আল হাসানাইন (আ.)

সৎ কাজ

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

সৎ কাজ

মোঃ মুনীর হোসেন খান কর্তৃক অনূদিত

কিছু কিছু সংকীর্ণমনা ব্যক্তি ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে, ধর্ম ইবাদত-বন্দেগী, ওয়াজিব কাজ আঞ্জাম দেয়া এবং হারাম কাজ ও বিষয়াদি থেকে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কোন জিনিসের প্রতি গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু পবিত্র ইসলাম ধর্ম এদের এ অলীক ধারণার বিপরীতে জনহিতকর ও কল্যাণধর্মী কাজ, যেমন সেতু মেরামত, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, পানীয় জলের আধার তৈরিকরণ, মসজিদ নির্মাণ ও মেরামত ইত্যাদি কাজ বা বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে যা আপামর জনসাধারণের অধিক উপকারে আসে।

    মহানবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মুসলমানদের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না (অর্থাৎ রাতদিন অতিবাহিত করে, অথচ মুসলমানদের ব্যাপারে কোন চিন্তাই করে না এবং তাদের সামাজিক সমস্যাসমূহ সমাধানের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে না) আসলে সে মুসলমানই নয়।    

 যখন মহানবী (সা.)-কে মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় লোকদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো তখন তিনি বললেন, “ঐ ব্যক্তি যে জনসাধারণের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারকারী।     

মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি দ্বারা জনগণ উপকৃত হয় সেই সর্বোত্তম।  

ইসলাম এ ধরনের জনকল্যাণমূলক কাজসমূহকে চিরস্থায়ী সাদাকায়ে জারীয়াহ্ বলে অভিহিত করেছে।   

ইমাম জাফর আস্-সাদেক (আ.) বলেছেন, “কেবল তিনটি বিষয় ব্যতীত কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার (আমলনামায়) কোন পুণ্য অর্জিত হয় না। উক্ত বিষয়ত্রয় (১) ঐ সাদাকাহ্ অর্থাৎ ভালো কাজ যা সে তার জীবদ্দশায় চালু ও প্রবর্তন করেছে এবং তার মৃত্যুর পরেও তা প্রচলিত রয়েছে, (২) ঐ উত্তম প্রথা যা দ্বারা মানুষ সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে। অতএব, তার মৃত্যুর পর উক্ত প্রথাটি অনুসৃত হয়েছে বা হয় এবং (৩) তার নেক সন্তান যে তার জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।     মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন,    

         الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِنْدَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا

ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা, কিন্তু স্থায়ী সৎ কর্মসমূহ আপনার প্রভু মহান আল্লাহর কাছে পুণ্যের দিক থেকে উত্তম ও সবচেয়ে কাংক্ষিত (অর্থাৎ যে সব জিনিস বা বিষয় আকাংক্ষা ও আশা করা যায় তন্মধ্যে সর্বোত্তম)।      

ইসলাম সার্বিকভাবে স্থায়ী সাদাকাহ্ বা দানের (যা ওয়াককৃত) ব্যাপারে অশেষ গুরুত্ব আরোপ করা ছাড়াও মসজিদসমূহের মেরামত ও সংস্কারের ব্যাপারেও মুসলমানদের মনোযোগ ও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং এ ব্যাপারে অনেক তাগিদ দিয়েছে। স্মতর্ব্য যে, এ মসজিদগুলোই ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের মূল ভিত্তি ও কেন্দ্রস্থল।

উবাইদাহ্ আল হিযা থেকে বর্ণিত, “আমি আবু আবদুল্লাহ্ (আ.)-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি একটি মসজিদ নির্মাণ করবে মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।    

পবিত্র কোরআনে এতদ্প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে :

إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّهَ فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ

নিঃসন্দেহে তারাই মহান আল্লাহর মসজিদসমূহ পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার করবে যারা মহান আল্লাহর প্রতি ও শেষ বিচার দিবসের প্রতি ঈমান এনেছে, নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুকেই ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায় এরা হেদায়েতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।    

 আর সামাজিক বিষয়াদির ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এই উক্তি থেকে পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইসলাম ধর্ম মুসলমানদের সড়কসমূহ সমতল ও মসৃণ করার মত তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত ছোটখাটো কাজ, ব্যাপার ও বিষয়কেও অসীম গুরুত্ব দেয়।     মহানবী (সা.) বলেছেন, “যা কিছু মুসলমানদের কষ্ট দেয় যদি কোন ব্যক্তি মুসলমানদের চলার পথ থেকে তা অপসারণ করে তাহলে মহান আল্লাহ তার জন্য (পবিত্র কোরআনের) চার শআয়াত তেলাওয়াত করার সমপরিমাণ পুণ্য দেবেন যার প্রতিটি বর্ণের জন্য রয়েছে দশটি পুণ্য।   

  ইমাম জাফর আস-সাদেক (আ.) বলেছেন, “ইমাম সাজ্জাদ (যয়নুল আবেদীন) রাস্তা অতিক্রম করার সময় যদি রাস্তায় কোন ছোট পাথর পড়ে থাকতে দেখতেন তাহলে তিনি সওয়ারী পশুর পিঠ থেকে নেমে হাত দিয়ে ঐ পাথরটি পথ থেকে দূরে সরিয়ে দিতেন।   

  মহানবী (সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলমানের উচিত প্রতিদিন দান-সাদাকাহ্ করা।তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো : কে তা করার সামর্থ্য রাখে? তিনি বললেন, “চলার পথ থেকে কষ্ট দূর করা আসলে এক ধরনের সাদাকাহ্ বিশেষ।১০

তথ্যসূত্র :

1.     উসূলে কাফী, পৃ. ৩৯০।

2.     উসূলে কাফী, পৃ. ৩৯১।

3.  বিহারুল আনওয়ার, ১৫শ খণ্ড, কিতাবুল ইশরাহ্, পৃ. ১২৪।

4.     বিহারুল আনওয়ার, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৭৫।

5.     সূরা কাহাফ : ৪৬।

6.     ওয়াসাইলুশ শিয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩০৪।

7.     সূরা তাওবা :১৮।

8.  বিহারুল আনওয়ার, ১৫শ খণ্ড, কিতাবুল ইশরাহ্, পৃ. ১৩১।

9. বিহারুল আনওয়ার, ১৫শ খণ্ড, কিতাবুল ইশরাহ্, পৃ. ১৩১।

10. বিহারুল আনওয়ার, ১৫শ খণ্ড, কিতাবুল ইশরাহ্, পৃ. ১৩১।

(জ্যোতি বর্ষ ১ সংখ্যা ৩  )

 

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)