আল হাসানাইন (আ.)

দোয়া কবুলের মাস

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

রহমত-বরকত ও মুক্তির সওগাত নিয়ে আমাদের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয়েছে মাহে রমযান । রমযানের পবিত্র দিনগুলোতে চোখের স্বচ্ছ অশ্রুধারা গলিয়ে আল্লাহর দরবারে নিজস্ব চাওয়া-পাওয়া আর অভাব-অভিযোগের কথা বলার মোক্ষম সুযোগ সৃষ্টি হয়। নামায,রোযা, জিকির-আজকার,দোয়া-দরুদ ইত্যাদি পূত-পবিত্রময় রমযান মাসে আরো বেশি আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আসলে রমযান মাসের আগমনটাই যেন মুসলমানদের জন্যে এক বৃহৎ ঈদোৎসব। এই ঈদ বিচিত্র পুণ্য অর্জনের ঈদ। পাপমোচনের আনন্দের ঈদ। ইবাদাতের প্রাচুর্যের ঈদ।

রোযা হলো দোয়া কবুলের মাস। আর দোয়া হলো ইবাদাতের আত্মা বা প্রাণ। বিশেষ করে রমযান মাসে যখন মানুষের অন্তরাত্মা আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে থাকে,তখন দোয়ার প্রভাব অন্যসময়ের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়,এ সময় দোয়ার ফলে মানুষের অন্তরও অনেক বেশি পবিত্রতা অর্জন করে। জার্মানীর প্রখ্যাত ইসলাম বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মিসেস আনা ম্যরি শিমাল, সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ায় ইমাম সাজ্জাদ (আ) এর মোনাজাতগুলোকে আল্লাহর সাথে আন্তরিক কথোপকথনের উন্নত,ছন্দময় এবং প্রভাবশালী প্রকাশ মাধ্যম বলে মন্তব্য করেছেন।

ইমাম সাজ্জাদ (আ) রমযানের আগমন উপলক্ষ্যে আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতেন এবং রমযানকে স্বাগত জানিয়ে প্রাণসঞ্চারী ও আবেগঘন মোনাজাত করতেন। শুরুতেই তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন এজন্যে যে রমযানের মতো একটি মাস আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্যে অনুগ্রহস্বরূপ দান করেছেন-যেই মাসকে আল্লাহ তাঁর নিজের মাস বলে ঘোষণা দিয়েছেন,যেই মাস রোযার মাস,ইসলামের মাস,পবিত্রতার মাস। যেই মাসে নাযিল হয়েছিল মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। যেই কোরআন মানুষের পথের দিশারী এবং সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্য সৃষ্টিকারী। এরপর অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসের ফযিলত,পবিত্রতা ও সম্মানের কথা উল্লেখ করেন এবং মহানবী ( সা ) ও তাঁর আহলে বাইতের ওপর দরুদ ও সালাম পাঠান। অবশেষে আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন এবং যা কিছু হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন সেসব থেকে দূরে থাকার জন্যে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেছেন,সকল প্রকার গুনাহ থেকে মুক্ত থাকার তৌফিক চেয়েছেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত হবার জন্যে তাঁরই দরবারে সাহায্য কামনা করেছেন।

মানুষের জীবন সবসময়ই সমান্তরাল দুটি মহাসড়কের ওপর ধাবমান। একটি মহাসড়ক হলো ক্রমশ উন্নয়নমুখি,অপরটি হলো ক্রমশ অধপতনমুখি। দুটি সড়কেরই অবস্থান পাশাপাশি। কিন্তু যখনই কেউ নূরের দিকে অর্থাৎ ক্রমশ উন্নয়নের দিকে ধাবিত হয়,তখনই অপরটির সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ প্রসঙ্গে বলেছেনঃ আল্লাহর পথ কাছের একটি পথ। কেউ চাইলেই বিচ্যুতির পথ থেকে সরে গিয়ে সরল-সঠিক সেই পথে চলে আসতে পারে। যে-কোনো মুহূর্তেই সেটা সম্ভব। যেভাবে বর্ণনায় এসেছে-যে তোমার দিকে আসতে চায়, তার পথ নিকটবর্তী। এক পা ফেললেই অধোগামীর সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায় এবং সেই পথে প্রবিষ্ট হওয়া যায় যেই পথের পথিকগণ সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি তথা নূরের পথে দ্রুতবেগে ধাবমান। আমরা আমাদের প্রবৃত্তির দিকে তাকালে দেখবো যে প্রবৃত্তির তাড়না মেটাতে গেলেই সেই প্রবৃত্তি মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে বিচ্যুতির পথে ফেলে দেয়। আর যখনই আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে আমরা চলবো তখনই আমরা উন্নতির পথে অগ্রসর হবো। পথ পরিবর্তনের জন্যে এই রমযান মাসই হলো সবচে সহজ এবং উপযুক্ত একটি সময়।

রমযান মাসকে অনেকেই বসন্তের সাথে তুলনা করেছেন। এজন্যে যে,বসন্ত এলে প্রকৃতি রাজ্যে সবুজের সমারোহ ঘটে, জেগে ওঠে মৃত ডাল-পালা,ফুলে ফুলে প্রকৃতিরাজ্যে দেখা দেয় প্রাণের জোয়ার। তেমনি রমযান মাস এলে প্রাণহীন অলস মানুষগুলোও পবিত্র চিন্তার মাধ্যমে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। রোযা রাখার মধ্যে যে কতোশতো কল্যাণ নিহিত রয়েছে তা আমাদের সীমিত জ্ঞান দ্বারা উপলব্ধি করা সম্ভব না। রোযার এই মাহাত্ম্যের কারণেই সকল নবী-রাসূলের শরীয়তে আমরা তার বিধান দেখতে পাই। বর্ণনায় এসেছে,আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মূসা ( আ ) কে ওহীর মাধ্যমে জিজ্ঞেস করলেন-"কোন বস্তু তোমাকে আমার কাছে মুনাজাত করা থেকে বিরত রাখলো ?" মূসা ( আ ) সে সময় রোজাদার ছিলেন। বললেন, হে খোদা! এ অবস্থায় তোমার দরবারে মোনাজাত করাটাকে সমীচীন মনে করছি না, কেননা এই রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ খুবই বিরক্তিকর। আল্লাহ সেই মুহূর্তে তাঁর প্রতি ওহি নাযিল করে বললেন-"হে মূসা ! রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আমার কাছে মেশক মৃগনাভির সুগন্ধির চেয়েও উত্তম।"

রোযার কল্যাণের দিক চিন্তা করে পূর্ববর্তী নবীগণ প্রায় সারাবছর ধরেই রোযার অভ্যাস চালু রেখেছেন। হযরত দাউদ (আ) ছিলেন ইবাদাত বন্দেগীর দিক থেকে অনেক বেশি অগ্রসর। তিনি একদিন রোযা রাখতেন তো পরের দিন ইফতার করতেন। তাঁর ছেলে সুলাইমান (আ) প্রতি মাসের প্রথম ৩ দিন,মাঝখানের ৩ দিন এবং শেষের ৩ দিন রোযা রাখতেন। ঈসা (আ) তো প্রায় সারাজীবনই রোযাদার ছিলেন। পশুর পশম দিয়ে বোণা বস্ত্র পরতেন তিনি। তাঁর মা মারিয়াম (সা) ২ দিন রোযা রাখতেন কিন্তু ইফতার করতেন ১ দিন। আর সর্বশেষ নবী (সা) প্রতি মাসেই ৩ দিন রোযা রাখতেন এবং বলতেন এই ৩ দিন রোযা রাখা সারা জীবন রোযা রাখার সমতুল্য।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)