আল্লাহ রাসূলে
এবং
উলিল
আমরে র
আনুগত্য
“
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর আনুগত্য কর , রাসূলের আনুগত্য কর এবং উলিল আমরের ” ...। (সূরা-নিসা , আয়াত-৫৯) ।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাস্সিরগণ ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। কেউ“
উলিল আমর ” -কে রাষ্ট্রনায়ক , কেউ আবার বিচারক হিসাবে মত প্রকাশ করেছেন , (তাফসীরে মারেফুল কোরআন) ; মূলতঃ এতে আহলে বাইতের মাসুম ইমামদের কথা বলা হয়েছে। কেননা আল্লাহ্ যেখানে নিজের সঙ্গে রাসূল (সাঃ)-এর আনুগত্যের হুকুম দিচ্ছেন ; সেখানে উলিল আমরের আনুগত্যও সকল বান্দাদের উপর ওয়াজিব ঘোষণা করেছেন। এখান উলিল আমরকে আল্লাহ্ ও রাসূলের প্রতিনিধি ঘোষণা করেছেন। তাঁকে অবশ্যই মাসুম (নিষ্পাপ) হতে হবে। আল্লাহ কখনো ভ্রান্তিযুক্ত মানুষকে তার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন না , এটা সাধারণ বিবেকবান ব্যক্তিও বুঝতে পারে। আহলে বাইত (আঃ)-এর বারো ইমাম ব্যতিত , অন্য কারো সম্পর্কে কেউ এই দাবী করতে পারে না ; যে , তারাও ভ্রান্তি মুক্ত ছিলেন , এছাড়া আল্লাহর এই নির্দেশ কোন কাল , সময় বা কোন ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটা সব সময়ের জন্য , এমনকি কেয়ামত পর্যন্ত এই নির্দেশ চলতে থাকবে। এখন দেখতে হবে , যারা ভ্রান্তিযুক্ত রাষ্ট্রনায়ক , কিংবা বিচারককে আনুগত্য করার মত প্রকাশ করেছেন , তারা মুসলমানদেরকে মহা বিপদে ফেলে দিয়েছেন , কারণ দুনিয়াতে অনেক দেশ আছে , যেখানে খ্রিস্টান , ইহুদী , কাফের বা মুশরিক রাষ্ট্রনায়ক কিংবা বিচারক রয়েছেন , আর যদি মুসলমানও থেকে থাকেন , তাও ৭৩ দলে বিভক্ত হয়ে বসে আছেন। মহানবী (সাঃ) বলেছেন , আমার উম্মতেরা আমার পর ৭৩ দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে , এদের মধ্যে ১টি দল পরকালে মুক্তি পাবে , আর বাকি দলগুলো পথভ্রষ্ট বা তারা জাহান্নামী হবে। সূত্রঃ- মুসতাদরাকে হাকেম , খঃ-৩ পৃঃ-১০৯। মহানবী (সাঃ) এটাও বলে গেছেন“
আমার উম্মতের ১টি দল (মাযহাব) সর্বদাই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। ”
মহানবী (সাঃ) বলে গেছেন একদল ছাড়া সকলে জাহান্নামে যাবে । আবার দেখা যায় কোথাও‘
সুন্নী ’ (হানাফি , মালেকি , শাফাঈ , হাম্বালী) রাষ্ট্রনায়ক কিংবা বিচারক , আবার কোথাও‘
ইসনা আশারীয়া শিয়া ’ (মহানবী (সাঃ) ও তার আহলে বাইত (আঃ)-এর বারো ইমাম-এর অনুসারিগণ) রাষ্ট্রনায়ক বা বিচারক , কোথাও আবার (মুয়াবিয়া ও এজিদ-এর কোরআন পরিপন্থি রাজতন্ত্রী আইন , রাজা-বাদশাদের আইন) ,‘
ওহাবী-সালাফী ’ রাষ্ট্রনায়ক বা বিচারক রয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো ? মুসলমানরা কাকে ছড় কাকে আনুগত্য করবে । আর যদি বলা হয় , সকলকেই আনুগত্য করতে হবে! তাও সম্ভব নয়। তাহলে সহজে বুঝা যায় , নিশ্চয়ই এই দুনিয়ার রাষ্ট্রনায়ক বা বিচারক বাদে অন্য কাউকে আনুগত্য করতে বলা হয়েছে এবং তাকে অবশ্যই সব সময় উপস্থীত থাকতে হবে , তা না হলে আল্লাহর এই নির্দেশ অকার্যকর থেকে যাবে । কোরআনে আল্লাহ পাক বলেন ,“
স্মরণ কর , সেদিনের (কিয়ামতের) কথা যখন আমি সকল মানুষকে তাদের ইমামসহ (নেতাসহ) আহবান করব ” ....। (সূরা-বনী ইসরাঈল , আয়াত-৭১) ;“
আপনি তো কেবল সতর্ককারী মাত্র , আর প্রত্যেক কওমের জন্য আছে পথ প্রদর্শক ” । (সূরা রা ’ দ , আয়াত-৭)
মহানবী (সাঃ) এরশাদ করেছেন ,“
যে ব্যক্তি সময়ের ইমামকে না চিনে বা না জেনে মারা যায় সে জাহলীয়াতে মারা যায় ” ।
সুতরাং কেউই একমত হবেন না যে ,“
দুনিয়ার কোন রাষ্ট্রনায়ক বা বিচারককে না চিনে বা না জেনে মারা গেলে সে জাহলীয়াতে মারা যায় ” ।
The Holy Quran, Commentary- Tafsir By-Ayalullah Agha Mehdi Pooya & S.V. Mir Ahmed Ali. Page-৩৭৮-৩৭৯
হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে ,“
উলিল আমরের ” আদেশ মান্য করা কি অবশ্যই কর্তব্য ? তিনি বললেন: হ্যাঁ , তাঁরা ঐসব ব্যক্তি যাদের আদেশ পালন করা এই আয়াত ( সূরা-নিসা , আয়াত-৫৯) ওয়াজিব করা হয়েছে , আর এই আয়াত আহলে বাইতগণের শানে নাযিল হয়েছে।
যেহেতু দ্বীন ইসলাম কিয়ামত অবধি স্থায়ী থাকবে এবং রাসূল (সাঃ)-এর পর আর কোন নবীর আগমন হবে না। এই জন্য রাসূল (সাঃ) নিজ দায়িত্ব হতে অব্যাহতি পেতে আল্লাহর নির্দেশে , বারোজন স্থলাভিসিক্ত (ইমামদেরক) মনোনিত করে , তাঁদের নাম উল্লেখ করে যান। নবী (সাঃ) এরশাদ করেন ,“
আমার পর দ্বীন ইসলামকে রক্ষা করতে কুরাইশ-বনি হাশেম হতে বারোজন খলিফা বা ইমাম হবে ” ।
মহানবী (সাঃ) এক হাদীসে বলেছেন যে , আমার পর“
বারোজন ” ইমাম ( নেতা) হবেন , তাঁরা সবাই বনি হাশেমগণের মধ্যে হতে হবেন।
(সহীহ্ বুখারীতে) জাবির বিন সামরাহ থেকে বর্ণনা করেছেন যে , তিনি বলেছেন , আমি রাসূল (সাঃ)-এর কাছ থেকে শুনছি যে , তিনি বলেছেন“
বারোজন আমির ( নেতা) (আমার পরে) আগমন করবে । অতঃপর একটি শব্দ উচ্চারণ করলেন আমি শুনতে পাইনি। আমার পিতা বলেন তিনি [নবী (সাঃ)] বলেছেন তাঁরা সকলে কুরাইশ বংশ থেকে হবেন ” ।
পাঠকদের যাচাই করার জন্য কিছু সূত্র উল্লেখ করলাম , যাতে নিজরাই পরীক্ষা করতে পারেন। পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) (নবী করিম (সাঃ) -এর বিশিষ্ট সাহাবী) বর্ণনা করেন যে , আমি রাসূলে পাক (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার পরবর্তীকালে কতজন ইমাম হবেন , মহানবী (সাঃ) বলেন ,“
বনী ইসরাঈলের নবীদের ন্যায় বারোজন হবে”
।
আল্লামা কামাল উদ্দিন মোহাম্মদ ইবনে তালহা শাফেয়ী বর্ণনা করেন যে ,“
মহানবী (সাঃ) বলেছেন যে , সমস্ত আয়েম্মাগণ কুরাইশ হতে হবেন। কারণ কুরাইশদের ব্যতিত অন্য কেউ নবী (সাঃ)-এর উত্তরাধিকারী বা ইমাম হতে পারবে না ” ।
আমাদের আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত সুফি আরেফ বিল্লাহ আলেম , আল্লামা সৈয়দ আলী হামদানী শাফায়ী সুন্নি বর্ণনা করেন যে , আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন , আমি রাসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে ,“
আমি , আলী , ফাতেমা , হাসান , ও হোসাইন এবং হোসাইন এর পরবর্তী নয়জন সন্তান। পাক পবিত্র ও মাসুম একই গ্রন্থে তিনি আরো বর্ণনা করেন যে , নবী (সাঃ) বলেছেন , আমি সকল নবীদের সরদার (সাইয়্যেদুল আম্বিয়া) এবং আলী সকল ওয়াসীর সরদার (সাইয়্যেদুল আওসিয়া) আর আমার পর“
বারোজন ” উত্তরসূরী হবে। তাদের মধ্যে প্রথম হচ্ছেন , হযরত আলী ইবনে আবু তালেব ও শেষ হচ্ছেন , ইমাম মাহ্দী , (আখেরউজ্জামান)”
।
ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) থেকে বর্ণিত যে , নবী করিম (সাঃ) বলেছেন , ইমাম আমার পর“
বারোজন ” হবে তাঁদের মধ্যে প্রথম আলী এবং শেষ কায়েম মহ্দী হবে , এবং তাঁরা আমার খলিফা , (ওয়াসি) উত্তরাধিকারী ও আমার আউলিয়া এবং আমার উম্মতের উপর আল্লাহর পক্ষ হতে হুজ্জাত (প্রমাণ) যারা তাদেরকে আনুগত্য ও বিশ্বাস করবে , তারা মমিন ও যারা তাদের আনুগত্য ও বিশ্বাস করবে না , তারা অবিশ্বাসী।
ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন ,“
নবী করিম (সাঃ) ইমাম আলীকে বলেন , আমার আহলে বাইত হতে“
বারোজন ” লাক হবে যাঁদের আমার জ্ঞান গরিমা দান করা হবে , তাদের মধ্যে তুমি আলী হ চ্ছো প্রথম , ও তাঁদের ১২তম কায়েম ইমাম মাহ্দী“
আলাইহিস সালাম ” যার দ্বারা আল্লাহ্ ’ তায়ালা এই জমিনকে মাসরিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত ইনসাফ কায়েম করবেন। ”
আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত আলেম শেখ সুলাইমান কান্দুজী বলখী , স্বীয় প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাতে লিখেছেন , মহানবী (সাঃ) এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন ,“
আমার স্থলাভিসিক্ত ইমাম বারোজন হবে। তাদের প্রথম ইমাম আলী ও সর্ব শেষ হবেন ইমাম মাহদী ” । আবার উলিল আমরের সম্পর্কে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে , জুনদুব ইবনে জুনাদা {আবু যার (রাঃ) }-এর প্রশ্নের জবাবে বলেন যে , আপনার পর কাঁরা আপনার স্থলাভিসিক্ত হবে , তাদের নাম কি ? মহানবী (সাঃ) ইমাম আলী হতে ইমাম মাহদী (আঃ) পর্যন্ত সকলের নাম বর্ণনা করেন। তাদের মধ্যে ১. ইমাম আলী ২. (৯) ইমাম হাসান , ৩. ইমাম হোসাইন , ৪. ইমাম জয়নুল আবেদীন , ৫. ইমাম মুহাম্মদ বাকের , ৬. ইমাম জাফর সাদেক , ৭. ইমাম মুসা কাজিম , ৮. ইমাম আলী রজা , ৯. ইমাম মুহাম্মদ তাকী , ১০. ইমাম আলী নাকী , ১১. ইমাম হাসান আসকারী এবং তাদের মধ্যে ১২. (বারোতম) ইমাম মাহ্দী (আলাইহিমুস সালাম) তিনি আরো বলেন , ওহে জাবের তুমি আমার ৫ম স্থলাভিসিক্ত ইমাম মুহাম্মাদ বাকের-এর সাক্ষাত পাবে , তাকে আমার সালাম পৌছে দিও।
“