আল হাসানাইন (আ.)

ছ্বালাত্ পাঁচ ওয়াক্তের দলীল কী?

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

মুসলমানরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ছ্বালাত্ (বহুল প্রচলিত পরিভাষায় ‘নামায’) আদায় করে থাকে এবং সর্বসম্মত মত অনুযায়ী পাঁচ ওয়াক্তে মোট সতর রাক্‘আত্ ছ্বালাত্ আদায় করা ফরয/ ওয়াজিব্ (বাধ্যতামূলক)। এর বাইরে যে কেউ যতো খুশী ছ্বালাত্ আদায় করুক তা ঐচ্ছিক; তাতে ছাওয়াব্ আছে; আদায় না করলে গুনাহ্ নেই।

কিন্তু এই সর্বসম্মত ও বিতর্কাতীত বিষয়টিতেও কিছু লোক প্রশ্ন তুলছে। তাদের কথা হচ্ছে, কোরআন মজীদে পাঁচ ওয়াক্ত ছ্বালাতের উল্লেখ নেই, সুতরাং এর কোনো ভিত্তি নেই। এর জবাবে যখন বলা হয় যে, হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ) পাঁচ ওয়াক্ত ছ্বালাত্ আদায় করেছেন ও আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে হাদীছ থেকে প্রমাণিত তখন বলা হয় যে, হাদীছ অকাট্য নয়, কোরআনই অকাট্য, আর নবী করীম (ছ্বাঃ) কোরআনের বাইরে কোনো কথা বলেন নি এবং কোরআন ‘বিস্তারিত’ গ্রন্থ, সুতরাং এর বাইরে কোনো কিছু গ্রহণযোগ্য নয়। এদের মধ্যে কারো কারো মতে, ছ্বালাত্ অনবরত আদায় করতে হবে। কিন্তু ছ্বালাতের নিয়ম-কানূন্ সম্পর্কে তারা কিছু বলে না। তাদের কথায় মনে হয় যে, ছ্বালাতের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানূন্ নেই; যার যেমন ইচ্ছে ছ্বালাত্ আদায় করলেই হলো।

এ ধরনের লোকেরা এভাবে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে তা কি উদ্দেশ্যমূলকভাবে, নাকি অজ্ঞতাবশতঃ, নাকি দ্বীনী ‘ইলমের ধারক-বাহকদের কতক ভুল থেকে সৃষ্ট সংশয়ের কারণে - তা বলা সম্ভব নয়, তবে অকাট্য দলীলের দ্বারা এ বিভ্রান্তির নিরসন করা অপরিহার্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি যথাযথভাবে করতে দেখা যাচ্ছে না। এখানে আমরা এ বিভ্রান্তি নিরসনেরই চেষ্টা করবো।

আলোচনার শুরুতেই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, যে কোনো ভাষায়ই একটি শব্দের একাধিক আভিধানিক ও পারিভাষিক তাৎপর্য থাকতে পারে। আরবী ভাষায় “ছ্বালাত্” শব্দেরও একাধিক তাৎপর্য আছে এবং কোরআন মজীদেও এ পরিভাষাটি একাধিক তাৎপর্যে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন : আল্লাহ্ ও ফেরেশতাগণ হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর ওপর ছ্বালাত্ করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া নবী করীম (ছ্বাঃ) কে মু’মিনদের জন্য ছ্বালাত্ (দো‘আ) করতে বলা হয়েছে। এখানে আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মুসলমানরা দৈনন্দিন যে বিশেষ কাঠামোর পাঁচ ওয়াক্ত ছ্বালাত্ আদায় করে থাকে তা-ই।

এ প্রসঙ্গে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় যে, ইসলামী জ্ঞান ও বিধি-বিধানের অকাট্য সূত্র চারটি : ‘আক্ব্ল্, কোরআন মজীদ, মুতাওয়াতির্ হাদীছ এবং ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমানদের অভিন্ন আমল ও মত।

‘আক্ব্ল্ এ কারণে অকাট্য সূত্র যে, একজন মানুষ ‘আক্বলের দ্বারা বিচার-বিবেচনা করেই ইসলাম গ্রহণ করে। সুতরাং ‘আক্ব্ল্ হচ্ছে ইসলাম-গৃহের ভিত্তি। কোরআন মজীদে ‘আক্বলের ব্যবহারের ওপর বার বার গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া আল্লাহ্ তা‘আলা এ-ও বলেছেন যে, তিনি ভালো-মন্দের মৌলিক ধারণা নাফ্স্ (ব্যক্তিসত্তা)-এর মধ্যে অনুপ্রাণিত করে দিয়েছেন। সুতরাং সুস্থ ‘আক্ব্ল্ যা কিছুকে করণীয় ও বর্জনীয় বলে রায় দেয় তা অবশ্যই করণীয় ও বর্জনীয়। তাছাড়া কোরআন মজীদের ব্যাখ্যায়, বিশেষতঃ তাৎপর্য গ্রহণে মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে ‘আক্বলের সাহায্য গ্রহণ অপরিহার্য। দ্বিতীয়তঃ যে ব্যক্তি ‘আক্ব্লী ফয়ছ্বালাহর দ্বারা কোরআন মজীদকে আল্লাহর কিতাব্ বলে জানতে পেরে ইসলাম গ্রহণ করেছে সে ব্যক্তির জন্য কোরআন মজীদ অবশ্যই অকাট্য দলীল। তৃতীয়তঃ মুতাওয়াতির্ হাদীছ হচ্ছে তা-ই যা হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর আমল ও কথা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে এবং ছ্বাহাবী থেকে শুরু করে বর্ণনা ধারাক্রমের প্রতিটি স্তরে এতো বেশী সংখ্যক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যাদের পক্ষে মিথ্যা রচনার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ‘আক্বলের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। এর পরেও তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয় যে, এরূপ কোনো বর্ণনা ‘আক্ব্ল্-এর অকাট্য রায় বা কোরআনের সাথে ‘সাংঘর্ষিক’ হতে পারে তাহলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। চতুর্থতঃ ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমানদের অভিন্ন আমল ও মত হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ) থেকে আগত বলে ‘আক্ব্ল্ অকাট্যভাবে রায় প্রদান করে, তা তার পিছনে কোনো মুতাওয়াতির্ হাদীছ থাকুক বা না-ই থাকুক। এতদসত্ত্বেও তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয় যে, এরূপ কোনো মত বা আমল ‘আক্ব্ল্-এর অকাট্য রায় বা কোরআনের সাথে ‘সাংঘর্ষিক’ হতে পারে তাহলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এর বাইরে কম সূত্রে বর্ণিত হাদীছ কেবল উপরোক্ত চার সূত্রের কোনোটির সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়া সাপেক্ষে গৌণ বিষয়াদিতে (মুস্তাহাব্ ও মাকরূহ্) ও প্রায়োগিক বিষয়াদিতে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

এবার আমরা দেখবো যে, কোরআন মজীদের বাইরে অন্য কোনো কিছু গ্রহণযোগ্য কিনা।

আল্লাহ্ তা‘আলা চাইলে একটি লিখিত কোরআন ফেরেশতার মাধ্যমে আসমান থেকে নাযিল করতে পারতেন, তাহলে তা অনেক বেশী মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবার সম্ভাবনা বেশী ছিলো। কিন্তু তা সত্ত্বেও আল্লাহ্ তা‘আলা কেন তা না করে একজন রাসূলের (ছ্বাঃ) মাধ্যমে কোরআন নাযিল করলেন? এ থেকে মানুষের সুস্থ বিচারবুদ্ধি (‘আক্বলে সালীম্) এ উপসংহারে উপনীত হয় যে, মানুষের কাছে আল্লাহর দেয় জ্ঞান ও বিধি-বিধান পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাব্ ছাড়াও ব্যক্তি রাসূলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।

এ ব্যাপারে সংক্ষেপে এতোটুকু বলাই যথেষ্ট বলে মনে হয় যে, কোরআন মজীদ হচ্ছে হেদায়াত্ বা পথনির্দেশক গ্রন্থ এবং এটি কেবল আইন-বিধানের গ্রন্থই নয়, বরং এটি মহাজ্ঞানময় গ্রন্থ; আইন-বিধান এর একটি অংশ মাত্র। এতে যেমন কতগুলো মৌলিক বিধান রয়েছে তেমনি কতক মূলনীতি সন্নিবেশিত হয়েছে। অন্যদিকে কতক প্রায়োগিক বিধি-বিধান ও তার বিস্তারিত দিক প্রণয়নের এখতিয়ার ও দায়িত্ব হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর ওপর অর্পিত হয় - যা তিনি পঠন-উর্ধ ওয়াহীর (ওয়াহীয়ে গ্বায়রে মাত্লূ‘র) সাহায্যে আঞ্জাম দেন।

বস্তুতঃ এটাই স্বাভাবিক ছিলো। কারণ, ক্বিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির জন্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রের ছোট-বড় সকল আইন-বিধান কোরআনে প্রদান করা হলে তার আয়তন এতো বিশাল হতো যে, তা সকল যুগের মানুষের পক্ষে ব্যবহারযোগ্য থাকতো না।

আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ) সম্পর্কে এরশাদ করেন :

وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ

“আর তিনি তাদের জন্য পবিত্র সমূহ হালাল করে দেন এবং তাদের ওপর নোংরা সমূহ হারাম করে দেন।” (সূরাহ্ আল্-আ‘রাফ্ : ১৫৭)

এ থেকে অকাট্যভাবে এটাই প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)কে বিভিন্ন ধরনের বিধি-বিধান প্রণয়নের এখতিয়ার ও দায়িত্ব প্রদান করেন - যা কোরআন মজীদে উল্লেখ করা হয় নি। আর তা-ও তিনি নিজ খেয়াল খুশী মোতাবেক প্রণয়ন করতেন না, বরং ওয়াহীয়ে গ্বায়রে মাত্লূ‘র ভিত্তিতে করতেন। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর সম্পর্কে এরশাদ করেন :

وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى. إِنْ هُوَ إِلا وَحْيٌ يُوحَى.

“আর তিনি স্বীয় প্রবৃত্তি থেকে কথা বলেন না; বস্তুতঃ তা (তিনি যা বলেন) প্রত্যাদেশকৃত ওয়াহী বৈ নয়।” (সূরাহ্ আন্-নাজম্ : ৩-৪)

এবার ছ্বালাত্ প্রসঙ্গে আসা যাক।

আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন :

أَقِمِ الصَّلاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَى غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ

“(হে রাসূল!) ছ্বালাত্ ক্বায়েম রাখুন সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে শুরু করে রাতের অন্ধকার আবৃত করে নেয়া পর্যন্ত এবং প্রত্যুষের কোরআন পাঠ (প্রত্যুষের ছ্বালাতে অপেক্ষাকৃত বেশী কোরআন পাঠ করুন)।” (সূরাহ্ আল্-ইসরা’/ বানী ইসরাঈল্ : ৭৮)

এখানে সাধারণভাবে ছ্বালাতের একটি বৃহত্তর সময় ও প্রত্যুষের সুনির্দিষ্ট সময় নির্দেশ করা হয়েছে। তবে এ থেকে কেউ যেন মনে না করে যে, ফজরের ছ্বালাত্ ছাড়া উপরোক্ত দীর্ঘ সময়ের মধ্যে যে কোনো সময়ে মাত্র একবার ছ্বালাত্ আদায় করলেই চলবে। কারণ, অন্যত্র এরশাদ হয়েছে :

وَأَقِمِ الصَّلاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ

“আর (হে রাসূল!) ছ্বালাত্ ক্বায়েম্ রাখুন দিনের দুই প্রান্তে এবং রাতের প্রান্তভাগে।” (সূরাহ্ হূদ্ : ১১৪)

এ আয়াতের طَرَفَيِ النَّهَارِ (দিনের দুই প্রান্ত) থেকে ফজর ও আছরের ছ্বালাতের ইঙ্গিত মিলে এবং زُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ (রাতের প্রান্তভাগ) থেকে মাগ্বরিবের ছ্বালাতের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। অন্যদিকে পূর্বোদ্ধৃত আয়াতের (সূরাহ্ আল্-ইসরা’/ বানী ইসরাঈল্ : ৭৮) لِدُلُوكِ الشَّمْسِ কথাটির শুরুতে যে لِ ব্যবহৃত হয়েছে তা থেকে এ অর্থ গ্রহণ করা চলে যে, সূর্য হেলে যাওয়ার পর (যোহরের) ছ্বালাত্ আদায়ের মাধ্যমে প্রতি দিনের ছ্বালাত্ আদায়ের উল্লিখিত দীর্ঘ সময়ের সূচনা করতে হবে এবং إِلَى غَسَقِ اللَّيْلِ (রাতের অন্ধকার আবৃত করে নেয়া পর্যন্ত) থেকে এরূপ তাৎপর্য গ্রহণ করা চলে যে, ঐ ওয়াক্তের শেষ প্রান্তে (এশা’র) ছ্বালাত্ আদায়ের মাধ্যমে ছ্বালাতের ঐ দীর্ঘ ওয়াক্তের ছ্বালাত্ শেষ করতে হবে। এভাবে পাঁচ ওয়াক্ত ছ্বালাত্ই প্রমাণিত হয়।

তবে ইসলামের প্রথম যুগের মুসলমানদের অভিন্ন মত ও আচরণ থেকে প্রমাণিত যে, ছ্বালাত্ পাঁচ বার বাধ্যতামূলক হলেও তার ওয়াক্তের ক্ষেত্রে স্থিতিস্থাপকতা আছে। তা হচ্ছে দিনের মধ্যভাগ অতিক্রান্ত হওয়া থেকে শুরু করে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত চার রাক্‘আত্ করে মোট আট রাক্‘আত্ যোহর ও আছরের ছ্বালাত্ এবং সূর্যাস্তের পর থেকে মধ্যরাতে অতিক্রান্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত যথাক্রমে তিন ও চার রাক্‘আত্ মাগ্বরিব্ ও এশা’র ছ্বালাত্ আদায় করতে হবে। আর ফজরের ছ্বালাত্ দুই রাক্‘আত্ ছুবহে ছ্বাদিকের পর থেকে সূর্যোদয়ের পূর্বে আদায় করতে হবে।

যোহর ও আছরের ছ্বালাত্ উপরোক্ত সময়ের মধ্যে যে কোনো সময়ে আদায় করলেই চলবে, নাকি এ দুই ছ্বালাতের ওয়াক্ত সুনির্দিষ্টভাবে বিভক্ত, তেমনি মাগ্বরিব্ এশা’র ছ্বালাতও উল্লিখিত সময়ের মধ্যে যে কোনো সময়ে আদায় করলেই চলবে কিনা সে ব্যাপারে মতপার্থক্য আছে, কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত ও সতর রাক্‘আতের ব্যাপারে মতপার্থক্য নেই। তবে হজ্বের সময় কোনো যরূরী পরিস্থিতি ব্যতীতই যোহর ও আছরের ছ্বালাত্ একই সময় পর পর এবং মাগ্বরিব্ ও এশা’র ছ্বালাত্ একই সময় পর পর আদায় করা হয় - এটা অকাট্য ও সর্বসম্মত।

এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, পাঁচ ওযাক্ত ছ্বালাত্ বর্ণিত সময়ের মধ্যে তিন বারে আদায় করার অনুমতি আছে, যদিও এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, পাঁচ বারে আদায় করা অধিকতর উত্তম। তবে মানুষকে অনেক সময় যে সব যরূরী পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় এবং যে সব দেশে শীতকালে মধ্যাহ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মাত্র চার ঘণ্টা এবং গ্রীস্মকালে সূর্যাস্ত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চার ঘণ্টা সময় পাওয়া যায় সে সব দেশে পাঁচ ওয়াক্ত ছ্বালাত্ পাঁচ বারে আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ে ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে সুস্পষ্ট যে, পাঁচ ওয়াক্ত ছ্বালাত্ তিন বারে আদায়ের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে বান্দাহদের জন্য অনুগ্রহ বৈ নয়।

যা-ই হোক, পাঁচ ওয়াক্তে সতর রাক্‘আত্ ছ্বালাত্ সর্বসম্মত, তেমনি ছ্বালাতের তারতীব্ সহ কয়েকটি অপরিহার্য কাজ, যথা : ওযূ থাকা, মনস্থির (নিয়্যত্), ক্বিবলাহমুখী হওয়া (অসম্ভব না হওয়া সাপেক্ষে), দাঁড়ানো (অসম্ভব না হওয়া সাপেক্ষে), প্রতি রাক্‘আতে সূরাহ্ ফাতেহাহ্ পড়া, রুকূ‘, সিজদাহ্, দ্বিতীয় রাক্‘আত্ ও শেষ রাক্‘আতে বসা এবং বসা অবস্থায় শাহাদাতাইন্, দরূদ পাঠ ও সালাম। এ সব বিষয়ে মতপার্থক্য নেই - যা প্রমাণ করে যে, নবী করীম (ছ্বাঃ) এ সব কাজ অপরিহার্য হিসেবে আঞ্জাম দিয়েছেন। কতক কাজ আছে যেগুলোর ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে - যা প্রমাণ করে যে, নবী করীম (ছ্বাঃ) সম্ভবতঃ কখনো কখনো সে সব কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন এবং যখন আঞ্জাম দিয়েছেন তখন তা অপরিহার্য (ফরয/ ওয়াজিব্) হিসেবে আঞ্জাম দেন নি, সুতরাং সেগুলোতে মতপার্থক্যে কোনো সমস্যা নেই।

এমতাবস্থায় যারা পাঁচ ওয়াক্তে সতর রাক্‘আত্ ছ্বালাত্ ফরয/ ওয়াজিব্ হবার বিষয়টি অস্বীকার করে এবং ছ্বালাতের সর্বসম্মত সুনির্দিষ্ট ধরন ও কাজগুলো প্রত্যাখ্যান করে তাদের মনগড়া ফয়ছ্বালাহ্ অনুযায়ী অবিরত ছ্বালাতের কথা বলে তারা সজ্ঞানে হোক বা অজ্ঞতাবশতঃই হোক ছ্বালাতকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।

 

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)