আল হাসানাইন (আ.)

সূরা আল আনফাল;(৩য় পর্ব)

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

সূরা আল আনফাল; আয়াত ১০-১৪

সূরা আনফালের ১০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

 

وَمَا جَعَلَهُ اللَّهُ إِلَّا بُشْرَى وَلِتَطْمَئِنَّ بِهِ قُلُوبُكُمْ وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

 

“আল্লাহ এটা করেন শুভ সংবাদ দেয়ার জন্য এবং এই উদ্দেশ্যে যাতে তোমাদের মন প্রশান্তি লাভ করে এবং সাহায্য তো শুধু আল্লাহর নিকট থেকেই আসে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।” (৮:১০)

এই সূরার ৯ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছিল, বদরের যুদ্ধে মহান আল্লাহ মুসলমানদেরকে সাহায্য করার জন্য ফেরেশতা পাঠিয়েছিলেন। অনেকেই মনে করেন ফেরেশতারা বদর যুদ্ধে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তবে, মুফাসসিরদের আরেকটি দল মনে করে থাকেন, ফেরেশতারা অস্ত্র নিয়ে মুসলমানদের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হননি, তারা মুসলমানদেরকে মনোবল যুগিয়েছেন। ঈমানি শক্তিতে তাদের অন্তরকে বলিয়ান করেছিলেন। মুসলমানদের এই ঈমানি শক্তির কারণেই তারা বিশাল কাফের বাহিনীর বিরুদ্ধে বদরের যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলেন। এই  আয়াতেও এ কথাই বলা হয়েছে। আল্লাহতালা মুসলমানদের মানসিক শক্তি, উদ্যম ও জয়লাভের ব্যাপারে আশাবাদী করার জন্য সাহায্য  হিসেবে ফেরেশতাদেরকে পাঠিয়েছিলেন।

এই সূরার ১১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

 

 إِذْ يُغَشِّيكُمُ النُّعَاسَ أَمَنَةً مِنْهُ وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُمْ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً لِيُطَهِّرَكُمْ بِهِ وَيُذْهِبَ عَنْكُمْ رِجْزَ الشَّيْطَانِ وَلِيَرْبِطَ عَلَى قُلُوبِكُمْ وَيُثَبِّتَ بِهِ الْأَقْدَامَ

 

“স্মরণ কর, তিনি তার পক্ষ থেকে স্বস্তির জন্য তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেছিলেন এবং আকাশ থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলেন   তোমাদেরকে পবিত্র করার জন্য, শয়তানের কুমন্ত্রণা অপসারণের জন্য, তোমাদের হৃদয় দৃঢ় করার জন্য এবং তোমাদের পা স্থির রাখার জন্য।” (৮:১১)

কোনো  কোনো বর্ণনায় দেখা যায়, মুসলমানরা বদর প্রান্তরে পৌঁছে যখন দেখলেন প্রতিপক্ষ কাফের বাহিনী সংখ্যায় এবং অস্ত্রশস্ত্রে তাদের চেয়ে তিনগুণ বেশি হবে, তখন মুসলিম বাহিনীর অনেকেই বিশেষ করে নওমুসলিমরা কিছুটা শংকিত ও বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। এ আয়াতে মহান আল্লাহ ওই ঘটনাই স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেন, "আমি তোমাদের স্বস্তি ও প্রশান্তির জন্য এমন কিছু করেছিলাম, যার ফলে তোমরা ওই রাতে বদর প্রান্তরে তন্দ্রা যাপন করতে পেরেছিলে। এ ছাড়া তোমাদের জন্য রহমতস্বরূপ বৃষ্টি দিয়েছিলাম যার ফলে পান করা এবং পবিত্রতা হাসিলের জন্য পানির কোনো অভাব তোমাদের অনুভব করতে হয়নি। এ সব রহমত ও ঐশি সাহায্যের ফলে তোমাদের মনে চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছিল এবং পরাজয়ের আশঙ্কার ব্যাপারে তোমাদের মনে শয়তানের যে কুপ্ররোচনা কাজ করছিল তাও দূর হয়ে গিয়েছিল।"

সূরা আনফালের ১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

 

إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلَائِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُوا الَّذِينَ آَمَنُوا سَأُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُوا الرُّعْبَ فَاضْرِبُوا فَوْقَ الْأَعْنَاقِ وَاضْرِبُوا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ

 

“স্মরণ কর, যখন তোমাদের প্রতিপালক ফেরেশতাগণের প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন আমি তোমাদের সাথে আছি, সুতরাং বিশ্বাসীদেরকে অবিচলিত রাখো আর যারা অবিশ্বাস করে আমি তাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করবো। সুতরাং তাদের স্কন্ধে, হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলোর অগ্রভাগে আঘাত কর।” (৮:১২)

আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এ আয়াতেও বদর যুদ্ধে ওই সাহায্যের আরো কিছু দিক তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহতালা বলেছেন, বদর যুদ্ধে মুসলমানদের মনে আশার সঞ্চার করার জন্য এবং তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য ফেরেশতা পাঠিয়েছিলাম এবং ফেরেশতাদের প্রতি এই প্রত্যাদেশ পাঠিয়েছিলাম যে, আমি মুসলিমদের মনে যেভাবে আশার অনুভূতি সৃষ্টি করেছিলাম তেমনি অবিশ্বাসী কাফেরদের মনে হতাশা এবং পরাজয়ের আতংক সৃষ্টি করেছিলাম। এই আয়াতে এটাও বলা হয়েছে, ফেরেশতা পাঠানো বা মুসলমানদেরকে ঐশি সাহায্য দেয়ার অর্থ এই নয় যে, তারা বসে থাকবে আর আল্লাহ কাফের শক্তিকে ধ্বংস করে দিবেন। বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে, মিথ্যার বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকেই ঝাপিয়ে পড়তে হবে। তাই বলা হয়েছে, তাদের স্কন্ধ ও হাত-পায়ের আংগুলে আঘাত কর যাতে তারা যুদ্ধ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে।

এই সূরার ১৩ ও ১৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

 

     ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ شَاقُّوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَمَنْ يُشَاقِقِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (13) ذَلِكُمْ فَذُوقُوهُ وَأَنَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابَ النَّارِ

 

“অবিশ্বাসী কাফেরদের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে সাহায্য করার কারণ হচ্ছে, কাফেররা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতা করে এবং যে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতা করবে তারা মনে রাখুক নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।" (৮:১৩)

"সুতরাং এর আস্বাদ গ্রহণ কর এবং অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে নরক শাস্তি।” (৮:১৪)

এ দু'টি আয়াত থেকে এটা বোঝা যায় যে, অবিশ্বাসী কাফেরদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের যুদ্ধ এবং সে যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়- এসবই ছিল অবিশ্বাসীদের ওপর আল্লাহর শাস্তি স্বরূপ। অবিশ্বাসী কাফেররা সব সময় আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করেছে, সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অন্যায় ও জুলুমে প্রবৃত্ত হয়েছে। ফলে মহান আল্লাহ তাদের ওপর সত্যপন্থী মুসলমানদের বিজয় নিশ্চিত করেছেন, মুসলমানদের ঐশি মদদ দিয়ে সম্মানিত করেছেন। এটা হচ্ছে কাফেরদের প্রতি ইহকালীন শাস্তি। এ ছাড়া তাদের জন্য পরকালীন নরকের শাস্তিতো রয়েই গেছে।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)