বিচারবুদ্ধি ও কোরআনের দৃষ্টিতে ‘আালামে বারযাখ্

বিচারবুদ্ধি ও কোরআনের দৃষ্টিতে ‘আালামে বারযাখ্0%

বিচারবুদ্ধি ও কোরআনের দৃষ্টিতে ‘আালামে বারযাখ্ লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

বিচারবুদ্ধি ও কোরআনের দৃষ্টিতে ‘আালামে বারযাখ্

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 20503
ডাউনলোড: 3122

বিচারবুদ্ধি ও কোরআনের দৃষ্টিতে ‘আালামে বারযাখ্
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 18 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 20503 / ডাউনলোড: 3122
সাইজ সাইজ সাইজ
বিচারবুদ্ধি ও কোরআনের দৃষ্টিতে ‘আালামে বারযাখ্

বিচারবুদ্ধি ও কোরআনের দৃষ্টিতে ‘আালামে বারযাখ্

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

মৃত্যুপারের জীবন সম্পর্কে মানুষের ঔৎসুক্য চিরন্তন। এ ঔৎসুক্যের পরিপূর্ণ নিবৃত্তি জীবদ্দশায় সাধারণ মানুষের জন্য সম্ভব নয় জেনেও মানুষ কখনোই এ বিষয়ে জানার আগ্রহ পরিত্যাগ করতে পারে না। এ ব্যাপারে বিভিন্ন ধর্মে যেমন বিভিন্ন ধারণা দেয়া হয়েছে, তেমনি এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্য ও কল্পনা। তাই এ ব্যাপারে সম্ভব সর্বাধিক মাত্রায় সঠিক ধারণার প্রয়োজনীয়তা সব সময়ই অনুভূত হয়ে আসছে।

ইসলামী মতে, সাধারণভাবে মৃত্যুপরবর্তী সময়ের দু’টি পর্যায় রয়েছে : মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত সময় এবং পুনরুত্থান পরবর্তী সময় অর্থাৎ শেষ বিচার ও তদ্পরবর্তী জান্নাতী বা জাহান্নামী অনন্ত জীবন। পুনরুত্থান, শেষ বিচার এবং বেহেশত বা দোযখ বাস তথা আখেরাতের ওপর ঈমান পোষণ ইসলামের মৌলিক চৈন্তিক ভিত্তি (উছূলে ‘আক্বাএদ্)-এর অন্যতম। এ কারণে এ সম্পর্কে কোরআন মজীদে বিস্তারিত বক্তব্য রয়েছে।

আালামে বারযাখে নাফ্স্ - এর কর্মতৎপরতা

‘ আালামে বারযাখ্ ঘুমের জগত নয় , বরং জাগ্রত জগত - যেখানে কেউ বারযাখী বেহেশতের নে ‘ আমতের দ্বারা পুরষ্কৃত হচ্ছে ও কেউ বারযাখী দোযখে শাস্তিপ্রাপ্ত হচ্ছে যদিও সে পুরষ্কার ও শাস্তির মাত্রা শেষ বিচার পরবতী পুরষ্কার ও শাস্তির তুলনায় যৎকিঞ্চিত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে , আালামে বারযাখে নাফ্স্ সমূহ কি শুধু নীরবে পুরষ্কার ও শাস্তি ভোগ করছে , নাকি সেখানে তাদের কোনো ধরনের কর্মতৎপরতাও আছে ?

বলা বাহুল্য যে , আালামে বারযাখ্ বস্তুজগত নয় , সুতরাং সেখানে আমাদের পার্থিব জগতের ন্যায় রূযী-রোযগার এবং অর্থনৈতিক , সামাজিক , রাজনৈতিক , পারিবারিক ও অন্যান্য ধরনের পার্থিব কর্মকাণ্ড থাকার প্রশ্ন ওঠে না। তাহলে কি সে জগত একটি নীরব ও নিষ্ক্রিয় জগত ? কোরআন মজীদের আয়াত থেকে তা প্রমাণিত হয় না। কোরআন মজীদ থেকে জানা যায় যে , ঐ জগতে যে ধরনের কর্মতৎপরতা সম্ভব নাফ্স্ সমূহের সে ধরনের কর্মতৎপরতা রয়েছে ; সেখানে ভালো অবস্থায় থাকা নাফ্স্ সমূহ আনন্দ প্রকাশ করে থাকে এবং এ থেকে প্রমাণিত হয় যে , স্বভাবতঃই খারাপ অবস্থায় থাকা নাফ্স্ সমূহ শাস্তিপ্রাপ্তির কারণে আফ্সোস্ করে থাকে।

আল্লাহ্ তা আলা এরশাদ করেন :

) وَلا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ. فَرِحِينَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِالَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا بِهِمْ مِنْ خَلْفِهِمْ أَلا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ. يَسْتَبْشِرُونَ بِنِعْمَةٍ مِنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ وَأَنَّ اللَّهَ لا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُؤْمِنِينَ(

“ আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে করো না ; বরং তারা তাদের রবের কাছে জীবিত ও রিয্ক্ব্প্রাপ্ত হচ্ছে। আল্লাহ্ স্বীয় অনুগ্রহ থেকে তাদেরকে যা দিয়েছেন সে কারণে তারা আনন্দিত এবং তাদের পিছনে যারা রয়েছে - যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয় নি , তাদের জন্য তারা আনন্দ প্রকাশ করে , কারণ , তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্বত হবে না। তারা আল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্ত নে ‘ আমত ও অনুগ্রহের জন্য এবং এ কারণে যে , আল্লাহ্ মু ’ মিনদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না , আনন্দ প্রকাশ করে থাকে। ” (সূরাহ্ আালে ইমরান্ : ১৬৯-১৭১)

এ থেকে সুস্পষ্ট যে , আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তিগণ আালমে বারযাখে আল্লাহ্ তা আলার নে ‘ আমত্ ও অনুগ্রহ লাভের কারণে এবং দুনিয়ার বুকে থেকে যাওয়া নেক বান্দাহদের জন্য আনন্দ প্রকাশ করেন। সুতরাং এতে সন্দেহ নেই যে , সেখানে আল্লাহ্ তা আলার নে ‘ আমত্ ও অনুগ্রহ লাভকারী সকলেই এভাবে আনন্দ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে তাঁদের চেয়ে অধিকতর উচ্চ মর্যাদার অধিকারী নবী-রসূলগণ ( আঃ) ও মা ‘ ছ্বূম্ ইমামগণ (আঃ) , ছ্বিদ্দীক্ব্গণ , শহীদগণ ও ছ্বালেহ্ বান্দাহ্গণ স্বাভাবিকভাবেই আরো বেশী নে ‘ আমত ও অনুগ্রহ লাভ করেন এবং এ কারণে আনন্দ প্রকাশ করবেন এটাই স্বাভাবিক।

প্রশ্ন হচ্ছে , এভাবে আনন্দ প্রকাশ করা ছাড়াও আালমে বারযাখে তাঁদের আরো কোনো ধরনের কর্মতৎপরতা আছে কিনা।

হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর মি ‘ রাজ্-এর ঘটনাবলী প্রসঙ্গে ইসলামের সকল ধারার বর্ণনার মধ্যে যে সব বিষয় অভিন্ন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই যে , তাঁর ইমামতীতে অতীতের সমস্ত নবী-রাসূল ( আঃ) নামায আদায় করেছিলেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে , আালমে বারযাখে আল্লাহ্ তা আলার হামদ ও নামায আদায় করা সম্ভব। যদিও সেখানকার এ সব আমল ব্যক্তির আমলনামায় - যার ভিত্তিতে শেষ বিচারের দিনে বিচার করা হবে - যোগ হবে না , তথাপি , কেবল নবী-রাসূলগণের ( আঃ) নাফ্স্ নয় , আল্লাহ্ তা আলার নেক বান্দাহদের সকলের নাফ্স্ই সেখানে হামদ ও নামায আদায় করে আল্লাহ্ তা আলার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবেন এটাই স্বাভাবিক।

আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে এই যে , আালামে বারযাখের নেককার অধিবাসীগণ এ পার্থিব জগতের অধিবাসীদের জন্য কল্যাণকর হয়ে থাকে এমন কোনো কর্মতৎপরতা চালাতে পারেন কিনা ? এর মানে হচ্ছে , তাঁরা পার্থিব জগতের অধিবাসীদের জন্য আল্লাহ্ তা আলার কাছে কোনো ধরনের সুপারিশ করতে পারেন কিনা ?

এর জবাবও ইতিবাচক। কারণ , তাঁদের আমল তাঁদের নিজেদের আমলনামায় যোগ হবার সুযোগ না থাকলেও যেহেতু তাঁদের সক্রিয়তা প্রমাণিত বিষয় সেহেতু পার্থিব জগতের অধিবাসীদের জন্য তাঁদের মধ্যকার উপযুক্ত ব্যক্তিগণ কর্তৃক আল্লাহ্ তা আলার কাছে দো ‘ আ বা সুপারিশ করার সুযোগ না থাকার কোনো কারণ নেই। অবশ্য সে দো ‘ আ ও সুপারিশ কবূল করা বা না করা একান্তভাবেই আল্লাহ্ তা আলার ইচ্ছা।

আল্লাহ্ তা আলা হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)কে সম্বোধন করে এরশাদ করেন :

) وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلاتَكَ سَكَنٌ لَهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ(

“ (হে রাসূল!) আপনি তাদের জন্য দো ‘ আ করুন ; নিঃসন্দেহে আপনার দো ‘ আ তাদের জন্য সান্ত্বনাস্বরূপ। ” (সূরাহ্ আত্-তাওবাহ্ : ১০৩)

আল্লাহ্ তা আলা হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)কে সম্বোধন করে আরো এরশাদ করেন :

) فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ(

“ সুতরাং (হে রাসূল!) তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ইস্তগ্বফার্ করুন। ” (সূরাহ্ আালে ইমরান্ : ১৫৯)

অন্যত্র এরশাদ হয়েছে :

) وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا(

“ তারা যখন নিজদের ওপর যুলুম করলো (গুনাহ্ করলো) তখন যদি তারা (হে রাসূল!) আপনার কাছে আসতো , এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতো এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইতেন তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবাহ্ কবূলকারী মেহেরবানরূপে পেতো। ” (সূরাহ্ আন্-নিসা ’ : ৬৪)

যেহেতু হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর নবুওয়াত্ ক্বিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এবং আর কোনো নবীর আগমন ঘটবে না সেহেতু ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল মুসলমানের জন্য তাঁর দো ‘ আ ও ইস্তিগ্বফার্ থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ থাকা অপরিহার্য। বরং যে সব মুসলমান তাঁর সাহচর্য লাভের সৌভাগ্যের অধিকারী হয়েছিলেন তাঁদের তুলনায় পরবর্তীদের জন্য তাঁর দো ‘ আ ও ইস্তিগ্বফারের প্রয়োজন অনেক বেশী। সুতরাং তাঁর ইন্তেকালের পরেও তাঁর কাছে দো ‘ আ ও ইস্তিগ্বফারের জন্য অনুরোধ জানানোর পথে কোনো বাধা থাকতে পারে না।

এখানে প্রশ্ন উঠতে পার যে , আমাদের আবেদন তিনি শুনতে পান কিনা ?

আমরা নামাযের মধ্যে হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)কে সরাসরি সম্বোধন করে সালাম দেই। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে , তিনি তা শুনতে পান। অনুরূপভাবে আমরা নামাযের বাইরেও দুরূদ পাঠের সময় হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)কে সরাসরি সম্বোধন করে সালাম দেই।

বস্তুতঃ পার্থিব জগতের অধিবাসীদের কাছে বাণী পৌঁছানোর পথে যে সব বাধা আছে , আালামে বারযাখের নেককার অধিবাসীরা অবশ্যই সে সব বাধা থেকে মুক্ত। আালামে বারযাখে বস্তুজগতের স্থানিক ব্যবধানের কোনো কার্যকরতা থাকতে পারে না। সুতরাং যখন যে কোনো স্থান থেকে তাঁদের উদ্দেশে কেউ কিছু বললে তা তাঁরা শুনতে পাবেন এটাই স্বাভাবিক। অতএব , নবী করীম (ছ্বাঃ)কে উদ্দেশ করে একই সময় দুনিয়ার যতো জায়গা থেকে যতো লোক সালাম প্রদান করুক তা তিনি সাথে সাথে শুনতে পান।

অনেকে ব্যাখ্যা করেন যে , আমরা হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)কে যে সালাম দেই ফেরেশতা তা তাঁর কাছে পৌঁছে দেয়। কিন্তু এ ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ , এরূপ হলে সম্বোধন করে সালাম না দিয়ে তৃতীয় পুরুষে সালাম দিতে হতো অর্থাৎالسلام عليک يا ايها النبی (হে নবী! আপনার ওপরে সালাম , ...) না বলেالسلام علي النبی (নবীর ওপরে সালাম , ...) বলতে হতো।

এভাবে আালামে বারযাখে থেকে বস্তুজগতের অধিবাসীদের কথা শুনতে পাওয়ার বিষয়টি কেবল হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর জন্য এককভাবে নির্ধারিত কোনো বিষয় নয়। তাই আমরা মুসলমানদের ক্ববরে গিয়ে ক্ববরবাসীদেরকে সম্বোধন করে সালাম দেই , বলি :السلام عليکم يا اهل القبور - হে ক্ববরবাসীগণ! আপনাদের ওপর সালাম। ” এ থেকে প্রমাণিত হয় যে , তাঁরা আমাদের সালাম শুনতে পান।

সুতরাং হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ) এবং অন্যান্য নবী-রাসূল ও আহলে বাইতের মা ‘ ছ্বূম্ ইমামগণ ( আঃ) সহ আল্লাহ্ তা আলার আরো যে সব খাছ্ব্ বান্দাহ্ পার্থিব জীবনে থাকাকালে তাঁদের কাছে দো ‘ আ চাওয়া যেতো এবং তাঁরা লোকদের জন্য দো ‘ আ করতেন তাঁরা আালামে বারযাখের অধিবাসী হবার পরেও তাঁদের কাছে দো ‘ আ চাওয়ায় কোনো বাধা নেই এবং তাঁরা শুনতে পান , যদিও আমরা জানি না আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁরা আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য দো ‘ আ করেছেন কিনা বা করে থাকলে আল্লাহ্ তা কবূল করেছেন কিনা , ঠিক যেভাবে তাঁরা পার্থিব জীবনে থাকাকালে যে সব ক্ষেত্রে দো ‘ আ করতেন আল্লাহ্ তা কবূল করেছেন কিনা তা আমরা জানি না। তবে দো ‘ আ বা সুপারিশ চাওয়ায় কোনোই বাধা নেই।