যদি এটা হতো যে , ধর্মীয় বিধান সম্পূর্ণ করতে তিনি মানুষের সহায়তা এবং বিধান প্রণয়নে তাঁর সাথে মানুষের অংশগ্রহণ আশা করেছিলেন , তাহলে এহেন বিশ্বাস বহু - আল্লাহবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। আর যদি আল্লাহ্ পূর্ণাকারে দ্বিনের বিধান প্রেরণ করে থাকেন তা হলে রাসূল তা সঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌছে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন , যেজন্য অন্যদের কল্পনা ও মতামত প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। এমন ধারণায় রাসূলের দুর্বলতা বুঝায় এবং রাসূল হিসেবে তাঁর মনোনয়নের প্রতি এটা কলঙ্কারোপ (নাউজুবিল্লাহ) ।

( ৪) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন যে , তিনি কুরআনে কোন কিছুই বাদ দেন নি এবং প্রতিটি বিষয় তাতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এখন যদি কোন আদেশ কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক করে বক্র করা হয় তবে তা হবে ধর্মের বিধি বহির্ভূত। এহেন বক্রতার ভিত্তি জ্ঞান বা কুরআন ও সুন্নাহ্ হতে পারে না। এটা কারো ব্যক্তিগত অভিমত বা বিচার - বিবেচনা হতে পারে , যা ধর্ম ও ইমানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে গ্রহণ করা যায় না ।

( ৫) কুরআন ধর্মের উৎস ও ভিত্তি এবং শরিয়তের আইনের ঝরনাধারা। যদি শরিয়তের বিধানে মতদ্বৈধতা থাকতো তাহলে কুরআনেও তা থাকতো। কুরআনে মতদ্বৈধতা থাকলে তা আল্লাহর বাণী বলে গ্রহণ করা যেতো না। যেহেতু কুরআন আল্লাহর বাণী বলে সর্ব স্বীকৃত সেহেতু শরিয়তের বিধানে কোন মতদ্বৈধতা থাকতে পারে না।

খোৎবা- ১৯

قاله للأشعث بن قيس وهو على منبر الكوفة يخطب، فمضى في بعض كلامه شيء اعترضه الأشعث فيه، فقال: يا أمير المؤمنين، هذه عليك لا لك، فخفضعليه‌السلام إليه بصره ثم قال:

مَا يُدْرِيكَ مَا عَلَيَّ مِمَّا لِي - عَلَيْكَ لَعْنَةُ اللَّه ولَعْنَةُ اللَّاعِنِينَ - حَائِكٌ ابْنُ حَائِكٍ مُنَافِقٌ ابْنُ كَافِرٍ - واللَّه لَقَدْ أَسَرَكَ الْكُفْرُ مَرَّةً والإِسْلَامُ أُخْرَى - فَمَا فَدَاكَ مِنْ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا مَالُكَ ولَا حَسَبُكَ - وإِنَّ امْرَأً دَلَّ عَلَى قَوْمِه السَّيْفَ - وسَاقَ إِلَيْهِمُ الْحَتْفَ - لَحَرِيٌّ أَنْ يَمْقُتَه الأَقْرَبُ ولَا يَأْمَنَه الأَبْعَدُ!

قال السيد الشريف - يريدعليه‌السلام أنه أسر في الكفر مرة وفي الإسلام مرة -. وأما قولهعليه‌السلام دل على قومه السيف - فأراد به حديثا - كان للأشعث مع خالد بن الوليد باليمامة - غر فيه قومه ومكر بهم - حتى أوقع بهم خالد - وكان قومه بعد ذلك يسمونه عرف النار - وهو اسم للغادر عندهم.

কুফার মসজিদের মিম্বার থেকে আমিরুল মোমেনিন খোৎবা প্রদান করছিলেন। এমন সময় আশআছ । ইবনে কায়েস বাধা দিয়ে বললো , হে ,আমিরুল মোমেনিন ,এ কথা আপনার অনুকূলে নয় ,বরং আপনার বিরুদ্ধে যাবে ।

আমিরুল মোমেনিন রাগত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ

তুমি কী করে জান কোন বিষয় আমার অনুকূলে আর কোনটি আমার প্রতিকূলে। আল্লাহ ও অভিশাপকারীদের অভিশাপ তোমার ওপর। তুমি তাতির পুত্র তাতি। তুমি একজন মোশরেকের পুত্র এবং নিজেও একজন মোনাফিক। তুমি মোশরেক থাকাকালে একবার এবং ইসলাম গ্রহণের পর আরেকবার গ্রেফতার হয়েছিলে ; তোমার সম্পদ ও জন্ম পরিচয় তোমাকে রক্ষা করতে পারেনি । যে ব্যক্তি নিজের লোকজনকে তরবারির নিচে ঠেলে দিয়ে তাদের মৃত্যু ও ধ্বংসের ফন্দি আঁটে সে নিকটবর্তীগণের ঘৃণা আর দূরবর্তীজনের অবিশ্বাসেরই যোগ্য।

__________________

১। আশআছ ইবনে কায়েসের আসল নাম সাদি কারিব এবং লকব আবু মুহাম্মদ। তার অবিন্যস্ত চুলের জন্য সে আশআছ নামেই সমধিক পরিচিত। নবুয়ত প্রকাশের পর সে একবার তার গোত্রের লোকজন নিয়ে মক্কায় এসেছিলো। রাসূল (সা.) তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারা সকলেই ইসলাম গ্রহণ না করে ফিরে গিয়েছিল। হিজরতের পর যখন ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল এবং দলে দলে লোক মদিনায় আসছিলো তখন আশআছ বনি। কিন্‌দাহর সাথে রাসূলের কাছে হাজির হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। বার লিখেছেন যে ,রাসূলের (সা.) তিরোধানের পর এ লোকটি ইসলাম ত্যাগ করে মোশরেক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আবু বকরের খেলাফতকালে তাকে বন্দী করে মদিনায় আনা হলে সে পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এবারও তার ইসলাম গ্রহণ লোক দেখানো বই কিছু নয়। আবদুহ লিখেছেন :

রাসূলের সাহাবিদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল যেমন ছিল ,আলীর সার্থীগণের মধ্যেও আশআছ তদ্রূপ ছিল । এরা দুজনই কুখ্যাত মোনাফিক ছিল ।

ইয়ারমুকের যুদ্ধে আশআছ তার একটা চোখ হারিয়েছিল। কুতায়বাহ তাকে একচোখওয়ালা লোকদের তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। আশআছের গোত্রের লোকেরা তাকে নাম দিয়েছিল উরফ - আন - নার ” অর্থাৎ বিশ্বাসঘাতক। ইয়ামামার যুদ্ধে সে ফন্দি করে তার গোত্রকে খালেদ ইবনে অলিদ দ্বারা আক্রান্ত করিয়েছিল ! সে আবু বকরের বোন উম্মে ফারাওয়াহর তৃতীয় স্বামী হিসেবে তাকে বিয়ে করেছিল। ফরওয়াহর প্রথম স্বামী ছিল আল - আজদি এবং দ্বিতীয় স্বামী ছিল তামীম যারিমী। জীবনী গ্রন্থসমূহে দেখা যায় ফরওয়াহ অন্ধ ছিল এবং তার গর্ভে তিনটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। তারা হলো - মুহাম্মদ ,ইসমাঈল ও ইসহাক। হাদীদ আবুল ফারাজের উদ্ধৃতি দিয়ে যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে দেখা যায় আলীকে হত্যা করার বিষয়ে আশআছও সমভাবে জড়িত। তিনি লিখেছেন :

আলী নিহত হবার রাতে ইবনে মুলজাম। আশাআছ ইবনে কায়েসের কাছে এসেছিল । উভয়ে আলাদাভাবে মসজিদের এক কোণে চুপচাপ বসেছিল । হুজর ইবনে আদি তাদের পাশ দিয়ে যেতে যেতে শুনতে পেলো আশআছে মুলজামকে বলছে , তাড়াতাড়ি কর ; না হয় ভোরের আলো তোমার প্রতি নির্দয় হতে পারে। ” এ কথা শুনে হুজর আশআছকে বললো ,ওহে এক চোখা লোক ,তুমি আলীকে নিহত করার পরিকল্পনা করছো ৷ ” এ বলেই হুজর তাড়াতাড়ি আলীর দিকে এগিযে যেতে লাগল। কিন্তু ইবনে মুলাজাম হুজরের আগেই দৌড়ে গিয়ে আলীকে আঘাত করেছিল ।

এই আশআছের কন্যাই ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছিল। মাসুদী লিখেছেনঃ ইমাম হাসানের স্ত্রী জায়েদাহ বিনতে আশআছ মুয়াবিয়ার ষড়যন্ত্রে ইমামকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছিল । এক লক্ষ দিরহাম ও ইয়াজিদের সাথে বিয়ে দেয়ার কথা বলে মুয়াবিয়া জায়েদাহকে প্রলুব্ধ করেছিল (২য় খণ্ড ,পৃঃ ৬৫০)

আশআছের পুত্র মুহাম্মদ মুসলিম ইবনে আকিলের সাথে কুফায় প্রতারণা করেছিল এবং কারবালায় ইমাম হুসাইনের হৃদয় বিদারক শাহাদাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু এতসব সত্ত্বেও বুখারি ,মুসলিম ,আবু দাউদ ,তিরমিজি ,নাসাই ও ইবনে মাজাহ হাদিস গ্রন্থে আশআছের রিওয়াত গ্রহণ করা হয়েছে।

২। নাহরাওয়ানের যুদ্ধের পর একদিন আমিরুল মোমেনিন কুফার মসজিদে সালিসির কুফল সম্বন্ধে খোৎবা প্রদান করছিলেন। তখন একজন লোক (আশআছ) দাঁড়িয়ে বললো , হে আমিরুল মোমেনিন ,প্রথমে আপনি আমাদেরকে এ সালিসি মানতে নিবৃত্ত করেছিলেন ,কিন্তু পরবর্তীতে আপনি নিজেই তা মঞ্জুর করেছেন। আমরা বুঝতে পারছি না। আপনার এ দুটো অবস্থার কোনটি সঠিক ও শুদ্ধ। ” এ কথা শুনে আমিরুল মোমেনিন তাঁর এক হাতের ওপর অন্য হাত দিয়ে তালি বাজিয়ে বললেন , এটাই সে ব্যক্তির পুরস্কার যে দৃঢ় মতামত পরিহার করে ; অর্থাৎ এটা তোমাদের কৃতকর্মের ফল কারণ তোমরা দৃঢ়তা ও সতর্কতা পরিহার করে সালিসির জন্য গো ধরেছিলো। ” আমিরুল মোমেনিনের কথার মর্মার্থ বুঝতে না পেরে আশআছ বললো , হে আমিরুল মোমেনিন ,এতে আপনার নিজের ওপরই দোষ আসবে। ” আশআছের এ কথার প্রেক্ষিতে আমিরুল মোমেনিন কর্কশভাবে বললেনঃ

তুমি কি জান আমি কী বলছি ? তুমি কি করে বুঝলে কোনটা আমার অনুকূলে আর কোনটা আমার প্রতিকূলে ? তুমি তাঁতির পুত্র তাঁতি এবং মোশরেক দ্বারা লালিত পালিত। তুমি একজন মোনাফিক। তোমার ওপর আল্লাহ ও সারা জাহানের অভিশাপ।

আশআছকে তাঁতি বলার অনেক কারণ টীকাকারগণ লিখেছেন। প্রথমতঃ তার জন্মভূমির অধিকাংশ লোকের মত আশআছ ও তার পিতা কাপড় বুনতো। এ পেশায় অত্যন্ত নিচ শ্রেণির লোকেরা নিয়োজিত ছিল। ইয়েমেনের অধিকাংশ লোক এ পেশায় নিয়োজিত ছিল। জাহীজ ’ লিখেছেনঃ

এ জনগোষ্ঠী সম্পর্কে আমি কী আর বলব ,যাদের অধিকাংশই তাঁতি ,মুচি ,চামার ,বানর পালক ও গাধার সওয়ার। মাথায় বুটিওয়ালা পাখী তাদেরকে খুঁজে বের করে ,ইদুর তাদের চারপাশে অজস্র সংখ্যায় এবং তারা একজন নারী দ্বারা শাসিত (পৃঃ ১৩০)

দ্বিতীয়তঃ হিকায়া ’ শব্দের অর্ত হলো শরীরকে একদিকে বাঁকা করে হাটা। যেহেতু আশআছ গর্ব ও অহঙ্কার বশতঃ কাঁধ ঝাঁকিয়ে শরীর বাঁকিয়ে হাঁটতো সেহেতু তাকে হাইক ’ বলা হয়েছে।

তৃতীয়তঃ আশআছের বোকামি ও নীচতা বুঝানোর জন্যই তাকে তাঁতি বলা হয়েছে। কারণ যে কোন নীচ প্রকৃতির লোককে আরবদেশে তাঁতি বলা হতো। এটা উক্ত পেশার কারণে প্রবাদে পরিণত হয়েছিল।

চতুর্থতঃ এ শব্দটি দ্বারা সেসব লোককে বুঝানো হয়েছে যারা আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ; বিশেষ করে মোনাফেকীর জাল বুনে। আমিলী লিখেছেনঃ

ইমাম জাফর সাদিকের সম্মুখে যখন বলা হয়েছিল যে , হাইক ’ কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তখন তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন , হাইক ’ সে ব্যক্তি যে আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে (খণ্ড ১২ ,পৃঃ ১০১)

মূলতঃ আমিরুল মোমেনিন। হাইক ’ বা তাঁতি ' শব্দ দ্বারা মোনাফিক বুঝিয়েছেন। সেজন্যই তিনি আশআছের ওপর আল্লাহ ও অন্য সকলের অভিশম্পাত দিয়েছেন। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ

আমরা মানুষের জন্য যে সব স্পষ্ট নিদর্শন ও হেদায়েত কিতাবে নাজেল করেছি তা যারা গোপন করে আল্লাহ তাদের লা 'নত দেন এবং অভিশাপকারীগণও অভিশাপ দেয় (কুরআন - ২:১৫৯)

এরপর আমিরুল মোমেনিন বললেন , মোশরেক থাকাকালে বন্দী হবার অবমাননাকর অবস্থা তুমি মুছে ফেলতে পারনি। এমন কি ইসলাম গ্রহণের পরও বন্দী হবার কলঙ্কের ছাপ তোমাকে ত্যাগ করেনি। ’ ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তার বন্দী হবার কাহিনী হলো - বনি মুরাদ যখন তার পিতা কায়েসকে হত্যা করলো তখন সে বনি কিনদাহ থেকে যোদ্ধা সংগ্রহ করে তাদের তিন দলে বিভক্ত করলো। এক দলের নেতৃত্ব সে নিজে গ্রহণ করলো ,আরেক দলকে কাব ইবনে হানীর নেতৃত্বাধীন এবং অন্য দলকে কাশআম ইবনে ইয়াজিদ আল - আরকামের নেতৃত্বাধীনে দিয়েছিল। তারপর সে বনি মুরাদের সাথে যুদ্ধ করতে যাত্রা করলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে বনি মুরাদের পরিবর্তে বনি হারিছ ইবনে কাবকে আক্রমণ করে বসলো। ফলে কাব ইবনে হানী ও কাশআম ইবনে ইয়াজিদ নিহত হলো এবং সে জীবিত বন্দী হলো। সে তিন হাজার উট মুক্তিপণ দিয়ে পরবর্তীতে মুক্তিলাভ করলো ।

আশআছের দ্বিতীয়বার বন্দী হবার ঘটনা হলো - রাসূলের ইহধাম ত্যাগের পর খলিফা আবু বকরের একটা আদেশ বাতিলের জন্য হাদ্রামাউত অঞ্চলে বিদ্রোহ হয়েছিল। উক্ত আদেশে খলিফা হাদ্রামাউত অঞ্চলের গভর্ণর জিয়াদ ইবনে লাবিদ আল - বায়াদি আল আনসারীকে লেখেছিলেন ,সে যেন লোকদের কাছ থেকে তার বায়াত ও জাকাত আদায় করে। জিয়াদ জাকাত আদায় করতে গিয়ে শায়তান ইবনে হাজরের একটা মোটাতাজা ও সুন্দর উস্ট্রির ওপর লাফিয়ে ওঠে বসে পড়লো। শায়তান তার এ উস্ট্রিটি ছাড়তে চাইলো না এবং এটির বদলে যে কোন উস্ট্রি নিয়ে যেতে অনুরোধ করলো। কিন্তু জিয়াদ তাতে রাজি হলো না। শায়তান তার ভ্রাতা আদ্দা ইবনে হাজারকে ডেকে পাঠালো। সে এসে জিয়াদের সাথে কথা বললো কিন্তু জিয়াদ কিছুতেই উস্ট্রিটির লাগাম থেকে হাত সরাতে রাজি হলো না। অবশেষে উভয় ভ্রাতা সাহায্যের জন্য মাসরুক ইবনে মাদি কারিবের কাছে আবেদন করলো। মাসরুকেও তার প্রভাব খাটিয়ে চেষ্টা করে উস্ট্রিটি জিয়াদের দখল থেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হলো। এতে মাসরুক ভীষণ রাগান্বিত হয়ে গেল এবং উস্ট্রিটির বাঁধন খুলে দিয়ে তা শায়তানের হাতে দিয়ে দিল। মাসরুকের এহেন ব্যবহারে জিয়াদ অপমান বোধ করলো এবং রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেল । সে লোকজন সংগ্রহ করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলো। অপরদিকে বনি ওয়ালিয়াহ ও তাদেরকে মোকাবেলা করার জন্য জড়ো হলো কিন্তু জিয়াদকে পরাজিত করতে পারেনি ,বরং তার হাতে ভীষণ মার খেয়েছিল। জিয়াদ তাদের নারীগণকে নিয়ে গিয়েছিল এবং সমস্ত সম্পদ লুটপাট করেনিয়েছিল। দৈবক্রমে যারা বেঁচে গিয়েছিল তারা আশাআছের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। আশাআছ এক শর্তে তাদের সাহায্য করতে সম্মত হলো যে ,তারা তাকে সে এলাকার শাসনকর্তা বলে স্বীকৃতি দেবে। জনগণ সেই শর্ত মেনে নিয়ে আশআছের অভিষেক উদযাপন করলো। এরপর আশআছ সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করে জিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাত্রা করলো। অপরপক্ষে জিয়াদকে সাহায্য করার জন্য আবু বকর ইয়েমেনের প্রধান মুহাজির ইবনে আবি উমাইয়াকে পত্র দিয়েছিল। মুহাজির তার বাহিনীসহ জিয়াদের দিকে এগিয়ে যাবার সময় পথিমধ্যে যুরকান নামক স্থানে আশআছের বাহিনীর সাথে মুখোমুখি হয় এবং উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। আশআছ বেশিক্ষণ টিকতে পারলো না। সে তার লোকজনসহ নুজায়ার নামক দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করলো। মুহাজিরও পিছু ধাওয়া করে দূর্গ অবরোধ করলো। আশআছ ভাবলো অস্ত্র আর জনবল ছাড়া এভাবে কতদিন সে দূর্গে আবদ্ধ হয়ে থাকবে। ফলে সে এক রাতে চুরি করে দূর্গের বাইরে এসে জিয়াদ ও মুহাজিরের সাথে দেখা করলো এবং তাদের সঙ্গে এ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো যে ,যদি তারা ,তার পরিবারের নয় জনের নিরাপত্তা বিধান করে তবে সে দূর্গের ফটক খুলে দেবে। জিয়াদ ও মুহাজির এতে রাজি হলো। আশআছ উক্ত নয় জনের নাম লেখে তাদের হাতে দিল কিন্তু তার নিজের নাম লেখতে ভুলে গিয়েছিল। এদিকে সে দুর্গে ফিরে গিয়ে বললো যে ,সে সকলের জীবনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। সে দুর্গের ফটক খুলে দেয়ার নির্দেশ দিল। যেইনা ফটক খোলা হলো অমনি জিয়াদের বাহিনী তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। দূর্গের জনতা বললো তাদের জীবনের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। জিয়াদের সৈন্যরা বললো আশাআছ যে নয় জনের নিরাপত্তা চেয়েছে সে নয় জনের তালিকা তাদের কাছে রয়েছে। এ দূর্গে আটশত লোক হত্যা করা হয়েছিল এবং বেশ কজন মহিলার হাত কেটে ফেলা হয়েছিল । চুক্তি অনুযায়ী নয় জনকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আশআছের নাম তালিকায় না থাকায় তার বিষয়টি জটিল হয়ে পড়লো। অবশেষে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে এক হাজার নারী বন্দিনীর সাথে মদিনায় আবু বকরের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল। পথিমধ্যে নারী - পুরুষ ,আত্মীয় - স্বজন সবাই তাকে অভিশম্পাত দিয়েছিল এবং মহিলারা তাকে উরফ - আন - নার ” (অর্থাৎ এমন বিশ্বাসঘাতক যে নিজের লোকদের তরবারির নিচে ঠেলে দেয়) বলে গালি দিয়েছিল। যাহোক মদিনায় পৌছার পর আবু বকর তাকে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর সে আবু বকরের বোন উম্মে ফরওয়াহকে বিয়ে করেছিল।

খোৎবা- ২০

فَإِنَّكُمْ لَوْ قَدْ عَايَنْتُمْ مَا قَدْ عَايَنَ مَنْ مَاتَ مِنْكُمْ - لَجَزِعْتُمْ ووَهِلْتُمْ وسَمِعْتُمْ وأَطَعْتُمْ - ولَكِنْ مَحْجُوبٌ عَنْكُمْ مَا قَدْ عَايَنُوا - وقَرِيبٌ مَا يُطْرَحُ الْحِجَابُ - ولَقَدْ بُصِّرْتُمْ إِنْ أَبْصَرْتُمْ وأُسْمِعْتُمْ إِنْ سَمِعْتُمْ - وهُدِيتُمْ إِنِ اهْتَدَيْتُمْ - وبِحَقٍّ أَقُولُ لَكُمْ لَقَدْ جَاهَرَتْكُمُ الْعِبَرُ وزُجِرْتُمْ بِمَا فِيه مُزْدَجَرٌ - ومَا يُبَلِّغُ عَنِ اللَّه بَعْدَ رُسُلِ السَّمَاءِ إِلَّا الْبَشَرُ.

মৃত্যু ও তার শিক্ষা

যারা তোমাদের পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছে তারা যা দেখেছে তা যদি তোমরা দেখতে পেতে তাহলে তোমরা বিচলিত ও অস্থির হয়ে পড়তে এবং তখন তোমরা কর্ণপাত করতে ও মান্য করতে। কিন্তু মৃতরা যা দেখেছে তা তোমাদের নিকট রহস্যাবৃত করা হয়েছে। সহসাই এ রহস্যের পর্দা উন্মোচন করা হবে। তোমাদেরকে সবকিছু দেখানো হয়েছে যদি তোমরা দেখে থাক ,সবকিছু শুনানো হয়েছে। যদি তোমরা শুনে থাক এবং হেদায়েতের পথ দেখানো হয়েছে। যদি তোমরা হেদায়েত গ্রহণ করা। আমি তোমাদের সঙ্গে যেসব কথা বলেছি তা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। বহু রকম নির্দেশমূলক দৃষ্টান্ত দিয়ে তোমাদের উচ্চস্বরে ডাকা হয়েছে এবং পরিপূর্ণ সাবধান বাণীর মাধ্যমে সাবধান করা হয়েছে। স্বগীয় বার্তাবাহকের (জিব্রাইল) পর শুধুমাত্র মানুষই আল্লাহর বার্তা পৌছে দিতে পারে। (সুতরাং আমি যা পৌছে দিচ্ছি তা আল্লাহর কাছ থেকেই প্রাপ্ত) ।

খোৎবা- ২১

وهي كلمة جامعة للعظة والحكمة

فَإِنَّ الْغَايَةَ أَمَامَكُمْ وإِنَّ وَرَاءَكُمُ السَّاعَةَ تَحْدُوكُمْ تَخَفَّفُوا تَلْحَقُوا فَإِنَّمَا يُنْتَظَرُ بِأَوَّلِكُمْ آخِرُكُمْ.

দুনিয়াতে নিজকে হালকা রাখার উপদেশ

নিশ্চয়ই ,তোমার লক্ষ্যবস্তু (পুরস্কার অথবা শাস্তি) তোমার সম্মুখে। তোমার পেছনে কেয়ামতের মুহুর্ত (মৃত্যু) যা তোমাকে দ্রুত অনুসরণ করে চলছে। নিজকে হালকা রাখো (পাপভার থেকে) তাহলে সামিল হতে পারবে (অগ্রবর্তীগণের সাথে) । তোমার পূর্ববর্তীরা তোমার জন্য প্রতীক্ষা রত আছে।

খোৎবা- ২২

حين بلغه خبر الناكثين ببيعته

وفيها يذم عملهم ويلزمهم دم عثمان ويتهددهم بالحرب

أَلَا وإِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ ذَمَّرَ حِزْبَه واسْتَجْلَبَ جَلَبَه لِيَعُودَ الْجَوْرُ إِلَى أَوْطَانِه ويَرْجِعَ الْبَاطِلُ إِلَى نِصَابِه واللَّه مَا أَنْكَرُوا عَلَيَّ مُنْكَراً - ولَا جَعَلُوا بَيْنِي وبَيْنَهُمْ نَصِفاً.

وإِنَّهُمْ لَيَطْلُبُونَ حَقّاً هُمْ تَرَكُوه ودَماً هُمْ سَفَكُوه - فَلَئِنْ كُنْتُ شَرِيكَهُمْ فِيه فَإِنَّ لَهُمْ لَنَصِيبَهُمْ مِنْه - ولَئِنْ كَانُوا وَلُوه دُونِي فَمَا التَّبِعَةُ إِلَّا عِنْدَهُمْ - وإِنَّ أَعْظَمَ حُجَّتِهِمْ لَعَلَى أَنْفُسِهِمْ - يَرْتَضِعُونَ أُمّاً قَدْ فَطَمَتْ ويُحْيُونَ بِدْعَةً قَدْ أُمِيتَتْ - يَا خَيْبَةَ الدَّاعِي مَنْ دَعَا وإِلَامَ أُجِيبَ - وإِنِّي لَرَاضٍ بِحُجَّةِ اللَّه عَلَيْهِمْ وعِلْمِه فِيهِمْ.

فَإِنْ أَبَوْا أَعْطَيْتُهُمْ حَدَّ السَّيْفِ - وكَفَى بِه شَافِياً مِنَ الْبَاطِلِ ونَاصِراً لِلْحَقِّ - ومِنَ الْعَجَبِ بَعْثُهُمْ إِلَيَّ أَنْ أَبْرُزَ لِلطِّعَانِ وأَنْ أَصْبِرَ لِلْجِلَادِ - هَبِلَتْهُمُ الْهَبُولُ لَقَدْ كُنْتُ ومَا أُهَدَّدُ بِالْحَرْبِ ولَا أُرْهَبُ بِالضَّرْبِ - وإِنِّي لَعَلَى يَقِينٍ مِنْ رَبِّي وغَيْرِ شُبْهَةٍ مِنْ دِينِي.

উসমানের হত্যার জন্য যারা তাকে দোষী করেছিল তাদের সম্বন্ধে

সাবধান! শয়তান তার সেনাবাহিনী সংগ্রহ করেনিশ্চয়ই তাদের প্ররোচিত ও সুসজ্জিত করতে আরম্ভ করেছে যেন অত্যাচার শেষ সীমায় পৌছায় এবং বিভ্রান্তি আসন গেড়ে বসতে পারে। আল্লাহর কসম ,তারা আমার ওপর যে দোষ আরোপ করছে তা সঠিক নয় এবং আমার ও তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করছে না।

তারা আমার কাছে একটা অধিকার দাবি করছে যা তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা আমার কাছে এমন একটা রক্তপণ চাচ্ছে যা তারা নিজেরাই ঘটিয়েছে । আমি যদি সে রক্তপাতে তাদের অংশীদার হতাম। তাহলেও তাতে তাদের অংশ রয়েছে। কিন্তু তারা আমাকে ছাড়াই সে রক্তপাত ঘটিয়েছে। কাজেই তার ফলাফলও তাদের ভুগতে হবে। আমার বিরুদ্ধে সব চাইতে জোরালো যে যুক্তি তারা দাঁড় করিয়েছে প্রকৃত অর্থে তা তাদের নিজেদের বিরুদ্ধে যায়। তারা এমন মায়ের স্তন চুষছে যার দুধ আগেই শুকিয়ে গেছে এবং এমন বানোয়াট বিষয়কে জীবন দান করতে চায় যা আগেই মরে গেছে। কত হতাশাব্যঞ্জক যুদ্ধের জন্য তাদের এ চ্যালেঞ্জ ? কে এই চ্যালেঞ্জার এবং কিসের জন্য সে সাড়া দিচ্ছে ? আমি খুশি এ জন্য যে ,তাদের সম্মুখে সকল যুক্তি নিঃশেষ করা হয়েছে এবং তাদের সম্বন্ধে আল্লাহ সবকিছু অবগত আছেন। (আমার নির্দোষ হবার যুক্তি মানতে) । যদি তারা অস্বীকৃতি জানায় তবে আমার তরবারি উন্মুক্ত রইল যা ভুলের চিকিৎসক ও ন্যায়ের সমর্থক হিসেবে যথেষ্ট।

এটা বিস্ময়কর যে ,বর্শা - যুদ্ধের জন্য এগিয়ে যেতে এবং তরবারি - যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে তারা আমাকে খবর পাঠিয়েছে। শোক প্রকাশকারী রমণীকুল তাদের জন্য ক্রন্দন করুক! আমি কি কখনো এমন ছিলাম যে ,যুদ্ধকে ভয় করেছি বা সংঘর্ষে আতঙ্কিত হয়েছি। আল্লাহ চিরকাল আমার সহায় এবং আমার ইমানে কোন প্রকার সংশয় নেই।

___________________

১ । উসমান নিহত হবার জন্য যখন আমিরুল মোমেনিনকে দোষারোপ করা হলো তখন তিনি অভিযোগ খণ্ডন করে এ খোৎবা প্রদান করেন। যারা তাকে দোষারোপ করেছিলো তাদের সম্বন্ধে তিনি বলেন , এ প্রতিশোধ গ্রহণেচ্ছুগণ একথা বলতে পারে না যে , আমি একাই হত্যা করেছি এবং অন্য কেউ এতে অংশ গ্রহণ করেনি। প্রত্যক্ষভাবে দেখা ঘটনা প্রবাহ তারা এ বলে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে পারবে না যে , তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাহলে কেন তারা প্রতিশোধ গ্রহণে আমাকে সর্বাগ্রে ধরেছে ? আমার সাথে তাদের নিজদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যদি আমি এ অপবাদ থেকে মুক্তও হই তবু ওরা মুক্ত বলে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না। সুতরাং তারা কিভাবে শাস্তি থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করবে ? সত্যি কথা কী , আমাকে এ অভিযোগে অভিযুক্ত করার পিছনে তাদের উদ্দেশ্য হলো - আমি যেন তাদের প্রতি সেরকম আচরণ করি যেরকম আচরণ পেয়ে তারা অভ্যস্ত হয়েছে। কিন্তু এটা তারা আমার কাছ থেকে আশা করতে পারে না যে , পূর্ববতী সরকারগুলোর নতুন প্রবর্তনগুলো আমি পুনরুজীবিত করবো। যুদ্ধের বিষয়ে আমি পূর্বেও কখনো ভীত ছিলাম না , এখানো ভীত নই। আমার মনোভাব সম্বন্ধে আল্লাহ জ্ঞাত আছেন। আর আল্লাহ এও অবহিত আছেন যে , আজ যারা প্রতিশোধ গ্রহণের ওজর দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তারাই তার হত্যাকারী। ” ইতিহাসে বিধৃত আছে যে , গোলযোগ সৃষ্টি করে যারা উসমানকে হত্যা করার ব্যবস্থা করেছিল , এমনকি তার মৃতদেহের ওপর পাথর নিক্ষেপ করে মুসলিমদের কবরস্থানে তার দাফন প্রতিহত করেছিল তারাই তার রক্তের বদলা নিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনে তৎপর হয়েছিল। এদের মধ্যে তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ , জুবায়ের ইবনে আওয়াম ও আয়শা বিনতে আবু বকরের নাম তালিকার শীর্ষে রয়েছে। হাদীদ লিখেছেঃ

যে সব ঐতিহাসিক উসমান হত্যার বিস্তারিত লিখেছেন তাদের বর্ণনামতে উসমানকে হত্যা করার দিন নিজেকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখার জন্য তালহা কালো আবরণ দিয়ে মুখ ঢেকে উসমানের গৃহের দিকে তীর নিক্ষেপ করেছিল । ঐতিহাসিকগণ আরো বর্ণনা করেছেন যে , জুবায়ের বলেছিল , উসমানকে হত্যা কর । সে আমাদের ইমান পরিবর্তন করে দিয়েছে। ” তখন লোকেরা বলেছিল , হে জুবায়ের , তোমার পুত্র উসমানের দুয়ারে পাহারা দিচ্ছে ৷ ” উত্তরে জুবায়ের বলেছিল , আমার পুত্রকে হারালেও কোন দুঃখ নেই , কিন্তু উসমানকে হত্যা করতেই হবে। আগামীকাল যেন উসমান লাশ হয়ে সিরাতে পড়ে থাকে । (খণ্ড - ৯ , পৃঃ৩৫ - ৩৬)

আয়শা সম্পর্কে রাব্বিহ লিখেছেনঃ

মুঘিরাহ ইবনে শুবাহ একদিন আয়শার কাছে এসেছিল । তখন আয়শা বললেন , হে আবু আবদিল্লাহ , আমার মনে হয়। জামালের যুদ্ধের দিনে তুমি আমার সঙ্গে ছিলে । তুমি নিশ্চয়ই দেখেছে কী হারে তীর আমার হাওদা ভেদ করে চলে গিয়েছিল । কয়েকটি তীর আমার শরীরে সামান্য আঘাতও করেছে। ” মুঘিরাহ বললো , সেসব তীরের আঘাতে তোমার মৃত্যু হলে ভাল হতো ! আয়শা বললেন , আল্লাহ না করুন , তুমি আমন কথা বলছো কেন ? উত্তরে মুঘিরাহ বললো , উসমানের বিরুদ্ধে তুমি যা করেছে। তাতে তার কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত৷ হতো। ” ( খণ্ড - ৪ , পৃঃ ২৯৪) |

খোৎবা - ২৩

وتشتمل على تهذيب الفقراء بالزهد وتأديب الأغنياء بالشفقة

أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ الأَمْرَ يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الأَرْضِ - كَقَطَرَاتِ الْمَطَرِ إِلَى كُلِّ نَفْسٍ بِمَا قُسِمَ لَهَا - مِنْ زِيَادَةٍ أَوْ نُقْصَانٍ - فَإِنْ رَأَى أَحَدُكُمْ لأَخِيه غَفِيرَةً فِي أَهْلٍ أَوْ مَالٍ أَوْ نَفْسٍ - فَلَا تَكُونَنَّ لَه فِتْنَةً - فَإِنَّ الْمَرْءَ الْمُسْلِمَ مَا لَمْ يَغْشَ دَنَاءَةً تَظْهَرُ - فَيَخْشَعُ لَهَا إِذَا ذُكِرَتْ ويُغْرَى بِهَا لِئَامُ النَّاسِ - كَانَ كَالْفَالِجِ الْيَاسِرِ الَّذِي يَنْتَظِرُ أَوَّلَ فَوْزَةٍ - مِنْ قِدَاحِه تُوجِبُ لَه الْمَغْنَمَ ويُرْفَعُ بِهَا عَنْه الْمَغْرَمُ - وكَذَلِكَ الْمَرْءُ الْمُسْلِمُ الْبَرِيءُ مِنَ الْخِيَانَةِ - يَنْتَظِرُ مِنَ اللَّه إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ - إِمَّا دَاعِيَ اللَّه فَمَا عِنْدَ اللَّه خَيْرٌ لَه - وإِمَّا رِزْقَ اللَّه فَإِذَا هُوَ ذُو أَهْلٍ ومَالٍ - ومَعَه دِينُه وحَسَبُه - وإِنَّ الْمَالَ والْبَنِينَ حَرْثُ الدُّنْيَا - والْعَمَلَ الصَّالِحَ حَرْثُ الآخِرَةِ - وقَدْ يَجْمَعُهُمَا اللَّه تَعَالَى لأَقْوَامٍ - فَاحْذَرُوا مِنَ اللَّه مَا حَذَّرَكُمْ مِنْ نَفْسِه - واخْشَوْه خَشْيَةً لَيْسَتْ بِتَعْذِيرٍ واعْمَلُوا فِي غَيْرِ رِيَاءٍ ولَا سُمْعَةٍ - فَإِنَّه مَنْ يَعْمَلْ لِغَيْرِ اللَّه يَكِلْه اللَّه لِمَنْ عَمِلَ لَه - نَسْأَلُ اللَّه مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ ومُعَايَشَةَ السُّعَدَاءِ - ومُرَافَقَةَ الأَنْبِيَاءِ.

أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّه لَا يَسْتَغْنِي الرَّجُلُ - وإِنْ كَانَ ذَا مَالٍ عَنْ - عِتْرَتِه ودِفَاعِهِمْ عَنْه بِأَيْدِيهِمْ وأَلْسِنَتِهِمْ - وهُمْ أَعْظَمُ النَّاسِ حَيْطَةً مِنْ وَرَائِه وأَلَمُّهُمْ لِشَعَثِه وأَعْطَفُهُمْ عَلَيْه عِنْدَ نَازِلَةٍ إِذَا نَزَلَتْ بِه - ولِسَانُ الصِّدْقِ يَجْعَلُه اللَّه لِلْمَرْءِ فِي النَّاسِ - خَيْرٌ لَه مِنَ الْمَالِ يَرِثُه غَيْرُه.

ومنها أَلَا لَا يَعْدِلَنَّ أَحَدُكُمْ عَنِ الْقَرَابَةِ يَرَى بِهَا الْخَصَاصَةَ أَنْ يَسُدَّهَا بِالَّذِي لَا يَزِيدُه إِنْ أَمْسَكَه - ولَا يَنْقُصُه إِنْ أَهْلَكَه ومَنْ يَقْبِضْ يَدَه عَنْ عَشِيرَتِه - فَإِنَّمَا تُقْبَضُ مِنْه عَنْهُمْ يَدٌ وَاحِدَةٌ - وتُقْبَضُ مِنْهُمْ عَنْه أَيْدٍ كَثِيرَةٌ - ومَنْ تَلِنْ حَاشِيَتُه يَسْتَدِمْ مِنْ قَوْمِه الْمَوَدَّةَ.

ঈর্ষা পরিহার করে চলা এবং আত্মীয় - স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার করা সম্বন্ধে

নিশ্চয়ই ,আল্লাহর আদেশাবলী আকাশ থেকে বৃষ্টিবিন্দুর মতে পৃথিবীতে নেমে আসে। এতে পূর্বনির্ধারিত ভাগ্য - লিপি অনুযায়ী কারো জন্য বেশি কারো জন্য কম রহমত ও নেয়ামত আসে। সুতরাং যদি কেউ তার ভাইয়ের সন্তান - সন্ততি ও সম্পদের প্রাচুর্য আসতে দেখে ,তবে তার হতাশাগ্রস্ত বা উদ্বীগ্ন হবার কিছু নেই। এমনকি নিজের সন্তান - সন্ততি ও সম্পদের প্রাচুর্যের জন্য গর্ববোধ করার কিছু নেই। নিচ লোকেরাই এসব নিয়ে আত্ম - অহম বোধ করে। সম্পদের প্রাচুর্য দেখলে যতদিন পর্যন্ত একজন মুসলিম (লজ্জায়) চক্ষুবন্ধ না করবে ততদিন পর্যন্ত সে একজন জুয়াড়ি সদৃশ ; যে প্রথমবারের তীর নিক্ষেপেই লাভবান হয়ে পূর্বের লোকসান পুষিয়ে নেয়ার আশা পোষণ করে।

একইভাবে যে মুসলিম খেয়ানত মুক্ত সে দুটো ভাল জিনিসের একটা আশা করতে পারে। জিনিস দুটো হলো - (এক) আল্লাহর আহবান এবং সেক্ষেত্রে আল্লাহর কাছ থেকে যা কিছু আসে তাই তার জন্য সর্বোত্তম ধরে নেয়া ; (দুই) আল্লাহর রেজেক। তার সন্তান - সন্ততি ও বিষয় - সম্পদ যতই থাকুক না কেন তার ইমান ও সম্মান তার সাথেই থাকবে। নিশ্চয়ই ,সন্তান - সন্ততি ও ঐশ্বর্য ইহজগতের চাষাবাদ এবং আমলে সালেহা পরকালের চাষাবাদ। কখনো কখনো মহিমান্বিত আল্লাহ এর উভয়ই কোন কোন কওমিকে একত্রে দান করে থাকেন ।

যেসব বিষয়ে আল্লাহ তোমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন সেসব বিষয়ে সাবধান থেকো এবং আল্লাহকে ভয় কর। কারণ এ বিষয়ে কোন ওজর কার্যকর হবে না। বে - রিয়া (লোক দেখানোর জন্য নয়) আমল কর: বাহবা শোনার জন্য করো না। কোন মানুষ যদি গায়রুল্লাহর আমল করে তবে যার উদ্দেশ্যে সে আমল করেছে তার কাছে আল্লাহ্ তাকে ন্যস্ত করেন। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদেরকে শহিদের মর্যাদা ,পরহেযগারগণের সাথে জীবন যাপন ও রাসূলগণের বন্ধুত্ব প্রদান করেন।

হে জনমণ্ডলী ,কেউ তার আপনজনের সহায়তা ব্যতীত চলতে পারে না (যদি সে ঐশ্বর্যবানও হয়) । তাদের সহায়তা হস্ত দ্বারা অথবা মুখের কথায়ও হতে পারে। শুধুমাত্র আপনজনই পিছন থেকে সমর্থনকারী এবং আপদে - বিপদে পক্ষ বিস্তার করে রক্ষাকারী। দুঃখ - দুর্দশায় নিপতিত হলে আপনজনই সদয় দৃষ্টিতে তাকায়। কোন মানুষের মঙ্গলময় স্মৃতি ,যা মানুষের মাঝেই আল্লাহ সংরক্ষণ করে রাখেন ,যেকোন ঐশ্বর্য থেকে উত্তম।

মনে রেখো ,তোমরা যদি তোমাদের আপনজনকে অভাবগ্রস্ত অবস্থায় অথবা উপোস করতে দেখ তাহলে তাদের সাহায্য করা থেকে একথা ভেবে বিরত থেকো না যে ,তুমি সাহায্য না করলে তাদের অভাব বেড়ে যাবে না অথবা তোমার সাহায্যে তাদের দুঃখ - দুর্দশা সামান্যই লাঘব হবে। যারা আপনজনকে সাহায্য করা থেকে হাত গুটিয়ে রাখে তারা প্রয়োজনের সময় অনেক হাত গুটানো দেখতে পাবে। যে কেউ মিষ্টি স্বভাবের হবে তার প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা - ভালবাসা চিরস্থায়ী হয়ে থাকে।

খোৎবা- ২৪

وهي كلمة جامعة له، فيها تسويغ قتال المخالف، والدعوة إلى طاعة اللَّه، والترقي فيها لضمان الفوز

ولَعَمْرِي مَا عَلَيَّ مِنْ قِتَالِ مَنْ خَالَفَ الْحَقَّ وخَابَطَ الْغَيَّ مِنْ إِدْهَانٍ ولَا إِيهَانٍ فَاتَّقُوا اللَّه عِبَادَ اللَّه وفِرُّوا إِلَى اللَّه مِنَ اللَّه - وامْضُوا فِي الَّذِي نَهَجَه لَكُمْ وقُومُوا بِمَا عَصَبَه بِكُمْ فَعَلِيٌّ ضَامِنٌ لِفَلْجِكُمْ آجِلًا إِنْ لَمْ تُمْنَحُوه عَاجِلًا.

জনগণকে জিহাদের জন্য প্রেরণাদান

আমার জীবনের কসম ,যারা ন্যায়ের বিরোধিতা করে অথবা বিপথে হাতড়িয়ে বেড়ায় তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আমার কোন শিথিলতা নেই এবং তাদের প্রতি আমার সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধও নেই। হে আল্লাহর বান্দাগণ ,তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ; তাঁর রোষে পতিত হওয়া থেকে দূরে থাক এবং তাঁর করুণা যাচনা কর। তিনি তোমাদের জন্য যে সকল নির্দেশ দিয়েছেন সে পথে চল এবং যা তোমাদের আদেশ করেছেন তাতে দৃঢ়ভাবে অবস্থান কর। যদি তোমরা সেভাবে চল তবে এ আলী তোমাদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিচ্ছে ; হতে পারে ইহজগতে তোমরা তা নাও পেতে পার ,কিন্তু পরকালের চিরস্থায়ী সুখ অবধারিত ।

খোৎবা- ২৫

وقد تواترت عليه الأخبار باستيلاء أصحاب معاوية على البلاد وقدم عليه عاملاه على اليمن وهما عبيد الله بن عباس وسعيد بن نمران لما غلب عليهما بسر بن أبي أرطاة فقامعليه‌السلام على المنبر ضجرا بتثاقل أصحابه عن الجهاد ومخالفتهم له في الرأي فقال:

مَا هِيَ إِلَّا الْكُوفَةُ أَقْبِضُهَا وأَبْسُطُهَا إِنْ لَمْ تَكُونِي إِلَّا أَنْتِ تَهُبُّ أَعَاصِيرُكِ فَقَبَّحَكِ اللَّه! وتَمَثَّلَ بِقَوْلِ الشَّاعِرِ

لَعَمْرُ أَبِيكَ الْخَيْرِ يَا عَمْرُو إِنَّنِي عَلَى وَضَرٍ مِنْ ذَا الإِنَاءِ قَلِيلِ ثُمَّ قَالَعليه‌السلام

أُنْبِئْتُ بُسْراً قَدِ اطَّلَعَ الْيَمَنَ وإِنِّي واللَّه لأَظُنُّ أَنَّ هَؤُلَاءِ الْقَوْمَ سَيُدَالُونَ مِنْكُمْ بِاجْتِمَاعِهِمْ عَلَى بَاطِلِهِمْ وتَفَرُّقِكُمْ عَنْ حَقِّكُمْ - وبِمَعْصِيَتِكُمْ إِمَامَكُمْ فِي الْحَقِّ وطَاعَتِهِمْ إِمَامَهُمْ فِي الْبَاطِلِ - وبِأَدَائِهِمُ الأَمَانَةَ إِلَى صَاحِبِهِمْ وخِيَانَتِكُمْ - وبِصَلَاحِهِمْ فِي بِلَادِهِمْ وفَسَادِكُمْ - فَلَوِ ائْتَمَنْتُ أَحَدَكُمْ عَلَى قَعْبٍ لَخَشِيتُ أَنْ يَذْهَبَ بِعِلَاقَتِه اللَّهُمَّ إِنِّي قَدْ مَلِلْتُهُمْ ومَلُّونِي وسَئِمْتُهُمْ وسَئِمُونِي - فَأَبْدِلْنِي بِهِمْ خَيْراً مِنْهُمْ وأَبْدِلْهُمْ بِي شَرّاً مِنِّي - اللَّهُمَّ مِثْ قُلُوبَهُمْ كَمَا يُمَاثُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ - أَمَا واللَّه لَوَدِدْتُ أَنَّ لِي بِكُمْ أَلْفَ فَارِسٍ - مِنْ بَنِي فِرَاسِ بْنِ غَنْمٍ.

هُنَالِكَ لَوْ دَعَوْتَ أَتَاكَ مِنْهُمْ

فَوَارِسُ مِثْلُ أَرْمِيَةِ الْحَمِيمِ

যখন আমিরুল মোমেনিন উত্তরোত্তর সংবাদ পেতে লাগলেন যে ,মুয়াবিয়ার জনগণ একের পর এক শহর দখল করেনিচ্ছে এবং ইয়েমেন থেকে তার অফিসার উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও সাঈদ ইবনে নিমরান মুয়াবিয়ার লোক বুসর ইবনে আরতাঁতের নিকট পরাজিত হয়ে পিছু হটে এসেছে ,তখন আমিরুল মোমেনিন। তাঁর লোকদের জিহাদে বিমুখতা ও তার সাথে মতদ্বৈধতার কারণে বিচলিত হলেন । তিনি মিম্বারে উঠে। এ খোৎবা প্রদান করেন।

কুফা ব্যতীত আমার জন্য আর কিছুই রইল না। যা আমি সংকীর্ণ ও প্রশস্ত করতে পারি। (হে কুফা) তোর দশা যদি এ রকমই হয় যে ,তোর ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বইতেই থাকবে তবে আল্লাহ তোকে ধ্বংস করুক। তাৎপর তিনি একটা কবিতার দুটি পংক্তি আবৃত্তি করলেনঃ

হে আমর ! তোমার পরম পিতার দোহাই ,এ পাত্র থেকে আমি সামান্য একটুখানি চর্বি পেয়েছি ,যা পাত্র খালি করার পর পাত্রের গায়ে লেগেছিল ।

আমি জানতে পারলাম যে ,বুসর ইয়েমেন দখল করেনিয়েছে। আল্লাহর কসম ,এসব লোক সম্পর্কে আমি চিন্তা করে দেখেছি এরা সহসাই সারা দেশ কেড়ে নিয়ে যাবে। কারণ তারা বাতিলের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকেও একতাবদ্ধ। অথচ তোমরা সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকেও ঐক্যবদ্ধ নও - তোমরা দ্বীধাবিভক্ত। ন্যায়ের পথে থাকা সত্ত্বেও তোমরা তোমাদের ইমামকে অমান্য কর। আর বাতিল পথে থাকা সত্ত্বেও তারা তাদের নেতাকে মান্য করে। তারা তাদের নেতার প্রতি সম্পূর্ণরূপে আস্থাবান ; আর তোমরা তোমাদের ইমামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা কর। তাদের শহরে তারা কল্যাণকর কাজ করে ; আর তোমরা তোমাদের শহরে অকল্যাণকর কাজ কর। যদি আমি তোমাদের একটা কাঠের গামলার দায়িত্বও দেই ,আমার মনে হয় ,তোমরা তার হাতল নিয়ে পালিয়ে যাবে।

হে আমার আল্লাহ ,তারা আমার প্রতি নিদারুণভাবে বিরক্ত ; আমিও তাদের প্রতি বিরক্ত। তারা আমাকে নিয়ে ক্লান্ত ; আমিও তাদের নিয়ে ক্লান্ত। তাদের চেয়ে ভালো কোন জনগোষ্ঠী আমাকে দিন এবং আমার চেয়ে মন্দ কোন নেতা তাদেরকে দিন। হে আল্লাহ ,তাদের হৃদয়কে বিগলিত করুন ,যেভাবে বিগলিত হয় লবন পানিতে। হায়! আল্লাহ ,যদি আমি এদের পরিবর্তে বনি ফিরাস ইবনে ঘানম - এর এক হাজার অশ্বারোহীও পেতাম। কবি বলেছিলেন ;

যদি তুমি তাদের আহবান কর

অশ্বারোহীগণ ধেয়ে আসবে

গ্রীষ্মের মেঘমালার মত।

____________________

১। সিফফিনের ছল - চাতুরিপূর্ণ সালিসির পর মুয়াবিয়ার অবস্থান মজবুত হয়ে উঠলো এবং সে আমিরুল মোমেনিনের শহরসমূহ একের পর এক দখল করে তার রাজত্ব বৃদ্ধির চিন্তা করতে লাগল। সে তার সৈন্যবাহিনী বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করে জোরপূর্বক তার অনুকূলে জনগণের বায়াত আদায় করতে লাগল। এ উদ্দেশ্যে সে বুসর ইবনে আবি আরতাতকে হিজাজ এলাকায় প্রেরণ করেছিল। বুদ্সর হিজাজ থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত হাজার হাজার নিরীহ - নিরপরাধ মানুষের রক্তপাত ঘটিয়েছিল। গোত্রের পর গোত্রের জীবিত লোকদের আগুনে পুড়ে মেরেছিল এবং অসংখ্য শিশু হত্যা করেছিল। তার অত্যাচার এতদূর পর্যন্ত পৌঁছেছিল যে ,ইয়েমেনের গভর্ণর উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের দু ’ টি শিশুপুত্রকে জুহারিয়া বিনতে খালিদ ইবনে কারাজ এর সম্মুখে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল।

যখন আমিরুল মোমেনিন বুসরের এহেন নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও রক্তপাতের সংবাদ পেলেন তখন তাকে খতম করার জন্য একটা বাহিনী প্রেরণের বিষয় চিন্তা - ভাবনা করে স্থির করলেন। কিন্তু অনবচ্ছিন্ন যুদ্ধের ফলে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। আমিরুল মোমেনিনের আহবানে তারা আগ্রহের পরিবর্তে হৃদয়হীনতা দেখিয়েছিল। তাদের অনীহা লক্ষ্য করে তিনি এ খোৎবা প্রদান পূর্বক তাদের উদ্দীপনা ও আত্ম - সম্মানবোধ জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করলেন। তিনি তাদের সম্মুখে শত্রুর ভ্রান্ত দিকসমূহ ও তাদের নিজেদের দোষ - ত্রুটি বর্ণনা করে তাদেরকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করতে চেষ্টা করলেন।

অবশেষে যারিয়াহ ইবনে কুদামাহ আমিরুল মোমেনিনের আহবানে সাড়া দিয়ে দু ’ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী নিয়ে বুসরের মোকাবেলা করেছিল এবং তাকে আমিরুল মোমেনিনের এলাকা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল।

খোৎবা- ২৬

وفيها يصف العرب قبل البعثة ثم يصف حاله قبل البيعة له العرب قبل البعثة

إِنَّ اللَّه بَعَثَ مُحَمَّداًصلى‌الله‌عليه‌وآله نَذِيراً لِلْعَالَمِينَ - وأَمِيناً عَلَى التَّنْزِيلِ - وأَنْتُمْ مَعْشَرَ الْعَرَبِ عَلَى شَرِّ دِينٍ وفِي شَرِّ دَارٍ - مُنِيخُونَ بَيْنَ حِجَارَةٍ خُشْنٍ وحَيَّاتٍ صُمٍّ تَشْرَبُونَ الْكَدِرَ وتَأْكُلُونَ الْجَشِبَ وتَسْفِكُونَ دِمَاءَكُمْ وتَقْطَعُونَ أَرْحَامَكُمْ - الأَصْنَامُ فِيكُمْ مَنْصُوبَةٌ والآثَامُ بِكُمْ مَعْصُوبَةٌ

ومنها صفته قبل البيعة له فَنَظَرْتُ فَإِذَا لَيْسَ لِي مُعِينٌ إِلَّا أَهْلُ بَيْتِي - فَضَنِنْتُ بِهِمْ عَنِ الْمَوْتِ - وأَغْضَيْتُ عَلَى الْقَذَى وشَرِبْتُ عَلَى الشَّجَا وصَبَرْتُ عَلَى أَخْذِ الْكَظَمِوعَلَى أَمَرَّ مِنْ طَعْمِ الْعَلْقَمِ.

ومنها: ولَمْ يُبَايِعْ حَتَّى شَرَطَ أَنْ يُؤْتِيَه عَلَى الْبَيْعَةِ ثَمَناً - فَلَا ظَفِرَتْ يَدُ الْبَائِعِ وخَزِيَتْ أَمَانَةُ الْمُبْتَاعِ فَخُذُوا لِلْحَرْبِ أُهْبَتَهَا وأَعِدُّوا لَهَا عُدَّتَهَا - فَقَدْ شَبَّ لَظَاهَا وعَلَا سَنَاهَا واسْتَشْعِرُوا الصَّبْرَ فَإِنَّه أَدْعَى إِلَى النَّصْرِ.

নবুয়ত প্রকাশের পূর্বে আরবের অবস্থা সম্বন্ধে

আল্লাহ মুহাম্মদকে (সা.) জগতের সকল পাপের বিরুদ্ধে সতর্ককারী এবং তাঁর সকল প্রত্যাদেশের আমানতদার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। সে সময়ে তোমরা (আরবের লোকেরা) একটা কদর্য ধর্মের অনুসারী ছিলে এবং তোমরা কদর্য পাথর (মূর্তি) ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন বিশ্বাসঘাতকদের মাঝে বাস করতে। তোমরা নোংরা পানি (মদ) পান করতে এবং অপবিত্র খাবার খেতে। তোমরা একে অপরের রক্তপাত ঘটাতে এবং আত্মীয়তার বন্ধনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে না । তোমরা সকলে প্রতিমা পূজা করতে এবং সর্বদা পাপে ডুবে থাকতে ।

রাসূলের ইনতিকালের পর আমি লক্ষ্য করে দেখলাম আমার পরিবার পরিজন ছাড়া আমার আর কোন সমর্থক নেই ,তাই আমার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমি তাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে বিরত রইলাম। পরিস্থিতি আমার চোখে ধুলিকণার মত বিধা সত্ত্বেও আমি আমার চোখ বন্ধ রাখলাম ,গলার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা সত্ত্বেও আমি পান করলাম ,আমার শ্বাস - প্রশ্বাসে বিঘ্ন হওয়া এবং তিক্ত খাদ্য পাওয়া সত্ত্বেও আমি ধৈর্য ধারণ করলাম।

মুয়াবিয়া যথেষ্ট মূল্য দিয়ে আমর ইবনে আ 'সের বায়াত আদায় করেছে। এহেন বায়াত ক্রেতার হাত কৃতকার্য নাও হতে পারে এবং বিক্রেতাগণের চুক্তি অসম্মানজনকও হতে পারে। এখন তোমরা যুদ্ধের জন্য অস্ত্র ধারণ কর এবং নিজেদের সাজ - সরঞ্জামের ব্যবস্থা কর। যুদ্ধের শিখা অনেক উচুতে উঠেছে এবং তার ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজকে ধৈর্যের পোষাক পরাও কারণ ধৈর্য জয় অপেক্ষা উত্তম।

____________________

১ । নাহরাওয়ানের যুদ্ধে যাত্রার প্রাক্কালে আমিরুল মোমেনিন এ খোৎবা প্রদান করেছিলেন। আমর ইবনে আসের বিষয়টি হলো আমিরুল মোমেনিনের অনুকূলে মুয়াবিয়ার বায়াত গ্রহণের জন্য তিনি যারীর ইবনে আবদুল্লাহ বাযালীকে মুয়াবিয়ার নিকট প্রেরণ করেছিলেন। মুয়াবিয়া যারীরকে জবাব দানের কথা বলে বিলম্ব করিয়েছিল। সিরিয়ার জনগণ ,মুয়াবিয়াকে কতটুকু সমর্থন করে তা সে ইতোমধ্যে পরীক্ষা করতে লাগলো। মুয়াবিয়া উসমানের রক্তের বদলা নেয়ার কথা বলে সিরিয়ার জনগণকে তার সমর্থক করতে সক্ষম হলো। তখন সে তার ভাই উতবাহ ইবনে আবু সুফিয়ানকে ডেকে আলোচনা করলো। উত্বাহ পরামর্শ দিল , যদি আমর ইবনে আস তোমার সাথে যোগ দেয়। তবে সে তার বিচক্ষণতা দ্বারা অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারবে। কিন্তু উচ্চ মূল্য না পেলে সে তোমার কর্তৃত্ব মেনে নেবে না। যদি তুমি যথেষ্ট মূল্য প্রদান কর তবে সে সেরা সাহায্যকারী ও পরামর্শদাতা হবে। উতবাহর পরামর্শ মুয়াবিয়ার ভালো লেগেছিল। সে আমর ইবনে আসকে ডেকে পাঠালো এবং উভয়ের মধ্যে আলোচনা হলো। উভয়ের মধ্যে এ শর্তে চুক্তি হলো যে ,ইবনে আসকে মিশরের গভর্ণর করা হবে ; বিনিময়ে সে উসমানের হত্যার জন্য আমিরুল মোমেনিনকে দায়ী করে সিরিয়ায় মুয়াবিয়ার কর্তৃত্ব অক্ষুন্ন রাখবে এবং তারা এ চুক্তি পরিপূর্ণ করেছিল।

খোৎবা- ২৭

وفيها يذكر فضل الجهاد، ويستنهض الناس، ويذكر علمه بالحرب

أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ الْجِهَادَ بَابٌ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ - فَتَحَه اللَّه لِخَاصَّةِ أَوْلِيَائِه وهُوَ لِبَاسُ التَّقْوَى - ودِرْعُ اللَّه الْحَصِينَةُ وجُنَّتُه الْوَثِيقَةُ - فَمَنْ تَرَكَه رَغْبَةً عَنْه أَلْبَسَه اللَّه ثَوْبَ الذُّلِّ وشَمِلَه الْبَلَاءُ - ودُيِّثَ بِالصَّغَارِ والْقَمَاءَةِ وضُرِبَ عَلَى قَلْبِه بِالإِسْهَابِ وأُدِيلَ الْحَقُّ مِنْه بِتَضْيِيعِ الْجِهَادِ - وسِيمَ الْخَسْفَ ومُنِعَ النَّصَفَ

أَلَا وإِنِّي قَدْ دَعَوْتُكُمْ إِلَى قِتَالِ هَؤُلَاءِ الْقَوْمِ - لَيْلًا ونَهَاراً وسِرّاً وإِعْلَاناً - وقُلْتُ لَكُمُ اغْزُوهُمْ قَبْلَ أَنْ يَغْزُوكُمْ - فَوَاللَّه مَا غُزِيَ قَوْمٌ قَطُّ فِي عُقْرِ دَارِهِمْ إِلَّا ذَلُّوا - فَتَوَاكَلْتُمْ وتَخَاذَلْتُمْ - حَتَّى شُنَّتْ عَلَيْكُمُ الْغَارَاتُ ومُلِكَتْ عَلَيْكُمُ الأَوْطَانُ - وهَذَا أَخُو غَامِدٍ [و] قَدْ وَرَدَتْ خَيْلُه الأَنْبَارَ وقَدْ قَتَلَ حَسَّانَ بْنَ حَسَّانَ الْبَكْرِيَّ - وأَزَالَ خَيْلَكُمْ عَنْ مَسَالِحِهَا ولَقَدْ بَلَغَنِي أَنَّ الرَّجُلَ مِنْهُمْ كَانَ يَدْخُلُ - عَلَى الْمَرْأَةِ الْمُسْلِمَةِ والأُخْرَى الْمُعَاهِدَةِ فَيَنْتَزِعُ حِجْلَهَا وقُلُبَهَا

وقَلَائِدَهَا ورُعُثَهَا مَا تَمْتَنِعُ مِنْه إِلَّا بِالِاسْتِرْجَاعِ والِاسْتِرْحَامِ ثُمَّ انْصَرَفُوا وَافِرِينَ مَا نَالَ رَجُلًا مِنْهُمْ كَلْمٌ ولَا أُرِيقَ لَهُمْ دَمٌ - فَلَوْ أَنَّ امْرَأً مُسْلِماً مَاتَ مِنْ بَعْدِ هَذَا أَسَفاً - مَا كَانَ بِه مَلُوماً بَلْ كَانَ بِه عِنْدِي جَدِيراً - فَيَا عَجَباً عَجَباً واللَّه يُمِيتُ الْقَلْبَ ويَجْلِبُ الْهَمَّ - مِنَ اجْتِمَاعِ هَؤُلَاءِ الْقَوْمِ عَلَى بَاطِلِهِمْ - وتَفَرُّقِكُمْ عَنْ حَقِّكُمْ - فَقُبْحاً لَكُمْ وتَرَحاً حِينَ صِرْتُمْ غَرَضاً يُرْمَى - يُغَارُ عَلَيْكُمْ ولَا تُغِيرُونَ - وتُغْزَوْنَ ولَا تَغْزُونَ ويُعْصَى اللَّه وتَرْضَوْنَ - فَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِالسَّيْرِ إِلَيْهِمْ فِي أَيَّامِ الْحَرِّ - قُلْتُمْ هَذِه حَمَارَّةُ الْقَيْظِ أَمْهِلْنَا يُسَبَّخْ عَنَّا الْحَرُّ وإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِالسَّيْرِ إِلَيْهِمْ فِي الشِّتَاءِ - قُلْتُمْ هَذِه صَبَارَّةُ الْقُرِّ أَمْهِلْنَا يَنْسَلِخْ عَنَّا الْبَرْدُ - كُلُّ هَذَا فِرَاراً مِنَ الْحَرِّ والْقُرِّ - فَإِذَا كُنْتُمْ مِنَ الْحَرِّ والْقُرِّ تَفِرُّونَ - فَأَنْتُمْ واللَّه مِنَ السَّيْفِ أَفَرُّ!

يَا أَشْبَاه الرِّجَالِ ولَا رِجَالَ - حُلُومُ الأَطْفَالِ وعُقُولُ رَبَّاتِ الْحِجَالِ لَوَدِدْتُ أَنِّي لَمْ أَرَكُمْ ولَمْ أَعْرِفْكُمْ مَعْرِفَةً - واللَّه جَرَّتْ نَدَماً وأَعْقَبَتْ سَدَماً قَاتَلَكُمُ اللَّه لَقَدْ مَلأْتُمْ قَلْبِي قَيْحاً وشَحَنْتُمْ صَدْرِي غَيْظاً - وجَرَّعْتُمُونِي نُغَبَ التَّهْمَامِ أَنْفَاساً وأَفْسَدْتُمْ عَلَيَّ رَأْيِي بِالْعِصْيَانِ والْخِذْلَانِ - حَتَّى لَقَدْ قَالَتْ قُرَيْشٌ إِنَّ ابْنَ أَبِي

طَالِبٍ رَجُلٌ شُجَاعٌ - ولَكِنْ لَا عِلْمَ لَه بِالْحَرْبِ.

لِلَّه أَبُوهُمْ - وهَلْ أَحَدٌ مِنْهُمْ أَشَدُّ لَهَا مِرَاساً وأَقْدَمُ فِيهَا مَقَاماً مِنِّي - لَقَدْ نَهَضْتُ فِيهَا ومَا بَلَغْتُ الْعِشْرِينَ - وهَا أَنَا ذَا قَدْ ذَرَّفْتُ عَلَى السِّتِّينَ ولَكِنْ لَا رَأْيَ لِمَنْ لَا يُطَاعُ!

জনগণকে জিহাদে উদ্বুদ্ধকরণ

নিশ্চয়ই ,জিহাদ বেহেশতের দ্বারসমূহের একটা যা আল্লাহ তাঁর বিশেষ বন্ধুদের জন্য খুলে রেখেছেন। জিহাদ হচ্ছে তাকওয়ার পোষাক এবং আল্লাহর নিরাপত্তামূলক বর্ম ও বিশ্বস্ত ঢাল। কেউ জিহাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকলে আল্লাহ তাকে অসম্মানের পোষাকে আবৃত করেন এবং বালামুসিবতের কাপড় পরিয়ে দেন। তখন নিদারুণ অপমান ও ঘৃণা তার সঙ্গী হয়ে পড়ে এবং তার হৃদয়কে (অজ্ঞতার) পর্দাবৃত করে দেয়া হয়। জিহাদের প্রতি বিমুখতার কারণে তার কাছ থেকে মহাসত্য অপসারণ করা হয়। ফলে সে কলঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং সে ন্যায় - বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।

সাবধান ,এসব লোকের বিরুদ্ধে দিনে - রাতে ,গোপনে - প্রকাশ্যে সংগ্রাম করার জন্য আমি তোমাদের দৃঢ়কণ্ঠে আহবান করেছিলাম। তোমরা আক্রান্ত হবার পূর্বেই আক্রমণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। কারণ আল্লাহর কসম ,যারা নিজেদের ঘরের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে তারা দারুণভাবে অমর্যাদাকর অবস্থায় পড়েছে। তোমরা নিজের দায়িত্ব অন্যের দিকে ঠেলে দিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত একে অপরকে অপদস্থ করছো। তোমাদের নগরীসমূহ শত্রুরা দখল করেনিয়েছে। বনি ঘামিদের অশ্বারোহীগণ আল - আনবারে পৌঁছে গেছে এবং তারা হাসান ইবনে হাসান বকরীকে হত্যা করেছে। তোমাদের অশ্বারোহীদের তারা দূর্গ থেকে বিতাড়িত করেছে।

আমি জানতে পেরেছি তারা মুসলিম রমণী ও ইসলামের নিরাপত্তাধীন রমণীদের ইজ্জত হরণ করেছে এবং হাত ,পা ,গলা ও কান থেকে অলঙ্কারাদি ছিনিয়ে নিয়েছে। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন (২ : ১৫৬) কুরআনের এ আয়াত উচ্চারণ করা ছাড়া রমণীকুল কোন কিছুই করতে পারেনি। নিজেদের কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানি ব্যতিরেকে তারা ধন - সম্পদ নিয়ে চলে গেছে। এ ঘটনার কারণে কোন মুসলিম যদি শোকে মরে যায় তাহলে তাকে দোষ দেয়া যাবে না ; বরং আমার কাছে তার মৃত্যু ওজর হয়ে থাকবে।

কী আশ্চর্য! কী আশ্চর্য! আল্লাহর কসম ,অন্যায় সাধনের জন্য তাদের একতা আর ন্যায়ের পথে তোমাদের অনৈক্য দেখে আমার হৃদয় ব্যথাতুর হয়ে পড়ে। শোক আর দুর্দশা তোমাদেরকে ঘিরে ধরেছে ,তোমরা এমন নিশানা হয়ে গেছ যেখানে তীর নিক্ষেপ করা যায় ,তোমরা নিহত হচ্ছে অথচ হত্যা করনা । তোমরা আক্রান্ত হচ্ছো অথচ আক্রমণ করনা। আল্লাহকে অমান্য করা হচ্ছে অথচ তোমরা তাতে রাজি হয়ে রয়েছো। যখন আমি গ্রীষ্কালে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদে এগিয়ে যেতে বলি তখন তোমরা বল এখন আবহাওয়া গরম - উত্তাপ প্রশমিত হওয়া পর্যন্ত সময় দিন। যখন আমি শীতকালে যাত্রা করতে বলি তখন তোমরা বল এখন খুব ঠান্ডা - শীত যাওয়া পর্যন্ত সময় দিন। এভাবে শীত - গ্রীষ্ম এড়ানোর চেষ্টা ওজর মাত্র। আল্লাহর কসম ,ঠাণ্ডা আর গরম থেকে তোমরা যেভাবে পালিয়ে যাচ্ছো ,তরবারি (যুদ্ধ) থেকে তোমরা আরো অধিক পালিয়ে যাবে।

ওহে ,তোমরা মনুষ্যরূপী ,আসলে মানুষ নও ,তোমাদের বুদ্ধিমত্তা শিশুর মতো এবং তোমাদের জ্ঞানের পরিধি পর্দার অন্তরালে আবদ্ধ নারীর মতো (যারা বর্হিজগতের কোন খোজ রাখে না) । তোমাদের সঙ্গে আমার দেখা না হলে বা তোমাদেরকে আমি না চিনলে কতই না ভালো হতো। আল্লাহর কসম তোমদের সাথে পরিচিতি আমার কাছে লজ্জা আর অনুশোচনার কারণ হয়ে রইলো। আল্লাহ তোমাদের সাথে যুদ্ধ করুন! তোমরা আমার হৃদয়কে দুঃখ ভারাক্রান্ত করেছো এবং আমার বক্ষে রোষের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছো। তোমরা আমাকে একের পর এক দুঃখের শরাব পান করিয়েছো। তোমরা আমার অবাধ্য হয়ে আমার সকল উপদেশ অমান্য করেছো এবং এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেছো যাতে কুরাইশগন বলাবলি করছে যে ,আবি তালিবের পুত্র বীর বটে কিন্তু যুদ্ধ কৌশল জানেনা। তাদের উপর আল্লাহর আশীর্বাদ ! যুদ্ধক্ষেত্রে আমার চেয়ে অধিক ক্ষিপ্র আর অভিজ্ঞ তাদের কেউ আছে কি ? জিহাদের ময়দানে আমার চেয়ে পুরাতন কোন ব্যক্তি আছে কি ? বিশ বছর বয়স না হতেই আমি অস্ত্র ধারণ করেছি। আজ ষাটত্তোর বয়সেও একই রকম শৌর্য নিয়ে আছি ; কিন্তু যাকে মান্য করা হয়না তার অভিমতের মুল্য কি ?

____________________

১। সিফফিনের যুদ্ধের পর মুয়াবিয়া চতুর্দিকে হত্যকাণ্ড ও রক্তপাত ঘটাতে থাকে। আমিরুল মোমেনিনের শাসনাধীন শহরগুলোতে অনধিকার প্রবেশ করে সে আক্রমণ করতে থাকে। হাইত , আনবার ও মাদাইন আক্রমণ করার জন্য আমিরুল মোমেনিন সুফিয়ান ইবনে আউফ ঘামিদীর নেতৃত্বে ছয় হাজার সৈন্যের একটা বাহিনী প্রেরণ করেছিলেন। সুফিয়ান প্রথমে মাদাইন গমন করে শহরটি পরিত্যক্ত দেখে আনবারের দিকে অগ্রসর হন । আনবারে পাঁচশত সৈন্যের একটা রক্ষীবাহিনী রেখে সুফিয়ান চলে যান। কিন্তু মুয়াবিয়ার দুর্ধর্ষ বাহিনীর গতিরোধ করা এত ছোট বাহিনীর পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবুও তাদের সাধ্যমতো তারা চেষ্টা করেছে। কিন্তু শত্রুর আক্রমণ এত তীব্র ছিল যে , রক্ষী বাহিনীর প্রধান হাসান ইবনে হাসান বকরী ও অন্য ত্রিশজন নিহত হন। মুয়াবিয়ার বাহিনী আনবার লুণ্ঠন করে শহরটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে।

আমিরুল মোমেনিন এসব সংবাদ পেয়ে মিম্বারে উঠে জনগণকে জিহাদে অনুপ্রাণিত করার মানসে এ খোৎবা প্রদান করেন । কিন্তু তার আহবানে কেউ সাড়া না দেয়ায় তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে মিম্বার থেকে নেমে পদব্রজে শত্রুর উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন এবং নুখায়লা নামক স্থান পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। এ অবস্থা দেখে জনগণের আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হলো এবং তারা আমিরুল মোমেনিনকে অনুসরণ করে নুখায়লায় উপস্থিত হলো। জনগণ আমিরুল মোমেনিনকে ঘিরে ধরলো এবং তাকে ফিরে যাবার জন্য অনুরোধ করতে লাগলো। অবশেষে তারা শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাপ প্রয়োগ করলে আমিরুল মোমেনিন ফিরে আসতে রাজি হলেন। তখন সাঈদ ইবনে কায়েস আট হাজার সৈন্যের একটা বাহিনী নিয়ে আনবারের দিকে অগ্রসর হলেন। কিন্তু সুফিয়ান আনবার ত্যাগ করে চলে গেছে বলে সাঈদ শত্রুর মোকাবেলা না করেই ফিরে এসেছে। হাদীদ - বর্ণনা করেছেন - সাঈদ কুফায় ফিরে আসাতে আমিরুল মোমেনিন এত মর্মাহত হয়েছেন যে , কয়েকদিন তিনি মসজিদেও যাননি এবং মসজিদ সংলগ্ন ঘরের বারান্দায় বসে এ খোৎবা লিখে তার চাকর সা দকে দিয়েছিলেন যেন সে জনগণকে পড়ে শুনিয়ে দেয়। অপরপক্ষে মুবাররাদ বর্ণনা করেছেন যে , আমিরুল মোমেনিন যখন পদব্রজে নুখায়লাহ পৌছেন তখন তিনি একটা উচুস্থানে দাঁড়িয়ে এ ভাষণ দিয়েছিলেন (১ম খণ্ড , পৃঃ ১০৪ ১০৭) । ইবনে মায়ছামও এটা যুক্তিযুক্ত মনে করেন।

খোৎবা- ২৮

أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ الدُّنْيَا أَدْبَرَتْ وآذَنَتْ بِوَدَاعٍ - وإِنَّ الآخِرَةَ قَدْ أَقْبَلَتْ وأَشْرَفَتْ بِاطِّلَاعٍ أَلَا وإِنَّ الْيَوْمَ الْمِضْمَارَ وغَداً السِّبَاقَ - والسَّبَقَةُ الْجَنَّةُ والْغَايَةُ النَّارُ - أَفَلَا تَائِبٌ مِنْ خَطِيئَتِه قَبْلَ مَنِيَّتِه أَلَا عَامِلٌ لِنَفْسِه قَبْلَ يَوْمِ بُؤْسِه أَلَا وإِنَّكُمْ فِي أَيَّامِ أَمَلٍ مِنْ وَرَائِه أَجَلٌ - فَمَنْ عَمِلَ فِي أَيَّامِ أَمَلِه قَبْلَ حُضُورِ أَجَلِه - فَقَدْ نَفَعَه عَمَلُه ولَمْ يَضْرُرْه أَجَلُه - ومَنْ قَصَّرَ فِي أَيَّامِ أَمَلِه قَبْلَ حُضُورِ أَجَلِه - فَقَدْ خَسِرَ عَمَلُه وضَرَّه أَجَلُه - أَلَا فَاعْمَلُوا فِي الرَّغْبَةِ كَمَا تَعْمَلُونَ فِي الرَّهْبَةِ أَلَا وإِنِّي لَمْ أَرَ كَالْجَنَّةِ نَامَ طَالِبُهَا ولَا كَالنَّارِ نَامَ هَارِبُهَا - أَلَا وإِنَّه مَنْ لَا يَنْفَعُه الْحَقُّ يَضُرُّه الْبَاطِلُ - ومَنْ لَا يَسْتَقِيمُ بِه الْهُدَى يَجُرُّ بِه الضَّلَالُ إِلَى الرَّدَى - أَلَا وإِنَّكُمْ قَدْ أُمِرْتُمْ بِالظَّعْنِ ودُلِلْتُمْ عَلَى الزَّادِ - وإِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ اثْنَتَانِ اتِّبَاعُ الْهَوَى وطُولُ الأَمَلِ - فَتَزَوَّدُوا فِي الدُّنْيَا مِنَ الدُّنْيَا - مَا تَحْرُزُونَ بِه أَنْفُسَكُمْ غَداً.

ইহজগতের ক্ষণস্থায়ীত্ব ও পরকালের গুরুত্ব সম্পর্কে

নিশ্চয়ই ,ইহকাল পিছন ফিরে তার প্রস্থান ঘোষণা করছে এবং পরকাল অগ্রসরমান হয়ে তার উপস্থিতির জানান দিচ্ছে। মনে রাখবে ,আজই পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার দিন এবং আগামীকাল যাত্রা করতে হবে। যারা আল্লাহর পথে অগ্রসর হয় তাদের স্থান বেহেশত ,আর যারা পিছনে পড়ে থাকে তাদের স্থান হলো দোযখ । এমন কেউ কি নেই যে মৃত্যুর পূর্বে তওবা করে ? এমন কেউ কি নেই যে কিয়ামতের পূর্বে কল্যাণকর কর্মসাধন করে ?

সাবধান ,তোমরা হয়তো আশায় বুক বেঁধে দিন গুনছো কিন্তু তোমাদের আশার পিছনে মৃত্যুদূত দন্ডায়মান। যে ব্যক্তি আশায় কালক্ষেপণ না করে মৃত্যুর পূর্বেই আমল করে তার আমল উপকারে আসে এবং মৃত্যু তার ক্ষতি সাধন করতে পারে না। আবার যে ব্যক্তি মৃত্যুর আগমনের পূর্বে আমল করতে ব্যর্থ হয় ,মৃত্যু তার জন্য ক্ষতিকর এবং তার লোকসানের অন্ত নেই। সাবধান ,মহা - আতঙ্কের সময় যেমন আমল কর ,সুখের সময়েও ঠিক তেমন আমল করো। নিশ্চয়ই ,কোন বেহেশত কামনাকারী ও দোযখের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্থকে আমি ঘুমিয়ে থাকতে দেখি নি। মনে রেখো ,হক যার উপকারে আসেনি ,বাতিলের ভোগান্তি সে পোহাবে এবং হেদায়েত যাকে দৃঢ় রাখতে পারেনি ,গোমরাহি তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যাবে।

সাবধান ,(সত্যের পথে থাকার জন্য) দৃঢ়ভাবে তোমাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে এবং কিভাবে তোমরা যাত্রাপথের রসদ সংগ্রহ করবে। সে পথ সুস্পষ্ট করে দেখানো হয়েছে। আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে তোমরা তোমাদের কামনা - বাসনা সম্প্রসারিত করে তার অনুবর্তী হয়ে পড় কিনা। ইহকালেই রসদ সংগ্রহ কর যা তোমাদেরকে পরকালে রক্ষা করবে ।

খোৎবা- ২৯

أَيُّهَا النَّاسُ الْمُجْتَمِعَةُ أَبْدَانُهُمْ - الْمُخْتَلِفَةُ أَهْوَاؤُهُمْ كَلَامُكُمْ يُوهِي الصُّمَّ الصِّلَابَ وفِعْلُكُمْ يُطْمِعُ فِيكُمُ الأَعْدَاءَ – تَقُولُونَ فِي الْمَجَالِسِ كَيْتَ وكَيْتَ فَإِذَا جَاءَ الْقِتَالُ قُلْتُمْ حِيدِي حَيَادِ مَا عَزَّتْ دَعْوَةُ مَنْ دَعَاكُمْ - ولَا اسْتَرَاحَ قَلْبُ مَنْ قَاسَاكُمْ - أَعَالِيلُ بِأَضَالِيلَ وسَأَلْتُمُونِي التَّطْوِيلَ دِفَاعَ ذِي الدَّيْنِ الْمَطُولِ لَا يَمْنَعُ الضَّيْمَ الذَّلِيلُ - ولَا يُدْرَكُ الْحَقُّ إِلَّا بِالْجِدِّ - أَيَّ دَارٍ بَعْدَ دَارِكُمْ تَمْنَعُونَ - ومَعَ أَيِّ إِمَامٍ بَعْدِي تُقَاتِلُونَ - الْمَغْرُورُ واللَّه مَنْ غَرَرْتُمُوه - ومَنْ فَازَ بِكُمْ فَقَدْ فَازَ واللَّه بِالسَّهْمِ الأَخْيَبِ ومَنْ رَمَى بِكُمْ فَقَدْ رَمَى بِأَفْوَقَ نَاصِلٍ أَصْبَحْتُ واللَّه لَا أُصَدِّقُ قَوْلَكُمْ - ولَا أَطْمَعُ فِي نَصْرِكُمْ - ولَا أُوعِدُ الْعَدُوَّ بِكُمْ - مَا بَالُكُمْ مَا دَوَاؤُكُمْ مَا طِبُّكُمْ - الْقَوْمُ رِجَالٌ أَمْثَالُكُمْ - أَقَوْلًا بِغَيْرِ عِلْمٍ - وغَفْلةً مِنْ غَيْرِ وَرَعٍ - وطَمَعاً فِي غَيْرِ حَقٍّ!؟

জিহাদের সময় যারা মিথ্যা ওজর দেখিয়েছিল তাদের সম্বন্ধে

হে লোকসকল ,তোমরা শারীরিকভাবে ঐক্য দেখালেও তোমাদের মন - মানস ও কামনা বিবিধমুখি । তোমাদের কথায় কঠিন পাথর গলে যায় এবং তোমাদের কার্যকলাপ দেখে শত্রুপক্ষ প্রলুব্ধ হয়। তোমরা বসে বসে বাগাড়ম্বর কর ,এটা করবে ,ওটা করবে ; অথচ যুদ্ধ আরম্ভ হলেই নিরাপদ দূরত্বে শটকে পড়। কেউ সাহায্যের জন্য আহবান করলে তোমরা কর্ণপাত কর না । তোমাদের সাথে কঠোর আচরণ করেও কোন লাভ হয় না। তোমরা এমন সব ভ্রান্ত ওজর দাঁড় করাও যেন খাতক তার ঋণ পরিশোধ করতে চায় না। অপদস্ত লোক কখনো নির্যাতন প্রতিহত করতে পারে না। কঠোর প্রচেষ্টা ছাড়া সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। এ ঘর ছাড়া আর কোনটি তোমরা রক্ষা করবে ? আমার পরে কোন ইমামের নেতৃত্বে তোমরা যুদ্ধ করবে ?

আল্লাহর কসম ,তোমরা আমাকে প্রতারণা করতে গিয়ে নিজেরাই প্রতারিত হচ্ছো এবং সেও তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হবে যে যুদ্ধক্ষেত্রে অকেজো তীর কুড়িয়ে জড়ো করে। তোমরা হলে শত্রুর উপর নিক্ষিপ্ত ভাঙ্গা তীরের মতো। আল্লাহর কসম ,বর্তমানে আমার অবস্থা এমন হয়েছে যে ,আমি না। পারি তোমাদের অভিমত গ্রহণ করতে ,না পারি তোমাদের সাহায্য বা সমর্থনের আশা করতে ,আর না পারি তোমাদেরকে নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে। তোমাদের হয়েছেটা কী ,শুনি ? তোমরা কি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে ? তোমাদের রোগ নিরাময়ের উপায় কী ? বিরুদ্ধপক্ষও তোমাদের মতোই মানুষ কিন্তু বৈশিষ্ট্যে তারা তোমাদের চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতির। তোমরা কি কাজের চেয়ে কথাই বেশি বলতে থাকবে ? পরহেজগারি ছেড়ে গাফেল হয়ে থাকবে ? তোমরা কি (ন্যায়ের পথে) কাজ না করার প্রতি আসক্ত হয়েই থাকবে ?

____________________

১। নাহরাওয়ানের যুদ্ধের পর মুয়াবিয়া দাহহাক ইবনে কায়েস ফিহরীকে চার হাজার সৈন্যসহ কুফা এলাকায় প্রেরণ করেনির্দেশ দেয় যে , তারা যেন ওই এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সর্বদা গোলযোগ লাগিয়ে রাখে , যাকে পায় হত্যা করে , রক্তপাত ও ধ্বংসযজ্ঞ এমনভাবে অব্যাহত রাখে যাতে আমিরুল মোমেনিন শান্তি ও মানসিক স্বস্তি না পান। দাহহাক এ উদ্দেশ্য সাধনে তৎপর হয়ে নিরীহ জনগণের রক্তপাত ঘটিয়ে একের পর এক এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে আছ - ছালাবিয়া নামক স্থানে উপনীত হলো। এখানে সে একটা হজযাত্রী কাফেলার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের সর্বস্ব লুণ্ঠন করেনিয়ে গেছে। তারপর সে কুতকুতানাহ এলাকায় প্রবেশ করে রাসূলের (সা.) সাহাবা আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসুদের ভ্রাতুষ্পুত্র আমর ইবনে উয়ায়েজ ও তার সঙ্গীদের হত্যা করেছিল। এভাবে সে চতুর্দিকে রক্তপাত ও ব্যাপক ধ্বংস সাধন করে চলেছিল। আমিরুল মোমেনিন সংবাদ পেয়ে নিজের লোকদের ডেকে এহেন বর্বরতা প্রতিহত করার জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বললেন। কিন্তু তারা এমন ভাব দেখালো যেন তারা যুদ্ধ এড়িয়ে চলতে চায়। তাদের আচরণে আমিরুল মোমেনিন বিরক্ত হয়ে এ ভাষণ দেন। ভ্রান্ত ও খোড়া ওজর না দেখিয়ে মাতৃভূমি রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন। অবশেষে হাজার ইবনে আল - কিন্দি চার হাজার সৈন্য নিয়ে তাদমুর নামক স্থানে শক্রকে রুখে দাঁড়ালো। অল্পক্ষণ মোকাবেলার পর শত্রুপক্ষ পালিয়ে গেল। এ যুদ্ধে শত্রুপক্ষের উনিশ জন নিহত হয়েছে এবং আমিরুল মোমেনিনের পক্ষের দুজন শহিদ হয়েছে।

খোৎবা- ৩০

لَوْ أَمَرْتُ بِه لَكُنْتُ قَاتِلًا - أَوْ نَهَيْتُ عَنْه لَكُنْتُ نَاصِراً - غَيْرَ أَنَّ مَنْ نَصَرَه لَا يَسْتَطِيعُ أَنْ يَقُولَ خَذَلَه مَنْ أَنَا خَيْرٌ مِنْه - ومَنْ خَذَلَه لَا يَسْتَطِيعُ أَنْ يَقُولَ نَصَرَه مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّي - وأَنَا جَامِعٌ لَكُمْ أَمْرَه اسْتَأْثَرَ فَأَسَاءَ الأَثَرَةَ وجَزِعْتُمْ فَأَسَأْتُمُ الْجَزَعَ ولِلَّه حُكْمٌ وَاقِعٌ فِي الْمُسْتَأْثِرِ والْجَازِعِ.

উসমানের হত্যার প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করে আমিরুল মোমেনিন বলেনঃ

আমি যদি তাকে হত্যা করার আদেশ দিয়ে থাকি তা হলে আমিই হত্যাকারী। আর আমি যদি হত্যাকান্ডে অন্যদের বাধা দিয়ে থাকি তবে আমি তার সাহায্যকারী ছিলাম। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে ,যে ব্যক্তি তাকে সাহায্য করেছে। সে এখন আর বলতে পারে না যে ,সে ওই ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম যে তাকে পরিত্যাগ করে চলে গিয়েছিল। আবার যে তাকে পরিত্যাগ করেছিল সেও বলতে পারে না যে ,সে তার সাহায্যকারী অপেক্ষা উত্তম। আমি তার বিষয়াবলী তোমাদের কাছে খুলে বলছি। সে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে এবং সম্পদ আত্মসাৎ করেছে। এ কাজগুলো সে অত্যন্ত ন্যাক্কার জনক ভাবে করেছিল। তোমরা তার এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছো । কিন্তু তাতে অনেক বাড়াবাড়ি করে ফেলেছো। সম্পদ আত্মসাৎকারী ও প্রতিবাদীদের মধ্যে যা ঘটেছে তার প্রকৃত সত্য আল্লাহই জানেন।

____________________

১ । উসমান ইবনে আফফান উমাইয়া বংশের প্রথম খলিফা। তিনি সত্তর বছর বয়সে ১লা মুহররম ,২৪ হিজরি সনে খেলাফতে আরোহণ করেন। বার বছর মুসলিমদের শাসনকার্য পরিচালনার পর ৩৫ হিজরি সনের ১৮ জিলহজ্ব তারিখে জনগণের হাতে নিহত হন। হাশ্শ কাওকাবে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।

এ সত্য অস্বীকার করার কোন জো নেই যে ,উসমানের দুর্বলতা এবং তার অফিসারগণের (যাদের প্রায় সকলেই ছিল উমাইয়া গোত্রের) কুকর্ম মূলত তার হত্যার কারণ। উসমানকে হত্যা করার জন্য মুসলিমগণের সর্বসম্মত ঐকমত্যের পিছনে আর কোন কারণ ছিল না। মুসলিমগণের মধ্যে তার ঘরের মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া আর কেউ তাকে রক্ষার্থে এগিয়ে আসে নি। তাকে হত্যার সিদ্ধান্তকালে মুসলিমগণ তার বয়স ,তার জ্যেষ্ঠত্ব ,তার মান - সম্ভ্রম এমনকি রাসূলের বিশিষ্ট সাহাবা হওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করেছিল। কিন্তু তার কর্মকাণ্ড পরিস্থিতিকে এমনভাবে ঘোলাটে করেছিল যে ,তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে একটা লোকও তার পক্ষে মত প্রকাশ করেনি। রাসূলের উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবাগণের প্রতি যে হারে নির্যাতন আর বাড়াবাড়ি করা হয়েছিল তা বর্ণনাতীত এবং তাতেই আরব গোত্রগুলোর মধ্যে শোক ও ক্রোধের উত্তাল উর্মি বয়ে চলেছিল। প্রত্যেককেই ক্রুদ্ধ করা হয়েছিল এবং সকলেই ঘৃণাভরে তার ঔদ্ধত্য ও ভ্রান্ত ক্রিয়াকলাপ দেখে যাচ্ছিলো । আবু জর গিফারীকে নির্মমভাবে অপমান করা হয়েছিল এবং গিফার গোত্রকে বহিষ্কার করার ফলে তাদের বন্ধুগোত্রগুলো ক্ষিপ্ত হয়েছিল। আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদকে নির্দয়ভাবে প্রহার করায় হুজায়েল গোত্র ও তাদের বন্ধুগোত্রগুলো রুষ্ট ছিল। আম্মার ইবনে ইয়াসিরের পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে দেয়ায় বনি মাখজুম ও তাদের বন্ধু বনি জুহরাহ ক্রোধে বারুদ হয়েছিল। মুহাম্মদ ইবনে আবি বকরকে হত্যার ষড়যন্ত্র করায় বনি তায়েম ক্ষিপ্ত ছিল। এসব গোত্রের হৃদয়ে সর্বদা প্রতিশোধের ঝড় বইতো। অন্যান্য শহরের মুসলিমগণ উসমানের অফিসারদের হাতে নিগৃহীত হয়ে অসংখ্য অভিযোগ করেছিল। কিন্তু অভিযোগগুলোকে কখনো পাত্তা দেয়া হয়নি। অফিসারগণ সম্পদ আর জাকজমকের নেশায় যা ইচ্ছে তা করে বসতো। এমন কি যাকে খুশী যখন তখন অপমানিত ,লাঞ্ছিত ও ধ্বংস করে দিত। রাষ্ট্রের কেন্দ্র থেকে কোন প্রকার তদন্ত বা শাস্তির ভয় তাদের ছিল না। তাদের অত্যাচারের যাতাকল থেকে নিস্কৃতি পাবার জন্য মানুষ চিৎকার করে কেঁদেছিলো কিন্তু তাদের কান্না শোনার মতো কেউ ছিল না। মানুষের মাঝে ঘৃণা আর অসন্তোষ ধূমায়িত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এ রোষানল প্রশমিত করার মতো কেউ ছিল না। রাসূলের সাহাবাগণ যখন দেখলেন শান্তি বিনষ্ট হয়ে গেছে ,প্রশাসনে মারত্মক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে এবং ইসলামের মূল বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে তখন তারা ক্ষোভে দুঃখে দারুণ বিরক্ত হয়ে পড়লেন। দীনহীন ও বুভুক্ষু লোকেরা যখন এক টুকরো রুটির জন্য হাহাকার করছিলো ,উমাইয়া গোত্রের লোকেরা তখন সম্পদের স্তুপে গড়াগড়ি যাচ্ছিলো। খেলাফত পরিণত হয়েছিল উদরপূর্তি আর সম্পদ স্তুপীকরণের হাতিয়ারে। ফলে এসব অত্যাচারিত ,নির্যাতিত ,নিগৃহীত ও বুভুক্ষু জনগণ উসমানের হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করতে পিছে পড়ে থাকেনি । খলিফার বিভিন্ন পত্র ও বার্তায় দেখা যায় যে ,কুফা ,বসরা ও মিশর থেকে বহু মানুষ তাদের সমস্যা নিয়ে মদিনায় জড়ো হয়েছিল এবং মদিনাবাসীদের সহানুভূতি অর্জনে সমর্থ হয়েছিল। মদিনাবাসীদের এহেন আচরণ দেখে উসমান মুয়াবিয়াকে লেখেছিলঃ

মদিনার জনগণ মতবিরোধী হয়ে গেছে ,আমার অনুগত থাকার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে এবং আনুগত্যের শপথ ভঙ্গ করেছে। কাজেই তুমি আমাকে দ্রুতগামী বলিষ্ঠ আশ্বারোহী সৈন্য পাঠাও।

এ পত্র পেয়ে মুয়াবিয়াহ যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা থেকে সাহাবাগণের অবস্থা অনেকটা অনুমেয়। ঐতিহাসিক তারাবী লিখেছেনঃ

যখন মুয়াবিয়ার হাতে উসমানের পত্রখানা পৌছলো তখন সে বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করে। দেখলো এবং রাসূলের সাহাবাগণের বিরোধিতা প্রকাশ্যে করা সঠিক পদক্ষেপ বলে বিবেচনা করেনি কারণ মদিনীয় সাহাবাগণের ঐকমত্য সম্পর্কে সে ভালোভাবে অবগত ছিল।

এ সকল অবস্থার বিবেচনায় উসমানের হত্যাকে কতিপয় অতি উৎসাহী লোকের তাৎক্ষণিক অনুভূতির ফল মনে করে মুষ্টিমেয় বিদ্রোহীর উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিলে সত্যকে অবগুণ্ঠিত করা হবে মাত্র। উসমানের বিরোধিতা করার মতো ক্ষেত্রসমূহ মদিনাতেই তিনি সৃষ্টি করেছিলেন। যারা বাইরের থেকে এসেছিল তারা শুধু তাদের দুর্দশা লাঘবের দাবি নিয়েই মদিনায় জড়ো হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল অবস্থার উন্নতি সাধন করা - রক্তপাত বা হত্যা নয়। যদি তাদের অভিযোগ শোনা হতো তাহলে হয়তো রক্তপাত ঘটতো না ।

প্রকৃতপক্ষে যা ঘটেছিল তা হলো - উসমানের বৈমাত্রেয় ভাই আবদুল্লাহ ইবনে সা দ ইবনে আবি সারোহর (মিশরের গভর্ণর) অত্যাচারে মিশরের জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে মদিনায় এসে শহরের অদূরে জাকুশুব নামক উপত্যকায় অবস্থান নিয়েছিল। তাদের স্মারকলিপিসহ তারা একজন নেতৃস্থানীয় লোককে উসমানের নিকট প্রেরণ করে সা ’ দের অত্যাচার বন্ধ করার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু উসমান মিশরবাসীর প্রেরিত লোকটিকে কোন জবাব না দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয় এবং এসব বিষয় দেখার যোগ্য নয় বলে মনে করে। এ ঘটনার পর মিশরবাসীগণ চিৎকার করতে করতে মদিনা শহরে ঢুকে পড়েছিল এবং উসমানের অহংকার ,ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও দুর্ব্যবহারের কথা মদিনাবাসীকে জানিয়ে প্রতিকার চাইতে লাগলো। অপরদিকে বসরা ও কুফার যেসব লোক অভিযোগ নিয়ে মদিনায় এসেছিল তারাও মিশরবাসীদের সাথে যোগ দিয়েছিল। এমনিতেই মদিনার জনগণ ক্ষুব্ধ ছিল । ফলে মদিনাবাসীদের সহায়তায় বহিরাগতগণ উসমানের ঘরের দিকে অগ্রসর হয়ে ঘর অবরোধ করে ফেলেছিল।

অবশ্য এ অবরোধে খলিফার মসজিদে আসা যাওয়ায় কোন বাধা ছিল না। এ অবরোধের প্রথম শুক্রবারে উসমান তার খোৎবায় অবরোধকারীদের সাংঘাতিকভাবে তিরস্কার করে তাদের সন্ত্রাসী ও অপরাধী চক্র বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। এতে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে তার প্রতি নুড়ি - চিল নিক্ষেপ করেছিল যাতে তিনি মিম্বার থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। কয়েকদিন পর অবরোধকারীরা তার মসজিদে আসা যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল।

পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে দেখে ,যেভাবে পারা যায় ,অবরোধকারীদের সরিয়ে দিয়ে তাকে উদ্ধার করার জন্য উসমান আমিরুল মোমেনিনকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছিলেন। আমিরুল মোমেনিন বললেন , যেখানে দেখা যাচ্ছে তাদের দাবি - দাওয়া ন্যায়সঙ্গত সেখানে কী শর্তে তাদেরকে সরে যেতে বলবো । ” উসমান বললেন , এ বিষয়ে আমি আপনাকে সর্বময় ক্ষমতা অর্পণ করলাম। আপনি যে শর্তে নিষ্পত্তি করবেন। আমি তা - ই মেনে নিতে বাধ্য থাকবো । ” ফলে আমিরুল মোমেনিন মিশরিয়দের সাথে সাক্ষাত করে বিস্তারিত আলোচনা করলেন। আলোচনায় স্থির হলো - মিশরে স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধের লক্ষ্যে আবদুল্লাহ ইবনে সা ’ দের পরিবর্তে মুহাম্মদ ফিরে এসে তাদের দাবির কথা জানালেন। উসমান নির্দ্বিধায় তাদের দাবি মেনে নিতে স্বীকৃত হলেন এবং বললেন , এসব বাড়াবাড়ি ও ঝামেলা - ঝক্কি সামলে উঠতে দিন কয়েক সময় লাগবে। ” আমিরুল মোমেনিন বললেন , মদিনাবাসীদের দাবি - দাওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে সময় চাওয়া অবান্তর হবে ; তবে অন্যান্য এলাকার বিষয়ে খলিফার নির্দেশ পৌছানো পর্যন্ত সময় নেয়া যাবে। ” উসমান বললেন , মদিনার জন্যও অন্তত তিন দিন সময়ের প্রয়োজন। ” যা হোক ,মিশরিয়দের সাথে আলাপ - আলোচনা করে আমিরুল মোমেনিন সকল শর্তের দায় - দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করলেন এবং তার নির্দেশে তারা অবরোধ তুলে নিয়ে জাকুশুব উপত্যকায় ফিরে গেল। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক মুহাম্মদ ইবনে আবি বকরকে সঙ্গে নিয়ে মিশরের উদ্দেশ্যে চলে গেল। বিষয়টি এখানে নিম্পত্তি হয়ে গেল ।

অবরোধ তুলে নেয়ার দ্বিতীয় দিনে মারওয়ান ইবনে হাকাম উসমানকে বললো , আপদ দূর হয়ে গেছে ,ভালোই হলো। কিন্তু অন্যান্য শহর থেকে লোকজন আসা বন্ধ করার জন্য এখন আপনাকে একটা বিবৃতি দিতে হবে যে - কিছু অবান্তর কথা শুনে কতিপয় লোক মদিনায় জড়ো হয়েছিল। যখন তারা জানতে পারলো তারা যা শুনেছে তা সম্পূর্ণ ভুল তখন তারা সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে চলে গেছে। ” উসমান প্রথমতঃ এমন একটা ডাহা মিথ্যা কথা বলতে রাজি হননি। কিন্তু মারওয়ানের প্ররোচনায় শেষ পর্যন্ত তিনি মসজিদ - ই - নববীতে বললেনঃ

মিশরিয়গণ তাদের খলিফা সম্পর্কে কতিপয় সংবাদ পেয়েছিল এবং যখন তারা সন্তোষজনকভাবে জানতে পারলো যে ,এসব কথা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তখন তারা নিজ শহরে ফিরে চলে গেছে।

“ উসমানের বক্তব্য শোনা মাত্র মসজিদে হৈ চৈ পড়ে গেল এবং মানুষ চিৎকার করে উসমানকে বলতে লাগলো , তওবা করুন ; আল্লাহকে ভয় করুন ,একি ডাহা মিথ্যা আপনার মুখ দিয়ে বের হচ্ছে। ” জনগণের চাপের মুখে সেদিন উসমান তওবা করে কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে বিলাপ করে আল্লাহর দরবারে কান্না - কাটি করে ঘরে ফিরে গেলেন ।

এ ঘটনার পর আমিরুল মোমেনিন উসমানকে উপদেশ দিয়ে বললেন , তোমার অতীত কুকর্মের জন্য সর্বসমক্ষে তওবা করা উচিত। তাতে এহেন বিদ্রোহ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। নচেৎ আগামীতে অন্য কোন এলাকার জনগণ বিদ্রোহী হয়ে এলে তোমাকে উদ্ধার করার জন্য তুমি আমার ঘাড়ে চেপে পড়বে। ” ফলতঃ উসমান মসজিদ - ই - নববীতে একটা খোৎবা প্রদান করেনিজের ভুল স্বীকার করে তওবা করলেন এবং ভবিষ্যতে সতর্ক থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেন। তিনি জনগণের প্রতিনিধিকে তার সাথে দেখা করার পরামর্শ দিলেন এবং জনগণের দাবি পূরণ ও তাদের দুঃখ - দুর্দশা দূরীভূত করার অঙ্গীকার করলেন। এতে জনগণ সন্তুষ্ট হয়ে তাদের মনের খারাপ অনুভূতি মুছে ফেলে উসমানের এ কাজের প্রশংসা করতে লাগলো। মসজিদ থেকে ঘরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে মারওয়ান উসমানকে কিছু বলার জন্য এগিয়ে গেলে উসমানের স্ত্রী নাইলাহ্ বিনতে ফারাফিসাহ বাধা দিয়ে বললো , আল্লাহর দোহাই ,তুমি চুপ কর। তুমি এমন সব কথা বলবে যা ওনার মৃত্যু ডেকে আনবে। ” মারওয়ান বিরক্ত হয়ে বললো , এসব বিষয়ে আপনার মাথা ঘামানো উচিত নয়। আপনি এমন এক লোকের কন্যা যে কোন দিন অজু করতেও শেখেনি। ” তাদের উভয়ের কথাবার্তা তিক্ততার দিকে যাচ্ছে দেখে উসমান উভয়কে থামিয়ে দিয়ে মারওয়ানকে তার কথা বলার অনুমতি দিলেন। মারওয়ান বললো , মসজিদে আপনি এসব কী কথা বললেন আর কিসেরই বা তওবা করলেন ? আমার মতে এ ধরনের তওবা অপেক্ষা পাপে লিপ্ত থাকা হাজার গুণ শ্রেয় । কারণ পাপ যত বেশিই হোক না কেন তাতে তওবার পথ সর্বদা খোলা আছে কিন্তু চাপের মুখে তওবা করা কোন তওবা - ই নয়। আপনি সরল বিশ্বাসে কথা বলেছেন। কিন্তু আপনার প্রকাশ্য ঘোষণার ফলাফল দেখুন - জনতা আপনার দুয়ারে হাজির হয়েছে ,এখন তাদের দাবি - দাওয়া পূরণ করুন। ” উসমান বললেন , ঠিক আছে ,আমি যা বলেছি - বলেছিই ; এখন তুমি জনগণকে ঠেকাও ৷ তাদের সাথে কথা বলা আমার সাধ্যাতীত। ” মারওয়ান এ সুযোগ হাত ছাড়া করলো না। সে বেরিয়ে এসে জনগণকে সম্বোধন করে বললো , তোমরা কেন এখানে জড়ো হয়েছে ? তোমরা কি লুটপাট করার জন্য আক্রমণ করতে চাও ? মনে রেখো ,তোমরা এত সহজে আমাদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারবে না। তোমরা আমাদেরকে পরাভূত করতে পারবে ,এ ধারণা তোমাদের মন থেকে মুছে ফেল। কেউ বল প্রয়োগ করে আমাদেরকে অধীনস্থ করতে পারবে না। তোমাদের কৃষ্ণকায় চেহারা নিয়ে এখান থেকে চলে যাও। আল্লাহ তোমাদেরকে অপমানিত করুন এবং তাঁর অনুগ্রহ থেকে তোমরা বঞ্চিত হও। ”

জনগণ এহেন পরিবর্তিত রূপ দেখে রোষে ফেটে পড়লো এবং সোজা আমিরুল মোমেনিনের কাছে গিয়ে হাজির হলো। আমিরুল মোমেনিন সব কথা শুনে অত্যন্ত বিরক্ত হলেন এবং তৎক্ষণাৎ উসমানের কাছে গিয়ে বললেন , হায় আল্লাহ ,তুমি মুসলিমদের সাথে একি দুর্ব্যবহার করলে! একজন বেইমান ও চরিত্রহীনের জন্য তুমি নিজেই ইমান পরিত্যাগ করলে! তোমার সব বোধশক্তি যেন হারিয়ে গেছে। অন্ততঃপক্ষে তুমি তোমার প্রতিশ্রুতির মর্যাদা রক্ষা করতে। এটা কেমন কথা যে ,মারওয়ানের সকল কুকর্ম তুমি চোখ বুজে মেনে নিচ্ছ। মনে রেখো ,সে তোমাকে এমন অন্ধকার কুপে নিক্ষেপ করবে। যেখান থেকে তুমি আর বেরিয়ে আসতে পারবে না। তুমি মারওয়ানের বাহনে পরিণত হয়েছ। কাজেই সে তোমাতে চড়ে যেমন খুশি তেমন করছে। তার ইচ্ছানুযায়ী তোমাকে ভুল পথে পরিচালিত করছে। ভবিষ্যতে আমি তোমার এসব কাজ কারবার সম্বন্ধে কোন কথাই বলবো না। এখন তুমি তোমার কাজ সামাল দাও ” ।

এসব কথা বলে আমিরুল মোমেনিন চলে এলেন এবং নাইলাহ সুযোগ পেয়ে উসমানকে বললো , আমি কি তোমাকে মারওয়ানের কাছ থেকে দূরে থাকতে বলি নি ? সে তোমাকে এমন ফাঁদে আটকিয়ে দিতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে যেটা থেকে তুমি বের হয়ে আসতে পারবে না। যে লোকটি সমাজে নিকৃষ্ট ও হীন প্রকৃতির তার পরামর্শ গ্রহণ করে তোমার কোন কল্যাণ হতে পারে না। এখনো সময় আছে আলীর শরনাপন্ন হও ,তার পরামর্শ গ্রহণ কর। তা না হলে এ বিশৃংখল অবস্থা সামলানো তোমার অথবা মারওয়ানের ক্ষমতা বহির্ভুত। ” উসমান এতে প্রভাবিত হলেন এবং আমিরুল মোমেনিনের কাছে একজন লোক পাঠালেন। কিন্তু আমিরুল মোমেনিন তার সাথে সাক্ষাত করতে রাজি হন নি। এসময় কোন অবরোধ ছিল না। কিন্তু চারিদিকে লোকজন ঘৃণায় রি রি করছিলো। কোন মুখে উসমান বাইরে আসবে ? অথচ বাইরে না এসে তার কোন উপায়ও ছিল না। ফলত গভীর রাতে তিনি চুপি চুপি আমিরুল মোমেনিনের নিকট এসে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তার সহায়হীনতা ও একাকীত্বের কথা বলে রোদন করতে লাগলেন। আমিরুল মোমেনিন বললেন , তুমি মসজিদ - ই - নববীতে জনগণের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করেছ। জনগণ তোমার কাছে গেলে তাদেরকে গালি - গালাজ করে তাড়িয়ে দিয়েছে। এটাই যখন তোমার প্রতিশ্রুতির অবস্থা তখন আমি কি করে তোমার ভবিষ্যৎ কথায় আস্থা রাখতে পারি। আমাকে তুমি বাদ দাও। তোমার কোন দায় - দায়িত্ব গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তোমার সামনে অনেক পথ খোলা আছে। তোমার ইচ্ছানুযায়ী যে কোন পথ অবলম্বন করতে পার। ” আমিরুল মোমেনিনের এসব কথা শুনে উসমান ফিরে এলেন এবং তার বিরুদ্ধে গোলযোগের জন্য আমিরুল মোমেনিনকে দোষারোপ করতে লাগলেন। তিনি প্রচার করতে লাগলেন , সকল গোলযোগ প্রশমিত করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আলী কিছুই করছেন না ।

ওদিকে যারা মুহাম্মদ ইবনে আবি বকরকে নিয়ে মিশর অভিমুখে চলে গিয়েছিল তারা হিজাজ সীমান্ত অতিক্রম করে লোহিত সাগর উপকূলে আয়েলা নামক স্থানে পৌছে দেখতে পেল একজন লোক বহুদূরে এত দ্রুত উট হাঁকিয়ে যাচ্ছে যেন শত্রু তাকে তাড়া করছে। লোকটির চালচলন ও হাবভাব দেখে সকলের সন্দেহের উদ্রেক হয়। তারা তাকে কাছে ডেকে এনে পরিচয় জিজ্ঞেস করলো। উত্তরে সে বললো ,সে উসমানের দাস। তারা জিজ্ঞেস করলো ,কোথায় সে যাচ্ছিলো। সে বললো ,মিশরে। তারা আবার জিজ্ঞেস করলো ,কার কাছে যাচ্ছে। সে বললো ,মিশরের শাসনকর্তার কাছে। তারা বললো ,শাসনকর্তা তাদের সাথেই রয়েছে ; তবু কার কাছে সে যাচ্ছিলো। সে বললো ,আবদুল্লাহ ইবনে সা ’ দের কাছে। তারা জিজ্ঞেস করলো ,কোন পত্র আছে কিনা। সে অস্বীকার করলো। তারা জিজ্ঞেস করলো ,কি উদ্দেশ্যে সে যাচ্ছিলো। সে বললো ,তা তার জানা নেই। তারা লোকটির কাপড় - চোপড় তল্লাশি করে কিছুই পেল না। তাদের মধ্যে কিনানাহ ইবনে বিশর তুজিবী বললো , লোকটির পানির মশক দেখা। ” অন্যরা হেসে উঠে বললো , তাকে ছেড়ে দাও । পানিতে কি করে পত্র রাখবে। ” কিনানাহ বললো , তোমরা জান না ,এরা কত ধূর্ত চাল চালতে পারে। ” ফলে পানির মশক তল্লাশি করে তাতে একটা সীসার নল পাওয়া গেল এবং সেই নলে একটা পত্র পাওয়া গেল। এ পত্রে খলিফার নির্দেশ লেখা ছিল - যখন মুহাম্মদ ইবনে আবি বকর ও তার দল তোমার নিকট উপস্থিত হবে তখন তাদের মধ্যে অমুক অমুককে হত্যা করো ,অমুক অমুককে গ্রেপ্তার করো এবং অমুক অমুককে জেলে রেখো। তুমি তোমার পদে অধিষ্ঠিত থেকো। ” পত্র পড়ে সকলে হতভম্ব হয়ে গেল এবং তাজ্জব বনে গিয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকাতে লাগলো ।

তারা ভাবলো মিশরের দিকে এগিয়ে যাওয়া মানেই মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া। কাজেই তারা উসমানের দাসকে নিয়ে মদিনায় ফিরে এলো । মদিনায় এসেই তারা সাহাবাগণকে উসমানের পত্রখানা দেখালো। পত্র দেখে সকলেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল এবং এমন কেউ বাকি রইল না যে উসমানকে গাল - মন্দ না করেছে। এরপর কয়েকজন সাহাবা মিশরিয়দের সঙ্গে নিয়ে উসমানের কাছে গেল। তারা জানতে চাইলো পত্রের গায়ে সীলটি কার । উসমান নির্দ্বিধায় বললো। ওটা তার নিজের সীল। তারা জানতে চাইলো পত্রখানা কার হাতের লেখা । উসমান জবাব দিলো ওটা তার সচিবের হাতের লেখা। তারা জিজ্ঞেস করলো ধূর্ত লোকটি কার দাস। তিনি বললেন ,দাসটি তার নিজের। তারা জিজ্ঞেস করলো ,লোকটিকে বহনকারী উটটি কার। তিনি জবাব দিলেন ,উটটি সরকারের। তারা জিজ্ঞেস করলো ,কে একে প্রেরণ করেছিল। তিনি উত্তর দিলেন তার জানা নেই। উপস্থিত জনগণ বললো ,"আশ্চর্য সব কিছু আপনার ; আর আপনি জানেন না কে তা প্রেরণ করেছে। আপনি যদি এতই অসহায় হয়ে থাকেন তবে খেলাফত ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে যান ,যাতে করে এমন একজন লোক আসতে পারেন যিনি মুসলিমদের বিষয়াদি পরিচালনা করতে পারবেন। ” তিনি বললেন , খেলাফতের এ পোষাক যেখানে আল্লাহ আমাকে পরিয়েছেন সেখানে এটা খুলে ফেলা কোনক্রমেই আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অবশ্য ,আমি তওবা করবো। ” লোকেরা বললো , কেন আপনি তওবার কথা বলেন ; এইতো সেদিন আপনি অবজ্ঞাভরে তওবা ভঙ্গ করেছেন ,যে দিন আপনার দরজায় উপস্থিত জনগণকে আপনার প্রতিনিধি মারওয়ান গালাগালি দিয়ে অপমান করেছে। আপনি যা চেয়েছেন তা তো আপনার পত্রেই রয়েছে। আমরা আর কোন ধাপ্পাবাজিতে পড়তে চাই না। আপনি খেলাফত ছেড়ে দিন। আমাদের ভ্রাতৃগণ যদি আমাদের দাবি সমর্থন করে তবে আমরাও তাদেরকে সম্মান ও মর্যাদার আসনে বসাবো। আর যদি তারা যুদ্ধ করতে চায়। তবে আমরাও প্রস্তুত আছি। আমাদের হাত এখানো আচল হয়ে যায় নি ,তরবারিও ভোতা হয়ে পড়েনি। যদি সকল মুসলিমের প্রতি আপনার সম্মানবোধ থেকে থাকে এবং ন্যায়ের প্রতি যদি আপনার সামান্যতম মনোযোগ থেকে থাকে। তবে মারওয়ানকে আমাদের হাতে তুলে দিন। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করে দেখি কার শক্তি ও সমর্থনে সে মুসলিমদের মূল্যবান জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে এমন পত্র লিখেছে। ” উসমান তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে মারওয়ানকে তাদের সম্মুখে হাজির করতে অস্বীকৃতি জানালেন। এতে জনতার মনে বদ্ধমূল ধারণা হলো যে ,পত্রখানা উসমানের নির্দেশে লেখা হয়েছে।

শান্ত পরিবেশ আবার অশান্ত হয়ে উঠলো। যেসব বহিরাগত জাখুশুব উপত্যকায় অবস্থান করছিলো তারা স্রোতের মতো ছুটে এসে মদিনার রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে পড়লো এবং উসমানের ঘরে প্রবেশের পথ চতুর্দিক থেকে অবরোধ করে ফেললো। এ অবরোধ চলাকালে রাসূলের সাহাবা নিয়ার ইবনে ইয়াদ উসমানের সাথে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করে তার ঘরের সামনে গিয়েছিল। উসমান উপর থেকে উকি দিলে নিয়ার বললো , ওহে। উসমান ,আল্লাহর দোহাই খেলাফত ছেড়ে দিয়ে মুসলিমদেরকে রক্তপাত থেকে রক্ষা করুন। ” এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে উসমানের লোক তীর নিক্ষেপ করেনিয়ারকে হত্যা করলো। এতে জনতা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে গেল এবং নিয়ারের হত্যাকারীকে তাদের হাতে সোপর্দ করার জন্য চিৎকার করতে লাগলো। উসমান সোজা জবাব দিলেন যে ,তার নিজের সমর্থককে তিনি তাদের হাতে তুলে দিতে পারবেন না। উসমানের এহেন একগুয়েমি আগুনে পাখার বাতাসের মতো কাজ করলো এবং প্রচণ্ড উত্তেজনায় জনতা তার দরজায় আগুন লাগিয়ে দিল এবং ভেতরে প্রবেশ করার জন্য এগিয়ে যেতে লাগলো। এ অবস্থায় মারওয়ান ইবনে হাকাম ,সাইদ ইবনে আস ও মুঘিরাহ ইবনে আখনাস তাদের কিছু সৈন্য নিয়ে অবরোধকারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং উসমানের দরজায় হত্যা ও রক্তপাত শুরু হয়ে গেল। একদিকে জনতা ঘরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে ,অপরদিকে উসমানের সৈন্যরা তাদের পিছনে হটিয়ে দিচ্ছে। উসমানের ঘর সংলগ্ন ঘরটি ছিল আমর ইবনে হাজম আল - আনসারীর। আমার তার ঘরের দরজা খুলে দিয়ে সেদিক দিয়ে অগ্রসর হবার জন্য অবরোধকারীদেরকে বললো। তারা সে পথে উসমানের ঘরের ছাদে উঠে গেল এবং উন্মুক্ত তরবারি হাতে ছাদ থেকে ভেতরে প্রবেশ করলো। কয়েক মুহুর্ত বিশৃংখল যুদ্ধের পর উসমানের তথাকথিত শুভাকাঙ্ক্ষীগণ তাকে ফেলে দৌড়ে রাস্তায় পালিয়ে গেল এবং কেউ কেউ উন্মে হাবিবা বিনতে আবি সুফিয়ানের ঘরে আত্মগোপন করলো। উসমানের পাশে যারা ছিল তাদের সকলকে উসমানের সাথে হত্যা করা হয়েছে। (সা দ ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৫০ - ৫৮ ; তাবারী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২৯৯৮ - ৩০২৫ ; আছীর ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৬৭ - ১৮০ ; হাদীদ ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৪৪ - ১৬১)

এসব ঘটনা প্রবাহ থেকে আমিরুল মোমেনিনের অবস্থান সহজেই অনুমেয়। তিনি হত্যাকীদেরকে সমর্থনও দেননি আবার উসমানের প্রতিরক্ষার জন্য দন্ডায়মানও হননি। কারণ তিনি যখন দেখলেন উসমানের কথা ও কাজ এক নয় ,তখন তিনি নিজকে সম্পূর্ণ পৃথক করে রাখলেন।

খোৎবা - ৩১

لما أنفذ عبد الله بن عباس - إلى الزبير يستفيئه إلى طاعته قبل حرب الجمل

لَا تَلْقَيَنَّ طَلْحَةَ - فَإِنَّكَ إِنْ تَلْقَه تَجِدْه كَالثَّوْرِ عَاقِصاً قَرْنَه يَرْكَبُ الصَّعْبَ ويَقُولُ هُوَ الذَّلُولُ - ولَكِنِ الْقَ الزُّبَيْرَ فَإِنَّه أَلْيَنُ عَرِيكَةً فَقُلْ لَه يَقُولُ لَكَ ابْنُ خَالِكَ - عَرَفْتَنِي بِالْحِجَازِ وأَنْكَرْتَنِي بِالْعِرَاقِ - فَمَا عَدَا مِمَّا بَدَا.

জামালের যুদ্ধের প্রাক্কালে আমিরুল মোমেনিন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে জুবায়ের ইবনে আওয়ামের নিকট প্রেরণ করেছিলেন যেন আনুগত্যে ফিরে আসার জন্য জুবায়েরকে সে উপদেশ দেয়। আবদুল্লাহকে তখন বলেছিলেনঃ

তালহা ইবনে উবায়দিল্লাহর সঙ্গে দেখা করো না। যদি তুমি দেখা কর তবে দেখবে সে একটা অবাধ্য ষাড়ের মত ,যার শিং বাকা হয়ে কানের দিকে চলে এসেছে। সে ভয়ানক অবাধ্য বাহনে আরোহন করে এবং বলে এটাকে পোষ মানানো হয়েছে। তুমি জুবায়েরের সাথে দেখা করো ,কারণ সে তুলনামূলকভাবে কোমল মেজাজের। তাকে বলো যে ,তোমার মামাত ভাই বলেন , হিজাজে তুমি আমাকে চিনেছিলে বা গ্রহণ করেছিলে ,কিন্তু ইরাকে তুমি আমাকে চেন না। তুমি আগে যা দেখিয়েছিলে কিসে তোমাকে তা থেকে বিরত করেছে।

খোৎবা - ৩২

وفيها يصف زمانه بالجور، ويقسم الناس فيه خمسة أصناف، ثم يزهد في الدنيا

أَيُّهَا النَّاسُ - إِنَّا قَدْ أَصْبَحْنَا فِي دَهْرٍ عَنُودٍ وزَمَنٍ - كَنُودٍ يُعَدُّ فِيه الْمُحْسِنُ مُسِيئاً - ويَزْدَادُ الظَّالِمُ فِيه عُتُوّاً - لَا نَنْتَفِعُ بِمَا عَلِمْنَا ولَا نَسْأَلُ عَمَّا جَهِلْنَا - ولَا نَتَخَوَّفُ قَارِعَةً حَتَّى تَحُلَّ بِنَا.

والنَّاسُ عَلَى أَرْبَعَةِ أَصْنَافٍ - مِنْهُمْ مَنْ لَا يَمْنَعُه الْفَسَادَ فِي الأَرْضِ - إِلَّا مَهَانَةُ نَفْسِه وكَلَالَةُ حَدِّه ونَضِيضُ وَفْرِه ومِنْهُمْ الْمُصْلِتُ لِسَيْفِه والْمُعْلِنُ بِشَرِّه - والْمُجْلِبُ بِخَيْلِه ورَجِلِه قَدْ أَشْرَطَ نَفْسَه وأَوْبَقَ دِينَه لِحُطَامٍ يَنْتَهِزُه أَوْ مِقْنَبٍ يَقُودُه أَوْ مِنْبَرٍ يَفْرَعُه - ولَبِئْسَ الْمَتْجَرُ أَنْ تَرَى الدُّنْيَا لِنَفْسِكَ ثَمَناً - ومِمَّا لَكَ عِنْدَ اللَّه عِوَضاً - ومِنْهُمْ مَنْ يَطْلُبُ الدُّنْيَا بِعَمَلِ الآخِرَةِ - ولَا يَطْلُبُ الآخِرَةَ بِعَمَلِ الدُّنْيَا - قَدْ طَامَنَ مِنْ شَخْصِه - وقَارَبَ مِنْ خَطْوِه وشَمَّرَ مِنْ ثَوْبِه - وزَخْرَفَ مِنْ نَفْسِه لِلأَمَانَةِ - واتَّخَذَ سِتْرَ اللَّه ذَرِيعَةً إِلَى الْمَعْصِيَةِ - ومِنْهُمْ مَنْ أَبْعَدَه عَنْ طَلَبِ الْمُلْكِ ضُئُولَةُ نَفْسِه وانْقِطَاعُ سَبَبِه فَقَصَرَتْه الْحَالُ عَلَى حَالِه - فَتَحَلَّى بِاسْمِ الْقَنَاعَةِ - وتَزَيَّنَ بِلِبَاسِ أَهْلِ الزَّهَادَةِ - ولَيْسَ مِنْ ذَلِكَ فِي مَرَاحٍ ولَا مَغْدًى

وبَقِيَ رِجَالٌ غَضَّ أَبْصَارَهُمْ ذِكْرُ الْمَرْجِعِ - وأَرَاقَ دُمُوعَهُمْ خَوْفُ الْمَحْشَرِ - فَهُمْ بَيْنَ شَرِيدٍ نَادٍّ وخَائِفٍ مَقْمُوعٍ وسَاكِتٍ مَكْعُومٍ ودَاعٍ مُخْلِصٍ وثَكْلَانَ مُوجَعٍ - قَدْ أَخْمَلَتْهُمُ التَّقِيَّةُ وشَمِلَتْهُمُ الذِّلَّةُ - فَهُمْ فِي بَحْرٍ أُجَاجٍ أَفْوَاهُهُمْ ضَامِزَةٌ وقُلُوبُهُمْ قَرِحَةٌ قَدْ وَعَظُوا حَتَّى مَلُّوا وقُهِرُوا حَتَّى ذَلُّوا وقُتِلُوا حَتَّى قَلُّوا.

فَلْتَكُنِ الدُّنْيَا فِي أَعْيُنِكُمْ - أَصْغَرَ مِنْ حُثَالَةِ الْقَرَظِ وقُرَاضَةِ الْجَلَمِ واتَّعِظُوا بِمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ - قَبْلَ أَنْ يَتَّعِظَ بِكُمْ مَنْ بَعْدَكُمْ - وارْفُضُوهَا ذَمِيمَةً - فَإِنَّهَا قَدْ رَفَضَتْ مَنْ كَانَ أَشْغَفَ بِهَا مِنْكُمْ.

দুনিয়ার অবমূল্যায়ন ও মানুষের প্রকারভেদ সম্বন্ধে

হে লোকসকল ,আমরা এমন একটা বিভ্রান্তিকর ও অপ্রশংসনীয় সময়ে দিন কাটিয়ে যাচ্ছি। যখন ধার্মিকগণকে দুশ্চরিত্র মনে করা হয় এবং অত্যাচারী সীমালঙ্ঘন করে চলে। আমরা যা জানি তার দ্বারা যথাযথভাবে উপকৃত হই না ,আর যা জানি না সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে চাই না। বালা মুসিবত আপতিত হবার পূর্বে আমরা দুর্যোগকে ভয় করি না।

মানুষ চার শ্রেণির হয়ে থাকে। প্রথম শ্রেণি হচ্ছে তারা - যারা সম্পদের অভাবে ,উপায় - উপকরণের অভাবে ও সমাজে নিম্ন অবস্থানের (ক্ষমতার অভাবে) কারণে ফ্যাসাদ - বিবাদ সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকে।

দ্বীতীয় শ্রেণি হচ্ছে তারা - যারা তরবারি উন্মুক্ত করে প্রকাশ্যে অন্যায় অবিচার করে এবং পদাতিক ও অশ্বারোহী সৈন্য সংগ্রহ করে এবং সম্পদ আহরণ ,ক্ষমতা দখল ও মিম্বারে আরোহণের জন্য নিজের দ্বীনকে বরবাদ করে। আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তার পরিবর্তে দুনিয়া ক্রয় করা কতই না নিকৃষ্ট লেনদেন ।

তৃতীয় শ্রেণি হচ্ছে তারা - যারা পরকালের জন্য আমলের মাধ্যমে দুনিয়া অন্বেষণ করে (অর্থাৎ পার্থিব সুযোগ লাভের জন্য ধর্ম - কর্ম করে) । এরা ইহকালের ক্রিয়াকর্মের মাধ্যমে পরকালের মঙ্গল অন্বেষণ করে না। এরা নিজেদের দেহকে শান্ত - শিষ্ট রাখে ,ধীর পদক্ষেপে চলাফেরা করে ,বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য পোশাক - পরিচ্ছদে দেহকে সাজিয়ে রাখে এবং পাপ করার উপায় হিসেবে এমন অবস্থা দেখায় যেন সে আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত (অর্থাৎ প্রকাশ্যে সাধু সেজে সৎ ব্যক্তির ছদ্মবেশে পাপে লিপ্ত থাকে) ।

চতুর্থ শ্রেণি হচ্ছে তারা - যারা দুর্বলতা ও উপায় - উপকরণের অভাবে রাজত্ব চাওয়া থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এতে তাদের অবস্থান হীন হয়ে রয়েছে ,আর তারা এ অবস্থাকে তৃপ্তি নাম দিয়েছে। তারা পরহেজগার ব্যক্তিদের আলখেল্লা পরিধান করে যদিও পরহেজাগারের গুণাবলীর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই।

এরপরও কিছু লোক থেকে যায় যারা ফেরত যাওয়াকে স্মরণ করে দৃষ্টি আনত রাখে এবং কেয়ামতের ভীতি তাদের চোখকে অশ্রুসিক্ত রাখে। তাদের কতেক লোক সমাজ থেকে ভয়ে সরে পড়েছে ও অদৃশ্য হয়ে রয়েছে ,কতেক ভয়ে বিহ্বল ও দমিত ,কতেক নিশ্চুপ যেন জন্তুর মুখবন্ধ মুখে আটা ,কতেক এখলাছের সাথে মানুষকে সত্যের দিকে আহবান করে এবং কতেক শোকাভিভূত ও দুঃখদুদর্শাগ্রস্ত। আত্মগোপনতা এদেরকে নামবিহীন করে দিয়েছে এবং সমাজে এদের কোন কদর নেই। সুতরাং তারা তিক্ত পানিতে বাস করে। তাদের মুখ বন্ধ এবং হৃদয় ভগ্ন ও ক্ষত বিক্ষত। তারা ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত মানুষকে নছিহত করেছে। তারা অপমানিত না হওয়া পর্যন্ত অত্যাচারিত হয়েছে এবং সংখ্যায় নগণ্য না হওয়া পর্যন্ত নিহত হয়েছে।

দুনিয়া তোমাদের চোখে বাবলা গাছের বাকল অথবা পশমের কর্তিত টুকরা অপেক্ষা মূল্যহীন হওয়া উচিত। তোমাদের পরবর্তীগণ তোমাদের কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করার আগে তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীগণ থেকে উপদেশ গ্রহণ কর এবং দুনিয়াকে নিকৃষ্ট মনে করে তা থেকে দূরে থাকো। মনে রেখো ,দুনিয়ার সাথে যারা তোমাদের চেয়েও অধিক বন্ধুত্ব করেছে ,দুনিয়া তাদের সাথেও সম্পর্ক ছেদ করেছে।


5

6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18

19

20

21

22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35

36

37

38

39

40

41