মিরেকলস অব দ্য কোরআন

মিরেকলস অব দ্য কোরআন 0%

মিরেকলস অব দ্য কোরআন লেখক:
: ডাঃ উম্মে কাউসার হক
প্রকাশক: -
বিভাগ: কোরআন বিষয়ক জ্ঞান

মিরেকলস অব দ্য কোরআন

লেখক: হারুন ইয়াহিয়া
: ডাঃ উম্মে কাউসার হক
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 23066
ডাউনলোড: 3131

পাঠকের মতামত:

মিরেকলস অব দ্য কোরআন
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 14 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 23066 / ডাউনলোড: 3131
সাইজ সাইজ সাইজ
মিরেকলস অব দ্য কোরআন

মিরেকলস অব দ্য কোরআন

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

জরায়ুতে আটকে থাকা রক্তপিন্ড

মানব শিশুর জন্ম সম্পর্কে কোরআনে ঘোষিত তথ্যাদিসমূহ যদি আমরা পর্যবেক্ষণ করে যেতে থাকি তবে আমরা অতি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক অলৌকিক ঘটনাসমূহের সম্মুখীন হব।

পুরুষের শুক্রকীট যখন মহিলার ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হয় তখন জন্ম নেয়া শিশুর মৌলিক অংশ গঠিত হয়ে যায়। জীববিদ্যায় জাইগোট নামের একটি কোষ তৎক্ষণাৎ বিভাজনের মাধ্যমে পুণরুৎপাদন শুরু করে দেয় আর ফলে তা ভ্রুণ নামক একটি মাংসল পিন্ডে পরিণত হয়। অবশ্য এটি মানুষ কেবল মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে দেখতে পারে।

যাই হোক এই ভ্রুণ পূর্ণতা লাভ করার সময় জরায়ুতে কেবলি শূণ্যে সময় কাটায় না। শেকড় যেমন এর আঁকশির মাধ্যমে মাটিতে শক্তভাবে গেঁথে থাকে , ভ্রুণও তেমনি জরায়ুর গায়ে শক্ত হয়ে লেগে থাকে। এ বন্ধনের মাধ্যমে ভ্রুণ তার বৃদ্ধির জন্য মায়ের দেহ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে থাকে।১৬

এ বিষয়ে কোরআনে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অলৌকিক বিষয় প্রকাশিত আছে। মাতৃগর্ভে ভ্রুণের পূর্ণতা লাভের ব্যাপারটি উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা আলাক্ব শব্দটি ব্যবহার করেছেন :

পাঠ করুন আপনার রবের নামে , যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত (আলাক্ব) থেকে , পাঠ করুন , আর আপনার রব অতিশয় দয়ালু । (কোরআন , ৯৬ : ১৩)

আরবী ভাষায় আলাক্ব শব্দের অর্থ এমন একটি জিনিষ যা কোন জায়গায় আটকে থাকে। আক্ষরিক অর্থে একটি জোঁকের বর্ণনা দেয়া যায় যা কোন দেহে লেগে থেকে তার রক্ত শোষণ করে।

জরায়ুতে প্রথম পূর্ণতা লাভের সময় বাচ্চা জাইগোট আকারে মায়ের জরায়ুতে লেগে থাকে যেন মায়ের রক্ত থেকে পুষ্টি পেতে পারে। উপরের চিত্রটি একটি জাইগোটের , যা দেখতে একটি মাংসপিন্ডের ন্যায়। আধুনিক ভ্রুণবিদ্যা এই গঠনটি আবিষ্কার করতে পেরেছে যা কিনা পবিত্র কোরআনে ১৪০০ বছর আগেই অলৌকিকভাবে আলাক্ব শব্দটি দ্বারা উল্লেখিত হয়েছিল যার অর্থ এমন একটি জিনিষ যা কোন জায়গা আকড়ে পড়ে থাকে । আর এ শব্দটি দ্বারা জোঁকের বর্ণনা দেয়া হয়েছে যা রক্ত শোষণের জন্য দেহকে আটকে ধরে থাকে।

নিশ্চিতভাবেই মাতৃগর্ভে ভ্রুণের বৃদ্ধির বেলায় এমন একটি সঠিক শব্দের ব্যবহার আরো একবার প্রমাণ করে যে , কোরআন সারা জাহানের মালিক আল্লাহ কর্তৃক নাযিল হয়েছে।

মাংস অস্তিকে জড়িয়ে আবৃত করে রাখে

কোরআনের আয়াতে প্রেরিত তথ্যাদির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মাতৃগহ্বরে মানব শিশুর বৃদ্ধির পর্যায়গুলোর বর্ণনা। সে আয়াতসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে যে , জরায়ুতে অস্তিসমূহ প্রথম তৈরী হয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় আর তারপর মাংসপেশী সৃষ্ট হয়ে সেগুলোকে জড়িয়ে ঢেকে দেয়।

এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি এমন আলাক্বে যা লেগে থাকে , এরপর সে আলাক্বকে পরিণত করি পিন্ডতে , তারপর সেই পিন্ড থেকে সৃষ্টি করি অস্তি , পরে অস্তিকে ঢেকে দেই-গোশ্ত দিয়ে , তারপর তাকে গড়ে তুলি এক নূতন সৃষ্টিরূপে। সুতরাং কত মহান কল্যাণময় আল্লাহ যিনি সর্বোত্তম স্রষ্টা। (কোরআন , ২৩ : ১৪)

বিজ্ঞানের একটি শাখা ভ্রুণবিজ্ঞান মাতৃগর্ভে ভ্রুণের বৃদ্ধি নিয়ে পর্যালোচনা করে । অতি সাম্প্রতিককালের ভ্রুণতত্ত্ববিদগণের ধারণা ছিল যে , মাংস আর অস্তিভ্রুণ থেকে একই সময়ে সৃষ্ট হয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এ কারণে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কিছু কিছু লোক দাবি করতে থাকে যে , বিজ্ঞানের সঙ্গে এ আয়াতগুলোর বিরোধ রয়েছে। নুতন প্রযূক্তির গুণে সৃষ্ট আধুনিক মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে গবেষণা চালিয়ে উদঘাটিত হয়েছে যে কোরআনের কথাই অক্ষরে অক্ষরে সত্য।

হাড্ডিসমূহ মাতৃগর্ভে উন্নীত হওয়া শেষ হলে পরে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে মাংস পেশী দিয়ে আবরিত হয় বা ঢেকে যায়।

আনুবিক্ষীনিক পর্যায়ে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে , কোরআনের আয়াতটিতে যেভাবে বর্ণনা করা আছে ঠিক সেভাবেই মাতৃগর্ভে মানব শিশুর বৃদ্ধি বা উন্নয়ন চলতে থাকে। প্রথমে ভ্রুণের উপাস্তি (Cartilage ) টিস্যূ অস্তিতে পরিণত হয়। এরপর অস্তিসমূহের চারদিকের নির্বাচিত টিস্যূ অনুযায়ী মাংসের কোষসমূহ একত্রে এসে অস্তিসমূহকে আবৃত করে রাখে।

কোরআনে শিশুর বৃদ্ধির বহু পর্যায়ের বর্ণনা রয়েছে। যেমন সূরা মুমিনুনের চৌদ্দ নং আয়াতে বর্ণিত আছে যে , জরায়ুতে প্রথম উপাস্তিগুলো অস্তিতে পরিণত হয়। এগুলো পরে মাংসপেশী দিয়ে আবৃত হয়। আয়াতে আল্লাহ তাআলা উন্নয়নের এই পর্যায়গুলোকে এভাবে বর্ণনা করেছেন , ......পিন্ডকে পরে অস্তিতে পরিণত করি আর তারপর মাংসপেশী দ্বারা অস্তিকে জড়িয়ে দেই।

একটি বৈজ্ঞানিক পত্রিকায়Developing Human নামে টাইটেল দেয়া একটি পরিচ্ছদে এই ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে :

সপ্তম সপ্তাহের দিকে অস্তিসমূহ পুরো দেহে ছড়িয়ে যায় আর তাদের পরিচিত আকৃতি ধারণ করে । সপ্তম সপ্তাহের শেষদিকে আর অষ্টম সপ্তাহে মাংসপেশীসমূহ অস্তিসমূহের চারদিকে অবস্থান গ্রহণ করে। ১৭

সংক্ষেপে কোরআনে জরায়ুতে মানুষের বৃদ্ধিপ্রাপ্তির পর্যায়গুলোর যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা আধুনিক ভ্রুণবিদ্যার প্রাপ্ত তথ্যসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে।

মাতৃগর্ভে বাচ্চার তিনটি পর্যায়

মানুষ যে মাতৃগর্ভে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে সৃষ্ট হয়েছে-এটাই বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরাআনে :

...তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে এক অবস্থার পর অন্য অবস্থায় ত্রিবিধ অন্ধকারের মধ্যে। তিনিই আল্লাহ , তোমাদের রব , সর্বময় কর্তৃত্ব তারঁই। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। অতএব তোমরা কোথায় ফিরে যাচ্ছ ? (কোরআন , ৩৯ : ৬)

মানুষ যে মাতৃগর্ভে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে সৃষ্ট হয়েছে তাই আয়াতটি নির্দেশ করে বলে বুঝা যাবে। সত্যিই বর্তমান জীববিদ্যা প্রকাশ করছে যে , মাতৃগর্ভে স্পষ্টভাবে ভিন্ন ভিন্ন তিনটি অঞ্চলে শিশুর ভ্রুণের বৃদ্ধি হয় । বর্তমানে চিকিৎসাবিদ্যার প্রতিটি শাখায় পঠিত সমস্ত ভ্রুণদ্যিার বইগুলোয় এ বিষয়টি মৌলিক জ্ঞানের একটি উপাদান হিসেবে নেয়া হয়। উদাহরণ স্বরূপ মূল ভ্রুণ বিদ্যার (ভ্রুণ বিদ্যার শাখায় এটি একটি মৌলিক রেফারেন্স) এ সত্যটি এভাবে তুলে ধরা হয়েছে : জরায়ুতে জীবনের তিনটি পর্যায় রয়েছে : প্রথম আড়াই সপ্তাহ-ভ্রুণ পুর্ববর্তী অবস্থা( Pre-embrynic ) , আটসপ্তাহের শেষ পর্যন্ত ভ্রুণাবস্থা (Embyonic ) , আর আট সপ্তাহ থেকে জন্ম পর্যন্ত অবস্থা (Fetal )

এই অবস্থাসমূহ শিশুর বৃদ্ধির সময় বিভিন্ন পর্যায়ের উল্লেখ করে থাকে। সংক্ষেপে এই পরিপক্ক হওয়ার সময়ের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ :

ভ্রুণ পূর্ববর্তী পর্যায়

এ স্তরে জাইগোট বিভাজনের মাধ্যমে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে আর যখন এটি কোষগুচ্ছে (cellcluster ) পরিণত হয় ; এটি তখন নিজেকে নিজে জরায়ুর দেয়ালে আংশিক ঢুকিয়ে দেয়। যখন বর্ধিত হতে থাকে তখন কোষগুলো নিজেরা তিনটি স্তরে সজ্জিত হয়।

ভ্রুণাবস্থা

দ্বিতীয় এই পর্যায়টি বিদ্যমান থাকে সাড়ে পাঁচ সপ্তাহ। এ সময় শিশুকে বলা হয় ভ্রুণ। এ সময় কোষস্তর থেকে দেহের মৌলিক অঙ্গাদি আর তন্ত্রসমূহ হাজির হয়।

ভ্রুণ পরবর্তী অবস্থা

এ অবস্থাথেকে ভ্রুনকে বলা হয় ফিটাস । গর্ভাবস্থার অষ্টম সপ্তাহ থেকে এ অবস্থাটি শুরু হয় আর জন্মের মুহূর্ত পর্যন্ত এ অবস্থাটি বিদ্যমান থাকে। এ পর্যায়ে ভিন্ন একটি বৈশিষ্ট হলো যে মুখ , হাত আর পাসহ শিশুটি এ পর্যায়ে মানব শিশুর মতো দেখা যায়। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে এটি মাত্র তিন সেন্টিমিটার লম্বা , তথাপি সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গসমূহ পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। এ অবস্থাটি ত্রিশ সপ্তাহ বজায় থাকে আর বাচ্চার বৃদ্ধি জন্ম পর্যন্ত অব্যাহত হতে থাকে।

সূরা যুমারের ৬নং আয়াতে নির্দেশিত হয়েছে যে , মায়ের জরায়ুতে মানব শিশু সুস্পষ্ট তিনটি পর্যায়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। সত্যিই আধুনিক ভ্রুণবিদ্যায় এটি আবিষ্কৃত হয়েছে যে , জরায়ুতে শিশুর ভ্রুণের বৃদ্ধি তিনটি পৃথক পৃথক স্তরে ঘটে-থাকে।

কেবলি আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে অবলোকনের পরই মায়ের জরায়ুতে মানব শিশুর বৃদ্ধিপাপ্তির খবরাখবর নেয়া সম্ভব হয়েছে। অথচ অন্যান্য বৈজ্ঞানিক সত্যসমূহের মতোই এ ব্যাপারটি কোরআনে-সংযোজিত হয়েছে অলৌকিকভাবে। যে সময়ে চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কে মানুষের অল্পই জ্ঞান ছিল সে সময়ে কোরআনে খুঁটিনাটি আর সঠিক তথ্যাদি বর্ণনা করা হয়েছে-এটি কোরআন যে মানুষের নয় , বরং আল্লাহর বাণী এটিই পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়।

মায়ের দুধ

মহান আল্লাহ তাআলা মায়ের দুধের মতো একটি অতুলনীয় , অসমকক্ষ মিশ্রণ তৈরী করেছেন , যা কিনা জন্ম পরবর্তী বাচ্চার একটি অপূর্ব খাদ্যউৎস্য , তার উপরে এটি বাচ্চার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। এমনকি আজকের টেকনলজীর মাধ্যমে কৃত্রিম ভাবে তৈ রী বাচ্চাদের খাদ্যসমূহকে অলৌকিক এই মিশ্রণের উৎসটির (মায়ের দুধ) বিকল্প খাদ্য হিসেবে প্রতিস্থাপন করা যায় না।

প্রতি দিনেই মায়ের দুধের গুণাগুণ একটি একটি করে আবিষ্কার করা হচ্ছে। মাতৃদুগ্ধ সম্পর্কে বিজ্ঞানে যা আবিষ্কার করা হচ্ছে তারই একটি হলো যে - জন্মের পর দু বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ পানের বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। ১৯ অতি সাম্প্রতিক কালে বিজ্ঞান কর্তৃক আবিষ্কৃত এই ব্যাপারটিই আল্লাহ তাআলা কোরআনে ১৪০০ বছর আগে এই আয়াতে আমাদের অবহিত করেছেন - আর আমি ম ানুষকে তার পিতামাতা সম্বন্ধে নির্দেশ দিয়েছি (তাদের সাথে সদাচরণ করতে ) । তার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুবছরে তার দুগ্ধ ছাড়ানো হয়। সুতরাং শোকরগুজারী কর আমার এবং তোমার মাতা - পিতার। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। ( কোরআন , ৩১ : ১৪ )

আঙ্গুলের ছাপে মানুষের পরিচয়

যখন কোরআনে বলা হয় যে , মৃত্যুর পর মানুষকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা আল্লাহ তাআলার জন্য অতি সহজ কাজ , তখন মানুষের আঙ্গুলের রেখাসমূহের (ছাপের) উপর বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে। মানুষ কি ধারণা করে যে , আমি তার হাড়সমূহ একত্র করতে পারব না ?

হ্যাঁ , অবশ্যই আমি একত্র করব। কেননা আমি তার অঙ্গুলির অগ্রভাগ পর্যন্ত যথাযথভাবে ঠিক করে দিতে সক্ষম। (কোরআন , ৭৫ : ৩৪)

এমনকি হুবহু একই রূপ যমজ পর্যন্ত প্রত্যেকেরই রয়েছে অনন্য সাধারণ অঙ্গুলির রেখাসমূহ। অন্য কথায় মানুষের পরিচয় তাদের অঙ্গুলি সমূহে সংকলনভুক্ত অর্থাৎ সংকেত লিপির সাহায্যে লেখা রয়েছে। সংকলনের এই সিস্টেমটি অধুনা ব্যবহৃত বারকোড বা রেখাসঙ্কেত সিস্টেমের সঙ্গে তুলনা করা চলে।

অঙ্গুলীর রেখা সমূহের উপর গুরুত্ব প্রদান করার ব্যাপারে একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে। কারণ প্রত্যেকের অঙ্গুলীর রেখাসমূহ অনন্য , অদ্বিতীয়। প্রতিটি মানুষ , জীবিত কিংবা কোন কালে জীবিত ছিল , এরূপ প্রত্যেকেরই একসেট অনন্য রেখাঙ্গুলী রয়েছে।

আর তাই অঙ্গুলীর রেখাসমূহকে মানুষের পরিচয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে একচেটিয়াভাবে গ্রহন করে নেয়া হয়েছে আর এ উদ্দেশ্যেই তা পৃথিবীর সর্বত্র ব্যবহার করা হয়।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি যে কেবল গত ঊনবিংশ শতাব্দিতে অঙ্গুলির ছাপের বৈশিষ্ট্যগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে। এর আগে মানুষ এগুলোকে কোন গুরুত্বহীন সাধারণ বক্ররেখা হিসেবেই জানতো। কিন্তু কোরআনে এই অঙ্গুলী রেখাসমূহের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যা সে সময়ে কারো মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি এবং আল্লাহ এই গুরুত্বটির প্রতি আমাদের মনোযোগ দেয়ার জন্য আহ্বান করেছেন যে গুরুত্বের কথা অবশেষে আমাদের কালে মানুষ বুঝতে পারছে।

কোরআনে ভবিষ্যৎবাণী

ভূমিকা

এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা কোরআন আগেই প্রকাশ করে যেগুলো পরে ভবিষ্যতে সত্যি সত্যি ঘটেছিল-এটিও কোরআনের অলৌকিকত্বের একটি দিক। উদাহরণ স্বরূপ সূরা ফাতহ্ এর ২৭ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের এই সুসংবাদ দেন যে তখনকার দিনে র্পৌত্তলিকদের দখলকৃত মক্কা অচিরেই মুসলমানেরা জয় করে নেবে :

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছেন স্বপ্নটি যথাযথভাবে। অবশ্যই তোমরা আল্লাহর ইচ্ছায় মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে , তখন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মাথা মুড়াতে থাকবে এবং কেউ কেউ চুল কাটতে থাকবে। তোমাদের কোন প্রকার ভয় থাকবে না । আল্লাহ জানেন যা তোমরা জান না। আর তিনি তোমাদেরকে এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার পূর্বে এক আশু বিজয় দিলেন। ( কোরআন , ৪৮ : ২৭ )

আরো গভীরভাবে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে , আয়াতটি কিন্তু মক্কা বিজয়ের পূর্বে আরেকটি বিজয়ের সংবাদ ঘোষণা করে। বাস্তবিকই মুসলমানরা আয়াতটির ঘোষণার মতোই মক্কা বিজয়ের পূর্বে প্রথমে ইহূদিদের দখলকৃত খাইবার দুর্গ দখল করে নেয় এবং তারপর মক্কায় প্রবেশ করে।

যে ঘটনাগুলো ভবিষ্যতে ঘটবে , আগে ভাগেই এদের ঘোষণা করা কোরআনের প্রাজ্ঞতার এক টুকরা উদাহরণ মাত্র। কোরআনের কথা যে অসীম জ্ঞানবান আল্লাহরই বাণী এই সাক্ষ্যও দিচ্ছে এই ব্যাপারটি। বাইজেন্টাইনের পরাজয়ের কথা ভবিষ্যতে ঘটে যাওয়া অন্যান্য ঘটনার মতো একটি যা কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছিল যেগুলো সে সময়কার মানুষের পক্ষে কোন ভাবেই জানা সম্ভব ছিল না। এই ঘটনার সবচাইতে কৌতুহলের ব্যাপারটি এই যে রোমানরা পৃথিবীর সবচাইতে নিম্নতম অঞ্চলে পরাজয় বরণ করে ছিল - পরবর্তী তে ব্যাপারটি বিস্তারিত বর্ণনা করা হবে। এটি মজার যে এখানে সর্বনিম্ন পয়েন্টের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সে আমলের প্রযুক্তি দিয়ে এমন একটি মাপযোখ করে পৃথিবীর নিম্নতম অঞ্চল নির্ধারণ একেবারে স্পষ্টভাবেই অসম্ভব ব্যাপার ছিল। এসবই মানব জাতির উদ্দেশ্যে মহাজ্ঞানী আল্লাহ সোবহানাল্লাহু তাআলার প্রকাশিত বাণী।

বাইজেন্টাইনদের বিজয়

কোরআন নাযিলের আরেকটি আশ্চর্য ঘটনা এই যে সূরা রূমের প্রথম আয়াতে বাইজেন্টাইন সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী করা হয়েছে। পরবর্তী রোমান সাম্রাজ্যের পূর্বদিকের একটি অংশই হলো বাইজেন্টাইন। উক্ত আয়াতগুলোতে উল্লেখ করা হয় যে , বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য একটি পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছিল ঠিকই কিন্তু শীঘ্রই জয়ের মুখ দেখবে।

আলিফ লাম মীম

রোমকরা পরাজিত হয়েছে ,

এক নিম্নতম স্থানে এবং তারা তাদের এ পরাজয়ের পর অতি সত্বর জয়লাভ করবে , তিন থেকে নয় বছরের মধ্যে। পূর্বের ও পরের ফয়সালা আল্লাহরই। আর সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে। (কোরআন , ৩০ : ১ -৪)

মৃতসাগরের তলানি যেখানে বাইজেন্টিনরা পারস্যদের হাতে পরাজয় বরণ করে। উপরে এলাকাটির একটি উপগ্রহ চিত্র দেখা যাচ্ছে। লূত হ্রদের এলাকা , পৃথিবীর সবচাইতে নিম্নতম এই এলাকাটি সমুদ্র পৃষ্ঠের ৩৯৫ মিটার নিম্নে অবস্থিত ।

র্পৌত্তলিক পারস্যদের হাতে বাইজেন্টাইন খৃষ্টানদের গুরুতর পরাজয় বরণ করার ৭ বছর পরে , ৬২০ সনে উক্ত আয়াতগুলো নাযিল হয়েছিল। বাইজেন্টাইনরা খুব অল্প সময়ের মাঝেই বিজয় ছিনিয়ে নেবে আয়াতগুলোতে তাই বর্ণিত হয়েছিল। সত্যি বলতে কি , বাইজেন্টাইনরা কেবল মারাত্মক পরাজয়ই বরণ করেনি , এমনকি এটির টিকে থাকাই যেখানে অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছিল সেখানে জিতার কথা বাদই দিতে হয়। কেবল পারস্যরাই নয় , মারাত্মক ভীতির কারণ হিসেবে আরও বিদ্যমান ছিল আভারস , স্লাভ , আর লম্বার্ডরা। আভারস্ কন্সটান্টিনোপোলের দেয়াল পর্যন্ত এসে গিয়েছিল। বাইজেন্টাইন সম্রাট হেরাক্লিয়াস গির্জাসমূহের স্বর্ণ , রৌপ্যগুলো গলিয়ে মুদ্রা বানিয়ে তার বাহিনীদের খরচ মেটানোর আদেশ দিলেন। এগুলোও যখন অপর্যাপ্ত মনে হলো তখন এমনকি ব্রোঞ্জের মূর্তিগুলো গলিয়ে মূদ্রা বানানো হলো। বহু গভর্ণর হেরাক্লিয়াসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল আর তার সাম্রাজ্য ছিল পতনের মুখে। আগের বাইজেন্টাইনের অধীনস্ত রাষ্ট্র , যেমন , মেসোপটেমিয়া , সিলিসিয়া , সিরিয়া , পেলেস্টাইন , মিসর , আর্মেনিয়া তখন মূর্তিপূজক পারস্যদের অধীনস্ত হয়ে গিয়েছিল। ২০

স্বল্প কথায় সকলেই মনে করছিল যে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে। ঠিক সেই মুহূর্তে সূরা রূমের প্রথম কয়েকটি আয়াত নাযিল হয় , যাতে ঘোষিত হয়েছিল যে , কয়েক বছরের মাথায় বাইজেন্টাইনরা বিজয় ছিনিয়ে নেবে। কিন্তু বিজয় তখন এমনি অসম্ভব ছিল যে , বহু -ঈশ্বরবাদী আরবরা আয়াত কয়টি নিয়ে পরিহাস শুরু করে দিল। তারা ভেবেছিল যে কোরআনের এই বিজয়ের ঘটনা কখনও সত্যি হবে না।

সূরা রূমের প্রথম আয়াতখানা নাযিলের সাত বছর পরে ৬২৭ সনের ডিসেম্বরে বাইজেন্টাইন আর পারস্যদের মাঝে একটি চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হল নিনেভেহতে। এই সময় আশাতীতভাবে বাইজেন্টাইনরা পারস্যদের পরাজিত করল। কয়েক মাস পরে পারস্যরা বাইজেন্টাইনদের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হল , যারই ফলে তাদেরকে নিজেদের দখল করা অংশগুলো হতে হটতে বাধ্য হয়েছিল।২১

অবশেষে আল্লাহ তাআলার ঘোষণাকৃত রোমকদের বিজয় বাণীটি অলৌকিকভাবে সত্য হয়ে গিয়েছিল।

উক্ত আয়াতটির আরেকটি অলৌকিক বিষয় হলো ভৌগলিক বিষয় সম্বন্ধে একটি ঘোষণা যা তখনকার মানুষের পক্ষে জানতে পারা সম্ভব ছিল না।

সূরা রূমের তৃতীয় আয়াতে আমরা আরো অবগত হই যে , রোমানরা পৃথিবীর সবচেয়ে নিম্ন এলাকায় পরাজিত হয়েছে। আদনা আল আরব এই অভিব্যক্তিটি বহু অনুবাদে পাশ্ববর্তী স্থান হিসেবে অনূদিত হয়েছে। কিন্তু এটি মূল বক্তব্যের আক্ষরিক অর্থ না হয়ে বরং আলঙ্করিক অর্থ প্রকাশ করেছে। আরবীতে আদনা শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে দেনি শব্দ থেকে যার মানে হলো নীচু , আর আরদ্ শব্দের অর্থ পৃথিবী। তাই আদ্না আল আরদ্ এর প্রকাশ ভঙ্গীটির অর্থ হলো পৃথিবীর নিম্নতম এলাকা

সবচেয়ে কৌতূহলের বিষয় হলো বাইজেন্টাইন আর পারস্যের যে যুদ্ধে বাইজেন্টাইনদের পরাজয় হয় আর ফলে তারা জেরুজালেমের উপর অধিকার হারিয়ে ফেলে সেই যুদ্ধেরই একটি অতি সংকটপূর্ণ পর্যায় সত্যি ঘটেছিল পৃথিবীর একটি নিম্নতম এলাকায়। বিশেষ এই এলাকাটি হলো মৃত সাগরের বেসিন বা গহ্বরে যা কিনা সিরিয়া , পেলেস্টাইন আর জর্দানের ভূভাগের ছেদন বিন্দুতে বিদ্যমান। সমুদ্র পৃষ্ঠের ৩৯৫ মিটার নিম্নের এই মৃত সাগরটি আসলেই ভূ-পৃষ্ঠের সর্বনিম্নাঞ্চল।

তার মানে হলো যে কোরআনে যেমন উল্লেখ রয়েছে ঠিক তেমনভাবেই বাইজেন্টাইনরা বিশ্বের সর্বনিম্ন এলাকায় হেরে গিয়েছিল।

মজার ব্যাপারটি হলো এই যে , কেবল মাত্র আধুনিককালের পরিমাপক প্রযুক্তি দিয়েই মৃত সাগরের গভীরতা মাপা যেতে পারে। এর আগে পৃথিবীপৃষ্ঠের সর্বনিম্ন এলাকাটি কোথায় বা কোনটি তা জানা সম্ভব ছিল না। কিন্তু কোরআনে উল্লেখ হয়েছে যে এটি পৃথিবীর সর্বনিম্ন এলাকা। এ ব্যাপারটি আবারো সাক্ষ্য দিচ্ছে যে কোরআন একটি স্বর্গীয় ধর্মগ্রন্থ।