আল হাসানাইন (আ.)

পবিত্র কোরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা

2 বিভিন্ন মতামত 04.5 / 5

পৃথিবীতে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তার নর' । নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বজুড়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। অথচ এই নারীকে মহিমান্বিত কে করেছে তা এখনো অনেক নারী অবগত নন। দুঃখের বিষয় সেই আদি যুগ থেকে শুরূ করে আজ অবদি নারীরা নানা ভাবে নির্যাতিতা ও নিগৃহীতা হয়ে আসছে । কন্যা সন্তানের জীবন্ত কবর, নারীর সমহরণ, সতীদাহ প্রথা আজও বিবেকবান মানুষকে শিহরিত করে ।

একমাত্র ইসলামই  সর্বপ্রথম নারীদের যথাযোগ্য সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। নারীজাতি ধর্মে কর্মে, শিক্ষা সংস্কৃতি, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ফিরে পেয়েছে তাঁদের সম্মান মর্যাদা ও অধিকার।

আল কোরআনের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা

 ক) :-

 إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّـهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّـهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا

“নিশ্চয়ই মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, ইবাদতকারী পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ ও নারী, খোদাভীরুপুরুষ ও নারী, ছদকা দানকারী পুরুষ ও নারী, রোযাদার পুরুষ ও নারিগণ এবং যে সকল পুরুষ ও নারী তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং যে সকল পুরুষ ও নারী আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের সকলের জন্যেই আল্লাহ তা’য়ালার কাছে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার”।(সূরা আহযাব : ৩৫।)

এই পবিত্র আয়াতে, পুরুষ ও নারীকে পাশা-পাশি উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা’য়ালা পুরস্কার দান ও ক্ষমা করার ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করেন নি।

খ) :-

 يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّـهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّـهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

“হে মানব সকল! আমরা তোমাদের সকলকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি এ কারণে যে, তোমরা যেন একে অপরকে চিনতে পার (এবং বুঝতে পার বংশ ও গোত্র কোন গর্বের বিষয় নয়)। তোমাদের মধ্যে সেই আল্লাহর কাছে অধিক উত্তম যে অন্যের থেকে বেশী তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ জ্ঞানী এবং মানুষের ভাল ও মন্দ কাজের বিষয়ে সম্যক অবগত আছেন।(হুজুরাত : ১৩।)

এই পবিত্র আয়াতেও আল্লাহ তা’য়ালা পুরুষ ও নারী সৃষ্টির উদ্দেশ্য তাঁর ও একক, পবিত্র সত্তাকে উত্তমরূপে জানা বলে উল্লেখ করেছেন। আর বংশ, ক্ষমতা, ধন-দৌলত, জ্ঞান, রং, ভাষা ও ভৌগলিকতার (আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া ইত্যাদি) ভিত্তিতে আল্লাহ মানুষের মর্যাদাকে নির্ধারণ করেন নি বরং আল্লাহর কাছে উত্তম বস্তু হচ্ছে তাকওয়া, আর তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর আদেশ-নিষেধকে মেনে চলা।

গ) :-

 مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً ۖ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

“পুরুষ ও নারীদের মধ্য থেকে যারাই ঈমান আনবে এবং উত্তম কাজ আঞ্জাম দিবে, তাদেরকে আমরা পবিত্র জীবন দান করবো এবং তাদের কাজের তুলনায় উত্তম পুরস্কার দান করব”।(নাহল : ৯৭।)

এই আয়াতেও আল্লাহ্ তা’য়ালা উত্তম কাজের বিনিময় স্বরূপ পুরস্কার ও সওয়াব দানের অঙ্গীকার করেছেন, আর সৎকর্ম সম্পাদনকারী পুরুষই হোক অথবা নারী হোক কোন পার্থক্য করেন নি বরং যে কোন বান্দাই এই ভাল কাজ আঞ্জাম দিবে আল্লাহ তা’য়ালা তাকেই এই পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন।

ঘ) :-

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً  إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

“আল্লাহ্ তা’য়ালার নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি হচ্ছে যে, তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সহধর্মিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাতে করে তাদের সান্নিধ্যে প্রশান্তি অনুভব করতে পার, আর তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও রহমতকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ সব কিছুই হচ্ছে নিদর্শন তাদের জন্য যারা চিন্তা করে।”(রূম : ২১।)

এই পবিত্র আয়াতেও আল্লাহ তা’য়ালা নারী সৃষ্টিকে তাঁর অন্যতম নিদর্শন হিসেবে পেশ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, নারীরা হচ্ছে ভালবাসা, রহমত ও প্রশান্তির কারণ। বিশিষ্ট মুফাসসির আল্লামা তাবাতাবাই (রহ:) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, পুরুষ ও নারী এমনই এক সৃষ্টি একে অপরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলে যারা উভয়ই পূর্ণতা অর্জন করে এবং এ দু’য়ের মিলনের মাধ্যমে মানব জাতির বংশ বিস্তার ঘটে থাকে, আর তারা একজন অপরজন ছাড়া অসম্পূর্ণ।

আল্লাহ্ তা’য়ালা এই আয়াতের শেষে বলছেন : এই বিষয়টি তাদের জন্য নিদর্শন যারা চিন্তা করে বা যারা বিবেক সম্পন্ন। তারা এর মাধ্যমে বুঝতে পারবে যে, পুরুষ ও নারী একে অপরের পরিপূরক। আর নারীই একটি পরিবারকে সতেজ ও উদ্যমী করে রাখে এবং এর সদস্যদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। যে কারণে পুরুষ ও নারী শুভ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত ভালবাসা ও রহমত। শুধুমাত্র দৈহিক চাহিদার কারণেই তারা এ বন্ধনে আবদ্ধ হয় না।

কিন্তু পুরুষ ও নারীর বন্ধনের মধ্যে দু’টি দিক বিদ্যমান। তার একটি হচ্ছে ঐশী ও ভালবাসার দিক অপরটি হচ্ছে পাশবিক দিক। তবে মানুষ তার ঐ ঐশী ও ভালবাসার বোধের মাধ্যমেই পূর্ণতায় পৌঁছে থাকে।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করছি তা হচ্ছে, অনেক মুফাসসির উল্লিখিত আয়াত ও এ ধরনের আরো কিছু আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, নারী পুরুষের শরীরের অংশ। কেননা তাদেরকে পুরুষের শরীরের অংশ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এই ধরনের তফসিরের ফলে অনেক সুবিধাবাদী পুরুষ, নারীদেরকে তাদের থেকে নিম্ন পর্যায়ের মনে করে থাকেন যা নারীর জন্যে একটি অপমান জনক বিষয়। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত আয়াতসমূহকে তারা প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন :

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً

হে মানব সকল! তোমাদের পরওয়ারদিগারকে ভয় কর। যিনি তোমাদেরকে একক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর তা থেকে তার সহধর্মিণীকেও এবং ঐ দু’জন থেকে অনেক পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করেছেন।(নিসা : ১।)

هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا

তিনিই তোমাদেরকে একক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার স্ত্রী ।(আ’রাফ : ১৮৯।)

خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا

তোমাদেরকে এক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার স্ত্রীকেও।(যুমার : ৬।)

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا

আর এটা তাঁর নিদর্শনমূহের নমুনা স্বরূপ যে, তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সহধর্মিণী সৃষ্টি করেছেন।(রূম : ২১। )

وَاللَّـهُ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنْ أَزْوَاجِكُم بَنِينَ وَحَفَدَةً

আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রী নির্দিষ্ট করেছেন এবং তোমাদের স্ত্রীদের থেকে সন্তান ও পৌত্রদের সৃষ্টি করেছেন।(নাহল : ৭২। )

جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا

তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন।(শুরা : ১১)

বাহ্যিকভাবে দেখা যায় যে, প্রথম তিনটি আয়াতে বলা হয়েছে সমস্ত মানুষ একটি নফস (সত্তা) থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের স্ত্রীগণও ঐ নফস থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।

কিন্তু পরের তিনটি আয়াতে উক্ত বিষয়টিকে সমস্তপুরুষের প্রতি ইশারা করে বলা হচ্ছে যে, তোমাদের স্ত্রীগণকে তোমাদের থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি আমরা একটুখানি এই বিষয়ের প্রতি গভীর দৃষ্টি দেই তবে এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, এ আয়াতসমূহে আল্লাহ তা’য়ালা এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, তাদের স্ত্রীগণ উৎসের দৃষ্টিতে তাদেরই প্রকৃতির, অন্য প্রকৃতির নয়। এটা নিশ্চয় বুঝাতে চাননি যে, স্ত্রীগণ তাদের দেহের অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে তবে বলতে হয় যে, প্রতিটি স্ত্রীই তার স্বামীর দেহের অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তী তিনটি আয়াত প্রথম তিনটি আয়াতকে ব্যাখ্যা করেছে, যাতে করে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়।

আল্লামা তাবাতাবাই এই আয়াতের তফসিরে বলেছেন : ‘ওয়া খালাকা মিনহা যাওজাহা’ আয়াতের বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে যে, স্ত্রীদের পুরুষের প্রকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদের উভয়েরই সৃষ্টির উৎস হচ্ছে এক।

এই আয়াতে ‘মিন’ শব্দটি উৎস বর্ণনা অর্থে এসেছে অর্থাৎ এখানে ‘মিন’ কোন কিছু সৃষ্টির উৎসকে বর্ণনা করছে। এই আয়াতটি অন্যান্য আয়াতের মতই পুরুষ ও নারীর সৃষ্টির উৎস বর্ণনা করেছে, যা পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।

অতএব, এটা আমাদের কাছে পরিস্কার এবং বিভিন্ন তফসির গ্রন্থের ভাষ্য অনুযায়ী যে বলা হয়ে থাকে আল্লাহ তা’য়ালা নারীকে পুরুষের বাম পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করেছেন তা সম্পূর্ণরূপে দলিলহীন উক্তি।(আল মিযান ফি তাফসিরুল কুরআন, খণ্ড- ৪, পৃ.-১৩৬।)

উপরোল্লিখিত ভ্রান্ত ধারণাটির পক্ষে রয়েছেন আহলে সুন্নাতের মুফাসসিরগণ যেমন : ওয়াহ্বাহ্ যুহাইলী এবং ফাখরুদ্দীন রাযি তারা তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে তা উল্লেখ করেছেন ও গ্রহণ করেছেন।

সুতরাং কোরআনের আয়াত থেকে আমাদের কাছে যা প্রমাণিত হয়েছে তা হচ্ছে, পবিত্র কোরআন পুরুষ ও নারী সৃষ্টির উৎসগত আলোচনা করেছে এবং তাদের মধ্যকার সাদৃশ্যকে তুলে ধরেছে। এর পক্ষে আমাদের আরো জোরাল যুক্তি রয়েছে যা নিম্নরূপ :

ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে প্রশ্ন করা হল যে, ‘একদল লোক বলে হযরত হাওয়াকে হযরত আদমের বাম পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে’ এ ব্যাপারে আপনার মত কি?

তিনি বললেন : আল্লাহ তা’য়ালা এমন ধরনের কাজ করা থেকে পবিত্র। এরপর তিনি তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করে বললেন : আল্লাহর কি ক্ষমতা ছিল না যে, হযরত আদমের জন্য স্ত্রী সৃষ্টি করবেন যে তার পাজরের হাড় থেকে হবে না? যাতে করে পরবর্তীতে কেউ বলতে না পারে যে, হযরত আদম নিজেই নিজের সাথে বিয়ে করেছেন। আল্লাহ তাদের ও আমাদের মধ্যে এ বিষয়ে ফায়সালা করুন।(ওয়াসায়েলুশ শিয়া, খণ্ড-২০, পৃ. -৩৫২, বাব- ২৮, হাদীস নং-২৫৮০৪।)

(অর্থাৎ এখানে ইমাম বুঝাতে চেয়েছেন যে, আল্লাহ যখন হযরত আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করতে পেরেছেন তবে তার সৃষ্টির জন্য, তার পাজরের হাড় থেকে করতে হবে কেন? যেহেতু আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তাই এ কথা বললে তাঁর অক্ষমতাকেই তুলে ধরা হয়, নয় কি? -নাউযুবিল্লাহ।)

অন্য আরেকটি হাদীসে এসেছে যে, ‘আল্লাহ তা’য়ালা হযরত আদম সৃষ্টির পরে অবশিষ্ট কাদা-মাটি থেকে হযরত হাওয়াকে (হযরত আদমের মতই) স্বতন্ত্রভাবে সৃষ্টি করেছেন।(বিহারুল আনোয়ার, খণ্ড-১১, পৃ. -১১৫, হাদীস নং-৪২।  )

ঙ) :-

وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ أُمِّ مُوسَىٰ أَنْ أَرْضِعِيهِ فَإِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَأَلْقِيهِ فِي الْيَمِّ وَلَا تَخَافِي وَلَا تَحْزَنِي إِنَّا رَادُّوهُ إِلَيْكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ الْمُرْسَلِينَ

“আমরা মুসার মায়ের প্রতি এরূপ এলহাম করেছিলাম যে, তাকে দুধ দাও এবং যখনই তার ব্যাপারে ভয় পাবে তখনই তাকে (নীল নদের) পানিতে নিক্ষেপ কর, তুমি ভয় করো না ও দুঃখিত হয়োনা আমরা তাকে পুনরায় তোমার কাছে ফিরিয়ে দিব এবং তাকে রাসূলগণের মধ্যে স্থান দিব”।(কাসাস : ৭।)

এই আয়াতে এ বিষয়টি পরিস্কার যে, আল্লাহ তা’য়ালা হযরত মুসা (আ.)-এর মায়ের প্রতি এলহাম করেছেন, আল্লাহ একজন নারীকে উদ্দেশ্য করে কথা বলেছেন এটা হচ্ছে নারীদের জন্য একটি মর্যাদার বিষয়।

চ) :-

إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّـهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيهًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ

“(ঐ সময়কার কথাকে স্মরণে আন) যখন ফেরেশতাগণ বলেছিলেন : ‘হে মারিয়াম! আল্লাহ তা’য়ালা তোমাকে তার পক্ষ থেকে এক বাণীর সুসংবাদ দান করছেন যে, তার নাম হচ্ছে মাসিহ্ ঈসা ইবনে মারিয়াম, সে এই দুনিয়া ও আখেরাতেও একজন সম্মানিত ব্যক্তি এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের মধ্যে শামিল হবে।”(আলে ইমরান : ৪৫।)

তাহলে আমাদের কাছে এটা পরিস্কার যে, একজন নারীর পক্ষে এটা সম্ভব যে, সে পরিপূর্ণতার এমন পর্যায়ে পৌছাবে, যার কারণে আল্লাহ তা’য়ালা আসমানী কিতাবে তাকে উদ্দেশ্য করে কথা বলবেন। আর আল্লাহর ফেরেশ্তাগণ ও স্বয়ং জিব্রাঈল (আ.) তাঁর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাঁর সাথে কথা বলবেন। আর এমন নজির পুরুষদের মধ্যেও কম দেখা যায়।

ছ) :-

وَضَرَبَ اللَّـهُ مَثَلًا لِّلَّذِينَ آمَنُوا امْرَأَتَ فِرْعَوْنَ إِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِي عِندَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِن فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

“আল্লাহ্ তা’য়ালা মু’মিনদের জন্য ফিরআউনের স্ত্রীকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যখন সে বলেছিল যে, হে আল্লাহ! বেহেশ্তে তোমার কাছে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ কর এবং আমাকে ফিরআউনের কু-কর্ম ও তার অত্যাচারী দলবল থেকে রক্ষা কর”।(তাহরিম : ১১।)

১-আল্লাহ তা’য়ালা এই আয়াতে সকল পুরুষ ও নারীর সামনে একজন নারীকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

২-আছিয়া (ফিরআউনের স্ত্রী) সকল নারীকে এটাই শিক্ষা দিলেন যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা কোন বাদশাহর প্রাসাদে জীবন-যাপন করার (সেখানে সব ধরনের সুব্যবস্থা থাকা সত্বেও) থেকেও উত্তম। তিনি আরো প্রমাণ করলেন যে, কোন নারীরই উচিৎ নয় এই দুনিয়ার বাহ্যিক রূপের মোহে ভুল করা। কেননা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তা ধ্বংস হয়ে যাবে। আর শুধুমাত্র আল্লাহ্ই থাকবেন।

৩-তিন আরো শিক্ষা দিলেন যে, নারীদের স্বাধীনতা থাকবে (যতটুকু আল্লাহ অনুমতি দিয়েছেন) এবং তারা জুলুম ও জালিমের প্রতি ঘৃণা রাখবে; যদিও ঐ জালিম তার স্বামীও হয়ে থাকে।

জ) :-

إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ ﴿١﴾ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ﴿٢﴾ إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ ﴿٣﴾

“হে রাসূল! আমরা তোমাকে অফুরন্ত নেয়ামত -নবুওয়াত, শাফা’য়াতের ন্যায় উচ্চ মর্যাদাসহ কাউসার (ফাতিমাকে) - দান করেছি। সুতরাং তুমি এই নে’য়ামতসমূহের শুকরিয়া স্বরূপ নামায আদায় এবং কুরবানী কর। আর প্রকৃতপক্ষে তোমার শত্রুরাই হচ্ছে নির্বংশ।”(কাউছার।)

হাদীসের দৃষ্টিতে নারীর মর্যাদা

ক) নবী (সা.) থেকে বর্ণিত হাদিস :-

ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ): خیر ﺍﻭﻻﺩﻛﻢ ﺍﻟﺒﻨﺎﺕ

রাসূল (সা.) বলেছেন : কন্যারাই হচ্ছে তোমাদের উত্তম সন্তান।(মাকারিমুল আখলাক, পৃ. -২১৯।)

ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ): خیرﻛﻢ خیرﻛﻢ ﻟﻨﺴﺎﺋﻪ ﻭ ﻟﺒﻨﺎﺗﻪ

রাসূল (সা.) বলেছেন : তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা তাদের নারী ও কন্যাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে।(নাহ্জুল ফাসাহাহ্, হাদীস নং-১৫২১।)

ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﷲ (ﺻﻠﻰ ﺍﷲ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ):. خیرﻛﻢ خیر ﻛﻢ ﻻﻫﻠﻪ ﻭ ﺍﻧﺎ خیرﻛﻢ ﻻﻫﻠﻰ ﻣﺎ ﺍﻛﺮﻡ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﺍﻻ ﻛﺮﱘ ﻭ ﻻ ﺍﻻ ﻟﺌﻴﻢ

রাসূল (সা.) বলেছেন : তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার পরিবারের সাথে উত্তম ব্যবহার করে থাকে। আমি আমার পরিবারের সাথে তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যবহারকারী। কেবল মহান ব্যক্তিরাই নারীগণকে সম্মান দিয়ে থাকেন এবং নিম্নশ্রেণীর ব্যক্তিরাই কেবল নারীদেরকে অপমান ও অপদস্থ করে থাকে।(নাহ্জুল ফাসাহাহ্, হাদীস নং-১৫২০।  )

রাসূল (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তির তিনটি (সচ্চরিত্র) কন্যা সন্তান থাকবে অথবা তিনটি (পবিত্র) বোনের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে, তার জন্য বেহেশ্ত ওয়াজিব হবে।

রাসূল (সা.) -এর কাছে প্রশ্ন করা হল যে, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! দু’টি (সচ্চরিত্র) কন্যা সন্তান অথবা দু’টি (পবিত্র) বোনের ভরণ-পোষণকারীও কি এই ছওয়াব পাবে? তিনি বললেন : হ্যাঁ, তাকেও এই পুরস্কার দেয়া হবে।

আবারও প্রশ্ন করা হল যে, ইয়া রাসূলুল্লাহ! একটি (পবিত্র) কন্যা সন্তান অথবা একটি (পবিত্র) বোনের ভরণ-পোষণকারীও কি এই সওয়াব পাবে? তিনি বললেন : হ্যাঁ, তাকেও এই একই পুরস্কার দেয়া হবে।(মাকারিমুল আখলাক, পৃ. -২১৯।)

ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺼﺎﺩﻕ (ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ):... ﺍﺫﺍ ﺁﺫﺍﻫﺎ ﱂ ﻳﻘﺒﻞ ﺍﷲ ﺻﻼﺗﻪ ﻭ ﻻ ﺣﺴﻨﺔ ﻣﻦ ﻋﻤﻠﻪ ﻭ ﻛﺎﻥ ﺍﻭﻝ ﻣﻦ ﻳﺮﺩ ﺍﻟﻨﺎﺭ

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : যদি কোন ব্যক্তি তার ¯ স্ত্রীকে কষ্ট দেয়, তাহলে আল্লাহ্ তার নামাযকে কবুল করবেন না এবং তার ভাল ও উত্তম কাজ সমূহকে তার আমলনামায় লেখা হবে না। আর তার স্ত্রীকে কষ্ট দেয়ার কারণে সে প্রথম ব্যক্তি যে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।(আওয়ালিন দানেশগাহ্, হাদীস নং-২০।)

 

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)