আল হাসানাইন (আ.)

ইমাম যাইনুল আবিদিন (আ.) এর শাহাদাত বার্ষিকী

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

আজ ইমাম হুসাইনের পুত্র ইমাম যাইনুল আবিদিন সালাওয়াতুল্লাহি আলাইহিমা-এর শাহাদাতের দিন। একটি বর্ণনা অনুযায়ী ৯৫ হিজরীর মহররম মাসের ১২ তারিখের এই দিনে, আবার অন্য একটি বর্ণনা অনুযায়ী ৯৫ হিজরীর মহররম মাসের ২৫ তারিখে ৫৭ বছর বয়সে, জীবনে অনেক দুঃখ-কষ্ট, সংগ্রাম ও ধৈর্য পরীক্ষার পর উমাইয়্যা খেলাফতের অত্যাচারী শাসক ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের নির্দেশে হিশাম বিন আব্দুল মালিকের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগে শাহাদাত বরণ করেছিলেন রাসূলের পবিত্র আহলে বাইতের চতুর্থ ইমাম, হযরত ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবিদিন সালাওয়াতুল্লাহি আলাইহি। আল্লাহ ও তাঁর ফেরেস্তাকুলের অবিরাম দরুদ ও সালাম তাঁর উপর বর্ষিত হোক।

ইমাম হুসাইনের পুত্র ইমাম যাইনুল আবিদিন-এর শানে রচিত তৎকালীন বিখ্যাত কবি ফারাযদাক -এর একটি কবিতা নিম্নে পেশ করছিঃ

হে প্রশ্নকারী! যে দয়ালু ও মহান ব্যক্তি সম্বন্ধে আমার কাছে জানতে চেয়েছো, তার পরিষ্কার উত্তর আমার কাছে আছে যদি কেউ তার সন্ধান করে।

তিনি এমন একজন ব্যক্তি যে, মক্কার মাটি তার পায়ের শব্দের সাথে পরিচিত এবং পবিত্র কাবা ও তার আশে পাশের ভূমিগুলিও তার সাথে পরিচিত।

তিনি আল্লাহর সব থেকে উত্তম বান্দার সন্তান। পরহেয্গার, পাপমুক্ত, পাক-পবিত্র, সুপরিচিত ও বিখ্যাত।

তিনি আহমাদ-এর সন্তান, যাকে আল্লাহ নবী হিসাবে নিযুক্ত করেছেন। যার উপর আল্লাহ সকল সময় দরুদ পাঠায়।

যদি এই কাবা ঘর জানতো যে, কে তাকে চুম্বন দিতে এসেছে তাহলে অস্থীর হয়ে মাটিতে পড়ে যেত তার পায়ের ধুলায় চুম্বন দেওয়ার জন্য।

এই মহান ব্যক্তির নাম (আলী) এবং দ্বীনের নবী তাঁর পিতামহ, যার হেদায়েতের নুরের ছটায় উম্মত পরিচালিত হয়ে থাকে।

তিনি এমন কেউ যার চাচা জাফার তাইয়্যার ও হামযা, যারা শহীদের মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন, যারা তাঁর ভালবাসার প্রতি কসম দেয়।

তিনি নারীদের নেত্রী হযরত ফাতিমা ও দ্বীনের নবী (সা.)-এর স্থলাভিষিক্তের সন্তান, যার তলোয়ার ছিল কাফের ও মুশরিকদের জন্য মৃত্যুর পরওয়ানা।

যখনই কুরাইশ বংশের কেউ তাকে দেখে তারা স্বীকারোক্তি দেয় যে, সমস্ত অলৌকিক ক্ষমতা তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার কাছে হার মেনেছে এবং কখনও তার থেকে উন্নত কাউকে চিন্তা করা যায়না।

তিনি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন গৌরবের সাথে সম্পৃক্ত, সে স্থানে আরব ও অনারবের যে কারো পৌছানো আসম্ভব।

ওহে হিশাম! তোমার এই কাজে, যে ভান করছো তুমি তাকে চেননা এবং জিজ্ঞাসা করছ (সে কে?), তাতে তার কোন লোকসান হবে না। কেননা তুমি যদিও তাকে অস্বীকার কর তথাপিও আরব ও অনারবের সবাই তাকে চেনেন।

লজ্জা থেকে তাঁর চোখকে সরিয়ে রাখে এবং তাঁর শান-শওকতের কারণে চোখগুলি তা থেকে সরে থাকে। কেউ তাঁর সাথে কথা বলতে পারে না যদি তিনি অনুমতি না দেন।

তাঁর কপালের নুরের ছাটায় অন্ধকারের পর্দা ছিড়ে যায়। যেমনভাবে সূর্যের আলো অন্ধকারগুলিকে সরিয়ে দেয়।

এমন তাঁর বদান্যতা যে কখনও তিনি কালেমা ছাড়া অন্য কোথাও ‘না’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। যদি এটা আল্লাহর এক ও অদ্বিতীয়তার সাক্ষ্য দেয়ার স্থানে না হত তাহলে সেখানেও ‘না’ শব্দটি না বলে (হ্যা) শব্দটি বলতেন।

তাঁর ভিত্তি আল্লাহর নবী (সা.)-এর কাছ থেকে। তাঁর পবিত্র গর্ভে জন্ম নেয়া, পবিত্র লালনপালন বা পরিচর্যা বা প্রশিক্ষণ, উত্তম স্বভাব-চরিত্র এ সব কিছুই তাঁর উন্নতমানের।

অধিক মূল্যের বোঝা সেই সব সম্প্রদায়কেই বহন করতে হয়েছে যারা তাদের উপর অত্যাচার ও শক্তি প্রয়োগ কারার চেষ্টা করেছে।

যদি কিছু বলে, তবে তা এমনই যে সবাই মেনে নেয়। আর তার বক্তব্য তাকে আরও মহিমান্বিত করে তোলে।

যদি তাকে না চিনে থাকো তাহলে জেনে নাও তিনি ফাতিমার সন্তান, যার পিতামহের মাধ্যমেই আল্লাহর নবীগণের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

আল্লাহ তাকে প্রচীন যুগ থেকেই মহান ও সম্মানিত করেছেন। আর আল্লাহর ঐশ্বরিক স্মৃতিফলকে তার ব্যাপারে এরূপই লেখা আছে।

তিনি এমন কেউ যার বংশধরের শ্রেষ্ঠত্ব বা জ্ঞান ও মর্যাদার কাছে অন্যান্য আম্বীয়াগণের বংশ মর্যাদা ক্ষুদ্র সমতুল্য। আর তাঁর বংশধরের (নবী) উম্মত, অন্যান্য নবীর উম্মতের থেকেও উন্নত।

তাঁর ক্ষমাশীল দৃষ্টি সমস্ত সৃষ্টিকে আয়ত্ত করেছে এবং বিভ্রান্তি, ক্ষুদা, অন্ধকারাচ্ছনতা তাঁর থেকে দুরীভূত হয়ে গেছে।

তাঁর দুটি হাত যেন রহমত স্বরূপ, যার সুফল সবার কাছে পৌছায়। যারা অনুদানপ্রাপ্ত হয় অভাব তাদের উপর ফিরে আসে না।

তিনি এতই কোমল হৃদয়ের যা তার ভিতর কোন প্রকার রূঢ়তা ও হটকারিতার স্থান নেই। দুটি বৈশিষ্ট্য তাকে অলংকৃত করে যা হচ্ছে ধৈর্য ও মহানুভবতা।

কখনও ওয়াদা ভঙ্গ করে না এবং তাঁর উপস্থিতি বরকতময়। তাঁর বাড়ীর বৈঠকখানা সুপ্রশস্ত, (তার বাড়ীর দরজা সবার জন্য খোলা)।

তিনি এমনই বংশের যাদের সাথে বন্ধুত্বই ধর্ম এবং তাদের সাথে শত্র“তা ধর্মহীনতা স্বরূপ, আর তাদের সংস্পর্শে থাকার অর্থই হচ্ছে মুক্তি ও আখেরাতে পরিত্রাণ পওয়া।

প্রতিটি ফিৎনা ও অমঙ্গলই তার ভালবাসায় ধুলিসাৎ হয়ে যায়। আর ক্ষমাশীলতা ও দয়ার্দ্রতা তার দিকে বর্ধিত হয়।

প্রতিটি বক্তব্যের শুরুতে এবং শেষে আল্লাহর নামের পর তাদের নাম উল্লেখ করা হয়।

যদি পরহেযগারদের বারণ করা হয় তবে তাঁরা পরহেয্গারদের পরিচালক বা পথ প্রদর্শক এবং যদি প্রশ্ন করা হয় যে, পৃথিবীর বুকে সর্বোত্তম মানুষ কারা? এই প্রশ্নের উত্তরে তাঁরাই পরিচয় প্রাপ্ত হবেন।

তিনি ক্ষমা করার পর অন্য কোন ক্ষমাকারীকে হিসাবের মধ্যে গণনা করা হবে না এবং কোন জাতি যতই মহানুভবতা ও মহত্বের অধিকারী হোক না কেন তাঁর পর্যায়ে পৌছাতে পারবে না।

তাদের উপস্থিতি এতই বরকতময় যা কিনা খরার সময় বৃষ্টি আসার মত। আর যখন যুদ্ধের ডামা ডোল বেজে ওঠে তখন তারা সিংহের ন্যায় হয়ে যায়।

কখনই তাঁর কাছ থেকে খারাপ (নিন্দা, ভর্ৎসনা, তিরস্কার) বিষয় পাওয়া যায় না। উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী এবং তাঁর হাত দিয়ে বৃষ্টির ন্যায় অব্যাহতভাবে অনুদান আসতে থাকে।

না থাকলেও তাঁর হাত দিয়ে অনুদান আসা বন্ধ হয় না, তার জন্য থাকা বা না থাকা উভয়ই সমান।

এমন কোন গোত্র নেই যারা তাঁর বংশধরদের থেকে অথবা তার থেকে অনুগ্রহ পাইনি।

যারা আল্লাহকে চিনেছে তারা তাকেও চিনেছে। মানুষ তাদের ধর্মকে ও পথনির্দেশনাকে তাঁর গৃহ থেকে অর্জন করেছে।

কুরাইশ বংশের মধ্যে শুধুমাত্র তাঁর বাড়ীতেই সমস্যা দুরীভূত হওয়ার জন্য সাহায্য নিতে আসতো এবং সুষ্ঠবিচারের জন্যও মানুষ তার কাছেই আসতো।

তাঁর পূর্বপুরুষ নবী (সা.) ও আমিরুল মুমেনিন আলী (আ.), যিনি নবী (সা.)-এর পরে উম্মতের ইমাম ও পরিচালক।

বদর, ওহদ, খন্দক, মক্কা বিজয়, এ সকল যুদ্ধই তার প্রমান, যা সবারই জানা।

খায়বার ও হুনাইন তাঁর জন্য সাক্ষ্য দেয় এবং সেই (বনি কারিযাহর সাথে মোকাবেলার) দিনগুলিতে তার শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)