পালানোর উপায় নেই

পালানোর উপায় নেই 42%

পালানোর উপায় নেই লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

পালানোর উপায় নেই
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 18 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 16081 / ডাউনলোড: 4076
সাইজ সাইজ সাইজ
পালানোর উপায় নেই

পালানোর উপায় নেই

লেখক:
প্রকাশক: র‌্যামন পাবলিশার্স
বাংলা

যে মৃত্যু আমাদের নিত্য মুহূর্তের সাথী সেই মৃত্যুকে আমরা আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে দেয়ার চেষ্টা করি । অথচ এ মৃত্যুর কথা আমরা স্মরণ করি বা না-ই করি তা আমাদের সকলের দুয়ারে একদিন হানা দেবেই। আমরা নিজেদেরকে আপাততঃ ফাঁকি দিলেও মৃত্যুকে ফাঁকি দেয়ার কোন জো নেই। মৃত্যু এবং পরকালের হিসেব নিকেশের স্মরণ একজন মানুষকে তার দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করে সমাজে গঠনমূলক ও উপকারী অনেক কাজের অবদান রাখতে অনুপ্রেরণা যোগায়। আজকে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় যে সকল অন্যায় অবিচার ও পাপাচার বিদ্যমান তার মুলৎপাটনও ঘটাতে পারে উক্ত বিষয়ে স্মরণ। আর এ কথা ভেবেই মহাপুরুষদের জীবনী থেকে নির্বাচিত উপদেশবাণী সম্বলিত বিভিন্ন কাহিনী নিয়ে একটি পুস্তক রচনা করার চেষ্টা করেছি।

 

(৫৬)

পুণ্যবানের দোয়া

আধ্যাত্মিক জগতে হযরত ইব্রাহিম আদহামের নাম কে না জানে। তিনি ছিলেন আধ্যত্মিক মহাকাশের একটি বিশাল নক্ষত্র। আধ্যাত্মিক সাধকদের মধ্যে তার খ্যাতি অসাধারণ। একদিন তিনি তাঁর কিছু ভক্তকে সাথে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তাঁর একজন নিন্দুক তাকে পাথর মেরে মাথা ফাটিয়ে দিলো। কালবিলম্ব না করে তিনি ঐ পাথর নিক্ষেপকারীর জন্যে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করলেন। তাঁর সফর সঙ্গীরা হুজুরের দোয়া দেখে হতবাক !

তারা বলে উঠলেন : হে বুযুর্গ ! আপনি এমন এক লোকের জন্যে দোয়া করছেন যে আপনাকে আঘাত করেছে ! ?

হযরত আদহাম(রহঃ) তাদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন : ঐ ব্যক্তিটি তার জুলুম ও আঘাত দিয়ে আমার দিকে পুণ্য ছুড়ে দিয়েছে। আর আমি এখন ঐ সব পুণ্যের ভাগ্যবান যা তার কাছ থেকে এসেছে। সে তো শুধু তার নিজের ক্ষতিই করেছে আর আমার নেকির পালা ভারী করেছে। তাই আমি এই সওয়াবের প্রতিদান হিসেবে দোয়া ছাড়া আর কি দিতে পারি ? ৫৬

(৫৭)

শ্রেষ্ঠ আমানতদার

একবার জনৈক আরব ব্যক্তি দ্বিতীয় খলিফা ওমর বিন খাত্তাবের (রাঃ) পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলো। খলিফা ঐ ব্যক্তির কোলে একটি শিশু বাচ্চা দেখে অবাক হয়ে বললেন : হে পথিক! আজ পর্যন্ত আমি কখনো দু জন আদম সন্তানকে একই আকৃতিতে পাইনি। এই শিশুটি দেখতে যে অবিকল তোমার মতো ?

পথিক উত্তর দিলো : হে খলীফা! আপনি জানেন না , এ শিশুটি সম্পর্কে আরো কত বিস্ময়কর ঘটনা আছে!

খলিফা : তাহলে একটি বিস্ময়কর কাহিনী শোনাও। ”

পথিক : একবার আমি দেশের বাইরে কোন এক দূরের দেশে ভ্রমনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখন এ শিশুটির মা অন্তঃসত্ত্বা ছিলো। আমার সফরে যাওয়ার কথা শোনে শিশুটির মা বলে উঠলো , হে আমার প্রাণ প্রিয় স্বামী! আমাকে তুমি একা ফেলে ভ্রমনে গমন করছো ?

আমি তখন প্রতিত্তোরে বলেছিলাম , তোমার গর্ভের সন্তানকে আমি আল্লাহর উপর সোপর্দ করে যাচ্ছি। আর এভাবে আমি আমার স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। অতঃপর আমি যখন ভ্রমন শেষে দেশে ফিরে এলাম দেখতে পেলাম যে শিশুটির জন্মের পূর্বেই তার মা মৃত্যুবরণ করেছে। তখন আমার আফসোস করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না। কয়েকদিন আমার মন ভীষণ খারাপ থাকে। একদিন আমি বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বসে গল্প করছিলাম। এমন সময় দূর থেকে আগুনের লেলিহান শিখা আমাদের সকলকে তাক লাগিয়ে দেয়। আমি বন্ধুদেরকে জিজ্ঞেস করলাম : ব্যাপার কী ?

তারা ব লল এ অগ্নি শিখা তোমার মৃতা স্ত্রীর সমাধিস্থল থেকে বের হচ্ছে। আমি অবাক কন্ঠে বলাম : আমার স্ত্রী তো আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে কোন ত্রুটি করেনি। মা নুষের অধিকার নষ্ট করেনি। আর কখনো বেপর্দা হয়নি। কখনো ভুলেও সালাত তরক করেনি। তাহলে কেন এমনটি হচ্ছে ? কোন সন্তোষজনক উত্তর কেউ দিতে পারলো না।

এমনিভাবে কয়েকদিন অনবরত আগুনের ধোয়া আমার জিজ্ঞাসা আরো বাড়িয়ে তোললো। একদিকে বিস্ময় আর অপরদিকে স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম কবর খুড়ে দেখবো। যেই কথা সেই কাজ। কবর খুড়ে দেখতে পেলাম এক আশ্চর্য দৃশ্য। একটি বাতি কবরের ভিতর জ্বলছে আর তার আলোতে এ কোলের শিশুটি খেলছে। আমি এ শিশুটিকে কোলে তুলে নেয়া মাত্রই আসমান থেকে এক গায়েবী আওয়াজ আসে : এ শিশুটিকে আমার কাছে সোপর্দ করে গিয়েছিলে আর তাই ওকে এখন তোমার কাছে ফিরিয়ে দিলাম। যদি শিশুটির মাকেও আমার কাছে তুলে দিতে তাহলে আজকে তাকেও তোমার কাছে ফিরিয়ে দিতাম। ৫৭

(৫৮)

নেকড়ে বাঘের ভয়

হযরত ইয়াকুব (আঃ) বহু বছর তাঁর প্রাণের চেয়েও প্রিয় সন্তান হযরত ইউসুফের বিরহে অনেক কেদেছিলেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে শেষ পর্যন্ত অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। অবশেষে অনেক ঘটনার চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে হযরত ইউসুফের জামা হযরত ইয়াকুবের চোখে যখন রাখা হয় তখন তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন।

একদিন মহাক্ষমতাবান আল্লাহ হযরত ইয়াকুবের সঙ্গে প্রত্যাদেশের মাধ্যমে কথোপকথন করলেন। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন : হে আমার বান্দা ইয়াকুব! তুমি কি জানো কেন ইউসুফকে এত বছর তোমার কাছ থেকে দূরে রেখেছিলাম ?

উত্তরে হযরত ইয়াকুব (আঃ) বললেন : না , হে আমার প্রতিপালক। ”

আল্লাহ : তার কারণ হচ্ছে , তুমি যে বলেছিলে আমার ভয় হয় নেকড়ে বাঘ ইউসুফকে খেয়ে ফেলতে পারে। হে ইয়াকুব ! কেন নেকড়ে বাঘের ভয় পেয়েছিলে অথচ আমার উপর ভরসা করনি ? তুমি ইউসুফের ভাইদের বেখেয়ালীর খেয়াল রেখেছিলে অথচ আমার হেফাজতের বিষয়টি খেয়াল করনি ! ? ৫৮

(৫৯)

প্রেমময় সৃষ্টিকর্তার ভালবাসা

বর্ণিত আছে , মুশরিকদের সাথে রাসূলে পাকের (সা.) কোন এক যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে একটি শিশু বন্দি হয়। শিশুটিকে একটি পৃ থক জায়গায় সংরক্ষিত রাখা হয়েছিলো। সকল বন্দির ব্যাপারে রাসূলে খোদার সিদ্ধান্তই ছিলো চুড়ান্ত। কিন্তু শিশুবন্দি সহ বন্দিদের বসার স্থানে মাথার উপর কোন ছাউনি ছিলো না। তখন ছিলো গ্রীষ্মকাল। রোদের প্রচন্ড উত্তাপ। সকলেই গরমে ভীষণ কষ্ট ভোগ করছিলো। বন্দিদের মধ্যে একজন মহিলাও ছিলো। বন্দি শিশুটির উপর এ মহিলার দৃষ্টি পড়তেই তার অন্তরে অত্যধিক এক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। অকস্মাৎ সে মহিলা সকলকে অবাক করে প্রচন্ড বেগে শিশুটির দিকে দৌড়াতে শুরু করে। আর তার আশে পাশের বন্দিরাও তার পিছু ছোটতে থাকে। এক পর্যায়ে দেখা গেলো মহিলাটি শিশুকে কোলে নিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে। আর সে নিজে নত হয়ে শিশুটির জন্যে ছায়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বন্দিসহ রাসূলের সাহাবীরা বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে দেখছে মহিলা কেঁদে কেঁদে তার শিশুকে আদর করছে আর গুণ গুণ করে বলছেঃ এ শিশু আমার ছেলে , এটা আমার আদুরে বাচ্চা । মহিলাটির এ ধরনের মাতৃত্ববোধ ও স্নেহসুলভ আচরণ দেখে বন্দিরাসহ সাহাবীরা সকলে অভিভূত হয়ে যায়। তারা সবাই শিশুর মায়ের এ ধরনের আত্মত্যাগ দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে দু নয়ন দিয়ে অশ্রু ঝড়াচ্ছিলো। তারা সকলে কিছুক্ষনের জন্যে সকল কিছু ভুলে গিয়েছিলো।

সন্তানের প্রতি মায়ের এ ধরনের ভালবাসা সকলকে বিস্ময়াভূত করে দেয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই আল্লাহর প্রিয় বন্ধু হযরত মুহাম্মাদ(সা.) সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। সকলে তাঁকে ঘটনাটি বর্ণনা করে শোনালো। তিনি মায়ের ভালবাসা ও মুসলমানদের ক্রন্দনের কথা শোনে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। তিনি উপস্থিত মুসলমানদেরকে জিজ্ঞেস করেন : তোমরা কী এ মহিলার মাতৃসুলভ ভালবাসা ও আচরণে অবাক হয়েছো ?

সকলে বলো : জী , ইয়া রাসুলালাহ্!

অতঃপর কালক্ষেপন না করেই মহানবী (সা.) বলেন : আল্লাহ তায়ালা এ শিশুটির উপর মায়ের ভালবাসার চেয়েও তার সকল বান্দাদেরকে অনেক অ-নে-ক বেশী ভালবাসেন। সেদিনের মত মুসলমানরা অন্য কোন দিন এত বেশী খুশী ও আনন্দ উপভোগ করেনি।৫৯

আল্লাহ রাসূলে এবং উলিল আমরে র আনুগত্য

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর আনুগত্য কর , রাসূলের আনুগত্য কর এবং উলিল আমরের ” ...। (সূরা-নিসা , আয়াত-৫৯) ।

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাস্সিরগণ ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। কেউ উলিল আমর ” -কে রাষ্ট্রনায়ক , কেউ আবার বিচারক হিসাবে মত প্রকাশ করেছেন , (তাফসীরে মারেফুল কোরআন) ; মূলতঃ এতে আহলে বাইতের মাসুম ইমামদের কথা বলা হয়েছে। কেননা আল্লাহ্ যেখানে নিজের সঙ্গে রাসূল (সাঃ)-এর আনুগত্যের হুকুম দিচ্ছেন ; সেখানে উলিল আমরের আনুগত্যও সকল বান্দাদের উপর ওয়াজিব ঘোষণা করেছেন। এখান উলিল আমরকে আল্লাহ্ ও রাসূলের প্রতিনিধি ঘোষণা করেছেন। তাঁকে অবশ্যই মাসুম (নিষ্পাপ) হতে হবে। আল্লাহ কখনো ভ্রান্তিযুক্ত মানুষকে তার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন না , এটা সাধারণ বিবেকবান ব্যক্তিও বুঝতে পারে। আহলে বাইত (আঃ)-এর বারো ইমাম ব্যতিত , অন্য কারো সম্পর্কে কেউ এই দাবী করতে পারে না ; যে , তারাও ভ্রান্তি মুক্ত ছিলেন , এছাড়া আল্লাহর এই নির্দেশ কোন কাল , সময় বা কোন ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটা সব সময়ের জন্য , এমনকি কেয়ামত পর্যন্ত এই নির্দেশ চলতে থাকবে। এখন দেখতে হবে , যারা ভ্রান্তিযুক্ত রাষ্ট্রনায়ক , কিংবা বিচারককে আনুগত্য করার মত প্রকাশ করেছেন , তারা মুসলমানদেরকে মহা বিপদে ফেলে দিয়েছেন , কারণ দুনিয়াতে অনেক দেশ আছে , যেখানে খ্রিস্টান , ইহুদী , কাফের বা মুশরিক রাষ্ট্রনায়ক কিংবা বিচারক রয়েছেন , আর যদি মুসলমানও থেকে থাকেন , তাও ৭৩ দলে বিভক্ত হয়ে বসে আছেন। মহানবী (সাঃ) বলেছেন , আমার উম্মতেরা আমার পর ৭৩ দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে , এদের মধ্যে ১টি দল পরকালে মুক্তি পাবে , আর বাকি দলগুলো পথভ্রষ্ট বা তারা জাহান্নামী হবে। সূত্রঃ- মুসতাদরাকে হাকেম , খঃ-৩ পৃঃ-১০৯। মহানবী (সাঃ) এটাও বলে গেছেন আমার উম্মতের ১টি দল (মাযহাব) সর্বদাই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। ”সূত্রঃ-সহীহ্ মুসলিম , খঃ-৫ , হাঃ-৪৭৯৭ , ( , ফাঃ)।

মহানবী (সাঃ) বলে গেছেন একদল ছাড়া সকলে জাহান্নামে যাবে । আবার দেখা যায় কোথাও সুন্নী ’ (হানাফি , মালেকি , শাফাঈ , হাম্বালী) রাষ্ট্রনায়ক কিংবা বিচারক , আবার কোথাও ইসনা আশারীয়া শিয়া ’ (মহানবী (সাঃ) ও তার আহলে বাইত (আঃ)-এর বারো ইমাম-এর অনুসারিগণ) রাষ্ট্রনায়ক বা বিচারক , কোথাও আবার (মুয়াবিয়া ও এজিদ-এর কোরআন পরিপন্থি রাজতন্ত্রী আইন , রাজা-বাদশাদের আইন) , ওহাবী-সালাফী ’ রাষ্ট্রনায়ক বা বিচারক রয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো ? মুসলমানরা কাকে ছড় কাকে আনুগত্য করবে । আর যদি বলা হয় , সকলকেই আনুগত্য করতে হবে! তাও সম্ভব নয়। তাহলে সহজে বুঝা যায় , নিশ্চয়ই এই দুনিয়ার রাষ্ট্রনায়ক বা বিচারক বাদে অন্য কাউকে আনুগত্য করতে বলা হয়েছে এবং তাকে অবশ্যই সব সময় উপস্থীত থাকতে হবে , তা না হলে আল্লাহর এই নির্দেশ অকার্যকর থেকে যাবে । কোরআনে আল্লাহ পাক বলেন , স্মরণ কর , সেদিনের (কিয়ামতের) কথা যখন আমি সকল মানুষকে তাদের ইমামসহ (নেতাসহ) আহবান করব ” ....। (সূরা-বনী ইসরাঈল , আয়াত-৭১) ; আপনি তো কেবল সতর্ককারী মাত্র , আর প্রত্যেক কওমের জন্য আছে পথ প্রদর্শক ” । (সূরা রা ’ দ , আয়াত-৭)

মহানবী (সাঃ) এরশাদ করেছেন , যে ব্যক্তি সময়ের ইমামকে না চিনে বা না জেনে মারা যায় সে জাহলীয়াতে মারা যায় ” ।সূত্রঃ- সহীহ্ মুসলিম , খঃ-৩ , হাঃ- ১৮৫১ (লেবানন) ; মুসনাদে হাম্বাল , খঃ-৪ , পৃঃ-৯৬ ; কানজুল উম্মাল , খঃ-১ , পৃঃ-১০৩ ; তাফসিরে ইবনে কাসির , খঃ -১ , পৃঃ-৫১৭ (মিশর) ; সহীহ্ মুসলিম (সকল খণ্ড একত্রে) পৃঃ-৭৫২ , হাঃ-৪৬৪১ ; ( তাজ কোং) ।

সুতরাং কেউই একমত হবেন না যে , দুনিয়ার কোন রাষ্ট্রনায়ক বা বিচারককে না চিনে বা না জেনে মারা গেলে সে জাহলীয়াতে মারা যায় ” ।সূত্রঃ- কোরআন মাজীদ-হাফেজ মাওলানা সৈয়দ ফারমান আলী , পৃঃ-১৩৮-১৩৯ , ( উর্দ্দু) ; শেইখ সুলাইমান কান্দুযী-ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃঃ-১৮৯ , ( উর্দ্দু) ; বেলায়াত সম্পর্কিত আয়াতসমূহের তাফসীর , পৃঃ-৮৭-১০৫ , ( বাংলা) আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজি ; কেফাইয়াতুল মোওয়াহহেদীন , খঃ-২ , পৃঃ-১৪১ ; মাজমাউল বয়ান , খঃ-৩ , পৃঃ-৬৪ ; রাওয়ান জাভেদ , খঃ-২ , পৃঃ-৭১ ; বায়ানুস সায়াদাহ্ , খঃ-২ , পৃঃ ২৯ ; তাফসীরে কুম্মী , খঃ-১ , পৃঃ-১৪১ ; শাওয়াহেদুত তানযিল , খঃ-১ , পৃঃ-১৪৮ ; তাফসীরে ফুরাত , পৃঃ-২৮ ; তাফসীরে জাফর , খঃ-১ , পৃঃ-৩০৭-৩০৮ ; তাফসীরে শাফী , খঃ-২ , পৃঃ-৩০৯-৩১৩ ; আল কাফী , খঃ-১ , পৃঃ-২৭৬ ; তাফসীরে আইয়াশী , খঃ-১ , পৃঃ-২৪৭ ; The Holy Quran, Commentary- Tafsir By-Ayalullah Agha Mehdi Pooya & S.V. Mir Ahmed Ali. Page-৩৭৮-৩৭৯ |

হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে , উলিল আমরের ” আদেশ মান্য করা কি অবশ্যই কর্তব্য ? তিনি বললেন: হ্যাঁ , তাঁরা ঐসব ব্যক্তি যাদের আদেশ পালন করা এই আয়াত ( সূরা-নিসা , আয়াত-৫৯) ওয়াজিব করা হয়েছে , আর এই আয়াত আহলে বাইতগণের শানে নাযিল হয়েছে।সূত্রঃ - কওকাবে দুরির ফি ফাযায় েলে আলী , পৃঃ ১৬৫ ; সৈয়দ মোঃ সালে কাশাফী , সুন্নী হানাফী , আরে ফ বিল্লাহ ) ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ্ , পৃঃ - ২১ ; তাফসীরে কাবীর - খঃ - , পৃঃ - ৩৫৭ ; কেফাইয়াতুল মোওয়াহহেদীন , খঃ - , পৃঃ - ১৪১ ; মাজমাউল বয়ান , খঃ - , পৃঃ - ৬৪ ; রাওয়া ন জা ভেদ , খঃ - , পৃঃ - ৭১ ; বায়ানুস সায়াদাহ্ , খঃ - , পৃঃ ২৯ ; তাফসীরে কুম্মী , খঃ - , পৃঃ - ১৪১ ; শাওয়াহে দুত তানযিল , খঃ - , পৃঃ - ১৪৮ ; তাফসীরে ফুরাত , পৃঃ - ২৮

যেহেতু দ্বীন ইসলাম কিয়ামত অবধি স্থায়ী থাকবে এবং রাসূল (সাঃ)-এর পর আর কোন নবীর আগমন হবে না। এই জন্য রাসূল (সাঃ) নিজ দায়িত্ব হতে অব্যাহতি পেতে আল্লাহর নির্দেশে , বারোজন স্থলাভিসিক্ত (ইমামদেরক) মনোনিত করে , তাঁদের নাম উল্লেখ করে যান। নবী (সাঃ) এরশাদ করেন , আমার পর দ্বীন ইসলামকে রক্ষা করতে কুরাইশ-বনি হাশেম হতে বারোজন খলিফা বা ইমাম হবে ” ।

মহানবী (সাঃ) এক হাদীসে বলেছেন যে , আমার পর বারোজন ” ইমাম ( নেতা) হবেন , তাঁরা সবাই বনি হাশেমগণের মধ্যে হতে হবেন।সূত্রঃ-শেইখ সুলাইমান কান্দুযী-ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃঃ-৪১৬ (উর্দ্দু)।

(সহীহ্ বুখারীতে) জাবির বিন সামরাহ থেকে বর্ণনা করেছেন যে , তিনি বলেছেন , আমি রাসূল (সাঃ)-এর কাছ থেকে শুনছি যে , তিনি বলেছেন বারোজন আমির ( নেতা) (আমার পরে) আগমন করবে । অতঃপর একটি শব্দ উচ্চারণ করলেন আমি শুনতে পাইনি। আমার পিতা বলেন তিনি [নবী (সাঃ)] বলেছেন তাঁরা সকলে কুরাইশ বংশ থেকে হবেন ” ।সূত্রঃ- সহীহ্ আল বুখারী , খঃ-৬ , হাঃ-৬৭১৬ (আধুনিক) ।

পাঠকদের যাচাই করার জন্য কিছু সূত্র উল্লেখ করলাম , যাতে নিজরাই পরীক্ষা করতে পারেন। পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করছি।সূত্রঃ- সহীহ্ আল বুখারী , খঃ-৬ , হাঃ-৬৭১৬ (আধুনিক) ; সহীহ্ আল বুখারী , খঃ-১০ , হাঃ-৬৭২৯ , ( , ফাঃ) ; সহিহুল বুখারী , খঃ-৬ , হাঃ- ৭২২২ (আহলে হাদীস লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত) ; সহীহ্ মুসলীম , খঃ-৫ , হাঃ-৪৫৫৪ , ৪৫৫৫ , ৪৫৫৭ , ৪৫৫৮ ও ৪৫৫৯ (ই , ফাঃ) ; সহীহ্ আবু দাউদ , খঃ-৫ , হাঃ-৪২৩০-৪২৩১ (ইফাঃ) ; শেইখ সুলাইমান কান্দুযী-ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত-পৃঃ-৪১৬ (উর্দ্দু)।

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) (নবী করিম (সাঃ) -এর বিশিষ্ট সাহাবী) বর্ণনা করেন যে , আমি রাসূলে পাক (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার পরবর্তীকালে কতজন ইমাম হবেন , মহানবী (সাঃ) বলেন , বনী ইসরাঈলের নবীদের ন্যায় বারোজন হবেসূত্রঃ-আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকা , পৃঃ-১৩ ; মিশরে মুদ্রিত , কওকাবে দুরির ফি ফাযায়েলে আলী , পৃঃ-১৪৪ ; সৈয়দ মোঃ সালে কাশাফী , সুন্নি হানাফী , আরেফ বিল্লাহ)।

আল্লামা কামাল উদ্দিন মোহাম্মদ ইবনে তালহা শাফেয়ী বর্ণনা করেন যে , মহানবী (সাঃ) বলেছেন যে , সমস্ত আয়েম্মাগণ কুরাইশ হতে হবেন। কারণ কুরাইশদের ব্যতিত অন্য কেউ নবী (সাঃ)-এর উত্তরাধিকারী বা ইমাম হতে পারবে না ” ।সূত্রঃ - আল্লামা কামাল উদ্দিন মোহাম্মদ ইবনে তালহা শা ফেয়ী , মাতালেবুস সাউল , পৃঃ - ১৭

আমাদের আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত সুফি আরেফ বিল্লাহ আলেম , আল্লামা সৈয়দ আলী হামদানী শাফায়ী সুন্নি বর্ণনা করেন যে , আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন , আমি রাসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে , আমি , আলী , ফাতেমা , হাসান , ও হোসাইন এবং হোসাইন এর পরবর্তী নয়জন সন্তান। পাক পবিত্র ও মাসুম একই গ্রন্থে তিনি আরো বর্ণনা করেন যে , নবী (সাঃ) বলেছেন , আমি সকল নবীদের সরদার (সাইয়্যেদুল আম্বিয়া) এবং আলী সকল ওয়াসীর সরদার (সাইয়্যেদুল আওসিয়া) আর আমার পর বারোজন ” উত্তরসূরী হবে। তাদের মধ্যে প্রথম হচ্ছেন , হযরত আলী ইবনে আবু তালেব ও শেষ হচ্ছেন , ইমাম মাহ্দী , (আখেরউজ্জামান)সূত্রঃ- মুয়াদ্দাতুল কারবা , পৃঃ-৯৮ ; শেইখ সুলাইমান কান্দুযী , ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃঃ-৪১৬ , ( উর্দ্দু)।

ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) থেকে বর্ণিত যে , নবী করিম (সাঃ) বলেছেন , ইমাম আমার পর বারোজন ” হবে তাঁদের মধ্যে প্রথম আলী এবং শেষ কায়েম মহ্দী হবে , এবং তাঁরা আমার খলিফা , (ওয়াসি) উত্তরাধিকারী ও আমার আউলিয়া এবং আমার উম্মতের উপর আল্লাহর পক্ষ হতে হুজ্জাত (প্রমাণ) যারা তাদেরকে আনুগত্য ও বিশ্বাস করবে , তারা মমিন ও যারা তাদের আনুগত্য ও বিশ্বাস করবে না , তারা অবিশ্বাসী।সূত্রঃ-কওকাবে দুরির ফি ফাযায়েলে আলী , পৃঃ-১৪৩ ; ( সৈয়দ মোঃ সালে কাশাফী , সুন্নি হানাফী , আরেফ বিল্লাহ) ।

ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , নবী করিম (সাঃ) ইমাম আলীকে বলেন , আমার আহলে বাইত হতে বারোজন ” লাক হবে যাঁদের আমার জ্ঞান গরিমা দান করা হবে , তাদের মধ্যে তুমি আলী হ চ্ছো প্রথম , ও তাঁদের ১২তম কায়েম ইমাম মাহ্দী আলাইহিস সালাম ” যার দ্বারা আল্লাহ্ ’ তায়ালা এই জমিনকে মাসরিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত ইনসাফ কায়েম করবেন। ”সূত্রঃ - কাওকাবে দুরির ফি ফাযায় েলে আলী , পৃঃ - ১৪৩ , সৈয়দ মোঃ সালে কাশাফী , সুন্নি হানাফী , আরেফ বিল্লাহ।

আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত আলেম শেখ সুলাইমান কান্দুজী বলখী , স্বীয় প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাতে লিখেছেন , মহানবী (সাঃ) এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন , আমার স্থলাভিসিক্ত ইমাম বারোজন হবে। তাদের প্রথম ইমাম আলী ও সর্ব শেষ হবেন ইমাম মাহদী ” । আবার উলিল আমরের সম্পর্কে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে , জুনদুব ইবনে জুনাদা {আবু যার (রাঃ) }-এর প্রশ্নের জবাবে বলেন যে , আপনার পর কাঁরা আপনার স্থলাভিসিক্ত হবে , তাদের নাম কি ? মহানবী (সাঃ) ইমাম আলী হতে ইমাম মাহদী (আঃ) পর্যন্ত সকলের নাম বর্ণনা করেন। তাদের মধ্যে ১. ইমাম আলী ২. (৯) ইমাম হাসান , ৩. ইমাম হোসাইন , ৪. ইমাম জয়নুল আবেদীন , ৫. ইমাম মুহাম্মদ বাকের , ৬. ইমাম জাফর সাদেক , ৭. ইমাম মুসা কাজিম , ৮. ইমাম আলী রজা , ৯. ইমাম মুহাম্মদ তাকী , ১০. ইমাম আলী নাকী , ১১. ইমাম হাসান আসকারী এবং তাদের মধ্যে ১২. (বারোতম) ইমাম মাহ্দী (আলাইহিমুস সালাম) তিনি আরো বলেন , ওহে জাবের তুমি আমার ৫ম স্থলাভিসিক্ত ইমাম মুহাম্মাদ বাকের-এর সাক্ষাত পাবে , তাকে আমার সালাম পৌছে দিও।সূত্রঃ- ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত-পৃঃ-৪২৭ ; ( বৈরুত) ইবনে আরাবী- ইবক্বাউল ক্বাইয়্যিম-২৬৬ ; অধ্যায় , মানাকেবে ইবনে শাহরে আশুব , খঃ-১ , পৃঃ-২৮২ ; রাওয়ান যাভেদ , খঃ-২ , পৃঃ-৭২ ; কিফায়া আল আসার , খঃ-৭ , পৃঃ-৭ ; ( পুরোনা প্রিন্ট) কিফায়া আল আসার , পৃঃ-৫৩ , ৬৯ ; ( কোম প্রিন্ট) গায়াতুল মারাম , খঃ- ১০ , পৃঃ-২৬৭ ; ইসবাতুল হুদা , খঃ-৩ , পৃঃ-১২৩ ; হজরত খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী (রহঃ)-এর মাজারের প্রধান ফটক পাক-পাঞ্জাতনের নাম ও ১২ ইমামের নাম খোদাই করে লেখা রয়েছে ; এবং মসজিদে নববীর পিলারের চতুরপাশে ১২ ইমামের নাম খোদাই করে লেখা রয়েছে

আল্লাহ রাসূলে এবং উলিল আমরে র আনুগত্য

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর আনুগত্য কর , রাসূলের আনুগত্য কর এবং উলিল আমরের ” ...। (সূরা-নিসা , আয়াত-৫৯) ।

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাস্সিরগণ ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। কেউ উলিল আমর ” -কে রাষ্ট্রনায়ক , কেউ আবার বিচারক হিসাবে মত প্রকাশ করেছেন , (তাফসীরে মারেফুল কোরআন) ; মূলতঃ এতে আহলে বাইতের মাসুম ইমামদের কথা বলা হয়েছে। কেননা আল্লাহ্ যেখানে নিজের সঙ্গে রাসূল (সাঃ)-এর আনুগত্যের হুকুম দিচ্ছেন ; সেখানে উলিল আমরের আনুগত্যও সকল বান্দাদের উপর ওয়াজিব ঘোষণা করেছেন। এখান উলিল আমরকে আল্লাহ্ ও রাসূলের প্রতিনিধি ঘোষণা করেছেন। তাঁকে অবশ্যই মাসুম (নিষ্পাপ) হতে হবে। আল্লাহ কখনো ভ্রান্তিযুক্ত মানুষকে তার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন না , এটা সাধারণ বিবেকবান ব্যক্তিও বুঝতে পারে। আহলে বাইত (আঃ)-এর বারো ইমাম ব্যতিত , অন্য কারো সম্পর্কে কেউ এই দাবী করতে পারে না ; যে , তারাও ভ্রান্তি মুক্ত ছিলেন , এছাড়া আল্লাহর এই নির্দেশ কোন কাল , সময় বা কোন ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটা সব সময়ের জন্য , এমনকি কেয়ামত পর্যন্ত এই নির্দেশ চলতে থাকবে। এখন দেখতে হবে , যারা ভ্রান্তিযুক্ত রাষ্ট্রনায়ক , কিংবা বিচারককে আনুগত্য করার মত প্রকাশ করেছেন , তারা মুসলমানদেরকে মহা বিপদে ফেলে দিয়েছেন , কারণ দুনিয়াতে অনেক দেশ আছে , যেখানে খ্রিস্টান , ইহুদী , কাফের বা মুশরিক রাষ্ট্রনায়ক কিংবা বিচারক রয়েছেন , আর যদি মুসলমানও থেকে থাকেন , তাও ৭৩ দলে বিভক্ত হয়ে বসে আছেন। মহানবী (সাঃ) বলেছেন , আমার উম্মতেরা আমার পর ৭৩ দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে , এদের মধ্যে ১টি দল পরকালে মুক্তি পাবে , আর বাকি দলগুলো পথভ্রষ্ট বা তারা জাহান্নামী হবে। সূত্রঃ- মুসতাদরাকে হাকেম , খঃ-৩ পৃঃ-১০৯। মহানবী (সাঃ) এটাও বলে গেছেন আমার উম্মতের ১টি দল (মাযহাব) সর্বদাই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। ”সূত্রঃ-সহীহ্ মুসলিম , খঃ-৫ , হাঃ-৪৭৯৭ , ( , ফাঃ)।

মহানবী (সাঃ) বলে গেছেন একদল ছাড়া সকলে জাহান্নামে যাবে । আবার দেখা যায় কোথাও সুন্নী ’ (হানাফি , মালেকি , শাফাঈ , হাম্বালী) রাষ্ট্রনায়ক কিংবা বিচারক , আবার কোথাও ইসনা আশারীয়া শিয়া ’ (মহানবী (সাঃ) ও তার আহলে বাইত (আঃ)-এর বারো ইমাম-এর অনুসারিগণ) রাষ্ট্রনায়ক বা বিচারক , কোথাও আবার (মুয়াবিয়া ও এজিদ-এর কোরআন পরিপন্থি রাজতন্ত্রী আইন , রাজা-বাদশাদের আইন) , ওহাবী-সালাফী ’ রাষ্ট্রনায়ক বা বিচারক রয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো ? মুসলমানরা কাকে ছড় কাকে আনুগত্য করবে । আর যদি বলা হয় , সকলকেই আনুগত্য করতে হবে! তাও সম্ভব নয়। তাহলে সহজে বুঝা যায় , নিশ্চয়ই এই দুনিয়ার রাষ্ট্রনায়ক বা বিচারক বাদে অন্য কাউকে আনুগত্য করতে বলা হয়েছে এবং তাকে অবশ্যই সব সময় উপস্থীত থাকতে হবে , তা না হলে আল্লাহর এই নির্দেশ অকার্যকর থেকে যাবে । কোরআনে আল্লাহ পাক বলেন , স্মরণ কর , সেদিনের (কিয়ামতের) কথা যখন আমি সকল মানুষকে তাদের ইমামসহ (নেতাসহ) আহবান করব ” ....। (সূরা-বনী ইসরাঈল , আয়াত-৭১) ; আপনি তো কেবল সতর্ককারী মাত্র , আর প্রত্যেক কওমের জন্য আছে পথ প্রদর্শক ” । (সূরা রা ’ দ , আয়াত-৭)

মহানবী (সাঃ) এরশাদ করেছেন , যে ব্যক্তি সময়ের ইমামকে না চিনে বা না জেনে মারা যায় সে জাহলীয়াতে মারা যায় ” ।সূত্রঃ- সহীহ্ মুসলিম , খঃ-৩ , হাঃ- ১৮৫১ (লেবানন) ; মুসনাদে হাম্বাল , খঃ-৪ , পৃঃ-৯৬ ; কানজুল উম্মাল , খঃ-১ , পৃঃ-১০৩ ; তাফসিরে ইবনে কাসির , খঃ -১ , পৃঃ-৫১৭ (মিশর) ; সহীহ্ মুসলিম (সকল খণ্ড একত্রে) পৃঃ-৭৫২ , হাঃ-৪৬৪১ ; ( তাজ কোং) ।

সুতরাং কেউই একমত হবেন না যে , দুনিয়ার কোন রাষ্ট্রনায়ক বা বিচারককে না চিনে বা না জেনে মারা গেলে সে জাহলীয়াতে মারা যায় ” ।সূত্রঃ- কোরআন মাজীদ-হাফেজ মাওলানা সৈয়দ ফারমান আলী , পৃঃ-১৩৮-১৩৯ , ( উর্দ্দু) ; শেইখ সুলাইমান কান্দুযী-ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃঃ-১৮৯ , ( উর্দ্দু) ; বেলায়াত সম্পর্কিত আয়াতসমূহের তাফসীর , পৃঃ-৮৭-১০৫ , ( বাংলা) আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজি ; কেফাইয়াতুল মোওয়াহহেদীন , খঃ-২ , পৃঃ-১৪১ ; মাজমাউল বয়ান , খঃ-৩ , পৃঃ-৬৪ ; রাওয়ান জাভেদ , খঃ-২ , পৃঃ-৭১ ; বায়ানুস সায়াদাহ্ , খঃ-২ , পৃঃ ২৯ ; তাফসীরে কুম্মী , খঃ-১ , পৃঃ-১৪১ ; শাওয়াহেদুত তানযিল , খঃ-১ , পৃঃ-১৪৮ ; তাফসীরে ফুরাত , পৃঃ-২৮ ; তাফসীরে জাফর , খঃ-১ , পৃঃ-৩০৭-৩০৮ ; তাফসীরে শাফী , খঃ-২ , পৃঃ-৩০৯-৩১৩ ; আল কাফী , খঃ-১ , পৃঃ-২৭৬ ; তাফসীরে আইয়াশী , খঃ-১ , পৃঃ-২৪৭ ; The Holy Quran, Commentary- Tafsir By-Ayalullah Agha Mehdi Pooya & S.V. Mir Ahmed Ali. Page-৩৭৮-৩৭৯ |

হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে , উলিল আমরের ” আদেশ মান্য করা কি অবশ্যই কর্তব্য ? তিনি বললেন: হ্যাঁ , তাঁরা ঐসব ব্যক্তি যাদের আদেশ পালন করা এই আয়াত ( সূরা-নিসা , আয়াত-৫৯) ওয়াজিব করা হয়েছে , আর এই আয়াত আহলে বাইতগণের শানে নাযিল হয়েছে।সূত্রঃ - কওকাবে দুরির ফি ফাযায় েলে আলী , পৃঃ ১৬৫ ; সৈয়দ মোঃ সালে কাশাফী , সুন্নী হানাফী , আরে ফ বিল্লাহ ) ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ্ , পৃঃ - ২১ ; তাফসীরে কাবীর - খঃ - , পৃঃ - ৩৫৭ ; কেফাইয়াতুল মোওয়াহহেদীন , খঃ - , পৃঃ - ১৪১ ; মাজমাউল বয়ান , খঃ - , পৃঃ - ৬৪ ; রাওয়া ন জা ভেদ , খঃ - , পৃঃ - ৭১ ; বায়ানুস সায়াদাহ্ , খঃ - , পৃঃ ২৯ ; তাফসীরে কুম্মী , খঃ - , পৃঃ - ১৪১ ; শাওয়াহে দুত তানযিল , খঃ - , পৃঃ - ১৪৮ ; তাফসীরে ফুরাত , পৃঃ - ২৮

যেহেতু দ্বীন ইসলাম কিয়ামত অবধি স্থায়ী থাকবে এবং রাসূল (সাঃ)-এর পর আর কোন নবীর আগমন হবে না। এই জন্য রাসূল (সাঃ) নিজ দায়িত্ব হতে অব্যাহতি পেতে আল্লাহর নির্দেশে , বারোজন স্থলাভিসিক্ত (ইমামদেরক) মনোনিত করে , তাঁদের নাম উল্লেখ করে যান। নবী (সাঃ) এরশাদ করেন , আমার পর দ্বীন ইসলামকে রক্ষা করতে কুরাইশ-বনি হাশেম হতে বারোজন খলিফা বা ইমাম হবে ” ।

মহানবী (সাঃ) এক হাদীসে বলেছেন যে , আমার পর বারোজন ” ইমাম ( নেতা) হবেন , তাঁরা সবাই বনি হাশেমগণের মধ্যে হতে হবেন।সূত্রঃ-শেইখ সুলাইমান কান্দুযী-ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃঃ-৪১৬ (উর্দ্দু)।

(সহীহ্ বুখারীতে) জাবির বিন সামরাহ থেকে বর্ণনা করেছেন যে , তিনি বলেছেন , আমি রাসূল (সাঃ)-এর কাছ থেকে শুনছি যে , তিনি বলেছেন বারোজন আমির ( নেতা) (আমার পরে) আগমন করবে । অতঃপর একটি শব্দ উচ্চারণ করলেন আমি শুনতে পাইনি। আমার পিতা বলেন তিনি [নবী (সাঃ)] বলেছেন তাঁরা সকলে কুরাইশ বংশ থেকে হবেন ” ।সূত্রঃ- সহীহ্ আল বুখারী , খঃ-৬ , হাঃ-৬৭১৬ (আধুনিক) ।

পাঠকদের যাচাই করার জন্য কিছু সূত্র উল্লেখ করলাম , যাতে নিজরাই পরীক্ষা করতে পারেন। পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করছি।সূত্রঃ- সহীহ্ আল বুখারী , খঃ-৬ , হাঃ-৬৭১৬ (আধুনিক) ; সহীহ্ আল বুখারী , খঃ-১০ , হাঃ-৬৭২৯ , ( , ফাঃ) ; সহিহুল বুখারী , খঃ-৬ , হাঃ- ৭২২২ (আহলে হাদীস লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত) ; সহীহ্ মুসলীম , খঃ-৫ , হাঃ-৪৫৫৪ , ৪৫৫৫ , ৪৫৫৭ , ৪৫৫৮ ও ৪৫৫৯ (ই , ফাঃ) ; সহীহ্ আবু দাউদ , খঃ-৫ , হাঃ-৪২৩০-৪২৩১ (ইফাঃ) ; শেইখ সুলাইমান কান্দুযী-ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত-পৃঃ-৪১৬ (উর্দ্দু)।

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) (নবী করিম (সাঃ) -এর বিশিষ্ট সাহাবী) বর্ণনা করেন যে , আমি রাসূলে পাক (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার পরবর্তীকালে কতজন ইমাম হবেন , মহানবী (সাঃ) বলেন , বনী ইসরাঈলের নবীদের ন্যায় বারোজন হবেসূত্রঃ-আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকা , পৃঃ-১৩ ; মিশরে মুদ্রিত , কওকাবে দুরির ফি ফাযায়েলে আলী , পৃঃ-১৪৪ ; সৈয়দ মোঃ সালে কাশাফী , সুন্নি হানাফী , আরেফ বিল্লাহ)।

আল্লামা কামাল উদ্দিন মোহাম্মদ ইবনে তালহা শাফেয়ী বর্ণনা করেন যে , মহানবী (সাঃ) বলেছেন যে , সমস্ত আয়েম্মাগণ কুরাইশ হতে হবেন। কারণ কুরাইশদের ব্যতিত অন্য কেউ নবী (সাঃ)-এর উত্তরাধিকারী বা ইমাম হতে পারবে না ” ।সূত্রঃ - আল্লামা কামাল উদ্দিন মোহাম্মদ ইবনে তালহা শা ফেয়ী , মাতালেবুস সাউল , পৃঃ - ১৭

আমাদের আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত সুফি আরেফ বিল্লাহ আলেম , আল্লামা সৈয়দ আলী হামদানী শাফায়ী সুন্নি বর্ণনা করেন যে , আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন , আমি রাসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে , আমি , আলী , ফাতেমা , হাসান , ও হোসাইন এবং হোসাইন এর পরবর্তী নয়জন সন্তান। পাক পবিত্র ও মাসুম একই গ্রন্থে তিনি আরো বর্ণনা করেন যে , নবী (সাঃ) বলেছেন , আমি সকল নবীদের সরদার (সাইয়্যেদুল আম্বিয়া) এবং আলী সকল ওয়াসীর সরদার (সাইয়্যেদুল আওসিয়া) আর আমার পর বারোজন ” উত্তরসূরী হবে। তাদের মধ্যে প্রথম হচ্ছেন , হযরত আলী ইবনে আবু তালেব ও শেষ হচ্ছেন , ইমাম মাহ্দী , (আখেরউজ্জামান)সূত্রঃ- মুয়াদ্দাতুল কারবা , পৃঃ-৯৮ ; শেইখ সুলাইমান কান্দুযী , ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃঃ-৪১৬ , ( উর্দ্দু)।

ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) থেকে বর্ণিত যে , নবী করিম (সাঃ) বলেছেন , ইমাম আমার পর বারোজন ” হবে তাঁদের মধ্যে প্রথম আলী এবং শেষ কায়েম মহ্দী হবে , এবং তাঁরা আমার খলিফা , (ওয়াসি) উত্তরাধিকারী ও আমার আউলিয়া এবং আমার উম্মতের উপর আল্লাহর পক্ষ হতে হুজ্জাত (প্রমাণ) যারা তাদেরকে আনুগত্য ও বিশ্বাস করবে , তারা মমিন ও যারা তাদের আনুগত্য ও বিশ্বাস করবে না , তারা অবিশ্বাসী।সূত্রঃ-কওকাবে দুরির ফি ফাযায়েলে আলী , পৃঃ-১৪৩ ; ( সৈয়দ মোঃ সালে কাশাফী , সুন্নি হানাফী , আরেফ বিল্লাহ) ।

ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , নবী করিম (সাঃ) ইমাম আলীকে বলেন , আমার আহলে বাইত হতে বারোজন ” লাক হবে যাঁদের আমার জ্ঞান গরিমা দান করা হবে , তাদের মধ্যে তুমি আলী হ চ্ছো প্রথম , ও তাঁদের ১২তম কায়েম ইমাম মাহ্দী আলাইহিস সালাম ” যার দ্বারা আল্লাহ্ ’ তায়ালা এই জমিনকে মাসরিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত ইনসাফ কায়েম করবেন। ”সূত্রঃ - কাওকাবে দুরির ফি ফাযায় েলে আলী , পৃঃ - ১৪৩ , সৈয়দ মোঃ সালে কাশাফী , সুন্নি হানাফী , আরেফ বিল্লাহ।

আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত আলেম শেখ সুলাইমান কান্দুজী বলখী , স্বীয় প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাতে লিখেছেন , মহানবী (সাঃ) এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন , আমার স্থলাভিসিক্ত ইমাম বারোজন হবে। তাদের প্রথম ইমাম আলী ও সর্ব শেষ হবেন ইমাম মাহদী ” । আবার উলিল আমরের সম্পর্কে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে , জুনদুব ইবনে জুনাদা {আবু যার (রাঃ) }-এর প্রশ্নের জবাবে বলেন যে , আপনার পর কাঁরা আপনার স্থলাভিসিক্ত হবে , তাদের নাম কি ? মহানবী (সাঃ) ইমাম আলী হতে ইমাম মাহদী (আঃ) পর্যন্ত সকলের নাম বর্ণনা করেন। তাদের মধ্যে ১. ইমাম আলী ২. (৯) ইমাম হাসান , ৩. ইমাম হোসাইন , ৪. ইমাম জয়নুল আবেদীন , ৫. ইমাম মুহাম্মদ বাকের , ৬. ইমাম জাফর সাদেক , ৭. ইমাম মুসা কাজিম , ৮. ইমাম আলী রজা , ৯. ইমাম মুহাম্মদ তাকী , ১০. ইমাম আলী নাকী , ১১. ইমাম হাসান আসকারী এবং তাদের মধ্যে ১২. (বারোতম) ইমাম মাহ্দী (আলাইহিমুস সালাম) তিনি আরো বলেন , ওহে জাবের তুমি আমার ৫ম স্থলাভিসিক্ত ইমাম মুহাম্মাদ বাকের-এর সাক্ষাত পাবে , তাকে আমার সালাম পৌছে দিও।সূত্রঃ- ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত-পৃঃ-৪২৭ ; ( বৈরুত) ইবনে আরাবী- ইবক্বাউল ক্বাইয়্যিম-২৬৬ ; অধ্যায় , মানাকেবে ইবনে শাহরে আশুব , খঃ-১ , পৃঃ-২৮২ ; রাওয়ান যাভেদ , খঃ-২ , পৃঃ-৭২ ; কিফায়া আল আসার , খঃ-৭ , পৃঃ-৭ ; ( পুরোনা প্রিন্ট) কিফায়া আল আসার , পৃঃ-৫৩ , ৬৯ ; ( কোম প্রিন্ট) গায়াতুল মারাম , খঃ- ১০ , পৃঃ-২৬৭ ; ইসবাতুল হুদা , খঃ-৩ , পৃঃ-১২৩ ; হজরত খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী (রহঃ)-এর মাজারের প্রধান ফটক পাক-পাঞ্জাতনের নাম ও ১২ ইমামের নাম খোদাই করে লেখা রয়েছে ; এবং মসজিদে নববীর পিলারের চতুরপাশে ১২ ইমামের নাম খোদাই করে লেখা রয়েছে


4

5

6

7