(২৮)
কঠিন আযাব
কথিত আছে যে , বনি ইসরাইল গোত্রের এক ব্যক্তি গর্বের সাথে বলতোঃ“
আমি সারা জীবন আল্লাহর নাফরমানী করলাম এবং এমন কোন পাপ নেই যা আমি করিনি। কিন্তু এর বদলে আমার কোন ক্ষতিও হয়নি আর কোন শাস্তিও পাইনি। যদি গুনাহর পরিণতিতে শাস্তি নির্ধারিত হয়ে থাকে তাহলে কেন আমার উপর শাস্তি নাযিল হয় না ?”
সে আমলে বনি ইসরাইলের নবী ঐ লোকের কাছে এসে বল্লেন :“
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন , তিনি তোমাকে অনেক আযাব দিয়েছেন কিন্তু তুমি তা জান না! আল্লাহ বলেছেন , আচ্ছা আমি কি তোমাকে আমার ইবাদতের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করি নি ? আমি কি মুনাজাতের দুয়ার তোমার জন্যে বন্ধ করে দিইনি ? আমি কি আখেরাতের বেহেস্তের আনন্দময় জীবনের ব্যাপারে তোমাকে নিরাশ করিনি ? এর চেয়ে বড় এবং ভয়ংকর আযাব তুমি কি চাও ?”
(২৯)
ইরফানী দোয়া
[হযরত মা’
রুফ ইবনে ফিরুয কারখী ছিলেন মা’
রুফ কারখী নামে বহুল পরিচিত। তিনি ছিলেন দ্বিতীয় হিজরী শতকের শেষাংশে সবচে আলোচিত ব্যক্তি এবং বিখ্যাত যাহেদ ও সুফি-দরবেশদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর জন্ম বাগদাদ নগরীর কারখ এলাকায়। তিনি আহলে বাইতের অষ্টম ইমাম হযরত ইমাম রিযা (আঃ)-এর হাতে তাওবা করেন এবং ইরফানের উচ্চ মাক্বামে অধিষ্টিত হন। তিনি পরোপকারিতা ও মানব সেবায় প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। অবশেষে তিনি দু’
শত হিজরীতে পরলোকগমন করেন।]
বর্ণিত আছে যে , একবার তিনি তার কয়েকজন ভক্তের সাথে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তিনি একদল ফাসেদ ও দুঃশ্চরিত্র যুবককে দেখতে পেলেন। তিনি যখন দজলা নদীর তীরে পৌছুলেন তখন তাঁর সাথীরা বল ল :“
ইয়া শেইখ , আপনি আল্লাহর কাছে অসামাজিক কার্যকলাপে ভেসে যাওয়া এই যুবকদেরকে এই নদীতে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে দোয়া করুন। এর ফলে ওদের অত্যাচার থেকে শহরবাসীরা রেহাই পাবে। ”
মা’
রুফ কারখী তাদেরকে বললেন :“
তোমরা হাত উচু কর। আমি দোয়া করবো আর তোমরা আমিন বলবে।”
শেইখের সাথীরা হাত তুললো এই অসৎ চরিত্রসম্পন্ন যুবকদের ধ্বংসের জন্যে এবং শেইখের দোয়াতে আমিন বলতে। শেইখ বল্লেন :“
হে পারওয়ারদেগার! যেমনি করে এই যুবকদের এ জগতে আনন্দ-উল্লাসে মত্ত রেখেছো , তেমনি করে পরজগতেও তাদেরকে আনন্দ উল্লাসের অংশীদারী করো।”
শেইখের সাথীরা আচমকা বিস্ময়াভূত হয়ে গেলো। তারা অবাক কন্ঠে তাদের পীর সাহেবকে প্রশ্ন করলেন :“
হে পীর! এটা কেমন দোয়া আপনি করলেন। আমরা এর রহস্য তো বুঝতে পারলাম না।”
ঘটনাক্রমে এ পথ দিয়ে অতিক্রম করছিলো সে যুবকরা। কিছুক্ষন পর যখন যুবকরা সাধকের সাক্ষাৎ লাভ করলো তখন তাদের মধ্যে ভাবান্তরের উদ্রেক হলো। তারা সকলে মদের পাত্রগুলো মাটিতে ফেলে দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। আর শেইখের হাত-পা জড়িয়ে ধরে মাফ চাইতে লাগলো। শেইখ তাঁর সাথীদের বল্লেন :“
তাদের ব্যাপারে আমার দোয়া কবুল হয়েছে। তারা যদি এই তাওবার হালতে মারা যায় তাহলে পরকালের আনন্দ-উ ল্লাসও উপভোগ করবে। এটা কি তোমাদের অনুরোধের প্রার্থনার চেয়ে উত্তম হল না ?”
(৩০)
তিরস্কারের ফল
[সেররি সাক্তি ছিলেন বাগদাদ শহরের বিখ্যাত আরেফ ও সুফি। তিনি এ পৃথিবীতে আটানব্বই বৎসর জীবিত ছিলেন এবং হিজরী দু’
শত একান্ন সনে ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁর তরিকায় মহব্বত ও উদ্দিপনা দু’
টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে পরিগনিত। জুনাইদ বাগদাদী (রহঃ) যিনি ইসলামী খ্যাতনামা আরেফ ও তাঁর ভা গ্নে ছিলেন , তিনি অন্তিম ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন যে তাকে যেন হযরত সেররি সাক্তি (রহঃ) কবরের পার্শ্বে সমাহিত করা হয়।]
বর্ণিত আছে যে , তিনি একবার হযরত ইয়াকুবকে (আঃ) স্বপ্নে দেখেছিলেন। স্বপ্নে তিনি আল্লাহর নবীকে বলেন :“
হে আল্লাহর নবী! আপনার পুত্র ইউসুফের জন্যে এরকম উদ্বেল ও আবেগের ঝড় এ দুনিয়াতে তুলেছেন ? আল্লাহর প্রতি তো আপনার পরিপূর্ণ মহব্বত আছে। ইউসুফের কথা আপনার স্মরণ থেকে মুছে ফেলেন।”
এ ঘটনার কিছুদিন পর হযরত সেররি তার অন্তরের গভীরে একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন। সে আওয়াজ তাকে বলছে ,‘
আচ্ছা দেখে নাও!’
। আধ্যাত্মিক জগত থেকে তাকে হযরত ইউসুফের সৌন্দর্য ও রূপবান চেহারা দেখানো হলো। তিনি ভয়ানক চিৎকার দিয়ে বেহুশ হয়ে গেলেন। এভাবে তের দিন জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে রইলেন তিনি। যখন তার জ্ঞান ফিরে এলো তখন তাকে বলা হলোঃ“
এটা হলো প্রেমিকদের তিরস্কারের ফল।”
(৩১)
অনুপ যুক্ত শোকর
আল্লাহর এক অলী বলেন :“
আমি একটিবার শুধু আল্ হামদুলি ল্লাহ্ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে) বলার জন্যে ত্রিশ বৎসর যাবৎ ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করে যাচ্ছি। তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন :“
একদিন আমার কাছে সংবাদ দেয়া হলো যে বাগদাদের বাজারে অগ্নি-সংযোগের কারণে সব দোকন-পাট পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেছে। কিন্তু আমার দোকানের কিছুই হয়নি। আমি তখন বলে উঠলাম ,‘
আল্ হামদুলি ল্লাহ’
। পরক্ষনেই আত্মসম্বিত ফিরে পেলাম। নিজের কাছে নিজেকে খুব লজ্জিত মনে হচ্ছিল। আমি নিজেকে মুসলমান ভাইদের চেয়ে উত্তম মনে করলাম আর তাদের বিয়োগ-বেদনাকে আমি তোয়াক্কা করলাম না! ? এর অর্থ হচ্ছে অন্যান্য মুসলমান ভাইদের ব্যাপারে আমি কোন দায়িত্ব অনুভব করিনি। সুতরাং এই অনুপযোগী আল্ হামদুলি ল্লাহর কারণে ত্রিশ বৎসর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
(৩২)
ভাইয়ের আশা
[আবু যাকারিয়া ইয়াহ্হিয়া ইব্নে মুয়াজ ছিলেন বা লখ নগরীর একজন বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ওয়ায়েজ ও দুনিয়াবিমুখ যাহেদ। তিনি নিশাপুর এলাকায় হিজরী দু’
শত আটান্ন সনে ইন্তেকাল করেন। তার তরিকার চর্চা ভয় ও আতংকের চেয়ে বেশী ছিল প্রত্যাশার উপর। তিনি অত্যন্ত সুমধুর ও প্রভাবপূর্ণ কন্ঠে ওয়াজ করতেন। তার ওয়াজের কারণে অনেক মানুষ সত্যপথ গ্রহণ করেছিল। তাই অনেকে বলেন :“
আল্লাহর দু’
জন ইয়াহ্হিয়া ছিলেন , একজন নবীদের মধ্য থেকে অন্যজন অলীদের মধ্য থেকে।”
]
একবার হযরত ইয়াহ্হিয়ার (রহঃ) কনিষ্ঠ ভ্রাতা ইবাদত-বন্দেগী ও ইতেক্বাফের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা নগরীতে গমন করেছিলেন। তিনি মক্কা থেকে তার বড় ভাই ইয়াহ্হিয়াকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিটি নি ম্নরূপ :“
ভাইজান , আ সসালামু আলাইকুম। আমার জীবনে তিনটি আরজু বা আকাঙ্খা ছিল যার দু’
টি পূরণ হয়েছে আর একটি অবশিষ্ট রয়ে গেছে। সে তিনটি কামনা হচ্ছে : এক : আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম তিনি যেন আমার মৃত্যু কোন এক পবিত্র ভুমিতে নির্ধারন করেন। আর আমি এখন পবিত্র নগরী মক্কাতে অবস্থান করছি। মৃত্যু অবধি আমি এখানেই কাটাবো। দুই : আল্লাহর কাছে আমি সর্বদা এমন একজন উপযুক্ত ক্রীতদাসী কামনা করেছিলাম যে আমার ইবাদতের সরঞ্জাম যোগাড় করে দিতে পারে এবং এ পথে আমাকে সেবা দিতে পারে। এখন আমি ঐ রকম একজন দাসী পেয়েছি। সে আমাকে এ পথে প্রচুর সহযোগীতা করে এবং আমার খেদমতে ক্রটি করে না। তৃতীয় কামনাটি হচ্ছে এই যে , মুত্যুর পূর্বে যেন আপনার সাক্ষাত পাই। আমি আশা করছি আমার এই আকাঙ্খাও পূরণ হবে। ওয়াস্ সালাম।”
হযরত ইয়াহ্হিয়া (রহঃ) তাঁর ভাইয়ের পত্রের উত্তরে লিখেন :“
তুমি লিখেছিলে তোমার কামনা হচ্ছে তুমি যেন পবিত্র জায়গায় অবস্থান করতে পার এবং সেখানেই হক্বের দাওয়াতে লাব্বাইক (জি হাজির) বলতে পার। তাই আমি বলছি , তুমি আল্লাহর সর্বোত্তম বান্দা হও , যেখানে ইচ্ছা অবস্থান গ্রহণ কর , যেখানে ইচ্ছা সেখানেই মৃত্যুকে স্বাগতম জানাও। মানুষের কারণে স্থান পবিত্র ও সম্মানিত হয়ে থাকে , স্থানের কারণে মানুষ পবিত্র ও সম্মানিত হয় না। আর তুমি লিখেছ তোমার পূর্বের ইচ্ছার মত একজন খাদেমা পেয়েছো। যদি তোমার সৎ সাহস থাকতো তাহলে হাক্বতায়ালার খাদেমকে নিজের খাদেম হিসেবে মেনে নিতে পারতে না এবং তাকে হাক্বতায়ালার খেদমত থেকে বঞ্চিত করতে না। সৎ সাহসী ও মহৎ ব্যক্তিরা খাদেম হওয়ার আকাঙ্খা করে থাকেন , অন্যের খেদমত বা সেবার আশা করেন না। বান্দার কাজ হলো বন্দেগী করা , কর্তৃত্ব করা নয়। আর তোমার তৃতীয় ইচ্ছা ছিলো আমাকে দেখার। যদি তোমার অন্তরে আল্লাহর পাক ইরফানের কোন খবর থাকতো তাহলে আর আমার স্মরণ করতে না। যেখানে তুমি আছো সেটা হলো হযরত ইব্রাহিম (আঃ)- এর মাকাম বা স্থান। অর্থাৎ সেটা এমন এক জায়গা যেখানে পিতা পুত্রকে কতলগাহ্ জবেহ্ করার জন্যে নিয়ে যায় আর তুমি সেখানে ভাইয়ের সাক্ষাৎ কামনা করছো ? যদি সেই পবিত্র স্থানে আল্লাহর সান্নিধ্য পেয়ে যাও তাহলে সেখানে আমি কি কাজে আসবো ? আর যদি আল্লাহর সাক্ষাত না পাও তাহলে আমার কাছ থেকে তুমি কি লাভ পেতে পারো ?”
(৩৩)
আলেমের পদস্খলন
[হযরত আবু হানিফা ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়েতের একজন বিশিষ্ট ও খ্যাতনামা আলেম। সুন্নি ফেকাহ্গত চার মাযহাবের একটির ইমাম তিনি এবং তার নাম অনুসারে সেই মাযহাবের নামকরণ করা হয়েছে। তিনি আশি হিজরীতে পৃথিবীতে আগমন করেন এবং সত্তর বৎসর পর অর্থাৎ এক শত পঞ্চাশ হিজরীতে আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুরের নির্দেশে কারারুদ্ধ অবস্থায় পরলোকগমন করেন।]
বর্ণিত যে , একদা হযরত আবু হানিফা (রহঃ) কোন এক জায়গা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি একটি শিশুকে দেখে থমকে দাড়ান। শিশুটি কাঁদামাটির মধ্যে পা ঢুকিয়ে দাড়িয়ে আছে। তাই তিনি শিশুটিকে বলেন :“
সাবধান থেকো! কাঁদার মধ্যে পড়ে যেও না।”
শিশুটি উত্তরে বলে :“
আমার পড়ে যাওয়া কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার না। কেননা আমি যদি পড়ে যাই তাহলে শুধুমাত্র নিজেকেই কর্দমাক্ত ও ময়লা করে ফেলবো। হ্যাঁ,
আপনি নিজেকে রক্ষা করুণ। আপনার যদি পদস্খলন ঘটে তাহলে মুসলমানরা সত্য পথ থেকে বিচ্যুতি হয়ে যাবে আর এর গুনাহর ভাগী আপনিই হবেন।”
হযরত আবু হানিফা শিশুটির মুখে এরকম চমকপ্রদ উপদেশমূলক কথা শুনে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
(৩৪)
মৃত্যুর প্রস্তুতি
কথিত যে , একদা জনৈক আল্লাহর অলী ও সাধক সালাত আদায়ের জন্যে এক অচেনা মসজিদে গমন করেন। তারপরও মসজিদের মুসল্লিরা তাঁকে চিনে ফেলে। তারা সকলে করজোড় করে তাঁর কাছে অনুরোধ জানালো সালাতান্তে মেম্বারে উঠে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে উপদেশমূলক কিছু বক্তব্য রাখার জন্যে। তিনি সম্মত হলেন। জামায়াত সমাপ্ত হয়েছে। সকলের দৃষ্টি তাঁর দিকে কেন্দ্রীভূত। আধ্যাত্মিক সাধক উঠে দাড়ালেন। তিনি মেম্বারের প্রথম সিঁড়িতে বসলেন।
বিসমি ল্লাহির রাহমানির রাহিম পাঠ করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইত-এর প্রশংসা ও গুণগান গাইলেন। অতঃপর উপস্থিত নামাজিদের উদ্দেশ্যে বলেন :“
হে ভাইয়েরা! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জানে যে আজ রাত্রি পর্যন্ত সে বেঁচে থাকবে আর মরবে না , সে যেন উঠে দাড়ায়।”
কেউ দাড়ালো না। তিনি আবারো বললেন :“
এখন তোমাদের মধ্য থেকে যে নিজেকে মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত করেছে সে যেন উঠে দাড়ায়!”
এবারো কেউ উঠে দাড়ালো না। অবশেষে আল্লাহর অলী বিস্ময়ের সাথে বললেন :“
তোমাদের ব্যাপারে আমার অবাক হতে হয় , তোমরা দুনিয়াতে বেঁচে থাকার কোন নিশ্চয়তা পাচ্ছো না আবার যাবার জন্যেও প্রস্তুত নও।”
(৩৫)
ইহকালের পণ্য সামগ্রী সামান্য
[হিজরী তৃতীয় শতাব্দিতে খোরাসানের বিখ্যাত ও নামকরা যাহেদ ও আরেফ-অলী ছিলেন হযরত হাতেম আসাম (রহঃ) । এই মূল্যহীন দুনিয়া ও প্রজ্ঞা সম্পর্কিত তার কিছু মূল্যবান ও হৃদয় উদ্দীপক বক্তব্য খোরাসানীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিল। তিনি জনগণকে বেশী বেশী কোরআন পাঠ করতে উৎসাহ দিতেন। এ সাধক কোরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহর আরেফ-অলীদের কাহিনী পাঠকে না ফসের পরিশুদ্ধতায় অত্যন্ত কার্যকর বলে মনে করতেন।]
বর্ণিত আছে যে,
একদা বাগদাদ নগরীতে তিনি প্রবেশ করলে মুসলিম খলিফাকে সংবাদ দেয়া হয় যে , খোরাসানের যাহেদ এসেছেন। তাঁকে রাজদরবারে ডাকা হলে তিনি সে আহ্বানে সাড়া দেন। তিনি সিংহাসনে উপবিষ্ট খলিফাকে দেখেই সম্বোধন করলেন :“
হে যাহেদ (বা অল্পতুষ্ট মানুষ) !”
মহামান্য খলিফা বলে উঠলেন :“
আমি যাহেদ নই। কেননা সমগ্র পৃথিবী আমার ফরমানের তাবেদার। বরং আপনি যাহেদ। কারণ আপনিই তো অল্পতে সন্তুষ্ট আছেন আর দুনিয়ার কোন ধন-দৌলত সঞ্চয় করেন নি।”
হযরত হাতেম (রহঃ) :“
না , হে খলিফা ! বরং তুমি যাহেদ। কারণ তুমি দুনিয়ার সবচেয়ে কম মূল্যবান এবং সর্বাপেক্ষা নিম্ন পর্যায়ের পণ্য সামগ্রী অর্জনেই সন্তুষ্ট হয়েছো। আসমানী কিতাব আল-কোরআন কি বলেনি যে ,‘
দুনিয়ার পণ্য সামগ্রী ও উপকরণ খুবই সামান্য ’ ? তুমি এর চেয়ে বেশী কিছু অর্জন করতে পারনি আর আমার ভাগ্যে আল্লাহর যে সকল নেয়ামত রয়েছে তা তোমার অর্জিত পণ্যের চেয়ে অনেক বেশী। তাই যাহেদ বা অল্পতুষ্ট ব্যক্তি তুমি , আমি নই।”
(৩৬)
কুশলাদি বিনিময়
[মুহাম্মাদ ইব্নে সিরিন , ইবনে সিরিন নামে খ্যাত ছিলেন। হিজরী প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দির একজন মহান ফকিহ্ , মুহাদ্দিস এবং স্বপ্নতাত্বিক। তাঁর জন্ম বসরা নগরীতে এবং সেই শহরেই একশত দশ হিজরীতে তাঁর ইন্তেকাল হয়েছিল। তিনি স্বপ্নের তাবিরে বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর মা প্রথম খলিফার দাসী ছিলেন।]
একদা হযরত ইবনে সিরিন (রহঃ) জনৈক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন :“
কেমন আছো ?”
লোকটি উত্তর দিলো :“
যার পাঁচশত দেরহাম ঋণ আর তার পরিবারও আছে তার অবস্থা আর কেমন হতে পারে ?”
এ কথা শুনে কাল বিলম্ব না করে ইবনে সিরিন নিজ ঘরে ফিরে আসলেন। তিনি এক হাজার দেরহাম ঐ লোকটির হাতে দিয়ে বলেন :“
পাঁচশত দেরহাম তোমার পাওনাদারকে বুঝিয়ে দাও , বাকী পাঁচশত দেরহাম দিয়ে সংসারের খরচ মিটাও। আমার উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক , এরপর যদি আমি কারো কুশল জিজ্ঞেস করি!”
বলা হলো :“
আপনি তো তার ঋণ পরিশোধের জন্যে এবং সংসার খরচ মেটানোর জন্যে বাধ্য ছিলেন না। ”
তখন তিনি বলেন :“
যখন তুমি কারো কুশল জিজ্ঞেস করলে আর সে ব্যক্তি তার অবস্থার কথা ব্যক্ত করলো তখন যদি তার বিপদ মুক্ত করার জন্যে কোন ব্যবস্থা না কর তাহলে কুশলাদি বিনিময়ের নামে তুমি শুধু মুনাফিকি করলে।”