আল হাসানাইন (আ.)

কবর জিয়ারত

6 বিভিন্ন মতামত 03.0 / 5

ইসলামী ইতিহাসের পরিক্রমায় মুসলমানগণ কবর জিয়ারতকে শুধু বৈধই মনে করেন নি;বরং আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারতের উদ্দেশে সফরকে মুস্তাহাব জানেন এবং এ বিষয়ে তাদের মধ্যে ইজমা (শারয়ী ঐকমত্য)রয়েছে। কিন্তু প্রথমবারের মতো এ বিষয়টিকে ইবনে তাইমিয়া নিষিদ্ধ ও অবৈধ ঘোষণা করেন এবং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে হারাম বলে ফতোয়া দেন। তার পরবর্তীকালে তার শিষ্য ও চিন্তার প্রচারকগণ এ ফতোয়ার পক্ষাবলম্বন করেন এবং তা প্রতিষ্ঠার ব্রত নেন। মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব ও তার অনুসারীরা কবর জিয়ারতকে হারাম বলে মনে করে এবং এ ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। যেহেতু এ বিষয়টির বিশেষ ধর্মীয় প্রভাব রয়েছে সেহেতু বিষয়টির বৈধতার বিষয়ে আমরা এখানে পর্যালোচনা করব।

পবিত্র কোরআন ও কবর জিয়ারত

পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বর্ণিত বিবরণ হতে আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারত বৈধ ও মুস্তাহাব হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করা যায়। আমরা এখানে এরূপ কয়েকটি আয়াতের প্রতি ইশারা করব।

১। মহান আল্লাহ মহানবীকে মুনাফিকদের কবরের নিকট দণ্ডায়মান হতে নিষেধ করে বলেছেন:

 وَ لا تقم علی قبره “আপনি তাদের (মুনাফিকদের) কবরের নিকট দণ্ডায়মান হবেন না।”

উপরিউক্ত আয়াতটিতে মুনাফিকদের ব্যক্তিত্ব ও মূল্যহীনতার দিকে লক্ষ্য করে তাদের মৃত্যুর পর দাফনের মুহূর্তে অথবা পরবর্তীকালে তাদের কবরের নিকট জিয়ারতের উদ্দেশ্যে দাঁড়াতে নিষেধ করা হয়েছে।

বাইযাভী তাঁর ‘আনওয়ারুত্ তানযীল’ গ্রন্থে এবং আলূসী তাঁর ‘রুহুল মায়ানী’ তাফসীরে উপরিউক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেছেন তাদের কবরের নিকট দাঁড়ানোর অর্থ দাফনের সময় অথবা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে।

মুনাফিক ও কাফিরের কবরের নিকট জিয়ারতের উদ্দেশ্যে দাঁড়ানো নিষিদ্ধ হওয়া হতে বোঝা যায় মুমিন ও মুসলমানের কবরের নিকট দাঁড়ানো ও তাদের জিয়ারত করা বৈধ এবং এতে কোন অসুবিধা নেই।

২। মহান আল্লাহ আসহাবে কাহফের বিষয়ে ও তাঁদের প্রতি মানুষদের সম্মান প্রদর্শনের ধরণ কী হওয়া উচিত তা নিয়ে যে দ্বন্দ্ব হয়েছে তার উল্লেখ করে বলেছেন,

﴿إِذْ يَتَنَازَعُونَ بَيْنَهُمْ أَمْرَهُمْ فَقَالُوا ابْنُوا عَلَيْهِمْ بُنْيَانًا رَبُّهُمْ أَعْلَمُ بِهِمْ قَالَ الَّذِينَ غَلَبُوا عَلَى أَمْرِهِمْ لَنَتَّخِذَنَّ عَلَيْهِمْ مَسْجِدًا﴾

“যখন তারা নিজেদের মধ্যে তাদের (সম্মান প্রদর্শনের) বিষয়ে পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হল এবং তারা (একদল) বলেছিল : তাদের (কবরের) উপর সৌধ নির্মাণ করব। তাদের প্রতিপালক তাদের বিষয়ে অধিক অবগত। তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল তারা বলল : আমরা অবশ্যই তাদের উপর (কবরস্থানে) মসজিদ নির্মাণ করব।” (সূরা কাহ্ফ : ২১)

মুফাসসিরগণ বলেছেন,‘অনেকের মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব হতে বোঝা যায় তারা মুসলমান ও একত্ববাদী ছিল। তাদের মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাবও এ লক্ষ্যে ছিল যে,সবসময় যেন লোকজন সেখানে যায় এবং তাদের (আসহাবে কাহ্ফ)  মাজারও জিয়ারতের স্থানে পরিণত হয়।’

 

কবর যিয়ারত সম্পর্কিত হাদীসসমূহ

মহানবী (সা.) কবর জিয়ারতের কেবল নির্দেশই দান করেন নি,বরং তিনি নিজেও কবর জিয়ারতে যেতেন যাতে করে এ বিষয়টি জায়েয ও মুস্তাহাব হওয়ার বিষয়টি ব্যবহারিক ক্ষেত্রেও প্রমাণিত হয়। আমরা তাই কবর জিয়ারতের বৈধতার বিষয়টি হাদীস এবং মহানবীর অনুসৃত কর্ম (সীরাত) উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই পর্যালোচনা করছি।

ক) হাদীসসমূহে কবর জিয়ারতের বৈধতার দলিল :  ইসলামী শরীয়তে কবর জিয়ারত বৈধ হওয়ার বিষয়টিতে তিনটি পর্যায় লক্ষণীয়।

প্রথম পর্যায় : এ পর্যায়ে পূর্ববর্তী শরিয়তের বৈধতার বিষয়টিই বহাল ছিল।

দ্বিতীয় পর্যায় : ইসলামের প্রাথমিক যুগে কোন কোন গোষ্ঠী বিশেষত আহলে কিতাবের অনুসারীদের শিরক বা অংশীবাদমিশ্রিত বিশ্বাস যা তারা তাদের মৃত ঐশী ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে পোষণ করত (যেমন কবরের উপর সিজদা করা) রোধ করার লক্ষ্যে তৎকালীন সময়ের জন্য তা নিষিদ্ধ করা হয়।

তৃতীয় পর্যায় : এই পর্যায়ে পুনরায় কবর জিয়ারতকে বৈধ (জায়েয) করা হয়। মহানবী (সা.) বলেছেন,‘আমি তোমাদের জন্য কবর জিয়ারতকে নিষিদ্ধ করেছি,কিন্তু এখন হতে তা তোমাদের জন্য বৈধ করা হল তবে  জিয়ারতের সময় এমন কথা বলো না যাতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।’

 

খ) মহানবী (সা.)-এর অনুসৃত কর্মপদ্ধতিতে কবর জিয়ারত :

১। বুরাইদা আসলামী মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি বলেছেন : ‘আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু আমাকে আমার মাতার কবর জিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তোমরা তোমাদের মৃতদের কবর জিয়ারত কর। কারণ তা তোমাদের আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

২। হাকিম নিশাবুরী বুরাইদাহ হতে বর্ণনা করেছেন যে,মহানবী সহস্র ফেরেশতাসহ তাঁর মাতার কবর জিয়ারত করেন। সেদিনের ন্যায় এত অধিক ক্রন্দন করতে আমি তাঁকে কখনোই দেখি নি।

আবু হুরাইরা বলেছেন,‘মহানবী (সা.) তাঁর মাতার কবর জিয়ারত করার সময় এতটা ক্রন্দন করেছিলেন যে,অন্যরা তাঁর কান্নায় প্রভাবিত হয়ে কাঁদতে শুরু করেছিল।’

৩। তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ্ বলেছেন,‘আমরা রাসুলের সাথে শহীদদের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনা হতে বের হলাম। যখন আমরা ‘হাররে ওয়াকিম’ নামক স্থানে পৌঁছালাম কয়েকটি কবর লক্ষ্য করে তাঁকে বললাম : হে আল্লাহর নবী! এগুলো কি আমাদের মুসলিম ভ্রাতাদের কবর? তিনি বললেন : এ কবরগুলো আমার সাহাবীদের। যখন আমরা শহীদদের কবরের নিকট পৌঁছালাম তিনি বললেন : এ কবরগুলো আমাদের ভ্রাতৃবর্গের।’

৪। মুসলিম হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন যে,মহানবী (সা.) শেষ রাত্রে জান্নাতুল বাকীর গোরস্তানে যেয়ে এভাবে সালাম করতেন ‘আস্ সালামু আলা দারে কাওমি মুমিনীন।’

৫। ইবনে আবি শাইবাহ বলেছেন,‘মহানবী (সা.) প্রতি বছরের শুরুতে ওহুদের শহীদদের কবরের নিকটে গিয়ে এভাবে সালাম দিতেন,‘আসসালামু আলাইকুম বিমা সাবারতুম ফানি’মা উকবাদ্দার।’

গ) পূর্ববর্তীগণের জীবন ও কর্মধারায় কবর জিয়ারত : সাহাবী,তাবেয়ী ও ইসলামী উম্মাহর আলেমগণের জীবন ও কর্মধারায় আমরা কবর জিয়ারতের প্রচলন লক্ষ্য করি। এখানে আমরা এরূপ ব্যক্তিবর্গের এরূপ কর্মের নমুনা পেশ করছি।

১। হযরত ফাতিমাতুয যাহরা (আ.) ও কবর জিয়ারত : হাকিম নিশাবুরী তাঁর নিজস্ব সনদ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি মহানবীর জীবদ্দশায় প্রতি শুক্রবার হযরত হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবের (ওহুদের যুদ্ধে শহীদ রাসূলের চাচা) কবর জিয়ারতে যেতেন। সেখানে নামাজ পড়তেন এবং ক্রন্দন করতেন।১০

২। খলিফা উমর ইবনে খাত্তাব এবং কবর জিয়ারত : মুহিবুদ্দিন তাবারী বর্ণনা করেছেন যে,হযরত উমর কয়েকজন সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে হজ্জ্বে যাওয়ার সময় পথে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি তার কাছে সাহায্য চাইল। তিনি হজ্জ্ব হতে ফেরার সময় ঐ স্থানে পৌঁছে উপরিউক্ত ব্যক্তির খোঁজ খবর জানতে চাইলেন। তাকে বলা হলো সে মৃত্যুবরণ করেছে। এ কথা শুনে তিনি দ্রুত তার কবরের নিকট যেয়ে নামাজ পড়লেন ও সেখানে বসে ক্রন্দন করলেন।১১

৩। হযরত আয়েশা ও কবর জিয়ারত : ইবনে আবি মালিকা বলেছেন : একদিন হযরত আয়েশা  কবরস্থানে প্রবেশ করলেন আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম : কেন কবরস্থানে প্রবেশ করছেন? তিনি বললেন : আমার ভাই আবদুর রহমানের কবর জিয়ারত করতে। আমি বললাম : মহানবী (সা.) কি কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেন নি? তিনি বললেন : তিনি নিষেধ করেছিলেন,কিন্তু পরে অনুমতি দিয়েছেন।১২

৪। হযরত আলী (আ.) ও কবর জিয়ারত : খাব্বাব ইবনে আরত প্রাথমিক মুসলমানদের একজন তিনি কুফায় বসবাসকালীন সময়ে গুরুতর অসুস্থতার কারণে হযরত আলীর সঙ্গে সিফ্ফিনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। যখন ইমাম আলী (আ.) সিফ্ফিন হতে ফিরে এসে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ শুনলেন তখন তাঁর কবরের নিকট গিয়ে জিয়ারত করলেন।১৩

৫। মুহাম্মদ ইবনে হানাফীয়াহ ও কবর জিয়ারত: ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.) শাহাদাত বরণের পর মুহাম্মদ ইবনে হানাফীয়াহ তাঁর কবরের নিকট পৌঁছলে তাঁর কণ্ঠরোধ হয়ে আসল। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হলে তিনি ইমাম হাসানের প্রশংসা করতে লাগলেন।১৪

৬। আবু খাল্লাল ও কবর জিয়ারত : স্বীয়যুগে হাম্বলী ফিকাহর ইমাম আবু খাল্লাল বলেছেন,‘যখনই আমি কোন সমস্যায় পড়তাম হযরত মূসা ইবনে জাফরের (আ.) নিয়ত করতাম এবং তাঁর উসিলায় আল্লাহর নিকট চাইতাম। আল্লাহর ইচ্ছায় আমার সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।’১৫

৭। ইবনে খোজাইমা ও কবর জিয়ারত : আবু বকর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মুয়াম্মাল বলেছেন : আহলে হাদীসের ইমাম আবি বাকর ইবনে খোজাইমা,ইবনে আলী সাকতী ও স্বনামধন্য কয়েকজন আলেমের সঙ্গে হযরত আলী ইবনে মূসা আর রেজার কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। লক্ষ্য করলাম ইবনে খোজাইমা এমনভাবে আলী ইবনে মূসার কবরের প্রতি সম্মান ও বিনয় প্রদর্শন করলেন যে,আমরা হতভম্ব হলাম।১৬

আহলে সুন্নাতের আলেমদের ফতোয়া

১। ইবনে ইদ্রিস শাফেয়ী বলেছেন : ‘কবর জিয়ারতে কোন সমস্যা নেই। তবে জিয়ারতের মুহূর্তে এমন কিছু বলা যাবে না যাতে মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।’১৭

২। হাকিম নিশাবুরী বলেছেন : ‘কবর জিয়ারত মুস্তাহাব সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।’১৮

৩। শেখ মানুসর আলী নাসেফ বলেছেন : ‘আহলে সুন্নাতের আলেমদের দৃষ্টিতে কবর জিয়ারত করা মুস্তাহাব।১৯

৪। ইবনে হাজম,আবু হামিদ গাজ্জালী এবং আবদুর রহমান জায়িরী হতে বর্ণিত হয়েছে তাঁরা মৃত ব্যক্তির জিয়ারতকে মুস্তাহাব মনে করতেন।২০

 

আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহানবীর কবর জিয়ারত

মহানবীর কবর জিয়ারতের বৈধতার বিষয়টি প্রমাণকারী কয়েকটি আয়াত রয়েছে,যেমন :

﴿ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا﴾

“আর যদি তারা (মুনাফিকরা) নিজেদের উপর জুলুম করার পর তোমার (রাসূলের) নিকট আসত এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করত সেই সাথে রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন তবে তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী ও দয়াবান হিসেবে পেত।”২১ অবশ্য কোন কোন মুফাসসিরের মতে উপরিউক্ত আয়াত মহানবীর  জীবদ্দশার সাথে জড়িত অর্থাৎ যেসব ব্যক্তি নিজের উপর অন্যায় করার পর তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে অন্যায় (গুনাহ) স্বীকার করে তাঁকে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানাত এবং তিনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন তখন আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন। কিন্তু এ বিষয়টি মহানবীর  মৃত্যুর পরও প্রমাণযোগ্য।

সাবকী তাঁর ‘শিফাউস সিকাম’ গ্রন্থে বলেছেন,‘যদিও আয়াতটি রাসূল (সা.)-এর জীবদ্দশার সাথে সম্পর্কিত তদুপরি মৃত্যুর সাথে সাথে তাঁর এ মর্যাদার পরিসমাপ্তি ঘটে নি। এ কারণে বলা যায় সকলের জন্যই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার এ পদ্ধতির সর্বজনীনতা রয়েছে,তাই আলেমগণ উপরিউক্ত আয়াত হতে সর্বজনীনতা বুঝে থাকেন এবং রাসূলের  কবরের নিকট উক্ত আয়াত পাঠ করা মুস্তাহাব।২২

সাবকীর বক্তব্যে সর্বজনীনতার যে কারণটি উল্লেখ করা হয়েছে তার ব্যাখ্যায় বলতে চাই গুনাহকারী ব্যক্তিকে রাসূলের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শটি তাঁর শাফায়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং নিঃসন্দেহে তাঁর মৃত্যুর পরও গুনাহকারীদের জন্য এরূপ মাধ্যমের (স্বয়ং নবী অথবা আল্লাহর কোন ওলীর শাফায়াতের) প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কবর জিয়ারতে যাওয়া ও তাঁর মধ্যস্থতায় আল্লাহর নিকট চাওয়ায় কোন সমস্যা নেই।

সুফিয়ান ইবনে আম্বার উতবা হতে (যাঁরা উভয়েই ইমাম শাফেয়ীর হাদীসের শিক্ষক) বর্ণনা করেছেন : আমি মহানবীর কবরের নিকট বসেছিলাম এ সময় একজন বেদুইন আরব রাসূল (সা.)-এর কবরের নিকট এসে বলল : হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উপর আমার সালাম। অতঃপর সূরা নিসার উপরিউক্ত আয়াতটি পাঠ করে বলল : হে নবী! আমি আপনার নিকট এসে আমার গুনাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আল্লাহর নিকট আপনাকে শাফি (মধ্যস্থতা ও সুপারিশকারী) হিসেবে পেশ করছি। এ কথা বলে সে ক্রন্দন করতে লাগল এবং রাসূলের শানে কবিতা আবৃত্তি করল।২৩

সামআনী একই রকম ঘটনা হযরত আলী হতে বর্ণনা করেছেন।২৪  তিনি বলেছেন,‘যদি এই কর্ম সঠিক ও বৈধ না হতো তবে সাহাবিগণ,বিশেষত হযরত আলী (আ.) ঐ স্থানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কেন নিষেধ করলেন না?২৫

 

হাদীসের দৃষ্টিতে মহানবী (সা.)-এর কবর জিয়ারত

 

আহলে সুন্নাতের হাদীস গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সহীহ্ হাদীস পাওয়া যায় যা রাসূলের কবর জিয়ারত মুস্তাহাব হওয়াকে প্রমাণ করে। এখানে এরূপ কয়েকটি হাদীসের উল্লেখ করছি।

১। দারে কুতনী সহীহ্ সূত্রে আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর হতে বর্ণনা করেছেন যে,মহানবী (সা.) বলেছেন,‘যে কেউ আমার কবর জিয়ারত করবে তার জন্য শাফায়াত (সুপারিশ) করা আমার জন্য আবশ্যক হবে।’২৬

২। দারে কুতনী সহীহ্ সূত্রে রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি বলেছেন,‘যে কেউ হজ্জ্ব করার পর আমার কবর জিয়ারত করতে আসবে সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করল।২৭

৩। বায়হাকী সহীহ্ সূত্রে আনাস ইবনে মালিক হতে বর্ণনা করেছেন,মহানবী (সা.) বলেছেন,‘যে কেউ দুই হারামে (মক্কা ও মদীনায়) মৃত্যুবরণ করবে সে নিরাপত্তা লাভকারীদের (আল্লাহর আজাব হতে) অন্তর্ভুক্ত হিসেবে কিয়ামত দিবসে পুনরুত্থিত হবে এবং যে কেউ আমাকে ইখলাসের সাথে (নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর উদ্দেশ্যে) জিয়ারত করবে,সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে থাকবে।’২৮

৪। ইবনে আদী আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর থেকে বর্ণনা করেছেন যে,মহানবী (সা.) বলেছেন,‘যে কেহ আল্লাহর ঘর (কাবা) জিয়ারত করল ও হজ্জ্ব সম্পাদন করল,কিন্তু আমার কবর জিয়ারত করল না,সে আমার প্রতি অবিচার করল (অর্থাৎ আমার প্রতি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করল না।’২৯

৫। আনাস ইবনে মালিক মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি বলেছেন,‘যে কেউ আমার মৃত্যুর পর আমাকে জিয়ারত করল সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমাকে জিয়ারত করল। যে কেউ আমার কবর জিয়ারত করল তার শাফায়াত (সুপারিশ) করা আমার জন্য কিয়ামতের দিন অপরিহার্য হয়ে পড়বে এবং কোন স্বচ্ছল ব্যক্তি ও সুস্থ ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত হতে বিরত থাকলে তার জন্য কিয়ামতে কোন ওজরই গৃহীত হবে না।৩০

 

সাহাবীদের জীবন ও কর্মে রাসূল (সা.)-এর কবর জিয়ারত

 

আমরা সাহাবী,তাবেয়ী ও ইসলামের প্রথম সারির অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের কর্মধারায় মহানবীর কবর জিয়ারতের রীতি লক্ষ্য করি। এরূপ কয়েকটি নমুনা এখানে উপস্থাপন করছি।

১। হযরত ফাতিমাতুজ যাহরা (আ.) : হযরত আলী (আ.) বলেছেন : মহানবীর দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর ফাতিমা জাহরা (আ.) তাঁর পিতার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে এক মুঠো কবরের মাটি নিয়ে নিজ চোখে স্পর্শ করলেন এবং ক্রন্দনরত অবস্থায় নিম্নোক্ত কবিতাটি আবৃত্তি করলেন :

ماذا علی من شمّ تربة احمد

ان لا يشمّ علی الزمان غوالیا

صبت علیَّ مصائب لو أنها

صبَّت علی الایام عدن لیالیا

২। হযরত বেলাল (রা.) : হযরত বেলাল রাসূল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর সিরিয়ায় হিজরত করেন। একরাত্রে তিনি মহানবী (সা.)-কে স্বপ্নে দেখলেন যে,তিনি তাঁকে বলছেন,‘হে বেলাল! আমার প্রতি দায়িত্বের ক্ষেত্রে এটি তোমার কিরূপ অবহেলা? তোমার কি আমাকে জিয়ারতের সময় আসে নি? হযরত বেলাল অস্থির হয়ে ঘুম থেকে জাগলেন ও দ্রুত প্রস্তুত হয়ে বাহনে আরোহণ করে মদীনার দিকে যাত্রা করলেন। মদীনায় পৌঁছেই তিনি রাসূলের কবরের নিকট গিয়ে ক্রন্দন করতে লাগলেন ও নিজের গণ্ডদেশ কবরের উপর রাখলেন।৩২

৩। আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর : সামহুদী বর্ণনা করেছেন,‘আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর যখনই কোন সফর হতে ফিরতেন রাসূলের কবরের নিকট গিয়ে সালাম দিতেন।৩৩

৪। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী : হাকিম নিশাবুরী বর্ণনা করেছেন,‘একদিন মারওয়ান ইবনে হাকাম মহানবীর কবরের নিকট গিয়ে দেখল এক ব্যক্তি রাসূলের কবরের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে রয়েছে (ও ক্রন্দন করছে)। মারওয়ান ঐ ব্যক্তির ঘাড় ধরে উঠিয়ে বলল,‘জান তুমি কি করছ?’ কিন্তু পরক্ষণেই তাকিয়ে দেখল তিনি রাসূলের প্রসিদ্ধ সাহাবী আবু আইয়ুব আনসারী। আবু আইয়ুব আনসারী তার দিকে তাকিয়ে বললেন,‘আমি কোন পাথরের নিকট আসি নি,আমি আল্লাহর রাসূলের নিকট এসেছি।৩৪

কবর জিয়ারতের নিয়তে সফরের শরীয়তগত বৈধতা

ওয়াহাবী আলেমগণ কবর জিয়ারতকে বৈধ মনে করলেও কবর জিয়ারতের নিয়তে যাত্রাকে বৈধ ও জায়েয মনে করেন না,বরং একে ‘বিদআত’ বলে অভিহিত করেছেন,এমনকি যদি তা রাসূল (সা.)-এর কবর জিয়ারতের নিয়তেও হয়। তবে ইবনে তাইমিয়া কবর জিয়ারতকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ফতোয়া দিয়েছেন।

এখন আমরা কবর জিয়ারতের নিয়তে (বিশেষত রাসূলের কবর জিয়ারত) সফরের শরীয়তগত (শারয়ী) বৈধতাকে প্রমাণ করব :

১। মহান আল্লাহ বলেছেন :

 ﴿وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا﴾

আয়াতটিতে  ‘جاءوک’ বলা হয়েছে যাতে নিকটবর্তী ও দূরবর্তী সকল স্থান হতে রাসূলের নিকট গমনের বিষয়টি প্রমাণিত হয়।

২। যে হাদীসটিতে মহানবী (সা.) বলেছেন من زار قبری তাতে জিয়ারতের শব্দটিও নিকট ও দূরবর্তী উভয় স্থানকে শামিল করবে। বিশেষত যে হাদীসটিতে ইবনুস সাকান সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন তাতে উল্লেখও হয়েছে من جائنی زائراً অর্থাৎ যে আমার নিকটে আসবে জিয়ারতকারী হিসেবে যা জিয়ারতের সফরের প্রতিই ইঙ্গিত করছে। বাহ্যিকভাবে তা হতে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর বোঝা যায়।

৩। কোন কোন হাদীস হতে স্পষ্টভাবে অথবা বাক্যের ধরন হতে জিয়ারত মুস্তাহাব ও জায়েয হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়,এমনকি জিয়ারতের নিয়ত করা ও জিয়ারতের নিয়তে সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ এবং সে উদ্দেশ্যে যাত্রার বিষয়টিও প্রমাণিত হয়।

মুসলিম ও অন্যান্যরা সহীহ সনদে বুরাইদা আসলামী হতে বর্ণনা করেছেন মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘আমি তোমাদেরকে আমার কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,কিন্তু আমাকে আমার মাতার কবর জিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন হতে তোমরাও কবর জিয়ারত কর,তা তোমাদের আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।’ 

মহানবী (সা.) বলেছেন,‘আমাকে আমার মাতার কবর জিয়ারত করার অনুমতি দেয়া হয়েছে’- বাক্যটি হতে বোঝা যায় কোন স্থান হতে জিয়ারতের নিয়তে বের হতে কোন অসুবিধা নেই।

সামআনী ইমাম আলী (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন যে,এক আরব বেদুইন রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর দাফনের তিনদিন পর মদীনায় প্রবেশ করে সরাসরি তাঁর কবরের নিকট গিয়ে তাঁর কবরের উপর উপুড় হয়ে মাটি উঠিয়ে নিজের মাথার উপর ফেলতে লাগল এবং তাঁর উদ্দেশে বলল,‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের উদ্দেশে বলেছেন এবং আমরাও আপনার কথা শুনেছি। আপনি আল্লাহর নিকট হতে কোরআনের আয়াত গ্রহণ করেছেন এবং আমরা আপনার নিকট থেকে তা গ্রহণ করেছি। আপনার উপর অবতীর্ণ আয়াতের একটি হলো ولو أنّهم إذ ظلموا أنفسهم جاءوک... আমি আমার উপর জুলুম (অনিষ্ট সাধন) করেছি। এখন আপনার নিকট এসেছি,আমার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন। ৩৭

হযরত বেলালের স্বপ্ন দেখা এবং সিরিয়া থেকে মদীনার উদ্দেশে রাসূলের জিয়ারতের লক্ষ্যে যাত্রার বিষয়টি যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি,কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাত্রার বৈধতাকে ভালোভাবেই প্রমাণ করে।৩৮

সাবকী বর্ণনা করেছেন,‘খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ প্রায়শই সিরিয়া হতে কাউকে না কাউকে মদীনায় তাঁর পক্ষ হতে জিয়ারত করতে ও রাসূলের প্রতি সালাম দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করতেন।৩৯

খাতিব বাগদাদী হাম্বালী ফিকাহর শীর্ষস্থানীয় আলেম আবি আল খাল্লাল হতে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি তাঁর সময়ে যে কোন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যায় হযরত মূসা ইবনে জাফর (আ.)-এর কবর জিয়ারতের নিয়ত করতেন ও সে উদ্দেশ্যে যাত্রা করতেন। তিনি তাঁর প্রতি তাওয়াসসুল করতেন (অর্থাৎ তাঁর মধ্যস্থতায় ও মর্যাদার শানে আল্লাহর নিকট চাইতেন)। ফলে তাঁর সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।৪০

পূর্বে উল্লিখিত আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে মুয়াম্মালের বর্ণনা হতেও আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাত্রার বৈধতা প্রমাণিত হয়।৪১

তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ্ও বর্ণনা করেছেন যে,রাসূল (সা.) সাহাবীদের নিয়ে ওহুদের শহীদদের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে গিয়েছেন।৪২

হযরত আয়েশা বলেছেন,‘যে রাতগুলোতে আমার পালা থাকত এবং রাসূল (সা.) আমার ঘরে থাকতেন শেষ রাত্রিতে তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে কবর জিয়ারতে যেতে দেখতাম।৪৩

উপরিউক্ত হাদীসগুলো থেকে কবর জিয়ারতের নিয়তে যাত্রা শুধু জায়েযই নয়,এমনকি মুস্তাহাব হওয়ার বিষয়টিও প্রমাণিত হয়।

৪। মুসলমানদের ইতিহাসের ধারায় এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে,তারা আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতেন।

৫। আহলে সুন্নাতের সহীহ হাদীস গ্রন্থসমূহে রাসূল (সা.) হতে অসংখ্য বর্ণনায় বলা হয়েছে,যদি কেউ মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ ফেলে তার প্রতি পদে মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ও তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়।৪৪

এই সওয়াব লাভের বিষয়টি মসজিদে অবস্থানের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যাত্রা ও পদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই ঘটে থাকে,তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে তাঁর ওলীদের কবর জিয়ারতের প্রস্তুতি গ্রহণ ও এজন্য যাত্রাও আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়।

 

কবর জিয়ারত হারাম হওয়ার বিষয়গুলোতে ওয়াহাবীদের দলীল

 

কবর জিয়ারত হারাম হওয়ার বিষয়ে [এমনকি রাসূল (সা.)-এর কবরও] ওয়াহাবীদের প্রধান দলিল হলো আবু হুরাইরা বর্ণিত এ হাদীসটি : রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘তিনটি মসজিদ,যথা মসজিদুল হারাম,মসজিদুন নবী ও মসজিদুল আকসা ব্যতীত অন্য কোন স্থানের উদ্দেশ্যে যাত্রা কর না।’৪৫

তাদের উপস্থাপিত এই দলিলের জবাবে বলব,এই হাদীসে তিনটি স্থানকে ব্যতিক্রম ধরা হয়েছে অর্থাৎ আরবী ব্যকরণের ভাষায় ‘মুসতাসনা মিনহু’র অনুবর্তী। ‘মুসতাসনা মিনহু’ অর্থাৎ যার হতে ব্যতিক্রম করা হয়েছে তা দু’ধরনের হতে পারে।

প্রথমত মুসতাসনা মিনহু ‘مسجد من المساجد’ অর্থাৎ মসজিদসমূহের মধ্যে তিনটি মসজিদ ব্যতিক্রম। সেক্ষেত্রে হাদীসটির অর্থ হবে : মসজিদগুলোর মধ্যে তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্যগুলোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করা বৈধ ও জায়েয নয়।

দ্বিতীয়ত যদি ‘মুসতাসনা মিনহু’ স্থানসমূহ হয়,সেক্ষেত্রে স্থানসমূহের মধ্যে তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্যে ছাড়া যাত্রা করা জায়েয নয়।

প্রথম অর্থে মহানবী (সা.)-এর কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাত্রার ক্ষেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। কারণ মহানবীর কবর মসজিদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

দ্বিতীয় অর্থে নিষেধাজ্ঞা সার্বিক হয়ে পড়ে,সেক্ষেত্রে যে কোন ধরনের সফরই নিষিদ্ধ হয়ে যায়,এমনকি যদি তা জিয়ারতের উদ্দেশ্যে নাও হয়। কোন ব্যক্তিই এরূপ নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বাসী নয়।

তাই আমরা বলতে পারি,যদি হাদীসটি সহীহ ও সঠিক হয়ে থাকে তবে রাসূলের ঐ নিষেধ নিষিদ্ধ ঘোষক নয়,বরং উপদেশমূলক এ অর্থে যে,যেহেতু প্রত্যেক শহরেই মসজিদ রয়েছে তাই অন্য শহরের মসজিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা বাঞ্ছনীয় নয় ও অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু আল্লাহর ওলীগণের কবর জিয়ারত এরূপ নয়। উপরন্তু তাঁদের কবর জিয়ারতের বরকত ও আধ্যাত্মিক ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। আমরা পরবর্তীতে এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করব।

গাজ্জালী এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন : ‘সফর করা একটি মুস্তাহাব ইবাদত। যেমন আল্লাহর নবী,সাহাবী,তাবেয়ী,ওলীগণ ও আলেমদের কবর জিয়ারত। সার্বিকভাবে যে সকল ব্যক্তির জীবদ্দশায় তাঁদের হতে বরকত ও আধ্যাত্মিক ফায়দা লাভ করা যায় তাঁদের মৃত্যুর পরও কবর জিয়ারতের মাধ্যমে তাঁদের হতে বরকত ও ফায়দা লাভ করা যায়। তাই এ উদ্দেশ্যে যাত্রা বৈধ ও জায়েয। এ বিষয়টির সাথে মহানবী (সা.) হতে উদ্ধৃত হাদীসটির-তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন স্থানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করো না-কোন বৈপরীত্য নেই। কারণ হাদীসটি মসজিদ সম্পর্কিত এবং সকল মসজিদ মর্যাদার দিক থেকে পরস্পর সমান। তাই একটির উপর অপরটির কোন প্রাধান্য নেই যে,তার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে তিনটি মসজিদের শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশেষত্ব রযেছে,তাই সেগুলোর উদ্দেশ্যে যাত্রার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা নেই। আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা এ বিষয়টি হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন।৪৬

ডক্টর আবদুল মালিক সাদী বলেছেন : ‘অন্য সকল মসজিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা নিষেধ এজন্য যে,এরূপ কর্ম অর্থহীন যেহেতু সকল মসজিদের সওয়াব সমান,তিনটি মসজিদ ব্যতীত।’৪৭

কবর জিয়ারত ও নারিগণ  

ওয়াহাবীরা যদিও জিয়ারতের নিয়তে যাত্রা ব্যতীত কবর জিয়ারতকে পুরুষদের জন্য জায়েয মনে করে,কিন্তু নারীদের জন্য কোনভাবেই কবর জিয়ারত জায়েয মনে করে না।

দ্বীনি মাসয়ালার জবাব দানের জন্য গঠিত ওয়াহাবীদের স্থায়ী সদস্য কমিটি ঘোষণা করেছে ‘কবর জিয়ারত কেবল পুরুষদের জন্য জায়েয,তদুপরি তা সে উদ্দেশ্যে যাত্রার নিয়ত ব্যতীত হতে হবে। কিন্তু নারীদের জন্য কোন কবর জিয়ারত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।৪৮

শেখ আবদুল আজিজ বিন বায বলেছেন : ‘কবর জিয়ারত নারীদের জন্য জায়েয নয়। কারণ রাসূল (সা.) যে সকল নারী কবর জিয়ারতে যায় তাদের উপর অভিশাপ কামনা করেছেন।’৪৯

অন্যত্র এই নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে বলেছে,‘যেহেতু নারীদের ধৈর্যশক্তি কম,সেহেতু তারা কবরের নিকট আবেগতাড়িত হয়ে মর্সিয়া পাঠ করে ও তাদের মুখ হতে ধৈর্যের পরিপন্থী কথা বেরিয়ে আসে।’৫০

এই আপত্তির জবাবে আমরা বলব :  প্রথমত এই ফতোয়া রাসূলের সাহাবীদের ফতোয়া ও আচরণনীতির পরিপন্থী। কারণ হযরত ফাতিমা (আ.) রাসূলের জীবদ্দশায় প্রতি শুক্রবার (জুমআর দিনে) হযরত হামজা (রা.)-এর কবর জিয়ারতে যেতেন। তিনি তাঁর পিতা রাসূলের ইন্তেকালের পর স্বীয় পিতার কবর জিয়ারতে নিয়মিত যেতেন। প্রথম ক্ষেত্রে স্বয়ং রাসূল (সা.) তাঁর এ কর্মে বাধা দেন নি। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হযরত আলী (আ.) ও অন্যান্য সাহাবী তাঁকে নিষেধ করেন নি। ইবনে আবি মালিকা বলেছেন,‘আমি হযরত আয়েশাকে তাঁর ভ্রাতা আবদুর রহমান ইবনে আবু বকরের কবর জিয়ারতে নিয়মিত যেতে দেখতাম।’৫১

দ্বিতীয়ত ‘হে আল্লাহ কবর জিয়ারতকারী নারীর উপর অভিশাপ বর্ষণ কর’- এ হাদীসটি সনদের দিক থেকে দুর্বল। যে তিনটি সনদে,যথা: হাসসান ইবনে সাবেত,ইবনে আব্বাস ও আবু হুরাইরা হতে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে তিনটি সূত্রেই দুর্বল রাবী (হাদীস বর্ণনাকারী) রয়েছেন।

তৃতীয়ত এ হাদীস হযরত আয়েশা হতে বর্ণিত হাদীসের (রাসূল কবর জিয়ারত নিষেধ করেছিলেন,কিন্তু পরে অনুমতি দিয়েছেন) পরিপন্থী।

চতুর্থত যদি নারীদের কম ধৈর্যের কারণে কবর জিয়ারত হতে তাদের নিষেধ করা হয়ে থাকে তবে যে সকল নারীর ধৈর্য অধিক ও আপত্তিজনক কথা তাদের মুখ হতে বের হয় না,তাদের ক্ষেত্রে জিয়ারত নিষিদ্ধ নয়। কারণ হারাম হওয়ার প্রাথমিক শর্ত তাদের মধ্যে নেই। হারাম তখনই হবে যখন কোন জায়েয কর্ম নিশ্চিতরূপে মানুষকে হারামে ফেলে। তাই আহলে সুন্নাতের অনেক প্রসিদ্ধ ব্যক্তিই নারীদের কবর জিয়ারকে ধৈর্যধারণের শর্তে জায়েয বলেছেন।

 

কবর জিয়ারতের ইতিবাচক প্রভাবসমূহ

কবর জিয়ারত মানুষকে কোন অন্যায়ে তো ফেলেই না,বরং কোন কোন হাদীসে এর কল্যাণমূলক প্রভাবের কথা উল্লিখিত হয়েছে। এখানে আমরা এরূপ কয়েকটির প্রতি ইশারা করছি :

১। জিয়ারতকারীর মধ্যে বিনয় সৃষ্টি করে এবং মৃত্যু ও আখেরাতের স্মরণ করায়;সন্দেহ নেই মৃত ব্যক্তিদের  কবর জিয়ারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো আখেরাতের স্মরণ।

মুসলিম,আহমাদ ইবনে হাম্বাল,ইবনে মাজা এবং অন্যান্য হাদীসগ্রন্থ প্রণেতা নিজ নিজ সূত্রে রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,‘তোমরা কবর জিয়ারতে যাও,কেননা তা তোমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’৫২

২। মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া : এ বিষয়টি একটি উন্নত নৈতিক পদ্ধতি যা মৃত্যুর পরও সমাজে একজন মুসলমানের মর্যাদাকে রক্ষা ও সমুন্নত রাখার প্রমাণ বহন করে। উপরন্তু সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ,ভালোবাসা,পারস্পরিক সম্প্রীতি ও অধিকার রক্ষার মনোবৃত্তিকে জাগরুক রাখে।

মহানবী (সা.) বলেছেন,‘তোমাদেরকে আমি কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন হতে তোমরা কবর জিয়ারত কর এবং তাদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা কর।’৫৩

৩। মৃতের অধিকার রক্ষা : নিঃসন্দেহে কোন কোন মৃত ব্যক্তি জীবিতদের উপর বিশেষ অধিকার রাখেন। এই অধিকারের দাবী হলো জীবিতরা তাঁদের কবর জিয়ারত করবে। ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন,‘প্রতি ইমামের তাঁদের অনুসারীদের উপর অধিকার ও প্রতিশ্রুতি রয়েছে যা পালনের সর্বোত্তম পন্থা হলো তাঁদের কবর জিয়ারত।’৫৪

 

আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারতের দর্শন

আল্লাহর ওলীদের বিশেষত মহানবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ইমামদের কবর জিয়ারতের বিশেষ আধ্যাত্মিক প্রভাব ও বরকত রয়েছে। এখানে আমরা আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারতের কিছু আত্মিক প্রভাবের উল্লেখ করছি:

১। আল্লাহর ওলী ও ধর্মীয় ব্যক্তিগণ প্রকৃতপক্ষে সকলের আদর্শ যাদের অনুসরণের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য লাভ ও পূর্ণতায় পৌঁছা যায়। শুধু মুসলিম সমাজেই নয়,বরং যে কোন সমাজেই তাঁদের অনুসরণীয় ব্যক্তিদের মহৎ হিসেবে উপস্থাপনের প্রয়াস চালায় যাতে করে অন্যরাও তাঁদের অনুসরণের মাধ্যমে পূর্ণতা ও সাফল্যের পথে পা রাখতে পারে। যদিও এই অনুসরণীয় ব্যক্তিবর্গ জীবিত নেই কিন্তু তাঁদের কবর ও স্মৃতি সৌধে গমনের আহ্বান তাঁদের পথে চলতে অন্যদের অনুপ্রাণিত করে।

অনেক দেশেই কোন বিশেষ চত্বর বা ভাস্কর্যকে নাম না জানা আত্মত্যাগী সৈনিকদের নামে নামকরণ করা হয়। কারণ তারা দেশ প্রেমের প্রতীক এবং এ পথে নিজ জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছে। এ কর্মের মাধ্যমে ঐ জাতি চায় নতুন প্রজন্মকে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বহিঃশত্রুর হাত হতে দেশ রক্ষার মহান ব্রত নিতে উদ্বুদ্ধ করে।

জাতির মহান ব্যক্তিবর্গ ও আদর্শ নেতাদের কবরের নিকট যাওয়ার বিশেষ আত্মিক প্রভাব রয়েছে মনস্তত্ত্ববিদগণ এ বিষয়ের উপর বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন।

আব্বাস মাহমুদ আক্কাদ বলেছেন : সময়ের পরিক্রমায় এমন দিন আসল যখন হুসাইন (আ.)-এর জন্য সকল পথ রুদ্ধ করে কারবালার দিকে যেতে তাঁকে বাধ্য করা হল। আজ পর্যন্ত কারবালার ইতিহাস ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে রয়েছে যে,প্রকৃত প্রস্তাবে তা মানবজাতির ইতিহাসের অংশে পরিণত হয়েছে।

কারবালা বর্তমানে এমন এক স্থানে পরিণত হয়েছে,যেখানে মুসলমানগণ শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে জিয়ারতে যায়। এমনকি অমুসলমানরাও সেখানে ভ্রমণ ও দর্শনের উদ্দেশ্যে যায়। কিন্তু কারবালার অধিকার তখনই আদায় হবে যখন তা মানুষের জন্য পবিত্রতা ও মর্যাদায় বিশ্বাসী প্রতিটি ব্যক্তির জিয়ারতের স্থানে পরিণত হবে। কারণ আমার এমন কোন স্থানের কথা জানা নেই যা কারবালার ন্যায় মানবতার সকল মর্যাদাপূর্ণ ও ইতিবাচক সুন্দর দিকের স্মৃতি বহন করছে এবং এ বৈশিষ্ট্য সেটি ইমাম হুসাইনের  শাহাদাতের মাধ্যমে অর্জন করেছে।৫৫

২। জিয়ারত ভালবাসার প্রকাশ ও প্রতিচ্ছবি সন্দেহ নেই। আহলে বাইতের ভালবাসা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের উপর ওয়াজিব। মহানবী (সা.) বলেছেন : أحبُّوا اهل بیتی لِحُبّی ‘আমার আহলে বাইতকে আমার ভালবাসার কারণে ভালবাস।’৫৬

এ কারণেই রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ভালবাসা যেমনি ওয়াজিব তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ভালবাসাও তদ্রুপ ওয়াজিব। আমরা জানি ভালবাসার অবশ্যই প্রকাশ আছে যা শুধু তাঁদের আনুগত্য ও আন্তরিক ভালোবাসা পোষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাঁদের কবর জিয়ারতও ঐ আন্তরিক ভালোবাসার প্রকাশ।

৩। মহানবী (সা.) আহলে বাইতের পবিত্র ব্যক্তিদের কবর জিয়ারত তাঁর রেসালতের দায়িত্বে একরূপ বিনিময় স্বরূপ। মহান আল্লাহ বলেছেন,

﴿قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى﴾

 “(হে নবী!) বলুন,আমি আমার রেসালতের দায়িত্বের বিনিময় স্বরূপ আমার নিকটাত্মীয়ের ভালবাসা ব্যতীত কিছুই চাই না।” ৫৭

রাসূলের নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা পোষণের অন্যতম প্রকাশ হলো তাঁদের কবর জিয়ারত।

৪। আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারত তাঁদের অনুসৃত পথের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের গভীরতার নিদর্শন।

৫। আল্লাহর ওলিগণের কবর জিয়ারত বাস্তবিক ভাবে তাঁদের সঙ্গে নতুন করে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হওয়া যে,তাঁদের আদর্শ ও পথকে আমরা চিরজাগরুক রাখব। আমরা জানি আহলে বাইতের ইমামগণ আমাদের উপর অধিকার ও অভিভাবকত্ব রাখেন। তাই আমাদেরও উচিত তাঁদের অভিভাবকত্ব ও আমাদের উপর অধিকারকে মেনে নিয়ে তাদের সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া। এই প্রতিশ্রুতি শুধু মুখে ঘোষণার মাধ্যমে নয়,বরং নিজেদের কর্মের মাধ্যমে এই আন্তরিক প্রতিশ্রুতির প্রকাশ ঘটাব। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁদের কবর জিয়ারত ও তাঁদের রওজায় উপস্থিতির মাধ্যমে এই প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি ঘটাব। এ কারণেই ইমাম রেজা (আ.)-এর হাদীসে এসেছে- নিশ্চয়ই প্রতি ইমামের তাঁদের অনুসারীদের উপর অধিকার ও প্রতিশ্রুতি রয়েছে যা রক্ষা ও পালনের সর্বোত্তম পন্থা হলো তাঁদের কবর জিয়ারত করা।’৫৮

৬। আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারত মানুষের আধ্যাত্মিকতাকে বৃদ্ধি করে ও হৃদয়ে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে।

৭। আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারত তাঁদের সন্তুষ্টির কারণ হয় এবং তাঁদের দোয়ার ফলে ঐশী বরকত জিয়ারতকারীর উপর অবতীর্ণ হয়।

৮। ওলিগণের কবরের নিকটে গেলে তাঁদের ঐতিহাসিক অবদান ও আত্মত্যাগের কথা সকলের স্মরণ হয় যা তাঁদের অনুসৃত পথে চলার দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে তাদের উদ্বুদ্ধ করে।

৯। সর্বোপরি তাঁদের কবর জিয়ারত তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সন্ধির এবং তাঁদের শত্রুদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা স্বরূপ।

 

তথ্যসূত্র:

১। আনওয়ারুত তানযীল,১ম খণ্ড,পৃ. ৪১৬।

২। রুহুল মায়ানী,১০ম খণ্ড,পৃ. ১৫৫।

৩। আল মোজামুল কাবির,তাবরানী,১১তম খণ্ড,পৃ. ২০২,হাদীস নং ১১৬৫৩।

৪। সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,পৃ. ৩৬৬,হাদীস নং ১০৭,কিতাবুল জানায়িয।

৫। মুসতাদরাকে হাকিম,১ম খণ্ড,পৃ. ৫৩১,হাদীস নং ১৩৮৯।

৬। প্রাগুক্ত,হাদীস নং ১৩৯০।

৭। সুনানে ইবনে দাউদ,২য় খণ্ড,পৃ..২১৮,হাদীস নং ৩৫৭,কিতাবুল মানাসিক,জিয়ারতে কবর অধ্যায়।

৮। সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,পৃ. ৩৬৩,হাদীস নং ১০২,কিতাবুল জানায়িয।

৯। মুসতাদরাকে হাকিম,১ম খণ্ড,পৃ. ৫৩৩,হাদীস নং ১৩৯৬। 

১০। মুসতাদরাকে হাকিম,১ম খণ্ড,পৃ. ৫৩৩,হাদীস নং ১৩৯৬।

১১। আর রিয়াদুন নাদ্বরাহ,২য় খণ্ড,পৃ. ৩৩০।

১২। মুসতাদরাকে হাকিম,১ম খণ্ড,পৃ. ৫৩২,হাদীস নং ১৩৯২।

১৩। উসদুল গাবাহ,২য় খণ্ড,পৃ. ১৪৩।

১৪। আকদুল ফারিদ,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৩।

১৫। তারিখুল বাগদাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ১২০।

১৬। তাহজীবুত তাহজীব,৭ম খণ্ড,পৃ. ৩৩৯।

১৭। মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার,শাফেয়ী,৩য় খণ্ড,পৃ. ২০৩,কবর জিয়ারত অধ্যায়।

১৮। মুসতাদরাকে হাকিম,৩য় খণ্ড,পৃ. ৩৭৭।

১৯। মুসতাদরাকে হাকিম,৩য় খণ্ড,পৃ. ৩৭৭।

২০। আল মুহাল্লা,৫ম খণ্ড,পৃ. ১৬০,মাসআলা ৬০০;ইহইয়াউল উলুম,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ৫২১;আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া,১ম খণ্ড,পৃ. ৫৪০।

২১। সূরা নিসা : ৬৪। 

২২। শিফাউস সিকাম,পৃ. ৮১-৮২।

২৩। ওয়াফা উল ওয়াফা,সামহুদী,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৩৬১। 

২৪ । প্রাগুক্ত,২য় খণ্ড,পৃ. ৬১২।

২৫। প্রাগুক্ত।

২৬। সুনানে দারে কুতনী,২য় খণ্ড,পৃ. ২৭৮;সুনানুল কুবরা,বায়হাকী,৫ম খণ্ড,পৃ. ২৪৫।

২৭। সুনানে দারে কুতনী,২য় খণ্ড,পৃ. ২৭৮,হাদীস নং ১৯২। 

২৮। আত তাজুল জামে লিল উছুল,২য় খণ্ড,পৃ. ১৯০। 

২৯। ওয়াফা উল ওয়াফা ,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৩৪২। 

৩০। শিফাউস সিকাম,পৃ. ৩৭।

৩১। সীরাতে জাইনী দাহলান,২য় খণ্ড,পৃ. ৩১০। ইরশাদুস সারী,৩য় খণ্ড,পৃ. ৩৫২।

৩২। উসদুল গাবাহ,১ম খণ্ড,পৃ. ২৮৯;মুখতাছারু তারিখে দামেস্ক,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১১৮।

৩৩।ওয়াফাউল ওয়াফা,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৩৪০।

৩৪। বিহারুল আনওয়ার,৯৮তম খণ্ড,পৃ. ৫।

৩৫। সূরা নিসা : ৬৪।

৩৬। সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,পৃ. ৩৬৬,হাদীস নং ১০৭,কিতাবুল জানাইজ;সহীহ তীরমিজী,৩য় খণ্ড,পৃ. ৩৭০।

৩৭। ওয়াফা উল ওয়াফা,সামহুদী,২য় খণ্ড,পৃ. ৬১২।

৩৮। উসদুল গাবা,১ম খণ্ড,পৃ. ৩০৭-৩০৮;মুখতাছারে তারিখে দামেস্ক,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১১৮,তাহজীবুল কামাল,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ২৮৯।

৩৯। শিফাউস সিকাম,পৃ. ৫৫।

৪০। তারিখে বাগদাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ১২০।

৪১। তাহজীবুত তাহজীব,৭ম খণ্ড,পৃ. ৩৩৯। 

৪২। সুনানে আবি দাউদ,২য় খণ্ড,পৃ. ২১৮,হাদীস নং ৩৫৭।

৪৩। মুসতাদরাকে হাকিম,১ম খণ্ড,পৃ. ৫৩৩।

৪৪। সহীহ মুসলিম। 

৪৫। সহীহ বুখারী,২য় খণ্ড,পৃ. ১৩৬,কিতাবুস সালাত;সহীহ মুসলিম,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১২৬,কিতাবুল হজ্জ্ব।

৪৬। ইহইয়াউল উলুম,গাজ্জালী,২য় খণ্ড,পৃ. ২৪৭,সফরের আদব অধ্যায়।

৪৭।আল বিদআহ,ডক্টর আবদুল মালিক সাদী,পৃ. ৬০।

৪৮। আল লাজনাতুদ দায়িমাহ,১ম খণ্ড,পৃ. ২৮৮।

৪৯। মাজমুয়াতু ফাতাওয়া,বিন বায,২য় খণ্ড,পৃ. ৭৫৭।

৫০। প্রাগুক্ত,২য় খণ্ড,পৃ. ৭৫৩,৭৫৪।

৫১। আল মুসান্নাফ,আব্দুর রাজ্জাক,৩য় খণ্ড,পৃ. ৫৭২;আস সুনান আল কুবরা,৪র্থ খণ্ড,

পৃ. ১৩১। 

৫২। সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,পৃ. ৩৬৫,হাদীস নং ১০৬;মুসনাদে আহমাদ,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৮৬,হাদীস নং ৯৩৯৫;সুনানে ইবনে মাজা,১ম খণ্ড,পৃ. ৫০১,হাদীস নং ১৫৭২। 

৫৩। আল মোজামুল কাবির,তাবরানী,২য় খণ্ড,পৃ. ৯৪,হাদীস নং ১৪১৯।

৫৪। তাহজীবুল আহকাম,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ৭৮-৭৯,হাদীস নং ৩।

৫৫। আবুশ শুহাদা,আব্বাস মাহমুদ আক্কাদ,পৃ. ১২৯।

৫৬। মুসতাদরাকে হাকিম,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৪৯।

১৬৮। সূরা শুরা : ২৩।

৫৭। তাহজীবুল আহকাম,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ৭৮-৭৯।

(আবুল কাসেম কর্তৃক অনূদিত “ওয়াহাবীদের সৃষ্ট সংশয়ের অপনোদন” গ্রন্থ থেকে সংকলিত)

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)