আল হাসানাইন (আ.)

জার্মান নও-মুসলিম জয়নাব কারিন

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

পাশ্চাত্যে আধ্যাত্মিক শুণ্যতা সেখানে সৃষ্টি করছে নৈতিক ও সামাজিক নানা সংকট। ফলে সেখানে দেখা দিচ্ছে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় দৈন্যতা। মানুষগুলো হয়ে পড়ছে যান্ত্রিক,স্বার্থপর ও হিংস্র। শোচনীয় এ অবস্থা নিয়ে চিন্তিত এলভিন টফলারের মত দার্শনিক ও লেখকরা। কিন্তু এ অবস্থায়ও অর্থহীন জীবনের যাতনার হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছেন অনেকেই। আধ্যাত্মিক মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা চালাতে গিয়ে তারা মুক্তির সন্ধান পাচ্ছেন ইসলামের মধ্যে। জার্মান নও-মুসলিম  'জয়নাব কারিন'এমনই একজন সৌভাগ্যবান  নারী।
 
জার্মান নও-মুসলিম  'জয়নাব কারিন' শৈশব থেকেই ছিলেন খোদামুখী। আল্লাহর প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল তার। মহান আল্লাহর সঙ্গে এক বিচিত্র আত্মিক সম্পর্ক অনুভব করতেন। ধর্ম শেখার ক্লাসে ও পাদ্রির কাছে কারিন' স্রস্টার যে ছবি দেখতেন তা ছিল তার কল্পনার জগতের আল্লাহ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।  এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,
 
"যদিও পরিবারের চাপে খ্রিস্ট ধর্ম শেখার ক্লাসে যেতাম। কিন্তু খোদার ত্রিত্ববাদী রূপ আমার কাছে অযৌক্তিক বলে মনে হত। তাই প্রতিদিনই ধর্ম শেখার ক্লাসগুলো আমার জন্য বিভ্রান্তির জটাজাল  আরো জটিল  করে তুলছিল। আল্লাহ সম্পর্কে আমার নিজস্ব ধারণা এভাবে হারিয়ে গেল।  বিশ্বাস হারিয়ে ফেললাম আমি। ফলে আমার মানসিক অবস্থা এতটা এলোমলো হয়ে গেল যে আমি আমার মা-বাবাকে বললাম, আমি আর এই ধর্মে থাকতে চাই না। ত্রিত্ববাদ ও হযরত ঈসা (আ.)'র পূজা করা—এ দুটি বিষয় বর্তমান খ্রিস্টবাদের  দুটি প্রধান ত্রুটি। এইসব ত্রুটির কারণেই খ্রিস্টানরা এখন ইসলামের দিকে ঝুঁকছে।"
 
এভাবে খ্রিস্ট ধর্মের অসঙ্গতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উদয় হত জার্মান যুবতী কারিনের মনে। এইসব অসঙ্গতির যৌক্তিক কোনো জবাব পাননি বলে ধর্ম সম্পর্কে অশ্রদ্ধা জাগতে থাকে তার মনে। আর এমন চিন্তাগত সংকটের দিনে কারিনের সঙ্গে পরিচয় ঘটে এক মুসলমানের। আর এই পরিচয় ধর্ম সম্পর্কে এক নতুন জগতের দরজা খুলে দেয় কারিনের কাছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,
 
আমি সব সময়ই ভাবতাম মুসলমানদের খোদা ভিন্ন বা পৃথক। আত্মিক এই সংকটের সময় আমার এক তুর্কি সহপাঠী "ইসলাম ধর্মের নীতিমালা" শীর্ষক একটি ছোট্ট বই উপহার দেন।  গভীর উতসাহ নিয়ে বইটি পড়া শুরু করি। পড়তে পড়তে যখন আল্লাহর একত্ববাদ সংক্রান্ত অধ্যায়ে পৌঁছলাম তখন আমার মনোযোগ বেশী তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। দেখলাম আল্লাহ সম্পর্কে আমি যা ভাবতাম ঠিক সেই চিত্রই দেখতে পাচ্ছি  ইসলামে। তাই ব্যাপারটা আমাকে ভীষণ পুলকিত করল। এ ছাড়াও মুসলমানরা হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হযরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত সব নবীকে সত্যিকারের নবী বলে মনে করে জেনে খুব অবাক হলাম। তাই এ বই পড়ার পর পরই আমি বাবা-মা-কে জানিয়ে দেই যে, আমি আর গির্জার সদস্য থাকছি না, কারণ, এ ধর্মের প্রতি আমার মনের কোনো সায় ছিল না এবং  শুধু কাগজে কলমে আমার নাম খ্রিস্টান হিসেবে থাকবে, অথচ আমি আন্তরিকভাবে খ্রিস্টান নই- এটা এক ধরণের কপটতা বা দ্বিমুখী নীতির প্রকাশ।"
 
এভাবে জার্মান যুবতী কারিন খ্রিস্ট ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক পড়াশুনা শুরু করেন। আর যতই তিনি ইসলাম সম্পর্কে জানতে থাকেন ততই এ ধর্মকে নিজ প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই দেখতে পান। কারিন মুসলমান হওয়ার ঘোষণা দেয়ার আগেই ইসলামী শিক্ষাগুলোর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন,"ইসলামী ততপরতাগুলো শুরু করতে চাচ্ছিলাম কোনো এক পর্যায় থেকে, কিন্তু জানতাম না যে কোন্ পর্যায় থেকে শুরু করতে হবে। রমজান মাস এলে রোজা রেখেই প্রথম ইসলামী ততপরতা শুরু করব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রথমে ভাবলাম,এটা হয়তো বেশ কষ্টকর হবে। কিন্তু আমার মধ্যে এমন এক বিস্ময়কর শক্তি জন্ম নিল যে একজন চাকুরীজীবী হওয়া সত্ত্বেও সেই তুর্কি পরিবারের সবার সঙ্গে একই সময়ে রোজা রাখলাম। এই মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় কিছু কিছু বিধি-বিধান জানতে সক্ষম হই।"
 
পবিত্র রমজানের অন্যতম সুফল হল মুসলমানদের ইসলামী ঐক্য। এই ফরজ ইবাদত পালন করতে গিয়ে বিশ্বের সব মুসলমানই এক অপূর্ব একাত্মতা ও ঘনিষ্ঠতা অনুভব করেন। তারা সবাই যে একই নবীর উম্মত তা অনুভব করেন এই পবিত্র মাসে। এই মাসে মুসলমানদের মসজিদগুলো মুসল্লিতে ভরে যায় এবং ইবাদতে দেখা যায় একনিষ্ঠতা। ইবাদতে একনিষ্ঠতার এই সৌন্দর্য ও উদ্দীপনা অনুভব করেছেন জার্মান নও-মুসলিম কারিন। তিনি রোজা রাখতে গিয়ে ইসলামের ও ইসলামী শিক্ষার  আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য  উপলব্ধি করতে পেরেছেন।  জয়নাব কারিন এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
 
“রমজানের দিনে মুসলমানদের সহমর্মিতা ও একতা আমাকে অভিভূত করেছে। আমি নিজেও এই একই চেতনা অনুভব করেছি। রমজান মাসে ইবাদত করতে পারা ও এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অনুভব করার সুযোগ লাভের বিষয়টি আমাকে অপার আনন্দ দিয়েছে এবং এমনকি এর ফলে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহও আমি টের পাইনি। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম যে আমার রোজা আল্লাহ কবুল করেছেন, কারণ আমি এ বিষয়টি আমার সমগ্র অস্তিত্ব দিয়ে অনুভব করেছি।”
 
জার্মান নও-মুসলিম জয়নাব কারিন এরপরও ইসলামের বাস্তবতাগুলো সম্পর্কে পড়াশুনা অব্যাহত রাখেন। তিনি ইসলামী বিধি-বিধানের দর্শনগুলো জানার জন্য নানা বই পড়াশুনা করে এটা বুঝতে পারেন যে ইসলামী বিধি-বিধানগুলো জীবনের জন্য খুবই জরুরি। এইসব বিধানের মধ্যে হিজাবের বিধানটির দর্শন তাকে খুবই আকৃষ্ট করেছে। তার মতে হিজাব নারীকে নিরাপত্তা দেয়। ফলে সামাজিক কাজে কর্মে নারী বেশি স্বাধীন হতে পারে ও সহজেই সামাজিক দায়িত্বগুলো পালন করতে পারে। হিজাবের ফলে নারী যে মর্যাদা লাভ করে তা কারিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও কর্মস্থলে অনুভব করতে পেরেছেন। অন্যদিকে তিনি প্রতিদিন এটাও লক্ষ্য করছেন যে পর্দাহীন নারীরা নিজেদের বাহ্যিক সৌন্দর্য তুলে ধরার জন্য কতটা চাপ ও যন্ত্রণা সহ্য করছেন।  
 
জার্মান নও-মুসলিম জয়নাব কারিন জার্মানির একটি মসজিদে উপস্থিত হয়ে তার মুসলমান হওয়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন। ইসলাম গ্রহণের ফলে আত্মিক সমস্যাগুলো দূর হলেও অন্য কিছু সমস্যার শিকার হন তিনি। যেমন,তার পরিবার এ বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেনি। কারিনের বাবা মা এটাকে কম বয়স ও অনভিজ্ঞতার পরিণতি বলে মনে করেছেন। কিন্তু তারা যখন দেখলেন যে কারিন ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে অবিচল তখন তারা তাকে মুসলমান হতে বারণ করলেন। কারিন শান্তভাবে জবাব দিলেন যে তিনি এই সিদ্ধান্তে অবিচল। একমাত্র ইসলাম ও ঈমানের শক্তিই তাকে এই দৃঢ়চেতা জবাব দেয়ার ও প্রতিরোধের শক্তি যুগিয়েছে। জয়নাব তার অন্তরে ইসলামের প্রতি গভীর ভালবাসা দান করায় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ।(রেডিও তেহরান)

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)