আল হাসানাইন (আ.)

মহানবীর (সা.) আহলে বাইতের শিক্ষা (৪র্থ কিস্তি) : জুলুম অত্যাচার না করা

1 বিভিন্ন মতামত 05.0 / 5

অত্যাচার থেকে দূরে থাকা

ইমামগণ (আ.) কঠোরভাবে যে মহাপাপে লিপ্ত হতে নিষেধ করেছেন তা হলো অন্যের অধিকার হরণ করা ও অত্যাচার করা। আর ইমামগণের (আ.) এ আদেশ কোরআনের সে আয়াতেরই প্রতিফলন যাতে জুলুম-অত্যাচারে কদর্যতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমনটি বলা হয়েছে-

“মনে করোনা যে মহান আল্লাহ অত্যাচারীদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বেখবর। বরং তাদের শাস্তিকে সে দিন পর্যন্ত স্থগিত রেখেছেন,যেদিন চক্ষুগুলো ভয়ে পেরেশান হবে।”(সূরা ইব্রাহীম আয়াত -৪২)

হযরত আলী (আ.) জোর-জুলুমের কদর্যতা সম্পর্কে কঠোর ভাষায় নাহজুল বালাগায় ২১৯ নং খোতবায় বলেছেন-

“যদি সাত আসমান ও এর নিম্নে যা কিছু আছে তা আসমান ও এর নিম্নে যা কিছু আছে তা আমাকে এজন্য দেয়া হয় যে,কোন পিঁপড়ার মুখ থেকে যবের একটি খোসা ছিনিয়ে নিতে হবে,আর এর দ্বারা খোদার অবাধ্য হতে হবে তবে আল্লাহর শপথ কখনোই আমি তা করব না।”

জুলুম-অত্যাচার থেকে দূরে থাকার জন্য এখানে চূড়ান্ত পর্যায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। আর এর কদর্যতাকে মানুষ এ পর্যায়ে অনুধাবন করতে পারে,যেখানে পিঁপড়ার মুখ থেকে যবের খোসা পরিমাণ বস্তুও কেড়ে নিতে নারাজ। এমনকি সাত আসমানের বিনিময়েও।

এমতাবস্থায়,যারা মুসলমানদের রক্ত ঝরিয়েছে এবং তাদের ধন সম্পদ কুক্ষিগত করেছে,তাদের সম্মান ও যশ ঘৃণাভরে বিনষ্ট করেছে তাদের অবস্থা কী হবে? যারা এমন,কি করে তাদের আমলকে আমীরুল মূমীনীন আলীর (আ.) আমলের সাথে তুলনা করা যেতে পারে? কিরূপে ঐ ধরনের ব্যক্তিরা হযরতের (আ.) প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শীষ্যের মর্যাদা লাভ করতে পারে? সত্যিই আলী (আ.) এর আচরণ হলো ধর্মীয় শিক্ষার সমুজ্জ্বল উদাহরণ যাহা ইসলাম মানবতার মাঝে সঞ্চারিত করতে চায়।

হ্যাঁ,জুলুম হলো সবচেয়ে বড় পাপ যা মহান আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন। এ কারণেই আহলে বাইতের (আ.) দোয়া ও রেওয়ায়েতে এ কাজটি সর্বাধিক ঘৃণিত ও পরিত্যক্ত হয়েছে এবং এর কদর্যতাগুলি বর্ণিত হয়েছে।

পবিত্র ইমামগণ (আ.) ও তাদের অনুসারীদেরকে কঠোর ভাষায় জুলুম থেকে বিরত থাকতে বলতেন। ইমামদের (আ.) এ আচরণ শুধু তাদের শীয়াদের সাথে ছিল না বরং যারা তাদের উপর জুলুম করেছিল,রূঢ়তা দেখিয়েছিল তাদের সাথেও তারা (আ.) একই রূপ আচরণ করতেন।

ইমাম হাসানের (আ.) ধৈর্য সম্পর্কিত বিখ্যাত ঘটনাটি উপরোক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ঐ ঘটনার বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি যে,শামের কোন এক ব্যক্তি ইমামকে (আ.) অপমান করে কথা বলেছিল ও বিদ্বেষপূর্ণ অপবাদ দিয়েছিল। তথাপি ইমাম (আ.) তার সাথে কোমল ও বিনম্র আচরণ করেছিলেন যাতে ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে তার কুৎসিত কর্ম সম্পর্কে তাকে অবহিত করতে পারেন। কয়েক পৃষ্ঠা পূর্বে আমরা সহীফায়ে সাজ্জাদিয়ার দোয়া পড়েছিলাম যাতে দেখতে পেয়েছি কিরূপে ইমাম তাদের ক্ষমার জন্য দোয়া করেছিলেন যারা মানুষের উপর জুলুম করেছে,আর তারা (আ.) শিক্ষা দিয়েছেন কিরূপে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। তবে শরীয়তগতভাবে সীমা লংঘনের ক্ষেত্রে অত্যাচারীদেরকে অভিশম্পাত দেয়া জায়েয। তবে এ কাজটি জায়েয হওয়া এককথা আবার ক্ষমা যা সমুন্নত আখলাকের অন্তর্ভূক্ত তা অন্যকথা। এমনকি ইমামগণের (আ.) মতে অত্যাচারীকে অভিশাপ দেয়ার ক্ষেত্রে সীমা লংঘন করাও স্বয়ং জুলুম।

ইমাম সাদিক (আ.) বলেন-

“কোন ব্যক্তি অত্যাচারিত হলে যদি সে অত্যাচারীকে মাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ অভিশাপ দেয় তবে সে স্বয়ং অত্যাচারে লিপ্ত হয়।”

অবাক ব্যাপার! যখন অত্যাচারীকে অভিশাপ দেয়ার ক্ষেত্রে সীমা লংঘন করলে জুলুম বলে পরিগণিত হয় তখন আহলে বাইতগণের (আ.) দৃষ্টিতে ঐ ব্যক্তির স্থান কোথায় যে ব্যক্তি স্বয়ং সজ্ঞানে জুলুম অত্যাচারে লিপ্ত হয় কিংবা অপরের মান-সম্মানের হানি করে অথবা তাদের মালামাল লুট করে,অন্য অত্যাচারীদের নিকট মানুষের বদনাম করে যাতে সেই অত্যাচারীরা মানুষের উপর খারাপ ধারণা করে কিংবা শঠতা ও ধূর্ততার আশ্রয় নিয়ে মানুষের কষ্টের কারণ হয় অথবা গুপ্তচরের হাতে মানুষকে বন্দী করে? কারণ এ ধরনের ব্যক্তিবর্গ মহান আল্লাহর দরবারে সর্বাধিক অভিশপ্ত। তাদের পাপ ও শাস্তি অন্য সকলের চেয়ে কঠিন। আর আমল ও আখলাকের দৃষ্টিকোণ থেকে তারা নিকৃষ্ঠতম ব্যক্তি।

অত্যাচারীদের সাথে সহযোগিতা না করা:

যেহেতু জুলুম ও অত্যাচার সবচেয়ে বড় পাপ ও বিচ্যুতি এবং এর পরিণামও অত্যন্ত কুৎসিত তাই মহান আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে সাহায্য করা ও শক্তিশালী করার ব্যাপারে নিষেধ করেছেন-

“অত্যাচারীদের সাথে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা করো না। তাহলে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। মহান আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নেই এবং কেউই তোমাদেরকে সাহায্য করবে না।” (সূরা হুদ - ১১৩)

অত্যাচারীদেরকে ঘৃণা করা এবং সাহায্য ও সহযোগিতা করা থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে এটাই হলো কোরআন ও আহলে বাইতের (আ.) প্রশিক্ষণ পদ্ধতি। তাদেরকে শক্তিশালী করা,তাদের অত্যাচারে অংশগ্রহণ করা,তাদেরকে সাহায্য করা বর্জনীয় এমনকি খোরমার অর্ধাংশ পরিমাণও। ইমামগণ (আ.) থেকে এমন অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। নিঃসন্দেহে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল অত্যাচারীদের সহযোগিতা করা এবং তাদের কুকর্মকে না দেখা। তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন,এমনকি তাদের সাথে আন্তরিকভাবে মেলামেশা করতেও তারা কুন্ঠিত হয়নি। তাদের জুলুম-অত্যাচারেও তারা সহযোগিতা করেছিল। সত্যিই কতটা অপরাধ,কলুষতা ও সত্য থেকে বিচ্যুতি মুসলমান সমাজে অনুপ্রবেশ করেছিল! আর এর বিষাক্ত প্রভাবে ধীরে ধীরে মুসলমানরা দুর্বল হয়েছে ও তাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। অদ্য মুসলমানদের অবস্থা এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে,দ্বীন ইসলামের পরিচয় মুছে গিয়েছে। এমন মুসলমান কিংবা মুসলমান নামধারীরা এবং যারা আল্লাহ ভিন্ন অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে,তারা মহান আল্লাহর সাহায্য ও সহযোগিতার অধিকারী হতে পারে না। তারা আল্লাহর সাহায্য থেকে আজ যখন এমনভাবে বঞ্চিত হয়েছে যে ইহুদিদের মত দুর্বলতম নিকৃষ্টতম শত্রু ও অত্যাচারীদের মোকাবেলা করতেও অপারগ তখন শক্তিশালী ক্রুশধারীদের মোকাবেলার কথাতো বলাই বাহুল্য।

যে সকল কর্মকাণ্ড অত্যাচারীদের সাহায্যের কারণ হত পবিত্র ইমামগণ (আ.) যথাসাধ্য তাদের শীয়া বা অনুসারীদেরকে তা থেকে দূরে থাকতে বলতেন। আর কঠোরভাবে তাদের বন্ধুদেরকে অত্যাচারীদের প্রতি ন্যূনতম সহযোগিতা ও সখ্যতা প্রদর্শন করতে নিষেধ করতেন। এ সম্পর্কে তাদের অগণিত বক্তব্য রয়েছে।

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এর বক্তব্য এ প্রসংগে উল্লেখ করা যেতে পারে। মোহাম্মদ ইবনে মোসলেম যাহরীর কাছে লিখিত এক পত্রে তিনি তাকে অত্যাচারীদের অত্যাচারের সহযোগিতা হয় এমন কর্ম পরিহার করার কথা বলতে গিয়ে বলেন-

“ওহে তোমাকে কি তারা এজন্য নিমন্ত্রণ করেনি যে,তোমাকে তাদের জুলুমের যাতার কেন্দ্রকাঠি বানাবে,তাদের মন্দ লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য তোমাকে পুল বানাবে,পথভ্রষ্টার দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য সিঁড়ি বানাবে এবং তাদের জুলুমের আহবায়ক ও প্রচারক বানাবে? তারা তোমাকে তাদের মাঝে নিয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিদের হৃদয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে। আর তোমার দ্বারা অজ্ঞদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করেছে। তাদের কুকর্মকে সুকর্ম হিসেবে প্রচার করেছে এবং নিজেদের দিকে বিশেষ ও সাধারণ ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তোমাকে ব্যবহার করে। এমনটি তাদের অতি নিকটবর্তী মন্ত্রী ও শক্তিশালী সহযোগীর থেকেও পায়নি। তুমি যা পেয়েছ তা,যা তুমি দান করেছ তদপেক্ষা অতি সামান্য। এটি অতি সামান্য তার তুলনায় যে পরিমাণ অশ্লীলতা তোমার মাধ্যমে তারা বপন করেছে। তোমার নিজের কথা ভাব। কারণ তুমি ব্যতীত কেউই এ সম্পর্কে ভাববে না। নিজেকে এমনভাবে হিসাবের কাঠগড়ায় দাড় করাও যেমনভাবে একজন দায়িত্বশীল ও দায়িত্ব পরায়ণ ব্যক্তি হিসাব করে থাকে।”

এই যে শেষ বাক্যটি “নিজেকে এমনভাবে হিসাবের কাঠগড়ায় দাড় করাও যেমনভাবে একজন দায়িত্বশীল ও দায়িত্ব পরায়ণ ব্যক্তি হিসাব করে থাকে”একটি বৃহৎ কথা। কারণ যখন কুপ্রবৃত্তি মানুষের উপর জয়লাভ করার পর কোন ব্যক্তি স্বয়ং নিজেকে অতি ছোট ও মূল্যহীন দেখতে পায়। অর্থাৎ নিজেকে স্বীয় কর্মের জন্য দায়ী মনে করে এবং অনুধাবন করে যে এর জন্য তাকে হিসাব দিতে হবে। এ ধরনের পন্থা অবলম্বনের রহস্য হলো তার নফসে আম্মারা।

অতএব,ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এখানে যা বুঝাতে চেয়েছেন তা হলো যাহরীকে এ আত্মিক রহস্য সম্পর্কে অবহিত করা যা সর্বদা মানুষের মধ্যে বিদ্যমান থাকে,যাতে তার উপর খেয়াল খুশী চেপে না বসে আর সে তার দায়িত্ববোধ থেকে বিচ্যূত হয়।

উপরে বর্ণিত বিষয়ে আরো অধিক শক্তিশালী বর্ণনা হলো উটের অধিকারী সাফবানের সাথে ইমাম মূসা ইবনে জাফর (আ.) এর কথোপকথন। সাফবান ছিলেন সপ্তম ইমামের (আ.) অনুসারী এবং হাদীসের বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী যিনি হযরত (আ.) থেকে হাদীস বর্ণনা করতেন।

কাশশী কর্তৃক লিখিত সাফবানের জীবনীতে কথোপকথনটি নিম্নরূপে বর্ণিত হয়েছে-

ইমাম : হে সাফবান ! তোমার সমস্ত কর্মকাণ্ডই উত্তম কেবলমাত্র একটি কাজ ব্যতীত।

সাফবান : আপনার জন্য উৎসর্গিত হব ঐ কাজটি কী?

ইমাম : এই যে নিজের উটগুলোকে হারুনুর রশিদকে ভাড়া দাও।

সাফবান : আল্লাহর কসম! আমি আমার উটগুলোকে কোন হারাম ও বাতিল কর্মকাণ্ড বা শিকার ও আরাম-আয়াশের জন্য ভাড়া দেই না। বরং মক্কার পথ অতিক্রম করার জন্য ভাড়া দিয়েছি। আমি নিজেও তার সাথে যাইনা। আমার গোলামদেরকে পাঠাই।

ইমাম : ওহে সাফবান! তোমার ভাড়া পরিশোধের শর্ত কি তার ফিরে আসার শর্তসাপেক্ষ?

সাফবান : আপনার জন্য উৎসর্গ হব। জী হ্যাঁ।

ইমাম : তুমি কি পছন্দ কর না সে জীবিত ফিরে আসুক,যাতে তোমার ভাড়ার টাকা তোমার নিকট পৌছে?

সাফবান : জী- হ্যাঁ।

ইমাম : যদি কেউ তাদের জীবিত থাকা পছন্দ করে,সে তাদের দলভূক্ত এবং জাহান্নামের আগুনে পতিত হবে।

সাফবান : আমি ফিরে গিয়ে আমার সব উটগুলোকে একবারে বিক্রি করে দিলাম।

হ্যাঁ,যেখানে কেবলমাত্র অত্যাচারীর জীবনে বেঁচে থাকার ইচ্ছা পোষণ করা পর্যন্ত গুনাহ বলে পরিগণিত হয়,সেখানে এটা পরিষ্কার যে,যারা নিয়মিত জালিমদেরকে সাহায্য করে,তাদের জুলুম ও অত্যাচারকে স্বীকৃতি প্রদান করে তাদের অবস্থা কী হবে? সেখানে যারা তাদের কর্মকান্ডের অংশীদার তাদের কথাতো বলাই বাহুল্য।

অত্যাচারী শাসকদের শাসনতন্ত্রে কাজ না নেয়ার ব্যাপারে আমাদের কর্তব্য :

যেমনটি আমরা পূর্ববর্তী পৃষ্ঠাগুলোতে আলোচনা করেছিলাম যে,যখন অত্যাচারীকে খোরমার অংশবিশেষ পরিমাণ সহযোগিতা করা এবং এমনকি তাদের জীবিত থাকাটা পছন্দ করা ও পবিত্র ইমামগণ (আ.) কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছে। তখন এ ধরনের শাসনতন্ত্রে অংশ গ্রহণকারী এবং বিভিন্ন মর্যাদা ও পদ গ্রহণকারীর অবস্থাতো বলাই বাহুল্য।

তদুপরি যারা এ ধরনের হুকুমত গড়ার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করে এবং উক্ত হুকুমতকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে তাদের অবস্থাও সুষ্পষ্টতর। কারণ যেমনটি ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন-

“জালিমদের শাসনতন্ত্র সকল সত্য বিধান ধ্বংস হওয়ার কারণ এবং বাতিলকে জীবিত করা আর অত্যাচার ও অশ্লীলতা প্রকাশের কারণ।”(তোহফুল উকুল অনুসারে যেমন ইমাম মূসা ইবনে জাফর (আ.) এক হাদীসে বলেন- “অত্যাচারীদের দরবারে মহান আল্লাহর এমন কেউ আছে যাদের মাধ্যমে তিনি তার হুজ্জাত মানুষের নিকট স্পষ্ট করে দেন। আর তিনি রাজ্য বা শহরে তাদেরকে ক্ষমতা দান করেন যাতে তাদের মাধ্যমে নিজের ওলীদেরকে সাহায্য করতে পারেন এবং কুকর্মকে দমন করতে পারেন ও মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয়কে তাদের মাধ্যমে সংস্কার করতে পারেন। এ ধরনের ব্যক্তিবর্গ সত্যিকারের মূমিন। তারা পৃথিবীতে আল্লাহর সুষ্পষ্ট নিদর্শন এবং তার বান্দাদের মধ্যে আল্লাহর নূর।”)

তবে কোন কোন বিশেষ ক্ষেত্রে ইমামগণ (আ.) এ ধরনের পদ গ্রহণ করাকে জায়েয মনে করেছেন। যে সকল ক্ষেত্রে অত্যাচারী শাসকের শাসনতন্ত্র পদ নেয়ার ফলে ন্যায়পরায়ণতা এবং বিচার প্রতিষ্ঠা ও মূমিনদের কল্যাণ করা যায়,আর সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার পথ সুগম হয় সে ক্ষেত্রে তা জায়েয।

এ প্রসংগে পবিত্র ইমামগণ (আ.) থেকে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে যেখানে এধরনের হুকুমতের পদাধিকারীদের জন্য সঠিক পথের সুষ্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে। যেমন- আহবাযের শাসক আব্দুল্লাহ নাজ্জাশীর নিকট ইমাম সাদিকের চিঠি ওয়াসায়েলুশশিয়া নামক গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। মরহুম হোররি আমলীর উক্ত গ্রন্থের কিতাবুল বেঈ এ ৭৭ নং অধ্যায়ে এ চিঠিটি বর্ণিত হয়েছে। (‘ওয়াসায়েলুশশিয়া’হাদীস গ্রন্থটি শরীয়তের বিভিন্ন আহকামের সমাহারে মহান গবেষক হোররি আমলী লিখেছেন যা আননেজাহ পত্রিকার মালিক আল্লামা নূরীর (রঃ) মোসতাদরাকে ১৩৭৮-১৩৮১ হিঃ পাঁচ খণ্ডে প্রকাশ করেছেন।)

(শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস গন্থে থেকে সংকলিত)

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)