পালানোর উপায় নেই

পালানোর উপায় নেই 0%

পালানোর উপায় নেই লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

পালানোর উপায় নেই

লেখক: মোহাম্মদ নূরে আলম
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ:

ভিজিট: 15654
ডাউনলোড: 3803

পালানোর উপায় নেই
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 18 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 15654 / ডাউনলোড: 3803
সাইজ সাইজ সাইজ
পালানোর উপায় নেই

পালানোর উপায় নেই

লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বাংলা

যে মৃত্যু আমাদের নিত্য মুহূর্তের সাথী সেই মৃত্যুকে আমরা আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে দেয়ার চেষ্টা করি । অথচ এ মৃত্যুর কথা আমরা স্মরণ করি বা না-ই করি তা আমাদের সকলের দুয়ারে একদিন হানা দেবেই। আমরা নিজেদেরকে আপাততঃ ফাঁকি দিলেও মৃত্যুকে ফাঁকি দেয়ার কোন জো নেই। মৃত্যু এবং পরকালের হিসেব নিকেশের স্মরণ একজন মানুষকে তার দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করে সমাজে গঠনমূলক ও উপকারী অনেক কাজের অবদান রাখতে অনুপ্রেরণা যোগায়। আজকে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় যে সকল অন্যায় অবিচার ও পাপাচার বিদ্যমান তার মুলৎপাটনও ঘটাতে পারে উক্ত বিষয়ে স্মরণ। আর এ কথা ভেবেই মহাপুরুষদের জীবনী থেকে নির্বাচিত উপদেশবাণী সম্বলিত বিভিন্ন কাহিনী নিয়ে একটি পুস্তক রচনা করার চেষ্টা করেছি।

 

(৫৬)

পুণ্যবানের দোয়া

আধ্যাত্মিক জগতে হযরত ইব্রাহিম আদহামের নাম কে না জানে। তিনি ছিলেন আধ্যত্মিক মহাকাশের একটি বিশাল নক্ষত্র। আধ্যাত্মিক সাধকদের মধ্যে তার খ্যাতি অসাধারণ। একদিন তিনি তাঁর কিছু ভক্তকে সাথে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তাঁর একজন নিন্দুক তাকে পাথর মেরে মাথা ফাটিয়ে দিলো। কালবিলম্ব না করে তিনি ঐ পাথর নিক্ষেপকারীর জন্যে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করলেন। তাঁর সফর সঙ্গীরা হুজুরের দোয়া দেখে হতবাক !

তারা বলে উঠলেন : হে বুযুর্গ ! আপনি এমন এক লোকের জন্যে দোয়া করছেন যে আপনাকে আঘাত করেছে ! ?

হযরত আদহাম(রহঃ) তাদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন : ঐ ব্যক্তিটি তার জুলুম ও আঘাত দিয়ে আমার দিকে পুণ্য ছুড়ে দিয়েছে। আর আমি এখন ঐ সব পুণ্যের ভাগ্যবান যা তার কাছ থেকে এসেছে। সে তো শুধু তার নিজের ক্ষতিই করেছে আর আমার নেকির পালা ভারী করেছে। তাই আমি এই সওয়াবের প্রতিদান হিসেবে দোয়া ছাড়া আর কি দিতে পারি ? ৫৬

(৫৭)

শ্রেষ্ঠ আমানতদার

একবার জনৈক আরব ব্যক্তি দ্বিতীয় খলিফা ওমর বিন খাত্তাবের (রাঃ) পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলো। খলিফা ঐ ব্যক্তির কোলে একটি শিশু বাচ্চা দেখে অবাক হয়ে বললেন : হে পথিক! আজ পর্যন্ত আমি কখনো দু জন আদম সন্তানকে একই আকৃতিতে পাইনি। এই শিশুটি দেখতে যে অবিকল তোমার মতো ?

পথিক উত্তর দিলো : হে খলীফা! আপনি জানেন না , এ শিশুটি সম্পর্কে আরো কত বিস্ময়কর ঘটনা আছে!

খলিফা : তাহলে একটি বিস্ময়কর কাহিনী শোনাও। ”

পথিক : একবার আমি দেশের বাইরে কোন এক দূরের দেশে ভ্রমনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখন এ শিশুটির মা অন্তঃসত্ত্বা ছিলো। আমার সফরে যাওয়ার কথা শোনে শিশুটির মা বলে উঠলো , হে আমার প্রাণ প্রিয় স্বামী! আমাকে তুমি একা ফেলে ভ্রমনে গমন করছো ?

আমি তখন প্রতিত্তোরে বলেছিলাম , তোমার গর্ভের সন্তানকে আমি আল্লাহর উপর সোপর্দ করে যাচ্ছি। আর এভাবে আমি আমার স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। অতঃপর আমি যখন ভ্রমন শেষে দেশে ফিরে এলাম দেখতে পেলাম যে শিশুটির জন্মের পূর্বেই তার মা মৃত্যুবরণ করেছে। তখন আমার আফসোস করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না। কয়েকদিন আমার মন ভীষণ খারাপ থাকে। একদিন আমি বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বসে গল্প করছিলাম। এমন সময় দূর থেকে আগুনের লেলিহান শিখা আমাদের সকলকে তাক লাগিয়ে দেয়। আমি বন্ধুদেরকে জিজ্ঞেস করলাম : ব্যাপার কী ?

তারা ব লল এ অগ্নি শিখা তোমার মৃতা স্ত্রীর সমাধিস্থল থেকে বের হচ্ছে। আমি অবাক কন্ঠে বলাম : আমার স্ত্রী তো আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে কোন ত্রুটি করেনি। মা নুষের অধিকার নষ্ট করেনি। আর কখনো বেপর্দা হয়নি। কখনো ভুলেও সালাত তরক করেনি। তাহলে কেন এমনটি হচ্ছে ? কোন সন্তোষজনক উত্তর কেউ দিতে পারলো না।

এমনিভাবে কয়েকদিন অনবরত আগুনের ধোয়া আমার জিজ্ঞাসা আরো বাড়িয়ে তোললো। একদিকে বিস্ময় আর অপরদিকে স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম কবর খুড়ে দেখবো। যেই কথা সেই কাজ। কবর খুড়ে দেখতে পেলাম এক আশ্চর্য দৃশ্য। একটি বাতি কবরের ভিতর জ্বলছে আর তার আলোতে এ কোলের শিশুটি খেলছে। আমি এ শিশুটিকে কোলে তুলে নেয়া মাত্রই আসমান থেকে এক গায়েবী আওয়াজ আসে : এ শিশুটিকে আমার কাছে সোপর্দ করে গিয়েছিলে আর তাই ওকে এখন তোমার কাছে ফিরিয়ে দিলাম। যদি শিশুটির মাকেও আমার কাছে তুলে দিতে তাহলে আজকে তাকেও তোমার কাছে ফিরিয়ে দিতাম। ৫৭

(৫৮)

নেকড়ে বাঘের ভয়

হযরত ইয়াকুব (আঃ) বহু বছর তাঁর প্রাণের চেয়েও প্রিয় সন্তান হযরত ইউসুফের বিরহে অনেক কেদেছিলেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে শেষ পর্যন্ত অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। অবশেষে অনেক ঘটনার চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে হযরত ইউসুফের জামা হযরত ইয়াকুবের চোখে যখন রাখা হয় তখন তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন।

একদিন মহাক্ষমতাবান আল্লাহ হযরত ইয়াকুবের সঙ্গে প্রত্যাদেশের মাধ্যমে কথোপকথন করলেন। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন : হে আমার বান্দা ইয়াকুব! তুমি কি জানো কেন ইউসুফকে এত বছর তোমার কাছ থেকে দূরে রেখেছিলাম ?

উত্তরে হযরত ইয়াকুব (আঃ) বললেন : না , হে আমার প্রতিপালক। ”

আল্লাহ : তার কারণ হচ্ছে , তুমি যে বলেছিলে আমার ভয় হয় নেকড়ে বাঘ ইউসুফকে খেয়ে ফেলতে পারে। হে ইয়াকুব ! কেন নেকড়ে বাঘের ভয় পেয়েছিলে অথচ আমার উপর ভরসা করনি ? তুমি ইউসুফের ভাইদের বেখেয়ালীর খেয়াল রেখেছিলে অথচ আমার হেফাজতের বিষয়টি খেয়াল করনি ! ? ৫৮

(৫৯)

প্রেমময় সৃষ্টিকর্তার ভালবাসা

বর্ণিত আছে , মুশরিকদের সাথে রাসূলে পাকের (সা.) কোন এক যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে একটি শিশু বন্দি হয়। শিশুটিকে একটি পৃ থক জায়গায় সংরক্ষিত রাখা হয়েছিলো। সকল বন্দির ব্যাপারে রাসূলে খোদার সিদ্ধান্তই ছিলো চুড়ান্ত। কিন্তু শিশুবন্দি সহ বন্দিদের বসার স্থানে মাথার উপর কোন ছাউনি ছিলো না। তখন ছিলো গ্রীষ্মকাল। রোদের প্রচন্ড উত্তাপ। সকলেই গরমে ভীষণ কষ্ট ভোগ করছিলো। বন্দিদের মধ্যে একজন মহিলাও ছিলো। বন্দি শিশুটির উপর এ মহিলার দৃষ্টি পড়তেই তার অন্তরে অত্যধিক এক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। অকস্মাৎ সে মহিলা সকলকে অবাক করে প্রচন্ড বেগে শিশুটির দিকে দৌড়াতে শুরু করে। আর তার আশে পাশের বন্দিরাও তার পিছু ছোটতে থাকে। এক পর্যায়ে দেখা গেলো মহিলাটি শিশুকে কোলে নিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে। আর সে নিজে নত হয়ে শিশুটির জন্যে ছায়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বন্দিসহ রাসূলের সাহাবীরা বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে দেখছে মহিলা কেঁদে কেঁদে তার শিশুকে আদর করছে আর গুণ গুণ করে বলছেঃ এ শিশু আমার ছেলে , এটা আমার আদুরে বাচ্চা । মহিলাটির এ ধরনের মাতৃত্ববোধ ও স্নেহসুলভ আচরণ দেখে বন্দিরাসহ সাহাবীরা সকলে অভিভূত হয়ে যায়। তারা সবাই শিশুর মায়ের এ ধরনের আত্মত্যাগ দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে দু নয়ন দিয়ে অশ্রু ঝড়াচ্ছিলো। তারা সকলে কিছুক্ষনের জন্যে সকল কিছু ভুলে গিয়েছিলো।

সন্তানের প্রতি মায়ের এ ধরনের ভালবাসা সকলকে বিস্ময়াভূত করে দেয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই আল্লাহর প্রিয় বন্ধু হযরত মুহাম্মাদ(সা.) সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। সকলে তাঁকে ঘটনাটি বর্ণনা করে শোনালো। তিনি মায়ের ভালবাসা ও মুসলমানদের ক্রন্দনের কথা শোনে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। তিনি উপস্থিত মুসলমানদেরকে জিজ্ঞেস করেন : তোমরা কী এ মহিলার মাতৃসুলভ ভালবাসা ও আচরণে অবাক হয়েছো ?

সকলে বলো : জী , ইয়া রাসুলালাহ্!

অতঃপর কালক্ষেপন না করেই মহানবী (সা.) বলেন : আল্লাহ তায়ালা এ শিশুটির উপর মায়ের ভালবাসার চেয়েও তার সকল বান্দাদেরকে অনেক অ-নে-ক বেশী ভালবাসেন। সেদিনের মত মুসলমানরা অন্য কোন দিন এত বেশী খুশী ও আনন্দ উপভোগ করেনি।৫৯