আল হাসানাইন (আ.)

আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর কতিপয় বাণী ও সেগুলোর ব্যাখ্যা (শেষ আংশ)

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

সংকলন : এ. কে. এম. আনোয়ারুল কবীর

 

বাণী নং ৪৬

সম্মানী লোক যখন ক্ষুধার্ত হয় এবং হীন লোকের যখন উদর পূর্ণ থাকে (তখন) তাদের আক্রমণকে ভয় কর।

ইবনে মাইসাম বলেন,‘সম্মানী লোক’ বলতে উৎকৃষ্ট চিন্তার অধিকারী উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে এবং ‘ক্ষুধার্ত হওয়া’ অর্থ সে যখন তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। এ অবস্থায় যদি মানুষ তার প্রতি দৃষ্টি না দেয় তবে তার মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও ক্রোধের সৃষ্টি হয়। তখন সে তার উদ্দেশ্যে পৌছার জন্য নিজেকে হুমকির মধ্যে ফেলতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। সে যদি তার বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে তাদের ওপর কর্তৃত্ব লাভে সক্ষম হয় তবে তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে। তাই তার প্রয়োজনের সময় সকলের তার প্রতি দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক।

‘হীন লোকের যখন উদর পূর্ণ থাকে’ বলতে তার অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ও সম্পদশালী অবস্থা বুঝানো হয়েছে। যদি সে এ অবস্থায় পৌছায় তবে সে তার হীন ইচ্ছাকে কার্যকর করতে সকল ধরনের পদক্ষেপ নেয়। তখন যারা তার অধীনে থাকে অথবা তার প্রতি মুখাপেক্ষী তাদের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন চালায়। এরূপ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও উচিত সে যেন এরূপ ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি লাভ করতে না পারে তার জন্য সম্ভাব্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বাণী নং ৫২

ধৈর্য দুধরনের। যা তুমি অপছন্দ কর সে বিষয়ে ধৈর্য এবং যা তুমি পছন্দ কর সে বিষয়ে ধৈর্য।

ব্যাখ্যা : প্রথম ধরণের ধৈর্য হলো প্রতিকূলতার মোকাবেলায় দৃঢ়তা দেখানো যার নমুনা হলো যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসিকতা প্রদর্শন এবং দ্বিতীয় ধরণের ধৈর্য হলো ব্যক্তি যা পছন্দ করে ও চায় তা আল্লাহর নিষেধের কারণে বর্জন করা। চারিত্রিক ও নৈতিক সকল ক্ষেত্রে আত্মসংযম হলো এ ধৈর্যের নমুনা।

বাণী নং ৫৭

জিহবা হিংস্র পশুর ন্যায়। যদি তাকে ছেড়ে দাও দংশন করবে।

ব্যাখ্যা : যদি মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি ও বিবেক জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করে না রাখে তবে তা হিংস্র প্রাণীর ন্যায় যাকে পায় তাকে দংশন করবে অর্থাৎ মিথ্যা,পরনিন্দা চর্চা,অপবাদ আরোপ ও কু বাক্যের মাধ্যমে অন্যের সম্মানহানি ঘটাবে। এমনকি স্বয়ং জিহ্বার অধিকারীকেও অসম্মানিত করে ছাড়বে।

বাণী নং ৬৩

অপাত্রে কোন কিছু চাওয়া অপক্ষো প্রয়োজন পূরণ না হওয়া সহজতর (উত্তম)।

ব্যাখ্যা : অপাত্র বলতে হীন চরিত্র ও নীতিহীন ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে। প্রয়োজন পূরণ না হওয়াকে এজন্য সহজ বলা হয়েছে যে,এক্ষেত্রে মানুষ শুধু একটি কষ্ট পায় আর তা হলো তার আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হওয়া। কিন্তু অপাত্রে চাওয়া হলে সাধারণত তা লাভ করা যায় না। ফলে অপমানিত হতে হয়। সুতরাং এরূপ ক্ষেত্রে না পাওয়ার ও বঞ্চিত থাকার সঙ্গে আরেকটি কষ্ট যোগ হয় তা হলো অপমানের কষ্ট। তাই হীন ব্যক্তির নিকট চাওয়ার কষ্ট অধিক। এ বাণী থেকে এটাও বোঝা যায় যে,মানুষ যে ক্ষেত্রে এমন কিছুর মুখাপেক্ষী হয় যা হাতে পাওয়া সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে অন্যের নিকট চাওয়ার চেয়ে আত্মসংযমের পথ অবলম্বন করা উচিত।

বাণী নং ৬৪

সামান্য হলেও দান করতে লজ্জাবোধ করো না। কারণ,আদৌ কিছু না দেয়া তার থেকেও স্বল্প।

ব্যাখ্যা : ইবনে মাইসাম এ বাণীর ব্যাখ্যায় বলেছেন,স্বল্প বলতে এ বাণীতে নগণ্য বোঝানো হয়েছে। অবশ্য আদৌ কিছু না দেয়া শূন্যের ন্যায়। তাই তা পরিমাণের দৃষ্টিতে স্বল্প বা নগণ্য কিংবা তার বিপরীতে অধিক বা বেশি হওয়া কোনটির সঙ্গেই তুলনীয় নয়। তাই এখানে দাতার সাধ্য অনুযায়ী দানের দিকে দৃষ্টি দিয়ে লজ্জার খাতিরে স্পল্প দান থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন।

সূত্র:প্রত্যাশা,বর্ষ ৪,সংখ্যা ১-২।

 

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)