আল হাসানাইন (আ.)

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর অন্তিম মুহূর্ত

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

হেলাল বিন নাফে বর্ণনা করেন যে, আমি ওমর বিন সা’দের সেনাবাহিনীর সাথে দাড়িয়েছিলাম। এমন সময় একজন হটাৎ চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে, হে আমীর আপনাকে শুভ সংবাদ। শিমার ইমাম হোসাইন (আ.) কে হত্যা করেছে। আমি সৈন্যদের সারি থেকে বের হয়ে হোসাইন (আ.) এর সামনে দাড়িয়ে দেখছিলাম তিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত অতিক্রম করছেন।

খোদার কসম রক্তাক্ত অবস্থায় নিহত মানুষের মধ্যে এরূপ উত্তম ও আকর্ষণীয় চেহারা আর কখনও দেখিনি। ইমাম হোসাইন (আ.) এর চেহারায় উদ্ভাসিত হয়েছিল নূর। তার এ নূর ও ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্যে তাকে শহীদ করার চিন্তা আমি পরিত্যাগ করলাম।

এ সময় ইমাম হোসাইন (আ.) পানি চাইলেন।

আমি শুনলাম এক ব্যক্তি বলছে খোদার শপথ আমাদের বশ্যতা স্বীকার না করলে পানি দেব না যতক্ষণ না তা হবে জালাতনের গরম পানি। আমি শুনলাম ইমাম (আ.) বলছেন আমি তোমাদের কাছে নত হব না আমি আমার নানা রাসূলের (সা.) সান্নিধ্যে পৌছব এবং বেহেশতে তার সাথে এক সাথে থাকব আর তথাকার সুমিষ্ট পানি পান করবো এবং তোমাদের জুলুমসমূহের বিচার চাইব।

হেলাল বলল ইমাম (আ.) এর একথাগুলো শুনে সেনাবাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে এমন আচরণ করে মনে হয় আল্লাহ তাদের কারো অন্তরে বিন্দুমাত্র দয়া রাখেননি। ইমাম (আ.) তার কথা বলা শেষ না করতেই তার শরীর থেকে মাথা মোবারক বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। আমি তাদের এ নির্দয় আচরণ দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। আমি বললাম আল্লাহর কসম কোন অবস্থাতেই তোমাদের সাথে থাকব না। এরপর ইবনে সাদের বাহিনী হোসাইন (আ.) কে উলঙ্গ করে ফেলে। তার জামা পরিধান করে ইসহাক বিন হাবিয়া হাজরামী। এতে তার শরীরে শ্বেত রোগের সৃষ্টি হয় এবং শরীরের সকল পশম ঝরে পড়ে। বর্ণিত হয়েছে, তার জামায় প্রায় একশ’ নব্বইটি তরবারী, তীর ও বর্শার আঘাতের চিহ্ন ছিল। হযরত ইমাম সাদেক (আ.) বললেন, হোসাইন (আ.) এর বদনে ৩৩টি বর্শা এবং ৪৩টি তরবারীর আঘাত ছিল। হোসাইন (আ.) এর পাজামা নিয়ে যায় আবহোর বিন কাব। বর্ণিত হয়েছে, এ পাজামা পরিধান করার পর সে অবশ হয়ে যায়।

হোসাইন (আ.) এর পাগড়ী নিয়ে যায় আখনাস বিন মারসাদ বিন আলকামা। অন্য বর্ণনামতে জাবের বিন ইয়াজিদ আওদী পাগড়ী নিয়ে যায়। এ পাগড়ী মাথায় পরিধান করার সাথে সাথে তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে। তার জুতা মোবারক নিয়ে যায় আসওয়াদ বিন খালেদ, আংটি নিয়ে যায় বোজদিল বিন সালিন কালবী। এ আংটি নেয়ার অপরাধে পরবর্তীতে তার আংগুল কর্তন করা হয়। এই বোজদিল বিন সালিনকে মোখতার সাকাফী বন্দী করে তার হাত-পা কেটে ছেড়ে দেয়। এ অবস্থায় রক্ত ঝরতে থাকে অবশেষে এ রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। ইমাম হোসাইন (আ.) এর চামড়ার রুমালটি নিয়ে যায় কায়েস বিন আশসাস। বাতারা নামক বর্মটি নিয়ে যায় ওমর বিন সা’দ। ওমর বিন সা’দ নিহত হলে মোখতার সে বর্মটি ওমর সাদের হত্যাকারীকে দান করেন।

ইমাম (আ.) এর তরবারী জামী বিন খালফ আওদী অন্য বর্ণনামতে, বনি তামিম গোত্রের আসওয়াদ বিন হানজালা নামক এক ব্যক্তি হস্তগত করে। ইবনে আবি আস আদের বর্ণনামতে, ইমাম (আ.) এর তরবারী ফালাফেস নাহশালী নিয়ে যায়। মুহাম্মদ বিন যাকারিয়া একথা বর্ণনার পর লিখেন, এ তরবারী পরবর্তীতে হাবিব বিন বুদালের কন্যার হাতে পৌছে। এখানে উল্লেখ্য, যে তরবারী তারা লুন্ঠন করেছে তা জুলফিকার ছিল না। কেননা জুলফিকার রাসূলে পাক (সা.) ও ইমামদের অন্যান্য স্মৃতিবহুল সম্পদের সাথে সংরক্ষিত রয়েছে। এ কথাটি বিভিন্ন রাবী সত্যায়ন করেছেন এবং হুবহু বর্ণনাও করেছেন।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)