পাক-পাঞ্জাতনের উসিলায় হযরত আদম (আঃ)-এর দোয়া কবুল হয়েছিল!
আল্লাহ্ হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টির পর তাকে কিছু নাম শিক্ষা দিলেন ’ । [সূরা-বাকারা , আয়াত-৩৭]
পরে সে নামের উসিলায় হযরত আদম (আঃ) আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন এবং আল্লাহ্ সেই নামের উসিলায় হযরত আদম (আঃ)-এর দোয়া কবুল করেন। আল্লাহ যে মহান ব্যক্তিগণের উসিলায় হযরত আদমর দোয়া কবুল করেছিলেন তাঁরা হলেন।“
(পাক-পাঞ্জাতন) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইমাম আলী , হযরত ফাতেমা যাহরা , ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন (আঃ)”
।
“
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর , তার নৈকট্য লাভের উসিলা তালাশ করো । ” (সূরা-মায়দা , আয়াত-৩৫) । উসিলার জন্য দেখুন:-
মানব জাতির
আমলের
সাক্ষ্য
মানব জাতির আমলের সাক্ষ্য আল্লাহ , তাঁর রাসূল (সাঃ) এবং আহলে বাইত (আঃ)-এর ইমামগণও আমল দেখছেন এবং সাক্ষ্য দিবেন ।
আল্লাহ্ হলেন স্রষ্টা আর আমরা আদম সন্তান বা মানবজাতি হলাম সৃষ্টি। এই স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে আল্লাহ্ আর এক গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় এই আহলে বাইত (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন। পরে তাঁর (আল্লাহর) পক্ষ থেকে ধরার বুকে মানবজাতির ভাল-মন্দ আমলের সাক্ষ্যদাতারূপে তাদেরকে মনোনীত করেছেন। মানবজাতির যাত্রা যে দিন থেকে , আহলে বাইত (আঃ)-এর সাক্ষ্য ও সেদিন থেকে চলে আসছে এবং শেষ দিন পর্যন্ত চলতে থাকবে।
আল কোরআনের ঘোষণাঃ-“
আর এভাবে আমি আপনাদিগকে মনোনীত করেছি মানবজাতির সাক্ষ্যদাতারূপে আর রাসূল (সাঃ) হলেন আপনাদের উপর সাক্ষ্যদাতা ” । [সূরা-বাকারা , আয়াত-১৪৩] ;“
আর বলুন , তোমরা আমল কর , আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল এবং মুমিনগণ তোমাদের আমল দেখবেন ” । [সূরা-তওবা , আয়াত-১০৫]
শাওয়াহেদুত তানজিলে , হাকিম আবুল কাসম। সালিম ইবনে কায়েস থেকে বর্ণিত ইমাম আলী (আঃ) বলেছেন যে ,“
ধরার বুকে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের উপর আমরা হলাম সাক্ষ্যদাতা আর রাসূল (সাঃ) হলেন আমাদের উপর সাক্ষ্য ” ।
তাফসীরে আইয়াসীত , ইমাম মুহাম্মদ বাকের ও ইমাম জাফর আস সাদিক (আঃ) বলেছেন যে ,“
দুনিয়াতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমরা মানবজাতির উপর সাক্ষ্যদাতা ও তাঁর (আল্লাহর ) প্রমাণস্ব রূপ আছি ” ।
নবী করিম (সাঃ)-এর সময় নবী করিম (সাঃ)-ই ছিলেন কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যাকারী ও ওয়ারিশ। উনার পর যারা এই কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যা করবেন তাদেরকে পবিত্র কোরআনে‘
রাসেখুনা ফিল ইল্ম ’ নামে ডাকা হয়েছে। নবীর পর উম্মতে মুহাম্মদীর পরিচালক হবেন , নবীজির মহান আহলে বাইতের সদস্যগণ।
আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে সমগ্র আয়াতগুলোকে দুভাগে ভাগ করেছেন , এক ভাগে রয়েছে‘
মুহকামাত ’ ও অন্যভাগে রয়েছে‘
মুতাশাবিহাত ’ । মুহকামাত হচ্ছে ঐ সকল আয়াত যেগুলোর অর্থ অনেকেই বুঝতে পারে । আর কতিপয় আয়াত হচ্ছে মুতাশাবিহাত যেগুলোর মর্ম আল্লাহ্ এবং রাসেখুনা ফিল ইল্মগণ ছাড়া অন্য কেউই অনুধাবন করতে পারবে না। (সূরা-আলে ইমরানের , ৭নং আয়াত দেখুন)
‘
রাসেখুনা ফিল ইলম ’ দ্বারা নবী করিম (সাঃ) ও তার আহলে বাইত-এর সদস্যদের বুঝানো হয়েছে। আয়াসী বর্ণনা করেছেন যে , হযরত ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) বলেছেন ,“
আমরাই হলাম রাসেখুনা ফিল ইল্ম ” (জ্ঞানের ধারক-বাহক) ।
পবিত্র কোরআনে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে“
যিকির ” নাম ডাকা হয়েছে এবং তার আ ’ ল ;-কে“
আহলে যিকির ” বলা হয়েছে। সেই দিক উদ্দশ্য করে কোরআনের ঘোষণা :
“
সুতরাং হে লোকরা তোমরা যা জানো না আহলে যিকিরকে জিজ্ঞেস কর। ” সূরা-নাহাল , আয়াত-৪৩ ; সূরা-আম্বিয়া , আয়াত-৭।
মুফাস্সেরগণের মত জ্ঞানীদের দ্বারা হযরত নবী করিম (সাঃ) -এর আহলে বাইতকে বুঝানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে ,“
আহলুয্ যিকির ” (জ্ঞানী ব্যক্তিরা হলেন , হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) , ইমাম আলী , হযরত ফাতেমা , ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন (আঃ) (কোরআনের ব্যাখ্যা সহ) জ্ঞান বুদ্ধি আর ব্যাখ্যার ভাণ্ডার , তারাই হলেন নবুয়্যতের পরিবার , রিসালাতের খনি (উম্মতের পথ প্রদর্শক) এবং ফেরেশতাদের অবতরণর স্থান। যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ বলেছেন যে , যখন এই আয়াত নাযিল হলো তখন ইমাম আলী (আঃ) বললেন: আমরাই হলাম“
আহলে যিকির ” (জ্ঞানের ভাণ্ডার) । ওয়াকী বিন যারাহ এবং সুফিয়ান সওরী এই বর্ণনাটি লিপিবদ্ধ করেছেন।
মহানবী (সাঃ)-কে পাঠানো হয়েছে আমাদের আত্মাকে পাক-পবিত্র করার জন্য। পবিত্রতা ব্যতিত কোরআনকে কেউই বুঝত পারবে না।‘
সুতরাং মহানবী (সাঃ)-এর পর যারা তাঁর স্থলাভিসিক্ত হবেন তাদেরকেও অবশ্যই পবিত্র ব্যক্তিত্ব হতে হবে। ’ সেদিকে লক্ষ্য রেখে কোরআনের ঘোষণা :
“
আহলে বাইত-এর সদস্যগণ আল্লাহ চান আপনাদের কাছ থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূরে রাখতে এবং পূর্ণরূপে পূতপবিত্র রাখতে যতটুকু রাখার তাঁর (আল্লাহর ) ক্ষমতা আছে ” । [সূরা-আহযাব , আয়াত-৩৩]
নবীর পত্নী হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন ,“
পবিত্রতার আয়াত আমার ঘরে নাযিল হয়। মহানবী (সাঃ) হাসান , হোসেইন , আলী ও ফাতেমা (আঃ)-এর উপর একটি চাঁদর টেনে প্রার্থনা করলেন , ইয়া আল্লাহ এরাই আমার আহলে বাইত , এরাই আমার একান্ত আপনজন পরমাত্মীয়। এদেরকে সকল প্রকার অপবিত্রতা হতে দূরে রাখুন। তখন নবীর পত্নী হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) বললেন , ইয়া আল্লাহর রাসূল! আমিও কি এই চাদরের ভেতরে আসতে পারি ? মহানবী (সাঃ) বললেন , না , তবে তুমি মঙ্গলের উপর আছো ” । মহানবী (সাঃ)-এর এই উক্তি থেকে প্রমাণিত হল যে ,“
নবীর স্ত্রীগণ আহলে বাইত-এর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না ” ।
পাঠকদের জন্য সূরা , আহযাবের-৩৩ নং আয়াতের সূত্র উল্লেখ করছি , যেখানে , এই আয়াত আহলে বাইত-এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে। (আলী , ফাতেমা , হাসান , হোসাইন (আঃ)-এর শানে) ।
উম্মুল মোমিনীন হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) মহানবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে , এটা আমার মসজিদ এতে যে কোন হায়য অবস্থার মহিলা (স্ত্রীগণ) ও যে কোন ব্যক্তি (সাহাবারা) যার উপর গোসল ফরজ তাদের জন্য পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু“
আমার জন্য ও আমার পবিত্র আহলে বাইত (আলী , ফাতেমা , হাসান , হোসাইন)-দের উপর যে কোন অবস্থায় তাঁরা আমার মসজিদে প্রবেশ করতে পারবেন , সর্তক হয়ে যাও! আমি তোমাদেরকে তাঁদের নাম বলে দিয়েছি , যাতে করে তোমরা গুমরাহ্ না হয় যাও। (কারণ তাঁরা সব সময় পাক-পবিত্র)”
।
কামালিয়াত অর্জনের পথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের চরিত্র ও আদব কায়দা হচ্ছে বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর জন্য আদর্শ , মডেল। তাঁদের মহানুভব অবস্থান ও আধ্যাত্মিক উচ্চপদমর্যাদার প্রতি কোরআন বিশেষ গুরুত্ব নির্দেশ করেছে যাতে বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ তাঁদের উজ্জল উদাহরণসমূহ অনুসরণ করে এবং মহানবী (সাঃ)-এর পর শরীয়তের আইন ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত তথ্যাদি ও পথ নির্দেশের জন্য“
কোরআন ও আহলে বাইতকে ” মেনে চলে । তাঁরা হচ্ছেন সেই ব্যক্তিত্ব বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর জন্য যারা ইসলামের বাস্তব নমুনা এবং মতামত ও চিন্তার মতদ্বৈধতা নিরসনের বিষয় ঐক্যমত্যের প্রতীক।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আহলে বাইত (আঃ)-ই আল্লাহ পাকের মজবুত রজ্জু বা রশি
“
আর তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়িয়ে ধর পরস্পর বিচ্ছিন্ন (ফেরকাবন্দী) হইও না। ” (সূরা-আলে ইমরান , আয়াত-১০৩)
হযরত ইমাম বাকের (আঃ) বলেছেন যে ,“
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আহলে বাইত (আঃ)-ই আল্লাহ্ পাকের মজবুত রজ্জু যাঁকে আল্লাহ তায়ালা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরার আদেশ দিয়েছেন ” (অনুসরণ করার জন্য) ।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেরূপ আল্লাহর নিকট প্রিয়তম ও সম্মানিত ছিলেন বা আছেন। ঠিক তদ্রুপ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)‘
র আহলে বাইতগণও প্রিয়তম ও সম্মানীত।
তাই এরশাদ হচ্ছে :“
অবশ্যই আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের নিয়ে নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করেছেন। হে ঈমানদারগণ তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করতে থাক। ” (সূরা-আহযাব , আয়াত-৫৬)
উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন , ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আপনার উপর কিভাবে দরুদ পাঠ করতে হবে ? উত্তরে নবীজি বলেন :
“
আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ , ওয়া আলে মুহাম্মাদ ” অতঃপর তিনি বলেন : দেখ , তোমরা যেন আমার উপর লেজ কাটা দরুদ না পড়। সাহাবারা বললেন লেজকাটা কেমন ? নবীজি উত্তরে বলেন , আমার আহলে বাইত (আলী , ফাতেমা , হাসান ও হোসাইন (আঃ)-কে বাদ দিয়ে শুধু আমার উপর দরুদ পড়া যেমন “ আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ” বলে চুপ থাকা। আমার‘
আলকে ’ অবশ্যই সম্পৃক্ত করতে হবে।
এ প্রসঙ্গ ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন ,“
ইয়া! আহলে বাইতে রাসূল! আপনাদের মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) পবিত্র কোরআনে ফরজ করা হয়েছে , যে ব্যক্তি নামাজ আপনাদের উপর দরুদ না পড়বে তার নামাজই কবুল হবে না। ”
হযরত ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন , মহানবী (সাঃ) বলেছেন , দু‘
আ ও নামাযসমূহ ততক্ষণ পর্যন্ত আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে , উপরের দিকে যায় না , যতক্ষণ না নবী করীম (সাঃ) এর প্রতি দরুদ প্রেরণ করা না হয়।
পাঠকদের বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন ?“
মহানবী (সাঃ) ও তাঁর আহলে বাইত (আঃ)-দের উপর নামাজে দরুদ না পড়লে , নামাজ কবুল হবে না ” । তাই নামাজের মধ্যে একটি শর্ত হচ্ছে , তাঁদের (মহানবী (সাঃ) ও তাঁর আহলে বাইতের) উপর দরুদ পড়তে হবে। যাঁদের উপর দরুদ না পড়লে নামাজই কবুল হয় না। তাদেরকে যদি আমরা না চিনি বা না জানি , তাহলে নামাজে দরুদ পড়লেও তা কোন উপকারে আসবে কি ? একটু চিন্তা করুন !!!...... ।
আল্লাহ্ ধরার বুকে কিছু সংখ্যক গৃহকে সম্মানিত করে তাঁর বান্দাকে তাঁর পবিত্রতার গুণ কীর্তন করার নির্দেশ দান করেছেন
এরশাদ হচ্ছে :“
সেই সকল গৃহ যাকে সমুন্নত করতে এবং যাতে তার নাম স্মরণ করতে আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছেন , সকাল ও সন্ধ্যায় তাহার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। ” (সূরা-নূর , আয়াত-৩৬)
হযরত আনাস বিন মালিক এবং হযরত বুরাইদা বর্ণনা করেছেন যে , আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এই আয়াত পাক পাঠ করলে , হযরত আবু বকর দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন , ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! এই গৃহগুলি কাথায়! হযরত নবী (সাঃ) বললেন , এটা আল্লাহর নবীগণের গৃহসমহূ । তারপর তিনি (আবু বকর) জিজ্ঞেস করলেনঃ“
হযরত আলী ও হযরত ফাতেমা (আঃ)-এর গৃহগুলি ও কি এতে অন্তর্ভুক্ত ? আল্লাহর রাসূল বলেনঃ অবশ্যই এর মধ্যে তাদের গৃহগুলিও অন্তর্ভুক্ত এবং ইহা ঐসব গৃহগুলির চেয়েও অতি উত্তম এবং সমুন্নত ” ।
আরো এরশাদ হচ্ছে:“
হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথী হয়ে যাও ” । (সূরা-তওবা , আয়াত-১১৯)
আল্লাহ্ আমাদেরকে সত্যবাদীদের সাথে থাকতে বলছেন কারণ কি ? ঈমান আনা যথেষ্ট নয় , কারণ সত্যবাদীদের সাথে থাকলে ঈমান সতেজ ও মজবুত থাকবে । তাই এখন আমরা সত্যবাদীদের কোথায় পাবো ? আসুন যে পবিত্র কোরআনে সত্যবাদীদের সাথে থাকার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে , সেই কোরআনই আমরা খুঁজি সত্যবাদী কারা।
একদা নাজরানের খ্রিস্টানদের একটি দল পাদ্রীসহ রাসূল (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হন। তারা হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে নবীজির সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হন নবীজির কোন যুক্তিই তারা মানছিলেন না। তখন নবীজির প্রতি কোরআনের এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়:
“
আপনার নিকট যথাযথ জ্ঞান আসার পরও যে কেউ এই বিষয়ে তর্ক করবে , সন্দেহ করবে তাদের বলুন : আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের এবং তোমরা তোমাদের পুত্রদের , আমরা আমাদের নারীদের এবং তোমরা তোমাদের নারীদের এবং আমরা আমাদের নাফসদের (সত্তাদের) ডাকি তোমরা তোমাদের নাফসদের (সত্তাদের) কে ডাক। অতঃপর আমরা বিনীত আবেদন করি মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লা ’ নত (অভিসম্পাত) বর্ষিত হোক। ” (সূরা-আলে ইমরান , আয়াত-৬১)
মহানবী (সাঃ) ইমাম হাসান , ইমাম হোসেইন , হযরত ফাতেমা ও ইমাম আলী (আঃ) -কে ডাকলেন এবং ইমাম হোসেইনকে কোলে নিলেন , ইমাম হাসানের হাত ধরলেন এবং হযরত ফাতেমা , নবীজির পিছনে এবং ইমাম আলী , হযরত ফাতেমার পিছনে হাটছিলেন। মহানবী (সাঃ) তাঁদের উদ্দেশ্যে বললেন , হে আমার মিশনের সদস্যগণ আমি যখন অভিসম্পাতের জন্য প্রার্থনা করব , তখন তোমরা‘
আমিন ’ বলবে ।
এখানে বিশেষভাব উল্লেখ্য যে , আল্লাহর পছন্দসই ধর্ম ইসলামের সত্যতা নিরূপণের সাক্ষ্য দেয়ার জন্য মহানবী (সাঃ) আর কাউকেও সঙ্গে নিলেন না , শুধু আহলে বাইত (হযরত আলী , ফাতেমা , হাসান ও হোসাইন (আঃ)-গণকেই নিলেন। যেমন আল্লাহর পছন্দসই ধর্ম সত্য ও পবিত্র , ঠিক তেমনি সাক্ষ্যও সত্য ও পবিত্র হতে হবে , তাই তিনি আহলে বাইত (হযরত আলী , ফাতেমা , হাসান ও হোসাইন (আঃ)-গণকেই সাথে নিলেন। কারণ তাঁহারাই ছিলেন প্রকৃত সত্যবাদী (সিদ্দিক আকবার) ।
মোবাহালার মাঠে নাজরানের পাদ্রী এই সত্যবাদী“
পাক-পাঞ্জাতনকে ” দেখে ভীত হয়ে খ্রিস্টানদের বলেন , আমি তাঁদের চেহারাতে এমন জ্যোতি দেখতে পাচ্ছি , যদি তাঁরা এই পাহাড়কে সরে যেতে বলে তাহলে তা সরে যাবে । সুতরাং তাঁদের সাথে মোবাহালা (অভিসম্পাতের) প্রার্থনা করো না। তাঁরা যে জিজিয়া কর ধার্য্য করেন তা মেনে নাও।
অতি দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে , আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে খ্রিষ্টানরা আহলে বাইত (পাক-পাঞ্জতন)-কে চিনে গেলেন কিন্তু আজ আমরা নিজেকে শ্রেষ্ঠ নবী (সাঃ)-এর উম্মত বলে দাবি করি কিন্তু আহলে বাইতকে ঠিক মত চিনি না , জানি না। আবার অনেককে এমনও পাওয়া যায় , যারা এখন পর্যন্ত আহলে বাইত-এর নামও শুনেন নাই। আর অনুসরণ করার তো প্রশ্নই আসে না। উক্ত আয়াতটি দ্বারা এটা প্রমাণিত হলো যে , মহানবীর (সাঃ) পর যারা তাঁর উত্তরসূরি হবেন তাঁরা পাক পবিত্র-মাসুম ও প্রকৃত সত্যবাদী হবেন।
আহলে বাইত -
এর
মুয়াদ্দাত ও
অনুসরণ
ফরজ
পবিত্র কোরআনে , মহানবী (সাঃ)-এর আহলে বাইত-এর মুয়াদ্দাত ও অনুসরণ ফরজ করা হয়েছে ।
মহানবী (সাঃ) যে রেসালাতের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন , আল্লাহ তার বান্দার কাছ থেকে তাঁর রেসালাতের পারিশ্রমিক বাবদ মহানবী (সাঃ) -এর আহলে বাইত-এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) ফরয করে দিয়েছেন। যদি আমরা আহলে বাইতকে প্রাণাধিক ভালো না বাসি , আনুগত্য না করি , তাহলে আল্লাহর হুকুম অকার্যকর থেকে যাবে বা মানা হবে না , তাই হুকুম হচ্ছে।
“
বলুন , আমি আমার রিসালাতের পারিশ্রমিক তোমাদের কাছে কিছুই চাই না , শুধু আমার কুরবা (আলী , ফাতেমা , হাসান ও হোসাইন)-এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) ব্যতিত।”
(সূরা-শুরা , আয়াত-২৩) ।
হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে , যখন এই আয়াত নাযিল হলো তখন সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন ,“
ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কাঁরা আপনার নিকট আত্মীয় ? যাদের মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) পবিত্র কোরআনে উম্মতের উপর ফরজ করা হয়েছে। উত্তরে নবী (সাঃ) বললেন-আলী , ফাতেমা , হাসান ও হোসাইন এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্য) । ”
আরো এরশাদ হচ্ছে:“
বলুন , যে পারিশ্রমিকেই আমি তোমাদের কাছ চেয়ে থাকি না কেন , তা তো তোমাদেরই জন্য। ” (সূরা-সাবা , আয়াত-৪৭)
হযরত আবু বকর (রাঃ) ও সে কথাটি বলেছেন যে ,“
মহানবী (সাঃ)-এর সন্তুষ্টি তাঁর আহলে বাইতের ভালবাসার মধ্যে নিহিত।”
“
আল্লামা যামাখশারী ও আল্লামা ফাখরে রাজী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের প্রখ্যাত দুজন তাফসীরকারক ” ও বিজ্ঞ আলেম , তারা তাদের সুবিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থদ্বয়“
আল কাশশাফ ও আল কাবীর ” তাফসিরদ্বয়ে এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন যখন উক্ত আয়াত নাযিল হলো (সূরা-শুরা-আয়াত-২৩) তখন রাসূল (সাঃ) বলেন:-
(১) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে , সে শহিদী মর্যাদা পায়। (২) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে , সে নাজাত প্রাপ্ত হয় ইহজগৎ ত্যাগ করে । (৩) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে , সে তওবাকারী হিসাবে ইহজগৎ ত্যাগ করে। (৪) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে , সে পূর্ণ ঈমানের সঙ্গে ইহজগৎ ত্যাগ করে । (৫) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে , তাকে মালোকুল মউত , মুনকীর ও নকীর ফেরেশতারা সুসংবাদ দেয়। (৬) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে , তাকে এমন ভাবে বেহেশতে নিয়ে যাওয়া হবে যেমন বিবাহের দিন কন্যা তার শ্বশুরালয়ে যায়। (৭) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে , তার কবরে জান্নাত মুখী দু‘
টি দরজা খুলে দেয়া হবে। (৮) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে , আল্লাহ তার কবরকে রহমতের ফেরেশতাদের জিয়ারতের স্থানের মর্যাদা দেন। (৯) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে , সে নবীর সুন্নত ও খাঁটি-মুসলমানদের দলভুক্ত হয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করলো।
(*) সাবধান যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে , কিয়ামতের দিনে তার কপালে লেখা থাকবে সে আল্লাহ পাকের রহমত হতে বঞ্চিত। (*) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে , সে কাফের হয়ে মারা যায়। (*) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে , সে বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না।
সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন , ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আপনার“
আ ’ ল ” আহলে বাইত , কারা ?“
নবীজি বললেন , আলী , ফাতেমা , হাসান , ও হোসেইন , তিনি আরো বলেন , আল্লাহর কসম যার হস্তে আমার জীবন , যে ব্যক্তি আমার আহলে বাইতকে শত্রু মনে করবে , সে জাহান্নামী। ”
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর আহলে বাইতের চির শত্রু বনী উমাইয়াদের প্রাপাগাণ্ডায় , আহলে বাইতের ভক্তদের বা প্রেমিকদের“
রাফেযী ” নামে ডাকা হতো।
এ প্রসঙ্গে ইমাম শাফেয়ী বলেন , যদি কেবল মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা রাখলেই মানুষ রাফেযী হয়ে যায় , তবে বিশ্ব জগতের সমস্ত জ্বীন ও মানব সাক্ষী থাকুক , আমিও রাফেযী।
আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়ুতী বর্ণনা করেন যে , পবিত্র কোরআন ও নবী (সাঃ)-এর হাদীস হতে এটা প্রমাণিত হয় যে , আহলে বাইত আলী , ফাতেমা , হাসান ও হোসাইন (আঃ)-এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) দ্বীনের ফরায়েজে গণ্য ; সুতরাং ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এটার সমর্থনে এরূপ সনদ দিয়েছেন যে ,“
ইয়া আহলে বাইত-এ রাসূল , আল্লাহ তাঁর নাজিল করা পবিত্র কোরআনে আপনাদের মুয়াদ্দাতকে ফরজ করেছেন , যারা নামাজে আপনাদের উপর দরুদ পড়বে না , তাদের নামাজই কবুল হবে না ” ।
হযরত আলী (আঃ) থেকে বর্ণিত , যিনি বীজ হতে চারা গজান ও আত্মা সৃষ্টি করেন , সেই আল্লাহর কসম , নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল আমাক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে ,‘
প্রকৃত মুমিন ছাড়া আমাক কেউ ভালবাসবেনা এবং মুনাফিকগণ ছাড়া কেউ আমার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করবে না ’ ।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)‘
র সাহাবাগণ , ইমাম আলীর প্রতি ভালবাসা অথবা ঘৃণা দ্বারা কোন লোকের ঈমান ও নিফাক পরখ করতেন। আবু যার গিফারী , আবু সাঈদ খুদরী , আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ , জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে ,‘
আমরা সাহাবাগণ আলী ইবনে আবি তালিবের প্রতি ঘৃণা দ্বারা মুনাফিকদের খুঁজে বের করতাম ’ ।
কিন্তু অতি দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে , যাঁদের উপর দরুদ শরিফ না পড়লে নামাজ কবুল হয় না , (আহযাব-৫৬) যাঁদের আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা পবিত্র কোরআনে ফরজ করা হয়েছে , (শুরা-২৩) । সেই পাক পবিত্র আহলে বাইত-এর প্রথম সদস্য হযরত আলী (আঃ)-এর সাথে মহানবী (সাঃ)-এর ইহজগৎ ত্যাগ করার পর , কতইনা জালিমের মত ব্যবহার করা হয়েছে তা এখন পাঠকদের সামনে তুলে ধরবো:
৪১ হিজরিতে আমির মুয়াবিয়া যখন কোরআন পরিপন্থি আইন রাজতন্ত্র কায়েম করলো , তখন“
মুসলিম সাম্রাজ্যের ৭০ হাজারেরও অধিক মসজিদ জুম্মার খোৎবায় হযরত আলী ও রাসূল (সাঃ)-এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ)-এর উপর অভিসম্পাত প্রদানের হুকুম কার্যকর করে , তার আদেশটি ছিল এরূপ , আল্লাহর কসম। কখনও আলীকে অভিসম্পাত দেয়া বন্ধ হবে না যতদিন শিশুগণ যুবক এবং যুবকগণ বৃদ্ধে পরিণত না হয়। সারা দুনিয়ায় আলীর ফজিলত বর্ণনাকারী আর কেউ থাকবে না , মুয়াবিয়া নিজে এবং তার গভর্নররা মসজিদে , রাসূল (সাঃ)-এর পবিত্র রওজা মোবারকের পার্শ্বে মিম্বরে রাসূলে দাড়িয়ে , তাঁর প্রিয় আহলে বাইতদের অভিসম্পাত দেয়া হতো , হযরত আলীর সন্তানরা ও নিকট আত্মীয়রা তা শুনতে বাধ্য হতেন , আর নীরবে অশ্রুপাত করতেন। কারণ তারা নিরীহ (মাজলুম) ছিলেন। ” মুয়াবিয়া তার সমস্ত প্রদেশের গভর্নরদের উপর এ নির্দেশ জারি করে , যেন সকল মসজিদের খতীবগণ মিম্বরে রাসূল (সাঃ)-এর উপরে দাঁড়িয়ে , আলীর উপর অভিসম্পাত করাকে যেন তাদের দায়িত্ব মনে করেন।
পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে , তিনি“
সেই আলী , যিনি মহানবী (সাঃ) -এর স্থলাভিষিক্ত ও সর্বপ্রথম নবুয়্যতের সাক্ষ্য প্রদানকারী (শোয়ারা-২১৪) । আল্লাহ যাদেরকে পবিত্র কোরআনে পবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন (আহযাব -৩৩) এবং যাদের আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা ব্যতিত ঈমান পরিপূর্ণ হয় না , (শুরা-২৩) নামাজে নবীজির সাথে যাঁদের উপর দরুদ শরিফ ও সালাম না পাঠালে নামাজ কবুল হয় না , (আহযাব-৫৬) । ”
সেই আহলে বাইত (আঃ)-কে অভিসম্পাত-এর প্রথা প্রচলন করে কি মুয়াবিয়া জঘন্য অপরাধ (মুনাফেকি) করে নি ?“
প্রায় ৮৩ বৎসরেরও অধিক সময় ধরে মুসলিম জাহানের প্রতিটি মসজিদে আহলে বাইত (আঃ) ও আহলে বাইত-এর প্রধান সদস্য হযরত আলী (আঃ)-কে অভিসম্পাত-এর প্রথা এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল যে , যখন ওমর বিন আব্দুল আজিজ-এর শাসনামল শুরু হলো , তখন তিনি এই জঘন্য পাপ ও বেঈমানী কর্মকাণ্ড রহিত করেন। ” তখন রাসূল (সাঃ)-এর আহলে বাইত (আঃ) বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি (মুনাফিকগণ) চারদিকে নিম্নোক্ত বাক্য উচ্চারণ করে হৈ চৈ এর রব তুললো।
‘
ওমর বিন আব্দুল আজিজ , সুন্নাত তরক করে দিলেন ’ , (রাসূল (সাঃ)-এর পবিত্র আহলে বাইত-এর প্রধান সদস্য আলী (আঃ)-কে অভিসম্পাত দেওয়া) !
অতঃপর ওমর বিন আব্দুল আজিজ , জুমার খোৎবা থেকে মুয়াবিয়ার প্রতিষ্ঠিত (রাসূল (সাঃ)-এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ)-এর প্রধান সদস্য আলী (আঃ)-কে) অভিসম্পাতের অংশটি পরিবর্তন করে , পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটি পাঠের আদেশ দেন।
“
নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদেরককে সুবিচার এবং সৌজন্যের নির্দেশ দেন আর নির্দেশ দেন , নিকট আত্মীয়দের দান করার আর বারণ করেন অশ্লীল জঘন্য কাজ ও সীমালংঘন করতে। তিনি তোমাদেরকে সদুপদেশ দেন যাতে তোমরা উপদশ গ্রহণ কর ” । (সূরা-নাহল , আয়াত-৯০) ।
এখন পাঠকদের জন্য সেই সূত্র উল্লেখ করছি , যেখান হযরত আলী (আঃ)-কে অভিসম্পাত দেওয়া হতো।
হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন , রাসূল (সাঃ) বলেছেন ,“
যে ব্যক্তি আলীক অভিসম্পাত দিল , সে যেন আমাকেই অভিসম্পাত দিলো ” (আর যে ব্যক্তি মহানবী (সাঃ)-কে অভিসম্পাত দিল , সে এবং তার সঙ্গীরা নিশ্চিত জাহান্নামী , যা আমরা পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে পড়েছি , তাই নয় কি ?)।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন , সাবধান!“
যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে , কিয়ামতের দিন তার কপালে লেখা থাকবে , সে আল্লাহপাকের রহমত হতে বঞ্চিত। যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে , সে কাফের হয়ে মারা যায়। যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে , সে বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না। ”
শুধু তাই নয়! ওমর বিন আব্দুল আজিজ , হযরত ফাতেমা (আঃ)-এর কাছ থেকে অবৈধ ভাবে কেড়ে নেওয়া সেই“
বাগে ফিদাক বাগান ” ও ফেরত দেন আহলে বাইতের সদস্যদের কাছে। যেটা এতদিন বনী উমাইয়ার পান্ডারা ভোগ করছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ কাজগুলো করেছিলেন ওমর বিন আব্দুল আজিজ।
তাই এখন ভাবুন , যারা আহলে বাইত (আঃ)-এর ফজিলত বর্ণনা করেন না , তারা মুয়াবিয়া ও এজিদ দ্বারা কোরআন পরিপন্থি রাজতন্ত্র , রাজা-বাদশাদের অনুসারী বা ভক্ত। যা বর্তমান অনেক দেশে অব্যাহত রয়েছে , যে যার অনুসারী সে তারই পদ্ধতিকে অনুসরণ করবে , এটাই বাস্তব। উম্মতে মুহাম্মাদী আর কতদিন বিভ্রান্তি ও অজ্ঞতার বেড়াজালে নিজেদেরকে আবদ্ধ করে রাখবেন ? তাই , কোরআন ও হাদীস-এর ভিত্তিতে একটু বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখুন , বিবেককে জাগ্রত করুন , দেখবেন সত্য বেরিয়ে আসবে। মনে রাখবেন অন্ধ বিশ্বাসের নাম ধর্ম নয় , সত্যকে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে উপলব্ধি করার নামই হচ্ছে ধর্ম।