আল হাসানাইন (আ.)

কারবালার অন্যায় অবিচারের মূল কোথায়?

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

নিষ্ঠুর এবং পাষাণহৃদয় থেকেই অন্যায়,অত্যাচার,পাপাচার এবং হিংস্রতার সৃষ্টি হয়। নিষ্ঠুর এবং পাষাণ হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে হারাম খাওয়া। যে কোন প্রকারের হারাম খাওয়ার অকল্পনীয় মন্দ প্রভাব রয়েছে। আত্মার (ক্বালব) মৃত্যু,ঐশী সহজাত প্রকৃতি (ফিতরাত) পর্দাচ্ছাদিত হওয়া,সত্য ও ন্যায়ের দিকে ঝোঁক না থাকা,আল্লাহর অবাধ্যতা এবং তাঁর ওলীদের সাথে শত্রুতা করা ইত্যাদি হারাম খাওয়ারই ফল। ইসলাম ধর্মে ইবাদতের ব্যাপক অর্থ রয়েছে। হারাম মাল না খাওয়া এবং সৎ চরিত্রকে সবচেয়ে বড় ইবাদত বলে গণ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে হারাম মাল খাওয়া অনেক বড় গোনাহের কাজ এবং তা ধ্বংসকারীও বটে। ইমাম বাকের (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে : ‘আল্লাহর নিকট পেট এবং গুপ্তাঙ্গকে হারাম থেকে রক্ষা করা থেকে উত্তম কোন ইবাদত নেই।’(ওয়াসায়েলুশ শিয়া, ১১তম খণ্ড, পৃ. ১৯৭)

হারাম (মাল) খাওয়ার অন্যান্য প্রভাব হচ্ছে বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলা,জ্ঞানান্ধ হয়ে পড়া এবং সত্যকে উপলব্ধি করতে না পারা। পবিত্র কোরআন এবং নিষ্পাপ ইমামরা এ অবস্থাকে ‘হৃদয় মোহরাঙ্কিত হওয়া’ বলে অভিহিত করেছেন। সত্যের বিপরীতে ঔদ্ধত্য দেখানো,বাতিলের পথে একগুঁয়েমি করা এবং অন্যায়-অবিচার,কুফর ও যুলুমের অনুসরণ করা,এসবই হারাম খাওয়ার পরিণতি।
আশুরার দিন যখন শত্রুবাহিনী ইমাম হোসাইনকে মূল্যবান পাথরের ন্যায় চারিদিক থেকে ঘিরে রেখেছিল তখন তিনি তাঁর বক্তৃতার মধ্যে এ দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে নির্দেশ করে বলেন : ‘যে আমাকে অনুসরণ করবে সে হেদায়াত পাবে,যে আমার বিরোধিতা করবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু তোমরা সবাই আমার বিরোধিতা করছ,আমার কথায় কর্ণপাত করছ না! কেননা,তোমাদের পেট হারাম মালে পূর্ণ হয়ে আছে এবং তোমাদের অন্তরে মোহর মারা হয়েছে,আফসোস তোমাদের জন্য! তোমরা কেন আমার কথা শোনার জন্য নীরব হচ্ছ না?’(বিহারুল আনওয়ার, ৪৫ তম খণ্ড, পৃ. ৮)
তৃতীয় কারণ যা প্রকৃতপক্ষে মানুষের বিচ্যুত হওয়ার মূল তা হলো আল্লাহকে ভুলে যাওয়া এবং আল্লাহ্ সম্পর্কে উদাসীনতা। আল্লাহর স্মরণ সকল সুখশান্তি,পূর্ণতা এবং বরকতের উৎস। মানুষ যখন আল্লাহকে স্মরণ করে তা যেন এক ফোঁটা পানি- যা অসীম,পূর্ণ এবং সৌন্দর্যময় এক মহাসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে। এ অবস্থায় সে সংকীর্ণ বন্দিশালা থেকে নিজেকে বের করে নির্মল,স্বচ্ছ,আলোকিত ও অসীম মহাশূন্যে ডানা মেলতে সক্ষম হয়েছে। এর বিপরীতে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন মানুষের অবস্থা স্থবির এক পুকুরের ন্যায় যা জীবনের স্বচ্ছ ঝরনাধারা থেকে আলাদা হয়ে পচা ও দুর্গন্ধময় হওয়ার মুখে পড়েছে।
আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ আত্মা শয়তানের বিচরণের উত্তম ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শয়তান তার ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাকে নিজের বন্ধু ও সহযোগীদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। এমন আত্মায় গুনাহ এবং অবাধ্যতার বীজ খুব সহজে এবং দ্রুত অঙ্কুরিত হয় এবং অল্পতেই শয়তানের ফাঁদে পড়ে তার অনুসারী হয়ে যায়। ইমাম হোসাইন (আ.) বিপুল সংখ্যক শত্রুর সম্মুখে দেয়া খুতবায় তাদেরকে সম্বোধন করে বলেন : ‘নিঃসন্দেহে শয়তান তোমাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে ভুলিয়ে দিয়েছে।’(বিহারুল আনওয়ার, ৪৫ তম খণ্ড, পৃ. ৫) ইমামের এই বক্তব্য আল্লাহর কালামেরই ভাবার্থ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে : ‘শয়তান এদের ওপর পুরোপুরি প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে। অতঃপর তাদের আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে,এরা হচ্ছে শয়তানের দল,তুমি জেনে রাখ,শয়তানের দলের ধ্বংস অনিবার্য।’(সূরা মুজাদিলা, আয়াত নং ১৯) ইমাম হোসাইনের বাণী যুগ-যুগান্তরের সকল মানুষের জন্য বার্তাস্বরূপ যা প্রকৃত সৌভাগ্যের চাবি এবং সর্বপ্রকার বিপথগামিতা ও বিচ্যুতির বিরুদ্ধে ধারালো তরবারি,আর তা ঐসব গুনাহ যা অপরাধ এবং বিশৃঙ্খলার ক্ষেত্র তৈরি করে সেগুলোর মোকাবেলায় ঢালস্বরূপ। সব সময় আল্লাহর স্মরণে লিপ্ত থাকা এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি মনোযোগই কেবল মানুষকে সত্যের পথে অবিচল রাখে।

(আশুরা ও কারবালা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর গ্রন্থ থেকে সংকলিত)

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)