পালানোর উপায় নেই

পালানোর উপায় নেই 0%

পালানোর উপায় নেই লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

পালানোর উপায় নেই

লেখক: মোহাম্মদ নূরে আলম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ:

ভিজিট: 15653
ডাউনলোড: 3803

পালানোর উপায় নেই
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 18 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 15653 / ডাউনলোড: 3803
সাইজ সাইজ সাইজ
পালানোর উপায় নেই

পালানোর উপায় নেই

লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বাংলা

যে মৃত্যু আমাদের নিত্য মুহূর্তের সাথী সেই মৃত্যুকে আমরা আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে দেয়ার চেষ্টা করি । অথচ এ মৃত্যুর কথা আমরা স্মরণ করি বা না-ই করি তা আমাদের সকলের দুয়ারে একদিন হানা দেবেই। আমরা নিজেদেরকে আপাততঃ ফাঁকি দিলেও মৃত্যুকে ফাঁকি দেয়ার কোন জো নেই। মৃত্যু এবং পরকালের হিসেব নিকেশের স্মরণ একজন মানুষকে তার দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করে সমাজে গঠনমূলক ও উপকারী অনেক কাজের অবদান রাখতে অনুপ্রেরণা যোগায়। আজকে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় যে সকল অন্যায় অবিচার ও পাপাচার বিদ্যমান তার মুলৎপাটনও ঘটাতে পারে উক্ত বিষয়ে স্মরণ। আর এ কথা ভেবেই মহাপুরুষদের জীবনী থেকে নির্বাচিত উপদেশবাণী সম্বলিত বিভিন্ন কাহিনী নিয়ে একটি পুস্তক রচনা করার চেষ্টা করেছি।

 

পালানোর উপায় নেই

মুহাম্মাদ নূরে আলম

উৎসর্গঃ

নির্লোভ ও দুনিয়াত্যাগী মানবপ্রেমী আধ্যাত্মিক সাধকদের চরণে। বিশেষ করে পারস্যের ভুমিতে শায়িত মহান আধ্যাত্মিক সাধক ও রাসূলের(সা.) অষ্টম পুরুষ হযরত আলী ইবনে মুসা আর রিযার(আঃ) সমাধিতে।

অবতরণিকা

“ এ উট সবার দুয়ারে একদিন আসবে ”-এটি একটি ফারসী প্রবাদবাক্য। এর পেছনে একটি ঐতিহাসিক কাহিনী লুকায়িত আছে। ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) যখন তাঁর জন্মস্থান মক্কা নগরী ত্যাগ করে ইয়াসরেব তথা মদিনায় উপস্থিত হন তখন মদিনার জনগণ প্রত্যেকে নবীকে নিজের অতিথি হিসেবে পাবার জন্যে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়। তারা কোন একক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারলে মহানবী (সা.) নিজের উটকে ছেড়ে দিয়ে বললেন এ উট যে বাড়ির সামনে গিয়ে বিশ্রাম নেবে সে বাড়িতে তিনি মেহমান হবেন। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছিল। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পারস্যের ফারসী ভাষায় গড়ে ওঠেছে উক্ত প্রবাদ বাক্যটি।

এ প্রবাদটিতে একটি গভীর অর্থ ও ব্যাখ্যা বিরাজমান। ফারসী ভাষীরা যখন কোন কিছুর আগমন কারো জন্যে অবধারিত ও নিশ্চিত বলে ধারনা করেন তখন উক্ত প্রবাদ বাক্যটি ব্যবহার করে থাকেন। প্রতিটি প্রাণীর জন্যে এ পৃথিবীতে জীবন জীবিকার একটা নির্দ্দিষ্ট সময়সীমা এটে দেয়া আছে। তাই স্বভাবতঃ মানুষেরও আয়ুষ্কাল সীমিত। এ পৃথিবী ছেড়ে তাকে পরপারে পাড়ি জমাতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। মৃত্যু তার প্রতিনিয়ত সঙ্গী। এ কারণে পারস্যে যখন কেউ মৃত্যুর এ অবধারিত ব্যবস্থাপনার ব্যাপারটি বোঝাতে চান তখন তিনি এ প্রবাদ বাক্যটি ব্যবহার করে থাকেন। এখানে মৃত্যুকে ঐ উটের সাথে তুলনা করা হয়েছে যা এক সময় সবার দুয়ারে গিয়ে পৌছবে।

যে মৃত্যু আমাদের নিত্য মুহূর্তের সাথী সেই মৃত্যুকে আমরা আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে দেয়ার চেষ্টা করি । অথচ এ মৃত্যুর কথা আমরা স্মরণ করি বা না-ই করি তা আমাদের সকলের দুয়ারে একদিন হানা দেবেই। আমরা নিজেদেরকে আপাততঃ ফাঁকি দিলেও মৃত্যুকে ফাঁকি দেয়ার কোন জো নেই।

মৃত্যু এবং পরকালের হিসেব নিকেশের স্মরণ একজন মানুষকে তার দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করে সমাজে গঠনমূলক ও উপকারী অনেক কাজের অবদান রাখতে অনুপ্রেরণা যোগায়। আজকে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় যে সকল অন্যায় অবিচার ও পাপাচার বিদ্যমান তার মুলৎপাটনও ঘটাতে পারে উক্ত বিষয়ে স্মরণ। আর এ কথা ভেবেই মহাপুরুষদের জীবনী থেকে নির্বাচিত উপদেশবাণী সম্বলিত বিভিন্ন কাহিনী নিয়ে একটি পুস্তক রচনা করার চেষ্টা করেছি। এখানে আত্ম উন্নয়নমূলক শিক্ষার বিষয়টিও প্রতিটি কাহিনী নির্বাচনে সাহায্য করেছে। পাঠক মহোদয়রা যেন অতি সহজে প্রতিটি কাহিনী থেকে গঠনমূলক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন সেজন্যে প্রতিটি গল্পে কিছু লাইন বোল্ড করে দেয়া আছে। তারা অল্প পরিশ্রমেই গল্পের আসল শিক্ষা সেখান থেকে খুজে নিতে পারবেন। তাই এ বই পড়ে যদি কোন পাঠকের সামান্যতম গঠনমূলক কোন উপকারে আসে এবং তিনি নিজের সংশোধনে মানুষের জন্যে অবদান রেখে যেতে পারেন তাহলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো।

মুহাম্মাদ নূরে আলম-

শেখ সা দির বাণী

পারস্যের মরমী কবি হযরত শেখ সা ’ দি (রহঃ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘গুলিস্তান ’ -এ লিখেছেন : “দুই ধরনের মানুষ অনর্থক কষ্ট স্বীকার করে এবং লাভহীন প্রচেষ্টা চালায় : এক : যে বস্তুসম্পদ সঞ্চয় করে ঠিকই কিন্তু ভোগ করতে পারে না। দুই : যে শিক্ষা অর্জন করে ঠিকই কিন্তু সে অনুযায়ী আমল করে না ” । তিনি আরো বলেন : জনৈক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হলো : আমলবিহীন আলেমের (জ্ঞানী ব্যক্তি) তুলনা কিসের ন্যায় ? উত্তরে বলেন : মধুবিহীন মৌমাছির ন্যায়। তিনি বলেন : মৃগনাভী কস্তুরী তো , যার সুগন্ধি মানুষকে বিমোহিত করে , সুগন্ধি বিক্রেতা বললেই তা মৃগনাভী কস্তুরী হয় না। জ্ঞানী ব্যক্তি সুগন্ধি সংরক্ষিত কাঠের বাক্সের ন্যায় নিশ্চুপ , আর মূর্খ ও প্রদর্শনমুখী ব্যক্তি ঢোলের মত বেশী বাজে কিন্তু ভিতর শূন্য। ”

(০১)

লজ্জা

“হাবসা (ইথিওপিয়া) অধিবাসী এক ব্যক্তি রাসূলে খোদা (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললো : “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পাপ অনেক। আমার জন্যেও কি তাওবার দ্বার খোলা আছে ?”

দয়াল নবী (সা.) বললেন : “হ্যাঁ , তাওবার দরজা সবার জন্যে খোলা। তুমিও তা থেকে উপকৃত হতে পারো। ”

অতঃপর হাবসী লোকটি সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহর রাসূলের (সা.) কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজ দেশে চলে গেল।

কিছুদিন পরের কথা। সে লোকটি পুনরায় নবীর (সা.) কাছে ফিরে এলো। এবার এসে সে নবীকে (সা.) জিজ্ঞেস করলো : “ইয়া রাসুলালাহ! আমি যখন গুনাহ্ করতাম তখন কি আল্লাহ আমাকে দেখতেন ?”

আল্লাহর নবী (সা.) উত্তরে বলেন : “জি হ্যাঁ , দেখতেন। ”

হাবসী লোকটি মহানবীর এ কথা শুনে বুক থেকে শীতল নিঃশ্বাস ফেলে বললো : “তাওবা পাপের অপরাধ মোচন করতে পারে। গুনাহকে পর্দা দিয়ে ঢেকে দিতে পারে। কিন্তু এ কারণে আল্লাহর কাছে যে লজ্জা পেয়েছি তার কি হবে ?”

(০২)

জাহান্নামী কে ?

[হযরত জা ফর ইবনে ইউনুস (রহ:) শিবলী নামে ছিলেন সুপরিচিত। তিনি ২৪৭ হিজরীতে জন্মগ্রহন আর ৩৫৫ হিজরীতে চিরস্থায়ী আবাস পানে গমন করেন। হিজরী তৃতীয় ও চতু র্থ শতাব্দিতে এ বিখ্যাত অধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন বহুল আলোচিত। তিনি ছিলেন আধ্যা ত্মিক জগতের মহাসাধক হযরত জুনাইদে বাগদাদী (রহ:)-এর শিষ্য। তাঁর পরবর্তী সময়ে নামকরা বহু সাধকের গুরু ও ওস্তাদও ছিলেন তিনি।]-

হযরত শিবলী (রহ:) যে শহরে বাস করতেন সেখানে তাঁর বহু সমর্থক এবং অনেক বিরোধী লোকও ছিলো। অনেকে তাকে প্রচন্ডভাবে ভালবাসতেন আবার অনেকে তাকে শহর থেকে নিষ্ঠুরতার সাথে বহিস্কারেরও চেষ্টা করতেন। সে শহরে তাঁর অসংখ্য ভক্তদের মধ্যে এমন একজন রুটি তৈরীকারকও ছিলো যে হযরতকে কখনো চোখে দেখেনি তবে তার নাম শুনেছে মাত্র।

একদিন সাধক সেই রুটি প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতার দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ক্ষুধার্ত। ক্ষুধার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে আর কোন উপায়ন্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত এক রকম বাধ্য হয়েই সেই রুটি বিক্রেতার কাছে এক টুকরো রুটির আবেদন করলেন হযরত শিবলী (রহঃ) । তিনি একটি রুটি ঋণ চাইলেন সেই রুটি বিক্রেতার কাছে। রুটি বিক্রেতা এ ধরনের আবেদন শুনে রেগে আগুন হয়ে গেল। সে এ অচেনা ব্যক্তিকে যা-তা বলে অপমান করে বিদায় দিলো। ক্ষুধার্ত সাধক সেখান থেকে চলে গেলেন।

এ রুটির দোকানে অন্য একজন লোক বসে তামাশা দেখছিল। সে হযরত শিবলীকে চিনতো। লোকটি রুটি বিক্রেতার সামনে এসে বলো : “যদি তুমি হযরত শিবলীর সাক্ষাৎ পেতে তাহলে কি করতে ?” রুটি বিক্রেতা : “আমি তাকে অনেক সম্মান করতাম , তিনি যা চাইতেন তাই দু ’ হাতে তার পায়ে ঢেলে দিতাম। ”

লোকটি তাকে বললো : “যে লোকটিকে তুমি কিছুক্ষণ পূর্বে তোমার কাছ থেকে তাড়িয়ে দিলে এবং তাকে এক টুকরো রুটি থেকে বঞ্চিত করলে , তিনি ছিলেন সে-ই শিবলী। ” যেই না রুটি বিক্রেতা একথা শুনলো অমনি হায় আফসোস! হায় আফসোস! করতে লাগলো। রুটি বিক্রেতা লজ্জায় সঙ্কুচিত হয়ে গেল। মনে হলো কে যেন তার অন্তরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। পেরেশান ও বিচলিতভাবে সে ছুটে গেলো হযরত শিবলীর সন্ধানে। অবশেষে অনেক খোজাখোজির পর তাকে এক মরুভূমিতে পাওয়া গেল। রুটি প্রস্তুতকারক আর কোন বাক্য উচ্চারণ না করে হযরতের পা জড়িয়ে ধরলো। রুটি বিক্রেতা বিনীত স্বরে বলতে লাগলো , ‘হুজুর দয়া করে আপনি ফিরে আসুন। আমি আপনার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করবো। হুজুর দয়া করে আপনি ফিরে আসুন। আমি আপনার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করবো। ’ হুজুর নিশ্চুপ! কিন্তু রুটি বিক্রেতা তাঁকে আবারো অনুরোধ করতে লাগলো , ‘হযরত! আপনি অধমের প্রতি কৃপা করুন। একরাত আপনি আমার গরীবখানায় থাকুন। আর আমি এই গৌরবময় তৌফিকের কারণে আল্লাহর শোকরগুজারস্বরূপ অনেক মানুষকে খাবারে নিমন্ত্রণ করবো। অনুগ্রহ করে আপনি আমার এই আকুতি প্রত্যাখ্যান করবেন না। ’ এরকম আকুতি মিনতি দেখে এবং তাঁর কারণে অনেক মানুষ খেতে পারবে ভেবে অবশেষে হুজুর রুটিওয়ালার দাওয়াত গ্রহণ করলেন।

দিন শেষে রাত্রি ঘনিয়ে আসলো। রুটিওয়ালার গৃহে খাবারের বিশাল আয়োজন। শতশত মানুষ তার দস্তরখানার চার পাশে জমায়েত। রুটি বিক্রেতা একশত দিনার এই মেহমানদারিতে খরচ করলো। সে তার ঘরে হযরত শিবলীর অবস্থানের সংবাদ উপস্থিত জনতাকে অবহিত করতে ভুললো না।

হযরত শিবলী নৈশভোজে শরিক হলেন। সকলে আহারে ব্যস্ত। হযরত শিবলী ছাড়াও অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক সাধক। তিনি হযরতকে প্রশ্ন করেন : “ইয়া শেখ! আপনি বলে দিতে পারবেন দোযখবাসী ও বেহেস্তবাসীর আলামত কী ?”

জবাবে হযরত শিবলী (রহঃ) বলেন : “জাহান্নামী ঐ ব্যক্তি , যে একখণ্ড রুটি আল্লাহর রাহে দান করে না অথচ শিবলীর মত আল্লাহর এক অপারগ ও অসহায় বান্দার জন্যে একশত দিনার খরচ করতেও দ্বিধাবোধ করে না , আর জান্নাতীরা কিন্তু এরকম নয়। ”

(৩)

উপকারী কাজ

পীর সাহেব তাঁর মুরীদদের জিজ্ঞেস করেন : “তোমরা কি এমন কোন কাজ আঞ্জাম দিয়েছো যা থেকে অন্যেরাও উপকৃত হয়েছে ? ” হুজুরের কথা শুনে মুরীদদের মধ্যে একজন বলে উঠলো : “আমি ছিলাম একজন আমির-বাদশাহ্। একবার একটি ভিক্ষুক আমার বাড়িতে সাহায্যের জন্য আসে। আমি আমার বাদশাহী পোশাক ও আংটি পড়িয়ে তাকে আমার সিংহাসনে বসিয়ে দিলাম। আর আমি সবকিছু ছেড়ে দরবেশী পোশাক পড়ে আল্লাহর সাধকের পথ ধরলাম। ”

অন্য একজন মুরীদ বললো : “আমি এক সময় একটি জায়গা দিয়ে অতিক্রম করছিলাম। দেখলাম সাধারণ মানুষেরা একজন লোককে আটক করেছে। লোকেরা তার হাত কাটার সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করে ফেলেছে। সেখানে আমি নিজের হাত উৎসর্গ করে লোকটিকে মুক্ত করলাম। আর দেখুন এই যে আমার এক হাত নেই। ”

এতক্ষন পীর সাহেব নিশ্চুপ ছিলেন। তিনি মুরীদদের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনছিলেন। তাদের কথা শুনার পর তিনি মুখ খুললেন। তিনি বল্লেন : “তোমরা যা করেছো তা নির্দিষ্ট দু ’ জন ব্যক্তির জন্যে করেছো। মু ’ মিন তো সূর্য , তার কাজ সূর্যের তাপের ন্যায় -যা সকলের জন্যে উপকারে আসে এবং কেউ তা থেকে বঞ্চিত হয় না। তোমাদের মধ্য থেকে কি এমন উপকারী কাজ আল্লাহর বান্দাদের কাছে পৌছেছে ?” মুরীদরা হুজুরের এমন কথা শোনে নির্বাক হয়ে মাথা নিচু করে রইলো।

(০৪)

ভিতরে আসতে বাধা

এক কাফের ব্যক্তির একজন মুসলমান দাস ছিল। দাস তার নিজ ধর্মে ছিল অত্যন্ত দৃঢ় ও প্রত্যয়শীল। কাফের লোকটি তাকে ধর্মের কাজে কোনরূপ বাধা প্রদান করতো না।

একদিন মনিব তার গোলামকে বললো : গোসল কারার সরঞ্জাম প্রস্তুত কর , গোসল করার জন্যে হাম্মামের দিকে রওয়ানা হতে হবে। ” তারা যাত্রা শুরু করলে পথিমধ্যে একটি মসজিদের সাক্ষাত পেলো।

দাস বললো : মনিব মহাশয়! আমাকে কী একটু অনুমতি দিবেন , আমি মসজিদের ভিতরে গিয়ে নামাজ আদায় করে আসি।

মনিব বললো : যাও! তবে যখনি নামাজ শেষ করবে তাড়াতাড়ী ফিরে এসো। আমি এখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। তোমার জন্যে অপেক্ষা করবো। ”

মসজিদে জামায়াত সমাপ্ত হয়েছে। ইমাম সাহেব ও অন্যান্য মুস ল্লিরা সকলে এক এক করে বাইরে চলে এসেছে। মনিব বেরিয়ে আসা মুস ল্লিদে র মধ্যে তার দাসকে খুজে পাচ্ছে না। এরকম অনেকক্ষন সে ধৈর্যধারণ করলো। অবশেষে তার ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটলো। তিনি উচ্চ স্বরে চিৎকার করে ডাকলেন : এ-ই গোলাম , বাহিরে এসো। ”

মসজিদের ভিতর থেকে জবাব আসলো : আমাকে বাইরে আসতে দিচ্ছে না। ”

শেষ পর্যন্ত মনিব দেখতে চাইলো কে তার দাসকে বাইরে আসতে দিচ্ছে না। তাই সে মসজিদের দরজার নিকটবর্তি হলো। কাফের মনিব উঁ কি মেরে দেখলো মসজিদের ভিতর এক জোড়া জুতা আর একজন মানুষের ছায়া ছাড়া আর কিছুই তার নজরে পড়লো না। সেখান থেকেই সে চিৎকার করলো : আচ্ছা! কে তোমাকে বাইরে আসতে বাধা দিচ্ছে ?

ম সজিদের ভিতর থেকে দাস উত্তর দিলো : যে আপনাকে ভিতরে আসতে বাধা দিচ্ছে। ”

(০৫)

হুকুমের ব্যাপারে খেয়াল

[আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইব্নে খাফিফ সিরাজী ছিলেন সোরা পীর সুপরিচিত। তিনি ছিলেন হিজরী চতুর্থ শতাব্দির আধ্যাত্মিক মহা সাধকদের অন্যতম। তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করেছিলেন। তাঁর বক্তৃতামালা ও বর্ণিত আলোচনা ও কথোপকথন আধ্যাত্মিক সাধকদের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে আসছে। তিনি সব সময় ভ্রমনে কাটাতেন। তাঁর পিতা কিছুকাল পারস্যের ফারস ’ প্রদেশে বাদশাহী করেছেন। তিনি হিজরী ৩৭১-১৪ সনে পরলোকগমন করেন। ইরানের সিরাজ নগরীর এক ময়দানে তাঁর মাজার অবস্থিত।]

জনশ্রুতি আছে যে তাঁর এমন দু জন মুরীদ ছিল যাদের দু জনেরই নাম ছিল আহমাদ ’ । তাই তিনি একজনকে ডাকতেন বড় আহমাদ ’ আর অপরজনকে ডাকতেন ছোট আহমাদ ’ বলে। তিনি ছোট আহমাদ-এর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতেন এবং তাকে বড় আহমাদের চেয়ে বেশী মহব্বত করতেন। মুরীদদের অনেকেই হুজুরের এই অতি স্নেহ এবং দু জনের প্রতি তাঁর বৈষম্য ব্যবহারে অসন্তুষ্ট ছিলো।

একদিন তারা পীরের-এর নিকট আরজ করে বসলো : হুজুর! বড় আহমাদ তো অনেক কঠোর কৃচ্ছসাধনা করেছে এবং আধ্যাত্মিক সাধনার পরিভ্রমনে অনেক ধাপ অতিক্রম করেছে। কেন আপনি তাকে ছোট আহমাদের চেয়ে বেশী ভালবাসছেন না ?

সেদিন শেইখ শুধু এতটুকুই বলেন : ঠিক আছে , আমি তোমাদের সামনে ওদের দু জনের পরীক্ষা নেব। তবেই তো তাদের উভয়ের মর্যাদা ও মাক্বামের স্থান পরিস্কার হবে। ” উপস্থিত মুরীদরা মাথা নেড়ে পীরের কথায় সম্মতি জানালো।

একদিন শেইখ বড় আহমাদকে বল্লেন : আহমাদ! এই উটকে আমাদের ছাদের উপরে নিয়ে যাও। ”

বড় আহমাদ বলো : ইয়া শেখ! উটকে কিভাবে ছাদের উপরে নেয়া সম্ভব ?

শেখ বল্লেন : আচ্ছা ,ওটাকে রেখে দাও। তুমি ঠিকই বলেছো। ”

অতঃপর তিনি ছোট আহমাদকে বল্লেন : এই উটকে আমাদের ছাদের উপর নিয়ে যাও। ” ছোট আহমাদ হুজুরের এই হুকুম পেয়ে তৎক্ষনাৎ কোমরে কাছা বাঁধলো। জামার আস্তিন উপরে তুললো। অতঃপর উটের পেটের নিচে গিয়ে তাকে কাঁধে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করলো। উটকে ছাদে নিতে পারলো না সে। তার সকল চেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো। এ অবস্থা দেখে আল্লাহর অলী , সাধক বড় পীর ছোট আহমাদকে হুকুম দিলেন আর চেষ্টা না করতে।

অতঃপর তিনি উপস্থিত মুরিদদের সম্বোধন করে বল্লেন : যা চেয়েছিলাম তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। মুরিদান সকলে বললো : যা হুজুরের কাছে পরিষ্কার , তা আমাদের কাছে এখনো অস্পষ্ট।

শেখ বললেন : ওদের দু জনের মধ্যে একজন তার শক্তি ও সামর্থের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছে , আমাদের হুকুমের প্রতি নয়। অন্যজন আমাদের হুকুমের ব্যাপারে খেয়াল রেখেছে , নিজের সামর্থের দিকে নয়।

একজন মানুষকে অবশ্যই তার কর্তব্যের প্রতি দৃষ্টি দেয়া উচিৎ এবং তা সম্পাদন করার জন্যে আত্মনিয়োগ করা বান্দার একান্ত দায়িত্ব। মনিবের হুকুম পালনে কষ্ট ও অসুবিধার কথা চিন্তা করা অনুচিত। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কাছ থেকে এটাই চান যে তারা যেন কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে দ্বিধাহীন চিত্তে তা আঞ্জাম দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়। আর বান্দা যখনি কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনের জন্যে মনোনিবেশ করে তখনি তাঁর নির্দেশ পালন করা হয়ে যায় , যদিও তা সম্পাদন করতে অপারগ হয়।

তবে মনে রাখা দরকার আল্লাহ মানুষের জন্যে কোন অসম্ভব কাজের হুকুম জারী করেন না। ”