আল হাসানাইন (আ.)

সূরা ইউসুফ; (২৫তম পর্ব)

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

সূরা ইউসুফ; আয়াত ৯০-৯২

সূরা ইউসুফের ৯০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

قَالُوا أَئِنَّكَ لَأَنْتَ يُوسُفُ قَالَ أَنَا يُوسُفُ وَهَذَا أَخِي قَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَيْنَا إِنَّهُ مَنْ يَتَّقِ وَيَصْبِرْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ

"তারা বলল, তবে কি তুমিই ইউসুফ? সে বলল, আমিই ইউসুফ এবং সে আমার সহোদর ভাই । আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। যে ব্যক্তি সাবধানী এবং ধৈর্যশীল সেই সৎকর্ম পরায়ণ এবং আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মশীলদের শ্রমফল নষ্ট করেন না।"(১২:৯০)

হযরত ইউসুফ (আ.) বৈমাত্রেয় ভাইদের করুণ অবস্থা দেখে নিজেকে আর সামলে উঠতে পারলেন না। তাই তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করার জন্য নানাভাবে ইঙ্গিতে কথা বলতে লাগলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, তোমরা ইউসুফ ও তার ভাইদের ঘটনা সম্পর্কে কি জান? এ কথা শুনে ভাইয়েরা আঁতকে উঠলো। তারা ভাবতে লাগল মিশরের বাদশা বা আজিজে মিশর আবার কি করে ইউসুফের ঘটনা সম্পর্কে জানলো‍‍! তাহলে কি এই সুদর্শন যুবকই ইউসুফ!

বৈমাত্রেয় ভাইদের কাছে এভাবে হযরত ইউসুফের পরিচয় প্রকাশ হয়ে গেল, তারা হযরত ইউসুফের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির কারণে বিস্মিত ও শঙ্কিত হয়ে পড়লো। হযরত ইউসুফ (আ.) তাদেরকে বোঝালেন, সবই আল্লাহর ইচ্ছা, তিনিই তাকে ও তার সহোদরকে এই মর্যাদায় ভূষিত করেছেন এবং সবকে পুনরায় একত্রিত হওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।

হযরত ইউসুফ (আ.) এর এই ঘটনা থেকে প্রতিয়মান হয় যে,সত্যের জয় এবং মিথ্যার পরাজয় অনিবার্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সত্য প্রকাশিত হবেই।

এই সূরার ৯১ ও ৯২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

قَالُوا تَاللَّهِ لَقَدْ آَثَرَكَ اللَّهُ عَلَيْنَا وَإِنْ كُنَّا لَخَاطِئِينَ (91) قَالَ لَا تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللَّهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ

"তারা বলল, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাকে আমাদের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন এবং আমরা নিশ্চয়ই অপরাধী ছিলাম।” (১২:৯১)

“(ইউসুফ) বলল, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন এবং তিনি দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।" (১২:৯২)

হযরত ইউসুফ (আ.) এর সৌহার্দপূর্ণ বক্তব্য শুনে বৈমাত্রেয় ভাইয়েরা যারপরনাই লজ্জিত হলো। তখন তাদের মনে যতই ইউসুফের প্রতি অন্যায় আচরণের কথা মনে হচ্ছিল ততই তারা লজ্জিত ও আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছিল। আবার ব্যথাভরা আনন্দে তারা উদ্বেলিত হচ্ছিল। হযরত ইউসুফ তাদেরকে জড়িয়ে ধরলেন,আলিঙ্গন করলেন এবং সৎকর্মপরায়ণদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিলেন।

হযরত ইউসুফ (আ.) এর বিনম্র ব্যবহারে তার বৈমাত্রেয় ভাইয়েরা বিস্মিত হলো, তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করে বলতে লাগলো, আমরা অন্যায়ভাবে তোমাকে হিংসা করেছি। তুমি নিশ্চয়ই আমাদের চেয়ে বেশী শ্রেষ্ঠ। তোমার মর্যাদা আমাদের চেয়ে অনেক উর্ধ্বে। হযরত ইউসুফ (আ.) আবারও বললেন, যা অতীত হয়েছে তা নিয়ে ভাবা উচিত নয় । নিশ্চয়ই আল্লাহ তা ক্ষমা করে দেবেন। এখন অভিযোগ বা তিরস্কার করার সময় নয়। আল্লাহ আমাদেরকে পুনরায় একত্রিত হওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এ জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।

এটাই নবী-রাসূলদের শিক্ষা। মক্কা বিজয়ের পর সাহাবীদের যারা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন, নবী করিম (সা.) তাদেরকে এ থেকে নিবৃত্ত করেন। নবী করিম (সা.) মক্কা বিজয়ের দিনকে শান্তি ও রহমতের দিন আখ্যায়িত করে সবকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন । তিনি বলেছিলেন, আজকের দিনে আমি তাই করবো যা আমার ভাই হযরত ইউসুফ (আ.) তার বৈমাত্রেয় ভাইদের সঙ্গে করেছিলেন। বর্ণনায় এসেছে, ক্ষমতাবান হওয়ার পর অত্যাচারী শত্রুকে ক্ষমা করে দেয়া আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের নিদর্শন ।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)