কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত

কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত0%

কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত লেখক:
প্রকাশক: আল হোসেইনী প্রকাশনী
বিভাগ: ইমাম হোসাইন (আ.)

কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত

লেখক: সাইয়েদ ইবনে তাউস
প্রকাশক: আল হোসেইনী প্রকাশনী
বিভাগ:

ভিজিট: 18565
ডাউনলোড: 2862

কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 17 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 18565 / ডাউনলোড: 2862
সাইজ সাইজ সাইজ
কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত

কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত

লেখক:
প্রকাশক: আল হোসেইনী প্রকাশনী
বাংলা

“কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদত” সাইয়্যেদুশ শুহাদা হযরত হোসাইন ইবনে আলী (আ.)-এর জীবন চরিত সম্পর্কে রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লোহুফ’-এর বাংলা অনুবাদ। সাইয়েদ ইবনে তাউস নামক একজন প্রসিদ্ধ মনিষী গ্রন্থটি আরবীতে রচনা করেন। বলা যায় যে, এটি হচ্ছে এ সম্পর্কিত একটি পূর্ণাঙ্গ, নির্ভরযোগ্য ও একই সাথে সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ। কলেবরে ছোট হলেও প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। একটি অনুবাদ গোষ্ঠি কর্তৃক বইটি ফার্সি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে।

কারবালা ও

হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত

সাইয়েদ ইবনে তাউস

আল হোসেইনী প্রকাশনী

কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত

সাইয়েদ ইবনে তাউস

প্রকাশকঃ

মেজর (অবঃ) মোঃ আবদুল ওয়াহেদ

আল হোসেইনী প্রকাশনী

পাক পাঞ্জাতন পরিষদ

বাড়ী নং-১২ , সড়ক নং-৬ ,

সেক্টর-৬ , উত্তরা , ঢাকা

প্রকাশকালঃ

১০ মুহররম , ১৪১৫ হিজরী

২১ জুন , ১৯৯৪ ইংরেজী

৭ আষাড় , ১৪০১ বাংলা

প্রচ্ছদঃ

আরিফুর রহমান

এই বইটি আল হাসানাইন ( আ .) ওয়েব সাইট কর্তৃক আপলোড করা হয়েছে ।

http://alhassanain.org/bengali

ভূমিকা

الْحمْدُ للّه الْمُتجلّى لعباده منْ أُفُق الاْلْباب، الْمُجْلى عنْ مُراده بمنْطق السُّنّة والْكتاب، الّذى نزّه أوْلي أهُ عنْ دار الْغُرُور، وسما بهمْ إلى أنْوار السُّرُور الصلاة و السلام علی محمد خاتم الانبی أ و علی اله المنتجبین الازکی أ سیّما علی سبطه المظلوم سیّد الشهد أ من الان الی یوم اللق أ

“ কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদত ” সাইয়্যেদুশ শুহাদা হযরত হোসাইন ইবনে আলী (আ.)-এর জীবন চরিত সম্পর্কে রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ লোহুফ ’ -এর বাংলা অনুবাদ। সাইয়েদ ইবনে তাউস নামক একজন প্রসিদ্ধ মনিষী গ্রন্থটি আরবীতে রচনা করেন। বলা যায় যে , এটি হচ্ছে এ সম্পর্কিত একটি পূর্ণাঙ্গ , নির্ভরযোগ্য ও একই সাথে সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ। কলেবরে ছোট হলেও প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। একটি অনুবাদ গোষ্ঠি কর্তৃক বইটি ফার্সি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে।

বইটি তিনটি ভাগে বিন্যস্তঃ

প্রথম অধ্যায়-জন্ম থেকে ১০ই মহররম পর্যন্ত ইমাম হোসাইনের (আ.) জীবন চরিত।

দ্বিতীয় অধ্যায়-আশুরার দিন কারবালার ঘটনা ও শহীদগণের নিহত হওয়ার বিস্তারিত বিবরণ।

তৃতীয় অধ্যায়-হযরত ইমাম হোসাইনের শাহাদাতের পর হতে আহলে বাইতের মদীনায় ফিরে আসা পর্যন্ত সময়কালের খুটিনাটি ঘটনাবলীর বিবরণ।

ইমাম হোসাইন (আ.) এর ঐতিহাসিক শাহাদতের সঠিক তথ্যাবলী জানার জন্য নির্ভরযোগ্য বই এর অত্যন্ত অভাব। বিশ্বের সর্বকালের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতা লাভের লক্ষে শহীদদের সর্দার ইমাম হোসাইন (আ.)-আত্মত্যাগের যে মহান ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন ক্ষমতাসীন স্বার্থান্বেষী মহলের অব্যাহত শত্রুতার কারণে দুনিয়ার বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের কাছে তা সঠিকভাবে আসতে পারেনি। মুসলমানদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন যে , ইমাম (আ.) একদল কুফাবাসী অনুসারীদের মিথ্যা আশ্বাসের উপর নির্ভর করে কারবালায় গিয়ে এক মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হন। প্রকৃত ঘটনা না জানার কারণেই সর্ব যুগের শহীদদের নেতা ইমাম হোসাইন (আ.) সম্পর্কে এ ধরণের ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ রয়ে গেছে। অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে , এজিদকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যেও যদি তিনি ইরাকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতেন তাহলে একদল সশস্ত্র অনুসারী যোগাড় করে সঙ্গে নিতেন , যা তিনি করেন নি।

এ যাত্রার সিদ্ধান্তের কথা জেনে তার আনেক শুভানুধ্যায়ী এর ভয়াবহ পরিণতির কথা তাকে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ইমাম (আ.) তার সিদ্ধান্তে এতই অটল ছিলেন যে , তিনি কারো কথায় কান না দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি ।

আমাদের প্রিয় নবী (সা.) এর প্রিয়তম দৌহিত্র , জ্ঞানের দরজা হযরত আলী (আ.)-এর সন্তান , বেহেশতের যুবকদের সর্দার তিনি এ ধরনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অন্য কারো দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন এটা চিন্তাও করা যায় না। তদুপরি হুজুর (সা.) তার সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করে গেছেন যে , কারবালার মাটিতে তিনি শহীদ হবেন।

মহান আল্লাহ তার এক প্রিয় বান্দাহকে দিয়ে কারবালার পবিত্র প্রান্তরে এমন এক শোকাবহ হৃদয়বিদারক ঘটনার অবতারণা করাবেন যা সর্বকালের স্বাধীনতাকামী মজলুমের মানুষের জন্য একমাত্র আদর্শ ও প্রেরণার চিরস্থায়ী উৎসে-পরিণত হয়ে থাকবে। এ মহান আত্মত্যাগ ও শ্রেষ্ঠ কোরবানীর মাধ্যমে যে মহা মূল্যবান শিক্ষা তিনি দিয়ে গেছেন তা হচ্ছে , জালিম শাসকরা যত শক্তিশালীই হোক না কেন সত্যপন্থীদের দায়িত্ব হচ্ছে-ঈমানের উপর নির্ভর করে প্রতিপক্ষের অত্যাধুনিক অস্ত্রের মোকাবিলায় শেষ রক্তবিন্দু ঢেলে দিয়ে সত্যের সাক্ষ্যদান করা। একমাত্র এ ধরনের চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমেই মেকী মানবতার কল্যাণকামী ও মেকী ঈমানের দাবীদারদের মুখোশ উন্মোচিত জনগণের ঘৃণা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়ে অনিবার্য ধ্বংস ও পতনকে ত্বরান্বিত করবে।

বিশ্বব্যাপী মিথ্যা ও জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সত্যপন্থীদের এ সংগ্রামে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদত মূল্যবান এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হিসেবে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে থাকবে।

অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও এ বইটিতে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জীবনের বিভিন্ন দিক ও ঘটনাবলী নির্ভুল ও বিশ্বস্ততার সাথে উপস্থাপন করা হয়েছে । আশা করি প্রত্যেক সচেতন বাংলা ভাষাভাষী ভাই-বোন এ মহা মূল্যবান গ্রন্থটি পাঠ করে তাদের জীবনের জন্য এক নতুন প্রেরণার সন্ধান পাবেন।

বিনীত

প্রকাশক

প্রথম অধ্যায়

পূর্বাভাষ

সাইয়্যেদুশ শুহাদা হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) চতুর্থ হিজরী ৪ সনে শাবান মাসের ৫ম রাতে জন্মগ্রহণ করেন। এক রেওয়ায়েত অনুসারে ৩রা শাবান তিনি জন্ম নেন । কারো কারো মতে ৩য় হিজরীর রবিউল আওয়াল মাসের শেষ দিনে তার জন্ম হয় । তার জন্ম তারিখের ব্যাপারে ভিন্নতর রেওয়ায়েতও রয়েছে।

হযরত হোসাইন (আ.) এর জন্মগ্রহণের পর এক হাজার ফেরেশতা সাথে নিয়ে হযরত জিব্রাইল (আ.) মোবারকবাদ জানানোর জন্য রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হন। হযরত ফাতেমা (সা.আ.) নবজাতক সন্তানকে পিতার কাছে নিয়ে আসেন । নবী করিম (সা.) তাকে দেখে অত্যন্ত খুশী হন এবং তার নাম রাখেন হোসাইন ’ ।

উম্মুল ফজলের স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা

ইবনে আব্বাস তাবাকাত ’ কিতাবে আব্দুল্লাহ ইবনে বাকার ইবনে হাবীব সাহমী সূত্রে হাতেম ইবনে সানআ হতে বর্ণনা করেন যে , আব্বাস ইবনে আব্দুল মোত্তালিবের স্ত্রী উম্মুল ফজল বলেন- হোসাইন (আ.)এর জন্মের পূর্বে এক রাতে স্বপ্নে দেখলাম পয়গাম্বর (সা.) এর শরীর হতে এক টুকরা গোশত পৃথক হয়ে আমার কোলে এসে পড়ল । এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা সারাসরি রাসূল (সা.) এর কাছে জানতে চাইলাম । তিনি বললেন , তোমার স্বপ্ন যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে অচিরেই আমার কন্যা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিবে এবং আমি তাকে দুধ পান করানোর জন্য তোমার কছে দিব ।

কিছুদিন পর হযরত ফাতেমার (সা.আ.) ঘরে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয় । দুগ্ধপানের জন্য সেই শিশু চলে আসে আমার কোলে । একদিন তাকে রাসূল (সা.) এর খেদমতে নিয়ে গেলাম । তিনি নবজাতককে নিজের হাটুর উপর বসালেন এবং একের পর এক চুমু দিতে লাগলেন । এ সময় তার এক ফোটা পেশাব রাসূলে খোদার জামায় পড়ে গেল । তখন খুব জোরে আমি নবী (সা.) এর কোল থেকে তাকে ছিনিয়ে নিলাম । যার ফলে সে কেদে উঠল । রাসূল (সা.) রাগান্বিত হয়ে আমাকে বললেন- হে উম্মুল ফজল! আমার জামা ধোয়া হবে ; কিন্তু তুমি আমার সন্তানকেই কষ্ট দিয়েছো । ” এরপর আমি হোসাইন (আ.) কে ওখানে রেখে পানি আনার জন্য বাইরে গেলাম । ফিরে এসে দেখি , রাসূল (সা.) কাদছেন । জিজ্ঞেস করলাম- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কেন কাদছেন ? তিনি বললেন- একটু আগে ফেরেশতা জিব্রাইল এসে আমাকে বলে গেল যে , আমার একদল পথভ্রষ্ট উম্মত আমার এই সন্তানকে হত্যা করবে । মুহাদ্দেসগণ বর্ণনা করছেন যে , হযরত হোসাইন (আ.) এর বয়স যখন ১ বছর , তখন ১২ জন ফেরেশতা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) এর কাছে অবতীর্ণ হন যাদের আকৃতি ছিল ভিন্ন ধরনের এবং চেহারা ছিল রক্তিম । তাদের পাখাগুলো ছিল উন্মুক্ত । তারা বলল হে মুহাম্মদ কাবিলের পক্ষ থেকে হাবিলের উপর যে জুলুম হয়ছে ঠিক একই জুলুম আপনার সন্তানের উপর আপতিত হবে । এতে হাবিলকে যে সওয়াব দেয়া হয়েছে , সে রকম সওয়াব তাকেও দেয়া হবে । আর তার হত্যাকরীদের শাস্তি ও আযাব হবে কাবিলের শাস্তির মত । ঐ সময় আসমানসমূহে আল্লাহর কোন নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা ছিলেন না । বরং সবাই রাসূল (সা.) এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে হোসাইন (আ.) এর নিহত হওয়ার ব্যাপারে শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন-সঙ্গে ঐ শাহাদতের বিনিময়ে মহান আল্লাহ যে সওয়াব ও প্রতিদান নির্ধারণ করেছেন , সে সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন । একইভাবে হযরত হোসাইন (আ.) এর কবরের মাটি এনে রাসূল (সা.) কে দেখান ।

এ অবস্থার মধ্যেই নবী (সা.)বলেন- আল্লাহ তুমি ঐ ব্যক্তিকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত কর , যে আমার সন্তান হোসাইনকে অপমানিত করবে । তুমি ঐ লোককে হত্যা কর , যে আমার হোসাইনে হত্যা করবে । আর তার হত্যাকারীকে তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে দিওনা। ”

হোসাইন (আ.) এর শাহাদত সম্পর্কে জিব্রাইল (আ.) এর সংবাদ প্রদান

হযরত হোসাইন (আ.) এর বয়স যখন দু বছর তখন রাসূলে খোদা (সা.) এক সফরে গমণ করেন । সফর কালে তিনি পথিমধ্যে দাড়িয়ে বলে উঠলেন-

انّا لله و انّ الیه راجعون (ইন্নানিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন) এ বাক্য উচ্চারণের সাথে সাথে তার অশ্রু গড়িয়ে পড়তে শুরু করে । কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে বলেন- জিব্রাইল (আ.) এই মাত্র আমাকে সেই ভূমির খবর দিয়ে গেল , যে ভূমি ফোরাত নদীর সাথে মিশেছে এবং তার নাম কারবালা । বলেছে যে , আমার সন্তান হোসাইনকে সে জমিতেই হত্যা করা হবে । জিজ্ঞাসা করা হল ইয়া রাসূলাল্লাহ! তার হত্যাকারী কে ? এরশাদ করলেন , ঐ ব্যক্তির নাম হল ইয়াজিদ । মনে হচ্ছে , আমি এখন হোসাইন নিহত হওয়া এবং দাফন হওয়ার স্থান দু টি চোখে দেখতে পাচ্ছি । আল্লার রাসূল ঐ সফর থেকে চিন্তিত অবস্থায় ফিরে আসেন এবং (মসজিদে নববীর) মিম্বরে দাড়িয়ে খোৎবা প্রদান করেন , লোকদের উপদেশ দেন এবং তার পাশে অবস্থানরত হাসানের (আ.) মাথায় ডান হাত এবং হোসাইনের (আ.) মাথায় বাম হাত রেখে আসমানের দিকে মাথা তুলে বললেন- ইয়া আল্লাহ! মুহাম্মদ তোমার বান্দা এবং তোমার রাসূল । এ দু জন আমার বংশের পবিত্র এবং সম্মানিত ব্যক্তি । তাদেরকে আমার উম্মতের মাঝে আমার উত্তরাধিকারী হিসেবে রেখে যাচ্ছি । জিব্রাইল (আ.) আমাকে জানিয়েছে যে , আমার এই সন্তানদের লাঞ্ছিত করা হবে । ইয়া আল্লাহ তাদেরকে তুমি শাহাদতের সূধা পান করাও । তাদেরকে শহীদদের সর্দার বানাও এবং তাদের হত্যাকারী এবং লাঞ্ছনাকারীদের জন্য তা অশুভ কর ।

রাসূলে খোদা (সা.) এর কথা এ পর্যন্ত পৌছার সাথে সাথে মজলিশে কান্নার রোল উঠল। পয়গম্বর (সা.) জিজ্ঞেস করলেন- তোমরা কি তার জন্য কান্নাকাটি করছ ? এরপর তিনি মজলিস থেকে বের হয়ে গেলেন । একটু পরেই মসজিদে ফিরে আসলেন । কিন্ত তার চেহারার রং পরিবর্তিত এবং চিন্তাগ্রস্থ ছিল । এবারও কান্না জড়িত কন্ঠে খুব সংক্ষিপ্ত খুতবা দিলেন এবং বললেন-

হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের মধ্যে দু টি বড় জিনিস আমানত হিসেবে রেখে যাচ্ছি । একটি: হল কুরআন , দ্বিতীয়টি: আহলে বাইত। হাউজে কাউছারের পাড়ে আমার সাথে দেখা করার আগ পর্যন্ত উভয়ে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হবেনা । জেনে রাখবে যে , শেষ বিচারের দিন আমি এ দুই আমানতের অপেক্ষায় থাকব । আমি আমার আহলে বাইত সম্পর্কে তোমাদের কাছে কিছুই চাইনা । তবে হ্যাঁ , আল্লাহ তা ’ আলা যতটুকু হুকুম দিয়েছেন ততটুকুই তোমাদের প্রতি আমার আহবান । আল্লাহ আমাকে হুকুম দিয়েছেন যেন তোমাদের কাছে আমার আহলে বাইতের মহব্বত দাবী করি । কাজেই তোমরা ভালভাবে লক্ষ কর-আমার আহলে বাইতের সাথে শত্রুতা নিয়ে এবং তাদের প্রতি জুলুম করে যেন কেউ কিয়ামতের দিন আমাদের সাথে সাক্ষাত না করে । মনে রেখ যে , কিয়ামতের দিন ৩টি পতাকার পশ্চাতে আমার উম্মতের ৩ টি দল আমার সম্মুখে হাজির হবে। এর মধ্যে-

প্রথম পতাকাঃ প্রথম পতাকাটি হচ্ছে কালো , ফেরেশতারা এই পতাকা দেখে বিচলিত হয়ে পড়বে । সেই পতাকার অধীনস্থ লোকেরা আমার সামনে এসে দাড়াবে । তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করব- তোমরা কে ? তারা আমার নাম ভূলে বলবে , আমি তাওহীদপন্থী এবং আরবের লোক । তাদেরকে বলব যে , আমি হলাম আহমাদ-আরব ও আজমের পয়গাম্বর । তারা বলবে- আমরা আপনার উম্মত । তখন জিজ্ঞাসা করব- আমার অবর্তমানে আহলে বাইত (আ.) ও কুরআনের সাথে কিরূপ আচরণ করেছ ? তারা বলবে-কুরআনের প্রতি অবহেলা এবং তার হুকুম অনুযায়ী আমল ও কাজ ত্যাগ করেছি আর আপনার আহলে বাইতকে (আ.)ধ্বংস করে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছি । এরপর আমি তাদের দিক হতে আমার চেহারা ফিরিয়ে নেব । ওরা পিপাসার্ত এবং কালো অন্ধকার চেহারা নিয়ে আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে ।

দ্বিতীয় পতাকাঃ দ্বিতীয় পতাকার পশ্চাতের লোকেরা এগিয়ে আসবে । তাদের পতাকা প্রথম পতাকার চাইতে অধিক কালো । আমি তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করব- আমার পরে আামার বড় ও ছোট দুই আমানতের সাথে কি ধরনের আচরণ করেছ ? কুরআন ও আহলে বাইতে (আ.) এর সঙ্গে কি ধরনের ব্যবহার করেছ । জবাবে বলবে- কুরআনের বিরোধিতা করেছি এবং আপনার আহলে বাইতকে লাঞ্ছিত করেছি । তাদেরকে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত করেছি । আমি তাদেরকে বলব , দূর হও আমার সম্মুখ থেকে । তারা কালো চেহারা ও পিপাসার্ত কন্ঠে চলে যাবে।

তৃতীয় পতাকাঃ তৃতীয় পতাকা সামনে নিয়ে আরেক দল আমার কাছে উপস্থিত হবে । তাদের চেহারা থেকে নূর ঠিকরে পড়বে । আমি তাদের জিজ্ঞেস করব-তোমরা কে ? তারা বলবে-আমরা কালেমা তাইয়্যেবায় বিশ্বাসী , তাকওয়া ও পরহেজগারীর অনুসারী , রাসূলে আকরাম (সা.) এর উম্মত । আমরাই হলাম সত্যের একনিষ্ঠ অনুসারী , যাদের ধর্মে সামান্যতম নড়বড় বা সংশয়ের সৃষ্টি হয়নি । আমরা মহান রাব্বুল আলামিনের কিতাব কুরআন মজিদকে হাতে ধারণ করে এর হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম মেনে চলেছি । আমরা আমাদের নবী মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.) এর আহলে বাইতকে ভালবাসতাম । তাদেরকে নিজের মত মনে করেছি এবং তাদের সাহায্যের বেলায় সামান্যতম অবহেলাও প্রদর্শন করিনি । তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি । আমি তাদেরকে বলব- তোমাদের জন্য সুসংবাদ , আমি হলাম তোমাদের নবী মুহাম্মদ । তোমরা এখন যে রকম বললে দুনিয়াতেও ঐ রকম ছিলে । এরপর আমি তাদেরকে হাউজে কাউসার থেকে পানি পান করাব । তারা সহাস্য বদনে আনন্দিত হয়ে বেহেশতের দিকে চলে যাবে । ওখানেই তারা চিরকাল থাকবে ।

মুআবিয়ার মৃত্যু ও ইয়াজিদের চিঠি

মুআবিয়া হিজরী ৬০ সালের রজব মাসে মারা যায় । ইয়াজিদ মদীনার তৎকালীন গভর্ণর ওলিদ ইবনে ওতবার কাছে এক পত্র লিখল । ঐ পত্রে নির্দেশ ছিল যে আমার আনুগত্যের পক্ষে মদীনার সব লোক বিশেষ করে হোসাইনের কাছ থেকে বাইআত গ্রহণ কর । হোসাইন যদি বাইআত করতে অস্বীকার করে তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দাও এবং আমার কাছে পাঠিয়ে দাও । ওলিদ মারওয়ানকে দরবারে ডেকে পাঠায় এবং এ ব্যাপারে তার পরামর্শ জানতে চায় । মারওয়ান বলল যে , হোসাইন (আ.) শির নত করবে না এবং কিছুতেই ইয়াজিদের হাতে বাইআত করবে না । তবে আমি যদি তোমার স্থানে থাকতাম এবং তোমার মত ক্ষমতার অধিকারী হতাম তাহলে কালবিলম্ব না করে হোসাইনকে হত্যা করতাম । যদি এমন হয় তাহলে আমার কামনা হল , এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার চাইতে দুনিয়াতে আমার না আসাই ভাল ছিল। কেননা , এত বড় বদনামীর বোঝা মাথায় নেয়ার চাইতে সেটাই উত্তম হত ।

এরপর সরকারী দূতকে প্রেরণ করল এবং হযরত হোসাইনকে (আ.) নিজের ঘরে ডেকে পাঠাল । হোসাইন (আ.) তার পরিবার ও বন্ধুদের মধ্য থেকে ৩০ জন সঙ্গী সাথে নিয়ে ওয়ালিদের কাছে আসে । ওয়ালিদ মুয়াবিয়ার মৃত্যুর খবর তাকে জানাল আর ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত করার অনুরোধ জানাল । হোসাইন (আ.) বললেন , আমার বাইয়াত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় , তা গোপনে ও লোকচক্ষুর অন্তরালে সম্পন্ন হতে পারে না । তবে কাল সকালে জনসাধারণকে যখন বাইয়াতের জন্য আহবান করবে তখন আমাকেও অবহিত করবে । মারওয়ান বলল হোসাইনের কথায় কর্ণপাত করো না এবং তার অজুহাত গ্রহণ করতে যেওনা । যদি বাইয়াত করতে অস্বীকার করে তবে প্রাণে বাচিয়ে রেখো না । হোসাইন (আ.) অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন এবং বললেন তুমি ধ্বংস হও । হে নষ্টা মেয়ের ছেলে । তুমি কি আমাকে হত্যার আদেশ দিচ্ছ ? আল্লাহর কসম , তুমি মিথ্যা বলেছ । এ কথা বলে তুমি নিজেকে হেয় ও অপমানিত করেছ । এরপর তিনি ওয়ালিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন হে আমির! আমরা নবুওতের ঘরের আহলে বাইত , আমরাই রেসালতের খনি । ফেরেশতারা আমাদের ঘরেই আনাগোনা করেন । আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্যই মানুষের দিকে তার রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন । এই রহমতের সমাপ্তি হবে আমাদের নামেই । আর ইয়াজিদ হল একটা মদখোর ফাসেক , খুনী এবং প্রকাশ্যে শরীয়ত লংঘনকারী লোক । আমার মত কোন লোক ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত করবে না । তবে কাল ভোর হোক । এ সময়ের মধ্যে আপনিও ভেবে চিন্তে দেখেন । আমিও চিন্তা ভাবনা করে দেখব যে , আমাদের মধ্যে কে খেলাফতের জন্য অধিকতর যোগ্য । এ কথা বলার সাথে সাথে তিনি ওয়ালিদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন । মারওয়ান ওয়ালিদকে লক্ষ্য করে বলল , তুমি আমার উপদেশের প্রতি কর্ণপাত করনি । আমার অবাধ্যতা করেছ । ওয়ালিদ বললেন ধ্বংস তোমার জন্য । তুমি কি আমার দ্বীন ও দুনিয়া ধ্বংস করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছ । খোদার কসম আমি চাই না যে , দুনিয়ার রাজত্ব আমার হাতে থাকার জন্য আমি হোসাইনকে (আ.) হত্যা করব । আল্লাহর কসম , আমি বিশ্বাস করি না যে , কেউ হোসাইন (আ.) এর রক্তের বোঝা মাথায় নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে । এ ধরনের লোকের অবশ্যই নেক আমলের পাল্লা হালকা হবে এবং তার ক্ষমা পাওয়ার আশাও সুদূর পরাহত । মহান আল্লাহ তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না । গোনাহ থেকে তাকে পবিত্র করবেন না । তার জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে ।

সে রাত কেটে গেল । খুব ভোরে হোসাইন (আ.) ঘর থেকে বেরিয়ে নতুন কোন খবরের অপেক্ষা করছিলেন । মারওয়ান তাকে দেখতে পেল এবং বলল হে আবু আব্দুল্লাহ , আমি তোমার হিতাকাংখী ; তুমি আমার উপদেশ শ্রবণ কর , তাহলে কল্যাণ লাভ করতে পারবে। হোসাইন (আ.) জিজ্ঞেস করলেন তোমার উপদেশ কি ? বল দেখি। বলল- আমি তোমাকে আদেশ করছি যে , তুমি অবশ্যই ইয়াজিদ ইবনে মুআবিয়ার হাতে বাইয়াত কর । কেননা তোমার দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য এ কাজ মঙ্গলজনক হবে । হোসাইন (আ.) বললেন-

انّا لله و انّ الیه راجعون (ইন্নানিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন) যদি তাই হয় আমাকে দ্বীন ইসলাম থেকে বিদায় নিতে হবে । কেননা নবী (সা.) এর উম্মত ইয়াজিদের খেলাফত রাজত্বের হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে । আমি আমার নানা আল্লাহর রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে , আবু সুফিয়ানের বংশধরদের জন্য খেলাফত হারাম । ইত্যবসরে হোসাইন (আ.) ও মারওয়ানের মধ্যে এ মর্মে বহু কথা কাটাকাটি হয় । শেষ পর্যন্ত ক্রুদ্ধাবস্থায় মারওয়ান চলে গেল ।

শাহাদত বরণ সম্বন্ধে হোসাইন (আ.) অবহিত ছিলেন

এ পর্যায়ে লেখকের বক্তব্য হলো , গবেষণার মাধ্যমে আমি যতদুর অবহিত হয়েছি তাতে পরিস্কার বুঝা যায় যে , হোসাইন (আ.) তার শাহাদত বরণ এবং ভবিষ্যত ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে আবগত ছিলেন। তারই আলোকে তিনি সঠিক দায়িত্বই পালন করেছেন।

একদল রাবী তাদের নিজস্ব সনদ অনুযায়ী আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে বাবুইয়া আল কুমী থেকে রেওয়ায়েত করেছেন , যার বিবরণ আমিغبار سلطان الوری لسکان الشری বইতে দিয়েছি। কিতাবে আমালীতে বর্ণিত রেওয়ায়েতের সনদ মুফাজ্জাল ইবনে ওমর পর্যন্ত পৌছেছে। ঐ রেওয়ায়েতে ইমাম সাদেক (আ.) তার মহান পিতার বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে , একদিন হযরত হোসাইন ইবনে আলী তার ভাই ইমাম হাসান (আ.) এর বাড়ীতে গেলেন। যখন তার দৃষ্টি তার ভাইয়ের চেহারায় পড়ল দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল। হাসান (আ.) জিজ্ঞেস করলেন , আপনি কাদছেন কেন ? তিনি বললেন আপনার উপর যে জুলুম ও অত্যাচার হবে তার কথা চিন্তা করেই আমি কাদছি। হাসান (আ.) বললেন , আমার উপর যে জুলুম করা হবে , তা হচ্ছে সেই বিষ যা গোপনভাবে আমাকে পান করানো হবে। এর মাধ্যমে আমাকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত করে হত্যা করা হবে। কিন্ত "لا یوم کیومک یا ابا عبد الله " অর্থাৎ তোমর শাহাদত দিবসের মত কোন দিন পৃথিবীতে পাওয়া যাবেনা। কেননা ৩০ হাজার লোক যারা সবাই দাবী করে যে , তারা মুসলমান এবং আমার নানা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মত তারা তোমাকে ঘিরে ফেলবে এবং তোমাকে হত্যা আর তোমার সন্মান হানি , তোমার পরিবার পরিজনকে বন্দী করা ও তোমার সম্পদ লুন্ঠনের জন্য তৈরী হবে। এ অবস্থাতেই মহান আল্লাহ বনি উমাইয়ার প্রতি ঘৃণা ও অভিস্পাত বর্ষণ করবেন। আসমান রক্ত বৃষ্টি ঝরাবে। এমন কি বন জঙ্গলে পশু-পক্ষী আর সমুদ্রের মাছগুলো পর্যন্ত তোমার জন্য কান্নাকাটি করবে।

হয়ত কোন কোন সংকীর্ণমনা লোক- যারা শাহাদত কত বড় সৌভাগ্য ও কল্যাণের জিনিষ তা না জেনে ধারণা করে যে , মহান আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না যে , মানুষ নিজেকে বিপদের সন্মুখীন করুক। এরপর কেন হযরত হোসাইন (আ.) শাহাদাতের পথ বেছে নেন ? আসলে এটা সম্পূর্ণ ভূল ধারণা , শাহাদাত হলো মানুষের জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৌভাগ্য । মাকতাল ” নামক কিতাবের রচয়িতা এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম সাদেক (আ.) হতে বর্ণনা করেন যে , আসলাম থেকে বর্ণিতঃ আমরা নাহাবান্দ যুদ্ধ কিংবা অন্য কোন যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম।

মুসলমানরা যুদ্ধের সারি বিন্যস্ত করল। দুশমনরাও আমাদের সামনে সারিবদ্ধ হয়েছে। কোন যুদ্ধেই এত লম্বা চওড়া সারি দেখিনি। রোমীরা তাদের শহর পিছনে রেখে যুদ্ধের জন্য তৈরী হচ্ছিল। ইত্যবসরে মুসলমানদের মাঝ থেকে এক ব্যক্তি দুশমনদের উপর হামলা করে। জনতা বলে উঠল-لا اله الا الله- التقی نفسه الی التهلکة অর্থাৎ হায় , লোকটি নিজেকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করল। উপস্থিত লোকদের মধ্যে আবু আইয়ুব আনছরী বললেন , তোমরা কি এ লোকটি নিয়েই আয়াতের ব্যাখ্যা করছ , যে দুশমনদের উপর হামলা করেছে এবং শাহাদাত বরণ করেছে। অথচ প্রকৃত অবস্থা তা নয়। বরং এ আয়াত নাযিল হয়েছে আমাদের বেলায়। কেননা , আমরা রাসূলে খোদার (সা.) সাহায্যার্থে নিজেদের জান ও মাল উৎসর্গ করেছি অথচ নিজেদের সংশোধনের উদ্যোগ নেইনি । যার ফলে আমাদের পার্থিব কাজ কর্ম তছনছ হয়ে যায়। এরপর থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে পয়গাম্বর (সা.) এর সাহায্য থেকে পিছপা হব , যাতে আমাদের জীবন সম্পদ সুন্দর ও গুছানো হয়। এ অবস্থাতেই অবতীর্ণ হয়েছিল।

( ولا تُلْقُوا بأيْديكُمْ إلى التّهْلُكة)

এ আয়াতের মর্মার্থ হলো , যদি তোমরা রাসূলে খোদাকে সাহায্য করা থেকে হাত গুটাও এবং ঘরে বসে থাক তাহলে নিজেদের হাতেই নিজের ধ্বংস ও অকল্যাণ ডেকে আনবে। আর মহান আল্লাহকে নিজেদের প্রতি রাগান্বিত করবে। এ আয়াত আমাদের প্রতি প্রতিবাদ স্বরূপ। কেননা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেছি যে , আমরা আমাদের ঘরে থাকব। এ আয়াতে ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অনুপ্রেরণা দেয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি দুশমনের উপর হামলা করে এবং আপন সঙ্গীদেরও অনুপ্রাণিত করে তার বেলায় এ আয়াত নাযিল হয়নি। অথবা যে ব্যক্তি শাহাদাত বরণ এবং আখেরাতে সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে তাদের কথা এখানে বলা হয়নি। বইয়ের ভূমিকায় আমরা বলেছি যে , আল্লাহর ওলিরা সত্যের পথে তরবারী ও তীরের আঘাতকে ভয় করে না। এ বইতে অপর যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তাতেও এ সত্যটি আরো পরিস্কাররূপে ফুটে উঠবে।