সিরাতে মুস্তাকিম বলতে কাঁদের পথকে বুঝানো হয়েছে ?
পবিত্র কোরআনে“
সূরা ফাতিহাতে ” আমাদের“
সরল সঠিক পথে ও যাদের প্রতিতি আপনি নেয়ামত দান করেছেন তাদের পথে পরিচালিত করুন। ” বলতে কাদের পথকে বুঝানো হয়েছে ?
সালাবী তার তাফসীরে কাবীর গ্রন্থে (সূরা ফাতিহার তাফসীরে) ইবনে বুরাইদা হতে বর্ণনা করেছেন যে ,“
সিরাতে মুস্তাকিম ” বলতে“
মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর ইতরাত , আহলে বাইতের পথকে বুঝানো হয়েছে ” । ওয়াকী ইবনে যাররাহ সুফিয়ান সাওরী সাদী আসবাত ও মুজাহিদ হতে এরা সকলেই ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন , আমাদের সরল সঠিক পথে হেদায়েত কর , অর্থাৎ“
মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর আহলে বাইতের পথ। ”
হাদীসে সাকালাইন
দু
‘
টি ভারী
বস্তুর
হাদীস
কোরআন ও ইতরাত , আহলে বাইত
হযরত যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে , মহানবী (সাঃ)-এর শেষ বাণী যা তিনি বিদায় হজ্জে একলক্ষ বিশ হাজার সাহাবীদের মাঝে এরশাদ করেছিলেন:“
হে মানব সম্প্রদায়! আমি তোমাদের মধ্যে দু‘
টি সমপরিমাণ ভারি বস্তু রেখে যাচ্ছি যদি এ দু‘
টিকে আঁকড়ে ধরে থাক (অনুসরণ কর) তাহলে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। আর যদি একটিকে ছাড় তাহলে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। তার প্রথমটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (কোরআন) দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমার ইতরাত , আহলে বাইত [(আলী , ফাতেমা , হাসান ও হোসাইন (আঃ)] ; এ দু‘
টি কখনই পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না হাউজে কাউসারে আমার সাথে মিলিত হবে। তাদের সাথে তোমরা কিরূপ আচরণ কর এটা আমি দেখবো ” ।
মহানবী (সাঃ) সাহাবাদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন ,“
এখানে উপস্থিত লোকদের উচিত অনুপস্থিত ’ দের কাছে আমার এই বাণী (কিতাবুল্লাহর বিধান ও আহলে বাইত-এর সীরাত ও রেওয়ায়েত) পৌছিয়ে দেয়া , কেননা যাদের কাছে পৌছানো হবে , তাদের মধ্যে অনেক ব্যক্তি এমন আছে যে , শ্রবণকারীর চাইতে সংরক্ষণের দিক থেকে অধিকযোগ্য। আর তোমরা যেন আমার পরে কাফের হয়ে যেও না।”
অর্থাৎ কুফরী আচরণে তৎপর হয়ো না।
মহানবী (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন যে ,“
আহলে বাইত-এর আগ যাওয়ার চেষ্টা করানা তাহলে ধ্বংস হয় যাব। তাদের থেকে সরে যেয়া না তাহলে দুঃখ কষ্ট তোমাদের চির সাথী হয় যাব। তাদেরকে শিক্ষা দওয়ার চেষ্টা করানা তাঁরা তোমাদের থেকে বশি জ্ঞানী। ”
আল্লামা সানাউল্লাহ পানিপথি স্বীয় তাফসীরে লিখেছেন যে , [(মহানবী (সাঃ)] আহলে বাইত (আঃ)-এর কথা এজন্য তাগিদ করেছেন যে ,“
হেদায়েত এবং বেলায়েতের ব্যাপারে আহলে বাইতই পথপ্রদর্শক। তাঁদের উসিলা ব্যতিত কেউ আল্লাহর ওলীর মর্তবায় পৌছাতে পারবে না। আহলে বাইত (আঃ)-এর মধ্যে সর্বপ্রথম রয়েছেন , হযরত আলী (আঃ) অতঃপর তাঁর সন্তানদের মধ্যে হযরত হাসান আসকারী পর্যন্ত , এই সিলসিলা অব্যাহত থাক। ”
বিদায় হজ্বের ভাষণে“
মহানবী (সাঃ) আমাদেরকে কিতাবুল্লাহর বিধান ও আহলে বাইত-এর সীরাত ও রেওয়ায়েত অনুসরণ করতে হুকুম দিয়েছেন , গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে , সেই সময় মহানবী (সাঃ)-এর সঙ্গে প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার সাহাবার জামাত ছিল এবং মহানবী (সাঃ) সাহাবাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে , যদি কোরআন ও আহলে বাইত-এর একটিকেও ছাড় তবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে , আর আমরা হলাম সাধারণ মানুষ আমরা যদি সেই দুটি বস্তুকে অনুসরণ না করি তবে পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা পাবো কি ?”
আল কোরআনের ঘোষণাঃ-“
আমি যেসব স্পষ্ট নিদর্শন এবং হেদায়েত মানুষের জন্য নাযিল করেছি , কিতাবে তা বিস্তারিত (হক কথা) বর্ণনা করার পরও যারা তা গোপন করে তাদেরকে আল্লাহ্ অভিসম্পাত দেন এবং অন্যান্য অভিসম্পাতকারীরাও তাদেরকে অভিসম্পাত দেয়। ” (সূরা-বাকারা , আয়াত-১৫৯)
আরো এরশাদ হচ্ছে:“
নিশ্চয় যারা গোপন করে সে সব বিষয় যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন (হক কথা) এবং বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে , তারা আগুন ছাড়া নিজেদের পেটে আর কিছুই পুরতেছে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। এরাই হল সে সকল লোক যারা হেদায়াতের বিনিময়ে গোমরাহী এবং ক্ষমার পরিবর্ত আযাব খরিদ করেছে। হায়! কতই না ধৈর্যশীল তারা আগুনের উপর ” ! (সূরা-বাকারা , আয়াত-১৭৪-১৭৫)
হায় আফসাস! সেই সব দরবারী আলেমদের জন্য যারা জেনে-বুঝে (হক কথা) ইল্ম গোপন করে“
কোরআন পরিপন্থি রাজতন্ত্রী রাজা-বাদশাদের খুশি করার জন্য অনন্তকালের আগুনকে বরণ করে নিচ্ছে ” ।
কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে , আহলে বাইত (আঃ)-এর এই সহীহ্ হাদীসটিতে আহলে বাইত (আঃ)-কে বাদ দিয়ে ,‘
সুন্নাহ ’ ও‘
হাদীস ’ শব্দ যোগ করা হয়েছে , যেমনঃ বিদায় হজ্বে রাসূল (সাঃ)‘
কোরআন ও সুন্নাহ বা হাদীস ’ রেখে যাবার কথা বলেছেন বলে প্রচার করা হয়। অথচ এটা সঠিক নয়! কিছু দরবারী আলেমরা অনেকভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন , যেমনঃ তারা বলেন , মহানবী (সাঃ) নাকি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে ভাষণ দিয়েছেন যেমনঃ কোথাও“
কোরআন ও সুন্নাহ ” বলেছেন , আবার কোথাও ,“
কোরআন ও হাদীস ” বলেছেন , যখন আমি বললাম ঠিক আছে সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণ দেখাতে পারবেন। তখন আর সদুউত্তর আসে না , আমি পাঠকদের অবগতির জন্য প্রমাণ স্বরূপ বলছি ,“
কোরআন ও সুন্নাহ বা হাদীস ” এই হাদীসটি মুয়াত্তা ইমাম মালেক তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন মুরসাল হাদীস হিসাবে সেখানে সাহাবির ধারাবাহিকতা বিচ্ছিন্ন“
মেশকাত শরীফ ” খঃ-১ , হাঃ-১৭৭ , নুর মুহাম্মদ আজমী (এমদাদীয়া)ও“
তাহক্কীক মিশকাতুল মাসাবিহ ” , খঃ-১ , পৃঃ-১০৪ , হাঃ-১৮৬ , (আহলে হাদীস লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত) , সেখানে উল্লেখ আছে যে ,“
কোরআন ও সুন্নাহ বা হাদীস ” হচ্ছে (মুরসাল ও যইফ হাদীস) ; মাওলানা মুফতি মোঃ সফী ; তার সীরাতে“
খাতামুল আম্বিয়া”
গ্রন্থের-৯৭-৯৮ ’ পৃষ্ঠায় বলেন , মহানবী (সাঃ) বিদায় হজ্বে সাহাবাদের সামনে বলেছেন“
শুধু কোরআন ” অনুসরণ করতে ;“
আর রাহীকুল মাখতূম ” আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী , সালাফী , পৃঃ-৫২৩ , (প্রকাশনায়-তাওহীদ পাবলিকশন্স , ২০১১-ইং ,);“
আর রাহীকুল মাখতূম ” (সীরাত গ্রন্থ , অনুবাদ ও প্রকাশনা-খাদিজা আখতার রজায়ী ; জুন-২০০৩-ইং ,) আল কোরআন একাডেমী লন্ডন। আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী , ওহাবী-সালাফী , আহলে হাদীসের আলেম , তার সীরাত গ্রন্থের-৪৭৬ , পৃষ্ঠায় বলেন , মহানবী (সাঃ) বিদায় হজ্বে একলক্ষ চব্বিশ হাজার সাহাবাদের সামনে বলেছেন“
শুধু কোরআন ” অনুসরণ করতে ;“
এই বিভ্রান্তির শেষ কাথায় ” ?“
যারা বলেন. আল্লাহর কিতাব কোরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এটা আরেক পথভ্রষ্টতা। ”
“
“
“
মহানবী (সাঃ)-এর শাফায়াত যাদের জন্য হারাম
রাসূল (সাঃ) বলেন ,“
যে ব্যক্তি এজন্য আনন্দিত যে ,সে চায় আমার মত জীবন যাপন করতে , আমার মত মৃত্যুবরণ করতে ও আমার প্রতিপালকের চিরস্থায়ী বেহেশতে বাস করতে সে যেন আমার পর , আমার আহলে বাইতকে অনুসরণ করে। কারণ তাঁরা আমার সর্বাধিক আপন এবং তাঁরা আমার অস্তিত্ব হতে অস্তিত্ব লাভ করেছে। আমার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থেকেই তারা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ করেছে। ধ্বংস আমার সেই উম্মতের জন্য যারা আমার আহলে বাইতের শ্রষ্ঠত্বকে মিথ্যা মনে করে এবং আমার ও তাদের (আহলে বাইত (আঃ)-এর) মধ্যেকার সম্পর্ক ছিন্ন করে। আল্লাহ আমার শাফায়াতকে তাদের জন্য হারাম করেছেন ” ।
আহলে বাইত (আঃ)-এর সাথে বিদ্বেষ পোষণকারীর হাশর ইহুদিদের সাথে হবে
মহানবী (সাঃ)-এর প্রিয় সাহাবী , হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন , হযরত রাসূল (সাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন , এবং তিনি বলতে লাগলেন ,“
হে মানব সকল! যারা আহলে বাইতের সাথে বিদ্ধেষ রাখে , কিয়ামতের দিন তাদের জমায়েত (হাশর) ইহুদিদের সাথে হবে। আমি (জাবের) আরজ করলাম , ইয়া রাসূল (সাঃ)! যদিও তারা রোযা রাখে এবং নামাজ পড়ে ? উত্তরে রাসুল (সাঃ) বললেন , হ্যাঁ যদিও তারা রোযা রাখে এবং নামাজ পড়ে ” । (অর্থাৎ তা সত্ত্বেও আহলে বাইতের শক্র হওয়ায় , আল্লাহ তায়ালা তাদের ইবাদত বিনষ্ট করে দিয়ে তাদের ইহুদিদের দলভূক্ত করে উঠাবেন) আরও বর্ণনা রয়েছেঃ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত , হযরত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন ,“
ঐ সত্ত্বার কসম , যার পবিত্র হাতে আমার প্রাণ! আমার আহলে বাইতের সাথে বিদ্বেষ পোষনকারীদের মধ্যে হতে এমন কেউ নেই , যাকে আল্লাহ তা ’ য়ালা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেনা ” । আরও বর্ণিত হয়েছেঃ
হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্নে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত , হযরত রাসল (সাঃ) ইরশাদ করেন ,“
যদি কোন ব্যক্তি পবিত্র কা ’ বার পাশ রুকন ইয়ামানি ও মাকাম ইব্রাহিমের মধ্যবর্তী স্থানে দন্ডায়মান হয়ে নামাজ আদায় করে এবং রোযাও রাখে , অতঃপর এমতাবস্থায় আহলে বাইতের সাথে বিদ্বেষ রেখে মৃত্যুবরণ করে , তাহলে সে জাহান্নামে যাবে ” ।
‘
আহলে বাইত (আঃ)-এর অনুসরণ ব্যতিত ঈমানদার হওয়া যাবে না
আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি লিখেছেন যে , রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে ,“
দেখ আমার আহলে বাইত-এর অনুসরণকে নিজেদের জন্য অতি আবশ্যকীয় কর্তব্য বলে মনে করবে , কারণ যে ব্যক্তি অন্তরে তাঁদের মহব্বতসহ আল্লাহর নিকট কিয়ামতে উপস্থিত হবে , সে আমার শাফায়াতে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং আল্লাহর কসম আমার আহলে বাইত-এর অনুসরণ ব্যতিত কোন ব্যক্তির কোন আমল উপকারে আসবে না ” ।
রাসুল (সাঃ) আরও এরশাদ করেছেন ,“
আল্লাহর কসম কোন মুসলমানের অন্তরে ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে না , যতক্ষণ না আমার আহলে বাইতকে আল্লাহর নির্দশানুযায়ী ও আমার আত্মীয়তার কারণে অনুসরণ (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) না করবে ” ।
আহলে বাইত (আঃ)-এর অমান্যকারীদের হাউজে কাউসারে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় বিতাড়িত করে দেয়া হবে
আল্লামা ইবনে হাজার মাক্কী বর্ণনা করেন যে , নবী (সাঃ) বলেছেন ,“
আমার আহলে বাইতের শত্রুতাকারীগণ হাউজে কাউসারের নিকট পৌছিলে তাদেরকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় বিতাড়িত করে দয়া হবে ” ।
আহলে বাইত (আঃ)-ই জান্নাত ও জাহান্নামের বণ্টনকারী
আল্লামা আলী হামদানী শাফেয়ী লিখিয়াছেন যে ,“
রাসূল (সাঃ) বলেছেন , আল্লাহ পাক কিয়ামতে জান্নাত ও জাহান্নামের চাবি আমাকে পাঠাইবেন আমি সেই চাবি আমার আহলে বাইতকে দিব তাঁরা যাকে ইচ্ছা জান্নাতে পাঠাবেন এবং যাকে ইচ্ছা জাহান্নামে পাঠাবেন ” ।