আল হাসানাইন (আ.)

একমাত্র ইসলামই ‘নারীমুক্তি’ নিশ্চিত করে

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

সপ্তদশ শতাব্দী থেকেই পাশ্চাত্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারের পাশাপাশি মানবাধিকার আন্দোলন দানা বাধতে শুরু করে। তবে বিগত-শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত নারীমুক্তি বা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গ সরাসরি উত্থাপিত হয় নি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে প্রথমবারের মতো নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রস্তাব জাতিসংঘের ‘বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণা’য় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। তখন থেকে এ পর্যন্ত নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বে যত আন্দোলন হয়েছে তার সিংহভাগই এ ঘোষণার আলোকে আবর্তিত।

নিঃসন্দেহে পাশ্চাত্যের সমর্থনপুষ্ট নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রস্তাব (যা জাতিসংঘ সনদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে) নারীর ভাগ্যোন্নয়নে সীমিত অবদান রেখেছে। বিশেষ করে পুরুষের মতো নারীও যে পূর্ণ মানবসত্তার অধিকারী-এ বাস্তবতা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় (অন্তত কাগজে-কলমে) এ ঘোষণার অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে,এ ঘোষণা নারীর মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি ঘটালেও তথাকথিত এ সমানাধিকার প্রস্তাব নারীর জন্য নতুন ধরনের বিপর্যয় ডেকে এনেছে। কারণ মৌলিক মানবীয় মর্যাদার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই-এ কথা যেমন সত্য,ঠিক তেমনি এ দু’য়ের মাঝে সুস্পষ্ট প্রাকৃতিক (শারীরিক,মানসিক...) ব্যবধান অনস্বীকার্য। আর নারী প্রকৃতির এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য (যা তাকে পুরুষ থেকে আলাদা করেছে) শুধু ভৌগোলিক,ঐতিহাসিক বা সামাজিক প্রেক্ষাপটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়;বরং সৃষ্টিগতভাবেই নারী ও পুরুষের মাঝে ব্যবধান রয়েছে।

নারী ও পুরুষ উভয়ই রক্ত-মাংসের তৈরি হলেও তারা ভিন্নভিন্ন জগতে বিচরণ করে। শারীরিক গঠনের দিক থেকে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে তেমনি মানসিক দিক থেকেও উভয়ের মাঝে রয়েছে বিরাট পার্থক্য। তাই নারীর অনুভূতি আর পুরুষের অনুভূতি এক নয়। স্বাভাবিকভাবেই নিত্যদিনের ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতে উভয়ের প্রতিক্রিয়াও এক নয়। তাছাড়া যৌন আচরণ ও প্রজননের ক্ষেত্রে একের সাথে অন্যের রয়েছে বিরাট ব্যবধান। বিশেষ করে গর্ভধারণ,স্তন্যদান ও প্রাথমিকভাবে সন্তানের লালন-পালন ইত্যাদির ক্ষেত্রে নারীর যে প্রাকৃতিক অবস্থান তা তাকে বিশিষ্টতা প্রদান করেছে। আসলে প্রকৃতিগতভাবে ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করার কারণেই বাস্তবে নারী ও পুরুষের মনে পারস্পরিক প্রয়োজনবোধ জাগে,একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। পরিণতিতে পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ হয় তারা। আর এভাবেই নারী ও পুরুষ একে অপরের পরিপূরকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য উপরিউক্ত বাস্তবতা সম্পূর্ণরূপে পাশ্চাত্যের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার,মনোবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানসহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বিস্তৃতির ফলে নারী-পুরুষের প্রকৃতিগত পার্থক্য যখন দিনদিনই আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে তখনও এ ব্যাপারে পাশ্চাত্যের এ উদাসীনতা আশ্চর্যজনক বৈকি। আসলে নারী-পুরুষের এ সমঅধিকার আন্দোলন একটু তড়িঘড়ি সংঘটিত হওয়ার কারণেই এ উদাসীনতা বলে অনেকের ধারণা। কারণ বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকেও পাশ্চাত্যে নারী সমাজ ন্যূনতম মৌলিক মানবিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত ছিল। এরপর থেকে শুরু হয় নারীর সমঅধিকার আন্দোলন। অবশ্য পুঁজিপতি মহলের ভোগ-লিপ্সা ও স্বার্থোদ্ধার প্রবণতাও এ উদাসীনতার পেছনে কম দায়ী নয়।

ইসলাম নারী অধিকার প্রসঙ্গে অত্যন্ত প্রজ্ঞাময় দৃষ্টি পোষণ করে। ইসলাম একদিকে যেমন নারীকে জাহেলী যুগের নিষ্পেষণ থেকে মুক্তি দেয় তেমনি তাকে তথাকথিত সমঅধিকারের যাঁতাকলেও পিষ্ট করে না। পরিপূর্ণ মানবিক মর্যাদা,অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ইত্যাদির মাধ্যমে নারীর মৌলিক মানবিক অধিকার নিশ্চিত করার সাথে সাথে ইসলাম নারীকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছে। স্ত্রী-পরিজনের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পুরুষের ওপর অর্পণ,দেনমোহর ব্যবস্থা প্রবর্তন ইত্যাদির মাধ্যমে নারীকে শুধু সমঅধিকারই প্রদান করে নি;বরং তাকে দিয়েছে অগ্রাধিকার। এভাবেই ইসলাম নারীকে তার প্রকৃত মর্যাদা প্রদান করেছে।

কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে আজ পর্যন্ত আমাদের সমাজে ইসলামের এই সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয় নি। এখনও আমাদের নারী সমাজ অবহেলিত ও অত্যাচারিতই রয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত আমরা নারীর আর্তচিৎকার শুনতে পাই। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে নারীকে এ দুর্দশা থেকে মুক্তি দেবে কে? এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য বিবেকবান মহলকে সাহসিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন করে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর তাহলেই আমাদের সমাজে প্রকৃত নারী মুক্তির পথ সুপ্রশস্ত হবে।

(জ্যোতি, ২য় বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা)

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)