কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত

কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত0%

কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত লেখক:
প্রকাশক: আল হোসেইনী প্রকাশনী
বিভাগ: ইমাম হোসাইন (আ.)

কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত

লেখক: সাইয়েদ ইবনে তাউস
প্রকাশক: আল হোসেইনী প্রকাশনী
বিভাগ:

ভিজিট: 18775
ডাউনলোড: 3038

কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 17 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 18775 / ডাউনলোড: 3038
সাইজ সাইজ সাইজ
কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত

কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর শাহাদত

লেখক:
প্রকাশক: আল হোসেইনী প্রকাশনী
বাংলা

“কারবালা ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদত” সাইয়্যেদুশ শুহাদা হযরত হোসাইন ইবনে আলী (আ.)-এর জীবন চরিত সম্পর্কে রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লোহুফ’-এর বাংলা অনুবাদ। সাইয়েদ ইবনে তাউস নামক একজন প্রসিদ্ধ মনিষী গ্রন্থটি আরবীতে রচনা করেন। বলা যায় যে, এটি হচ্ছে এ সম্পর্কিত একটি পূর্ণাঙ্গ, নির্ভরযোগ্য ও একই সাথে সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ। কলেবরে ছোট হলেও প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এতে সন্নিবেশিত হয়েছে। একটি অনুবাদ গোষ্ঠি কর্তৃক বইটি ফার্সি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে।

ইবনে যিয়াদ কুফার গভর্ণর নিযুক্ত

আব্দুল্লাহ ইবনে মুসলিম বাহেলী , এমারা ইবনে ওয়ালীদ এবং ওমর ইবনে সাআদ ইয়াজিদের কাছে এক পত্র পাঠিয়ে মুসলিম ইবনে আকিলের আগমন সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন । ঐ পত্রে নোমান ইবনে বশীরকে কুফার গভর্ণরের পদ থেকে সরিয়ে অপর কাউকে নিয়োগ দানের অনুরোধ জানায় । ইয়াজিদ বসরার গভর্ণর ওবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের কাছে একটি পত্র লিখে বসরার সাথে কুফার গভর্ণরের দাযিত্বও তাকে প্রদান করে । ঐ পত্রে মুসলিম ও হোসাইনের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে বিবরণ দেয় । পত্রে কড়া নির্দেশ প্রদান করে যে , মুসলিমকে গ্রেফতার ও হত্যা কর। ইবনে যিয়াদ চিঠি পাওয়ার পর কুফা গমনের উদ্দেশ্যে তৈরী হয়ে যায় ।

হোসাইন (আ.) বসরার একদল গণ্যমান্য লোক- যেমন ইয়াজিদ ইবনে মাসউদ নাহশেলী , মনজর ইবনে জারুদ আবদী প্রমুখের কাছে লেখা পত্রে তাদেরকে হোসাইন (আ.) এর সমর্থন ও আনুগত্যের আহবান জানিয়েছিলেন। পত্রটি তার গোলাম সুলাইমান ওরফে আবু রযিনের মাধ্যমে তাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। ইয়াজিদ ইবনে মাসউদ বনি তামিম , বনি হানজালা ও বনি সাআদ গোত্রকে একত্রিত করে তাদের উদ্দেশ্যে বলেন- হে বনি তামিমঃ তোমাদের মাঝে আমার বংশ ও মর্যাদা কিরূপ ? তার আল্লাহর শপথ করে বলল অনেক মহান ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি আপনি । আমাদের গোত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ গৌরবের প্রতীক আপনি। সবার চাইতে সম্মানিত এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয়। তিনি বললেন আমি একটা উদ্দেশ্যে তোমাদের আহবান করেছি , তোমাদের পরামর্শ কামনা করছি এবং তোমাদের সাহায্য চাই। তারা বললেন আল্লাহর কসম ! আপনার কথা আমাদের শিরোধার্য ! বলুন আপনার উদ্দেশ্য , তিনি বললেন হে বনু তামিম! তোমরা জেনে রেখ যে , মুয়াবিয়া মরে গেছে , খোদার কসম সে এক পচা মরা লাশ যার অবর্তমানে আমাদের কোন হাহুতাশ নেই। জেনে রেখ যে , তার মৃত্যূতে গোনাহ ও জুলুমের দরজা ভেঙ্গে গেছে। জুলুমের ভিত্তি নড়বড়ে হয়েছে।

মুয়াবিয়া জনগণের কাছ থেকে বাইআত গ্রহণ করেছে , যাতে তার ছেলে ইয়াজিদ খেলাফতের রক্ষাকবচ হয়। সে তা শক্ত ও মজবুত করার জন্য সর্ব প্রকার চেষ্টা চালায়। কিন্ত তার সকল প্রচেষ্টা দুর্বলতায় তলিয়ে যায়। ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে শলাপরামর্শ করেছে এবং অপমানিত হয়েছে। বর্তমানে তার দুশ্চরিত্র , মদখোর ছেলে ইয়াজিদ খেলাফতের মসনদে বসে মুসলমানদের খলিফা হওয়ার দাবী করছে। জনগণের ইচ্ছা ও সম্মতি ব্যতিরেকে নিজেকে আমীরুল মু ’ মেনীন বলে প্রচার করছে। অথচ তার জ্ঞান ও সহনশীলতা অতি তুচ্ছ ও নগণ্য। নিজের পা রাখার মত সত্যের পথও সে চিনে না। সে কি করে গোটা উম্মতের নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করবে ?

فأُقْسمُ باللّه قسما مبْرُورا لجهادُهُ على الدّين أفْضلُ منْ جهاد الْمُشْركين

“ আল্লাহর নামে কঠিন শপথ নিয়ে বলছি-দ্বীনের হেফাজতের জন্য ইয়াজিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা মুশরিকদের সাথে জিহাদ করার চাইতে উত্তম। ” কিন্ত হোসাইন ইবনে আলী (আ.) তোমাদের নবীর (সা.) মেয়ের সন্তান। এক ভদ্র , সম্ভ্রান্ত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতম পুরুষ। তার যোগ্যতা , ব্যক্তিত্ব ও জ্ঞানের বর্ণনা দিযে শেষ করা যাবে না। তিনি খেলাফতের জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি। কেননা , ইসলাম গ্রহণে তিনি অগ্রগামী , ইসলামের খেদমতে তার অবদান অতি উত্তম এবং রাসূলে খোদা (সা.) এর সাথে তার আত্মীয়তার বন্ধন সর্বজনবিদিত। ছোটদের প্রতি তিনি দয়াপরবশ এবং বড়দের প্রতি সদ্ব্যবহারকারী। তিনি সর্বোত্তম ইমাম ও পরিচালক। যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তোমাদের প্রতি তার দলিল ও যুক্তি চুড়ান্ত করেছেন এবং তোমাদেরকে কল্যাণের পথ দেখিয়েছেন। কাজেই সত্যের আলোর সামনে তোমরা নিজেদের দৃষ্টিশক্তি হারিও না। সত্যের পথ চেনার পরিবর্তে বাতিলের গর্তে নিজেদের নিক্ষেপ করো না। জামালের যুদ্ধেই সাখার ইবনে কাইছ তোমাদের গায়ে কলংক লেপন করেছে। কিন্ত আজ তোমাদের নবীর (সা.) সন্তানদের সাহায্য করে সে কলংক ধুয়ে মুছে সাফ করতে হবে। খোদার কসম! যে কেউ তার সাহায্য থেকে বিরত হবে , আল্লাহ তার সন্তানদের অপমানিত ও বংশধার সংকুচিত করবেন। দেখ আমি যুদ্ধের পোশাক পরিধান করেছি এবং লৌহবর্ম গয়ে দিয়েছি। এ কথাও জেনে রেখ যে , যদি কেউ নিহত না হয় তবুও সে মৃত্যূবরণ করবেই। পলায়ণ মানুষকে রক্ষা করবে না। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তোমাদের কাছে আমাদের বক্তব্যের সদুত্তর চাই।

বনি হানজালা জবাব দিল। তাদের পক্ষ থেকে বলা হল- ওহে খালেদের পিতা! আমরা আপনার ধনুকের তীরের ন্যায়। যেদিকেই নিক্ষেপ করবেন লক্ষ্যচ্যূত হব না। আমরা আপনার সম্প্রদায়ের সৈনিক ও অশ্বারোহী। আমাদেরকে যেদিকেই পাঠাবেন বিজয় ও সাফল্য আপনার হস্ত চুম্বন করবে। খোদার কসম যে দুর্গম পথেই রওয়ান হবেন আমরা আপনার সাথে আছি। যে কোন কঠিন মূহুর্তে আমরা আপনার সঙ্গীহারা হব না। খোদার কসম আমাদের তরবারী নিয়ে আপনার পাশে দাড়াব এবং আমাদের শরীর দিয়ে আপনার হেফাজত করব। কাজেই যে ভাবে ইচ্ছা পদক্ষেপ নিন।

এরপর বনি সাআদ কথা শুরু করে এবং বলে-হে আবু খালেদ! আপনার বিরোধিতা এবং আপনার রায় ও হুকুমের বাইর যাওয়া আমাদের কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় বিষয়। তবে সাখার ইবনে কাইছ আমাদের হুকুম দিয়েছেন , যেন যুদ্ধ না করি। আমরা ঐ হুকুমটি পছ্ন্দ করেছি এবং এ পর্যন্ত যুদ্ধ করিনি। এতে আমাদের মর্যাদা রক্ষা পেয়েছে। এখন যেহেতু পরিস্থিতি অন্য রকম কাজেই আমাদেরকে পরামর্শের সুযোগ দিন। এরপরই আমাদের মতামত জানাব। এ সময় বনি তামিম বলে উঠল- হে আবু খালেদ! আমরা আপনার দলের , আপনার সাথে একাত্ম। কখনো রাগান্বিত হলে আপনার সাথে আমরাও রাগান্বিত হব। সফরে আপনার সাথেই থাকব। হুকুম ও নির্দেশ দানের এখতিয়ার আপনার । আপনি আহবান করুন আমরা নিশ্চয় সারা দেব। হুকুম দিন তা অবশ্যই পালন করব। ইয়াজিদ ইবনে মাসউদ বনি ইবনে সাআদের দিকে ফিরে বললেন- হে বনি সাআদঃ আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি , যদি হোসাইন (আ.) কে সাহায্য না কর তাহলে মহান আল্লাহ তোমাদের মধ্য থেকে হানাহানি ও রক্তপাত তুলে নিবেন না। সবসময় আত্মকলহ রক্তারক্তিতে লেগে থাকতে হবে।

এরপর হোসাইন (আ.)-এর কাছে এ মর্মে পত্র লিখেনঃ

بسم الله الرحمن الرحیم আপনার পত্র পেয়েছি এবং অবগত হয়েছি যে , আমাকে আপনার সাহায্যের জন্য আহাবান করেছেন। যাতে আপনার আনুগত্যের দ্বারা আমি লাভবান হই। নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ কল্যাণ ও সৎকাজ সম্পাদনকারী অথবা মুক্তির দিশারী থেকে কোন দিন পৃথিবীকে বঞ্চিত রাখবেন না। আপনি আহমদী পবিত্র বৃক্ষের শাখা । যার মূল খাতেমুন্নাবীয়ীন এবং তার শাখা আপনি। আপনি শুভ লক্ষণ ও সৌভাগ্যবান পাখীর মত আমাদের মাঝে আসুন। আমি বনি তামিমকে আপনার সাহায্যের জন্য প্রস্তুত করেছি। এখন তারা সমবেত হয়ে আপনার সাহায্যের জন্য উদগ্রীব। তৃষ্ণার্ত উট যে রকম পানির জন্য পরাজয়কে ছাড়িয়ে এগিয়ে যায় ঠিক তেমনি পরিস্থিতি বিরাজ করছে আমাদের মাঝে। এখন বনি সাআদকেও আপনার সাহায্যের জন্য প্রস্তুত করেছি। তাদের অন্তরের হিংসা-দ্বেষগুলোকে বর্ষার বৃষ্টিপাতের মত আমার উপদেশ ও জ্বালাময়ী বক্তৃতার সাহায্যে সম্পূর্ণ ধুয়ে ফেলেছি।এ চিঠি পড়ে ইমাম হোসাইন (আ.) অত্যন্ত খুশী হন। তার জন্য তিনি দোয়া করে বললেন আল্লাহ তোমাকে ভয়াবহ কিয়ামতের দিন হেফাজত করুন। তোমাকে সম্মানিত করুন। যেদিন তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাবে সেদিন তোমাকে পানি পান করিয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করুন। পত্র লেখক ইয়াজিদ ইবনে মাসউদ হোসাইন (আ.) এর খেদমতে গমন ও তার সাহায্যের জন্য প্রস্তুতি নেন। কিন্ত বসরা থেকে রওনা হওয়ার পূর্বেই খবর পান যে , হোসইন (আ.)শাহাদত বরণ করেছেন। এজন্য তিনি খুব করে কাদলেন। অতিশয় মর্মাহত হলেন।

হযরত হোসাইন (আ.) এর পত্র পেয়ে ইয়াজিদ ইবনে মাসউদের প্রতিক্রিয়া ছিল এরূপ। কিন্ত মানজার ইবনে জারুদের প্রতিক্রিয়া ছিল ভিন্নরূপ। তার মেয়ে বাহরিয়া ছিল ইবনে যিয়াদের স্ত্রী। সে আশংকা করল যে , এর পিছনে ইবনে যিয়াদের কোন চক্রান্ত থাকতে পারে। তাই সে চিঠি এবং পত্রবাহককে ইবনে যিয়াদের হাতে তুলে দিল। ওবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ কালবিলম্ব না করেই পত্রবাহককে ফাসিকাষ্ঠে ঝুলায়। এরপর মসজিদের মিম্বারে গিয়ে খুতবা প্রদান করে। এতে বসরাবাসীকে তার বিরোধিতা ও বিশৃংখলা সৃষ্টির ব্যাপারে হুশিয়ার করে দেয়। ঐ রাত সে বসরায় কাটায়। সকালে তার ভাই ওসমান ইবনে যিয়াদকে তার স্থলাভিষিক্ত করে খুব দ্রুত কুফায় দিকে রওনা হয়। কুফার কাছে পৌছাতেই সওয়ারী হতে নেমে পড়ে এবং সেখানেই সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করে রাতের প্রথমভাগে কুফায় প্রবেশ করে। অন্ধকার ঘনিয়ে আসার কারণে কুফাবাসী মনে করল যে , ইমাম হোসাইন এসেছেন। তার আগমনে তার পরস্পরকে সুসংবাদ ও অভিনন্দন জানতে লাগল। যখন তার নিকটে গেল এবং চিনতে পারল যে , হযরত হোসাইন (আ.) নয় ইবনে যিয়াদ এসেছে। তখন সেখান থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ল । ইবনে যিয়াদ দারুল ইমারা প্রবেশ করে সেখানেই রাত্রি যাপন করল। খুব ভোরে দারুল ইমারা ’ থেকে বেরিয়ে আসল এবং মিম্বারে উঠে খুতবা দিল । জনগণকে ইয়াজিদের সাথে বিরোধিতার ব্যাপারে ভয় প্রদর্শন করল , আর তার অনুগত্য করলে অনুগ্রহ দেখানোর আশ্বাস দিল।

মুসলিমের আত্মগোপন

মুসলিম ইবনে আকিল এ সংবাদ শুনে ভয় পেলেন । হয়তো ইবনে যিয়াদ তার কুফা অবস্থানের সংবাদ জেনে ফেলতে পারে । এমনকি তার অনিষ্ট সাধন করতে পারে এজন্যে তিনি মুখতারের ঘর থেকে এসে হানি ইবনে উরওয়ার ঘরে আশ্রয় নেন ।

হানি ইবনে উরওয়া তাকে নিজের ঘরে আশ্রয় দিলেন । এর পর থেকে তার ঘরে অনুসারীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে । ইবনে যিয়াদ মুসলিম ইবনে আকিলের বাসস্থান খুজে বের করার জন্য কিছু গুপ্তচর নিযুক্ত করেছিল । হানি ইবনে উরওয়ার ঘরে আত্মগোপন করেছে বলে জানতে পারার পর মুহাম্মদ ইবনে আশআছ , আসমা ইবনে খারেজা ও আমর ইবনে হাজ্জাজকে তলব করে বলল- হানি কেন আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলনা । তারা বলল জানিনা। তবে হানি অসুস্থ বলেই শুনেছি । ইবনে যিয়াদ বলল যে , আমি শুনেছি যে , তার অসুস্থতা সেরে গেছে এবং সে তার ঘরের পেছন দরজায় বসে । যদি জানতে পারি যে , সে সত্যিই অসুস্থ তাহলে তাকে দেখতে যাব ।

তবে তুমি গিয়ে তাকে বল যে , আমাদের অধিকার যেন খর্ব না করে । আমার সাক্ষাতে যেন আসে । কেননা আমি চাই না যে , তার মত আরবের সম্মানিত ব্যক্তি আমার কাছ থেকে দূরে থাকুক । তার প্রতি অন্যায় হোক । এ তিন ব্যক্তি রাতের প্রথম ভাগে হানির ঘরে উপস্থিত হয়ে বললেন- আপনি কেন আমীরের সাথে সাক্ষাতে যাচ্ছেন না । অথচ তিনি আপনার কথা জিজ্ঞেস করেছেন। বলেছেন যে , অসুস্থ বলে জানতে পারলে আমি তার সাক্ষাতে যাব । হানি বললেন অসুস্থের কারণেই যেতে পারিনি । তারা বলল ইবনে যিয়াদ জানতে পেরেছে যে , রাতের বেলা আপনি ঘরের দরজায় বসেন । কাজেই আপনার না যাওয়াতে তিনি অসন্তুষ্ট । আপনার মত গোত্রপতির পক্ষ থেকে অবহেলা ও অবজ্ঞা তিনি বরদাশত করতে পারেন না । আমরা আপনাকে শপথ করে বলছি যে , আমাদের সাথে বাহনে চড়ে তার সাক্ষাতে চলুন । হানি তার পোশাক পরিধান করে নিজস্ব বাহনে চললেন। দারুল ইমারার নিকট পৌছেই যেন অনুভব করলেন তার সামনে অনেক সমস্যা । হিশাম ইবনে আসমা ইবনে খাজোকে সম্বোধন করে বললেন-ভ্রাতৃস্পুত্র খোদার কসম! আমি এই লোককে (ইবনে যিয়াদ) ভয় পাচ্ছি । তোমার কি মত ? বলল-চাচাজান। খোদার কসম আপনার ব্যাপারে আমার কোন ভয় নেই । আপনি এসব দুশ্চিন্তা বাদ দিন । কিন্তু হাসসান জানত না যে ইবনে যিয়াদ কি জন্য হানিকে ডেকে পাঠিয়েছে। হানি তার সঙ্গীদের সহ ইবনে যিয়াদের কাছে উপস্থিত হন । ওবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ হানির দিকে দৃষ্টি দিতেই বলে উঠল :اتتک بخائن رجلاه অর্থাৎ যে ব্যক্তি তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তার পাগুলো কি তাকে তোমার কাছে নিয়ে এসেছে ? অতঃপর তার নিকটে বসা শরীহ কাজীর দিকে তাকিয়ে হানির প্রতি ইঙ্গিত করেন এবং ওমর ইবনে মাদীকারুব যুবাইদীর কবিতাটি পাঠ করল-

أُريدُ حياتهُ ويُريدُ قتْلى

عذيرك منْ خليلك منْ مُرادٍ

যার অর্থ হল এই যে , আমি চাই হানি জীবিত থাকুক , কিন্তু সে তার ঘরে আমার ক্ষতি করার চক্রান্ত করছে । ” হানি জিজ্ঞেস করলেন- হে আমীর আপনার এ কথার উদ্দেশ্য কি ? বলল চুপ কর হানি: তোমার ঘরে যে , আমীরুল মোমেনীন ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তার কারণ কি ? মুসলিম ইবনে আকিলকে তোমার ঘরে এনেছ এবং তার জন্য লড়াকু সৈন্য যোগাড় করেছ । তোমার প্রতিবেশীদের ঘরে তাদের জমায়েত করেছ । তুমি কি মনে করেছ যে , আমার কাছে এসব গোপন রয়েছে ? হানি বলল আমি এমন কাজ করিনি । ইবনে যিয়াদ বলল তুমি করেছ । হানি আবারও অস্বীকার করলেন । ইবনে যিয়াদ বলল আমার গোলাম মাকালকে ডাক । মাকাল ছিল তার গুপ্তচর , সে মুসলিম এবং তার সহকর্মীদের তথ্য সংগ্রহে নিযুক্ত ছিল । মা ’ কাল ইবনে যিয়াদের পাশে দাড়াল । হানির দৃষ্টি যখন তার উপর পড়ল , তিনি বুঝতে পারলেন যে , সে গুপ্তচর ছিল । তিনি বললেন হে আমীর আল্লাহর কসম আমি মুসলিমকে ঘরে ডেকে আনিনি । তিনিই আমার ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন । তাকে বের করে দিতে আমার লজ্জা হয়েছে। তাই আশ্রয় দিয়েছি । তাকে মেহমান হিসেবে আশ্রয় দিয়েছি । এখন যেহেতু আপনি জানতে পেরেছেন , আমাকে অনুমতি দিন আমি বাড়ী গিয়ে তাকে বলে দেই আমার ঘর ছেড়ে যেখানে ইচ্ছা চলে যান । যাতে আমার জিম্মা শেষ হয় এবং ঘরের মধ্যে আশ্রয় দেয়া থেকে রেহাই পাই । ইবনে যিয়াদ বলল- মুসলিমকে হাজির না করে আমার সামনে থেকে নড়তে পারবে না । তিনি বললেন- আল্লাহর কসম আমি কখোনই একাজ করব না । হত্যা করার জন্য আমি আমার মেহমান আপনার হাতে তুলে দিব ? খোদার কসম কেউ যদি আমাকে সাহায্য না করে এবং আমি একাকীও হই তবুও তার আগে মৃত্যূবরণ না করা পর্যন্ত তাকে তোমাদের হাতে তুলে দেব না । ইবনে যিয়াদ বলল মুসলিমকে আমার সামনে হাজির করতেই হবে না হলে তোমার গর্দান উড়িয়ে দেয়া হবে । হানি বললেন- এমন কাজ করলে তোমার ঘরের চারপাশে অনেক নাঙ্গা তরবারী ছুঠে আসবে । ইবনে যিয়াদ বলল ওহে হতভাগা আমাকে তরবারীর ভয় দেখাও । হানি ভেবেছিল তার গোত্রের লোকেরা তার কথা শুনতে পাচ্ছিল । ইবনে যিয়াদ তাকে লাঠির সাহায্যে তার কপালে নাকে মুখে প্রচণ্ড আঘাত শুরু করল । এমন বেদম প্রহার করল যে , তাতে তার নাক ফেটে দরদর করে রক্ত গড়িয়ে পড়ল । কপাল ও মুখের চামড়া ফেটে গেল , লাঠি ভেঙ্গে কয়েক টুকরা হয়ে গেল। হানি চট করে একজন দেহরক্ষীর হাত থেকে তরবারী কেড়ে নিল কিন্তু দেহরক্ষী তাকে শক্ত করে ধরে রাখল। ইবনে যিয়াদ চিৎকার দিয়ে উঠল তাকে ধরে ফেল। হানিকে গ্রেফতার করা হল এবং দারুল ইমারার একটি কক্ষে বন্দি করে রাখা হল। ইবনে যিয়াদের নির্দেশে কয়েকজন রক্ষীকে তার পাহারায় নিযুক্ত রাখা হল। এ সময় আসমা ইবনে খারেজা , বর্ণনান্তরে হাসসান ইবনে আসমা বসা থেকে উঠে দাড়াঁল এবং বলল-হে আমীর আপনি হানিকে আপনার কাছে উপস্থিত করার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এখন তাকে আপনার সামনে উপস্থিত করেছি।আপনি তাকে বেদম প্রহার করেছেন , তাকে রক্তে রঞ্জিত করেছেন। আপনি মনে করেন যে , তাকে হত্যা করতে পারবেন ? ইবনে যিয়াদ রাগান্বিত হয়ে গর্জে উঠল । তুমিও আমাদের কাছে উপস্থিত । তাকেও মারধর করার হুকুম দেয়া হল । যার ফলে তিনি চুপ হয়ে গেলেন। এরপর তাকে গ্রেফতার করে দারুল ইমারার একটি কক্ষে আটক রাখা হল।নিজেকে এ অবস্থায় দেখে তিনি বলে উঠলেন-

) إنّا للّه وإنّا إليْه راجعُون(

মনে হয় , দারুল ইমারায় প্রবেশের সময় হানি যে কথা বলেছিল তা মনে পড়ে গেল। নিজে নিজে বলল-হানি এখন তোমার কাছে আমার মৃত্যুর সংবাদ বলছি।

আমর ইবনে হাজ্জাজ যার মেয়ে ছিল ইবনে যিয়াদের স্ত্রী , যখন হানির মৃত্যূর সংবাদ পেল মাজহাজ গোত্রের লোকদের নিয়ে রওনা হল এবং দারুল ইমারাকে ঘেরাও করে চিৎকার দিয়ে বলল- আমি আমর ইবনে হাজ্জাজ এবং এই জনসমষ্টি হল মাজহাজ গোত্রের সম্মানিত লোক ও অশ্বারোহী দল । আমরা বাদশাহর আনুগত্য ত্যাগ করিনি । মুসলমানদের দল পরিত্যাগ করিনি । কিন্তু শুনতে পেয়েছি যে , আমাদের নেতা হানিকে হত্যা করা হয়েছে । ইবনে যিয়াদ তাদের কথা শুনে শুরাইহ কাজীকে হুকুম দিল যে , যাও হানিকে দেখে এসো এবং তার গোত্রকে সংবাদ দাও যে , হানি জীবিত আছে , শোরাইহ ইবনে যিয়াদের কথানুযায়ি কাজ করল এবং তাদের উদ্দেশ্যে বলল হানি নিহত হয়নি । মাজহাজ গোত্র একথা শুনেই রাজী হয়ে গেল এবং তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে চলে গেল ।

মুসলিম ইবনে আকিলের সংগ্রাম

হানির নিহত হওয়ার সংবাদ মুসলিম ইবনে আকিলের কাছে পৌছার পর যত লোক তার হাতে বাইআত করেছিল , তাদের সহ তিনি ইবনে যিয়াদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য বের হন । ওবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ এ সময় দারুল ইমারায় আশ্রয় নেয় এবং প্রাসাদের ভীতরে ঢোকার সবগুলো দরজা বন্ধ করে দেয় । তার দলীয় লোকেরা মুসলিমের সঙ্গী সাথীদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় । আর যারা যিয়াদের সাথে দারুল ইমারার (প্রাসাদ) ভেতরে ছিল তারা মুসলিমের বাহিনীকে সিরিয়া থেকে সৈন্য বাহিনী আসার হুমকি দিচ্ছিল । ঐ দিন এভাবেই কেটে গেল এবং রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে এল । এ সময় মুসলিমের সঙ্গী সাথীরা ধীরে ধীরে বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল । পরস্পর বলাবলি করতে লাগল আমরা কেন গোলযোগ আর বিশৃংখলার আগুন জ্বালাচ্ছি । আমাদের তো উচিৎ ঘরে বসে থাকা আর মুসলিম ও ইবনে যিয়াদের ব্যাপারে নিজেকে না জড়ানো । আল্লাহই তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দিবেন । এভাবে সবাই চলে গেল। শেষ পর্যন্ত ১০ জন লোক ছাড়া আর কেউই মুসলিমের সাথে রইল না । এবার তিনি মসজিদে এসে মাগরিবের নামাজ পড়লেন , নামাজের পর দেখলেন ঐ দশ জনও সেখানে নেই । তিনি অত্যন্ত অসহায়ভাবে মসজিদ থেকে বেরিয়ে পড়লেন । অলিগলির পথ চলতে চলতে তিনি তাওয়া ’ নাম্নী এক মহিলার ঘরে এসে পানি চাইলেন । মহিলা পানি দিলে তা মুসলিম তা পান করলেন এবং তাকে আশ্রয় দিলেন । কিন্তু তার ছেলে গিয়ে ইবনে যিয়াদকে ব্যপারটা জানিয়ে দিল । ইবনে যিয়াদ মুহাম্মদ ইবনে আশআসকে একদল লোকসহ মুসলিমকে গ্রেফতার করে আনার জন্য পাঠান । তারা মহিলার ঘরের প্রাচীরের বাইরে এসে পৌছল। মুসলিম তাদের ঘোড়ার পায়ের আওয়াজ শোনার পর নিজেই বর্ম পরিধান করে নিজের ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ শুরু করেন এবং তাদের বেশ কিছু লোককে হত্যা করলেন । আশআস চিৎকার দিয়ে বলল হে মুসলিম তোমাকে নিরাপত্তা দিলাম । মুসলিম বললেন-ধোকাবাজ , ফাসেক লোকদের নিরাপত্তা দেয়ার কোন দাম নেই । তিনি একাই লড়তে লাগলেন আর হামরুন ইবনে মালেক খাসআমীর এ পংক্তিগুলো বীরত্বগাথা হিসেবে পড়তে ছিলেন-

أقْسمْتُ لا أُقْتلُ إلاّ حُرّا

وإنْ ر أيْتُ الْموْت شيْئاً نُكْرا

أكْرهُ أنْ أُخْدع أوْ أُغرّا

أوْ أخْلط الْبارد سُخْناً مُرّا

كُلُّ امْرىً يوْما يُلاقى شرّا

أضْربُكُمْ ولا أخافُ ضرّا

আমি শপথ করেছি-স্বাধীনভাবেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করব

যদিও মৃত্যুর শরাব আমার কাছে অতি তিক্তও হয়।

আমি চাই না , আমাকে ধোকা দেয়া হোক বা বন্দী হই-

অথবা স্বচ্ছ শীতল জল ময়লা পানিতে মিশ্রিত করব।

প্রত্যেকেই এই জগতে একদিন না একদিন সমস্যায় বন্দী হবে

তবে তরবারী দিয়ে আমি তোমাদের উপর আঘাত হানতে

ভয় করব না কিছুতেই।

ইবনে যিয়াদের বাহীনি চিৎকার দিয়ে উঠল-হে মুসলিম! মুহাম্মদ ইবনে আশআস তোমার কাছে মিথ্যা বলছেনা। তোমাকে ধোঁকা দিচ্ছে না। মুসলিম এ কথায় কর্ণপাত করলেন না। অবশেষে ঢাল ও তরবারী ভেঙ্গে যাওয়ায় তার মধ্যে দূর্বলতা দেখা দিলে ইবনে যিয়াদের বাহিনী তার উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। এরি মধ্যে এক ব্যক্তি পিছন দিক থেকে তীরের সাহায্যে তাকে আঘাত করে , যার ফলে তিনি ঘোড়ার পিঠ থেকে ঢলে পড়লেন । তাকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হল। ইবনে যিয়াদের সামনে হাজির করা হলে মুসলিম তাকে সালাম করল না । জনৈক দেহরক্ষী বলল-আমীরকে তুমি সালাম কর। মুসলিম বললেন-ওহে হতভাগা। সে আমার আমীর নয়। ইবনে যিয়াদ সদম্ভে বলল-অসুবিধা নেই । সালাম কর বা না কর তুমি নিহত হবেই। মুসলিম বললেন-আমাকে যদি হত্যা কর তা বড় কোন ব্যাপার নয়। কেননা , তোমরা চাইতে অপবিত্র ও নিকৃষ্ট লোক এর আগে আমার চাইতে উৎকৃষ্ট লোকদের হত্যা করেছে। তাছাড়া তুমি তো কাপুরুষোচিতভাবে লোকদের হত্যা কর। তাদের হাত পা কেটে গড়াগড়ি দাও , নিজের কুৎসিত চেহারা নগ্নভাবে ফাঁস কর , দুশমনের উপর যখন বিজয়ী হও , তাদের বেলায় নিকৃষ্ট ধরনের কাজ আঞ্জাম দাও। অন্য কেউ করার জন্য কোন নিকৃষ্ট কাজও তো অবশিষ্ট রাখ না। কাজেই এসব হিংস্র কাজের জন্য তোমার চেয়ে উপযুক্ত লোক তো পাওয়া দুস্কর। ইবনে যিয়াদ বলল-ওহে বিশৃংখলা ও অরাজকতা সৃষ্টিকারী অপরাধী। তোমার ইমামের বিরুদ্ধে তুমি বিদ্রোহ করেছ। মুসলমানদের ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছ । আর তুমি এবং তোমার পিতা যিয়াদ , যে ছিল ছাকীফ গোত্রের বনি এলাজ সম্প্রদায়ের গোলাম-তোমরা দু জনেই ফিতনার আগুন জ্বালিয়েছ। আশা করি , আল্লাহ পাক আমাকে শাহাদাত নছীব করবেন এবং সে কাজটি সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও অপবিত্র লোকের মাধ্যমে সম্পাদন করবেন। ইবনে যিয়াদ বললঃ হে মুসলিম , ক্ষমতার জন্য লালায়িত ছিলে। সেই ক্ষমতা লাভের জন্য চেষ্টা করেছ। কিন্তু আল্লাহর ইচছা হয়নি। তিনি সে পদটি তার যোগ্য লোককে প্রদান করেছেন। মুসলিম বললেন-ওহে মরাজানার ছেলে ! সেই ক্ষমতার যোগ্য ব্যক্তি কে ? ইবনে যিয়াদ বলল- ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া। মুসলিম বললেন-আলহামদুলিল্লাহ-আমরা রাজি আছি যে , মহান আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের মাঝে ফায়সালাকারী হবেন। ইবনে যিয়াদ বলল-তুমি কি মনে কর যে , খেলাফতের ব্যাপারে তোমার কোন অংশীদারিত্ব আছে ? মুসলিম বললেন , আল্লাহর কসম! শুধু মনে করা নয় , এ ব্যাপারে আামার দৃঢ় প্রত্যয় ও আস্থা রয়েছে। ইবনে যিয়াদ বলল- মুসলিম তুমি এই শহরে কেন এসেছ ? এখানকার শান্তি শৃংখলা কেন বিঘ্নিত করেছ ? কেন অনৈক্যের সৃষ্টি করেছ। মুসলিম বললেন-আমি অশান্তি , অনৈক্য ও বিশৃংখলা সৃষ্টির জন্য এ শহরে আসিনি। তবে তুমি যেহেতু নিকৃষ্ট কাজ করে যাচ্ছ , সৎ কাজের মূলোৎপাটন করেছ , জনগণের ইচ্ছা ও মতামত ছাড়াই নিজেকে তাদের আমীর বলে দাবী করেছ এবং তাদেরকে আল্লাহর নির্দেশের বিরোধী কাজগুলো করার জন্য বাধ্য করেছ এবং ইরান ও রোমের বাদশাহদের মতো আচরণ করছ সেহেতু আমরা এসেছি , মানুষকে সৎকাজের দিকে আহবান জানানো এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য। তাদেরকে কুরআন ও পয়গম্বর (সা.) এর সুন্নতের অনুসারী করার উদ্দেশ্যে। আমাদের মধ্যে সেই উপযুক্ততা রয়েছে। এ বক্তব্য শোনার পর ইবনে যিয়াদ চেঁচিয়ে উঠল এবং আলী ও হাসান-হুসাইন (আ.)কে গালমন্দ দিতে শুরু করল। মুসলিম বললেন-তুমি এবং তোমার পিতাই গালমন্দের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। ওহে আল্লাহর দুশমন! তোমরা যা ইচ্ছা কর।