আল হাসানাইন (আ.)

সূরা আন নিসা;(২২তম পর্ব)

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

সূরা আন নিসা;আয়াত ৮০-৮২

সূরা নিসার ৮০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,

مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا (৮০)

"কেউ রাসূলের অনুসরণ করলে সে তো আল্লাহরই অনুসরণ করলো ৷ আর যারা আপনার অর্থাৎ রাসূলের অনুগত্য করলো না,তারা জেনে রাখুক আমরা আপনাকে তাদের প্রহরী করিনি৷" (৪:৮০)

সমাজ বা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নেতৃত্ব এবং রাষ্ট্রীয় বা প্রশাসনিক কাঠামো নির্ধারণ করা অপরিহার্য৷ আমরা আগেও বহুবার বলেছি ইসলাম ধর্ম শুধুমাত্র কিছু ব্যক্তিগত ইবাদত ও বিধি-বিধানের সমষ্টি নয়৷ বরং ইসলাম বিশ্বাস করে ব্যক্তির সৌভাগ্য সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যক্তির সক্রিয় উপস্থিতি এবং সমাজের উন্নতি ও সৌভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল ৷ যাকাত,হজ্ব ও জিহাদের মত ইসলামী বিধানগুলো প্রমাণ করে যে ইসলাম শুধু ব্যক্তিগত ধর্ম নয়,বরং এই ধর্মের বিধান সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিয়েই৷ ইসলামের অনেক বিধান রয়েছে যা সমাজে বাস্তবায়িত করার জন্যই দেয়া হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন৷ পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে মহানবী (সা.) শুধু আল্লাহর বিধান প্রচারের জন্য দায়িত্বশীল নন৷ তিনি নিজেই ইসলামী সমাজের শাসনকর্তা এবং তাঁর আনুগত্য করার অর্থ হলো আল্লাহরই নির্দেশ মান্য করা৷ আর তার নির্দেশ অমান্য করার অর্থ হল-খোদাদ্রোহীতা বা কুফরি করা ৷ মহানবী (সা.) এর রাষ্ট্রীয় নির্দেশ ছাড়াও তার বক্তব্যের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে৷ পবিত্র কোরআন তথা আল্লাহর বাণীর পরই মহানবী (সা.)-এর বাণী তথা সুন্নাতকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়৷ নবী এবং এমনকি রাষ্ট্র প্রধান হিসাবেও মহানবী (সা.) এর দায়িত্বের একটি সীমাবদ্ধতার কথা এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ এতে বলা হয়েছে,মহানবী (সা.) জনগণকে সত্য মেনে নিতে এবং তা বাস্তবায়নে জনগণকে বাধ্য করার জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত নন৷ সমাজকে সুপথ দেখানো এবং নেতৃত্ব দেয়াই তার দায়িত্ব ৷ খোদায়ী বিধান পালনে জনগণকে বাধ্য করা তার দায়িত্ব নয় ৷

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হচ্ছে,

প্রথমত: আল্লাহর আনুগত্যের অর্থ শুধু নামাজ,রোজা পালন নয়,সমাজের ধর্মীয় নেতার আনুগত্য করাও আল্লাহর নির্দেশের অন্তর্ভূক্ত৷

দ্বিতীয়ত: ধর্মের প্রচারই নবীগণের দায়িত্ব ৷ ধর্ম চাপিয়ে দেয়া তাঁদের দায়িত্ব নয়৷ মানুষকে স্বেচ্ছায় ধর্ম নির্বাচন করতে হবে ৷

 

সূরা আন নিসার ৮১ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

وَيَقُولُونَ طَاعَةٌ فَإِذَا بَرَزُوا مِنْ عِنْدِكَ بَيَّتَ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ غَيْرَ الَّذِي تَقُولُ وَاللَّهُ يَكْتُبُ مَا يُبَيِّتُونَ فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ وَكَفَى بِاللَّهِ وَكِيلًا (৮১)

"আপনার সামনে উপস্থিত মোনাফিকরা বলে আমরা অনুগত ৷ কিন্তু তারা যখন আপনার কাছ থেকে বের হয়ে যায়,তখন তাদের একদল রাতে মিলিত হয়ে উল্টো কথা বলে৷ কিন্তু রাতে তারা যা শলাপরামর্শ করে আল্লাহ তা লিপিবদ্ধ করেন ৷ তাই আপনি তাদের উপেক্ষা করুন এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন,কার্য সম্পাদনে বা পৃষ্টপোষতার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট ৷" (৪:৮১)

এই আয়াতে পুনরায় মোনাফিকদের বিপদ সম্পর্কে মহানবী (সা.) ও মুসলমানদেরকে সাবধান করে দিয়ে বলা হচ্ছে,মুসলমানদের মধ্যে মোনাফিক লুকিয়ে আছে ৷ এরা উপরে উপরে মহানবী (সা.) এর আনুগত্য ও মুসলমানদের সাহায্য করার কথা বললেও রাতের বেলায় গোপন বৈঠকে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং মুসলমানদের পরিকল্পনা বানচালের চেষ্টা করছে৷ এ ধরনের লোকদের মোকাবেলার উপায় হলো,তাদেরকে চিনে রাখা এবং তাদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা এই আয়াতে থেকে আমারা এই শিক্ষা নিতে পারি যে,ঘরের শত্রুদের সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত ৷ শুধু সীমান্তের বাইরেই শত্রু আছে এমন ধারণা করা ঠিক নয় ৷

সূরা নিসার ৮২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآَنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلَافًا كَثِيرًا (৮২)

"তবে কি তারা কোরআন সম্পর্কে চিন্তা করে না? কোরআন যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো হত,তবে তারা এর মধ্যে বহু অসঙ্গতি বা ভুল খুঁজে পেত ৷" (৪:৮২)

ইসলাম বিরোধীরা মহানবীর অকাট্য যুক্তির মোকাবেলায় কোন যুক্তি দেখাতে না পেরে তার সম্পর্কে বিভিন্ন অপবাদ প্রচার করতো ৷ যেমন তারা বলতো,পবিত্র কোরআন মুহাম্মদেরই চিন্তার ফসল অথবা অন্যদের কাছে শিখেই মুহাম্মদ এসব কথা বলছে ৷ এই অপবাদের জবাবে আল্লাহ এ আয়াত নাজেল করেন ৷ এতে বলা হয়েছে,তারা কেন কোরআন সম্পর্কে চিন্তা করছে না? বিভিন্ন যুদ্ধ,পরিস্থিতি ও ঘটনা উপলক্ষ্যে ২০ বছরেরও বেশী সময়ে অবতীর্ণ হওয়া কোরআনের বাণীগুলো যদি মুহাম্মদেরই কথা হত,তাহলে এতে বিভিন্ন ধরনের অনেক অমিল বা ভুল দেখা যেত ৷ অর্থাৎ বিষয়বস্তু বা তথ্য গঠন বা বাক্যরীতির দিক থেকে এতে অনেক ভুল দেখা যেত৷ কিন্তু এসব ক্ষেত্রেই কোরআনের সম্পূর্ণ নির্ভুলতা এর অন্যতম অলৌকিকত্বেরই প্রমাণ৷ কারণ শক্তিশালী লেখকেরও আজকের এবং ২০ বছর পরের লেখায় পার্থক্য দেখা যায় ৷ লেখকদের লেখা প্রায়ই পরিবর্তনশীল ৷

এই আয়াতের একটি লক্ষ্যণীয় দিক হচ্ছে-

অনেকেই ইসলাম ধর্মকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিরোধী মনে করেন ৷ অথচ এ আয়াতে স্পষ্টভাবে আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে চিন্তা ও গবেষণা করতে বলা হয়েছে,যাতে এর মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের সত্যতা বোঝা সম্ভব হয়৷

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)