আল হাসানাইন (আ.)

সন্তানদের সুশিক্ষা ও প্রতিপালন

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

ইসলাম ধর্মে সন্তানের শিক্ষা ও প্রতিপালনের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এ ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্ম পিতা-মাতাকে আইনগতভাবে দায়িত্বশীল বলে বিবেচনা করে।

মহানবী (সা.) বলেছেন :

يلزم الوالدين من العقوق لولدهما ما يلزم الولد لهما من عقوقهما

“নিজ পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের যেমন দায়িত্ব আছে ঠিক তদ্রূপ নিজ সন্তানের প্রতি পিতা-মাতারও দায়িত্ব আছে।”

তিনি আরো বলেছেন :

رحم الله والدين اعانا ولدهما على برّهما

“মহান আল্লাহ্ ঐ পিতা-মাতার ওপর দয়া করুন যারা তাদের নিজ সন্তানকে তাদের ভালো কাজে সাহায্য করে।”

এ দায়িত্বের বোঝা পিতার কাঁধের ওপরই সবচেয়ে বেশি রাখা হয়েছে,এমনকি এ দায়িত্বের বোঝাকে পিতার অধিকার অপেক্ষাও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বলে বিবেচনা করা হয়েছে।

হযরত আলী (আ.) বলেছেন :

إنّ للولد على الوالد حقّا و إنّ للوالد على الولد حقّا

“নিশ্চয়ই পিতার ওপর পুত্রের অধিকার আছে এবং পুত্রের ওপরও পিতার অধিকার আছে।”

পবিত্র ইসলাম ধর্মে শিশুদের শৈশবে শিক্ষা-প্রশিক্ষণ এবং প্রতিপালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছে এ কারণে যে,তা শিশুদের আত্মাকে যে কোন ধরনের শিক্ষা গ্রহণ এবং চারিত্রিক রূপ পরিগ্রহ করার জন্য প্রস্তুত করে তোলে।

হযরত আলী (আ.) বলেন :

و إنّما قلب الحدث كالأرض الخالية ما ألقي فيها من شيء قبلته

“আর নিশ্চয়ই নবীনদের অন্তঃকরণ শূন্য ভূমির মতো; যা কিছু ঐ ভূমিতে বপন করা হবে ঐ ভূমি তা-ই গ্রহণ করবে।”

মহানবী (সা.) সন্তানের জন্য ভালো নাম নির্বাচন,তার সঠিক শিক্ষা ও প্রতিপালনের ব্যবস্থা এবং তার জন্য উপযুক্ত পেশা নির্বাচন করা পিতা-মাতার প্রতিপালন সংক্রান্ত দায়িত্ব-কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করেছেন।

এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-কে বলেছিল :

يا رسول الله : ما حقّ ابنى هذا؟

হে রাসূলুল্লাহ্! (আমার ওপর) আমার এ সন্তানের অধিকার কী?

তখন তিনি বলেছিলেন :

تحسن اسمه و أدبه و ضعه موضعا حسنا

“তুমি তার ভালো নাম রাখবে,তাকে সুন্দর শিষ্টাচার শিক্ষা দেবে এবং তাকে (সমাজে) একটি সুন্দর অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবে (অর্থাৎ তার জন্য সুন্দর পেশা ও কর্ম বাছাই করবে যাতে সে সমাজজীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে)।”

এতে কোন সন্দেহ নেই যে,মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সুন্দর নাম মানুষের মন-মানসিকতা এবং চিন্তাধারার ওপর গভীর ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে; আর মানুষ তার সমগ্র জীবন ধরে এ ধরনের মানসিকতার প্রভাবাধীন থেকে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে,এ প্রভাব দিবারাত্র সবসময় তার সুন্দর নামের কল্যাণেই হয়ে থাকে।

এ কারণেই নাম চয়ন করার ব্যাপারে ইসলাম অধিক সতর্কতাবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছে।

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন :

أصدق الأسماء ما سمى بالعبودية و أفضلها اسماء الانبياء

“সবচেয়ে সত্য ও সঠিক নাম হচ্ছে ঐ সব নাম যা মানুষকে মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করার শিক্ষা দেয়; আবার এগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে মহান নবীদের নাম (কারণ তাঁরা সমুদয় মানবীয় গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এবং ইনসানে কামিলের স্পষ্ট নমুনা)।”

ইমাম বাকের (আ.) আরো বলেছেন :

إنّ أبغض الأسماء إلى الله حارث و مالك و خالد

“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহর নিকট সবচেয়ে অপছন্দনীয় নামসমূহ হচ্ছে হারিস,মালিক ও খালিদ (যে সব নাম মানুষকে একগুঁয়ে,অহংকারী ও গাফেল করে দেয় নিঃসন্দেহে ইসলামে সে সব নাম ঘৃণ্য এবং বর্জনীয়)।”

 

যে সব ব্যক্তির সুন্দর নাম রাখা হয়েছে ইসলাম তাদেরকে সম্মান করে।

মহানবী (সা.) বলেছেন :

إذا سميتم الولد محمّدا فأكرمه و اوسعوا له في المجلس و لا تقبحوا له وجها

“যখন তোমরা কোন শিশুর নাম ‘মুহাম্মদ’ রাখবে তখন তাকে সম্মান করবে। মজলিসে তার জন্য জায়গা খালি করে দেবে এবং তার সামনে (তাকে উদ্দেশ্য করে) মুখ কালো ও কুৎসিত করবে না।”

ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য ইসলাম ধর্ম অসাধারণ গুরুত্ব প্রদান করেছে।

হযরত আলী (আ.) বলেছেন :

و حقّ الولد على الوالد أن يحسن اسمه و يحسن أدبه و يعلّمه القرآن

“আর পিতার ওপর সন্তানের অধিকার হচ্ছে যে,পিতা তার সুন্দর নাম নির্বাচন করবে। তাকে সুন্দর শিষ্টাচার শিখাবে এবং তাকে পবিত্র কোরআন শিক্ষা দেবে।”

ইসলামী শরীয়তে নিম্নোক্ত উপায়ে সন্তানকে শিক্ষা দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে :

حتّى يتم له خمس سنين، ثمّ يقال له أيهما يمينك و أيهما شمالك، فإذا عرف ذلك حوّل وجهه إلى القبلة و يقال له : اسجد ثم يترك حتى يتم له ست سنين، فإذا تم له ست سنين عُلّم الركوع و السّجود حتّى يتم له سبع سنين، فإذا تم له سبع سنين فيل له اغسل وجهك و كفيك فإذا غسلهما قيل له : صلِّ، ثمّ يترك و يتم له تسع فإذا تمت له علم الوضوء و ضرب عليه و امر بالصّلوة و ضرب عليهما

“যখন তার বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ হয়ে যাবে তখন তাকে শিখাতে হবে যে,কোনটি ডান হাত ও কোনটি বাম হাত। অতঃপর যখন সে তা চিনতে পারবে তখন তার মুখমণ্ডল কিবলার দিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে এবং তাকে বলতে হবে : সিজদা করো। এরপর তার বয়স ছয় বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তাকে এ অবস্থার ওপর ছেড়ে দিতে হবে। তার বয়স সাত বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তাকে রুকূ ও সিজদা করার শিক্ষা দিতে হবে। অতঃপর যখন তার বয়স সাত বছর পূর্ণ হবে তখন তাকে বলতে হবে : তোমার মুখমণ্ডল ও দু’হাত ধৌত কর। অতঃপর যদি সে মুখমণ্ডল ও দু’হাত ধৌত করে তখন তাকে বলতে হবে : নামায পড়। এরপর তার বয়স নয় বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তাকে তার এ অবস্থার ওপর ছেড়ে দিতে হবে। যখন তার বয়স নয় বছর পূর্ণ হবে তখন তাকে পূর্ণাঙ্গ ওযূ করার শিক্ষা দিতে হবে এবং তাকে ওযূর ব্যাপারে তার সাথে কঠোর আচরণ করতে হবে (যদি সে ওযূ করতে না চায়) এবং তাকে নামায পড়ার আদেশও দিতে হবে এবং নামাযের ব্যাপারে তার সাথে কঠোর আচরণ করতে হবে (যদি সে নামায না পড়ে)।”১০

ইসলাম তীর নিক্ষেপ করা ও সাঁতার শিখানোর ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছে।

হযরত আলী (আ.) বলেছেন :

قال رسول الله (ص) : علّموا أولادكم السّباحة و الرّماية

“মহানবী (সা.) বলেছেন : তোমাদের সন্তানদেরকে তোমরা সাঁতার ও তীর নিক্ষেপ করা শিখাও।”১১

আরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকেও ইসলাম ধর্ম শিশুদের জীবনের প্রথম সাত বছর খেলাধুলা করার সময়কাল বলে বিবেচনা করে এবং নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে,শিশুদেরকে তাদের জীবনের এ অংশে খেলাধুলা করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।

ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন :

الغلام يلعب سبع سنين و يتعلّم الكتاب سبع سنين و يتعلّم الحلال و الحرام سبع سنين

“শিশু সাত বছর খেলবে,সাত বছর লেখা-পড়া শিখবে। এরপর সাত বছর সে হালাল-হারামের বিধান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে।”১২

তবে প্রকৃতপক্ষে এ সাত বছরকেও (জন্ম থেকে সাত বছর) ইসলাম ধর্মে শিক্ষা ও প্রতিপালনের সময়কালের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়েছে।

মহানবী (সা.) বলেছেন :

من ولد له مولود فليؤذّن في أذنه اليمنى بأذان الصّلوة وليُقم في اليسرى، فإنّها عصمة من الشّيطان الرّجيم

“যার কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তখন যেন সে তার ডান কানে নামাযের আযান এবং বাম কানে ইকামাহ্ পাঠ করে। কারণ এ দু’টি বিষয় বিতাড়িত শয়তান থেকে রক্ষাকবচস্বরূপ।”১৩

এ হাদীসটি আসলে উপরিউক্ত অর্থের দিকে ইঙ্গিত প্রদান করে।

সন্তান যেহেতু যৌবনে তার জীবনের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করে থাকে সেহেতু ইসলাম ধর্ম সন্তানের সুষ্ঠু প্রতিপালন ও শিক্ষার দু’টি পর্যায় বা কাল নির্ধারণ করেছে। জীবনের প্রথম সাত বছর-যা হচ্ছে শিশুর খেলাধুলা করার সময়কাল সেই সাত বছর পূর্ণ হলে এর পরবর্তী দ্বিতীয় সাত বছর জীবন যাপনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করার জন্য পূর্ণরূপে নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর এ দ্বিতীয় সাত বছর পূর্ণ হলে এর পরবর্তী তৃতীয় সাত বছর তাদেরকে অর্ধ স্বাধীনতা প্রদান করে জীবন-যাপন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার সময়কাল বলে নির্ধারণ করা হয়েছে।

মহানবী (সা.) বলেছেন :

الولد سيّد سبع سنين و عبد سبع سنين و وزير سبع سنين

“সন্তানরা জীবনের প্রথম সাত বছর নেতা (পূর্ণ স্বাধীন),দ্বিতীয় সাত বছর দাস এবং তৃতীয় সাত বছর মন্ত্রী।”১৪

 

সন্তানকে ভালোবাসার ব্যাপারে ইসলাম ধর্মে অপরিসীম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

মহানবী (সা.) বলেছেন :

من قبّل ولده كتب الله له حسنة

“যে ব্যক্তি নিজ সন্তানকে চুমো দেবে মহান আল্লাহ্ তার জন্য একটি পুণ্য লিখে রাখবেন।”১৫

এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলতে লাগলো : আমি কখনো আমার সন্তানদেরকে চুমো দেইনি। যখন সে উঠে চলে গেল তখন মহানবী (সা.) উপস্থিত লোকদেরকে বলেছিলেন :

هذا رجل عندي إنّه من أهل النّار

“এ (পাষাণ) লোকটি নিঃসন্দেহে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত।”১৬

 

ক্রন্দনরত ছোট শিশুদেরকে মারতে নিষেধ করা হয়েছে।

মহানবী (সা.) বলেছেন :

لا تضربوا أطفالكم على بكائهم فإنّ بكاءهم أربعة أشهر شهادة أن لا إله إلّا الله و أربعة اشهر الصّلوة على النّبي و أربعة أشهر الدّعاء لوالديه

“তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে কাঁদার জন্য মেরো না। কারণ,(জন্ম থেকে প্রথম) চার মাস বয়স পর্যন্ত তাদের কান্না মহান আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই-এ বিষয়ের সাক্ষ্য,এর পরবর্তী চার মাস বয়স পর্যন্ত তাদের কান্না মহানবী এবং তার আহলে বাইতের ওপর দরুদস্বরূপ এবং এর পরবর্তী চার মাস তাদের কান্না তাদের পিতা-মাতার জন্য দোয়াস্বরূপ।”১৭

 

ইসলামের আদেশ হচ্ছে যথাশীঘ্র পুত্রসন্তানের খতনা করানো।

মহানবী (সা.) বলেছেন :

طهّروا أولادكم يوم السّابع فإنّه أطيب و أسرع لنبات اللّحم

“তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত দিন হলে পবিত্র করবে (অর্থাৎ খতনা করবে)। কারণ,তা হচ্ছে সবচেয়ে পবিত্র ও উত্তম এবং দেহের মাংস দ্রুত বৃদ্ধির কারণ।”১৮

বিজ্ঞান ও দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত যে,মাতৃস্তন্য শিশুদের চারিত্রিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে গভীর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ কারণেই ইসলাম ধর্মে শিশুদের ধাইদের জন্য বিশেষ শর্ত ধার্য করা হয়েছে।

মহানবী (সা.) বলেছেন :

توقّوا على أولادكم من لبن البغيّة و المجنونة فإنّ اللّبن يُعدي

“তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে ব্যভিচারিণী ও পাগল স্ত্রী লোকের স্তন্য পান করানো থেকে বিরত থাক। কারণ,দুধের মাধ্যমে ঐ সব স্ত্রী লোকের দোষ-ত্রুটিগুলো দুগ্ধপোষ্য শিশুর মধ্যে স্থানান্তরিত হয়ে যায়।”১৯

যাতে করে শিশু জন্মগ্রহণের সাথে সাথেই মহান আল্লাহর স্মরণ এবং পবিত্র ইসলাম ধর্মের বাস্তবতার সাথে পরিচিত হতে পারে সেজন্য ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন :

المولود إذا ولد يؤذن في أذنه اليمنى و يقام في اليسرى

“যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তখন তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামাহ্ দিতে হবে।”২০

ইসলাম ধর্ম মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিয়েছে তারা যেন তাদের সন্তানদের আকীকাহ্ করে অর্থাৎ সন্তানের সাদকাস্বরূপ একটি পশু জবেহ করে।

ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন :

العقيقة لازمة لمن كان غنيّا و من كان فقيرا إذا أيسر فعل، فإن لم يقدر على ذلك فليس عليه... و كلّ مولود يرتهن بعقيقته

“যে ধনী তার জন্য আকীকাহ্ অত্যাবশ্যক। আর যে দরিদ্র সে যখন সচ্ছল হবে তখন তার আকীকাহ্ নিজে দেবে,আর যদি আকীকাহ্ দেয়ার সামর্থ্য তার না থাকে তাহলে তার ওপর কোন কিছু অত্যাবশ্যক হবে না।... প্রত্যেক নবজাতকের আকীকার দায়দায়িত্ব তার নিজের ওপর।”২১

আর এভাবেই ইসলাম ধর্ম নবজাতক শিশুর অস্তিত্বকে দুঃস্থ ও অভাবীদের সাহায্যের মাধ্যম করে দিয়েছে।

শিশুদের মন-প্রাণ সবসময় প্রাণবন্ত,উচ্ছল ও প্রফুল্ল রাখার জন্য এবং তাদেরকে মনস্তাত্ত্বিক বিকৃতি ও মানসিক সমস্যা থেকে নিরাপদ রাখার জন্য ইসলাম ধর্ম এক শিশু সন্তানের ওপর আরেক শিশু সন্তানকে অগ্রাধিকার প্রদান করার ব্যাপারে নিষেধ করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,শিশুদের মানসিক বিকৃতি ও সমস্যা তাদের মধ্যে অসমতা বিধান থেকেই উদ্ভূত হয়ে থাকে।

মহানবী (সা.) বলেছেন :

اعدلوا بين أولادكم كما تحبّون أن يعدلوا بينكم في البرّ و اللّطف

“যেমন তোমরা পছন্দ কর যে,তোমাদের সন্তানেরা তোমাদের মাঝে সদাচরণ ও দয়া করার ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করুক,ঠিক তেমনি তোমরা তাদের (তোমাদের সন্তানদের) মাঝে ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করবে।”২২

তবে জাহেলী যুগের নিন্দনীয় চিন্তা ও ধ্যান-ধারণার মোকাবিলায় ইসলাম কন্যাসন্তানদেরকে পুত্রসন্তানদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়ার অনুমতি দিয়েছে। উল্লেখ্য যে,জাহেলী চিন্তাধারা অনুসারে সে যুগে কন্যাসন্তানদেরকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো যা ছিল অত্যন্ত ঘৃণ্য ও ক্ষমার অযোগ্য কুপ্রথা।

মহানবী (সা.) বলেছেন :

من دخل السّوق فاشترى تحفة فحملها إلى عياله كان كحامل صدقة إلى قوم محاويج و ليبدء بالاناث قبل الذّكور فإنّه من فرّح ابنته فكأنّما أعتق رقبة من ولد إسماعيل

“যে ব্যক্তি বাজারে গমন করে একটি উপহার সামগ্রী ক্রয় করে তা পরিবারের কাছে নিয়ে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একদল দুঃস্থ ও অভাবীর কাছে দান-সাদাকাহ্ বহন করে নিয়ে যায়। সে যেন পুত্রসন্তানদের পূর্বে প্রথমে কন্যাসন্তানদেরকে দিয়ে ঐ উপহার থেকে দেয়া শুরু করে (অর্থাৎ কন্যাসন্তানদের আগে প্রদান করে)। তাই যে ব্যক্তি নিজ কন্যাসন্তানকে সন্তুষ্ট করবে সে যেন হযরত ইসমাঈলের বংশোদ্ভূত কোন দাসকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করল।”২৩

তথ্যসূত্র :

 ১.   ফুরুউল কাফী,২য় খণ্ড,পৃ. ৯৪।

 ২.   ফুরুউল কাফী,২য় খণ্ড,পৃ. ৯৪।

 ৩. নাহজুল বালাগাহ্,পৃ. ১২৬৪।

 ৪. নাহজুল বালাগাহ্,পৃ. ৯০৩।

 ৫.  ফুরুউল কাফী,২য় খণ্ড,পৃ. ৮৬।

 ৬.  ফুরুউল কাফী,২য় খণ্ড,পৃ. ৮৬।

 ৭. ফুরুউল কাফী,২য় খণ্ড,পৃ. ৮৭।

 ৮.  ওয়াসাইলুশ শিয়া,৩য় খণ্ড,পৃ. ১২৩।

 ৯.  নাহজুল বালাগাহ্,পৃ. ১২৬৪।

১০.   মাকারিমুল আখলাক,পৃ. ২৪৫।

১১.   ফুরুউল কাফী,২য় খণ্ড,পৃ. ৯৪।

১২.   ফুরুউল কাফী,২য় খণ্ড,পৃ. ৯৪।

১৩.   ফুরুউল কাফী,২য় খণ্ড,পৃ. ৮৮।

১৪.   মাকারিমুল আখলাক,পৃ. ২৫৫।

১৫.   ফুরুউল কাফী,২য় খণ্ড,পৃ. ৯৫।

১৬.   ফুরুউল কাফী,২য় খণ্ড,পৃ. ৯৫।

১৭.   ওয়াসাইলুশ শিয়া,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৩০।

১৮.   ওয়াসাইলুশ শিয়া,৩য় খণ্ড,পৃ. ১২৮

১৯.   ওয়াসাইলুশ শিয়া,৩য় খণ্ড,পৃ. ১২৮।

২০.   মাকারিমুল আখলাক,পৃ. ১৬১।

২১.   মাকারিমুল আখলাক,পৃ. ২৬০।

২২.   মাকারিমুল আখলাক,পৃ. ২৫২।

২৩.  মাকারিমুল আখলাক,পৃ. ২৪৫।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)