আল হাসানাইন (আ.)

সূরা আত তাওবা; (১০ম পর্ব)

1 বিভিন্ন মতামত 01.0 / 5

সূরা আত তাওবা; আয়াত ৪০-৪২

সূরা তাওবার ৪০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

إِلَّا تَنْصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللَّهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِينَ كَفَرُوا ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا فَأَنْزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ لَمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِينَ كَفَرُوا السُّفْلَى وَكَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

“যদি তোমরা পয়গম্বরকে সাহায্য না করা, তবে স্মরণ কর আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিররা তাকে মক্কা থেকে বহিষ্কার করেছিল। তার একজনের বেশি সঙ্গী ছিল না, তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল, তিনি যখন তার সঙ্গীকে বলেছিলেন, বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তার ওপর তার প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং তাকে শক্তিশালী করেন এমন এক সেনাবাহিনী দ্বারা যা তোমরা দেখ নাই। তিনি কাফেরদের কথা হেয় করেন, আল্লাহর কথাই সর্বোপরি। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (৯:৪০)

এই আয়াতে আল্লাহর রাসূলকে হত্যার ব্যাপারে মুশরিকদের ষড়যন্ত্রের কথাই ইঙ্গিত করা হয়েছে। মক্কার কাফের মুশরিকরা যখন আল্লাহর নবী ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র ও নানামুখী নির্যাতনের পর হতাশ হয়ে পড়ে তখন তারা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এ কাজটি তাদের জন্য ছিল অত্যন্ত কঠিন ও দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় এককভাবে কেউ এই হত্যার দায়িত্ব গ্রহণ করবে না। প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু মহান আল্লাহ কাফেরদের এই ষড়যন্ত্র আল্লাহর রাসূলকে জানিয়ে দেন, ফলে আল্লাহর নির্দেশে নবীজী মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মক্কার কাফেররা নবীজীর বাড়ীর ওপর কড়া নজর রাখছিল। তাই কাফেররা যাতে নবীজীর হিজরতের বিষয়টি বুঝতে না পারে সে জন্য হযরত আলী নবীজীর বিছানায় চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন এবং আল্লাহর রাসূল হযরত আবু বকরকে সঙ্গে নিয়ে মক্কার দক্ষিণের পার্বত্য অঞ্চলের দিকে রওনা হয়ে যান।

সেখানে নবীজী ও হযরত আবু বকর একটি গুহায় সাময়িকভাবে আশ্রয় নেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় ততক্ষণাত একটি মাকড়সা গুহার মুখে জাল ছড়িয়ে দেয়। ফলে কাফেররা ভোরে রাসূল (সা.)এর অনুসন্ধানে গুহার কাছে চলে এলেও মাকড়সার জাল দেখে তাদের কারো সন্দেহ হয়নি যে, এই গুহার ভিতরে কোনো মানুষ থাকতে পারে। রাসূলে খোদা (সা.) তিন দিন ওই গুহায় অবস্থান করার পর পুণরায় মদিনার দিকে যাত্রা করেন। এই আয়াতে নবী করিম (সা.)এর হিজরতের ঘটনা উল্লেখ করে তাদেরকেই তিরস্কার করা হয়েছে যারা বিভিন্ন সময় বিশেষ করে তাবুক যুদ্ধের সময় রাসূলে খোদা (সা.)এর পাশে দাঁড়ায়নি বা রাসূলের সাহায্যে তার পাশে দাঁড়াতে গড়িমসি করেছে। এখানে বলা হয়েছে, ওই সময় রাসূলের সাথে কেউ ছিল না। আল্লাহ তাকে একা ছেড়ে দেননি। আল্লাহ কাফেরদের ষড়যন্ত্র নস্যাত করেছেন এবং তার দ্বীনকে বিজয়ী করেছেন।

এই আয়াত দ্বারা আমাদেরকে এই শিক্ষাই দেয়া হয়েছে যে, ইসলামের প্রসার এবং স্থায়িত্ব মানুষের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল নয়। কারণ আল্লাহ নিজেই তার দ্বীনকে হেফাজত করবেন। কাজেই ধর্মের জন্য কোনো কাজ করে গর্ববোধ করার কোনো অবকাশ নেই। আল্লাহর ইচ্ছাই চূড়ান্ত এবং কাফেরদের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে বাধ্য।

এই সূরার ৪১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ

“জিহাদে বের হয়ে পড়, হাল্কা অবস্থায় হোক অথবা ভারি অবস্থায় এবং তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে।” (৯:৪১)

এই আয়াতেও তাবুক অভিযানের ব্যাপারেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জিহাদের নির্দেশ যেহেতু দেয়া হয়েছে, তাই যে অবস্থায় থাকুক প্রত্যেককে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে হবে। পরিস্থিতি কঠিন হোক আর সহজই হোক, জীবন দিয়ে হোক আর সম্পদ দিয়েই হোক আল্লাহর রাসূলের ডাকে সাড়া দিতেই হবে। কারণ আল্লাহর দ্বীন ও তার রাসূলকে রক্ষা কর সব কিছুর ওপর প্রাধান্য পাবে। এ ছাড়া এই আদেশ হচ্ছে একটি পরীক্ষা। এর মাধ্যমে প্রকৃত মুমিন মুসলমানদের পরিচয় পরিস্কার হয়ে যাবে।

সূরা তাওবার ৪২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

لَوْ كَانَ عَرَضًا قَرِيبًا وَسَفَرًا قَاصِدًا لَاتَّبَعُوكَ وَلَكِنْ بَعُدَتْ عَلَيْهِمُ الشُّقَّةُ وَسَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَوِ اسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَكُمْ يُهْلِكُونَ أَنْفُسَهُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ

“আশু লাভের সম্ভাবনা থাকলে ও সফর সহজ হলে তারা নিশ্চয়ই তোমার অনুসরণ করতো কিন্তু তাদের নিকট যাত্রাপথ সুদীর্ঘ মনে হলো। তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, যদি সম্ভব হতো তাহলে আমরাও তোমাদের সঙ্গে বের হতাম। তারা নিজেদেরকেই ধ্বংস করে, তারা যে মিথ্যাচারী এটা তো আল্লাহ জানেন।” (৯:৪২)

আগের আয়াতে জিহাদের নির্দেশ দেয়ার পর এখানে বলা হয়েছে, তাবুক অভিযানে যাতে যেতে না হয় সেজন্য মুসলমান দাবিদার অনেকেই নানা বাহানা ও অজুহাতের কথা বলছে। কেউ শারীরিক অসুবিধার কথা বলছে, পথের খরচ বা রসদ না থাকার কথা বলছে। তারা আল্লাহর নামে কসম করে তাদের অক্ষমতার কথা বলছে। কিন্তু যদি এ অভিযানে আশু লাভের সম্ভাবনা থাকতো এবং রাস্তাও কম হতো তাহলে তারা এসব অজুহাতের কথা বলতো না। তারা যেন মনে না করে যে, আল্লাহকে তারা ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়েছে। কারণ আল্লাহ তাদের অন্তরের কথাও জানেন। আসলে তারা নিজেরা নিজেদেরকেই ধোঁকা দিচ্ছে এবং নিজেদের ধ্বংসই ডেকে আনছে।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)